বিকেলটা অস্তমিত হলো কুয়াশার ঘোমটা পরে। তিনতলার জানালার থাই গ্লাস খুলে সান্ধিক বাইরে তাকিয়েই থাকল কতক্ষণ। শহরের প্রান্তসীমায় তাদের এই বাড়ি ছোটবেলা থেকেই তার হৃদয়ের কাছে কী একতাল নস্টালজিয়ার ঝাঁপি খুলে দেয়! সান্ধিকের কাছে সবচেয়ে রহস্যময়, সবচেয়ে প্রিয় হয়েও এই সন্ধ্যাবেলাটাই তাকে কেন সারাজীবন আনমনা, সারাজীবন বিপন্ন করে রাখল – তা সে ভেবে পায় না। এই বিপন্নতায় আনমনা ভঙ্গিতে সে কিছু একটা খুঁজে বেড়ায়। এই খুঁজে বেড়ানোটাই তাকে শৈশব-কৈশোরের দোলাচল স্বপ্নের কাছে নিয়ে যায়। স্বপ্নবিন্দুর সঙ্গে এই সংযোগ তাকে হয়তো বাঁচিয়ে রেখেছে। যেসব অকারণ তার জীবনের আনন্দের উৎস ছিল সেই অকারণগুলিকে আজো ভালো করে জানা হলো না বলে দিগন্তের দিকে সে অবাক হয়ে তাকিয়ে তা খুঁজতেই থাকে। কী খোঁজে সান্ধিক? বাবাকে, মাকে? সে জানে না।
সান্ধিকের দৃষ্টিসীমায় একটি মাঠের দিগন্ত, তার সবুজ ধানক্ষেত, রোদ-বৃষ্টিতে ঝলমল-জবুথবু অনেক দৃশ্যই 888sport sign up bonus হয়ে খেলা করে। ময়দামাখা জোছনার আলোতে সেই প্রান্তরের কথকতা তাকে অনবদ্য কত গল্প বলে যায়। তার মনে হয়, সে এমন এক কল্পলোকের দিকে তাকিয়ে আছে যে দিগন্ত তার জন্মের অনেক আগের সব রহস্য, জন্মের পরের সব 888sport sign up bonus, অনুভবের সব উৎসারণ-ভূমি। এই দিগন্তের দিকে তাকিয়ে থাকলে, 888sport sign up bonusপটে একটা দৃশ্য ভাসতেই থাকে। কিশোর সান্ধিক রোদেলা পূর্বাহ্ণে নির্জন সিঁথির মতো মেঠোপথটা ধরে, সবজির ক্ষেতগুলির পাশ দিয়ে মাঠের বিলটার দিকে হেঁটে যাচ্ছে। বাবা কি পেছনে পেছনে হাঁটছে?
বাবার কথা মনে হতেই তার মাথার অসংখ্য নিউরন একসঙ্গে ঝিঁঝিঁ পোকার মতো কলতানে মেতে উঠল। অনিতা জোর করে কী সব খাওয়ায়। ঘুমের নেশা ধরানো ওষুধই হবে হয়তো। সারাক্ষণ ঘুমঘোরে থাকা বিলিয়ন বিলিয়ন নিউরন আজ একসঙ্গে বিদ্রোহ করে বাবার মুখাবয়বটুকু দেখতে চাইল। 888sport sign up bonusগুলি কাছে থেকেও কেমন করে একে অন্যের ভেতর ঢুকে যায়, লেপ্টে যায়? বাবার মুখটা কল্পনায় দেখতে গিয়ে সান্ধিকের পুরো স্নায়ুতন্ত্র যেন ভেঙে যাচ্ছে। আবার ঘুম পাচ্ছে। কিন্তু না, এবার সে কোনোভাবেই ঘুমাতে চায় না। সে বুঝে গেছে যা বোঝার। বন্দিত্ব, পলায়ন, জমির দলিল এসব শব্দ স্পষ্ট হতে গিয়েও বারবার হারিয়ে যাচ্ছে। হ্যাঁ, হ্যাঁ, ঠিক; সান্ধিকের মনে হলো, এখনই এখান থেকে তাকে পালাতে হবে। তার আগে, বাবার কাছ থেকে জিনিসটা নিয়ে নিতে হবে।
সান্ধিকের মাথার হাজার হাজার স্নায়ুতন্ত্র একটা অদ্ভুত বিষয় জানতে চাইল। ২০০৭ সালের ২২শে নভেম্বর এই 888sport free bet ছাড়া কোনো তারিখ এমনকি সময়ের সংকেত তার কোনো 888sport sign up bonusতে নেই কেন? সেই সাত সালের পর কত সময় চলে গেছে? নাকি সময় সেখানেই থমকে আছে? সে ঘনিয়ে আসা অন্ধকারে আশপাশে ভালো করে তাকাল। আপ্রাণ চেষ্টায় চোখের মণির সব স্নায়ুতন্ত্রকে আজ জাগিয়ে তুলতে চাইল। বাসার সামনের হেমন্তের ধানক্ষেত তার নিউরনগুলিতে সবুজের আভা মাখিয়ে একটু সতেজ করল কি? হ্যাঁ, সবুজাভ গোধূলিজুড়ে মাত্র নেমে আসা আঁধারে শেষ আলোর অদৃশ্য ফোয়ারার মতো তার নিউরনে কিছু একটা ছড়িয়ে পড়ে তাকে ঘুমের জগৎ থেকে টেনে তুলছে। কিন্তু এই নিউরনগুলি সবার আগে কেন তার জট পাকানো 888sport sign up bonusগুলিকে একসঙ্গে উসকে দেয়? কেন সবুজ এই মাঠ আর দিগন্তে লুকানো অতীতের সময়ঘ্রাণের ভেতর তাকে তলিয়ে নেয়?
এই 888sport sign up bonus আর সময়ঘ্রাণে আকুল হলেই বাবার কাছে থাকা তার আজীবনের মুক্তির জিনিসটার কথা যে আর মনে পড়ে না। কিন্তু না, গোল্লায় যাক, বাবার এই বাড়ি। বাবার কাছ থেকে তার জিনিসটা আজ নিতেই হবে। তারপর অনিতা কিছু টের পাওয়ার আগেই সে দিগন্তে পা রাখবে। এই যে গাছের ডালটা তার শক্ত শাখাগুলি তার দিকে মেলে ধরেছে – তাকে তো পালাতেই বলছে সে। কিন্তু এই ডালটা কবে এত শক্ত গাছের আকার ধারণ করল? কোন গাছের ডাল এটা? সে ভালো করে ডালটার পরিপুষ্ট বাকলে হাত রাখল, যেভাবে যুদ্ধে যাওয়ার আগে একজন যোদ্ধা তার বিশ^স্ত আর প্রিয় ঘোড়াটার গায়ে হাত বুলিয়ে দেয়। বাবা তো কয়েকদিন আগেই একটা জামগাছ লাগিয়েছিল। সেটার ডালগুলিই এত বড় হলো? কবে? কোনো ঐশ্বরিক শক্তি কি তাকে কোনো ইঙ্গিত দিচ্ছে? না হলে গাছের এই ডালটা অন্ধকারেও এত স্পষ্ট আভা ধরে আছে কেন?
সান্ধিক খুবই মায়াভরে গাছের ডালের বাকল স্পর্শ করল। কয়েকবার। তার ঘ্রাণ নেওয়ার চেষ্টা করল। 888sport sign up bonus আর সময়ের ডানা ধরে যে ঘ্রাণটুকু তার নাসারন্ধ্র টের পায় – তা বাস্তবের নাক আর পায় না! এটুকুতেই তার হাত এবং শরীর ক্লান্ত হয়ে উঠল। তাহলে তার শরীর কীভাবে এই তিনতলার ডাল বেয়ে নিচে নামবে? সান্ধিক ভালো করে খেয়াল করে আজ উপলব্ধি করল, শুধু 888sport sign up bonusতে বিচরণে কোনো ক্লান্তি আসে না। বরং তার উপলব্ধিতে এই কথাটাই স্পষ্ট হলো যে, এলোমেলো, জট পাকানো হলেও 888sport sign up bonusগুলিই বড্ড সঞ্জীবনী। বাবা-মায়ের এই জামগাছটা লাগানোর ছুটির দিনটা তার চোখের সামনে ভেসে উঠল। বাবা বলছেন, আমাদের বয়স বাড়ছে। বাড়িতে একটা জামগাছ থাকা ভালো। জানো তো এই দেশটার এককালে নাম ছিল জম্বুদেশ। জামের হাজার উপকার। সান্ধিক নিজেকেই শোনাল, ঠিক সেই সময় বাড়িতে এসেছিল গঙ্গোত্রী । আমার হৃদয়ে হাজার ওয়াটের বাতি জ্বালিয়ে। আমি ভয় পেয়ে একবার বাবা আর একবার মায়ের মুখের দিকে তাকাচ্ছিলাম। গঙ্গোত্রীর স্নিগ্ধ আর অপরূপ মুখটা মায়ের খুব মনে ধরেছিল।
সান্ধিকের বিয়ের জন্য মা তখন একটা মেয়ে খুঁজছিলেন। গঙ্গোত্রীকে অনেক যত্ন-আত্তি করার পর মা সান্ধিককে বলেছিলেন, আমার পাগল ছেলে! এতদিন বলিসনি কেন? এত্ত সুন্দর আর ভালো একটা মেয়ে রেখে এদিকে আমরা কি না হন্যে হয়ে তোর পাত্রী খুঁজছি!
আহা, মায়ের বাক্যটা আজো তার বুকে ছলকে উঠে তার স্নায়ুতন্ত্রকে সজীব করে তুলতে চাইছে। সে আবার যুদ্ধে যাওয়ার প্রস্তুতির মতো করে জামগাছটার ডালের বাকল ছুঁয়ে দিলো। সেদিন বাবা কি খুশি হননি? না হলে তিনি কি গাঙ্গোত্রীকে বাসায় পৌঁছে দিতে নিজেই বাসা থেকে গাড়ি বের করতেন?
না, আজ আর কোনোভাবেই সে ঘুমের কাছে নিজেকে সমর্পণ করবে না। তার মনে হলো, ছোট বোন রুমার তো কয়েকদিন আগেই একটা ফুটফুটে মেয়ে হয়েছে … তার জন্য কেনা উপহারটা নিয়ে পাশের ঘরে যেতে চাইল সান্ধিক। কিন্তু সে উপহারটা ড্রেসিং টেবিল, তার প্রশস্ত আলমিরার ব্লেজার-কোটের নিচে স্তূপ স্তূপ প্যাকেট, জামার ভাঁজে কোথাও খুঁজে পেল না। কোথায় রেখেছে উপহারটা তা মনে করতে চাইতেই সে এবার বুঝল, বাচ্চাটার জন্য কী কিনেছে তাই-ই তার মনে নেই। সন্ধ্যা পর্যন্ত মনে করার চেষ্টা করেও যখন কোনো কাজ হলো না, তখন তার মনে হলো, মা শীতের এই সময়টায় ঝাল-মরিচের পিঠা বানিয়ে বাবাকে আর তাকে খেতে ডাকত। তার পিঠা খেতে ইচ্ছা করল। সে ঘর ছেড়ে বের হলো। ঘরের ভেতর থেকে তার মনে হচ্ছিল, বাইরের সব বাতিগুলি ঝলসানো আলোয় বাড়ি ভরিয়ে রেখেছে। কিন্তু বাইরের মাঠটার অন্ধকার দখল করেছে খাবার টেবিল, ড্রয়িংরুম হয়ে বাসার প্রতিটি কোণ। দুই বিঘার ওপর নির্মিত এই বাড়িটার কুকুরগুলি আর ডাকছে না। ডাকে না। কেন? সে বাতিগুলি জ্বেলে দিলো।
রুমার ঘরে ঢুকেই তার মন ভালো হয়ে গেল। কী আদরে সে মেয়েটাকে বুকের কাছে নিয়ে কপাল দিয়ে তার ছোট্ট কপালের ঘ্রাণময় ত্বক ছুঁয়ে দিচ্ছে। গাল দিয়ে নবজাতকের গাল স্পর্শ করে নিজেরই আত্মাটাকে উপলব্ধি করার চেষ্টা করছে যেন। সান্ধিককে দেখে সে বাচ্চাকে আলতো করে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে বলল, ভাইয়া! তুমি এতদিন পর আমার বাচ্চাটাকে দেখতে এলে?
এতদিন পর? এই সেদিন তো বাচ্চা হলো! রুমার কেন এমন মনে হচ্ছে – সান্ধিক তা বুঝতে পারল না। সে বাচ্চার জন্য কেনা উপহারটা একটু পরেই পৌঁছে দেবে জানাতে গিয়ে কোনোভাবেই কী উপহার কিনেছিল – তা মনে করতে না পারায় আর কিছু বলতে পারল না। শুধু বলল, যাই রে রুমু, দেখি মা কী করছে।
তুমি তো এমন – আসবে শুধু চলে যাওয়ার জন্য!
রুমার এই বাক্যটা সান্ধিকের হৃদয়ে ঝড় হয়ে আছড়ে পড়ল। তাকে অবশ করে ফেলল। সবাই কি তাকে ছেড়ে যায়নি? গঙ্গোত্রী তাকে ছেড়ে গিয়েই তো সবকিছু থেকে তাকে চলে যাওয়ার প্রবণতা শিখিয়েছে। আর অনিতা তার জীবনে এসে তাকে সবকিছু থেকে পালিয়ে বেড়াতে শিখিয়েছে। সে রুমাকে বলতে চাইল, তুই তো অনিতাকে বলতে পারিস না, আমি ঘরের বিছানা আর মেঝেতে গড়াগড়ি করলেও কেন সে তিনদিন আমার খবর পর্যন্ত নেয় না। কেন সে আরো ঘুমের নেশায় আসক্ত করে বাইরের মাঠ, আমার ঘর আর ঘুমকে আমার জীবনের সঙ্গী বানিয়ে দিয়েছে। আমি তো ঘুমাতে চাই না। আমি কিশোর সান্ধিকের সঙ্গে রোদেলা পূর্বাহ্ণে নির্জন সিঁথির মতো মেঠোপথটা ধরে, সবজির ক্ষেতগুলির পাশ দিয়ে মাঠের বিলটায় যেতে চাই। সারাদিন আমার 888sport sign up bonus আর অনুভবের সঙ্গে হুটোপুটি করতে চাই। কিন্তু বাবার এই বাড়িটা এভাবে কত শতাব্দী পাহারা দেওয়া যায়? বিশেষ করে যেসব শতাব্দী সময়ের গহ্বরে থমকে আছে। অনিতা নিচতলাটা অন্য পুরুষদের আখড়া বানিয়েছে – যাদের নিয়ে সে বাড়িটা দখল করতে চায়। তোরা দেখতে পাস না?
সে কিছু বলতে পারল না। মাথা নিচু করে ফিরে গেল। রুমা যেন ডাকছে তাকে, কয়েকশো মিটার, কয়েক কিলোমিটার অথবা অনেক গভীর জলের নিচ থেকে -ভাইয়া, মন খারাপ করো না। মন খারাপ করো না। তুমি এখান থেকে চলে এসো … চলে এসো ভাইয়া … চলে এসো? মানে? কোথায় যেতে বলছে রুমা? তার পেছনের ঘরটা তো কয়েক পা দূরেই। আবার গিয়ে কি দেখে আসবে বোনের আনন্দভুবন? কিন্তু আনন্দভুবনে থেকেও রুমার কণ্ঠ কেন অমন শোনাল? মনে হলো যেন, সে শব্দ করে তাকে ডাকতে চাইলেও কণ্ঠনালীর কাছে এসে সব শব্দের কম্পাঙ্ক শূন্য হয়ে গেল। শব্দেরও কি হৃদয় আছে? কণ্ঠনালী পার হতে গিয়ে তাদেরও কি হার্ট-অ্যাটাক হয় বলে গলায় তারা আটকে গিয়ে তেজহীন ফ্যাঁসফেঁসে আওয়াজ হয়ে যায়? যাক, এ বিষয়টা পরে দেখা যাবে – ভাবল সান্ধিক । তার চেয়ে বরং মা পিঠার কোনো ব্যবস্থা করেছে কি না দেখা দরকার।
দুই
মায়ের ঘরের দরজা খোলাই আছে। তবে ভেতরে আবছা অন্ধকার। সান্ধিককে দেখেই মা দ্রুত বিছানা ছেড়ে উঠে এসে চিন্তিত ভঙ্গিতে তার হাত ধরলেন। বাবা আলোটা কি জ্বেলে দিলেন? তিনি বিষণ্ন ভঙ্গিতে ধীরে উঠে এসে ছেলের কাঁধে হাত রাখলেন, যেন সান্ধিকের মনে হলো, অনেক অনেক কাল পর সে হাসপাতালের মৃত্যুশয্যা ছেড়ে অথবা যুদ্ধের মাঠ থেকে ফিরেছে। মায়ের চোখে জল ভরে এলো। মায়ের চোখে কি আনন্দের অশ্রু নাকি বেদনার জল? বাবা-মা অমন করছে কেন? তাহলে, সে কি অনেক অনেক দিন পর তাদের ঘরে এসেছে?
মা! ছেলের এই ডাকে মায়ের হৃদয়ের উছল সাগর এবার যেন উত্তাল হয়ে উঠল। তার চোখ ফেটে যেন অশ্রু নয়, রক্ত আসতে চাইছে। অনেকক্ষণ ধরে কান্না আটকাতে গিয়ে তার গালের মাংসপেশিগুলি যেন থেমে গেছে। বাবা একজন ব্যর্থ মানুষের মতো সান্ধিকের কাঁধ-পিঠ আলতো ছুঁয়ে সান্ত্বনা দিতে গিয়েও অপরাধীর ভঙ্গিতে একবার মাথা তুলছেন তো দুবার তা নিচু করছেন। এবার মা সান্ধিককে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলেন। তার বুকে মাথা রেখে অনেক কষ্টে তিনটা শব্দ উচ্চারণ করলেন –
খোকা! বাবা আমার … সান্ধিক বুঝল না, মা কেন এত শোকাহত! বাবা কেন এমন অপরাধীর ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছেন? তার চোখ দুটো লাল হয়ে উঠল। অনেকদিন ধরে, অনেক কাল ধরে একটা দিগন্তকে বুকে আঁকড়ে নিলে, অনেক অনেক দিন পর মায়ের বুকে মাথা রাখলে, অনেক অনেক দিন পর এভাবে গঙ্গোত্রীর মুখটা মনে পড়লে, বোনের কোলে কয়েকদিন আগে জন্মানো বাচ্চাকে অমন মমতায় জড়িয়ে ধরে থাকতে দেখলে কি এমন হয়?
এই ভাবনাটা আসামাত্র সে যেন মুক্তির একটা পথ খুঁজে পেল। বাবার কাছ থেকে এখনই জিনিসটা তাকে নিতে হবে। অনিতা কিছুক্ষণের মধ্যেই তার জেগে ওঠা টের পেয়ে যেতে পারে। তারপর পাঠাবে সেই ডাক্তার আর দুজন পালিত দস্যুকে। তারা জোর করে, মাথার কাছে পিস্তল ঠেকিয়ে তাকে খাইয়ে দেবে। তারপর ইনজেকশন পুশ করবে। তারপর তারা কী করে? তার শরীরটা ধরে বিছানার ওপর বস্তা ফেলে দেওয়ার মতো করে ফেলে দেয়? না, না এসব ভাবার সময় নেই তার। বাবাকে এখনই জিজ্ঞেস করতে হবে জিনিসটা কোথায় আছে? সে নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে মায়ের বন্ধন ছেড়ে দিলো। বাবার দিকে তাকিয়ে বলল, বাবা?
বাবার মুখ থেকে নিমিষেই অপরাধীর ভঙ্গিমা হারিয়ে গেল। তার মুখে স্মিত হাসি ফুটল যেন জন্মানোর পর সন্তানের মুখে প্রথম তিনি ‘বাবা’ ডাক শুনলেন! বাবার ভরাট কণ্ঠ ঘরের হিম হিম ভাবকে তাড়াল, খোকা? সান্ধিক! বলো বাবা।
কোথায় রেখেছ, ওটা?
কী? কোনটা?
সান্ধিকের প্রশ্নে তিনি ঠিক ততটাই অবাক হলেন মাত্র জন্মানো শিশুর মুখে কথা ফোটার আগেই প্রশ্ন শুনলে যতটা কোনো বাবা অবাক হতে পারেন। তিনি মুগ্ধ তবু হতাশ, আপ্লুত তবু সন্দেহের দৃষ্টিতে সান্ধিকের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলেন। বাবার প্রশ্ন শুনে সান্ধিক আর কিছুতেই জিনিসটার কথা মনে করতে পারল না। শুধু একটা আবছা মুখাবয়ব তার মানসপটে ভেসে উঠছে। মায়ের মতোই মুখটার আদল কিছুটা। কে সে? একটা জিনিস খুঁজছে সে, আর ঠিক এসব সময়েই কি না এই 888sport promo codeমুখের আদলটা ভেসে উঠল? কার মুখ ওটা, মায়ের? নাকি গাঙ্গোত্রীর ? বাপ-পুত্রের স্থির দৃষ্টির মাঝে যত বিভ্রম এসে ভর করল, ততই তাদের চোখের ভাষা গভীর হয়ে গেল। সান্ধিক কী চায় – তা দেওয়ার জন্য বাবার বুকটা ছটফট করে উঠল। তিনি তা জানার আকুল ভঙ্গিতে সান্ধিকের মুখের দিকে তাকিয়েই থাকলেন।
বাবার কাছে একটা জিনিস আছে – সেটার জন্য সে কতকাল অপেক্ষা করে আছে। আজ একবার মনে পড়েছিল জিনিসটার কথা। কিন্তু সান্ধিকের গভীর দৃষ্টি, বাবার চোখের গহিনে কোন রক্ত এমন ব্যথিত? আশাহত? একটা 888sport promo codeর জন্য কি কারো জীবন ওলট-পালট হয়, না হতে পারে? বাবা কতক্ষণ একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে গম্ভীর এবং ভরাট কণ্ঠে প্রশ্ন করলেন, কোন জিনিসটা? কী সেটা? বলো, বাবা। শুধু একবার মনে করার চেষ্টা করো।
কিছুতেই জিনিসটার নাম মনে করতে না পারায় এবার সান্ধিক বিব্রত হলো, যেন সে বাবার কাছে এমন কিছু চাইতে এসেছে সন্তান হয়ে যার নাম মুখে উচ্চারণ করতে হয় না। সে মাথা নত করল। তার ঘন কালো, হালকা কোঁকড়ানো চুল তার চোখ-মুখ ঢেকে ফেলল। সে ধীর পায়ে বাবা-মায়ের কক্ষ থেকে বের হয়ে এলো। চোখের কোণে ক্লান্তি ভর করা সুদর্শন ছেলের কাঁধ থেকে মায়ের হাতটা ফসকে গেল। কে যেন বলল, সানজিদা, তোর ছেলের মতো এমন সুদর্শন পুরুষ গ্রিক সম্রাটরাও ছিল না। সেই ছেলেটা কেমন ন্যুব্জ হয়ে, গন্তব্যহীন হয়ে তার ঘরের দিকে পা বাড়িয়েছে!
তিন
অনিতা মেয়েটার সঙ্গে সান্ধিকের কী সম্পর্ক তা তার সঙ্গে সারাক্ষণ বাস করা অঙ্কুর ঠিক জানে না। একটা সড়ক দুর্ঘটনায় বাবা-মাকে হারিয়ে তাদের একমাত্র মেয়ে অঙ্কুর যখন দিশেহারা তখন অনিতাই তাকে নিজের কাছে রেখে পড়াশোনা করানোর আশ্বাস দিয়ে তার গরিব ফুফুর কাছ থেকে নিয়ে এসেছিল। পড়াশোনা তো পরের কথা, তাকে দিয়ে এত কাজ করিয়ে নিয়েও বিনিময়ে খাবার-কাপড় আর তার পছন্দের কিছু বই কিনে দেওয়া ছাড়া আর কোনো দায় নেই তার। এই ফ্ল্যাটে এসে অঙ্কুর অপরিচিত লেখকের একটা 888sport alternative link পায়। ঔপন্যাসিকের নাম সান্ধিক সাঁইঋক। 888sport alternative linkটা পড়া শেষ করে অনেক কেঁদেছিল সে। লেখক পরিচিতিতে দেওয়া মানুষটার ছবিটার দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে ছিল। মনে হয়েছিল, এই গল্পকারের চেয়ে পৃথিবীতে এত পরিচিত, এত আপন তার আর কেউ নেই!
এতদিন পর তার 888sport promo code-ইন্দ্রিয় কেন যেন তাকে বলছে – ওপরের তিনতলায় যে মানুষটা বাস করে তিনিই সান্ধিক সাঁইঋক। এটা কি তার ছদ্মনাম? অনিতা কেন মানুষটাকে সমাজ থেকে গোপন আর আড়াল করে রেখেছে? অনিতা আসলে কাকে পাহারা দিচ্ছে? তিনতলায় আসলে যিনি আছেন, তিনি সত্যিই কি তার পড়া 888sport alternative linkটার লেখক? সমাজকে লুকিয়ে অনিতার সঙ্গে স্বামীর সম্পর্ক জড়ানো পুরুষ কয়জন তা নিয়েও তার সঙ্গে বাস করা অঙ্কুরের সন্দেহ আছে। মাঝে মাঝে অঙ্কুরের ইচ্ছা করে অনিতার খাবারে বিষ মিশিয়ে দিতে। মানুষ এত নিষ্ঠুর হয় কীভাবে? কিন্তু সমাজে আর কোথাও আশ্রয় নেই বলে অঙ্কুর এই ঝুঁকটা নিতে পারছে না। তবে তিনতলার মানুষটার পরিচয় নিশ্চিতভাবে জানতে পারলে, আর তিনি যদি সান্ধিক সাঁইঋক হোন তাহলে অঙ্কুর ধৈর্য নাও রাখতে পারে – এ কথা ভেবে সে নিজেই শংকিত হয়।
এসব প্রবল জিজ্ঞাসা থেকেই সে অনিতার গোপন জীবনকে জানতে মরিয়া হয়ে উঠল। দিন দিন তার কাছে অনেক কিছুই পরিষ্কার হলো। অনিতার তৃতীয় স্বামী একজন মানসিক রোগের ডাক্তার। মনের আবার রোগ হয়? নাকি রোগটা আসলে মাথার? অঙ্কুর বুঝতে পারে না, মন কীভাবে রোগাক্রান্ত হয়? নাকি মানুষই মানুষের মনের এই রোগের কারণ? এই দুই বিঘা বাড়ি আর তার বাগান বদলে যে হাউজিং প্রকল্পের পরিকল্পনা অনিতা পাশ করিয়েছে – কুমিরের বাচ্চার মতো সেটা দেখিয়ে সে শহরের তিনজন ধনাঢ্য ব্যক্তিকে কব্জা করে শোষণ করছে, এসব জেনে গেল অঙ্কুর। কয়েকটা ফ্ল্যাটের লোভ দেখিয়ে অনেকের কাছ থেকে কিছু অগ্রিম টাকাও নিয়েছে। অনিতা কি টাকাগুলি দেশের বাইরে পাচার করছে। সেখানেও কাউকে কব্জা করে রেখেছে?
মাত্র নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করা অঙ্কুর এতকিছু ভাবতে গিয়ে ঘেমে ওঠে। কম পড়াশোনা হলেও অঙ্কুর বুঝতে পারে, অনিতার স্বামী নামধারীদের কাছে অনিতার শরীরী সৌন্দর্য, লাবণ্য এসবের মূল্য তাদের লোভের কাছে শূন্য। অনিতার বিছানায় আর কয়জন ঘুমায় তা নিয়েও এসব পুরুষের মাথাব্যথা নেই। বরং এই যাত্রায় অনিতার মতো 888sport promo codeদের শরীরের স্বাদ নেওয়া এদের কাছে বাড়তি পাওনা ছাড়া আর কিছু নয়। শরীরী জীবনের স্বাদ না পেলেও অঙ্কুর এসব বুঝতে শিখেছে। বড় আর শিক্ষিত লোক বলে সমাজে পরিচিতজনদের ভেতরের চেহারা দেখে সে শংকিত। এইসব ছাড়পোকার মতো যৌনতাড়িত মানুষের জন্য সমাজ কেন ‘বড়’ শব্দটা বরাদ্দ করেছে – তা ভেবে পায় না সে।
ছোটবেলায় দেখা বাবা-মায়ের একসঙ্গে খাওয়া অথবা কাজ করার দৃশ্য, তাদের মুখের আদল মনে করে সে আবেগাপ্লুত হয়। কৈশোরে বাড়ির একটু দূরেই করতোয়া নদীতে সাঁতার কাটার সময়গুলি তাকে আনমনা করেও এত সুখী করে – স্বপ্নের উন্মেষের সেই মুহূর্তগুলি, স্বপ্ন জাগরণের সেই উৎসবিন্দুগুলি স্বপ্নকে সত্যি করে পাওয়ার চেয়ে তার কাছে অনেক বড় বলে মনে হয়। শহরের এই ধনী মানুষগুলি এতকিছু পেয়েও স্বপ্নের অঙ্কুর নামের সেই আত্মিক সংযোগটুকু হারিয়েছে বলে সবকিছু পেয়েও তারা অতৃপ্ত? সুখের সব উপকরণ পাওয়ার পরও কি এজন্যই তারা লোভ নামের আরো অলীক স্বপ্নের পেছনে দৌড়াতে থাকে?
কলিংবেলের শব্দ হলে টুঁ-শব্দটি না করে অঙ্কুরকে সব বাতি নিভিয়ে নিজেকে নিজের ঘরে বন্দি করে রাখার নির্দেশ দিয়েছে অনিতা। সে বাতি নিভিয়ে দিলো। কিন্তু না, অনেক বছর হয়েছে। আর নয়। অঙ্কুর আজ আর অক্ষরে অক্ষরে অনিতার কথা পালন করবে না। এই রহস্য তাকে ভেদ করতেই হবে বলে সে মনে মনে পণ করল এবং অন্ধকারে বাগানের জামগাছটির ছায়ায় লুকিয়ে অনিতার ঘরের পেছন-জানালার পাশে দাঁড়াল।
চার
কিন্তু অনিতা এত বছর সময় কেন নিচ্ছে – ভেবে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ বড্ড বিরক্ত। অনিতার ব্রা খুলে ছুড়ে ফেলে দিতে গিয়ে তিনি বললেন, তুমি এতদিন ধরে ঝামেলা বয়ে বেড়াচ্ছ কেন? বাড়ির দলিলটা তো তোমার হাতেই। সান্ধিকের কয়েকটা স্বাক্ষর নিলেই হয়?
তোমার মতো মাথামোটা লোককে আমার স্বামীর স্বীকৃতি দেওয়ার কারণটা জানো তো, না?
সান্ধিক দীর্ঘদিন ধরে মানসিক সমস্যায় ভুগছিল। গাঙ্গোত্রী নামের একটা মেয়েকে সে ভালোবাসত। তার সঙ্গে বিয়ের কথাও পাকাপোক্ত হয়ে গিয়েছিল। মেয়েটার জন্য সে গভীর ট্রমায় গিয়েছিল। জেগে উঠলেই সে আত্মহত্যা করতে চাইত। তাকে শক্তিশালী ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হতো – এর ধারাবাহিক নথি রক্ষা করতে আমাকে তোমার দলে নিয়েছ।
না, শুধু সেটুকু নয়। এমন একজন মানসিকভাবে অসুস্থ রোগীর স্ত্রী হিসেবে আমার মানসিক যন্ত্রণার বিষয়টাও তোমার নথিতে থাকবে। পেছন থেকে প্রেসক্রিপশনগুলি রেডি করো।
তোমারটা না হয় করলাম। কিন্তু তাকে ঝুলিয়ে রেখে কী লাভ? সুন্দর আর নিরীহ মানুষকে, সে হোক 888sport promo code অথবা পুরুষ, এতদিন ধরে নির্যাতন করতে কষ্ট লাগে। তোমার লাগে না?
আমরা যে খেলায় নেমেছি, সেখান থেকে ফেরার পথ নেই। ওর লেখালেখির ব্যাপারটা অনেক গভীর আর ধারালো ছিল, জানো তো? না-ও জানতে পারো। ছাগলরা ঘাস খেলেও ঘাসের নিচে যে মুক্তা লুকানো থাকতে পারে তা বোঝে না। ওর অনেক ফ্যান ছিল। এখনো অনেকেই তাকে ভোলেনি।
ওসব নিয়ে ভাবার কারণ নেই। ভক্তরা লেখকদের কাছে পৌঁছাতে পারে না। চায়ও না। আর লেখকরা হলো একে অন্যের জাত শত্রু। বাইরে বাইরে বন্ধুত্বের ভাব দেখালেও বড় এবং সম্ভাবনাময় লেখার অকালমৃত্যু হলে সবচেয়ে বেশি খুশি হয়। আর নতুন করে তাকে তো লিখতে দেওয়া হচ্ছে না অনেক অনেক কাল।
তাহলে, কম্পিউটার, কাগজ-কলম ওর ফ্ল্যাটে অ্যাভেইলেবল করি, কী বলো?
মাথা খারাপ তোমার! ওর এখনকার লেখা আরো ভয়ানক শক্তিশালী হবে। তোমার গলায় দড়ি পরতে সময় লাগবে না। তাকে ঝুলিয়ে রেখে তুমি আমাকেও ঝুলিয়ে রেখেছ। মাঝখান থেকে লাভবান হচ্ছো তুমি। আমি কিছু বুঝি না?
অনিতার শরীর পেলে যে-কোনো সাম্রাজ্যের সম্রাটও নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করবেন। তুমি তো এক মানসিক চিকিৎসক নামে এক সত্যিকারের মানসিক রোগী।
আমি রোগী?
নয় তো কী?
তুমি সান্ধিককে তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে না দিয়ে এই খেলাটা শেষ করলেই পারো। এই কথায় বিরক্ত অনিতা কাপড় পরে নিল। তাকে প্রত্যাখ্যানের আনন্দেই হাসল যেন,
হা, হা। মাথায় টাক থাকলেই ভালো বুদ্ধি থাকে না, বুঝলে টাকলু। সান্ধিক তোমাদের মতো কোনো সাধারণ পরিবারের ছেলে নয়, মানুষও নয়। ওকে নিয়ে খেলতে দীর্ঘদিন সময় না দিলে ইনজেকশনগুলি উলটো তোমার পাছায় ঢুকবে।
পাঁচ
নিজের ঘরে ফিরে যাওয়ার সময় থমকে দাঁড়িয়ে গেল সান্ধিক। বোনটার ঘরের দিকে আর একবার তাকাল। কী আশ্চর্য, রুমা এত তাড়াতাড়ি বাড়ি থেকে উধাও হয়ে গেল? ওদিকটায় পৃথিবীর সব নীরবতা এসে থমকে সান্ধিকের দিকে তাকিয়ে আছে। তার ক্লান্ত দুই চোখে এবার সত্যিই অভিমান এসে ভর করল।
তুমি তো এমন! আসবে শুধু চলে যাওয়ার জন্য?
কে কাকে বলেছিল কথাটা? হুবহু বাক্যটা মনে পড়লেও সান্ধিকের ঠিক মনে পড়ল না, রুমা কি তাকে বলেছিল বাক্যটা, নাকি সে বলেছিল রুমাকে?
যে-ঘর থেকে সে পালাতে চায়, হারিয়ে যেতে চায় খোলা দিগন্তের কোথাও। একটা প্রলম্বিত পথ ধরে।
যে-পথ ভাতের মাড়মাখা চাঁদের আলোয় আকাশের দিকে গন্তব্যহীন। তবু সেই ঘরের দিকে পা বাড়াল সান্ধিক। ক্লান্তিই হয়তো তাকে টানছে। ঘরটাতে প্রবেশ করার সময়ই সান্ধিক দরজার অন্যপ্রান্তে চাবি দিয়ে তালা খোলার শব্দ শুনল। সে তার দুর্বল হৃদপিণ্ডের তীব্র ছটফটানিতে চোখের সামনে সবকিছুকে ভেসে যেতে দেখল। কী আশ্চর্য, ঘরের দরজার কাঠের চৌকাঠ টুকরা থেকে টুকরা, টুকরাগুলি ছোট আরো ছোট এবং পরিশেষে আলোক কণার মতো অন্ধকারকে ফাঁকি দিয়ে উড়ে উড়ে চলে যাচ্ছে। তাদের গন্তব্য কি একটা প্রলম্বিত পথ, যে-পথ ভাতের মাড়মাখা চাঁদের আলোয় স্পষ্ট হয়েও অস্পষ্ট?
ডাক্তারের ব্যাগ থেকে তারা দ্রুতগতিতে একটা ইনজেকশনের সিরিঞ্জ বের করল। একটা স্যাম্পলের মাথা ভেঙে সিরিঞ্জটা যখনই ভরাতে গেল ঠিক তখনই সান্ধিকের মনে পড়ল, বাবার কাছে খোঁজা সেই জিনিসটার কথা। মনে পড়ল পনেরোটি বছর পর। তা আর কিছুই নয়। একটা কলম, যার ভেতর কালি আছে! কতকাল সে গল্প লেখে না! লেখার সব উপকরণ, পড়ার সব বই এই ফ্ল্যাট থেকে উধাও করে দেওয়া হয়েছে। গল্প লেখার জন্য ভেতরটায় কী ছটফট আর এক সাগর পিপাসা। যেমন ছটফট করে তার হৃদয় গঙ্গোত্রীকে একবার দেখার জন্য, বাবা-মা, রুমাকে একসঙ্গে নিয়ে বসে আড্ডা দেওয়ার জন্য। এইসব ইচ্ছা জাগলেই সে ঘুমের অতল সাগর থেকে, ঘুমরাজ্যের সব লোহার শিকল আর দস্যু দ্বারা পাহারা দেওয়া ফটকগুলি ছিন্নভিন্ন করে ছুটে আসতে চায় বাস্তবে। কিন্তু জেগে ওঠার পরই তাকে দ্বিধায় পেয়ে বসে। বাবা কি তাকে অনুমোদন দেবেন?
সে উলটো ঘুরে বাবা-মায়ের ঘরটার দিকে তাকাল। কী আশ্চর্য! ঘরের সব আলো নিভিয়ে তারাও অদৃশ্য হয়ে গেছে। এত তাড়াতাড়ি বাবা-মা কই গেলেন? বাগানের হেঁসেলে মা কি পিঠা বানাতে গেলেন? সে চিৎকার করে বাবাকে ডাকতে চাইল। কিন্তু তার কণ্ঠ থেকে গলাকাটা মানুষের মতো শব্দগুলি ফ্যাঁসফ্যাঁস করে সেখানেই হারিয়ে গেল। মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার এসে পড়লেন। অন্য দুজন বাইরে বসা সোফায় ফেলে সান্ধিককে শক্ত করে চেপে ধরল। যেভাবে কোরবানির সময় সবাই গরুকে আটকে ধরে রাখে।
একটু পরই সান্ধিক দেখল জামগাছের ডালটা চাঁদের ময়দামাখা আলো শরীরে মেখে আকাশের দিকে উঠে গেছে। সান্ধিক ডালটায় পা ঝুলিয়ে বসল। গঙ্গোত্রী এসে বসল তার পাশে। সান্ধিক চমকে তাকাল তার দিকে, গঙ্গোত্রী?
হুম। দেখো, সান্ধিক আজ আকাশের চাঁদটা কত্ত বড়!
কেমন মায়াবী আলোয় ভরে আছে মাঠটা। যাবে?
যাওয়ার জন্য এবং তোমাকে নিয়ে যাওয়ার জন্যই তো আমি এলাম।
ওহ, তাই বলো। কিন্তু গঙ্গোত্রী, বাবার সঙ্গে গাড়িতে উঠে সেই যে বাড়িতে গেলে, আর ফিরলে না কেন?
মানুষ বলে ট্রাক অ্যাকসিডন্টে আমাদের কারটা ওখানেই ভর্তা হয়েছে। আমি তো জানি, কেন তা হয়েছে! এসব শহরে দুই বিঘার বাড়িতে এই দেশে যারা জন্মায় তারা দুশো হাত সাপের অদৃশ্য ছোবলের ঝুঁকিতে থাকে।
অনিতা আমাকে এত ঘুমিয়ে রাখতে চায়, কেন?
তুমি জন্মেছিলে আমার জন্য, আমি তোমার জন্য। অথচ আমাদের জীবন চালাতে হয় কত কত ভুল মানুষের সঙ্গে। বাদ দাও ওসব। চলো যাই, তাহলে … তার আগে দলিলগুলিতে সাক্ষর দিয়ে দাও।
বাবা অনুমতি দেবেন?
নিশ্চয়ই। বাবা না হলে তুমি বুঝবে না সন্তানের জন্য একজন বাবা কী কী করতে পারেন!
জানি বলেই বলছি। বাবা তো কলম লুকিয়ে রাখেন। বাবা মনে করেন, ওই কলমটাই আমার আত্মা। ওখান থেকে আমার সাক্ষরে কালি বের হলেই আমার আত্মা আর ফিরবে না! তা হোক, বাবা নিশ্চয়ই এতদিনে বুঝে গিয়েছেন, আমরা আসি শুধু চলে যাওয়ার জন্য!
চলো … তবে। বের হয়ে পড়ি …
আমরা কি জামগাছটার বাকল ছুঁয়ে ছুঁয়ে নিচে নামব? গাছটা মা-বাবার হাতে লাগানো তো! নিশ্চয়ই বিট্রে করবে না।
না, নিচে থাকে অনিতারা। অনিতারা নিচেই নামতে থাকে। তোমাকে নিয়ে আমি ডাল বেয়ে ওপরে যাব। ওপরে, অনেক ওপরে। ডালটা আকাশ ছুঁয়ে আছে, তোমার জন্য।
সান্ধিক দেখল, গঙ্গোত্রীর হাত দুটোতে আঙুল নেই। ওগুলিতে অনেক সাদা, নরম নরম পালক। তার হাত দুটো পাখির ডানা হয়ে গেছে কখন! সে গাঙ্গোত্রীর কাঁধে আলতো হাত রাখল। গাঙ্গোত্রী আবার বলল,
চাঁদের আলোয় ভাসব, তুমি-আমি। মাঠটার অন্য পাশে যাব আমরা। যেখানে আমি থাকি, রুমা তার বাচ্চাটা নিয়ে থাকে। বাবা-মা হেঁসেলের চুলায় শীতের পিঠা বানায়।
এবার সান্ধিকের মুখে হাসি ফুটে উঠল। অনেক অনেক দিন পর। হাসতে গিয়ে ইনজেকশনের প্রতিক্রিয়ায় তার ঠোঁটের কোণ বেয়ে গড়িয়ে পড়ল ফেনার মতো কিছু একটা। কে যেন তা যত্নের সঙ্গে মুছে দিলো। এতদিন পর এই যত্নের মায়াবী স্পর্শে সান্ধিক দু-চোখে নেমে আসা রাজ্যের ঘুম অনেক কষ্টে তাড়িয়ে চোখ মেলার চেষ্টা করল, গঙ্গোত্রী!
আমি অঙ্কুর। অনিতার অন্য স্বামীদের ফোন করে একত্রিত করেছি। আপনার গল্পই আমাকে শিখিয়েছে, যা কিছু অশুভ আর নষ্ট তাদের একতা অনিষ্টের, ধ্বংসের। তারা প্রলয় নিয়ে থাকুক।
অঙ্কুর?
জি, আপনার গল্পের বীজটা যার ভেতরে এখন অঙ্কুর হয়েছে। অনিতার দখলে থাকা চাবিগুলি সব এখন আমার আঁচলে বাঁধা। যে আপনার 888sport alternative link পড়ে তার কখনো ডানা ঝাপটানোর সংকেত বুঝতে ভুল হয় না …
আমরা ওপরে যাচ্ছি, অঙ্কুর?
না, ওপরে নয়। আমরা নিচে, মাটিতে পা রাখব। অঙ্কুর তো মৃত্তিকাসংলগ্ন হয়ে বাঁচে। কাউকে কাউকে বাঁচার রসদ আর পুষ্টি জোগায়। আমরা যাব আপনার প্রিয় কনে-দেখা-আলোর দিগন্ত পেরিয়ে সবুজ কোনো গ্রামে। যেখানে কাগজ আছে। কলম আছে। অথবা আছে ল্যাপটপ। আর আছে, ঘুঘুর ডাকে ছড়িয়ে পড়া 888sport sign up bonusর ঘ্রাণ।


Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.