একটিমাত্র 888sport live footballকর্মের জন্য নিজ ভাষার 888sport live footballে এমনকি বিশ্ব888sport live footballে অমর হয়ে আছেন, পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষার 888sport live footballের ইতিহাসে এমন বিরলপ্রজদের একজন, বাংলা888sport live footballের অকালপ্রয়াত কথা888sport live footballিক অদ্বৈত মল্লবর্মণ (১৯১৪-৫১)। আধুনিক বাংলা 888sport live footballে উচ্চবর্গের এবং উচ্চবর্ণের একচ্ছত্র আধিপত্যের মধ্যে, বলতে গেলে, প্রায় একমাত্র নিম্নবর্গের লেখক অদ্বৈত মল্লবর্মণ তিতাস একটি নদীর নাম 888sport alternative linkের মাধ্যমে কালোত্তীর্ণ অক্ষয় একটি আসন পেতে বসে আছেন। মূলত লোকজীবনের রূপকার এই লেখকের কৃতিত্ব মূল্যায়নে এই একটি মাত্র 888sport live football888sport live chatই ঘুরেফিরে আসে প্রাসঙ্গিক আলোচনায়। সে-কারণে লেখকের 888sport live football-সাধনার আরো যেসব দিক রয়েছে সেগুলি প্রায়শই গবেষকদের মনোযোগ এড়িয়ে যায়।
অদ্বৈত মল্লবর্মণ 888sport app download apk, ছোটগল্প, 888sport alternative link, 888sport live, নিবন্ধ – 888sport live footballের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাধনমগ্ন হলেও সংগীতরচনা করেছেন বলে তেমন কোনো প্রত্যক্ষ তথ্য পাওয়া যায় না। তবে তাঁর 888sport app download apk এবং গল্প-888sport alternative linkের ভাষায় চমৎকার গীতিময়তার আভাস মেলে। অদ্বৈত যে-অঞ্চলের সন্তান সে-অঞ্চলটিই সংগীতের এক অপার ভাণ্ডার। অর্থাৎ ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা এবং ত্রিপুরা মিলিয়ে যে ভূখণ্ড সেটি নিজেই সংগীতের এক সমৃদ্ধ পাদপীঠ। কিংবদন্তি 888sport live chatী শচীন দেববর্মণের (১৯০৬-৭৫) ভাষায় বলা যায় : ‘গলায় সুর নেই, গান গাইতে পারে না, এমন কেউ নাকি সেখানে জন্মায় না। … ধানের ক্ষেতে চাষীরা গান গাইতে গাইতে চাষ করে, নদীর জলে মাঝিরা গানের টান না দিয়ে নৌকা চালাতে জানে না, জেলেরা গান গেয়ে মাছ ধরে, তাঁতিরা তাঁত বুনতে বুনতে আর মজুররা পরিশ্রম করতে করতে গান গায়।’ সুতরাং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ভূমিপুত্র অদ্বৈত মল্লবর্মণ স্বভাবতই একটি সংগীতময় পরিমণ্ডলের মধ্যে বেড়ে উঠেছিলেন। সে-কারণে সুপ্ত একটি সংগীতরসবোধ সর্বদাই তাঁর মনন ও মানসকে অধিকার করেছিল। তিতাস-কাহিনি যেহেতু বহুলাংশেই তাঁর যাপিত জীবনের অভিজ্ঞতা, সে-কারণে তিতাস-আখ্যানের বর্ণনায় প্রাসঙ্গিকভাবে তিনি সংগীতের ব্যবহার না করে পারেননি।
তিতাস একটি নদীর নাম যে-জনগোষ্ঠীর জীবনের মহাকাব্য, অদ্বৈত সেই সম্প্রদায়েরই একজন প্রতিনিধি। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার গোকর্ণঘাট গ্রাম, যেটি অদ্বৈতর জন্মস্থান, তিতাস কাহিনীর প্রেক্ষাপট। সমগ্র 888sport alternative linkটি পড়লে বোঝা যায়, এই কাহিনি-বিন্যাসে লেখক খুব বেশি কল্পনাবিলাসিতার সুযোগ নেননি, তার প্রয়োজনও হয়নি। যে-888sport alternative link একটু একটু করেই তাঁর চোখের সামনে আপনিই প্রতিভাত হয়েছে, যে-চরিত্রগুলি সার্বক্ষণিক তাঁর চারপাশে বিচরণ করেছে, যে-মানুষগুলির সামগ্রিক জীবনব্যবস্থা তাঁর নখদর্পণে – তাঁকে তো কল্পনা করে লিখতে হয় না কিছু। তিতাসপাড়ের মানুষের সারাদিনের কর্মক্লান্তির অপনোদন হয়
স্ত্রী-সংসর্গে আর গানের বিনোদনে। এছাড়া বিভিন্ন ঋতুতে উদযাপিত উৎসব-অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। বাঙালির যে-কোনো
উৎসব-অনুষ্ঠানের সঙ্গে খাওয়া-দাওয়ার মতো সংগীতেরও একটি ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। তাই তো দেখা যায়, বারো মাসে তেরো পার্বণে তিতাসপাড়ের মালোপাড়ার তথাকথিত এই ব্রাত্য জনগোষ্ঠীর 888sport promo code-পুরুষরা সংগীতসুধারস পান করে। কখনো তারা নিজেরাই গান করে, কখনো ভাড়া করা গায়ক এনে গানের আসর বসায়। দোল উৎসব, মনসাপূজা, নৌকাবাইচ, বিয়ে, অবসর বিনোদন, দ্বিরাগমন, কালীপূজা প্রভৃতি পূজা-পার্বণ-উৎসবে ঝুমুর গান, পদ্মপুরাণের গান, সারিগান, মেয়েলি গান, মুর্শিদী বাউল গান, বারোমাসি গান, বৈষ্ণব পদাবলি, কবিগান, যাত্রাগান প্রভৃতি গানের প্রসঙ্গ তিতাস-কাহিনির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বিস্তৃত হয়ে আছে। তিতাস-কাহিনিতে যেসব গানের ব্যবহার লক্ষ করা যায় তার কোনগুলি অদ্বৈতর নিজস্ব রচনা, নাকি কোনোটিই নয়, তা নিশ্চিত করে বলা যায় না। অদ্বৈত লোকজ ধারার যেসব গান সংগ্রহ করে সংগীতবিষয়ক বিশ্লেষণাত্মক এবং গবেষণামূলক 888sport live রচনা করেছেন, সেসব গানের কোনো কোনোটির ব্যবহার তিতাস-আখ্যানেও অবশ্য দেখতে পাওয়া যায়। আলোচনার এই পর্বে আমরা সেই প্রসঙ্গে যাবো না। তিতাস একটি নদীর নাম 888sport alternative linkে সংগীতের ব্যবহার সম্পর্কে আলোচনা করে আমরা অদ্বৈতর সংগীতমানস অনুসন্ধানে প্রয়াসী হতে চাই।
888sport appsের নদ-নদী চিরকালই সংগীতের এক গুরুত্বপূর্ণ উৎস। নদীর স্রোত, নদীর ঢেউ, পাড় ভাঙার শব্দ, দুই পারে বিপুল বিস্তীর্ণ গাছগাছালি, জনপদের হাতছানি নৌবিহারী মাঝিমাল্লা-জেলেদের হৃদয়ে আবেগ সঞ্চার করে, তাদের কণ্ঠে সুর তুলে দেয়। তিতাস-কাহিনির ‘প্রবাস খণ্ডে’ অদ্বৈত মল্লবর্মণ লিখেছেন :
এতক্ষণ কূল ঘেঁষিয়া চলিতেছিল। ঢালা বালিরাশির বন্ধ্যা কূল। লোকের বসতি নাই, গাছপালা নাই, ঘাট নাই। কোনখানে একটি নৌকার খুঁটিও নাই। এমনি নিষ্করুণ নিরালা কূল। রোদ চড়িলে, শীত অন্তর্হিত হইল। সুদূরের ইশারায় এই নির্জনতার মাঝেও কিশোরের মনে যেন আনন্দের ঢেউ উঠিল। নদীর এই উদার রূপ দেখিতে দেখিতে অনেক গানের সুর মনে ভাসিয়া উঠিল। অদূরে একটি নৌকা। এদিকে আসিতেছে।
কিশোর তখন গলা ছেড়ে গান ধরে –
উত্তরের জমিনেরে, সোনাবন্ধু হাল চষে,
লাঙ্গলে বাজিয়া উঠে খুয়া।
দক্ষিণা মলয়ার বায়, চান্দমুখ শুখাইয়া যায়
কার ঠাঁই পাঠাইব পান গুয়া।
কিংবা,
নদীর কিনার দিয়া গেল বাঁশি বাজাইয়া
পরার পিরীতি মধু লাগে।
কু-খেনে বাড়াইলাম পা’ খেয়াঘাটে নাইরে না’
খেয়ানীরে খাইল লঙ্কার বাঘে।
এই নৌযাত্রার পরের দিন এক নদীর ঘাটে একজন সাধুর সঙ্গে পরিচয় ঘটে সুবল-কিশোর-তিলকচাঁদের। তারা সাধুর বাড়িতে আতিথ্য গ্রহণে বাধ্য হয়। রাতে আহারান্তে গানের আসর বসে। কৃষ্ণমন্ত্রী সাধুর খুব ভাব জমে যায় তিলকের সঙ্গে। সাধু প্রথমে বৃন্দাবনে রাধা-কৃষ্ণের লীলার প্রসঙ্গ তোলে। তারপর নদীয়ার গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুর প্রসঙ্গ তুলে অজ্ঞাতপরিচয় এক পদকর্তার গান গাইতে শুরু করে :
আছে মানুষ গ সই আছে মানুষ গওরচান্দের ঘরে,
নিগূঢ় বৃন্দাবনে গ সই, আছে মানুষ।
এক মানুষ বৈকুণ্ঠবাসী, আরেক মানুষ কালোশশী,
আরেক মানুষ গ সই, দেহের মাইজে রসের কেলি করে –
নিগূঢ় বৃন্দাবনে গ সই আছে মানুষ ॥
অদ্বৈত মল্লবর্মণের ভাষায় : ‘অনেক রাত পর্যন্ত গান হইল। সাধু নিজে গাহিল। পাড়ার আরো দু’চারজন গাহিল। তিলকও তাহার জানা ‘উঠান মাটি ঠন ঠন নিড়া নিল সোতে, গঙ্গা মইল জল-তিরাসে ব্রাহ্ম মইল শীতে’ গানটি গাহিল। সাধুর নির্বন্ধাতিশয্যে কিশোর আর সুবল দুইজনে তাহাদের গাঁয়ের সাধুর বৈঠকে শোনা দুই-তিনটি গান গাহিয়া সাধুর চোখে জল আনিল।’
দোল বা হোলি উৎসব, হিন্দু পুরাণমতে, রাধা-কৃষ্ণের এক বিশেষ মর্ত্যলীলা। গান পরিবেশনের সময় পুরুষরাই রাধা এবং কৃষ্ণের দলে ভাগ হয়ে যায়। আবার মেয়েদের গানের সময় মেয়েরাই রাধা এবং কৃষ্ণের ভূমিকা গ্রহণ করে। হোলি উৎসবে কৃষ্ণের দল আর রাধার দল একই আসরে সামনাসামনি অবতীর্ণ হয়ে নৃত্যসহযোগে যে-গান পরিবেশন করে তাকে ঝুমুর গান বলে। দুই দল পরস্পরকে পাল্টাপাল্টি আক্রমণ করে এই গানে। এই গান যে কীভাবে সাধারণ মানুষের মধ্যে ভাবাবেগ বা উত্তেজনা সৃষ্টি করে তা অদ্বৈতর ভাষাতেই শোনা যাক : ‘ গানের সময় যখন চড়িবে, ঝুমুরের তাল উঠিবে, তখন সে (তিলক) কোনোদিকে না চাহিয়া আসরের মাঝখানে দাঁড়াইয়া নাচিবে। একবার কোনরকমে উঠিয়া কয়েক পাক নাচিতে পারিলে, লজ্জা ভাঙিয়া যায়। কোনো অসুবিধা হয় না।’ এরপর দেখা যায়, গায়কেরা দুই দলে বিভক্ত হয়ে গান জুড়ে দেয়। প্রথমে রাধার দল পরিশীলিত ভাবে গান ধরে –
সুখ-বসন্তকালে, ডেকো না রে
আরে কোকিল বলি তুমারে॥
বিরহিনীর বিনে কান্ত হৃদাগ্নি হয় জ্বলন্ত,
জলে গেলে দ্বিগুণ জ্বলে হয়নারে শান্ত।
সে-যে ত্যজে’ অলি কুসুমকলি রইল কি ভুলে।
কৃষ্ণের দল সুর চড়ায় –
বসন্তকালে এলরে মদন – ঘরে রয় না আমার মন॥
বিদেশে যাহার পতি,
সেই 888sport promo codeর কি বা গতি,
কতকাল থাকিবে 888sport promo code বুকে দিয়া বসন॥
রাধার দল তখনো ধৈর্য ধারণ করে গায় –
বনে বনে পুষ্প ফুটে’।
মধুর লোভে অলি জুটে,
কতই কথা মনে মনে উঠে সই –
ব্যথা কারবা কাছে কই॥
দারুণ বসন্তকাল গো,
নানা বৃক্ষে মেলে ডাল গো,
প্রবাস করে চিরকাল সে এল কই –
বসিয়া তরুর শাখে কুহুকুহু কোকিল ডাকে
আরে সখিরে এ-এ-এ-
কৃষ্ণের দল এবার অসভ্য হয়ে গেয়ে ওঠে –
আজু শুন ব্রজ888sport promo code,
রাজোকুমারী, তোমার যৌবনে করব আইন জারি।
হন্তে ধরে নিয়ে যাব
হৃদকমলে বসাইব – রঙ্গিনী আয় লো –
হন্তে ধরে নিয়ে যাব, হৃদকমলে বসাইব।
বসন তুলিয়া মারব ঐ লাল পিচোকারী –
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তিতাস বা মেঘনাপাড়ের মালো সম্প্রদায়ের লোকেরা জেলে এবং মাঝি দুই-ই। দীর্ঘ নৌযাত্রায় পথের ক্লান্তি ভুলতে তারা গান গায়। কখনো সারাদিনের নৌবিহারের পর কোনো ঘাটে নৌকা বেঁধে স্নানাহার সেরে বিশ্রামান্তে তারা কণ্ঠে গান তুলে নেয়। এই গানের শ্রোতা কখনো গায়ক নিজে, কখনো সহকর্মী-সহযাত্রী জেলেরা, কখনো নদীর
ঢেউ-আকাশ-বাতাস-প্রকৃতি। অদ্বৈত লিখেছেন :
তারাও শ্রান্ত ক্লান্ত। খাইয়া দাইয়া শুইবে। কিন্তু 888sport appsের পূর্বাঞ্চলের এই নদী-বিহারীদের কতকগুলি নিজস্ব সম্পদ আছে। অমনিতেই তারা শুইয়া পড়ে না। ঐ গুলিকে বুক দিয়া ভোগ করিয়া নিয়া তবে নিদ্রার কোলে আশ্রয় নেয়। কোনো নৌকায় মুর্শিদা বাউল গান হইতেছে –
এলাহির দরিয়ার মাঝে নিরঞ্জনের খেলা,
শিল পাথর ভাসিয়া গেল শুকনায় ডুবল ভেলা।
জলের আসন জলের বসন দেইখ্যা সারাসারি,
বালুচরে নাও ঠেকাইয়া পলাইল বেপারী।
কোনো নৌকায় আরেক জেলে সুর ধরে বারোমাসি গানে।
এহী ত আষাঢ় মাসে বরিষা গম্ভীর,
আজ রাত্রি হবে চুরি লীলার মন্দির।
কোনো নৌকায় কেচ্ছার ফাঁকে ফাঁকে গান ধরে কেচ্ছাকথক।
আরদিন উঠেরে চন্দ্র পুবে আর পশ্চিমে।
আজোকো উঠছেরে চন্দ্র শানের বান্ধান ঘাটে।
তিতাস একটি নদীর নাম 888sport alternative linkের ‘নয়া বসত’ পর্বে জারিগানের 888sport live chatী বাহারুল্লার দেখা মেলে। এখন আর সে জারিগান করে না। পল্লীগ্রামের সাধারণ মানুষের বিনোদনের মাধ্যম ছিল এই জারিগান। কখনো হাসি-তামাশা, কখনো বীররস কিংবা করুণরস পরিবেশন করে বাহারুল্লা শ্রোতাদের এক অপার্থিব সুরের সাগরে ভাসিয়ে দিত। বাহারুল্লা একদিন রামপ্রসাদের বাড়িতে আসে। বাহারুল্লাকে দেখে রামপ্রসাদের পুরনো 888sport sign up bonus ভেসে ওঠে। তার উঠানে একসময় কত জারিগান হতো। অনেক দূরের গ্রাম থেকে সেরা সব ওস্তাদ আসত। একমাস ধরে সেই ওস্তাদরা পাড়ার ছেলেদের তালিম দিত। গানের সময় তারা কাঁধে কাঁধে কোমরে-কোমরে ধরে বীরের নাচ নাচত। সারা প্রাঙ্গণ যেন কেঁপে উঠত। বাহারুল্লাকে উদ্দেশ্য করে রামপ্রসাদ বলে : ‘বাহারুল্লা ভাই গানগুলি কি ভাল লাগত। এই দুইটি গানের সুর অখনো মরমে গাঁথা হইয়া আছে – ‘মনে লয় উড়িয়া যাই, কারবালার ময়দানে’ আর ‘জয়নালের কান্দনে, মনে কি আর মানে রে, বিরিক্ষের পত্র ঝরে।’ জবাবে বাহারুল্লা বলে : ‘হ মতব্বর এই সগল গানই খুব জমত। আরেকটা গানও বেশি জমত, মনে পড়ে নি মাতব্বর, – ‘বাছা তুমি রণে যাইও না, চৌদিকে কাফিরের দেশ জহর মিলে ত পানি মিলে না।’’
প্রতিবছরই বসন্ত আসে মালোপাড়ায়। সারা বছরের রংহীন বিবর্ণ জীবনটাকে তারা যেন রাঙিয়ে নিতে চায় আবীরের রঙে। তারা মেতে ওঠে দোল উৎসবের হোলিখেলায়। অদ্বৈত লিখেছেন :
মালোরা সেদিন সকাল সকাল জাল তুলিয়া বাড়ি আসিল, আসিয়া তারা হোলির আসরে বসিয়া গেল। ঢোলক বাজাইয়া গান ধরিল, ‘বসন্ত-তুই এলি রে, ওরে আমার লালত এলা না।’ এ গানের পর আর একজন ঘাড় কাত করিয়া গালে হাত দিয়া ওস্তাদি ভঙ্গিতে যে গান গাহিল, তার ধুয়া হইতেছে, ‘তালে লালে লালে লালে লালে লালে লালে লালে’ যেন তার আকাশ ভুবন একেবারে লাল হইয়া গিয়াছে। কিন্তু এটা বোল। আগে শুধু বোলটাই গাহিয়া শেষে উহাকে কথা দিয়া পূরণ করিল,
‘ব-স-ন-তে-রি জ্বালায় আমার প্রাণে ধৈ-র্য মানে না’। মূল গায়েন আবার বোল চালাইল, ‘তালে লালে লালে লালে’ ইত্যাদি।
888sport alternative linkের ‘রামধনু’ পর্বে নয়নতারা ও উদয়তারার দীর্ঘকাল বাদে দেখা হওয়ার পর স্বামীর প্রসঙ্গ ওঠে। নয়নতারার গলায় মোটা তুলসীমালা দেখে উদয়তারা 888sport apk download apk latest versionশীলা হয়ে ওঠে। কৃষ্ণপ্রেমে বিভোর নয়নতারার চেতনায় স্বামীই তার কৃষ্ণ আর কৃষ্ণই তার স্বামী। গানের সুরে নয়নতারা বলে – ‘ও চাঁদ গৌর আমার শঙ্খ-শাড়ি, ও চাঁদ গৌর আমার সিঁথির সিন্দুর চুল বান্ধা দড়ি, আমি গৌর-প্রেমের ভাও জানি না ধীরে ধীরে পাও ফেলি।’ উদয়তারা, নয়নতারা আর আসমানতারা তিন বোন সারারাত ধরে পিঠা বানায়, ‘শিলোক’ বলে আর খুনসুটি করে। পাশের ঘরে অনন্ত ঘুমায়। ‘ভোরের আঁধার ফিকা হইবার সঙ্গে সঙ্গে অনন্তর ঘুম পাতলা হইয়া আসিল। উঠান দিয়া কে মন্দিরা বাজাইয়া গাহিয়া চলিয়াছে –
রাই জাগো গো, আমার ধনী জাগো গো,
বৃন্দাবন বিলাসিনী, রাই জাগো গো।
… … …
শুক বলে ওগো সারী কত নিদ্রা যাও,
আপনে জাগিয়া আগে বন্ধুরে জাগাও;
আমার রাই জাগে গো, আমার ধনী জাগে গো,
বৃন্দাবন বিলাসিনী, রাই জাগো গো।
শ্রাবণ মাসে মনসাপূজা উপলক্ষে তিতাসপাড়ের মালোপাড়ায় পদ্মপুরাণের গানের আসর বসে। বনমালী বাড়ি বাড়ি গিয়ে পদ্মপুরাণের গান পরিবেশন করে। এক এক রাতে এক এক বাড়িতে এই গানের আসর বসে। যে সাধু মন্দিরা বাজিয়ে রাই জাগানোর গান পরিবেশন করে সেও এই গানের এক প্রধান গায়ক। সহ-গায়ক হিসেবে সে বনমালীকে বেশি পছন্দ করে। কারণ বনমালীর গলা সবার ওপরে। বনমালী ‘চিতান’ শুরু করে –
মা যে মতি চায় সে-মতি কর, কে তোমায় দোষে,
বল মা কোথায় যাই দাঁড়াইবার স্থান নাই,
আমারে দেখিয়া সাগর শোষে,
মা, আমারে দেখিয়া সাগর শোষে।
তিতাসপাড়ের এই জনজীবন-সংস্কৃতিতে পদ্মপুরাণের গান বিশেষ একটি স্থান দখল করে আছে। শুধু বিনোদন হিসেবেই নয়, গানের কাহিনি ও সুর একাকার হয়ে মিশে যায় এই প্রান্তজনেদের ভাবাবেগে। পদ্মপুরাণের গান তিতাসপাড়ের একঘেয়ে ঝিমিয়ে পড়া জীবনে যে প্রাণস্পন্দন জাগিয়ে তোলে তার রেশ দীর্ঘস্থায়ী হয়। বিবরণটি সামান্য দীর্ঘ হলেও অদ্বৈতর ভাষাতেই তা বলতে হয় :
দুই একজনে দোহার ধরিয়াছিল, যুৎসই করিতে না পারিয়া ছাড়িয়া দিল। ছাড়িল না শুধু অনন্ত। সুরটা অনুকরণ করিয়া বেশ কায়দা করিয়াই তান ধরিয়াছিল সে। মোটা মোটা সব গলা মাঝপথে অবশ হইয়া যাওয়াতে তার সরু শিশুগলা পায়ের তলায় মাটি ছাড়া হইয়া বায়ুর সমুদ্রে কাঁপিতে কাঁপিতে ডুবিয়া গেল। তার দিকে প্রসন্ন দৃষ্টিতে চাহিয়া বাবাজী বনমালীকে বলিলেন, ‘পুরান সুর। কিন্তু বড় জমাটি। আইজকালের মানুষ শ্বাসই রাখতে পারে না, এসব সুর তারা গাইব কি? যারা গাইত তারা দরাজ গলায় টান দিলে তিতাসের ঐ-পারের লোকের ঘুম ভাঙত। কর্ণে করত মধু বরিষণ। অখন সব হালকা সুর। হরিবংশ গান, ভাইটাল সুরের গান অখন নয়া বংশের লোকে গাইতে পারে না, গাঁওয়ে গাঁওয়ে যে দুইচারজন পুরান গাতক অখনো আছে, তারা গায়, আর গলায় জোর দেইখ্যা জোয়ান মানুষ চমকায়। সোজা একটা লাচারী তোল বনমালী!’ বনমালী সহজভাবেই তুলিল
সোনার বরণ দুইটি শিশু ঝল্মল ঝল্মল করে গো,
আমি দেইখে এলাম ভরতের বাজারে।
বাবাজী বলিলেন, ‘না এইখানে এই লাচারী খাটে না। কাইল প্রহলাদের বাড়িতে লখিন্দরের সর্পে দংশন করছিল; অখন তারে কলার ভেলাতে তোলা হইছে, ভেলা ভাসব, যাত্রা করব উজানীনগর, আর গাঙ্গের পারে পারে ধেনুক হাতে যাত্রা করব বেহুলা। দিশা কইরা তোল।’
‘অ ঠিক, সুমন্দ্র চইলে যায়রে, যাত্রাকালে রাম নাম।’
‘রামায়ণের ঘুষা। তরণীসেণ যুদ্ধে যাইতেছে। আচ্ছা, চলতে পারে।’
ভেলা চালিয়াছে নদীর স্রোত ঠেলিয়া উজানের দিকে; তীরে বেহুলা, হাতে তীর ধনুক, কাক, শকুন বসিতে যায় ভেলাতে, পার হইতে বেহুলা তীর নিক্ষেপের ভঙ্গি করিলে উড়িয়া যায়। কত গ্রাম, কত নগর, কত হাওর, কত প্রান্তর, কত বন, কত জঙ্গল পার হইয়া চলিয়াছে বেহুলা, আর নদীতে চলিয়াছে লখিন্দরের ভেলা। এইখানে ত্রিপদী শেষ হইয়া দিশা শুরু।
‘এইবার চান্দসদাগরের বাড়িতে কান্নাকাটি। খেদের দিশা তোল।’ বনমালী একটু ভাবিয়া তুলিল –
সাত পাঁচ পুত্র যার ভাগ্যবতী মা;
আমি অতি অভাগিনী একা মাত্র নীলমণি,
মথুরার মোকামে গেলা, আর ত আইলা না।
বিয়ের পর কন্যা যখন প্রথম স্বামীসহ বাপের বাড়িতে আসে তাকে দ্বিরাগমন বলে। এই উপলক্ষে যুবতীরা এবং ঠাট্টাসম্পর্কীয়ারা জামাই ঠকানোর জন্য বিনোদনমূলক গান পরিবেশন করে। তাদের বিবেচনায় জামাই কতকগুলো গর্হিত কাজ করেছে। জামাই তাদের জন্য পান, পানের মসলা, বাতাসা এসব কিছুই আনেনি। তাই দুপুরে স্নানের পূর্বে দলবেঁধে মেয়েরা জামাইকে শুনিয়ে শুনিয়ে গান গায় –
জামাই খাইতে জানে, নিতে জানে, দিতে জানে না,
তোমরা ভদ্র বইলো না।
জামাই যদি ভদ্র হইত, বাতাসার হাঁড়ি আগে দিত,
জামাই খাইতে জানে, নিতে জানে ইত্যাদি।
শ্রাবণ মাসের শেষে পদ্মপুরাণ গানের এক পর্যায়ে ‘জালা-বিয়া’র একটি পর্ব থাকে। লোকশ্রুতি আছে যে, মৃত স্বামীকে নিয়ে ভেলায় ভাসার পূর্বে বেহুলা তার শাশুড়ি ও জায়েদের হাতে কতগুলি সিদ্ধধান দিয়ে বলেছিল যে, লখিন্দর যেদিন বেঁচে উঠবে সেদিন এই ধানে চারা গজাবে। অদ্বৈতর ভাষায় :
বেহুলার এয়োস্তালির স্মারকচিহ্ন রূপে মনসাপূজার দিন এক অভিনব বিবাহের আয়োজন করে। ধানের চারা বা জালা এর প্রধান উপকরণ। তাই এর নাম জালা-বিয়া। এক মেয়ে বরের মত সোজা হইয়া চৌকিতে দাঁড়ায়, আরেক মেয়ে কনের মত সাতবার তাকে প্রদক্ষিণ করে, দীপদানির মত একখানি পাত্রে ধানের চারাগুলি রাখিয়া বরের মুখের কাছে নিয়া প্রতিবছর নিছিয়া-পুঁছিয়া লয়। এই ভাবে জোড়ায় জোড়ায় 888sport promo codeদের মধ্যে বিবাহ হইতে থাকে আর একদল 888sport promo code গীত গাহিয়া চলে।
তিতাস-কাহিনিতে নৌকাবাইচ উপলক্ষে নৌকার মাঝি ও বৈঠামারাদের সমন্বয়ে একজন সারিগায়কের তত্ত্বাবধানে সারিগানের প্রসঙ্গ এসেছে। তিতাসের বুকে নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতার জন্য অনেকগুলি সুসজ্জিত নৌকা জড়ো হয়। প্রতিযোগিতার পূর্বে ‘নৌকাগুলি ধীরে সুস্থে বৈঠা ফেলিয়া ফেলিয়া নানা সুরের সারিগান গাহিয়া গাঙময় এধার ওধার ফিরিতেছে।’ একটি গানের কলি শোনা গেল – ‘আকাঠ মান্দাইলের নাও, ঝুনুর ঝুনুর করে নাও, জিত্যা আইলাম রে নাওয়ের গলুই পাইলাম না।’ ‘মাঝখানে থাকিয়া একদল লোক গাহিতেছে, আর বৈঠাধারীরা সকলে এক তালে সে গানের পদগুলি পুনরাবৃত্তি করিতেছে।’
তারে ডাক দে, দলানের বাইর হইয়া গো, অ দিদি,
প্রাণবন্ধুরে তোরা ডাক দে ॥
আমার বন্ধু খাইবে ভাত, কিনা আনলাম মাগুর মাছ, অ দিদি
দুধের লাগি পাঠাইয়াছি, পয়সা কি সুকি, কি টেকা গো, অ দিদি
প্রাণবন্ধুরে তোরা ডাক দে ॥
আমার বন্ধু 888sport app যায়, গাঙ পারে রান্ধিয়া খায় গো, অ
দিদি
জোয়ারে ভাসাইয়া নিল হাঁড়ি, কি ঘটি, কি বাটি গো, অ দিদি
প্রাণবন্ধুরে তোরা ডাক দে ॥
আমার বন্ধু রঙ্গিঢঙ্গি, হাওরে বেন্ধেছে টঙ্গি গো, অ দিদি
টঙ্গির নাম রেখেছে উদয়তারা, কি তারা, কি তারা গো, অ দিদি
প্রাণবন্ধুরে তোরা ডাক দে ॥
আমার বন্ধু আসবে বলি, দুয়ারে না দিলাম খিলি গো, অ দিদি
ধন থুইয়া যৈবন করল চুরি, কি চুরি, কি চুরি গো, অ দিদি
প্রাণবন্ধুরে তোরা ডাক দে ॥
নৌকাবাইচ শুধু নৌকাদৌড়ের প্রতিযোগিতা নয়, যেন সারিগানেরও প্রতিযোগিতা। সারিগানের উন্মাদনা বৈঠাধারীদের যেমন উজ্জীবিত রাখে তেমনি বাইচ-দর্শনার্থীদেরও শ্রুতিবিনোদন করে। নৌকায় বৈঠা মারার তাল, ছন্দ ও শব্দ যেন ভিন্ন এক সংগীতসুর সৃষ্টি করে। নৌকাবাইচের দীর্ঘ পথপরিক্রমায় বিভিন্ন নৌকায় এই সারিগান পরিবেশিত হয়। অদ্বৈতর সংগীত গবেষণায় দেখা যায়, নৌকাবাইচে ব্যবহৃত সারিগানগুলি অজ্ঞাত কোনো লোককবিদের রচনা। বংশপরম্পরায় তিতাসপাড়ের মানুষের মুখে মুখে গানগুলি বেঁচে আছে এবং বয়ে চলেছে।
নৌকাবাইচের প্রতিযোগিতার মতো, তিতাসপাড়ের মালোরাও এক পর্যায়ে দুটি দলে বিভক্ত হয়ে গানের অশুভ প্রতিযোগিতায় নামে। শহরের কায়েতবাবুরা মালোপাড়ায় অনুপ্রবেশ করে নিজেদের স্বার্থ প্রতিষ্ঠার জন্য মালোদের মধ্যে বিভাজন তৈরি করে। তার একপক্ষে নেতৃত্ব দেয় কালোবরণ অপরপক্ষে মোহন। কায়েতবাবুরা আধুনিক যাত্রাপালা দিয়ে মালোদের নিজস্ব সংগীত সংস্কৃতিকে ধ্বংস করতে চায়। কালোবরণ যেন এই কায়েতবাবুদের এক ক্রীতদাস। পক্ষান্তরে মোহন নিজস্ব 888sport live chat-সংস্কৃতি রক্ষায় বদ্ধপরিকর। এই দুই বিপরীত ধারার মানসিকতা নিয়ে শুরু হয় সংগীতের এক অসম প্রতিযোগিতা, এক বিধ্বংসী জুয়া খেলা। মূলত যে-কোনো অজুহাতে তথাকথিত আধুনিক সংগীত-সংস্কৃতির আগ্রাসী ঢেউ কীভাবে মালোদের আদি সংগীতধারাকে প্রভাবিত করছে তারাই এক বাস্তব চিত্র অংকন করেছেন অদ্বৈত মল্লবর্মণ।
মালোপাড়ায় সংস্কৃতিগত বিরোধের সূচনা কীভাবে হয়েছিল তার বর্ণনা অদ্বৈতর ভাষাতেই বলা যাক :
যাত্রাদলের যারা পান্ডা, তারা অর্থে ও বুদ্ধিতে মালোদের চেয়ে অনেক বড়। তারা অনেক শক্তি রাখে। কিন্তু একসঙ্গে সর্বশক্তি প্রয়োগ না করিয়া, অল্পে অল্পে প্রয়োগ করিতে লাগিল। যেদিন বিরোধের সূত্রপাত হইয়াছিল তার পরের দিন তারা তামসীর বাপের বাড়িতে আরও জাঁকিয়া বসিল। এতদিন ছিল শুধু তবলা, এবার আসিল হারমোনিয়াম, বাঁশি ও বেহালা। গীতাভিনয়ের তিন রকমের তিনটা বই আসিল। আগে কেউ নামও শুনে নাই এমনি একটা পালার তালিম দেওয়া শুরু হইল। তামসীর বাপ আগে সেনাপতি সাজিত, তাকে দেওয়া হইল রাজার পাঠ। জানাইয়া দিল মালোপাড়ার ছেলেদের তারা সখীর পাঠ দিবে। অভিভাবকেরা ছেলেদের যাত্রাদলে যোগ দিতে নিষেধ করিল। তারা বিড়ি খায়, ঘাড়-কাটা করিয়া চুল ছাঁটে, গুরুজনের সামনে বেলাহাজ কথা বলে। ঠাকুর দেবতার গান ছাড়িয়া পথে ঘাটে সখীর গানে টান দেয়, এতে তাদের স্বভাবচরিত্র খারাপ হইয়া যায়। অন্যপাড়া হইতে সখী সংগ্রহ হইল। কিন্তু সাজ-মহড়া হইল মালোপাড়াতে। তামসীর বাপের উপর মালোরা চটিল। কিন্তু মালোর মেয়েরা মহড়া দেখিতে গিয়া মুগ্ধ হইল, কাঁদিয়া ভাসাইল এবং ছেলেদের সখী সাজিতে দিবে বলিয়া সংকল্প করিল। পরের মহড়ায় মালোপাড়ার কয়েকটি ছেলে অন্যপাড়ার ছেলেদের সঙ্গে সখী সাজিয়া নাচিল। বামহাত কোমরে রাখিয়া ডান হাতের আঙ্গুলি চিবুকে লাগাইয়া গাহিল : ‘চুপ, চুপ, চুপ লাজে সরে যাবে, ধীরে ধীরে চল সজনীলো। ধুলা দিয়ে সখী আমাদের চোখে গোপনে প্রণয় রেখেছে ঢেকে, এবার ভোমর যাবে রে ছুটে চল, না যেতে যামিনী লো, চুপ, চুপ।’
এই গান এবং নাচ মেয়েদের মন্ত্রমুগ্ধ করে ফেলল। তুল্যমূল্য বিচারে নিজেদের গানের ওপরে স্থান দিলো এই নাচগানকে। তারা অনুরক্ত হয়ে পড়ল যাত্রাগানের প্রতি। মালোদের একটি পক্ষ এই গানে বাধা দিলো। তামসীর বাপকে একঘরে করার ভয় দেখাল। এ-গান যে খারাপ, এতে ছেলেমেয়েদের মাথা বিগড়ে যাবে – এসব তাকে বোঝানোর চেষ্টা করল। কিন্তু বিশেষ ফল হলো না। ‘আরে রাখ রাখ, মালোদের গান আবার একটা গান। এও গান আর আমরা যা গাই তাও গান। আমরা তো গাই – ‘আজো রাতি স্বপনে শ্যামরূপ লেগেছে আমার নয়নে/ ফুলের শয্যা ছিন্নভিন্ন রাধার বসনে।’ যাত্রাদলের এক অভিনেতা পাটনীপাড়ার অশ্বিনী নদীর ঘাটে সুবলের বউকে দেখে গান ধরে, ‘যেই না বেলা বন্ধুরে ধইল ঘোড়া দৌড়াইয়া যাও, সেই বেলা আমি 888sport promo code সিনানে যাই। কুখেনে বাতাস আইলো বুকের কাপড় উড়াইল, প্রাণবন্ধু দেখিল সর্বগাও।’ দুপুরে রান্না করতে বসে সুবলের বউ আবার শুনতে পায় ‘যেই না বেলা বন্ধুরে রাজ দরবারে যাও, সেই বেলা আমি রান্ধি। কাঁচা চুলা আর ভিজা কাষ্ঠরে বন্ধু, ধুঁয়ার ছলনা কইরে কান্দি।’ একদিন খেতে বসে সুবলের বউ শুনতে পায় গানের আরেক কলি ‘যেই না বেলা বন্ধুরে বাঁশিটি বাজাইয়া যাও, সেই বেলা আমি 888sport promo code খাই। শাশুড়ি ননদীর ডরে কিছু না বলিলাম তোরে, অঞ্চল ভিজিল আঁখির জলে।’ মালোপাড়ায় যাত্রাগানের প্রধান পৃষ্ঠপোষক কালোবরণকে বোঝানোর চেষ্টা চলল। ‘আমরা যাত্রা গাহিব কেন! আমাদের কি গান নাই! মুরুব্বিরা কি আমাদের জন্য গান কিছু কম রাখিয়া গিয়াছে। সে সব গানের কাছে যাত্রাগান তো বাঁদী।’
যাপিত জীবনের অভিজ্ঞতায় মালোদের 888sport live chat-সংস্কৃতি-বিশ্বাস-সংস্কার-আচার-উৎসব-অনুষ্ঠানে মিশ্রণের গন্ধ আর ভাঙনের সুর টের পেতে শুরু করেছিলেন অদ্বৈত মল্লবর্মণ। কলকাতার নগরসভ্যতার চাকচিক্যের মধ্যে থেকে যখন নিজস্ব জীবন-সংস্কৃতির মহাকাব্য রচনা করছিলেন তখনই তিনি বুঝতে পারছিলেন নাগরিক সংস্কৃতি আর লোকজসংস্কৃতির বিরোধটা কোথায় এবং কীভাবে। অদ্বৈতর মাটির গন্ধমাখা পাললিক চেতনায় নিজস্ব সংগীতের যে-শেকড় গভীরে প্রোথিত হয়েছিল সেটি নড়বড়ে হয়ে যাওয়ার আভাস তিনি পাচ্ছিলেন তাঁর পারিপার্শ্বিক জীবনপ্রবাহের গতি-প্রকৃতি দেখে। নিজস্ব উপলব্ধিটাই তিনি গেঁথে দিয়েছেন 888sport alternative linkের পাতায়।
মালোদের নিজস্ব একটি সংস্কৃতি ছিল। গানে গল্পে প্রবাদে এবং লোক888sport live footballের 888sport app মালমসলায় যে সংস্কৃতি ছিল অপূর্ব। পূজায় পার্বণে হাসি ঠাট্টায় এবং দৈনন্দিন জীবনের আত্মপ্রকাশের ভাষাতে তাদের সংস্কৃতি ছিল বৈশিষ্ট্যপূর্ণ। মালো ভিন্ন অপর কারো পক্ষে সে সংস্কৃতির ভিতরে প্রবেশ করার বা তার থেকে রস গ্রহণ করার পথ সুগম ছিল না। কারণ মালোদের 888sport live football উপভোগ আর সকলের চাইতে স্বতন্ত্র। পুরুষানুক্রমে প্রাপ্ত তাদের গানগুলি ভাবে যেমন সুমধুর, সুরেও তেমনি অন্তরস্পর্শী। সে ভাবের, সে সুরের মর্ম গ্রহণ অপরের পক্ষে সুসাধ্য নয়। ইহাকে মালোরা প্রাণের সঙ্গে মিশাইয়া নিয়াছিল, কিন্তু অপরে দেখিত ইহাকে বিদ্রƒপের দৃষ্টিতে! আজ কোথায় যেন তাদের সে সংস্কৃতিতে ভাঙ্গন ধরিয়াছে। সেই গানে সেই সুরে প্রাণ ভরিয়া তান ধরিলে চিত্তের নিভৃতিতে ভাব যেন আর আগের মত দানা বাঁধিতে চায় না, কোথায় যেন কিসের একটা বজ্রদৃঢ় বন্ধন শ্লথ হইয়া খুলিয়া খুলিয়া যায়। যাত্রার দল যেন কঠোর কুঠারাঘাতে তার মূলটুকু কাটিয়া দিয়াছে।
ঘটনার ধারাবাহিকতায় কালোবরণের উঠোনে যাত্রার দল আর মোহনের উঠোনে বিচ্ছেদী গানের দলকে অবস্থান নিতে দেখা যায়। সংগত কারণেই মালোপাড়ার আবালবৃদ্ধবণিতা দর্শক শ্রোতারাও দুই দলে বিভক্ত হয়ে যায়। নতুনের প্রতি স্বাভাবিক আকর্ষণবোধের কারণে কালোবরণের উঠোনে লোক888sport free bet বেশি। কালোবরণের বাড়িতে বীরবিক্রমে যখন যাত্রার সংলাপ চলে, তখন মোহনের উঠোনে চলে মরমিসুরের বিচ্ছেদী গান – ‘ভোমর কইও গিয়া, কালিয়ার বিচ্ছেদে রাধার অঙ্গ যায় জ্বলিয়া॥ না খায় অন্ন না লয় পানি, না বান্ধে মাথার কেশ, তুই শ্যামের বিহনে রাধার পাগলিনীর বেশ॥’ মোহনের বাড়িতে আসরে উপস্থিত শ্রোতাদের চোখে-মুখে নিজস্ব সংগীত-সংস্কৃতি রক্ষার প্রদীপ্ত প্রত্যয়। কালোবরণের বাড়িতে বেহালা, হারমোনিয়াম, তবলা, ঢোলকের উচ্চ নিনাদ মোহনের খঞ্জনি আর রসমাধুরী যন্ত্রের সুরকে ম্লান করে দিলো। তাছাড়া যাত্রাগানের চিৎকার,
হাসি-হই-হল্লোড় রাত্রির নীরবতা আর অন্ধকারকে খান খান করে মোহনের বাড়ির বেশিরভাগ শ্রোতাই টেনে নিয়ে গেল। ভিড় পাতলা হয়ে গেলেও নিজেদের গানের অস্তিত্ব রক্ষায় মরিয়া হয়ে ওঠে মোহন আর উদয়চাঁদ। রাত গভীর হতে থাকে। এখন ভাটিয়াল গানের সময়। অদ্বৈতর ভাষায় :
এখন এমন সময়, যখন জীবনের ফাঁকে ফাঁকে জীবনাতীত আসিয়া উঁকি দিয়া যায়। এখন কান পাতিয়া রাত্রির হৃদস্পন্দন শুনিতে অনেক গভীর ভাবের অজানা স্পর্শ অনুভব করা যায়। অনেক অব্যক্ত রহস্যের বিশ্বাতীত সত্তা এই সময় আপনা থেকে মানুষের মনের নিভৃতে কথা কহিয়া যায়। সে কথা ভাটিয়ালি সুরে যে ইঙ্গিত দিয়া যায় অন্য সময়ে তাকে ধরাছোঁয়ার মধ্যে পাওয়া যায় না।
মোহনের দলের গানের সুর তিতাসের অপর পারেও প্রতিধ্বনিত হয়। রাধাকৃষ্ণের অভিসার নিয়ে চলে মোহনের গান। মালোরা গানের সকল কথার অর্থ না বুঝতে পারলেও গানের সুর যেন তাদের জীবনাতীত কোনো বার্তা শুনিয়ে যায়। পরম প্রার্থিতের সঙ্গে ক্রমে মিলনমুর্হূত ঘনিয়ে আসছে। রাতও ভোর হয়ে আসছে। গানের সুর অপার্থিব এক মায়াজাদু ছড়িয়ে কালোবরণের উঠোনের সকল শ্রোতাকে টেনে নিয়ে আসে মোহনের আসরে। কালোবরণের বাড়িতে মালোরা ভাড়া করা গায়কের গান শুনেছে। গায়কদের সঙ্গে শ্রোতাদের কণ্ঠ মেলেনি। মোহনের বাড়ির গান মালোদের সকলেরই প্রাণের গান। ‘যত দূরেই থাক, এর সুর একবার কানে গেলে আর যায় কোথা। অমনি সেটি প্রাণের ভিতর অনুরণিত হইয়া ওঠে। কাছে থাকিলে সঙ্গে গলা মিলাইয়া গায়। দূরে থাকিলে আপন মনে গুনগুন করিয়া গায়।’
মোহনের বাড়ির গান যেন আবার বিভক্ত মালোদের একসূত্রে এক সুরে বেঁধে দিলো। উদয়চাঁদের সঙ্গে সকল শ্রোতা গলা মিলিয়ে গাইতে শুরু করে –
না ওরে বন্ধ্ বন্ধ্ বন্ধ্ কি আরে ব্ন্ধ রে,
তুই শ্যামে রাধারে করিলি কলঙ্কিনী।
মথুরার হাটে ফুরাইল বিকিকিনি ॥
না ওরে বন্ধু
তেল নাই সলিতা নাই, কিসে জ্বলে বাতি।
কেবা বানাইল ঘর, কেবা ঘরের পতি ॥
না ওরে বন্ধু –
উঠান মাটি ঠন ঠন পিড়া নিল সোতে।
গঙ্গা মইল জল-তিরাসে ব্রহ্মা মইল শীতে ॥
আপাতত মিলনের সুর বাজলেও তা স্থায়ী হয় না। নতুন উদ্যমে কালোবরণের বাড়িতে যাত্রাগানের আয়োজন শুরু হয় এবং একপর্যায়ে তা গোটা মালোসমাজকে আচ্ছন্ন করে ফেলে। সে অন্য অধ্যায়, অন্য ইতিহাস।
তিতাস একটি নদীর নাম 888sport alternative linkে সংগীতের প্রাসঙ্গিক ব্যবহার করে অদ্বৈত মল্লবর্মণ যেমন তাঁর নিজের সংগীতানুরাগ প্রকাশ করেছেন, তেমনি 888sport alternative linkে উল্লিখিত বিশেষ জনপদের বিশেষ একটি জনগোষ্ঠীর সামগ্রিক জীবনব্যবস্থার সঙ্গে
আনন্দ-উৎসবে-অনুষ্ঠানে-মিলনে-বিরহে-রঙ্গ-রসিকতায় সংগীতের যে গভীর যোগসূত্র রয়েছে সেই সত্যটিও প্রকটিত করেছেন। তথাকথিত অশিক্ষিত কিংবা নিরক্ষর এই মানুষগুলির যে উদ্ভাবনী এবং সৃষ্টিশীল সংগীতপ্রতিভা রয়েছে এবং জীবনের বিভিন্ন অনুষঙ্গে তারা যে সেগুলিকে যথাযথভাবে ব্যবহার করতে পারে, তা সত্যিই এক অবাক বিস্ময়। সামগ্রিক বিচারে এই গানগুলির সুরের প্রসঙ্গ নিয়ে একটি প্রশ্ন থেকে যায়। অর্থাৎ কোন সুরে গীত হতো এসব গান। সহজভাবে বলা যায়, প্রতিটি গানের ধারারই নিজস্ব একটি সুরের ধারাও রয়েছে। সেই সুরের ধারাতেই এই গানে সুর সংযোজিত হয়েছে – এমনটি বেশ জোরের সঙ্গেই বলা যায়। প্রতিটি গানের বাণী (সুরের প্রসঙ্গটি বাদ থাক) 888sport alternative linkের এক একটি অবস্থাকে এতটাই প্রাণবন্ত, জীবনঘনিষ্ঠ এবং বিশ্বস্ত করে তুলেছে যা কাহিনিকে অধিকতর বেগবান হয়ে উঠতে সাহায্য করেছে। বাংলা 888sport live footballের খুব কম 888sport alternative linkেই সংগীতের এমন বিচিত্র এবং যথার্থ ব্যবহার দেখা যায়। অদ্বৈত মল্লবর্মণ এই 888sport alternative linkে সংগীতের ব্যবহার করে যেন পাঠকদের তাঁর সংগীতমানস অনুধাবনের সুযোগ করে দিয়েছেন। এই গানগুলি যেন তিতাসপাড়ের মালো সম্প্রদায়ের জীবনসংগীত হয়ে উঠেছে।
* এই 888sport liveে ব্যবহৃত সকল উদ্ধৃতি অদ্বৈত মল্লবর্মণের তিতাস একটি নদীর নাম 888sport alternative link থেকে গৃহীত হয়েছে।


Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.