ঘটনাটা নৈতিক স্খলনজনিত নয়, যেমনটি আজকাল শোনা যায়। আবার কোনো দুর্নীতির ঘটনাও নয়। সেরকম কিছু হলে সিদ্ধান্ত নেওয়াটা সহজ হতো।
তবে অভিযোগটা নিঃসন্দেহে গুরুতর। যদিও এ-ধরনের ঘটনার কথা আগে কেউ কখনো শোনেনি। অভিযোগটা উঠেছে একজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে। যার বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি আবার এলাকায় বেশ জনপ্রিয়। স্কুলের শিক্ষার্থীদের কাছে দেবতুল্য এই মানুষটি।
আহাদ মাস্টার। শিক্ষকতায় আছেন অনেক বছর ধরেই। অত্যন্ত সজ্জন মানুষ। ঈর্ষণীয় তার জ্ঞানের পরিধি। খুব ভালো পড়ান। লোকে বলে, তিনি নাকি গরু-গাধাকেও পিটিয়ে মানুষ করতে পারেন। এরকম একজন প্রণম্য শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ। স্বাভাবিকভাবেই এলাকায় বেশ চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। এমনকি গণমাধ্যমেও চলে এসেছে বিষয়টা।
এই বিষয় নিয়েই আজকের মিটিংয়ে একটা সিদ্ধান্ত হবে। ডিসি, এসপি, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, স্কুলের সব শিক্ষক, স্কুল ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্য, এলাকার 888sport app গণ্যমান্য ব্যক্তি সবাই উপস্থিত। স্থানীয় সাংবাদিকরাও জড়ো হয়েছেন। গ্রামের সাধারণ মানুষও ভিড় করেছে স্কুলমাঠে। একসঙ্গে এত নামিদামি মানুষের সমাগম এই স্কুলে আগে কখনো হয়নি।
আহাদ মাস্টারের কারণে এই গ্রামের মানুষরা আলাদা গর্ব করত। তারা এতদিন ধরে মনে করত, তার মতো মানুষ আছে বলে এই গ্রামটা আজ আলোকিত হয়ে আছে। তার জাদুকরী ছোঁয়ায় ছেলেমেয়েরা পড়ালেখা শিখে গ্রামের মুখ উজ্জ্বল করছে।
গ্রামের বেশিরভাগ মানুষের বোধগম্য নয় যে, মাস্টারের দোষটা কোথায়, কী অপরাধ সে করেছে। তারা শুধু জানে, মাস্টার খুব অন্যায় একটা কাজ করেছে – তাদের ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যৎ নষ্ট করে দিচ্ছে। এরকম দেবতার মতো একটা মানুষ কেন এই কাজটা করতে গেল – কেউ কিছু বুঝে উঠতে পারে না। শুধু প্রশ্নটা ঘুরপাক খায় সবার মাথায়। কারো কারো ভেতরে এমনও ভাবনা ক্রিয়াশীল যে, হয়তো কোনো গভীর চক্রান্তের শিকার হয়েছে আহাদ মাস্টার।
একটু পরেই অবশ্য সব খোলাসা হয়ে যাবে। সবাই জেনে যাবে আসলে কী ঘটেছিল, আর কেন ঘটেছিল।
এত জনপ্রিয় একজন শিক্ষককে নিয়ে ঘটনা বলে স্থানীয় প্রশাসন ও স্কুল কর্তৃপক্ষ অত্যন্ত সতর্কদৃষ্টি রেখেছে। একটু এদিক-সেদিক হলেই জনমনে ভুল ধারণা সৃষ্টি হতে পারে। অহেতুক অনাকাঙিক্ষত বিতর্কের মুখোমুখি হতে হবে। যাতে কোনো বিভ্রান্তি তৈরি না হয় এবং ভবিষ্যতেও কেউ যেন এ-নিয়ে রাজনীতি করার সুযোগ না পায়, তাই সবার উপস্থিতিতেই সভাটি করার সিদ্ধান্ত হয়েছে, যা হবে সবার সামনেই হবে – সবাই জানুক আসল সত্যিটা কী।
দুই
পুরনো গঞ্জটি এখন আর নেই। বহুকাল আগেই বিলীন হয়ে গেছে নদীভাঙনে। তারপর গড়ে উঠেছে এই বাজার। নাম নতুনগঞ্জ বাজার। অর্থনৈতিকভাবে বর্ধিষ্ণু এই জনপদের সব কর্মচাঞ্চল্য এখন এই গঞ্জকে ঘিরেই।
নদীর তীর ঘেঁষে এঁকেবেঁকে চলে গেছে এলজিইডির আঞ্চলিক সড়ক। পাকা এই সড়ক ধরে কিছুদূর এগোলেই প্রথমে পড়বে নতুনগঞ্জ হাইস্কুল। স্কুল পেরিয়ে আরো খানিকটা গেলেই নতুনগঞ্জ বাজার। স্কুলের সামনে একটা বড় ফটক। ঢুকতেই বিশাল একটা মাঠ। ডানদিকে একটা অশোক গাছ ছড়িয়ে আছে অনেকখানি জুড়ে। আর বরাবর সোজা গেলে দোতলা স্কুলভবন। স্কুলের বারান্দায় দাঁড়ালে নদীটি দেখা যায়। স্কুলের পুরনো লম্বা টিনের ঘরটি এখনো আছে। অনেকদিন ধরে সংস্কার হয়নি।
রুমন এসে দেখে সহপাঠীরা ওর আগেই এসে পড়েছে। স্কুলমাঠে মানুষের ভিড়। দশ গ্রামের মানুষ যেন ভেঙে পড়েছে স্কুলমাঠে। চিরচেনা স্কুলপ্রাঙ্গণটি আজকে কেমন অচেনা লাগছে।
আতিক জিজ্ঞেস করল – কী রে, দেরি করলি কেন?
আহাদ স্যার আসেননি, রুমনের পালটা প্রশ্ন।
না, এখনো আসেননি। এসে পড়বেন হয়তো।
আচ্ছা কী হবে বল তো?
অপেক্ষা কর, যা হবে তা তো একটু পরেই দেখবি।
শিমুল বলল, স্যারের জন্য খুব খারাপ লাগছে।
আমারও, বলল জয়ন্ত।
যূথী প্রশ্ন করে সবাইকে, আচ্ছা স্যারের জন্য আমাদের কি কিছুই করার নেই?
– কী করব বল? পালটা জানতে চায় রুমন।
সবারই কষ্ট হচ্ছে। আহাদ স্যার ওদের সবারই প্রিয়।
রুমন বলে, স্যার না থাকলে আমার তো পড়ালেখাই হতো না। স্যারের কারণেই আমি আজ এতদূর আসতে পেরেছি। – আমাদের পরিবারে ধারণা ছিল – মেয়েদের পড়ালেখা করে কী হবে? সেই জায়গায় আমার বাবা-মাকে স্যারই রাজি করিয়েছেন যেন আমাকে পড়তে দেওয়া হয়, কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলল আফিফা।
রুমন বলে, স্যারই তো আমার মধ্যে পড়ার প্রতি আগ্রহটা জাগিয়ে দিয়েছেন।
– শুধু তোর না, আমাদের সবার মধ্যেই স্যার জ্ঞানের আলোটা জ্বালিয়ে দিয়েছেন। আমাদের স্বপ্ন দেখতে শিখিয়েছেন, বলল জয়ন্ত।
– হ্যাঁ এটা সত্য, যে-প্রশ্ন তিনি তৈরি করেছেন তার সঙ্গে আমাদের পাঠ্যবইয়ের কোনো সম্পর্ক নেই। কিন্তু তিনি কি কিছু ভুল বলেছেন, প্রশ্ন করে আতিক।
চুপ করে যায় সবাই। ওরাও সবাই জানে স্যার ভুল কিছু বলেননি। কিন্তু এগুলো কি পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে বলা যায় – এই কথার কোনো উত্তর নেই তাদের কাছে।
তবে এটাও ওরা বোঝে যে, কথা যত সত্যই হোক, সবসময় সব সত্য কথা বলা যায় না। টেকনিক্যালি স্যার কাজটা ঠিক করেননি।
তাই মন চাইলেও স্যারের পাশে ওরা দাঁড়াতে পারছে না। আর এই না-পারার অক্ষমতায় তারা ভেতরে ভেতরে ভীষণভাবে মুষড়ে পড়েছে।
তিন
সূর্যটা তখনো আড়মোড়া জেগে ওঠেনি। কাকডাকা ভোরেই ঘুম থেকে ওঠেন। আজো তার ব্যত্যয় হয়নি সৌমেনবাবুর। নতুনগঞ্জ হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক তিনি। খুব রাশভারী টাইপের মানুষ। এই অঞ্চলের সবাই তাকে খুব 888sport apk download apk latest version করে।
প্রথম যেদিন এই স্কুলে আসেন, সেদিন থেকেই স্কুলটিকে ভালোবেসে ফেলেছেন তিনি। উজাড় করে দিয়েছেন নিজেকে স্কুলের মঙ্গলের জন্য। আর এই পরিশ্রম ও প্রচেষ্টার ফলও পেয়েছেন।
নতুনগঞ্জ হাইস্কুল – এখন এ-অঞ্চলের খুব নামকরা স্কুল। পড়াশোনার জন্য এর সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে দূর-দূরান্তে। শিক্ষা বোর্ডের প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষাগুলোতে এ-স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের কৃতিত্ব শুধু এই স্কুল নয়, এই এলাকার জন্যও সম্মান বয়ে এনেছে। আশপাশের এলাকা থেকেও ছেলেমেয়েরা পড়তে আসে এই স্কুলে।
সৌমেনবাবু বিশ্বাস করেন, এই অর্জন শুধু তার একার কৃতিত্ব নয়। এই অর্জন তার সহকর্মী 888sport app শিক্ষকের দলগত প্রচেষ্টার ফসল। বিশেষ করে আহাদ মাস্টারের কথা আলাদাভাবে বলতে হয়। তার মতো একজন সহকর্মী থাকার কারণেই এটি সম্ভব হয়েছে।
এই মানুষটিকে তিনি যতই কাছ থেকে দেখছেন ততই বিস্মিত হচ্ছেন। মোহ ত্যাগ করে এরকম একজন বিদ্বান মানুষ এরকম একটা প্রত্যন্ত অঞ্চলে পড়ে রয়েছেন – আজকের যুগে এটি ভাবাই যায় না। জ্ঞানের প্রতি নিরলস সাধনা একজন মানুষকে কতটা বিনয়ী করতে পারে, সেটা আহাদ মাস্টারের সঙ্গে পরিচয় না হলে কখনো জানা হতো না।
অদ্ভুত এই মানুষটা কী অনায়াসে ছেলেমেয়েদের মধ্যে জ্ঞানের আলো জ্বালিয়ে দেন। শুধু তাই নয়, অন্য শিক্ষকরাও উজ্জীবিত হয়ে ওঠেন তার সাহচর্যে। সহকর্মী হলেও ভেতরে ভেতরে তার প্রতি একটা 888sport apk download apk latest versionবোধ কাজ করে সৌমেনবাবুর।
বহুদিন গেছে স্কুলভবনের দোতলার বারান্দায় বসে সৌমেনবাবু আর আহাদ মাস্টার অনেকটা সময় পার করেছেন। নদীর দিকে তাকিয়ে তারা কথা বলে গেছেন জীবন নিয়ে, জ্ঞান-888sport apkের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে। বারবার মুগ্ধ হয়েছেন তার অসাধারণ পা–ত্যে। এমন কোনো বিষয় নেই, যার সম্পর্কে আহাদ মাস্টার কিছু জানেন না।
কী সুন্দরভাবেই না দিনকাল কেটে যাচ্ছিল। অথচ আজ শিক্ষকতা জীবনের সবচেয়ে জটিল সময়টির মুখোমুখি তিনি। এরকম একটি পরিস্থিতির সামনে তাকে পড়তে হবে কখনো ভাবেননি।
আজকেই আহাদ মাস্টারের ব্যাপারে একটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়ে যাবে। তদন্ত কমিটির রিপোর্টও তার বিপক্ষে। তিনি ভালো করেই জানেন যে, আহাদ মাস্টার কোনো খুন করেননি। কোনো দুর্নীতি করেননি। এমনকি কোনো 888sport promo code কেলেঙ্কারিতেও জড়াননি। আহাদ মাস্টারের বিপক্ষে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হলে তার জন্য সেটিই হবে সবচেয়ে বেশি কষ্টকর। তারপরও পেশাগত নৈতিকতা থেকে তিনি তার সহকর্মীর পাশে দাঁড়াতে অপারগ।
কারণ, তিনি এমন একটি অপরাধ করেছেন, যা প্রচলিত ব্যবস্থাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে, নড়বড়ে সমাজের দুর্বলতাগুলোকে আঙুল উঁচিয়ে দেখিয়ে দেয়। যে-অপরাধে সমাজের ভিত নড়ে যায়, সমাজের চোখে এর চেয়ে বড় অপরাধ তো আর কিছু হতে পারে না।
চার
এমনিতেই থাকতে হয় নানারকম ঝামেলার মধ্যে। সেগুলো সামলাতেই হিমশিম খেতে হয়। তার ওপর এই উটকো ঝামেলা। বেশ তো পড়াচ্ছিলেন – পড়ান, কে বাধা দিয়েছে? নামডাকও তো হয়েছে যথেষ্ট। আরে বাবা কী দরকার ছিল এসব ঝামেলা ডেকে আনার?
আহাদ মাস্টার প্রসঙ্গে এসব কথা ভাবছিল আসলাম শিকদার। এ-এলাকার নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি সে। নির্বাচিত, তবে জনপ্রিয় কিনা, সেটি নিয়ে সংশয় রয়েছে। অবশ্য জনপ্রিয়তা নিয়ে তার কোনো মাথাব্যথাও নেই। সে ভালো করেই জানে, জনপ্রিয়তা দিয়ে নির্বাচন হয় না। নির্বাচনে জিততে হলে অন্য তরিকা প্রয়োজন পড়ে। নির্বাচন ব্যাপারটাই তার কাছে মনে হয় একটা খেলা। আর এই নির্বাচনী খেলাটা অত্র অঞ্চলে তার চেয়ে ভালো আর কেউ বোঝে না।
আজকের সভায় সে থাকতে চায়নি। না থাকতে পারলে তার জন্য ভালো হতো। কিন্তু উপায় নেই, থাকতেই হবে। আহাদ মাস্টারের বিষয়ে একটা সিদ্ধান্ত হবে আজ। মাথায় পোকা আছে, তবে মানুষটা সহজ-সরল। আর সমস্যা একটাই – উচিত কথাটা মুখের ওপর ঝেড়ে দেয়। সরাসরি তার শিক্ষক ছিলেন। যদিও স্যার তাকে খুব একটা পছন্দ করেন বলে মনে হয় না। মুখটার কারণেই স্যারকে একটু এড়িয়ে চলে সে। স্থান-কাল-পাত্র বোঝে না। সবকিছুর পরও সে তো একটা পাবলিক ফিগার। জেনেশুনে সবার সামনে তো আর বেইজ্জত হওয়া যায় না। দু-একবার এরকম অপ্রীতিকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছে। তখন সবাইকে সে এই বলে বুঝ দিতে চেয়েছে যে, তিনি আমার সরাসরি শিক্ষক – আমাকে ভীষণ স্নেহ করেন, তাই শাসনও করেন।
আজকের সভায় আবার স্যারের মুখোমুখি হতে হবে। ভাবতেই একটা অস্বসিত্ম কাজ করে। ভরা মজলিশে আবার কী না কী বলে বসে তার তো ঠিক নেই। প্রথমে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল মিটিংটায় সে যাবে না। কিন্তু পরে অনেক ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত পালটেছে। সে ভালো করেই জানে, তদন্ত কমিটির রিপোর্ট আহাদ স্যারের বিপক্ষে যাবে। তার মানে সিদ্ধান্তটাও স্যারের বিপক্ষে যাবে। এলাকার গণ্যমান্য সব মানুষই সভায় উপস্থিত থাকবে। তার ওপর আহাদ স্যার অত্যন্ত জনপ্রিয় একজন মানুষ বলে সাধারণ মানুষের কৌতূহলও এই সভাকে ঘিরে। এ সময় তার অনুপস্থিতি দৃষ্টিকটু লাগবে এবং সেটি কারোরই চোখ এড়াবে না। এলাকায় তার তো শত্রুর অভাব নেই। সহানুভূতি আদায় করার জন্য বিরোধী পক্ষ এই ইস্যু নিয়ে তার বিরুদ্ধে মিথ্যে রটিয়ে বেড়াবে। তার অনুপস্থিতির সুযোগ নিয়ে হয়তো তারা বলে বসতে পারে যে, স্যারকে নাজেহাল করার জন্য সে-ই পরিকল্পিতভাবে এটা ঘটিয়েছে। একজন ঘাগু রাজনীতিবিদ হিসেবে সে ভালো করে জানে যে, প্রতিপক্ষকে এই সুযোগ দেওয়াটা মোটেও বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। তার চেয়ে বরং সভায় উপস্থিত থেকে সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করাটাই মঙ্গলজনক।
পাঁচ
স্কুলের দফতরি মধ্যবয়সী দুলাল মিয়া। অনেকদিন ধরেই নিয়োজিত আছে সে এই কাজে। আগের দিনই তাকে বলা হয়েছে স্কুলে বিশেষ একটা সভা হবে। তাই সকাল থেকেই তার ভীষণ ব্যস্ততা। সভায় নাকি অনেক বড় বড় মানুষ আসবে। সব আয়োজন তাকেই করতে হচ্ছে। অতিথিদের জন্য চেয়ার-টেবিলের ব্যবস্থা করা, মাইক সেট করা, অনেক কাজ। স্কুলের প্রয়োজনে বাইরে থেকে মাইক ভাড়া করে আনতে হয় না। কারণ স্কুলেরই নিজস্ব মাইক সিস্টেম আর এক জোড়া হর্ন আছে। এ দিয়ে এ-ধরনের সভার কাজ ভালোভাবেই চলে যায়। মাইক অপারেটরও প্রয়োজন পড়ে না। দুলাল মিয়া নিজেই অপারেট করতে পারে। আহাদ স্যারের উৎসাহে কাজটা সে শিখে নিয়েছে।
একটা সময় তার আয়-রোজগার ছিল না। জমি-জিরাতও ছিল না যে চাষবাস করে চলবে। অর্থাভাবে নিদারুণ কষ্টে দিন কাটত তার। পড়াশোনা ছিল না বলে মানুষের ফুট-ফরমাশ খেটে চলতে হতো। তাও আবার নিয়মিত কাজ জুটত না। উপায়ান্তর না পেয়ে একটা সময় সে আহাদ মাস্টারের শরণাপন্ন হয়। তখন তিনিই তাকে এই দফতরির কাজটা জুটিয়ে দিয়েছিলেন। সেদিন থেকেই এই স্কুলের সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে গেছে তার জীবন। কাজটা সে উপভোগ করে। অনেক উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে ছেলেমেয়েরা এখানে পড়তে আসে। চোখের সামনে তারা বেড়ে ওঠে অনেক স্বপ্ন নিয়ে। দেখতে তার খুব ভালো লাগে। যখনই ভাবে এই ছেলেমেয়েদের মানুষ করার যে-দায়িত্ব, সেও তার একজন অংশীদার, তখনই তার মধ্যে একটা অদ্ভুত রকমের ভালোলাগা কাজ করে। আর তাই স্কুলের কাজে নিজেকে উজাড় করে দেয় শতভাগ।
স্কুলের সামনে একটা বাগান আছে। এখানে আছে অনেক রকমের ফুলের গাছ। নানা জাতের গাছ লাগানো হয়েছে স্কুলমাঠের চারপাশ জুড়ে। বাগানের জন্য কোনো আলাদা মালী নেই। তাই এই বাগানটাও সে দেখাশোনা করে। আহাদ মাস্টার তাকে সঙ্গে নিয়ে এই বাগান অনেক যত্ন করে গড়ে তুলেছেন। বহু জায়গা ঘুরে ঘুরে তিনি নানা প্রজাতির গাছ ও বীজ সংগ্রহ করেছেন। এই বাগানে এখন অনেক দুর্লভ প্রজাতির গাছ আছে। আর এ-কারণে স্কুলের একটা বাড়তি সুখ্যাতিও হয়েছে। 888sport apkীরা বলে গাছেরও নাকি প্রাণ আছে। কথাটা সে আহাদ মাস্টারের কাছেই শুনেছে। মাঝে মাঝে মাস্টারকে সে গাছের সঙ্গে একা একা কথা বলতে দেখেছে। তার কথা গাছ বোঝে কিনা কিংবা সেও গাছের কথা বোঝে কিনা, তা সে বলতে পারবে না। এই অদ্ভুত ঘটনাটার কথা কাউকে সে বলেনি। বলবেও না। কারণ মাস্টারকে সে ভীষণ 888sport apk download apk latest version করে। মানুষটা তার কাছে সাক্ষাৎ দেবতা।
মাস্টার লোকটা একটু ক্ষ্যাপাটে। আর প–ত মানুষরা একটু-আধটু এরকমই হয়। পড়াশোনার জন্য এমন পাগল লোক সে আর দেখেনি। কী সুন্দরভাবে ছেলেমেয়েদের পড়ায়। ছেলেমেয়েরাও খুব আগ্রহ নিয়ে পড়ে তার কাছে। আর এই মানুষটার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ মানতে খুব কষ্ট হয় দুলাল মিয়ার। আজকে নাকি আহাদ মাস্টারের বিচার হবে। কষ্টে বুকটা ফেটে যায় দুলাল মিয়ার। কিন্তু কাউকে বলতে পারে না।
সে জানে না মাস্টারের অপরাধ কী, শুধু জানে মাস্টার সাহেব কোনো দোষ করতে পারে না।
ছয়
স্বামীর ঘুম ভাঙে সকাল সকাল। তাই ভোরের আলো ফোটার আগেই উঠে পড়ে রাহেলা বেগম। ওঠার সঙ্গে সঙ্গে প্রথমেই ব্যস্ত হয়ে পড়ে নাস্তার জোগাড়যন্ত্র করতে। তারপর সারাদিন ধরেই চলে সাংসারিক কাজকর্মের ব্যস্ততা। তার দৈনন্দিন জীবনের রুটিনটা এমনই।
বিয়ে হয়েছে তাদের বহুকাল আগেই। অবস্থাপন্ন পরিবারের মেয়ে রাহেলা। কিন্তু পড়াশোনা তার তেমন হয়নি। তবে তাদের বাড়িতে জায়গির থেকে পড়ালেখা করত অনেকেই। পড়াশোনা করতে ইচ্ছুক, কিন্তু আর্থিক সামর্থ্য তেমন নেই – সেরকম ছাত্রদের বরবারই সহযোগিতা করে আসছে তাদের পরিবার। আহাদ মাস্টারও তাদের বাড়িতে থেকে পড়ালেখা করেছে। ছাত্র হিসেবে সে ছিল খুবই মেধাবী। মার্জিত, স্বল্পভাষী আর অমায়িক বলে দ্রম্নতই হয়ে ওঠে সবার প্রিয় পাত্র। এরকম সুযোগ্য পাত্র হেলায় হাতছাড়া করতে চাইল না রাহেলার দাদা। নাতনিজামাই হিসেবে আহাদকে তার খুবই পছন্দ। নাতনির বিয়েতে কোনো কার্পণ্যই করেনি রাহেলার দাদা। বেশ ধুমধাম করেই রাহেলার সঙ্গে আহাদের বিয়েটা হয়ে যায়। সেই থেকে একসঙ্গে জীবনের এতটা বছর কাটিয়ে দিয়েছে তারা।
স্বামীকে নিয়ে রাহেলার বিস্ময় এবং মুগ্ধতার ঘোর কাটে না। কখনো কাটবে বলেও মনে হয় না। মানুষটা একটু অন্যরকম। অন্য আট-দশজনের মতো নয়। সংসারের প্রতি কিছুটা উদাসীন এই অন্যরকম মানুষটাকেই রাহেলার ভীষণ ভালো লাগে। অবশ্য সংসারটা তাকেই সামলাতে হয়। এই সংসারে কোথা থেকে কী হয়, কীভাবে চলে – স্বামী তার কিছুই জানে না। তাতেও তার কোনো খেদ নেই। বরং এরকম একজন গুণী স্বামীর পাশে থেকে তার জ্ঞান-সাধনায় সহায়তা করতে পারছে – এই বোধটুকু তাকে বেশ তৃপ্তি দেয়।
তাদের দাম্পত্য জীবনে কোনো জটিলতা নেই। পারস্পরিক বোঝাপড়ার মধ্য দিয়ে বেশ ভালোই কেটে যাচ্ছে। শুধু একটা দুঃখ কাঁটার মতো খচখচ করে বিঁধে রাহেলার বুকের ভেতর। বিয়ের এত বছর হয়ে গেল অথচ তাদের কোনো সন্তান নেই। এ নিয়ে কথাও কম শুনতে হয়নি তাকে। তার ভেতরে নীরবে বয়ে চলেছে কান্নার স্রোত। কেউ তার এই চাপা কষ্টটুকু বুঝতে চায়নি। কিন্তু এই দুঃসহ যন্ত্রণায় সবসময় স্বামী তার পাশে থেকেছে। তাকে মানসিক সাহস ও শক্তি জুগিয়েছে। মাঝে মাঝেই রাহেলা ভাবে, জীবনসঙ্গী হিসেবে এই মানুষটাকে না পেলে হয়তো এতটা বছর এই কষ্ট নিয়ে তার পক্ষে বেঁচে থাকা সম্ভব হতো না।
কিছুদিন ধরেই গ্রামের মধ্যে কানাঘুষা চলছে। লোকমুখে শুনেছে স্কুলে কী নিয়ে একটা গোলমাল হচ্ছে। আর গোলমালটা নাকি তার স্বামীকে ঘিরেই। কয়েকদিন ধরেই লক্ষ করেছে মানুষটা একটু গম্ভীর হয়ে আছে। যদিও স্কুলের ঘটনা নিয়ে তাকে কিছু বলেনি। রাহেলাও তাকে কিছু জিজ্ঞেস করেনি।
আজকে স্কুলে এ-ব্যাপারে একটা মিটিং হবে। এ-নিয়ে রাহেলা মোটেও চিন্তিত নয়। কারণ সে জানে যে, এই মানুষটা কখনো কোনো অন্যায় করতে পারে না। কখনো কোনো ভুল করতে পারে না। যে যা-ই বলুক, স্বামীর প্রতি তার এই অগাধ বিশ্বাসে কখনো চিড় ধরবে না।
সাত
বড় করে একটা শ্বাস নেয় আহাদ মাস্টার। তারপর তাকায় নতুনগঞ্জ হাইস্কুল মাঠের দিকে। অনেক মানুষ জড়ো হয়েছে স্কুলমাঠে।
আজকে তার ভাগ্য নির্ধারিত হবে। সে অবশ্য এতদিন মুখ বন্ধ রেখেছে। কারো কোনো কথার জবাব দেয়নি। শুধু বলেছে যা বলার ডিসিপিস্ননারি সভায় বলবে।
শিক্ষকতার অনেক বছর হয়ে গেল। কত ছাত্রছাত্রী পড়িয়েছে। একসময় যারা এসেছিল এই স্কুলে পড়তে – শৈশব, কৈশোর পেরিয়ে আজ তাদের অনেকেই সফল-পরিণত মানুষ। আবার অনেকে স্কুলের চৌকাঠও ডিঙাতে পারেনি। শিক্ষকতা জীবনের 888sport sign up bonusর ভা-ারে সঞ্চিত হয়েছে কত সুখকর ঘটনা, কত বেদনাময় 888sport sign up bonus।
পড়ানোটা তিনি বরাবরই উপভোগ করেন। স্কুলের ছেলেমেয়েদের কাছে জ্ঞান-888sport apkের নতুন একটা জগৎ উন্মোচিত করে দেন। বিস্ময় নিয়ে তারা যখন তার কথা শুনতে থাকে,
তাতে তিনি ভীষণ আনন্দ পান। চোখে-মুখে অদম্য আগ্রহ নিয়ে শিক্ষার্থীরা তার সঙ্গে প্রবেশ করে জ্ঞানের মহাজগতে। তাদের এই অদম্য আগ্রহ, এই বিস্ময়বোধ তাকে পরিতৃপ্ত করে। নিজেকে তখন তার প্রমিথিউস মনে হয়। দেবতাদের কাছ থেকে আগুন এনে মানুষের হাতে তুলে দেওয়া – এটা ভাবতেই তার ভালো লাগে।
তাকে জানানো হয়েছে সভাটি হবে স্কুলের মাঠেই। আর তা হবে প্রকাশ্যে সবার উপস্থিতিতে। তার কিছু বলার থাকলে সেখানেই সে তা বলতে পারবে। নিজের মনেই ভেবে দেখেছে, ভালোই হয়েছে। যা বলার একবারেই বলবে, জনে জনে আর ব্যাখ্যা করতে হবে না।
স্কুলের গেটের সামনে এসে ছাতাটি বন্ধ করে। মাঠে অনেক মানুষের ভিড়। তাকে দেখতে পেয়ে একটা শোরগোল শুরু হয়। বেশিরভাগ মানুষের চোখে-মুখে কেমন একটা হতবিহবল ভাব। বুঝে উঠতে পারছে না তারা – তাকে দেখে সালাম দেবে, নাকি চোখে-মুখে ক্রোধ প্রকাশ করবে। মানুষের এই দ্বিধান্বিত অবস্থা দেখে বেশ মজাই পেলেন তিনি।
স্কুলবারান্দার সামনে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের স্ট্যান্ড রয়েছে। এর সামনেই প্রতিদিন স্কুল-অ্যাসেমবিস্ন হয়। সভার জন্য এই জায়গাটিকেই নির্ধারণ করা হয়েছে। চেয়ার-টেবিল বসানো হয়েছে। এই সভার সঙ্গে সংশিস্নষ্টরা ইতোমধ্যে সেখানে আসনও গ্রহণ করেছে।
জনাকীর্ণ মাঠের মধ্য দিয়ে সভামঞ্চের দিকে দৃপ্ত পায়ে হেঁটে যায় আহাদ মাস্টার। মানুষ দুপাশে সরে হেঁটে যাওয়ার জায়গা করে দিচ্ছে। সবাই যেভাবে তার দিকে তাকিয়ে রয়েছে, তাতে মনে হচ্ছে সে যেন ফাঁসির মঞ্চের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। জীবনে একটা নতুন অভিজ্ঞতা। অনুভূতিটাও কেমন অদ্ভুত। আচ্ছা, ফাঁসির মঞ্চের দিকে যখন ফাঁসির আসামি এগিয়ে যায় তখন কি তারও একই রকম অনুভূতি হয় – নিজের কাছেই উত্তরহীন প্রশ্ন।
আট
আহাদ মাস্টার আসার পর সবাই নড়েচড়ে বসে। ডিসি সাহেবের নির্দেশক্রমে সভার কাজ শুরু হয়। তার আগে অবশ্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধি সমবেত জনতাকে শান্ত থেকে সভা অনুষ্ঠানে সহায়তা করতে অনুরোধ জানায়। তদন্ত কমিটির পক্ষ থেকে থানা শিক্ষা অফিসার সবার উদ্দেশে বলেন, এতদিন ধরে আহাদ মাস্টার অত্যন্ত সুনামের সঙ্গে কাজ করে আসছিলেন। কিন্তু এবার অর্ধবার্ষিক পরীক্ষায় অ্যাকাডেমিক বিষয়সংশিস্নষ্ট প্রশ্নপত্র তৈরি না করে তিনি অপ্রাসঙ্গিক ও সংবেদনশীল বিষয়ের অবতারণা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
নাটকীয় ভঙ্গিতে বলে যায় শিক্ষা অফিসার, প্রশ্নপত্রের প্রশ্নগুলোর সঙ্গে পাঠ্যবইয়ের কোনো সম্পর্ক নেই। মূল অ্যাকাডেমিক বইয়ের থেকে যদি প্রশ্ন না আসে তাহলে ছাত্ররা উত্তর দেবে কীভাবে? কীভাবে তারা পরীক্ষায় পাশ করবে?
অভিযোগটির গুরুত্ব বিবেচনা করে দ্রম্নত তদন্ত করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়। আমরা বিষয়টি যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করেছি।
একটু থামলেন, তারপর আবার বলা শুরু করলেন।
– অভিযোগ পাওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে আমরা তদন্ত করেছি। ইতোমধ্যে আমরা আমাদের 888sport world cup rateও জমা দিয়েছি। তদন্তে আমাদের কাছে স্পষ্টভাবেই প্রতীয়মান হয়েছে যে, এই প্রশ্নমালা পাঠ্যক্রমের সঙ্গে মোটেও সংগতিপূর্ণ নয়। তদন্ত কমিটির কাছে আরো মনে হয়েছে যে, এ-ধরনের প্রশ্নপত্রের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কোমল মন বিষিয়ে উঠতে পারে। এমনকি পড়াশোনার প্রতি তাদের আগ্রহ বিনষ্ট হতে পারে। শুধু তাই নয়, এ-ধরনের অবান্তর ও অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্নগুলো আমাদের সমাজব্যবস্থার প্রতি শিক্ষার্থীদের 888sport apk download apk latest versionবোধও নষ্ট করতে পারে।
একটু থামলেন, তারপর আবার বলা শুরু করলেন।
– স্বভাবতই এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কেন তিনি এই কাজটি করলেন। চারটি সম্ভাব্য কারণ নিয়ে আমরা ভেবেছি : প্রথমত, হতে পারে এটি একটি অনিচ্ছাকৃত ভুল; দ্বিতীয়ত, হয়তো তিনি কোনো চক্রান্তের শিকার হয়েছেন; তৃতীয়ত, প্রশ্নপত্র তৈরির সময় কোনো কারণে হয়তো তিনি মানসিকভাবে সুস্থির ছিলেন না এবং সর্বশেষ কিন্তু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ – হয়তো কোনো সুগভীর রাজনৈতিক দুরভিসন্ধি থেকেও এই কাজটি হতে পারে। সবগুলো সম্ভাবনাই আমাদের গভীরভাবে ভেবে দেখতে হবে। তবে এ-বিষয়ে আহাদ মাস্টারের আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য আমরা এখনো পাইনি। এই কাজটি কেন করেছেন, তদন্ত কমিটির কাছে সে-ব্যাপারে এখনো তিনি কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দেননি। তাই এ-ব্যাপারটি এখনো আমাদের কাছে পরিষ্কার নয়। কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে অভিযুক্তের বক্তব্য জানাটা অত্যন্ত জরুরি।
এবার স্থানীয় জনপ্রতিনিধি দাঁড়িয়ে বলেন, আপনারা তো সবই শুনলেন। এতে কোনো সন্দেহ নাই যে, আহাদ মাস্টার অত্যন্ত জনপ্রিয় একজন মানুষ। সবাই তাকে 888sport apk download apk latest versionর চোখে দেখে। কেউ তারে কোনোদিন অসম্মান কইরা কথা বলছে বইলা আমার জানা নাই। কিন্তু এমন একটি ঘটনা ঘটতে পারে – এইটা আমরা কখনো কল্পনাও করতে পারি নাই।
ভিড়ের মধ্য থেকে কেউ একজন বলে ওঠে, প্রশ্নগুলা কী ছিল, সেইগুলো আমাদের জানান।
তখন জনপ্রতিনিধি বলেন, এখানে তদন্ত কমিটির লোকরা আছে। ওনারা সবাই প্রশ্নগুলো দেখেছেন। সব দেখেই ওনারা একমত হয়ে 888sport world cup rate দিয়েছেন। তাই এখানে সেই প্রশ্নগুলো পাবলিকলি আবার না বলাই ভালো।
কেউ একজন বলল, আরে প্রশ্ন তো প্রশ্নই, কইলে কী আর আসে যায়।
সমস্বরে সবাই বলে উঠল, হ, হ কী আসে যায়।
নয়
জনতাকে শান্ত করার জন্য এবার স্কুলের হেডমাস্টার উঠে দাঁড়ালেন। তিনি বললেন, দেখুন, আহাদ মাস্টার অত্যন্ত সম্মানিত একজন মানুষ। এ-কথা সত্য যে, দীর্ঘদিন ধরে উনি সুনামের সহিত দায়িত্ব পালন করে আসছেন। আবার এটিও সত্য যে, ওনার তৈরি প্রশ্নপত্র নিয়ে একটা বিতর্ক তৈরি হয়েছে। এ-বিষয়টি নিয়ে তদন্ত কমিটি সর্বসম্মতভাবে একটা রিপোর্টও জমা দিয়েছে।
একটা বড় ভুল হয়েছে সেটি সত্য, কিন্তু কেন হয়েছে তা আমরা জানি না। কিন্তু ওনার এতদিনের অবদানকে 888sport app download for androidে রেখে সকলের কাছে অনুরোধ করব যে, প্রশ্নগুলোর পুনরুক্তি করে আমরা বিতর্ক আর না বাড়াই। বরং তদন্ত কমিটি-প্রদত্ত রিপোর্টের আলোকে আমরা সভার কার্যক্রমকে এগিয়ে নিয়ে যাই।
তার কথা শুনে জনতা কিছুটা শান্ত হয়।
জনপ্রতিনিধি বলেন, কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে আমাদের জানা দরকার সর্বমান্য জনাব আহাদ মাস্টারের কিছু বলার আছে কিনা? কিছু বলার থাকলে, আমি অনুরোধ করব তিনি যেন সকলের সামনে ওনার বক্তব্য রাখেন।
উৎসুক জনতা তাকিয়ে আছে আহাদ মাস্টারের দিকে। তার বক্তব্য শোনার জন্য। কিন্তু আহাদ মাস্টারের দৃষ্টি নিবদ্ধ মাঠে সমবেত মানুষের মাথার ওপর দিয়ে নদীর দিকে। ভাবলেশহীন দৃষ্টি।
বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সূর্যের তাপও বাড়ছে।
মাস্টার সাহেব আপনার কি কিছু বলার আছে, বলার থাকলে আপনি নির্ভয়ে বলেন, বললেন ডিসি সাহেব।
বলেন, বলেন… মাস্টার সাব বলেন, কথা বলেন। চুপ করে থাকবেন না। কেন করলেন এই কাজ। এত কথা বলাবলির কী আছে? অন্যায় করছে, আবার কথা শুনার দরকার কী? এরকম বিক্ষিপ্ত বক্তব্য ভেসে আসতে থাকে উপস্থিত ভিড়ের মধ্য থেকে।
মাইক্রোফোনের সামনে দাঁড়ালেন তিনি। মাথা ঘুরিয়ে দেখে নিলেন সামনে দাঁড়ানো জনতার পুরো ভিড়টাকে। অধীর অপেক্ষায় সবাই নিশ্চুপ।
ভাবনার দোলাচল তার ভেতরে। খানিকটা দ্বিধা মনের মধ্যে, সে কি কিছু বলবে। সে কী বলবে? কেন এই কাজটা করল। বলা কি উচিত? কী হবে বলে। জেনেবুঝেই তো করেছে ইত্যাদি ইত্যাদি। দ্বিধাটা কিছুক্ষণের, তারপরই কেটে যায়।
সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে, বলবে। যে-পথে পা বাড়িয়েছে, সে-পথ থেকে আর ফিরবে না। সত্য যত তিক্তই হোক, সব তাকে বলতেই হবে। যা হয় হোক। নিজের অদৃষ্টের কথা ভেবে, আর পিছু হটবে না। না হলে সব মিথ্যে হয়ে যাবে। নিজের কাছেই পরাজিত হয়ে যাবে। সত্য বলে যা জেনে এসেছে, সেই সত্যের পরাজয় ঘটবে।
দশ
গরমটা বেশ অসহ্য রকমের। মানুষের ভিড়ের কারণে গরমটা আরো বেশি মনে হয়। সামনে হয়তো অনেক হেনস্তার শিকার হতে হবে।
হয় হোক, যা হওয়ার হবে – আজকেই একটা হেস্তনেস্ত হয়ে যাক।
ভেবেই গলা খাঁকারি দিলেন, তারপর শুরু করলেন জলদগম্ভীর স্বরে-
আমি আহাদ মাস্টার। আমাকে আপনারা দীর্ঘদিন ধরে চেনেন। এই মাটিতে আমার জন্ম। এই হাওয়ায়, এই জলে আমার বেড়ে ওঠা।
অনেক বছর ধরেই আমি এই স্কুলে শিক্ষকতা করে আসছি। ছোটবেলা থেকে জেনে এসেছি – শিক্ষক হচ্ছে মানুষ গড়ার কারিগর। আর তাই আমারও স্বপ্ন ছিল পড়ালেখা শেষ করে আমি একদিন মানুষ গড়ার কারিগর হবো। ছেলেমেয়েদের পরিচয় করিয়ে দেবো জ্ঞান-888sport apkের সঙ্গে। তাদের মধ্যে ছড়িয়ে দেবো জ্ঞানের আলো।
এতটুকু বলে থামলেন আহাদ মাস্টার।
তারপর আবার শুরু করলেন-
আমার সেই স্বপ্নও একদিন পূরণ হলো। আমার সৌভাগ্য যে, আমি আমার গ্রামের স্কুলেই শিক্ষক হিসেবে যোগ দিলাম। আমার শিক্ষকতা জীবনটাকে আমি বরাবরই উপভোগ করেছি। আমার কাজ ছিল ছেলেমেয়েদের মধ্যে জ্ঞানের স্পৃহা জাগিয়ে তোলা। নিজের প্রতি তাদের আত্মবিশ্বাসকে জাগ্রত করা। চেষ্টা করেছি ওরা যেন প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষেত হয়। ওরা যেন মানুষের মতো মানুষ হয়। কারণ আমি যে মানুষ গড়ার কারিগর।
আজকে একটা অস্বসিত্মর কথা আপনাদের সামনে বলেই ফেলি। এভাবে সবার সামনে বলার সুযোগ তো আর হয়তো কখনো আসবে না। বলতে পারেন, এই একটা কাজে আমি রীতিমতো বিরক্তই বোধ করতাম। কিন্তু উপায় ছিল না। পেশাগত কারণেই এই অপ্রিয় কাজটি আমাকে করতে হতো। আর সেই কাজটি হচ্ছে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র তৈরি।
আবার একটু গলা খাঁকারি দিয়ে নিলেন-
বিশ্বাস করুন, এই কাজটি আমার মোটেও ভালো লাগত না। যাদের জন্য আমি জ্ঞানের জগৎটি খুলে দিই, যাদের মাঝে জ্ঞানের বীজ বপন করি, তাদের পরীক্ষার মুখোমুখি করাটা আমার মোটেও ভালো লাগে না। কারণ আমার সবসময় মনে হয়েছে পরীক্ষা নামক একটা অসুস্থ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে আমরা শিক্ষার্থীদের মানবিক বোধকে ধ্বংস করি।
যেসব ছাত্র ফেল করে তাদের দেখে আমার কষ্ট লাগে। আমি বুঝি না এটা কেমন সিস্টেম – জ্ঞান অর্জনের সঙ্গে প্রতিযোগিতাকে কেন যুক্ত করা। পরীক্ষার নামে আমরা এমন একটা পদ্ধতি বের করলাম, যাতে একটা মানুষকে বলে দেই যে, তুমি ব্যর্থ। অথচ এই ব্যর্থতার বোধ একটা মানুষকে কতটা হীনমন্য করতে পারে, নিজের কাছে নিজেকে কতটা ছোট করতে পারে – সেটা আমরা ভেবে দেখি না। ভেবে দেখলে হয়তো পরীক্ষা পদ্ধতিটাই থাকত না।
এগারো
মাস্টারের কথা শুনে সরব হয়ে ওঠে অনেকে। ভেসে আসতে থাকে – হায় হায়, এটা কী বলে মাস্টার! পরীক্ষা না থাকলে কেমনে কী, পরীক্ষা ছাড়া বুঝব কেমনে কী শিখল, কী জানল… মাস্টারের কি মাথা নষ্ট হয়ে গেল?
অধৈর্য হয়ে উচ্চস্বরে কেউ বলে উঠল, এসব প্যাঁচাল রাখেন, আসল কথা কন…।
তখন জনপ্রতিনিধি দাঁড়িয়ে হাত দিয়ে ইশারা দিলেন সবাইকে শান্ত হওয়ার জন্য। নেতার ইশারা পেয়ে সবাই চুপ করল।
জনতা শান্ত হওয়ার পর আবার বলা শুরু করেন-
প্রশ্ন তৈরি করার সময় আমার মনে হতো আচ্ছা কী প্রশ্ন তৈরি করব। কোন উদ্দেশ্য নিয়ে আমরা প্রশ্নপত্র তৈরি করি।
আমরা কি শিক্ষার্থীদের কৃতকার্য করানোর জন্য প্রশ্ন তৈরি করব, নাকি অকৃতকার্য করানোর জন্য করব। আমরা কী এমন প্রশ্ন করব যাতে ওরা কোনো উত্তর দিতে পারবে না, পরীক্ষার হলে ছাত্ররা বলবে এবার সাংঘাতিক কঠিন প্রশ্ন হয়েছে। কেউ কেউ তো প্রশ্নের নামে নিজের জীবনের সঞ্চিত ক্ষোভগুলো কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ওপর ঝেড়ে দিয়ে বিকৃত আনন্দও পেয়ে থাকেন। আবার ভাবি এমন সহজ প্রশ্ন করি যাতে সবাই উত্তর দিতে পারে। এতে আর কিছু না হোক, কৃতকার্য ছাত্রদের হাসিমুখ দেখে অন্তত তৃপ্তি পাব।
একটু থামে আহাদ মাস্টার। তাকিয়ে দেখে সামনে দাঁড়ানো লোকগুলোর দৃষ্টিতে হতবিহবল ভাব। আবার বলতে শুরু করেন –
আমার এই কথা শুনে আপনাদের বিরক্ত হওয়াটাই স্বাভাবিক। অনেকেই হয়তো ভাবছেন আমার মাথায় গ-গোল দেখা দিয়েছে। সেটা আপনারা ভাবতেই পারেন। আমার কাজ হচ্ছে পড়ানো। এসব ভাবনা তো আমারে মানায় না। এটা তো নীতিনির্ধারকদের ভাবনার বিষয়। গ্রামের একজন সাধারণ স্কুলমাস্টার কেন এগুলো ভাববে। কিন্তু কী করব বলেন, ভাবনাগুলো তো মাথায় চলে আসে। ওদের তো আর লাগাম দিয়ে টেনে রাখা যায় না। একবার একটা গান শুনছিলাম। গানটা খুব মনে ধরছিল। গানের পুরো কথা মনে নাই। ইচ্ছা হলো এক ধরনের গঙ্গা ফড়িং, অনিচ্ছায় লাফায় শুধু তিড়িং-বিড়িং। আমার ভাবনারাও গানের ইচ্ছার মতো এরকম তিড়িং-বিড়িং লাফায়…
মাস্টারের বলার ভঙ্গিতে হেসে ওঠে সবাই।
বারো
আপনাদের আর ধৈর্যচ্যুতি ঘটাব না। এবার সরাসরি মূল কথায় আসি, বলে যায় আহাদ মাস্টার।
স্কুলের পরীক্ষায় আমি যে প্রশ্নমালা তৈরি করেছি সেটা নিয়ে আপত্তি উঠেছে। আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ, আমি পাঠ্যবইয়ের বাইরে অবান্তর ও অপ্রাসঙ্গিক বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করেছি। শুধু তাই নয়, তদন্ত কমিটির কাছে মনে হয়েছে এই প্রশ্নগুলো অত্যন্ত আপত্তিকর। এতই আপত্তিকর যে, আমার প্রতি সম্মান দেখিয়ে নাকি ওনারা এগুলো জনসম্মুখেও প্রকাশ করছেন না। আমি অত্যন্ত কৃতজ্ঞ যে, আপনারা আমার সম্মানের কথা ভেবেছেন।
আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সম্পর্কে আমি সকলের সম্মুখে সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা দিচ্ছি যে, এই প্রশ্নপত্র কোনো অনিচ্ছাকৃত ভুল নয়। আমি যা করেছি সজ্ঞানেই করেছি, এবং আমার বিশ্বাস থেকেই করেছি। অনেকে হয়তো ভাবছেন আমি মানসিকভাবে সুস্থির আছি কিনা। আমি আপনাদের আশ্বস্ত করতে চাই যে, মানসিকভাবে আমি সম্পূর্ণ সুস্থ আছি। আরেকটি বিষয় আমি আপনাদের নিশ্চিত করতে চাই যে, আমি কোনো চক্রান্তেরও শিকার হইনি। অনেকে হয়তো এর পেছনে সুগভীর কোনো রাজনৈতিক দুরভিসন্ধির খোঁজ করছেন। তাদের আমি বলতে চাই যে, আমি রাজনীতি করি না, আর কোনো ধরনের রাজনৈতিক নীলনকশা থেকে এই প্রশ্নপত্র তৈরি করা হয়নি।
আমি আবারো দ্ব্যর্থহীনভাবেই বলছি, আমার কৃতকর্মের জন্য আমি মোটেও অনুতপ্ত নই। আমার কাছে সঠিক মনে হয়েছে বলেই এই কাজটি আমি করেছি। বরং আরো আগেই আমার এই কাজটা করা উচিত ছিল। তাহলে হয়তো নিজের বিবেকের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হতাম না।
যে-প্রশ্নপত্র নিয়ে এত বিতর্ক তৈরি হয়েছে, এখন আমিই আপনাদের বলছি কী ছিল সেই প্রশ্নপত্রে। আমি শিক্ষার্থীদের কাছে জানতে চেয়েছি –
– মানুষ হিসেবে তুমি নিজেকে কেমন মনে করো?
– একজন সফল মানুষ কিন্তু অসৎ পিতা এবং একজন অসচ্ছল মানুষ কিন্তু সৎ পিতা। এই দুয়ের মধ্যে তোমার পিতাকে তুমি কোন অবস্থানে দেখতে চাও? কেন?
– মানুষ হিসেবে তোমার পিতাকে তুমি কত নাম্বার দেবে?
– একজন সৎ মানুষ এবং সফল অসৎ মানুষ, এই দুয়ের মধ্যে কোনটাকে তোমার জীবনের লক্ষ্য হিসেবে বেছে নেবে – কারণসহ ব্যাখ্যা করো?
– তোমার এলাকার নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিকে কি তুমি সৎ মানুষ মনে করো?
– অসৎ কিন্তু জনপ্রিয় এবং সৎ কিন্তু অজনপ্রিয় এর মধ্য থেকে তুমি কাকে জনপ্রতিনিধি হিসেবে বেছে নেবে?
– একজন অসৎ মানুষের বিরুদ্ধে নাগরিক হিসেবে তোমার কর্তব্য কী?
– দুর্নীতির বিরুদ্ধে তুমি কি প্রতিবাদ করবে? দুর্নীতি প্রতিরোধে তোমার করণীয় কী?
– বর্তমান শিক্ষাপদ্ধতি কি তোমার নৈতিক বিকাশে ভূমিকা রাখতে পারছে? ব্যাখ্যা করো?
তেরো
প্রচ- হট্টগোলের মধ্যে বাকি প্রশ্নগুলো বলা আর শেষ করতে পারে না। কী বলে মাস্টার? মাথা কি পুরোই গেল নাকি? এগুলো কী ধরনের প্রশ্ন? এর সঙ্গে বইয়ের পড়ার সম্পর্ক কী?
শোরগোল কিছুটা থেমে গেলে আহাদ মাস্টার সমবেত জনতাকে জিজ্ঞাসা করেন,
– আপনাদের কাছে আমি জানতে চাই, একজন শিক্ষককে কি আপনারা মানুষ গড়ার কারিগর মনে করেন?
– হ্যাঁ, হ্যাঁ, জনতার উত্তর।
– শিক্ষক হিসেবে আমার কাজ কী? ছেলেমেয়েদের প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষেত করা?
– হ্যাঁ, হ্যাঁ, জনতা উত্তর দেয়।
– শিক্ষক হিসেবে এতদিন আমি এই কাজটাই করে আসছি বলে আমার ধারণা ছিল। কিন্তু আমার সেই ধারণাটা ভেঙে গেছে। আমি একটা ভুল ধারণার ওপর এতদিন ছিলাম। কিছুদিন আগে আমার এক ছাত্র এসেছিল আমার সঙ্গে দেখা করতে। 888sport appয় থাকে। খুব বড় ইঞ্জিনিয়ার। অঢেল ধন-সম্পদেরও মালিক। লোকে বলে সে নাকি টাকার ওপর ঘুমায়। ছাত্রের এই সাফল্যে শিক্ষক হিসেবে আমার তো খুশি হওয়ারই কথা; কিন্তু আমি খুশি হতে পারিনি। কারণ তার এই বিত্ত-বৈভব এসেছে অবৈধ-অনৈতিক পথে। তাকে খুশি না করে কোনো কাজ পাওয়া যায় না। বড় বড় সব প্রজেক্ট থেকে নির্দিষ্ট একটা পার্সেন্টেজ সে পায়।
আমার আরেক ছাত্র বড় সরকারি কর্মকর্তা। ঘুষের জন্য জীবন্ত কিংবদন্তিতে পরিণত হয়েছে। তারও রয়েছে সম্পদের পাহাড়। আপনারা বলেন, ছাত্রের এই সাফল্যে আমার কি খুশি হওয়া উচিত?
এবার আরেক ছাত্রের কথা বলি শুনেন। মস্তবড় চিকিৎসক। দেশে-বিদেশে খুব নামডাক হয়েছে। কিন্তু সাধারণ মানুষ তার নাগাল পায় না। তার কাছে চিকিৎসা করাতে অনেক টাকা লাগে। যাদের টাকা নেই, তারা তার কাছে চিকিৎসার কথা চিন্তাও করতে পারে না। রোগীর চেয়ে টাকাটাই তার কাছে মুখ্য। মানবসেবার ব্রত নিয়ে যে-জ্ঞান সে লাভ করেছে, সেই জ্ঞান এখন ব্যবহৃত হচ্ছে টাকার জন্য।
আর এই যে এখানে উপস্থিত আছে আপনাদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। সেও আমার ছাত্র ছিল। তার কথা বেশি নাই-বা বললাম। কারণ তার সম্পর্কে আপনারা সবই জানেন। তার নিজের চরিত্রই ঠিক নাই, অথচ আমাদের চরিত্রের সার্টিফিকেট নিতে হয় তার কাছ থেকে। এর চেয়ে দুঃখজনক, লজ্জাজনক আর কী হতে পারে?
একটানা অনেকক্ষণ বলে আবার একটু থামলেন। তারপর পুরো মাঠের সবার দিকে মাথা ঘুরিয়ে একবার দেখে নিল আহাদ মাস্টার। তারপর প্রশ্ন রাখলেন, এরা তো স্ব-স্ব ক্ষেত্রে সবাই প্রতিষ্ঠিত, কিন্তু এরা কি প্রকৃত মানুষ হয়ে উঠতে পেরেছে? আমিই কি এদের মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে পেরেছি? এখন আপনারা বলেন, শিক্ষক হিসেবে আমি কি সফল?
জনতা একে অন্যের মুখ চাওয়া-চাওয়ি করে।
বলেন আপনারা, আমি কি মানুষ গড়ার কারিগর, না অমানুষ গড়ার কারিগর?
আপনারা বলেন, এই ছেলেমেয়েদের আমার কী শেখানো উচিত?
আর তাই পরীক্ষায় আমি এমন প্রশ্ন করেছি যাতে ওরা যে মানুষ অন্তত এটা যেন ভুলে না যায়।
আমি জানি, আমাকে নিয়ে আপনারা বিব্রত হয়েছেন। আমাকে ক্ষমা করবেন। ব্যর্থতার দায় নিয়ে শিক্ষকতা থেকে আমি অব্যাহতি নিচ্ছি, যাতে আমার হাতে আর কোনো অমানুষ তৈরি না হয়।
হঠাৎ থমকে গেল সব। মানুষগুলোর চেহারার দিকে তাকানো যায় না। দেখে মনে হয় এই মাত্র যেন একটা ঘূর্ণিঝড় বয়ে গেছে সবার ওপর দিয়ে। দীর্ঘদিনের কর্মস্থলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে আহাদ মাস্টার হেঁটে যায় স্কুল গেটের দিকে।
মাথার ওপর গনগনে সূর্য। আকাশে মেঘের ছিটেফোঁটাও নেই। লু হাওয়ায় ঝলসে যাচ্ছে প্রকৃতি। স্কুলগেট পেরিয়ে ছাতাটা মেলে ধরে ঘর্মাক্ত আহাদ মাস্টার। r


Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.