অর্ধেক জীবন : দাঙ্গা, দেশভাগ ও 888sport app প্রসঙ্গ

গোলাম কিবরিয়া ভূঁইয়া
আধুনিক বাংলা 888sport live footballের অন্যতম প্রধান লেখক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর লেখা ইতিহাসাশ্রয়ী 888sport alternative linkসমূহে রয়েছে দেশভাগের করুণ গাথা। পূর্ব-পশ্চিম এবং  সেই সময় নানা কারণে যথেষ্ট আদৃত ও আলোচিত। তাঁর 888sport sign up bonusকথামূলক লেখা অর্ধেক জীবন যথেষ্ট মূল্যবান এবং নিপুণ গদ্যের উল্লেখযোগ্য রচনা। ১৯৪৭-পূর্ববর্তী সমাজজীবন এবং এর পরবর্তী সময়ে তাঁর যাপিত জীবন উপজীব্য করে লেখা হয়েছে অর্ধেক জীবন। গ্রন্থটির নামকরণ সম্পর্কে সুনীল লিখেছেন, ‘এ বছর (২০০২) 888sport live footballে নোবেল 888sport app download bd পেয়েছেন ভি. এস. নাইপাল, তাঁর সম্প্রতি প্রকাশিত গ্রন্থটির নাম ‘হাফ অফ লাইফ’। আমার ‘অর্ধেক জীবন’ ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হতে শুরু হয় প্রায় তিন বছর আগে, তখন নাইপালের 888sport alternative linkটির নাম কিংবা প্রস্তুতিপর্বের কথা কিছুই জানা যায়নি। ‘হাফ অফ লাইফ’ অবশ্য 888sport sign up bonusকথা নয়। … তিনিও কি হ্যামলেটের এই লাইনটির কথা মনে রেখেছেন  ” throw away worser part of it and live the purer with the other half.(মুখবন্ধ, অর্ধেক জীবন) সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের এই 888sport sign up bonusকথায় সুনীলের বেড়ে ওঠার গল্প বিধৃত হয়েছে। তবে বর্তমান লেখায় তাঁর বেড়ে ওঠার নানা প্রসঙ্গ নয় বরং ১৯৪৬-এর দাঙ্গা, ১৯৪৭-এর দেশভাগ ও 888sport app প্রসঙ্গে তাঁর অনুভূতি উপস্থাপিত হয়েছে। দেশভাগ নিয়ে বহু গবেষণা হয়েছে। তাঁর রাজনৈতিক তাৎপর্য, সামাজিক ও মানবিক বিপর্যয় ইত্যাদি নিয়ে গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে। এসব বিষয়ে নিরন্তর গবেষণা চলছে। সুনীলের অভিজ্ঞতাপ্রসূত যেসব মন্তব্য অর্ধেক জীবনে রয়েছে, তা এক কথায় চমকপ্রদ ও ব্যতিক্রমী। তাঁর মন্তব্যগুলো জিন্নাহ, গান্ধী থেকে শুরু করে সোহরাওয়ার্দী পর্যন্ত আবর্তিত হয়েছে।
অর্ধেক জীবনে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, রবীন্দ্রনাথের মৃত্যু এবং পঞ্চাশের মন্বন্তর নিয়ে 888sport sign up bonusচারণ করেছেন। এরপর তিনি ১৯৪৬-এর দাঙ্গা এবং সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা নিয়ে কথা বলেছেন। তাঁর কিশোরমনে এসব বিষয় গভীর রেখাপাত করেছে। হিন্দু-মুসলমান সমাজ নিয়ে তিনি কথা বলেছেন।
দুপক্ষে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি যে ছিল না তা নয়। বরং সম্প্রীতির উদাহরণ হিসেবে সুনীল ‘আজাদ হিন্দ ফৌজের প্রতি ভারতীয়দের সমর্থনের কথা লিখেছেন – ‘সেই সময় যদি কোনোরকম জনপ্রিয়তার বিচার হতো, তাহলে গাঁধী, নেহরু ও জিন্নার চেয়েও যে সুভাষচন্দ্র ওপরে স্থান পেতেন, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। ‘আজাদ হিন্দ ফৌজে’ তিনি এমন চমৎকারভাবে ধর্মনিরপেক্ষতার প্রয়োগ করেছিলেন, যেরকম আগে দেখা যায়নি – পৃ ৫২)। আজাদ হিন্দু ফৌজ-প্রসঙ্গে ভারতবাসীর যে উচ্ছ্বাস সমর্থন ছিল, তা ডিঙিয়ে সাম্প্রদায়িকতা কেমন করে সমাজকে গ্রাস করেছিল সে-সম্পর্কে সুনীল প্রশ্ন রেখেছেন। তিনি মন্তব্য করেন, ‘হিন্দু-মুসলমান পাশাপাশি দাঁড়িয়ে সরকারের বিরুদ্ধে লড়েছে। গুলি খেয়ে পাশাপাশি ঢলে পড়েছে। তাহলে, জীবনে ও মরণেও তারা একসঙ্গে থাকতে পারে। আবার এসব মানুষই কত তাড়াতাড়ি বদলে যেতে পারে নেতাদের নির্দেশে। আজ যাকে ভাই বলে সম্বোধন করছে, কাল তার বুকে ছুরি বসাতে যাচ্ছে। ব্যবধান কীসের? শুধু ধর্মের।’ (পৃ ৫৪-৫৫) ১৬ আগস্ট ১৯৪৬ – সুনীলের তখন ১১ বছর। দিনটির 888sport sign up bonus তাঁর মনে দগদগে। ‘কয়েকমাস আগে রশিদ আলির [আজাদ হিন্দু ফৌজের ক্যাপ্টেন] মুক্তির দাবিতে হিন্দু-মুসলমান পাশাপাশি হাতে হাত ধরাধরি করে আন্দোলনে নেমেছিল। আজ তারা পরস্পরের বিরুদ্ধে ছুরি তুলবে কেন?… মুসলিম লিগ থেকে সেই দিনটিকে ডাইরেক্ট অ্যাকশন বা প্রত্যক্ষ সংগ্রামের কথা ঘোষণা করা হয়েছিল। সেই প্রত্যক্ষ সংগ্রামের ডাকের মর্ম আমি আজও বুঝি না (পৃ ৫৭)।’
আবুল হাশিম ও সোহরাওয়ার্দীকে সুনীল সমালোচনা করেছেন। সোহরাওয়ার্দী আগে থেকেই ১৬ আগস্টকে (১৯৪৬) ছুটির দিন কেন ঘোষণা করেছিলেন, সে-সম্পর্কে তিনি প্রশ্ন রেখেছেন। তখনকার ছোটলাট দিল্লিতে যে-রিপোর্ট পাঠিয়েছিলেন তাতে এই ঘটনাকে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বলেছেন, ব্রিটিশবিরোধী বলেননি। (পৃ ৫৮) সুনীল এই দাঙ্গার জন্য যেমন কষ্ট পেয়েছেন তেমনি মন্তব্য করেছেন যে, তা মানুষের নিষ্ঠুর চেহারাকে উন্মোচন করেছে। তিনি বলেন, ‘হিংস্রতায় কেউ কারোর চেয়ে কম যায় না। এইসব সময়ে প্রকাশিত হয়ে পড়ে, মানুষই এই পৃথিবীর সবচেয়ে হিংস্র প্রাণী। বিবেক, মনুষ্যত্ব এসবই যেন অদৃশ্য হয়ে যায়।’ (ওই)
দাঙ্গার বেশ কিছু বিবরণ অর্ধেক জীবনে রয়েছে। ওইসব ঘটনা কিশোর সুনীলের মনোজগৎ যেভাবে আচ্ছন্ন করেছিল সেগুলো যে-কোনো বিবেককে নাড়া দেবে অবশ্যই। তিনি লিখেছেন, ‘শেষ পর্যন্ত মুসলমানরা আমাদের গে স্ট্রিট পাড়ায় আক্রমণ করতে আসেনি। মুসলমান কর্তৃক হিন্দু নিধনের কোনো দৃশ্য দেখিনি আমি। তা অন্যত্র ঘটেছে; বরং উল্টোটাই দেখেছি। আমাদের পাড়ায় কিছু কিছু দোকান ছিল মুসলমানদের … সেসব দোকান ও তাদের মালিকরা শেষ। ফড়িয়া পুকুরের নাজির সাহেবের ঘুড়ির দোকান ছিল বিখ্যাত … সে-দোকান লুটেরারা নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে। অতি সুপুরুষ ও মিষ্টভাষী নাজির সাহেব পালাতে পেরেছেন কিনা জানি না। রাজমিস্তিরিরা নব্বই ভাগ মুসলমান … সমস্ত দালান কোঠায় মুসলমানের হাতের ছোঁয়া আছে, তারাও অনেকে তৈরি করা বাড়ির সামনে প্রাণ দিয়েছে।’ (পৃ ৫৮-৫৯) এ-ধরনের নিষ্ঠুর কর্মকাণ্ড  শান্তিপ্রিয় জীবনে অভ্যস্ত ব্যক্তিদের জন্য এক ভয়ংকর অভিজ্ঞতা। সুনীলের মতে এইসব দাঙ্গায় যারা মারা গেছে তাদের নিরানব্বই ভাগই ছিল গরিব। তিনি দু-একটি মৃত্যুর দৃশ্য সচক্ষে দেখেছেন। মৃত্যুকে প্রতিরোধ করতে কেউ এগিয়ে আসেনি। তাই তিনি ধর্মের প্রতি রুষ্ট হয়েছেন, লিখেছেন … ‘যাঁরা দূরে দাঁড়িয়ে সেই হত্যাদৃশ্য প্রত্যক্ষ করল অথবা বাধা দিল না, তারা যদি হিন্দু হয়, আমি তাহলে সেই হিন্দু হতে চাই না। চুলোয় যাক ধর্ম’ (পৃ ৫৯)। হয়তো সুনীল কোনো হিন্দুর মৃত্যুর দেখতে পাননি। যদি তিনি তা প্রত্যক্ষ করতেন তাহলে অন্য ধর্মের প্রতিও তাঁর একই প্রতিক্রিয়া হতো। এসব দুঃখজনক ঘটনাকে অতিক্রম করতে পারে শুধু মানুষের মানবতাবোধ। অর্ধেক জীবনের বিভিন্ন অংশে ’৪৬-এর দাঙ্গার দুঃখজনক অভিজ্ঞতার আরো বর্ণনা রয়েছে।

দুই
বাংলা অঞ্চলে বাংলাভাষীদের মধ্যে প্রদান দুই সম্প্রদায় মুসলমান-হিন্দু। বাঙালি সংস্কৃতির অভিন্ন কিছু উপাদান বহুযুগ ধরেই এই অঞ্চলে রয়েছে। প্রাত্যাহিক জীবনের কোনো কোনো বিষয় বা শব্দ দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রচলিত রয়েছে। সুনীল এ-ধরনের একটি উদাহরণ দিয়েছেন ‘পানি’ অথবা ‘জল’ নিয়ে। অভিধানে দুটি শব্দের ব্যুৎপত্তি একই। জল তো বটেই, পানি বা পানীও এসেছে সংস্কৃত প্রাকৃত ভাষার মাধ্যমে। অধিকাংশ ভারতীয়ই পানি ব্যবহার করে, বাঙালি হিন্দুরা অবশ্য জল ব্যবহার করে। সুনীল মন্তব্য করেছেন, ‘যেসব বাঙালি হিন্দু মনে করে পানি একটি মুসলমানি শব্দ, তাদের মতন মূর্খ আর হয় না। আর যেসব বাঙালি মুসলমান মনে করে জল হিন্দু শব্দ… তারাও একই রকম নির্বোধ। জওহরলাল নেহেরু ও জিন্না সাহেব দু’জনেই পানি বলতেন, যেমন গাঁধিজী, যেমন ফজলুল হক, সুরাবর্দী বল্লভভাই প্যাটেল ও লিয়াকত আলি। কট্টর হিন্দু সাভারকর আর মৌলানা আক্রম খাঁ পানির বন্ধনে বাঁধা।’ (পৃ ৬২)
বাংলা ভাষার চর্চা নিয়ে আমাদের সমাজে নানা যুক্তি, পাল্টা যুক্তি, রাজনৈতিক মন্তব্য হয়ে থাকে। ভাষা হিসেবে বাংলা জ্ঞানচর্চার কতটুকু উপযোগী তা নিয়ে বিতর্ক এখনো শেষ হয়নি। অথচ আজ থেকে প্রায় ষাট বছর আগের একটি ঘটনা সুনীল তাঁর 888sport sign up bonusকথায় যেভাবে উপস্থাপন করেছেন তাতে বাংলা ভাষার ঐশ্বর্যই চোখে পড়ে। কলকাতার সুরেন্দ্রনাথ কলেজে 888sport apkের সমস্ত ছাত্রদের একটি সমবেত ক্লাশে একদিন হঠাৎ বক্তৃতা দিতে এসেছিলেন অধ্যাপক সত্যেন্দ্রনাথ বসু। তিনি যে কতবড় 888sport apkী, সে সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা ছিল না।… ভারতীয় 888sport apkীদের মধ্যে তিনিই শ্রেষ্ঠ। তিনি যে নোবেল 888sport app download bd পাননি সেটা নোবেল কমিটিরই ব্যর্থতা ও লজ্জার কথা।… তিনি এক ঘণ্টা বক্তৃতা দিলেন পদার্থ 888sport apkের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা বিষয়ে। কী আশ্চর্য, সে বক্তৃতায় একবার একটিও ইংরেজি শব্দ উচ্চারণ করলেন না। যখন কেউ বলে, বাংলা ভাষায় 888sport apk চর্চা কিংবা উচ্চ শিক্ষা সম্ভব নয়। তখনই আমার সত্যেন বসুর সেই বক্তৃতার কথা মনে পড়ে।’ (পৃ ১৩)
তিন
১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্ত হয়। দুটি রাষ্ট্র সৃষ্টি হলো উপমহাদেশে। ধর্মের ভিত্তিতে পাকিস্তান রাষ্ট্র। এ-প্রসঙ্গে সুনীল লিখেছেন, ‘দেশ স্বাধীন হল, আমরা দেশ হারালাম …। দেশবিভাগ নিয়ে বিস্তর লেখালেখি হয়েছে, আমি আর সে জঞ্জাল বাড়াতে চাই না। তবে সেই প্রসঙ্গ উঠলে এখনও ক্রোধবহ্নি জ্বলে ওঠে। সেই দুষ্কর্মের হোতাদের ক্ষমা করতে পারি না।’ দেশভাগ হয়তো সেই সময়ে একটি বাস্তবতা ছিল। লেখকের মতে ইংরেজদের দুরভিসন্ধি অনুধাবন করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন সেই সময়ের রাজনীতিবিদরা। সুনীল মন্তব্য করেন, ইংরেজরা ‘শাসন করেছে, ডিভাইড অ্যান্ড রুল’ এই নীতিতে, তাদের শেষতম নীতি ‘ডিভাইড অ্যান্ড কুইট’ (পৃ ৬৪)।
পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টির পেছনে বাঙালি মুসলমানদের অবদান অনস্বীকার্য। ১৯৪০ সালে লাহোর প্রস্তাবের উপস্থাপক ছিলেন এ. কে. ফজলুল হক। সেই থেকে শুরু। পরবর্তী সাত বছরের মধ্যে বাংলার মুসলিম লীগ বাঙালি মুসলমানদের মধ্যে ‘পাকিস্তান’ রাষ্ট্রের বিষয়ে প্রচারণায় সফলতা অর্জন করে। এ প্রসঙ্গে সুনীল বলেন, ‘পাকিস্তানের দাবিদার বাঙালি মুসলমান নেতারাও তখন পর্যন্ত অনুমান করতে পারেননি যে, তাঁরা স্বাধীন হচ্ছেন না, তাঁরা একটি দেশের দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক হতে চলেছেন। প্রায় শেষ মুহূর্তে আবুল হাসেমের মতন নেতার চৈতন্য হল। তিনি বললেন, হিন্দুই হোক, মুসলমানই হোক, শেষ পর্যন্ত সবাই বাঙালি। সকলের ভাষা এক সংস্কৃতি এক।’ (পৃ ৬৪-৬৫) এই বিভক্তি সুনীলের বাবা মেনে নিতে পারেননি। এই কৃত্রিম সীমারেখা একদিন মানুষেরা মুছে ফেলবে তাঁর বাবা এ-ধারণা পোষণ করতেন। গান্ধী ভারত বিভক্তি মানতে পারেনি বলে কেঁদেছিলেন। কিন্তু সুনীল মনে করেন, ‘গাঁধীজি জোর দিয়ে বললে, ভারত বিভাগের বিরোধিতা করলে, তা অমান্য করার সাধ্য নেহরু-প্যাটেল প্রমুখের ছিল না। না হয় জিন্নাকে করা হতো অখণ্ড স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী। অনেক ব্যাপারেই আমরণ অনশনের সংকল্প নিয়ে অনেক সিদ্ধান্ত বাতিল করে দিয়েছেন, এমন একটি গুরুতর ব্যাপারে তিনি কেন অনশনে বসলেন না?… নাথুরামের গুলিতে প্রাণ দেবার বদলে ভারত বিভাগের বিরোধিতা করে গাঁধীজি যদি অনশনে প্রাণ দিতেন, তা হলে তাঁর মর্যাদা বেড়ে যেত শতগুণ।… গাঁধীজির আটমাস পর পৃথিবী থেকেই প্রস্থান করতে হল জিন্নাকে। জাতির পিতা নামে অভিহিত এই দু’জনই দুটি দেশকে মহা-অনিশ্চয়তার মধ্যে ঠেলে দিয়ে সরে পড়লেন। (পৃ ৬৫)
দুটি রাষ্ট্র সৃষ্টির মাধ্যমে কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের আপাত জয় সূচিত হলেও তা যে বাঙালিদের জন্য কল্যাণকর হয়েছিল তা বলা যাবে না। এ-প্রসঙ্গে সুনীল লিখেছেন, ‘পাকিস্তানের উদ্গাতারা ধর্মের প্রশ্নে দেশ ভাগ করলেন, কিন্তু ভারতে পড়ে থাকা কোটি কোটি মুসলমানদের ভাগ্য নিয়ে চিন্তা করলেন না, তেমনই ধর্মনিরপেক্ষতার ধ্বজাধারী ভারতীয় নেতারা চিন্তা করলেন না পাকিস্তানের হিন্দুদের নিরাপত্তার কথা। ফলে, দুদিকেই শুরু হলো শরণার্থীদের প্রবল স্রোত। পরি888sport free betন অনুযায়ী হিন্দু উদ্বাস্তুদের 888sport free bet বহুগুণ বেশি।’ (পৃ ৬৫)
পূর্ববাংলা থেকে যেসব পরিবার ভারতে গিয়েছিল তাদের অবস্থা ছিল শোচনীয়। ঋত্বিক ঘটকের সুবর্ণ রেখা ছায়াছবিতে এদের অভিজ্ঞতার কিছু পরিচয় আমরা দেখি। ভারতে প্রবেশ করে এসব পরিবার বিপর্যয়ে পতিত হয়। তাদের সম্পর্কেই সুনীল মন্তব্য করেছেন – ‘বরং শরণার্থী হয়ে এসে তারা পেয়েছে উপেক্ষা, অবহেলা, বিদ্রুপ, অনেক ক্ষেত্রে প্রতিরোধ। তবু তারা এসেছে…। আমাদের প্রতিবেশীরা আগে আমাদের বলত বাঙাল, কিংবা বাঙাল দেশের লোক, এখন থেকে বলতে লাগল রিফিউজি।’ (পৃ ৬৬) অর্ধেক জীবনের বিভিন্ন অংশে লেখক দেশভাগের নানা তথ্য ও করুণ অভিজ্ঞতা উপস্থাপন করেছেন।
অর্ধেক জীবনে সুনীলের শৈশব, কৈশোর ও যৌবনের নানা ঘাত-প্রতিঘাত ও অভিজ্ঞতা পাওয়া যায়। সুনীল নিজের লেখকসত্তাকে কলকাতার বুকে বাঙালিদের মাঝে প্রতিষ্ঠা করেছেন সত্য কিন্তু তাঁর শৈশবের এবং পৈতৃক ভিটার 888sport sign up bonus তাঁকে তাড়া করে ফিরেছে। আসে ১৯৭১ সাল। বাঙালির মুক্তিযুদ্ধ। নয় মাসের যুদ্ধে পাকিস্তানিরা পরাজিত হয়। 888sport apps রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে। ১৬ ডিসেম্বর ’৭১-এর পর আনন্দবাজার পত্রিকার স্থানীয় দফতর খোলা হয় 888sport appর পূর্বাণী হোটেলে। সুনীল হোটেলে অবস্থান করে নানা অভিজ্ঞতা নিতে থাকেন। কোনো এক রাতে হোটেলে অবস্থানকালে সুনীল তাঁর অভিজ্ঞতার কথা লেখেন – ‘এক সময় টাটকা বাতাসে নিশ্বাস নেবার জন্য আমি এসে দাঁড়ালাম বারান্দায়। শীতকালের মেঘহীন নক্ষত্রখচিত আকাশ… ছোট বেলায় ছাদে শুয়ে দেখেছি। তখন মনে হত, এই বিশাল মহাকাশে আমাদের এই পৃথিবী নামের গ্রহটি একটা বালুকণার মতনও নয়, তার চেয়ে অতিক্ষুদ্র।… এই পৃথিবীরও অতি সংক্ষিপ্ত ইতিহাসে কত মানুষ দেশ থেকে দেশান্তরে গেছে, খাদ্য, পানীয় ও নিরাপত্তার সন্ধানে মানুষ জন্মস্থান ছেড়ে অজানার সন্ধানে যেতে দ্বিধা করেনি…। তাহলে আমার বাবা কাকারা … চলে গেছেন কলকাতায়, তা নিয়ে এতো আদিখ্যেতা করারই বা কি আছে?… এই সব যুক্তিগ্রাহ্য চিন্তার পরেও বারান্দার রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে দুটো একটা দীর্ঘশ্বাস পড়ে। এটা আমার দেশ নয়। এটা আমার দেশ নয়।’ অর্ধেক জীবনে সুনীলের শেষ কথাগুলো তাই।