অশোক মিত্র (১৯২৮-২০১৮)

প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ, মার্কসবাদী, লেখক ও 888sport appsের অকৃত্রিম সুহৃদ অশোক মিত্র চলে গেলেন। গত পয়লা মে কলকাতার একটি হাসপাতালে, নব্বই বছর বয়সে, শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। অশোক মিত্র জন্মেছিলেন 888sport appsের 888sport appয়, ১৯২৮ সালের ১০ এপ্রিল। 888sport appর আরমানিটোলা  স্কুলে তাঁর শিক্ষাজীবনের শুরু। আরমানিটোলা স্কুলে পড়ার সময়েই সোভিয়েত বিপ্লবের কথা শুনেছেন, নাৎসিদের বিরুদ্ধে রেড আর্মির অভিযানের কথাও জেনেছেন, ভারতের উপনিবেশবিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রাম প্রত্যক্ষ করেছেন। এরই মধ্যে ম্যাক্সিম গোর্কির মা, উপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্বাসিতের আত্মকথা পড়া হয়ে গেছে। বিনয়-বাদল-দীনেশের আত্মত্যাগের ঘটনাও কানে আসছিল। বাড়িতেও ছিল স্বদেশি আবহাওয়া। গান্ধী, সুভাষ বসু ও চিত্তরঞ্জনের প্রতি পরিবারের সকলের অগাধ 888sport apk download apk latest version। এরকম অবস্থাতেই অশোক মিত্রের প্রাথমিক চৈতন্য গড়ে উঠছিল। পরবর্তী জীবনে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ার পটভূমি তৈরি হয়েছিল এই পারিপার্শি¦কতার কারণেই।

আরমানিটোলা স্কুল থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ভর্তি হলেন জগন্নাথ কলেজে। এই কলেজ থেকে আইএ পাশ করে 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করেছেন অর্থনীতি বিষয়ে। পরবর্তী জীবনে অর্থনীতিবিদ হিসেবে কিংবদন্তিতুল্য  হয়ে উঠলেও এই বিষয়ে গোড়ার দিকে তাঁর তেমন আগ্রহ ছিল না। ইচ্ছে ছিল ইংরেজি 888sport live football নিয়ে পড়ার, কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি ফরমে পছন্দের বিষয় হিসেবে লিখলেন, অর্থনীতি। তাঁর ভাষায় :

ধন888sport apkে [অশোক মিত্র অর্থনীতির পরিবর্তে ধন888sport apk কথাটিই অধিকাংশ ক্ষেত্রে ব্যবহার করেছেন] আমার তেমন আগ্রহ কোনওদিনই ছিল না। আকস্মিকতার পরিণামে, এবং কিছুটা দায়ে পড়ে, এই শাস্ত্রে অনুপ্রবেশ করেছি, প্রথম সুযোগেই সেই চত্বর থেকে বিদায় নিয়েছি।

অশোক মিত্র 888sport app বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন কৃতিত্বের সঙ্গে। কিন্তু স্নাতকোত্তর অধ্যয়ন সমাপ্ত করতে পারেননি। ১৯৪৭ সালের পর বেশ কিছুদিন ছিলেন 888sport appতেই। তখন রাজনীতির সঙ্গেও জড়িয়ে পড়েছিলেন, ছাত্র ফেডারেশনের সক্রিয় কর্মী হিসেবে কাজ করেছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাঁর পরিবার কলকাতায় চলে যায়। কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে এম.এ. শ্রেণিতে তিনি কিছুদিন ক্লাস করেছিলেন, কিন্তু ভর্তির অনুমতি পাননি। এই অবস্থায় তাঁকে চলে যেতে হয় বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে ছিলেন অধ্যাপক অমিয় দাশগুপ্ত। অমিয় দাশগুপ্ত বিভাগ-পূর্বকালে 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের খ্যাতিমান অধ্যাপক ছিলেন। তখন অশোক মিত্রের সঙ্গে তাঁর তেমন ঘনিষ্ঠতা ছিল না, কিন্তু বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর তিনি অধ্যাপক দাশগুপ্তের সান্নিধ্য পেয়েছেন। তাঁর কাছ থেকে লাভ করেছেন অর্থনীতির নিবিড় পাঠ। এমএ পরীক্ষায় বেশ কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছেন। এই পরীক্ষার একটি পত্রের পরীক্ষক ছিলেন লখনউ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও খ্যাতিমান লেখক ধূর্জটিপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। এই  উত্তরপত্র পরীক্ষা করতে গিয়ে তিনি এতটাই মুগ্ধ হয়েছিলেন যে, অশোক মিত্রকে লখনউ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে প্রভাষক পদে যোগদানের আমন্ত্রণ জানান।

লখনউ বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দিয়ে অনেক বিশিষ্ট প-িত-অধ্যাপকের সান্নিধ্য পেলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নরেন্দ্র দেব, কালিকারঞ্জন কানুনগো, সুরেন্দ্রনাথ দাশগুপ্তসহ আরো অনেক প-িত-অধ্যাপকের সাহচর্যে কেটেছে অশোক মিত্রের লখনউ বাস। উপাচার্য নরেন্দ্র দেব ছিলেন বাম-চিন্তার অনুসারী। অশোক মিত্রও একই ধরনের চিন্তার অনুসারী বলে দুজনের মধ্যে আলাপ-আলোচনা বেশ জমে উঠত। ধূর্জটিপ্রসাদের বাড়িতে বসত নিয়মিত আড্ডা। ধূর্জটিপ্রসাদের বহুমাত্রিক পা-িত্যপূর্ণ আলোচনায় সাগ্রহে অংশগ্রহণ করতেন অশোক মিত্র। লখনউতে থাকার সময়েই সুযোগ এসে গেল হল্যান্ডে গিয়ে উচ্চতর পর্যায়ে অধ্যয়নের। তখন অর্থনীতি, গণিত ও পরি888sport free betনবিদ্যার সমন্বয়ে ইকোনমেট্রিক্স নামে এক নতুন অধ্যয়ন-শাখার সূচনা হয়েছে। অশোক মিত্রের ইচ্ছা ছিল এই বিষয়ে অধ্যয়ন করার। অনেকটা আকস্মিকভাবে তাঁর ইচ্ছাপূরণের সুযোগ এসে গেল। আমস্টারডাম থেকে ভারতবর্ষে এসেছিলেন সমাজ888sport apkী অধ্যাপক হফস্ট্রা। তিনি তখন আমস্টারডামে সদ্যপ্রতিষ্ঠিত ইনস্টিটিউট অব সোশ্যাল স্টাডিজের অধ্যক্ষ হিসেবে এশিয়া-আফ্রিকা-লাতিন আমেরিকা থেকে ইনস্টিটিউটের জন্য ছাত্র বাছাই ও সংগ্রহ করতে বিভিন্ন দেশ ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন। তিনি সে-সময়ে লখনউ গিয়েছিলেন। ধূর্জটিপ্রসাদ অধ্যাপক হফস্ট্রার সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিলেন। হফস্ট্রা তাঁর ইনস্টিটিউটে অধ্যয়নের আমন্ত্রণ জানান অশোক মিত্রকে। অশোক মিত্র অধ্যাপক হফস্ট্রাকে বললেন, তিনি জান টিনবার্গেনের (ঔধহ ঞরহনবৎমবহ) সঙ্গে কাজ করতে চান। হফস্ট্রা আশ্বস্ত করলেন, সেই সুযোগ হবে। জান টিনবার্গেন অর্থনীতি বিষয়ে প্রথম নোবেল 888sport app download bdপ্রাপ্ত অর্থনীতিবিদ। টিনবার্গেন ছিলেন সমাজতন্ত্রে বিশ্বাসী, হল্যান্ডের সমাজতান্ত্রিক দলের সদস্য।

অশোক মিত্র ইনস্টিটিউট অফ সোশ্যাল স্টাডিজের শিক্ষার্থী হলেও তাঁকে পিএইচ.ডি. অভিসন্দর্ভের কাজ করতে হয়েছে রটারডম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে। ইনস্টিটিউট অব সোশ্যাল স্টাডিজের কোনো ডিগ্রি দেওয়ার ক্ষমতা ছিল না। টিনবার্গেন রটারডাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, কাজেই কোনো অসুবিধে হলো না। অভিসন্দর্ভ রচনার সময়ে অধ্যাপক টিনবার্গেন কয়েক মাসের জন্য আমেরিকা গিয়েছিলেন, অশোক মিত্রও তাঁর অনুমতি নিয়ে সে-সময়ে কয়েক মাসের জন্য চলে গেলেন কেমব্রিজে। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের গ্রন্থাগারে বসে নিবিষ্টচিত্তে লিখে ফেললেন অভিসন্দর্ভ। কাজের ফাঁকে ফাঁকে জোন রবিনসন, নিকি কাল্ডর, ডিক কাহন, ডিক গডউইনের ক্লাসে গিয়ে তাঁদের বক্তৃতা শুনতেন। অশোক মিত্রের অভিসন্দর্ভের বিষয় ছিল ‘ঞযব ঝযধৎব ড়ভ ডধমবং রহ ঘধঃরড়হধষ ওহপড়সব’। প্রকাশিত হওয়ার পর অভিসন্দর্ভটি বেশ প্রশংসিত হয়েছিল। তাঁর আরেকটি বই ঞবৎসং ড়ভ ঞৎধফব ধহফ ঈষধংং জবষধঃরড়হংও অর্থনীতিবিদদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিবেচিত হয়েছে। অশোক মিত্র তাঁর অভিসন্দর্ভে শ্রমমজুরি বাড়ার সঙ্গে ট্রেড ইউনিয়নের সম্পর্কের দিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন এই দুটি বইয়ে। ট্রেড ইউনিয়নের ব্যাপারে পাশ্চাত্যের সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলোর আপত্তির যুক্তিগুলো অশোক মিত্র খ-ন করেছিলেন। তিনি মনে করতেন, ভারতের পুঁজির জোগানের জন্য সামন্ত-জমিদারদের ওপর নির্ভরশীলতা অত্যধিক বলে এই শ্রেণিকে সরকার তুষ্ট করতে চায়। এর ফলে শ্রমিকের প্রাপ্য ন্যায্য মজুরিতে ভাগ বসাতে পারে এই সামন্ত-জমিদার শ্রেণি।

হল্যান্ড থেকে ভারতে ফিরে আসার পথে, সুয়েজে পৌঁছেই পেলেন ভারত সরকারের প্রধান অর্থনৈতিক উপদেষ্টা জয়ন্তীলাল আঞ্জারিয়ার তার – তাঁর জন্য একটি চাকরির ব্যবস্থা হয়েছে। অর্থমন্ত্রকে উচ্চতর মাইনেতে চাকরির প্রস্তাব পেয়ে, লখনউ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইস্তফা দিলেন। অর্থমন্ত্রকের চাকরিতে বেশ উৎসাহ নিয়েই কাজ করতে লাগলেন। ভারত তখন সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির দিকে ঝুঁকেছে। কাজেই প্রবল উৎসাহ ও আশা নিয়ে কাজে ডুবে গেলেন অশোক মিত্র। সেই সময়ে দিল্লিতে থাকতেন সাংসদ ও কমিউনিস্ট নেতা ভূপেশ গুপ্ত। ভূপেশ গুপ্তের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ ঘটতে থাকল, এর ফলে কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গেও অনেকটা নিবিড় হলো অশোক মিত্রের সম্পর্ক। ভূপেশ গুপ্তের আগ্রহেই, মাসিক ও সাপ্তাহিক নিউ এজ পত্রিকায় নিয়মিত লিখতে শুরু করলেন অর্থনীতিবিষয়ক লেখা। সরকারি চাকরি করে কমিউনিস্ট পার্টির পত্রিকায় স্বনামে লেখালিখি করায় অসুবিধা ছিল, একটি ছদ্মনাম ঠিক হলো – ‘চারণ গুপ্ত’। ভূপেশ গুপ্তই ঠিক করে দিয়েছিলেন নামটি। চারণ গুপ্ত নামেই তিনি পরবর্তীকালে হুমায়ুন কবীর-প্রতিষ্ঠিত নাউ এবং সমর সেন-সম্পাদিত ফ্রন্টিয়ার পত্রিকায়ও লিখেছেন। আরো পরে অবশ্য তিনি স্বনামেই লিখেছেন। ভূপেশ গুপ্তের বাড়িতেই অশোক মিত্রের সঙ্গে আলাপ হলো ই.এম.এস. নাম্বুদ্রিপাদের। নাম্বুদ্রিপাদ তাঁকে বেশ মুগ্ধ করেছিলেন।

ক্ষীণদৃষ্টির কারণে অর্থমন্ত্রকে চাকরিতে স্থায়ী হওয়ার সম্ভাবনা নেই, বিশেষ দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করে যেতে হবে – এরকম কথা জানার পর বিকল্প চাকরির চিন্তা করতে লাগলেন। কিছুদিন দিল্লি স্কুল অব ইকোনমিক্সে ইকোনমেট্রিক্স  úড়ালেন। এই সময় ব্যাংককে অবস্থিত জাতিসংঘের এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্য আর্থিক কমিশনের দফতরে একটি চাকরির সুযোগ পেলেন। বছর দেড়েক ছিলেন ব্যাংককে। তারপর দিল্লিতে একটি গবেষণা-প্রতিষ্ঠানে চাকরি পেয়ে ফিরে এলেন দেশে। এই গবেষণা-প্রতিষ্ঠানে থাকার সময়ে তিনি পরিচিত হলেন ড্যানিয়েল থর্নারের সঙ্গে। এই  প্রতিষ্ঠানে অশোক মিত্র যোগ দিয়েছিলেন ব্যাংককের জাতিসংঘের এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্য আর্থিক কমিশনের একজন ঊর্ধ্বতন তামিল সহকর্মীর অনুরোধে। কিন্তু পরবর্তীকালে সেই তামিল অর্থনীতিবিদের আচরণে অশোক মিত্র প্রতিষ্ঠানটি ছেড়ে দেওয়ার চিন্তা করছিলেন। এমন সময়ে ওয়াশিংটনের ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউট থেকে পড়ানোর প্রস্তাব পেয়ে খানিকটা স্বস্তি পেলেন। ওয়াশিংটনে কিছুকাল কাটানোর পর তিনি দেশে ফিরতে চাইছিলেন, সুযোগও পেয়ে গেলেন। কলকাতায় নবপ্রতিষ্ঠিত ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্টে অধ্যাপনার চাকরি নিয়ে দীর্ঘদিন পর আবার ফিরে এলেন তাঁর প্রিয় শহর কলকাতায়।

কলকাতায় ফিরে আসায় যোগাযোগ শুরু হলো লেখকদের সঙ্গে, বামপন্থি রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার সঙ্গেও তাঁর যোগাযোগ ঘটতে লাগল। হুমায়ুন কবিরের চতুরঙ্গ পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত হলেন, একসময়ে এই পত্রিকার দায়িত্বও গ্রহণ করলেন। এই সময়ে ইতিহাসবিদ সুশোভন সরকারের তত্ত্বাবধানে চিন্মোহন সেহানবিশের বাড়িতে প্রতি সপ্তাহে বসত ‘জনশিক্ষা পরিষদে’র বৈঠক। অশোক মিত্র নিয়মিত যোগ দিতেন এই বৈঠকে। অবশ্য জনশিক্ষা পরিষদের কোনো কোনো সদস্যের চিন্তা ও আচরণে ক্ষুব্ধ হয়ে সেই বৈঠকে যাওয়া বন্ধ করে দেন।

ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্টেও কিছুটা অস্বস্তি ছিল। ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউটের তৎকালীন অধ্যক্ষ অন্যত্র চাকরি নিয়ে চলে যাওয়ায় অশোক মিত্রেরই প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ হওয়ার কথা। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে রটনা – ভালো শিক্ষক হলেও তিনি কমিউনিস্ট। তখন শচীন চৌধুরীর ইকোনমিক উইকলি কিছুদিন বন্ধ থাকার

পর ইকোনমিক অ্যান্ড পলিটিক্যাল উইকলি নামে নতুনভাবে প্রকাশের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছিল। শচীন চৌধুরী অশোক মিত্রকে এর দায়িত্ব নিতে অনুরোধ করলেন। কিন্তু এই সময়েই দিল্লিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ‘কৃষিপণ্য মূল্য কমিশন’। কমিশনের সভাপতি পদে যোগদানের আমন্ত্রণ পেলেন প্রধানত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর আগ্রহে। কমিশনে থাকার সময়ে ভারতে কৃষিপণ্যের মূল্য নির্ধারণ প্রক্রিয়ায় অশোক মিত্র যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন, তা বেশ প্রশংসিত হয়েছিল। ১৯৭০ সালের গোড়ার দিকে কৃষিপণ্য মূল্য কমিশনের দায়িত্ব ছেড়ে যোগ দিলেন ভারত সরকারের প্রধান অর্থনৈতিক উপদেষ্টার পদে। এই সময়ে তাঁকে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক করতে হতো। ইন্দিরা গান্ধী দাফতরিক আলোচনার বাইরেও অশোক মিত্রের কাছ থেকে দেশের হালহকিকত – বিশেষ করে বুদ্ধিজীবীদের ভাবনাচিন্তা সম্পর্কে – জানতে চাইতেন। কিছুদিন পর অশোক মিত্র উপলব্ধি করলেন, ইন্দিরা সরকারের মধ্যে স্বৈরাচারী মনোভাব প্রকট হয়ে উঠছে। কাজেই দিল্লির চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে ফিরে এলেন কলকাতায়। কলকাতায় ফিরে লেখালিখিতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিএম) কাজেও অনেকটাই সক্রিয় হয়ে উঠলেন। ইকোনমিক অ্যান্ড পলিটিক্যাল উইকলিতে লিখতে লাগলেন নিয়মিত। ‘ক্যালকাটা ডায়রি’ নামে নিয়মিত কলাম লিখতেন এ.এম. নামে। দেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে অশোক মিত্রের বিশ্লেষণধর্মী ও সাহসী মতামতের জন্য এই কলামটি বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল।

ইন্দিরা গান্ধী দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করলেন। এর ফলে রাজনৈতিক কর্মকা- প্রায় নিষিদ্ধ হয়ে উঠল, স্বাধীন মতপ্রকাশের পথও রুদ্ধ হয়ে গেল। তখন অমর্ত্য সেনের উদ্যোগে সাসেক্স বিশ্ববিদ্যালয়ে এক বছরের জন্য অতিথি অধ্যাপক পদে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ পেলেন। সাসেক্স বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের পড়াতেন, তবে বেশিরভাগ সময় কাটিয়েছেন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে। ইন্দিরা গান্ধীর জরুরি অবস্থা, দেশের সংকটাপন্ন অবস্থা সম্পর্কে বক্তৃতা, গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দেওয়া ও পত্রিকায় লেখালিখিতেই অশোক মিত্র এই সময়ে ব্যস্ত ছিলেন। জরুরি অবস্থার বর্ষপূর্তি উপলক্ষে লন্ডনের ইকোনমিস্ট পত্রিকা থেকে অশোক মিত্রকে অনুরোধ করা হলো একটি বিশ্লেষণধর্মী লেখা দিতে। তিনি লিখেও ফেললেন। কিন্তু তিনি চাইছিলেন, লেখাটি বেশ কজনের নামে প্রকাশিত হোক। জরুরি অবস্থা সম্পর্কে যাঁদের তিক্ততা ছিল, সেরকম কয়েকজনকে অনুরোধ করলেন, লেখাটির সঙ্গে তাঁদের নাম যুক্ত করতে। কিন্তু তাঁকে নিরাশ হতে হলো, কারো সাড়া পেলেন না।

এক বছর পর দেশে ফিরে  যোগ দিলেন ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউটে অধ্যাপক পদে। কিছুদিনের মধ্যেই জ্যোতি বসু তাঁকে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে অংশগ্রহণের কথা বললেন। ১৯৭৭ সালের নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করল বামফ্রন্ট। জ্যোতি বসুর নেতৃত্বে গঠিত সরকারে অশোক মিত্র যোগ দিলেন অর্থমন্ত্রী হিসেবে। অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি যোগ্যতা ও সাফল্যের সঙ্গেই। তাঁর অর্থনৈতিক কর্মপরিকল্পনায় পশ্চিমবঙ্গ অনেকটাই অগ্রসর হয়েছিল। পঞ্চায়েত ব্যবস্থার ভিত্তি দৃঢ় হয়েছে, অপারেশন বর্গাও ফলপ্রসূ হতে শুরু করেছে। অর্থমন্ত্রী হয়ে অশোক মিত্র কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্ক নিয়ে বেশ সোচ্চার হয়ে উঠলেন। রাজ্যগুলো থেকে সংগৃহীত কর ও শুল্কের ভাগ নিয়ে রাজ্য ও কেন্দ্রের মধ্যে টানাপড়েন ছিল সবসময়েই। অশোক মিত্র এই  কেন্দ্র-রাজ্যের সম্পর্কের সংকট নিয়ে একটি যৌক্তিক সমাধানের পথ খুঁজছিলেন। এই নিয়ে তিনি ভারতের বিরোধীদলীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বেশ কয়েকটি সমাবেশ ও বৈঠকের আয়োজনে উদ্যোগী ভূমিকা পালন করেছিলেন। এই বিষয়ে তাঁর মতামত ও ভূমিকা ভারতের অধিকাংশ অর্থনীতিবিদেরই সমর্থন ও প্রশংসা অর্জন করেছে।

মন্ত্রিত্ব করতে গিয়ে অনেক বিরূপ পরিস্থিতিরও সম্মুখীন হতে হয়েছে তাঁকে। ব্যবসায়ী-আমলাসহ নানা স্বার্থান্বেষী মহল থেকে বিরোধিতা-অসহযোগিতা মোকাবেলা করতে হয়েছে। একবার মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু বিদেশে যাওয়ায় অশোক মিত্রকে মুখ্যমন্ত্রীর নিয়ন্ত্রণাধীন বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করতে হয়েছিল। ওই বিভাগের কিছু জনস্বার্থবিরোধী কাজে ক্ষুব্ধ হয়ে অশোক মিত্র বিদ্যুৎ সচিবকে ডেকে পাঠালেন। কৈফিয়ত চেয়ে ঠিক পন্থায় কাজ করার নির্দেশ দিলেন। সচিব ঔদ্ধত্যের ভঙ্গিতে বললেন, এই নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে। কাজেই তিনি ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রীর নির্দেশ মানতে বাধ্য নন। অশোক মিত্র এরকম ঔদ্ধত্য হজম করার পাত্র নন। তিনি বেশ দৃঢ়তার সঙ্গে সচিবকে বললেন, ‘আমার কাজ আমি জানি। যেভাবে বলছি, কাজ করুন। আর মনে রাখবেন, আই অ্যাম নট এ জেন্টেলম্যান, আই অ্যাম এ কমিউনিস্ট।’ অশোক মিত্রের এই উক্তি বেশ আলোড়ন তুলেছিল সেই সময়ে। অশোক মিত্রের স্বভাব সম্পর্কে আলোচনায় এই উক্তিটি উদ্ধৃত করা হতো। অশোক মিত্র জীবনের শেষদিন পর্যন্ত আপসহীন কমিউনিস্ট ছিলেন, সন্দেহ নেই। কিন্তু তিনি সৌজন্যরহিত ছিলেন, এমন কথা বলা যাবে না। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে আক্রমণ করেছেন তীব্র ভাষায়, তীক্ষè যুক্তি দিয়ে, হয়তো তাতে অসহিষ্ণুতার প্রকাশও ঘটেছে কখনো কখনো, কিন্তু সৌজন্যের অভাব ছিল না কখনো।

পশ্চিমবঙ্গে শিক্ষা-সংস্কারের ক্ষেত্রেও অশোক মিত্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। পশ্চিমবঙ্গে বিদ্যালয় পর্যায়ে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত মাতৃভাষাতেই শিক্ষাদান করা হবে; দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে ইংরেজি শেখানো হবে ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে – এই  প্রস্তাবটি তাঁরই উদ্যাগে গৃহীত হয়েছিল। অবশ্য এই উদ্যোগের বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রতিবাদ হয়েছিল। সুকুমার সেনের মতো পণ্ডিতেরাও এর প্রতিবাদে মিছিল করেছিলেন। ইংরেজিতে পারদর্শিতা অর্জন না করলে সর্বভারতীয় প্রতিযোগিতায় বাংলার চাকরিপ্রার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে – এই যুক্তিতে ব্যাপক আন্দোলনের মুখে বামফ্রন্ট এই প্রশ্নে আপস করতে বাধ্য হয়।

অশোক মিত্র স্বাধীনচেতা ছিলেন। এই স্বভাবের জন্য রাজনৈতিক দলের সবকিছু মেনে নেওয়া তাঁর পক্ষে সম্ভব ছিল না। দলের মন্ত্রীদের সঙ্গে, এমনকি জ্যোতি বসুর সঙ্গেও, তাঁর মতবিরোধ হতো। শেষ পর্যন্ত অর্থনৈতিক পরিকল্পনা ও কর্মোদ্যোগ বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে মতবিরোধ দেখা দেওয়ায় তিনি মন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগ করেন। মন্ত্রিত্ব ত্যাগ করলেও দলীয় আনুগত্য তিনি ত্যাগ করেননি। পরে, বামফ্রন্ট থেকে তাঁকে রাজ্যসভার সদস্য হিসেবে মনোনীত করা হয়। শেষদিকে বামফ্রন্ট ও সিপিএমের অনেক নীতি ও কাজের প্রকাশ্যে সমালোচনা করেছেন তিনি। বিশেষ করে সিঙ্গুর ও নন্দীগ্রাম প্রশ্নে সরকারের এবং দলের নীতির বিরোধিতা করেছেন প্রবলভাবে। এতকিছু সত্ত্বেও তাঁর জীবনের আদর্শবোধ থেকে দূরে সরে যাননি। কমিউনিজমে তাঁর বিশ্বাস শিথিল হয়নি।

রাজনৈতিক কর্মকা-ের বাইরে 888sport live footballের সঙ্গে অশোক মিত্রের যোগাযোগ ছিল নিবিড়। বাংলায় অনেক 888sport live-নিবন্ধ লিখেছেন। কলকাতার ইংরেজি দৈনিক টেলিগ্রাফে লিখতেন ‘কাটিং কর্নার’ নামে নিয়মিত কলাম। প্রাঞ্জল-সুললিত ভাষা, বিশ্লেষণী বক্তব্য ও তির্যক-তীক্ষ্ন মন্তব্যের জন্য অশোক মিত্রের কলামগুলো পাঠকপ্রিয়তা অর্জন করেছিল। ইকোনমিক অ্যান্ড পলিটিক্যাল উইকলিতে ‘ক্যালকাটা ডায়রি’ লেখাও নিয়মিত চালিয়ে গেছেন। কবি-888sport live footballিকদের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ছিল নিয়মিত, সখ্যও ছিল অনেকের সঙ্গে। দিল্লিতে অর্থমন্ত্রকে কাজ করার সময়ে কলকাতায় এলে নিয়মিত যোগাযোগ করতেন জীবনানন্দ দাশের সঙ্গে। জীবনানন্দ দাশের ‘বনলতা সেন’ নামকরণের ইতিহাসও জেনে নিয়েছিলেন কবির কাছ থেকে। সেই কথা জানিয়েছেন আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত এক রচনায়। বনলতা সেন ছিলেন একজন রাজবন্দি। একবার পত্রিকায় এক কারাগার থেকে অন্য কারাগারে স্থানান্তরিত বন্দিদের তালিকা প্রকাশিত হয়েছিল, তাতে একটি নাম ছিল – বনলতা সেন। নামটি কবিকে আকৃষ্ট করে। সেই কারণেই জীবনানন্দ তাঁর বিখ্যাত 888sport app download apkর নাম দিয়েছিলেন ‘বনলতা সেন’। একবার বনলতা সেনের সঙ্গেও অশোক মিত্রের দেখা হয়েছিল, কলকাতায়। তিনি তখন কলকাতার একটি কলেজে গণিতের অধ্যাপক। বনলতা সেন – এই বিষয়টি অবগত ছিলেন কি না, তা জানার আগ্রহ জেগেছিল মনে। কিন্তু অশোক মিত্র নিজের প্রবল আগ্রহকে সংযত করলেন এই বিবেচনায় যে, ‘কিছু কিছু রহস্যকে ঢেকে রাখাই সম্ভবত শ্রেয়।’

অশোক মিত্র বলতেন, অর্থনীতিচর্চায় তিনি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিলেন। কিন্তু অর্থনীতির আলোচনায় তিনি সবসময়ে সরব ও সক্রিয় ছিলেন। তাঁর আগ্রহ ছিল নানামুখী। পত্রিকার কলামে ক্রিকেট থেকে live chat 888sport, রাজনীতি থেকে অর্থনীতি-সমাজতত্ত্ব সব বিষয়েই তিনি লিখেছেন। ক্রিকেটে তাঁর বেশ আগ্রহ ছিল। একবার টেলিগ্রাফ পত্রিকায় কলকাতায় অনুষ্ঠিত একটি ক্রিকেট খেলা সম্পর্কে লিখতে গিয়ে প্রথমে খেলাটি সম্পর্কে আলোচনা করলেন, তারপর ব্যাট-বলের সংযোগের মধ্যে যে একটি ছন্দের অনুরণন আছে তার বর্ণনা দিলেন অনবদ্য কাব্যিক ভাষায়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত অর্থনীতিবিদ হিসেবে তাঁর প্রবণতা আড়াল করতে পারেননি। লিখলেন, ক্রিকেট একটি পুঁজিঘন খেলা। কেন পুঁজিঘন – তার ব্যাখ্যা দিলেন সংক্ষেপে, সহজবোধ্য ভাষায়। সুচিত্রা সেনের মৃত্যুর পর এই কিংবদন্তিতুল্য অভিনেত্রীর প্রতি 888sport apk download apk latest version জানাতে গিয়ে লিখলেন, সুচিত্রা সেনদের পরিবারের আদি নিবাস ছিল বরিশাল, পরে পাবনায় এসে তাঁরা বসতি স্থাপন করেছেন। এই তথ্যটি অনেকেরই জানা ছিল না।

888sport live football-আলোচনায় 888sport app download apkর প্রতিই হয়তো পক্ষপাতিত্ব ছিল অশোক মিত্রের। অনেক 888sport app download apkই তাঁর 888sport sign up bonusতে সংরক্ষিত ছিল। বলা হতো, জীবিত বাঙালিদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি 888sport app download apk ধারণ করেছিলেন অশোক মিত্র। জীবনানন্দ তাঁর প্রিয় কবি। এই কবি সম্পর্কে তাঁর মন্তব্য :

জীবনানন্দের কাব্য সত্যিই কুহকিনী। রবীন্দ্রনাথের পর এতটা দ্যোতনা বাংলা 888sport app download apkয় আর সঞ্চারিত হয়নি। সম্পূর্ণ ভিন্ন এক পৃথিবী, আমূল অন্য এক পরিভাষা …।

তবে জীবনানন্দীয় ঘোর থেকে বেরিয়ে আসার তাগিদও অনুভব করেছেন তিনি :

আজ থেকে অর্ধশতাব্দী আগেকার রবীন্দ্র888sport sign up bonusর মতোই, বর্তমানের জীবনানন্দীয় ঘোর, আমার ধারণায়, বাংলা কাব্যকে এক জায়গায় আটকে রেখেছে, জীবনানন্দকে পাশ কাটিয়ে বেরিয়ে না আসতে পারলে মুক্তি অসম্ভব। রবীন্দ্রনাথের পর বাংলা 888sport app download apkয় জীবনানন্দের সৃষ্টি জ্যোতির্ময়তম, কিন্তু সেজন্যই বলছি, তাঁর সর্বসমাচ্ছন্ন করা প্রভাব পরম সর্বনাশের ব্যাপার।

যৌবনে বুদ্ধদেব বসুর 888sport app download apk-গল্প-888sport alternative link-888sport liveে মজেছিলেন। এই সম্পর্কে তাঁর কথা উদ্ধৃত করা যেতে পারে : ‘স্বীকার করতে আদৌ সংকোচ নেই, দুটো পাশাপাশি 888sport sign up bonus আমার মনে একত্র জড়িয়ে আছে; 888sport app শহরে রাস্তাঘাট-গাছপালা, আরমানিটোলা স্কুল-জগন্নাথ কলেজ-888sport app হল, আমার প্রথম প্রেমিকা, কিন্তু তারই পাশাপাশি ‘বন্দীর বন্দনা’-‘কঙ্কাবতী’র সঙ্গে প্রথম প্রেমের উতরোল আনন্দ … যতদিন 888sport appয় ছিলাম, বুদ্ধদেব-বিভোরতায় কেটেছে।’

অশোক মিত্র সংগীত উপভোগ করতে ভালোবাসতেন। রবীন্দ্রনাথের গান অবশ্যই তাঁর প্রিয় ছিল। কিন্তু বাংলা গানের সামগ্রিক সম্ভার ও অর্জন সম্পর্কেও তিনি অনবহিত ছিলেন না। সংগীতে আগ্রহ ছিল অশোক মিত্রের সহজাত, সেইসঙ্গে লখনউয়ে ধূর্জটিপ্রসাদের স্নেহ-সান্নিধ্যও বোধ করি তাঁর সংগীত-তৃষ্ণাকে আরো ব্যাপক এবং সংগীত-রুচিকে পরিশীলিত করেছিল। শচীন দেববর্মন, হিমাংশু দত্ত, কমল দাশগুপ্ত, অজয় ভট্টাচার্য, প্রণব রায় ও আরো অনেকের কথা উল্লেখ করে তিনি লিখেছেন, এঁদের সংগীতচর্চা রবীন্দ্রনাথকে অতিক্রম করে নয়, রবীন্দ্রসংগীতের পরিপূরক হিসেবেই বাংলা গানের ঐতিহ্যকে সমৃদ্ধ করেছিল। তবে তাঁর মতে, বাংলা গানে প্রলয়োল্লাসের শুরু হয়েছিল কাজী নজরুল ইসলামের গানের মাধ্যমে। দিলীপকুমার রায়ের সম্ভাবনার কথাও তিনি উল্লেখ করতে ভোলেননি। হিমাংশু দত্তের সুরবিস্তারে তিনি ‘দিলীপকুমার রায় প্রদর্শিত ছায়াপথের আভাস’ প্রত্যক্ষ করেছেন। সেই সময়ে বাংলা গানে পরীক্ষা-নিরীক্ষার যে অদম্য সাহস ও নিষ্ঠা দেখা দিয়েছিল, পরবর্তীকালে তার অবসানে তিনি মর্মাহত হয়েছেন। এইজন্য তিনি পরীক্ষাপরাঙ্বিমুখতাকে দায়ী করেছেন। তাঁর মতে, এই পরীক্ষাবিমুখতা 888sport live chatের মতো বাম রাজনীতিকে স্থবির করে রেখেছে। বাংলার 888sport live chatচর্চায় সার্বিক অবক্ষয় সম্পর্কে অশোক মিত্র বেশ ক্ষুরধার মন্তব্য করেছেন :

বাঙালির সমাজসংকট, তার সহস্র অভিরূপ, তথাকথিত আধুনিক বাংলা সংগীতের রচনায় নিরক্ষতার স্বাক্ষর, সুরপ্রয়োগে উৎকট নির্বুদ্ধির তথা রুচিশূন্যতার ছাপ, যিনি গাইছেন তাঁর কণ্ঠ রক্তশূন্যতায় আক্রান্ত, বাঙালি live chat 888sportের গড় মান, মনে হয়, ঊনবিংশ শতকীয় তুলাদ-ে অপসৃত, অধিকাংশ ছবি প্রায় পুরোটা সময় ভরে দেখার সত্যিই অনুপযুক্ত, না আছে রুচি, না আছে গমক, না আছে আদর্শনিষ্ঠা, না আছে চমক …।

অশোক মিত্রকে আপাতদৃষ্টিতে গম্ভীর ও রুক্ষ মেজাজের মনে হলেও উপরিউক্ত মন্তব্যে বোঝা যায়, তাঁর সংবেদনশীলতা কতটা প্রখর ছিল।

888sport appsের মুক্তিসংগ্রামের সমর্থনে ও সহযোগিতায় অশোক মিত্র তাঁর সাধ্যানুযায়ী, বা বলা যায় কোনো কোনো ক্ষেত্রে সাধ্যাতীতভাবে, এগিয়ে এসে ভূমিকা পালন করেছিলেন। ১৯৭১ সালে অশোক মিত্র দিল্লিতে ভারত সরকারের প্রধান অর্থনৈতিক উপদেষ্টা। সরকারের উচ্চ-নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ছিল বেশ গভীর। এই যোগাযোগ ও সম্পর্ককে ব্যবহার করে তিনি 888sport appsের মুক্তিসংগ্রামে বাড়িয়ে দিয়েছিলেন তাঁর সাহায্য-সহযোগিতার হাত। আমরা অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক নুরুল ইসলাম ও অধ্যাপক রেহমান সোবহানের জবানিতে জেনেছি, দিল্লিতে অশোক মিত্র কীভাবে পরম সমাদরে তাঁদের বরণ করে যোগাযোগ করিয়ে দিয়েছিলেন ভারত সরকারের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে।

এই সম্পর্কে অশোক মিত্র লিখেছেন : তারিখটা বোধহয় দোসরা এপ্রিল, নর্থ ব্লকে অর্থমন্ত্রকে নিজের ঘরে বসে কাজকর্ম করছি, সকাল এগারোটা হবে, হঠাৎ একটি টেলিফোন এলো অমর্ত্যর কাছ থেকে। অমর্ত্য তখন দিল্লি স্কুল অফ ইকনমিকসে অধ্যাপনা করছে, কিন্তু ফোন করছে এস্টেটে আমার বাড়ি থেকে, ‘অশোকদা আমার সঙ্গে এই মুহূর্তে আমাদের দুই ঘনিষ্ঠ বন্ধু আছেন, জরুরি সমস্যা, দয়া করে আধঘণ্টার জন্য আসবেন?’ … গিয়ে দেখি অমর্ত্যর সঙ্গে আনিসুর রহমান ও রেহমান সোভান (সোবহান), পূর্ব পাকিস্তানের দুই খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদ।

এঁদের অশোক মিত্র আগে থেকেই চিনতেন। ১৯৬৯ সালে ভারত ও পাকিস্তানের অর্থনীতিবিদদের কেউ কেউ ভেবেছিলেন, দুদেশের মধ্যকার সমস্যাগুলোর ব্যাপারে অর্থনীতিবিদগণ কী ভূমিকা পালন করতে পারে সে-সম্পর্কে আলোচনার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। পরিকল্পনা-অনুযায়ী শ্রীলংকার ক্যান্ডিতে বৈঠকের ব্যবস্থা করা হলো। পূর্ব পাকিস্তান থেকে বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন আনিসুর রহমান। অন্য অর্থনীতিবিদদের সঙ্গেও অশোক মিত্রের পরিচয় ছিল নানাসূত্রে।

দীর্ঘদিন পর পুরনো দুই বন্ধুকে দেখতে পেয়ে অশোক মিত্র উচ্ছ্বসিত হলেন; কিন্তু উৎকণ্ঠিত ও বিমর্ষ হলেন তাঁদের কাছ থেকে পূর্ব বাংলার অবস্থা জেনে। ওঁরা দুজন অশোক মিত্রের বাড়িতেই আশ্রয় নিলেন। আশ্রয় নেওয়ার পরের দিন অশোক মিত্র তাঁদের নিয়ে গেলেন রেসকোর্স রোডে পি. এন. হাকসারের বাড়িতে। এই ঘটনা সম্পর্কে অশোক মিত্র লিখছেন :

এই ইতিহাস বাইরে কারও আদৌ জানা নেই। সেই সন্ধ্যা থেকেই 888sport apps মুক্তিযুদ্ধের সহায়তায় ভারত সরকারের সংগোপন প্রত্যক্ষ ভূমিকার শুরু, আমাদের বন্ধুদ্বয়ের মারফত হাকসারের আওয়ামি লিগের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগে যার সূচনা।

ক্রমে ক্রমে আরো অনেকেই – ওয়াহিদুল হক, আজিজুর রহমান খান, নুরুল ইসলাম প্রমুখ এসে হাজির হলেন অশোক মিত্রের বাড়িতে। পি. এন. হাকসার ও ডি. পি. ধরের সঙ্গে পরামর্শ করে সাব্যস্ত হলো, এই অর্থনীতিবিদদের অনেক বন্ধু আছেন ইউরোপ-আমেরিকায়, তাই ওঁদের পাঠিয়ে দেওয়া হবে সেইসব দেশে 888sport appsের হয়ে প্রচারণা চালানোর জন্য।

সেই সময়ে অশোক মিত্রের সরকারি দায়িত্বপালনে যথেষ্ট বিঘœ ঘটেছিল। তিনি সর্বক্ষণ চিন্তা করতেন, 888sport appsের মুক্তিসংগ্রামে কী করে আরো বেশি সাহায্য করা যায় – সে-কথা। 888sport appsের স্বাধীনতার পরপরই সরকারি দলের একজন সদস্য হয়ে 888sport appয় এসেছিলেন। তখন ঘুরে বেড়িয়েছেন 888sport appয়, কিন্তু তাঁর

ছেড়ে-যাওয়া 888sport app তখনই অনেক বদলে গেছে। 888sport appsের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক নিয়ে অনেক শংকা-সংশয় আছে। এই বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতরও বটে। দুই প্রতিবেশীর মধ্যে সম্পর্কের এই স্পর্শকাতরতা সম্পর্কে সতর্ক ছিলেন অশোক মিত্র। এই সম্পর্কে তাঁর পরামর্শ :

888sport apps স্বাধীন হযেছে, ভারতবর্ষের সহায়তাতেই স্বাধীন হয়েছে। তবু এই নতুন দেশ সম্পর্কে ভারতবর্ষের উচিত অনুকম্পায়ী অন্যমনস্কতাযুক্ত নীতি গ্রহণ করা। ইতিহাস তো চট করে ভোলা যায় না, 888sport appsীদের স্বাধীন হতে সাহায্য করেছি বলেই তারা আমাদের পায়ে লুটিয়ে পড়বে না; আমরা যদি এখন থেকে নিজেদের সন্তর্পণে সামান্য সরিয়ে রাখি, খুব বেশি ওদের ব্যাপারে নাক না গলাই, তাতেই উভপাক্ষিক মঙ্গল।

পরে আরেকবার 888sport appsে এসেছিলেন অশোক মিত্র, 888sport appয় বিআইডিএসে একটি বক্তৃতা দিতে। সেবার 888sport apps সরকারের পক্ষ থেকে তাঁকে সমাদৃত ও সম্মানিত করা হয়েছিল। 888sport appয় এসে তিনি আপ্লুত হয়েছিলেন, 888sport appকে ভুলতে পারেননি। 888sport apps ও 888sport appsের জনগণের প্রতি তাঁর অকৃত্রিম 888sport apk download apk latest version ও ভালোবাসা অটুট ছিল।

জীবনের শেষদিন পর্যন্ত অশোক মিত্র তাঁর আদর্শের জন্য সংগ্রাম করে গেছেন। তাঁর লড়াইয়ের উদ্দেশ্য ছিল, মানুষের মুক্তি – সবধরনের শোষণ-নির্যাতন থেকে মুক্তি। আর এই লড়াইয়ের হাতিয়ার ছিল তাঁর কলম। জীবনের শেষ বয়সে এসে তিনি প্রকাশ করেছিলেন একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা – আরেক রকম। অশোক মিত্রের স্ত্রী গৌরী মিত্র প্রয়াত হয়েছিলেন এক দশক আগে। নিঃসঙ্গ জীবন, ভগ্নস্বাস্থ্য ও ক্ষীণদৃষ্টিশক্তি নিয়েও তিনি স্বপ্ন দেখতেন মানুষ সকল বিভ্রান্তি কাটিয়ে মুক্তিসংগ্রামের পতাকা আবার তুলে নেবে, শুরু হবে ‘আরেক রকম’ জীবনের পথে মানুষের অভিযাত্রা।