॥ ২১ ॥
জেরেমিস : কেন নয়? এমন মাঠ, এমন নীল আকাশ, রোদ্দুরে শুতে ইচ্ছে করে না?
অমলিনী : [শুয়ে পড়ল দু’জনের মাঝে, গায়ে গা না লাগিয়ে] জানো, ছোটবেলায় আমরা এমন মাঠে শুয়ে পড়তাম। পাহাড় জঙ্গলে ঘেরা একটা ছোট গঞ্জে আমি বড় হয়েছি। কত বন্ধু! ছেলেমেয়ে কোনো তফাত করিনি। বন্ধু বন্ধুই। সকলে এটা বোঝে না। শরৎকালে যখন আকাশে টুকরো টুকরো মেঘ ভাসত, সূর্যাস্তের রং লাগত মেঘের গায়ে, আমরা বন্ধুরা ঠিক এমনই পাশাপাশি শুয়ে পড়তাম। আর মেঘের আকার দেখে বলতাম ওই হল সিংহ, ওই হল বাঘ।
জেরেমিস : তোমার ছোটবেলা খুব সুন্দর মোলি।
ইয়াকভ : আমাদেরও দিনগুলো ভারী সুন্দর ছিল, যতদিন আমরা যুগোস্লাভিয়ায় ছিলাম। আমাদের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ছিল চমৎকার। অভাব-অভিযোগ ছিলই না বলা চলে।
জেরেমিস : ঠিক বলেছ। যুগোস্লাভিয়া ভেঙে যাওয়া যেন এক দুঃস্বপ্ন। দেশ মানে তো শুধু ভূখণ্ড নয়, দেশ একটা অনুভব, একটা ধারণা, যেটা বাস্তবের ভৌগোলিক সীমা অতিক্রম করে বোধের গভীরে ঢুকে পড়ে। সেটা ভেঙে গেলে, জোর করে বদলাতে গেলে প্রচণ্ড কষ্ট হয়। সেটা সের্গেইয়ের হচ্ছে।
মোলি : তোমরা কি আগে থাকতেই বন্ধু?
ইয়াকভ : না। ইয়াপ ওয়েবসাইটে জেরেমিসের পরিচয় দেখে আমি যোগাযোগ করেছিলাম। এখানে দেখা হল।
মোলি : যুগোস্লাভিয়া তো কমিউনিস্ট দেশ ছিল।
জেরেমিস : ছিল, কিন্তু যে কারণে সোভিয়েত রাশিয়া ভেঙেছে, যুগোস্লাভিয়া সে কারণে ভাঙেনি।
ইয়াকভ : ঠিক কমিউনিস্ট নয়। যুগোস্লাভিয়া ছিল সমাজতান্ত্রিক দেশ। সমাজতান্ত্রিকতা কোনো নিরবচ্ছিন্ন সামগ্রিক ধারণা নয়। মিশ্রিত ধারণা। আমাদের দেশে স্ট্যালিনিজমের প্রভাব ছিল। আবার গণতান্ত্রিক মানসিকতাও ছিল। একদিকে আমলাতান্ত্রিকতা, অদ্বিতীয় দলীয় ক্ষমতা ধারণের ইচ্ছা এবং বাজার অর্থনীতির সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কযুক্ত গণতান্ত্রিক মানসের গতিবিধি। সব মিলে ক্ষমতার কেন্দ্রে যেমন গোলমাল পাকল, তেমনি রাজ্য ও জাতিগুলির ঐক্য ও সহিষ্ণুতা কমতে লাগল। এটা সময়ের ফাঁদও বলতে পারো। ক্যাপিটালিস্ট আগ্রাসনও বটে। ক্যাপিটালিস্টরা সবসময় চায় অন্য দেশের ব্যাপারে নাক গলাতে। রাজনৈতিক ক্ষমতার দখল, অথবা সমাজ-সংস্কৃতিতে অধিকার! যে-কোনো উপায়ে তারা চায় বাজার দখল করতে। যে-কোনো রন্ধ্রে ঢুকে পড়তে। যুগোস্লাভিয়ার ব্যাপারে কে নাক গলায়নি বলো! আমেরিকা, ফ্রান্স, জার্মানি, কে নয়? হ্যাঁ, লোকের অভিযোগ ছিল। প্রত্যেকটি রাজ্য সমান অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির অধিকারী ছিল না। অসন্তোষ, অভিযোগ, সন্দেহ বাড়ছিল। সেই সুযোগে ধর্মীয় বিভাজন ধরানো হল। ঐক্য ভাঙার সবচেয়ে সহজ রাস্তা। জাতি-ধর্মে দাঙ্গা লাগিয়ে দাও। কিংবা এটাই ঐতিহাসিক সত্য, ভিন্নজাতি, ভিন্নধর্মী মানুষ বেশিদিন একজোট থাকতে পারে না। বাইরে থেকে তুমি যত কারণই খুঁজে বার করো না কেন, আসলে ভাঙনটা থাকে মানুষের হৃদয়ে।
জেরেমিস : মার্শাল টিটো ছিলেন অত্যন্ত শক্তিশালী নেতা। তিনিই দেশটাকে ধরে রেখেছিলেন।
ইয়াকভ : হয়তো ঠিকই। তবে ঐক্যবদ্ধ থাকতে পারাই মানবসভ্যতা। ভাঙতে ভাঙতে তুমি কতদূর যাবে? যত ভাঙবে, ততই কি দুর্বল হয়ে যাবে না? আজ বসনিয়া, সার্বিয়া ভালো আছে কি? ইতিহাসের গতি উলটে জার্মান একত্রিত হল, আমরা টুকরো টুকরো হলাম। ছোট দেশ মানেই সে কোনো বড় শক্তির মুখাপেক্ষী। হয় তাকে প্রাকৃতিক অনুদানে প্রবল ধনী হতে হবে, নয়তো বাজার অর্থনীতির পক্ষে তাৎপর্যপূর্ণ হতে হবে। জেরেমিস, জানুয়ারি ১৯৯২, মনে আছে? যুগোসøাভিয়া বলে কোনো দেশ আর রইল না।
মোলি : তোমাদের ১৯৯২, আমাদের ১৯৪৭। তোমাদের মতো আমি দেশভাগ হতে দেখিনি, কিন্তু তার পরিণতি এখনো সম্পূর্ণ হয়নি। প্রথমে দু-টুকরো, তারপর তিন টুকরো হয়ে গেল আমাদের ভারত ভূখণ্ড।
জেরেমিস : সেটা কী রকম?
মোলি : শুনতে চাও?
ইয়াকভ : আমি ভারতভাগের কথা কিছুটা জানি, কিন্তু ভারত তিন টুকরো হয়েছে জানতাম না।
মোলি : প্রথমেই তিন টুকরো হয়নি। ১৯৪৭-এ ব্রিটিশরা তাদের দুশো বছরের আধিপত্য ছেড়ে দেশ স্বাধীন করল। কিন্তু তার মূল্য দিতে হল এমন যে এত বছর পরেও দেশভাগের দুঃস্বপ্ন আমাদের তাড়া করে। ভারতবর্ষ ভেঙে ইন্ডিয়া আর পাকিস্তান হল। এই ভাঙাভাঙির মূল ছিল ধর্ম। হিন্দু আর মুসলমান। কিন্তু পরিহাসের এখানেই শেষ নয়, অত্যাচারেরও শেষ নয়। ইন্ডিয়া তার সংবিধানে ঘোষণা করল, ভারত এক ধর্মনিরপেক্ষ দেশ। এদেশে এবার সমান অধিকার।
ইয়াকভ : সেটা তো খুবই মানবিক, তাই না?
মোলি : নিশ্চয়ই। বলল বটে ধর্মনিরপেক্ষ এবং সমান অধিকার, কিন্তু কতকগুলি সামাজিক বিচারে ইসলামিক আইন জারি রাখা হল।
জেরেমিস : সে তো দ্বিচারিতা।
মোলি : নিশ্চয়ই। কিন্তু সে-কথা বলবে কে। সদ্য গঠিত ভারত সরকার জানাল, 888sport free betলঘুর অধিকার রক্ষা জাতীয় কর্তব্য। অর্থাৎ, তুমি বলছ সমানাধিকার, আবার তুমিই বলছ 888sport free betলঘুর জন্য পৃথক আইন। ভারতে একজন মুসলিম পুরুষ চারটে পর্যন্ত বিয়ে করতে পারে, ইচ্ছে হলে ফোনেও কাউকে তিন তালাক দিয়ে সম্পর্ক ছিন্ন করতে পারে, স্ত্রীর খোরপোশ দিতে তারা বাধ্য নয়।
ইয়াকভ : কী প্রহসন!
মোলি : হ্যাঁ। প্রহসন। তুমি 888sport free betলঘুর স্বাধিকার রক্ষা করতে গিয়ে 888sport promo codeকে বঞ্চিত করছ। স্বাধীন ভারতের নাগরিক হিসেবে একজন মুসলিম রমণী তার পূর্ণ অধিকার ও সামাজিক সুরক্ষা পাচ্ছে কি?
জেরেমিস : এ নিয়ে প্রতিবাদ নেই? আন্দোলন নেই?
মোলি : নিশ্চয়ই আছে। কিন্তু তা যথেষ্ট নয়। একজন অতি দরিদ্র, নিঃস্ব মুসলিম রমণী প্রথম তার স্বামীর বিরুদ্ধে নালিশ করলেন। সেই নালিশ ও আইনি যুদ্ধ এক লম্বা ইতিহাস। সে-গল্প আর একদিন হবে। আজ বড্ড বকবক করেছি।
ইয়াকভ : অন্যদিন নিশ্চয়ই শুনব মোলি। শুধু একটা কথা বলো, ভারত তিন টুকরো হল কী করে? পাকিস্তান ও ভারত এত বছর পরেও শত্রু হয়ে রইল কেন?
মোলি : তোমার দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তর হল, পাকিস্তানের ভৌগোলিক অবস্থানের জন্য এই দেশটি ভালো এবং মন্দ দু-রকম শক্তির দ্বারাই ব্যবহৃত হচ্ছে। পাকিস্তান আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও বাণিজ্যজনিত চক্রান্তের শিকার। তাদের দেশের আভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা, ধর্মান্ধতা তাদের দুর্বল করে রেখেছে। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বন্ধুত্ব হলে বৃহৎ শক্তিগুলির মুশকিল।
জেরেমিস মুচকি হেসে বলল, ‘তা হলে ইয়াসমিন, তোমার শত্রু। যেমন শবনম ও জিনেট।’
মোলি দ্রুত জোরালোভাবে বলে উঠল, ‘একেবারেই না। ভারত ও পাকিস্তানের সাধারণ নাগরিক কখনো পরস্পর শত্রু নয়। কারণ আমাদের শেকড় একই, আমাদের ইতিহাস একই, আমাদের দুই দেশের মধ্যে খেলা হয়, গান-বিনিময় হয়, এ-দেশের 888sport live chatী ও-দেশে অভিনয় করেন। আজো বেশ কিছু পরিবারের আত্মীয়রা কেউ পাকিস, কেউ ইন্ডিয়ান। আমরা কেউ ভুলিনি দেশভাগ ও তদানীন্তন অবর্ণনীয় অত্যাচারের কথা। আমরা উভয়ত নিপীড়ত হয়েছি, নিঃস্ব হয়েছি, স্বজন ও বন্ধু হারিয়েছি। জেরেমিস, আমার মতে, আন্তন চেখভের মতো ক্ষমতাশালী গল্পকার, আমার অন্যতম প্রিয় সাদাত হুসেন মান্টো ইন্ডিয়ায় জন্মে পাকিস্তানে কবরে ঘুমিয়ে আছেন। পাকিস্তান আমার শত্রু হয় কী করে?’
মোলি উত্তেজনায় বড় বড় শ্বাস ফেলছে। এক পায়ের ওপর তুলেছে আরেক পা। মাথার পাশে ছড়িয়ে থাকা হাতে চাপ দিয়ে জেরেমিস বলল, ‘আরে আমি মজা করছিলাম। এখানে ইয়াপের সবাই দম বন্ধ করে অপেক্ষা করছে তোমার ও ইয়াসমিনের ঝগড়া দেখবে। দেখো, প্রথম দিনের অনুষ্ঠানেই ইন্ডিয়া-পাকিস্তান।’
মোলি বিষণ্ন স্বরে বলল, ‘জেরেমিস, তোমাদের সেøাভেনিয়ার শহর তো ইউনেস্কোর সিটি অব লিটারেচার পেয়েছে।’
জেরেমিস : হ্যাঁ। ওটাই আমাদের রাজধানী।
মোলি : তুমি কি জানো, ইউনেস্কোস্বীকৃত আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস কবে?
জেরেমিস : আই অ্যাম নট শিয়োর।
মোলি : 888sport cricket BPL rateে ফেব্রুয়ারি। 888sport appsের উদ্যোগে ২০০০ সালে এই দিনটি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পায়। ইয়াকভ, তুমি জানতে চাইছিলে তিন টুকরোর গল্প। পাকিস্তান দেশ অদ্ভুত হল। পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান। যেন দুটো আলাদা ভূখণ্ড। ধর্ম এক, ভাষা আলাদা। করাচির কর্তারা পূর্ব পাকিস্তানে উর্দু চাপিয়ে দিতে চাইলেন। পূর্ব পাকিস্তান প্রতিবাদ শুরু করল। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন ছাত্র প্রকাশ্য প্রতিবাদ সভা করে। সেই শুরু। লক্ষ লক্ষ মানুষ প্রতিবাদের অংশ হয়ে দাঁড়াল। গুলি চলল। মারা গেল ছাত্র ও সাধারণ মানুষ। কেন? মাতৃভাষার জন্য। অর্থাৎ ধর্ম এক হলেই যে মানুষ সমমনস্ক হবে, তা নয়। ধর্ম পৃথক হলেই মানুষ শত্রু হবে, তা-ও নয়। পূর্ব পাকিস্তান পশ্চিম দ্বারা অত্যাচারিত হয়েছে। অবশেষে তারা যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। সেই যুদ্ধের নাম মুক্তিযুদ্ধ। তারা স্বাধীনতা আদায় করেছে। কত রক্তক্ষয়, কত প্রাণনাশ, কত নিপীড়ন। জেরেমিস, আমাদের ইতিহাস বলে নয়, যে-কোনো দেশভাগের ইতিহাসই রক্ত চায়, মানুষের বলি চায়। দেশভাগ আসলে একটা অভিশাপ। দেখো আমরা, ইন্ডিয়ার মধ্যে একটা ছোট প্রভিন্স, 888sport appsের সঙ্গে আমাদের ভাষা এক, একদা আমরা অভিন্ন ছিলাম, আমাদের 888sport live footballে, ইতিহাসে, সংগীতে, চেতনায়, আমাদের রান্নায়, মাছে, নদীর জলে আমরা আজো অভিন্ন। তবু আমরা আলাদা। আবার পাকিস্তান ও 888sport appsে অধিকাংশ মুসলিম, কিন্তু সেখানেও রক্তক্ষয়ী ইতিহাস। সমাজ ও রাজনীতি বড় জটিল, তাই না?
ইয়াকভ : আমাদের দেশভাগের বাকি গল্পটাও খুব মর্মবিদারক!
জেরেমিস : এরপর তো শুধু হত্যা আর প্রতিশোধের গল্প ইয়াকভ। তবে তখন তুমি জার্মানির কথা বললে, তাই বলছি। লিলির মতে, দুই জার্মানি একত্রিত হওয়ায় পশ্চিম জার্মানির ক্ষতি হয়েছে। এদিককার আর্থিক সমৃদ্ধি ওদিককার উন্নয়নে কাজে লাগছে। বেকারত্ব বাড়ছে। বিশেষত গবেষণার অনুদান, বৃত্তি এসবে টান পড়ছে। সাধারণ মানুষের ভাতে টান পড়েনি। কিন্তু কর্মহীনতা আসছে উচ্চশিক্ষিত ব্যক্তির ক্ষেত্রে। দুই দেশ এক হলেও হৃদয়ে কিন্তু পূর্ব-পশ্চিম বিভাজন রয়েই গিয়েছে। এখানে এসে সকলে যেন নিজের নিজের বিক্ষোভ, দুঃখ সব উগড়ে দিচ্ছে। তোমরা কি জানো, ওকিওকি খুব সমস্যায় আছে?
ইয়াকভ : সবাই বলছে ওকিওকি তোমার সঙ্গে থাকতে শুরু করবে এবার।
জেরেমিস : শি নিডস মি, মাই ফ্রেন্ডশিপ। কজ শি ট্রাস্টস মি। জানো, পনেরো দিনের মধ্যে ওকে ইন্দোনেশিয়া ফিরে যেতে হবে। ওর একটা তিন বছরের বাচ্চা আছে। বরের কাছে রেখে এসেছিল। বর এখন বিচ্ছেদ চাইছে।
মোলি : বিচ্ছেদ তো তিন মাস পরও হতে পারত।
জেরেমিস : লোকটা আর অপেক্ষা করবে না! ওকিওকি কোনো চাকরি-বাকরিও করে না।
মোলি : আশ্চর্য! লোকটা দায়িত্ব নিল কেন?
জেরেমিস : ও একটা অদ্ভুত কথা বলল। গোড়াতে ওদের খুব দারিদ্র্য ছিল। তখন দুজনের সম্পর্ক খুব সুন্দর ছিল। এরপর অর্থসম্পদ, বাড়ি-গাড়ি হল, কিন্তু সম্পর্ক খারাপ হয়ে গেল। লোকটা ওকে মারধর পর্যন্ত করে। ও ফিরে গিয়ে কী করবে, কোথায় থাকবে, কী খাবে, কিছু ঠিক নেই। বেচারা! সেদিন চেক পেয়ে খুব খুশি হয়েছিল। বলল, খুব কৃপণতা করে ডলার বাঁচাবে। তারপর ইন্দোনেশিয়ান রুপিয়াতে বদলে নেবে। এক ইন্দোনেশিয়ান রুপিয়া মানে ডলারের হিসেবেই আসে না, ওরা এত গরিব। এক ডলার বাঁচালে ও প্রায় চোদ্দো হাজার রুপিয়া পাবে। ও যখন শাম্বাগ হাউজে জানাল, ওকে পনেরো দিনের মধ্যে ফিরতে হবে, বলা হল, অবশিষ্ট ন’দিনের ডলার যেন ও ইয়াপ অ্যাকাউন্টসে ফেরত দিয়ে যায়। এরা মানুষ!
মোলি : এটা ওদের নিয়ম নিশ্চয়ই। মানবিকতার বিষয় নয়।
জেরেমিস : তাই বলে ন’দিনের টাকা ফেরত চাইবে!
ইয়াকভ : চাইতে পারে। সেটাই ন্যায়সংগত। ওরা দান করছে না। রোজকার খরচ দিচ্ছে। এমনকি হিসেবও চাইছে না যে সত্যি তুমি ত্রিশ ডলার খরচ করছ, তার রসিদ দাও।
তিনজন চুপ করে শুয়ে রইল। আর মিনিট কুড়ির মধ্যে ইমু-র লবিতে যেতে হবে। ইয়াকভ ভাবতে লাগল তার মৃত বন্ধুর কথা, যার চিকিৎসা করাতে গিয়ে পরিবারটি নিঃস্ব হয়ে গিয়েছে। জেরেমিস ভাবতে লাগল, কিছু ডলার বাঁচলে তারও সুবিধা হয়। গাঁয়ে একটা বাড়ি করছে। কাজে লাগবে। অমলিনী ভাবছে, একটা টয়লেট বানাবে বলে তার ডলার বাঁচাবার প্রয়াসে মনে মনে সে কত লজ্জিত ছিল! এখন আর লজ্জা করছে না। তার নিজস্ব দুঃখ, নিজস্ব অসহায়তা ছাপিয়ে গিয়েছে অন্যদের যন্ত্রণাসমূহ। এমনকি তার দ্বন্দ্বদীর্ণ দেশ, জাতিবিদ্বেষ, ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা, দারিদ্র্য ও দুর্নীতি নিয়ে যা নিরন্তর তাদের আলোচনার বিষয়, যে-দেশ ছেড়ে মেধাবী তরুণেরা ধনী ও সম্পন্ন দেশগুলিতে চলে যায় উন্নততর জীবনের আকর্ষণে, সে-ও বিশ্বের বহু দেশের তুলনায় সুসংগঠিত ও বাসযোগ্য। খবরে তারা সার্বিয়া-বসনিয়া দেখে, প্যালেস্টাইন-ইসরায়েল পড়ে, ইজিপ্টের গণসমাবেশ নিয়ে উত্তপ্ত বিতর্কে মাতে, ব্রেক্সিট নিয়ে, আফগানিস্তান, ইথিওপিয়া নিয়ে সমবেদনা প্রকাশ করে। কিন্তু এইসব দেশের মানুষকে কাছ থেকে দেখতে পেলে, তাদের কথা শুনলে যে অনুভূতি ও উপলব্ধি, খবর তা কখনো দিতে পারে না। দেওয়া সম্ভব নয়। (চলবে)


Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.