। ১ ।

 

১৫ আগস্ট,…          পাতা ঝরে, পাতারা জন্মায়

মঙ্গলবার                 আমিও ফের জন্মেছি হাওয়ায়।

 

আরো এক পাতাঝরা মরশুম এলো। পৃথিবী ঘুরল আরো এক পাক। যদিও আমি হিসাব রাখিনি আর। কতকাল শুয়ে আছি। ঘুমোইনি। অপেক্ষায় আছি। অপেক্ষা নির্মম। অপেক্ষা সুন্দর।

আমার ঘরের পাশে বুনো গোলাপের ঝাড়ে থোকায় থোকায় ফুল। তার পাশে এক লতাঝোপ। ছোট্ট ছোট্ট সাদা ফুলে ভরা। হঠাৎ দেখলে মনে হবে জুঁই। নয় কিন্তু। মাদক সৌরভ। ফুলের ডাঁটিতে ঘন মধু। মধুমাছি আসে। শুষে নেয়। ফুলের অব্যর্থ মধ্যবিন্দু খুঁজে প্রবেশ করিয়ে দেয় রসাগ্রহী শুঁড়। পৃথিবী সুন্দর। জগৎ সুন্দর। পাতারা ঝরার আগে ফুলে ফুলে সেজে ওঠা, চিরকালের সীমোন্তে মিলিয়ে যাওয়ার আগে এই হাসির উচ্ছ্বাস সুন্দরের অন্তরালে করুণের আভা।

আগস্ট মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ ফুরোল এখন। সেপ্টেম্বরের প্রথম অবধি ফুলেরা থেকে যাবে। গাছের পাতায় পাতায় রং লেগে লাল, খয়েরি, কাঁচা সোনার হলুদ। সবুজ পাতার মধ্যে অল্প। তারপর দ্রুত বিচিত্র রঙের সমারোহ রটে যাবে। পাতারা তখন সব রঙে পাগল! চিরসবুজ গাছগুলোর চেয়ে কত আলাদা দেখায় তাদের। লোকে এমন পাগল-করা চোখ-ধাঁধানো রঙে ভুলে যায় আসন্ন ঝরার বেদনা। এ-পৃথিবী ছেড়ে যেতে কে বা চায়।

আমিও চাই না। কিন্তু সময় ফুরোয়। ক্রমশই ডুবে যাচ্ছি অন্ধকারে, আরো আরো অন্ধকারে। একটু আলোর জন্য অন্তরাত্মা ছটফট করে। হাঁকপাঁক করে উঠে আসি ভূমিগর্ভ থেকে। বাসনা মরে না। আবার সেঁধোই। এ জীবন নয়। এ মরণ নয়। এই জীবন্মৃত দশা আমাকে জর্জর করে। সমস্ত জৈবিক যন্ত্রণার আধার শরীর। জীবনের মানে যন্ত্রণার সঙ্গে সহবাস। মরেও মরেনি যারা, তাদের অন্তর জ্বলে অসমাপিকা রূঢ় ব্যঞ্জনায়। যে জীবিত সে বোঝে না। সে সম্পূর্ণ মৃত, তারও সমজ্ঞা আলোয় মিশে যায়। নাকি অন্ধকারে? জানি না। দেহহীন অস্তিত্বকে কীভাবে ব্যাখ্যাত করি? যখন এ-দেহ বর্তমান ছিল, আমার অটুট আঙুল, আমার সজীব মস্তিষ্ক, একটি কলম ভালোবেসে লিখেছিল কথা। আমার হৃদয়। আমার অপরিণত কল্পনার শরীরক ভাষা। বাবা, যাঁকে আমরা আদর করে আব্বাজান বলতাম কখনো – বলতেন ভাষাই সম্পদ। তাকে রেখে যাও। কথা হলো প্রাণ! তাকে লিপিবদ্ধ করো। তারপর কবে যেন এলো অন্ধকার!

তাঁকে বললাম, ‘আলো দাও। আমি ক্লান্ত।’

তিনি বললেন, ‘পিছুটান রয়েছে যে। বারবার ফিরে যেতে চাও অন্ধকারে।’

‘জীবন কি আলো? না আঁধার?’

‘জীবন জীবিতের আলো।’

‘আমি আলো চাই। এই অন্ধকার নিরঞ্জন অবসিত হোক।’

‘বলো, কী বাসনা? কী চাও ফিরে?’

‘ভালোবাসা।’

‘দিতে চাও, নাকি পেতে?’

‘দিতে চাই। পেতেও যে চাই, তুমি জানো।’

‘হা-হা! যদি বিশুদ্ধ প্রেমের কথা বলো, তবে শোনো। দেওয়া-নেওয়া নির্দিষ্ট বিন্দুতে মেলে না কখনো।’

‘মেলে না? কখনো?’

‘যদি মেলে, উভয়ই ধ্বংসের পরিণতি পায়। এই মহাবিশ্বে দুটি গ্রহাণু মিললে যেমন ধ্বংস।’

‘প্রাপ্তির আকাঙ্ক্ষা থেকে প্রদান মহৎ।’

‘তবে নির্বাচন করো।’

‘দিতে চাই।’

‘তাই হোক।’

‘আরো যে চাই!’

‘বলো। পরিপূর্ণ নির্বাণের আগে আকাঙ্ক্ষার পরিতৃপ্তি হোক।’

‘যত অসমাপ্ত, কথা, শেষ হবে না কি?’

‘কলম যেখানে থামে, সেখানেই শেষ। তারপর ফের শুরু।’

‘বড়ই সংকোচ!’

‘নিঃসংকোচে নিঃশেষিত হও!’

‘জড়তাতামস বড়!’

‘ভালোবাসো। তৃপ্ত করো। তৃপ্ত হও। দাও প্রেম! দাও প্রেম! দাও প্রেম! প্রেম! প্রে এ এ এ ম্ ম্ ম্!’

কাকে দেবো? ভালোবাসি কাকে? এ-শহরে আমার কোনো প্রেমিকা ছিল না। কিংবা ছিল বুঝি কর্কটের প্রেম। তার মধ্যে সুখ নেই, আশা নেই, পাতাঝরা মরশুমের রঙের সৌন্দর্য – নেই তাও, শীতের শুভ্রতা নেই, শুধুই যন্ত্রণা। তীব্র থেকে তীব্রতর। তাকে ভালোবাসা অসম্ভব।

তিনি বললেন, ‘সন্ধান করো না।’

‘তবে?’

‘খুঁজলে পাবেই, এমন বিষয় ভালোবাসা নয়।’

‘তুমিই তো জগতের সমস্ত সৃষ্টির মূল। তোমাকেই ত্রাতা বলি। পথপ্রদর্শক।’

‘আমি অনন্ত সময় গড়েছি। তারপর ভুলেই গিয়েছি কোথায় কী আছে।’

‘হা-হা! তুমিও তোমারই সৃষ্টি ভোলো?’

‘তোমরাই আমাকে অজর-অমর করে তোলো। আমি সম্ভব ও অসম্ভব। আমি বাস্তব ও অবাস্তব। স্রষ্টা ও ধ্বংসকারী। আমিই মুহূর্ত, আমি অনন্ত প্রবাহ। তোমার সময় শুরু হলো। আগস্ট, সেপ্টেম্বর, অক্টোবর। অক্টোবর মাসে, শেষ যামে, অষ্টম প্রহরে তোমার সময় শেষ।’

‘হ্যালোউইন?’

‘না। শুধু তা-ই কেন? সারা পৃথিবীতে কয়েক সপ্তাহ তখন ভূতের কবর খোঁড়ার দিন।’

‘বলো তবে, কী করে বুঝব, ভালোবাসি?’

‘হা-হা-হা। সে অবর্ণনীয়! প্রেম! সে আছে কি নেই জানি না আমিও।’

 

টিক-টক টিক-টক টিক-টক – এক অদৃশ্য স্টপ-ক্লক ছায়াসঙ্গী এখন। আমার তো ছায়া নেই আর। সময় নিজেই ভূমিকা নিয়েছে ছায়ায় মায়ার।

আমিও চলেছি। উদ্দেশ্যবিহীন। এই রাস্তা থেকে ওই রাস্তা। মেরি অ্যান কর্কট হাসপাতাল। আমার সমস্ত বিষয়-আশয় দিয়ে গড়া। তাই, বাগানের ফোয়ারার পাশে এক তরুণের মূর্তি। দাঁড়ালাম। দেখছি। কেমন ছিলাম আমি? সুন্দর?

‘দানিয়েল দানিয়েল দানিয়েল!’

আমাকে ডাকছে। আমার অসমাপিকা পাণ্ডুলিপি। নাম ছিল ‘অ্যামেলিয়া’। আমার তারুণ্যের প্রিয় 888sport promo code। সেই পাণ্ডুর লিপিকা এখন কাচের বাক্সে রক্ষিত। স্প্যানিশে লিখেছি। শেষ হয়নি তখন। যেমন জীবন। যেমন মরণের পরেকার অতি আঁধার। আ আ আ হ! এই তিন মাস, এই বারোটি সপ্তাহ, আমি বেঁচে আছি ভালোবাসব, ভালোবাসব বলে। আমি ডুবে যাব অনন্ত কথার অতলে। আলো আর অন্ধকার একাকার হয়ে যাবে। শুধু শূন্যতায় ছেয়ে যাবে কথা ভালোবাসা।

আমেরিকানরা অতীতের রক্ষাকল্পে পারদর্শী। সেইসঙ্গে, দাতা ও শাসক বড়ই মর্যাদার। মেরি অ্যান হাসপাতালে আমার নিজের এক অপূর্ব সংগ্রহশালা। যেরকম পাণ্ডুলিপি। স্বচ্ছ কাচের আড়াল, কেউ তো পড়বে না, শুধুই দেখার। দানিয়েল এলফিনস্টোন। ওই তার পোশাক-আশাক। ওই তো কলম। সোনার, রুপোর। ওই তার থালা-বাটি-গ্লাস। ওই জীবনের সকরুণ ইতিহাস। সব ছিল। কিছু নেই।

অতীত রক্ষার কী বা প্রয়োজন। কালের 888sport sign up bonusতে সকলই রক্ষিত। হয়তো অতীতের সংগ্রহশালা বর্তমানের অমেয় অহমিকা। কেন তবে ফিরেছি আবার? এই বায়বীয় দেহাংশে আমি কী বা বুঝব প্রেমের! কী বা লিখব!

‘পুত্র, শরীর আকাঙ্ক্ষা নয়। তোমার যে দেবার হৃদয়।’

‘বাবা! আব্বাজান! আব্বুসোনা! তুমি! তুমি এখানে! তুমিও কি আমারই মতো আঁধার যাত্রার পথে হঠাৎ চেয়েছ কোনো অপূর্ব বাসনার নির্বাপণ?’

‘তোমরাই আমার পূর্ণতা। আমি ছিলাম এক পিতৃপ্রধান মানুষ। তোমার হৃদয় পূর্ণ হলে আমিও স্থিত হবো।’

‘বাবা! আমি লক্ষ্যহীন। কী চাই জানি। কীভাবে তা পাবো, জানি না। যে-প্রেম দেওয়া হয়নি তাই কি নষ্ট করে শান্তিময় ঘুম? নাকি তারও চেয়ে বড় আরব্ধ কাজের পুলক যদি শেষ পর্ব নিবদ্ধ সময়ে?’

‘আজ থেকে লেখা হোক তোমার ‘অ্যামেলিয়া’ পাণ্ডুলিপির অসমাপ্ত অধ্যায়। বায়ব হিয়ায় যতেক দর্শন ও উপলব্ধি গাথা।

ভালোবাসা আকাঙ্ক্ষা করো না, সে তো মর্মঘাতী। দিয়ো শুধু। এ এক এমন তরঙ্গ, যে পায় সে বোঝে, আজ নয় কাল, বুঝবেই একদিন। আমার আনারকলি তখন বোঝেনি। আমাকে সে চূড়ান্ত কঠিন শাস্তি দিয়েছিল। সে ভাবত আমি তার রূপের কাঙাল! তার হৃদয়ও যে লালে লাল বসন্তের ফুলেভরা – নিজেও জানে না, জানত না, আমি তাকে রূপে ও অরূপে চেয়েছি। মৃত্যুর আগের মুহূর্তে আমার দুচোখে সে প্রেম দেখেছিল। দেখেছিল ঠিক।’

‘তাই হবে। বাবা।’

‘তাই হোক। পুত্র।’

 

হাসপাতালে রোগীর প্রাবল্য নেই। এই শহর আইওয়া, আইওয়া রাজ্যের রাজধানী, অত্যল্প জন888sport free betর দেশ। আই আই আইওয়া। ওয়া ওয়া আইওয়া। আইওয়া আইওয়া। ভুট্টা ও সয়াবিন। চতুষ্পদ জন্তুর খামার। এখানে কবর আছে তোমার-আমার। শুয়োর-খামার ও গোমাংস কারখানা, সুইট কর্নের খেত ও হাইভি মার্কেট, পানশালা ও নিভৃত-নিবিড় পাঠাগার, সমস্তই এক মহান দুর্গের দিকে চেয়ে থাকে। তার নাম দি ইউনিভার্সিটি অব আইওয়া। এখানে, পুরনো নথিপত্রে আমার নাম আছে।

হে আমার পুরনো পাণ্ডুলিপি, তোমার-আমার যাত্রা শুরু হলো।

 

আগস্ট ১৬,…     বসতবাটী, চলল হাঁটি হাঁটি

বুধবার             যেখানে আমি ঘুমোই একলাটি

 

আমাদের বসতবাটি মেরি অ্যান হাসপাতালের প্রধান কার্যালয়। আমার ঘরটি অবশ্য সংরক্ষিত। আমার নরম বিছানা, বালিশ, কম্বল। আমার স্টাডি টেবিল। এমনকি টেবিলবাতিখানাও তেমনি। সব অতিযত্নে ধুয়ে-মুছে রাখা হয়। নশ্বরতার বিরুদ্ধে এক অবিরাম যুদ্ধ। যেন মাত্র এক ঘণ্টা আগে আমি উঠে গিয়েছিলাম।

অনেক রাত অবধি ঘুরেছি কাল। শেষ পর্যন্ত ক্লান্ত হয়ে গেলাম। দেখে দেখে আশ মেটে না যেন। শহর আর বিশ্ববিদ্যালয় এমনই মিশে আছে যেন কে কাকে ছাড়া থাকতে পারে না বোঝা মুশকিল। ঘরবাড়ি, দোকানপাট অনেক বেড়েছে। ইউ-আইওয়ার বিল্ডিংও বেড়েছে পাল্লা দিয়ে। অনেক কিছুই আগে ছিল না। অনেক কিছুই আগে ছিল, এখন নেই। এ মহাবিশ্বে পরিবর্তনই অন্যতম ধর্ম। যেমন শাম্বাগদের বাড়িটা ২১৯ ক্লিনটন স্ট্রিট থেকে উপড়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ৪৩০ উত্তর ক্লিনটন স্ট্রিটে। একটি বাড়িকে উৎখাত করে অন্যত্র বসিয়ে দিলে সেই বাড়িটা কি একই থাকে? ভূমির সঙ্গে বাড়ির যোগ থাকে না নাড়ির টানের মতো?

শাম্বাগদের ২১৯ ক্লিনটন স্ট্রিটের বাড়িটা আমার অত্যন্ত প্রিয় ছিল। কারণ এখানে দুজন বিখ্যাত অভিযাত্রীর পদচিহ্ন আছে। আমেরিকার প্রথম মহিলা বিমানচালক অ্যামেলিয়া ইয়ারহার্ট, যিনি একাকী আটলান্টিক পেরিয়ে ছিলেন। অন্যজন রোয়াল্ড আমুন্ডসেন। দক্ষিণ মেরু অভিযানের দলনেতা। কে না জানে তাঁর কথা! পৃথিবীর দুই মেরু দর্শন করতে চেয়েছিলেন। আকাশপথে উড়তে উড়তে দেখেছিলেন উত্তর মেরু। অসুস্থ অবস্থায় দিনের পর দিন যখন শুয়ে থাকতাম, এঁদের অভিযানের বর্ণনা আমার দিনযাপনের একঘেয়েমি ও ক্লান্তি ভুলিয়ে দিত। যখন একটু ভালো লাগত, গাড়ি চালিয়ে চলে আসতাম শাম্বাগ হাউসে। চুপচাপ বসে থাকতাম ঝোলানো কাঠের দোলনায়। ভাবতাম, এই বুঝি হাসতে হাসতে বেরিয়ে আসবেন অ্যামেলিয়া। বলবেন ‘দানিয়েল, মাই ডিয়ার, বিমান চালানো শেখাব তোমাকে। Life is an adventure. Adventure is worthwhile itself.’

 

আমুন্ডসেনের চেয়ে অ্যামেলিয়াকেই কল্পনা করতে ভালো লাগত আমার। তিনি ছিলেন আমার চিন্তানায়িকা। ফিল্মের সুন্দরী হিরোইনদের চেয়ে অনেক বেশি আকর্ষণীয়।

আশ্চর্যের বিষয়, ওঁরা দুজনেই অভিযানে বেরিয়ে হারিয়ে গিয়েছিলেন। দুজন অপরাজেয় মানুষ, মৃত্যু ওঁদের স্পর্শ করতে ভয় পেয়েছে।

হারিয়ে যাওয়ার সময় অ্যামেলিয়া মাত্র উনচল্লিশ। ছোট করে ছাঁটা চুল। তীব্র বুদ্ধিদীপ্ত চোখ। প্রসাধনহীন। অ্যামেলিয়া…

আমি শাম্বাগ হাউসের নতুন ঠিকানায় গেলাম। সিঁড়ি দিয়ে উঠে এলাম বারান্দায়। দোলনায় দুললাম। সবকিছুই একই রকম আছে। সম্পূর্ণ কাঠের বাড়ির কাঠামোয় লোহা ও স্টিল দিয়ে আরো মজবুত বানানো হয়েছে। অত রাতে বাড়িতে কেউ নেই। এ-বাড়ি এখন ইউ-আইওয়ার সম্পত্তি। শাম্বাগরা দান করেছে। আন্তর্জাতিক 888sport live football সম্মেলনের কার্যালয়। ইন্টারন্যাশনাল রাইটিং প্রোগ্রাম। আইডব্লিউপি। ইয়েপ। ইয়েপ।

আমি যোগ দিতে পারি না?

দরজার সামনে দাঁড়ালাম। কাচের দরজার গায়ে অনুষ্ঠানসূচি। তেত্রিশটি দেশের চৌত্রিশজন লেখক আসছেন। ২৫ আগস্ট প্রথম দিনের অনুষ্ঠান। দুই 888sport promo code অংশগ্রহণ করবেন। দুটি বড় আকারের রঙিন ছবি পাশাপাশি। অমলিনী গুপ্তা, ইন্ডিয়া। 888sport live footballিক। ইয়াসমিন হাসান, পাকিস্তান। কবি।

অমলিনী, অমলিনী। ছোট ছোট করে ছাঁটা চুল। বড় বড় উজ্জ্বল চোখ। প্রসাধনহীন। ভাষা বাংলা। বয়স উনচল্লিশ। আমার বুকের মধ্যে কেমন ব্যথা করে উঠল। শ্বাস বন্ধ হয়ে আসতে লাগল। ভীষণ কষ্টের মতো। অসম্ভব বিষাদের মতো। সবকিছু অবশ করা। সবকিছু স্তব্ধ করে দেওয়া। আমি বুঝলাম, অ্যামেলিয়া আসছে। আমার জীবনের অমলিনী রূপ নিয়ে।

অমলিনী। তোমাকে চিনেছি। তুমি সেই কৈশোরের স্বপ্নে-গড়া মেয়ে। তুমি অ্যামেলিয়া। তোমাকে দেখিনি। তবু মনে হয় কতকাল… কতকাল ধরে চিনি। প্রশান্ত মহাসাগরের ধারে নিবিড় বাগানে তুমি প্রস্ফুটিত কালো ক্যামেলিয়া। অ্যামেলিয়া।

 

১৯ আগস্ট,…   সেডার র‌্যাপিড, ও আমার সেডার র‌্যাপিড

শনিবার          সেডার পাতার বুকে ভেসে আছে রঙিন বিটলস্

সেডার র‌্যাপিড আসলে সেডার নদীটি। মিসিসিপি নদীতে গিয়ে মেশে। দুপাড়ে রেড সেডার গাছ। জলে ভেসে আসে তার ভাঙা ডালপালা, গুঁড়ি। আমি কখনো দেখিনি। আমার জীবনের 888sport cricket BPL rateটি বসন্ত আর বাইশটি পাতাঝরার মরশুমজুড়ে কেবলই বিয়োগযন্ত্রণা, কেবলই হারানোর গল্প আর রোগের সঙ্গে লড়াই।

কী হতো, যদি আমরা বেইনব্রিজ দ্বীপেই থেকে যেতাম? না হয় ওখানেই আমাদের কবর খোঁড়া হতো! এখন আর শোক করি না। এ-জগতে প্রাণের জন্ম হয় অবধারিত মৃত্যু মেনে নিয়ে। তার নাম জীবন। ক্ষণকালীন। ভঙ্গুর। মরণের পরে কাল অন্য অর্থ নিয়ে আসে। বাসনা ও আকাঙ্ক্ষার তাড়নায় গুমরে মরে দেহাতীত আত্মার দল। তারপর অজ্ঞাত।

জীবিতের সঙ্গে মৃতকে মেলাতে চেয়ে আমি এসে দাঁড়িয়েছি সেডার র‌্যাপিডে। জীবিতের অনুভব দিয়ে লেখা হবে অসমাপ্ত পাণ্ডুলিপি। আমার অপরিপূর্ণ জীবনের আংশিক 888sport alternative link ভৌতিক অনুভবে সম্পূর্ণ হবে।

ভৌতিক? মানি না। আমিও মানুষ। আমার সকল অনুভূতি সতেজ ও সক্রিয়। শুনছ? শুনতে পাচ্ছ? আমিও তোমাদের মতো। দেহ ছিল, দেহ নেই। অন্য কোনো পার্থক্য নেই। হ্যালো ম্যাট। হাই জিনত। তোমার সঙ্গে একই উড়ানে তো আসার কথা অমলিনী গুপ্তার। সে কোথায়?

এই সেডার র‌্যাপিড নদী নয়। বিমানপোত। নদীর নামে শহর। শহরের নামে এয়ারপোর্ট। আজ সকাল থেকে কবি ও 888sport live footballিকের দল কেবল আসছে। ক্লান্ত। ধ্বস্ত। কত দূর দেশ থেকে আসা। ম্যাট, মুর, ইভান, জন, সারা, ইলিয়ানা প্রমুখ ইউ-আইওয়ার গাড়িচালকেরা ভোর থেকে আসছেন আর যাচ্ছেন। আসছে আর যাচ্ছে। তাদের সঙ্গে আমিও। আমার আবেগ, আমার প্রেম, আদর, আমার নিবিড় শরীরী ইচ্ছা এবং যাবতীয় অনুভূতি ও দার্শনিকতা নিয়ে অপেক্ষমাণ সেই দুটি চোখের জন্য। আমার অ্যামেলিয়া অমলিনী চোখ।

ম্যাট : আইওয়ায় স্বাগত জিনত ইনসানি। সুদূর ইসরায়েল থেকে এসে তুমি ক্লান্ত।

জিনত : ধন্যবাদ ম্যাট।

ম্যাট : ইন্ডিয়ার 888sport live footballিক এই উড়ানেই আসছেন। আমি দুঃখিত, তোমাকেও একটু অপেক্ষা করতে হবে।

জিনত : কোনো অসুবিধে নেই। স্যুটকেস পেতেও কিছুটা সময় লাগবে।

 

তারা অপেক্ষা করছে। জিনত ইনসানি শ্বেতাঙ্গিনী, রোগা, লম্বা। পাতলা ঠোঁট। হলুদ দাঁত। লম্বা চুল খোলা। ব্লু জিন্স আর সাদা ঊর্ধ্ববাস পরে আছে। পাশে ম্যাট। ভারি সুদর্শন। জিনতকে দেখলে আমাদের স্বজাতি মনে হয়।

আমি ম্যাটের পাশে দাঁড়ালাম। ছোট্ট এই বিমানপোতে নিরন্তর প্লেন উঠছে আর নামছে। যাত্রীর 888sport free bet কম নয়। সকলেই আইওয়া শহরে থাকবে, তা নয়। চলে যাবে দূরান্তরে।

জিনত তার স্যুটকেস পেয়ে গেল। বৃহৎ ও হলুদ। ভাবলেশহীন মুখে দাঁড়িয়ে। হঠাৎ বলে উঠল, ‘ওই সে আসছে।’

ম্যাট : তুমি চেনো?

জিনত : আইডব্লিউপি ওয়েবসাইটে ছবি আছে। দেখেছিলাম।

ম্যাট : ইয়েপ! ওয়েবসাইট? ওয়ান্ডারফুল! ইয়াপের মানে আইডব্লিউপির ওয়েবসাইট। আমিও দেখেছি। কিন্তু তুমি আমার আগে চিনেছ।

অমলিনী আসতেই আমি নিছক হাওয়ার মতো তাকে অভ্যর্থনা জানালাম। সে একমুহূর্ত দাঁড়াল। যেন শিরশিরিয়ে উঠল শরীর। হেসে হাত বাড়িয়ে দিলো ম্যাট ও জিনতের দিকে। স্যুটকেস নেওয়া হলে বলে উঠল, ‘আমার খিদে পেয়েছে।’

 

নিকটবর্তী খাবারের দোকানে গেল তারা। অমলিনী, রোগা, কালো, খর্বকায়, ব্লু জিন্সের ওপর ঢলঢলে মেরুন পাঞ্জাবি, ক্ষুধাকাতর চোখে দেখতে লাগল সবচেয়ে কমদামি খাবার কী হতে পারে! দৈনিক ত্রিশ ডলার বরাদ্দ! সে তিন ডলারে একখানি ডোনাট কিনল। চিবোচ্ছে। কষ্ট হচ্ছে নিশ্চয়ই। খুব শুকনো।

অর্থচিন্তা বলতে আমি জেনেছি বহুলতা। এত অর্থ-সম্পদ এলফিনস্টোনদের যে তার ব্যবস্থা করতে একমাত্র জীবিত উত্তরাধিকারী হিসেবে ক্যান্সারাক্রান্ত এই দানিয়েল, এই আমি, রাতের পর রাত ভেবেছি। তারই ফল এই মেরি অ্যান হাসপাতাল। মেরি আর অ্যান আমার দুই বোনের নাম।

গাড়িতে বসে অমলিনী ডোনাটে শেষ কামড় দিলো। ব্যাগ থেকে জলের বোতল নিয়ে ঢালল গলায়। গাড়ির ভেতরটা দেখছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের দামি ও আরামদায়ক গাড়ি। টয়োটা। এছাড়া ফোর্ড আছে, হন্ডে আছে। তার সঙ্গে দুখানি বৃহৎ স্যুটকেস। শক্তিমান যুবক ম্যাট গাড়িতে তোলার সময় একবার অমলিনীকে দেখল। প্রত্যেকটায় তেইশ কেজি একেবারে পূর্ণ করে এনেছে। কী আছে এত?

জিনত সামনের আসনে বসেছে। এত নিচুস্বরে কথা বলছে যে, শোনাই যায় না। কোনো বাক্যই সম্পূর্ণ করে না প্রায়। ইংলিশ জানে না, এই সত্য লুকোতে চায়।

 

অমলিনী : তোমরা দুজনেই কি পড়াও?

জিনত : আমি বইয়ের সম্পাদক।

ম্যাট : আমি আপাতত ইউ-আইওয়ার গাড়ি চালাই। আমি জিমন্যাস্ট। এবং এক্স-পাইলট। বউ ইয়েপে কাজ করে। আগে আমরা ক্যালিফোর্নিয়ায় থাকতাম। দুমাস হলো এসেছি। আমাদের মেয়ের বয়স ছয় মাস। গাড়ি চালাই আর অবসরে মেয়েকে দেখি।

অমলিনী : তুমি আর প্লেন ওড়াও না? [ম্যাট হেসে মাথা নাড়ল। তার এই নিরুচ্চার থাকা বুঝিয়ে দিচ্ছে এ নিয়ে বেশি প্রশ্ন তার অভিপ্রেত নয়। আমার ভালো লাগল যে অমলিনীর এই ইঙ্গিত বোঝার ক্ষমতা ও পরিমিতিবোধ আছে। সে একটি প্রশ্ন করল।] তুমি লেখো?

ম্যাট : না না। একেবারেই না। আমালাইনি, আমার একটা কুকুরও আছে। তার দেখাশোনাও আমাকেই করতে হয়।

অমলিনী : মলি। আমাকে মলি বলে ডাকতে পারো।

ম্যাট : মালি! ওয়ান্ডারফুল!

অমলিনী : মালি নয়, মোলি, মোলি!

ম্যাট : মোলি! দ্যাটস গ্রেট!

মোলি : তোমার দিনগুলো খুব সুন্দর কাটে ম্যাট। মেয়ের সঙ্গে, কুকুরের সঙ্গে। গাড়ি চালিয়ে তুমি কত জায়গায় ঘুরতে পারো।

ম্যাট : গাড়ি চালাতে আমি খুবই ভালোবাসি মোলি। যে-কোনো কিছুই চালাতে ভালোবাসি। আমার একটা ইয়ট আছে। কিন্তু এ-কাজে মাত্র গতকাল যোগ দিয়েছি। মনে হয় কাজটা বেশ আগ্রহোদ্দীপক। এই দেখো, কত দেশের কত লেখকের সঙ্গে পরিচয় হচ্ছে। এমন সুযোগ কজনের হয়?

মোলি : এখানে আসার সুযোগ পেয়ে আমিও নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছি ম্যাট। কী সুন্দর এই জায়গা! একেবারে আমার মনের মতো। দিগন্তবিস্তৃত ক্ষেত। সুনীল আকাশ। সবকিছুই খুব শান্ত।

ম্যাট : আইওয়া খুব সুন্দর জায়গা। এখানকার মানুষজনও অত্যন্ত সহৃদয় এবং অতিথিবৎসল! আশা করি তিন মাস খুব ভালো কাটবে তোমার।

মোলি : থ্যাংকিউ ম্যাট!

জিনত : তুমি কি এই নিউজলেটার দেখেছ? তোমার নাম আছে।

 

জিনত একটি কাগজ দিলো অমলিনীকে। সে একটু উলটেপালটে দেখল। খুব সস্তা নিউজপ্রিন্টে ছাপা খবর। লেখকদের পরিচিতি। দু-চারজনের ছবি। এই নাকি নিউজলেটার! ছবি যদি দিলোই, সকলের কেন দিলো না? অমলিনীর ছবি নেই। তার একটু খারাপ লাগল। সে যখন এদেশে পা রাখে এবং অভিবাসন পরীক্ষার মুখোমুখি হয়, তার মধ্যে উদ্বেগ, অসহায়তা এবং অপমানবোধ কাজ করে। অভিবাসনকর্মীরা আপাতভাবে যথেষ্ট ভদ্র, সদাচারী, কিন্তু অমলিনীর শুধু এই অনুভূতি হয় যে, এঁরা তাকে বিশ্বাস করছেন না। সে এক উন্নয়নশীল কিন্তু দরিদ্র দেশের নাগরিক বলে এঁদের চোখে তার প্রতি মর্যাদাবোধ কিছু কম! এখন, এই মুহূর্তে তার এমন অনুভূতিই হলো! সে তার খারাপ-লাগা ভুলতে চেষ্টা করল প্রাণপণ! এবার ইয়েপের পঞ্চাশ বছরপূর্তি। কিন্তু নিউজলেটারের মালিন্যে অমলিনী উদাস হয়ে উঠল। সারা পশ্চিমবঙ্গে, নিজের তহবিল ভেঙেও যদি কেউ ছোট পত্রিকা বা কাগজ করে, তার মান এর দশগুণ ভালো।

সে চুপ করে বাইরের গতিশীল প্রকৃতি দেখতে লাগল। এই নিয়ে তৃতীয়বার আমেরিকায় এলো সে। প্রতিবার তার মনে হয়েছে, আমেরিকানরা দেশটাকে সুন্দর করে সাজিয়ে রাখতে জানে। আমেরিকা মানে প্রভুত্ব ও ক্ষমতা। ব্যবসা ও যুদ্ধবাজি। শর্ত, ঋণ, অনুদান। আমেরিকা মানে সৌন্দর্য ও পরিচ্ছন্নতা। অপরিসীম সৌজন্যের প্রকাশ।

আমি বলে উঠলাম, আমেরিকা মানে কি গণতন্ত্র নয়? ব্যক্তিস্বাধীনতার প্রতি সম্মান নয়? 888sport live chat ও 888sport live footballের মর্যাদা নয়? 888sport promo codeস্বাধীনতা নয়? প্রগতিশীলতা নয়? 888sport apk ও প্রযুক্তির পীঠস্থান কি নয় আমেরিকা?

আমার ভাষ্য সে শুনতে পেল না। ভালোই হলো। আসলে এই কয়েকটি কথায় আমেরিকাকে সংজ্ঞায়িত করা যায় না। এ হলো এক বৈপরীত্যের দেশ।

বাইরে ঝলমলে রোদ্দুর। বিকেল হয়ে এলো। সূর্যাস্ত হতে হতে আটটা বেজে যাবে। আপাতত অমলিনীকে দেখা ছাড়া আমার কিছুই করার নেই। বড় বড় দুখানি চোখ ছাড়া সে বড়ই সাধারণ। আমি তার দুচোখের উজ্জ্বল উদাস দিঠি ভালোবেসেছি আগেই। এখন আমি ভালোবাসছি তার সাধারণ্য। তার সৌন্দর্য, তার হৃদয়। আমাকে তার সন্ধান পেতে হবে। যদি না পাই? আমার এই ফিরে আসা ব্যর্থ হবে কি? যদি মায়াবী শরীর নিয়ে দেখা দিই, সে কি ভালোবাসবে আমাকে? যদি না বাসে? কী এসে যায়? আমার আয়ু মাত্র তিন মাস। আমি তো দিতে চেয়েছি। বিষয়, সম্পত্তি, শরীর, মন, প্রিয়জন, প্রিয় কর্ম – সমস্ত দিয়েই তো প্রাণময় জগতের মূল্য শুধেছিলাম। বাকি ছিল একটিই। বুঝিনি তা। ওই অন্ধকারে একাকী থাকতে থাকতে যখন হাড়গোড় কুরে খাচ্ছে কীট, যখন অণু-পরমাণু হয়ে যাচ্ছে মরদেহের শেষটুকুও, মনে হলো, প্রেম কী, ভালোবাসা কী, জানা হলো না তো, প্রণয় কাহারে কয়?

আমি দেখেছি, যা পেয়েছি, তার চেয়ে, যা দিয়েছি তার মূল্য বুঝেছি সম্যক। সময় নেই, সময় নেই। অমলিনী আমার প্রেমের পাত্রী। সে ভালো হোক মন্দ হোক, তার হৃদয় সুন্দর হোক কিংবা মলিন, আমি নিরুপায়। আমি তার হাতে হাত রাখলাম। সে একটু চমকে তাকাল। বড় অনুভূতিপ্রবণ!  (চলবে)