॥ ২ ॥

বাইরে দূরে বিশ্ববিদ্যালয়। ক্রমাগত এগিয়ে আসছে। অমলিনী ও জিনত দেখছে। তাদের পলক পড়ছে না। কী বিশাল! কী সুন্দর! কত মাঠ, উদ্যান, গাছপালা। সবুজে সবুজ। গাড়ি উত্তর ম্যাডিসন স্ট্রিটে পৌঁছল। থামল যেখানে, তার নাম আইওয়া মেমোরিয়াল ইউনিয়ন। বিশাল বাড়িটিকে আমরা বলতাম আইমিউ। এর একদিকে আইওয়া হাউজ হোটেল। লেখকরা সেখানেই থাকবেন। বাকি অংশে ছাত্রদের বিভিন্ন ও বিচিত্র সংগঠনের কার্যালয়, কিছু গবেষণাগার, সুবিশাল বলরুম, বিরাট প্রেক্ষাগৃহ, খেলার জায়গা, রেস্তোরাঁ এবং বেসমেন্ট জুড়ে ছাত্রদের জন্য বিশাল বাজার। খাবারের দোকান থেকে শুরু করে জুতো, জামা, ব্যাগ, কলম, খাতা, কম্পিউটার, পেনড্রাইভ, ফ্ল্যাশড্রাইভ সবকিছু পাওয়া যায়।

তারা গাড়ি থেকে নামল। ঢাউস ঢাউস তিনখানা স্যুটকেস নামাল ম্যাট। সামনে উঁচু সিঁড়ি, তারপর দরজা। অমলিনীকে অসহায় দেখাচ্ছে। সে কী করে এই বোঝা তুলবে! সে ভারি অবাক হয়ে প্রশ্ন করল, ‘কেউ নেই যে এগুলো তুলে দেবে? কোনো লিফট নেই? কার্ট নেই? ট্রলি নেই?’

ম্যাট একটু হেসে বলল, ‘আমি তুলে দিচ্ছি।’

বড়ই লজ্জিত হলো মেয়েটা। অসংখ্য ধন্যবাদ দিয়ে ঢুকে গেল ভেতরে। প্রথমে একটা ভারী কাচের দরজা, জিনত সরু, লম্বা শরীর ও একখানা স্যুটকেস নিয়ে সরলরেখার মতো গলে গেল। অমলিনীর জন্য দরজা ধরে রাখার সৌজন্য প্রদর্শন করল না। সে দ্রুত একটি স্যুটকেস দিয়ে দরজা আটকাল, ধাক্কা খেল – ধ্রাম! আবার একটি ভারী দরজা। আবার ধ্রাম! দুহাতে দুটো বিশাল স্যুটকেস টেনে টেনে চলতে চলতে তার হাঁপ ধরে গেল। দলে দলে ছাত্রছাত্রী আসছে-যাচ্ছে, কেউ বলছে না, সাহায্য চাই? তার ধারণা ছিল, আইওয়া বিশ্ববিদ্যালয় এমনই 888sport live footballবৎসল যে, ছাত্রছাত্রীরা 888sport live footballিক-কবি পেলেই আন্তরিক অভ্যর্থনা, সহায়তা এবং সানন্দ ঔৎসুক্যে তাদের ঘিরে ধরবে! হায়! তাকে হতাশ হতে হলো! আমার হাসি পেল। কী বোকা মেয়ে! কী সরল! সারাক্ষণ স্বপ্নের দেশে মেঘের রাজ্যে থাকতে চায়! মনে হয়, সে যতখানি 888sport live footballিক, তার চেয়েও বেশি করে কবি! দুখানি বিশাল বাক্স – আমার মনে হলো যেন কফিন। ঈশ্বরপ্রেরিত কোনো স্বর্গীয় দূতী, টেনে টেনে নিয়ে যাচ্ছে মৃতের কফিন। আমার মৃত ভাই। মৃত বোন। বধ্যভূমিতে তারা পড়ে ছিল রক্তাক্ত দশায়! এ আমার অতীত। আমি বিস্মৃত হইনি। কিন্তু আমি বীতশোক। বিগতস্পৃহ। বীতক্রোধী। ভালোবাসা দেবো বলে ফিরেছি, পাব বলে নিশ্চিত ভরসা করি না। যে শূন্য সে বহু দিতে পারে। শূন্যে কে কী দেয়! আমার শূন্য চোখ দিয়ে দেখছি তার চলা। কফিন বা স্যুটকেস সে বয়ে চলেছে ধীরে ধীরে। ক্লান্ত রোগা শরীরটা ধুঁকতে লাগল প্রায়। একটি কনসিয়াজ দেখে সাগ্রহে এগিয়ে গেল সে। জিনত তার পেছনে।

আইওয়া হাউজ হোটেল?

দুঃখিত। এটা হোটেলের রিসেপশন নয়, তোমরা সোজা এগিয়ে যাও, তারপর বাঁ-হাতি গলি ধরো। ওখানে আরেকটা কনসিয়াজ পাবে।

ঝকঝকে হল। অগুনতি নরম সোফা ও সুদৃশ্য সেন্টার টেবিল। দেয়ালে বড় বড় পোর্ট্রেট। মেঝেয় নরম গালিচা। গুচ্ছ গুচ্ছ ছাত্রছাত্রী। কেউ কম্পিউটারে মগ্ন, কেউ আলাপচারিতায়। ব্ল্যাক স্টুডেন্ট খুব কম।

তারা ধীরে ধীরে দ্বিতীয় কনসিয়াজে পৌঁছল। এটাই হোটেলের অভ্যর্থনা কক্ষ। অমলিনী দেখল, ম্যাট তাদের ভুল জায়গায় নামিয়ে দিয়েছে। এদিকটায় পার্কিং আছে। স্যুটকেস তোলার লিফট, ট্রলি সবই মজুদ। সে পাসপোর্ট ও ইউ-আইওয়া ইয়াপের আমন্ত্রণপত্র ব্যাগ থেকে বের করতে করতে ভাবছে, নদীটা কোথায়? সব্বাই বলেছিল সামনেই নদী পাবে। কোথায়?

সে দেখল, এক ছোট্ট মানুষ, পুতুলের মতো। কালো রং করা ঝাঁকড়া চুল। ভারতীয় বাদামি গায়ের রং। ছোপলাগা ত্বকে হালকা প্রসাধন। রাঙানো ঠোঁট। ব্লু জিনসের ওপর লাল শার্ট। লিফট থেকে বেরিয়ে এলো।

জিনত? আমালাইনি? আমি সারা। সারা মার্টিন। এসো এসো। সুস্বাগতম। আমালাইনি তোমার রুম দুশো দশ। জিনত, তোমার দুশো 888sport cricket BPL rate।

সারা অমলিনীর স্যুটকেস টানতে লাগল। উফফ্! কী এনেছ বলো তো? বিশ্বসংসার ভরে এনেছ নাকি? বাপরে! কী ভারী! তার ওপর দুটো! তুমি তো বাঙালি। বাঙালিরা একটু অদ্ভুত হয় বটে। অমলিনী প্রায় ঝাঁপিয়ে পড়ল। সারা মার্টিনের পথ আগলে বলে উঠল, ‘আরে আপনি কেন আমার স্যুটকেস টানছেন? এরকম করবেন না। কোথায় যেতে হবে বলুন, আমি নিয়ে যাচ্ছি।’ সারা : সরো সরো। আমি একটা নিচ্ছি, তুমি আরেকটা নাও। তোমাদের দুজনের রুমই ফার্স্ট ফ্লোরে। আমি এখনো অনেক বোঝা বইতে পারি, বুঝলে?

জিনত : আমি কখনো আমার স্যুটকেস এমন করি না, যা নিজে বইতে পারব না।

অমলিনী অপ্রতিভ দশায় লিফটে এলো। প্রশস্ত এই উত্তোলক যন্ত্র। নরম সুন্দর কার্পেটমোড়া। ঝকঝকে দেয়াল। দোতলায় পৌঁছতে কয়েক সেকেন্ড সময় নিল।

দরজা খুলে তা একহাতে চেপে সারা বলল, ‘বেরিয়ে এসো। সাবধানে। বাঁদিকে যাও। আমালাইনি, তোমার রুম লিফটের কাছেই, বাঁদিকে।’

তারা বেরিয়ে এলো। অমলিনী তার হাতের স্যুটকেস দাঁড় করিয়ে সারার হাত থেকে দ্বিতীয় স্যুটকেসটি নিল। সারা লিফট ছেড়ে বেরিয়ে এলে অমলিনী ভালো করে চারপাশ দেখার অবকাশ পেল।

লিফটের সামনে খানিক ফাঁকা জায়গা। তার দুপাশে লম্বা করিডোর দুধারে কক্ষের পর কক্ষ সাজিয়ে বসে আছে। এর মধ্যে নিশ্চয়ই দেশ-বিদেশের কবি-888sport live footballিকরা তিন মাস বসবাস করবেন। অমলিনীর মনে হলো সে স্বপ্নে বিচরণ করছে! এই আইওয়ার কত গল্প সে শুনেছে! গত দুমাস তার অনেক ব্যস্ততা গেছে আইওয়ার এই আয়োজনে যোগ দেওয়ার জোগাড়যন্ত্র করতে। পাসপোর্টের সময়সীমা ঠিক ওই সময়ই শেষ হতে যাচ্ছিল। এছাড়া ইয়াপের বায়নাক্কার শেষ নেই। আজ এটা পাঠাও, কাল ওটার ছবি দাও। এবং প্রত্যেক দাবির সঙ্গে অত্যন্ত বিনয়-বিনম্র ভাষায় বলা – চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে চাই, … তিনদিনের মধ্যে পাঠাও!!

সব ছাপিয়ে আজ সে আইওয়ায়! সারার কথায় তার ঘোর ভাঙল। সে এখন একটি ঘরে দাঁড়িয়ে। এই তোমার রুম। জিনত তুমিও দেখে নাও। এই হলো কফিমেকার। যে চা-কফি দিয়েছে, এই দিয়ে এক হপ্তা চালাবে। কার্পেট নোংরা করবে না। ঘরে ধূমপান নিষিদ্ধ। করলে দুশো ডলার ফাইন। মাইক্রোওভেন, ফ্রিজ, টিভি ব্যবহার করতে পারো। রাতের খাবার খাবে তো? আলো থাকতে থাকতে দুজনে খেয়ে এসো। নতুন জায়গা, হারালে থানা-পুলিশ করতে হবে।

অমলিনী : সারা, তুমি সত্যিই খুব যতœবান। ধন্যবাদ তোমাকে। কিন্তু আমার একটু স্নানের সময় চাই। তারপর খেতে যাব।

সারা : জিনত, তোমারও চাই? ঠিক এক ঘণ্টা। তারপর দুজনে খেতে যাবে। একা নয়। মনে থাকবে? কত দূর থেকে সব এসেছ। আহা রে! মুখখানা শুকিয়ে আমসি। কিন্তু আমালাইনি, তোমার নামের অর্থ কী? আর এত ভারী স্যুটকেস তুমি এনেছ কেন?

অমলিনী : আমাকে মোলি বলো সারা। আমার নামের অর্থ নিষ্কলুষ। বাংলা উচ্চারণ হবে অমলিনী। আমি খুবই দুঃখিত যে, তোমাকে ভারী স্যুটকেস টানতে হলো।

সারা : সে ঠিক আছে। একটু তো টেনেছি। তুমি তো সেই দেশ থেকে টানছ।

মোলি : সকলে বলল, খুব ঠান্ডা পড়বে। তাই  অনেক গরম পোশাক এনেছি। আর এখানকার ঐতিহ্যময় গ্রন্থাগারের জন্য কিছু বই।

সারা : ওয়ান্ডারফুল। আমাদের গ্রন্থাগার পুরো আইওয়া রাজ্যের গর্ব। এত বিশাল সংগ্রহ, পড়াশোনার এমন সুবিধা খুব কম আছে। আর এখন তো ফল মরশুম। খুব সুন্দর আবহাওয়া। কে তোমাকে ঠান্ডার কথা বলল? বড়জোর শেষ দুসপ্তাহ তোমরা শীত পাবে! আচ্ছা, আর কথা নয়। তুমি তৈরি হয়ে নাও। দেরি করবে না একদম। আইওয়া মোটেই কোনো অপরাধবিহীন স্বর্গরাজ্য নয়।

নদীটা কোথায়, নদী? অমলিনী ভেবেছিল জানালায় দাঁড়ালেই নদী পাবে। সেরকমই শুনেছিল সে। দ্রুত স্নানে যাওয়ার পরিবর্তে সে জানালার ব্লাইন্ড তুলতে লাগল।

ব্লাইন্ড! কী বিশ্রী নাম! বাইরের দৃশ্যপট আড়াল রাখবে। কিংবা তোমাকেই অদৃশ্য রাখবে কিছুক্ষণ। তার সঙ্গে অন্ধত্বের কী সম্পর্ক? দৃশ্যমান নয় মানেই কি অন্ধ? সে ভাবতে লাগল। তার জানালার বাইরে পার্কিং। পার্কিংয়ের পাশে সরু রাস্তা। তারপর মাঠ। নিচু প্রাচীর দেওয়া ঘাসের গালিচা। রাস্তার ধারে বড় বড় গাছ। এই মুহূর্তে গাছগুলো চিনতে পারছিল না সে। সে দাঁড়িয়ে আছে পূর্বদিকে। দক্ষিণে, পার্কিংয়ের পাশেই একটি চ্যাপেল। তার সামনে বাগান। থোকা থোকা ফুল ফুটে আছে। চারদিক ভারি সবুজ। রঙিন। শান্ত। ছন্দময়। সে নদীটা দেখতে পাচ্ছে না কারণ এক টুকরো মনোরম ছবি কেউ তার জানালায় ঝুলিয়ে দিয়ে গেছে।

সে ঘরের দিকে ফিরল। বেশ বড় ঘর। কত বড়? দুশো বর্গফুট? আড়াইশো? তিনশো?

দুজন শোবার মতো বিছানা। পুরু গদির ওপর ধবধবে চাদর। নরম গোলাপি কম্বল। বড় বড় চারটে বালিশ। দুটি বিশাল টেবিল। একটিতে টেবিলল্যাম্প, সামনে রিভলভিং চেয়ার। একপাশে ট্রে-তে কফিমেকার। কাপ। চা ও কফির সম্ভার। টেবিলের পাশে কাঠের আলমারি। তার কাঁধ বরাবর উচ্চতা। চব্বিশ ইঞ্চি এলইডি টিভি। বিভিন্ন খোপে মাইক্রোওভেন, ফ্রিজ। জিনিসপত্র রাখার ড্রয়ার।

সে একটি স্যুটকেস খুলল। পোশাক ও ঘরে পরার চপ্পল নিল। ওয়ারড্রোবের গহ্বরে ঢুকিয়ে দিলো একটি স্যুটকেস। আরো একটি খুলল। বের করল তার ওষুধ, ত্বক ভালো রাখার ক্রিম, বই, খাতা। পড়ার টেবিল গুছিয়ে তুলল। আধঘণ্টা পার হয়ে গেল এরই মধ্যে। সে স্নানঘরে ঢুকল।

আলো জ্বালতেই ঝলমল করে উঠল স্নানঘর। দেয়ালজোড়া আয়না। টয়লেট্রি গুছিয়ে রাখা। পরিষ্কার বাথটাব। পরিষ্কার পর্দা। কমোড। তোয়ালে নানা মাপের। ছোট, মাঝারি, বড়। প্রত্যেকটি দুজোড়া করে। এককোণে ঘর ব্যবহারের নিয়মাবলি। ধূমপান নিষিদ্ধ। সপ্তাহে একদিন রুম সার্ভিস পাওয়া যাবে। শুধু শুক্রবার। স্নানঘরের মেঝে ভেজানো চলবে না। সারা পৃথিবীর ক্রমবর্ধমান দূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য এবং পানীয়জলের ক্রমহ্রাসমানতার জন্য একটি তোয়ালে একাধিক দিন ব্যবহারের অনুরোধ জানানো হয়েছে।

সে ভারি খুশি হলো এই স্নানঘরের ব্যবস্থায়। সে সৌন্দর্য ও নির্মলতার পূজারিণী! ঝকঝকে, সাজানো, সুন্দর ঘর না হলে তার চলে না! এমন দেশে সে থাকে, যেখানে অধিকাংশ নাগরিকের পরিচ্ছন্নতাবোধ নেই! অর্ধশতাংশ মানুষের শৌচালয় নেই। সে-দেশে এমন মন্দির আছে, যেখানে মেয়েদের প্রবেশাধিকার নেই। মন্দিরের অন্ধ গর্ভগৃহ অপরিষ্কার, পিচ্ছিল। শুচিতাবোধ ভারি যুক্তিহীন! সে তার দেশের জন্য দুঃখবোধ করতে লাগল। কিন্তু স্নানপাত্রে ঈষৎ উষ্ণ জলে আত্মনিমগ্ন হতে পেরে তার মন শান্তি ও আনন্দে ভরে গেল! স্নান কী সুন্দর! কী পবিত্র! প্রায় ত্রিশ ঘণ্টা পর তার পিপাসার্ত শরীরকোষ জলপান করে তৃপ্ত হলো। সিক্ত নগ্নশরীরে সে দাঁড়াল আয়নায়। কনসিয়াজের কর্তব্যরত ছেলেটির নাম জন। সেও একজন ছাত্র। জিনত ও অমলিনী, তারা রেস্তোরাঁর শুলুকসন্ধান করতে লাগল। জন বলল, ‘বেসমেন্ট ও ইমুর অন্য রেস্তোরাঁগুলো পাঁচটায় বন্ধ হয়ে যায়। এই নাও ম্যাপ। তোমরা ইস্ট জেফারসন স্ট্রিট বা মার্কেট স্ট্রিট চলে যাও। অনেক রেস্তোরাঁ পাবে।’

জনের সঙ্গে কথা বলে তারা যখন বেরোতে উদ্যত, দুই 888sport promo code আবির্ভূত হলো। একজন মোটাসোটা, ফুটপাঁচেক, ধবধবে, মাখনের মতো ত্বক। অন্যজন ছিপছিপে, লম্বা, নির্মেদ, ধবধবে ও তীক্ষè। দুজনেই দারুণ সুন্দরী। হিজাব থাকা সত্ত্বেও, দীর্ঘ যাত্রাপথের ক্লান্তি সত্ত্বেও, তাদের রূপ নজর কাড়ছিল।

হাই-হ্যালো-হাগিং সেরে তারা বেরোল। হিজাব পরা দুই রাইটার কনসিয়াজের কাজকর্ম সারতে লাগল। গোলগাল মিশরের কবি ও ঔপন্যাসিক রোজানা আল গিয়াসি। তীক্ষè সুন্দরী প্যালেস্টাইনের কবি শবনম আল মুসান।

তারা ক্ষুধার্ত ও ক্লান্ত পায়ে চলতে লাগল। আমিও চললাম। আইমিউকে এখন বলে ইমু। আরো সহজ, সংক্ষিপ্ত। আমার উদ্দীপনা বাড়ছে। আমি যেন আমার অ্যামেলিয়া চোখের আধিকারিণী অমলিনীর চোখ হয়ে উঠছি। ভুলে যাচ্ছি আমি কে, আমি কী! আত্মবিস্মৃত হয়ে জগতানুভবের চেয়ে আনন্দের আর কী থাকতে পারে! তবে এই উপলব্ধি আমার হচ্ছে প্রেমানুভূতি অতুলনীয়, কিন্তু আমিত্ববর্জিত নয়।

ইমু থেকে বেরিয়ে জেফারসন স্ট্রিট যেতে গেলে একটা চড়াই পড়ে। এমন উঁচু-নিচু ল্যান্ডস্কেপ বানাতে আমেরিকানরা খুবই পছন্দ করে। আমাদের বেইনব্রিজ দ্বীপের সেই প্রাসাদোপম বাড়ি ঘিরে যে সুবিশাল উদ্যান, তার মধ্যেই এমন ছোট ছোট টিলা বানানো ছিল।

মার্কেট স্ট্রিটে পরপর অনেক রেস্তোরাঁ। পানশালাও আছে। অমলিনী দেখছে, এই শহরটি শুধু সুন্দর নয়, ভারি শান্ত, তার নিজের শহর কলকাতার তুলনায় জনবিরল বলা যায়। রোদ্দুর নরম কিন্তু আকাশজুড়ে দিব্য আলো। অপূর্ব স্থাপত্য নিয়ে সুন্দর ও বিশাল বাড়িগুলোর মসৃণ ত্বক বেয়ে সেই আলোর ধারা গড়িয়ে পড়ছে! কতই না সবুজ, কত সুন্দর! এই বিশ্ববিদ্যালয় আছে বলে তবু ভিড়, ছুটিতে কেমন হয়?

জিনত বলল, ‘চলো, কোথাও বসে পড়ি। ক্লান্ত লাগছে।’

মোলি : এগুলো দামি হবে।

জিনত : চলো, ঢুকে পড়ি। আর খুঁজতে পারছি না।

মোলি : এটা ইতালিয়ান।

জিনত : খাও না?

মোলি : খাই। বিফ ছাড়া সবই খাই। বাছবিচার নেই।

জিনত : তোমার ধর্ম কী!

মোলি : জন্মসূত্রে হিন্দু। আমার আসল ধর্ম মানবিকতা। প্রেম, দয়া, বন্ধুত্ব, সেবা এবং যুদ্ধবিরোধিতা।

জিনত : তুমি বাস্তবকে অস্বীকার করছ। ধর্মপরিচয় কখনো ভোলা যায় না। লক্ষ করেছ কি, ওই দুজনের মধ্যে শবনম আমার সঙ্গে কোনো কথা বলেনি। আমাকে জড়িয়ে ধরেনি। তোমাকে আপনজনের মতো জড়াল, হাসল! আমার দিকে ফিরেও তাকাল না। কেন? কেন? এই জন্যই তো, যে আমি ইসরায়েলি!

খোলা আকাশের নিচে কোণের টেবিলে বসেছে দুজন। খাবার নির্বাচন করেছে কিছুই না বুঝে। বিচিত্র সব নাম। তলায় লেখা আছে এই পদ কী দিয়ে তৈরি। কিন্তু না খেয়ে দেখা পর্যন্ত কোনো পদেরই ভালোমন্দ অনুমান করা মুশকিল। অমলিনীর মন খারাপ। জল, খাবার ও টিপস মিলিয়ে অন্তত সাতাশ ডলার খরচ হয়ে যাবে। এদেশে ট্যাক্সি ও রেস্তোরাঁয় টিপস প্রথাসিদ্ধ।

খাবার এলো। কিছু পাস্তা, পালং, গাজর আর সেদ্ধ আলু, কুচিয়ে কাটা চিকেন আর দু-চারটি চিংড়ির টুকরো। ভীষণ বিস্বাদ! নুন-মরিচ-টমেটো কেচাপ ছড়িয়ে একটু একটু করে খেতে লাগল অমলিনী। বড় একগ্লাস বরফকুচি দেওয়া জল দিয়েছে। সেটাই সবচেয়ে সুস্বাদু। বরফজল সে পান করে না। কিন্তু এখানে ভালো লাগছে। দীর্ঘ যাত্রা ও বিমানের মধ্যে থাকায় ভেতরটা কাঠ! সে নিরুপায়। তাকে খেতে হবে। খিতে মেটানোর দায়। এতগুলো ডলারের মূল্য বুঝে নেওয়ার অঙ্গীকার। সাতাশ ডলার মানে চৌষট্টি টাকা দিয়ে গুণ করলে ১৭২৮ টাকা! এর চেয়ে আলুসেদ্ধ ভাত খেলে কাজে দিত।

জিনতের অল্প উত্তেজিত মন্তব্য শুনে, একটু সময় নিয়ে প্রসঙ্গ পুনরুত্থাপন করল অমলিনী।

মোলি : ধর্মপরিচয় ভোলার প্রয়োজন তো নেই! মূল বিষয় হলো ধর্ম বলতে তুমি কী বোঝো! তোমার ধর্ম কী? কোন আচরণকে তুমি ধার্মিক বলবে। আমার কাছে ভালোবাসার চেয়ে বড় ধর্ম অন্য কিছুই হতে পারে না। ভালোবাসা ক্ষমা শেখায়, দয়া শেখায়। সে যাক। এগুলো ব্যক্তিগত অভিমত। শবনম তোমার দিকে তাকিয়ে হাসেওনি? আমি সত্যি লক্ষ করিনি। তা, তুমিই তাকে জড়িয়ে ধরলে না কেন?

জিনত : জড়িয়ে ধরব? আমি? এখানে যদি কোনো একজন পাকিস্তানি লেখক আসেন, তুমি তার সঙ্গে কী করবে? কী আচরণ করবে? জড়িয়ে ধরবে?

মোলি : দেখো, আমি জানি না পাকিস্তানের কেউ এসেছেন কি না! আসার আগে এত কাজের চাপ ছিল, আমি ইয়াপের ওয়েবসাইট দেখিনি।

জিনত : আমি জানি তুমি দেখোনি। আমাকে দেখে তো চিনতেই পারলে না। আমি কিন্তু শিকাগো এয়ারপোর্টেই তোমাকে চিনেছিলাম। সে যা হোক, তুমি পাকিস্তানিদের ঘৃণা করো না?

মোলি : না। আমার বিশ্বাস, কোনো সাধারণ পাকিস্তানিও কোনো ভারতীয়কে ঘৃণা করে না। কারণ আমরা রাজনৈতিক চক্রান্তের শিকার। আমরা সে-দেশের ক্রিকেটারদের পোস্টার লাগাই, গায়কদের গানে পাগল হই, সে-দেশের অভিনেত্রী আমাদের ফিল্মে হিরোইন হয়ে যায়। এমন বহু পরিবার দুদেশে আছে, যারা আত্মীয়। আমাদের ঐতিহাসিকরা সে-দেশে গিয়ে গবেষণা করেন, কারণ অখ- ভারতের সবচেয়ে প্রাচীন সভ্যতা, যাকে সিন্ধুসভ্যতা বলা হয়, তার মূল ক্ষেত্র এখন পাকিস্তানে। পাকিস্তান থেকে লোকে এসে ইন্ডিয়ায় চিকিৎসা পর্যন্ত করায়।

জিনত : কোনো পাকিস্তানিকে জড়িয়ে ধরতে পারবে?

মোলি : নিশ্চয়ই, জিনত!

জিনত : আচ্ছা! দেখা যাক! তবে তোমার সঙ্গে আমি একমত নই। সারাবিশ্ব জানে, ভারত ও পাকিস্তান পরস্পরের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ চালায়। কাশ্মির নিয়ে তোমাদের আকচাআকচি বিগত শতাব্দী থেকে চলছে। ধর্মীয়ভাবেও তোমরা পরস্পর শত্রু। আর শত্রুকে কখনো ভালোবাসা যায় না।

মোলি : ভারত প্রেম, শান্তি, মৈত্রী ও সাম্যে বিশ্বাস করে। আমাদের দেশ বহুজাতি, বহুধর্মের দেশ। হিন্দুর পরেই দ্বিতীয় 888sport free betগরিষ্ঠ নাগরিক মুসলমান। কখনো এসো আমাদের দেশে। দেখবে পাড়ায় পাড়ায় মন্দির ও মসজিদ। কত যে গির্জা তার সীমা-888sport free bet নেই। একটা গোটা শহর বৌদ্ধধর্মাবলম্বীদের পীঠস্থান। সন্ত্রাসবাদ একটা আন্তর্জাতিক সমস্যা এবং চক্রান্ত। হ্যাঁ, কাশ্মির সমস্যা আছে। রাজনীতি যেমন আমাদের দেশকে খ-িত করেছে, তেমনি কাশ্মির সমস্যাও মিটতে দেওয়া হয়নি। জমি এবং সীমানা সবসময়ই খুব স্পর্শকাতর বিষয়। কিন্তু ভারত কাউকে উৎখাত করেনি। কোনো দেশ জবরদখল করেনি। কোনো দেশের মূল নাগরিকদের উদ্বাস্তু করে ছাড়েনি।

জিনত : কী বলতে চাইছ? আমরা জবরদখল করেছি? উৎখাত করেছি? পৃথিবীর ইতিহাস পড়ে দেখো। দুই হাজার বছর আগে থেকে প্যালেস্টাইন আমাদের। বেথেলহেম, জেরুজালেম সব আমাদের। আমরা নিপীড়িত হইনি? উৎখাত হইনি? হলোকস্টে লাখ লাখ জিউ নৃশংস হত্যার বলি হয়নি? কী করেছিল সারাবিশ্ব? আমরা আমাদের দেশ চেয়েছি। কোনো অন্যায় করিনি! আমরা প্যালেস্টাইনিদের যথেষ্ট দয়া দেখিয়েছি। সারা দুনিয়া জানে! না হলে আমেরিকা আমাদের সমর্থন করত না! ইউরোপও করত না।

মোলি : হলোকস্ট? ওই জঘন্য অমানবিতার ফল কি জার্মানি পায়নি? পতন ও অপমৃত্যু হয়নি হিটলারের? আজো কি নাজি শব্দটি ঘৃণার উদ্রেক করে না? তখন বহু দেশ জিউ জনগণকে আশ্রয় দিয়েছিল। আমেরিকা তার মধ্যে প্রধান। জাতি-ধর্ম-বর্ণ কোনো বিদ্বেষই মানুষের পক্ষে ভালো নয়। মানবতার পরিপন্থী। এবং আমি গীতা-কোরআন-বাইবেল পড়েছি, বৌদ্ধ ও জৈন দর্শন পড়েছি  –  আমি এটুকু বুঝেছি, কোনো ধর্মই মানবপ্রেম ও পরমতসহিষ্ণুতার বিপক্ষে নয়! আর দেখো, মাত্র তিন মাসের জন্য এসেছি। অন্তত এই তিন মাস আমরা ঘৃণা, ঈর্ষা, অসহিষ্ণুতা সরিয়ে রাখতে পারি না? আমরা কবি, লেখক। এই পরিচয়টুকুই থাক না জিনত।

জিনত : সেটা সম্ভব নয়। সেটা ইউটোপিয়া।

অমলিনী হাহা করে হেসে উঠল। তার কালো মুখে ঝিকমিকিয়ে উঠল একটি গজদন্ত। এই প্রথম তাকে হাসতে দেখছি আমি। অমলিনী, আমার অ্যামেলিয়া, তোমাকে হাসলে ভারি সুন্দর দেখায়। তোমার চেহারার সব সাধারণ্য মিলিয়ে গিয়ে সেই তুমি অনন্য এখন!

সে বলে উঠল, ‘তুমি কি জানো, ইউটোপিয়া ও ডিসটোপিয়া নিয়ে একটা সেমিনার আছে লেখকদের জন্য! টঃড়ঢ়রধ ধহফ ঃযব ঋঁঃঁৎব : উড়বংহ’ঃ ফুংঃড়ঢ়রধহ ষরঃবৎধঃঁৎব ভববষ ধষষ-ঃড়ড়-ৎবধষ ঃড়ফধু? ঐড়ি পধহ ড়হব ‘ৎিরঃব ভড়ৎধিৎফ,’ ঃড়ধিৎফ ধ সড়ৎব ঁঃড়ঢ়রধহ ংঃধহপব?’

জিনত বলল, ‘আমি ওই প্যানেলেই আছি।’

সে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। কাউকে ফোন করছে নিজস্ব ভাষায়। অমলিনী নিজের ফোন দেখল একবার। সে কিছুতে ওয়াইফাই আনতে পারছে না। বিমানবন্দরগুলোয় অন্যদের দেখেছিল নিখরচায় সৌজন্যমূলক পরিষেবা প্রদত্ত ওয়াইফাই ব্যবহার করছে। ইমুতে এ-ব্যবস্থা আছে। সারা বিশ্ববিদ্যালয়েই আছে। এছাড়া এদেশের বড় বড় নগরীতে পথে পথে ওয়াইফাই। এক সংযোগবৃত্ত থেকে অন্য সংযোগ ক্ষেত্রে অজ্ঞাতেই ঢুকে পড়ে মানুষ। সেখানে তার ফোন কোনো কাজ করছে না কেন? সে আলাদা করে আন্তর্জাতিক সংযোগ নেয়নি। খরচ বাঁচিয়েছে। ভেবেছিল হোয়াটসঅ্যাপে কাজ চালিয়ে নেবে। অথচ নেট সংযোগ করতে পারছে না বলে ভারি অস্বস্তি। তার সহকর্মী বন্ধু শতদলকে ফোন করবে। শতদল মাকে খবর দেবে সে ভালো আছে। আর মা সেলফোনের ব্যবহার সামান্যই জানে। কেবল ধরা আর করা। মেসেজ পড়তেও পারে না। মার সেই সাবেকি ছোট্ট মুঠোফোন। নেট সংযোগ নেওয়াই যায় না। সময়মতো খবর না পেলে মা ভাববে। ভালো করে খাবে না। ঘুমোবে না। মাকে আর দুর্ভাবনা দিতে চায় না সে। অমলিনী সন্দীপনকে ছেড়ে আসার পর থেকে মা দুঃখে আছে। আগেও কি ছিল না! ডাক্তার ছেলে। সুদর্শন। সুপাত্র। কালো মেয়ের এমন বর জুটেছিল বলে মা আহ্লাদে আটখানা ছিল।

‘বিয়েটা ভাঙিস না।’ মা বলেছিল, ‘সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা একটা চ্যালেঞ্জ।’

‘আমি তো সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে চাই না!’

‘কী চাস? আর কী চাস?’

‘একটা সুন্দর সম্পর্ক, যা থাকে মা। ভাঙা কুঁড়ের চালার মতো টিকিয়ে রাখতে হয় না। ভাঙা কাচের ফুলদানির মতো ফেভিকলে জুড়তে হয় না।’

‘যদি তেমনটা না হয়?’

‘একলা কাটিয়ে দেবো মা।’

‘শরীর বলে তো একটা ব্যাপার আছে। আর্থিক-সামাজিক নিরাপত্তার প্রশ্ন আছে।’

‘সমাজ কী? সমাজ কে? অর্থ? টাকা-পয়সা? তোমার মেয়ে, লিখে রোজগার করে, কলেজে পড়ায়, আবার কী!’

‘সে যে কতখানি রোজগার, তা কি আমি জানি না? কলেজের পড়ানো তো স্থায়ী চাকরি হলো না। বেতনও কত কম! স্কুলের টিচাররাও এর চেয়ে বেশি পায়।’

‘কটা টাকার জন্য সন্দীপনের গলা ধরে ঝুলে থাকব?’

‘কী কথার কী মানে করছিস?’

‘তাই দাঁড়ায় মা।’

‘সব মিলিয়েই একটা বিয়ে। শরীর, মন, বিষয়-আশয়, সন্তান, নিরাপত্তা।’

‘না মা। সম্মান ও ভালোবাসা কোনো সম্পর্কের মূল ভিত্তি। তারপর শরীর, পয়সাকড়ি, বাচ্চাকাচ্চা।’

‘তোদের আমি বুঝতে পারি না রে।’

‘মা, তুমি অত্যন্ত বুদ্ধিমতী। তুমি সব বুঝতে পারো। মানতে পারো না। কী জানো মা, মন সাড়া না দিলে শরীরও জাগে না। আমার মূল্যবোধগুলো নিয়ে আমাকে থাকতে দাও মা। সেখানেই যদি সমঝোতা করে বসে থাকি, লিখব কী করে?’

সে ভাবছে। আমি তার ভাবনার মধ্যে ঢুকে পড়ছি। আমি, দানিয়েল, চিরতমসাবৃত অথবা চিরলোকের অমৃত জগতে চলে যাওয়ার আগে মৃতের জগৎ থেকে উঠে এসেছি প্রেম দিতে। ভালোবাসা দিতে। কীভাবে ভালোবাসা পেতে হয়? জানি না। এই শুধু জানি, ভালোবাসছি, ভালোবাসছি, ভালোবাসছি আমি।

মায়ের জন্য বড্ডই উতলা এখন সে। শিকাগো এয়ারপোর্টে পনেরো ডলার দিয়ে ইন্টারন্যাশনাল কলকার্ড কিনেছিল। নামি কোম্পানির ছাপ। এটিঅ্যান্ডটি। কিন্তু সে ঠকে গেছে। কতবার চেষ্টা করেছে! ভাবল পালটে নেয়। পনেরো ডলার! অত বড় বিমানবন্দরে খুঁজেই পেল না দোকানটা। গুলিয়ে গেছে। টার্মিনাল ছেড়ে, নির্দিষ্ট গেট ছেড়ে দূরে যেতেও ভয়। পাছে দেরি করে ফেলে!

কলকার্ডখানা ব্যবহার করা যাবে হয়তো, এমন আশা সে এখনো ছাড়েনি। হয়তো তার ভুল হচ্ছে। পরে সে ঠান্ডা মাথায় নির্দেশাবলি পড়ে দেখবে ভাবছে। কার্ড সক্রিয় হলে মায়ের সঙ্গে সরাসরি কথা বলা যাবে। কিন্তু এখন সে কী করে? কীভাবে একটু নেট সংযোগ পায়?

জিনতের কথা শেষ। খাবার নাড়াচাড়া করছে। দুজনেরই অর্ধেক খাবার পড়ে রয়েছে। পশ্চিমের আকাশে লালের ছোপ লাগছে। গা জুড়োন হাওয়া। পথবাতিগুলো জ্বলে উঠেছে এখনই। চওড়া রাস্তা দিয়ে অবিরত গাড়ি ছুটছে। কিন্তু ভিড় নেই। যানজট নেই। কোথাও এতটুকু আবর্জনা নেই। যেদিকে তাকাও, অপূর্ব সুন্দর সব বিল্ডিং, গাছ, ফুল আর মখমলি ঘাসের গালিচা।

জিনত : আমার মেয়ে  –  শি ইজ মিসিং মি। অনলি সিক্স।

মোলি : ছয়! মাত্র! তোমাকে ছেড়ে থাকতে পারবে?

জিনত : বাবার কাছে আছে তো। পারবে না কেন? তোমার কটা বাচ্চা?

মোলি : নেই।

জিনত : বিয়ে করোনি বুঝি?

মোলি : করেছি।

জিনত : তোমার বর তোমাকে তিন মাসের জন্য ছাড়ল?

মোলি : ছাড়ল মানে?

জিনত : আই মিন, হি উইল মিস ইউ।

মোলি : হয়তো। আপাতত আমাকে একটা ফোনের ব্যবস্থা করতে হবে। এখানে একটাও বুথ চোখে পড়েছে তোমার? আমার ফোন কাজ করছে না।

জিনত : আমার ফোন থেকে করো।

মোলি : ধন্যবাদ। প্রচুর খরচ হয়ে যাবে জিনত। তুমি বরং আমাকে একটা ই-মেইল করতে দেবে?

জিনত : কেন নয়? কী ব্যবহার করো? জি-মেইল? বলো।

 

সে জি-মেইল বের করে অমলিনীর সামনে ধরল। এক মুহূর্তের জন্য হকচকিয়ে গেল সে। স্ত্রিনে সমস্ত অক্ষর তার অচেনা। কিবোর্ডেও হিব্রুলিপি। ইংলিশ এত ছোট করে লেখা যে, দেখাই যায় না। সে কষ্ট করে, একটু একটু করে পাসওয়ার্ড লিখল। শতদলের ঠিকানা দিলো। তারপর শুধু লিখল  –  ফোন কাজ করছে না। ভালোভাবে পৌঁছে গেছি। মাকে বলে দিয়ো। ভালো থেকো।

অবশিষ্ট খাবার প্যাক করে ফেরার পথ ধরল দুজনে। কিছুক্ষণ চুপচাপ। দুজনেই দেখতে দেখতে চলল। অপরূপ এই বিশ্ববিদ্যালয়। বিশাল প্রাসাদের মতো হর্ম্যরাজি। এতটুকু জীর্ণতা নেই, মালিন্য নেই। শুধু গড়ে তুললেই হয় না, সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ চাই। এখানকার স্থাপত্য দেখলে বোঝা যায় সমস্ত ভবনই নতুন নয়। পুরনো ও নতুন সহাবস্থান করছে। আমেরিকার মতো দেশে এলে স্বদেশের দৈন্য বড় প্রকট লাগে। মন খারাপ হয়ে যায়। সে ভাবল একবার জিজ্ঞেস করে, জিনত, কেমন তোমার দেশ। তারপরই তার মনে হলো, সে কি ইসরায়েলকে স্বীকার করে? প্রথমে এই বিষয়টি নিজের কাছে স্পষ্ট হওয়া প্রয়োজন। এভাবে সে আগে ভেবে দেখেনি। দুই হাজার বছর আগে দেশটা জিউদের ছিল। কী প্রমাণ? পাঁচ হাজার বছর আগে অযোধ্যা রামের ছিল। পাঁচশো বছর আগে সেখানে রামমন্দির ছিল। কী প্রমাণ? কিছু গপ্পো। পুরাণ। ধর্মীয় উপকথা। আর যদি ছিল, তো কী? মানুষ তো একদা নগ্ন ছিল। গুহাবাসী ছিল। কালের প্রতিশোধ নেওয়ার একটা নির্দিষ্ট সময় থাকা চাই। সেটাই সভ্যতা। সে উপলব্ধি করছে, ধর্ম নয়, ইসরায়েল ও প্যালেস্টাইন আসলে ভূম্যধিকারের লড়াই। ক্ষমতা ও অস্তিত্বের লড়াই! ধর্ম সেই সূক্ষ্ম 888sport appই মসলিন, যা পরলে কিছুই 888sport app যায় না।

জিনত : তুমি তো ঔপন্যাসিক। ছোটগল্প এবং 888sport liveও লেখো।

মোলি : তুমি কী লেখো।

জিনত : একটা 888sport alternative link লিখেছি। বই আছে। ইচ্ছা আছে এখানে আরেকটা শুরু করব।  [চলবে]