‘আকাশ আমায় ডাকে দূরের পানে’

চিত্রা দেব

‘আমি 888sport slot game করতে ভালবাসি, কিন্তু 888sport slot gameের কল্পনা করতে আমার আরও ভালো লাগে’ রবীন্দ্রনাথের দীর্ঘ 888sport slot gameসূচির দিকে তাকালে প্রথমেই মনে পড়ে তাঁর এ-উক্তিটি। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ঘুরেছেন তিনি। এক জায়গায় বেশিদিন স্থির হয়ে থাকেননি, এমনকি এক বাড়িতেও নয়। শান্তিনিকেতনে চল্লিশ বছর কাটিয়েছেন ঠিকই কিন্তু কখনো দেহলিতে, কখনো দ্বারিকে উত্তরায়ণ ছাড়াও কোনার্ক, পুনশ্চ, শ্যামলী, উদীচীতে। জোড়াসাঁকোর বাড়িতেই কি বেশিদিন থেকেছেন? কলকাতা শহরের বিভিন্ন বাড়িতে তিনি বাস করেছেন। এ-কথার অর্থ এই নয়, রবীন্দ্রনাথ বারবার বাসাবদল করেছেন তাঁর দেশ888sport slot gameের শখ মেটাতে। পৃথিবীর সব প্রান্ত থেকে তাঁর নিমন্ত্রণ এসেছে, অস্ট্রেলিয়া ছাড়া সব মহাদেশেই তিনি পদার্পণ করেছেন। যদিও সর্বত্র তাঁর যাওয়া হয়নি। কখনো বার্ধক্যের প্রতিবন্ধকতা, কখনো দুর্গমতা, কখনো সময়ের অভাবে বা অন্য কোনো কারণে, কিন্তু যেতে চেয়েছেন। ভারতের এমন কোনো বড় শহর নেই যেখানে তিনি যাননি। নদীমাতৃক বাংলায় 888sport slot game করেছেন দিনের পর দিন। বলতেন, পাহাড় তাঁর তেমন প্রিয় নয়, তবু তাঁর প্রথম উল্লেখযোগ্য 888sport slot game ‘হিমালয় যাত্রা’, শেষবারের 888sport slot game তালিকায় রয়েছে কালিম্পঙ। এখানে রবীন্দ্রনাথের যাবতীয় 888sport slot gameবৃত্তান্তকে সংকলন করা হচেছ না, কেননা সে-বিবরণ দুর্লভ নয়। বরং রবীন্দ্রনাথের নিজের লেখার সঙ্গে 888sport slot game888sport sign up bonus কীভাবে মিশে আছে, কীভাবে এবং কী ভেবে এসব ছোট-বড় 888sport slot gameকে তিনি গ্রহণ করতেন সেটুকু দেখাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য। অধিকাংশ প্রয়োজনের  888sport slot gameেই আনন্দ নেই, ক্লান্তি আছে। পরিণত বয়সে কবিকে কম আনন্দহীন 888sport slot game করতে হয়নি, বিশ্বভারতীর আদর্শ প্রচারের জন্যে, বিদ্যালয়ের আর্থিক প্রয়োজন মেটাতে দেশে-বিদেশে বিভিন্ন শহরে, বিশ্ববিদ্যালয়ে বহু বক্তৃতা তাঁকে দিতে হয়েছে, যার উল্লেখও এখানে নিষ্প্রয়োজন। কবি লিখেছিলেন, ‘আমার দিনের সকল নিমেষ ভরা অশেষের ধনে’ – কষ্ট হয় যখন দেখি সেই অমূল্য দিনগুলি অপহৃত হচ্ছে। এমনকি তার অনেকটাই হরণ করছে তাঁর যাত্রাপথের বাহনগুলি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তাঁকে 888sport slot game করতে হয়েছে জাহাজে বা ট্রেনে। সেকালে জলপথ এবং রেলপথই ছিল প্রধান সম্বল। বিমানে চেপেছেন মাত্র দুবার। সব রকম গাড়িতেই তিনি চড়েছেন (গরুর গাড়ি, নানারকম ঘোড়ার গাড়ি, পালকি-তাঞ্জাম, ঝাঁপান-ডান্ডি, পুশপুশ, মানুষে টানা দুচাকার গাড়ি (?), নৌকো-বোট-স্টিমার-জাহাজ, রেল, পাতাল রেল, টয়ট্রেন, ইলেকট্রিক ট্রাম, মোটর, ছোট ও বড় বিমান – আরো কিছু রয়ে গেল হয়তো। ছেলেবেলায় হাতি-ঘোড়ার পিঠেও চেপেছেন। গাধার পিঠে চড়ার সুযোগ ছিল সুয়েজ শহরে, চড়েননি, কারণ শুনেছিলেন সেখানকার গাধাদের সঙ্গে চালকের মতের ঐক্য হয় না, তারও ‘স্বাধীন ইচ্ছে’ থাকে এবং ‘দুই ইচ্ছের বিরোধ’ বাধলে ‘গাধার ইচ্ছে পরিণামে জয়ী হয়।’

জীবন888sport sign up bonus পড়ে আমরা জানতে পারি, জোড়াসাঁকোর বাড়ির বাইরে তাঁর প্রথম 888sport slot game পেনেটি বা পানিহাটিতে। আসলে বেড়াতে যাওয়া নয়, শহরে সংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাব হলে গঙ্গার ধারের কোনো বাগানবাড়িতে অভিজাত ব্যক্তিরা সাময়িক আশ্রয় নিতেন। ঠাকুরবাড়ির সদস্যরাও পেনেটি গিয়েছিলেন ডেঙ্গুজ্বরের সংক্রমণ এড়াতে। রবীন্দ্রনাথ প্রথমাবধি সুদূরের পিয়াসী, কেননা ‘বাড়ির বাহিরে আমাদের যাওয়া বারণ ছিল, এমনকি বাড়ির ভিতরেও আমরা সর্বত্র যেখানে খুশি যাওয়া-আসা করিতে পারিতাম না।’ যেখানে বাধা সেখানেই বাধা কাটিয়ে উধাও হয়ে ছুটে যাবার হাতছানি। ‘এই প্রথম বাহিরে গেলাম। গঙ্গার তীরভূমি যেন কোন পূর্বজন্মের পরিচয়ে আমাকে কোলে করিয়া লইল।’ সেখানে প্রতিদিন সকালে দিনটিকে তাঁর নতুন মনে হতো। এই বাগানটিকে তিনি কখনো ভোলেননি। বারবার দেখতে চাইতেন। অনেক জায়গাতেই দুবার যাবার সুযোগ হয় না। পরিণত বয়সে রবীন্দ্রনাথ আর একবার এই বাগানে এসেছিলেন। প্রশান্তকুমার পাল জানিয়েছেন, রবীন্দ্রভবনে রক্ষিত প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশের একটি অপ্রকাশিত রচনা থেকে জানা যায়, ১৯১৯ সালের মে মাসের শেষে কবি এই বাগান দেখার সুযোগ পান। প্রশান্তচন্দ্র লিখেছেন, ‘…মাঝে মাঝে ছেলেবেলার কথা বলেন। পেনেটির বাগানের গল্প। গঙ্গার ধারে সেই বাড়ি, পুকুরঘাট। বললেন, আমাকে সেখানে নিয়ে যেতে পারো? সেখানে গিয়ে কিছুদিন থাকি।’ ব্যবস্থা করা সম্ভব হলো। প্রশান্তচন্দ্র কবিকে নিয়ে গেলেন। পছন্দ হলে থাকার ব্যবস্থা হবে। ‘…কবি একবার চারদিক দেখলেন। গঙ্গার ধারে গিয়ে খানিকক্ষণ দাঁড়ালেন। সেখান থেকে পুকুরের দিকটা গেলেন – এখনো একটা পুরনো গাছ দাঁড়িয়ে আছে। তারপর দোতলায়… নীচে নেমে এসে আরেকবার পুকুরের দিকটা দেখলেন। তারপর আমাকে বললেন, এবার চলো। কিছু নেই। সেই পেনেটির বাগানে আর ফেরা যায় না।’

888sport slot gameের প্রতি রবীন্দ্রনাথের টান ছিল পুরুষানুক্রমিক। তাঁর পিতামহ দ্বারকানাথ ঠাকুরের দেশ888sport slot gameে ঐকান্তিক আগ্রহ ছিল। তাঁরও পিতামহ জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ির প্রতিষ্ঠাতা নীলমণি ঠাকুরকেও 888sport slot game করতে হয়েছে অনেকবার। পায়ে হেঁটে, পালকি চড়ে, নৌকো চেপে। কলকাতা থেকে কটক এবং ওড়িশার প্রত্যন্ত অঞ্চলে, গ্রামবাংলায়। মেদিনীপুর দিয়ে কটক যাবার পথে বন-জঙ্গলে 888sport app বর্গভীমার ধ্বংসপ্রাপ্ত মন্দির পুনরুদ্ধার তাঁর অন্যতম কীর্তি। দ্বারকানাথের 888sport slot game ছিল রাজকীয় আড়ম্বরপূর্ণ। তিনি যেতেন গ্র্যান্ডট্রাঙ্ক রোড ধরে ঘোড়ার গাড়ি চেপে। সঙ্গে থাকত প্রচুর পাইক, বরকন্দাজ, ভৃত্য, খানসামা, হুঁকো বরদার, পাচক, ডাক্তার, কবিরাজ, মালবাহক প্রভৃতি। তাঁর কনিষ্ঠ পৌত্র রবীন্দ্রনাথেরও একবার খেয়াল হয়েছিল এই পথে 888sport slot game করবার ‘আমি গোরুর গাড়িতে করিয়া গ্র্যান্ডট্রাঙ্ক রোড ধরিয়া পেশোয়ার পর্যন্ত যাইব।’

এই অভিনব পরিকল্পনা অন্য কারো সমর্থন না পেলেও কবির পিতা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর অম্লানবদনে বলেছিলেন, ‘এ তো খুব ভালো কথা, রেলগাড়িতে 888sport slot gameকে কি 888sport slot game বলে?’ তিনিও বেড়াতে ভালোবাসতেন, শুনিয়েছিলেন ঘোড়ার গাড়ি কিংবা ঝাঁপানে চেপে নিজের 888sport slot gameবৃত্তান্ত। দ্বারকানাথের দুবার বিদেশযাত্রার কথা সকলেই জানেন। স্বদেশে তিনি হাজার ব্যস্ততার মধ্যে থেকেও চারবার  উত্তর-পশ্চিম ভারত ঘুরে এসেছিলেন। কাশী-গয়া-বৃন্দাবন-মথুরা-প্রয়াগ-আগ্রা-দিল্লি কিছুই বাদ যায়নি। সেকালে এসব পথ ছিল বিপদসঙ্কুল, দুর্গম, সময়সাপেক্ষ। জলপথেও যেতেন স্টিমারে। তাঁর কোনো কোনো 888sport slot gameের সঙ্গে জড়িয়ে থাকত ব্যবসায়িক প্রয়োজন, যেমন কয়লাখনি কেনার আগে তিনি খুঁটিয়ে দেখেছিলেন রানিগঞ্জ।

দ্বারকানাথের জ্যেষ্ঠপুত্র দেবেন্দ্রনাথ রেলপথ বসার আগেই গিয়েছিলেন পাঞ্জাবে, দুর্গম হিমালয়ে, পদব্রজে, ঝাঁপানে চেপে। পিতা-পুত্রের মানসিক মানচিত্রের মতো উভয়ের 888sport slot gameচিত্রও ছিল স্বতন্ত্র। দেবেন্দ্রনাথের 888sport slot game যেন আধ্যাত্মিক অনুসন্ধানের তীর্থ888sport slot game। অপরদিকে রবীন্দ্রনাথের কাছে 888sport slot game ছিল সাধনা। তিনি বলেছেন, ‘পথের প্রান্তে আমার তীর্থ নয়, পথের দুধারে আছে মোর দেবালয়।’ 888sport slot gameের মূল প্রেরণা রক্তের উত্তরাধিকারে কবির মনে শুধু সংক্রমিত হয়নি, ছড়িয়ে পড়েছিল আরো অনেক গভীরে।

উপনয়নের পরে ন্যাড়া মাথায় কী করে স্কুলে যাবেন এই দুশ্চিন্তায় কবি যখন বিব্রত, সে-সময় তাঁর পিতা জিজ্ঞেস করেন, তিনি তাঁর সঙ্গে হিমালয়ে যেতে চান কি না। ‘চাই এই কথাটি যদি চীৎকার করিয়া আকাশ ফাটাইয়া বলিতে পারিতাম, তবে মনের ভাবের উপযুক্ত উত্তর হইত।’ এগারো বছরের বালক তখন থেকেই রেলযাত্রা সম্বন্ধে নানা সত্য-মিথ্যা গল্প সংগ্রহ করে নিজের কল্পনাশক্তিকে উজ্জীবিত করলেন। সেই প্রথম রেলে চড়া ‘গাড়ি ছুটিয়া চলিল, তরুশ্রেণীর সবুজনীল পাড় দেওয়া বিস্তীর্ণ মাঠ এবং ছায়াচ্ছন্ন গ্রামগুলি রেলগাড়ির দুইধারে দুই ছবির ঝরনার মতো বেগে ছুটিতে লাগিল, যেন মরীচিকার বন্যা বহিয়া চলিয়াছে।’ বালকের এই  রেলযাত্রার সঙ্গে তুলনা চলে তাঁর প্রৌঢ় পিতামহের রেলরাস্তা দেখার আগ্রহের। ইতালি থেকে দ্বারকানাথ লিখেছিলেন, ‘এখানে আমি একটা রেলরাস্তাও দেখেছি – আমার ঘোড়াগাড়ির পাশ দিয়ে রেলগাড়িটা যখন হুশ করে বেরিয়ে  গেল, ভেবে দেখো আমার মনে তখন কী অবস্থা।’

রবীন্দ্রনাথ পিতার সঙ্গে প্রথমে এলেন বোলপুরে। ছেলেমানুষ হওয়া সত্ত্বেও দেবেন্দ্রনাথ কখনো রবীন্দ্রনাথকে স্বাধীনভাবে ঘুরে বেড়াতে নিষেধ করেননি। কবিও অবাধ স্বাধীনতা পেয়ে মনের আনন্দে ঘুরে বেড়িয়েছেন তাঁর ভবিষ্যৎ কর্মক্ষেত্রে। ‘প্রান্তরলক্ষ্মী দিকচক্রবালে একটি মাত্র নীল রেখার গন্ডি অাঁকিয়া রাখিয়াছিলেন, তাহাতে  আমার অবাধ সঞ্চরণের কোনো ব্যাঘাত করিত না।’ এরপর সাহেবগঞ্জ, দাশপুর, এলাহাবাদ, কানপুর প্রভৃতি স্থানে বিশ্রাম নিতে নিতে তাঁরা পৌঁছলেন ডালহৌসি। বালকের সময় যেন কাটছিল না ‘হিমালয়ের আহবান আমাকে অস্থির করিয়া তুলিতেছিল।’ প্রথম হিমালয়যাত্রায় তাঁর ভয় ছিল ‘পাছে কিছু একটা এড়াইয়া যায়।’ যায়নি। বালক পুত্রকে পিতা কোনো বাধা দেননি ‘এক একদিন দুপুর বেলায় লাঠি হাতে একলা এক পাহাড় হইতে আর এক পাহাড়ে চলিয়া যাইতাম।’

কবি প্রথমবার শিলাইদহে যান ১৮৭৫ সালে, পিতার সঙ্গে। পরের বছর আবার। এবার তাঁর নতুন দাদা জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে। তিনি সম্ভবত ভেবেছিলেন, ‘ঘর থেকে এই বাইরে চলাচল এ একটা চল্তি ক্লাসের মতো।’ তাঁর ভাবনায় কোনো ভুল ছিল না, বিশেষ করে তাঁর ছোট ভাইটির ছিল ‘আকাশে বাতাসে চরে বেড়ানো মন – সেখান থেকে আমি খোরাক পাই আপনা হতেই’। জমিদারি পরিদর্শনের জন্যে শিলাইদহে পাকাপাকিভাবে আসার আগে তার সৌন্দর্য কবির চোখে ধরা পড়েনি।

 

দুই

রবীন্দ্রনাথের বয়স যখন সতেরো, তাঁর মেজোদাদা সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রস্তাব করলেন, ছোট ভাইকে তিনি বিলেতে নিয়ে যাবেন, রবি ব্যারিস্টার হয়ে আসবেন। সত্যেন্দ্রনাথ প্রথম ভারতীয় আইসিএস অফিসার, কর্মস্থল পশ্চিম ভারত। দেবেন্দ্রনাথ আপত্তি করলেন না। ‘ভাগ্যবিধাতার এই আর একটি অযাচিত বদান্যতায়’ কবি বিস্মিত হলেন। বিদেশ যাবার আগে সত্যেন্দ্রনাথের সঙ্গে তাঁর কর্মস্থল আমেদাবাদে গেলেন বিলিতিয়ানায় অভ্যস্ত হতে।

সত্যেন্দ্রনাথের সরকারি বাসস্থান ছিল শাহীবাগের বাদশাহী প্রাসাদ। ‘আমেদাবাদে এসে এই প্রথম দেখলুম চলতি ইতিহাস থেমে গিয়েছে, … তার সাবেক দিনগুলো যেন যক্ষের ধনের মতো মাটির নীচে পোঁতা।’ উপযুক্ত আধার পেয়ে শাহীবাগ নিজের রহস্য উজাড় করে দিলো কবির কাছে। আমেদাবাদের 888sport slot gameবৃত্তান্ত কবি কোথাও লিখলেন না কিন্তু অনেকদিন পরে লেখা ক্ষুধিত পাষাণ, শাহীবাগ 888sport slot gameের 888sport sign up bonus নিয়ে জীবন্ত। এমন ঘটনা আরো আছে। রবীন্দ্রনাথের আগ্রাযাত্রার 888sport slot gameকাহিনি কোথাও নেই। আগ্রায় যখন গিয়েছিলেন তাজমহল নিশ্চয় দেখেছিলেন। সেখান থেকে একটা চিঠিও তো লেখেননি। একেবারেই কি লেখেননি? এলাহাবাদে এসে 888sport sign up bonusমন্থন করে লিখেছিলেন অবি888sport app download for androidীয় দুটি 888sport app download apk  ‘শাজাহান’ ও ‘তাজমহল’। সেজন্য মনে হয় কবির 888sport slot game-বিবরণ পাওয়া বেশ কঠিন।

আমেদাবাদ থেকে বম্বে (মুম্বাই) তারপর জাহাজে চড়ে বিলেত যাওয়া। রবীন্দ্রনাথের এই প্রথম সমুদ্রযাত্রা। কবিকে সমুদ্রপীড়া কাবু করেছিল বলে ভালো লাগেনি, লিখেছেন ‘কলকাতায় সমুদ্রকে যা মনে করতেম, সমুদ্রে এসে দেখি তার সঙ্গে অনেক বিষয় মেলে না। তীর থেকে সমুদ্রকে খুব মহান বলে মনে হয়, কিন্তু সমুদ্রের মধ্যে এলে আর ততটা হয় না।’ সমুদ্রযাত্রার প্রথম অভিজ্ঞতাও তিন পুরুষে তিন রকম। দ্বারকানাথ লিখেছেন, ‘তীরের দিকে তাকিয়ে দেখতে পাচ্ছি সমুদ্রের কিনারা ধরে চলেছে সারি সারি নারকেল গাছ, নারকেল শ্রেণীর ওদিকে উঁচু-নীচু নানা আকারের পাহাড় পর্বত ও তরুশ্রেণী শোভিত উপত্যকা। আমি এতাবৎকাল ধরে এমন সুন্দর দৃশ্য দেখিনি।’ দেবেন্দ্রনাথের প্রথম সমুদ্রযাত্রা কিছুটা আকস্মিকভাবে হয়েছিল, ‘সমুদ্রের নীল জল ইহার পূর্বে আর আমি কখনো দেখি নাই। তরঙ্গায়িত অনন্ত নীলোজ্জ্বল সমুদ্রে দিবারাত্রির বিচিত্র শোভা দেখিয়া অনন্ত পুরুষের মহিমায় নিমগ্ন হইলাম।’ তাঁর কন্যা সুলেখিকা স্বর্ণকুমারী দেবী লিখেছিলেন, ‘যত দূর দৃষ্টি যায় কেবল অতল অকূল সুনীল বিশাল জলস্রোত। অথচ ইহাতে সে অকূল দুস্তর ভয়াবহ ভাব নাই, সমুদ্রের সঙ্গে সঙ্গে আজন্মকাল যে অসীমতা কল্পনা করিয়াছি তাহাও নাই।’ দুই ভাইবোনের 888sport slot gameবৃত্তান্তে দেখা যাচ্ছে সমুদ্র সম্বন্ধে তাঁদের ধারণার সঙ্গে বাস্তবের দূরত্ব রয়েছে। পরে বহুবার সমুদ্রযাত্রার ফলে রবীন্দ্রনাথের চোখে সমুদ্রের রূপ ধরা পড়েছিল।

বিদেশযাত্রার সঙ্গে সঙ্গে এই প্রথম রবীন্দ্রনাথের 888sport slot gameবৃত্তান্ত রচনা চিঠির আকারে। য়ুরোপ প্রবাসীর পত্র ছাড়াও তাঁর অধিকাংশ 888sport slot gameকথা লেখা হয়েছে চিঠি বা ডায়েরি হিসেবে। তাঁর পিতামহ দ্বারকানাথের যে স্বল্প কয়েকটি 888sport slot gameবৃত্তান্ত সে-যুগের সংবাদপত্রে ছাপা হয়েছিল, সেগুলিও লেখা হয় চিঠি বা ডায়েরিতে। প্রৌঢ়, বাস্তববাদী ও সফল ব্যবসায়ী দ্বারকানাথ আধুনিক ইউরোপকে দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন, অপরদিকে তাঁর কিশোর পৌত্রের কল্পনায় ইউরোপ ছিল অন্যরকম। ‘এই তো প্রথম য়ুরোপের মাটিতে আমার পা পড়ল। কোনো নতুন দেশে আসবার আগে আমি তাকে এমন নতুনতর মনে করে রাখি যে, এসে আর তা নতুন বলে মনেই হয় না।’ লন্ডনের রেল-চলাচল মুগ্ধ করেছিল দ্বারকানাথকে, ‘আমি বার্মিংহাম ও লন্ডনের রেল চলাচল ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণে গিয়েছিলাম। ইংল্যান্ডের অত্যাশ্চর্য সব ব্যাপারের মধ্যে রেল চলাচল অন্যতম। এর  ফলে যেসব স্থান সুদূর বলে পরিগণিত হত সেগুলি হাতের নাগালের মধ্যে সন্নিকট হয়েছে, নবাগত কোন ব্যক্তি যিনি এমন বিরাট ব্যাপার ইতিপূর্বে চোখেই দেখেননি তাঁর কাছে এটি খুবই লক্ষণীয় মনে হবে।’ এই রেল চলাচল দেখে তাঁর পৌত্র দ্বিতীয় পত্রেই লিখেছেন, ‘সমস্ত লন্ডনময় রেলোয়ে। প্রতি পাঁচ মিনিট অন্তর এক একটা ট্রেন যাচ্ছে, লন্ডন থেকে ব্রাইটনে আসবার সময় দেখি প্রতি মুহূর্তে উপর দিয়ে একটা, নীচে দিয়ে একটা, পাশ দিয়ে একটা, এমন চারদিক থেকে হুসহাস করে ট্রেন ছুটেছে।… দেশ তো এই একরত্তি, দু-পা চললেই ভয় হয় পাছে সমুদ্রে গিয়ে পড়ি, এখানে এত ট্রেন যে কেন ভেবে পাইনে।’ এই বয়সেই যন্ত্রসভ্যতার প্রতি তাঁর অনীহা চোখে পড়ে। দ্বিতীয়বার লন্ডনে এসে তিনি বার্মিংহামেও গিয়েছিলেন, সেবারে তাঁর মনোভাব আরো স্পষ্ট, ‘শহর দেখতে আমার আদবে ভালো লাগে না। ইলেকট্রিক ট্রাম-এ চড়া গেল। ইলেকট্রিক ট্রাম-এর কলকারখানার মধ্যে নিয়ে গেল। নির্বোধের মতো ঘুরে ঘুরে বেড়িয়ে হাঁ করে দেখতে লাগলুম।’ বরং প্রথম দর্শনে কবি মুগ্ধ হয়েছিলেন প্যারিস দেখে ‘কী জমকালো শহর। অভ্রভেদী প্রাসাদের অরণ্যে অভিভূত হয়ে যেতে হয়’। সেখান থেকে লন্ডন ‘এমন বিষণ্ণ অন্ধকারপুরী আর কখনো দেখিনি – ধোঁয়া, মেঘ, বৃষ্টি, কুয়াশা, কাদা আর লোকজনের ব্যস্তসমস্ত ভাব।’

প্রায় দেড় বছর পরে রবীন্দ্রনাথ ফিরে আসেন। অসময়ে বিলেত থেকে ফিরে আসায় পরিচিতজনেরা কিছু কিছু বিরূপ মন্তব্য করলে কবি স্থির করলেন আবার বিলেত যাবেন। দেবেন্দ্রনাথ আপত্তি করেননি। কিন্তু মাদ্রাজে গিয়েও ফিরে আসতে হলো রবীন্দ্রনাথকে। ফিরে এলেন তবে জোড়াসাঁকোর বাড়িতে বসে থাকলেন না, জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ও কাদম্বরী দেবীর সঙ্গে বেড়াতে গেলেন চন্দননগরে। বাসাবদলের বাসনা জ্যোতিরিন্দ্রনাথেরও ছিল, সেজন্যে তাঁরা কখনো থেকেছেন তেলেনিপাড়ার বাঁড়ুজ্যেদের বাগানে, কখনো মোরান সাহেবের বাগানবাড়িতে। দ্বিতীয় বাড়িটা রবীন্দ্রনাথের খুব পছন্দ হলো। বাড়ির ওপরতলায় চারদিক খোলা একটা গোলঘর ছিল। সেখানে বসে তিনি লিখলেন, ‘এইখানে বাঁধিয়াছি ঘর/ তোর তরে 888sport app download apk আমার।’ আবার তাঁদের সঙ্গে এসে উঠলেন চৌরঙ্গীর ১০নং সদর স্ট্রিটের বাড়িতে। সেখানে একদিন সকালে কবি দেখলেন,… গাছগুলির পল্লবান্তরাল হইতে সূর্যোদয় হইতেছিল। চাহিয়া থাকিতে থাকিতে হঠাৎ এক মুহূর্তের মধ্যে আমার চোখের উপর হইতে যেন একটা পর্দা সরিয়া গেল। দেখিলাম এক অপরূপ মহিমায় বিশ্বসংসার সমাচ্ছন্ন আনন্দে এবং সৌন্দর্যে সর্বত্রই তরঙ্গিত।’ লিখলেন, ‘নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ’।

‘এমন সময়ে জ্যোতিদাদারা স্থির করিলেন তাঁহারা দার্জিলিঙে যাইবেন।’ কবি অনেক আশা নিয়ে দার্জিলিংয়ে গেলেন এবং ‘আমি দেবদারুবনে ঘুরিলাম, ঝরনার ধারে বসিলাম, তাহার জলে স্নান করিলাম, কাঞ্চনশৃঙ্গার মেঘমুক্ত মহিমার দিকে তাকাইয়া রহিলাম’ কিন্তু যা তিনি পেয়েছিলেন সদর স্ট্রিটের বাড়িতে, সেই আনন্দ হিমালয়ে গিয়ে খুঁজে পেলেন না। বরং সত্যেন্দ্রনাথের কর্মস্থল কারোয়ারে বেড়াতে গিয়ে সেখানকার প্রাকৃতিক শোভা দেখে মোহিত হয়েছিলেন, ‘এই ক্ষুদ্র শৈলমালাবেষ্টিত সমুদ্রবন্দরটি এমন নিভৃত, এমন প্রচ্ছন্ন যে, নগর এখানে নাগরীমূর্তি প্রকাশ করিতে পারে নাই। অর্ধচন্দ্রাকার বেলাভূমি অকূল নীলাম্বুরাশির অভিমুখে দুই বাহু প্রসারিত করিয়া দিয়াছে – সে যেন অনন্তকে আলিঙ্গন করিয়া ধরিবার একটি মূর্তিমতী ব্যাকুলতা।’ রবীন্দ্রনাথ ১৮৮৫ সালে ভ্রাতুষ্পুত্রী ইন্দিরার আগ্রহে তাঁদের দুই ভাইবোনকে নিয়ে হাজারিবাগ বেড়িয়ে এসে লিখেছিলেন ‘দশ দিনের ছুটি’। প্রশান্তকুমার পাল এই লেখাটির একটি প্রাথমিক খসড়ার উল্লেখ করেছেন, ‘রবীন্দ্রভবন সংগ্রহভুক্ত ছোটো একটি নোটবুকে এই রচনাটির পেনসিলে লেখা প্রাথমিক খসড়া পাওয়া যায় – ‘৮ দিনে বেশি কি হবে। একবার প্রকৃতির মধ্যে উঁকি মারা, পৃথিবীটা যে ইট সুরকীতে গড়া নয় তার প্রমাণ পাওয়া।’ এই সামান্য স্কেচ থেকে রবীন্দ্রনাথ ফিরে এসে লিখেছিলেন, ‘অদূরে দুইটি পাহাড় দেখা যাইতেছে তাহার মধ্য দিয়া উঠিয়া নামিয়া পথ গিয়াছে। যেখানেই চাহি চারিদিকে লোক নাই, লোকালয় নাই, শস্য নাই, চষা মাঠ নাই; চারিদিকে উঁচু নিচু পৃথিবী নিস্তব্ধ নিঃশব্দ কঠিন সমুদ্রের মতো ধূধূ করিতেছে। দিক দিগন্তরের উপরে গোধূলিরা চিকচিকে সোনালি অাঁধারের ছায়া আসিয়া পড়িয়াছে।’ এখানে তাঁরা মানুষে-ঠেলা পুশপুশে চেপেছিলেন। কবি বর্ণনা দিয়েছেন, ‘আর রেলগাড়ি নাই। এখন হইতে ডাকগাড়িতে যাইতে হইবে। ডাকগাড়ি মানুষে টানিয়া লইয়া যায়। একে কি আর গাড়ি বলে? চারটে চাকার উপর একটা ছোট খাঁচা মাত্র। সেই খাঁচার মধ্যে আমরা চারজন চারটি পক্ষীশাবকের মতো কিচির মিচির করিতে করিতে প্রভাতে যাত্রা করিলাম।’ ফেরার সময় ‘সময় সংক্ষেপ করিবার উদ্দেশ্যে দুই চাকার ছোটো গাড়িতে করিয়া আসিয়াছিলাম। আর কিছু না হউক তাহাতে পরমায়ু সংক্ষেপ হইয়াছে।… যে পঞ্চভূতে শরীরটা নির্মিত সেই পাঁচ ভূতে ভূতের নাচন নাচিয়াছে।’

 

তিন

রবীন্দ্রনাথ নানা শহরে নানা প্রয়োজনে যাওয়া-আসা করেছেন। বহু আত্মীয় পরিবৃত হয়ে জোড়াসাঁকোর বাড়িতে থাকতে তাঁর ভালো লাগত না। গতানুগতিকতা ও বনেদি বাড়ির দমচাপা পরিবেশ হয়তো অনেককেই ক্লান্ত করত। দেবেন্দ্রনাথ নিজেও এখানে থাকতেন না। সত্যেন্দ্রনাথ সপরিবারে থাকতেন দূরে। জ্যোতিরিন্দ্রনাথও কাদম্বরী দেবীর মৃত্যুর পর জোড়াসাঁকো ছেড়ে অন্যত্র চলে যান। তাঁদের তিনতলার ঘরটি পেয়েছিলেন কবি, কিন্তু তিনি ভালোবাসতেন খোলামেলা আবহাওয়া, বিদগ্ধ ব্যক্তিদের সঙ্গ। দেবেন্দ্রনাথের অসুস্থতার সময়ে রবীন্দ্রনাথকে কয়েকবার চুঁচুড়া যেতে হয়েছিল। পশ্চিম ভারতে বান্দোরা ও নাসিকেও গিয়েছিলেন। এসব 888sport slot gameের গল্প নেই। মধ্যে মাসখানেক ছিলেন সোলাপুরে। পরিচয় গাঢ় হয়েছিল বালিকাবধূর সঙ্গে। বছর কয়েক পরে সোলাপুর বাসের সুখ888sport sign up bonusর কথা লিখেছিলেন তাঁদের পারিবারিক 888sport sign up bonusলিপি পুস্তকে। ‘বছর তিন-চারের পূর্বে একটি শরৎকাল আমি অন্তরের সহিত উপভোগ করিয়াছিলাম। বাড়ির প্রান্তে একটি ছোট্ট ঘরে একটি ছোট্ট ডেস্কের সম্মুখে বাস করিতাম। আরো দুএকটি ছোট আনন্দ আমার আশেপাশে আনাগোনা করিত। সে বৎসর যেন আমার সমস্ত জীবন ছুটি লইয়াছিল। আমি সেই ঘরটুকুর মধ্যে থাকিয়াই জগতে 888sport slot game করিতাম এবং বহির্জগতের মধ্যে থাকিয়াও ঘরের ভিতরটুকুর মধ্যে যে স্নেহ প্রেমের বিন্দুটুকু ছিল তাহা একান্ত আগ্রহের সহিত উপভোগ করিতাম।’ কলকাতায় এসে নতুন সংসার পাতবার সময় কবির পছন্দ ছিল সত্যেন্দ্র-পরিবারের সঙ্গ। ইন্দিরা লিখেছেন, ‘আমরা কলিকাতার দক্ষিণ অঞ্চলে ভিন্ন ভিন্ন বাড়িতে থাকাকালীন এবং যাওয়াকালীন পর্যন্ত রবিকাকা বিয়ের পরেও সমভাবে সপরিবারে যাতায়াত করেছেন।’ ৪৯নং পার্ক স্ট্রিটের বাড়িতে রবীন্দ্রনাথ সপরিবারে কিছুদিন ছিলেন। তাঁকে সপরিবারে আবার দার্জিলিং যেতে দেখা গেল। তবে এবার তাঁর ভূমিকা অন্যরকম, তিনি যাত্রীদলের অভিভাবক। তাই ‘সারা ঘাটে স্টিমারে ওঠবার সময় মহা হাঙ্গাম। রাত্রি দশটা – জিনিসপত্র সহস্র, কুলি গোটাকতক, মেয়ে মানুষ পাঁচটা এবং পুরুষ মানুষ একটি মাত্র।’ এরপরে দার্জিলিংয়ে পৌঁছানোর সরস বর্ণনা, ‘ক্রমে ঠান্ডা, তারপরে মেঘ, তারপরে নদিদির সর্দি, বড়দিদির হাঁচি, তারপরে শাল-কম্বল-বালাপোষ, মোটা মোজা, পা কন্কন্, হাত ঠান্ডা, মুখ নীল, গলা ভারভার এবং ঠিক তার পরেই দার্জিলিঙ।’ যেটুকু রবীন্দ্রনাথ তাঁর 888sport slot gameবৃত্তান্ত থেকে বাদ দিয়েছিলেন সংগত কারণে, সেটুকু লিখে দিয়েছেন স্বর্ণকুমারী দেবী, ‘আমরা যদিও এই নূতন দার্জিলিঙে আসিয়াছি, কিন্তু আমাদের অভিভাবকটি… আগে আরেকবার আসিয়াছিলেন।… তিনি যত বাড়ি ঘর দেখিতেছেন ততই প্রফুল্ল হইয়া উঠিতেছেন; তাঁহার পূর্ব888sport sign up bonus ততই নূতন হইয়া উঠিতেছে, গতবারে যে বাড়িতে ছিলেন তাহার কাছে যে ঝরনাটি ছিল সেটি পর্যন্ত তিনি আমাদের দেখাইলেন, সবই মিলিয়া গেল, এখন কেবল গাড়ি থামিলে হয় – দার্জিলিঙে নামা মাত্র বাকী। গাড়িও থামিল, তিনি চারিদিকে চাহিয়া দেখিলেন আমাদের কেহ লইতে আসিয়াছে কি না।… আমাদের ভাবগতিক দেখিয়া একজন কুলি বলিল – গুম গুম (ঘুম) স্টিসন উতরেগা?’ পরে রবীন্দ্রনাথ আরো কয়েকবার দার্জিলিংয়ে গিয়েছেন। একবার ত্রিপুরারাজের অনুরোধে সেখান থেকে কার্শিয়াং। শেষ বয়সে কয়েকবার মংপু ও কালিম্পঙ। তবে দার্জিলিংয়ে বেড়াবার প্রসঙ্গ বিশেষ না থাকলেও ছিন্নপত্রে কয়েকটি 888sport app download for androidযোগ্য ক্ষণখন্ডের যে উল্লেখ আছে তাতে ‘দার্জিলিঙে সিঞ্চল শিখরের একটি সূর্যাস্ত ও চন্দ্রোদয়’ স্থান করে নিয়েছে। বেড়াতে গিয়ে কবি কী দেখলেন এবং কখন তা তাঁর 888sport sign up bonusর মণিকোঠায় অক্ষয় হয়ে রইল তা খুঁজে পাওয়া কঠিন। তার পাশে হয়তো হারিয়ে গেল আস্ত দার্জিলিং।

রবীন্দ্রনাথ কিছুদিন বাস করেন গাজিপুরে, স্ত্রী-কন্যাকে নিয়ে। এত জায়গা থাকতে গাজিপুরে কেন, সে-প্রশ্নের উত্তরে লিখেছেন, ‘শুনেছিলুম গাজিপুরে আছে গোলাপের ক্ষেত, … তারি মোহ আমাকে প্রবলভাবে টেনেছিল।’  এখানে এসে তিনি বন্ধু হিসেবে পেলেন কবি দেবেন্দ্রনাথ সেনকে। অনেক 888sport app download apk লেখা হলো। দুই কবিবন্ধু নতুন 888sport app download apkগুলি পরস্পরকে শুনিয়ে আনন্দ পেতেন। কবির মনোগত আরো একটি বাসনা ছিল, ‘অনেক দিন ইচ্ছা করেছি এই পশ্চিম ভারতের কোনো এক জায়গায় আশ্রয় নিয়ে ভারতবর্ষের বিরাট বিক্ষুব্ধ অতীত যুগের স্পর্শ লাভ করব মনের মধ্যে।’ আবার খগেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় লিখেছেন, ‘… পশ্চিম অঞ্চলের কোনও স্থানে নিজের আদর্শের অনুরূপ একটি কবিকুঞ্জ নির্মাণ করিয়া তিনি নিভৃতে দিন যাপন করিবেন এই অভিপ্রায়ে কিছুদিন ছিলেন এবং সেখানে একটি বাটি ক্রয় করেন।’ যে কারণেই হোক, গাজিপুরে কবি একটি বাড়িও কিনেছিলেন। অনেক জায়গায় বেড়াতে গিয়ে কবির সেখানে থেকে যাবার ইচ্ছে বহুবার দেখা গিয়েছে। গাজিপুর থেকে তাঁকে শিলাইদহে যেতে হলো দেবেন্দ্রনাথের আদেশে জমিদারি পরিদর্শনে। এবার কাজের সঙ্গে মিশে গেল 888sport slot game। উত্তরাধিকারসূত্রে উঠলেন পিতামহের ‘পদ্মা’ বোটে। নামকরণ করেন পৌত্র। এই বিশাল বোটটি কবির অত্যন্ত প্রিয় ছিল। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে তাঁর অজস্র 888sport slot game888sport sign up bonus। ‘শিলাইদহের অপর পারে একটা চরের সামনে আমাদের বোট লাগানো আছে। প্রকান্ড চর – ধূধূ  করছে – কোথাও শেষ দেখা যায় না – কেবল মাঝে মাঝে এক এক জায়গায় নদীর রেখা দেখা যায় – আবার অনেক সময় বালিকে নদী বলে ভ্রম হয় – গ্রাম নেই, লোক নেই, তরু নেই, তৃণ নেই, বৈচিত্র্যের মধ্যে জায়গায় জায়গায় ফাটল ধরা ভিজে কালো মাটি, জায়গায় জায়গায় শুকনো সাদা বালি – পূর্ব দিকে মুখ ফিরিয়ে চেয়ে দেখলে দেখা যায় উপরে অনন্ত নীলিমা আর নীচে অনন্ত পান্ডুরতা, আকাশ শূন্য এবং ধরণীও শূন্য, নীচে দরিদ্র কঠিন শূন্যতা আর উপরে অশরীরী উদার শূন্যতা।… হঠাৎ পশ্চিমে মুখ ফেরাবামাত্র দেখা যায় স্রোতোহীন ছোটো নদীর কোল, ওপারে উঁচু পাড়, গাছপালা, কুটীর, সন্ধ্যাসূর্যালোকে আশ্চর্য স্বপ্নের মতো। ঠিক যেন এক পারে সৃষ্টি এবং আর এক পারে প্রলয়। সন্ধ্যাসূর্যালোক বলবার তাৎপর্য এই – সন্ধ্যার সময়েই আমরা বেড়াতে বেরোই এবং সেই ছবিটাই মনে অঙ্কিত হয়ে আছে। পৃথিবী যে বাস্তবিক কী আশ্চর্য সুন্দরী তা কলকাতায় থাকলে ভুলে যেতে হয়। এই যে ছোটো নদীর ধারে শান্তিময় গাছপালার মধ্যে সূর্য প্রতিদিন অস্ত যাচ্ছে, এবং এই অনন্ত ধূসর নির্জন নিঃশব্দ চরের উপরে প্রতি রাত্রে শত সহস্র নক্ষত্রের নিঃশব্দ অভ্যুদয় হচ্ছে, জগৎ-সংসারে এ যে কী একটা আশ্চর্য মহৎ ঘটনা তা এখানে থাকলে তবে বোঝা যায়।’ প্রকৃতির এই রূপের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের পরিচয় হলো শিলাইদহে এসেই। দেখলেন মাটির কাছাকাছি যারা বাস করে সেই অতি সাধারণ মানুষকে।

বছর দুই পরে রবীন্দ্রনাথ দ্বিতীয়বার ইউরোপে যান ১৮৯০ সালে। প্রথম বিদেশযাত্রার এক যুগ পরে। বন্ধু লোকেন্দ্রনাথ পালিত ও সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর বিলেত যাচ্ছিলেন, কবিও তাঁদের সঙ্গী হলেন। রবীন্দ্রনাথের আরেকবার বিলেত যাবার ইচ্ছে ছিল ‘য়ুরোপীয় সভ্যতার ঠিক মাঝখানটাতে ঝাঁপ দিয়ে পড়ে একবার তার আঘাত আবর্ত এবং উন্মাদনা, তার উত্তাল তরঙ্গের নৃত্য এবং কলগীতি, অট্টহাস্য করতালি এবং ফেনোচ্ছ্বাস, তার বিদ্যুৎবেগ, অনিদ্র উদ্যম এবং প্রবল প্রবাহ সমস্ত, শিরা স্নায়ু ধমনীর মধ্যে অনুভব করে আসব।’ এবারে তিনি সমগ্র যাত্রাপথের একটি ডায়েরি রেখেছিলেন, তার ফলে প্রাত্যহিক 888sport slot gameবৃত্তান্ত পাওয়া যায়। যেমন লিখছেন, ‘৩ সেপ্টেম্বর। বেলা দশটার সময় সুয়েজ খালের প্রবেশমুখে এসে জাহাজ থামল। চারিদিকে চমৎকার রঙের খেলা। পাহাড়ের উপর রৌদ্র, ছায়া এবং নীলিম বাষ্প। ঘন নীল সমুদ্রের প্রান্তে বালুকাতীরের রৌদ্রদুঃসহ পীত রেখা।’ … ৬ সেপ্টেম্বর। … ‘আয়োনিয়ান’ দ্বীপ দেখা দিয়েছে। পাহাড়ের কোলের মধ্যে সমুদ্রের ঠিক ধারেই মনুষ্যরচিত ঘনসন্নিবিষ্ট একটি শ্বেত মৌচাকের মতো দেখা যাচ্ছে। এইটি জান্তি শহর। দূর থেকে মনে হচ্ছে যেন পর্বতটা তার প্রকান্ড করপুটে কতকগুলো শ্বেতপুষ্প নিয়ে সমুদ্রকে অঞ্জলি দেবার উপক্রম করছে।’ 888sport slot game শুধু প্রকৃতিকে দেখা নয়, পারিপার্শ্বিকও তার মধ্যে পড়ে। প্রথমবারে কবি সুয়েজ খাল দেখেননি, এবার দেখলেন এশিয়া ও আফ্রিকার বন্ধন ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। তাঁর মনে হলো, ‘এমনি করে সভ্যতা সর্বত্রই জলে স্থলে দেশে গৃহবিচ্ছেদ ঘটিয়ে দিয়ে আপনার পথটি করে নেবার চেষ্টা করছে।’ রেলপথে পাড়ি দিতে দিতে ইউরোপের শস্যক্ষেত্র-শাকসবজি বাগান দেখে কবি মুগ্ধ হয়েছেন। ‘এই কঠিন পর্বতের মধ্যে মানুষ বহুদিন থেকে বহুযত্নে প্রকৃতিকে বশ করে তার উচ্ছৃংখলতা হরণ করেছে।’ তুলনায় মনে পড়েছে তাঁর স্বদেশকে ‘আমরা ইহলোকের প্রতি ঔদাস্য করে এখানে কেবল অনিচ্ছুক পথিকের মতো যেখানে-সেখানে পড়ে থাকি এবং যত শীঘ্র পারি দ্রুত বেগে বিশ-পঁচিশটা বৎসর ডিঙিয়ে একেবারে পরলোকে গিয়ে উপস্থিত হই।’ প্যারিসে ‘বিস্তর মূল্য দিয়ে ঈফেল স্তম্ভ দেখতে গেলেম।’ চারতলার ওপর থেকে ‘সমস্ত প্যারিসটাকে খুব একটা বড়ো ম্যাপের মতো প্রসারিত দেখতে পেলুম।’ লন্ডনে পৌঁছে কবি চেষ্টা করেছিলেন পূর্বপরিচিতদের সঙ্গে দেখা করতে, দেখা  হয়নি। এবারে তিনি বেশ কয়েকটি অপেরা, নাটক ও চিত্র-প্রদর্শনী দেখেছিলেন কিন্তু তিনি কখনো পিতামহের সমাধি দেখতে গিয়েছিলেন কি না জানা যায়নি। ফেরার পথে তিনি ব্রিন্দিসির গোরস্তান দেখতে গিয়েছিলেন হাতে সময় ছিল বলে। একাই ফিরছিলেন এবার। ‘এখানকার গোর নূতন রকমের। অধিকাংশ গোরের উপরে এক একটা ছোট ঘর গেঁথেছে। সেই ঘর পর্দা দিয়ে, ছবি দিয়ে, রঙিন জিনিস দিয়ে নানারকমে সাজানো, যেন মৃত্যুর একটা খেলাঘর… গোরস্থানের এক জায়গায় সিঁড়ি দিয়ে একটা মাটির নীচেকার ঘরে নাবা গেল। সেখানে সহস্র সহস্র মড়ার মাথা অতি সুশৃংখলভাবে স্তূপাকারে সাজানো।’ হয়তো একা বলেই এবার সমুদ্রের রূপ খানিকটা তাঁর চোখে ধরা দিলো অন্যভাবে, ‘দক্ষিণে জ্বলন্ত কনকাকাশ এবং অগ্নিবর্ণ জলরাশির মধ্যে সূর্য অস্ত গেল এবং বামে সূর্যাস্তের কিছু পূর্ব হতেই চন্দ্রোদয় হয়েছে – জাহাজ থেকে পূর্ব দিগন্ত পর্যন্ত বরাবর জ্যোৎস্নারেখা ঝিকঝিক করছে – পূর্ণিমার সন্ধ্যা যেন নীল সমুদ্রের ওপর আপনার শুভ্র অঙ্গুলি স্থাপন করে আমাদের এই জ্যোৎস্নাপুলকিত পূর্বভারতবর্ষের পথ নির্দেশ করে দিচ্ছে।’

আবার শিলাইদহে ফিরলেন কবি। শুধু শিলাইদহ নয় সাজাদপুর, পতিসর, কালিগ্রাম সর্বত্র ঘুরে বেড়ালেন বোটে করে। এই 888sport slot gameে তাঁর অসীম আনন্দ। ‘এখন একলাটি আমার সেই বোটের জানালার কাছে অধিষ্ঠিত হয়ে বহুদিন পরে একটু মনে শান্তি পেয়েছি।’ 888sport slot gameে রবীন্দ্রনাথের ক্লান্তি ছিল না। ‘ভোর থেকে আরম্ভ করে সন্ধ্যা সাত-আটটা পর্যন্ত ক্রমাগতই ভেসে চলেছি। কেবলমাত্র গতির কেমন একটা আকর্ষণ আছে – দুধারের তটভূমি অবিশ্রাম চোখের উপর দিয়ে সরে সরে যাচ্ছে, সমস্ত দিন তাই চেয়ে আছি, কিছুতে তার থেকে চোখ ফেরাতে পারছিনে – পড়তে মন চায় না, লিখতে মন যায় না, কোনো কিছু কাজ নেই, কেবল চুপ করে চেয়ে বসে আছি। কেবল যে দৃশ্যের বৈচিত্র্যের জন্যে তা নয় – হয়তো দুধারে কিছুই নেই, কেবল তরুহীন তটের রেখামাত্র চলে গেছে – কিন্তু ক্রমাগতই চলছে এই হচ্ছে তার প্রধান আকর্ষণ। এই যে চলতে চলতে ভাবা এবং দেখা তার আনন্দই আলাদা। সবার পক্ষে এই 888sport slot gameের আনন্দ উপভোগ করা সম্ভব নয়। অনেকের মনে হতে পারে এই দৃশ্য এবং গতি একঘেয়ে। কবির জীবনকে সমৃদ্ধ করেছিল এই 888sport slot game। বাস্তব জীবনের সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা, দারিদ্র-অসহায়তা প্রতিদিনের শত তুচ্ছের আড়ালে যা চোখে পড়ে না তার সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ পরিচয় ঘটল এভাবে। প্রতিবার তাঁর ভয় হতো ‘আমার পদ্মা বোধ হয় পুরনো হয়ে গেছে।’ কিন্তু তা হয়নি। যখন পদ্মার তীর ছেড়ে বরাবরের মতো চলে এসেছেন           শান্তিনিকেতনে তখনো লিখেছেন,

‘পদ্মা কোথায় চলেছে দূর আকাশের  তলায়,

মনে মনে দেখি, তাকে।’

আবার জমিদারি পরিদর্শনে বালিয়ায় পৌঁছে তাঁর মনে হয়েছে, ‘আমার কিন্তু আর 888sport slot game করতে ইচ্ছে করে না। ভারি ইচ্ছে করছে, একটি কোণের মধ্যে আড্ডা করে একটু নিরিবিলি হয়ে বসি।… ঘরের কোণও আমাকে টানে, ঘরের বাহিরও আমাকে আহবান করে। খুব 888sport slot game করে দেখে বেড়াব ইচ্ছে করে, আবার উদ্ভ্রান্ত আন্তমন একটি নীড়ের জন্যে লালায়িত হয়ে ওঠে।’ অনেক দিন পরে লেখা যাত্রীতে আরো একটু বিশদে পাই ঘর ও পথের কথা। সেখানে তিনি লিখছেন, ‘ঘর বলে পেয়েছি; পথ বলে পাইনি। মানুষের কাছে ‘পেয়েছি’ তারও একটা ডাক আছে, আর ‘পাইনি’ তারও ডাক প্রবল। ঘর আর পথ নিয়েই মানুষ। শুধু ঘর আছে পথ নেই সেও যেমন মানুষের বন্ধন, শুধু পথ আছে ঘর নেই সেও তেমনি মানুষের শাস্তি। শুধু পেয়েছি ‘বদ্ধ গুহা’, শুধু ‘পাইনি’ অসীম মরুভূমি।’

 

চার

ওড়িশায় নিজের মহাল দেখতে যাবার সময় কবি পুরী গিয়েছিলেন পালকি চেপে। একসময় দেবেন্দ্রনাথও গিয়েছিলেন এ-পথে জগন্নাথ দর্শনে, রবীন্দ্রনাথ মন্দিরে যাননি, পথের বর্ণনা দিয়েছেন, ‘যত পুরীর নিকটবর্তী হচ্ছি তত পথের মধ্যে যাত্রীর 888sport free bet বেশি দেখতে পাচ্ছি। 888sport app গোরুর গাড়ি সারি সারি চলেছে। রাস্তার ধারে, গাছের তলায়, পুকুরের পাড়ে লোক শুয়ে আছে, রাঁধছে, জটলা করে রয়েছে। মাঝে মাঝে মন্দির, পান্থশালা, বড়ো বড়ো পুষ্করিণী। পথের ডান দিকে একটা খুব মস্ত বিলের মতো – তার ওপারে পশ্চিমে গাছের মাথার উপর জগন্নাথের মন্দির চূড়া দেখা যাচ্ছে। হঠাৎ এক জায়গায় গাছপালার মধ্যে থেকে বেরিয়ে পড়েই সুবিস্তীর্ণ বালির তীর এবং ঘন নীল সমুদ্রের রেখা দেখতে পাওয়া গেল।’ এই দর্শনের ফসল ‘সমুদ্রের প্রতি’ 888sport app download apk। পুরীতেও কবি বাস করবেন ভেবে একটা জমি কিনেছিলেন।

রবীন্দ্রনাথের অবিরাম 888sport slot game ও বারবার বাসাবদলের অভ্যাস থেকে মনে হতে পারে এবার তাঁর বিশেষ পছন্দের সঙ্গে আমাদের পরিচয় হলো। তিনি যখন সাজাদপুরে গিয়ে লেখেন, ‘আমি চারটি বৃহৎ ঘরের একলা মালিক, সমস্ত দরজাগুলি খুলে বসে থাকি। এখানে যেমন আমার মনে লেখবার ভাব ও ইচ্ছা আসে এমন কোথাও না। বইয়ের জগতের একটা সজীব প্রভাব ঘরে অবাধে প্রবেশ করে, আলোতে আকাশে বাতাসে শব্দে গন্ধে সবুজ হিল্লোলে এবং আমার মনের নেশায় মিশিয়ে কত গল্পের ছাঁচ তৈরি হয়ে ওঠে।’ ধরে নিই কবির পছন্দ ছিল খুব বড় ঘর, বড় ঘরের ছেলের পক্ষে সেটাই স্বাভাবিক। আবার দেখি আরেক সময়ে লিখছেন, ‘আমি আবার ঘর বদল করেছি। এই উদয়নের বাড়িতেই। বাড়িটার নাম উদয়ন, সে কথা জানিয়ে দেওয়া ভালো। উত্তরের দিকে দুটি ছোটো ঘর। এই রকম ছোটো ঘর আমি ভালোবাসি, তার কারণ তোমাকে বলি। ঘরটাই যদি বড়ো হয় তবে বাহিরটা থেকে দূরে পড়া যায়। বস্ত্তত বড়ো ঘরেই মানুষকে বেশি আবদ্ধ করে। তার মধ্যেই তার মনটা আসন ছড়িয়ে বসে, বাহিরটা বড্ড বেশি বাইরে সরে দাঁড়ায়। এই ছোটো ঘরে ঠিক আমার বাসের পক্ষে যতটুকু দরকার তার বেশি কিছুই নেই।’ এখানে দেখছি কবি পছন্দ করতেন ছোট ঘর। প্রসঙ্গত মনে রাখা যেতে পারে, জোড়াসাঁকোর লালবাড়ির হলঘরের কথা। বিচিত্রায় কবির খেয়ালে ছোট-বড় ঘর ভাগ করার জন্যে ‘চলিষ্ণু কাঠের দেয়াল খাড়া করা হয়েছিল’ লিখেছেন ইন্দিরা দেবী। পরে এগুলি সরিয়ে দেওয়া হয়। কবির মন এক জায়গায় কিছুদিন থাকার পরেই যেন বলত, ‘হেথা নয়, হেথা নয় অন্য কোথা অন্য কোনোখানে।’

১৮৯৫ সালে কবির আবার বিদেশ যাবার ইচ্ছে হলো। ইন্দিরা দেবীকে লিখেছেন, ‘ইচ্ছে করছে কোন একটা বিদেশে যেতে, – বেশ একটা ছবির মতো দেশ – পাহাড় আছে, ঝর্ণা আছে, পাথরের গায়ে খুব ঘন শৈবাল হয়েছে, দূরে পাহাড়ের ঢালুর উপরে গোরু চরছে, আকাশের নীল রঙটি খুব স্নিগ্ধ এবং সুগভীর, পাখি-পতঙ্গ-পল্লব এবং জলধারার একটা বিচিত্র মৃদু শব্দমিশ্র উঠে মস্তিষ্কের মধ্যে ধীরে ধীরে তরঙ্গাভিঘাত করছে।… আজ আর কিছুতে হাত না দিয়ে দক্ষিণের ঘরে একলাটি হতে পা ছড়িয়ে একটা কোনো 888sport slot gameবৃত্তান্তের বই নিয়ে পড়ব মনে করছি – বেশ অনেকগুলো – ছবিওয়ালা নতুন-পাতা-কাটা বই।’

বেশ কয়েক বছর রবীন্দ্রনাথের বিদেশ যাওয়া হয়নি। দেশের মধ্যে অনেক জায়গায় গিয়েছেন – সাঁওতাল পরগনার  কার্মাটার থেকে শুরু করে সিমলা, মুসৌরী ছাড়া গিয়েছেন ত্রিপুরায়। সেখানকার জুড়ি বাংলায় বাঁশ, বেত ও কাঠে তৈরি ঘরে  বাস করে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেছিলেন। মজফফরপুরে গিয়েছেন কন্যা মাধুরীলতা দেবীকে নিয়ে, তাঁর নতুন সংসারে পৌঁছে দিতে। এর পরে কয়েকটা বছর কবির জীবন সুখের ছিল না।  শান্তিনিকেতনের আশ্রম বিদ্যালয়ের কাজের মধ্যেই তাঁর পরিবারে ঘনিয়েছে দুর্দিন। মৃণালিনী দেবীর  অসুস্থতা ও মৃত্যুর পরে দ্বিতীয় কন্যা রেনুকার অসুস্থতা তাঁকে ভাবিয়ে তুলেছিল। স্বাস্থ্যোদ্ধারের জন্যে রেনুকাকে নিয়ে গেলেন আলমোরা। কবি লিখছেন, ‘অতি দুর্গম পথ’। অবশ্য ‘জায়গাটি রমণীয় – বাতাসটি সুশীতল, আমাদের বাড়িটি বৃহৎ, চারদিকের বাগানটি সুন্দর, আমাদের গৃহস্বামীটি অতিথিবৎসল, অতএব ক্ষোভের বিষয় এখন আর কিছুই নাই।’ এমনকি ‘মাঝেমাঝে কুহেলিকার আবরণ সরিয়া গিয়া তুষারশিখরশ্রেণীর আভাস দেখিতে পাওয়া যাইতেছে।’ যদিও ‘প্রান্তর আমার মন ভুলাইয়াছে পর্বতকে আমি এখনো হৃদয় দিতে পারি নাই।’ ইন্দিরা দেবীও লিখেছেন একবার তাঁদের অনুরোধে কবি তিনধারিয়াতে নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে এসেছিলেন কিন্তু বলতেন, ‘পাহাড়ে জায়গা তাঁর তেমন ভালো লাগে না। কারণ চারদিকে পাহাড় ঘিরে থাকে, দৃষ্টিকে বাধা দেয়। তিনি পছন্দ করেন উন্মুক্ত প্রান্তর – যেমন শান্তিনিকেতনে দেখা যায়, যেখানে দৃষ্টি দিগন্তের শেষ পর্যন্ত প্রত্যেক ঋতুকে যেন এগিয়ে গিয়ে অভ্যর্থনা করতে পারে।’ চিকিৎসকের নির্দেশে নিজের ভগ্নস্বাস্থ্য নিয়ে কিছুদিন বিশ্রাম করতে কবি গিয়েছিলেন মজফফরপুর ও গিরিডি। গিরিডিতে স্বাস্থ্যের উন্নতি হলো। তাঁর সঙ্গে গিরিডিতে বেড়ানোর 888sport sign up bonusকথা লিখেছেন তাঁর ছাত্র ব্রজেন্দ্রকিশোর দেববর্মা, ‘কবির সঙ্গে বেড়ানো – গিরিডিতে – আর এক আনন্দ। পদযাত্রাকে তিনিই সরব করে রাখতেন। আশপাশের গাছগাছড়া, মাটির কথা – ফুল-পাতা, পাখি কারো কথা বলতে বাদ দিতেন না – চল্তে চল্তে।’ এই বর্ণনা থেকে বোঝা যায় রবীন্দ্রনাথের  888sport slot gameবৃত্তান্ত বহু আলোচনার পরেও অজানা রয়ে গিয়েছে।’ তিনি কবে কোথায় গিয়েছেন, কী লিখেছেন, তার অধিকাংশ জানা গেলেও দেশে-বিদেশে বেড়াতে গিয়ে কাকে কী বলেছেন সেগুলি এখনো সংগৃহীত হয়েছে বলে মনে হয় না। যেমন, গিরিডির এই 888sport slot game, উশ্রী জলপ্রপাত দেখে তার নামকরণ করেছিলেন ‘অশ্রু – তারই বা কত ব্যাখ্যা’। সেগুলি আমাদের জানা হলো না। এখান থেকে তাঁরা একটি বড় দলে পরিণত হয়ে গিয়েছিলেন বুদ্ধগয়া। দলে ছিলেন সস্ত্রীক জগদীশচন্দ্র বসু, ভগিনী নিবেদিতা, যদুনাথ সরকার, রথীন্দ্রনাথ প্রমুখ। বৌদ্ধধর্ম ও ইতিহাস নিয়ে নিবেদিতার সঙ্গে কবির তর্কবিতর্ক হয়েছিল, তারও কোনো লিপিবদ্ধ বা 888sport sign up bonusবদ্ধ বিবরণ নেই। কবির মুঙ্গেরযাত্রার দুঃখময় ঘটনাটির উল্লেখ করা চলে। তাঁর কনিষ্ঠপুত্র শমীন্দ্রনাথ মুঙ্গেরে বেড়াতে গিয়ে কলেরায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান। কবি আশ্চর্য স্থৈর্য নিয়ে সেখানে উপস্থিত ছিলেন। দৌহিত্র নীতীন্দ্রনাথের মৃত্যুর পরে মীরা দেবীকে কবি লিখেছিলেন, ‘শমী যে রাত্রে গেল তার পবের রাত্রে রেলে আসতে আসতে দেখলুম জ্যোৎস্নায় আকাশ ভেসে যাচ্ছে, কোথাও কিছু কম পড়েছে তার লক্ষণ নেই। মন বল্লে কম পড়েনি – সমস্তর মধ্যে সবই রয়ে গেছে, আমিও তারি মধ্যে।’

 

পাঁচ

রবীন্দ্রনাথ তৃতীয়বার বিদেশযাত্রা করেন ১৯১২-তে। বিদেশ 888sport slot gameের সময় তিনি নিয়মিত তাঁর 888sport slot gameবৃত্তান্ত লিখে শান্তিনিকেতনের আশ্রম বিদ্যালয়ে পাঠাবার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন। পথের সঞ্চয় সেই 888sport slot gameবৃত্তান্ত। আর 888sport slot gameবৃত্তান্তের সঙ্গে তাঁর 888sport slot game বিবরণের সাদৃশ্য নেই। তিনি চলার আনন্দটুকু পাবেন বলেই বেরিয়েছেন ‘প্রাণ আপনি চলতে চায়, সে তার ধর্ম।’ এবার শান্তিনিকেতনে দোতলার বারান্দায় বসে আকাশের দিকে চেয়ে অনুভব করেছেন, ‘যদিও সেই আকাশটি নীরব তবু দেশ দেশান্তরের যত অপরিচিত গিরি-নদী-অরণ্যের আহবান কত দিক্ দিগন্তরের থেকে উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠে এই আকাশের নীলিমাকে পরিপূর্ণ করেছে। নিঃশব্দ আকাশ বহুদূরের সেই-সমস্ত মর্মরধ্বনি সেই-সমস্ত কলগুঞ্জন আমার কাছে বয়ে আনত। আমাকে কেবলই বলত, চলো চলো, বার হয়ে এসো। সে কোনো প্রয়োজনের চলা নয়, চলার আনন্দেই চলা।’ সময় যত এগিয়েছে কবির অপ্রয়োজনের 888sport slot game ততই কমেছে। প্রয়োজনের তাগিদে বেড়ানো অধিকাংশই সুখের হয়নি। তবু তিনি জানতেন ‘মানুষের মধ্যে যারা দূরে যেতে পেরেছে তারাই আপনাকে পূর্ণ করতে পেরেছে।’ তাই তিনিও চলেছেন দূরের পথ অতিক্রম করে ‘যে বেষ্টনের মধ্যে আছি সেখান থেকে আর একটা কোথাও যেতে হবে।’

বিদেশ যাবার আগে বোম্বাই দেখলেন ভালো করে ‘আমার ভারি ভালো লাগল যখন দেখলুম শত শত নর888sport promo code সাজসজ্জা করে সমুদ্রের ধারে গিয়ে বসেছে, অপরাহ্ণের অবসরের সময় সমুদ্রের ডাক অমান্য করতে পারেনি।’ এবার লন্ডনে এসে দেখলেন নতুন উপসর্গ মোটরগাড়ি। ‘মোটর রথ, মোটর বিশ্বম্বহ (অম্নিবাস), মোটর মালগাড়ি লন্ডনের নাড়িতে নাড়িতে শতধারায় ছুটে চলেছে।’ প্রথমে কবি উঠলেন হোটেলে, যদিও তাঁর হোটেল ভালো লাগে না ‘মনে হল এখানকার লোকালয়ের দেউড়িতে আনাগোনার পথে এসে বসলুম।’ বন্ধু উইলিয়ম রোদেনস্টাইন বাসস্থান ঠিক করে দিলেন হাম্পস্টেডহীথে। লন্ডনের বিদ্বৎসমাজের সঙ্গে কবির শুধু পরিচয় হলো তা নয়, তিনি তাঁদের অন্তর স্পর্শ করলেন। গীতাঞ্জলির 888sport app download apk latest versionের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন।

রবীন্দ্রনাথ নিউইয়র্ক যাত্রা করেন অক্টোবর মাসে। এই প্রথম তাঁর আমেরিকা 888sport slot game। যদিও একে 888sport slot game না বলে বক্তৃতা-সফর বলাই সংগত। এ-যাত্রায় তিনি ইলিনয়, বস্টন, হার্ভার্ড, শিকাগো প্রভৃতি অনেক জায়গায় ঘুরেছেন। সর্বত্রই তাঁকে ঘিরে উন্মাদনা, সবাই তাঁর কথা শুনতে চায় ‘এখানে এসে খুব জড়িয়ে পড়েছি… কবে এবং কোনখানে গিয়ে যে থামতে পারব কিছুই ভেবে পাচ্ছিনে।’ আমেরিকায় কবি কী দেখলেন তার খবর মেলে না। দুমাস পরে লিখেছিলেন, ‘এখানকার বড়ো শহরগুলোতে একবার নাড়া দিয়ে যাব। কি দেখতে আমেরিকায় এসেছি সে ত এখনো ঠিক জানতে পারিনি সেইটে জেনে যাব।’ কখনো অসহিষ্ণু হয়ে লিখেছেন, ‘আমার মতন এমন পলাতক মন বোধ হয় আর কারও নয়।’ যে-কোনো প্রাকৃতিক দৃশ্য, বিশেষ করে সূর্যোদয় তাঁর বড় প্রিয় ছিল। আরবানার একটি সকাল কর্মব্যস্ততার মধ্যেও তাঁকে মুগ্ধ করেছিল, ‘আজ সকালে সূর্যোদয় হয়েছে। এ কী সুন্দর শোভা। শীতকালের পত্রহীন গাছের ডালগুলো একেবারে আগাগোড়া হীরের মতো ঝলমল করছে – যেন উৎসব বাড়িতে সারি সারি স্ফটিকের ঝাড় লাগিয়ে দিয়েছে।’ আমেরিকা থেকে লন্ডনে ফিরে কবি আরো ব্যস্ত হয়ে পড়লেন।

গীতাঞ্জলি-পর্বের এই সময়টি বহু আলোচিত এবং এখানে নিষ্প্রয়োজন।

 

ছয়

প্রতি পুজোর ছুটিতে রবীন্দ্রনাথ বেড়াতে যেতেন, আশ্রম বিদ্যালয়েও ছুটি থাকত। নৈনিতালের কাছে রামগড়ে রথীন্দ্রনাথ একটা বাংলো ও বাগান  কিনেছিলেন, স্থির হলো সেখানেই কবি গরমের সময়টা কাটাবেন। অবশ্য পছন্দ হলে। পাহাড় ভালো না লাগলেও রামগড় কবির ভালো লাগল। সেখান থেকে অ্যান্ডরুজকে লিখলেন,  ‘Here I feel that I have come to the place that I needed most in all the world… to-day, I am already bending my knees to father Himalaya asking pardon for keeping aloof for so long in blind distrust.

The hills all round seem to me like an emareld vessel brimming over with peace and sunshine. The solitude is like a flower spreading its petals of beauty and keeping its honey of wisdom at the core of its heart. My life is full. It is no longer broken and fragmentary.’ এই পরিপূর্ণ আনন্দের প্রকাশ ঘটল একটি গানে – ‘এই লভিনু সঙ্গ তব সুন্দর হে সুনদর’। নিদারুণ ব্যস্ততার ক্লান্তি অনেকটাই কমে গেল। এ বছরেই পূজাবকাশে আবার বুদ্ধগয়া যাত্রা করেন, হরিদ্বারে যাবারও ইচ্ছে ছিল। বরাবর পাহাড়ের বৌদ্ধ গুহা, সে ‘গুহার দেওয়াল – সেই পাহাড়ের গা – আশ্চর্য রকম পালিশ করা – কাচের ন্যায় মসৃণ’ দেখার জন্য কবি কষ্টকর পথেও যাত্রা করলেন, পথশ্রমে গুহা না দেখেই ফিরে আসতে বাধ্য হন। এলাহাবাদে এসে কবি দেখলেন ইন্ডিয়ান প্রেস। আত্মীয়ের বাড়িতে কাদম্বরী দেবীর একটি ছবি। সেখান থেকেই আগ্রা ও দিল্লি ঘুরে আসেন। জয়পুর 888sport slot gameের খবর পাওয়া যায়, অ্যান্ডরুজকে লিখেছেন, ‘This Jaipur trip has been a failure simply because we put at the house of a man  we know and he tried to make it evident thet our visit was to him and not to Jaipur. He screwed in from everying that belonged to the place, only giving an occasional airing, scaring away others who were more eager and more competent then he was to help us in our mission.’ এও এক বিড়ম্বনা।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় আশ্রম বিদ্যালয়ে আর্থিক সংকট কবিকে ভাবিয়েছিল। অর্থাভাবে জাপানযাত্রা বন্ধের মুখে ‘কোথাও যাবার ইচ্ছা ছিল পাথেয় জুটল না, তাই বসে আছি।’ পুজোর ছুটিতে কাশ্মিরে গেলেন নিমন্ত্রণ রাখতে। কিন্তু খ্যাতি বিড়ম্বনা এড়াবেন কী করে? ‘দেশটা দেখতে ভাল কিন্তু এ পর্যন্ত ভাল করে চেয়ে দেখবার সময় পেলুম না – লোকজনের উৎপাত অভ্যর্থনার বিড়ম্বনায় আমার দিন বেজায় গোলমালে কেটে যাচ্ছে।’ একদিন তিনি মার্তন্ড মন্দির দেখেছেন। লিখেছেন ‘বলাকা’ 888sport app download apk। ‘বলাকা’র জন্মকথা বর্ণনা করেছেন পরে, ‘কাশ্মীরে শ্রীনগরের কার্তিকের নির্মল আকাশ। পদ্মার মত ঝিলম আমার পায়ের তলায়। সন্ধ্যা বেলায় ধীরে ধীরে ঝিলমের জলে অন্ধকার নেমে আসছে। বোটের ছাদে বসে আছি। নদীর স্রোত কালো হয়ে গেছে, ওপারে জমাট অন্ধকার, চারিদিক নিঃশব্দ নিস্তব্ধ। এমন সময় বুনো হাঁসের দল হঠাৎ মাথার উপর দিয়ে উড়ে গেল।’ এই অপূর্ব বর্ণনাটি ছাড়া সর্বত্রই তাঁর ভালো না লাগার কথা লিখেছেন ‘যা হোক কাশ্মীরটা না দেখলে মনে একটা আক্ষেপ থেকে যেত সেইটে কেটে গেল এইটুকুই যা লাভ।’ কাশ্মির থেকে ফিরে শিলাইদহে পৌঁছে মনে হলো, ‘এমন শান্তি ও সৌন্দর্য আর কোথাও নেই – সেটুকু ফিরে অনুভব করবার জন্যে মাঝে মাঝে দূরে যাওয়া দরকার।’ তারপর তিনদিনের জন্যে গেলেন ঘাটশিলা। সেখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ভূস্বর্গ-ফেরত কবিকে অভিভূত করল। কুড়ি বছর পরে সেই 888sport slot gameের 888sport sign up bonusচারণ করে লিখেছেন, ‘একটি ছবি মনে আছে, ছোটো বড়ো নানা উপলে বিভক্ত সুবর্ণরেখা নদী বয়ে চলেছে, সন্ধ্যা হয়ে এসেছে, অস্তগামী সূর্যের ম্লান ধূসর আলোয় একদল বক বসে আছে নদীবক্ষের মধ্যে একটি প্রশস্ত শিলাখন্ডের উপরে – প্রাণবান করেছে তারা সন্ধ্যার শান্তিকে।’ ঘাটশিলা তাঁর এত ভালো লেগেছিল যে-ভেবেছিলেন সেখানে একটা বাড়ি করে মাঝেমাঝে এসে থাকবেন।

আবার আমেরিকায় বক্তৃতা দেবার আমন্ত্রণ এলো। প্রথমে কবি ভাবছিলেন পিঠাপুরমে যাবেন, তারপরে মহীসুরে। সুবিধে হলে কলম্বো হয়ে জাভা ও নিউজিল্যান্ড হয়ে কালিফোর্নিয়া ‘যতই দিন যাচ্ছে ততই বুঝতে পারছি সম্বন্ধ এক জায়গার সঙ্গে নয়।… অতএব বেরিয়ে পড়া যাক।’ শেষে স্থির হলো ‘প্যাসিফিক দিয়ে যেতে হবে অতএব জাপানের রাস্তাই সস্তা ও সহজ।’ এবারের 888sport slot gameবৃত্তান্ত হলো জাপানযাত্রী। চলেছেন ভিন্ন পথে, পাঠকদের বলে দিয়েছেন, ‘ছুটতে ছুটতে তাড়াতাড়ি দেখে দেখে বেড়ানো আমার পক্ষে ক্লান্তিকর এবং নিষ্ফল। অতএব আমার কাছ থেকে বেশ ভদ্ররকম 888sport slot gameবৃত্তান্ত তোমরা পাবে না।’ বাণিজ্যিক শহর রেঙ্গুন তাঁর ভালো লাগেনি। প্রথম আনন্দ পেলেন সোয়েডগঞ্জ প্যাগোডা দেখে। ‘বহুকালের বৃহৎ ব্রহ্মদেশ এই মন্দিরটুকুর মধ্যে আপনাকে প্রকাশ  করলে। রেঙ্গুন শহরটা এর কাছে ছোট মনে হল।’ অবশ্য পিনাং বন্দরও তাঁকে বঞ্চিত করেনি, ‘সূর্য যখন অস্ত যাচ্ছে তখন পিনাঙের বন্দরে জাহাজ এসে পৌঁছল। মনে হল, বড়ো সুন্দর এই পৃথিবী। জলের সঙ্গে স্থলের যেন প্রেমের মিলন দেখলুম। ধরণী তার দুই বাহু মেলে সমুদ্রকে আলিঙ্গন করছে। মেঘের ভিতর দিয়ে নীলাভ পাহাড়গুলির উপরে যে একটি সুকোমল আলো পড়েছে সে যেন অতি সূক্ষ্ম সোনালি রঙের ওড়নার মতো; তাতে বধূর মুখ ঢেকেছে না প্রকাশ করছে, তা বলা যায় না।’ হংকংয়ে কবি মুগ্ধ হলেন চীনা শ্রমিকদের দেখে। ‘এমন শরীর কোথাও দেখিনি, এমন কাজও না। একেবারে প্রাণসার দেহ, লেশমাত্র বাহুল্য নেই। কাজের তালে তালে সমস্ত শরীরের মাংশপেশী কেবলই ঢেউ খেলাচ্ছে।… জাহাজের ঘাটে মাল তোলা-নামার কাজ দেখতে যে আমার এত আনন্দ হবে, একথা আমি পূর্বে মনে করতে পারতুম না।’ চীনে নৌকোয় দেখলেন শ্রমিকেরা সপরিবারে রয়েছে, সকলেই কাজ করছে। ‘… সকলে মিলে কাজ করার এই ছবি দেখে আমার দীর্ঘনিশ্বাস পড়ল। ভারতবর্ষে এই ছবি কবে দেখতে পারব?’

একই কথা চিঠিতে লিখেছেন, ‘এখন আমরা রেলগাড়িতে, টোকিও শহরের দিকে চলেছি। দুধারে পাহাড়, ধানের ক্ষেত, তুঁতের বন (রেশম চাষের জন্যে) পাইনের অরণ্য, বর্ষার জলে ভরা ছোট ছোট নদী – সমস্ত জাপান দেশটা যেন আগাগোড়া ছবির পর ছবি – আর এখানকার লোকেরাও তেমনি সৌন্দর্য অন্তরের সঙ্গে ভালোবাসে। আর মেয়ে পুরুষে পরিশ্রম করে কাজ করতে জানে – শুধু পরিশ্রম করে নয়, পরিপাটি করে -।’

এরপর দেখেছেন জাপানি মেয়েদের ‘… প্রতিবেশীদের বাড়িতে ঘরকন্নার হিল্লোল তখন জাগতে আরম্ভ করেছে – সেই হিল্লোল মেয়েদের হিল্লোল। ঘরে ঘরে এই মেয়েদের কাজের ঢেউ এমন বিচিত্র বৃহৎ এবং প্রবল করে সচরাচর দেখতে পাওয়া যায় না।’ জাপানের গৃহসজ্জা, চা-পানের আসর, বাগান, সৌন্দর্যবোধ, দৃষ্টিভঙ্গি যে স্বতন্ত্র, কবি তা লক্ষ করেছেন ‘আদর অভ্যর্থনার সাইক্লোনের মধ্যে’ থেকেও। জাপানিদের জীবনযাত্রায় যে রিক্ততা তা অভাবাত্মক নয় এবং সেজন্যই সুন্দর। কবি লিখেছেন, ‘একটি কথা তোমরা মনে রেখো – আমি যেমন যেমন দেখছি তেমনি তেমনি লিখে চলেছি। এ কেবল একটা নতুন দেশের উপর চোখ বুলিয়ে যাবার ইতিহাস মাত্র।… ভুল বলব না, এমন আমার প্রতিজ্ঞা নয়; যা মনে হচ্ছে তাই বলব, এই আমার মতলব।’ রবীন্দ্রনাথের 888sport slot gameবৃত্তান্ত পড়বার সময় এ-কথাটি সবসময় মনে রাখতে হবে।

হংকংয়ে তিনি যে দড়ি-টানা ডুলিতে চেপে পাহাড় দেখতে গিয়েছিলেন সে-কথাটিও চাপা পড়ে গেছে এই ভাবে।

আমেরিকায় কবি এবার গিয়েছেন নোবেলবিজয়ী হিসেবে। বন্ধুত্বের উষ্ণতা, সংবর্ধনার চাপ, সর্বোপরি বক্তৃতা সফর নিয়ে কবি ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। এই ঝটিকা সফরে কবি চল্লিশটি বক্তৃতা দেবার জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন। রথীন্দ্রনাথকে লিখলেন, ‘বক্তৃতার ঝড়ের মুখে সহর থেকে সহরে ঘুরে বেড়াচ্ছি।’ এভাবে তিনি কী কী দেখলেন জানা যায় না, নিশ্চয় কিছু কিছু দেখেছেন যেমন, চিত্র-প্রদর্শনী, কোর্ট থিয়েটারে এক বিখ্যাত পোলিশ পিয়ানিস্টের পিয়ানো শুনতে গিয়েছিলেন, কলোরেডোর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য প্রভৃতি। কিন্তু 888sport slot gameকে উপভোগ করার অবসর তাঁর ছিল না, তবে একটা উদ্দেশ্য ছিল, ‘আমার পক্ষে এই ঘুরপাক নিতান্তই ক্লেশকর। সমস্ত সহ্য করছি এই মনে করে যে, শান্তিনিকেতন বিদ্যালয়কে বিশ্বের সঙ্গে ভারতের যোগের সূত্র করে তুলতে হবে… ভবিষ্যতের জন্যে যে বিশ্বজাতিক মহামিলন যজ্ঞের প্রতিষ্ঠা হচ্ছে তার প্রথম আয়োজন ঐ বোলপুরের প্রান্তরেই হবে।’

 

সাত

পরের বছর আবার আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়া থেকে আমন্ত্রণ এলো। আয়োজন শুরু হলেও যাওয়া হলো না। বলেও ছিলেন, ‘যতই যাবার আয়োজন করছি ততই কিন্তু মন বলছে, এবার তোমার যাওয়া হবে না।’ পুজোর সময় গেলেন পিঠাপুরমে, হাঁফিয়ে উঠলেন আলাপ-অভ্যর্থনায়। শুধু ভালো লাগল সঙ্গমেশ্বর শাস্ত্রীর বীণা। সুরেন্দ্রনাথ কর  লিখেছেন, ‘সেই বীণকর রাত্রে আহারের পর বারান্দায় বসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বীণা বাজাতেন। গুরুদেব একটা চেয়ারে বসে স্তব্ধ হয়ে শুনতেন তাঁর বীণাবাদন – অনেক রাত পর্যন্ত।’ জানুয়ারি মাসে আবার গেলেন দক্ষিণে ‘পরশু চললুম মৈসুর-মাদ্রাজ-মাদুরায় এবং মদনাপল্লীতে।’ দেখার আগ্রহ ছিল না তা নয় ‘অনেকদিন হইতে মৈসুর রাজ্য দেখিবার ইচ্ছ ছিল।’ যদিও তাঁর প্রথমবারের দাক্ষিণাত্য 888sport slot gameে দেখার কথা বিশেষ নেই। উটি, পালঘাট, সালেম, পিচি, তাঞ্জোর, মাদুরা – সর্বত্র তাঁকে বক্তৃতা দিতে হয়েছে। বিখ্যাত মন্দিরগুলি সম্ভবত তাঁর দেখা হয়নি। কেননা পারস্যে মসজিদ দেখতে গিয়ে লিখেছেন, ‘মসজিদের প্রাঙ্গণে যাদের দেখলেম তাদের মোল্লার বেশ। নিরুৎসুক দৃষ্টিতে আমাদের দিকে তাকিয়ে দেখলে, হয়তো মনে মনে প্রসন্ন হয়নি। শুনলুম আর দশ বছর আগে এখানে আমাদের প্রবেশ  সম্ভবপর হত না। শুনে আমি যে বিস্মিত হব সে রাস্তা আমার নেই। কারণ আর বিশ বছর পরেও পুরীতে জগন্নাথের মন্দিরে আমার মতো কোনো ব্রাত্য যে প্রবেশ করতে পারবে সে আশা বিড়ম্বনা।’ দাক্ষিণাত্যের হিন্দু মন্দিরে প্রবেশ করার খবর কোথাও নেই। কবির পিতা অবশ্য 888sport slot gameের সময় মন্দির, গুরুদ্বার – সর্বত্রই  যেতেন। শান্তিনিকেতনে ফিরে বসে আছেন জানলার ধারে, লিখলেন বাতায়নিকের পত্র। ‘যখন আমেরিকায় যাই, জাপানে যাই, 888sport slot gameের কথায় ভরে ভরে তোমাদের চিঠি লিখে পাঠাই। পথ খরচাটার সমান ওজনের গৌরব তাঁদের দিতে হয়। কিন্তু এই যে আমার নিখরচার যাত্রা কাজের পার থেকে অকাজের পারে, তারও 888sport slot gameমূলক লেখা চলে – মাঝে মাঝে  লিখব।’ দেখা যাচ্ছে, কবি যখন শান্তিনিকেতনে বসে আছেন তখনো ভাবছেন 888sport slot gameের কথা। পুজোর সময় শিলঙে গেলেন। প্রথমে ইচ্ছে ছিল না, পৌঁছাবার পর ‘শিলঙ পাহাড়ে এসে খুব ভালো লাগছে। দার্জিলিঙের চেয়ে অনেক ভালো।… বেশ উজ্জ্বল রৌদ্র দেখা দিয়েছে। আমরা যে জায়গায় আছি এ খুব  নিভৃত এবং এখানকার রাস্তাগুলি বেশ নির্জন দেওদার গাছের অবগুণ্ঠনে 888sport app এবং ছোট নির্ঝরিণীর কলস্বরে মুখরিত। এখানে ছুটির শেষ পর্যন্ত থাকবার ইচ্ছা আছে।’ এসময় কবি শ্রীহট্ট, আগরতলা ও গৌহাটি গিয়েছিলেন। শান্তিনিকেতনে ফিরে উঠলেন নতুন বাড়ি ‘উত্তরায়ণে’। ‘শান্তিনিকেতনে আমার বাসাবদল হয়েছে। এখন আমি মাঠের মধ্যে একা – এ একটা নতুন দেশ বললেই হয়।’ প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় লিখেছেন, ‘কবির খেয়ালমতো মাটির ঘর, খড়ের চাল, দরজা জানলায় দরমার কপাট। ঘরের মেঝে মাটির উপর কাঁকর পেটানো; কেবল স্নানের ঘরটির মেঝে পাকা।’ পরে এই বাড়ি রূপ বদলে কোনার্ক হয়। কবি রাণুকে লিখলেন, ‘এখানে বসে বসেই বেড়ানো চলে। চারদিকেই খোলা আকাশ খোলা মাঠ।’ রবীন্দ্রনাথ বোম্বাই যাত্রা করেন অনেক ‘সম্বর্ধনার সমারোহ’ পেরিয়ে, লিখছেন ক্ষিতিমোহন সেন, ‘ঘাট পর্বত পৌঁছিতেই প্রকৃতির গম্ভীর সৌন্দর্যের সাগরে কবিগুরু ডুবিয়া গেলেন।’ আমেদাবাদ কবির পরিচিত শহর, সেখান থেকে গেলেন ভাবনগরে। কাঠিয়াবাড়ের অন্যতম দেশীয় রাজ্য ভাবনগর, রাজ্যের নিজস্ব রেলপথ ছিল, কবির জন্যে স্পেশাল ট্রেনের ব্যবস্থা হলো। এখানে কবি ভক্ত888sport promo codeদের কণ্ঠে  গাওয়া  মীরার ভজন শুনে মুগ্ধ হন।

আবার বিদেশযাত্রা করলেন রবীন্দ্রনাথ। তাঁর মন সুদূরের পিয়াসী হলেও নীড়বিলাসী, স্থির করলেন যত শীঘ্র পারেন ফিরবেন যদিও ইউরোপ-আমেরিকা সফরে অতিবাহিত হয় চৌদ্দটি মাস। এবারের 888sport slot game নিয়ে কবির মনে সংশয় ছিল। ‘কিসের জন্যে যাচ্ছি সে কথাও মাঝে মাঝে ভাবি। বেড়াবার জন্যে নয় সে আমি জানি, আর কিসের জন্যে সে আমি স্পষ্ট জানিনে।’ বাস্তবিকই এ থাকাকে 888sport slot game আখ্যা দেওয়া যায় না। যুদ্ধ-রিক্ত ইউরোপের কবির উপস্থিতি ও বক্তৃতার যেমন প্রয়োজন ছিল, ‘স্যর’ উপাধি বর্জনের প্রতিক্রিয়াও ছিল। কিছু পুরনো বন্ধু দূরে সরে গেলেন অবশ্য, সামাজিক নিমন্ত্রণ, সংবর্ধনা, বক্তৃতার আমন্ত্রণের অভাব ছিল না। এবারে কবি ব্রিস্টলে রাজা রামমোহন রায়ের সমাধি দেখতে গিয়েছিলেন। ফ্রান্সে এসে অতিথিবৎসল কাহ্নের অতিথিশালায় আশ্রয় নিলেন। বহু বিদগ্ধ ব্যক্তির সঙ্গে দেখা হলো। একদিন যুদ্ধবিধ্বস্ত এক শহর দেখে এসে অ্যান্ডরুজকে লিখলেন, ‘It was a most saddenning sight, some of the terrible damages deliberately done, not for any necessities of war, but to cripple France for ever, were so savage that their memory can never be effected.’ সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি আমস্টারডামে বক্তৃতা দিতে গেলেন। এখানে এক 888sport live chatী কবিকে জাভা ও বালির প্রাচীন 888sport live chatকর্মের ফটো দেখান। ইতিপূর্বে প্যারিসেও অধ্যাপক গোলুবিউ ও অধ্যাপক ফিনো প্রত্নতাত্ত্বিক অভিযানে কম্বোডিয়া যাবার কথা বলেন, সেখানকার প্রাচীন মন্দিরের ছবি দেখান। কবিকে প্রাচীন ভারতীয় স্থাপত্য ও ভাস্কর্যের ছবিগুলি উদ্বুদ্ধ করে। তিনি ক্ষিতিমোহন সেনকে লিখেছিলেন, ‘এঁদের সঙ্গে আলোচনা করে আমার মনে হয় যে প্রাচীন ভারতের উপনিবেশগুলি ভাল করে দেখে তখনকার অবস্থা প্রভৃতি জেনে নেবার জন্যে আমাদের কোনো অধ্যাপকের প্রস্ত্তত হওয়ার দরকার। বিশ্বভারতীতে এই বিশেষ বিষয়টির চর্চা রাখতে চাই।… শুধু পুঁথি পড়ে আমরা ভারতবর্ষকে চিনতে পারব না।’ এ সময়ই তাঁর এই দেশগুলি দেখার আগ্রহ জাগে অবশ্য জাভার কথা তিনি আগেই শুনেছিলেন। হল্যান্ড থেকে গেলেন বেলজিয়াম। তারপরে আমেরিকায়। দীর্ঘ সাড়ে চার মাস পরে আবার ইউরোপে ফিরে আসেন। লন্ডনে তিন সপ্তাহ থেকে প্যারিসে গেলেন বিমানে। এই প্রথম কবির বিমানযাত্রা, বিমানটির নাম ছিল গোলিয়েথ, যাত্রী ছিলেন বারোজন। পারস্য যাবার সময় কবি লিখেছিলেন, ‘পূর্বে আর একবার এই পথের পরিচয় পেয়েছিলুম লন্ডন থেকে প্যারিসে।’ ইউরোপেও এ-ধরনের ঘূর্ণাবর্ত। স্টকহোমে অভূতপূর্ব সমাদর লাভ করলেন। নোবেল 888sport app download bd প্রাপক হিসেবে সুইডিশ আকাদেমিতে বক্তৃতা দিলেন। লোক888sport live chat সংগ্রহশালা এবং সুইডিশ লোকোৎসব দেখলেন। ইউরোপে তিনি যখন যেতেন পাশ্চাত্য সংগীত এবং অভিনয় দেখবার চেষ্টা করতেন, উৎকৃষ্ট সংগীত-অভিনয়-নৃত্য-চিত্র-ভাস্কর্য তাঁকে আকৃষ্ট করত। জেনিভা থেকে লুসার্নে গিয়ে সেখানকার প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হন। তাঁর খুব ভালো লেগেছিল লুসার্ন হ্রদে মোটর বোটে 888sport slot game। যুদ্ধবিধ্বস্ত জার্মানিতেও কবিকে দেখার ও তাঁর বক্তৃতা শোনার আগ্রহ দেখা যায়। নিরন্তর ঘোরাঘুরির পর ক্লান্ত কবি ডার্মস্টাটে গেলেন। ভিয়েনা এবং প্রাগেও তিনি বক্তৃতা দিতে গিয়েছিলেন।

 

আট

পরের বছর কবি শেষবারের মতো শিলাইদহে যান। এ সময়ে পদ্মা দূরে সরে গিয়েছে ‘ছাদের উপরে দাঁড়িয়ে যত দূর দৃষ্টি চলে তাকিয়ে দেখি, মাঝখানে কত মাঠ, কত গ্রামের আড়াল, সবশেষে উত্তর দিগন্তের আকাশের নীলাঞ্চলের নীলতর পাড়ের মতো একটি বনরেখা দেখা যায়। সেই নীল রেখাটির কাছে ঐ যে একটি ঝাপসা বাষ্পলেখাটির মতো দেখতে পাচ্ছি, জানি ঐ আমার সেই পদ্মা।’ এ-বছর কবিকে আবার বেরোতে হলো ভারত 888sport slot gameে। ‘বক্তৃতাচক্রের আবর্তনের মধ্যে’ দক্ষিণ ভারতের বেশ কয়েকটি নাম হারিয়ে যেতে বসলেও কবির ভাট্টামালাইপালায়ম গ্রাম 888sport slot gameের উল্লেখ না করে পারছি না। কোয়েম্বাটুরের কাছে এই ছোট্ট গ্রামটিতে কবির পিতা একবার এসেছিলেন। কবিকে অনেকটা পথ গরুর গাড়িতে চেপে যেতে হলো। গ্রামটি তাঁর ভালো লেগেছিল। অত্যন্ত ক্লান্তির জন্যে কয়েকদিন বিশ্রাম নিলেন শ্রীলংকায়। গ্যালে, কলম্বো, ক্যান্ডি ঘুরে পৌঁছোলেন মনোরম নুয়ারা ইলিয়াতে। এ সময়েই ত্রিভাস্ত্রম থেকে কুইলন যাবার পথে বরক্কালাইয়ে অস্পৃশ্য থিয়াদের গুরু শ্রীনারায়ণ গুরুর সঙ্গে দেখা করে কবি তাঁকে সামাজিক সেবাকর্মের জন্যে অভিননদন জানান। এরপর পশ্চিম ভারত বোম্বাই, আমেদাবাদ, পোরবন্দর, করাচি প্রভৃতি অনেক শহরে বক্তৃতা দিয়ে ফেরেন  শান্তিনিকেতনে।

আমন্ত্রণ এলো চীন থেকে। এ ব্যাপারে কবির আগ্রহ ছিল, এ বয়সে দূর888sport slot game কষ্টকর হলেও তিনি প্রস্ত্তত হলেন। তাঁর বিশ্বাস ছিল, ‘তাঁদের 888sport slot game চীন ও ভারতের মধ্যে সুপ্রাচীন সাংস্কৃতিক ও আধ্যাত্মিক সম্পর্কের পুনরুদ্ধার করতে পারবে।’ সেজন্যই তাঁর সঙ্গী হয়েছিলেন নন্দলাল বসু, ক্ষিতিমোহন সেন ও কালিদাস নাগ। গঙ্গার ঘাটে এসে জাহাজে উঠলেন ‘সেই আমাদের পুরনো গঙ্গাতীর – এই তীর ছেলেবেলায় আমাকে কতদিন কি গভীর আনন্দ দিয়েছে।’ আগের বারে রেঙ্গুন ভালো লাগেনি, এবারো না, তবে বর্মী নৃত্য তাঁর মনোহরণ করল। আর মুগ্ধ হলেন মলয়ের রূপ দেখে, কুয়ালালামপুরের পথে, ‘দুই ধারে কোথাও ঘন অরণ্য, কোথাও রবর গাছের চাষ, মাঝে মাঝে চীনেদের পাড়া কোথাও বা মালয়দের গ্রাম। এত ঘন গাছপালা কোথাও দেখা যায় না… নীল মেঘে আকাশ আচ্ছন্ন।… যখন শহরের প্রায় কাছাকাছি এসেছি এমন সময় কি ঘোর বৃষ্টি। একেবারে অবিরল ধারা। এমন বৃষ্টি কতদিন দেখিনি।’ সাংহাইয়ে পৌঁছে বক্তৃতা দেবার পরে কবিকে প্রাচীন চীনা নাটক দেখানো হয়। সেখান থেকে পিকিং (বেজিং) যাত্রা করলেন ইয়াংসি নদী পথে। পথে চু-বুতে কনফুসিয়াসের সমাধি দর্শন করলেন। একদিন তিনি দেখলেন নির্বাসিত সম্রাটের ফরবিডন সিটি। সম্রাট কবির সঙ্গে ফটো তুললেন। প্রাসাদ উদ্যান মন্দির-দরবার-বেগম মহল সবই দেখলেন তিনি। কালিদাস নাগ লিখেছেন, ‘এক জায়গায় দুটি গাছ দৃঢ় প্রেম আলিঙ্গনে এক হয়ে গেছে উপরে-নীচে দুই গুঁড়ি। তার মধ্যে দাঁড়িয়ে কবি ছবি তুললেন – ’। একদিন চীনের 888sport live chatী ও চিত্রকলার সঙ্গে পরিচিত হলেন। তাঁর জন্মদিন পালন করা হলো, চীনের ভক্তরা উপহার আনলেন। মৃত্যুর কয়েক মাস আগে কবি এ-দিনটির কথা মনে করে লিখেছেন,

‘একদা গিয়েছি চিন দেশে,

অচেনা সাহারা

ললাটে দিয়েছে চিহ্ন তুমি আমাদের চেনা বলে।’

রবীন্দ্রনাথ চীনে কী কী দেখেছেন সে-বিবরণ স্পষ্ট নয়, তাঁর সহযাত্রীরা অনেক ঘুরেছেন যেমন পইমা স্যু চীনে বৌদ্ধধর্মের আদি কেন্দ্র, লাংসিউয়ে পাহাড়ে ও গুহায় মূর্তি-মন্দির-চৈত্য,  প্যাগোডা, বিশাল বুদ্ধমূর্তি, জেড ফাউন্টেন প্রভৃতি দেখেছিলেন। চীনের প্রাচীরের কথা কেউ বলেননি, কবির 888sport slot gameে মিশরের পিরামিডও এমনই উল্লেখহীন। এরপর কবি জাপান ঘুরে স্বদেশে ফিরলেন।

জাপানেই কবি দক্ষিণ আমেরিকার পেরু যাবার নিমন্ত্রণ পান সেখানকার শতবার্ষিক উৎসবে যোগ দেবার জন্যে, ‘তাই হালকা হয়ে চলেছি।’ কিন্তু একই সঙ্গে তাঁর মনে হয়েছে ‘অনেকবার দূরদেশে যাত্রা করেছি, মনের নোঙরটা তুলতে খুব বেশি টানাটানি করতে হয়নি। এবার সে কিছু যেন জোরে ডাঙা অাঁকড়ে আছে। তার থেকে বোধ হচ্ছে, এতদিন পরে আমার বয়স হয়েছে। না-চলতে চাওয়া প্রাণের কৃপণতা, সঞ্চয় কম হলে খরচ করতে সংকোচ হয়।’ তবে মনে মনে তিনি জানতেন, ‘ষাটের থেকে কিছু দূরে গেলেই এই পিছুটানের বাঁধন খসে যাবে। তরুণ পথিক বেরিয়ে আসবে রাজপথে।’ এবার কবি নিজেই লিখছেন পশ্চিমাযাত্রী ডায়ারি। রথীন্দ্রনাথও তাঁর সহযাত্রী। তাঁর লেখা একটি চিঠি থেকে জানা যায়, ‘Red sea-তে যেতে যেতে একটা নতুন প্ল্যান মাথায় এসেছে। Port Said-এ এই জাহাজটা ছেড়ে দিয়ে Palestine ও Egypt (বাবার এমনকি Turkeyও ইচ্ছে আছে) ঘুরে সেরে রাখা যেতে পারে।’ কিন্তু তা হয়নি। যদিও জেরুজালেমের মানুষ কবিকে স্বাগত জানাবার জন্যে প্রস্ত্তত হয়েছিল, জানা গেল ঠিক সময়ে ইউরোপে না পৌঁছোলে পেরু যথাসময়ে পৌঁছানো যাবে না। তাই সব পরিকল্পনা বাতিল করে তাঁর ইউরোপযাত্রা করলেন।

শেরবুর্গ বন্দর থেকে আন্ডেস জাহাজে যাত্রা শুরু হলো, সঙ্গী ছিলেন এল্মহার্স্ট। এ-জাহাজ কবির ভালো লাগেনি কিন্তু বেশ কয়েকটি 888sport app download apk লেখা হলো এবং 888sport app download apkগুলি কাটাকুটির মাধ্যমে অলংকৃত হয়ে উঠল। 888sport slot gameপথেই কবির ছবি অাঁকার সূচনা হলো। রবীন্দ্রনাথ 888sport slot gameকাহিনি পড়তে ভালোবাসতেন এবং কোনো নতুন দেশে যাবার আগে তিনি সেই দেশটির পরিচয় সংগ্রহের জন্য যথাসাধ্য পড়াশোনা করতেন। প্রশান্তকুমার পাল অনুমান করেছেন, জাহাজে তাঁর সঙ্গী হয়েছিল The art of old Peru, কেননা বইটি ১৯২৪ সালেই প্রকাশিত হয়, হয়তো কবির নির্দেশেই বইটি এল্মহার্স্ট কিনে আনেন। জাহাজে এই বই কবিকে ছবি অাঁকতে উদ্বুদ্ধ করতে পারে। কবি আর্জেন্টিনায় পৌঁছে জানতে পারেন, পেরু থেকে তাঁকে সরকারি আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। বুয়েনোসে আইরেসে প্লাজা হোটেলে ওঠেন কবি। শারীরিক অসুস্থতা 888sport slot gameের পরিপন্থী হয়ে ওঠে। তখন তিনি পেরু থেকে আমন্ত্রণ পেয়েছেন। তাঁর আসার খবর পেয়ে ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো হোটেল থেকে কবিকে নিয়ে যান সান ইসিদ্রোর ‘মিরালরিও’ বাড়িতে। বাড়িটি তাঁর পছন্দ হলো। চিঠি লিখেছেন, ‘ডাক্তারের আদেশক্রমে পেরুতে আমার যাওয়া নিষেধ। দীর্ঘ রেলপথে আন্ডেস পেরবার শক্তি আমার নেই।’ তিনি পেরু যাবার পরিকল্পনা ত্যাগ না করে স্থগিত রাখতে চেয়েছিলেন। 888sport slot gameের খরচ এবং বিশ্বভারতীর জন্য প্রস্তাবিত পঞ্চাশ হাজার ডলার পাবার কথাও তাঁর মনে ছিল। শেষদিকের অমানুষিক পরিশ্রমসাপেক্ষ বক্তৃতা-সফর তো বিশ্বভারতীর অর্থ সংগ্রহের জন্যই। তবে 888sport slot gameের আগ্রহও যে ছিল না তা নয়। তিনি লিখলেন, ‘পেরু আমাকে ছাড়তে চাচ্চে না। রেলপথে পর্বত পার হতে ডাক্তারের নিষেধ ছিল তাই আর্জেন্টাইন রাজসরকারের যুদ্ধজাহাজে চড়ে কাল রওনা হবার ব্যবস্থা হয়েছে। দক্ষিণ আমেরিকার পুচ্ছদেশ প্রদক্ষিণ করে আটলান্টিক থেকে প্যাসিফিকে উত্তীর্ণ হয়ে সমুদ্র পথে পেরু যেতে হবে। দুই সপ্তাহ লাগবে। পেরুতে যখন যাচ্চি তখন মেক্সিকো যাওয়াও স্থির।’ পরে ঠিক হলো শরীর ভালো থাকলে কবি চিলি হয়ে পেরু যাবেন। বুয়েনোসে আইরেসে গিয়ে উরুগুয়ের চিত্র888sport live chatীর আঁকা চিত্রও প্রদর্শনীতে একদিন দেখে এলেন কিন্তু শেষ পর্যন্ত ডাক্তারের অনুমতি না পেয়ে পেরু যাবার আশা ছেড়ে ইউরোপে ফিরলেন। ইতালির জেনোয়া শহরে তাঁকে যত্ন করে 888sport live chatবস্ত্ত ও পুরনো দ্রষ্টব্য স্থানগুলি দেখানো হলো। ঘুরে ঘুরে শহর দেখা কবির অপছন্দের মধ্যে পড়ে তবে ভেনিসে মোটরবোটে করে গ্র্যান্ড ক্যাসল, লেগুন ও ছোট খালগুলি তাঁর খুব ভালো লেগেছিল। যে-কোনো স্থানে প্রাকৃতিক দৃশ্য তাঁকে আকৃষ্ট করত। গন্ডোলায় চড়েও সামান্য 888sport slot game করেন। ব্রিন্দিসি হয়ে দেশে ফিরে আসেন।

নয়

এ-বছর কবির 888sport slot game-ভাগ্য ভালো ছিল না। পুজোর সময় দক্ষিণ ভারতের কোকনাদে একটা অনুষ্ঠানে যোগ দেবার জন্যে হাওড়া স্টেশনে গেলেও ভিড়ের জন্যে ট্রেনে উঠতে পারলেন না, ফিরে গেলেন শান্তিনিকেতনে। পরের বছর প্রথম দিকে কবি পূর্ববঙ্গ 888sport slot game করেন। 888sport app, মৈমনসিংহ, কুমিল্লা, আগরতলা, চাঁদপুর – সংবর্ধনা এবং বক্তৃতার খবর পাওয়া যায়। 888sport slot gameেরও একটু খবর মেলে। 888sport appয় এসে নবাবের ‘তুরাগ’ নামক বজরায় অতিথি হয়ে কবি কদিন বুড়িগঙ্গার ওপরে বাস করেন এবং সেই কদিন সকালে একটি লঞ্চে করে জলবিহার করতেন। ১৯২৬-এর ইউরোপযাত্রা আসলে বক্তৃতা-সফর। প্রথমে গেলেন ইতালিতে। এ-ঘটনায় অনেকেই বিস্মিত হয়েছিলেন, কেননা মুসোলিনির উগ্র-জাতীয়তাবাদের সঙ্গে কবির বিশ্বশান্তিবাদের কোনো মিল নেই। সত্যি বলতে কী কবি তাঁর পরিচিত অধ্যাপক ফর্মিকির দ্বারা প্রতারিত হয়েছিলেন। তিনি এবং মুসোলিনি ইতালির মানুষকে কবির বক্তৃতা বলে কী বোঝাচ্ছেন কবি তা বুঝতে পারলেন না, কয়েকদিন পরে যখন তা জানতে পারলেন তখন তিনি ইতালি ছেড়ে জেনিভা চলে গেলেন। এই 888sport slot gameবৃত্তান্ত পাওয়া যায় রবীন্দ্রনাথের সফরসঙ্গী নির্মলকুমারী মহলানবিশের লেখায়। যেমন, ফ্লোরেন্সের আর্ট গ্যালারি কবিকে দেখানো হয়। অতুলনীয় মূর্তি ও চিত্র সংগ্রহ দেখে কবি বলেছিলেন, ‘ফ্লোরেন্সের আর্ট-গ্যালারিতে যা দেখলুম, এই রকমের অতুলনীয় সম্পদ, মানুষের সৃজনীশক্তির এই বিকাশ এর আগে খুব কমই দেখেছি।’ আর একদিন ফিওসোলে গ্রাম দেখতে গেলেন। তার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে কবি ফর্মিকিকে বললেন, ‘এখানে আমার জন্যে যদি ছোট্ট একখানা কুঁড়েঘর বানিয়ে দিতে তাহলে আমার জীবনের বাকি কটা দিন এখানেই কাটিয়ে দিতে পারতাম।’ এরকম বাসনা অবশ্য কবির মনে অনেকবার দেখা দিয়েছে। সুইজারল্যান্ডে ভিলে নুভে-তে কয়েকদিন ছিলেন। রোমাঁ রল্যাঁ ও কয়েকজন পন্ডিত-অধ্যাপকের সঙ্গে সাক্ষাৎ পরিচয় হয়। এরপর কবিকে জুরিখ, লুসার্ন, ভিয়েনা, প্যারিস, লন্ডন, অসলো, কোপেনহেগেন, হামবুর্গ, বার্লিন, ড্রেসডেন, প্রাগ, বুডাপেস্ট, জাগ্রেব, বেলগ্রেড, সোফিয়া, বুখারেস্ট প্রভৃতি বহু শহরে বক্তৃতা দিতে যেতে হয়। অভূতপর্ব জনসংবর্ধনা ও আদর-আপ্যায়নের অন্ত ছিল না। অনেক জায়গায় কবি প্রথম গেলেন, সর্বত্রই তাঁকে দেখবার জন্যে, তাঁর কথা শোনবার জন্যে মানুষের ভিড়। প্রবাসীর সম্পাদক সেই সময় ড্রেসডেনে ছিলেন। তিনি দেখেছিলেন বক্তৃতা-সভা ছাপিয়ে ফুটপাথও জনাকীর্ণ। একই রকম আগ্রহ বেলগ্রেডে। বিশ্ববিদ্যালয়ে দুদিন বক্তৃতা হয়। সব টিকিট নিঃশেষ। ‘দ্বিতীয় দিনে লোক বাহিরের দরজা ভাঙিয়া বক্তৃতাগৃহে প্রবেশ করে ভারতীয় কবির বাণী শুনিবার জন্য, অথবা তাঁহাকে দেখিবার জন্য। কবি বলিয়াছেন এইবার এমন উৎসাহ আর কোথাও দেখেন নাই’ – লিখেছেন প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়। যুগোশ্লাভ সরকার কবিকে আনবার জন্যে রাজকীয় সেলুন পাঠিয়েছিলেন। সেই সেলুনই তাঁকে বুলগেরিয়ার সীমান্ত পর্যন্ত পৌঁছে দেয়। আবার কবিকে রাজধানী সোফিয়ায় নিয়ে আসার জন্য একদল 888sport live footballিক সীমান্ত পর্যন্ত গিয়েছিলেন। অসুস্থতার জন্যে কবি পোল্যান্ড আর রাশিয়া যেতে পারলেন না। পরে রাশিয়া গেলেও পোল্যান্ডে আর যাওয়া হলো না। যেমন ফেরার পথে জাহাজ দুদিন দাঁড়ালেও কবি ইস্তাম্বুলে নামতে পারেননি। অনেক জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তির সঙ্গে এ সময় তাঁর দেখা হয়, মতবিনিময় হয়। নরওয়েতে গিয়ে কবি বিখ্যাত ভাস্কর গুস্তাভ বিগোলান্ভের বিখ্যাত ভাস্কর্য ‘ফাউন্টেন অফ লাইফ’ দেখতে গিয়েছিলেন। ভিয়েনায় দেখলেন ভাগনারের ‘মাই স্টার সিঙ্গার’ অপেরা। এ-সময়ে কবি বালাতনে কদিন বিশ্রাম নেবার সময় লেখনের 888sport app download apk প্রকাশের ব্যবস্থা করলেন। জার্মানিতে কবি দেখলেন হাতের অক্ষর থেকেই ছাপানো চলে এমন উপায় বেরিয়েছে। এভাবেই লেখন মুদ্রিত হলো। তা বলে 888sport slot gameের মধ্যে বিড়ম্বনা ছিল না তা নয়। অনেক জায়গাতেই হোটেলে ওঠার সময় রবীন্দ্রনাথ ও তাঁর সঙ্গীদের দেখে নিতে হতো আর্থিক পরিস্থিতিটি। ভিয়েনার নিউ ব্রিস্টল হোটেলে চূড়ান্ত নবাবী চালে থাকার ব্যবস্থা। নির্মলকুমারী মহলানবিশ লিখলেন, স্থির হলো পরদিনই অন্য হোটেলে যাওয়া হবে। কবি সরস করে বললেন, ‘হাজার হোক প্রিন্স দ্বারকানাথের নাতি তো বটে। এ না হলে আমাকে মানাবে কেন? তবে দুঃখ এই যে পিতামহ টাকার থলিটি নিয়ে অন্তর্ধান করেছেন; শুধু  ফাঁকা  মর্যাদাটুকু পড়ে আছে। তাই তো তাঁর সঙ্গে পাল্লা দিতে গিয়ে নাতির প্রাণ বেরিয়ে গেল।’

এথেন্সে পৌঁছে রবীন্দ্রনাথ আকরোপিলিস ও দর্শনীয় স্থানগুলি দেখে নিলেন। প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশ ও নির্মলকুমারী ফিরলেন লন্ডনে, কবি মিশরের পথে। ফিরতি পথের বিবরণ তিনি দিয়েছেন ‘পথে ও পথের ভ্রান্তে’র চিঠিগুলিতে। ‘এ জায়গায় অনেক দেখবার আছে। আমি তেমন দেখনেওয়ালা নই এই দুঃখ। কিন্তু তবু ম্যুজিয়মে যাবার লোভ সামলাতে পারিনি। দেখবার এত জিনিস খুব অল্প জায়গায় পাওয়া যায়। একটা ব্যাপার এখানে খুব সম্প্রতি আবিষ্কৃত হয়েছে – গ্রীসের যে পার্থেনন গ্রীসের স্বকীয় কীর্তি বলে এতদিন চলে এসেছে সেই পার্থেননের মূলপ্রতিরূপ ইজিপ্টের ভূগর্ভে পাওয়া গেছে। যে স্থপতি এই রীতির স্তম্ভ প্রথম তৈরি করেছিলেন অতি প্রাচীন ইজিপ্টে তিনি একজন অসামান্য রূপকার বলে পূজা পেয়েছিলেন। গ্রীকরা তাঁরই কাজের অনুকরণে নিজেদের মন্দির নির্মাণ করেছিল। এই ব্যাপার নিয়ে আরও অনেক মাটি ও মাথা খোঁড়াখুঁড়ি চলছে।’

 

দশ

১৯২৭ সালের মার্চ মাসে রবীন্দ্রনাথ শান্তিনিকেতন থেকে ভরতপুর গেলেন, সঙ্গী প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়। এই দারুণ গরমে সেখানে যাবার কারণ হিসেবে কবি লিখেছেন, ‘আজ রাতে এগারোটার গাড়িতে আমি ভরতপুর রওনা হচ্ছি।… বিশ্বভারতীর দাবি, দয়ামায়া নেই।’ ভরতপুরে কবি পাঁচদিন ছিলেন, দুদিন বেড়াতে বেরিয়েছেন। একদিন দেখলেন দিগ-এর প্রাসাদ আর একদিন একটি বিল। প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় লিখেছেন, ‘সত্যই মনোরম স্থান – নানা জাতির পাখি জলে ও জলের আশেপাশে খেলা করিতেছে। কবির ভালোই লাগিতেছে, এমন সময় হঠাৎ চোখ পড়িল একটি কাষ্ঠফলকের উপর; কোন্ ইংরেজ কত শত পাখি মারিয়াছেন – তাহাদের নাম ও নিহত পাখির 888sport free bet খোদিত। কবির মন হঠাৎ কঠিন হইয়া উঠিল – বলিলেন, এখান হইতে এখনই চলো!’ ফেরার পথে আগ্রায় আওয়াগড়ের মহারাজার অতিথি হলেন ‘কবির ভাগ্যগুণে এই এক অকৃত্রিম সুহৃদের সঙ্গে পরিচয় হয়। বিশ্বভারতীতে তিনি বহু সহস্র টাকা শর্তহীনভাবে দান করেন ও তাঁহার নির্মিত অট্টালিকাটি বিশ্বভারতীকে দান করিয়া যান।’ আগ্রায় কবি দুদিন ছিলেন। একদিন  ‘প্রাতে কবি তাজমহল দেখিতে গেলেন, কিন্তু তোরণ পর্যন্ত গিয়া শরীর খুব ক্লান্ত বোধ করায় ফিরিয়া আসিলেন, তোরণ হইতে তাজমহলের ওপর দৃষ্টিপাত করিলেন মাত্র।’ এরপর জয়পুর ও আমেদাবাদ হয়ে শান্তিনিকেতনে ফিরলেন। গরমের সময় শিলঙে গেলেও কবি মনে মনে স্থির করেছিলেন বালি, জাভা প্রভৃতি দ্বীপে যাবেন যেমন করেই হোক। রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়কে লিখলেন, ‘সেখান থেকে ভারতীয় ইতিহাসের উপাদান সংগ্রহ এবং এ সম্বন্ধে গবেষণার স্থায়ী ব্যবস্থা করা ছাড়া আমার অন্য কোনো উদ্দেশ্যই নেই। আমি নিজে বোধকরি অল্পদিনই থাকব এবং যদি সাধ্যে কুলোয় তবে কোনো উপযুক্ত ব্যক্তিকে ঐতিহাসিক অনুসন্ধানের জন্য রেখে দিয়ে আসব। কাজটাকে আমি গুরুতর প্রয়োজনীয় বলে মনে করি, এবং এ-ও জানি আমার দ্বারা কাজটা সহজসাধ্যও হতে পারে। জাভা গভর্নমেন্ট আমাকে নিমন্ত্রণ করেননি। সেখানে থেকে যাঁদের উৎসাহ পেয়েছি তাঁরা পুরাতত্ত্ববিদ – আমাদের দেশের পন্ডিতদের সহযোগিতা পেলে তাঁদের সন্ধানকার্যের সুবিধা হতে পারবে।’ কবি যাত্রা করলেন মাদ্রাজ থেকে জাহাজে। এবারে তাঁর সফরসঙ্গীদের মধ্যে প্রধান হচ্ছেন সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়।

জাহাজে উঠে কবি লেখা শুরু করলেন জাভাযাত্রীর পত্র। ‘শ্রোতের জলে যে-ধ্বনি সেটা তার চলারই ধ্বনি, উড়ে-চলা মৌমাছির পাখার যেমন গুঞ্জন। আমরা যেটাকে বকুনি বলি সেটাও সেই মানসিক চলে যাওয়ারই শব্দ। চিঠি হচ্ছে লেখার অক্ষরে বকে যাওয়া।’ কবি লিখেছেন, নিজের চলাতেই মানুষের আনন্দ। এই চলাই তো 888sport slot game। রবীন্দ্রনাথ মনে মনে এদেশ দেখবার জন্যে ব্যাকুল হয়েছিলেন প্রাচীন ভারতকে আরো বেশি জানবার জন্যে। অবশ্য বিশ্বভারতীর অর্থ সংগ্রহের কথা কবিকে মনে রাখতেই হতো। সেজন্যে মালয়ের বক্তৃতা-সফরে ব্যস্ত রইলেন এক মাস। সিঙ্গাপুর ছাড়াও গেলেন মালাক্কা। সেখান থেকে মুআর নদীর বন্দরে। রবীন্দ্রনাথের মোটর গাড়ি খেয়া-স্টিমারে পার হলো। তারপর কুয়ালালামপুর, পেরাক, ইপো, পেনাং। মিয়ানমার থেকে নির্মলকুমারী মহলানবিশকে লিখেছেন, ‘এখানে ভারতীয় বিদ্যার এই সব ভাঙাচোরা মূর্তি দেখে মনে হয় যেন ভূমিকম্প হয়ে একটা প্রাচীন মহানগরী ধসে গিয়েছে – সেইসব জায়গায় উঠেছে পরবর্তীকালের ঘরবাড়ি চাষ-আবাদ, আবার অনেক জায়গায় সেই পুরোনো কীর্তির অবশেষ উপরে জেগে, এই দুইয়ে মিলে জোড়া-তাড়া দিয়ে এখানকার লোকালয়।’ প্রচন্ড পরিশ্রমে ক্লান্ত হয়ে আবার তাইপিং থেকে লিখলেন, ‘আমৃত্যুকাল কোনোদিন কোথাও যে সহজে 888sport slot game করতে পারব সে আশা বিড়ম্বনা। পথ সুদীর্ঘ, পাথেয় স্বল্প, অর্জন করতে করতে গর্জন করতে করতে, হোটেলে হোটেলে ডলার বর্জন করতে করতে আমার 888sport slot game – গলা চালিয়ে আমার পা চালানো।’ যদিও এবার চলেছেন নিজের গরজে, প্রাচীন ভারতকে জানার আগ্রহ তাঁর বেড়াবার আগ্রহের চেয়ে বেশি। বাটাভিয়া, সুরবায়া ঘুরে পৌঁছলেন বহু ঈপ্সিত বালি দ্বীপে ‘দেখলেম ধরণীর চির যৌবনা মূর্তি। এখানে প্রাচীনশতাব্দী নবীন হয়ে আছে। এখানে মাটির ওপর অন্নপূর্ণার পাদপীঠ শ্যামল আস্তরণে দিগন্ত থেকে দিগন্তে বিস্তীর্ণ, বনচ্ছায়ার অঙ্কলালিত লোকালয়গুলিতে সচ্ছল অবকাশ। সেই অবকাশ উৎসবে অনুষ্ঠানে নিতান্তই পরিপূর্ণ। প্রায় সর্বত্রই কবি দেখেছেন জাভা ও বালির নৃত্য, ছায়ানৃত্য, মুখোশনৃত্য – রামায়ণ-মহাভারতের কাহিনি অবলম্বনে। যদিও ভারতীয় মহাকাব্যের সঙ্গে সে-কাহিনির সাদৃশ্য কম। কবি দেখেছেন সেখানে কৃষ্ণ আছেন, বৃন্দাবনলীলা নেই। শিব আছেন, কালী নেই। প্রাচীন নাম অযোধ্যা যোগ্যকর্তা বা যোগ্যা (জাকারতা) হয়েছে। জাভায় শিব হয়েছেন নটরাজ। ‘ভারতবর্ষ থেকে নটরাজ এসে একদিন এখানে মন্দিরে পুজো পেয়েছিলেন, তিনি এদের যে-বর দিয়েছেন সে হচ্চে তাঁর নাচটি – আর আমাদের জন্যে কি কেবল তাঁর শ্মশানভস্মই রইল।’ জাভা দেখেছেন কবি খুব মন দিয়ে। তাঁর 888sport slot gameপিপাসু ‘চিত্রবিলাসী’ মন এখানে যথার্থ আনন্দ পেয়েছিল। ‘পথে আসতে পেরাম্বান  বলে এক জায়গায় পুরনো ভাঙা মন্দির দেখতে নামলুম। এ জায়গাটা ভুবনেশ্বরের মতো, মন্দিরের ভগ্নস্তূপে পরিকীর্ণ। ভাঙা পাথরগুলি জোড়া দিয়ে দিয়ে ওলন্দাজ গভর্নমেন্ট মন্দিরগুলিকে তার সাবেক মূর্তিতে গড়ে তুলছেন।… দুই একজন বিচক্ষণ য়ুরোপীয় পন্ডিত এই কাজে নিযুক্ত।… এই কাজ সুসম্পূর্ণ করার জন্যে আমাদের পুরাণগুলি নিয়ে এঁরা যথেষ্ট আলোচনা করছেন।’ এখানে কবি ভুবনেশ্বরের মন্দিরের কথা লিখেছেন, নিশ্চয় তিনি মন্দিরগুলি দেখেছিলেন কিন্তু কবে তা জানা যায়নি। এভাবে তাঁর অনেক 888sport slot gameের কথা অজানা রয়েছে। বক্তৃতা-সফরে যখন তিনি বিদেশ যেতেন, সবাই চাইত তাঁকে সেদেশের সেরা দ্রষ্টব্য স্থানে নিয়ে যেতে। কদিন বিশ্রামের প্রয়োজন হলে আশ্রয় নিলেন এক ভদ্রলোকের বাড়িতে ‘বাগান দিয়ে বেষ্টিত সুন্দর বাড়িটি পাহাড়ের উপর। এখান থেকে ঠিক সামনেই দেখতে পাই নীল গিরিমন্ডলীর কোলে বান্ডুঙ শহর। পাহাড়ের যে অঞ্জলির মধ্যে এই শহর, অনতিকাল আগে সেখানে সরোবর ছিল। কখন এক সময় পাড়ি ধসে গিয়ে তার সমস্ত জল বেরিয়ে চলে গেছে। এতদিন ঘোরাঘুরির পরে এই সুন্দর নির্জন জায়গায় নিভৃত বাড়িতে এসে বড়ো আরাম বোধ হচ্ছে।’  মুন্ডুঙ-এর বৌদ্ধ মন্দিরটি তাঁর ভালো লাগলেও বোরোবুদুর তাঁকে মুগ্ধ করেনি। ‘এর আগে বোরোবুদুরের ছবি অনেকবার দেখেছি। তার গড়ন আমার চোখে কখনোই ভালো লাগেনি। আশা করেছিলুম হয়তো প্রত্যক্ষ দেখলে এর রস পাওয়া যাবে। কিন্তু মন প্রসন্ন হল না। থাকে থাকে একে এমন ভাগ করেছে, এর মাথার উপকার চূড়াটুকু এর আয়তনের পক্ষে এমন ছোটো যে, যত বড়োই এর আকার হোক এর মহিমা নেই।’ 888sport app download apkয় লিখলেন,

‘অর্ঘ্যশূন্য কৌতূহলে দেখে যায় দলে দলে আসি।

888sport slot gameবিলাসী –

বোধশূন্য দৃষ্টি তার নিরর্থক দৃশ্য চলে গ্রাসি।’

কবির 888sport slot gameসঙ্গী সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় লিখেছেন, ‘কবি যবদ্বীপে বোরোবুদুর দেখেছেন, প্রাম্বানান দেখেছেন, শ্যামে গেলে সেখান থেকে কম্বোজ গিয়ে ভারতীয় স্থাপত্যের আর ভাস্কর্যের অবিনশ্বর কীর্তি Angkor আঙ্কর-ও তাঁকে দেখতেই হবে। আমার এ নির্বন্ধ কবি উৎসাহের সঙ্গে স্বীকার করলেন।’ কিন্তু ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও কবির কম্বোজ বা কম্বোডিয়া যাওয়া হয়নি। ব্যাংকক 888sport slot game করেই তাঁকে ফিরতে হয়।

 

এগারো

১৯২৮ সলের মাঝামাঝি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে হিবার্ট লেকচার দেবার আমন্ত্রণ পেয়ে রবীন্দ্রনাথ ইংল্যন্ডে যাত্রা করবেন বলে মাদ্রাজ গেলেন কিন্তু অসুস্থতার জন্যে কিছুদিন বিশ্রাম নিতে হলো নীলগিরির শৈলাবাস কুন্নুরে। আবার বিদেশ যাবেন বলে মাদ্রাজে ফিরে জাহাজে পন্ডিচেরী আসেন। সেখানে জেটি থেকে কিছুদূরে জাহাজ দাঁড়ায়। তাই কবিকে একটা পিপের মধ্যে বসিয়ে কপিকল বা ক্রেনের সাহায্যে নিচে নামানো হয়। ‘আমাকে যেভাবে জাহাজ থেকে ওঠা-নামা করেছিল তাতে মর্যাদা রক্ষা হয় না।’

এখানে এসে কবি শ্রীঅরবিন্দের সঙ্গে দেখা করেন ও কথা বলেন। ‘অনেকদিন মনে ছিল অরবিন্দ ঘোষকে দেখব। সেই আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ হল।’ মীরা দেবীকে লিখলেন, ‘অরবিন্দকে দেখে আমার ভারি ভালো লাগল – বেশ বুঝতে পারলাম নিজেকে ঠিকমত পাবার এই উপায়।’

শরীর অসুস্থ বলে কদিন বিশ্রাম নিলেন সিংহলে (শ্রীলংকা)। বুদ্ধের জন্মদিনে অনুরাধাপুরে বোধিবৃক্ষের পাদদেশে বিশাল উৎসব হয় বলে কবি ডাক্তারের সঙ্গে সেখানে উপস্থিত হন।

পরের বছর নিমন্ত্রণ এলো কানাডা থেকে। আগেও এসেছিল, যাওয়া হয়নি। ভিক্টোরিয়া ও ভ্যানকুভারে প্রচুর ভিড় হয়েছিল তাঁকে দেখতে। তিনি কী কী দেখলেন, নিশ্চয় দেখেছিলেন, জানা যায়নি। ফেরার পথে জাপানে এলেন, ইচ্ছে ছিল কোরিয়া হয়ে সাইবেরিয়ান রেলপথে রাশিয়া যাবেন। ডাক্তারের অনুমতি না পেয়ে নামলেন সায়গনে। দু-তিনটি মন্দির এবং মিউজিয়ামে ইন্দোচীনের 888sport live chatসংগ্রহ দেখে ফিরে এলেন। ১৯৩০-এর শুরুতেই কবি বরদা গেলেন, ফিরলেন আগ্রা, লখনৌ, আমেদাবাদ প্রভৃতি ঘুরে, আসলে এও ছিল বিশ্বভারতীর জন্যে বক্তৃতা-সফর।

এরপরই চললেন বিদেশে মাদ্রাজ হয়ে ‘আজ চলেছি রেলগাড়িতে চড়ে মাদ্রাজের দিকে।… জানালার বাইরে আমার দুচোখের অভিসার আর থামে না।’ প্যারিসে পৌঁছেই তাঁর ছবির প্রদর্শনীর ব্যবস্থা শুরু হয়ে গেল। ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোর চেষ্টাই সবচেয়ে বেশি। ফ্রান্সের চিত্রবোদ্ধারা ছবির প্রশংসা করলেন। হিবার্ট লেকচার এবারে দিলেন। কয়েকদিন বিশ্রাম নিলেন, বেশিরভাগ সময় কাটালেন ছবি এঁকে। এরপর কবির ঝটিকা সফর শুরু হলো। বক্তৃতার সঙ্গে সঙ্গে চিত্র-প্রদর্শনী। বার্লিনে কবিকে সাহায্য করেছেন Dr. Anna Selig. ড্রেসডেনে গিয়ে নিশ্চয় সেখানকার বিখ্যাত 888sport live chatসংগ্রহ দেখেছেন। যেমন ম্যুনিখে গিয়ে একদিন গিয়েছিলেন ওবারয়্যামারগাও গ্রামে, সেখানে যিশুখ্রিষ্টের জীবন অবলম্বনে প্যাশান প্লে দেখতে। দেশ-বিদেশ থেকে দর্শকরা এই অভিনয় দেখতে আসতেন। কবি সমস্ত দিন বসে অভিনয় দেখেছিলেন। সম্ভবত এর প্রভাব পড়ে তাঁর The Child রচনায়। কোপেনহেগেনেও চিত্র-প্রদর্শনী হয়। কবি লিখেছেন, ‘পড়েছি ঘূর্ণির মধ্যে – কোথাও একদন্ড থামতে দিলে না।’ জেনেভায় এক মাস কাটিয়ে কবি ট্রেনে যাত্রা করলেন রাশিয়ায়।

রবীন্দ্রনাথের রাশিয়া যাবার আগ্রহ, দুবার সে চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছিল, রাশিয়ার চিঠির সূচনাতেই লিখেছেন, ‘রাশিয়ায় অবশেষে আসা গেল। যা দেখছি আশ্চর্য ঠেকছে। অন্য কোনো দেশের মতোই নয়। একেবারে মূলে প্রভেদ। আগাগোড়া সকল মানুষকেই এরা সমান করে জাগিয়ে তুলছে।’ এতদিন কম্যুনিস্ট সম্বন্ধে কবির স্পষ্ট ধারণা ছিল না, চিরকাল সাধারণ মানুষ জীবনযাত্রার মতো কিছু সুযোগ থেকে বঞ্চিত, তাদের সমস্যা সমাধানের চেষ্টা তিনি দেখলেন রাশিয়ায় এসে। ‘শুধু শ্বেত রাশিয়ার জন্যে নয় – মধ্য এশিয়ার অর্ধসভ্য জাতের মধ্যেও এরা বন্যার মতো বেগে শিক্ষা  বিস্তার করে চলেছে; সায়েন্সের শেষ ফসল পর্যন্ত যাতে তারা পায় এই জন্যে প্রয়াসের অন্ত নেই। এখানে থিয়েটারে ভালো ভালো অপেরা ও বড়ো নাটকের অভিনয়ে বিষম ভিড়, কিন্তু যারা দেখছে তারা কৃষি বা কর্মীদের দলের। কোথাও এদের অপমান নেই।’ অবশ্য একই সঙ্গে দেখেছেন, ‘আহারে ব্যবহারে এমন সর্বব্যাপী নির্ধনতা য়ুরোপের আর কোথাও দেখা যায় না।’ তবু ‘ধন গরিমার ইতরতার তিরোভাব’ তাঁকে মুগ্ধ করেছে, রাশিয়া ‘না এলে এ জন্মের তীর্থদর্শন অত্যন্ত অসমাপ্ত থাকত।’ মস্কো থেকে বার্লিনে ফিরে কবি আমেরিকা যাত্রা করলেন। কিছুটা অসুস্থ হলেও সেখানে প্রচার করা হলো তিনি খুব অসুস্থ। আসলে ধনতান্ত্রিক দেশের ভয় ছিল পাছে তিনি বক্তৃতায় সমাজতন্ত্রবাদের প্রশংসা করেন। ছবির প্রদর্শনী হবার পরে কিছুটা বিরক্ত হয়েই কবি ফিরে এলেন লন্ডনে, দিন পনেরো পরে দেশে। জন্মদিনের উৎসবের পর দার্জিলিংয়ে এক মাস বিশ্রাম নিয়ে কলকাতায় ফিরে গেলেন ভূপালে, সঙ্গে ছিলেন নন্দলাল বসু। কয়েক মাইল দূরে সাঁচী। সূতপ দেখে এসে অসিতকুমার হালদারকে লিখলেন, ‘সাঁচীর কীর্তি দেখে খুবই খুশি হয়েছি… কাল ফিরে চললুম ইটারসি হয়ে।’

 

বারো

রবীন্দ্রজয়ন্তী উৎসব ঘটা করে পালিত হবার পর কবি খড়দহে গঙ্গার তীরে বাস করেন। দোতলা বাড়িটি কবির পছন্দ হয়েছিল, বাঁধানো সিঁড়ি নেমে গিয়েছিল জল পর্যন্ত, ঘাটে বাঁধা থাকত পদ্মাবোট। এ-বাড়ি থেকেই পারস্য (ইরান) যাত্রা করলেন বিমানে। তাঁর পারস্যযাত্রী একটি অসামান্য 888sport slot gameকাহিনি। শুরু হয়েছে এভাবে, ‘দেশ থেকে বেরোবার বয়স গেছে এইটেই স্থির করে বসেছিলুম। এমন সময় পারস্যরাজের কাছ থেকে নিমন্ত্রণ এল। মনে হল এ নিমন্ত্রণ অস্বীকার করা অকর্তব্য হবে।’ এবার বিমানে যাচ্ছেন ‘যত উপরে উঠছে ততই পৃথিবীর রূপবৈচিত্র্য কতকগুলো অাঁচড়ে এসে ঠেকল। বিস্মৃতনামা প্রাচীন সভ্যতার 888sport sign up bonusলিপি যেন অজ্ঞাত অক্ষরে কোনো মৃতদেশের প্রান্তর জুড়ে খোদিত হয়ে পড়ে আছে; তার রেখা দেখা যায় অর্থ বোঝা যায় না।’ পথে পড়ল মস্কো। দেখলেন সূর্যাস্ত। ‘রিক্ত এই ভূখন্ডে নীলাম্বুচুম্বিত বালুরাশির মধ্যে বৈচিত্র্যসম্পদ কিছুই নেই। সেই জন্যেই বুঝি গোধূলিবেলায় দিগঙ্গনার স্নেহ দেখলুম এই গরিব মাটির পরে। কী সুগম্ভীর সূর্যাস্ত, কী তার দীপ্যমান শান্তি, পরিব্যাপ্ত মহিমা।’ আবার চলেছেন বুশেয়ার থেকে শিরাজে। শিরাজ কবি সাদী ও কবি হাফিজের শহর, দুজনের সমাধি দেখলেন কবি। ই্স্পাহানে যাবার পথে দেখলেন পর্সিপোলিস ‘দিগবিজয়ী দরিয়ুসের প্রাসাদের ভগ্নশেষ’। কবিকে ‘চৌকিতে বসিয়ে পাথরের সিঁড়ি বেয়ে’ নিয়ে যাওয়া হলো। দেখলেন 888sport live chatসংগ্রহ ‘অধ্যাপক তারই একটি নকশাকাটা ডিমের খোলার পাত্র আমাকে দেখালেন। বললেন মহেঞ্জোদারোর যেরকম কারুচিত্র এও সেই জাতের।’ কবি যতই দেখছেন ততই ভালো লাগছে, সংবর্ধনা, আপ্যায়ন, বক্তৃতা থাকা সত্ত্বেও। ইতিহাস-পুরাণ তাঁর কাছে জীবন্ত হয়ে উঠছে। একই সঙ্গে অনুভব করছেন বয়সোচিত শ্রান্তি ও ক্লান্তি ‘যারা খাঁটি 888sport slot gameকারী তারা জাতই আলাদা। একদিকে তাদের শরীর মন চিরচলিষ্ণু, আর একদিকে অনভ্যস্তের মধ্যে তাদের সহজ বিহার। সারা শরীরটাকে স্তব্ধ রেখে মনটাকে চালায় তারা অন্য শ্রেণীর লোক।’ পারস্যের উদ্যান, প্রাচীন মসজিদ, গির্জা সবই দেখলেন, প্রকৃতিও ধরা দিলো তেহরান থেকে হামাদাম যাবার পথে ‘দুই ধারে ভূমি সুজলা সুফলা, মাঝে মাঝে বড়ো বড়ো গ্রাম, অাঁকাবাঁকা নদী, আঙুরের খেত, আফিমের পুষ্পোচ্ছ্বাস। …পপলার তরুসংঘের ফাঁকের ভিতর দিয়ে দেখা যাচ্ছে বরফের অাঁচড়-কাটা পাহাড়।’ এভাবে অনেকগুলো শহর দেখতে দেখতে কবি পৌঁছোলেন ইরাকের বাগদাদে। টাইগ্রিস নদীর ধারে তাঁদের হোটেল, সকলেই দেখে নিলেন মিউজিয়াম ‘অতি প্রাচীন যুগের যে-সব সামগ্রী মাটির নিচে থেকে বেরিয়েছে’ সেগুলোও দেখলেন। পরিশ্রান্ত কবি আর ঘুরে ঘুরে শহর দেখতে পারছেন না, বাদ গেল টেসিফোন। একদিন নিমন্ত্রণ পেলেন বেদুয়িন দলপতির তাঁবুতে। যেতেই হলো। একদিন লিখেছিলেন ‘ইহার চেয়ে হতেম যদি আরব বেদুয়িন’ আর আজ সেখানে যাবেন না তাও কি হয়? ফেরার সময়, ‘যখন আমাদের মোটর চলল, দুই পাশের মাঠে এদের ঘোড়সওয়াররা ঘোড়া ছোটাবার খেলা দেখিয়ে দিলে। মনে হলো মরুভূমির ঘূর্ণা হাওয়ার দল শরীর নিয়েছে।’ পরিতৃপ্ত মনে কবি দেশে ফিরলেন।

তিন মাস পরে গান্ধীজি পুনার জেলে অনশন করেছেন শুনে রবীন্দ্রনাথ পুনায় গেলেন। গান্ধীজি অনশন ভঙ্গ করলে কবি ফিরে আসেন। ১৯৩৩-এ গরমের সময় দার্জিলিংঙে গিয়ে দুমাস থাকলেন। আবার বোম্বাই, হায়দ্রাবাদ যাত্রা করলেন নভেম্বরে। অন্ধ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতা দেওয়া ছাড়াও বিশ্বভারতীর অর্থ সংগ্রহ ছিল এই 888sport slot gameের প্রধান কারণ। পরের বছর গরম সহ্য করতে না পেরে ‘গঙ্গার শরণাপন্ন হয়েছি – অনেককাল পরে আরেকবার সেই বোটের আতিথ্য নিতে হোলো। এ পদ্মার চর নয়, চন্দননগরের নদীতীর। ঠিক এই জায়গাটাতে সামনের ঐ বাড়িতে ছিলুম যখন আমার বয়স আঠারো।’ ১৯৩৪ সালেই অমিয় চক্রবর্তীকে আবার মাদ্রাজ থেকে লিখলেন, ‘ভারতবর্ষের প্রদেশে প্রদেশে নাচগান বর্ষণ করে বেড়ানো এই আমার এক কাজ হয়েচে।’ কবি সিংহলে গেলেন তাঁর ‘দল’ নিয়ে। কলম্বো, পানাহুয়া, গ্যালে, মাতারু, ক্যান্ডিতে এসে দেখলেন প্রাচীন লোকনৃত্য ও মুখোশনৃত্য। কবি কয়েক বছর পরে আলমোড়ায় বসে লিখেছিলেন, ‘সিংহলে সেই দেখেছিলেম ক্যান্ডি দলের নাচ।’ ক্যান্ডি থেকে তাঁরা অনুরাধাপুরে গেলেন। অনুরাধাপুরের প্রত্নসম্পদ দেখার আগ্রহ কবির ছিল। সেখানে একদিন কাটিয়ে এলেন জাফনায়। তামিল অধ্যুষিত জাফনা তখন শান্ত, কয়েকদিন পরে ধনুষ্কোটি হয়ে মাদ্রাজে ফিরে এলেন। ভারত ভূখন্ডের বাইরে এই কবির শেষ 888sport slot game।

 

তেরো

কয়েক মাস পরে আবার তাঁকে মাদ্রাজে আসতে হয়, সেখান থেকে কাশিতে, বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতা দিতে। ফিরলেন এলাহাবাদ, লখনৌ, লাহোর হয়ে। পরের বছরই আবার যেতে হলো অভিনয়ের দল নিয়ে। পাটনা, এলাহাবাদ, লাহোর হয়ে এলেন দিল্লিতে ‘888sport apk download apk latest versionবিহীনের দ্বারে ব্যর্থ ভিক্ষাপাত্র বহনের দুঃখ ও অসম্মান’ নিয়ে। গান্ধীজি কবির সঙ্গে দেখা করে ৬০,০০০ টাকার একটি চেক দিয়ে জানান, ‘কবির যে-বয়স তাহাতে তাঁহার পক্ষে এভাবে অর্থের জন্য ঘুরিয়া বেড়ানো সমীচীন হইবে না।’ লিখেছেন প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়, ‘এই টাকায় বিশ্বভারতীর ঋণভার শোধ হইবে।’ কবি লিখেছেন, ‘যে ছুটি আজ আমার অত্যন্ত আবশ্যক ছিল সেই ছুটির এত্ত বড়ো দাম এক মুহূর্তে যিনি শোধ করে দিয়েছেন তাঁর উদ্দেশে রইল আমার জীবনের শেষ নমস্কার।’ তিনি নিশ্চিন্ত মনে মিরাট হয়ে যেহেতু সেখানকার প্রস্ত্ততিপর্ব সারা হয়েছিল, ফিরে আসেন।

১৯৩৭-এ কবি গরমের সময় বিশ্রাম নিতে আলমোড়া যাত্রা করলেন। তাঁর সচিব অনিলকুমার চন্দ দেখলেন, কবি সঙ্গে নিলেন প্রচুর বই ও ছবি অাঁকার সরঞ্জাম। লেখাও চলল ‘পুরোদমে’, বিশ্বপরিচয়ের খসড়া। দুমাস পরে রানিখেত হয়ে কবি ফিরলেন ঘরে। ঘুরে এলেন পতিসরে। এখন শুধু কলকাতা আর বোলপুর। এবারের গরমকালে কালিম্পঙ গেলেন, ইতিপূর্বে এখানে আসা হয়নি। থাকার ব্যবস্থা হলো গৌরীপুর লজে। জায়গাটি কবির খুব পছন্দ হলো ‘দার্জিলিঙের মতো বৃষ্টি এখানে নাই, আলমোড়ার ন্যায় শুকনো স্থানও এটি নয়। সর্বোপরি লোকের ভিড় কম -।’ একমাস পরে এলেন মংপুতে মৈত্রেয়ী দেবীর আমন্ত্রণে। শেষ করলেন বাংলাভাষা-পরিচয়। ভূমিকায় লিখলেন, ‘আমি যেন পায়ে চলা পথের 888sport slot gameকারী’। কবির 888sport slot gameপর্ব প্রায় শেষ হলেও নিজেকে তিনি পথিক বলেই ভাবছেন। মংপু থেকে আবার ফিরলেন কালিম্পঙ। ১৯৩৯ সালে পুরীতে গিয়ে তিন সপ্তাহ থাকলেন ‘আমার শরীর-মনে সমুদ্রের হাওয়া যে শুশ্রূষাশীতল হাত বুলিয়ে দিচ্ছে সেটা নূতন দায়িত্বপ্রাপ্ত উড়িষ্যাপ্রদেশের আতিথ্যের প্রতীক।’ পুরী থেকে ফিরেই গেলেন মংপুতে। এক মাস পরে শান্তিনিকেতনে ফিরে তিন সপ্তাহ রইলেন শ্রীনিকেতনে। সেপ্টেম্বরে আবার মংপুতে দুমাসের জন্যে। আসন্ন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ কবিকে অত্যন্ত দুঃখ দিয়েছিল। এ বয়সেও কবি একবার গেলেন মেদিনীপুরে বিদ্যাসাগর 888sport sign up bonus মন্দিরের দ্বার উদ্ঘাটন করতে। বি এন আর কোম্পানির স্পেশাল সেলুন তাঁকে নিয়ে যায়। রবীন্দ্রজীবনীকার মন্তব্য করেছেন, ‘স্থির হইয়া থাকা কবির ভাগ্যেও নাই, স্বভাবেও নাই। তাহা না হইলে আশি বৎসর বয়সে লোকেই বা তাঁহাকে আহবান করিবে কেন, আর তিনিই বা আহবানে সাড়া দেন কেন।’ কবি একদিন গেলেন সিউড়িতে প্রদর্শনী উদ্বোধন করতে। এরপর নিমন্ত্রণ এলো বাঁকুড়া থেকে, পথে রানিগঞ্জে জনতার চাপে তাঁর মোটরগাড়ি ভাঙবার উপক্রম হলো। তবে বাঁকুড়ার মেডিক্যাল স্কুল দেখে, সেখানকার লেডি ডাফরিন প্রসূতি সনদের ভিত্তি স্থাপন করে তিনি খুশি হয়েছিলেন। তিনদিন বাঁকুড়ায় কাটিয়ে ফিরে আসেন শান্তিনিকেতনে। ১৯৪০-এর গরমেও গেলেন পাহাড়ে মংপু ও কালিম্পঙে। জুনে ফিরলেন কলকাতায়, জুলাইয়ে শান্তিনিকেতনে। বিশ্বযুদ্ধের খবর শুনে স্থির থাকতে পারছেন না যেন। তাই সেপ্টেম্বরেই আবার কালিম্পঙে, চিকিৎসকদের নিষেধ অগ্রাহ্য করে। অমিয় চক্রবর্তীকে লিখলেন, ‘ভারতবর্ষে এমন জায়গা নেই যেখানে পালিয়ে থাকা যায়।’ প্রকৃতির শোভা এখনো তাঁকে টানে, ‘শারদা পদার্পণ করেছেন, পাহাড়ের শিখরে, পায়ের তলায় মেঘপুঞ্জ কেশর ফুলিয়ে স্তব্ধ হয়ে আছে। মাথার কিরীটে সোনার রৌদ্র বিচ্ছুরিত।’ 888sport app download apkও লিখলেন,

‘আমার আনন্দে আজ একাকার ধ্বনি আর রঙ

জানে তা কি এ কালিম্পঙ?’

কবির 888sport slot game সাঙ্গ হলো কিন্তু কলকাতার বাড়ি যে তাঁর ভালো লাগে না, দুমাস পরে ফিরলেন শান্তিনিকেতনে। প্রতিমা দেবী লিখেছেন, ‘আষাঢ় মাস পড়তেই বাবামশায় খোলা আকাশে বর্ষার রূপ দেখবার জন্য উতলা হয়ে উঠলেন, এখন তাঁকে উত্তরায়ণের দোতলায় নিয়ে আসা হল।’ ভাবতে অবাক লাগে, প্রকৃতির অজস্ররূপ তিনি দেখেছেন সারাজীবন ধরে, তবু কি তাঁর মন ভরেনি? না হলে বিশ্বপথিক কেনই বা আক্ষেপ করবেন,

বহুদিন ধরে বহু ক্রোশ দূরে

বহু ব্যয় করি বহু দেশ ঘুরে

দেখিতে গিয়েছি পর্বতমালা

দেখিতে গিয়েছি সিন্ধু।

দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া

ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া

একটি ধানের শিষের উপরে

একটি শিশির বিন্দু।’

এ কী শুধুই 888sport app download apk; না, প্রকৃতিকে দেখার আকাঙ্ক্ষা। বর্ষার রূপ দেখতে চাওয়ার মধ্যেও তো রয়েছে সেই আকাঙ্ক্ষা।

অবস্থার ক্রমাবনতি হওয়ায় কবিকে কলকাতায় নিয়ে আসা হয় ইস্ট ইন্ডিয়া রেলওয়ের একটি বিশেষ সেলুনে করে। সত্তর বছর আগে কবি প্রথমবার রেলগাড়ি চড়ে হাওড়া থেকে বোলপুরে এসেছিলেন। শেষযাত্রাও সেই বোলপুর থেকে হাওড়া স্টেশন, সেলুনটি পাকুড় এক্সপ্রেসের সঙ্গে যুক্ত করা হলো। বিশ্ব888sport slot game সেরে ঘরের ছেলে ফিরলেন ঘরে অর্থাৎ জোড়াসাঁকোর বাড়িতে। যেন সেখানে কয়েকটা দিন কাটিয়ে প্রতিবারের মতো আবার তিনি পাড়ি দেবেন অনেক দূরের পথ।

 

 

সহায়ক গ্রন্থ

ইন্দিরা দেবী চৌধুরানী : 888sport sign up bonusসম্পুট।

কালিদাস নাগ : কবির সঙ্গে একশো দিন।

কৃষ্ণ কৃপালনী : দ্বারকানাথ ঠাকুর বিস্মৃত পথিকৃৎ (অনু ক্ষিতীশ রায়)।

খগেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় : রবীন্দ্রকথা।

নির্মলকুমারী মহলানবিশ : কবির সঙ্গে ইয়োরোপে।

পশুপতি শাসমল : স্বর্ণকুমারী দেবী ও বাংলা 888sport live football।

প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় : রবীন্দ্রজীবনী (১-৪ খন্ড)।

প্রভাতকুমার পাল : রবিজীবনী (১-৯ খন্ড)।

শ্রীমন্মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের আত্মজীবনী (সম্পা. সতীশচন্দ্র চক্রবর্তী)।

সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় : রবীন্দ্রসঙ্গমে দ্বীপময় ভারত ও শ্যামদেশ।

রবীন্দ্র রচনাবলী ও বিভিন্ন ব্যক্তিকে লেখা চিঠি।