ফারুক আলমগীর
তথ্য মহাসরণির অত্যাধুনিক প্রযুক্তির দিনে খবর পৌঁছতে কোনো বিলম্ব ঘটে না। পৃথিবীর এক প্রাপ্ত থেকে অন্য প্রামেত্ম এখন তথ্যসংঘটনের বিপস্নব আমাদের ত্বরিত চকিত করে, স্তম্ভিত করে প্রতি মুহূর্তে। সুতরাং নিউইয়র্কের নর্থ-শোর ইউনিভার্সিটি হাসপাতালে ২৮ আগস্ট সকাল ৮টা ২০ মিনিটে বাংলা 888sport app download apkর জগতে যে-দুঃসংবাদটি ঘটল তা পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার পার্থ শহরে পৌঁছে আমাকে চকিত ও স্তম্ভিত করতে বিলম্ব করেনি। তখন এখানে সন্ধ্যা উত্তীর্ণ হয়ে ঘন কালো রাত নেমেছে। বাইরে প্রচ- শীত আর ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে বৃষ্টি। মাসখানেক আগে সমকালের ‘কালের খেয়া’য় প্রকাশিত আমার একটি 888sport app download apkর মতো বিষাদঘন-পরিবেশ। আমার স্ত্রী তার মোবাইল ফোনে একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল সামনে ধরে দেখাল খবরটি। মুহূর্তে আমি স্তব্ধ, বাক্যহীন হয়ে শূন্যে দৃষ্টি প্রসারিত করলাম, যেন বুকটা শূন্য হয়ে গেল যদিও খবরটি অপ্রত্যাশিত ছিল না, কেননা দেড় দশক ধরে যুদ্ধ করা শরীরটা ক্রমশ অবনতির দিকেই যাচ্ছিল। তবু বিদেশে একটা স্থিত জীবন, সুচিকিৎসা ও পরিচর্যা ইত্যাদি নিয়ে আমাদের আশাজাগানিয়া ছিলেন ষাটের দশকের আড্ডার উজ্জ্বল পুরুষ এবং পুরুষোত্তম 888sport app download apkর জনক আমাদের অনেকের ‘ওসত্মাদ’ কবি শহীদ কাদরী।
মাত্র ১২৬টি 888sport app download apk নিয়ে বাংলা 888sport live footballে একটি পাকাপোক্ত আসনের অধিকারী কবি শহীদ কাদরী ভিন্ন আর দ্বিতীয় কেউ নেই। তাঁর চারটি গ্রন্থ উত্তরাধিকার (১৯৬৭), তোমাকে অভিবাদন, প্রিয়তমা (১৯৭৪), কোথাও কোনো ক্রন্দন নেই (১৯৭৮) এবং ২০০৯ সালে প্রবাসে লেখা আমার চুম্বনগুলো পৌঁছে দাও চারটি গ্রন্থ মিলে মোট ১২২টি 888sport app download apk এবং অগ্রন্থিত কালি ও কলমে প্রকাশিত তিনটি ও প্রথম আলো ঈদ-888sport free betয় একটি, সবমিলিয়ে ১২৬টি 888sport app download apkর জনক শহীদ কাদরী। 888sport app download apkর একাগ্র পাঠক ও 888sport app download apkচর্চায় নিয়োজিত কবিদের প্রায় সকলেই শহীদ কাদরীর 888sport app download apk পাঠ করেছেন। তাঁর অনন্যসাধারণ 888sport app download apkর উচ্ছ্বসিত আলোচনা পড়েছেন কিংবা শুনেছেন, কিন্তু কবি শহীদ কাদরী যে একজন অসাধারণ আড্ডাবাজ ও আড্ডার প্রাণময় পুরুষ ছিলেন এ-কথা তাঁর সমসাময়িক অনেকেই অবগত থাকলেও উত্তর প্রজন্মের অনেকেই অনবহিত। সুতরাং তাঁর কবি-কৃতির বিবরে প্রবেশ না করে বিবরবিহীন উন্মুক্ত আড্ডার পুরুষটিকে প্রাণময় করতে চাই একজন অনুজ কবির এই খোলামেলা লেখার মাধ্যমে, যাকে আমি ওসত্মাদ ডেকেছি সেই ষাটের দশকের প্রারম্ভকাল থেকে।
অগ্রজ কবি শহীদ কাদরীর সঙ্গে আমার এবং আমাদের ষাটের দশকের নতুন ধারার ব্যতিক্রমী 888sport live football-আন্দোলনের সতীর্থদের কখন প্রথম সাক্ষাৎ ঘটেছিল মনে নেই। দুর্বলচিত্ত 888sport sign up bonusর কারণে তথাপি সমাচ্ছন্ন নয়, এমন অনেক ঘটনা এখনো আমাকে তাড়িত করে। বহুব্রীহি, প্রতিধ্বনি, স্বাক্ষর, সাম্প্রতিক, কালবেলা ও কণ্ঠস্বরের জয়যাত্রা এবং আলোচিত-সমালোচিত কালের একটা সময় জুড়ে শহীদ কাদরীই ছিলেন আমাদের একজন অনন্য প্রাতিস্বিক ব্যক্তিত্ব। আমাদের 888sport live football-আন্দোলনের পালের গোদা (কবি রফিক আজাদের দেওয়া অভিধা) যাঁর ভালোবাসার সাম্পানে একদা পাড়ি দিয়েছিলেম নতুনতর বেলাভূমির সন্ধানে, সেই অগ্রজপ্রতিম অধ্যাপক আবদুলস্নাহ আবু সায়ীদের সমবয়সী হলেও আমাদের সম্পর্ক ছিল অন্যরকমের, যা একটা স্বাতন্ত্র্য বৈশিষ্ট্যের দাবিদার। সায়ীদভাইয়ের সঙ্গে আমাদের ভালোবাসা, কঠিন তাত্ত্বিক আলোচনা কথোপকথনে হাসি-মশকরার মধ্যে একটা তাৎপর্যবহ দেয়াল ছিল, যা অনেকটা সিরিয়াসনেসের মতো, কিন্তু শহীদভাই আর আমাদের মাঝে কোনো দেয়াল ছিল না। প্রাচীরবিহীন সম্পর্কে সমতল প্রত্যক্ষ করা যায় দিগমেত্মর কোল পর্যমত্ম, শহীদ কাদরী আর আমাদের সম্পর্ক তাই দিগমত্ম ছুঁয়েছিল।
স্বাক্ষর, কণ্ঠস্বরের কবিদের সঙ্গে শহীদ কাদরীর নিত্য ওঠাবসা থাকলেও স্বাক্ষরে তাঁর কোনো স্বাক্ষর ছিল না, অথচ স্বাক্ষর-কণ্ঠস্বরের কবিরাই ছিল তাঁর সবচেয়ে কাছের মানুষ; যেমন আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, আবদুল মান্নান সৈয়দ, রফিক আজাদ, আসাদ চৌধুরী, শিকদার আমিনুল হক, ইমরুল চৌধুরী, শহীদুর রহমান, প্রশামত্ম ঘোষাল, রণজিৎ পাল চৌধুরী – সকলেই তাঁর অনুজ ও প্রিয়ভাজন। তবে স্বাক্ষর গোষ্ঠী ও কণ্ঠস্বরের এত সৃজনশীল মানুষের সঙ্গে সখ্য ও ভালোবাসা থাকলেও কবি শহীদ কাদরী বিশ্ববিদ্যালয় অঙ্গনে কখনো আসেননি। বিখ্যাত মধুর ক্যান্টিনেও কোনোদিন পদার্পণ দেখিনি আড্ডা দেওয়ার জন্য, যদিও তাঁকে কদাচিৎ তখনকার পাবলিক লাইব্রেরি-সংলগ্ন শরীফ মিয়ার ক্যান্টিনে দেখা গিয়েছিল; তাও আবার তাঁর পুরনো 888sport appর আড্ডার একজন প্রিয় অনুজ মাহবুব আলম জিনুর সন্ধানে। এই মাহবুব আলম জিনু জগন্নাথ কলেজে একদা কবি শিকদার আমিনুল হকের সতীর্থ ছিল। এবং জিনুর মাধ্যমেই আমাদের সঙ্গে শহীদ কাদরীর প্রগাঢ় সম্পর্ক হয়, বিশেষ করে আমার সঙ্গে তো বটেই!
আগেই বলেছি বিশ্ববিদ্যালয় অঙ্গনে নয়, শহীদ কাদরীর সঙ্গে আমাদের প্রধান আড্ডাকেন্দ্র ছিল বঙ্গবন্ধু এভিনিউর রেক্স রেসেত্মারাঁয় (বর্তমানে 888sport app রেসেত্মারাঁ)। বিউটি বোর্ডিংয়ের আদি আড্ডার রসিক মানুষ। প্রাতঃকালীন দ্বিপ্রাহরিক আড্ডা শেষে, সন্ধ্যায় আসতেন রেক্সে। রেক্সে আসার অন্য এক কারণ ছিল : প্রায়শ আড্ডার লোকসমেত রাত একটু গভীর হলে কাপ্তান বাজারের বটতলায় হাক্কার দোকানে হানা দিতেন, যেখানে ন্যায্যমূল্যে দেশীয় পানীয় পাওয়া যেত। আমরা রসিকতা করে নাম দিয়েছিলাম ‘হ্যাকসন বটমূল’। রেক্সের পরোটা-কাবাবের খুবই নাম ছিল। এখানে তরুণ আড্ডার সাথিরা ছাড়া কিছু প্রবীণও ছিলেন, যার মধ্যে ছিলেন ওয়ারীর মোশাররফ রসুল। আমরা ডাকতাম বুড়োভাই বলে। শহীদভাইয়ের ছোটবেলার কলকাতার পার্ক সার্কাসের সিনিয়র বন্ধু। তাঁর চেয়ে পাঁচ-সাত বছরের বড় বুড়োভাই শহীদভাইয়ের মতোন আমাদের আড্ডার অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু হয়ে বিরাজ করতেন। 888sport live football থেকে রাজনীতি – কোথায় নেই আমাদের এই বুড়োভাই? শহীদ কাদরী তাঁর সঙ্গে কথা বলার সময় পরিমাপ করে বলতেন। দুজনের সিগারেট খাওয়ার স্টাইলও ছিল অভিন্ন ধরনের। হাত মুষ্টিবদ্ধ করে জোরে টান দেওয়া ও প্রচুর ধোঁয়া উদ্গিরণ করা। বুড়োভাই নববইয়ের দশকের শেষ দিকে হঠাৎ পরলোকগমন করেন। আমার মনে আছে, চিরকুমার বুড়োভাইয়ের জন্য তাঁর আত্মীয়ের চাইতে অধিক আমাদের আরেক বন্ধু লেখক বিপস্নব দাস (প্রয়াত) আত্মার শামিত্মর কামনায় মিলাদের আয়োজন করেছিল এবং মিলাদ ও দোয়া শেষে আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, আমি ও অন্যদের নিয়ে বুড়োভাইয়ের আসত্মানা, যা শহীদভাইসহ আমাদের সকলের অন্যতম প্রিয় আড্ডাস্থল ছিল, সেখানে একটা 888sport app download for androidসভার আয়োজন করে। সেদিনের ওই 888sport app download for androidসভায় আমরা সবাই শহীদ কাদরীর অনুপস্থিতিই অনুভব করছিলাম; বিশেষ করে ইলিয়াস সভাপতির ভাষণে নিজে অশ্রম্নসিক্ত হয়ে আমাদের সেই কথা মনে করিয়ে দিলো। সেদিন চিমত্মার অতীত ছিল আরো দুঃখের দিন অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য। স্বল্পকাল পারেই আখতারুজ্জামান ইলিয়াস কঠিন দুরারোগ্য রোগে আক্রামত্ম হয়ে একদিন আমাদের সকলকে শোকাহত করে অমত্মর্হিত হলো। বাংলা 888sport live footballের আকাশ থেকে একটি জ্বলজ্বলে নক্ষত্রের পতন ঘটল আর আমরা হারালাম একজন কাছের মানুষকে।
মনটা ভারাক্রামত্ম হয়ে উঠেছে নিঃসন্দেহে ৪ জানুয়ারি ইলিয়াসের তিরোধানের কথা ভেবে। তবু ফিরে যাই রেক্সের সেই অমস্নমধুর আড্ডার কাহিনিতে। বুড়োভাই ছাড়াও সে-আড্ডার আরেকজন প্রবীণ শহীদ কাদরীর সমীহ কুড়াতেন, যাঁর সঙ্গে কথোপকথন ও বিতর্কে তিনি আনন্দ ও প্রেরণা পেতেন। কাঁধে কাপড়ের ঝোলা নিয়ে অনেকটা রবীন্দ্রসংগীত বিশেষজ্ঞ ওয়াহিদুল হকের মতো ছোটখাটো গম্ভীর অথচ স্মিত হাসির মুখাবয়ব এবং পাদুকায় মৃদু শব্দ তুলে রেক্সে প্রবেশ করলে আমরা জড়সড় হয়ে বসতাম। আমাদের জড়তা ও বাক্যহীনতার কারণ, এই অসীম জ্ঞানপ্রবর ও তুমুল বিতার্কিকের মুখোমুখি হওয়া সত্যিই কঠিন। এই আড্ডা মহীরুহটির নাম খালেদ চৌধুরী। কিন্তু তাঁকে পৈতৃক নামে নয়, চিনতাম কবি শহীদ কাদরীর সম্বোধনের নাম ‘প্রভু’ দিয়ে। তাঁর সকল সমসাময়িকরাই তাঁকে ‘প্রভু’ বলে ডাকতেন। কী কারণে ‘প্রভু’ হলেন তা বিশদ না জানলেও আমাদের, অনুজদের, জানতে বাকি ছিল না এই প্রভুর মাহাত্ম্য। তাঁর পরিচিতি কি কলকাতা, কি 888sport app, খালেদ দিয়ে নয়, ‘প্রভু’ দিয়ে এবং তা এই ব্যক্তির অসাধারণ পাহাড়সমান জ্ঞানের কাছে পরাভূত মানুষরাই যে দিয়েছেন তা আমরা নিজেদের স্বাভাবিক বুদ্ধির জোরেই বুঝেছিলাম। প্রভু সত্যিকার অর্থে আমাদের কাছে একজন রহস্যময় ব্যক্তি এবং শহীদভাইয়ের কারণে তিনি আরো রহস্যময় হয়ে উঠেছিলেন। আমরা জানতাম, চাল নেই, চুলো নেই এই প্রভুর প্রথম আবাসস্থল নির্ধারিত হয়েছিল বিউটি বোর্ডিংয়ে, শহীদ কাদরীর সবচেয়ে প্রিয় আড্ডাস্থল, অবশ্য বুড়োভাইয়ের বাড়ির বহিরাঙ্গনের ছোট ঘরটির পরে। আড্ডার মজলিশি ঢংয়ে শহীদভাই এমন কথাও বলতেন, আসলে প্রভুর সব আছে, বাবা তাঁর মস্ত বড় টাকাওয়ালা মানুষ; কিন্তু ছেলের হাত খুব লম্বা, ভীষণ খরুচে মানুষ আর বাউন্ডুলেপনা একদম পছন্দ নয় আর প্রভুর বাবাকে পছন্দ নয় বলে মাঝে-মাঝে গৃহত্যাগী। আমাদের বিশ্বাস-অবিশ্বাসের ধার না ঘেঁষে এমনভাবে কলকাতা-888sport appইয়া মিশানো বাংলায় ঘড়ঘড় করে প্রভুভক্তির অনিঃশেষ গল্প বলে যেতেন, যা শোনার অতীব আনন্দে আমরা মশগুল থাকতাম। অন্যদিকে টেলিভিশনে চাকরি নেওয়ার পর বছর দুই-তিনেকের জন্য আড্ডার স্থল রেক্সে জমে উঠেছিল, যেখানে স্বাক্ষর-কণ্ঠস্বরের আমরাসহ দু-একজন চাকরিজীবী, 888sport live chatকলার অনুরাগী, আড্ডাপ্রিয় কিছু বন্ধু যোগ দেয়। এদের মধ্যে live chat 888sport সংসদ আন্দোলনের পুরোধা মুহম্মদ খসরু, প্রাক্তন live chat 888sport সংসদকর্মী ইয়াসিন আমিন, স্থিরচিত্রগ্রাহক বিজন সরকার, টিভির সূচনালগ্নের চিত্রগ্রাহক গোলাম মুসত্মাফা ও স্টেডিয়ামের বইয়ের দোকান ম্যারিয়েটার মালিক (যিনি মননশীল বই আমদানি করতেন) অন্যতম। টেলিভিশনের চাকরি শহীদভাইয়ের মতো উড়নচণ্ডী (বোহেমিয়ান) আড্ডাবাজ মানুষের জন্য নয়। উপরন্তু এটি তাঁর জন্য একটি গৃহপালিত জীবনের মতো অপছন্দের বৃত্তিবিশেষ।
কিন্তু টিভিতে স্বল্পকালীন অবস্থানে তিনি একটি বিষয়ে বিপস্নব সাধন করেন এবং তা প্রভুকে দিয়েই। 888sport live football-888sport live chatবিষয়ক টিভি অনুষ্ঠানটির উপস্থাপক ছিলেন আমাদের শিক্ষক মুনীর চৌধুরী, যাঁর চারুবাক্ ও উপস্থাপনার জুড়ি ছিল না। শহীদ কাদরী পাশাপাশি ‘বিচিমত্মা’ নামে একটি অনুষ্ঠান প্রচারের প্রসত্মাব পাশ করালেন এবং প্রভু হলেন সেই অনুষ্ঠানের উপস্থাপক। তাঁর অনুষ্ঠানের ট্যালেন্টরা হলেন তখনকার খ্যাতিমান মানুষ; এ-যেন উপস্থাপক ও আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে লড়াই সমানে-সমানে কোনো নির্ধারিত বিষয় নিয়ে। অনেক সময় সেই বিষয়বস্ত্ত ছাড়িয়ে অন্যত্র তাঁদের জ্ঞানের পরিধি বিসত্মৃত হতো। শহীদ কাদরী ইচ্ছা করেই এটি করেছিলেন এবং প্রভুর সঙ্গে মুখোমুখি করিয়েছেন অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী, ড. আহমদ শরীফ, ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর (এখন প্রফেসর এমেরিটাস) মতো মানুষদের।
টেলিভিশনে শহীদ কাদরীর আরেকটি কীর্তির কথা আমি তাঁর বন্ধু সমসাময়িক গল্পকার হুমায়ুন চৌধুরীর (টিভির প্রথম সংবাদ পাঠক-ঘোষক ও পরে বার্তাপ্রধান) কাছে শুনেছি। ১৯৬৫ সালে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে প্রবল সামুদ্রিক ঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে বহু প্রাণহানি ও সম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় তখনকার পাকিসত্মানের সামরিক শাসকরা এ-দেশের মানুষের কল্যাণে মনোযোগী ছিল না, যার কারণে সত্তরের সামুদ্রিক ঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে ১০ লাখ মানুষের প্রাণহানি ঘটেছিল। পঁয়ষট্টির ঝড় এই ধরনের প্রথম অভিজ্ঞতা। আমার মনে আছে, ওই ঝড়ে আমার ঘরের টিনের চালা উড়ে গিয়ে আমিও ব্যক্তিগতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলাম। কারণ সামনের অনার্স পরীক্ষার প্রস্ত্ততির সব নোট ও জরুরি 888sport free bet login বিনষ্ট হয়ে গিয়েছিল। কবি শহীদ কাদরী সেই সময় দুর্গত এলাকার মানুষ নিয়ে একটি প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করেছিলেন। এটি সম্ভবত টেলিভিশনের প্রথম প্রামাণ্যচিত্র। ‘সমুদ্র মানব’ নামে এই প্রামাণ্যচিত্রটি দর্শকদের প্রশংসা কুড়ায়, যাতে কণ্ঠ দিয়েছিলেন তাঁরই বন্ধু প্রয়াত হুমায়ুন চৌধুরী।
এবার একটা মজার গল্পের অবতারণা করি। ১৯৬৭ সালে স্নাতকোত্তর পাশ করে চাকরির জন্য দ্বারে-দ্বারে ঘোরাঘুরি করার সময় আমার বাবার ছোটবেলার বন্ধু অবসরপ্রাপ্ত একজন স্কোয়াড্রন লিডার আমাকে ড. এনামুল হকের কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন কোনো একটা কাজের সন্ধান পাওয়ার আশায়, কারণ আমি বাংলায় পাশ করেছি আর ড. এনামুল হক বাংলার একজন মস্তবড় প–ত। স্কোয়াড্রন লিডার সাহেব তখনকার পাকিসত্মানে পূর্বাঞ্চলে প্রশাসনের দায়িত্ব পাওয়ায় বিমানবাহিনীতে অনেক বাঙালি ছেলের চাকরি দিয়েছেন, এমনকি ডক্টর সাহেবের আত্মীয়স্বজনকেও। বস্ত্তত তাঁরা দুজনেই চট্টগ্রামের একই অঞ্চলের মানুষ। কিন্তু তাঁকে নিরাশ করে দিয়ে ভাষা ও ব্যাকরণবিদ ডক্টর সাহেব বলেছিলেন, ‘বাংলায় পাশ করে কিসের ভালো চাকরি করবে? ওর জন্য একটা স্কুল-টিস্কুলের মাস্টারি দেখ।’ চট্টগ্রামের আঞ্চলিক টানে নিজস্ব উচ্চারণে বিকট শব্দে তাঁর কথা বলার ভঙ্গি আমার ভালো লাগেনি বলে পরের দিন শহীদ কাদরীভাইকে আড্ডায় সেই কথা বলতে তিনি ক্ষোভে ফেটে পড়ে বললেন, ‘ওই বুড্ডাকে আমি দেখে নেব।’ সঙ্গে-সঙ্গে প্রভুকে বললেন, ‘ওই বুড্ডা কিয়া স্কলার হ্যায়? একটু জ্ঞান দিন প্রভু।’ আমি মহাবিপদে পড়লাম। আমার অনেক অনুনয়-বিনয়ে সেই যাত্রায় কাদরীভাই তাঁকে প্রভুর মুখোমুখি করার উদ্যোগ নিলেন না আর কোনো কারণে কিছুদিনের মধ্যে অনুষ্ঠানটিও বন্ধ করে দিতে হয়। তবে এই মুখোমুখি অনুষ্ঠানটির মাধ্যমে এখনকার বহুল আলোচিত-সমালোচিত টিভির টকশোর প্রথম উদ্যোক্তা হিসেবে কবি শহীদ কাদরীকে চিহ্নিত করা যায়।
জীবনের নানা টানাপড়েনে ষাটের দশকের শেষদিকে আমি অনেকের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ি, টেলিভিশন সংবাদে চাকরিও একটা বড়ো কারণ, যার ফলে সময়াভাবে আড্ডায় যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। শহীদভাইয়ের জীবনেও একটা পরিবর্তন ঘটতে শুরু করে, আড্ডাস্থল রেক্সও পরিবর্তিত হওয়ায় কালে-ভদ্রে দেখা হতো। তবে তাঁর বড়ভাই শাহেদ কাদরীর সঙ্গে প্রায়ই দেখা হতো পেশাগত দায়িত্ব পালনের কারণে। ইংরেজি 888sport live footballের ছাত্র শাহেদ কাদরীভাইকে দেখতাম মুগ্ধ চোখে – কি তার ইংরেজি উচ্চারণ, কি তাঁর বলিষ্ঠ কণ্ঠ। একদিন নিয়মিত সংবাদ পাঠকের অনুপস্থিতিতে সংবাদ পড়ালাম। ইংরেজিতে সংবাদ তৈরি করতে-করতে অনেক সময় তাঁর শরণাপন্ন হতাম কী করে জটিল বাক্যগুলোকে সরল-সোজা বোধগম্য করতে হয়। বাংলায়ও তাঁর অসাধারণ পারদর্শিতা ছিল। একবার কলকাতার চতুরঙ্গে প্রকাশিত আমার একটি 888sport app download apkর (‘শালবনে সন্ধ্যা’) উপমা ব্যবহার নিয়ে ঝাড়া আধাঘণ্টা 888sport live footballালাপ করলেন। এমন অসাধারণ ভ্রাতার অনুজ শহীদ কাদরী একজন বড়মাপের কবি না হয়ে যায় কোথায়? আমরা অনেকেই বিশ্বাস করতাম, শাহেদ কাদরী না হলে শহীদ কাদরীর জন্ম হতো না। অনুজের প্রতি গভীর ভালোবাসা ছিল শাহেদ কাদরীর আর তাই অতি সহজে ‘অগ্রজের উত্তর’ শীর্ষক বিখ্যাত 888sport app download apkটি লিখতে পারলেন মধ্যরাতের ফেরিওয়ালা বাড়ি না ফেরা তখনকার কবি শহীদ কাদরী। 888sport appর মধ্যরাত উতাল-মাতাল করা মানুষটি হঠাৎ উধাও হলেন স্বদেশ থেকে কী এক নিশির ডাকে! অনেকটা হারিয়ে গেলেন প্রায় নিঃশব্দে।
কবি শহীদ কাদরী উনিশশো আটাত্তরে প্রবাসে চলে গেলেন এবং আশ্চর্যজনকভাবে উনিশশো একাশি সালের ডিসেম্বরে প্রচ- শৈত্যের সময়ে তাঁর সাক্ষাৎ পেলাম লন্ডনে। আমি তখন টেলিভিশনের একটি উচ্চতর বিশেষ প্রশিক্ষণের ফেলোশিপ শেষে হল্যান্ড থেকে ফিরছি এবং আর দশজন বাঙালির মতো উপমহাদেশের শাসকদের দেশ লন্ডন না দেখে ফিরতে পারি? তাছাড়া লন্ডনে বিবিসি ও ভিজ-নিউজে দাফতরিকভাবে গমন ও পরিদর্শন আমার ফেলোশিপের অংশ ছিল। টার্ন পাইক লেনের এক আত্মীয়ের বাসা থেকে বিবিসি টেলিভিশন ও ভিজ-নিউজ (পরে ভিজ-নিউজ ও ইউপিআইটিএন একত্রিত হয়ে এখনকার এপিটিএন/ নিউজ) দফতরে কর্মসম্পাদনের পর বুশ হাউসে গেলাম বিবিসি বেতারে; উদ্দেশ্য শহীদভাইয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করা। বিবিসি বাংলা সার্ভিসের তখনকার প্রধান সিরাজুর রহমান আমাকে সাদরে গ্রহণ করে দুঃসংবাদ দিলেন যে, শহীদ কাদরী এখন বিবিসিতে নেই। তবে তিনি আমাকে তাঁর টেলিফোন নম্বর দিলেন। শুধু তাই নয়, বিবিসি বাংলার অন্যতম জনপ্রিয় রিপোর্টার, প্রডিউসার শ্যামল লোধকে বললেন আমার সাক্ষাৎকার গ্রহণের। শ্যামল লোধ পরদিন সময় দিলেন মধ্যাহ্নে। আমার ছোটবেলার বন্ধু লেখক কাদের মাহমুদ এবং সাংবাদিক ও এককালীন সহকর্মী গোলাম কাদের সবুজ কাউকে লন্ডনে না পেয়ে অসহায় বোধ করছিলাম। যাক শহীদভাইয়ের টেলিফোন নম্বর পাওয়া গেল, তাঁকে ওইদিন সন্ধ্যায় আসত্মানায় ফিরে টেলিফোন করতে দরাজ ও ভরাট গলায় বলে উঠলেন, ‘শালা, তুম কব্ আয়া লন্ডন মে? ঠিকানা দে, আমি যাব।’ পরদিন সকাল ১০টার মধ্যে দেখি আমাকে অবাক করে দিয়ে বিশাল দেহ হেলেদুলে কাঁপিয়ে আমার অবস্থান টার্ন পাইক লেনের বাড়িতে উপস্থিত। এসেই বললেন, ‘চল্ বেরোই।’ এদিকে আমস্টারডাম থেকে লন্ডন আসার পথে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের কেবিন ক্রু আমাকে ডজনখানেক মিনি পেগের বোতল দিয়েছিল আমার সৌজন্যমূলক আচরণের জন্য। একজন বয়স্ক লোক হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়ায় বিমানে আমার সামনের দিকের আসন ছেড়ে দিয়ে পেছনের ওই যাত্রীকে দিয়েছিলাম ক্যাপ্টেনের অনুরোধে। ফলে নামার সময় আমার ভাগ্যে এই অনন্য উপহার জোটে, যার একটিও এই দুদিনে আমি ব্যবহার করিনি। শহীদভাই ওখান থেকে বেছে-বেছে ছয়টি হুইস্কি ও ব্র্যান্ডির বোতল তুলে তাঁর বিশাল ওভারকোটের পকেটে রাখলেন। তারপর দুই ভাই মিলে সারাদিন লন্ডন চষে বেড়ালাম শীত ও তুষারের মধ্যে। ওই বছর ১৯৮১ সালে ব্রিটেনে 888sport app download for androidকালের তুষারপাত হয়েছিল। আমার বিবিসিতে ইন্টারভিউ দেওয়ার জন্য শ্যামল লোধের কাছে যাওয়া হলো না। ভাবলাম, নিজের ঢাকঢোল পেটানোর চেয়ে হারিয়ে যাওয়া আমাদের ওসত্মাদের সঙ্গ আমার অনেক কাম্য। তাঁর টয়েনবির ফ্ল্যাটে মিনি পেগের বোতলগুলো সাজিয়ে রাখলেন, জানালার কাচে, যাতে বাইরে থেকে দেখা যায়। বললেন, ‘ওই পাশের ফ্ল্যাটে একজন সাদা সুন্দরী থাকে, সে দেখুক আর তৃষার্ত হোক।’ এমন মজাও করতে পারেন কবি শহীদ কাদরী, এই প্রথম দেখে আমিও খুব মজা পেলাম। তাঁর টয়েনবির ফ্ল্যাটে অনেক রাত পর্যমত্ম বহু কথা বলে অনিচ্ছাকৃতভাবে তাঁর সঙ্গ ছেড়ে আমাকে ফিরে যেতে হয়েছিল। কারণ আমার বয়স্ক নিকটাত্মীয়টি একে তো পশ্চিমবঙ্গে এবং যৌবনে লন্ডনে এসে ব্রিটিশ নাগরিক হয়ে চাকরি থেকে অবসর নিয়ে কাউন্সিল ফ্ল্যাটে থাকেন। মেজাজও একটু কড়া; পশ্চিমবঙ্গীয় কটকটে ভাষায় শহীদভাইয়ের সঙ্গে এমন আচরণ করলেন যে, শহীদভাই নিজে একটি ট্যাক্সি ডেকে চালককে আমার গমত্মব্যস্থান মেনর হাউসের পথ বুঝিয়ে দিয়ে বললেন, ‘তুই পৌঁছে টেলিফোন করিস। আমি চিমত্মায় থাকব।’ সেদিন শহীদভাইয়ের প্রথম এ-ধরনের কর্তব্যজ্ঞান ও অন্য এক রূপ দর্শন করে আমি অবাক হয়েছিলাম; একি আমাদের চির বাউন্ডুলে শহীদভাই? কবি শহীদ কাদরী? তারপর আমার হাতে কিছু পাউন্ড এবং ছেলের জন্য জামাকাপড় দিয়ে বলেছিলেন, ‘বড় ভাইয়ের হাতে দিয়ে আসিস।’
কবি শহীদ কাদরীর সঙ্গে আমার লন্ডনে এই সাহচর্য নিয়ে আমি প্রায় সত্তর পঙ্ক্তির 888sport app download apk লিখি, যা কবি রফিক আজাদ সেই সময় বাংলা একাডেমির উত্তরাধিকার পত্রিকায় প্রকাশ করেন। দীর্ঘ 888sport app download apkটি শহীদ কাদরীর স্বভাব, আচার-আচরণ সব নিয়ে একটা নস্টালজিয়ার সঙ্গে লন্ডনে তাঁর বর্তমানের স্বরূপ বলা যেতে পারে। পাঠকের ঔৎসুক্য নিবারণের জন্যে 888sport app download apkটি উদ্ধৃত করলাম, যার শিরোনাম ছিল ‘দিন যাপনের দিন।’
দিন যাপনের দিন
(কবি শহীদ কাদরীর সাহচর্যে)
সহজে সুকৃত-শর্ত আরোপ কোরো না
তোমার আজীবনের কুশলী স্বভাব
অপরিবর্তিত রূপ যদ্যপি যেমন
এমন কি এই পাপ-পুণ্যহীন দেশে –
সেই খাপহীন তরবারি রূপ
অদ্যপি এখন
বিশাল শরীর টেনে হেলেদুলে হেসে
খস করে হাত ধরে বলো, শালা
দেখা হলো তবে বহুদিন পরে –
ঝাঁকড়া কোঁকড়া চুল মাথায় আছে কী নেই
জানার উপায় নেই! পরেছ পশমী টুপি
আজানুলম্বিত গরম ওভারকোট
দেহটা ঢেকেছো বেশ লোকচক্ষু থেকে
আড়াল ঠান্ডার দেশে, নিজেকে আড়াল
করতে পেরেছ কি!
টুপিটা নামিয়ে দিলে আরো একবার নীচে
কেননা হিমাঙ্ক থেকে ব্যারোমিটার ত্বরিত
নেমেই চলছে বিরামহীন উত্তর সাগরের হাওয়ায়।
কোনটাই জানার উপায় নেই
মোটা গলা, বিরাট ধড়, পেটের বহর
নাভিমূল থেকে নিচে পায়ের গোড়ালী
নক্শা করা জুতো, অমন পাদুকায়
দেখেছি কী আলো?
ঢিলে-ঢালা সহজিয়া পাজামা-পাঞ্জাবি
রাদুর স্যান্ডেল পায়, পাগলা পানির
প্রতি বড়োই আগ্রহ, নিয়ত সন্ধ্যায়
হ্যাক্সন বটমূল পরম-নির্বেদ
অথবা রেক্সের স্বাদু পরোটা কাবাব
888sport app download apk বনাম খিসিত্ম এই তো স্বভাব –
আবে কেয়া বাত্, কী ভাবছিস?
পেরিয়ে ওভারব্রিজ টার্ন-পাইক লেনের
পাতালে যেতে যেতে
ঘাড়ে ইয়া থাপ্পড়। এনেছিস কিছু বই?
888sport app download apkর? তবে দিয়ে যা বিষ্ণু দের
বছর পঁচিশ। পারবি না দিতে?
প্রবাসে বৌয়ের কথা মাইরী ‘যেওনা ভুলে’
বলে, হাতে তুলে দেয় বই, আহা যেন
‘888sport sign up bonusটুকু রেখ মনে’ – জানিস্ কি?
বড়ো মজাদার বাত্ বৌদের, অথচ
আমাকে প্রবাসে এনে মাই-ফ্রাউলিন
অনায়াসে চলে গেল, অফে-দাজিন
এখন নিঃসঙ্গ, ভাবি ওসব মেয়েলী
বাতচিত্ রংঢং নিতামত্ম হেঁয়ালী –
ছোড় সব জানানা-ফাসানা
‘বছর’ পঁচিশ’ দিয়ে যা আমায়
বহুদিন দেখা নেই 888sport app download apkর সঙ্গে
নতুন চালের ভাত ইলিশের ঝোল
সাজনার ডালনা এবং
সেইসঙ্গে রেক্সের পরোটা কাবাব
কী হবে বুশ-হাউজে গিয়ে?
শালা, ভিজে কাঁথা মার তোর
বিবিসির ইন্টারভিয়্যুর
এ-সব বিফল-বাহাস তোর জন্য নয়
তার চেয়ে ঢের ভালো
বরফের উপর বেসামাল হেঁটে যাওয়া
যাবি ওয়েস্ট-মিনস্টার, টেমসের সেতু
ট্র্যাফেলগার স্কোয়ার, পাতালে সুড়ং করে
নেমে যেতে চাস? যেতে পারিস, তবে
নিশ্চয় হয়েছে ঢের ওসব এদ্দিন
অ্যামেস্টেল নদীর তীরে, যেখানে বাতাসে
হ্যানিকেনের সৌরভে কাঁপে গৌরব পাত্র
কাঁচের গবাক্ষে ফোটে রজনীর মদির-কমল।
বরং চলে যা, তোর তো একদা ছিলো
নির্মল-ফিল্মের নেশা, এখনো আছেন
দু’একজন প্রাতিস্বিক ফ্রি-সিনেমার
ধমনী যাদের নীল 888sport live chatের অঙ্গার।
আরো দু’চারদিন থাকবি
আমার সঙ্গে কাটাবি ক’টা দিন টয়েনবিতে?
দেখে যা ফাঁপা-মানুষেরা কেমন করে ফেরে
খায়-দায় ভিড় জমায় ব্রডওয়ে থিয়েটারে
যেমন জমাচ্ছে ভিড় ইদানীং তোদের 888sport appর
মহিলা সমিতি, সাজঘরে এডোওয়ার্ড এলবি
ব্রেশট-য়্যানেস্কো পাঞ্চ করে তুলে দেয়
নবনাট্যকলা, য়ুরোপে যাদের মমি
ঘুণপোকার খাবার, শকুনও তাকায় না
এমন অপাচ্য বাসী খাদ্য এখন তোদের
নাবালক তরুণ-তরুণীর পাতে
গমত্মব্য যাদের শুধু মহিলা সমিতি
হাত ধরে চট করে ঢুকে যায়
অন্ধকার প্রকোষ্ঠে, কেউবা গাড়িতে এসে
সোজা লাল নীল দীপাবলির সামনে
উদ্ভাসিত করে নিজেদের, আঁতালের
নামাবলী গায়ে পরে কিনে নেয়
পরস্পর প্রগাঢ় প্রণয়।
ওসব এলিয়েটি ভাষণ রাখো ওসত্মাদ
বলো, কেমন আছো এই বিদেশবিভুঁইয়ে
স্বজনবিহীন গৃহহীন 888sport live chatহীন হয়ে
কেমনে কাটাও তুমি দিবস যামিনী
গরবিনী 888sport app download apk নির্বাসিত
কবির দেমাক গ্ল্যামার গর্বিত গ্রীবা
সকলই যেন তিরোহিত
এমন অমিত্মম নিঃশ্বাস দেখবো তোমার
ভাবতেই পারিনি –
তার’চে দেশেই ফিরে যাও
সন্দীপ্ত প্রবল বাক্য নিয়ে আঘাত হানো
শব্দের শানিত ইস্পাতে ছেঁটে দাও
পরাশ্রয়ী বৃক্ষদের, দোর্দ-প্রতাপে ধর
জ্বিনের রশি, রাজকীয় রথের চাকায়
গুঁড়িয়ে দাও পণ্যাঙ্গনা কূপমন্ডুকদের
কাব্য নামের রাশি রাশি নৈমিষারণ্য!
দোহাই ওসত্মাদ ওঠো, বহুদিন ধরে
পুরুষোত্তম পদ্যের সঙ্গে দেখা নেই
পুঁটুলি বান্ধিয়া রাখা নহুলী যৌবন
কর উন্মোচিত, আজন্ম উন্মাদনার
লজ্জায় আনম্র পট্টবসন খুলে
বেরিয়ে আসুক, সবল সতেজ
পুরুষালি পটিমা –
কী বলবো ফিরে গিয়ে
যখন শুধাবেন অগ্রজ তোমার
শহীদ কেমন আছে? আসবে কি ফিরে?
বলবি যা সত্য, তাই
কবির হৃদয় থেকে উৎসারিত সকল
সত্য ভাষণ যা আছে তোর।
য়ুরোপে নেমেছে সবচেয়ে দীর্ঘ শীত
তুহিন-তুষার বরফের যুগ
ধেয়ে আসছে করতে কবলিত
বিগবেন, ইফেল-টাওয়ার
রেমব্রা, মাদাম তুশো
আর আমি
হিমায়িত হচ্ছি ধীরে ধীরে
কঠিন-জমাট গেস্নসিয়ার যেন, মেরুর হাওয়া
অচিরাৎ ভাসিয়েই নেবে
অ্যাটলান্টিকের এপার থেকে ওপারে
শ্বেতশুভ্র বরফের আঁধারে থাকবো
তরতাজা চিরদীপ্যমান
888sport app download apkর মতো প্রাণ নিয়ে ভাসমান
ক্ষণিক বসমেত্ম নেই আমার বিশ্বাস।
কবি শহীদ কাদরীর সঙ্গে সেই আমার শেষ দেখা। এই 888sport app download apkর প্রেক্ষাপট ১৯৮১-এর লন্ডনে হোয়াইট ক্রিসমাসের সময় হলেও আমার রচনাকাল ছিল উনিশশো বিরাশির দিকে এবং আমি কস্মিনকালেও জানতাম না, শহীদভাই আটলান্টিক পাড়ি দিয়ে আমেরিকায় আসত্মানা গাড়বেন। ১৯৯৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র যাওয়ার একটা সুযোগ ঘটেছিল আমার। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের সৌজন্যে এই ‘ভিজিটর-প্রোগ্রামে’ নিউইয়র্ক এলে তাঁর খোঁজ করেছিলাম এবং তিনি তখন অন্যত্র থাকায় দুর্ভাগ্যবশত আমার সঙ্গে কোনো সাক্ষাৎ ঘটেনি। ২০০৭ সালে হুমায়ুন চৌধুরী কুয়ালালামপুর থেকে দেশে ফিরলে দুই বন্ধুতে তাঁদের খুব কথা হতো। এমনি এক টেলিফোন-আলাপচারিতায় আমিও একদিন শামিল হয়ে তাঁকে আহবান জানিয়েছিলাম দেশে ফেরার। কথার মাঝে আমাকে থামিয়ে বলেছিলেন, ‘কেন ফিরব? কেউ তো বেঁচে নেই, আমার বয়স হয়েছে, তোদেরও বয়স হচ্ছে। ডায়ালাইসিস চলছে সপ্তাহে তিনবার। আসতে পারব না, বুঝলি?’ সেই ভরাট গলা সিত্মমিত। কথাও পরিশীলিত, যার সঙ্গে আমাদের কোনো পরিচয় নেই। আমাদের কবিবন্ধু ও আড্ডার সাথিদের মধ্যে সর্বশেষ কবি রফিক আজাদের সঙ্গে শহীদভাইয়ের সাক্ষাৎ ঘটেছিল। রফিক ২০১৫ সালে চিকিৎসার জন্য টরন্টো গেলে তার ছেলেদের কাছে অনুরোধ করেছিল নিউইয়র্ক যাওয়ার। কবি দিলারা হাফিজের ভাষ্য অনুযায়ী, ছেলেরা বাবার শখ এবং অভিপ্রায় জানতে চাইলে তাদের বাবা নিউইয়র্কে ওসত্মাদের সঙ্গে দেখা করার এবং নায়াগ্রা জলপ্রপাত দেখতে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিল। দীর্ঘ পথে গাড়ি চালিয়ে দুই পুত্র অভিন্ন-অব্যয় তাঁকে শহীদভাইয়ের কাছে নিয়ে গেলে আগের মতোন কবি রফিক আজাদকে সম্বোধন করেন ‘শালা কব্ আয়া।’ শহীদভাই বিছানায় শোয়া ছিলেন এবং রফিক আজাদকে বিছানার পাশে বসিয়ে 888sport appর কথা ও আড্ডার সাথিদের কথা জিজ্ঞাসা করেছিলেন, যদিও তিনি জানেন অধিকাংশ সাথিই বেঁচে নেই। পুরনো গতায়ুদের কথা বলে কবি শহীদ কাদরীর চোখ বাষ্পাকুল হয়েছিল, তেমনি রফিক আজাদ অসুস্থতা এবং 888sport sign up bonusমন্থনের কারণে আবেগাপস্নুত! আমার স্পষ্ট মনে পড়ে, সব্যসাচী লেখক কবি সৈয়দ শামসুল হকের ৮০তম জন্মদিন উপলক্ষে 888sport app download apk পরিষদ ও জাতীয় জাদুঘরের যৌথ অনুষ্ঠানে তাঁর সংক্ষিপ্ত ভাষণে কবি রফিক আজাদ এই সাক্ষাতের 888sport sign up bonusচারণ করেছিল। দুই অগ্রজ-অনুজ কবির সেই শেষ দেখা। রেক্সে তাঁর আড্ডার সাথি একদার live chat 888sport-সংবাদকর্মী ইয়াসিন আমিন ২০১৪ সালে নিউইয়র্কে তাঁকে দেখতে গেলে প্রথমে সহি-ক্যালকেসিয়ান উপভাষায় অভ্যর্থনা জানিয়ে নাকি বলেছিলেন, ‘বয়টো, মাগার কোলাকুলি নেহি হোগা।’ ইয়াসিন আমাকে বলেছিল, প্রথমে চিরাচরিত এই আহবানের পর শহীদভাই বিনম্রভাবে তাকে বলেছিলেন যে, সপ্তাহে তিনদিন ডায়ালাইসিস নিতে হয়। শরীর খুব ভারী হয়ে গেছে এবং দুজন লোক লাগে তাঁকে বিছানা থেকে ওঠাতে। সুতরাং দূরে বসে কথা বলতে হয় এবং শায়িত থাকার কারণে কোলাকুলিও সম্ভব নয়। জার্মানি প্রবাসী আমাদের ষাটের কবি দাউদ হায়দার এ-সময় উপস্থিত ছিলেন। তার সামনেই ইয়াসিন আমিন শহীদভাইকে 888sport appয় ফেরার কথা বললে অনুরূপ উত্তর দিয়েছিলেন, ‘কোথায় যাব? কে আছে? শামসুর রাহমান নেই, ফজল নেই, ইলিয়াস নেই, শিকদার নেই, মান্নান নেই, হুমায়ুনও এখন নেই।’ হুমায়ুন চৌধুরী তখন সদ্য লোকামত্মরিত।
আসলে বন্ধুবিচ্ছেদ ও 888sport app download apk-সহযাত্রীদের অনেকের অমত্মর্ধানে শহীদ কাদরী কাতর হয়ে পড়েছিলেন। ভঙ্গুর স্বাস্থ্য ও নিয়মিত ডায়ালাইসিসের কষ্ট নিয়ে তাঁর পক্ষে দেশে আসাও সম্ভব নয়; কিন্তু মন পড়ে ছিল দেশে। 888sport app ত্যাগ করার সময় যে শহীদ কাদরী ছিলেন আমার শেষ দেখা, লন্ডনের সেই শহীদ কাদরীকেও আমাদের বিশেষায়িত ওসত্মাদের মতো প্রগলভ রসিক আর বিদ্যুচ্চমকিত প্রতিভাদীপ্ত মনে হয়েছিল। আমার সেই শেষ দেখা সার্থক। আপনার ভঙ্গুর শরীর আর বিয়োজন আমাকে দেখতে হয়নি। আমার কোনো আফসোস নেই।
কিন্তু আপনি তো এলেন ওসত্মাদ শেষ অবধি। আসতেই হলো আপনাকে প্রিয়তমা স্বদেশে। দেশের মৃত্তিকা সারাদেহে মেখে শুয়ে পড়লেন প্রিয় মানুষগুলোর পাশে। নিশ্চয়ই আপনাকে সর্বশেষ অভিবাদন জানিয়েছে কবি রফিক আজাদ। আমিও আসছি। আমার অগ্রিম অভিবাদন গ্রহণ করুন।

Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.