হাত হায়তো গড় নেখে
খেঁচা হায়তো মুড়া নেখে
আবেদিনকে আগে দানে পালে, গিলকে খাত্রলা।
অর্থাৎ, ‘হাত আছে গলা নাই, শরীর আছে মাথা নাই; সামনে যদি মানুষ পায়, অমনি ধরে গিলে খায়।’
ধাঁধার আসর বসেছে তুরিদের গ্রামে। ধাঁধার উত্তর খুঁজে না পেয়ে কেউ-বা মাথা চুলকাচ্ছে, কেউবা জেতার আনন্দে মুচকি হাসছে। ধাঁধার লড়াইয়ের ফাঁকে ফাঁকে চলছে ঢোল-মাদল বাজিয়ে গান-বাজনা। ভাদ্রের পূর্ণিমা তিথির পরদিন – মনসা, নামান্তরে বিষহরির পূজা উপলক্ষে এভাবেই উৎসবে মেতে ওঠে দিনাজপুরের লোহাডাঙ্গার তুরি আদিবাসীরা। তাদের আমন্ত্রণে আসরে অংশ নিয়েছে আশেপাশের গ্রামের সাঁওতাল, ওঁরাও, কড়া প্রভৃতি আদিবাসী সম্প্রদায়ের অভ্যাগতরাও। সেই আনন্দ-আয়োজন দেখতে সেখানে উপস্থিত লেখক-গবেষক সালেক খোকন। এমনি করেই গ্রামে গ্রামে ঘুরে নানা আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মানুষের সঙ্গে কথা বলে, বিচিত্ররকম পূজা-পার্বণ, উৎসব-আয়োজনে শামিল হয়ে তথ্য সংগ্রহ করেছেন তিনি এবং তাঁর দেখা ও শোনার ভিত্তিতেই সাজিয়েছেন আদিবাসী লোককথা নামের বইটি।
আদিবাসী সংক্রান্ত গবেষণা 888sport live footballের কাতারে নতুন সংযোজন বেঙ্গল পাবলিকেশন্স থেকে প্রকাশিত গবেষক সালেক খোকনের এই গ্রন্থটি। 888sport appsের আদিবাসী সম্প্রদায়ের শত শত বছর ধরে প্রচলিত বিশ্বাস এবং রীতিনীতির পেছনে যে-কাহিনি বা গল্পগুলি রয়েছে, সেসবের একটি অংশকে ধরে রাখার চেষ্টা করা হয়েছে আদিবাসী লোককথা বইটিতে। কড়া, সাঁওতাল, ওঁরাও, মাহালি, ডালু, তুরি, মুণ্ডা, গারো, ম্রো, রাখাইন, রাজবংশী, মণিপুরি, হাজং, চাক, মুসহর, খুমি, ভুনজার, ত্রিপুরা, লোহার, পাহাড়িয়া, কোচ, খাসিয়া, মাহাতো প্রভৃতি আদিবাসীর সমাজজীবন এবং লোককথাকে তুলে ধরার প্রয়াস লক্ষণীয় এ-গ্রন্থে। এই সকল ভূমিপূত্রকন্যা স্বভাবতই আমাদের দেশে 888sport free betলঘু; দেশের মূলধারার সামাজিক ও অর্থনৈতিক আগ্রাসনে তাদের অস্তিত্বই অনেক ক্ষেত্রে হুমকির মুখে, সেক্ষেত্রে তাদের ভাষা-888sport live football-সংস্কৃতি যে আরো বেশি সংকটাপন্ন তা বলাই বাহুল্য। বইটি পাঠেও এমন ধারণা জোরালো হলো, যখন দেখলাম, বিভিন্ন আদিবাসী সম্প্রদায়ের প্রবীণেরা হতাশা ব্যক্ত করেছেন – তাঁদের প্রথা ও ঐতিহ্য আগের মতো আর ধরে রাখতে পারছেন না তাঁরা।
যে-কোনো জাতিগোষ্ঠীর, বিশেষত যাদের ভাষার লিখিত রূপ নেই, তাদের সাংস্কৃতিক ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ উৎস এই মৌখিক 888sport live football বা লোককথা। বংশ পরম্পরায় প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে নিজেদের ঐতিহ্য ধরে রাখার, বিশ্বাসে স্থির থাকার শক্তি জোগায় এসব কথাকাহিনি। এগুলিই তাদের লোকাচার, সামাজিক ও ধর্মীয় রীতিনীতির ভিত। যেমনটি বলেছেন ফোকলোরবিদ ড. মযহারুল ইসলাম তাঁর একটি লেখায় – আদিবাসীদের প্রায় প্রতিটি বিশ্বাস এবং সংস্কারের পেছনে একটি সংক্ষিপ্ত ইতিহাস পাওয়া যায় এবং এই ইতিহাস হয় কাহিনিকেন্দ্রিক। এক-একটি বিশ্বাস বা সংস্কার কোনো না কোনো কাহিনির মাধ্যমেই তাদের সমাজজীবনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আলোচ্য বইটিতে ঠিক এই আলোকেই লেখক লোককাহিনিগুলিকে তুলে ধরেছেন, আদিবাসীদের প্রচলিত প্রথা ও ধর্মাচারের সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততা নির্দেশ করার মধ্য দিয়ে।
কেমন তাদের লোককথাগুলি? লেখকের ভাষ্যমতেই বলি – আদিবাসীদের প্রচলিত বিশ্বাস যেমন অভিনব ও বিস্ময়কর, তেমনি এর পেছনের গল্পগুলিও চমৎকার। পৃথিবী কীভাবে সৃষ্টি হলো? ছাতিমগাছে কেন বজ্রপাত হয় না? ভূমিকম্প কেন হয়? ঢোঁড়া সাপের বিষ নেই কেন? পৃথিবীতে কেন পান-সুপারি জন্মালো? গাইগরুকে কেন পূজা দেওয়া হয়, ষাঁড়ের মাংস কেন খাওয়া নিষেধ – এমন নানা প্রশ্নের কৌতূহলোদ্দীপক উত্তর পাওয়া যায় আদিবাসীদের কাহিনিগুলোতে। এই যেমন হাজংরা বিশ্বাস করে, বিরাট এক ষাঁড় পৃথিবীটাকে মাথায় নিয়ে আছে, ষাঁড় নড়ে উঠলেই হয় ভূমিকম্প। তারা আরো বিশ্বাস করে – প্রকৃতিই প্রকৃতিকে রক্ষা করে। আর প্রকৃতিকে যত ধ্বংস করা হবে, প্রকৃতি ততই এর বদলা নেবে। আদিবাসীদের প্রায় সকল বিশ্বাস ও প্রথাই পরিবেশবান্ধব – বইটি পড়ে এমনটাই মনে হয়।
আদিবাসীরা তাদের লোককথাগুলির চর্চা ধরে রাখার চেষ্টা করে যত্নের সঙ্গে। দিনাজপুরের কড়াদের গ্রামে রাতে চাঁদের আলোয় বসে ঠাকুমার গল্প বলার আসর। কারমা পূজার উৎসবে গোত্রপ্রধান বা মাহাতো উপস্থিত ছোট-বড় সবাইকে শোনান পূজার ইতিহাস। এভাবেই প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের মনে গেঁথে থাকে নিজেদের ঐতিহ্য এবং বিশ্বাস, টিকে থাকে লোককথাগুলি।
বইটির পেছনে লেখকের পরিশ্রম বেশ অনুভবযোগ্য। লোককাহিনি সংগ্রহে তিনি চষে বেড়িয়েছেন গ্রাম-গ্রামান্তর। কখনো চলে গিয়েছেন দিনাজপুরের মহেশপুরে সাঁওতাল গ্রামপ্রধানের উঠোনে ঝুমুর নাচের আসরে। গিয়েছেন নেত্রকোনা জেলার আদিবাসী গ্রাম লেংগুরায়, যেখানে বাস করে প্রায় ৭০টি হাজং পরিবার। তাদের ঐতিহ্যবাহী লবান উৎসব এবং প্যাঁক খেলা সম্পর্কে জানা গেল বইটি পড়ে। দিনাজপুরের ধুকুরঝারির নেহাল গ্রামে বেড়িয়ে লেখক আমাদের জানান মুসহরদের বিয়ের রীতিনীতি, ছট পূজার বিবরণ। গোদাগাড়ি উপজেলার জাওইপাড়া, দলদলিয়া গ্রামের সোহরাই উৎসব, দিনাজপুরের বহবলদীঘি, পিপল্লা গ্রামে গিয়েছেন তিনি, রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চলে শমনিপাড়া গ্রামে মাহালি আদিবাসীদের গ্রাম ঘুরে লিপিবদ্ধ করেছেন তাদের গরয়া পূজার পেছনের কাহিনি। দিনাজপুরের কালিয়াগঞ্জ ওঁরাও গ্রামের বাঠু সরেন ও সানজিলা হাজদা লেখককে শোনায় সাতভাইয়ের লোককাহিনি।
যেখানে হিংস্র গরুড় পাখির মোকাবিলা করতে গিয়ে মৃত্যুবরণ করে সাত ভাই, আর অনেককাল পরে বড় ভাইয়ের ছেলে দুঃসাহসে ভর দিয়ে অভিযানে গিয়ে পাখিটিকে মেরে দেবতার কৃপায় বাবা চাচা সবাইকে আবার জীবিত অবস্থায় ফিরে পায়।
‘মুড়িয়া পিরা হো ঝার দে …’ – কড়া সম্প্রদায়ের কেউ অসুস্থ হলে মাহাতো জগেন কড়ার কাছে চলে আসে এই চিকিৎসা নিতে। লেখক উপস্থিত থেকেছেন মাহাতোর উঠানে তেমনি একজনকে চিকিৎসা দেওয়ার সময়, দিনাজপুরের সীমান্তবর্তী গ্রাম ঝিনাইকুড়িতে। জেনেছেন তাদের আদি লোকবিশ্বাস সম্পর্কে – পুবে-পশ্চিমে বাতাস বইলে বড়ো ঝড় হওয়ার আশঙ্কা থাকে, বাইরে বেরোবার মুখে খালি কলসি দেখলে যাত্রা অশুভ হয় – এমনি আরো কত কী।
রাজারানপুর চনকালী গ্রামে কয়েকশো সাঁওতাল পরিবারের বাস। জুন মাসের ৩০ তারিখে সাঁওতাল বিদ্রোহ দিবস অথবা সিদু ও কানহু দিবস – এই দিনে লেখক সেখানে উপস্থিত হয়েছেন তাদের তীর খেলাসহ 888sport app আয়োজন দেখতে।
ইংরেজ শাসকদের বিরুদ্ধে কত বিদ্রোহের ফুলকি জ্বলেছে এদেশের বুকে তার সব খবর কি আমরা রাখি! দিনাজপুরের বিরল উপজেলার গিরুডোবা গ্রামের তেমনি এক সাঁওতাল বিদ্রোহের খবর পাই বইটিতে। সেখানকার পাঁড়ু রাজা বিদ্রোহ করে ব্রিটিশদের কর দেওয়া বন্ধ করে দেন, সঙ্গে হাজার হাজার সাঁওতাল। স্থানীয় দারোগা পুলিশের সঙ্গে অসীম বীরত্বের সঙ্গে লড়াই করলেও ব্রিটিশ লাট সেনা পাঠালে বিদ্রোহী সাঁওতালেরা সেনাদের অস্ত্রশস্ত্রের মুখে টিকতে পারেনি। সেনারা রাজার বাড়ি ধ্বংস করে দেয়, তাদেরই ষড়যন্ত্রে শেষ পর্যন্ত মারা যান সাঁওতাল রাজা পাঁড়ু। নাচোল বিদ্রোহেরও প্রায় দেড় দশক আগের ঘটনা এটি। এমন কত বীরত্বের কাহিনি ছড়িয়ে আছে আমাদের জনপদে, সব খবর তো আমাদের জানা হয়ে ওঠে না। এই ধরনের গবেষণাগ্রন্থ তাই আমাদের জ্ঞানের পরিসরে মূল্যবান সংযোজনের কৃতিত্বের দাবি রাখে।
তবে বইয়ের নামকরণ থেকে এর ভেতরের বিষয়বস্তু সম্পর্কে পূর্বধারণা করলে কিছুটা ভুল হবে। এর আলোচনা শুধু লোককথায় সীমাবদ্ধ নেই, এর পূর্বাপর আনুষঙ্গিক অনেক বিষয়ই তুলে ধরা হয়েছে। আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস, বসবাসের স্থান, সমাজপ্রণালি, জীবন-জীবিকা, তাদের বিশ্বাস-আচার, প্রথা, উৎসব-অনুষ্ঠান অনেক কিছুই সংক্ষিপ্তভাবে হলেও ছুঁয়ে গিয়েছেন লেখক। তাদের জীবনসংগ্রাম, ক্ষুধা-দারিদ্র্য, প্রেম-ভালোবাসার মতো চিরন্তন অনুভূতি, সন্তান বাৎসল্য, পারিবারিক বন্ধন, মূল্যবোধ সবকিছুরই চিত্র পাওয়া যায় এসব গল্পগাথার ভেতর দিয়ে।
আদিবাসীদের নানা বৈচিত্র্যময় বিশ্বাস ও প্রথার সন্ধান পাই বইটিতে। যেমন ম্রো আদিবাসীদের বিশ্বাস – গরুর আত্মা তাদের জাতির শত্রু। তাই রোগবালাই থেকে মুক্তি পেতে
অথবা ঝরনার দেবতাকে সন্তুষ্ট করতে তারা আয়োজন করে গো-হত্যা উৎসবের। এই উৎসব শুরুর পেছনেও অবধারিতভাবেই রয়েছে এক গল্প। আবার বিপরীতভাবে মাহালি জনগোষ্ঠী করে গো-অর্চনা; তাদের গৃহপালিত গো-মহিষকে কেন্দ্র করেই তারা গরয়া পূজার আয়োজন করে। এই গরয়া পূজা নিয়েও প্রচলিত আছে পৌরাণিক কাহিনি। বইয়ে উল্লিখিত প্রতিটি আদিবাসী গোষ্ঠীরই কোনো না কোনো লোককাহিনি বা লোকাচার বা 888sport live football উপাদানের বর্ণনা দিয়েছেন লেখক, যার বিবরণ এই আলোচনার ছোট পরিসরে নিয়ে আসা সম্ভব নয়। একটি গানের কথা পড়ে পুলকিত হলাম, সেটা বলি। কারমা পূজার আগে আগে কড়া রমণীর মনে বাজতে থাকে গানের সুর –
কাশি ফুলা ফুটেই গেলে
আসা মরা লাগি গেলে
ভাইয়া বাপা লেগেল আতে বেটিক
কারমা পূজাকে রাতে …
এই গানের পঙ্ক্তিগুলির বাংলা 888sport app download apk latest version দেখেই মনে পড়ে গেল শচীন দেববর্মণের বিখ্যাত গান – ‘কে যাস রে, ভাটি গাঙ বাইয়া, আমার ভাইধন রে কইয়ো নাইওর নিতো বইলা …।’ পারিবারিক বন্ধনের মাধুর্য বুঝি সবারই একই রকম।
বইটিতে নাচ নিয়ে বেশ আলোচনা আছে। নৃত্য বা নাচ আদিবাসী সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। এই নাচ নিয়ে বিভিন্ন আদিবাসী সমাজের প্রচলিত বিশ্বাসগুলি জেনেছেন লেখক। সাঁওতালরা যেমন বিশ্বাস করে নাচ ঐশ্বরিক। ঝুমুর নাচের নাম আমরা অনেকেই শুনেছি। কত রকম ঝুমুর নাচ আছে তা কি জানি? দাঁড় ঝুমুর, টাঁড় ঝুমুর, ভাদুরিয়া ঝুমুর, নাচনি ঝুমুর! এসব নাচ নিয়েও সাঁওতালদের মধ্যে প্রচলিত আছে নিজস্ব কাহিনি। নাচের জন্য বিখ্যাত মনিপুরীদের বিশ্বাস, পৃথিবী সৃষ্টির মূলেই রয়েছে নাচ, তাদের পরমতম ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক অনুষ্ঠান রাসলীলা সম্পর্কে বেশ বিস্তারিত আলোচনা আছে এখানে। গারোদের নাচ মূলত জুম চাষ কেন্দ্রিক; নাচের মাধ্যমে দেবতাদের কাছে নানারকম আবেদনও জানায় তারা। রাজবংশী সম্প্রদায় ব্রতনাচের মাধ্যমে সংসারধর্ম ও পরিবারের সুখ-সমৃদ্ধি কামনা করে, রাখাইন আদিবাসীরাও নানা রকম নাচের আয়োজন করে বিভিন্ন উপলক্ষে। কত বৈচিত্র্য আমাদের এই দেশে! ‘দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া …’ – আমাদের শুধু একটু চোখ মেলে পা বাড়িয়ে দেখতে হবে কত সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক উপাদান ছড়িয়ে রয়েছে আমাদের দেশের আনাচে-কানাচে।
বইটি পড়তে পড়তে মনে পড়ল ভাষাবিদ ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. মুহম্মদ এনামুল হকের বক্তব্য, ‘লোক-888sport live football’ 888sport liveে তিনি বলেছেন, ‘লোক-888sport live footballকে আলোচনার সাহায্যে বুঝানো সম্ভবপর নহে। আমি যদি একজন পল্লীর প্রতিভাবান মানুষ হইতাম এবং একতারা, দোতারা, সারিন্দা, মন্দিরা, মুরলী, বাঁশী, শিঙ্গা, মাদল, ঢোল, ঢাক, কাড়া, খোল, করতাল, ঝাঁঝর, কাঁসর, খঞ্জনি, গোপীযন্ত্র প্রভৃতি লইয়া সদলবলে আপনাদের সম্মুখে উপস্থিত হইতে পারিতাম, তবে, ‘লোক-888sport live footballের’ যেই স্বাভাবিক পরিবেশ, তাহার কিছুটা তুলিয়া ধরিতে সমর্থ হইতাম।’ আদিবাসী লোককথার লেখক সালেক খোকন বইটি লেখার জন্যে ঠিক সেই অকৃত্রিম পরিবেশের অংশ হয়ে একে আত্মস্থ করার চেষ্টা করেছেন, লোককথাগুলিকে তাদের পারিপার্শ্বিকতার সঙ্গে মিলিয়ে-মিশিয়ে আমাদের কাছে উপস্থাপন করতে পেরেছেন। তাই তুরি গ্রামের ধাঁধার আসর আমিও যেন দেখতে পাই, উঠোন ভরা বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে বসে গল্পের আসর জমানো ঠাকুরমাকেও ঠিক ঠিক উপলব্ধি করে ফেলি। যদিও মাঝেমাঝে মনে হয়েছে – লোককাহিনিগুলি যদি আরেকটু বেশি গল্পের আদলে থাকত, ঠিক যেমন আমরা ছোটদের গল্প শোনাই – তাহলে বইটি হয়তো আরো বেশি সুখপাঠ্য হতো। এই বইটি অবশ্য আশা জাগানিয়া নয়, প্রথমেই উল্লেখ করেছি। বেশ কিছু আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর অস্তিত্ব ধীরে ধীরে হুমকির মুখে পড়ছে – এমন অশনিসংকেত রয়েছে এখানে। শত শত বছর ধরে যেসব বিশ্বাস ও আচার প্রচলিত ছিল আদিবাসী সমাজে, হারিয়ে যাচ্ছে সেগুলি। তাই পাঠ শেষে কেমন একটি বেদনার রেশ অনুভূত হয়। তবুও আশা করতে চাই, টিকে থাকবে আদিবাসী জনগোষ্ঠী স্বীয় ঐতিহ্য নিয়ে। একটি কথা প্রচলিত আছে – কোনো একটি সমাজের সৌন্দর্য তার বৈচিত্র্যে। টিকে থাকুক আমাদের দেশের বৈচিত্র্য, আমাদের সৌন্দর্য।

Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.