আনিসভাই, সারা পৃথিবীর বাঙালি এবং বাংলা 888sport live football-সংস্কৃতির অনুরাগীদের কাছে অতি শ্রদ্ধেয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, গত ১৪ মে (২০২০) প্রয়াত হয়েছেন। সব মৃত্যুই মানুষের মৃত্যু, প্রিয়জনদের কাছে এক বিপুল বেদনাময় শূন্যতা, এবং মৃত্যু ক্ষুদ্রমহতের বাছবিচার করে না; তবু ভাবতে খারাপ লাগে যে, বিশ্বব্যাপী করোনার অতিমারি বাঙালির এই মহিমাপূর্ণ অভিভাবককেও তুলে নিল, তাঁকেও রেহাই দিলো না। পৃথিবীর অনেক দুর্গতি সম্বন্ধে আমাদের একটা মনস্তাত্ত্বিক প্রতিক্রিয়া এই থাকে যে, তা দূরের সংবাদ হয়ে থাকবে, আমাদের কোনোভাবে ছোঁবে না। আমরা তা টেলিভিশনে দেখব বা কাগজে পড়ব, এবং উপযুক্তভাবে উদ্বিগ্ন হব। কিন্তু করোনা সেই সুরক্ষার সীমা লঙ্ঘন করে আমাদের চেনা বৃত্তের মধ্যে তার আগ্রাসন বিস্তার করল। আনিসভাইয়ের মতো এক প্রিয় আর শ্রদ্ধেয় মানুষকে তুলে নিল।
আনিসভাই একটি মোটামুটি পূর্ণ জীবন পেয়েছিলেন (আমাদের বাঙালিদের অভ্যাস হলো রবীন্দ্রনাথের আয়ু দিয়ে জীবনের পূর্ণতা মাপা) ঠিকই, এবং এও ঠিক যে, কিছুদিন থেকে তাঁর শরীরে নানা সমস্যা তাঁকে দেশে-বিদেশে নানা চিকিৎসা ও শুশ্রূষা নিতে বাধ্য করেছে, কিন্তু তবু মনে হলো তাঁর মৃত্যু আমাদের কাছে এক অকালপ্রয়াণ। কারণ তিনি খুব বেশি করে উপস্থিত ছিলেন আমাদের মধ্যে, নানা কর্মে, সিদ্ধান্তে, উদ্যোগে। এই পটভূমি থেকে তাঁর সরে যাওয়া মনে হয় অনেকগুলি মানুষের একসঙ্গে সরে যাওয়া।
এটা নিশ্চয় লক্ষ করেন অনেকে যে, সাধারণভাবে বাংলার অধ্যাপকেরা প্রায়ই এই প্রতিষ্ঠায় পৌঁছান না, নিজেদের বিদ্যাক্ষেত্র ছাড়িয়ে তাঁদের খ্যাতি আর গ্রহণীয়তা খুব বেশি ব্যাপ্তি পায় না। আনিসভাই এক অসাধারণ শিক্ষক ছিলেন, অগণিত ছাত্রছাত্রী তাঁর অধ্যাপনা, মানবিকতা এবং ছাত্রস্নেহে মুগ্ধ হয়েছে তা আমরা জানি। আবার তাঁর অতি উচ্চাঙ্গের গবেষণা তাঁকে অবশ্যই বাংলাবিদ্যার বাইরেও পরিচিত এবং সম্ভ্রান্ত করে তুলেছিল, তাও আমাদের অজানা নয়। কিন্তু তারও চেয়ে বড় কথা, পূর্ববঙ্গ-পূর্ব পাকিস্তানে প্রাক্-মুক্তিযুদ্ধ-পর্বে নানা সাংস্কৃতিক আন্দোলনে তাঁর নেতৃত্ব। স্পষ্টবাদী এই মানুষটি বাংলাভাষী ওই ভূখণ্ডের প্রতিটি আন্দোলনে যুক্ত থেকেছেন – ভাষা-আন্দোলন থেকে সংবাদমাধ্যম এবং ‘পাকিস্তানি’ উত্তরাধিকার থেকে রবীন্দ্র-নির্বাসন এবং রবীন্দ্র-শতবার্ষিকী পালন নিষেধের বিরুদ্ধে আন্দোলন, শেখ মুজিবের সমর্থনে দাঁড়িয়ে ষাটের উত্তাল বছরগুলিকে পার করা, ১৯৬৯-র গণবিদ্রোহে অংশগ্রহণ এবং পরে মুক্তিযুদ্ধে বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়ের নেতৃত্ব দান, শেখ মুজিবের অতিশয় আস্থাভাজন হয়ে-ওঠা, জাতীয় সংবিধানের বাংলাভাষা রূপদানে তাঁর ভূমিকা, জাতীয় শিক্ষা কমিশনে এবং শিক্ষা-সংস্কৃতির নানা বিভাগে তাঁর নেতৃত্ব – পরপর এই ঘটনাশৃঙ্খল তাঁকে এমন এক মর্যাদা দান করে যে, সেখানে প্রায় কেউ তাঁর সমকক্ষ হতে পারেননি। ঘটনাক্রমে 888sport appsের বর্তমান প্রধানমন্ত্রীরও শিক্ষক তিনি, এবং প্রধানমন্ত্রী তাঁর স্বভাবসিদ্ধ বিনয়ে তাঁর সমস্ত শিক্ষককে অতিশয় 888sport apk download apk latest versionর আসনে স্থাপন করেন, দেশ ও সংস্কৃতির নানা বিষয়ে তাঁদের উপদেশ-পরামর্শ চান, তাও মানুষের অজানা নয়। আবার তাঁর জীবনী থেকে এও জানি যে, মুক্তিযুদ্ধোত্তর সময় কোথাও কোথাও দেশের রাজনৈতিক নানা সিদ্ধান্ত তিনি সমর্থন করেননি, এবং সেটা তিনি গোপনও করেননি। এই নিজের বিবেকের কাছে সৎ থাকার সাহস তাঁর মর্যাদা আরো বাড়িয়ে তুলেছে। আরো সম্ভ্রম বাড়িয়েছে তাঁর একাধিকবার রাষ্ট্রপতি হওয়ার প্রস্তাব সবিনয়ে প্রত্যাখ্যান। অধ্যাপনা তাঁর স্বধর্ম, তা তিনি ত্যাগ করতে পারবেন না, এই ছিল তাঁর যুক্তি। স্বাভাবিকভাবেই তাঁর কাজের জন্য তাঁর দিকে প্রচুর রাষ্ট্রীয় সম্মান ধেয়ে এসেছে, তার তালিকা নিশ্চয়ই কোথাও থাকবে। তা থেকে বোঝা যাবে, তাঁর মতো well-decorated person ইদানীংকালে 888sport appsে বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে আর কেউ সম্ভবত নেই।
কিন্তু যেটা পরেও বলব, এইসব decoration বা সম্মান তাঁর শান্ত, স্থিতধী, ব্যক্তিত্বকে কোনোভাবেই উত্তেজিত করেনি। সম্মান পেয়েছেন, পরক্ষণেই তা দু-হাত দিয়ে পাশে সরিয়ে রেখেছেন, এবং তার কথা সম্পূর্ণ ভুলে থেকেছেন। তাঁর শান্ত, স্মিত, অপ্রগলভ উপস্থিতি 888sport app download bdের বা 888sport app download bdের সঙ্গে সম্পর্কহীন তাঁর স্বোপার্জিত মহিমার কোনো চিহ্ন বহন করত না। এই ঘটনা আজকালকার দিনে খুবই বিস্ময়কর বলে মনে হয়।
অন্যদিকে আমরা যারা শিক্ষক, তাঁদের মধ্যেও অধ্যাপক আনিসুজ্জামান এক হিসেবে আদর্শস্থানীয়। আমাদের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কয়েকটি সাধারণ ছক ছিল বা এখনো আছে। খারাপ শিক্ষক কেউ ইচ্ছা করে হয় না, উদাসীন বা অমনোযোগী শিক্ষক হয়তো হয়; কিন্তু তাঁরা আমার আলোচ্য নন। আগে এমন অনেক অধ্যাপক ছিলেন, যাঁরা তত 888sport free bet login লেখেননি, কিন্তু নিজেরা প্রচুর পড়তেন যেমন, তেমনি ক্লাসে পড়ানোতে এসে নিজেদের উজাড় করে দিতেন। আজকাল আমেরিকান-শিক্ষাব্যবস্থার publish or perish তত্ত্ব এসে তাঁদের প্রজন্মকে বিলুপ্ত ও হাস্যকর করে দিয়েছে, কিন্তু তাঁদের মধ্যে বহু উচ্চাঙ্গের শিক্ষকের দেখা আমরা পেয়েছি, যাঁদের কাছে পড়া ছাত্রদের কাছে 888sport app download for androidীয় 888sport sign up bonus হয়ে আছে। আবার কেউ-কেউ হয়তো অধ্যাপনার জীবিকাতে এসেই মনে করেন আমার চূড়ান্ত লক্ষ্য অর্জিত হয়েছে, আমার আর কিছু করার নেই। হয়তো একটি ডক্টরেটকে সম্বল করে তিনি দিনগত পাপক্ষয় করে শিক্ষকজীবন শেষ করেন, আর কোনো লক্ষ্যে তিনি অগ্রসর হওয়ার উদ্যম দেখান না। আবার অবশ্যই কিছু বিরল শিক্ষক থাকেন, যাঁর কাছে শিক্ষকতার সুযোগ একটা ভিত্তি বা আরম্ভ মাত্র, সিঁড়ির সবচেয়ে তলার ধাপ। কিন্তু এই দলের মধ্যেও অনেকে থাকেন, যাঁদের বিপুল পাণ্ডিত্য এবং কর্মজীবন প্রতিষ্ঠানের বাইরে প্রসারিত হয় না, তাঁরা জ্ঞানতপস্বী হিসেবে পূজিত হন, কিন্তু বৃহত্তর সমাজ তাঁদের কাছ থেকে কোনো সেবা বা উপকার পায় না। আবার উলটোদিকে, এমন অনেক শিক্ষক আছেন যাঁদের কাছে অধ্যাপনা বা গবেষণার চেয়েও সামাজিক-রাজনৈতিক কাজকর্ম বেশি প্রিয়। কিন্তু এঁদের মধ্যে, সম্ভবত ক্ষুদ্রতর একটি অংশ থাকে, যাঁরা একটি সমগ্রতার লক্ষ্যে এগিয়ে যান। যাঁরা অধ্যাপনকর্ম আর বিদ্যাস্থান থেকে এক অন্তহীন যাত্রা শুরু করেন। অধ্যাপনা আর গবেষণায় প্রচুর সাফল্য অর্জিত হওয়ার পরেও তাঁদের ভূমিকা শেষ হয় না, সমাজকর্মে, দেশকর্মে তাঁদের কাজের পরিধি ছড়িয়ে যায়। গ্রন্থের পর গ্রন্থে, জ্ঞানচর্চা আর জ্ঞানবিতরণের অব্যাহত এক ধারাবাহিকতা তাঁরা অবশ্যই নির্মাণ করেন নিজের নিজের জন্য। সেখানে তাঁদের যেন নিজের সঙ্গে নিজের নিরন্তর প্রতিযোগিতা চলে, কেবলই নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টায় থাকেন তাঁরা। কিন্তু আবার এমন সব শিক্ষক শিক্ষা এবং সংস্কৃতিতে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য প্রস্তুত হন না। অধ্যাপক আনিসুজ্জামান এই শেষ শ্রেণির শিক্ষক। তাঁর শিক্ষকতাকর্ম ক্লাসঘরের বাইরেও অনেক বিস্তারিত। যারা তাঁর প্রত্যক্ষ ছাত্র হওয়ার সুযোগ পায়নি, তারাও তাঁর গ্রন্থ ও 888sport app রচনা পড়ে তাঁর শিক্ষা পেয়েছে বলে দাবি করতে পারে, যেমন আমরা পারি। কিন্তু তাঁর সেই পরিচয় অতিক্রম করেও যে তিনি এক সমগ্র সামাজিক মানুষ, সেটা আমাদের কাছে অনেক বড় প্রাপ্তি। তিনি সব ক্ষেত্রেই আমাদের প্রার্থনার অতিরিক্ত দান করেছেন।
এ-কথাও এই সঙ্গে যোগ করা দরকার যে, আমরা যে ‘সামাজিক মানুষ’ হওয়ার কথা বলেছি – পূর্ব পাকিস্তান পর্বে যার অর্থ ছিল, লেখায়, কর্মে, এমনকি পথে নেমে পাকিস্তানবিরোধী নানা গণআন্দোলনে শামিল হওয়া। শাসকের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী ব্যক্তিত্ব হিসেবে নিজেকে চিহ্নিত করা। সেটা ছিল পূর্ববঙ্গের বাঙালির পক্ষে তুলনায় অনেক কঠিন এক নির্বাচন। আনিসুজ্জামান আরো অনেকের সঙ্গে সেই কাজটা করতে বিনা দ্বিধায় এগিয়ে এসেছিলেন, অদম্য সাহস আর আত্মবিশ্বাস নিয়ে। অন্যদিকে সহজ নির্বাচন ছিল পাকিস্তান-পন্থার অনুসরণ করা – তাও করেছিলেন পূর্ব পাকিস্তানের কিছু বুদ্ধিজীবী, তা ইতিহাসের তথ্য। এ-কথা আরো মনে পড়ে এই কারণে যে, এই মুক্তবুদ্ধির মানুষটি, যিনি গত শতাব্দীর শিখা পত্রিকার বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলনের সার্থক উত্তরসূরি ছিলেন – তিনি স্বাধীন 888sport appsেও মৌলবাদীদের দ্বারা আক্রান্ত হয়েছেন, এবং তাঁর অনুগতা ছাত্রী মাননীয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর নিরাপত্তার জন্য তাঁর দেহরক্ষী হিসেবে সর্বক্ষণের জন্য একটি সশস্ত্র সান্ত্রী মোতায়েন করেছিলেন।
অধ্যাপক আনিসুজ্জামান সম্বন্ধে তাই নানা দিক থেকে বহুবিধ কথা বলার পরিসর তৈরি আছে। আমি যা বলতে পারি তার চেয়ে অন্যরা নিশ্চয় আরো বেশি করে, আরো পূর্ণাঙ্গভাবে বলার সামর্থ্য রাখেন। তাঁর কাজের সঙ্গে আমার পরিচয় দীর্ঘকালের, কিন্তু, যে-কারণেই হোক, চিঠিপত্রের যোগাযোগ দু-একবার ঘটলেও, ওই মানুষটির সঙ্গে আমার প্রত্যক্ষ পরিচয় গত দশ-বারো বছরে ব্যাপ্ত। কিন্তু এই স্বল্প সময়েই তাঁর প্রীতি ও প্রশ্রয়ে আমার জীবন নানাভাবে সমৃদ্ধ হয়েছে।
আমি তাঁর রচনা আর গবেষণার বিষয়ে দু-একটি কথা বলার অবকাশ পরে খুঁজব। আগে আমি নানা সভা-সমিতিতে তাঁর উপস্থিতি যেভাবে লক্ষ করেছি, তার কথা একটু বলি। কি এ-বাংলায় কি 888sport appsে, যখনই যে-অনুষ্ঠানে তাঁকে দেখেছি, তাঁর উপস্থিতি এক হিসেবে প্রায় অনুপস্থিতি বলেই মনে হতো। তাঁর উপস্থিতি সকলের এত কাঙ্ক্ষিত ছিল, এবং তিনি এত অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতেন যে, আগের কথাটা স্ববিরোধী মনে হতে পারে। তা নয়। আসলে তাঁকে সকলেই লক্ষ করত, কারণ কেন্দ্রের চেয়ারটি তাঁর দখলে; কিন্তু কখনো তিনি নিজের দিকে কারো লক্ষ টানার চেষ্টা করতেন না। মনে হতো চারদিকের সঙ্গে তাঁর একটা অনাসক্তির সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। কিন্তু এমন নয় যে অন্যদের কথা তিনি শুনছেন না। মন দিয়েই শুনতেন – তাঁর বক্তৃতায় তার প্রমাণ পাওয়া যেত। তাঁর কথাবার্তা সশব্দ বা উচ্চকিত ছিল না। লোকে কাছে এসে তাঁর সঙ্গে কথা বললে তিনি মাথা নিচু করে মন দিয়ে শুনতেন এবং অল্প কথায় হয়তো তাঁর প্রশ্নের সমাধান করে দিতেন। তাঁর কাছে পৌঁছানো ছিল অতিশয় সহজ, এবং যে সশস্ত্র সান্ত্রী দেহরক্ষীর কথা আমরা আগে বলেছি তাকে এসব অনুষ্ঠানে কোথাও তাঁর আশেপাশে দেখা যেত না। ফলে তাঁর যে আরো বিপদ হয়নি সেটা আমাদের কাছে বিস্ময়ের মনে হয়।
তাঁর বক্তৃতা একাধিকবার শুনেছি। তাতে চটক বা নাটকীয়তা কিছুই ছিল না। বক্তৃতার সময় তাঁর হাত-পা বা শরীর কিছুই আন্দোলিত হতো না, কণ্ঠস্বরের কোনো ক্রীড়া ছিল না, চোখমুখেও আলোড়নভঙ্গি দেখা যেত না। কিন্তু খুব সহজে তিনি বিষয়টির একেবারে অন্তর্লোকে প্রবেশ করতেন, এবং নানা তুলনীয় প্রসঙ্গ এনে একটি সামগ্রিক ছবি তৈরি করে শ্রোতাদের তৃপ্ত করতেন। তাঁর আগে অনেক বক্তৃতা হয়েছে, সভার শ্রোতারা সভাপতির কাছে কী গভীরতার সঙ্গে, কী দৈর্ঘ্যের বক্তৃতা প্রত্যাশা করে সে-বিষয়ে তাঁর প্রখর সচেতনতা ছিল। এই কাণ্ডজ্ঞান এ-সংসারে খুব সুলভ নয়। অথচ এটাও জানি যে, তিনি আড্ডা দিতে খুব ভালোবাসতেন, এবং ঘরোয়া বা 888sport app আড্ডায় তিনি সভার মতো এত নিরাসক্ত থাকতেন না।
‘আনিসভাই’ নামেই ডাকতাম তাঁকে, আমাকেও তিনি নাম ধরেই ডাকতেন। অনুজের প্রতি স্নেহের যে-উষ্ণতা তা আমার জন্য, যেমন আরো অনেকের জন্য, সব সময় প্রস্তুত থাকত – বাড়িতে, অনুষ্ঠানে, আরো ব্যক্তিগত নানা সাক্ষাতে, একটি গ্রন্থের যুগ্ম-সম্পাদনার কাজে – দুই দেশে (বা বাইরেও, যেমন জাপানেও তাঁর সঙ্গে গেছি ২০১৫-তে) যেখানেই হোক। আমারও যে-বয়স, তাতে ওপর থেকে স্নেহের প্রত্যাশা করার স্থান বেশি থাকে না। আনিসভাই ছিলেন আমার সেই ওপর থেকে রাখা মাথায় হাত। আমার চেয়ে বয়সে মাত্র এক মাস দশ দিনের বড়, কিন্তু তাঁর দেশ ও সময়কে অতিক্রম করে যে-বিপুল মহিমা তৈরি হয়েছিল তাকে স্পর্শ করা এই সময়ের আর কোনো বাঙালির পক্ষে সম্ভব নয়।
আগে তো তাঁকে বাংলা 888sport live footballের ইতিহাসের অজানা বা অপেক্ষাকৃত অজানা তথ্যের আবিষ্কারক ও বিশ্লেষক হিসেবে গভীর 888sport apk download apk latest version করে এসেছি। তখন সম্পর্কটা ছিল শিক্ষক-ছাত্রের – তিনি দাতা, আমি গ্রহীতা। যদিও বয়সে তিনি আমার চেয়ে সামান্যই বড়, সে-কথা অনেক পরে জেনেছি। কিন্তু জ্ঞানচর্চার জগতে বয়সটা কোনো বিবেচনা নয়। আমি যদি বয়সে তাঁর চেয়ে দশ বা পনেরো বছরের বড়ও হতাম তবু তাঁর ছাত্র হতে আমার অসুবিধা হতো না। তাঁর গ্রন্থ আর রচনাবলি আমাকে এক ধরনের ‘দূরশিক্ষা’ দিয়েছে, আর সকলেই জানেন – দূরশিক্ষা শিক্ষক-ছাত্রের বয়সের আপেক্ষিকতা মানে না। প্রথমদিকে তাঁর বইগুলো পড়ে মনে হতো এক জ্ঞানবৃদ্ধ ও প্রবীণ মানুষের মুখোমুখি হয়েছি আমি, যাঁর বই পড়লে বাংলার 888sport live football-সংস্কৃতি সম্বন্ধে জ্ঞানের নতুন নতুন দেশের দরজা খুলে যায়। আমার মতো আরো হাজার হাজার বাঙালির শিক্ষক তিনি, তাঁর কাছে আমরা অকুণ্ঠচিত্তে হাত পেতে শিক্ষা ও জ্ঞানের সঞ্চয় গ্রহণ করি।
তিনি ছিলেন দুই বাংলার ‘ধর্মমুক্ত’ ‘মানবিক’ সংস্কৃতির প্রধান অভিভাবক। ভারত সরকারের কাছ থেকে তিনি পদ্মভূষণ 888sport app download bd পেয়েছিলেন (২০১৪) তাঁর এই উদার সাংস্কৃতিক মানবিকতায় দুই দেশের মধ্যে এক গভীর সৌহার্দ্য স্থাপনে তাঁর নিয়ত চেষ্টার জন্য। এই চেষ্টার জন্য তিনি অপরিসীম পরিশ্রম করতেন। বস্তুতপক্ষে বাঙালি বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে তাঁর মতো সচল এবং কাঁটাতার-অতিক্রমী আর কেউ ছিলেন না। ফলে কিছু 888sport app download bd আর সংবর্ধনা যে তাঁর জন্য নিজেরাই ভারত-সীমান্তের কাঁটাতার অতিক্রম করবে তা মোটেই অস্বাভাবিক নয়।
গত কুড়ি-পঁচিশ বছর ধরে বাংলা 888sport live football-সংস্কৃতির চর্চার মধ্যে এটা লক্ষ করে এসেছি যে, যখনই পশ্চিম বাংলায় কোনো আলোচনা-চক্র বা বিদগ্ধ 888sport live football-সভার কথা, কোনো বিশ্ববিদ্যালয়েই ভাবা হতো, এবং সেটাকে একটা ‘আন্তর্জাতিক’ চেহারা দেওয়ার পরিকল্পনা করা হতো, তখন যে-নামটি উদ্বোধক হিসেবে সকলের আগে সকলের মুখে উঠে আসত, সেটি আনিসভাইয়ের, আর কারো নয়। এ যেন শেক্সপিয়রকে নিয়ে ম্যাথিউ আর্নল্ডের সেই ভাবনা – Others abide our question, thou art free. এবং একবার নামটা উঠে পড়া মাত্র, সে-সম্বন্ধে কোনো দ্বিধা কোনো সীমানা থেকে উচ্চারিত হতো না। শুধু একটাই উদ্বেগ হয়তো কেউ প্রকাশ করতেন, তিনি সময় দিতে পারবেন কি?
কিন্তু, খুব অসম্ভব না হলে তিনি সময় দিতেন। জানি না, জন্মের (১৮ ফেব্রুয়ারি, ১৯৩৭) স্থান কলকাতা বলেই কি না, এবং জন্মগতভাবে ২৪ পরগনার সঙ্গে তাঁর নাড়ির যোগ আছে বলেই কিনা, এই বাংলার প্রতি ছিল তাঁর এক গভীর মমতা, এ-বাংলা থেকে কোনো ডাক এলে তিনি প্রত্যাখ্যান করার কথা ভাবতেনই না। তাঁর বিপুল পাণ্ডিত্য তাঁকে সামাজিকভাবে দুষ্প্রাপ্য করে তোলেনি, দুই বাংলার কোথাও নয়। 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘এমেরিটাস অধ্যাপক’ 888sport appsে তিনি ‘জাতীয় অধ্যাপক’ ছিলেন; মাননীয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যক্ষ শিক্ষক, তিনি এই শিক্ষকের পরামর্শ নিতে সব সময় এগিয়ে আসতেন। ছিলেন ২০১১ থেকে, কবীর চৌধুরীর প্রয়াণের পর, বাংলা একাডেমির সভাপতি। ছিলেন কালি ও কলমের সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি এবং অভিভাবক, দুই বাংলায় যার মতো 888sport live football-সংস্কৃতির পত্রিকা দুর্লভ। কিন্তু তিনি সবরকম সাংস্কৃতিক ঘটনায় উপস্থিত থাকতেন, ডাকলে প্রথমেই তাঁকে পাওয়া যেত। সভা, সমিতি, সংগত প্রতিবাদ, আলোচনা, সংবর্ধনা, বইয়ের ‘মোড়ক উন্মোচন’ – সভাপতি বা প্রধান অতিথি বা উদ্বোধক কে হবেন? অনিবার্যভাবে আনিসভাই। এ নিয়ে তাঁর স্ত্রী বেবি ভাবি (শ্রীমতী সিদ্দিকা জামান), পুত্র আনন্দ এবং অন্য প্রিয়জনদের উদ্বেগ ছিল; কিন্তু আনিসভাই, একান্ত অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে বা নার্সিং হোমে অবরুদ্ধ হওয়ার আগে পর্যন্ত, কাউকেই ফেরানোর কথা ভাবতেন না। তাঁকে যেমন দুই বাংলার সকলেই আমরা আমাদের সাংস্কৃতিক অভিভাবক বলে অবিকল্পভাবে মেনে নিয়েছিলাম – তাঁর একটি জীবন-তথ্যচিত্রের নাম উপযুক্তরূপেই ‘বাতিঘর’ – তিনি নিজেও আমাদের এই প্রাপ্য আশ্বাসটুকু দিতে কখনো ক্লান্ত হতেন না। তিনি আমাদের মধ্যে আছেন – এই কথাটা আমাদের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রায় প্রতিদিন সত্য হয়ে উঠত। কেবল একটি স্থিরমূর্তি নয়, এক সক্রিয়, সজীব, মৃদু ও শান্ত উচ্চারণময় অস্তিত্ব। সেই অস্তিত্বটি এবারে দুর্ঘটনাক্রমে অপসৃত হলো। আমরা খবর রাখছিলাম তাঁর, ফেসবুকে বাড়ি থেকে আশ্বাসও এসেছিল যে, অবস্থার উন্নতি ঘটছে। কিন্তু কিডনি কাজ করছে না দেখে একটু উদ্বেগ হচ্ছিল। সেই উদ্বেগ শোকে পরিণত হলো। ওই দীর্ঘ, আপাতসবলদেহ, অথচ শিশুর মতো সরল ও শান্ত মানুষটির প্রয়াণে যে-শূন্যতা নেমে এলো বাঙালির সাংস্কৃতিক অস্তিত্বে, তা আর পূরণ হওয়ার নয়। দক্ষিণ এশিয়ার বিবেকের একটি কণ্ঠস্বর স্তব্ধ হয়ে গেল।
বাঙালির সাংস্কৃতিক ইতিহাসের ওপর মূল্যবান গবেষণা তিনি অনেক করেছেন। দেশে-বিদেশে এজন্য তাঁর বিপুল সমাদর হয়েছে। ছাত্র 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ের, অধ্যাপনা করেছেন 888sport app আর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে, 888sport appতেই তাঁর পিএইচ.ডি, কিন্তু উত্তর-গবেষণা করেছেন প্রচুর, শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে (১৯৬৪-৬৫), লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব ওরিয়েন্টাল স্টাডিজে (১৯৭৪-৭৫)। প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয়, নর্থ ক্যারোলাইনা রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয়, জাতিসংঘ বিশ্ববিদ্যালয়, এদেশে কলকাতা, বিশ্বভারতী, রবীন্দ্র-ভারতী ইত্যাদি কত বিশ্ববিদ্যালয় যে তাঁকে ডেকেছে, সম্মান আর 888sport app download bd দিয়েছে তার ইয়ত্তা নেই। এই ভাষাসৈনিক আর মুক্তিযোদ্ধাটি সংগতভাবেই তাঁর দেশের কাছে বিপুল সম্মান পেয়েছেন, বহু 888sport app download bd তাঁর সঙ্গে যুক্ত হয়ে নিজেরাই ধন্য হয়েছে।
তাঁর রচনা আর গবেষণা নিয়ে কথা বলার যোগ্য পাত্র আমি নই। তাঁর সব বইও আমার পড়া হয়নি। তবু সামান্য কিছু পরিচয় থেকে কিছু বলি। আমরা তাঁর গ্রন্থগুলিকে মূলত চারটি ভাগে ভাগ করে দেখতে চাই। তাঁর প্রথম গবেষণা মুসলিম মানস ও বাংলা 888sport live football (১৯৬৪) বাংলা 888sport live footballের একটি বিকল্প এবং অবহেলিত ধারার সন্ধান আর আবিষ্কার করেছে। এ-কথা অস্বীকার করার কিছু নেই যে, হিন্দু 888sport live footballের ঐতিহাসিকদের কাছে, দীনেশচন্দ্র সেন প্রমুখের ব্যতিক্রম সত্ত্বেও, অবিভক্ত বাংলার বৃহত্তর জনগোষ্ঠী মুসলমানদের মনের কথা, তাঁদের 888sport live football, কিছুটা পার্শ্বিকতায় সরানো ছিল, অধ্যাপক আহমদ শরীফ, আনিসুজ্জামান – অনেকেই সেই কথাগুলিকে সামনে আনার চেষ্টা করেছেন, তাতে সমগ্র বাঙালিরই উপকার হয়েছে। পরে বাংলার 888sport promo code, 888sport live footballে ও সমাজে (২০০১) বইটিও অনেকটা একই কাজ করেছে – পার্শ্বিকতায় সরিয়ে রাখা ইতিহাসের উদ্ধার। দ্বিতীয় ধারা – যে-ধারাটি তৎকালীন পূর্ব বাংলা এবং পূর্ব পাকিস্তানের বহু বুদ্ধিজীবীর মধ্যেই লক্ষ করা যায় – সেটি হলো বাঙালি মুসলমানের আত্মপরিচয় সন্ধান। কী সেই আত্মপরিচয়? তা কি ধর্মের দ্বারা চিহ্নিত হবে? নাকি এক উদার, বহুমাত্রিক বাঙালির অসাম্প্রদায়িক পরিচয় তৈরি হবে? বলা বাহুল্য, তাঁর উত্তর দ্বিতীয় বিকল্পকেই গ্রহণ করেছে। তঁভর স্বরূপের সন্ধানে (১৯৭৬), ইংরেজি Creativity, Identity and Reality (১৯৯১), Cultural Pluralism (১৯৯৩), Identity, Religion and Recent History (১৯৯৫) – ইত্যাদি বই সেই উদ্বেগ আর আগ্রহের প্রমাণ। তৃতীয় ধারা – অষ্টাদশ শতাব্দীর বাংলার ইতিহাসের দুর্মূল্য নথিপত্রের আবিষ্কার ও উদ্ধার – লন্ডনের ইন্ডিয়া অফিস লাইব্রেরি থেকে তিনি যেগুলি পেয়েছিলেন। তার মধ্যে আছে আঠারো শতকের বাংলা চিঠি (১৯৮৩), পুরানো বাংলা গদ্য (১৯৮৪), এবং ইংরেজি Factory Correspondence and Other Bengali Documents in the India Office Library Records ((1983)। আর চতুর্থত, তাঁর আত্মজীবনীমূলক নানা লেখা, যার প্রসন্ন গদ্য যেমন আমাদের আকর্ষণ করে, তেমনি তাঁর অভিজ্ঞতার বিস্তার আমাদের অভিভূত করে। গদ্য শুধু প্রসন্ন নয়, সহজ এবং সাবলীল, পাঠকদের তিনি খুব সহজ অন্তরঙ্গতার বৃত্তে প্রথম থেকেই টেনে নিতেন। রস-রসিকতা যথেষ্টই থাকত, কিন্তু তা কখনো আক্রমণাত্মক নয়, আর খুব সশব্দও নয়, তাঁর ব্যক্তিগত এবং আনুষ্ঠানিক কথাবার্তাও একটা রুচি ও গাম্ভীর্যের সীমানা মেনে চলত। এই বইগুলির মধ্যে আছে আমার একাত্তর (১৯৯৭), মুক্তিযুদ্ধ এবং তারপর (১৯৯৮), আমার চোখে (১৯৯৯), কাল নিরবধি (২০০৩), বিপুলা পৃথিবী (২০১৭) ইত্যাদি। আর এই আত্মজীবনীভিত্তিক বইগুলি শুধু তাঁর জীবনের ঘটনার বিবরণ নয়। তাতে দেশের সমকালের ইতিহাস যেমন প্রতিফলিত হয়েছে তেমনি বহু ব্যক্তি আর ঘটনা সম্বন্ধে তাঁর পর্যবেক্ষণ আর বিচার লিপিবদ্ধ হয়েছে। এই বিচার পক্ষপাতীর নয়, একজন সৎ, চিন্তাশীল এবং নিজের সত্যের কাছে দায়বদ্ধ মানুষের। পরবর্তী ঐতিহাসিকদের কাছে তা মূল্যবান উপাদান হিসেবে গৃহীত হওয়ার যোগ্য।
এই অসাধারণ জ্ঞানতাপস আর মহৎ মানুষটির জন্য 888sport appsে ও অন্যত্র বাঙালিদের মধ্যে গভীর জাতীয় শোক নিশ্চয়ই পালিত হবে, বা বাংলাবিদ্যার পৃথিবীতে আন্তর্জাতিক শোক-888sport app download for androidও নিশ্চয়ই অনুষ্ঠিত হবে। সেদিন আজিমপুরের সমাধিস্থানে তাঁর সমাধির ভিডিও দেখে চোখে জল আসছিল; কোথায় হাজার মানুষের মিছিল, কোথায় বাংলা একাডেমি, বিশ্ববিদ্যালয় সর্বত্র তাঁর শবযাত্রা-মিছিলের ছুঁয়ে যাওয়া, কোথায় জনমুগ্ধকর রাষ্ট্রীয় সম্মান, কোথায় দেশের নানা কেন্দ্রে তাঁর 888sport app download for androidসভা! তাঁর মতো মানুষের কি এই বিদায় নেওয়ার কথা! করোনার এই খিলকুলুপের সময়ে তাঁর প্রয়াণে শোকজ্ঞাপনও আমাদের অতিশয় অসম্পূর্ণভাবে করতে হলো, এ এক মহাসন্তাপের কথা।
কিন্তু তিনি বেঁচে থাকবেন তাঁর কাজে, কীর্তিতে, ইতিহাসে তাঁর অবি888sport app download for androidীয় ভূমিকায়। আর আমরা যারা তাঁর ব্যক্তিগত স্নেহ পেয়ে সমৃদ্ধ হয়েছিলাম, তাদের কাছে যে বিপুল শূন্যতা তৈরি হলো তার প্রতিবিধান কোথায়? আমাদের এই বয়সে স্নেহ পাওয়ার উৎস খুব বহুলসংখ্যক থাকে না। তাও যখন একে একে বিলুপ্ত হয় তখন আমাদের নিজস্ব শোকও অসহনীয় হয়ে ওঠে। তাঁর 888sport sign up bonusকে আমার বিনম্র প্রণাম।
[মন্তব্য : আমার এই লেখায় নিজেরই দু-একটি আগের লেখাকে ব্যবহার করেছি।]


Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.