১৯৮৩ সালে এমএ পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হলে আমাদের শিক্ষক ডক্টর আবু হেনা মোস্তফা কামাল স্যারের বাসায় যাই, উদ্দেশ্য স্যারের আশীর্বাদ নেওয়া। অনেক কথা হলো স্যারের সঙ্গে, বললেন : ‘পরীক্ষার ফল তো ভালো হলো, এখন কী করবেন?’ জানালাম, শিক্ষকতাই প্রথম এবং একমাত্র পছন্দ। মিনিটখানিক চুপ থাকলেন স্যার, তারপর বললেন – ‘শিক্ষকতাই যখন করবেন, তখন লেখালেখি এবং গবেষণার জগতে আপনাকে আসতেই হবে। কোনো বিষয়ে গবেষণাধর্মী কিছু লেখার আগে আনিস সাহেবের মুসলিম-মানস ও বাংলা 888sport live football বইটা একবার ওলটাবেন, অনেক উপকার পাবেন।’ হেনা স্যারের সেদিনের কথাটা এখনো কানে বাজে এবং ভাবি, কী আশ্চর্য ও অব্যর্থ এক পরামর্শ আমাকে দিয়ে গেছেন স্যার সারাজীবনের জন্য।
হেনা স্যারের আনিস সাহেব আমাদের আনিস স্যার, 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর এমেরিটাস আনিসুজ্জামান, 888sport appsের জাতীয় অধ্যাপক ডক্টর আনিসুজ্জামান। কেবল গবেষক হিসেবেই নয়, বহু উজ্জ্বল কৃতি ও কীর্তিতে অনন্য হয়ে-ওঠা একটি নাম – আনিসুজ্জামান। দেশের সীমানা ছাড়িয়ে আমাদের যে-কজন মানুষ নিজেদের ছড়িয়ে দিতে পেরেছেন বিশ্ব-ভূগোলে, আনিসুজ্জামান তাঁদের অন্যতম। লেখক, গবেষক, শিক্ষাচিন্তক, সংস্কৃতিসাধক, দেশপ্রেমিক, মুক্তিসংগ্রামী, মানবাধিকার সংগঠক, সুবক্তা, সর্বোপরি জাতির বিবেক – কতভাবেই তো আনিস স্যার নিজেকে মেলে ধরেছেন জাতির সামনে। একজন সংবেদনশীল প্রগতিপন্থী মানুষ হিসেবে তাঁর তুল্য কজন মানুষ আছেন আমাদের? কত বাঙালির নামই তো আনিসুজ্জামান – তবু কেন জানি আনিসুজ্জামান নামটা শুনলেই মনে জাগে সমাজসচেতন এক বুদ্ধিজীবী, দীপ্র এক মনীষার অবয়ব। সহজ সাবলীল স্বাভাবিক সাধারণভাবে চলতে চলতে একজন মানুষ কী করে যে এমন অসাধারণ হয়ে উঠতে পারেন, তাঁর সান্নিধ্যে না গেলে সে-কথা অনুধাবন করাও বোধ করি সম্ভব নয়। আনিস স্যারের কথা মনে হলেই কল্পচোখে ভেসে ওঠে শামসুর রাহমানের 888sport app download apkয় চিত্রিত অসামান্য এক পণ্ডিতের নিরাভরণ এই অবয়ব :
যখন পাঞ্জাবি আর পাজামা চাপিয়ে
শরীরে, সকালে কিংবা বিকেলে একলা হেঁটে যান
প্রায় প্রতিদিন দীর্ঘকায় সবুজ ঘাসের
তলা দিয়ে তাকে বাস্তবিকই সাধারণ মনে হয়।
- হ্যাঁ, এই সাধারণ মানুষটাই ছিলেন আমাদের কালের অসামান্য মনীষার এক অনন্য দৃষ্টান্ত। তাঁর আমার একাত্তর (১৯৯৭), কাল নিরবধি (২০০৩) এবং বিপুলা পৃথিবী (২০১৫) পাঠ করলেই অনুধাবন করা যাবে সাধারণের সীমানা পেরিয়ে তিনি কীভাবে পৌঁছে গেলেন অসাধারণের স্তরে। বাঙালি জাতির একটা পর্বের ইতিহাসের সঙ্গে আনিসুজ্জামানের নাম ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ১৯৫৩ সালে হাসান হাফিজুর রহমান-সম্পাদিত 888sport cricket BPL rateে ফেব্রুয়ারি গ্রন্থের উৎসর্গপত্রটির কথা আজ বিশেষভাবে মনে পড়ছে। কী অসীম সাহসিকতার সঙ্গে সেদিনের কিশোর আনিসুজ্জামান মুক্তোর মতো হস্তাক্ষরে সে-গ্রন্থের জন্য লিখেছিলেন এই উৎসর্গ বয়ান : ‘যে অমর দেশবাসীর মধ্যে থেকে জন্ম নিয়েছেন 888sport cricket BPL rateের শহীদেরা, যে অমর দেশবাসীর মধ্যে অটুট হয়ে রয়েছে 888sport cricket BPL rateের প্রতিজ্ঞা, তাদের উদ্দেশে।’ পনেরো বছরের এক কিশোর পাকিস্তানি স্বৈরশাসকদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে সেদিন নিজের হস্তাক্ষর মুদ্রিত করতে দিয়ে অসীম সাহসের পরিচয় দিয়েছিলেন। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের সময় আনিসুজ্জামান কেবল স্কুলজীবনের গণ্ডি পেরিয়েছেন, তবু ওই বয়সেই তিনি এই আন্দোলনের সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত ছিলেন। একথা আজ ঐতিহাসিক সত্য যে, রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন-বিষয়ক প্রথম পুস্তিকার লেখক আনিসুজ্জামান। প্রসঙ্গত 888sport app download for android করা যায় তাঁর এই ভাষ্য : ‘আসলে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ থেকে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করে পুস্তিকা তৈরির কাজ দেওয়া হয়েছিল মো. তোহাকে। তিনি সময় পাচ্ছিলেন না এ-কাজ করার। তখন পূর্ব পাকিস্তান যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক অলি আহাদ আমাকে বলেন যে – ‘আপনি লিখেন, আমি সংশোধন করে দেব।’ যেহেতু রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলাম, সেহেতু জানতে হয়েছে যে পৃথিবীর কোথায় কোথায় একাধিক রাষ্ট্রভাষা রয়েছে। আর রাষ্ট্রভাষা না হলে আমাদের কী হতে পারে। আমি ওই সময়ে এটা লিখেছিলাম এবং সংশোধন করেছেন অলি আহাদ। ওই পুস্তিকা তখন বের হয় রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন কী ও কেন – এই শিরোনামে। তখন জানিনি, পরে জানলাম, ১৯৫২ সালে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন সম্পর্কিত এটাই প্রথম প্রকাশিত পুস্তিকা। সেই অর্থে এটি একটি ঐতিহাসিক অর্থ বহন করে। এখন সংরক্ষণে থাকলে বুঝতে পারতাম, সেটা কতখানি ভালো করতে পেরেছি। তখন দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল যুবলীগের বিভিন্ন শাখার মাধ্যমে’ (দৈনিক কালের কণ্ঠ, ৩১.০১.২০১৪)। ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান কি একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ – সর্বত্রই আনিসুজ্জামান পালন করেছেন অগ্রণী ভূমিকা। মুক্তিযুদ্ধের সময় পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য হিসেবে তিনি পালন করেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। 888sport appsের মুক্তিযুদ্ধের সার্বিক প্রেক্ষাপট ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে অবগত করানোর জন্য তাজউদ্দীন আহমদের সঙ্গে তিনি দিল্লি গিয়েছিলেন। আনিসুজ্জামানের আমার একাত্তর গ্রন্থ পাঠ করলেই জানা যাবে মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে তাঁর গভীর সংশ্লিষ্টতার কথা। মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে যারা জড়িত ছিল, তাদের প্রতীকী বিচারকার্যে বিচারক হিসেবে অংশগ্রহণ করে তিনি পালন করেছেন সামাজিক দায়বদ্ধতা; ওই দায়বদ্ধতা থেকেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্যক্রমে আসামির বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে তিনি হাজির হন আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে। যখনই জাতীয়ভাবে জটিল কোনো সংকটে আমরা পড়েছি, আনিসুজ্জামান তখনই ভরসা হয়ে জাতির পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন, কলম হাতে পত্রিকার পাতায় হাজির হয়েছেন সাহসী ভূমিকা নিয়ে।
মুক্তবুদ্ধি ও মাঙ্গলিক চেতনা দ্বারা আজীবন পরিচালিত হয়েছেন আনিসুজ্জামান। অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও ইহজাগতিকতা ছিল ধ্যানে-জ্ঞানে, প্রাত্যহিক জীবনাচরণে। তাঁর সকল কর্মের পশ্চাতেই আছে অপরের জন্য মঙ্গলবাসনা। নিজের স্বার্থকে অবলীলায় তিনি সবার স্বার্থের কাছে তুচ্ছ করে তুলতে পারেন, অন্যের মঙ্গলকে ভাবতে পারেন নিজের মঙ্গল হিসেবে। এমন সজ্জন মানুষ, সুরুচির অধিকারী এমন পণ্ডিত আমাদের সমাজ কেন, যে-কোনো সমাজেই বিরল। মানুষের সঙ্গে তিনি মিশতে পারতেন সাবলীলভাবে, তাঁর পাণ্ডিত্য সেক্ষেত্রে কখনো বাধা হয়ে দাঁড়াত না। অদ্ভুত এক নির্মোহ দিয়ে নিজেকে উহ্য রাখতে পারতেন আনিসুজ্জামান; তাঁর আত্মজীবনী পাঠ করলেই বোঝা যায় দেশজীবনই হয়ে ওঠে তাঁর আত্মজীবন – নিজে সেখানে কেবলই একজন কথকমাত্র। সন্দেহ নেই, আমাদের আমিময় সমাজে এ-ও এক বিরল গুণ। এই বিরল মানুষটার ছিল অসামান্য কৌতুকচেতনা ও রসবোধ। নিজেকে নিয়ে কৌতুক করতে তিনি বেশ মজা পেতেন বলেই মনে হয়। ২০১৭ সালের বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসব উৎসর্গ করা হয়েছিল আনিসুজ্জামানকে। সমাপনী দিনের বক্তৃতায় তিনি কৌতুক করে বললেন : তাঁর এক পরিচিতজন তাঁকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, জীবিত লোককে এ ধরনের উৎসব উৎসর্গ করা যায় কি না? আনিস স্যার জবাব দিয়েছিলেন, যায় – তবে শর্ত থাকে যে, এমন ব্যক্তিকে এক বছরের মধ্যে মৃত্যুবরণ করতে হবে। একই প্রসঙ্গে তিনি অন্যত্র বলেছেন, বেঙ্গল সংগীত উৎসবে শ্রোতাদের কাছ থেকে কোনো প্রবেশমূল্য নেওয়া হয় না, কিন্তু একটা অলিখিত শর্ত আছে। উৎসব যদি কোনো জীবিত মানুষকে উৎসর্গ করা হয়, তা হলে বক্তৃতায় যা-ই বলুন না কেন শ্রোতাকে তা মনোযোগসহকারে শুনতে হবে।
দুই
ডক্টর আনিসুজ্জামানকে জানতে হলে তাঁর তিনটি গ্রন্থ মনোযোগসহকারে পাঠ করতে হবে। এই গ্রন্থত্রয় হচ্ছে, কাল নিরবধি, আমার একাত্তর এবং বিপুলা পৃথিবী। বাংলা ভাষায় আত্মজীবনীর ধারায় আনিসুজ্জামানের গ্রন্থত্রয় এক বিশিষ্ট সংযোজন। গ্রন্থত্রয়ে তাঁর নিজের কথা যত না উঠে এসেছে, তার চেয়ে অনেক বেশি ফুটে উঠেছে পরিবর্তমান সময় ও সমাজ এবং পরিপার্শ্বের ছবি। গ্রন্থত্রয় মূলত আনিসুজ্জামানের আত্মজীবনীর তিনটি খণ্ড। এই আত্মজীবনী পাঠ করলে বোঝা যায়, আনিসুজ্জামান ইতিহাসের স্রোতে নিজেকে সমর্পণ করেননি, বরং ইতিহাসের ধারাকে গড়তে চেয়েছেন আপন চেতনা ও বিশ্ববীক্ষার আলোকে। সারল্য, মাধুর্য, 888sport sign up bonusমুগ্ধতা এবং কৌতুকের সমন্বয়ে এমন নিরাসক্ত আত্মজীবনী বাংলা 888sport live footballে খুব বেশি পাওয়া যাবে না।
কাল নিরবধি আনিসুজ্জামানের জীবনের প্রথম তিন দশকের (১৯৩৭-৭১) কথালেখ্য। ১৯৩৭ সালের ১৮ই ফেব্রুয়ারি কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেছিল যে-শিশুটি, কালক্রমে সে-শিশু কীভাবে একজন আনিসুজ্জামান হয়ে উঠলেন তা-ই চিত্রিত হয়েছে এ-গ্রন্থে। জন্ম থেকে প্রাক-মুক্তিযুদ্ধ কালপর্বের নানা ঘটনায় মুখর এ-পর্বের কিশোর-যুবক আনিসুজ্জামান। প্রায় ৫০০ পাতার আলোচ্য গ্রন্থ আটটি অংশে বিন্যস্ত। অংশগুলো এরকম : পূর্ব-প্রবংশের কথা ‘জন্মের আগে’, কলকাতায় জন্মের পর থেকে দেশবিভাগের পর খুলনায় আসা পর্ব (১৯৩৭-১৯৪৭) ‘জেগে উঠিলাম’, খুলনা-888sport appর শিক্ষাজীবন (১৯৪৭-১৯৫২) ‘অন্য কোনোখানে’, 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবনালেখ্য (১৯৫৩-১৯৫৭) ‘আলো ভুবনভরা’, কর্মজীবনের প্রথম অর্ধযুগ (১৯৫৮-১৯৬৪) নিয়ে ‘বিচিত্র চিত্র’, প্রথম প্রবাসকথা (১৯৬৪-১৯৬৫) ‘প্রথম প্রবাস’, প্রথম প্রবাস থেকে ফিরে এসে 888sport app বিশ্ববিদ্যালয় নীলক্ষেত পাড়ায় বসবাস নিয়ে (১৯৬৬-১৯৬৯) ‘সমাজ-সংসার’ এবং 888sport app বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানের পর অধ্যাপনা ও প্রাসঙ্গিক কথা নিয়ে (১৯৬৯-১৯৭১) ‘নতুন ঠিকানা’। কাল নিরবধি গ্রন্থে অন্তর্বয়ন কৌশলে সমান্তরাল তিনটি রেখায় জীবনকথাকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন আনিসুজ্জামান। ঘটনাধারার প্রথম স্রোতটিতে আছে আনিসুজ্জামানের ব্যক্তিগতভাবে বেড়ে ওঠার কাহিনি – শৈশবকাল থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের রিডার হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতাকথন; দ্বিতীয়টিতে আছে আনিসুজ্জামানের সামাজিক-সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক জীবনের গল্পকথা। তৃতীয় স্রোতটি মুখর হয়েছে বাঙালি জীবনের ঐতিহাসিক পটপরিবর্তন – দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মুখে আক্রান্ত কলকাতা থেকে আরম্ভ করে একাত্তরে মুক্তিসংগ্রামের সমুত্থিত জাগরণ-কাহিনিতে।
কাল নিরবধি আনিসুজ্জামান আরম্ভ করেছেন তাঁর পরিবারের পূর্ব-প্রবংশের কাহিনি দিয়ে। পাঠকের জন্য এ-অংশ যথার্থই উপরি পাওয়া। এখানে উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধ এবং বিশ শতকের প্রথমার্ধের কলকাতাকেন্দ্রিক বাঙালি মুসলমান মধ্যবিত্তের বিকাশের চিত্র অঙ্কিত হয়েছে। আনিসুজ্জামানের স্কুলজীবন কেটেছে কলকাতা-খুলনা-888sport appয়, প্রথম পর্বের কর্মজীবন 888sport app-চট্টগ্রামে। প্রথম পর্বে ৩৪ বছরের ১৭ বছরই তাঁর কেটেছে 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ে – ছাত্র-গবেষক-শিক্ষক হিসেবে। এ-সময়ে 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ের সামূহিক চিত্র উঠে এসেছে তাঁর লেখায়। 888sport app বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে তাঁর বর্ণনার দু-একটা চিত্র এরকম :
ক. এখনকার 888sport app মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পূর্বদিকের উত্তর-দক্ষিণ বাহু তখন 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবন। … কলাভবনের সিংহদ্বার ছিল প্রক্টরের দখলে; ওপরে বাসা, নিচে অফিস। … পশ্চিমে টিনশেডে মধুর দোকান … বাণিজ্য বিভাগের একতলা শ্রীহীন ঘরগুলো পুকুরের ধার দিয়ে উত্তর-দক্ষিণে একটু বাঁকা হয়ে পৌঁছাতো ফ্যাকাল্টি বিল্ডিংয়ের কাছে। …
খ. ১৯৫৩ সালে প্রথম বর্ষ বাংলা অনার্স ক্লাসে আমরা ভর্তি হয়েছিলাম দশজন … আটজন ছেলে, আর মেয়ে দু’জন …। কয়েক দিন পরে গুঞ্জন শুনলাম, বাংলা বিভাগে এবারে অনেক ছেলেমেয়ে ভর্তি হয়েছে। …
বিশ শতকের চল্লিশের দশক থেকে উনিশশো একাত্তর সালের গৌরবোজ্জ্বল মুক্তিযুদ্ধ শুরুর আগ পর্যন্ত বাংলা ভূখণ্ডের ঐতিহাসিক পরিবর্তন ধারা কাল নিরবধিতে 888sport live chatিতা পেয়েছে। ’৪৬-এর দাঙ্গা, ’৪৭-এর দেশবিভাগ, ’৫২-র রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন, ’৫৪-র যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ষাটের দশকে ছাত্র-আন্দোলন, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ’৭০-এর নির্বাচন, ’৭১-এর অসহযোগ আন্দোলন – ঐতিহাসিক প্রতিটি ঘটনা-আন্দোলন-প্রসঙ্গের সঙ্গে আনিসুজ্জামান নানা মাত্রায় ছিলেন সংশ্লিষ্ট। এসব ঘটনা-অনুষঙ্গ তিনি দূর থেকে দেখেননি, ঘরে বসে বই পাঠ করে অবগত হননি – বরং সবকিছুর সঙ্গে তিনি ছিলেন গভীরভাবে সংযুক্ত। যেমন, ১৯৪৬ সালে কলকাতার দাঙ্গা তাঁর চোখে ধরা দেয় এভাবে : ‘… যারা আগের দিন লুটপাট করে ক্ষান্ত ছিল, তারা পরের দিন কিছু কিছু বাড়িঘর আক্রমণ করতে শুরু করলো এবং লাঠি, লোহার রড ও ছোরা হাতে নিয়ে উন্মত্তের মতো ছুটোছুটি করতে লাগলো। … পলায়নপর গোয়ালার পেছন পেছন ছুটে কে যেন লোহার রড দিয়ে তার মাথায় মারলো। তারপর যার হাতে যা ছিল, তা দিয়ে মারতে মারতে এক সময়ে ম্যানহোলের ঢাকনা খুলে তার মধ্যে তার সেই বিশাল রক্তাক্ত দেহ ঢুকিয়ে দিলো।’ কিংবা রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে তাঁর গভীর সংশ্লিষ্টতার কিছুটা ধরা পড়ে এভাবে : ‘কীভাবে যেন মেডিকেল কলেজের ১১ নম্বর ব্যারাকে (গেটের সংলগ্ন) একটা মাইক্রোফোন এনে বসানো হলো। মোহাম্মদ তোয়াহার বাংলায় বক্তৃতা করার অভ্যাস ছিল না। তিনি আমাকে বললেন, লিখে লিখে দিতে এবং সেটা দেখে তিনি পড়তে থাকলেন। কিন্তু মুখের কথার সঙ্গে লেখার গতির মিল হয় না। … তোয়াহা ভাই এক-আধটা কথা যোগ করে … আমাকে মাইক্রোফোন দিলেন।’ আত্মজীবনীতে অনেকেই নিজের নেতিবাচক কথা বর্জন করেন, কখনো বাড়িয়ে বলেন নিজের সম্পর্কে। কিন্তু ডক্টর আনিসুজ্জামান এক্ষেত্রে উজ্জ্বল ব্যতিক্রম।
‘পূর্বাভাষে’ তিনি লিখেছেন – ‘সদা সত্য কথা বলিয়াছি।’ তাঁর এই কথা যে যথার্থই সত্য, তা বোঝা যায় পিতা সম্পর্কে তাঁর এই অকুণ্ঠিত ভাষ্য থেকে : ‘খুলনায় এসে আব্বার মধ্যে অতিরঞ্জনের প্রবণতা লক্ষ্য করলাম। কলকাতায় আমাদের আর্থিক সচ্ছলতা যতোটুকু ছিল, সেটা তিনি বহুগুণে বাড়িয়ে বলেছেন লোকজনের কাছে। এতে আমি একটা ধাক্কা খেলাম।’ সূচনা-সূত্রে ব্যক্ত হয়েছে যে, মেধাবী কৌতুকে ঋদ্ধ আনিসুজ্জামানের গদ্য888sport live football। এ-গ্রন্থেও পাওয়া যায় তাই সেই মেধাবী কৌতুকের পরিচয় :
আমার কোনো আবদার বা অভিমানের প্রতিষেধক হিসেবে মেজোবু একটা কথাই বলতো : এমন করলে আব্বার মান চলে যাবে। মান যে কী জিনিস, তা আমার জানা ছিল না; কিন্তু তা হারানো যে অত্যন্ত ক্ষতিকর, সে কথা মনে গেঁথে গিয়েছিল।
888sport appsের গৌরবোজ্জ্বল মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে লেখা আনিসুজ্জামানের আমার একাত্তর নানা কারণেই দাবি করতে পারে বিশিষ্টতা। মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ছিলেন অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। তিনি ছিলেন বিপ্লবী সরকার-গঠিত পরিকল্পনা সেলের অন্যতম সদস্য। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের অধিকাংশ ভাষণের লেখক ছিলেন আনিসুজ্জামান। ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে সাক্ষাৎকারী 888sport apps প্রতিনিধিদলের তিনি ছিলেন অন্যতম সদস্য। ভাবতে অবাক লাগে, এসব কাজ তিনি যখন করেছেন, একটি বিপ্লবী সরকার যখন তাঁর ওপর এসব গুরুদায়িত্ব বহনের ক্ষমতা সম্পর্কে আস্থা স্থাপন করেছে, তখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র চৌত্রিশ বছর। রাজনীতির সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত না থেকেও আনিসুজ্জামান সেদিন যে-রাজনৈতিক প্রজ্ঞার পরিচয় দিয়েছিলেন, রাজনীতির খুঁটিনাটি চাল সম্পর্কে যে-বিশ্লেষণ উপস্থাপন করেছেন, তা অনেকের কাছেই শিক্ষণীয় হতে পারে, হতে পারে অবিরল অনুপ্রেরণার উৎস। আনিসুজ্জামানের ব্যক্তি-অভিজ্ঞতা ও একাত্তরের রাষ্ট্রীয় ঘটনাধারা বক্ষ্যমাণ গ্রন্থে একাকার হয়ে গেছে। এখানে ব্যক্তি-আনিসুজ্জামান গৌণ হয়ে গেছে, মুখ্য হয়ে উঠেছে 888sport appsের মুক্তিযুদ্ধ। 888sport sign up bonusকথা লেখার সময় নিজেকে উহ্য রাখার প্রায় অসম্ভব এক ক্ষমতা আছে আনিসুজ্জামানের। তিনি মুক্তিযুদ্ধের মূল ঘটনাধারা দেখেছেন ও বিশ্লেষণ করেছেন ঘটনার কেন্দ্রে থেকে, গালগল্প করে নিজেকে জাহির করে নয়, বরং উহ্য রেখে। জীবন888sport sign up bonus লেখা এক অর্থে বেশ জটিল কাজ। কারণ জীবনের অনেক কথাই উত্তরজীবনে ঝাপসা হয়ে আসে, তথ্য-উপাত্তে দেখা দেয় নানামাত্রিক ভ্রান্তি। যাঁদের দিনপঞ্জি লেখার অভ্যাস আছে তাঁদের জন্য কাজটা কিছুটা সহজ; কিন্তু যাঁদের দিনপঞ্জি লেখার অভ্যাস নেই, তাঁদের বেলায়? আমাদের বাতিঘর আনিসুজ্জামানের দিনপঞ্জি লেখার অভ্যাস ছিল না, তাই গোটা বই তিনি রচনা করেছেন 888sport sign up bonusকে সম্বল করে। অসামান্য তাঁর 888sport sign up bonusশক্তি। 888sport sign up bonus নাকি বেশ প্রতারক। কিন্তু আমার একাত্তর পাঠ করলে মনে হয় 888sport sign up bonusশক্তি আনিসুজ্জামানের সঙ্গে প্রতারণা করার সাহস পায়নি। প্রসঙ্গত 888sport app download for android করি তাঁর এই ভাষ্য :
আমার ডায়েরি লেখার অভ্যাস নেই, মুক্তিযুদ্ধের সময়েও ছিল না। এই রচনা মূলত 888sport sign up bonusনির্ভর। ১৯৭১-এর মে মাসের মধ্যভাগে আমি কলকাতায় পৌঁছাবার পর অনিরুদ্ধ রায় আমাকে একটা নতুন ডায়েরি উপহার দিয়েছিল। তাতে অনেকের নাম-ঠিকানা আর দেখা-সাক্ষাতের স্থানকাল লেখা আছে। তা দেখে অনেক ঘটনা ফিরে এসেছে নিজের কাছে। নানা 888sport free bet login থেকে কিছু ঐতিহাসিক তথ্য নিয়েছি, আমার 888sport sign up bonusও ঝালিয়ে নিয়েছি। … 888sport sign up bonus সকলের সঙ্গেই প্রতারণা করে। আমার সঙ্গে করেনি, এমন দাবি করবো না। তবু এটা যখন আমারই 888sport sign up bonusকথা, তখন 888sport sign up bonusর ওপরেই নির্ভর করেছি।
আমার একাত্তর গ্রন্থের প্রথম ভাগে উনিশশো একাত্তর সালের মার্চের শুরুতে চট্টগ্রাম শহর এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিরোধ সংগ্রামের নানা খণ্ডচিত্র উপস্থাপিত হয়েছে। লেখক সর্বদাই ছিলেন ঘটনার কেন্দ্রে। ফলে তাঁর বিবরণীতে একটা বিশ্বস্ত ছবি পাঠক পেয়ে যান। গোটা বই সম্পর্কেই একথা প্রযোজ্য। ইতিহাসের নানা তথ্য উপস্থাপনের পাশাপাশি নিজস্ব ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ আলোচ্য গ্রন্থের একটা উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য। সংক্ষিপ্ত একটা-দুটো বাক্যে তিনি তুলে ধরেন তাঁর বিবেচনা ও মূল্যায়ন। যেমন, স্বাধীনতা যুদ্ধের অব্যবহিত পূর্বে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রসঙ্গে বিভিন্ন গোষ্ঠীর মূল্যায়ন তিনি উপস্থাপন করেন এভাবে : ‘বঙ্গবন্ধুর প্রভাব তখন অসীম : তবু তিনি হঠকারী না আপসকামী, ক্ষমতালিপ্সু না জনসেবক, বিদেশের উস্কানিতে পাকিস্তান ভাঙতে চান না পূর্ববাংলার স্বার্থ ক্ষুণ্ন করে পাকিস্তানের ঐক্য বজায় রাখতে চান – সে-সম্পর্কে নানা মহলের নানা মত। আমার কেবল মনে হচ্ছিল যে, তিনি প্রভাবশালী বলেই প্রকাশ্যে ও গোপনে বিভিন্ন দল ও গোষ্ঠী নিজেদের ইচ্ছা তাঁর ওপরে আরোপ করতে চাইছেন; তাঁর দলেরই একেক অংশ নিজেদের মত ও কর্মপন্থাকে বঙ্গবন্ধুর অভিপ্রায় বলে চালিয়ে দিচ্ছেন।’ মুক্তিযুদ্ধের সময় আওয়ামী লীগের অভ্যন্তর-দ্বন্দ্ব, বিশেষত তাজউদ্দীনের বিরুদ্ধপক্ষের নানামাত্রিক প্রয়াস আনিসুজ্জামানের ভাষ্য থেকে জানা যায়। ঘরে-বাইরে তাজউদ্দীন যে কতভাবে বিরোধিতার মুখোমুখি হয়েছেন, এ-গ্রন্থে তার আভাস বেশ স্পষ্ট। তাহেরউদ্দিন ঠাকুর, খোন্দকার মোশতাক আহমেদরা যে মুক্তিযুদ্ধের সময়েই নানামাত্রিক স্যাবোটাজ করেছে, তারও ইঙ্গিত পাই আলোচ্য গ্রন্থে। সর্বদলীয় জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের প্রতি আওয়ামী লীগ যে সুপ্রসন্ন ছিল না, বরং তারা যে চাইত আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই মুক্তিসংগ্রাম সংগঠিত হবে – এমন ভাবনারও পরিচয় আছে আলোচ্য গ্রন্থে। মুক্তিযুদ্ধের সময় মুজিববাহিনী নিয়ে দেখা দেয় বেশ জটিলতা। এ-প্রসঙ্গে তাজউদ্দীনের অবস্থান আনিসুজ্জামানের দৃষ্টিতে ধরা দেয় এভাবে :
মুজিববাহিনী শুধু যে 888sport apps সরকার ও সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণের বাইরে ছিল, তা নয়। সরকারি সেনাবাহিনীর সঙ্গেও তাদের সংঘাত ঘটে। মুক্তিবাহিনী ছেড়ে কেউ কেউ মুজিববাহিনীতে যোগ দেয়, কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে সামরিক বিধি-অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি। অল্পকাল পরে মুজিববাহিনী দ্বিধাবিভক্ত হয়ে যায় সমাজতন্ত্রী সিরাজুল আলম খান ও সমাজতন্ত্রবিরোধী শেখ মণির নেতৃত্বে। দুই অংশই মুজিববাহিনীর মধ্যে ও মুক্তিবাহিনীর মধ্যে প্রভাববিস্তারের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়। তাদের সংঘর্ষ ঘটে এবং জীবনহানিও হয়। প্রধানমন্ত্রী হয়ে এই অবস্থা শুধু নীরবে দেখে যেতে তাজউদ্দীনের আত্মমর্যাদা ও বিবেকে বাধে – তাঁর ক্রমবর্ধমান বিষণ্নতার আমি সাক্ষী হয়ে থাকি মাত্র।
মুক্তিযুদ্ধের সময় আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরে নানা উপদলীয় ভাবনা ক্রিয়াশীল ছিল। এমনকি পাকিস্তান সরকার বঙ্গবন্ধুর বিচারের যে ঘোষণা দেয়, তা নিয়েও মতবিরোধ দেখা দেয়। প্রসঙ্গত লেখক জানাচ্ছেন : ‘একই সময়ে আওয়ামী লীগের মধ্যে আরেকটি বিষয়ে মতবিরোধ প্রবল হলো। বঙ্গবন্ধুর বিচারের যে ঘোষণা পাকিস্তান সরকার দিয়েছিলেন, তার পরিপ্রেক্ষিতে তাজউদ্দীন-বিরোধী আওয়ামী লীগের কোনো কোনো উপদল এক ধরনের বক্তব্য উপস্থাপন করলেন। তাঁদের মতে, বঙ্গবন্ধুকে মুক্ত করার জন্যে 888sport apps সরকার যথেষ্ট চেষ্টা করছেন না, অথচ এটাই হওয়া উচিত আমাদের প্রথম লক্ষ্য। 888sport apps সরকার যে যথেষ্ট চেষ্টা করছেন না, তার কারণ, বঙ্গবন্ধু মুক্ত হলে কারো কারো নেতৃত্ব আর থাকবে না। যেহেতু যা করণীয় তাঁরা তা করছেন না, সুতরাং অন্যদের তা করতে হবে। প্রয়োজন হলে পাকিস্তানের সঙ্গে গোপনে আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে এবং তার জন্যে দরকার মতো পাকিস্তানের মুরব্বি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ধরতে হবে। ভারত-সোভিয়েত বলয়ের সঙ্গে আমরা বেশি জড়িয়ে পড়ায় চীন-মার্কিন বলয় থেকে আমরা অনেক দূরে সরে পড়েছি। সেটা কতদূর সংগত হয়েছে, তা পুনর্বিবেচনা করা দরকার।’
আমার একাত্তর গ্রন্থ থেকে মুক্তিযুদ্ধে 888sport appsের বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকা সম্পর্কে একটা পূর্ণাঙ্গ ধারণা পাওয়া যায়। যুদ্ধের সময় ভারতসহ বিদেশের কোন-কোন দেশ ও প্রতিষ্ঠান আমাদের পক্ষে কাজ করেছেন, কারা বিরোধিতা করেছে, তার সুস্পষ্ট পরিচয় আছে আলোচ্য গ্রন্থে। ইউরোপ-আমেরিকায় অনেক ব্যক্তি ও সংস্থার সাহায্য-সহযোগিতার কথাও এখানে পাওয়া যায়। আনিসুজ্জামানের আন্তর্জাতিক সংযোগ যে কত ব্যাপক, এই বই তারও কিছু সাক্ষ্য বহন করে। 888sport sign up bonusকথা বলতে-বলতে, চট্টগ্রাম-রামগড়-আগরতলা-কলকাতার কথা জানাতে-জানাতে আনিসুজ্জামান নানা খণ্ডকথার মধ্য দিয়ে যেভাবে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরেছেন,
এককথায় তা অনুপম ও অতুলনীয়। গতিশীল আবেগাত্মক আকর্ষণীয় এক ভাষায় অন্তরঙ্গ ভঙ্গিতে ব্যক্তিগত অবলোকনের যে-চিত্র আনিসুজ্জামান এখানে অংকন করেছেন, তা হয়ে উঠেছে আমাদের জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের অনুপম এক দলিল।
আত্মজীবনীর তৃতীয় খণ্ড বিপুলা পৃথিবীতে আনিসুজ্জামান নিজের কথা বলতে-বলতে বলেছেন কালের কথা – হয়ে উঠেছেন, নিজের অজান্তেই, কালের কথক। লেখকের আত্মকথনের অন্তরালে এ-গ্রন্থে উন্মোচিত হয়েছে মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী 888sport appsের সামাজিক-রাষ্ট্রিক-সাংস্কৃতিক গতি-প্রকৃতির নানা খণ্ডচিত্র এবং সব খণ্ডচিত্রের সমবায়ে স্বাধীন 888sport appsের তিন দশকের অখণ্ড এক ইতিহাস। প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যায় গ্রন্থের ফ্ল্যাপের এই ভাষ্য :
নবীন রাষ্ট্র হিসেবে 888sport appsের অভ্যুদয়ের মুহূর্তে আনিসুজ্জামানের এ আত্মজীবনীর সূচনা। এরপর তা ছড়িয়ে পড়েছে এ দেশের ইতিহাসের তিনটি দশকের বিস্তৃত পটভূমি জুড়ে। গবেষক আনিসুজ্জামান একদিকে বিদ্যায়তনের অন্বেষণে নিবিষ্ট। অন্যদিকে এই উত্থান-পতনময় সময়ের নানা কর্তব্যের আহ্বানে নাগরিক আনিসুজ্জামানের জীবন মুখর। তাঁর অন্তরঙ্গ 888sport sign up bonusকথা এগিয়ে চলেছে সমান্তরাল এ দুই ধারার ভেদ ঘুচিয়ে দিয়ে। ইতিহাসের বহু ঘটনা তিনি দেখেছেন ভেতর থেকে। বহু উদ্যোগে সক্রিয় থেকেছেন তিনি নিজে। দেশে ও বৃহত্তর বাংলা ভূখণ্ডের রাজনীতি, সমাজ ও সংস্কৃতিতে এ সময়ের ইতিহাসের যাঁরা নায়ক, তিনি তাঁদের সংস্পর্শে এসেছেন। নিবিড় সান্নিধ্য ও বন্ধুত্ব পেয়েছেন অনেকের। এ আত্ম888sport sign up bonus তাই শুধু আনিসুজ্জামানের নিজেরই উন্মোচন নয়, এ আত্ম888sport sign up bonus নবীন এক রাষ্ট্রের অন্তরঙ্গ-সামাজিক উন্মোচন।
‘নতুন যুগের ভোরে’, ‘অস্তাচলের পানে’, ‘হননের কাল’, ‘কাছে-দূরে’ এবং ‘হালখাতা’ – এই পাঁচ পর্বে বিন্যস্ত হয়ে রচিত হয়েছে বিপুলায়তন গ্রন্থ বিপুলা পৃথিবী। লেখকের ইচ্ছা ছিল ১৯৭২ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত নিজের জীবনের কথা বলবেন, বলবেন দেশ-জীবনের কথা। কাছের কথা বলতে গেলে দেখা দেয়, নানা কথা, নানা মত-ভিন্নমত, নানা তর্ক-বিতর্ক। এ-ব্যাপারে লেখক সচেতন ছিলেন, অনেকে তাঁকে সতর্কও করেছেন। তবু অকপট সত্য-ভাষণে আনিসুজ্জামান ছিলেন সংকল্পবদ্ধ ও একনিষ্ঠ। তাই শেষ পর্যন্ত সমূহ বিতর্কের ঝুঁকি মাথায় নিয়েই সাহসের সঙ্গে তিনি আলো ফেলেছেন 888sport appsের সামাজিক ইতিহাসের অজানা বহু অলিগলিতে। এ-প্রসঙ্গে গ্রন্থের ‘নিবেদন’ অংশে আনিসুজ্জামানের বয়ানটা একবার দেখা যায় : ‘মুক্তিযুদ্ধের সময়কার 888sport sign up bonusকথা লিখেছিলাম ভোরের কাগজে, ধারাবাহিকভাবে, ১৯৯৬ সালে। পরের বছর আমার একাত্তর বই হয়ে বেরিয়ে যায়। এখন প্রবৃত্ত হয়েছি ১৯৭২ থেকে পরবর্তী সময়ের যে-888sport sign up bonus আমার আছে, তার আলেখ্য রচনা করতে। বন্ধুবান্ধবেরা আমার কাছে দাবি করেছেন তেমন একটি লেখা, নিজের ইচ্ছাও কিছু কম নয়। কেউ কেউ অবশ্য সাবধান করে দিয়েছেন এই বলে যে, যত কাছাকাছি সময়ের কথা বলতে যাবো, তা নিয়ে তর্ক তত প্রবল হবে। এই সাবধান বাণীর সত্যতা আমিও মানি। না-লিখতে মনটা সায় দিলো না। নিজের সম্পর্কে জানানোটা জরুরি নয়, কিন্তু যা দেখেছি, যা শুনেছি, তার অনেকখানি গুরুত্বপূর্ণ।’
‘নতুন যুগের ভোরে’ অংশে নানা 888sport sign up bonusর মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী 888sport appsের নানা অনুষঙ্গ চিত্তাকর্ষক সাবলীল ভাষায় তুলে ধরেছেন আনিসুজ্জামান। দেশের কথা বলতে বলতে একবার লেখক চলে গেলেন তাঁর পিতার কাছে। মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সন্তানের জন্য যে-কোনো পিতারই উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠা থাকা স্বাভাবিক। তবু গর্বিত পিতা যখন জানতে পারেন যে, তাঁর সন্তান দেশের জন্য কিছু করেছে, তখন ভালোলাগার আর সীমা থাকে না। এমন কথাই পাই আনিসুজ্জামানের সাবলীল ভাষ্যে : ‘আব্বার সঙ্গে দেখা হলো এক বছর পরে। আখতারের ছেলেকে প্রথম দেখলাম তার ন’মাস বয়সে। আব্বা বললেন, স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র থেকে যেদিন তিনি শোনেন যে, ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে সাক্ষাৎকারী 888sport appsের শিক্ষক-প্রতিনিধিদলে আমি ছিলাম, সেদিন নিজেদের নিরাপত্তার জন্যে ভয় না পেয়ে তার বরঞ্চ খুব গর্ব হয়েছিল এই ভেবে যে, তাঁর ছেলে দেশের জন্যে কিছু করছে।’
আনিসুজ্জামান রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত নন, কিন্তু তাঁর রাজনীতি-ভাবনা সর্বদাই প্রখর ও দূরসঞ্চারী। দেশে প্রত্যাবর্তনের পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সরকারপ্রধান হওয়ার যৌক্তিকতা লেখক ব্যাখ্যা করেন এভাবে : ‘সংসদীয় পদ্ধতির সরকার যেখানে আমাদের অভীষ্ট, সেখানে বঙ্গবন্ধুর প্রধানমন্ত্রী হওয়াই স্বাভাবিক ও সংগত। তিনি রাষ্ট্রপতি থাকলে পাকিস্তানের সূচনাকালের মতো মন্ত্রিসভার চেয়ে রাষ্ট্রপ্রধানের প্রভাব ও ক্ষমতা থেকে যেত বেশি, তা সংসদীয় গণতন্ত্রের অনুক‚ল হতো না। দেশের বিদ্যমান পরিস্থিতিতে তাঁরই উচিত হাল ধরা।’ বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক প্রজ্ঞার কথা লেখক নানা জায়গায় বলেছেন, সংবিধান রচনার বিষয়ে বঙ্গবন্ধুর পরামর্শের কথাও উল্লেখ করেছেন। প্রসঙ্গত তিনি লিখেছেন, : ‘সংবিধানের বিষয়ে পরামর্শ দিতে বঙ্গবন্ধু দু’বার ডেকে পাঠিয়েছিলেন কামালকে সঙ্গে আমিও ছিলাম। তাঁর প্রথম বক্তব্য ছিল, রাজনীতির সঙ্গে ধর্মের সংযোগ ছিন্ন করার একটা বিধান থাকতে হবে সংবিধানে। ১২ অনুচ্ছেদে এ-বিষয়ে কিছুটা বলা হয়েছিল, তবে বঙ্গবন্ধু যা চেয়েছিলেন, তা সংবিধানের ৩৮ অনুচ্ছেদের শর্ত অংশে রূপ পেয়েছিল। দ্বিতীয়বারে তিনি বলেছিলেন, পাকিস্তান-আমলে সরকার অস্থিতিশীল হয়েছিল মূলত পরিষদ-সদস্যদের দলবদলের ফলে কিংবা দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে দলের বিপক্ষে ভোটদানের ফলে। এটা বন্ধ করা দরকার। নির্বাচিত সদস্য যদি দলের কোনো সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত না হন কিংবা কোনো ক্ষেত্রে দলের বিরুদ্ধে ভোট দেন, তা হলে তাঁর পদত্যাগ করা উচিত হবে কিংবা তাঁর সদস্যপদ চলে যাবে – এমন একটা নিয়ম করা দরকার। তবে এমন ক্ষেত্রে তিনি উপনির্বাচনে বা পরবর্তী কোনো নির্বাচনে প্রার্থী হবার অযোগ্য হবেন না, সে-ব্যবস্থাও থাকতে হবে। এই অভিপ্রায়ই সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে প্রকাশ পেয়েছিল।’
888sport appsের সংবিধানের প্রণেতা ডক্টর কামাল হোসেন আর তার বঙ্গানুবাদক ডক্টর আনিসুজ্জামান। জাতির ইতিহাসে এ এক ঐতিহাসিক ঘটনা। কামাল হোসেন আর আনিসুজ্জামানের যৌথ প্রজ্ঞায় নিষ্ঠ সাধনায় তৈরি হয়েছে পৃথিবীর উল্লেখযোগ্য একটি সংবিধান। 888sport appsের সংবিধান রচনার নানা তথ্য আছে এ-গ্রন্থে। প্রসঙ্গত, সংবিধান রচনায় আনিসুজ্জামানের অনুভূতি আর শিহরণ তাঁর কথাতেই একবার উপলব্ধি করা যাক : ‘মনে পড়ে, আইনমন্ত্রীর দপ্তরে এক দুপুরে কামাল আর আমি মুখোমুখি বসে। প্যাডের কাগজে খসখস করে কামাল লিখতে শুরু করলেন সংবিধানের প্রস্তাবনা। এক স্লিপ লেখা হলে সাদা কাগজের সঙ্গে সেটা আমার দিকে এগিয়ে দিলেন। আমি 888sport app download apk latest version করতে শুরু করলাম। একটা অনাস্বাদিত শিহরণ জাগলো দেহে-মনে : এই আমার স্বাধীন দেশ, তার সংবিধান-রচনার কাজে হাত দিয়েছি।’ কেবল সংবিধান রচনা নয়, প্রথমদিককার অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতা তৈরিতেও আনিসুজ্জামানের ছিল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।
বিপুলা পৃথিবী গ্রন্থের ‘অস্তাচলের পানে’, ‘হননের কাল’, ‘কাছে-দূরে’ এবং ‘হালখাতা’ পর্বে আনিসুজ্জামান তাঁর বিদেশ 888sport slot game, বিদেশের অভিজ্ঞতা, চট্টগ্রাম ও 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা কথা, তাঁর লেখকজীবন – কত কথা বলেছেন। একবার পাঠ শুরু করলে এ-বই থেকে চোখ ফেরানো দুরূহ হয়ে ওঠে। নিরাভরণ সাবলীল গদ্যে তিনি অনেক গুরুত্ববহ কথা বলতে পারেন অনায়াস ভঙ্গিতে। তাঁর গদ্যের এক সহজাত বৈশিষ্ট্য কৌতুকবোধ, যে-কথা ইতোপূর্বে ব্যক্ত হয়েছে, তার পরশ আছে এ-গ্রন্থেও। কখনো-কখনো, সাবলীল সহজ গদ্যের মাঝেই, সংহত ওজোধর্মী গদ্য পাঠককে ভিন্নমাত্রায় আনন্দ দেয়। এমন একটা উজ্জ্বল অনুচ্ছেদের দিকে, পাঠক, একবার চোখ দেওয়া যাক : ‘ওই সন্ধ্যায়ই দেখা করতে যাই প্রধানমন্ত্রীর (তাজউদ্দীন আহমদ) সঙ্গে। তখন বোধহয় তিনি দেশের সবচাইতে ব্যস্ত মানুষ – সেই ব্যস্ততার মধ্যেও কথা হলো। আমি আগে আসিনি বলে অনুযোগ করলেন না, তবে তাঁর বিচিত্র অনুভূতির কিছুটা তুলে ধরলেন আমার কাছে : দেশের সমস্যার বিপুলতা, পুনর্বাসন প্রয়াসের প্রাথমিক সাফল্য, বেআইনি অস্ত্রের ভয়, দেশের মানুষের প্রত্যাশার সঙ্গে বাস্তব অবস্থার বৈপরীত্য, প্রশাসন ও দলের মধ্যে তাঁর অনভিপ্রেত কাজ, বঙ্গবন্ধুর মুক্তিতে স্বস্তি, ভবিষ্যৎ সম্পর্কে উৎকণ্ঠা ও সংশয়।’
আনিসুজ্জামান 888sport sign up bonusধর মেধাবী মানুষ। দিনপঞ্জি না লিখেও ইতিহাসের দীর্ঘ পরিক্রমা নিজের জীবনের সঙ্গে একাত্ম করে যেভাবে রচনা করেছেন বিপুলা পৃথিবী, সন্দেহ নেই, তা বিস্মিত করবে যে-কোনো পাঠককে। বক্তব্য উপস্থাপনে আনিসুজ্জামানের কৌশল ও বিনয়ের কথাও বলতে হয়। মুক্তিযুদ্ধের অব্যবহিত পরে 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে তাঁর যোগদানের বিরুদ্ধশক্তির প্রয়াসটা কী বুদ্ধিমত্তা আর কৌশলেই না তিনি বলেছেন।
আনিসুজ্জামানের বিপুলা পৃথিবী মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী 888sport appsের সামাজিক-রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক ইতিহাসের এক বিশ্বস্ত দলিল। এ-বই আত্মকথার আড়ালে আসলে দেশ-জীবনের ইতিহাস। নিরাসক্তভাবে লেখক আনিসুজ্জামান নিজেকে এখানে উহ্য রেখেছেন – প্রধান করেছেন দেশের কথা, মানুষের কথা। তাঁর বর্ণনায় আছে সারল্য, আছে দার্শনিকতার স্পর্শ। যে-দার্শনিক প্রত্যয় দিয়ে মনীষী আনিসুজ্জামান শেষ করেছেন বিপুলা পৃথিবী, তা উদ্ধরণযোগ্য : ‘কথা ফুরোয় না, সময় ফুরিয়ে যায়। লেখার ছেদ টানা যায়, জীবন কিন্তু প্রবহমান। জীবন ক্রমাগত সামনের দিকে চলে। আমাদের পথচলা এক সময়ে থেমে যায়, জীবন থামে না।’
তিন
গবেষক হিসেবে আনিসুজ্জামানের খ্যাতি ও সিদ্ধি শিখরস্পর্শী। পঁচিশ বছর বয়স পূর্ণ হবার আগেই ‘ইংরেজ আমলের বাংলা 888sport live footballে বাঙালি মুসলমানের চিন্তাধারা (১৭৫৭-১৯১৮)’ শীর্ষক পিএইচ.ডি অভিসন্দর্ভ রচনা করে তিনি তাঁর অনন্য মেধার স্বাক্ষর রেখেছেন। উত্তরকালে এই সন্দর্ভ মুসলিম-মানস ও বাংলা 888sport live football নামে প্রকাশিত হয়েছে ১৯৬৪ সালে। ১৭৫৭-১৯১৮ কালপর্বে বাংলা 888sport live footballে বাঙালি মুসলিম লেখকদের অবদান বস্তুনিষ্ঠভাবে ও উপাত্তঋদ্ধ হয়ে বক্ষ্যমাণ গ্রন্থে আলোচিত হয়েছে। এই আলোচনায় আনিসুজ্জামানের সাফল্য যে কত ব্যাপক আমাদের সময়ের আরেক নক্ষত্র আহমদ শরীফের মূল্যায়ন থেকে তা অনুধাবন করা যায়। আহমদ শরীফ লিখেছেন : ‘সাম্প্রতিককালে যে কয়টি বাংলা Doctoral Thesis বের হয়েছে, সে সবের মধ্যে ডক্টর আনিসুজ্জামানের গ্রন্থটি শ্রেষ্ঠ বলে মনে করি। এ এমন একটি বই যা একবার পড়ে ফেলে রাখবার মত নয়, বারবার পড়ার প্রয়োজন এবং প্রতিবারেই নতুন নতুন তথ্য ও তত্ত্বের উদ্ভাস ঘটে এবং চিন্তার উদ্দীপন হয়। সব ভালো গ্রন্থই অভিনব চিন্তার খোরাক জোগায় আর তৃপ্তি দেয়, এটি তেমন একটি বই। … লেখক অনাসক্ত ঐতিহাসিকের দৃষ্টি এবং নিরপেক্ষ বিচারকের মন নিয়ে স্থিতধী বিশ্লেষকের দায়িত্ব কৃতিত্বের সঙ্গেই পালন করেছেন।’
পুরনো বাংলা গদ্য সম্পর্কে আনিসুজ্জামানের গবেষণা বাংলা গদ্যের ইতিহাস পুনর্গঠনে সঞ্চার করেছে অনেক নতুন উপাদান। পুরনো বাংলা গদ্য সম্পর্কে তাঁর গবেষণা গবেষক হিসেবে তাঁর নিষ্ঠা, প্রযত্ন ও দূরদৃষ্টির পরিচয়বহ। বাংলা গদ্যের বিকাশ সম্পর্কে উত্তরকালের গবেষকদের জন্য তিনি সঞ্চার করেছেন অতুল সহযোগ। এ প্রসঙ্গে তাঁর Factory Correspondence and other Bengali Documents in the India Office Library and Records (1981), আঠার শতকের বাংলা চিঠি (১৯৮৩), পুরনো বাংলা গদ্য (১৯৮৪) – এসব বইয়ের কথা বিশেষভাবে 888sport app download for android করা যায়। এই গ্রন্থত্রয় পাঠ করলে ষোলো থেকে আঠারো শতক পর্যন্ত বাংলা গদ্যভাষার বিকাশ ও স্বরূপবৈশিষ্ট্য সম্পর্কে একটা স্বচ্ছ ধারণা লাভ করা সম্ভব।
বাংলা 888sport live footballের অনেক লেখক সম্পর্কে আনিসুজ্জামান গবেষণা করেছেন, গ্রন্থ রচনা করেছেন। মুনীর চৌধুরী, মোতাহের হোসেন চৌধুরী, অজিত গুহ, মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ প্রমুখ লেখক সম্পর্কে তাঁর গবেষণা বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেছে। বাঙালি 888sport promo code বিষয়ে তাঁর গবেষণা আকর্ষণ করেছে পণ্ডিতজনের দৃষ্টি। প্রাবন্ধিক হিসেবেও আনিসুজ্জামানের কৃতিত্বের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হয়। এ-প্রসঙ্গে তাঁর স্বরূপের সন্ধানে (১৯৭৬), ইহজাগতিকতা ও 888sport app (২০১২), বাঙালি ও 888sport apps (২০১৪), 888sport app download for android ও বরণ (২০১৮) প্রভৃতি গ্রন্থের কথা 888sport app download for android করা যায়। বক্তব্যের গভীরতা এবং ভাষিক নিটোলতা আনিসুজ্জামানের 888sport live888sport live footballের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য। 888sport live football-গবেষণার পাশাপাশি 888sport live football-সম্পাদনার ক্ষেত্রেও আনিসুজ্জামানের অবদানের কথা 888sport app download for androidযোগ্য। অনেক লেখকের রচনাবলি তিনি সম্পাদনা করেছেন, সম্পাদনা করেছেন দুষ্প্রাপ্য অনেক বই। বহু স্মারকগ্রন্থ বা সংবর্ধনাগ্রন্থের সম্পাদক তিনি। তাঁর সম্পাদনায় বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত হয়েছে বাংলা 888sport live footballের ইতিহাস গ্রন্থের দুটি খণ্ড। তবে সম্পাদনার ক্ষেত্রে তাঁর সবচেয়ে গৌরবজনক কাজ ১৯৬৮ সালে প্রকাশিত রবীন্দ্রনাথ শীর্ষক বই। রবীন্দ্রবর্জনের সেই স্বৈরবৃত্তকালে রবীন্দ্রনাথ প্রকাশ ছিল রীতিমতো এক বিদ্রোহ। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুরোধে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সার্ধশতজন্মবার্ষিকী উপলক্ষে 888sport appsের লেখকদের 888sport live নিয়ে বই সম্পাদনা করেছেন; ইউনেস্কোর অনুরোধে বিশ্বসংস্কৃতি সম্পর্কে গ্রন্থ-সম্পাদনা করেছেন তিনি। 888sport app download apk latest versionক হিসেবে তাঁর অবদানের কথাও এখানে উল্লেখ করতে হয়। অস্কার ওয়াইল্ড, আলেক্সেই আরবুঝভের নাটক তিনি বাংলায় রূপান্তর করেছেন। প্রথম যৌবনে গল্প লিখেছেন – প্রসঙ্গত মনে পড়ে, হাসান হাফিজুর রহমান-সম্পাদিত 888sport cricket BPL rateে ফেব্রুয়ারি (১৯৫৩) গ্রন্থে প্রকাশিত তাঁর ‘দৃষ্টি’ নামের ছোটগল্পের কথা। আনিসুজ্জামানের ছোটগল্পসমূহ সংকলিত হলে পাঠকের কাছে লেখক হিসেবে তাঁর ভিন্ন একটা পরিচয় উদ্ভাসিত হবে। সম্পাদনার ক্ষেত্রে আনিসুজ্জামানের ভূমিকা প্রশ্নে, 888sport appsের একমাত্র নিয়মিত 888sport live football পত্রিকা কালি ও কলমের কথাও এখানে উল্লেখ করা যায়। ওই পত্রিকার সম্পাদনা পরিষদের তিনি ছিলেন সভাপতি।
দেশের সীমানা পেরিয়ে আনিসুজ্জামানের নাম ছড়িয়ে পড়েছিল বিশ্ব-ভূগোলে। পৃথিবীর বহু সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ ছিল তাঁর, বহু লেখক-গবেষক-পণ্ডিতের সঙ্গে ছিল তাঁর যোগাযোগ। তাঁর বই প্রকাশিত হয়েছে 888sport app, কলকাতা, লন্ডন ও টোকিও থেকে, Anouar Abdel-Malek-এর সঙ্গে যুগ্ম-লেখক হিসেবে বই লিখেছেন তিনি। শিক্ষকতা ও গবেষণা করেছেন 888sport app, চট্টগ্রাম, লন্ডন, শিকাগো ও বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে। বাংলা ও ইংরেজি – উভয় ভাষায় তাঁর দক্ষতা কিংবদন্তিতুল্য।
আনিসুজ্জামান কেবল 888sport live football-গবেষক নন; তাঁর গবেষণায় সমাজ, রাজনীতি, ধর্ম, নৃতত্ত্ব, ইতিহাস, অর্থনীতি, দর্শন – সবকিছু একাকার হয়ে গেছে। নির্মোহ, বস্তুনিষ্ঠ ও সুমিত ভাষার জন্য তাঁর যে-কোনো গ্রন্থই সুখপাঠ্য ও কৌত‚হলোদ্দীপক। তাঁর গ্রন্থ পাঠ করলে জ্ঞানের উত্তাপ পাওয়া যায়, শুধরে যায় পাঠকের সীমাবদ্ধতার প্রান্তগুলো। 888sport live football-গবেষণা এবং সামগ্রিক অবদানের জন্য তিনি পেয়েছেন বাংলা একাডেমি 888sport app download bd (১৯৭০), 888sport cricket BPL rateে পদক (১৯৮৪), স্বাধীনতা 888sport app download bdসহ (২০১৫) অনেক 888sport app download bd-পদক-সম্মাননা। কলকাতার ‘আনন্দ 888sport app download bd’ পেয়েছেন দুবার – প্রথমবার ১৯৯৪ সালে ‘ঐতিহ্যের অঙ্গীকার’ ক্যাসেটের জন্য যুগ্মভাবে, দ্বিতীয়বার বিপুলা পৃথিবী বইয়ের জন্য এককভাবে ২০১৭ সালে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে সম্মানিত করেছে ‘জগত্তারিণী পদক’ দিয়ে। ভারতের তৃতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পদক ‘পদ্মভূষণ’ সম্মাননা পেয়েছেন ২০১৪ সালে।
সামাজিক মনস্বিতা বলতে যা বোঝায়, আনিসুজ্জামান ছিলেন তার উজ্জ্বল প্রতিনিধি। এমন মনস্বিতাঋদ্ধ মানুষ আমাদের সমাজে একান্তই দুর্লভ। সমষ্টির কল্যাণ ও মঙ্গলাকাঙ্ক্ষী একজন মনীষী ছিলেন আনিসুজ্জামান – তিনি ছিলেন বাঙালির দুর্দিনের বাতিঘর। মনীষার উজ্জ্বল প্রতিকৃতি আনিসুজ্জামান সম্পর্কে সৈয়দ শামসুল হকের চরণগুচ্ছ দিয়েই শেষ করি আমার এই আনিসুজ্জামানমঙ্গল :
মানুষ নেয় জন্ম এবং মানুষ বড় হয় –
বয়সে বড় হয় সকলে, কর্মে কতিপয়।
এক জীবনের অর্জন কি এক কথাতে বলা যায়?
প্রতিদিনের চিত্রলেখা দিনের শেষে মুছে যায়।
সবটাই কি মুছতে পারে কালের হাত চলমান?
অমোচ্য যে নামগুলো তার একটি আনিসুজ্জামান।
অল্প কথায় সৌন্দর্য শেখানো মানুষ অধ্যাপক আনিসুজ্জামান
মাহফুজ আনাম
আমরা তাঁর কাছে যতটা সময় ধরে শুনতে চাইতাম তার অনেক আগেই তিনি বক্তব্য শেষ করে দিতেন। খুব অল্প কথায় তিনি যা বলতে চান তা বলে ফেলতে পারতেন। তার এই সক্ষমতা আমাদের, তাঁর শ্রোতাদের, আরো বেশি কিছু শোনার তৃষ্ণা বাড়িয়ে দিত। অনুষ্ঠানের সভাপতি হিসেবে তাঁর বক্তব্যে এত অল্প কথায় এত বেশি কিছু বলার যে-ক্ষমতা, তা আমাদের হতবাক করে দিত। তিনি আমাদের শিখিয়েছেন, অনুধাবন করিয়েছেন অল্প কথা কতটা সৌন্দর্যমণ্ডিত। এটা যেমন ছিল তাঁর বক্তব্যে, ঠিক তেমনি ছিল তাঁর লেখায়। আক্ষরিক অর্থেই একটিও অতিরিক্ত শব্দ তিনি ব্যবহার করতেন না। নির্মেদ ভাষা বলতে যা বোঝায়, তাঁর লেখা-বলা ঠিক তেমন।
তিনি এমন একজন মানুষ ছিলেন, যাঁকে দেখলেই মন থেকে 888sport apk download apk latest versionবোধ জাগ্রত হতো। তাঁর কিছু বলতে হতো না। শুধুই পাশে থাকলেই তাঁকে দেখে বিস্মিত হতে বাধ্য হতে হতো। তিনি অনন্য স্নেহ, শালীনতা আর এক বিশেষ উষ্ণতা প্রকাশ করতেন, যা শুধুমাত্র একজন শিক্ষকই পারেন। সত্যিকারের নম্রতার সঙ্গে জ্ঞানের সংমিশ্রণে এই নরম কথার মানুষটির প্রতি আন্তরিক 888sport apk download apk latest version নিবেদনে বাধ্য করতো।
তাঁর একটি উন্মুক্ত দিক ছিল। তাঁর কাছে পরামর্শ বা দিকনির্দেশনা চাইলে তিনি কাউকে নিরাশ করতেন না। আর তাঁর কাছে পরামর্শ বা দিকনির্দেশনা পেতে বিশেষ কেউ হওয়ারও দরকার ছিল না। যত পিছিয়ে থাকা শিক্ষার্থীই হোক, তিনি তাঁর হাত ছাড়তেন না।
তাঁর কণ্ঠ ছিল যত্ন আর নম্রতায় ভরা। সেই কণ্ঠ ছুঁয়ে দিত গভীরভাবে। তিনি যখন কথা বলতেন, নীরব হয়ে শুনতে হতো। একেবারে যেন মন্ত্রমুগ্ধ শ্রোতা। তাঁর বলা প্রতিটি শব্দে আটকে থাকতে হতো। মনে হতো এর ওপরই নির্ভর করছে জীবন। জীবন এর ওপর নির্ভর না করলেও অন্তত মনের ভেতরে থাকা বেশির ভাগ বিভ্রান্তি দূর করে দেয় তাঁর কথাগুলো।
আমিসহ যারাই তাঁর প্রত্যক্ষ ছাত্র এবং এর বাইরেও আরো অনেকেরই যখনই প্রয়োজন পড়েছে তখনই তাঁর ভালোবাসা ও সমর্থন পেয়েছি। একসময় পহেলা বৈশাখ, রবীন্দ্র বা নজরুল জয়ন্তী উদ্যাপন কিংবা সাধারণ গানের অনুষ্ঠান, নৃত্য-নাটক আয়োজন করা এমনকি আলোচনা সভা, বিতর্ক করা অবাধ্যতার নিদর্শন ছিল। তখন অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের মতো শিক্ষক আমাদের শক্তি ও নির্দেশনার উৎস ছিলেন।
১৯৬৭ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের সময়টা সম্ভবত রাজনৈতিকভাবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এই পাঁচ বছরের মধ্যে আমরা লৌহমানব জেনারেল আইয়ুবের পতন, জেনারেল ইয়াহিয়ার অধীনে আরেকটি সামরিক আইনের শাসন, ছাত্র নেতৃত্বাধীন ১১ দফা আন্দোলন, পাকিস্তানের ইতিহাসের প্রথম সাধারণ নির্বাচন, নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর বিজয়, সর্বাধিক নাটকীয় ও অভূতপূর্ব অহিংস অসহযোগ আন্দোলন, শক্তিশালী পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ওপরে একজন মানুষের কণ্ঠের অবিশ্বাস্য প্রভাব, তৎকালীন সংযুক্ত পাকিস্তানের শেষ কয়েকটি নাটকীয় দিন, সংলাপের নামে সময়ক্ষেপণ করে গোপনে অস্ত্র এনে বাঙালির সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা, নিরস্ত্র বাঙালির ওপর ইতিহাসের সবচেয়ে নৃশংস ও বর্বর গণহত্যা, আমাদের আন্দোলন অহিংস থেকে সশস্ত্রতে রূপ নেওয়া, স্বাধীনতার জন্য আমাদের আপামর জনসাধারণকে এক হওয়া এবং দুর্দান্ত বিজয় ও স্বাধীন 888sport apps দেখেছি। সেই অশান্ত সময়ে শিক্ষকদের মধ্যে যাঁরা আমাদের সমর্থন, উৎসাহ, অনুপ্রেরণা দিয়ে আগলে রেখেছেন, বিভিন্ন উদাহরণ দেখিয়ে আমাদের যুদ্ধে যেতে উদ্বুদ্ধ করেছেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম অধ্যাপক আনিসুজ্জামান।
শিক্ষার্থীদের কাছে তিনি সমানভাবে প্রিয় ছিলেন।
তিনি কথা বলতেন গণতন্ত্র, মানুষের অধিকার ও ধর্মনিরপেক্ষতার পক্ষে। অবসর নেওয়ার পরবর্তী জীবনে কেউ যদি তাঁকে বইয়ের রিভিউ করে দিতে, কোনো বিষয়ে মন্তব্য করতে, একটি নিবন্ধ লিখে দিতে বা কোনো সেমিনারের সভাপতিত্ব করার অনুরোধ করতেন তিনি সাধারণত তাদের ফেরাতেন না। তাঁর মতে, ‘আমার উচিত সবাইকে উৎসাহিত করা।’
১৯৫২ সালে স্কুলের ছাত্র থাকলেও তিনি পঞ্চাশের দশকে ভাষা-আন্দোলনের কর্মী ছিলেন। ষাটের দশকে তিনি জেনারেল আইয়ুবের সামরিক একনায়কতন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতিটি কর্মকাণ্ডে যোগ দিয়েছিলেন। তিনি মুজিবনগর সরকারের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ ছিলেন। সেখানকার নেতাদের সঙ্গে তিনি ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছেন। আমাদের স্বাধীনতায় ভারত ও 888sport app দেশের সমর্থন পেতে তিনি সহায়তা করেছেন।
স্বাধীনতার পরে তিনি বঙ্গবন্ধু সরকারের সঙ্গে কাজ করেছেন এবং আমাদের সংবিধানের বাংলা সংস্করণ তৈরির কাজে নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন। তিনি বেশ কয়েকটি শিক্ষা কমিশনের অংশ ছিলেন এবং মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে দেশের শিক্ষানীতি প্রণয়নে অবদান রেখেছেন। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ ও আদর্শ পুনঃস্থাপনে তিনি অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। শেখ হাসিনার সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা শুরু করলে তিনি তাতে সক্রিয়ভাবে সমর্থন দেন এবং নিজে সাক্ষ্যও দিয়েছেন। তাঁর কৃতিত্ব বলে শেষ করা সম্ভব নয়। এখানে দু-একটি উল্লেখ করার চেষ্টা করেছি মাত্র।
অধ্যাপক আনিসুজ্জামান শিক্ষক হিসেবে ছিলেন শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন। তিনি সকলের জন্য এতটাই উন্মুক্ত ছিলেন যে, কোনো মতামতই তাঁর কাছে আলোচনার অযোগ্য ছিল না এবং কোনো শিক্ষার্থীই তাঁর কাছে অযোগ্য বলে বিবেচিত হতো না। তাঁর কাছে শিখতে চায় – এমন শিক্ষার্থীদের তিনি সবসময় স্বাগত জানাতেন।
কোথাও তিনি শিক্ষক বা বক্তা হিসেবে কথা বলা শুরু করলে তাঁর উষ্ণ কণ্ঠ সবার মনোযোগ কেড়ে নিত। তাঁর নরম কথামালা অল্প সময়ের মধ্যেই সবাইকে তাঁর কথার প্রতি আগ্রহী করে তুলতো এবং তাঁর সঙ্গে কোনো বিষয়ে যারা আলোচনা করতে আসতেন তাদের উৎসাহিত করে তুলতো।
কোথাও আলোচনা শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই দেখা যেত এই অধ্যাপকের ব্যক্তিত্বের অনন্য দিক – তাঁর ধৈর্য। কোনো বাধা না দিয়ে তিনি শিক্ষার্থীর যা কিছু বলার আছে তা বলতে দিতেন। মনোযোগ দিয়ে তা শুনতেন। এরপর তিনি খুব কোমলভাবে ও ধীরে ধীরে যা বলা হয়েছে তার মধ্যে থাকা ভুলগুলো ধরিয়ে দিতেন এবং তা থেকে উত্তরণের পদ্ধতি সম্পর্কে পরামর্শ দিতেন।
আলোচনার সময় কোনোভাবেই মনে হতো না যে তিনি তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব জাহির করার চেষ্টা করছেন। প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জন্য যে 888sport apk download apk latest version ও ধৈর্য তিনি দেখিয়েছেন তা সত্যিই অনুকরণীয়-অনুসরণীয়।
শিক্ষকতার বাইরে আর কোনো জগৎ নিয়ে তাঁর ভাবনা ছিল না। তাঁর লেখা ও গবেষণার সবই ছিল শিক্ষার্থীদের জন্য এবং সেইসঙ্গে আরো ভালো শিক্ষক হওয়ার জন্য।
তাঁর নম্রতা ছিল অসাধারণ। অবসর নেওয়ার পর, তাঁর কাছে অনুরোধ নিয়ে যাওয়া প্রায় সবার অনুষ্ঠানেই তিনি প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকেছেন। তাঁর স্বাস্থ্যের কথা চিন্তা না করে দিনব্যাপী সেমিনার ও বইয়ের মোড়ক উন্মোচনের অনুষ্ঠানে অংশ নিতে নিজের বৈশিষ্ট্যযুক্ত ‘হ্যাঁ’ বলে দিতেন। তিনি এই বৈশিষ্ট্যটি তাঁর জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত অব্যাহত রেখেছিলেন। এই কারণে তাঁকে যারা ভালোবাসে সবাই তাঁর স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকতেন।
বেশিরভাগ মুক্তিযোদ্ধার মতো তিনিও বর্তমান 888sport appsের অনেক কিছুই পছন্দ করতেন না। বৈষম্য, ন্যায়বিচারহীনতা, স্বাধীনতার অভাব, মৌলিক অধিকারের প্রতি অবজ্ঞা তাঁকে চরম ব্যথিত করত। তবে একেবারে শেষ পর্যন্ত তিনি 888sport appsের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী ছিলেন এবং ছোট বা বড় যে-কোনো বিজয়ে তিনি আনন্দিত হতেন।
তিনি অনন্য জ্ঞানের ভাণ্ডার ছিলেন। আমাদের এই সত্য নিয়েই বেঁচে থাকতে হবে যে, তাঁর মতো আর কেউ কখনো হতে পারবে না। সুতরাং তিনি আমাদের কাছে যে-বিশ্ব রেখে গেলেন, তা তাঁর স্বপ্নের মতো জ্ঞান ও বুদ্ধিদীপ্ততার সঙ্গে গড়ে তোলা আমাদের দায়িত্ব।
পুনশ্চ
অধ্যাপক আনিসুজ্জামানকে হারানো খুবই মর্মান্তিক। তবে তাঁর মরদেহের প্রতি শেষ 888sport apk download apk latest version নিবেদন করতে না পারার যে গভীর বেদনা, তা সহ্য করা কঠিন হয়ে পড়েছে। হাজার হাজার মানুষ তাঁর মরদেহ বহনকারী গাড়িতে ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে 888sport apk download apk latest version নিবেদন করতে করতে সমাধিস্থ করতে নিয়ে যাবে – এটাই স্বাভাবিক হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু, হৃদয় ডুকরে কেঁদে ওঠে যখনই মনে পড়ে সেটা সম্ভব হলো না।
আমার কল্পনায় ভেসে ওঠে শহীদ মিনারে তাঁর কফিনের চারপাশে আমরা ঘিরে আছি। তাঁকে শেষবারের মতো দেখতে আমরা একত্রিত হয়েছি। হাজারো মানুষ তাঁর মরদেহ কাঁধে তুলে নিয়ে আজিমপুর কবরস্থানের দিকে যাচ্ছে। আমরাও যাচ্ছি। সেখানে তাঁকে চিরশায়িত করা হচ্ছে।
আমাদের প্রিয় অধ্যাপক, শিক্ষক, গাইড, বন্ধু এই মানুষটির মৃত্যুতে দূর থেকে শোক প্রকাশ করে, দুঃখ প্রকাশ করে, ঘরে থেকে তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করে, তাঁকে বিদায় জানানো আমাদের কারো কাছেই কাম্য নয়। আজ তাঁর প্রতি যে 888sport apk download apk latest version দেখাতে ব্যর্থ হয়েছি তা যেন আমরা আমাদের কাজের মাধ্যমে তাঁর স্বপ্ন পূরণ করে দেখিয়ে দিতে পারি। যতদিন বেঁচে আছি ততদিন অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের প্রতি আমাদের ভালোবাসা বেঁচে থাকবে।


Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.