আনিস চৌধুরীর জন্ম ১৯২৯ সালের ১লা এপ্রিল, কলকাতায়। পিতৃকুলের নিবাস ছিল কুমিল্লা জেলার কসবা থানার গোপীনাথপুর গ্রামে। লেখালেখির সূচনা কলকাতায় ছাত্রজীবনেই, সাতচল্লিশ-পূর্বকালে। ১৯৪৪ সালে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন তিনি। অতঃপর কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে এফ.এ. পরীক্ষা পাশের পর ভর্তি হন শিবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে। কিন্তু ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া অসমাপ্ত রেখেই দেশবিভাগের পর ১৯৪৭ সালে পরিবারের সকলের সঙ্গে 888sport appয় চলে আসেন ও ভর্তি হন 888sport app বিশ^বিদ্যালয়ে বি.এসসি পাস কোর্সে। ছাত্র অবস্থাতেই 888sport live footballচর্চা ও সাংবাদিকতায় যুক্ত হয়েছিলেন তিনি। পরবর্তীকালে পেশাজীবন হিসেবে বেছে নেন সাংবাদিকতা। সেই সূত্রে রেডিও পাকিস্তান ও 888sport apps বেতারে দায়িত্ব পালন করেন বার্তা সম্পাদক এবং পরে আরো নানা দায়িত্বপূর্ণ সরকারি পদে। একই সঙ্গে সক্রিয় থেকেছেন নাটক, 888sport alternative link ও গল্প রচনায়। মধ্যবিত্তের জীবনের আকাক্সক্ষা, স্বপ্ন ও আশাভঙ্গের বেদনা মূর্ত হয়ে উঠেছে তাঁর 888sport live footballকর্মে। নাটকের জন্য ১৯৬৮ সালে বাংলা একাডেমি 888sport live football 888sport app download bd লাভ করেন আনিস চৌধুরী। কিন্তু তাঁর লেখা গল্পের 888sport free betও কম নয়, যদিও গল্পে তাঁর অবদান নিয়ে তেমন আলোচনা হয়নি, অন্তত আমাদের জানামতে; যদিও বিগত শতকের পঞ্চাশের দশকেই তাঁর গল্প প্রকাশিত হয়েছিল কলকাতার নতুন 888sport live football, সাপ্তাহিক দেশ ইত্যাদি সুখ্যাত পত্রিকায়। ১৯৭৮ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম গল্পগ্রন্থ সুদর্শন ডাকছে। পরবর্তীকালে ২০০৭ সালে প্রকাশিত হয় আনিস চৌধুরী গল্পসমগ্র। ১৯৯০ সালের ৩রা নভেম্বর তাঁর জীবনাবসান ঘটে।
যুগের পরিবর্তনের সঙ্গে পরিবর্তন আসে মানুষের আচরণে, কথার ঢংয়ে, পরিচ্ছদের বাহারে এবং সামাজিক অনুষ্ঠানে। পরিবর্তনের এই প্রবাহে যোগ হতে থাকে 888sport apkের নতুন ও বিস্ময়কর দান, প্রযুক্তিগত প্রভাব, চিন্তার উৎকর্ষ। ফলে কয়েকটা দশকের ব্যবধানে যখন আমরা হাতড়াই পূর্বজদের সময়, তখন অবাক হতে হয়। এই অবাকের ভেতরে আছে পরম্পরা। মানুষ পরিবর্তনকামী হলেও তার ভেতরে থেকে যায় শেকড়ের ছায়া। পঞ্চাশের দশকের খ্যাতিমান কথা888sport live footballিক-নাট্যকার হিসেবে আনিস চৌধুরীকে চিহ্নিত করলেও তাঁর গল্পের জমিন বিস্তৃত আছে সর্বসাম্প্রতিককালেও। মূলত মানুষের দুঃখ-বেদনা, আনন্দ-প্রাপ্তির আবেগ ও প্রকাশ প্রায় একই রকমের। মানুষের বহিরঙ্গে যথেষ্ট রকম পরিবর্তন দৃশ্যমান হলেও অন্তর্গত বোধ থেকে যায় একই নিক্তির ও প্রান্তে। এজন্যে আনিস চৌধুরীর জন্মসালের দিকে না তাকিয়ে তাঁর গল্প পাঠ করা যায় অনায়াসে; তাতে আছে তৎসময় ও পূর্বাপর সময়ের কোলাজ। মানুষকে আঁকাই যদি গল্পকারের কাজ হয় তবে আনিস চৌধুরীর গল্পের মানুষেরা এখনো প্রাসঙ্গিক; ঢের দেখা মেলে আশেপাশে। আনিস চৌধুরী আমাদের গল্প888sport live footballের গুরুত্বপূর্ণ ও মৌলিক কথাকারদের একজন, যাঁকে পাঠ করা মানে 888sport appsের 888sport live footballপাঠের সূত্রমুখে নিজেকে স্থাপন করা। সৈয়দ শামসুল হকের উক্তি এখানে প্রণিধানযোগ্য, ‘আজকের যে-888sport live football, তার আধুনিকতার আদিতে যাঁরা জলসেচ করেছেন, বীজ বপন করেছেন, তাঁদের না জানলে আজকের 888sport live footballকে জানাটাই যে অসম্পূর্ণ হয়ে থাকবে। সেই জানবার কারণেই আনিস চৌধুরীর গল্পের কাছে আমাদের ফিরে যেতে হবে। তিনি গত বলেই তাঁর লেখা কিন্তু বিগত নয়, বিগত নয় তাঁর গল্পের ভেতরে মানুষ দেখার বিবরণ। সেই দেখাটির কোনো কোনো বিবরণ এখনো আমাদের জন্যে সত্য ও প্রাসঙ্গিক।’
আনিস চৌধুরীর নাটকচর্চা এদেশের বোদ্ধামহলে সুবিদিত, অ্যাকাডেমিকভাবে স্বীকৃত। তাঁর গল্পচর্চার ইতিহাসও বিস্মৃত নয় এখানে। নানা বিষয়ে, নানা ভাবনায় জারিত আনিস চৌধুরীর ছোটগল্প। সৈয়দ হকের উদ্ধৃতি নিয়ে আবারো বলতে হয়, ‘… কত বিচিত্র শ্রেণি ও পেশার এবং নেশার এবং উচ্চাশার এবং হতাশার মানুষই না তাঁর গল্পে এসেছে। সবাইকে তিনি যেন অবলোকন করেছেন দূর এক উচ্চতা থেকে, এমনকি তাঁর উত্তম পুরুষে লেখা গল্পেও লক্ষ করি সেই দূরস্থান; দূরে এবং উচ্চতায়, কিন্তু অবলোকনের চোখটি যেন স্মিত ও স্নিগ্ধ; কাউকে তিনি মাল্যভূষিত করছেন না, কিংবা তার বুকে ঠুকে দিচ্ছেন না পেরেক। যেন, আনিস চৌধুরীর অভিপ্রায়টি হচ্ছে – আমি যেমনটা দেখেছি তেমনটাই বলে যাচ্ছি, 888sport app download bd-তিরস্কারের দায় আপনার।’ সমাজের ওপরতলার নাক-উঁচু স্বভাবের মানুষেরা আছে তাঁর গল্পে; মধ্যবিত্তের ভারাক্রান্ত হৃদয়ের বেদনা আঁকা আছে তাঁর গল্পে; প্রবলভাবে দেখা যায় নিম্নবিত্তের অভাবের ঘনঘটা-ভালোবাসার ঝাঁকুনি। মানুষ না চিনলে গল্প888sport live footballের পুরোটাই মিছে, সেটা জানতেন আনিস চৌধুরী। ফলে তিনি হাসতে হাসতে বলতে পারতেন, ‘গল্প তো পায়ের কাছেই পড়ে আছে, তুলে নিলেই হয়!’ অহির্নিশ মানুষের মনোবেদনা আর মনোভাব তাড়া করতো আনিস চৌধুরীর গল্পকারসত্তাকে। বাড়তি মেদ নয়, অতিকথনের বাড়াবাড়ি নয়, আবেগের ছড়াছড়ি নয়; জীবন আর জীবনের রেখাপাতে ভরপুর তাঁর গল্প, যেখানে দেখা পাই হরেক রকম মানুষের বিচিত্র জীবনবোধের কারুকাজ।
‘কেন শহর গড়া গেল না’ গল্পটি দিয়ে শুরু করা যাক আনিস চৌধুরীর গল্পপাঠ। বাংলা888sport live footballে এরকম পরিহাসপূর্ণ রাজনীতি-সচেতন গল্প সম্ভবত আর নেই। একটা শহর গড়তে হলে, বলা যায় শান্ত আর সবুজের জনপদকে নরকে পরিণত করতে কী কী দরকার তার বিস্তারিত বয়ান আছে গল্পটিতে। পুঁজিবাদের করুণ পুঁজ দীর্ঘদিনের বিশ^াস আর স্বাভাবিকতাকে কীভাবে গ্রাস করে তার নমুনা প্রাগুক্ত গল্প। এত সিরিয়াস একটা বিষয়েও আনিস চৌধুরী অনায়াসে ঢুকিয়ে দেন রসবোধ। মেয়র বিশ^ শহর মনোনয়ন কমিটির কাছে চিঠি লেখেন, তাঁর এলাকাকে শহর হিসেবে ঘোষণা করা যায় কি না! শহরের গোড়াপত্তন কি আর এমনি হয়? শহরের স্তরে কোনো লোকালয়কে পৌঁছতে হলে যা যা করণীয় ধাপে ধাপে তা পূরণ করেন মেয়র। এর ভেতরেই গল্পকারের সূক্ষ্ম অথচ সমসাময়িক বাস্তবতার প্রতি কড়াঘাত দেখি, ‘আরবি অক্ষরে বাংলা লেখার চেষ্টা করে’ আর স্কুল খোলার চাঁদায় কোষাধ্যক্ষের হজব্রত পালনে যাওয়া এবং বাকি টাকায় সহ-কোষাধ্যক্ষের তাম্বুলের দোকান শুরু করার মাধ্যমে। আমাদের লক্ষ করতে হবে, সময়টা পঞ্চাশের দশক, পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর নিপীড়নে আজকের প্রিয় স্বদেশ তথা পূর্ববাংলা তখন রক্তাক্ত। সময় ও রাজনীতিসচেতন আনিস চৌধুরীর এই মুনশিয়ানা তুলনারহিত। গল্পে দেখি, বিশ^ শহর কমিটির যতসব বেহায়া ফর্দ-ফরমায়েশ আর মেয়রের তা বিনা বাক্যব্যয়ে মেনে নেওয়া; এটা কি তৎকালীন পুতুল মুখ্যমন্ত্রীদের দিকে ইঙ্গিত করে? সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু, প্রেমে ব্যর্থদের মিছিল, না খেতে পেয়ে মৃত্যু; সর্বশেষ দেখে মেয়রই কেবল বেঁচে আছে লোক-হাসানি অঞ্চলে। বাকিদের বলি হতে হয় শহর গড়তে গিয়ে। মেয়রের ছায়ায় দাঁড়িয়ে থাকে বিবেকবিক্রেতা এক অপরাজনীতিবিদ। আজকের যুদ্ধপীড়িত, ক্ষমতাবাহিত পৃথিবীতেও শান্তিকামী মানুষদের সুখ যেন ক্রমশ দূরাগত, করোনা পরিস্থিতি অন্তত তাই বলে দেয় আমাদের। প্রকৃতিকে নির্মমভাবে ধ্বংস করার শোধ প্রকৃতি নিয়েই ছাড়ে সুদ-আসলে। মানুষই যদি না থাকে, কিসের অর্থনীতি, কিসের ধর্ম, কিসের ক্ষমতা, কিসের নগরায়ণ – এই প্রশ্নটিকে কত আগে উসকে দিলেন আনিস চৌধুরী! এটা ভাবতেই বিস্ময় জাগে, এই না তবে গল্পকারের হৃদয়! ওদিকে ‘একটি ঋণ ও শে^ত গোলাপ’ গল্পে আমরা দেখি, মুশতাক স্বল্প বেতনের চাকুরে; অফিসের সুন্দরী কলিগকে ধার দেয় পাঁচটি টাকা! লুসি সুন্দরী বটে, আপাতদৃষ্টিতে মনে হয়, সেজন্যই দ্রুত প্রমোশন পায় সে। খেয়ালের ভুলে, হতে পারে ইচ্ছায় ফেরত দেয় না মুশতাকের পাঁচটি টাকা। শেষতক লুসি বিয়ে করে বরসহ চলে যাবে বিদেশে। কলিগদের আয়োজনে মুশতাকের অনুপস্থিতি ও চাঁদা না দেওয়া নিয়ে কলিগদের সহাস্য মন্তব্য, ‘ওসব হচ্ছে বাইরের জারিজুরি, আসলে ফ্রাস্টেশন।’
প্রেমিকপ্রবর নিয়ে এরচেয়ে বেশি কিছু বলা যায় না। অথচ মুশতাক ভাবে, ‘অপেরায় পাঁচ সিলিং খরচ করতে গিয়ে, হঠাৎ যদি তার সে-কথা মনে হয়।’ বঙ্গদেশে প্রেমিকের এরচেয়ে চমৎকার প্রতিভূ আর হয় না; না-পাওয়ার বেদনাকে লুকিয়ে রাখে সম্ভাবনার অমোঘ সুতোয়। মুশতাক নিজের কাছে লুকিয়ে রাখা গোপন বাসনার নাম, অলক্ষে সঁপে দেওয়া পুরুষশ্রেণির প্রতিনিধি হয়ে পাঠকদের ধাক্কা দেয় গল্পে। ‘আলো ওপর তলায়’ গল্পের দীনাজকে মনে হয় মৃত্যুপুরীর শেষ সাক্ষী। মায়ের আভিজাত্য, পার্টি, দেখলেপনা সবমিলিয়ে বড়লোকি কারবারে দীনাজ কি না তাদেরই অফিসের কম বেতনের চাকুরে জাহাঙ্গীর ডিনশের মানবিকতায় মুগ্ধ! এর নাম কি প্রেম? এত বড় পার্টি বাড়িজুড়ে, দীনাজ ব্যথায় না-হয় একটু কাতর, তাতে বড়ঘরের লোকদের পার্টির আনন্দ কি মাটি করতে আছে? মোটেও না। ঠিকই জাহাঙ্গীর দীনাজের ঘরে নিয়ে আসে হোমিওপ্যাথির পুরিয়া! এতটুকু দানে বিগলিত দীনাজ, বোঝে না, ভিরজি লজের হর্তা তার মা মিসেস মানেকজির বোধে কত বড় আঘাত দিচ্ছে সে! গল্পকার আনিস চৌধুরীর সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব তিনি নিজে কিছু বলেন না, আরোপ করেন না; চরিত্র যা খুশি করে, যা খেলার খেলে। ফলে আমাদের সামনে স্পষ্ট হয় শ্রেণিবৈষম্যের দেয়াল। আভিজাত্যের কাছে হেরে যায় মানবিকতাবোধ, মা হয়েও বুঝতে পারেন না কন্যার হৃদয়। একজন মানুষ অনেক কিছুর ভিড়ে সামান্য কথা কিংবা হাসি অথবা শুধুই ব্যক্তিত্বে ভালো লাগার বিষয়ে পরিণত হয় অন্যের কাছে; চাকচিক্যের ভেতরে থেকেও কেউবা আশা করে সবুজ-সতেজ – এই বোধে জারিত দীনাজের মন। এভাবে আনিস চৌধুরীর গল্পের ভেতর দিয়ে পরি888sport slot gameে গেলে আমরা দেখতে পাবো, অজস্র পরিপাশর্^ এসে দাঁড়িয়ে থাকে পাঠকের সামনে। নতজানু হয়ে কেবল এসবের ভেতর হাতড়ে বেড়াতে হয় নিজেদের পরাজিত সত্তাটিকে।
‘সম্ভবত সুখী’ গল্পের হাফিজকে চেনা যায়? যে কি না তার বন্ধু-888sport live footballিক শওকত এলাহীকে নিয়ে যায় ইসলাম সাহেবদের কাছে, ধান্ধার আশায়। শওকত এলাহীর বড় গুণ, সে বলতে পারে, বাকপটু। সাজিয়ে মিথ্যে বলতে পারে, যা কি না হাফিজ পারে না; ফলে ভাড়াটে হিসেবে শওকত এলাহীর দর কম নয়। যেমনি শোনা যায় এদেশের কিছু লোকের ক্ষেত্রে। কিন্তু মানুষের বিবেকের লেভেল যখন স্থির হয়ে যায়, তখন মরে যায় খিদে, সবকিছু হয়ে যায় পানসে। প্রার্থিত কাস্টমার ইসলাম সাহেবের কাছে গিয়েও তাই শওকত বাজাতে পারে না পুরনো রেকর্ড। মিথ্যে বলতে বলতে হয়তো ভেতরের মানুষটি প্রতিবাদ করে ওঠে, বজ্রনিনাদে ভেঙে যায় এতদিনের ভণ্ডামি। শওকতের উপলব্ধি, ‘সত্য কথায় বদলে না গিয়ে আমার উপায় ছিল না। আমার নতুন লেখা সৃষ্টির ক্ষমতা শেষ হয়ে আসছিল। সেইসঙ্গে চাটুকারিতার ভাণ্ডারও। আমি শুধু রিটায়ার করতে চেয়েছিলাম, রিটায়ার করেছি।’ মোহভঙ্গের প্রকৃত মুক্তির এই অমোঘ নিশান আনিস চৌধুরী প্রাগুক্ত গল্পে আঁকেন নিপুণভাবে। অসততার পুঁজ গলে টনটনে মানবিকতাবোধে জেগে ওঠা চিত্তের ছায়া লেগে আছে শওকত এলাহীর চেহারায়। মানুষ তার নিজের কাছেও অচেনা হয়ে যায় কখনো কখনো, নিজেকে আবিষ্কারে নিজের তুচ্ছাতিতুচ্ছ প্রবণতার কবর দিয়ে জেগে ওঠে আপন শক্তির ভরে, এই সত্যই গল্পে ধরা দেয় প্রবলভাবে। ‘ছাড়পত্র’ গল্পের রফিক সাহেব আমাদের চেনাজন। এমনকি এরকম অজস্র রফিক সাহেব এদেশের অফিসে-অফিসে ঘোরেন পেনশনের টাকা তুলতে। ওদিকে চাকরির বয়স ফুরোলে, বিদায়ক্ষণে ‘দায়িত্ব ও কর্তব্যের প্রতি তাঁর নিষ্ঠার’ কথা অকপটে স্বীকার করে নেন সহকর্মীরা। স্বয়ং রফিক সাহেবের ভ্রম হয়, ‘তিনি যে সত্যিই কর্তব্যনিষ্ঠ অফিসের বড়কর্তাদের আচরণে তা বোঝা যায়নি। তা না-হলে মাসোহারা বৃদ্ধির জন্য তাঁর সব আবেদন নামঞ্জুর হলো কেন?’ মাসপাঁচেক ঘোরাঘুরি করে বিফল মনোরথে ফিরে গিয়ে বারবার মনের আয়নায় ভেসে ওঠে স্ত্রী-পুত্রের ঝামটা, চিরকালের ব্যর্থপুরুষের প্রতি তীব্র অভিযোগ। তখনই রফিক সাহেব দেয়ালে সাঁটানো বিদায় সম্ভাষণটি ছুড়ে ফেলেন মেঝেয়। নিজের বিশ^াস ও সততার প্রতি বিদ্রƒপ করেন যেন নিজেই। ‘যতক্ষণ সামনে ঠিক ততক্ষণই সমাদর’ নীতি মেনে চলা আমাদের অফিসগুলির নির্মম চর্চার সফল সারথি রফিক সাহেব, যার নির্মাতা আনিস চৌধুরী। রফিক সাহেবেরা যখন উপলব্ধি করেন ঠকে গেছেন, জোর করে ঠকিয়ে দেওয়া হয়েছে, তখন শেষ দানটুকু পর্যন্ত ছেড়ে দিয়ে আসেন অনায়াসে। বিশ^াসের ঘাটতি হলে চাওয়া-পাওয়ার কিছুই থাকে না আর, এই বোধে জারিত রফিক সাহেব-সমাজ এখনো এদেশে ধার ধরে বর্তে আছেন।
‘এক বিকেলের সুখ দুঃখ’ গল্পে রেবার মতো দৃঢ়চিত্তের হতে পারেনি দীনাজ। ‘রেবা একটা ভালো চাকরি চাইছে। চাকরিহীন নয় যদিও।’ ফলে তার ভরসা আছে নিজের যোগ্যতা আর চাকরির ওপর, তবু কে না চায় ভালো কোনো সুযোগ নিতে? কিন্তু যার কারণে সে সংসার ত্যাগ করেছে, সেই শফিক নিজেই যদি নয় বছর খবর না নিয়ে থাকতে পারে তবে কেন রেবার ওরকম চাকরির দরকার পড়বে! না, ‘প্রবঞ্চক মানুষটির কাছ থেকে আজ চাকরির সামান্য কনসলেশন প্রাইজ নেবার প্রশ্নই ওঠে না।’ রফিক সাহেব যেখানে রাগকে অবদমিত করতে বিদায় সম্ভাষণের ফ্রেমটি ভেঙে ফেলেন সেখানে রেবা শিরদাঁড়া ঋজু রেখে অবলীলায় ত্যাগ করতে পারে বড় চাকরির সুযোগ। রেবারা হারে না, প্রয়োজনে জীবনযুদ্ধে দ্বিগুণ পণে ঝাঁপিয়ে পড়ে। এদেশের সংগ্রামশীল 888sport promo codeসমাজের প্রতিচ্ছবি রেবা; একইসঙ্গে দ্রোহী, নিজের অধিকারের প্রতি সচেতন রেবা যেন আনিস চৌধুরীর অনবদ্য সৃষ্টি। আসলে আনিস চৌধুরীর মতো গল্পকারের গল্পপাঠে সবচেয়ে বড় সুবিধা এই, নানা ধরনের মানুষের সংযোগ ঘটে তাঁর গল্পে এবং মানুষের মুখ ও মুখোশকে সহজেই আলাদা করা যায়। ফলে যাপিত জীবনের অনেকটুকু ছায়ার সঙ্গে গল্পের সংযোগ পেয়ে পাঠক বিহ্বল হয়ে ওঠে, কখনোবা হর্ষে নিজেকে ভাবতে শুরু করে দ্বিতীয় জীবনের অভিযাত্রী। সম্মিলনের বহুবিধ সৌন্দর্যের রেণু গল্প থেকে গল্পান্তরে নিমিষেই হয়ে যায় আলাদা, স্বতন্ত্র, আদি ও অকৃত্রিম মনোবাঞ্ছার ছবি।
‘লাভ-লোকসান’ গল্পটি মনোজাগতিক ব্যাকরণের বাস্তবিক চিত্র যেনবা, সিমি ভাবি – যার কি না বছরদশেক আগে স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। গল্পে কথকের সঙ্গে তার সম্পর্কটা বেশ ভালো, বলা চলে 888sport apk download apk latest versionর। টুকটাক ব্যবসা করেই চলছিল সিমি ভাবির সংসার, তাতে বাগড়া দেয় মির্জা। লোভের সাঁকো বসিয়ে মির্জা হাতিয়ে নেয় সিমি ভাবির সঞ্চয়ের সবটুকু। ‘কাউকে দুটো মিষ্টি কথা, কাউকে এক মুখ হাসির বেশি কিছু উপহার’ না দেওয়া সিমি ভাবি খুব মুষড়ে যান আকস্মিক আর্থিক বিপর্যয়ে। বরাবরের মতো তিনি পরামর্শ চান গল্পের কথকের কাছে। সিমি ভাবির ব্যক্তিত্বই এমন, তিনি পড়তে পারেন নিজের অবস্থা ও সংগতি এবং তা বিনা সংকোচে প্রকাশও করেন, ‘নটের পুতুলের মতো আমার অভ্যস্ত চেহারা না দেখলে আপনারা সবাই ক্ষুণ্ন। অথচ আপনার ওপরেই ভরসা করেছিলাম সবচেয়ে বেশি’; গল্পের কথক নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করেন সিমি ভাবির কথার প্রতিধ্বনিতে। তার নিজেরই উপলব্ধি হয়, ‘সে ব্যবসায় ঠকিয়েছে। আমি ঠকিয়েছি তাকে তার অতীব ভরসার জায়গায়।’ মানুষ শেষতক তার নিজের কাছে একা, নিজের সংগ্রামশীল কঠিন পথটিতে একলা পথিক এ-বোধে জারিত হয়ে সিমি ভাবি হয়তো কথককে বলেই বসেন, ‘আপনাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য দুঃখিত।’ গল্পের কথক, নিজের সংবেদনশীল সত্তায় বুঝতে পারেন, তিনিও সিমি ভাবির দুঃখের নিকটতম প্রতিবেশী। মানুষের দৈনন্দিনতায় আলগোছে এভাবে দাঁড়িয়ে যায় কতক আবদারের অধিকার, বিশ^াসের শামিয়ানা। সোফিয়া হক – মি. হকের স্ত্রী – ‘ছবির চেহারা’ গল্পের স্মার্ট ও আধুনিক 888sport promo code, যিনি কি না স্বামীর প্রবল অসুস্থতার মুখেও ভাবলেশহীন বলতে পারেন, ‘আমি থাকলে কি আর ও ভালো হয়ে উঠবে। তাছাড়া এ সময় আমার প্রোগ্রাম ক্যানসেল করা চলে না।’ সেই সোফিয়া হক ফটোগ্রাফার শাহজাহানকে পরিচয়ের সুতোয় একটি ছবি তুলে দিতে জোরাজুরিই করে খানিকটা। কিন্তু শাহজাহান ক্যামেরা হাতের নিপুণ 888sport live chatী, যখন-তখন ছবি তোলে না, তার চাই প্রকৃত অর্থেই ছবির মুড। তার যুক্তি, ‘আমি তো কোনো সুন্দর মহিলার ছবি তুলব না। আমি ওর চরিত্রটাকে ধরতে চাই।’ মানুষ আজন্ম বয়ে বেড়ায় নিদারুণ কৌতূহল, এই সত্যই যেন জেগে ওঠে এমন বাক্যে! শাহজাহান সত্যিই ছবি তোলেন সোফিয়া হকের, যা স্বামী-বিয়োগে বিধ্বস্ত এক পত্নীর! 888sport live chatী হতে হলে দূরান্বয়ী দৃষ্টিশক্তির যে পুষ্টতা দরকার তা ছিল শাহজাহানের কাছে, এমনকি এটা থাকতে হয় জগতের মৌলিক 888sport live chatী-হৃদয়ের কাছে। একজন 888sport promo code বা পুরুষ, তিনি পেশাগত ক্ষেত্রে হোন অতি সফল, তবু লুকাতে পারে না অন্তরগত বেদনা। রঙিন বহিরঙ্গের ভেতর নীরব অথচ অনেক কিছু বলে যাওয়া অন্তরটির ছোঁয়া সবাই পায় না। এটাও ঠিক, বৈষয়িক বাহাদুরির ভেতরও অহির্নিশ জেগে থাকে রিক্তের বেদন, যা সোফিয়া হককে দিয়ে, শাহজাহানের ক্যামেরা দিয়ে গল্পকার আনিস চৌধুরী মূর্ত করেন পাঠকের কাছে। অদৃশ্য অথচ সহচর হয়ে থাকা এই দুঃখবোধকে ধরার সূত্রেই আমরা দেখতে পাই একজন আনিস চৌধুরীর শক্তিমত্তার জায়গা-জমিন; তাঁর গল্পে ভাবনার সাক্ষ্য-সাবুদ। জীবনকে নানান দিক থেকে দেখার অসাধারণ চোখ লাগে কথাকারদের, যা কি না প্রতিদিনের দেখায়ও অপরিচিত, নিত্য ব্যবহারেও চিরনতুন।
হুমায়ুন ফরিদী কিংবা এটিএম শামসুজ্জামানের কি কখনো নায়ক হতে ইচ্ছে করেছিল! এরকম প্রশ্ন অস্বাভাবিক নয় মোটেই; কিন্তু আমাদের বোধে এই প্রশ্ন কি কখনো উদয় হয়েছিল? হয়নি, কেননা, আমাদের দৃষ্টির সীমা নির্ধারিত ছিল ওই পর্দা পর্যন্তই। এখানেই একজন গল্পকারের খেল! আনিস চৌধুরীর একটি গল্পের ফেরদৌসের নায়ক হওয়ার শখ দেখে পাঠকের মনে হয়, এ তো আমাদেরও প্রশ্ন! ভিলেনের রোলে এমন সফল ফেরদৌস, দর্শকদের প্রশান্তির নিদর্শনগুলি এসে পড়ে মঞ্চে। তার মুখের ওপরে। ডিম, টমেটো, কখনোওবা দু-একটা ইটপাটকেল। কারণ, সে-মুহূর্তে ফেরদৌস তাদের কাছেই সবচেয়ে সফল অভিনেতা। দগ্ধ-কঠিন, রুক্ষ, যে কি না হাসতে জানে না মোটেও; তার আবার শখ নায়ক হওয়ার! ফেরদৌসের চিরকঠিন সত্তায় হাসির বীজ বুনে দেয় পান্না। সহ888sport live chatী পান্নার ভালোবাসায় ফেরদৌসের নতুন জীবনে নেই আর মঞ্চ, নেই অভিনয়। মানুষের মনস্তাত্ত্বিক টানাপড়েনের এই অনিন্দ্য সাক্ষী, একটি কঠিন অভিনয়। এ-গল্পটি পড়া যেতে পারে, বাঙালি রমণীর ভালোবাসায় মুগ্ধ পুরুষের আমূল বদলে যাওয়া মহাকাব্য হিসেবে। আলাপ – গল্পের হাসিনা বানুকেও ভোলা যায় না কোনোভাবে। নানা চাতুরী দিয়ে স্বামীকে রক্ষা করে আশু বিপদ থেকে। মাঝে গল্পের কথক যেনবা বলি হতে প্রস্তুত থাকেন সর্বদা। পাওনাদারের ঝামেলা, বাড়িওয়ালার ঝামেলা, শারীরিক অসুস্থতা ইত্যাদি মেটাতে সামাদপত্নী সমাধান হিসেবে খুঁজে পান গল্পের কথককে। সামাজিক পথ-চলতি আলাপ থেকে আমার হাতখানা ধরে মিনতির সুরে বলেন, না না, আপনাকে যেতেই হবে – এই প্রথা বাঙালি মধ্য-নিম্নমধ্যবিত্ত জীবনের মূল সুরে টান মারেন গল্পকার। শেষ পর্যন্ত উপকারের দাওয়াই এতই প্রবল হয় যে, কথককে বাসা ছাড়ার নোটিশ দেয় বাড়িওয়ালা আর বাড়িওয়ালা-পাওনাদারদের সঙ্গে সামাদের সম্পর্ক হয়ে ওঠে উঞ্চ। স্বামীকে উদ্ধারে বাঙালি 888sport promo codeর সহজাত বুদ্ধি খরচের দারুণ একটা মেলবন্ধন ঘটে এই গল্পে। বিশ^াসঘাতক অথবা মুহূর্তের মরীচিকায় মজে যাওয়া বাঙালির চিরায়ত অভ্যাসকে ইঙ্গিতে ধরার এই তরিকাকে আমাদের মান্য করতেই হয়। আনিস চৌধুরীর গল্পকুশলতার আশ্চর্য দিক এই, বানোয়াট নয়, বরং ঘটনাপুঞ্জ যেন জীবনেরই প্রয়োজনে একের পর এক হাজিরা দেয় তাঁর গল্পে। উত্তম পুরুষে এসব বর্ণনা হয়ে ওঠে মনোগ্রাহী এবং আন্তরিক। ফলে পাঠক অবস্থান করে গল্পের চরিত্রগুলির কাছাকাছি, আত্মার প্রতিবেশী হয়ে।
আমরা নানা রকমের মানুষ দেখি আনিস চৌধুরীর গল্পে। উচ্চবিত্তের রোশনাই, মধ্যবিত্তের ভেতরগত দ্বন্দ্ব, নিম্নশ্রেণির সংগ্রাম, প্রায় সব শ্রেণিরই গলাগলি দেখি তাঁর গল্পে। এখানে উল্লেখ করার মতো বিষয়, আনিস চৌধুরী পঞ্চাশের দশকের গল্পকার, যে দশক কি না এদেশের জন্মের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে আছে বড় রকম স্বর ও চিত্র নিয়ে। কিন্তু আনিস চৌধুরীর গল্পে সেরকম প্রচ্ছন্ন রাজনৈতিক কিংবা পারিপাশির্^ক লক্ষণ আমরা তেমন দেখে উঠি না। তাহলে তিনি কি সময়-নিরাসক্ত গল্পকার? নিশ্চয়ই নয়। আনিস চৌধুরীর গল্পকার চরিত্রেরই মৌলিক শোভা, তিনি জীবন আঁকেন – জীবনের ভেতর দিয়েই ধরার চেষ্টা করেন সময়ের পালা। নিবিড় পাঠে আনিস চৌধুরীর সেই শক্তিটুকু ধরা পড়ে, যা মূলত মগজের কারবার। তিনি গল্পের চরিত্রকে দিয়ে বেশি কিছু বয়ান করেন না, যা-ই দরকার চরিত্রের জীবনের প্রয়োজনে তা দিয়েই সাজান একেকটি কথাভাষ্য। ফলে ‘বিষাক্ত’ গল্পের নাঈম অপেক্ষা করে তার মনির জন্যে, ‘যখন সুরভি’ গল্পের বরকত ফিরে আসে নিজের কাছে, ‘আঙুর’ গল্পে প্রিয়তমা স্ত্রী রোকেয়াকে খাওয়াতে পারে না সাধের আঙুর ফল, ‘পরিব্রাজক’ গল্পের আকরাম প্রবাসের সবকিছু ছেড়ে যেন দেশেই খুঁজে পায় প্রকৃত সুখ। এভাবে আনিস চৌধুরীর গল্পের ভেতর শরীর জুড়ে আমরা আবিষ্কার করতে থাকি নানা পদের মানুষের চেহারা, নানা রকমের মানুষের কাণ্ডকীর্তি। এত এত রকমের মানুষ নিয়ে আনিস চৌধুরীর গল্প888sport live football যে মনে হয় তা তাঁর সময়ের চেয়ে ঢের এগিয়ে – বলনে কি চিন্তায়। অবাক করার বিষয়, পরাবাস্তব গল্প নিয়ে মার্কেজ ধরে আজকের যে হইহই তা আনিস চৌধুরীর সত্তরের দশকে লেখা ‘চেতনার দিগন্ত’ কিংবা ‘চেতনার শরীর’ গল্পে প্রবলভাবে বিদ্যমান এবং তা দেশজ ঢঙে-রঙে চিত্তাকর্ষক। পরবাসী সৌন্দর্য নিয়ে এই অহমের ভেতর একটু নজর দেওয়া উচিত নিজেদের দিকে, দেখতে পাবো কত আগে এই দেশের ভূমিপুত্ররা উৎপাদন করে গেছেন সুকুমার-শস্য। গল্পকার আনিস চৌধুরীর সার্থকতা এই, তাঁর গল্পের মানুষেরা দিনমান জেগে থাকে ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল জুড়ে। পুরনো না-হওয়া এই মানুষদের চিরায়ত মুখ দেখেই আমরা বুঝতে পারি আনিস চৌধুরীর গল্পপাঠ কেন জরুরি এই সময়েও।


Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.