আবুবকর সিদ্দিক (১৯৩৪-২০২৩) প্রথমত কবি। তারপর গল্পকার এবং ঔপন্যাসিক। কিন্তু গীতিকার হিসেবেও যে তিনি স্বতন্ত্র এবং বিশিষ্ট, সেই পরিচয় যেন কিছুটা হলেও আলোচনার আড়ালেই রয়ে যায়।
তাঁর রুদ্রপদাবলী : গণমানুষের গান (২০০৮) নামক বইটিতে সংকলিত গানের 888sport free bet ২২১টি। এগুলির বাইরে হারিয়ে যাওয়া কিছু গান ছিল যেগুলিকে এখন আর হিসাবে আনা যায় না। বিষয়বস্তু বা পরিপ্রেক্ষিতের নিরিখে তাঁর গানগুলিকে তিনি নিজেই পাঁচটি পর্যায়ে বিভক্ত করেছেন। সেগুলি হলো : গণআন্দোলনের গান (৪৮টি), মুক্তিযুদ্ধের গান (৩৫টি), 888sport cricket BPL rateের গান (৬২টি), দেশের গান (২৮টি) এবং বিবিধ (৪৮টি)। আবুবকর সিদ্দিক তাঁর অধিকাংশ গানের শেষেই দিন-মাস-সাল লিখে রেখেছেন। এর ফলে তাঁর গান রচনার ধারাবাহিকতা এবং গীতিকার হিসেবে তাঁর ভাঙা-গড়া-নির্মাণ তথা বাঁক বদলের চিহ্ন নিরূপণ সহজ হয়। তাঁর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক এবং 888sport cricket BPL rateের গান যে কেবল ১৯৭১ এবং ১৯৫২ সালেই রচিত হয়েছিল তা নয়। ’৫২ এবং ’৭১ পরবর্তীকালে ভাষা-আন্দোলন এবং মুক্তিযুদ্ধকে কেন্দ্র করে আয়োজিত অনুষ্ঠান উদ্যাপনের জন্য একক গান হিসেবে এবং গীতিনকশার প্রয়োজনেও এইসব গান রচনা করেছিলেন তিনি। নিজের জেলা শহর বাগেরহাটে তিনি ‘চারণিক’ নামে একটি সাংস্কৃতিক সংগঠন গড়ে তুলেছিলেন। সেই সংগঠনের 888sport live chatীদের জন্যও গান লিখতে হয়েছিল তাঁকে। কোনো কোনো গানে তিনি নিজেই সুরারোপ করেছিলেন।
আবুবকর সিদ্দিকের 888sport live football এবং সংগীত রচনার ভিত তাঁর অলক্ষ্যে গড়ে উঠেছিল শৈশব-কৈশোরেই, হুগলি এবং বর্ধমান শহরে বসবাস করার দিনগুলিতে। বাবার চাকরির সূত্রে ১৯৩৫-১৯৪৮ সাল পর্যন্ত তিনি হুগলি এবং বর্ধমান শহরে কাটান। এই দুটি শহরের, বিশেষত বর্ধমানের, অভিজাত উচ্চশিক্ষিত রুচিবান, সংস্কৃতিবোধসম্পন্ন মানুষের জীবনচর্চা, স্বাধীনতা পূর্বকালীন সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক আলোড়ন-উদ্দীপনা তাঁর মানসপটে গভীরভাবে রেখাপাত করে। তাঁর মধ্যে প্রস্তুত হতে থাকে একটি লেখক-মন, 888sport live chatীসত্তা। সেই সময়েই তিনি গান্ধী, নেহেরু, সুভাষচন্দ্র, জিন্নাহ, আবুল হাশিমের মতো ভারতবিখ্যাত নেতাদের দেখা এবং তাঁদের কথা শোনার বিরল অভিজ্ঞতা লাভ করেন। বর্ধমান শহরের টাউন হলের রাজনৈতিক জনসভায় যে ক’জন কিশোর উদ্বোধনী সংগীত পরিবেশন করতেন, আবুবকর সিদ্দিক ছিলেন তাঁদের অন্যতম। তিনি তখন কংগ্রেসের কিশোর বাহিনীর মিছিলে হেঁটেছেন, হাত উঁচিয়ে গলা চড়িয়ে স্লোগান দিয়েছেন। উপরন্তু তাঁর বাবা ছিলেন একজন রাজনীতি ও সংস্কৃতি সচেতন মানুষ। বাবার প্রভাবও পড়েছিল তাঁর মানসগঠনে। দেশভাগ তথা স্বাধীনতার পরে ১৯৪৮ সালে গ্রামের বাড়ি বাগেরহাটের বৈটপুরে ফিরে এলে বর্ধমানের দিনগুলি 888sport sign up bonusসঙ্গী হয়ে থাকে তাঁর। তিনি কলম তুলে নিয়ে দু-একটি 888sport app download apk লিখতে শুরু করেন। তাঁর মন পরিপক্ব হতে থাকে। বাঙালি মুসলমানের স্বাধীনতার স্বপ্ন ক্রমশ দূরে সরে যায়। পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের জীবনে পাষাণের মতো চেপে বসে পাকিস্তানি দুঃশাসন। পূর্ব পাকিস্তানের এই ক্রান্তিকালে আবুবকর সিদ্দিক প্রতিবাদ এবং প্রতিরোধের হাতিয়ার হিসেবে গণসংগীত লিখতে উদ্বুদ্ধ হন। এইসব অগ্নিবর্ষী গানই কবির ভাষায় ‘রুদ্রপদাবলী’। শ্রমজীবী প্রান্তিক মানুষের স্বাধিকার আদায়ের সংগ্রামে এবং ষাটের দশকে পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের প্রতি পাকিস্তান সরকারের জুলুম, নিপীড়ন, নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের অন্যতম হাতিয়ার হয়ে উঠেছিল আবুবকর সিদ্দিকের গণসংগীতসহ আরো বিভিন্ন ধরনের গান।
একথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, সংগীতের ক্ষেত্রে আবুবকর সিদ্দিকের সবচেয়ে বড় অবদান গণআন্দোলনের গান তথা গণসংগীত রচনার। এই প্রসঙ্গে তিনি নিজেও লিখেছেন : ‘ষাটের দশকে প্রচুর গণসঙ্গীত লিখতে হয়েছে আমাকে। আয়ূবী সমর শাসনের বিরুদ্ধচাপে, গণবিক্ষোভ ও গণআন্দোলনের প্রেরণায়, অনুষ্ঠানগুলোর চাহিদায়, মিছিলের ডাকে, সভাসমিতির দাবিতে ও সর্বোপরি, নিজের ভিতরের ফুঁসে ওঠা বিস্ফোরণের উদ্গিরণে লাভাস্রোতের মত গণসঙ্গীত বেরিয়ে এসেছে কলমের ডগা দিয়ে। একাত্তরের ষোলই ডিসেম্বরে স্বাধীনতা এসে গেল, তবু সে স্রোতধারা বাগ মানেনি, অন্তত বাহাত্তর তিয়াত্তর অব্দি (পৃ. ধ)।’ তিনি আরো লেখেন : ‘কী তীব্র বিশ্বাস আর উদ্দীপনা নিয়ে গানগুলো লেখা হত তখন! ঝড়ের মত দুরন্ত তোড়ে কথারা ছুটে বেরিয়ে আসত কলম থেকে। মনে হত এই গানের শব্দঝঞ্ঝা থেকেই সর্বহারার বিপ্লব এসে যাবে বিশ্বে-দুস্থ শোষিত পূর্ব পাকিস্তানেও (পৃ. ন)।’ তিনি প্রথম গণসংগীত লেখেন ১৯৬৪ সালের ২৮শে সেপ্টেম্বর। তারপর মোটামুটি ২০০৬ সাল পর্যন্ত চলে তাঁর গান রচনার ধারা। তাঁর রচিত বিখ্যাত গণসংগীতগুলির মধ্যে রয়েছে – ‘ব্যারিকেড, বেয়নেট বেড়াজাল/পাকে পাকে তড়পায় সমকাল’ (১৯৬৪), ‘আমরা ক’জন আধা আধা আধুনিক নাগরিক’ (১৯৬৪), ‘ড্রাগনের বহ্নিবিষ হলকায়’ (১৯৬৪), ‘পায়রার পাখনা বারুদের বহ্নিতে জ্বলছে’ (১৯৬৬), ‘ইতিহাস ফিস ফিস কথা কয় কানে কানে’ (১৯৬৭), ‘বহুরূপী মুখোশেরে চিনে নাও এইবার’ (১৯৬৭), ‘বিপ্লবের রক্তরাঙা ঝাণ্ডা ওড়ে আকাশে’ (১৯৬৮), ‘আমাদের কলিগুলি ছিল গো/ প্রথম প্রণয়জ্বরে তপ্ত’ (১৯৬৮), ‘বারে বারে সর্বনাশা ভ্রান্তিতে/ তোমায় আমায় মোকাবিলা ক্রান্তিতে’ (১৯৬৮), ‘টোটা ফুটছে প্রাণ লুটছে’ (১৯৬৯), ‘বিশ্বব্যাপী সর্বহারার একটি মুক্তিমন্ত্র’ (১৯৭০), ‘হো ধান দিয়োনা/ হো পাট দিয়োনা’ (১৯৭১), ‘বাংলার ঘরে ঘরে সংগ্রাম জ্বলন্ত জানো কি’ (১৯৭১), ‘আমি তো বন্দী পাখি কে জাগালে এমন করে’ (১৯৮৩) প্রভৃতি। ষাট ও সত্তরের দশকে এত উদ্দীপনামূলক গণসংগীত লিখে পরবর্তীকালে তিনি কেন সংগীতের এই ধারা থেকে বহুলাংশে সরে এলেন তার জবাব দিতে গিয়ে আবুবকর সিদ্দিক লিখেছেন : ‘একেবারে বাস্তব সত্য জনগণের শোষণ-পীড়ন-নির্যাতন-প্রতিবাদ-লড়াই, এই শক্ত ভিত থেকেই স্বতঃস্ফূর্ত তাগিদে বেরিয়ে আসে গণসঙ্গীত। লড়াকু সংগঠনের অভিভাবকত্বে ঘটে তার নির্মাণ ও প্রসার। গণসঙ্গীতের সফল কার্যকারিতার পেছনে কাজ করে একাধিক যুগপৎ ও উপর্যুপরি প্রক্রিয়া : শাসক-শক্তির দুঃশাসন-অত্যাচার, গণনির্যাতন, অসন্তোষ, গণবিস্ফোরণ। দরকার যথাযোগ্য প্রগতিশীল রাজনৈতিক পার্টি, প্ল্যাটফর্ম, সহযোগী সংগঠন ও নিবেদিতপ্রাণ সংগঠক।… সবচেয়ে বড় কথা, সমস্ত
সাংস্কৃতিক আন্দোলনের পক্ষপুট ছিল মার্কসবাদী চেতনাসমৃদ্ধ বাম পার্টিগুলি (পৃ. ঢ)।’ মূলত বামধারার রাজনীতির স্রোত স্তিমিত হয়ে যাওয়ার কারণে গণসংগীত দিয়ে গণজাগরণ ঘটানোর প্রয়োজনও যেন ফুরিয়ে আসে।
গান রচনায় আবুবকর সিদ্দিকের জন্য সবচেয়ে অনিরাপদ বা ঝুঁকিপূর্ণ সময় ছিল একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলি। সে-সময় তিনি প্রফুল্লচন্দ্র কলেজের অধ্যাপক। বাগেরহাট শহরের বাসা ছেড়ে গ্রামের বাড়ি বৈটপুরে গিয়েও নিশ্চিন্তে বাড়িঘরে থাকার উপায় ছিল না। রাজাকারের ভয়ে বনে-বাদাড়ে, সুপারি বাগানে, ঝোপজঙ্গলে আত্মগোপন করে থাকতে হয়েছে তাঁকে। কচুবাগানের মধ্যে শটিপাতা বিছিয়ে শুয়ে থেকে বিনিদ্র রাত কাটিয়েছেন তিনি। তবে খাতা-কলম, রেডিও এবং টর্চ সঙ্গে রেখেছেন। রাতে শটিপাতার আড়ালে টর্চ জ্বেলেও গান লিখেছেন। তাঁর লেখা মুক্তিযুদ্ধের গানগুলির মধ্যে রয়েছে – ‘ওই দ্যাখো দ্যাখো চেয়ে দ্যাখো/ বুলেট বেঁধানো ব্যাটন পেটানো বাংলার ইজ্জৎ’ (১৯৭১), ‘এলো নতুন দিন/ জাগ্ জাগ্ তাধিন তাধিন’ (১৯৭১), ‘পৎ পৎ উৎসাহে পতাকাটা উড়ছে’ (১৯৭১), ‘স্বাধীনতা নামে এক সূর্যের পিণ্ড’ (১৯৭১), ‘গণযুদ্ধের দুর্বার দিন এলো/ গণহত্যার পাল্টা জবাব দাও’ (১৯৭১), ‘শহীদের খুনরাঙা ঝাণ্ডা ওড়ে আকাশে’ (১৯৭১), ‘কত মৃত্যু কত অভিশাপে’ (১৯৭৩), ‘একাত্তরের অগ্নিদিনে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল’ (১৯৮৩), ‘আমরা তো পদাতিক সন্তান 888sport cricket BPL rateের’ (১৯৯৬) প্রভৃতি। ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের পরে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতিপর্বে আবুবকর সিদ্দিকের লেখা কিছু গান চিরকালের মতো হারিয়ে গিয়েছে। তিনি লিখেছেন :
‘১৯৭০-এর মার্চের শেষে অথবা এপ্রিলের প্রথম দিকে পুলিশের ভয়ে কিছু টাটকা লেখা গানের পাণ্ডুলিপি রেক্সিনের প্যাকেটে মুড়ে বাগেরহাট শহরে বাসার পিছনে দেয়াল ঘেঁষে মাটির তলায় পুঁতে রেখেছিলাম। স্বাধীনতার পর গ্রাম থেকে শহরে ফিরে এসে সে গানগুলো আর উদ্ধার হয়নি। প্রতিবেশী রিকশাঅলা লেহাজ সপরিবারে সেখানে নৈশক্রিয়া করে করে মলের পাহাড় বানিয়ে রেখেছে (পৃ. প)।’ আবুবকর সিদ্দিক উল্লেখ না করলেও সংগত কারণেই ধারণা করা যায়, একাত্তরের পলাতক জীবনে আরো দু-চারটে গান হারিয়ে যাওয়া বিচিত্র নয়।
888sport cricket BPL rateের গান হিসেবে আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো 888sport cricket BPL rateে ফেব্রুয়ারি’ গানটিই সবচেয়ে বেশি খ্যাতি এবং পরিচিতি লাভ করে। পাশাপাশি মরমি সুরের আরেকটি গান ‘তোরা 888sport appর শহর রক্তে ভাসাইলি রে বাঙালি’ ভীষণ আবেদন সৃষ্টি করে। এই গানটির গীতিকার এবং সুরকার সরকার শামসুদ্দিন ছিলেন আবুবকর সিদ্দিকের পাশের গ্রাম ফতেপুরের মানুষ। এই লোককবির সঙ্গে তাঁর দেখাসাক্ষাৎ হতো। ঘনিষ্ঠ পরিচয়ও ছিল। শামসুদ্দিনের এই গান বিপুলসংখ্যক বাঙালির মতো আবুবকর সিদ্দিককেও আবেগাপ্লুত করে। তাঁর ভাষা-আন্দোলন বা 888sport cricket BPL rateের গান রচনার অনুপ্রেরণা শামসুদ্দিনের এই গান। আবুবকর সিদ্দিক প্রথম 888sport cricket BPL rateের গান লেখেন ১৯৫৭ সালে 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালীন। এই গানটি তিনি লেখেন মূলত আবাসিক হলের দেয়াল পত্রিকার জন্য। এছাড়া ওস্তাদ গোলাম মোস্তফার অনুরোধেও তিনি 888sport cricket BPL rateের গান লেখেন। সেই গানটিতে সুরারোপ করেন ওস্তাদ আখতার সাদমানী। পরবর্তী সময়ে আবুবকর সিদ্দিক যখন বাগেরহাট প্রফুল্লচন্দ্র কলেজের অধ্যাপক তখন তিনি ‘888sport cricket BPL rateের ভোরে জেগে উঠে দেখি/ রক্তিম সূর্যের ফিনকি’ (১৯৭০) গানটি লেখেন। 888sport cricket BPL rateে ফেব্রুয়ারির আগের রাতে তিনি নিজেই গানটিতে সুর সংযোগ করে কলেজের ছাত্রছাত্রীদের শিখিয়ে পরের দিন 888sport cricket BPL rateের প্রভাতফেরিতে রিকশার পেছনে মাইক বেঁধে সারা বাগেরহাট শহর প্রদক্ষিণ করেন তাঁর দলবল নিয়ে। পরে শেখ লুৎফর রহমান এই গানে অসামান্য সুরারোপ করলেও প্রচার এবং স্বরলিপির অভাবে সেই সুর হারিয়ে গেছে। সাধন সরকার আবুবকর সিদ্দিকের লেখা 888sport cricket BPL rateের প্রথম যে-গানটিতে সুর দেন সেটি হলো ‘বাংলা আমার দুঃখসুখের সাথী মধুর ভাষা।’ ষাটের দশকে খুলনার সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘সন্দীপন’-এর 888sport live chatীরা এই গানটিকে ভীষণ জনপ্রিয় এবং পরিচিত করে তোলেন। এছাড়া 888sport cricket BPL rate নিয়ে তাঁর রচিত গানের মধ্যে রয়েছে – ‘আমাদের সংগ্রাম চলবে/ থামবে না’ (১৯৬৯), ‘888sport cricket BPL rateের ডাকে আবার যৌবন জাগেরে’ (১৯৭০), ‘চলো ভাই চলো যাই শহীদের মিনারে’ (১৯৭০), ‘888sport cricket BPL rateের পথ বাংলার পথ প্রতিবাদে প্রতিরোধে’ (১৯৭৭), ‘এই ফাগুনের অগ্নিবীণায় ঝড়ের মাতন’ (১৯৮২) প্রভৃতি।
ভাষা-আন্দোলন, গণআন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ সবই দেশপ্রেমের সঙ্গে সম্পৃক্ত। তারপরও আবুবকর সিদ্দিক তাঁর কিছু গানকে আলাদাভাবেই দেশপ্রেমের গান হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। সেগুলির মধ্যে রয়েছে – ‘তরঙ্গ তোমার নামে নদীতে স্বদেশ’ (১৯৬৭), ‘এই মাটি মার খায় বার বার’ (১৯৭৩), ‘এ মাটি সর্বনাশা ভালোবাসায় আমায় টানে’ (১৯৭৫) প্রভৃতি। বিবিধপর্বে তাঁর গানের 888sport free betও কম নয়। স্বাধীনতা-উত্তর 888sport appsে বিভিন্ন সময়ে সংঘটিত বিশেষ বিশেষ ঘটনার পটভূমিতে, কখনো প্রতিবাদ কখনো বা সমর্থন জানিয়ে তিনি গান লিখেছেন। আবার বিখ্যাত এবং অখ্যাত কোনো কোনো মানুষকে নিয়েও গান লেখার তীব্র তাগিদ বোধ করেছেন তিনি। শ্রমজীবী কন্যা ধর্ষিত শবমেহেরের মৃত্যু, নূর হোসেনের আত্মবলিদান, মুজিব হত্যার বিচার, লেনিন-মাও সেতুং-ভাসানী-সুকান্ত 888sport app download for android, মে দিবস পালন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-আন্দোলনে গুলিতে সাংবাদিক নিহত, বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রীর নেতা শাহজাহান হত্যা, সংগীত888sport live chatী শেখ লুৎফর রহমান 888sport app download for android, ওসমানী উদ্যানে বৃক্ষনিধন, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, পথশিশুদের করুণ পরিণতি, কানসাটে বিদ্যুৎ-আন্দোলন প্রভৃতি প্রসঙ্গ ও পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর রচিত বিবিধ গানের মধ্যে রয়েছে – ‘মাও সে তুঙ জিন্দাবাদ’ (১৯৬৯), ‘লেনিন! লেনিন! বিদ্যুৎ সে কি বল্লম নাকি’ (১৯৭০), ‘ভাসানীর ভাষা ভেসে আসে ঐ’ (১৯৭০), ‘তারই জন্মের ছাড়পত্রে লেখা ছিল সংগ্রাম/ সুকান্ত তার নাম’ (১৯৮০), ‘কালো কালো কংকাল গাঁইতি চালায়’ (১৯৭২), ‘শবমেহেরের শবের পরে’ (১৯৮৫), ‘নূর হোসেন! নূর হোসেন! নূর হোসেন’ (১৯৮৮), ‘জিন্দা রহো জিন্দা রহো গণ888sport live chatী লুৎফর ভাই’ (১৯৯৭), ‘রাজশাহী ভার্সিটির রেল ইস্টিশানে থামবে গাড়ি, ‘দুয়ারে দুয়ারে খবর পৌঁছে দেবার, মানুষ আমার স্বজন সুজন, বৃক্ষখুনী লুটেরাদের ঘাতক কুঠার হটিয়ে দাও’ (২০০১), ‘সব জিনিসের দাম বাড়ে হায়’ (২০০৩), ‘ও বাসি গোলাপ ও দুঃখী গোলাপ’ (২০০৪), ‘বিশ্বে আজ জংগীরাজ বোমাবাজ মৌলবাদ’ (২০০৪), ‘মুজিব! তোমার খুনীরা এখনো’ (২০০৬), ‘আলো চাই আলো চাই আলো চাই’ (২০০৬) প্রভৃতি।
আবুবকর সিদ্দিকের সবচেয়ে বিখ্যাত গান ‘ব্যারিকেড, বেয়নেট বেড়াজাল/ পাকে পাকে তড়পায় সমকাল’ (১৯৬৪) একটু বিস্তৃত আলোচনার দাবি রাখে। ১৯৬৪ সালের ২৮শে সেপ্টেম্বর আবুবকর সিদ্দিক বেলা ১১টার দিকে খুলনা শহরের সাউথ সেন্ট্রাল রোড ধরে হাঁটছিলেন। হাঁটার তালে তালে তাঁর মনের মধ্যে না-লেখা একটি গানের বাণীরা ঝংকার দিয়ে উঠছিল। দেশ তখন কার্যত ব্যারিকেড ও বেড়াজালে আবদ্ধ। বেয়নেট উঁচিয়ে মানুষকে শাসন করছে পাকিস্তান সরকার। গানের শুরুতেই এসে গেল ব্যারিকেড, বেয়নেট ও বেড়াজাল শব্দ তিনটি। এই গানটি রচনার অভিজ্ঞতা বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি লিখেছেন : ‘আসলে তখন আমার মধ্যে নতুন গান নির্মাণের কাজ চলছে। শব্দগুলি পদক্ষেপের তালে তালে ঝম ঝম করে মার্চের মত চলে আসছিল। আমার দশা ঠিক ঘোর লাগা মানুষের মত। পকেটে কলম আছে, কাগজ নেই। রাস্তার পাশ থেকে বকের ছবি আঁকা কিংস্টর্ক সিগারেটের প্যাকেট কুড়িয়ে নিয়ে এক টানে ছিঁড়ে ফেলে লিখে যেতে থাকি। মাঝখানে থু থু-কাশির দাগ শুকিয়ে। লিখতে গেলে কালি ফোটে না। দাঁড়িয়ে পড়লে শব্দদের ঝম ঝম মার্চ বন্ধ হয়ে যায়। আবার হাঁটা শুরু এবং তার তালে তালে লেখার কাজ (পৃ ৭৪)।’ এই সময়ে তাঁর এক ছাত্র, রমেন্দ্রনাথ ঘোষ, পরবর্তীকালে রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ের দর্শনের অধ্যাপক, তাঁকে পেছন থেকে ডাকতে থাকেন। ছাত্রের ডাকে সাড়া দিলে ভদ্রতার খাতিরে দাঁড়িয়ে পড়ে তার সঙ্গে দু-একটা সৌজন্যমূলক কথা বলতে হবে এবং সেই ফাঁকে গানের খেই হারিয়ে যাওয়ার ভয়ে আবুবকর সিদ্দিক যেন ছাত্রের ডাক শুনতেই পাননি – এমন ভান করে দ্রুতগতিতে একটি ছোট্ট গলিতে ঢুকে আত্মগোপন করে গানটি লেখা শেষ করেন। খুলনার বিখ্যাত সংগীতাচার্য সাধন সরকার গানটিতে অসামান্য সুর সংযোজন করেন। কণ্ঠও দেন তিনি। খুলনার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে পরিবেশিত হতে থাকে এই গান। তুমুল জনপ্রিয় হয়ে ওঠে গানটি। শ্রোতার মনে তীব্র উদ্দীপনা সৃষ্টি করে। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধকালে খুলনার আরেক সংগীতসাধক কালীপদ দাস পালিয়ে কলকাতায় যাওয়ার সময় গানটি কণ্ঠস্থ তথা মুখস্থ করে নিয়ে যান। গানটি পৌঁছে যায় কলকাতার স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে। মুক্তিযুদ্ধের সময়ে এই বেতার কেন্দ্র থেকে দিনে দুই-তিনবার প্রচারিত হয়ে গানটি সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিকামী মানুষ প্রবলভাবে উদ্দীপ্ত এবং আলোড়িত হয় এই গানের কথায় ও সুরে। আবুবকর সিদ্দিক তখন লুকিয়ে আছেন পূর্ব পাকিস্তানের বাগেরহাটের বন-বাদাড়, ঝোপ-জঙ্গলে। কিন্তু অচিরেই শনাক্ত হয়ে যান এই গানের গীতিকার। স্থানীয় রাজাকারদের কাছে পৌঁছে যায় গীতিকারের নাম-পরিচয়। এই গান লেখার অপরাধে রাজাকাররা তাঁকে খুঁজে বের করে ধরে নিয়ে যায়, শারীরিকভাবে নির্যাতন করে, তাঁর ডান হাতটা এমনভাবে মুচড়ে দেয় যেন তিনি ওই হাত দিয়ে আর লিখতে না পারেন। গান রচনার 888sport app download bd ও অভিজ্ঞান হিসেবে তাঁর ডান হাতটি আমৃত্যু সাক্ষ্য দিয়ে গেছে।
আবুবকর সিদ্দিকের আজীবনের পরম সুহৃদ ও সঙ্গী-সারথি, 888sport appsের বিশিষ্ট সংস্কৃতিজন কামাল লোহানী তাঁর সংগঠন ‘ক্রান্তি’তে গাওয়ানোর জন্য আবুবকর সিদ্দিকের তিনটি গানের সুর করিয়েছিলেন শেখ লুৎফর রহমানকে দিয়ে। গান তিনটি হলো – ‘পায়রার পাখনা বারুদের বহ্নিতে জ্বলছে’ (১৯৬৬), ‘মার্কিনী লাল ইয়াংকিরা চায় কী হে’ (১৯৬৬) এবং ‘বিপ্লবের রক্তরাঙা ঝাণ্ডা ওড়ে আকাশে’ (১৯৬৮)। পাকিস্তানি দুঃশাসনের প্রতিবাদে ক্রান্তি 888sport live chatীগোষ্ঠী এইসব গান গেয়ে পথে পথে মিছিল করেছে। খুলনা-বাগেরহাটের নির্দিষ্ট গণ্ডির বাইরে আবুবকর সিদ্দিকের এই গানগুলি সারাদেশের মানুষের কাছে পৌঁছে দেন কামাল লোহানী এবং ‘ক্রান্তি’র 888sport live chatীবন্ধুরা।
কৃষক-শ্রমিক-মেহনতি মানুষের মিছিল, সমাবেশ, সম্মেলনেও এই গান পৌঁছে দিয়েছেন তাঁরা। ভারতীয় উপমহাদেশের প্রখ্যাত সংগীতজ্ঞ সলিল চৌধুরী আবুবকর সিদ্দিকের গণসংগীতের সমঝদার ছিলেন। বিশেষত ‘ব্যারিকেড, বেয়নেট, বেড়াজাল’ গানটির ভূয়সী প্রশংসা করেছিলেন তিনি। কলকাতা থেকে আবুবকর সিদ্দিকের গানের বেকর্ড করার কথাও দিয়েছিলেন সলিল চৌধুরী। সেই মতো সাধন সরকার পঁচিশটি গানের স্বরলিপিও তৈরি করেছিলেন। নানান ব্যস্ততার কারণে আজ যাই কাল যাই করে আবুবকর সিদ্দিকের আর সময় হয়ে ওঠে না কলকাতায় গিয়ে সলিল চৌধুরীর সঙ্গে দেখা করার। সময় যখন হলো তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। বিনা নোটিশেই তখন সলিল চৌধুরী অজানা এক গানের দেশে হারিয়ে গেছেন চিরতরে। আশির দশকে কলকাতায় একটি আন্তর্জাতিক সেমিনার শেষে কামাল লোহানী সংগীতের আরেক দিকপাল হেমাঙ্গ বিশ^াসের সঙ্গে দেখা করতে গেলে কথা প্রসঙ্গে হেমাঙ্গ বিশ্বাসও আবুবকর সিদ্দিকের গণসংগীত নিয়ে কথা বলেছিলেন। কামাল লোহানীর ভাষায় : ‘তাঁর (আবুবকর সিদ্দিক) শব্দচয়ন, বাক্যবিন্যাস, প্রায়োগিক বলিষ্ঠতা এবং ছন্দময় প্রকাশকে তিনি (হেমাঙ্গ বিশ্বাস) দারুণভাবে সাধুবাদ দিয়েছিলেন। তবে আপত্তি বলব না, একটু অস্বস্তিবোধ করেছিলেন সাধারণের বোঝার ব্যাপারটা তুলে। তাঁর মন্তব্য এবং জিজ্ঞাসা : একটু কঠিন হয়ে গেল নাকি? কিন্তু হেমাঙ্গদা ঐ শব্দাবলিতে সুরারোপের একটা কেরামতির সন্ধান পেয়েছিলেন। আর এই ছন্দোবদ্ধ শব্দরূপকে সুরারোপ আকর্ষণীয় ও বিপুলভাবে গ্রহণযোগ্য করে তুলেছে, তাই নয় কেবল, হেমাঙ্গদা বললেন, এ কারণেই এই গণসঙ্গীতে অনুপ্রাণিত হয়েছেন বিশাল জনগোষ্ঠী (পৃ খ)।’ আবুবকর সিদ্দিক নিজেও লিখেছেন : ‘… গানের প্রায় সবগুলির প্রধান সুর বিদ্রোহ-প্রতিবাদ-ক্রোধ। সেই সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে এটাই স্বাভাবিক ছিল। যার ফলে কথাগুলো উত্তপ্ত (পৃ ৬)।’ তিনি আরো লেখেন, ‘এইসব গান কালের সহচর; কালের আবর্তেই তলিয়ে যাবে। সত্য শুধু এই, ইতিহাসের নির্মাণপথে বিভিন্ন বাঁকে এরা রচিত ও উচ্চারিত হয়েছিল। জাতির তারুণ্যমুখর অস্তিত্ব এরা ধারণ করেছে, এটাই লেখার সার্থকতা (পৃ ৫)।’
আবুবকর সিদ্দিকের গণসংগীতকে আলাদাভাবে চিনে নেওয়ার মতো নির্দিষ্ট কোনো সুরের ঘরানা তৈরি হয়নি, গণসংগীতের প্রচলিত সুরের ধারাতেই তাঁর গানের সুরের কাঠামোটি গড়ে উঠেছে। আবুবকর সিদ্দিক নিজেই কয়েকটি গানের সুর করেছেন। সবচেয়ে বেশি সংখ্যক গানের সুর করেছেন সাধন সরকার। এছাড়াও শেখ লুৎফর রহমান, নাসির হায়দার, ফকির আলমগীর, মিনা মিজানুর রহমান, আবদুল আজিজ বাচ্চু, হাসানুজ্জামান তালুকদার, কামরুদ্দিন আবসার প্রমুখ কয়েকটি গানে সুরারোপ করেছেন। সাধন সরকার-কৃত পঁচিশটি গান বাদে তাঁর আর কোনো গানের স্বরলিপি তৈরি করা হয়নি। স্বরলিপির অভাবে সুরারোপিত গানগুলির সুরও হারিয়ে গেছে। ফলে 888sport live chatীর স্বাধীনতার নামে কেউ যদি নিজস্ব সুরে আবুবকর সিদ্দিকের গান পরিবেশন করেন তাঁকে কিছুই বলার থাকে না। কেননা, তাঁর হাতে প্রামাণ্য স্বরলিপি নেই। এইসব আশংকার কথা মনে রেখেই আবুবকর সিদ্দিক রুদ্রপদাবলী : গণমানুষের গান গ্রন্থের ভূমিকার শেষে লিখেছেন : ‘এসব গানে যোগ্য ব্যক্তি নতুন করে সুর বসাতে চাইলে আমার দিক দিয়ে আপত্তি থাকবে না (পৃ ম)।’ নিশ্চয়ই কখনো কোনো যোগ্য সুরকার এগিয়ে আসবে এই ব্রত পালনের অঙ্গীকার নিয়ে।
* এই 888sport liveের সকল উদ্ধৃতি আবুবকর সিদ্দিকের রুদ্রপদাবলী : গণমানুষের গান (২০০৮) নামক বই থেকে গৃহীত হয়েছে। এছাড়া কোনো কোনো তথ্য এসেছে আবুবকর সিদ্দিকের
সঙ্গে বর্তমান প্রাবন্ধিকের বিভিন্ন সময়ের আলাপচারিতা থেকে প্রাপ্ত। ৎ
হরিপদ দত্তের 888sport alternative link : স্বাধীনতা-উত্তর সময়-সমাজের কথকতা
আহমেদ মাওলা
সত্তরের দশকের শক্তিমান কথা888sport live chatী হরিপদ দত্ত তাঁর 888sport alternative linkে তুলে ধরেছেন গ্রামের খেটে খাওয়া মানুষ কীভাবে নিষ্পেষিত হয়, তার বিশ্বাসযোগ্য বাস্তবতার স্বরূপ। স্বাধীনতা-উত্তর 888sport appsের সমাজ ও রাষ্ট্র-ক্ষমতার পালাবদল। শাসনব্যবস্থা বিকেন্দ্রীকরণের নামে থানাকে উপজেলায় উন্নীত করে গ্রামের টাউট-বাটপারদের হাতে ক্ষমতার দণ্ড তুলে দেওয়া হয়। উপজেলায় আদালত বসার ফলে রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের মদদে জোতদার, মেম্বার, চেয়ারম্যানদের অর্থশক্তি, পেশিশক্তি দ্বারা নিষ্পেষিত হয়ে গ্রামের কৃষক, বর্গাচাষি, শ্রমজীবী প্রান্তিক মানুষ ক্রমেই ভূমিহীন, দিনমজুরে পরিণত হয়। তাঁর 888sport alternative link ঈশানে অগ্নিদাহ (১৯৮৬) সামরিক-স্বৈরাচারের আমলের পটভূমিতে রচিত। গ্রামপর্যায়ে বিচারব্যবস্থা নিয়ে গেলে তার সুফল সাধারণ মানুষেরা পাবে – এটা হয়তো ভাবা হয়েছিল, কিন্তু হলো হিতে বিপরীত। রাষ্ট্রীয় প্রশাসনযন্ত্রের সহায়তায় মাতবর, মেম্বার, চেয়ারম্যান, মোড়লদের হাতে সাধারণ মানুষ সবচেয়ে বেশি নিপীড়নের শিকার হয়। হরিপদ দত্ত নির্মোহ দৃষ্টিতে এই পর্যবেক্ষণ তুলে এনেছেন ঈশানে অগ্নিদাহ 888sport alternative linkে। রজব আলী মোড়ল, মহব্বত আলী মেম্বার অর্থশক্তি, ক্ষমতার প্রভাব কাজে লাগিয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত প্রশাসনযন্ত্রের সহায়তায় প্রান্তিক চাষীদের ভূমি দখল করে, তাদের নিঃস্ব, ভূমিহীন দিনমজুরে পরিণত করে। 888sport alternative linkে বর্ণিত কাহিনিতে দেখা যায়, বর্ষাকালে সড়কের পূর্বপাশে রজব আলী মোড়লের ধানের জমি বৃষ্টির পানিতে ডুবে গেলে, মোড়ল রাস্তা কেটে পশ্চিম দিকে পানি নামিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করে। গ্রামের লোকেরা বাধা দেয়। রাস্তা কাটার ফলে জমির আলী, কুতুবুদ্দিন ও 888sport app কৃষকের পাকা ধান ডুবে যায়। কৃষকদের বাধা অগ্রাহ্য করে মোড়ল রাস্তা কেটে নিজের ধান রক্ষা করে আর ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের কথা দেয়, শীত মৌসুমে তার শ্যালো মেশিনের পানির দাম অর্ধেক নেবে। ইরি মৌসুম এলে মোড়ল সে-কথা রাখে না। তখন মোড়লের বিরুদ্ধে সালিশ বসানো হয়, বিচারের দায়িত্ব দেওয়া হয় গ্রামের সাহসী যুবক ফতেআলী এবং সোবহানকে। মোড়ল লোভ দেখিয়ে তাদের নিজের পক্ষে নিয়ে যায়। রজব আলী মোড়ল মনে মনে ভাবে, তার অনুপস্থিতিতে বিপুল সম্পত্তির মালিক হবে মেয়েজামাই মদখোর, বেহিসেবি হেলাল। জামাই হেলালকে মোড়ল ডেকে বলে – ‘এ্যাই ফসল থাইক্যাই তুমি বেবাক জাগাজমি তত্ত্ব-তালাশ করবা। মওতের আগে যুদি জমিন বাড়াইয়া দ্যাহাইতে পার, কবরের অন্ধকারেও আমার সুখ-আছান। পারবা না?’ (হরিপদ, ১৯৮৬ : ৩৫) মোড়লের মন্ত্রণা পেয়ে হেলাল বেপরোয়া হয়ে ওঠে। খোদেজার বাপ অভাবের সময় ধান কেনা এবং ঘর মেরামত করার জন্য হেলালের কাছ থেকে কিছু টাকা ধার করেছিল। বিনিময়ে খোদেজার বাপের আধা বিঘা জমি লিখিয়ে নেয় সে। এভাবে শুরু হয় হেলালের অভিযান এবং ভূমিদস্যুতা। 888sport alternative linkের কেন্দ্রীয় চরিত্র প্রতিবাদী যুবক আব্দুল্লাহর বাবা জমির আলীর জমি জাল দলিল করে দখল করে। চেয়ারম্যানের কাছে বিচার চেয়ে কোনো প্রতিকার না পেয়ে দরিদ্র কৃষক জমির আলী গোয়ালের গরু বিক্রি করে উপজেলা আদালতে মামলা করে। মামলার তারিখে উপজেলা – ‘আদালতে গিয়ে আব্দুল্লাহ থ। চায়ের দোকানে হেলালের সঙ্গে বসে তার পয়সায় কেনা উকিল খাচ্ছে চা। রাগ ধরে যায় খুবসে। উকিলকে ডেকে ব্যাপারটা জানতে চাইলে ধমকে উঠে সে – ‘তাতে হলো কী? এটা পাবলিক রিলেশন।’ (হরিপদ, ১৯৮৬ : ৪০)
অনেক যুক্তিতর্ক শেষে রায়ের দিন আসে। আদালতের রায় হেলালের পক্ষেই যায়। জমির আলী হয়ে পড়ে ভূমিহীন দিনমজুর। খোদেজার বাপ এবং জমির আলীর জমি দখল করে হেলাল পুকুর খনন করে। দুই জমির মাঝখানে কুতুবুদ্দিনের জমি। কুতুবুদ্দিন পুকুর খননে বাধা দিতে গেলে হেলাল বলে, ওই জমি সে কুতুবুদ্দিনের বাবার কাছ থেকে কিনেছে। কুতুবুদ্দিন আব্দুল্লাহর কাছে পরামর্শ চায়। আব্দুল্লাহ বলে, জমি ছাড়িয়ে নেওয়ার আগে সব বর্গাচাষিকে একত্রিত করতে হবে। ভেতরে ভেতরে প্রস্তুতি নেয় গ্রামের বর্গাচাষি, প্রান্তিক চাষি – মোড়লের ক্ষেতে তারা একসঙ্গে নামবে লাঙল নিয়ে। এই পরিকল্পনার ফাঁকে একদিন খুন হয় কুতুবুদ্দিন। খুনের অভিযোগে পুলিশ গ্রেপ্তার করে আব্দুল্লাহকে। এ-খবর ছড়িয়ে পড়লে দ্রুত গ্রামের জনসাধারণ জড়ো হয় রাস্তার ওপরে। অসংখ্য মানুষ মোড়লের বাড়ি ঘিরে ফেলে। অবস্থা বেহাল দেখে হেলাল ছুটে পালায় মোড়লবাড়ির ঈশানকোণে গোলাঘরের দিকে। গোলাঘরের দুয়ার ভেঙে দুজন টেনেহিঁচড়ে উঠানে নামিয়ে আনে হেলালকে। পুলিশ! পুলিশ! বলে চিৎকার করে হেলাল। তখন আচমকা আগুন জ্বলে ওঠে গোলাঘরে।
‘আচমকা একটা সড়কি বুকের পাঁজর ভেদ করে পিঠ দিয়ে বেরিয়ে আসে হেলালের। সাবিহার কোল ফসকে পড়ে যায় আগামী প্রভাতের শিশু প্রভু। … দৌড়াচ্ছে জনতা। মোড়লবাড়ির চাঁদাড় ছেড়ে এগোতে থাকে সড়ক ধরে। পেছনে আগুন! ঈশানে আগুন! গোলাঘর ঘিরে লকলক করছে গায়েবি আগুনের একজোড়া টকটকে জিহ্বা। যেন ইবলিশের দুই ডানায় জ্বলছে আগুন দাউ দাউ। সামনে, আরো সামনে বিস্তৃত প্রলম্বিত সড়কে কেবল অগণিত পায়ের শব্দ।’ (হরিপদ, ১৯৮৬ : ৬৪)
ঈশানে অগ্নিদাহ 888sport alternative linkের পরিণতিতে যদিও দেখা যায়, সম্পদলিপ্সু, জোতদার, দখলদার, অত্যাচারী রজব আলী মোড়ল, মেম্বার, চেয়ারম্যান ইত্যাদি শ্রেণির বিরুদ্ধে সম্মিলিত জনতার প্রতিরোধশক্তি জেগে উঠেছে, শ্রমজীবী শ্রেণির জাগরণে বুর্জোয়া শ্রেণির পতন, পরাজয় হয়েছে; কিন্তু সমাজবাস্তবতায় আসলে তা ঘটতে দেখা যায় না। আশির দশকে সামরিক-স্বৈরাচারী সরকার শাসনব্যবস্থা বিকেন্দ্রীকরণ এবং গ্রামে বিদ্যুতায়ন, কৃষির যন্ত্রায়ন করার ফলে গ্রামীণ সমাজজীবনের গুণগত পরিবর্তন এলেও সে-পরিবর্তন কৃষক-শ্রমিক শ্রেণির তেমন কোনো কাজে আসে না। রাষ্ট্র ও সমাজজীবনে গণতন্ত্র ও সুবিচার না থাকার ফলে সমস্ত উন্নয়ন জোতদার, টাউট-বাটপার শ্রেণির হাতে চলে যায়। ‘অস্তিত্বের ন্যূনতম প্রয়োজন সমাজের বিচ্ছিন্ন ব্যক্তিসত্তাকে করে ঐক্যবদ্ধ। রাষ্ট্র ও সমাজ জীবনে গণতন্ত্রায়নের সম্ভাবনাকে সামনে রেখে হরিপদ দত্তের এই মীমাংসা নিঃসন্দেহে তাৎপর্যপূর্ণ।’ (রফিক, ১৯৯৭ : ২৬২) ঈশানে অগ্নিদাহ 888sport alternative linkে বুর্জোয়া শ্রেণির পরাজয় এবং কৃষক-শ্রমিক প্রলেতারিয়েত শ্রেণির ঐক্যবদ্ধ জাগরণ দেখানোর মধ্য দিয়ে মার্কসীয় রাজনীতির প্রতি লেখকের এক ধরনের পক্ষপাত লক্ষ করা যায়।
অন্ধকূপে জন্মোৎসব (১৯৮৭) 888sport alternative linkে ঔপন্যাসিক গ্রামীণ সমাজের নতুন একটি দিক উন্মোচিত করেছেন। শোষণ, নিপীড়নের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার মানসিকতা গ্রামীণ সমাজকাঠামোর ইতিবাচক পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়। শ্রমের মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে সমাজপতিদের বয়কট, প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে ফরিদ আলীর মতো নিম্নবিত্ত পরিবারের ছেলের লেখাপড়ার উদ্দেশ্যে শহরে যাওয়া, শ্রমিক শ্রেণির স্বনির্ভরতার জন্য সমবায় গঠন গ্রামীণ সমাজের রূপবদলের চিত্র। (কাজী, ২০১৫ : ১৩৯) অন্ধকূপে জন্মোৎসব 888sport alternative linkের মূল বিষয় গ্রামীণ জনতার সংঘবদ্ধ শক্তি। মামুদ আলী মেম্বারের সমবায় সমিতি গঠন ও সেচের জন্য শ্যালো মেশিন কেনার মধ্য দিয়ে 888sport alternative link শুরু। মামুদ আলী মেম্বারের এটা ছিল দরিদ্র জনগণের শোষণ-নিপীড়নের এক অপকৌশল। তার আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে, কৌশলে অপরের জমি দখল করে রাতারাতি ধনী হওয়া। মেম্বার বিষ খাইয়ে দবিরউদ্দিনের হালের গরু মেরে ফেলে, যাতে দরিদ্র দবিরউদ্দিন আবার গরু কিনতে জমি বিক্রি করতে বাধ্য হয়। আর জমি বিক্রি করতে গেলে নামমাত্র মূল্যে তা কিনে নিতে পারে মামুদ আলী মেম্বার। হাসানের ভাই মতলিব শ^শুরবাড়ির সম্পদ বিক্রি করে গ্রামে কিছু জমি কেনে। মেম্বার জোর করে মসজিদের নাম করে সে-জমি কবলা করে নেয়। নোয়াখালীর মৌলভি গোলাম রসুল অতশীপাড়ার একটি মক্তবে পড়ায়। হাসান মতলবের জমি দখলের কথা হুজুরের কাছে বলে বিচার চাইতে গেলে মেম্বার সন্ত্রাসী পাঠিয়ে মৌলভিকে রাতের আঁধারে গ্রামছাড়া করে। হাসানের বাবা কিয়ামত আলী গোয়ালঘরে গরুর মশা তাড়াতে গোবর-খড় দিয়ে ধোঁয়া জ্বালায়। সেখান থেকে আগুন লেগে কিয়ামত আলীর হালের বলদ পুড়ে মারা যায়। আনোয়ার মাস্টার তাকে ব্যাংক থেকে ঋণের ব্যবস্থা করে দেওয়ার কথা বলে। কিয়ামত আলী মঞ্জুরিকৃত টাকা তুলতে গিয়ে দেখে নির্দিষ্ট টাকা থেকে কিছু টাকা কম। টাকা কম কেন? – জানতে চাইলে ম্যানেজার জানায়, কর্তনকৃত টাকা অর্ধেক আনোয়ার মাস্টারের, বাকিটা তার। কিয়ামত আলীর কাছে মাস্টারের আসল পচিয় স্পষ্ট হয়। শিক্ষকতার মুখোশে মাস্টার একজন অর্থলোলুপ ব্যক্তি। অতশীপাড়ার ছেলে ফরিদ আলী 888sport app কলেজে পড়ে এবং রাজনীতি-সচেতন। সে গ্রামের হাসান, মতলিব, কিয়ামত আলীকে নিয়ে সামাজিক অপশক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে চায়। হাসানের নেতৃত্বে গড়ে ওঠে নতুন সমিতি, গরিবের স্বনির্ভর হওয়ার স্বপ্ন, মজুরি বৃদ্ধির কথা বলে। হঠাৎ হাসানকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে চেয়ারম্যানের লোকজন নির্যাতন চালায়। হাসানকে উদ্ধার করতে সমিতির লোকজন যেতে দেরি করায় হাসান রাগ করে সমিতি ত্যাগ করে। ফরিদ চলে যায় 888sport app, অপশক্তির বিরুদ্ধে তাদের লড়াই থেমে যায়। পরে আবার ছুটিতে ফরিদ বাড়িতে এলে হাসানসহ নতুন কৌশল অবলম্বন করে অগ্রসর হয়। নতুন উদ্যমে শুরু হয় সমিতির কার্যক্রম। বনজঙ্গল, উঁচু-নিচু জমি কোদাল চালিয়ে সমান করে ধানের আবাদ করা হয়। গ্রামের জিনের আস্তানা খ্যাত জঞ্জাল ‘অন্ধকূপ’ সাফ করে লাগানো হয় আউশ ধান। বর্ষার সময় বৃষ্টির পানিতে মেম্বারের ইরি ধান ডুবুডুবু। জরুরিভিত্তিতে ধান কাটার মজুর দরকার; কিন্তু মজুরি না বাড়ালে কেউ কাজ করতে রাজি হয় না। জোটবদ্ধ জনতার মাঝ থেকে হাসানকে পুলিশ ধরে নিয়ে যায়। হাসানকে মুক্ত করতে কমরউদ্দিন, ফরিদ মেম্বারের ছেলেকে অপহরণ করে। মেম্বার ছেলেকে বাঁচাতে কমরউদ্দিনের কাছে ছুটে আসে। হাসানকে মুক্তি দেওয়ার শর্তে ছেড়ে দেওয়া হয় মেম্বারের ছেলেকে। তারপর গ্রামে অচেনা মানুষের আনাগোনা শুরু হয়। হঠাৎ এক সকালে অন্ধকূপে ফরিদ আলীর লাশ পাওয়া যায়। লাশ দেখে মেম্বার চিৎকার করে বলতে থাকে – ‘হারামজাদারা! করলি কি কামডা? খেত-জমি তগর পেট ভরে না? অহন খা জমিন, বেবাক মাডি খা জমিনের! আন্ধাইর কূয়া মানুষ চায়! চায় তাজা লৌ! আর কত জনের লৌ খাইবো হিসাব আছে?’ (হরিপদ, ১৯৮৭ : ৯৬)
অর্থাৎ মামুদ আলী মেম্বার বোঝাতে চায়, অন্ধকূপে জিনের আবাস ছিল, সেটা পরিষ্কার করার ফলে জিন ক্ষেপে গিয়ে ফরিদ আলীকে হত্যা করেছে, আরো অনেককে জিন হত্যা করবে। অপদেবতার বিশ্বাসে ভর করে মেম্বার হত্যাকাণ্ড চালিয়ে যেতে চায়। হাসান তাই চিৎকার করে মেম্বারকে গালি দিয়ে বলে, ‘শূয়রের বাচ্চা জালিম! আন্ধাইর কূয়া আর কত লৌ চায়, ক, আর কত লৌ চায়!
হাসানের দু-মুঠোয় কোদালের হাতল। কিষান হাতের খরখরে আঙুলের উদোম বিবর্ণ নখগুলো হয়ে যায় বাঘের উদ্ধত নখর। এক লাফে কোদাল উঠে যায় আসমানে। বেত কাটার মতো খাড়া হয় বগলের পশমগুলো। ঝড়ের সঙ্গে আসমানে মাথা উড়িয়ে যেমন লড়াই করে দীঘল তালগাছ, তেমনি তার ঝাঁকড়া চুল বাতাসে নাচে তাথৈ তাথৈ। শব্দ। একটা মাত্র শব্দ। মেম্বারের মাথা দু’ফালা তরমুজ। লুটিয়ে পড়ে সে অন্ধকূপের হা করা মুখে। নড়েচড়ে বসে বোবা মানুষগুলো।’ (হরিপদ, ১৯৮৭ : ৯৬)
রাষ্ট্রে যখন বিচারহীনতার সংস্কৃতি গড়ে ওঠে, সমাজে তখন অনাচার, অপশক্তির কর্তৃত্ব বেড়ে যায়। মানুষ তখন রাষ্ট্রের প্রতি, বিচারব্যবস্থার প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলে, নিজের হাতেই আইন তুলে নেয়। অন্ধকূপে জন্মোৎসব 888sport alternative linkে সেরকমই বাস্তবতা তুলে ধরেছেন হরিপদ দত্ত। ইমেজ হিসেবে ব্যবহার করেছেন গ্রামের জঙ্গলময় অন্ধকূপ। অপদেবতা জিনে বিশ্বাস, যা প্রতীকী তাৎপর্যময় হয়ে উঠেছে। ‘সাপের গোপন, পিচ্ছিল ও বিষাক্ত পদচারণা সামাজিক অপশক্তির বিচিত্র কর্মধারার প্রতিরূপ।’ (রফিক, ১৯৯৭ : ২৬২) হাসান রুবিনার প্রেমকে 888sport alternative linkে শাখাকাহিনি হিসেবে ব্যবহারের তাৎপর্য হচ্ছে, রুবিনা শহরে গার্মেন্টসে চাকরি করতে এসে উপলব্ধি করেছে শহরের বিনষ্টির পতন-পচন। শরীরে ক্ষত নিয়ে গ্রামে ফিরে আসার মধ্য দিয়ে সামগ্রিক বিপর্যয়ের ইঙ্গিত বহন করে সে। দিনমজুর হাসানের সংলাপে সমাজের প্রতি তার আস্থাহীনতার পরিচয় স্পষ্ট – ‘বেবাক শালা ফক্কর। শিক্ষিৎ মানুষ সাচ্চা অয় বুঝি? চেয়ারম্যান, মেম্বার, ফিরোজ ডাক্তার, আনোয়ার মাস্টার, উপজেলার অফিসার, খাজনা আদায়ের নায়েব-তহশিলদার, বেবাক শালাই শিক্ষিত। ভালা কেডা? না, তাদের বিশ্বাস করা যায় না।’ (হরিপদ, ১৯৮৭ : ৯১)
ফরিদ আলীর খুন হয়ে যাওয়া এবং রাষ্ট্রীয় আইনের প্রতি হাসানের আস্থাহীনতাই তাকে আইন হাতে তুলে নিতে বাধ্য করে। এটা তার অস্তিত্ব রক্ষার প্রচেষ্টারই অংশ। এই বাস্তবতা থেকে হাসানকে আলাদা করে দেখার কোনো উপায় নেই।
অজগর (অখণ্ড, ২০০২) হরিপদ দত্তের বিশাল ক্যানভাসে রচিত একটি উচ্চাভিলাষী 888sport alternative link। বিশ শতকের দ্বিতীয় দশক থেকে শুরু করে আশির দশক পর্যন্ত বিস্তৃত সময়ের নানা ঘটনা, রাজনৈতিক মত ও পথপন্থির কথা 888sport alternative linkের কাহিনি পটে ধরা হয়েছে। সামন্ত জমিদার, রাজনৈতিক এলিট এবং তাদের দ্বারা নির্যাতিত শ্রেণি, ভূমিহীন কৃষক, চাষি, দিনমজুর বিচিত্র ধরনের চরিত্র এলেও হরিপদ দত্তের পক্ষপাত মূলত শোষিত-বঞ্চিত মানুষের দিকে। কংগ্রেস, মুসলিম লীগ, খেলাফত আন্দোলন, স্বদেশি আন্দোলন, স্বরাজ পার্টি, কমিউনিস্ট পার্টি, কৃষক প্রজা পার্টি ইত্যাদি দল ও মতে পরিচালিত ঘটনাসমূহ অজগর 888sport alternative linkের কাহিনিতে গভীরভাবে উঠে এসেছে। জমিদার বাবু, তার নায়েব নিবারণ চক্রবর্তী ও হেডমাস্টার হরিশচন্দ্র মুখার্জী প্রথম দিকে কংগ্রেসে ছিল। অন্যদিকে সৈয়দ শের আলী, আব্দুল কুদ্দুস, মফিজ চৌধুরী মুসলিম লীগে। কমিউনিস্ট পার্টি কৃষক-শ্রমিকদের মধ্যে শিকড় গাড়তে শুরু করে। প্রথম দিকে কাফের-নাস্তিক হিসেবে চিহ্নিত হলেও পরে কংগ্রেস, মুসলিম লীগের মধ্যবিত্ত শ্রেণি সম্পৃক্ত হওয়ার ফলে কমিউনিস্ট পার্টি রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী হয়ে ওঠে। তৎকালীন কৃষক প্রজা পার্টি নির্বাচনে জয়লাভ করলে আনন্দ বাগচীর নেতৃত্বে ‘কৃষক সমিতি’ নামে ক্ষুদ্র একটি দল গঠিত হয়। কৃষক প্রজা পার্টির সেøাগানই ‘কৃষক সমিতি’র সেøাগানে পরিণত হয়। হরিপদ দত্ত অজগর 888sport alternative linkের বিস্তৃত পরিসরে গভীর অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে রাজনৈতিক বিশ্বাসের নানা বাঁক বদলকে পরিচর্যা করেছেন। তারপর জাপানি বোমার আতঙ্ক বাঙালিকে ভীত করে তোলে, তখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু। আনন্দ বাগচীর দল ইংরেজদের পক্ষে যুদ্ধে ঘোর বিরোধী ছিল। ফলে তাকে আবার কারাবরণ করতে হয়। মুসলিম লীগ মুসলমানদের আলাদা রাষ্ট্রের প্রস্তাব করলে মুসলমানদের মধ্যে পাকিস্তান-আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। তখন তেভাগা আন্দোলনের নেতৃত্বে কমিউনিস্ট পার্টি। কংগ্রেসের মধ্যে হিন্দু জাতীয়তাবাদ এবং মুসলিম লীগের মধ্যে মুসলিম জাতীয়তাবাদী চেতনার দ্বন্দ্ব, দাঙ্গার ঘটনা দেশভাগকে অনিবার্য করে তোলে। এই রাজনৈতিক ডামাডোলে বাংলা অঞ্চল সম্পৃক্ত ছিল না। তবে ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর রাষ্ট্রভাষা প্রশ্নে বাঙালিদের বোধ-উপলব্ধি পাল্টে যায়। তাদের মধ্যে বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনার বিকাশ ঘটে, ফলে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে 888sport apps স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্রে পরিণত হয়। হরিপদ দত্ত কাহিনির প্রেক্ষাপটে ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ, কমিউনিস্ট পার্টির বিভক্তি, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে শেখ মুজিবুর রহমানের ছয় দফা আন্দোলনে যোগ দেওয়া কিশোর জয়নালের আহত হওয়ার মধ্য দিয়ে অজগর 888sport alternative linkের প্রথম খণ্ডের সমাপ্তি টানেন।
888sport alternative linkের দ্বিতীয় খণ্ডে দেখা যায়, মাওলানা ইমাম হোসেন সুলতানপুরী পাকিস্তানের অখণ্ডতা রক্ষার আহ্বান জানান এবং পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন চাওয়াকে কাফেরদের ষড়যন্ত্র হিসেবে আখ্যায়িত করেন। 888sport apps স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৪-এর দুর্ভিক্ষ, ১৯৭৫ সালে ইতিহাসের ঘৃণ্যতম পৈশাচিক হত্যাকাণ্ড, শাসনক্ষমতায় জিয়াউর রহমানের আবির্ভাব ঘটে। দেশের এই জটিল রাজনৈতিক পরিবেশ খালেক ও তার ছেলে জয়নালের দৃষ্টিতে উঠে আসে। মূলত উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে কাহিনিতে জয়নালের অবির্ভাব ঘটে। জয়নালের চরিত্রে স্বাধীনতা আন্দোলনের সক্রিয়তা এবং গরিব লোকের মুক্তি, স্বাধীনতার পূর্ণতা আসবে কীভাবে – এই প্রশ্ন দেখা দেয়। জয়নাল তার মাকে জানায়, সে শেখ মুজিব এবং লেনিন হতে চায়। গণতন্ত্র, না সমাজতন্ত্র? – এই প্রশ্নে সে দ্বিধাগ্রস্ত ছিল। 888sport alternative linkের শুরুতে গজারি বনের ধারে অজগর সাপের বিশাল খোলস পড়ে থাকতে দেখা যায়। গভীর রাতে প্রায়ই গজারি বনে শেয়ালের চিৎকার শোনা যেত। গ্রামের লোকেরা ভাবতো, গভীর বনে শিয়াল হয়তো অজগর সাপের কবলে পড়েছে।
গ্রামবসীরা রাতের বেলা গজারি বনে শেয়ালের আর্তনাদ শুনতে পেয়েছিল আচমকা। শেয়ালটা আর্তনাদ করে শেষে গোঙাতে গোঙাতে নীরব। কান পেতে শুনেছিল সবাই, সাহস হয়নি এগোতে। তবে কি গেল বর্ষায় পশ্চিমের ভাওয়ালের গজারি বন থেকে ভেসে আসা অজগর আস্তানা গেড়েছে এ জঙ্গলে! এমনটাই ভাবে কদম আলী। (হরিপদ, ২০০২ : ১১)
888sport alternative linkে অজগরের অস্তিত্ব আবিষ্কৃত হয় নাটকীয়ভাবে। ‘মুক্তিযুদ্ধের পর আওয়ামী লীগের গোঁড়া সমর্থকরা রাষ্ট্রীয় সম্পদকে তাদের পৈতৃক সম্পদ মনে করে সবকিছু অবৈধভাবে দখল করতে শুরু করে। এতে সাধারণ জনগণ হয় বঞ্চিত এবং নির্যাতিত। খালেকের পুত্র জয়নাল এ ধরনের ঘটনার প্রতিবাদ করে, ফলে রক্ষীবাহিনী তাকে ধরতে এলে সে গা 888sport app দেয়। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর, জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এলে সে আবার জনসম্মুখে বেরিয়ে আসে। চেয়ারম্যান শহীদ মাস্টারের সাথে হাত মেলায়। ব্যবসার লাইসেন্সের জন্য সে তার শিক্ষক ও চেয়ারম্যান শহীদ মাস্টারের টেবিলে মাথা নোয়ায়।’ (কাজী, ২০১৫ : ১৪৬) চেয়ারম্যান জয়নালকে আশীর্বাদস্বরূপ একটি ব্রিফকেস দেয়। ব্রিফকেস নিয়ে সে এগিয়ে চলে – ব্রিফকেসটা হাতে জয়নাল হাঁটে। এবার আর দ্রুত হাঁটতে পারছে না। শূন্য ব্রিফকেস হঠাৎ তার কাছে মনে হয় কি ভীষণ ভারি! ডান হাতটা বুঝি ব্রিফকেসের ভারে ছিঁড়ে পড়ছে। তবে কি অজগরটা এই ব্রিফকেসের ভেতরে? অন্ধকার পথে হঠাৎ হোঁচট খেয়ে উল্টে পড়ে সে। আর তখনই দু’ফাঁক হয়ে যায় ব্রিফকেসটা। রাতের অন্ধকারের চেয়েও কৃষ্ণবর্ণ বিশাল এক অজগর ব্রিফকেসটা থেকে বের হয়ে হা করে কামড়ে ধরে জয়নালের ডান হাতটা। বুক দীর্ণ করা গর্জনে শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে উঠে দাঁড়াতে চায় জয়নাল। দু-হাঁটুর উপর ভর করে বাম আর ডান হাতের মুঠো দিয়ে সজোরে চেপে ধরে সে অজগরের গলা। (হরিপদ, ২০০২ : ৩৫০)
ইতিহাস, রাজনীতি এবং বিশাল সময়ের প্রেক্ষাপটে হরিপদ দত্ত অজগর 888sport alternative linkের কাহিনি বিস্তৃত করলেও তাঁর লক্ষ্য ছিল শোষিত-বঞ্চিত মানুষের মুক্তি। রাজনৈতিক দল, মতবাদ, ক্ষমতার পালাবদল ঘটলেও সাধারণ শ্রমজীবী মানুষের মুক্তি ঘটেনি। স্বাধীনতা, এত রক্তপাত, প্রাণের বিনিময়, কোনো কিছুই বাঙালি জাতিকে সাম্য-মৈত্রীর মঞ্জিলে পৌঁছে দিতে পারেনি। 888sport appsের স্বাধীনতা-পরবর্তী সমাজবাস্তবতার স্বরূপ উন্মোচনে হরিপদ দত্ত যথেষ্ট দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। ক্ষমতাসীন দলের সীমাহীন ব্যর্থতা, অপশাসন, আগ্রাসন, অত্যাচর-নির্যাতনই মূলত অজগর সাপের প্রতীকী তাৎপর্যে রূপায়িত হয়েছে। সমাজের প্রতিটি মানুষই যেন রাজনীতি আক্রান্ত, রাজনৈতিক কর্তৃত্বের শিকার। পেশিশক্তির দাপটে নিষ্পেষিত। বিশাল হা করা এক অজগর। সমাজবাস্তবতাকে এভাবে প্রতীকায়নের মধ্য দিয়ে অজগর 888sport alternative linkটি নতুন একটি মাত্রা লাভ করেছে।
সহায়ক গ্রন্থপঞ্জি
১. হরিপদ দত্ত (১৯৮৬), ঈশানে অগ্নিদাহ, মুক্তধারা, 888sport app।
২. হরিপদ দত্ত (১৯৮৭), অন্ধকূপে জন্মোৎসব, মুক্তধারা, 888sport app।
৩. হরিপদ দত্ত (২০০২), অজগর, বর্ণায়ন, 888sport app।
৪. রফিকউল্লাহ খান (১৯৯৭), 888sport appsের 888sport alternative link : বিষয় ও 888sport live chatরূপ, বাংলা একাডেমি, 888sport app।
৫. কাজী তারেক পারভেজ (২০১৫), 888sport appsের 888sport alternative linkে গ্রাম-জীবন নির্বাচিত পাঁচজন ঔপন্যাসিক, জাতীয় 888sport live football প্রকাশ, 888sport app।


Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.