পটভূমি
বাংলার ইতিহাসে এক বিশাল ট্র্যাজেডি নেমে এসেছিল ১৯৪৭ সালে, যখন দুইশত বছরের ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের অবসানে ভারতবর্ষ তথা বাংলা যতটা না অর্জন করল স্বাধীনতা, তার চেয়ে বড়ভাবে সমাজসত্তা আঘাতপ্রাপ্ত হলো দেশভাগ দ্বারা। হিন্দু-মুসলিম বিভাজন অতিক্রম করে বাংলা তথা ভারতবর্ষের স্বাধীন অভিযাত্রা শুরু হলো না, বরং বিভাজন পেল রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি এবং সেই ভিত্তিতে ঘটলো দেশভাগ, হিন্দুর অংশ ও মুসলমানের অংশ। সাধারণ মানুষ যে এই ভৌগোলিক বিভাজনের তাৎপর্য ভালোভাবে বুঝেছিল তা বলা যাবে না, রাজনৈতিক নেতৃত্ব তাদের গোষ্ঠীস্বার্থ উদ্ধার এবং সংঘাতের আশু প্রতিকারের উপায় হিসেবে দেশভাগকে শিরোধার্য করেছিল। ফলে স্বাধীনতা অর্জিত হলো বটে, তবে এমন তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা মøান হয়ে গেল মানচিত্রে বিভাজন দ্বারা, স্বাধীনতা জনমানসে হয়ে উঠল এবং হয়ে আছে ‘পার্টিশন’ শব্দবন্ধ। এই পার্টিশনের সময় যাঁদের জন্ম, এর কিছুটা আগে বা পরে, তাঁদের আমরা অভিহিত করতে পারি ‘মিডনাইট্স্ চিলড্রেন’ হিসেবে। ঝড়ের রাতের গভীর অন্ধকারে তাঁদের জন্ম এবং অন্ধকার থেকে আলোয় উত্তরণের জন্য চলেছে তাঁদের জীবনসাধনা। অন্যদিকে পার্টিশনকে আশীর্বাদ হিসেবে গ্রহণ করার মতো মানুষও ছিল অনেক, যাঁরা বিভাজনকে আরো পোক্ত সর্বগ্রাসী চিরস্থায়ী করে তোলার জন্য প্রাণপাত করেছে। প্রথম দলের সঙ্গে ছিল সংস্কৃতি, দ্বিতীয় গোষ্ঠীর মুখে ছিল ধর্মের বুলি, আর হাতে ছিল অস্ত্র। এহেন স্বাধীনতার পর ভারতীয় উপমহাদেশ ৭৫ বছর অতিক্রম করলেও সাম্প্রদায়িক বিভাজন ও ধর্মীয় সংঘাত থেকে আজো মুক্তি পেতে পারেনি, বরং সমাজ আরো গভীর হতাশার পঙ্কে নিমজ্জিত হচ্ছে কি না সেই প্রশ্ন এখনো আমাদের তাড়িত করে ফেরে। দেশভাগের নেতিবাচকতা থেকে উত্তরণ কীভাবে সম্ভব সেটা আমাদের বহুভাবে বিবেচনা করতে হবে, তার অনুষঙ্গ হিসেবে আরো বহুবিস্তৃত কর্মে সবাইকে সক্রিয় হতে হবে। এই যদি হয় উপলব্ধি, তবে বিভাজন অতিক্রমকারী সম্প্রীতির সেতুবন্ধন তৈরিতে জীবনপাত করা ছাড়া গত্যন্তর থাকে না। তেমন বোধ ও কর্মে সক্রিয় ব্যক্তিসত্তা তো খুব বেশি দেখা যায় না, সেক্ষেত্রে মধ্যরাতের সন্তান আবুল হাসনাত, আমাদের তথা আমার হাসনাত ভাই ছিলেন অত্যুজ্জ্বল মানব। এই নিরিখেই তাঁকে ঘিরে বর্তমান আলোচনার অবতরণিকা, যেখানে ষাটের দশকের পূর্ববাংলা থাকবে আমাদের বিবেচনার কেন্দ্রে।
আবুল হাসনাতের জন্ম 888sport appয়, মাতুলালয়ে ১৯৪৫ সালের ১৭ই জুলাই, 888sport appতে তাঁর জন্ম, 888sport appয় বেড়ে-ওঠা এবং 888sport appতেই জীবনপাত। তাঁর মাতুলালয়ে উর্দু ভাষার চল ছিল, 888sport appর সংস্কৃতির বৈচিত্র্যের যা ছিল এক উজ্জ্বল প্রকাশ। পুরনো 888sport appর অনেক পরিবার এবং মহল্লার সরদারদের মধ্যেও দোভাষী বোলচালে সিদ্ধতা ছিল। আগা নবাব দেউড়ি, বেচারাম দেউড়ি ঘিরে উত্তর-ভারতীয় সংস্কৃতির সঙ্গে দেশজ ধারার একটি মিলন-মিশ্রণ ঘটেছিল, যা আবুল হাসনাত মর্মগতভাবে উপলব্ধি করতেন। যে-কারণে 888sport appর সংস্কৃতিতে দেহাতি মানুষদের মধ্যে রঙ্গতামাসার বোধ এবং মিশ্রভাষারীতি যে রূপ প্রকাশ পেত, সেটা নিয়ে অন্যদের তরল রসিকতা তাঁকে পীড়িত করত। পরে তিনি লিখেছিলেন, ‘888sport appর আদিবাসীদের ভাষায় যে মৌলিকত্ব তার মধ্যে পরিহাস, আনন্দ-বেদনার যে আভাস পাই আমরা, তা সমাজতাত্ত্বিক ভাষাবিদদের গবেষণায় নবমাত্রা সঞ্চার করবে – এ ব্যাপারে সন্দেহ নেই। এ ভাষা গড়ে উঠেছে কখনো 888sport app ও পার্শ্ববর্তী এলাকাকে কেন্দ্র করে, বিশেষত বুড়িগঙ্গা নদীর ওপারে বর্ধিত কেরাণীগঞ্জ ও আটি ভাওয়ালের সঙ্গে এই ভাষার কিছুটা সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়। এ-অঞ্চলের মানুষ অবশ্য উর্দু ও ফার্সি শব্দ ব্যবহার তুলনামূলকভাবে কম করে। বাংলার সঙ্গে আরবি-ফার্সি-উর্দু শব্দের অনায়াস প্রয়োগে এক ভিন্ন আদল পেয়েছিল আদি 888sport appর এ-ভাষা।’ হাসনাতভাইয়ের সঙ্গে মিলে আমিও 888sport appর ভাষার মাধুর্য খুঁজে পেতাম 888sport appর সর্দার পরিবারের সন্তান নাট্যকার সাঈদ আহমদের সঙ্গে আলাপচারিতায়। সাঈদ আহমেদ 888sport appর মিশ্র বোলচালে অভ্যস্ত ছিলেন এবং তা প্রকাশে অকুণ্ঠ। অন্যদিকে আবুল হাসনাত নিজ ভাষা-উৎস নিয়ে কুণ্ঠিত থাকতেন স্বভাবগত কারণে, অন্যদের তাচ্ছিল্য তাঁকে পীড়িত করত, কাউকে বোঝাতে পারতেন না, সে-কারণে বোধকরি পোশাকি ভাষাতে তিনি নিজেকে আবৃত করে রাখতেন।
দেশভাগের পরও কিছুকাল পুরনো 888sport appয় ব্রাহ্ম-সমাজের উপস্থিতি সংস্কৃতিতে আরেক প্রভাব সঞ্চার করেছিল। আবুল হাসনাতের 888sport sign up bonusগ্রন্থ হারানো সিঁড়ির চাবির খোঁজে থেকে আমরা তার ইঙ্গিত পাই। তিনি একান্তভাবে মায়ের সন্তান, সেই প্রসঙ্গে লিখেছেন, ‘মায়ের কৈশোরে আগা নবাব দেউড়িতে উকিল সাহেবের ব্রাহ্ম মেয়েরা যখন স্কুলে যেতেন কিংবা সন্ধ্যাবেলায় গান ও নাচ শিখতেন বা কখনো-সখনো প্রার্থনা সঙ্গীতে অংশ নিতেন, মা খড়খড়ি দিয়ে তখন অপলক চেয়ে থাকতেন। তাঁরও ইচ্ছে হতো সেই ব্রাহ্ম মেয়েদের মতো কিছু করতে।’ সেই সুযোগ অবশ্য পর্দানসিন মুসলিম পরিবারের কন্যা কখনো পাননি, কিন্তু বাঙালির মিশ্র সংস্কৃতি-চেতনা কখনো হারাননি।
আদি 888sport appর মিশ্র জীবন ও সমন্বিত সংস্কৃতির মধ্যে যে শক্তিময়তা সেটা প্রবলভাবে বাধাগ্রস্ত হলো ১৯৫০ সালের দাঙ্গায়, যা আবুল হাসনাতের বাল্যের সবচেয়ে অভিঘাতসম্পন্ন 888sport sign up bonus। তিনি যথার্থভাবে মধ্যরাতের সন্তান, দেশভাগ যে সাম্প্রদায়িকতা ও বিভাজন উস্কে দিলো, সেই বিষবৃক্ষের হলাহল পূর্ববাংলার সমাজ পান করলো ১৯৫০ সালে। দাঙ্গার দিনগুলি যেমন ছিল সহিংসতা ও নিষ্ঠুরতায় ভরা, তেমনি দাঙ্গা-পরবর্তী বিভাজিত জীবন সমাজকে নানাভাবে দীর্ণ ও ক্ষতিগ্রস্ত করে তুলল। এসবই আবুল হাসনাতের বাল্যের 888sport sign up bonus, পারিবারিক ও সামাজিকভাবে যেখান থেকে আহরিত হয়েছে তাঁর অসাম্প্রদায়িক জীবন-চেতনা, যা বাঙালির সকল সুকৃতির উত্তরাধিকার বহন করতে উদ্গ্রীব। কিঞ্চিৎ দীর্ঘ হলেও আবুল হাসনাতের 888sport sign up bonusগ্রন্থ থেকে উদ্ধৃতিদানের লোভ সংবরণ করা দায়। তিনি লিখেছেন :
যুগিনগরের মূল রাস্তা থেকে আরেকটি সরু গলি ভেতরে ঢুকেছে। এই সরু গলিতেই তিনটি হিন্দু পরিবার থাকত। সচ্ছল স্বর্ণকার একটি ধনাঢ্য পরিবার কিছুটা স্বাতন্ত্র্য বজায় রেখে চলত। এই পরিবারের কর্ত্রী পূজা-আর্চা নিয়ে সর্বদা ব্যস্ত থাকতেন। পাটুয়াটুলিতে তাঁদের স্বর্ণের দোকান ছিল। দুই ঘর পরে একটি টিনের ঘরে থাকতেন দুই বিধবা। ছাদ ছিল টিনের, ঘরগুলো মাটির। ঠাকুরমা, মা ও শুকশারী নামে এক কিশোরী নিয়ে তিনজনের সংসার ছিল। তাঁদের বাড়িতে ঢেঁকি ছিল। এঁরা আতপ চাল গুঁড়ো করে ঠাটারিবাজারের মিষ্টির দোকানে সরবরাহ করতেন। এই চাল কখনো ঢেঁকিতে, কখনো শিলপাটায় তাঁরা বেটে নিতেন। এ দিয়েই তাঁরা সংসার নির্বাহ করতেন। তাঁদের বাড়ির সামনে খেলতে গেলে কখনো-সখনো স্নেহভরে শুকশারীর মা আমাদের মুড়ির মোয়া দিতেন। এই দুজন বিধবা পূজা-আর্চায় মনোনিবেশ করলেও গলির মুসলিম ছেলেমেয়েদের স্নেহ করতেন। তাঁদের বাড়ির ভেতরে একটি পূজাঘর ছিল। পূজাঘরটি তাঁরা আগলে রাখতেন। আমাদের এই ঘরে প্রবেশাধিকার ছিল না। সাতসকালে তাঁরা ওয়ারী এলাকায় যেতেন পূজার জন্য ফুল কুড়াতে। এঁদের ট্র্যাজেডিময় জীবনের কথা মনে পড়লে এখনো এই বয়সে রাতের ঘুম চলে যায়।
তারপর তিনি লিখেছেন 888sport appর মিশ্র সংস্কৃতির আরেক দিক নিয়ে :
এই বাড়িটির পরেই শিয়া সম্প্রদায়ের উর্দুভাষী এক পরিবার ছিল। তাদের সঙ্গে আমাদের পরিবারের সখ্য হয়েছিল। মহররমের চাঁদ ওঠার পর ওই বাড়িটি শিয়া সম্প্রদায়ের কয়েক ঘর মহিলা নিকটবর্তী এলাকা থেকে এসে দশই মহররম অবধি সন্ধ্যায় সমবেত হতেন এবং হাসান-হোসেনের বিয়োগান্ত জীবন সম্পর্কে মর্সিয়ার মতো বর্ণনা করতেন। সে দশদিন তাঁরা কালো পোশাক পরতেন। দেশভাগের পর তাঁরা দিল্লির করলবাগ থেকে 888sport appয় এসে থিতু হয়েছিলেন। এদের বাড়ির দুজন পুরুষ চাকরি করতেন রেলওয়েতে। মহিলারা দেখতে খুবই সুন্দরী ছিলেন। এক পর্যায়ে শোক প্রকাশের অভিব্যক্তি হিসেবে দাঁড়িয়ে বুক চাপড়াতেন।
তাঁদের সুরেলা কণ্ঠের বিলাপ আমার কিশোরমনে প্রবল ছাপ ফেলেছিল। উৎকর্ণ হয়ে বর্ণনা শুনতাম উর্দুতে। তাঁদের বর্ণনা হৃদয়ে গেঁথে গিয়েছিল। এই বর্ণনার মধ্যে সুর করে সমবেত কণ্ঠে যখন বলত, হায় মেরা সৈয়দকে মারা, আমার হৃদয়কে আর্দ্র করত। হাসান-হোসেন এবং এজিদের বিবরণ, অনেক রাত অবধি এ দুটি লাইন গুঞ্জরিত হতো মনে।
ষাটের দশক
সাতচল্লিশে পূর্ববাংলা যে এক কঠিন বেড়াজালে আটক হলো সেটা টের পাওয়া গেল অচিরেই। নবপ্রতিষ্ঠিত পাকিস্তানের শাসনকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা পেল পশ্চিমে এবং পূর্বের ওপর আধিপত্য আরোপের চেষ্টা শুরু হলো নানাভাবে। পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক নেতৃত্বও অনেক ক্ষেত্রে ছাড় দিলেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে। লিয়াকত আলী খান ও আরো কয়েকজন নেতা ব্যবস্থাপক সভার সদস্য নির্বাচিত হলেন পূর্ব পাকিস্তানের কোটা থেকে। পূর্ববাংলার প্রশাসনেও চিফ সেক্রেটারিসহ বেশ কজন সচিব প্রেরিত হলেন পশ্চিম পাকিস্তান থেকে। পূর্ব বাংলার বাঙালি স্বাধীনতা পেয়েছে, তবে শাসন ক্ষমতা পায়নি, এটা প্রথম বোঝা গেল রাষ্ট্রভাষা প্রশ্নে। ১৯৪৮ সালে 888sport appর রেসকোর্স ময়দানে গভর্নর জেনারেল মুহম্মদ আলি জিন্নাহ একমাত্র উর্দুকেই পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা ঘোষণার বিপরীতে ছাত্রসমাজের দিক থেকে প্রতিবাদ ধ্বনিত হয়েছিল ঠিকই, তবে তাতে 888sport appবাসীর খুব সায় ছিল না। কিন্তু ’৫২-র ফেব্রুয়ারিতে যখন ভাষার দাবিতে মিছিলরত ছাত্রদের ওপর গুলিবর্ষণ ঘটে এবং মাতৃভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আত্মাহুতি দেয় ছাত্র-জনতার প্রতিনিধিরা, তখন গোটা শহর ও দেশবাসী ক্ষোভে ফেটে পড়ে। তারপরে ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে মুসলিম লীগের ভরাডুবি, গণতান্ত্রিক পরিবেশে বাঙালি সংস্কৃতি চর্চার যে-প্রসার তা প্রবলভাবে বাধাপ্রাপ্ত হয় ১৯৫৮ সালে সামরিক শাসন জারি এবং বাক্-স্বাধীনতা হরণ ও সবধরনের রাজনৈতিক সভা-সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ দ্বারা। পঞ্চাশের দশকে বাঙালির জাগরণের কাণ্ডারি ছিলেন মূলত ছাত্র-তরুণেরা, ভাষা-আন্দোলনে যাঁরা ছিলেন পরিচালক ও রূপকার। এই আন্দোলন থেকে উঠে আসে এক ঝাঁক নাম যাঁরা বয়সে একান্ত যুবা, তবে তাঁদের হাতেই 888sport live footballিক-সাংস্কৃতিক-সাংগীতিক ও 888sport live chatধারায় রূপায়িত হয়েছিল ভাষা-আন্দোলন। হাসান হাফিজুর রহমান, আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী, আলতাফ মাহমুদ, মুর্তজা বশীর, আহমদ রফিক, গাজিউল হক, জহির রায়হান, শেখ লুতফর রহমান এমনি আরো অনেক নাম উল্লেখ করা যায়। তাঁরা পঞ্চাশের দশকের পূর্ববাংলার জাগরণের রূপকার, তবে তাঁদের বিচ্ছিন্ন ও বিকলাঙ্গ করে দিলো ১৯৫৮ সালের সামরিক শাসন যার মূল লক্ষ্যই ছিল পূর্ববাংলার জাতীয় আন্দোলন দমন। নেমে এসেছিল এক গভীর অন্ধকার, যার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রতিরোধের কোনো সুযোগ ছিল না। সেই বৈরী সময়ে প্রতি বছর 888sport cricket BPL rateে ফেব্রুয়ারি ভিন্নতর সাংস্কৃতিক সত্তা নিয়ে জেগে উঠবার বাণী সঞ্চার করেছিল। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের বিজয়ের পর নভেরা আহমদ-হামিদুর রহমানের যৌথ নকশায় নির্মিত হয়েছিল শহিদ মিনার। সামরিক শাসনের আওতায় যখন সব নিষিদ্ধ তখন ধীরে ধীরে ছাত্রসমাজের যৌথ উদ্যোগে আপাতদৃষ্টিতে অরাজনৈতিক কিন্তু গভীরভাবে প্রতিবাদী সুর নিয়ে শুরু হয় 888sport cricket BPL rateে উদযাপন, যার দুই অনুষঙ্গ পঞ্চাশের দশক থেকেই পাওয়া গিয়েছিল।
প্রথমত নগ্নপদ প্রভাতফেরি এবং দ্বিতীয়ত সংগীতের মাধ্যমে 888sport app download for android ও 888sport apk download apk latest version নিবেদন। সেইসঙ্গে ১৯৬১ সালে রবীন্দ্রজন্মশতবার্ষিকী ঘিরে আয়োজিত উৎসব 888sport app ও 888sport appর বাইরে নতুন প্রাণপ্রবাহ সঞ্চার করল।
ষাটের দশকের বাস্তবতার পটভূমিকায় আবুল হাসনাতকে বিচার করবার রয়েছে। ১৯৫৮ সালে পাকিস্তানে সামরিক শাসন জারি এবং জেনারেল আইয়ুব খানের সর্বময় ক্ষমতা গ্রহণ পরিস্থিতি একেবারে পাল্টে দিয়েছিল। দ্বিজাতিতত্ত্বের সাম্প্রদায়িক মতাদর্শের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত পাকিস্তান রাষ্ট্রে বাঙালি সত্তা ও বাঙালি জনগণের অধিকার নস্যাৎ করা ছাড়া শাসকদের গতি ছিল না। বাঙালিরা এই রাষ্ট্রে 888sport free betগরিষ্ঠ এবং তাদের মধ্যে জাতিচৈতন্য প্রবল, যেমনটি সেই সূচনাকালেই বলেছিলেন জ্ঞানী অধ্যাপক ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্, আমরা হিন্দু বা মুসলমান যেমন সত্য, তার চেয়ে বড় সত্য আমরা বাঙালি, মা-প্রকৃতি স্বয়ং নিজের হাতে আমাদের কপালে এই তিলকরেখা এঁকে দিয়েছিল। ফলে পাকিস্তানি মতাদর্শের বিরুদ্ধে বাঙালিত্বের লড়াই শুরু হয়েছিল রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাকালেই। ১৯৪৮-এ এর উন্মেষ এবং ১৯৫২-এর ভাষা-আন্দোলনে এর অনন্য উদ্ভাসন। সেই পথ বেয়েই ১৯৫৪ সালের প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে মুসলিম লীগের ভরাডুবি আমরা প্রত্যক্ষ করি। অন্যদিকে যুক্তফ্রন্টের বিজয় রাজনৈতিকভাবে যতটুকু ফলপ্রসূ হয়েছিল তার চেয়ে অনেক বেশি প্রভাবসঞ্চারী হয়েছিল সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে, বহুমুখী উদ্যোগ, নীতি ও কর্মধারায়। সামরিক শাসন তাই গণতান্ত্রিক জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক শক্তিকে কেবল আঘাত হানে, সাংস্কৃতিক জাগরণকে নস্যাৎ করবার জন্য নানা পদক্ষেপ নিয়েছিল। রাজনৈতিক দল ও তৎপরতা নিষিদ্ধ ঘোষিত হলো, নেতাদের প্রায় সবাই বন্দি হলেন কারাগারে, বাক-স্বাধীনতা ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণ করা হলো, আরোপিত হলো কঠোর সেন্সরশিপ। প্রত্যক্ষ এইসব পদক্ষেপের পাশাপাশি কতক নীতিগত ব্যবস্থাও গ্রহণ করলো সামরিক-আমলা শাসকগোষ্ঠী। ১৯৬২ সালে ভারতীয় live chat 888sport আমদানি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলো এবং ১৯৬৫ সালে ভারতীয় 888sport free bet login আমদানি রুদ্ধ করা হলো। পূর্ববাংলার সাংস্কৃতিক পরিবেশ ক্রমে সংকীর্ণ ও শ্বাসরুদ্ধকর হয়ে আসছিল, মুক্ত আবহ তো ছিলই না, মন-মানসিকতা বিকাশে বাইরের দুনিয়ার সঙ্গে যোগাযোগেও ছিল অনেক বাধা ও বিপত্তি। তবে পরিস্থিতি একেবারে একতরফা ছিল না, গোপনে ও নিভৃতে চলছিল রাজনৈতিক শক্তি আহরণ ও সংগঠনের কাজ। বৈরী এই সময়ে ১৯৬১ সালে রবীন্দ্রজন্মশতবর্ষ উদ্যাপনের ডাক নানা ধরনের সাংগীতিক-সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে বাঙালি সত্তায় নবপ্রাণ সঞ্চার করল। জায়মান এই প্রতিরোধের সঙ্গে কৈশোর-যৌবনের সন্ধিক্ষণে আলোড়িত আবুল হাসনাতের যে-সম্পৃক্তি ঘটল সেই আলোকে তাঁকে দেখা প্রয়োজন। ১৯৬২ সাল থেকে তিনি প্রগতিকামী সংগঠন ছাত্র ইউনিয়নের সঙ্গে যুক্ত হন, মূলত গোপন কর্মকাণ্ড ও সাংস্কৃতিক উদ্যোগ আয়োজনে। তাঁর কবিমন, উদাসী বাউল সত্তা এবং 888sport live footballে মগ্নতা এভাবেই বুঝি অন্তরে-বাহিরে এক সাযুজ্য তৈরি করেছিল। ছাত্র সংগঠনের সূত্র অবলম্বন করে তিনি ছায়ানটের সঙ্গেও জড়িত হন কনিষ্ঠ কর্মী হিসেবে, রবীন্দ্রনাথের গান-নাটক-888sport live footballে অপার মুগ্ধতা নিয়ে। রবীন্দ্রজন্মশতবর্ষ উদ্যাপনের পরম্পরা বহন করে প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল ছায়ানট এবং সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে তা ক্রমে প্রভাবসঞ্চারী হয়ে ওঠে। অন্যদিকে ১৯৬৩ সাল থেকে আইয়ুবের শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে ছাত্রদের আন্দোলন ছাত্রসমাজে প্রতিরোধের স্পৃহা বলবান করে তোলে। এরপর নানা ঘটনাধারার মধ্য দিয়ে জাতি জাগরণী মন্ত্রে ক্রমে দীক্ষিত ও বলবান হয়ে ওঠে এবং পৌঁছে যায় ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানে, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে। বাঙালি জাতির এই পথপরিক্রমণের সাক্ষী আবুল হাসনাত, অপার মুগ্ধতা নিয়ে তিনি শরিক এর সংগঠনে, নিজেকে উজাড় করে দিয়েছেন জাগরণী আয়োজনে, যতটা না প্রকাশ্যে ও নেতৃত্বে, তার চেয়ে বেশি অপ্রকাশ্যে ও অন্তরালে।
888sport cricket BPL rateে ও রবীন্দ্রনাথ – এই দুই সাংস্কৃতিক আয়ুধ নিয়ে ষাটের দশকে পূর্ববাংলার যে-জাগরণ তার অনন্য প্রকাশ ঘটেছিল আবুল হাসনাতের মধ্যে। সাংস্কৃতিক-সাংগীতিক প্রতিরোধের কর্মী হয়ে উঠেছিলেন তিনি এবং এখান থেকেই নেন তাঁর জীবনের অপ্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ও দীক্ষা। ছাত্ররাজনীতি ও গোপন কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে তাঁর সংযোগ সেই ১৯৬২ সাল থেকে, গোপীবাগে অনুষ্ঠিত তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের গোপন সভায় যোগদান সূত্রে। এখান থেকেই বিকশিত হয় সতীর্থ সমমনাদের এক বৃত্ত, সাইফউদ্দীন আহমেদ মানিক, পঙ্কজ ভট্টাচার্য, মতিউর রহমান, মালেকা বেগম, ফওজিয়া মোসলেম ও আরো অনেকে মিলে। এই বৃত্ত ছিল ক্রমপ্রসারমান এবং এখানে একে একে গণ্ডিবদ্ধ হন আরো অনেক ছাত্র-তরুণ। আবুল হাসনাত রাজনীতির অঙ্গীকার ধারণ করলেও রাজনীতিক সত্তা তাঁর ছিল না, সেই ভূমিকা পালনেও ছিলেন একান্ত অনাগ্রাহী। ষাটের দশকের এই সময়টাতে বিশ্বজুড়ে ছাত্র-তরুণেরা ঝুঁকছিল সমাজতন্ত্রের দিকে, দেশে দেশে জাতীয় মুক্তি আন্দোলন বাঙালির মুক্তিপথ রচনার প্রয়াসে জোগাচ্ছিল প্রণোদনা। ১৯৬২ সালেই সামরিক আধিপত্যের বিরুদ্ধে ছাত্র-সমাজের ক্ষোভ প্রকাশ্যে বিস্ফোরিত হয়।
আশু-উপলক্ষ ছিল হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীকে গ্রেফতার, তার সঙ্গে যুক্ত হতে লাগলো মৌলিক অধিকার আদায়ের প্রশ্ন।
আইয়ুব-ঘোষিত শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে ক্ষোভ দেশব্যাপী বিস্তার পায় এবং জাতীয় তথা বাঙালিত্বের চেতনাবহ প্রতিরোধ হয়ে উঠতে থাকে আরো সংহত ও প্রভাবশালী। বামপন্থী ছাত্র সংগঠনের কর্মীরা এই আন্দোলনে সাংস্কৃতিক মাত্রা জোগাতে থাকে 888sport cricket BPL rateে উদ্যাপন-বাংলা নববর্ষ পালন ও আরো নানা উপলক্ষ ঘিরে। ক্রমে ক্রমে জাতীয় মুক্তি আন্দোলনের প্রধান রাজনৈতিক নেতা হয়ে উঠলেন শেখ মুজিবুর রহমান। বামপন্থীরা জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত না হলেও সমান্তরাল সাংস্কৃতিক আন্দোলন পরিচালনায় তাঁরা পালন করেন বিশেষ ভূমিকা। এখানেই আমরা দেখি আবুল হাসনাতকে, তাঁর অসাধারণ নিষ্ঠা, পরিশ্রমের ক্ষমতা এবং উদাসী বাউল চরিত্র নিয়ে তাঁর সম্পৃক্তি ও সক্ষমতা তাঁকে করে তোলে সাংস্কৃতিক আন্দোলনের অপরিহার্য কুশীলব, যাঁরা পাদপ্রদীপের সামনে নেই কিন্তু কাঠ-খড় পোড়াবার আয়োজনে সদা অগ্রণী।
ষাটের দশকের সাংস্কৃতিক জাগরণের পটভূমিকায় আবুল হাসনাতকে বিবেচনায় নিলে আমরা যেমন এই মানুষটিকে বুঝতে পারবো, তেমনি জানতে পারবো সেই আশ্চর্য দশককে, যখন বাঙালি অন্ধকার মোচন করার আলোর মশাল জ্বালিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে গিয়েছিল মুক্তির চূড়ান্ত লড়াইয়ে। এই ঐক্য কেবল রাজনীতির ঐক্য ছিল না, ৬-দফা ও ১১-দফার মিলনক্ষেত্র ছিল না, ছিল রাজনীতি ও সংস্কৃতির সম্মিলন।
সংস্কৃতি বাঙালিকে জুগিয়েছিল আত্মপরিচয়ে স্থিত হওয়ার ভিত্তি, আর রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করল বাঙালির অধিকার প্রতিষ্ঠার মহামিলন ক্ষেত্র। এই সময়ে আবুল হাসনাতকে খুঁজতে হবে নিভৃতে, পর্দার অন্তরালে, মঞ্চের পেছনে, যেখানে তিনি স্বচ্ছন্দ, তাঁর স্বভাবগত বৈশিষ্ট্য ও জীবন দৃষ্টিভঙ্গির কারণে। তার সঙ্গে এবং এই সময়ের সঙ্গে আমার সম্পৃক্তি এতো নিবিড় যে সেই ব্যক্তিগত কথনের ফর্দও হয়ে যাবে সুদীর্ঘ এবং সেখানে নানা কথার ভিড়ে মানুষটির প্রকৃত তাৎপর্য বোধকরি খুঁজে পাওয়া যাবে না। কত কাজের সঙ্গে কতভাবেই না তিনি জড়িত। ষাটের দশকের সাংস্কৃতিক জাগরণে তাঁর মতো করে তিনি ভূমিকা পালন করেছেন, অন্যদিকে ষাটের দশক তাঁকে নির্মাণ করেছে, যে-সত্তা তিনি বিসর্জন দেননি আজীবন, বিশেষভাবে স্বাধীনতা-পরবর্তী পঞ্চাশ বছরে নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যে বহন ও বিকশিত করেছেন যৌবনের সেই মানস, আশ্চর্য এক সময়ের আশ্চর্য সন্তান হিসেবে। তাঁর জীবনের নানা সাফল্য ও অবদান যারা বিবেচনা করতে চান তাদের তাই তাকাতে হবে এই সময়ের তরুণ আবুল হাসনাতের দিকে। সেই প্রতিকৃতি আঁকার ক্ষমতা আমার নেই, স্বল্পপরিসরে বিন্দুতে সিন্ধু ধারণ করা দুরূহ, তেমন দক্ষতা আমার জানা নেই, মনে হয় আমাদের বুঝি প্রয়োজন একজন শিবনাথ শাস্ত্রীর, যিনি লিখবেন ‘আবুল হাসনাত ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ’।
ষাটের দশকের দ্বিতীয়ার্ধ আবুল হাসনাতের পরিবারের জন্যও খুব সুখকর সময় ছিল না। পিতা তাঁর সচ্ছল ব্যবসা হারিয়েছিলেন অংশীদারদের বিশ্বাস-হন্তার কারণে। ছোটখাটো পেশায় তিনি বড় পরিবারের বোঝা টানছিলেন একাই। ব্যবসায় ব্যর্থতা তাঁকে অনেকটা ভেতরগোঁজা করে তুলেছিল। বাবার এই আত্মগত আচরণ ও মায়ের সাংস্কৃতিক মানস, দুইয়েরই উত্তরাধিকার বোধ করি বহন করেছেন আবুল হাসনাত। সেইসঙ্গে ছিল তাঁর দায়বদ্ধতা, আট ভাইবোনের সবার বড় হিসেবে, আর তাই ছাত্র সংগঠনের কাজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি ১৯৬৫ সাল থেকে সংবাদে বার্তা বিভাগে কনিষ্ঠ কর্মী হিসেবে কাজ শুরু করেন। তাঁর পরিশ্রম করার ক্ষমতা অবিশ্বাস্য, তিনি আর সবার সঙ্গে মিলে সংগঠনের সব কাজ করছেন, আবার একসময় টুক করে যাচ্ছেন কাউকে কিছু জানান না দিয়ে, সংবাদে শিফট ডিউটিতে যোগ দিতে। এন্তার কাজের সঙ্গে মিলে আছে পঠন-পাঠন, আমরা উন্মুখ হয়ে থাকতাম হালফিল 888sport live footballপাঠের জন্য। ভারতীয় বই পত্রপত্রিকার প্রবেশ রুদ্ধ করে দেওয়ার পর চোরাপথে কিংবা বিকল্প ব্যবস্থায় সেই বাধা অতিক্রম করে 888sport free bet login হাজির হতো আমাদের কাছে, একজনের বই বহুজন ভাগ করে নিতাম। হাসনাত ভাই পার্টির প্রথাবদ্ধ 888sport live footballধারায় অবগাহন করেছেন ঠিকই, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় ছিল তাঁর প্রিয় লোক, তবে তাঁর বাইরেও বিষ্ণু দে তাঁকে টানে, ‘জনসমুদ্রে জেগেছে জোয়ার, হৃদয়ে আমার চড়া’ বুঝি তাঁরই অন্তরের আকুতি। তাঁর আরেক প্রিয় কবি নরেশ গুহ, ‘দূরে এসে ভয়ে থাকি, পাছে সে এসে ফিরে চলে যায়’। 888sport app download apkও লিখেছেন আবুল হাসনাত, 888sport live footballে একান্ত সমর্পিত। আমার মনে পড়ে সূর্যজ্বালা অথবা আর কোনো 888sport cricket BPL rateে সংকলনে তাঁর লেখা একটি গল্প, ফাল্গুনে আমের বোলে পরশ দিয়ে গল্পের শেষ, প্রতীকী ব্যঞ্জনায় উদ্ভাসিত। তো এই মানুষটি, সদ্য-তরুণ স্বপ্নভুক কবি ও কর্মী, 888sport appর আদিবাসী সংস্কৃতির শ্রেষ্ঠত্বের প্রতিনিধি মধ্যবিত্ত সন্তান কী বিপুল কর্মযজ্ঞ দুহাতে সম্পাদন করে নির্লোভ নির্মোহভাবে জীবনপথে এগিয়ে গেছেন, এর কাব্য হয়ে উঠতে পারে সেই সময়ের স্পন্দন বোঝার অবলম্বন। কাজের ক্ষেত্র যদি বিবেচনা করি, তবে প্রথমে দেখি ছাত্র ইউনিয়নে তাঁর ভূমিকা, আন্দোলন তখন নানাভাবে বিস্তৃতি পাচ্ছে, আর প্রতি ক্ষেত্রে রয়েছে তাঁর সম্পৃক্ততা ও ভূমিকা। সেইসঙ্গে আছে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্তি, 888sport cricket BPL rateের সংকলন প্রকাশ, মঞ্চে কিংবা খোলা ময়দানের সংগীত-নৃত্যানুষ্ঠান, যা পরে সংস্কৃতি সংসদ ঘিরে অর্জন করে বিশিষ্টতা ও বিশালতা। রয়েছে সংবাদকেন্দ্রিক তাঁর কতক বিশেষ যোগাযোগ, শুভ রহমান, মোজাম্মেল হোসেন, শহীদুল ইসলাম ও আরো অনেক বন্ধুজনের সঙ্গে। এই বৃত্ত থেকে তিনি যুক্ত হয়েছিলেন সৃজনী 888sport live football সংসদের সঙ্গে, যাদের উদ্যোগে সোমেন চন্দ আবার ফিরে এসেছিলেন 888sport live footballভুবনে।
আবুল হাসনাতের উপস্থিতি ও ভূমিকা কতভাবে যে চারপাশের মানুষদের ছুঁয়ে যেত, তার আনুষ্ঠানিক প্রকাশ বিশেষ মিলবে না, তবে অপরের মনের গহিনে তিনি জায়গা করে নিতে পারতেন তাঁর সমস্ত কুণ্ঠা ও দ্বিধা সত্ত্বেও। এর অনন্য প্রকাশ আমি দেখেছি মানসিক ভারসাম্য হারানো অসাধারণ 888sport live footballব্যক্তিত্ব শহীদ সাবেরকে ঘিরে। এলোমেলো চুল, মুখভরা দাঁড়ি, মলিন পোশাকের এই মানুষটি পড়ে থাকতেন প্রেস ক্লাবে, কখনো কখনো হাজির হতেন বংশালে সংবাদ দফতরে। হাতে তাঁর ধূলি-ধূসর ডায়েরি, দু-আঙুলের ফাঁকে সিগারেট ধরে টান দিতেন সজোরে। প্রেস ক্লাব থেকে হেঁটেই যেতেন বংশালে। তাঁকে দেখেছেন সেই সময়কার অনেকে, জানতেন তাঁর বিষয়ে সামান্যই। হাসনাতভাইয়ের কাছেই শুনতাম তাঁর বৃত্তান্ত, নবীন বয়সে লেখালেখিতে দক্ষতার পরিচয় দেন, কমিউনিস্ট কর্মী হয়ে রাজনীতিতে সক্রিয় হন, নীত হন কারান্তরালে। জেলে বসে লেখা তাঁর কারাবৃত্তান্ত ‘আরেক দুনিয়া’ প্রকাশিত হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গের বিখ্যাত সাময়িকী নতুন 888sport live footballে। দীর্ঘ কারাবাস এবং প্রেমে ব্যর্থতা তাঁর মানসিক বিভ্রম ঘটায়, তিনি 888sport appর রাজপথে এবং অনেকের কাছেই হয়ে ওঠেন উপহাসের পাত্র। কাউকে পরিচিত মনে হলে শহীদ সাবের এগিয়ে গিয়ে পরিশীলিত উচ্চারণে বলতেন, ‘চার আনা পয়সা হবে, চা খাব।’ এই মানুষটিকে সমসময়ে সম্মান সহকারে বরণ করেছেন আবুল হাসনাত, সংবাদে তাঁকে বসিয়ে চা-পান করিয়েছেন, কুশলাদি জানার চেষ্টা করেছেন, খুব যে কথোপকথন হতো তা নয়। সংবাদে এসে শহীদ সাবেরও যেতেন আবুল হাসনাতের কাছে, ডেস্ক টেবিলের আর সবার সান্নিধ্য এড়িয়ে। শহীদ সাবের ও আবুল হাসনাতের সম্পর্ক আমার কাছে তাঁর ব্যক্তিত্বের মহিমা মেলে ধরে। এই সংযোগ শহীদ সাবেরকে মাঝেমধ্যে অনুপ্রাণিত করেছে 888sport app download apk লিখতে। হাসনাতভাইয়ের বাড়িয়ে দেওয়া নিউজপ্রিন্টের প্যাডে চমৎকার হাতের লেখায় শহীদ সাবের লিখেছেন 888sport app download apk। সুসংবদ্ধ সুলিখিত এইসব 888sport app download apkর কয়েকটি ছাপা হয়েছিল 888sport cricket BPL rateে সংকলনে, বিশেষত ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের সময়।
শহীদ সাবেরের পাশাপাশি আবুল হাসনাতের আরেক প্রিয় মানুষ ছিলেন শহীদুল্লা কায়সার। সংবাদে যোগদানের সময় তাঁর ইন্টারভিউ নিয়েছিলেন শহীদুল্লা কায়সার। সেই দুঃসময়ে এককভাবে সংবাদের হাল ধরেছিলেন তিনি, এসব ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী আবুল হাসনাত। গোপন কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে অপ্রকাশ্য যোগাযোগ ছিল তাঁর, সেই সূত্রে আবুল হাসনাত হয়েছিলেন তাঁর স্নেহের পাত্র। খুব যে ঘনিষ্ঠতা ছিল তা নয়, তবে সম্পর্কের মধ্যে এমন এক মাধুর্য ও মুগ্ধতা ছিল যা আজীবন আবুল হাসনাতকে তাড়িত করে ফিরেছে। ১৯৬৭ সালে রুশ বিপ্লবের পঞ্চাশতম বার্ষিকী উদ্যাপনের বিশাল আয়োজনে মতিউর রহমান-আবুল হাসনাত অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন এবং এই কাজের কাণ্ডারি হয়েছিলেন শহীদুল্লা কায়সার। সর্বমহলে তাঁর যোগাযোগ ও বিস্ময়কর কর্মক্ষিপ্রতার অনুরাগী ছিলেন আবুল হাসনাত। এর আরেক কারণ ছিল সেই সময়ে আমাদের হাতে আসা অসীম রায়ের একালের কথা এবং দেশদ্রোহী 888sport alternative link। দেশদ্রোহী তিনি উৎসর্গ করেছিলেন ‘রাজু, শহীদ, হাশেম এবং পূর্ববাংলার 888sport app বন্ধুদের।’ এই রাজু হচ্ছেন রাজিয়া খান আমীন, শহীদ হলেন শহীদুল্লা কায়সার এবং কূটনীতিবিদ লেখক নাজিমউদ্দিন হাশেম, শেষোক্ত দুজন দেশভাগের পূর্ববর্তী সময়ে প্রেসিডেন্সি কলেজে অসীম রায়ের বন্ধু ও বামপন্থী ছাত্র ফেডারেশনের সহকর্মী এবং তাদের অনুজা রাজিয়া খান সেই সুবাদে অসীম রায়ের পরিচিত।
শহীদ সাবের ও শহীদুল্লা কায়সার উভয়ে মুক্তিযুদ্ধের শহীদ, একজন সূচনায়, অপরজন সমাপ্তিতে। মনে হয় স্বাধীন 888sport appsে তাঁদের উত্তরাধিকার বহন করে চলেছেন আবুল হাসনাত। সেই সময়ে তাঁর আরেক প্রিয় বই ছিল অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত ও শঙ্খ ঘোষ-সম্পাদিত বিশ্ব888sport app download apkর সংকলন সপ্তসিন্ধু দশদিগন্ত। বাস্তবে পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে সীমান্তরেখা কণ্টকাকীর্ণ ও উত্তেজনমায়. সাম্প্রদায়িকতা স্থায়িত্ব পেয়েছে সমাজে, কিন্তু এর বিপরীতে বাঙালি জাতীয় চেতনা নিয়ে অসাম্প্রদায়িক সাম্যমূলক দেশ গড়ার যে প্রয়াস সেটা স্বাধীন বাংলার উদ্ভবের মধ্যে বিজয় অর্জন করল। কিন্তু একে সার্থক করে তুলতে যে বহুবিধ আয়োজন জরুরি ছিল, স্বাধীন দেশে পরম নিষ্ঠায় তা পালন করেছেন আবুল হাসনাত। বাঙালির দেশ হিসেবে 888sport appsের আবির্ভাব যে উদারতা ও বিস্তার দাবি করে তিনি তা পূরণে কাজ করেছেন নিষ্ঠার সঙ্গে। বাঙালির স্বদেশ বলতে সীমান্তের ওপারের পশ্চিমবাংলাকেও বোঝাবে, দুইয়ের মধ্যে বোঝাপড়ার গুরুত্ব তাই অপরিসীম। ষাটের অন্ধকার সময়েও সেই বোঝাপড়ার তাগিদ বহন করেছেন আবুল হাসনাত। স্বাধীন 888sport appsে সেই কাজে অনেকগুলি স্তর পার হয়ে তিনি স্থিত হয়েছিলেন বেঙ্গল 888sport live chatালয়ে, ষাটের দশকের সংস্কৃতি ও জীবনভাবনার অনেক কিছুর বাস্তব রূপায়ণের জন্য এই পরিসরে তিনি কাজ করেছেন। এমন একাদিক্রম একনিষ্ঠ জীবনসাধনার পরিচয় তো খুব বেশি মিলবে না। উদার অসাম্প্রদায়িক দশদিগন্ত প্রসারী বাঙালির স্বপ্ন তিনি বহন করেছিলেন ষাটের দশকের বদ্ধ পরিবেশে, সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ করেছেন স্বাধীনতা-পরবর্তী পাঁচ দশক জুড়ে। তাঁর জীবন তাই সার্থক। একালের কথা আমরা শুনতে পাই তাঁর জীবনে, একালের শক্তির পরিচয় পাই তাঁর কর্মে।
তাঁকে জানাই সালাম। আমার অগ্রজ বন্ধু ও ভাই, জীবনের পরম পাথেয়। একসঙ্গে একপায়ে চলা দীর্ঘদিনের সাথি ও পথপ্রদর্শক।
[বেঙ্গল 888sport live chatালয়ে ২০২২ সালের ২৯শে জুলাই ‘আবুল হাসনাত স্মারক বক্তৃতা’য় পঠিত।]


Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.