চলে যাওয়ার কয়েক মাস আগে জার্নিম্যান বুকস থেকে তাঁর শেষ বই বের হয় – হারানো সিঁড়ির চাবির খোঁজে – অন্তরস্পর্শী এক 888sport sign up bonusর আখ্যান। সে-বই শেষ হয়েছে এক দার্শনিক-উপলব্ধির ভাষ্যে : ‘জীবন প্রবহমান। জীবনের পথে এখনও হেঁটে চলেছি। দেখা যাক চলতে চলতে কোথায় গিয়ে তা শেষ হয়। পথের শেষ কোথায়? তবু আমার এই পথ চলাতেই আনন্দ।’ – বড় আকস্মিক, বড় অকালে সেই পথ-চলা থেমে গেল এই করোনা-কবলিত কালান্তক বর্ষে – নভেম্বরের এক তারিখে। এই অন্তর্হিত পথিকের নাম আবুল হাসনাত (১৯৪৫-২০২০) – পঁচাত্তর বছরের আয়ু নিয়ে এসেছিলেন সৃষ্টিমুখর-আনন্দময় ভুবনে।
দুই
বাড়িতে দুখানা কাগজ আসত – Morning News ও সংবাদ। এ-কথা ষাটের দশকের। প্রথমটি রাখতেন কর্তা। আর আমার এক ভাই ষাটের দশকের প্রায় গোড়া থেকেই সংবাদের কুষ্টিয়ার জেলা-প্রতিনিধি ছিলেন, তখন বোধহয় বলা হতো নিজস্ব সংবাদদাতা – সেই সুবাদে সৌজন্য-কপি পাওয়া যেত সংবাদের। সেই থেকে বিস্তর ভাঙা-হরফের আবছা-ছাপা জৌলুসহীন সাদামাটা সংবাদের প্রতিই একধরনের টান জন্মেছিল। প্রথম প্রথম 888sport app থেকে কুষ্টিয়ায় কাগজ আসত একদিন পরে। কিছু পরে দিনের দিন কাগজ আসত বটে, কিন্তু কখনোই শেষবিকেল বা সন্ধ্যার আগে নয়। মুখিয়ে থাকতাম ওই বাসি-কাগজের জন্যেই। এইভাবে সংবাদের প্রতি একটা অনুরাগ ও আকর্ষণ তৈরি হয়।
দেশ স্বাধীন হওয়ার কিছু পরে-পরেই 888sport app আসি। থাকি সেগুনবাগিচায় মাতুলগৃহে, পড়ি 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ে। বাড়ি থেকে আমার সাইকেলটা কারো পরামর্শে নিয়ে এসেছিলাম। রাস্তায় গাড়িঘোড়া ছিল খুবই কম, যানজট বলে তখন কিছু ছিল না। তাই সেগুনবাগিচাকে কেন্দ্রে রেখে রামপুরা থেকে সদরঘাট পর্যন্ত অবাধে সাইকেল-চালিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছি। পুরনো 888sport app আমার প্রিয় ও 888sport sign up bonus-জাগানিয়া জায়গা – এর অলিগলি প্রায় সবই চেনা হয়ে গিয়েছিল। কার কাছ থেকে যেন জেনে নিয়েছিলাম – ‘মানসী’ সিনেমা হলের প্রায়-সামনাসামনি, ২৬৩ নম্বর বংশাল রোড – এই হলো দৈনিক সংবাদের ঠিকানা। তখন লেখালেখি শুরু করেছি – না, একটু ভুল বললাম, লেখালেখির হাত-মকশো তো আরো আগেই শুরু হয়েছে – মুক্তিযুদ্ধের সময়ে স্বদেশ আমার বাঙলা নামে একটি 888sport app download apkর বইও কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কল্যাণে কলকাতা থেকে বেরিয়েছিল। এখন 888sport appয় এসে লেখালেখির ঝোঁকটা ক্রমে বাড়তে থাকে – শুরু হয় পত্র-পত্রিকার অফিসে যাওয়া-আসা।
যা-হোক, একদিন দুপুর না বিকেলের দিকে একটু দ্বিধা নিয়েই ঢুকে পড়ি সংবাদ-অফিসে। কাউকেই তো চিনি না, নামও জানি না – আর নির্দিষ্ট কারো সঙ্গে দেখা করার ব্যাপারও তো নেই! সন্তোষ গুপ্তের নাম কেউ বলেছিলেন – শুনলাম, তখনো তিনি আসেননি। একজন আঙুল দিয়ে একটি টেবিল দেখিয়ে কথা বলতে বললেন। এ-টেবিল ও-টেবিল ঘুরে শেষ পর্যন্ত নির্দেশিত টেবিলের সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম – টেবিলের পেছনের মানুষটি কী যেন লিখছিলেন, আমার উপস্থিতি টের পেয়ে মুখ তুলে একটু তাকিয়ে নিয়ে বললেন, ‘বলুন!’ কী আর বলব! নিজের গুরুত্ব প্রমাণ করতে মাতুলের পরিচয় দিলাম। তেমন হেলদোল দেখা গেল না – শান্ত-স্বাভাবিক কণ্ঠে বললেন, ‘ও, আপনি সনজীদা আপার আত্মীয়! আজ তো একটু ব্যস্ত আছি, এই লেখাটা প্রেসে দিতে হবে। আরেক দিন আসুন!’ আমি ফেরার জন্যে ঘুরেছি, পেছনে মৃদুকণ্ঠের উচ্চারণ, ‘আসবেন কিন্তু!’ পরে জেনেছি উনি আবুল হাসনাত। সেই শুরু হলো বংশালে যাওয়া, অফিসের ঠিকানা বদলে গেলে তারপর থেকে পুরানা পল্টনে – তাও কম দিন নয়, ধরতে গেলে প্রায় তিরিশ বছর – এখানেই শেষ হয় তাঁর সংবাদের পর্ব। তারপর শুরু হয় কালি ও কলমের কাল।
দু-চারবার দূরের নিউ এয়ারপোর্ট রোডে কালি ও কলমের অফিসে গিয়েছি – প্রথমবার আবুল হাসনাতই তাঁর গাড়িতে করে নিয়ে যান। পরে যে-কবার যাই তা বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের সৌজন্যে – মনে পড়ে, অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের আহ্বানে ভারতীয় প্রাক্তন কূটনীতিক-শিক্ষাবিদ-লালনানুরাগী মুচকুন্দ দুবের লালনের গানের হিন্দি-888sport app download apk latest versionে কিছু সহায়তার জন্যে। পরপর বেশ কয়েকদিন যেতে হয়। দুপুরে খাওয়ার পর অধ্যাপক দুবে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিতেন, ও-ই ভাতঘুম আর কী – সেই অবসরে হাসনাতভাইয়ের কক্ষে গিয়ে কিছু সময় গল্পগাছা করে কাটিয়ে আসতাম। কালি ও কলমের দফতর ধানমন্ডিতে সরে এলে সেখানে আর যাওয়া হয়নি। তবে ফোনে বেশ যোগাযোগ ছিল অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে যাওয়ার আগ-পর্যন্ত। যখন ফোনে আর কথা-বলার সুযোগ ছিল না, তখন তাঁর স্ত্রী সাংবাদিক নাসিমুন আরা হকের কাছ থেকে খবর জেনেছি। হাসনাতভাইয়ের গুণগ্রাহী কবি পিয়াস মজিদ ও পত্রিকা অফিসে তাঁর সহকর্মী আশফাক খানও তাঁর শারীরিক অবস্থা জানার সূত্র ছিলেন।
তিন
হাসনাতভাই যেমন স্বভাব ও মেজাজের মানুষ ছিলেন তাতে তাঁর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়া বা অন্তরঙ্গ সম্পর্ক স্থাপন খুব সহজ বা হয়তো সম্ভবই ছিল না। লালনের গান দিয়ে ব্যাপারটা এইভাবে বোঝানো যায় : ‘সে আর লালন একখানে রয়, তবু লক্ষ যোজন ফাঁক রে।’ শান্ত-সৌম্য-মিতবাক, সেইসঙ্গে হয়তো কিছুটা লাজুকও – এমন আত্মমুখী মানুষের অনুরাগ-ভালোবাসা-বেদনা-দুঃখ-উল্লাস-আনন্দ-ভালোলাগা মনের ভেতরেই লুকিয়ে থাকত, ক্বচিৎ তা বাইরে বেরিয়ে আসার সুযোগ পেত। কোনো ঘটনা বা ব্যক্তিকে অসহ্য মনে হলে তা কখনো প্রকাশ করতে দেখিনি। অশোভন বা বিরূপ মন্তব্য, বিরক্তি প্রকাশ, পরচর্চা বা কৌশলে আত্মস্তুতি তাঁর মুখে কখনো শুনিনি – এসব তাঁর রুচিতে বাধত। খুবই চাপা-স্বভাবের মানুষ ছিলেন – তাঁর এই প্রকৃতি সম্পর্কে শামসুজ্জামান খান, ‘ভেতরগোঁজা’, এই লাগসই শব্দটি ব্যবহার করেছেন।
আবুল হাসনাতের একদা-সতীর্থ ও আজীবন-বন্ধু প্রথম আলো-সম্পাদক মতিউর রহমান গাঢ়-অনুরাগে ‘চির-সখা’র প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে গভীরভাবে 888sport sign up bonusকাতর হয়ে পড়েন। তাঁর সাক্ষ্যে ধরা পড়ে, স্বভাবে-মেজাজে-রুচিতে হাসনাত কেমন ছিলেন : ‘বন্ধু হাসনাত আমাদের সময়ের সেরা মানুষ, সবার প্রিয় মানুষ। অত্যন্ত বন্ধুবৎসল, সব লেখক ও 888sport live chatীর ঘনিষ্ঠজন শুধু নয়, অত্যন্ত সজ্জন আর বিনয়ী মানুষ ছিল হাসনাত। কোনো সময়ে কারও প্রতি কোনো ক্ষোভ বা রাগ প্রকাশ করতে দেখিনি। আর সব সময়েই সবকিছু করত পেছন থেকে, কিছুটা সংকোচ নিয়ে যেন’ (প্রথম আলো, ২ নভেম্বর ২০২০)। যাঁরা আবুল হাসনাতকে কাছ থেকে দেখেছেন এবং জানতেন, বন্ধুর অভিজ্ঞতাজাত এই বীক্ষণ সম্পর্কে তাঁরা দ্বিমত পোষণের সুযোগ পাবেন না।
ছিলেন মার্জিত ও রুচিশীল, গ্রন্থমনস্ক ও পাঠস্পৃহ। 888sport live footballের পাশাপাশি 888sport live chatকলা ও সংগীতের প্রতিও তাঁর প্রবল অনুরাগ ছিল। চিত্র888sport live chatের সমঝদারই শুধু ছিলেন না, চিত্রকলার আলোচনাতেও তাঁর আগ্রহ ও অধিকার দুই-ই ছিল। তাঁর চিত্র888sport live chatের সংগ্রহও কম মূল্যবান নয়। অনেক বরেণ্য 888sport live chatীর সঙ্গেই নানা সূত্রে তাঁর নিবিড় সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। দেশে-বিদেশে যেখানেই যেতেন 888sport live chatকলার কোনো-না কোনো নিদর্শন সংগ্রহে ভুল হতো না। লোক888sport live chatকলারও তিনি যে খুব অনুরাগী ছিলেন, সে-সাক্ষ্য আমি দিতে পারি।
তখন তিনি সংবাদে – একদিন কথা প্রসঙ্গে বললেন, ‘আপনাদের ওদিকে বাঁকুড়ার পুতুলের ধাঁচে নাকি ছোট পুতুল পাওয়া যায়! আমাকে কয়েকটা এনে দিতে পারেন – রং-ছাড়া পোড়ামাটির পুতুল?’ একে-ওকে জিজ্ঞেস করে জানলাম, কুষ্টিয়ায় দু-এক ঘর পালই মাত্র আছে, যারা এই ধরনের পুতুল বানায় – রথ বা অন্যসব আড়ং বা মেলার জন্যে – আবার মানতের জন্যেও এই পুতুলের বেশ চাহিদা। এদের নিবাস শহর থেকে একটু দূরে কুমারগাড়ায় – নামেই বেশ বোঝা যায় এককালে কুমার বা কুমোর অর্থাৎ মৃৎ888sport live chatীদেরই গ্রাম ছিল এটি। এদের কাছ থেকেই রং-লাগানো হয়নি এমন পোড়ামাটির পুতুল এনে দিয়েছিলাম হাসনাতভাইকে। ভারি খুশি হয়েছিলেন। এ-রকম কত-না শখের নিদর্শন সমৃদ্ধ করেছে তাঁর সংগ্রহকে।
সেসময়ে হাসনাতভাই থাকতেন বনগ্রামের একটেরে যুগীনগরে পৈতৃক নিবাসে। আরো অনেক পরে উঠে আসেন ধানমণ্ডিতে। এই যুগীনগরের বাড়িতেও অনেকবারই যাওয়া হয়েছে – দেখেছি হাসনাতভাইয়ের ঘরোয়া রূপ, বাইরের তুলনায় বেশ খোলামেলা, কিছুটা হাস্যমুখর ও কথাবার্তায় সামান্য সাবলীলও। আপ্যায়নের কোনো ত্রুটি থাকত না। বারান্দা বা বসার ঘর রুচিমাফিক সজ্জিত নানা 888sport live chatীর ছবি ও সংগৃহীত 888sport live chat-নিদর্শন দিয়ে – মুগ্ধ-দৃষ্টি ঘুরে বেড়াত চারদিকে।
চার
লেখালেখির ব্যাপারে দৈনিকের 888sport live football সাময়িকী বা পত্রিকা সম্পাদকের সহায়তা বা আনুকূল্য ভারি জরুরি। প্রাজ্ঞ সম্পাদকই একজন লেখকের ভিত তৈরি করে দেন, তার প্রচ্ছন্ন প্রতিভাকে আবিষ্কার করতে পারেন, তাঁর হাত দিয়েই 888sport live footballের ভুবনে লেখকের প্রবেশ ঘটে, লেখক ক্রমে এগিয়ে যায় প্রতিষ্ঠার পথে। নব্য-লেখকের জন্যে এই সম্পাদকই জহুরির ভূমিকা পালন করে থাকেন। তবে সে-বড় কঠিন কাজ তেমন জাত-সম্পাদক হতে পারা! জীবনানন্দ দাশের কথাটি একটু হেরফের করে বলা যায় : ‘সকলেই সম্পাদক নয়, কেউ কেউ সম্পাদক।’ আমাদের দেশে 888sport live football পত্রিকা-সম্পাদনার একটি উচ্চমান তৈরি করে দিয়ে গেছেন আবদুল কাদির, সিকান্দার আবু জাফর, আহসান হাবীব, কায়সুল হক, বেলাল চৌধুরী। এই হ্রস্ব-তালিকায় অনিবার্যভাবে আর-একটি নাম যুক্ত হবে – আবুল হাসনাত। এঁদের বৈশিষ্ট্য – সম্পাদনা-কাজে এঁরা একই সঙ্গে নির্মম ও মরমি, নিরপেক্ষ ও প্রাজ্ঞ। দুর্বল ও বাজে লেখা ছেপে এঁরা পত্রিকার মান অবনমন, লেখকের ভবিষ্যৎ নষ্ট ও 888sport live footballের ধারাকে বিপথগামী করতে চাননি। এই নিরিখে সাময়িকী ও পত্রিকা সম্পাদনায় আবুল হাসনাতের রুচি-শ্রম-মেধা-স্বাতন্ত্র্য-সাফল্যের পরিচয় মেলে দৈনিক সংবাদের 888sport live football সাময়িকী, গণ888sport live football, কালি ও কলম এবং 888sport live chat ও 888sport live chatীতে।
লেখালেখির বিষয়ে যাঁদের কাছে আমি ঋণী ও কৃতজ্ঞ, সেক্ষেত্রে আবুল হাসনাতের নাম উল্লেখ না-করলে অন্যায় ও সত্য-গোপনের পাপ হবে। গদ্য-পদ্য অনেক লেখাই সংবাদের সাময়িকীর পাতায় সেই ১৯৭৪ থেকে বেরিয়েছে। সংবাদের 888sport live footballের পাতার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ও আভিজাত্য ছিল, এই সাময়িকীর পাতার নান্দনিক অলংকরণ ও বিন্যাস এবং 888sport login bangladesh linkর সমাহার অন্য কাগজের 888sport live footballের পাতা থেকে একে আলাদা করেছিল – অবশ্য সে-সম্ভব হয়েছিল একমাত্র হাসনাতভাইয়ের রুচি ও মেধার গুণেই। হাসনাতভাই তাঁর 888sport sign up bonusচারণামূলক হারানো সিঁড়ির চাবির খোঁজে বইতে এই প্রসঙ্গে যা-বলেছেন তা 888sport app download for androidযোগ্য : ‘সংবাদ সাময়িকী … আমার ধ্যানজ্ঞান হয়ে উঠেছিল। দেশে 888sport live footballের রুচি নির্মাণ ও মননকে শাণিত করার আকাঙ্ক্ষা নিয়ে নববিন্যাসে সাজিয়েছিলাম সংবাদ সাময়িকীর পৃষ্ঠা। মফস্বল থেকে প্রতিদিনই প্রচুর লেখা আসত। এই লেখাগুলোর মধ্যে সম্ভাবনার স্ফুরণ থাকত। বিশেষ গল্প ও 888sport app download apk এবং 888sport live বিভাগে বেশ কিছু নবীনের লেখা পাঠ করে চমৎকৃত হতাম। প্রতিভার স্বাক্ষর থাকত এদের লেখায়। এদের লেখা পত্রস্থ হতো সংবাদ সাময়িকী বিভাগে। মফস্বল থেকে আসা অধিকাংশ লেখা দিয়ে সাজানোর চেষ্টা করতাম সাময়িকী বিভাগটিকে; সঙ্গে প্রতিষ্ঠিত একজন বা দুজনের কোনো 888sport app download apk ও রচনা। … পঁচিশ বছর আমি 888sport live football সাময়িকী বিভাগের দায়িত্বে ছিলাম। এই সময়ে আমি শুধু বিভাগটিকে সমৃদ্ধ করবার কথা ভেবেছি।’ এখানে সময়ের হিসেবে কি তাঁর ছোট্ট একটু ভুল হলো না? তিনি সংবাদ সাময়িকীর দায়িত্বে ছিলেন ১৯৭৪ থেকে ২০০৩ পর্যন্ত – তাহলে তো হয় প্রায় ঊনত্রিশ বছর!
সংবাদে লিখে সম্মান ও সম্মানী দুটোই পেয়েছি। অনেক বড় কাগজেও যে-নিয়ম চালু ছিল না, বা চালু থাকলেও তা রক্ষিত হতো না – সংবাদ তা করতে পেরেছিল। হাসনাতভাই নিয়মিত লেখক-সম্মানীর বিল করে পাঠাতেন হিসাব বিভাগে, আর ওই বিভাগের অতি-সজ্জন কর্তা অঞ্জনবাবু (চট্টগ্রামের মানুষ, পদবি বোধহয় ‘সেন’) যেন হাসিমুখে টাকা দেওয়ার জন্যে প্রস্তুত হয়েই থাকতেন। হাসনাতভাইয়ের অফিসকক্ষটি ছিল ছিমছাম, সেখানে বিরাজ করত এক ভিন্ন শৈল্পিক আবহ। তাঁর কাছে বেশি সময় বসতে হতো না। পারস্পরিক কাজের কথা প্রথমেই সারা হতো। দ্বিতীয় পর্বে লেখাটা গছিয়ে দেওয়ার পর শিরোনামটা দেখে বলতেন, ‘আচ্ছা, ঠিক আছে। চা খাবেন?’ চা না-খেয়ে কখনো উঠেছি বলে মনে পড়ে না। উনি কাজে মগ্ন হয়ে যেতেন, সংক্ষিপ্ততম শেষ বাক্য ছিল – ‘লেখা পাঠাবেন’। নানা-পার্বণে বিশেষ-লেখার বরাত পাওয়া যেত। তাছাড়া কোনো লেখা তৈরি হলে হাসনাতভাইয়ের রুচি ও ধাত বুঝে, তা পাঠিয়ে দিতাম সংবাদে। সত্তরের দশকে মূলত সংবাদ ও সেইসঙ্গে আরো দু-চারটে কাগজে লিখেই কারো কারো নজরে এসেছিলাম। হাসনাতভাই এবং তাঁর মতো আরো কেউ কেউ না-থাকলে হয়তো পথটা এত মসৃণ হতো না।
প্রায় চল্লিশ বছরের কাজের ক্ষেত্র ছেড়ে ২০০৩-এ আসেন নতুন মাসিক পত্রিকা কালি ও কলম সম্পাদনার দায়িত্ব নিয়ে। অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের তত্ত্বাবধান, চিত্রকর কাইয়ুম চৌধুরীর শৈল্পিক স্পর্শ, আবুল খায়েরের প্রণোদন এবং সর্বোপরি আবুল হাসনাতের সম্পাদন-নৈপুণ্যে কালি ও কলম প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই 888sport live footballমনস্ক রুচিশীল পাঠকের অভিনন্দন অর্জন করে। দেশের বাইরেও বঙ্গভাষী পাঠক স্বাগত জানায় এই পত্রিকাকে। পাঠকপ্রিয়তার কারণে কয়েক বছর পর পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা থেকে কালি ও কলমের ভারতীয় সংস্করণ প্রকাশ পায়। এই প্রথম কোনো বাংলা-পত্রিকা একই সঙ্গে প্রকাশিত হয় ভিন্ন দুটি দেশ থেকে। সম্পাদক হিসেবে কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর নাম ছাপা হলেও, তাঁর বয়স ও ব্যস্ততার কারণে, পত্রিকার আনুষঙ্গিক কাজকর্মের অনেককিছুই গুছিয়ে দিতে হতো আবুল হাসনাতকেই। তাই তাঁকে ঘনঘনই কলকাতা যেতে হতো। এইভাবে কলকাতার লেখকদের সঙ্গেও তাঁর বেশ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এতে তিনি নিজে যেমন ঋদ্ধ হন, তেমনি বিচিত্রতা পায় কালি ও কলমও।
আমাদের দেশে দুই বাংলার লেখকদের লেখা নিয়ে সমকাল ও এনামুল হক-সম্পাদিত ক্ষণজীবী উত্তরণের পর উচ্চাঙ্গের পত্রিকা হিসেবে কালি ও কলম নিয়মিত প্রকাশিত হয়ে চলেছে। এই পত্রিকার জন্ম, সমৃদ্ধি ও লোকপ্রিয়তার সঙ্গে আবুল হাসনাতের নাম নিবিড়ভাবে জড়িয়ে আছে। এর পাশাপাশি বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের ত্রৈমাসিক পত্রিকা 888sport live chat ও 888sport live chatীর সম্পাদকও ছিলেন তিনি – সেই পত্রিকাও 888sport live chatরসিক ও 888sport live chatকলার সঙ্গে সংশ্লিষ্টজনের সমাদর লাভ করে।
কালি ও কলম প্রকাশের শুরু থেকেই সম্পাদক আবুল হাসনাতের আমন্ত্রণে এর লেখক হিসেবে গণ্য হই। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী বা বিশেষ 888sport free betয় লিখিনি এমন মনে পড়ে না। এই ধরনের 888sport free bet প্রকাশে হাসনাতভাই বেশ আগে থেকেই পরিকল্পনা ছকতেন – লেখকসূচি ঠিক করে একে একে সবার সঙ্গে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নিজেই যোগাযোগ করতেন এবং সেই ফোনের তাগাদা লেখা হাতে না-পাওয়া পর্যন্ত অব্যাহত থাকত। একসময় আমার খুব ঝোঁক জেগেছিল মানুষের 888sport sign up bonusতে ধূসর হয়ে আসা গ্রামোফোন-সংস্কৃতি নিয়ে লেখার। 888sport app-কলকাতা ঘুরে ঘুরে মূল্যবান-দুষ্প্রাপ্য সব উপকরণ সংগ্রহ করে লেখাগুলো তৈরি করি। বড় লেখা আর তার সঙ্গে প্রচুর ছবি থাকত, সে-কারণ ওইসব লেখা ছাপার জন্যে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর 888sport free bet প্রায়-নির্দিষ্ট ছিল। কাইয়ুম চৌধুরী ও আবুল হাসনাত দুজনেই ছিলেন যথার্থ সংগীতরসিক। দুজনেরই গানের ভালো ‘কান’ ছিল, সেইসঙ্গে দুর্বলতাও। হাসনাতভাই গান নিয়ে লেখায় খুবই উৎসাহ দেন। আর কাইয়ুম চৌধুরী ঠেলে কলকাতায় পাঠান যূথিকা রায়ের সাক্ষাৎকার নেওয়ার জন্যে – যূথিকাই তখন গ্রামোফোন-যুগের শেষ জীবিত কিংবদন্তি। আমার তোলা বহু ছবিসহ সেই অন্তরঙ্গ আলাপ ছাপা হয়। গ্রামোফোন কোম্পানির ইতিহাস, গায়ক-সুরকার-গীতিকারের আলেখ্য নিয়ে দুজনের আগ্রহ-উৎসাহে বেঙ্গল পাবলিকেশন্স থেকে প্রকাশিত হয় বাঙালির কলের গান। দৃষ্টিনন্দন ও মনকাড়া প্রচ্ছদ আঁকেন কাইয়ুম চৌধুরী – বইয়ে সংযোজিত অনেক ছবিরই জোগান দেন হাসনাতভাই তাঁর সংগ্রহের বই বা পত্রিকা থেকে। এই দুজনের নামে বই-উৎসর্গের কথা ভাবি। হাসনাতভাই তা-শুনে খুব আপত্তি জানিয়ে বলেন, ‘না, না, কাইয়ুমভাইকে দিন – সেটা খুব ভালো হবে।’ এই হলেন আবুল হাসনাত – আমাদের হাসনাতভাই – নেপথ্যের নির্মাতা – যিনি সৌজন্য, বিনয়, বিবেচনা, স্নিগ্ধ আচরণে নিজেকে তৈরি করেছেন।
এরপর হাসনাতভাইয়ের উৎসাহে বাঙালির কলের গানের দ্বিতীয় পর্বের লেখাগুলো একে-একে ছাপা হতে থাকে। আর কয়েকটা লেখা তৈরি হলেই কলের গানের দ্বিতীয় পর্বের পাণ্ডুলিপি-গোছানোর কাজ শেষ হয়। কিন্তু এখন কে আর এর কদরদানি করবেন!
আর-একটি বই বেঙ্গল পাবলিকেশন্স থেকে বেরিয়েছিল – লালন সাঁই : মরমি ও দ্রোহী, সেও ওই হাসনাতভাইয়ের আগ্রহ ও আনুকূল্যেই। কাইয়ুম চৌধুরী তার আগেই চলে গেছেন – এবারে প্রচ্ছদ রচনা করেন আর-এক বরেণ্য 888sport live chatী শ্রদ্ধেয় রফিকুন নবী। কেমন করে জানি হাসনাতভাই জানতেন আমি লালনাসক্ত, তাই বইটি করার উদ্যোগ নেন। আবার অন্য-এক সময়ে বলেন, ‘কলকাতার নয়া উদ্যোগের পার্থশঙ্কর বসু আমার পুরনো বন্ধু, ও লালনের ওপরে আপনার একটা বই করতে চায়। ওকে একটা বই দিন না!’ বন্ধুকৃত্যের অনেক ঘটনার মধ্যে এটি একটি। নয়া উদ্যোগ থেকে বারকয়েক যোগাযোগও করা হয়েছিল, কিন্তু অন্য বইয়ের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ায় হাসনাতভাইয়ের কথা রাখতে পারিনি, সে-কারণে সংকোচের অন্ত ছিল না।
অতিমারির করোনাকালে হাসনাতভাই প্রায় ঘরেই আবদ্ধ ছিলেন। কিন্তু তাতে তাঁর কাজ থেমে থাকেনি – এই সংকটকালেও কালি ও কলমের প্রকাশ পুরোপুরি বন্ধ হয়নি – জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের 888sport app download for androidে একটি অসাধারণ 888sport free betও দ্রুত প্রকাশিত হয়। মূলত এই লেখাগুলো নিয়েই বেঙ্গল পাবলিকেশন্স থেকে বেরুতে যাচ্ছে আনিসুজ্জামান 888sport app download for android – সেই বইয়ের কাজও তিনিই গুছিয়ে রেখে গেছেন।
করোনাকালে অন্যসময়ের চেয়ে বেশি কথা হতো ওঁর সঙ্গে – কালি ও কলমের লেখার বিষয়ে, এমন কী ফেব্রুয়ারির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর পরিকল্পনা নিয়েও। আর-একটি বিষয়ে মাঝেমধ্যেই খবর নিতেন – সনজীদা খাতুনের সংবর্ধন-গ্রন্থের। পিয়াস মজিদ ও আমার সম্পাদনায় একটি বইয়ের পরিকল্পনা হয় (বড়ো বিস্ময় লাগে হেরি তোমারে) – হাসনাতভাই সাগ্রহে একটি চমৎকার লেখা দেন। করোনার ধাক্কায় বইয়ের প্রকাশ পিছিয়ে যায়। অবশেষে এ-বছরের প্রায়-মাঝামাঝি শোভা প্রকাশ থেকে সে-বই বের হয়। বইটি যেদিন বাঁধাইখানা থেকে মুক্তি পায়, পিয়াস সেদিনই হাসনাতভাইকে পৌঁছে দেন। উনি খুব খুশি হন, প্রশংসা করেন – আমাকে ফোনে তাঁর অনুভূতির কথা জানান। সনজীদা আপার অকৃত্রিম অনুরাগী ছিলেন হাসনাতভাই – ‘অকৃত্রিম’ শব্দটির ওপর নানা কারণে জোর দিতে চাই। ছায়ানট বা রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদের সঙ্গে নিজেকে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত করেছিলেন। ছায়ানটের নানা প্রকাশনায় আবুল হাসনাত যুক্ত ছিলেন সম্পাদক, সহকারী সম্পাদক বা সম্পাদনা-পর্ষদের সদস্য হিসেবে।
পাঁচ
আবুল হাসনাত মনে-মতে ছিলেন প্রগতিপন্থি। কৈশোরেই জড়িয়ে পড়েছিলেন ছাত্র-রাজনীতির সঙ্গে। আদর্শিক নিষ্ঠা, সাংগঠনিক নৈপুণ্য, স্থির লক্ষ্য ও অবিচল কর্তব্য-পালনের গুণে ছাত্র ইউনিয়নের উচ্চপদ পেয়েছিলেন। তারপর কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে যুক্ত হন। আবুল হাসনাত তাঁর রাজনীতির জীবনে পূর্ব বাংলার কয়েকটি তাৎপর্যপূর্ণ আন্দোলনে যোগ দেওয়ার সুযোগ পান : বাষট্টির শিক্ষা কমিশন রিপোর্ট বাতিলের আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণ-আন্দোলন এবং সবশেষে মুক্তিযুদ্ধ। প্রবাসে মুক্তিযুদ্ধের কাজে তিনি ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত এবং কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ও সিদ্ধান্তের সাক্ষী হন। মুক্তিযুদ্ধে তাঁর কাজকে কর্তব্য বলে জ্ঞান করেছিলেন, তাই কখনো কোনো কৃতিত্ব, স্বীকৃতি বা সুযোগ দাবি করেননি। ভীতি বা প্রলোভনের কাছে নিজের আদর্শ-সততা-বিবেককে বিকিয়ে দিতে চাননি। মৃদুকণ্ঠ-স্বল্পবাক-নরম-সরল এই মানুষটির মেরুদণ্ড ছিল যথেষ্ট দৃঢ়। সহজ ছিলেন বটে, তবে সুলভ কখনোই নিজেকে হতে দেননি। সক্রিয় রাজনীতি থেকে আগেই সরে এসেছিলেন, কিন্তু মুক্তচিন্তা ও উদার মননকে কখনো বিদায় জানাননি।
ছয়
আবুল হাসনাত ও মাহমুদ আল জামান – সৃজন-মননের যুগলবন্দি সত্তা যেন। একজন গদ্য লেখেন, অপরজন পদ্য – আড়াল বজায় রেখে বেশ সমান্তরাল চলছিল এই ‘মধুর খেলা’। অজানা কবির 888sport app download apk মন কেড়েছিল। পরে তালাশ-তদন্তে জানা যায় – ‘এক দেহে দুই রূপ’ ধরেন আবুল হাসনাতই।
সম্পাদকের সর্বক্ষণের দায়িত্ব পালনের কারণে তাঁর নিজের লেখালেখির যে কিছুটা ক্ষতি হয়েছিল, তা কবুল না-করে উপায় নেই। লেখক যখন সম্পাদক, তখন তাঁর নিজের লেখার কাজ ব্যাহত না-হয়ে পারে না। তাই দুই-নৌকাতেই তাঁকে পা-রাখতে হয়েছে বরাবর – তবে শ্যাম ও কুল দুই-ই তো একসঙ্গে রক্ষা করা কঠিন, দুরূহও। লেখার টানে প্রেমেন্দ্র মিত্র সম্পাদনার কাজ ছেড়ে বারবার পালিয়েছেন। পূর্ব্বাশার জন্যে সঞ্জয় ভট্টাচার্য্যরে নিজের লেখার কম ক্ষতি হয়নি। আমাদের দেশে বড়-উদাহরণ সিকান্দার আবু জাফর, কারণ সমকাল-সম্পাদনা। সন্তোষকুমার ঘোষ সম্পর্কেও অনেকে একথা বলে থাকেন – কিনু গোয়ালার গলি, শেষ নমস্কার : শ্রীচরণেষু মাকে আর কিছু অসাধারণ গল্প ছাড়া কিইবা লিখতে পারলেন! বুদ্ধদেব বসু এক্ষেত্রে মনে হয় একক ব্যতিক্রম, যিনি লেখালেখি আর সম্পাদনা দুই-ই দাপটের সঙ্গে চালিয়েছেন। তবে ভাগ্যক্রমে প্রথম-পর্যায়ে 888sport app download apk প্রকাশে তিনি লেখক-বন্ধুদের এবং পরে তাঁর মুগ্ধ অনুরাগী উত্তরপ্রজন্মের নরেশ গুহদের সমর্থন ও সহায়তা পান, যা তাঁর পত্রিকা প্রকাশের দায়িত্ব ও শ্রমকে অনেকখানিই লাঘব করেছিল।
888sport live football সাময়িকী বা 888sport live football পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে আবুল হাসনাত নিজেকে এমন এক উচ্চতায় নিয়ে গেছেন, তার তুলনা নেই। এর পেছনে ছিল তাঁর 888sport live footballরুচি, সম্পাদনা- নৈপুণ্য, নতুন লেখক-সৃষ্টি, ভালো লেখা-আদায়ের জন্যে নিরন্তর তাগাদা, সম্পাদকীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও প্রয়োগে সক্ষমতা। তবে তাঁর লেখালেখিকে এই সাফল্যের বিনিময়ে কম মূল্য দিতে হয়নি।
তবে পেশার দাবি মিটিয়েও মৌলিক ও সংকলন-সম্পাদনা মিলিয়ে আবুল হাসনাতের বইয়ের 888sport free bet প্রায় সত্তরের কাছাকাছি – ১৯৭০ থেকে ২০২০, পঞ্চাশ বছরের সারস্বতকর্মের ফসল। এর মধ্যে আছে – 888sport app download apk, 888sport live-সমালোচনা, 888sport slot gameকাহিনি, 888sport sign up bonusকথা, জীবনী, শিশুতোষ রচনা, সংকলন-সম্পাদনা (গল্প-888sport app download apk-888sport live-ইতিহাস-888sport live chatকলা-ব্যক্তিমূল্যায়ন-স্মারকগ্রন্থ-রচনাবলি-সংগীত-সংস্কৃতি)।
সাত
তাঁর লেখালেখির মূল্যায়নের সময় অপেক্ষমাণ – এখানে শুধু তাঁর রচনার মৌল-প্রবণতার সামান্য উল্লেখ করতে চাই। 888sport app download apk ও শিশুতোষ রচনায় তিনি নাম নেন মাহমুদ আল জামান। শামসুজ্জামান খান এক 888sport app download for android-রচনায় তাঁর 888sport live footballকৃতি সম্পর্কে মন্তব্য করেন : ‘এই লাজুক মানুষটি ছিলেন কবি – যেন কবি পরিচয়ে লজ্জা, তাই কি কবি হিসেবে নাম নিলেন মাহমুদ আল জামান! তাঁর গদ্যের হাতটিও ছিল বেশ কুশলী। বহু আগে তাঁর লেখা কিশোর 888sport alternative link ইস্টিমার সিটি দিয়ে যায় পড়ে অভিভূত হয়েছিলাম। শিশু-কিশোর 888sport live footballে তাঁর অর্জন সামান্য ছিল না। হাসনাতের লাবণ্যময় ও 888sport sign up bonusমেদুর গদ্য আমরা পেয়েছি তাঁর আত্মজৈবনিক 888sport sign up bonusকথা হারানো সিঁড়ির চাবির খোঁজে নামের অনিন্দ্যসুন্দর গ্রন্থে’ (প্রথম আলো, ৬ নভেম্বর ২০২০)। এই অল্পকথায় আবুল হাসনাতের মনের ধাঁচ আর লেখালেখির বৈশিষ্ট্যটা নির্ভুল ধরা পড়ে।
888sport app download apk দিয়েই তাঁর গ্রন্থ-যাত্রা।
১৯৭০-এ তাঁর সম্পাদনায় বের হয় বাংলায় অনূদিত 888sport app download apk-সংকলন পশতু গণমুখী 888sport app download apk। নজর-করার বিষয়, 888sport live footballচর্চার শুরুতেই সঙ্গী করেন 888sport app download apkকে এবং সেইসঙ্গে জড়িয়ে নেন তাঁর প্রগতি-চেতনাকে। মৌলিক 888sport app download apk যখন লিখতে শুরু করেন, তখন নতুন বিষয় ও কাব্যভাষা অন্বেষণ এবং কিছু নিরীক্ষাতেও মগ্ন হন। কণ্ঠস্বর ধীরে ধীরে পালটাতে শুরু করে – নৈরাশ্য নয় – সূক্ষ্ম-বিরহ, রহস্য-মায়া ও 888sport sign up bonus-সন্ধান তাঁর 888sport app download apkয় ছায়া ফেলে। তাঁর মনোবাস্তবতায় এক অলৌকিক ‘ভুবনডাঙা’ বারবার ডাক দিয়ে যায় – এক মরমি ধ্বনি ধাতব-বাস্তবতায় ক্রমাগত চূর্ণ হতে থাকে। 888sport sign up bonusভারাক্রান্ত এক স্বজন-কবি ‘ভুবনডাঙা’কে আবিষ্কার করেন হাসনাতের মগ্নচৈতন্যের ভিন্ন এক অনুষঙ্গে : ‘… গল্পের কৃষক হয়ে বুনে গেছি পতাকার রং/ কথার শরীরে কথা গেঁথে গেঁথে/ বিরান প্রান্তরে তুলে গেছি নিঃসঙ্গ দেয়াল/ নিজের অজান্তে কোনো ভুল তো করিনি/ কতবার আমি ভেঙেছি নিজেকে/ ভাঙা টুকরোগুলো সাজাতে সাজাতে/ সন্ধ্যার আজানে মিশে গেছি…’ (তারিক সুজাত, প্রথম আলো, ৬ নভেম্বর ২০২০)।
এই মানুষটি শিশু-কিশোরদের মনের কত কাছাকাছি ছিলেন, তা বেশ বোঝা যায় যখন তাদের জন্যে গল্প বোনেন, আখ্যান নির্মাণ করেন ইস্টিমার সিটি দিয়ে যায়, সমুদ্র ও টুকুর গল্প কিংবা রানুর দুঃখ ভালোবাসায়। শৈশব-888sport sign up bonus নীল-স্বপ্ন হয়ে ধরা দেয় শিশু-কিশোরের মুগ্ধ-চোখে। আবার কোমল জোছনা যখন ছিঁড়ে ফেলে করালবদন হিংস্র আদম-হায়ওয়ান, তখন তিনি মুক্তির কাহিনি শোনাতে বসেন যুদ্ধদিনের ধূসর দুপুর বা যুদ্ধদিনের পোড়োবাড়ি নাম দিয়ে। শিশু-কিশোরদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন চার্লি চ্যাপলিন, সূর্য সেন, জসীমউদ্দীনের – যাঁরা কেউ নান্দনিক আনন্দের প্রতীক, কেউ এনেছিলেন মুক্তির চেতনা – তাঁরা সবসময়ই ছিলেন জীবনের পক্ষে, মানুষের পক্ষে – সত্য-সুন্দর-কল্যাণ-আনন্দ-মুক্তির সেই চেতনার নির্যাস উপহার দেন শিশু-কিশোরদের।
888sport live football-সংস্কৃতি-সংগীত-নৃত্য-নাট্য-live chat 888sport-888sport live chatকলার বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব যাঁরা, তাঁদের সম্পর্কে বেশকিছু 888sport live-নিবন্ধ লিখেছেন তিনি। 888sport app download for android-মূল্যায়নের পাশাপাশি আছে সামান্য 888sport sign up bonusচর্চাও। এইসব লেখার কিছু গ্রথিত হয়েছে রবিশঙ্কর, মানিক, সতীনাথ ও 888sport app এবং কিছু-বা প্রত্যয়ী 888sport sign up bonus ও 888sport app বইতে।
ওপরের প্রায়-সব বিষয়েই লিখতে যাওয়া তাঁর জন্যে সমস্যার ছিল না, কেননা তিনি ছিলেন 888sport live footballের ছাত্র আর সংস্কৃতি-অঙ্গনের সঙ্গেও তাঁর যোগসূত্র কখনো শিথিল ছিল না। কিন্তু চিত্রকলা বা স্থাপত্য বিষয়ে লেখালেখির জন্যে যে-বিষয় ও পদ্ধতিগত পঠন বা ধারণাগত প্রশিক্ষণ প্রয়োজন, তা কতটুকুই বা তাঁর আয়ত্তে ছিল! কিন্তু অবাক হওয়ার পালা, চিত্র-সমালোচনায় তাঁর ধারণা, উপলব্ধি ও জ্ঞানের যে-পরিচয় পাওয়া যায় তা নিঃসন্দেহে উচ্চস্তরের। এক্ষেত্রে তাঁকে স্বশিক্ষিত বলা যায় অনায়াসেই। গান-শোনার বেলায় যেমন তাঁর ‘কান’ ছিল, তেমনি ছবি-দেখা ও মূল্যায়নের ক্ষেত্রেও তাঁর আলাদা ‘চোখ’ ছিল। আমাদের দেশ ও ভারতের অনেক বরেণ্য চিত্র888sport live chatীর সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল – এঁদের সখ্য-সান্নিধ্য-আলাপ তাঁর ছবি-বোঝার ক্ষেত্রকে অনেকখানি সহজ ও সহায়ক করে তুলেছিল। এইসঙ্গে দেশে-বিদেশে চিত্রপ্রদর্শনী দেখার সুযোগ তিনি কখনো ছাড়েননি। ছবি-দেখা, ছবি-সংগ্রহ, ছবির আলোচনা – চিত্রকলা-বিষয়ে তাঁকে এক প্রাজ্ঞ বোদ্ধায় পরিণত করেছে। তাঁর আলোচনায় অন্তর্ভুক্ত 888sport live chatীদের মধ্যে আছেন : রবীন্দ্রনাথ, 888sport live chatাচার্য জয়নুল আবেদিন, পটুয়া কামরুল হাসান, সফিউদ্দীন আহমেদ, কাজী আবদুল বাসেত, আমিনুল ইসলাম, কাইয়ুম চৌধুরী, মুর্তজা বশীর, নভেরা আহমেদ। কতখানি 888sport live chatকলাগত-প্রাণ হলে ও স্পষ্ট 888sport live chat-ধারণা থাকলে এই দুরূহ কাজে হাত দেওয়া সম্ভব হতে পারে!
রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার কারণে সমাজমনস্কতা ও প্রগতিচিন্তার যে-দীক্ষা লাভ করেছিলেন, একসময় রাজনীতির পথ থেকে সরে এলেও ওই চেতনার মৃত্যু হয়নি। একেবারেই যে হয়নি তা বেশ বোঝা যায় যখন লেখা ও চর্চার বিষয়-উপকরণ হয়ে ওঠেন পুশকিন, তলস্তয়, ফয়েজ আহমদ ফয়েজ। ভাষা-আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থান, মুক্তিকামী প্যালেস্টাইন, 888sport promo codeবীক্ষণ – চর্চার এই উদাহরণও স্বদেশমনস্কতা ও ওই উদার প্রগতি-চেতনারই স্বাক্ষর। আফ্রো-এশীয় গণসংহতি পরিষদ, আফ্রো-এশীয় লেখক ইউনিয়ন বা 888sport apps-সোভিয়েত মৈত্রী সমিতির সঙ্গে সম্পৃক্ততার কথাও একই সূত্রে আসে।
তাঁর 888sport live football-সংস্কৃতি-সংগীত-শিক্ষা-রাজনীতি বিষয়ক বিবেচনায় একসূত্রে বাঁধা পড়েছেন রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, জীবনানন্দ, বিষ্ণু দে, আবুল ফজল, জ্ঞানতাপস আব্দুর রাজ্জাক, শামসুর রাহমান, ওয়াহিদুল হক, সনজীদা খাতুন, আনিসুজ্জামান, বজলুর রহমান, শহীদ কাদরী, মাহমুদুল হক। এই যে আবুল হাসনাতের ব্যাপক-বিস্তৃত সারস্বতকর্মের তালিকা, – এ থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না, কত বিচিত্র পথে অভিনব বিষয়ে তিনি নিজেকে ছড়িয়ে দিতে পেরেছিলেন। তাঁর সৃষ্টি-সমীক্ষা প্রমাণ দেয় তিনি পরিকল্পনামাফিক নিরন্তর একের পর-এক কাজ করে গেছেন। মৃত্যুই বিচ্ছেদ ঘটাল এই কাজের ভুবন থেকে।
আট
বিষয়-বৈচিত্র্যে তাঁর গদ্যের ভুবন সমৃদ্ধ বটে, তবে সবকিছু ছাপিয়ে মনে হয় 888sport app download apkতেই নিজের অন্তর্জগৎকে আবিষ্কার করতে চেয়েছিলেন – মেলে ধরেছিলেন তাঁর 888sport sign up bonus-স্বপ্ন-অনুভূতিকে। 888sport app download apk তাঁকে সৃষ্টির আলাদা সুখ ও আনন্দ দিয়েছিল – তাঁর মনের গভীরে ফেলেছিল দীর্ঘ-শীতল ছায়া। শেষ যে বই তাঁর – হারানো সিঁড়ির চাবির খোঁজে – এই নামকরণেও আছে 888sport app download apkর কোমল স্পর্শ। 888sport app download apkর হাত ধরেই তিনি বিদায় নিয়েছিলেন হয়তো আর-এক ‘ভুবনডাঙা’য় পরি888sport slot gameের স্বপ্নিল আকাঙ্ক্ষায়। চলে যাওয়ার আগে হাসপাতালের শয্যায় লিখেছিলেন শিরোনামহীন এই 888sport app download apkটি – ‘জীবনের আলো ক্রমশ গ্রাস করছে কৃষ্ণমেঘ – আসন্ন মৃত্যুর শঙ্কা ছাপিয়ে কবি তাকে প্রাণের পক্ষে রাখতে চান – চাইতে পারেন তাই, ‘সজীব সহজ উজ্জ্বলতা’। অস্তিত্বের সংকট-মুহূর্তে আশা-উদ্বেগ-অসহায়তা নিয়ে লিখেছিলেন এক অদ্ভুত উপলব্ধির অণু-আখ্যান – তাঁর অপূর্ণ জীবনের পাঁচ পঙক্তির অসম্পূর্ণ শেষের 888sport app download apk : ‘আমার রোদ্দুর ঢেকে যাচ্ছে কালো মেঘে/ হায় ছায়াবৃতা দাও, আমাকে দাও সজীব/ সহজ উজ্জ্বলতা/ ঘুম নেই চোখে, তাকিয়ে থাকি/ অক্সিজেনের মিটারে।’


Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.