আমানুল হক : তাঁর কাছে ঋণ

মফিদুল হক

আমানুল হক নিভৃতচারী মানুষ, তবে নিভৃতে যাঁদের বিচরণ, তাঁরা সাধারণত গণ্য হন জীবন থেকে সরে যাওয়া অথবা জীবনবিবাগী মানুষ হিসেবে। অথচ তেমন মানুষ তো আমানুল হক কখনোই ছিলেন না, ছিলেন প্রবলভাবে জীবনবাদী। জীবনের অর্থময়তা খুঁজেছেন বড়ভাবে এবং ক্যামেরার লেন্সে বিপুলা জীবনের রূপচ্ছবি মেলে ধরবার আকুতি বহন করেছেন সর্বদা। তারপরও তিনি যে নিভৃতচারী হিসেবে বিবেচিত হন, তার কারণ তিনি চারপাশের আর সব মানুষ থেকে ছিলেন একেবারে আলাদা, প্রচলিত অর্থে সফলতা অর্জনে যে-দৌড় বা সে-ধরনের তাগিদে যেসব ভিড় দেখা দেয়, সেখানে তাঁকে খুঁজে পাওয়া যায়নি কখনো, কখনো তিনি হননি যশের কাঙাল। জীবনের চলবার পথে দেশ-বিদেশের অনেক বড়মাপের মানুষের সান্নিধ্যে এসেছিলেন, পেয়েছিলেন তাঁদের অকৃপণ স্নেহ-ভালোবাসা, কিন্তু যোগাযোগের সেসব সূত্র ভাঙিয়ে সফলতার ভিত গড়বার বাসনা ও আগ্রহ তাঁর মধ্যে ছিল একেবারে অনুপস্থিত। ক্যামেরার চোখ তাঁর ছিল, ছিল 888sport live chatের বোধ, সেইসঙ্গে ছিল বাংলার নিসর্গ ও মানুষের জীবনধারার মধ্য দিয়ে বাঙালি সত্তার সারসত্য ছবিতে ফুটিয়ে তোলার অনুশীলন ও সাধনা। এসবের যোগে শ্রীমন্ত আলোকচিত্রের অনন্য অনেক উদাহরণ তিনি তৈরি করে গেছেন, কিন্তু নিজের তোলা ছবি বাণিজ্যিকভাবে বিপণনের কোনো আগ্রহ বা উদ্যম তাঁর মধ্যে ছিল না। আলোকচিত্র888sport live chatীরা তাঁকে 888sport apk download apk latest version ও সমীহ করেছে ঠিকই, তবে বাস্তবের যে-ভূমিতে অন্যরা দাঁড়িয়ে, কিংবা যে-অবস্থানকে অন্যরা মনে করেছেন বাস্তবসম্মত, আমানুল হকের কাছে সেসবের মূল্য বিশেষ ছিল না। তিনি গুণী আলোকচিত্র888sport live chatী, অথচ 888sport appsে কখনো তাঁর কোনো আলোকচিত্র-প্রদর্শনী আয়োজিত হয়নি। এসব প্রদর্শনীর জন্য যে-ধরনের উমেদারি করতে হয় বাণিজ্যের ও মিডিয়ার, সঠিক কলের কাঠি নাড়াতে হয় ঠিকঠাকভাবে, সেসব তাঁর রপ্ত ছিল না, তেমন বিদ্যা অর্জনে কোনো আগ্রহও বোধ করেননি। অথচ একজন 888sport live chatীর সহজাত যে-কামনা, মানুষ তাঁর কাজের পরিচয় গ্রহণ করবে এবং মানুষের সঙ্গে ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ায় সৃষ্ট জারকরসে তিনিও নিজেকে সিঞ্চিত ও সমৃদ্ধ করবেন, এমন আকাঙ্ক্ষা তো তাঁর সবসময়ে ছিল। তাঁর তোলা ছবি মূলত প্রকাশ পেয়েছে পত্র-পত্রিকার বিশেষ 888sport free betয়, এর অনেক ক্ষেত্রে ছবির সঙ্গে কথামালাও তিনি যোগ করেছেন, চিত্রপরিচিতি ঠিক নয়, বরং বলা যেতে পারে চিত্রের 888sport live chatভাষ্য। জীর্ণ ও পান্ডুর হয়ে যাওয়া সেসব কাগজপত্র তিনি সযত্নে গচ্ছিত রেখেছেন, অনেক উচ্চমূল্য দেন তাঁর কাজের এমনতর প্রকাশনার, যদিও বিনিময়ে অর্থমূল্য জুটেছিল যৎসামান্য।

আলোকচিত্র888sport live chatীর সাফল্য আমরা সচরাচর পরিমাপ করি তাঁর একক প্রদর্শনীর নিরিখে, কিন্তু গ্যালারির দেয়ালে ঝোলানো ফ্রেমে বাঁধা সেসব প্রদর্শনী দেখে কতজন মানুষ! তুলনায় অনেক বেশি মানুষের কাছে পৌঁছে যায় পত্রিকা বা সাময়িকপত্রে ছাপা ছবি। আর তাই এককালের জনপ্রিয় বিচিত্রা সাপ্তাহিকের বিভিন্ন ঈদ888sport free betয় তাঁর আলোকচিত্র-সংবলিত প্রচ্ছদ আমানুল হককে প্রাণিত করেছে অনেক বেশি। পরবর্তীকালে এই পৃষ্ঠপোষকতার কাজ বিশেষভাবে করেছিল দৈনিক জনকণ্ঠ। আর তাই অমন নিভৃতচারিতা সত্ত্বেও দেশের মানুষ আমানুল হককে জেনেছে ‘আমার দেশ’ চিত্রমালার 888sport live chatী হিসেবে, এমন ব্যতিক্রমী ও অন্তহীন সিরিজ-কাজ আর কেউ এদেশে করেছেন কিনা জানা যায় না। সৃজনশীল আলোকচিত্র888sport live chatীরা নানা ধরনের সিরিজ-কাজের পরিচয় দিয়ে থাকেন, অন্যদিকে আমানুল হক জীবনভর একটি সিরিজের কাজই করেছেন, ‘আমার দেশ’। বাংলার পথে-প্রান্তরে, বিশেষভাবে নদী ও নদী-তীরবর্তী মানুষের জীবনযাত্রা ও জীবনসংলগ্ন প্রকৃতি চিত্রায়িত করে বেরিয়েছেন তিনি। নৌকো নিয়ে ঘুরেছেন যমুনার শাখা-প্রশাখা বেয়ে, হেঁটেছেন চরের তপ্ত বালু পেরিয়ে মাইলের পর মাইল, আর দূরবর্তী ও দুঃখসহা মানুষের নিত্যকার জীবনধারায় খুঁজেছেন বাংলার চিরন্তনতা, স্বদেশের আত্মা, আমার দেশ।

এর বাইরে তাঁর আরেক বড় কাজ সত্যজিৎ রায়কে নিয়ে, সেটাও যতটুকু আলোকচিত্রী হিসেবে তার চেয়ে বেশি জীবনপথে হঠাৎ ছিটকে পড়ে দৈবক্রমে। আকস্মিকতায় গড়ে-ওঠা নিবিড় সত্যজিৎ-সান্নিধ্য আজীবন ছিল তাঁর পথচলার পাথেয় ও প্রেরণা, ভিন্ন সুরে বাঁধা হয়েছিল তাঁদের পারস্পরিক সম্পর্কের এই সূত্র। ‘আমার দেশ’ চিত্রমালার অনুষঙ্গ হিসেবে, দেশের ইতিহাসের বড় উপাদান শহীদ মিনার কেন্দ্র করে অসংখ্য ছবি তুলেছেন আমানুল হক, 888sport appর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে শুরু করে দেশের নানা প্রান্তের আরো অসংখ্য মিনার, দরিদ্র বিদ্যালয়ের দরিদ্রতর অপিচ দীনতামুক্ত শহীদ মিনার, জলমগ্ন শহীদ মিনার, হাতে-লেখা পুঁথি হাতে গ্রামীণ কবির উপস্থিতিতে উজ্জ্বল শহীদ মিনার ইত্যাদি কত ধরনের শহীদ মিনারই না তাঁর ক্যামেরায় ধরা আছে। একাত্তরে পাকবাহিনী গোলার আঘাতে ধ্বংস করেছিল শহীদ মিনার। তাদের চেলা-চামুন্ডারা সেই ভগ্ন মিনারের গায়ে লিখে দিয়েছিল ‘মসজিদ’, বাংলায় এবং উর্দুতে। বর্বরতম কাজে পবিত্রতম ধর্মকে ব্যবহার করবার এমন কুৎসিত নজির অনেক ঝুঁকি নিয়ে ক্যামেরাবন্দি করেছিলেন আমানুল হক। শহীদ মিনার আমানুল হকের জন্য নিছক শহীদ মিনার ছিল না, তাঁর যাপিত জীবনে এর ছিল কেন্দ্রীয় ভূমিকা এবং সেই অর্থে তাঁকে বলা যায়, রবীন্দ্রনাথের মুক্তধারার অভিজিৎ যেমন ঝরনাতলে কুড়িয়ে পাওয়া জলধারার সন্তান, তেমনি তিনি শহীদ মিনারের সন্তান। ভাষা-আন্দোলনের সুবাদে আমরা পাই আমানুল হককে, যে-আন্দোলন পালটে দিয়েছিল তাঁর গোটা জীবন, আর তাই বারবার তিনি ফিরে এসেছেন শহীদ মিনারের কাছে এবং 888sport cricket BPL rateের কাছে নিজেকে মনে করেছেন ঋণী। অনেক পওে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে 888sport cricket BPL rateের স্বীকৃতি-888sport app download for androidে বিচিত্র ধরনের পটভূমিতে বিভিন্ন শহীদ মিনারের ছবি নিয়ে তিনি যখন ছবি ও কথায় তাঁর গ্রন্থ সাজিয়ে তোলেন, এর নামকরণ নিয়ে ছিলেন খুব ভাবিত। আমাকেও তাগাদা করেছিলেন বারবার জুতসই এক নাম নির্ধারণ করে দিতে, যা 888sport cricket BPL rateে ফেব্রুয়ারির কাছে জাতির ঋণ প্রকাশ করবে, তাঁর ব্যক্তিগত দায়মোচনও ঘটাবে। আমি মামুলি অনেক নাম তাঁর কাছে পেশ করেছি, 888sport cricket BPL rateের কাছে ঋণ, 888sport cricket BPL rateের প্রতি 888sport apk download apk latest version ইত্যাদি নানা কিছু, কিন্তু কোনোভাবেই তিনি সন্তুষ্ট হতে পারেন না। অপরদিকে টেক্সটের রচনাকার হিসেবে তিনি যে কত দক্ষ, খুঁতখুঁতে এবং অব্যর্থ শব্দসন্ধানী সে-পরিচয় তো আমি পেয়েছিলাম নানাভাবে। শেষ পর্যন্ত আমাকে অবাক করে দিয়ে গ্রন্থের নামকরণ তিনি করলেন 888sport cricket BPL rateের তমসুক। তমসুক ফার্সি শব্দ, বাংলা দলিলপত্রে মিলবে এর এন্তার ব্যবহার, ঋণস্বীকারে দেওয়া খত; তবে 888sport cricket BPL rateে ঘিরে এমন সুপ্রযুক্ত শব্দবন্ধ আগে আর কেউ কোথাও প্রয়োগ করেছেন কিনা জানা নেই। 888sport cricket BPL rateের কাছে ঋণ এমন আষ্টেপৃষ্ঠে দালিলিকভাবে বেঁধে ফেলার কাজটিই করেছিলেন আমানুল হক।

জন্মেছিলেন শাহজাদপুরে ডাক্তার পরিবারে অনেক ভাইবোনের ভরাট সংসারে। পরিশীলিত ও দরদি মনের অধিকারী সংস্কৃতিবান পিতা কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ থেকে শিক্ষা সমাপন করে ডাক্তারি পেশার জন্য যে নিজ অঞ্চল বেছে নিয়েছিলেন সেটা তাঁর মানসের বড় পরিচয় বহন করে এবং সে-মানস সন্তানদের জীবনকেও প্রভাবিত করেছিল। আমানুল হক ক্যামেরার প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলেন বাল্যে, তবে শারীরিক সুস্থতার অভাবে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় কখনো স্থিত হতে পারেননি। 888sport appর আর্ট কলেজে ভর্তি হয়েও পাঠে ছেদ টানতে হয়েছিল অচিরে। বায়ান্ন সালে কাজ করতেন তরুণ আলোকচিত্রী হিসেবে 888sport app মেডিক্যাল কলেজে এবং ভাষা-আন্দোলনের উত্তেজনাময় দিনে পুলিশের সতর্ক প্রহরা এড়িয়ে সাংবাদিক কাজী মোহাম্মদ ইদরিসের সহায়তায় তিনি হাসপাতালের মর্গে শায়িত শহীদ রফিকের ছবি তোলেন, কপালে গুলি লেগে মাথার খুলি চূর্ণ হয়ে মগজ ছড়িয়ে পড়েছে বাইরে। পরে এই ছবি প্রকাশ পেলে ব্যাপক আলোড়ন জাগায়, পুলিশ যে হত্যার উদ্দেশ্যেই গুলি চালিয়েছিল সেটা পরিষ্কার হয়ে ধরা দেয় ছবিতে। আমানুল হকও এ-ছবির কারণে পুলিশের নজরদারির লক্ষ্য হয়ে ওঠেন, পরিণামে তাঁকে চাকরি ছেড়ে আবারও ক্যামেরা-জীবন বরণ করতে হয়। তখনকার দিনে ফ্রিল্যান্সার আলোকচিত্রীর অনিশ্চয়তা ও কষ্টের জীবনে যেসব ছবি তিনি তুলেছিলেন তাঁর প্রকাশ ঘটাবার সুযোগ মিলল ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে মুসলিম লীগের ভরাডুবি ও যুক্তফ্রন্টের বিজয়ে। পূর্ব বাংলাজুড়ে সূচিত হলো এক নতুন জাগরণ এবং 888sport appয় বড় আকারে আয়োজিত হয় 888sport live football সম্মেলন। সেই 888sport live football সম্মেলনে নিবেদিত হলো অভূতপূর্ব আলোকচিত্র-প্রদর্শনী, আমানুল হকের ‘আমার দেশ’, সাদা-কালো ছবিতে দেশ ও দেশের মানুষের প্রতিচ্ছবি এবং সঙ্গে আমানুল হকের বলে যাওয়া ধারাভাষ্য, ছবি ও কথকতার অভিনব আসর।

888sport live football সম্মেলনে আগত পদাতিকের কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের মনে হয়েছিল, এ-বুঝি গাজীর পটের নব-রূপায়ণ। তিনি লিখেছিলেন, ‘একটি ছোট্ট ঘরে দেয়ালের মাত্র কয়েকটি ছবিতে এমনভাবে পূর্ব বাংলা ধরা দিয়েছে, যা না দেখলে বিশ্বাস হয় না। ফটোগ্রাফও যে কেমন করে চক্ষুষ্মান 888sport live chat হয়ে উঠেছে আজ, তার পরিচয় আছে ‘আমার দেশে’। ধারাবাহিক ছবির সাহায্যে মুখের কথায় বেদনায় সকরুণ, আশায় উজ্জ্বল একালের কাহিনি বলে যাওয়া – দেখেশুনে মনে হলো ‘গাজীর পট’ যেন নতুন জীবন পেয়েছে ‘আমার দেশে’। উল্লেখ্য, প্রদর্শনীতে ব্যবহৃত ‘আমার দেশ’ চিত্রমালার নামলিপি এঁকে দিয়েছিলেন 888sport live chatী কামরুল হাসান।

কিন্তু পূর্ব বাংলার এই জাগরণ বিশেষ স্থিতি পায়নি, অচিরে বাতিল হলো মন্ত্রিসভা, জারি হলো ৯২-ক ধারা, কেন্দ্রের শক্ত শাসন এবং শুরু হলো ব্যাপক ধরপাকড় ও নির্যাতন। আমানুল হক পুলিশের হামলা এড়াতে পাড়ি জমালেন কলকাতায়, সীমান্ত পেরিয়ে চলাচলের অনেকরকম পন্থাই তখন চালু ছিল। কলকাতায় আমানুল হক নিয়ে গিয়েছিলেন ‘আমার দেশ’ পর্যায়ে তোলা ছবির বোস্তানি, আর ছিল 888sport live football-সম্মেলন প্রত্যাগত লেখক-888sport live chatীদের সঙ্গে পরিচয়ের সূত্র। ইতোমধ্যে নতুন 888sport live football পত্রিকায় ছাপা হয়েছে তাঁর ছবি ‘অলস মধ্যাহ্ন’, চিত্রপরিচিতি লিখেছিলেন তরুণ গল্পকার দীপেন বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁকে কলকাতা-জীবনে স্থিত করতে সহায়তায় উদ্যোগী হয়েছিলেন অনেকেই, কিন্তু সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের সহযোগে সত্যজিৎ রায়ের বাসায় সেই যে একদিন তিনি হাজির হলেন, তারপরে দৈবচক্রে বাঁধা পড়লেন অচ্ছেদ্য বন্ধনে। সত্যজিৎ রায় রাশভারী মানুষ, ছোট এক বৃত্তের বাইরে কোনো সাথি-সঙ্গেই বিশেষ খোলামেলা নন, তিনি আমানুল হকের মধ্যে খুঁজে পেয়েছিলেন এমন কিছু যা সমস্ত আড়াল ঘুচিয়ে এক অনন্য সম্পর্কের রূপ নিয়েছিল। আমানুল হকের দিক থেকে 888sport apk download apk latest version-ভক্তি নিশ্চয় ছিল, তবে তার অতিরিক্ত এমন এক সমঝদারি সেখানে ছিল যা নিশ্চিতভাবে সত্যজিৎ বাবুকেও প্রভাবিত করেছিল। আর তাই আলাপচারিতার একপর্যায়ে সত্যজিৎ রায় বলেছিলেন, ‘আমার বাড়িতে আসুন, আপনাকে কিছু, ছবি দেখাবো। কার ছবি জানতে চাইলে তিনি বলেছিলেন, এমন একজন ফটোগ্রাফার যাঁর মতো কেউ পৃথিবীতে জন্মায়নি, কোনোদিন জন্মাবেও না! হেনরি কার্তিয়ে ব্রেসোঁ – আপনি আমাকে যে ছবিটি দিয়েছেন ওই রকম!’

টেকনিশিয়ানস স্টুডিওতে সত্যজিৎ রায়ের হাতে যে-ছবিটি আমানুল হক তুলে দিয়েছিলেন সেটা ছিল তাঁর তোলা ‘অলস মধ্যাহ্ন’; human condition এবং decisive moment, ব্রেসোঁর ছবির যে বড় গুণ সেটা আমানুল হকের এই ছবিতে দেখতে পেয়েছিলেন সত্যজিৎ রায়। আমানুল হক যে কোনো প্রদর্শনী বা প্রতিযোগিতায় শামিল হননি, 888sport app download bdের জন্য লালায়িত হননি, তার কারণ বুঝি অনেক বড় সব 888sport app download bd জীবনের চলার পথে এভাবে তিনি বারবার পেয়ে গেছেন।

এরপর থেকে আমানুল হক সুযোগমতো 888sport app-কলকাতা যাতায়াত করেছেন, দীর্ঘ সময় কাটিয়েছেন সত্যজিৎ-সঙ্গে। সত্যজিৎ রায়ের ইউনিটের তিনি যেন ছিলেন অঘোষিত অবৈতনিক সদস্য এবং হয়ে ওঠেন তাঁর পরিবারের একজন। এই সম্পর্ক কেবল সত্যজিৎ রায়ের মৃত্যু নয়, আমানুল হকের মৃত্যু পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। আমানুল হকের প্রয়াণে কলকাতায় তাই তাঁর স্নেহভাজন খোকন বা সন্দীপ রায় বলতে পারেন, আমাদের পরিবারের একজনকে আমরা হারালাম। সত্যজিৎ-পরিবারের সঙ্গে এমনি নিবিড়যোগ আমানুল হকের জীবনোপলব্ধি ও 888sport live chat-ধারণাতে নতুন মাত্রার জোগান দিয়েছিল। মহৎ এই 888sport live chatীর ধ্যানমগ্ন 888sport live chat-সাধনা অনেক কাছে থেকে দেখেছেন আমানুল হক, দেবী ছবির সংগীত-পরিচালক আলী আকবর খানের সঙ্গে সত্যজিতের আলাপচারিতা, সিনেমার পোস্টার অাঁকার জন্য একের পর এক স্কেচ করে যাওয়া, কিংবা ঘরে-বাইরে ছবির দৃশ্যায়নে ক্যামেরায় চোখ লাগিয়ে দৃশ্যপটের অসামঞ্জস্যগুলো খুঁজে বের করা, সৃষ্টিশীলতার নানা রূপে তিনি সত্যজিৎকে জেনেছেন খুব ঘনিষ্ঠভাবে, আর পেয়েছেন ভাববিনিময়ের অবসর। ফলে 888sport live chatচেতনা ও জীবনচেতনায় আমানুল হক অনেক দিক দিয়ে হয়ে পড়ছিলেন আলাদা, 888sport appর জীবনের নানা সংকীর্ণতা ও প্যালেস্টাই ভাবধারায় পীড়িত, ক্ষুদ্রতা-আক্রান্ত সমাজে খাপ খাওয়াতে অসমর্থ এক হাঁপিয়ে-ওঠা মানুষ, আনন্দরস ও জীবনরস আহরণের একমাত্র উপায় ছিল অনাথ মাঝিকে সাথি করে নৌকো ভাসিয়ে দেওয়া ও গ্রামবাংলার জীবনের চিত্রধারণ। প্রকাশিতব্য আমার দেশ – চিত্রমালা বইয়ের ভূমিকায় তাই তিনি লিখেছেন, ‘কাঙ্ক্ষিত কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ কিছুটা সাব-স্ট্যান্ডার্ড ব্যক্তিবর্গ পরিবৃত থাকার কারণে স্বতঃস্ফূর্ত যোগাযোগ ব্যাহত হচ্ছিল, বেশকিছু ব্যতিক্রমী বিষয়ের কথা স্বীকার করে নিয়েও তৎকালীন বিদ্যমান সামগ্রিক পরিবেশের প্রেক্ষিতে এ-কথা বলা যায়। পরমতসহিষ্ণুতা ও আত্ম-সমালোচনার অভাবকে যারা পাশ কাটিয়ে চলতে অভ্যস্ত তাদের সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ নিষ্প্রয়োজন।’ সুরুচির অসাধারণ প্রকাশ ঘটিয়ে চারপাশের মানুষজন ও পরিবেশের বৈরিতা প্রসঙ্গে এর চেয়ে খোলামেলা আর কিছু তিনি ব্যক্ত করতে পারেননি।

কী ছবি তুলেছেন আমানুল হক বাংলার পথে-প্রান্তরে অনুসন্ধানী দৃষ্টি নিয়ে ঘুরে? তাঁর পরিকল্পিত আমার দেশ – চিত্রমালা যখন প্রকাশ পাবে তখন এর বড় পরিচয় পাবেন আগ্রহীজনেরা, তবে এককথায় বলা যায় তিনি খুঁজে ফিরেছেন সেই পরম মুহূর্ত যখন ক্যামেরার শাটার চকিতে ধারণ করে রাখবে দৃশ্যপট, আর বিষয় হিসেবে লক্ষ করেছেন মানব-অস্তিত্ব, জীবন-পরিস্থিতি কখন প্রকাশ করে জীবনের বৃহত্তর বাস্তবতা। সত্যজিৎ রায় তাঁর সম্পর্কে বলেছিলেন, ইন্টারপ্রেন্টার অব অ্যাকচুয়ালিটি, কথাটার জুতসই বাংলা পাওয়া মুশকিল, রিয়েলিটি না বলে কেন সত্যজিৎ বললেন অ্যাকচুয়ালিটি সেটাও তলিয়ে দেখা দরকার। সত্যজিৎ আরো লিখেছিলেন, ‘এক প্রজন্মেরও বেশি সময় ধরে আমানুল তার নিজের দেশের জীবনধারার প্রতিটি বিষয় পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে চিত্রিত করে বাঙালি জীবন ও সংস্কৃতির সামগ্রিক প্রকাশে গভীর ভালোবাসার স্বাক্ষর রেখেছে।’ আরেক দিক দিয়ে সত্যজিৎ রায় আমানুল হককে বড় স্বীকৃতি দিয়েছেন, আমানুলের তোলা সত্যজিতের বিভিন্ন প্রতিকৃতির মধ্যে চোখ কুঁচকে ক্যামেরার লেন্সে নিবিষ্টভাবে তাকানো পরিচালকের ছবিকে তিনি বলেছিলেন, আমার সেকেন্ড বেস্ট পোর্ট্রেট। আমানুলের জিজ্ঞাসার জবাবে জানিয়েছিলেন যে, শ্রেষ্ঠ পোর্ট্রেটটি ম্যাগনামের মার্ক রিবিউর তোলা। এ-যে কত বড় স্বীকৃতি সেটা যাঁরা ফটোগ্রাফার তাঁরা ভালোভাবে বুঝবেন।

সত্যজিতের জীবনীকার ইংরেজ লেখিকা মারি সিটন, যিনি সের্গেই আইজেনস্টাইনের জীবনীও লিখেছেন, আমানুল হককে জেনেছিলেন ঘনিষ্ঠভাবে এবং তাঁর গ্রন্থে আমানুলের বর্ণনাদান প্রসঙ্গে লিখেছিলেন, ‘অভিযান ছবির সঙ্গীত রচনার রেকর্ডিংয়ের প্রথম দিনটি সারাটি সময় একটু পরপর ক্যামেরার ‘ক্লিক’ ‘ক্লিক’ শব্দ কানে আসছিল, ছোটখাটো হালকা-পাতলা গড়নের একজন মানুষ নাম তার এ. হক, চিরায়ত মুসলমান নাম, আপ্রাণ চেষ্টায় ফরাসের চারদিকে ঘুরে ঘুরে অনবরত ছবি তুলে যাচ্ছিলেন। ফটো তোলার অশেষ প্রচেষ্টা যে তাকে কখনো কখনো অভুক্ত রাখে সে-কথা আমি অনুভব করেছিলাম। পরে তার কাজের পরিসর আর প্রিন্ট দেয়ার নিঃস্বার্থ উদারতা থেকে আমি উপলব্ধি করতে পেরেছিলাম বাস্তবজীবন থেকে বিচ্ছিন্ন এমন এক আলোকচিত্রীকে যিনি মহৎ আলোকচিত্রের স্রষ্টা অথচ তার বিনিময়ে জাগতিক সুবিধা আদায়ে নিষ্পৃহ।’ আমানুল হকের পুরো নাম না লিখে বিসদৃশ এ. হক নাম কেন ছাপা হলো বইয়ে তারও এক কারণ রয়েছে। পাকিস্তানি সেই জমানায় ভারতে যাতায়াত ও সত্যজিৎ-সঙ্গ শাসকদের কাছে ছিল প্রায় রাষ্ট্রদ্রোহের মতো গর্হিত কর্ম, আর তাই আমানুল অনুরোধ করেছিলেন মারি সিটনকে অমন আড়াল রচনা করতে।

ইংরেজ রমণী মারি সিটন তাঁর তীক্ষ্ণ পর্যবেক্ষণ ও গভীর সংবেদনশীলতা নিয়ে ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন আমানুল হককে। 888sport appsের স্বাধীনতার পর আমানুল হককে চিঠি লিখে তাঁর সহায়তা কামনা করেছিলেন মারি সিটন, তিনি ছিলেন যুক্তরাজ্যের উদ্বাস্ত্ত সহায়ক কার্যক্রমের অবৈতনিক সাধারণ সম্পাদক। মুক্তিযুদ্ধকালে এই কমিটি গঠিত হয়েছিল ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর উদ্যোগে এবং যুদ্ধের পর উদ্বাস্ত্তরা দেশে ফিরে গেলে কমিটির কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়, অথচ হাতে ছিল উদ্বৃত্ত অর্থ। মারি সিটন জানতে চেয়েছিলেন যে, এই উদ্বৃত্ত অর্থ একাত্তরে যৌন নির্যাতনের শিকার 888sport promo code ও যুদ্ধশিশুদের কল্যাণে ব্যবহার করা যায় কিনা। আমানুল হক প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে পৌঁছে দিয়েছিলেন চিঠি যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য। পরিণতি কী হয়েছিল তা অবশ্য জানা যায় না।

বর্তমান সরকার যখন আমানুল হককে 888sport cricket BPL rateে পদকে সম্মানিত করে সেটা তাঁর জন্য অশেষ আনন্দময় হয়েছিল। অসুস্থ শরীরেও তিনি উপস্থিত হয়েছিলেন সভামঞ্চে এবং সরবে উচ্চারণ করেছিলেন, ‘সকল মাতৃভাষার জয় হোক।’ পরে 888sport cricket BPL rateে পদক হিসেবে প্রাপ্ত সোনার মেডেল ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বাক্ষরিত সম্মাননাপত্র তিনি দান করেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরকে, সুপরিসর নতুন জাদুঘর ভবনে 888sport cricket BPL rateের ঘটনাধারার উপস্থাপনায় শহীদ রফিকের গুলিবিদ্ধ মাথার ছবির পাশে যেন স্থান পায় চিত্রগ্রাহক-প্রাপ্ত 888sport cricket BPL rateে পদকের সোনার মেডেল, তাঁর তমসুক।

 

দুই

আমার জীবনের এক বড় পাওয়া এই মানুষটির সান্নিধ্য, তিনিই আমাকে সাগ্রহে টেনে নিয়েছিলেন কাছে, যদি কোনোভাবে কখনো কোনো কাজে লাগতে পারতাম, শিশুসুলভ আনন্দে তাঁর মন ভরে উঠতো, অনাবিল হাসিতে উদ্ভাসিত হয়ে আমাদের কৃতজ্ঞতাকে মুছে দিতে পারতেন তাঁর খুশি দিয়ে। তাঁর জীবনের বড় আনন্দের বিষয় ছিল কানাডা-প্রবাসী দুই তরুণের উদ্যোগের ফসল হিসেবে 888sport cricket BPL rateে ফেব্রুয়ারির আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতিলাভ। দেশের অর্জন যে কেউ এমন নিঃস্বার্থ ও অনাবিলভাবে নিজের প্রাপ্তি হিসেবে বিবেচনা করতে পারে সেটা কল্পনা করাও কঠিন। তিনি ছুটে গিয়েছিলেন শহীদ মিনারে, লাল সালু কাপড়ের ব্যানার তৈরি করে শহীদ মিনারে তা মেলে ধরে তুলেছিলেন নানা ভঙ্গিমার ছবি, যেন কোনো সুন্দরী-শ্রেষ্ঠার মহামূল্যবান চিত্রধারণ করছেন তিনি। তিনি তখন থাকতেন মহাখালীতে তাঁর ভাইয়ের বাসায় চারতলার ছাদের ঘরে। শরীর তাঁর ভেঙে পড়তে শুরু করেছে, অকৃতদার এই মানুষটিকে ভাইবোনেরা আগলে রেখেছিল বুক দিয়ে, কিন্তু তিনি স্বভাবে স্বাধীনচেতা, থাকতে হবে বটে অপরের সংসারে, তবে এর মধ্যেও যতটুকু স্বাধীনভাবে থাকা যায় সেটাই তাঁর চেষ্টা। তাঁর ঘরের সবরকম কাজকর্ম তিনি নিজে করার চেষ্টা করেন যথাসাধ্য। সেই ঘর ঠাসা আছে অজস্র কাগজপত্রে, ছবির প্রিন্ট ও নেগেটিভে, শহীদ মিনারে বয়ে নিয়ে যাওয়া সেই লাল ব্যানারটিও গুটিয়ে রাখা আছে ঘরের এক কোণে। সত্যজিৎ রায়ের মৃত্যুর পর তাঁর পাঠকক্ষে আলমারি-শোভিত পুস্তক এবং টেবিলে-টুলে-মেঝেতে ডাঁই করা বই ও কাগজপত্রের মাঝে সন্দীপ রায়ের ছবি তুলে আমানুল হক মন্তব্য করেছিলেন, ঐতিহ্যের বিস্তার। তাঁর নিজের ঘর স্বল্প-পরিসর, তবে চরিত্রগতভাবে একইরকম, যাঁরা দেখেছেন তাঁরাও বলবেন, ঐতিহ্যের বিস্তার।

তিনি তখন ব্যস্ত 888sport cricket BPL rateের তমসুক গ্রন্থের মুসাবিদা নিয়ে। ছবি বাছাই এবং ছবি ও কথার যথাযথ সমন্বয় ঘটাবার ক্ষেত্রে তাঁর ছিল গভীর উপলব্ধি, অন্যদিকে প্রকাশকের ব্যয়সাশ্রয় ঘটাবার দিকেও মনোযোগী। ফলে শেষ পর্যন্ত বইটিতে কিছুটা ঠাসাঠাসি ভাব এসে গেল, আমাদের দুর্বলতার কারণে এর যথাযথ খোলতাই ঘটল না। এরপর বইয়ের একটি ইংরেজি সংস্করণ প্রকাশের জন্য উতলা হয়ে পড়েন আমানুল হক। তাঁর ধারণা হয়েছিল, 888sport cricket BPL rateে ফেব্রুয়ারি ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ ঘোষিত হওয়ায় প্রবাসী বাঙালি পরিবারে ও নতুন প্রজন্মের সদস্যদের মধ্যে বাংলা ভাষা, ঐতিহ্য ও 888sport cricket BPL rateে ফেব্রুয়ারির ইতিহাস সম্পর্কে জানার আগ্রহ বাড়বে এবং এরা যেহেতু বাংলা পড়তে পারগ নয়, খুঁজবে ইংরেজি বই, আর তাই ইংরেজিতে বাংলা ভাষা ও 888sport cricket BPL rateের ইতিহাস লিপিবদ্ধ করা জরুরি এবং 888sport cricket BPL rateের তমসুক তো এ ক্ষেত্রে অতি উত্তম আদর্শ।

ভাবনা-অনুযায়ী তিনি নিজেই লেগে গেলেন কাজে, 888sport app download apk latest version সম্পন্ন করলে টাইপসেট করা পান্ডুলিপি দেখে দেন 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজির অধ্যাপক তাঁর অনুজ আহসানুল হক। তবে বিশেষ কিছু দেখার ছিল না, সুললিত ও মার্জিত ইংরেজিতে যথাযথ 888sport app download apk latest version করেছিলেন আমানুল হক, যখন যেখানে যেমন প্রয়োজন হয়েছে লেখকের স্বাধীনতাও তিনি নিতে পেরেছিলেন তাঁর কাজে। তবে এটুকুই, প্রকাশিত বইয়ের জন্য বিশাল প্রবাসী পরিবারবর্গ যে হাত বাড়িয়েছিল, এমন বই হাতে পেয়ে, কিংবা পাওয়ার সম্ভাবনায় আহ্লাদিত হয়েছিল তা বলা যাবে না।

এরপর ভাইয়ের পরিবারটি কানাডা-প্রবাসী হলে আমানুল হক চলে আসেন জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা ফটোগ্রাফার আজমল হকের বাসায়, শাহবাগের আজিজ কো-অপারেটিভ সোসাইটির বহুতল ভবনের আবাসে। এখানে তিনি সম্পন্ন করেন প্রসঙ্গ সত্যজিৎ গ্রন্থের কাজ, অসংখ্য ছবি ও সবিস্তার টেক্সটের গাঁথুনিতে এ-এক অপূর্ব গ্রন্থ, আমরাও প্রকাশনায় ছিলাম সর্বতোভাবে যত্নবান, কোথাও কোনো কার্পণ্য যেন না ঘটে সেদিকটায় সচেতন। প্রসঙ্গ সত্যজিৎ ব্যতিক্রমী বই হিসেবে সমাদৃত হয়েছে। আলোকচিত্রীও যে হতে পারেন সংবেদনশীল প্রাবন্ধিক, এ-গ্রন্থে তা প্রমাণ করেছেন আমানুল হক। সত্যজিৎ রায় সম্পর্কে অজস্র তথ্যসংবলিত বইয়ে ব্যক্তি ও 888sport live chatী হিসেবে তাঁর বৈশিষ্ট্য নানাভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন তিনি। এ-বইয়ের কাজের সুবাদে তাঁকে আরো ঘনিষ্ঠভাবে জানার সুযোগ হয়। তিনি সুরুচিবান, স্বশিক্ষিত ও গভীর 888sport live chatবোধসম্পন্ন এক মানুষ, চারপাশের সমাজের বিত্তসন্ধানী উদ্ভ্রান্ত দৌড় এবং মিডিয়ার তরলতার আগ্রাসন তাঁকে খুব পীড়িত করে। গৃহকোণে আপন শান্তির নীড়ে তাঁর দিন কাটে 888sport sign up bonus হাতড়ে জীবন বিশ্লেষণ করে, পুরনো ছোট ছোট ঘটনা তাঁকে জোগায় অনেক বড় উদ্যম, কীভাবে সেকেলে অতি সাধারণ যন্ত্রপাতি ও সামান্য বিত্ত নিয়ে সত্যজিৎ রায় নির্মাণ করেছেন বিশ্বসেরা সব live chat 888sport, তার অন্যতম সাক্ষী তিনি, নিজেও কখনো কোনো দামি ক্যামেরা ব্যবহার করেননি। বিপুল ক্ষমতাসম্পন্ন লেন্স, স্বয়ংক্রিয়ভাবে কার্যকর ডিজিটাল ক্যামেরা ইত্যাদি ছিল তাঁর নাগালের বাইরে, অন্যদিকে সেসব পাওয়ার জন্য কখনো লালায়িতও হননি, কেননা তিনি জানেন, ক্যামেরার পেছনের মানুষটি 888sport live chatের বিচারে শেষ পর্যন্ত মুখ্য হয়ে ওঠেন।

তাঁর কাছে গেলে জানা যেত মহৎ 888sport live chatসম্পাদনের অনেক গল্প, পাশাপাশি সাধারণ মানুষের অসাধারণ বিভিন্ন কাহিনি। সত্যজিৎ রায়ের ব্যক্তিগত অনেক কথাও তিনি শুনেছেন, জেনেছেন ব্যক্তিজীবনের সংকট বা টানাপড়েনের কথা, কিন্তু সত্যজিৎ-সুলভ ব্রাহ্মসংস্কৃতির ঐতিহ্য বোধ করি তাঁর মধ্যেও বিস্তার পেয়েছিল, সেসব নিয়ে লঘু কথনে তিনি কখনো মাতেননি। একই কারণে সাক্ষাৎকার প্রদানে তাঁর ছিল প্রবল অনীহা, প্রতিবেদক হয়তো শুনে গেলেন বিস্তর, আর ছাপার সময় খুঁজলেন কোথায় রয়েছে তরল মজাদার তথ্য ও বক্তব্য। সর্বশেষ যে-সাক্ষাৎকার প্রকাশ পেয়েছিল অগ্রণী জাতীয় দৈনিকের 888sport live football সাময়িকীতে, সেখানে তাঁর অকৃতদার জীবন সম্পর্কে অরুচিকর ইঙ্গিতদানের চেষ্টা তাঁকে পীড়িত করেছিল গভীরভাবে। একবার তাঁর ওপর ফটো-ডকুমেন্টারি করবার জন্য এক তরুণীকে অনুমোদন দিয়েছিলেন, কিন্তু সেই তরুণী যখন তাঁর বিছানার ওপর দাঁড়িয়ে শয্যাগত আমানুল হকের ছবি ‘ক্লিক’ করতে শুরু করল মহাবিরক্ত 888sport live chatী তাঁকে তাৎক্ষণিক বিদায় জানাতে বাধ্য হয়েছিলেন।

বাড়িতে খুব বেশি মানুষের যাতায়াত ছিল না, কিন্তু কেউ এলে সুসজ্জিতভাবে তাঁর সামনে উপস্থিত হতে তিনি সদা সজাগ থাকতেন। অতিথি আপ্যায়নে ছিলেন দরাজদিল। হাঁপানির টানে কাবু হয়ে পড়লেও নিজের শয্যাগত অবস্থান যে-কাউকে দেখাতে রাজি হতেন না, পারিপাট্য ছিল তাঁর সদা-অনুশীলিত সদা-কাম্য আচার। আমানুল হকের ছবিতেও আমরা দেখি এমনি পারিপাট্য, এদিক দিয়ে তাঁর এসথেটিক্সের সঙ্গে সত্যজিৎ রায়ের নন্দন-ভাবনার মিল খুঁজে পাওয়া যায়। হেনরি কার্তিয়ে ব্রেসোঁ যখন মোমা বা নিউইয়র্ক মিউজিয়ম অব মডার্ন আর্টের পক্ষে বিশ্বসেরা আলোকচিত্র নিয়ে প্রকাশ করেন ফ্যামিলি অব ম্যান গ্রন্থ তখন সেখানে human condition পর্যায়ে বিভিন্ন ছবির মধ্যে একটি মাত্র সাজানো ছবি স্থান পেয়েছিল, সেটি ছিল পথের পাঁচালীর সেই অপূর্ব কম্পোজিশন, শিশু অপুর চুল অাঁচড়িয়ে স্কুলে পাঠানোর প্রস্ত্ততি নিচ্ছেন তার মা এবং বোন দুর্গা। এই তথ্য আমার আমানুল হকের কাছ থেকে জানা, পরে প্রসঙ্গ সত্যজিৎ গ্রন্থে এর উল্লেখও তিনি করেছেন, তবে বিস্তারিত বলেননি, ব্যাখ্যা করেননি ব্রেসোঁর মতো অমন জগৎসেরা আলোকচিত্রী বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ছবির ডকুমেন্টেশন যখন করলেন, তখন বাস্তবের সব আলোকচিত্রের পাশাপাশি একটি মাত্র অবাস্তব তথা সিনেমার স্টিল কেন জায়গা দিলেন এই নন্দনতাত্ত্বিক জিজ্ঞাসার উত্তর খোঁজার মধ্যে আমরা পাব আমানুল হকের 888sport live chatভাবনার পরিচয়, পাব উপলব্ধির চাবিকাঠি, কেন সত্যজিৎ রায় আমানুল হককে রিয়েলিটির ধারক বললেন না – বহু আলোকচিত্রী আছেন এই ঘরানায় – বরং বললেন অ্যাকচুয়ালিটির ব্যাখ্যাতা, তেমন আলোকচিত্রী বিশেষ খুঁজে পাওয়া যাবে না।

আমানুল হক তাঁর জীবনভর কাজ, তাঁর ‘আমার দেশ’ চিত্রমালার মাধ্যমে বাংলার অন্তরাত্মার ব্যাখ্যা মেলে ধরতে চেয়েছিলেন সকলের সামনে, তাঁর ছবি তাই নিছক ছবি নয়, এ-ছবি অনেক কথা বলে, সে-কথার সঙ্গে মিলিয়ে নিতে হবে তাঁর ছবির পাঠ, আলোকচিত্রের নন্দনতত্ত্বে এ এক ব্যতিক্রমী সংযোজন, ব্যতিক্রমী তবে পৃথিবীর মহান আলোকচিত্রমালায় ঠাঁই করে নেওয়ার মতো ছবি ও চিত্রভাবনা তিনি রেখে গেছেন।

আমাদের কালের মহৎ এই 888sport live chatীকে সমাজ পুরোপুরি বুঝে উঠতে পারেনি, বোঝার চেষ্টাও করেনি, তাই তিনি ছিলেন নিভৃতচারী, কিন্তু জীবনবিবাগী নন, ছিলেন জীবনসাধক এবং সেই সাধনার সম্পদ রেখে গেছেন সবার জন্য। এ-আমাদের বিশাল পাওয়া, তাঁর কাছে আমাদের অশেষ ঋণ, আছে বিশেষ তমসুক।