আমার রবিউলভাই

কালকে রাতে আমি কথা বলছিলাম শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, বন্ধু মন্দিরা ভাদুড়ির সঙ্গে। মন্দিরা বাংলা 888sport live footballের বিখ্যাত লেখক সতীনাথ ভাদুড়ির নাতনি। মন্দিরাকে বলছিলাম, আমি পড়তে খুব ভালোবাসি। বাংলা 888sport live footballের প্রথিতযশা কিছু লেখক আছেন, যাঁদের লেখা পড়ে চোখ বন্ধ করে তা অনুভব করি। তাঁদের লেখার ফর্ম বা রূপ, বানানরীতি, যতিচিহ্নের ব্যবহার, কমা, দাড়ি, হাইফেন, লম্বা হাইফেন, কোলন, প্যারা নির্মাণের শৈলী আমাকে মুগ্ধ করে। সবমিলিয়ে লেখাটাকে তাঁরা পেইন্টিংয়ের পর্যায়ে নিয়ে গেছেন। এরকমের লেখা পড়ে আমি আনন্দ পাই, অনুপ্রাণিত হই এবং নিজেও লিখতে উৎসাহ পাই।
আর আজ সকালবেলা মনে হলো, ধুর, কী হবে লিখে। কয়েকদিন আগেই কল্পনা আপা আমাকে লিখেছেন, ‘রবিভাই খুব অসুস্থ জানিস। বঙ্গবন্ধু হাসপাতালে ভর্তি আছে। ৬১১ নম্বর রুমে। মন ভালো নেই, সবাই দোয়া কর।’
আমি নিউজপেপার পড়ি না; কিন্তু বাসায় তিন-চারটি পেপার রাখা হয় জানি। আমি হাতে নিয়ে দেখিও না। নিউজপেপারে কাজ করেছি তেরো-চোদ্দো বছর! অথচ, কেন যে এই বিতৃষ্ণা এলো! সকালে ঘুম ভাঙল সেলফোনের টুংটাংয়ে। কল্পনা আপা লিখেছেন, ‘আজ সকালে আমার রবিভাই চলে গেছে …।’ লেখার সঙ্গে একটি ছবি : রবিভাই আর কল্পনা আপা। হাস্যোজ্জ্বল দুই ভাইবোন গলা জড়িয়ে ধরে আছেন।
এসব সময়ে মনে হয়, মানুষের ভাষা কত দীন! রবিউলভাই আর নেই, এ-কথা কোন ভাষায় বোঝাব? বিছানা ছেড়ে ঘরের মধ্যে হাঁটছি, ভাবছি, কী পড়লাম? কার ছবি দেখলাম Ñ ঘুমজড়িত মস্তিষ্কের জড়তা কাটতে দেরি হয়। বারান্দায় গিয়ে দাঁড়িয়েই থাকলাম। মনে হলো গ্রিলে মাথা গলিয়ে চেঁচিয়ে জিজ্ঞেস করি, রবিউলভাই কোথায় চলে গেছে? কী যা-তা বলছেন? ঘরে এসে বিডিনিউজটোয়েন্টিফোরডটকমে দেখলাম : সত্যিই রবিভাই আর নেই।
রবিভাই তো আমার আত্মার আত্মীয়। আমার প্রথম আর্ট এক্সিবিশন হলো ’৯৪ সালে, যোজন আর্ট গ্যালারিতে। ছোটখাটো আমি তাঁর গ্রিনরোডের গ্রিন সুপার মার্কেটের পেছনে জাহানারা গার্ডেনের অফিসে গিয়ে বললাম, ‘আমি এক্সিবিশন করব। আমার এক্সিবিশন করে দিতে হবে।’ আমি বেশ উত্তেজিত। যেন আমার অনেক অধিকার আছে ওঁর ওপর।
তিনি বিখ্যাত মানুষ। 888sport appsের দ্বিতীয় প্রজন্মের বিশিষ্ট আর্কিটেক্ট, 888sport live footballিক, কবি, 888sport live chatী, 888sport live chat-সমালোচক, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি, বঙ্গবন্ধু জাদুঘর, জাতীয় 888sport app download apk পরিষদ Ñ কোথায় নেই তিনি। তাঁর কথা তো হরহামেশাই লালিমভাইয়ের কাছে শুনেছি। বুয়েটের প্রথমদিকের ছাত্র তিনি Ñ ছাত্রজীবনেই রোমাঞ্চকর 888sport live football-আন্দোলন করেছেন। বৃষ্টি তাঁর খুব প্রিয় ছিল। যৌবনে তিনি ধোঁয়াওঠা তুমুল বৃষ্টির ভেতর ড্রাইভ করতে ভালোবাসতেন। গাড়ি নিয়ে লং ড্রাইভে চলে যেতেন। কুষ্টিয়ায়, আমার কিশোর বয়সে তিনি ছিলেন কিংবদন্তি!
অফিসে তাঁর রুমে বিরাট টেবিল। টেবিলের ওপর কাঁটা-কম্পাস, সেট-স্কয়ার, নানা ধরনের স্কেল, স্প্যাচুলা, ড্রাফটিং পেন, থ্রি-বি, ফোর-বি, ফাইভ-বি, সিক্স-বি পেনসিল। তিনি নিবিষ্টমনে টেবিলে ঝুঁকে ড্রইং করে যাচ্ছেন। আমি যে আমার আর্ট এক্সিবিশনের কথা বলেছি তিনি মন দিয়ে শুনেছেন বলে মনে হলো না।
অফিসের পাশেই কোথাও নির্মাণকাজ চলছিল। বাতাসে কানে ভেসে এলো, একজন নির্মাণ শ্রমিক হয়তো আরেকজনকে বলছে, ‘হারামজাদা কই গেলি …।’ রবিভাই ড্রইং করতে করতে আপনমনে উত্তর দিলেন, ‘এই তো এখানে …।’
এবার আমার দিকে তাকালেন, বললেন : ‘কথাটি যাকেই বলুক না কেন, আমি তো শুনেছি। তাই উত্তর দিলাম।’ গাল চওড়া করে নিঃশব্দে হাসলেন। যেমনটি করে তিনি হাসতেন। আমিও হেসে ফেললাম। খুব মজা পেলাম। এমন মানুষও হয়!
ওইদিন তিনি আমাকে অফিসেই লাঞ্চ করালেন। তারপর আমার এক্সিবিশনের জন্য কত জায়গায় যে ফোন করলেন। নিতুন দাদাকে (অটবীর প্রতিষ্ঠাতা নিতুন কুন্ডু) ফোন করে বললেন, ‘আমাদের রফির আর্ট এক্সিবিশন, অমুক তারিখে নির্ঝরের যোজনে, থাকতে হবে বিশেষ অতিথি হয়ে।’ 888sport appsের ফাদার অব আর্কিটেক্ট মাজহারুল ইসলামের কাছে আমার যাওয়ার ব্যবস্থা করলেন। বললেন, ‘তিনি হবেন প্রধান অতিথি।’ এক্সিবিশন স্পন্সরশিপের জন্য নানা জায়গায় ফোন করলেন। তখন আর্ট এক্সিবিশন সহজ ছিল না। স্পন্সর তো আরো পরের কথা। তবু হাল ছাড়লেন না। ওইদিনই তিনি অফিসে বসে আমার এক্সিবিশনের ওপর ক্যাটালগের লেখাটি ইংরেজিতে লিখে ফেললেন। এমন অনায়াসে লেখা যায় আর্ট নিয়ে? আমি অবাক হয়ে রবিভাইয়ের খুঁটিনাটি দেখছিলাম।
খুব মনে পড়ে, এক বিকেলে স্থপতি মাজহারুল ইসলামের কাছে গেলাম। তাঁর পরীবাগের বাসায়। প্রচুর গাছপালায় ঘেরা পুরনো সুন্দর বাড়ি। তিনি আমার সঙ্গে কথা বললেন। আমার আঁকা ছবি দেখলেন। বললেন, ‘রবিউল ও নির্ঝর আপনার কথা আমাকে বলেছে। আমি ভেবেছিলাম আপনি আরো বয়স্ক হবেন, এখন তো দেখছি আপনার বয়স অনেক কম। দেখতে আরো ছোট …। দেখুন আমি আর্ট কলেজের আর্কিটেক্ট বটে, কিন্তু আমাকে কেউ আর্ট এক্সিবিশন উদ্বোধন করতে বলেননি। অনুরোধও করেননি। আপনিই প্রথম এলেন …। আমি ভেবে দেখি। তবে একটা শর্ত আছে যে, আপনি আগামী এক সপ্তাহ প্রতিদিন বিকেলে আমার সঙ্গে চা খাবেন। আমরা কথা বলব …।’
এই অভিনব প্রস্তাবটি আমার খুব ভালো লেগেছিল। এতবড় একজন মানুষের সঙ্গে আমি কথা বলব! সে আরেক উত্তেজনা। দ্বিতীয় বৈঠকেই আমার অনুরোধে আমাকে ‘তুমি’ করে সম্বোধন করেছিলেন। তিনি আমার কাছে অনেক 888sport sign up bonus রোমন্থন করেছিলেন। তাঁর পরিকল্পনা, ভাবনা Ñ এসব নিয়ে বলেছিলেন। আমাকে যে স্নেহ ও ভালোবাসা তিনি দেখিয়েছিলেন তা আমার আজীবন মনে থাকবে। রবিউলভাইকে আমি শেয়ার করতাম। রবিভাই খুশি হতেন।
আমার প্রথম আর্ট এক্সিবিশনের প্রধান অতিথি ছিলেন মাজহারুল ইসলাম, বিশেষ অতিথি 888sport live chatী রফিকুন নবী, 888sport live chatী নিতুন কুন্ডু, স্থপতি রবিউল হুসাইন। সভাপতিত্ব করেছিলেন যোজন গ্যালারির স্থপতি এনামুল করিম নির্ঝরভাই। ইন্টারেস্টিং হলো : প্রদর্শনী স্পন্সর করেছিল 888sport apps রাইফেলস, 888sport apps সেনাবাহিনী। তবে রবিউলভাইও জীবনে সেই প্রথম কোনো আর্ট এক্সিবিশনে অতিথি হয়েছিলেন। তিনিও মাজহারুল ইসলাম স্যারের মতো বলেছিলেন, ‘আমি আর্ট নিয়ে লিখি, কিন্তু কেউ তো আমাকে অতিথি হওয়ার জন্য অনুরোধ করেনি!’
আজ ভাবতে ভালো লাগে যে, তিনি আমাকে ছোটভাইয়ের মতো আগলে রেখে আমার প্রথম প্রদর্শনীর অনেক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব অনায়াসে পালন করেছিলেন। তারপর তাঁকে নিয়ে, তাঁকে ঘিরে কত কত 888sport sign up bonus আমার! কত রাতজাগানিয়া আড্ডা। এখন সে-কথা থাক। আজ যখন তাঁকে নিয়ে লিখছি, তখন তিনি শুয়ে আছেন হাসপাতালের হিমঘরে। এক-এক সময় বিভ্রম মনে হচ্ছে। তাঁর এত গুণগ্রাহী ও বন্ধু-পরিজন তাঁকে নিয়ে বলছেন। অথচ তিনি নিজে উপস্থিত নেই। কোথায় সেই শিশুর মতো সরল হাস্যময় মুখ, সেই নিঃশব্দ চওড়া হাসি! অনেক সময় রবিভাইয়ের সঙ্গে আমি 888sport live chatবিষয়ক লেখা নিয়ে তর্ক করেছি। ঘোরতর মতের অমিল নিয়ে আমি মন খারাপও করেছি। কিন্তু কখনো রবিভাই আমাকে দূরে সরিয়ে দেননি। আজ রবিভাই নিজেই দূরে চলে গেলেন। অনেক দূরে। যে দূর থেকে আর ফেরে না কেউ। কেমন শূন্য হয়ে গেলাম!
বিখ্যাত 888sport live chatী মুর্তজা বশীর স্যার আমার ফেসবুক দেয়ালে লিখেছেন : ‘রবিউল হুসাইন আর নেই জেনে এক ধরনের শূন্যতা আমাকে ঘিরে ফেলল। আমার বড় প্রিয় মানুষ। এই বেদনা রাখার মতো শক্তি আল্লাহ আমাকে যেন দেন …।’
দুই
যতবার রবিউলভাইয়ের চেহারাটি মনে পড়ছে, ততবারই তাঁর হাস্যময় মুখটিই চোখে ভাসছে। রূপবান পুরুষ ছিলেন রবিউলভাই। গায়ে টোব্যাকোর সুবাস, হাতে পাইপ। গায়ে দামি চিকন লম্বা স্ট্রাইপের শার্ট। অথবা ডেনিম শার্ট। বুক পর্যন্ত শার্টের বোতাম খোলা। গলায় রুপোর পুরু চেইন। তাতে তারকোয়েজ লকেট ঝুলছে। হাতে রুপোর ব্রেসলেট …। চওড়া বুক ও কাঁধের কবি হেঁটে চলেছেন!
আমরা যখন সদ্য স্কুল ছাড়িয়ে কলেজে এসেছি, তখনই রবিউল হুসাইন দেশের প্রতিষ্ঠিত কবি। আমি গত শতাব্দীর আশি সালের কথা বলছি। তখন আমরা কুষ্টিয়ার কয়েকজন উদীয়মান তরুণ
888sport app download apk-888sport live chat-888sport live football নিয়ে চর্চা করছি, পাবলিক লাইব্রেরিতে একত্রিত হচ্ছি প্রত্যহ বিকেলে বা সন্ধ্যায়। ঠিক এ-সময়ে কালজয়ী অভিনেতা রাজু আহমেদের সহোদর লালিম হকের সঙ্গে পরিচয়। তিনিই আমাদের প্রধান মানুষ হয়ে উঠলেন কিছুদিনের মধ্যে। লালিমভাইয়ের নেতৃত্বে রাজু আহমেদ 888sport sign up bonus সংসদই হয়ে উঠল আমাদের
888sport live football-888sport app download apk-888sport live chat-সংস্কৃতি চর্চার ঠিকানা। কবি রবিউল হুসাইনের 888sport app download apkর সঙ্গে আমাদের পরিচয় তখন থেকে গাঢ় হতে থাকে। তিনি আমাদের আরো আপন হয়ে উঠলেন যখন জানলাম যে তিনি রাজু আহমেদের পরিবারেরই একজন। এভাবেই আমি তাঁরও প্রিয় হয়ে উঠেছিলাম : ‘আরে, তুমি তো আমাদেরই লোক …।’
কত কথা মনে পড়ছে! আবার সব গুছিয়েও আনতে পারছি না। কতশত আড্ডা। চিত্র888sport live chatীরা চিত্রপ্রদর্শনী করছেন আর সেসব আড্ডায় রবিউলভাই নেই Ñ এ ভাবা যায় না। দেশের একেবারে তরুণতম 888sport live chatীর সঙ্গেও রবিউলভাইয়ের পরিচয় ছিল। এটা খুব বিরল। এমনসব কথা বলতেন রবিউলভাই তখন তাঁকে মনে হতো যেন সালভাদর দালির কোনো জগতের সুররিয়ালিস্ট বাসিন্দা! একদিন বেঙ্গল গ্যালারিতে রাতে আড্ডা দিতে দিতে বললেন হঠাৎই, ‘আচ্ছা, এর মানে হয় কোনো? এই যে আমাদের দুটো চোখ, এটা অন্তত ছয়টা হওয়া উচিত ছিল। আমাদের ডিজাইনে ভুল আছে …’
আমি ঔৎসুক্য নিয়ে বলি, ‘ছয়টা কেন?’
‘ধরো পেছনে দুইটা, দুই কানের উপরে দুইটা …’
আমি হাসছি। কিন্তু হাসতে হাসতে দেখতে লাগলাম একজন পরাবাস্তববাদী মানুষকে। প্রসঙ্গ ছাড়া কথা বলতে রবিভাই ভালোবাসতেন। আড্ডার মধ্যে এক রাতে হঠাৎই আমার পাশে এসে বসলেন, এতক্ষণ দূরেই ছিলেন। কক্ষের আরেক প্রান্তে তখনকার পররাষ্ট্র সচিব মিজারুল কায়েসের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছিলেন। কী মনে করে আমার পাশে চেয়ার টেনে বসলেন। লালিমভাইয়ের কথা জিজ্ঞেস করলেন। এ আমাদের দুজনের কমন কথা ছিল, ‘লালিম কেমন আছে …?’ আমাদের কোথাও দেখা হলেই পরস্পরকে এই কথাটি বলতাম! তারপরেই বললেন, অমুক তারিখে অমুকের দাওয়াত পেয়েছো কি না? আমন্ত্রণপত্রে যে ‘জঝঠচ’ লেখা থাকে এর মানে জানো?
বললাম, ‘এটা একটি ফরাসি বাক্য : ‘répondezs’ilvousplaît’ যার ইংরেজি হলো ‘please respond’

। অর্থাৎ দাওয়াতে যাব কি যাব না সে-সংক্রান্ত
বিষয়-আশয়।’ রবিভাই বললেন, ‘দূর বোকা, জঝঠচ হলো ‘রসগোল্লা সন্দেশ ভালো পাবেন’…’
একটি সময়ে রবিউলভাইয়ের গায়ে দামি টোব্যাকোর গন্ধ লেগে থাকত। এ-কথা শুরুতেই বলেছি। ভুরভুর করে সেই গন্ধ বাতাসে ছড়াতে ছড়াতে যেতেন। সাদা জুলপির রূপবান রবিউলভাই, হাতে পাইপ, গায়ে টোব্যাকোর সুবাস, উজ্জ্বল চোখে তাকিয়ে আছেন, তাঁর পাশে হাসনাতভাই, শামসুর রাহমান আর তারকোয়াজ সবুজ চোখের 888sport live chatী মোহাম্মদ কিবরিয়া, একটু দূরে রোকেয়া সুলতানা …। এরকম একটি দৃশ্য চোখে ভাসে। ইন্ডিয়ান কালচারাল সেন্টারে আয়োজিত একটি চিত্রপ্রদর্শনীতে তাঁদের একসঙ্গে একই ফ্রেমে এভাবে দেখেছিলাম।
নব্বইয়ের দশকের শেষের দিকে রবিউলভাইয়ের স্ত্রী অসুস্থ হলে স্ত্রীর জন্য তাঁর উৎকণ্ঠা দেখেছি। স্ত্রী 888sport app মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে। তিনি সারাদিন 888sport app মেডিক্যালে থাকতেন। হাসনাতভাইয়ের সঙ্গে আমি প্রায় প্রতিদিনই অফিসশেষে মেডিক্যালের ক্যান্টিনে গিয়ে রবিউলভাইয়ের কাছে যেতাম। সেখানে খুব মরবিড কথা বলতেন রবিউলভাই। সেই রবিউলভাইকে আর অন্যকিছুর সঙ্গে মেলাতে পারতাম না! আমাদের বলতেন, স্ত্রীর উন্নত চিকিৎসার জন্য ধানম-ির অ্যাপার্টমেন্ট বিক্রি করে দেবেন; কিন্তু 888sport live chatী নিতুন কুন্ডু ঘোর বিরোধিতা করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘আমি আছি, আমি থাকতে কিছু বিক্রি করতে হবে না …।’ 888sport live chatী নিতুন কুন্ডু ছিলেন আরেক বিশাল হৃদয়ের মানুষ।
পাস্কাল নামে আমার এক তরুণ ফরাসি বন্ধু ছিল। ২০০৩ সালের দিকে পাস্কাল আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের পরিচালক। আমি ফ্রান্সের একটি আর্ট ট্রিয়েনাল থেকে 888sport app download bd পেলে পাস্কালের সঙ্গে আমার বন্ধুতা গাঢ় হয়। পাস্কাল আলিয়ঁসের গ্যালারিতে ওই সময় আমার একটি একক চিত্রপ্রদর্শনীরও আয়োজন করে। পাস্কাল নিজেও একজন কবি ও লেখক। মাঝেমধ্যেই পাস্কাল আর ওর বান্ধবী আমার ধানম-ির স্টুডিতে আসত, আড্ডা হতো। সে রবিউলভাইকে খুব পছন্দ করত। রবিউলভাই আসতেন! অনেক আড্ডা হতো। একবার রাতে এমন বৃষ্টি হলো যে, সারারাত বৃষ্টিতে আমাদের এলাকা ভেসে গেল। সারারাতই রবিউলভাই, পাস্কাল, ওর বান্ধবী আর আমি আড্ডা দিয়েছিলাম। রবিভাই গান গেয়েছিলেন। কিন্তু গুনগুন করে গাইলেন। ওইদিন মনে হয়েছিল, রবিভাই বেশ লাজুকও! ভোররাতে তাঁরা চিকন বৃষ্টির মধ্যে বেরিয়ে গেলেন। এক হাঁটুপানিতে নেমে তাঁরা হেঁটে যাচ্ছেন Ñ সেই দৃশ্য মনে পড়ছে বেশ!
কোথাও রবিউলভাইয়ের উপস্থিতি মানেই একটা প্রাণচঞ্চল পরিবেশ। তাঁকে ঘিরে আরো অনেকে একত্রিত হওয়া। কবি রফিক আজাদ, আমার বন্ধু888sport live chatী জাভেদ জলিল, সাংবাদিক রুমী নোমান, জ ই মামুন কখনো 888sport live chatাঙ্গনে, কখনো বা জাভেদের স্টুডিওতে মুখরিত আড্ডায় গভীর রাত অবধি ভেসে যাওয়া মানুষটির আজ নিশ্বাস নেওয়ার অধিকার চলে গেছে। তিনি বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত। আর আমি খসখস করে লিখে যাচ্ছি? তিনি ‘ছিলেন’, ‘লিখতেন’, ‘বলতেন’, ‘ভালোবাসতেন’ Ñ এইসব অতীত ক্রিয়াপদ দিয়ে!
রবিউল হুসাইন, তিনি শুধু আমাদের কালের বড় কবিই ছিলেন না, তিনি আমার বন্ধু, ভাই, অভিভাবক Ñ সব মিলিয়ে অনেক কিছু। শেষের দিকে আর রবিউলভাইয়ের সঙ্গে আগের মতো দেখা হতো না! 888sport appর বিখ্যাত ট্রাফিক আর দূরত্বের কারণে। এক সকালে আমিই দেখা করতে গেলাম ধানম-ি চার নম্বর রোডের অ্যাপার্টমেন্টে। দেখেই বললেন, ‘কুষ্টিয়ার মানুষের দোষ কি জানো? … এর কোনো মানে হয়? এতদিন আসোনি কেন? আচ্ছা, লালিম কমফোর্ট হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল জানো?’
888sport live chatী জাভেদ জলিলের শরীর নিয়েও কথা বললেন। নিজের শরীরের কথা কিছুই বললেন না! বেশিরভাগই আর্ট নিয়ে, চারুকলাবিষয়ক লেখা নিয়ে কথা হলো। সেই শেষ দেখা।
রবিভাই চলে যাওয়ার পর ভাবছি, একটা সময়ের পর নিশ্বাস নেওয়ার অধিকার চলে যায়। জগৎ ছেড়ে চলে যেতেই হয়। মৃত্যু যে-কোনো বয়সেই আসতে পারে। যেভাবেই আসুক Ñ নিশ্বাসের অধিকার সে কেড়ে নেবেই।
বিদায় রবিউলভাই।