মফিদুল হক
বরিশালের মুলাদি উপজেলার পাতারচর (নাকি পাতারহাট) গ্রামের সম্পন্ন পরিবারের সন্তান আলতাফ মাহমুদ বাল্য থেকেই মজেছিলেন সংগীতে। জন্ম তাঁর ১৯৩৩ সালে। পিতা নাজেম আলী হাওলাদার ছিলেন আদালতের পেশকার এবং পরে হয়েছিলেন জেলা বোর্ডের সেক্রেটারি। সেই হিসেবে বলা যায় তিনি ছিলেন গ্রামীণ পেশাজীবী, যাঁদের প্রতাপ ছিল যথেষ্ট এবং বিত্ত অঢেল না হলেও সচ্ছলতা ছিল পরিবারে। বরিশাল জেলার সদর ও প্রান্তিক অঞ্চল নানা ধরনের বৈষম্য বৈসাদৃশ্য দ্বন্দ্ব নিয়ে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকতার মোকাবেলা করছিল। শিক্ষা ও 888sport live chat-888sport live football চর্চায় বরিশালের ছিল অগ্রণী ভূমিকা। স্বদেশী-আন্দোলনের বলবান ঐতিহ্যের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল বামপন্থার আকর্ষণ ও উত্থান। সম্প্রীতির আদর্শ যেমন ছিল সমাজে বলবান, তেমনি সংঘাতের ক্ষেত্রগুলো লালন ও উস্কে দেওয়ার চেষ্টাও চলছিল নানাভাবে। গ্রামাঞ্চলে সামন্ত-সম্পর্ক ছিল প্রায় অপরিবর্তনীয়, অন্যদিকে শহরে ছিল শিক্ষা ও সংস্কৃতির উদার আবহ। আলতাফ মাহমুদের বাবার ছিল চার স্ত্রী, সামন্ত দাপটের সে-ও এক প্রকাশ। চার স্ত্রীর গর্ভে সন্তান-সন্ততির 888sport free bet নয়জন, তৃতীয় স্ত্রীর একমাত্র সন্তান ছিলেন আলতাফ মাহমুদ। তাঁর তিন চাচার পুত্র-কন্যার 888sport free bet ছিল বাইশ, পুত্রেরা সবাই নিজ নিজ জীবনে বিভিন্ন পেশা অবলম্বন করেছিলেন, অনেকে কৃতবিদ্যও হয়েছিলেন। শিক্ষার মাধ্যমে গ্রামীণ সমাজে যে-সচলতা তৈরি হচ্ছিল তাঁর পরিচয় মেলে আলতাফ মাহমুদের পারিবারিক ইতিহাসে। অনুমান করা যায়, এমন বৃহৎ পরিবারে বড় হয়ে-ওঠা বালকের পারিবারিক বন্ধন দৃঢ় হওয়ার অবকাশ বিশেষ থাকে না। তদুপরি স্বভাবগতভাবে বেপরোয়া আলতাফ মাহমুদ অনেকটাই ছিলেন বহির্মুখী, বাইরের এই টান আরো প্রবল করে তুলেছিল সংগীতের প্রতি তাঁর আকর্ষণ।
বরিশাল জেলা স্কুলের ছাত্র থাকা অবস্থায় ছবি অাঁকা ও গান গাওয়া এই দুই 888sport live chatসাধনায় আপন মগ্নতার পরিচয় রাখেন আলতাফ মাহমুদ। খুব বেশি তো জানা যায় না তাঁর বাল্যকাল সম্পর্কে, কিন্তু টুকরো-টুকরো যেসব বার্তা আমরা পাই তাতে বোঝা যায় বরিশালের সাংস্কৃতিক আবহে তিনি স্নাত হয়েছিলেন নিবিড়ভাবে। এর একদিকে রয়েছে আঞ্চলিক নানা গীতের ধারা, ভাটিয়ালি থেকে শুরু করে উপাসনার বিভিন্ন গান, কীর্তন ভজন শ্যামাসংগীত, সেইসঙ্গে ছিল বরিশালের ব্রাহ্ম-সমাজের সংগীত এবং খ্রিষ্টীয় চার্চের সম্মেলক গান ও বাদনের পরিশীলিত রূপ। চলি�শের দশকের দ্বিতীয়ার্ধের এ-সময়টিতে সিনেমা ও রেকর্ড জগতেও গানের এক বলবান প্রবাহ জেগে উঠে বাংলার মফস্বল শহরগুলোতে নতুন চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছিল। ‘হোয়েন মেলোডি ওয়াজ কিং’ হিসেবে পরবর্তীকালে অভিহিত হয়েছিল এই যুগ, রবীন্দ্র-নজরুলের পাশাপাশি বাংলা ও হিন্দি আধুনিক গানের জনপ্রিয়তা তখন তুঙ্গে। কে. এল সায়গল, রাইচাঁদ বড়াল, কানা কেষ্ট, জ্ঞানপ্রসাদ ঘোষ, কে. মলিস্নক, আববাসউদ্দীন আহমদ, কানন দেবী, কমলা ঝরিয়া, আঙুরবালা প্রমুখের গান তখন লোকের মুখে মুখে ফেরে। এমনি পরিবেশে আলতাফ মাহমুদ যে-সংগীতের নানা ধারায় অবগাহন করেছিলেন, সেই পরিচয় মেলে তাঁর পরবর্তী জীবনের সাংগীতিক বিকাশে। তবে বরিশালের গুণী ওস্তাদদের সাহচর্য যে তিনি পেয়েছিলেন সেই কৈশোরেই সেটা বোঝা যায়, যখন ১৯৫০ সালে বিশ বছরের যুবক আলতাফ মাহমুদ 888sport appয় এলেন উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য, যৎসামান্য জামাকাপড়-ভরা সুটকেস ছাড়া তাঁর হাতে ছিল একটি বেহালা। এই বেহালা বাদন তিনি শিখেছিলেন বরিশালের গুণী ওস্তাদ সুরেন রায়ের কাছে। পাশ্চাত্য কায়দায় বেহালাবাদন তিনি রপ্ত করেছিলেন এবং সেটা করতে গিয়ে স্টাফ নোটেশনের পরিচিতিও তাঁকে নিতে হয়েছিল। ফলে সংগীতজীবনের গোড়া থেকেই নানা সংগীতধারায় হচ্ছিলেন আলতাফ মাহমুদ। ১৯৪৮ সালে কলকাতা বোর্ডের অধীনে ম্যাট্রিকুলেশন পাশের পর বরিশাল ব্রজমোহন কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন আলতাফ মাহমুদ, কিন্তু বিধিবদ্ধ পড়াশোনায় তাঁর মন বসছিল না। আলতাফ মাহমুদ তারুণ্যের উন্মাদনা নিয়ে যোগ দিয়েছিলেন নানামুখী কাজে, তবে সকল কাজের মূল সূত্র ছিল সংগীত। তাঁর জীবনীকার হেদায়েত হোসেন মোরশেদ লিখেছিলেন :
৪৮ সাল কিংবা তার কিছু আগে তিনি বেহালাবাদন শিক্ষা শুরু করেন। তাঁর গুরু ছিলেন বরিশালের শ্রী সুরেন রায়। সুরেন বাবু তাঁর এই প্রিয় ছাত্রটিকে একটি বেহালাও উপহার দিয়েছিলেন। ’৪৮ সাল থেকে আলতাফ মাহমুদের 888sport live chatীজীবনে আরেকটি লক্ষণীয় পরিবর্তন সূচিত হয়। তিনি গণসঙ্গীতের দিকে ঝুঁকে পড়েন। ১৯৪৯ সালে বরিশাল অশ্বিনী কুমার টাউন হলে পাটচাষী ও নদী সিকস্তি কৃষকের দাবি-দাওয়া নিয়ে একটি জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় এক পর্যায়ে ছিল গণসঙ্গীত। পরিবেশন করেন আলতাফ মাহমুদ। সেদিনের জনসভায় তিনি গেয়েছিলেন তৎকালীন কমিউনিস্ট পার্টি পরিচালিত ভারতের গণনাট্য সংঘের একটি জনপ্রিয় সঙ্গীত ‘ম্যায় ভুখা হু’।বরিশাল শহরে জনসভায় পরিবেশিত এই গান আলতাফ মাহমুদকে যেন রাতারাতি নতুন পরিচিতির আলোকে চিহ্নিত করল।
রাজনৈতিক অঙ্গনের একটি পরিচয় আলতাফ মাহমুদের বাল্যের আবহ বুঝতে সহায়ক হবে। পাকিস্তান- আন্দোলনকে ঘিরে ঘোর উন্মাদনার সেই কালে বরিশালে স্বদেশিয়ানা তথা কংগ্রেসের রাজনীতির ছিল বিশেষ প্রভাব। কমিউনিস্ট পার্টি গ্রাম পর্যায়ে সংগঠনের বিস্তার ঘটালেও মুসলিম জনগোষ্ঠীর মধ্যে তাদের ঠাঁই ছিল দুর্বল। তুলনায় আরএসপি বা রেভ্যুলুশনারি সোশ্যালিস্ট পার্টি ছিল হিন্দু-মুসলমানের মিলিত আন্দোলনের পরিচয়বহ এবং দেশভাগের তারা ছিল ঘোর বিরোধী। অপরদিকে মুসলিম কৃষকসমাজের মধ্যে শেরেবাংলা এ. কে. ফজলুল হকের ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তা ছিল অতুলনীয়, তবে তা ছাপিয়ে উঠছিল মুসলিম লিগের পক্ষে আকস্মিক জেগে-ওঠা বান। এমনি পটভূমিকায় ১৯৪৭ সালের মধ্য-আগস্টে ব্রিটিশ শাসনের অবসান শেষে সাম্প্রদায়িক ভিত্তিতে ঘটে দেশভাগ। মুসলিম জনসমাজ বিভাজনের রাজনীতির কুফল সম্পর্কে তখন কিছু উপলব্ধি করতে পারেনি, তবে সেই বোধের জাগরণ সূচিত হয়েছিল অচিরে। তৎকালীন বরিশালের রাজনৈতিক আবহের পরিচয় মেলে আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর 888sport sign up bonusচারণমূলক গ্রন্থ ধীরে বহে বুড়িগঙ্গায়। তিনি লিখেছেন :
চলি�শের দশকে যে তিনটি নাম ছিল বরিশাল শহরের হিন্দু-মুসলমান তাবৎ নর888sport promo code, বিশেষ করে তরুণ-তরুণীদের কাছে অতি পরিচিত, সেই তিনটি নাম হলো, শামসুদ্দিনদা, মোজাম্মেলদা ও খালেকদা। শামসুদ্দিনদা – বিখ্যাত কথা888sport live chatী শামসুদ্দিন আবুল কালাম। মোজাম্মেলদা – সাংবাদিক মোজাম্মেল হক [পাকিস্তান আমলে প্রকাশিত ‘দৈনিক পাকিস্তান’-এর বার্তা সম্পাদক থাকাকালে কায়রোতে (১৯৬৫) আরো অনেক সাংবাদিকের সঙ্গে নিহত হন]। তারপরে খালেকদা – প্রবীণ সাংবাদিক আবদুল খালেক খান, এই তিনজনই বরিশাল ব্রজমোহন কলেজের ছাত্র ছিলেন, আর ছিলেন অভিন্ন হৃদয় বন্ধু। রাজনৈতিক মতাদর্শেও তখন অভিন্ন। দু’জন – মোজাম্মেল হক ও আবদুল খালেক খান ছিলেন আরএসপির সার্বক্ষণিক কর্মী। শামসুদ্দিন আবুল কালাম ছিলেন এই দলের একটিভিস্ট নন, সমর্থক।
আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী আরো জানাচ্ছেন যে, ১৯৪৭ সালের চোদ্দোই আগস্টের মধ্যরাতে বরিশাল শহরে আরএসপি অফিসে পাকিস্তানি পতাকা ওড়ে নি, কমিউনিস্ট পার্টি অফিসে উড়েছিল। তবে কিছুকাল পরে কমিউনিস্ট পার্টি উগ্র রাজনীতির পথ ধরে ‘ইয়ে আজাদি ঝুটা হ্যায়’ সেস্নাগান দিয়ে সশস্ত্র অভ্যুত্থান ঘটাতে সক্রিয় হয় এবং তাদের ওপর নেমে আসে নির্যাতন-নিপীড়ন। অন্যদিকে, আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী লিখেছেন :
বরিশালে এই সময় খাদ্য সংকট দেখা দেয়। অনিল বাবু ও মোজাম্মেল হক ঠিক করলেন, আরএসপির পক্ষ থেকে বরিশাল শহরে একটি মিছিল বের করবেন এবং জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের অফিসের সামনে খাদ্যের দাবিতে বিক্ষোভ দেখাবেন। সামান্য নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন। কিন্তু এই বিক্ষোভ মিছিলের পরপরই অনিল দাশগুপ্ত, মোজাম্মেল হক, আবদুল খালেক খান, নির্মল সেন গ্রেপ্তার হলেন। তাদের বিরুদ্ধে শিশুরাষ্ট্র-বিরোধী ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপের অভিযোগ আনা হল এবং বেশ কয়েক বছরের দীর্ঘমেয়াদি কারাদ দেওয়া হল।
বরিশালের এই একই আবহে আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর সমবয়সী আরেক তরুণ আলতাফ মাহমুদ বড় হয়ে উঠছিলেন এবং তিনিও যুক্ত হচ্ছিলেন নানা সামাজিক-সাংস্কৃতিক কর্মে, তবে উভয়ের মধ্যে তখনও কোনো সাক্ষাৎ-পরিচয় ঘটে নি। হেদায়েত হোসেন মোরশেদের বর্ণনা থেকে জানা যায়, ১৪ আগস্ট বরিশাল শহরে আজাদি দিবসের অনুষ্ঠানে তোরণ সাজাবার কাজে যুক্ত ছিলেন আলতাফ মাহমুদ, আবার অচিরে জেগে-ওঠা খাদ্য আন্দোলনের পটভূমিকায় সভামঞ্চ থেকে তিনি পরিবেশন করেন আলোড়ন-জাগানিয়া গান, ‘ম্যায় ভুখা হু’।
বরিশালের মুলাদি-পাতারহাট অঞ্চলের রাজনৈতিক পরিস্থিতির টুকরো ছবি পাওয়া যায় কমিউনিস্ট বিপ্লবী আবদুশ্ শহীদের 888sport sign up bonusচারণে। আত্মকথার প্রথম খন্ডে তিনি লিখেছিলেন :
’৪৬-এর 888sport app আন্দোলনের মধ্যে মুলাদির হাট তোলা আন্দোলনের কথা মনে পড়ে। আমার মনে আছে আমি তখন মাউলতলা হাই স্কুলে শিক্ষকতা করি। ঠিক তখন বরিশাল কৃষক সমিতির নেতৃত্বে মুলাদিসহ বিভিন্ন হাটে তোলা বিরোধী আন্দোলন শুরু হয়। আমরা আন্দোলনে শেস্নাগান দিতাম, তোলা আদায় চলবে না, সর্বপ্রকার ইজারাদারি বন্ধ কর।… এ সময় সমগ্র মুলাদি হাট ঘিরে প্রায় ৩০/৪০ জন বন্দুকধারী সিপাহী উপস্থিত ছিল। বলা বাহুল্য, আমরা সেই পুলিশবাহিনীর মধ্যে থেকেও কর্মচারিদের তোলা উঠাতে বাধা দিয়েছি। ঐদিন হাটে আমরা যারা ছিলাম তাদের মধ্যে ছিল মুলাদির বিখ্যাত বিপস্নবী কালীপদ দাস, লেখক নিজে, সত্য দাস, ছোমেদ তালুকদার, আর্সেদ হাওলাদার, মাউলতলার বিজয় চ্যাটার্জি, খগেন বাবু, কানাই পুততুন্ডি।… আমাদের সঙ্গে স্থানীয় ছাত্ররা ও যুবকরা প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করেনি। তার কারণ বোধহয় ইজারাদারদের পরিবারের ছেলেরাই অধিকাংশ ছাত্রনেতা।
একই সময়ে পাতারহাট গ্রামে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি-রক্ষার আবেদন প্রচারে এসে স্থানীয় লোকজন দ্বারা নিগৃহীত হওয়ার বিবরণ দিয়েছেন লেখক। কমিউনিস্টদের হিন্দুর দালাল হিসেবে গণ্য করেছিল গ্রামের 888sport free betগরিষ্ঠ মুসলিম জনগোষ্ঠী, আবদুশ্ শহীদ অবশ্য এজন্য পার্টির বিভ্রান্তমূলক নীতিকেই দায়ী করেছিলেন।
দাঙ্গার সময় বরিশালে আলতাফ মাহমুদকে প্রথম দেখার 888sport sign up bonus ভোলেন নি মুস্তাফা নূরউল ইসলাম। তাঁর পিতা নজরুল-সুহৃদ সাদাত আলী আখন্দ তখন সেখানকার পুলিশ কর্মকর্তা। দাঙ্গার কারণে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় 888sport app থেকে বরিশাল এসেছিলেন মুস্তাফা নূরউল ইসলাম। ছোট ভাই মনসুর গানপাগল এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু আলতাফ মাহমুদ নামের আরেক তরুণ, দলে-বলে সবার সঙ্গে মিলে তারা রাজপথে দাঙ্গাবিরোধী গান গেয়ে বেড়াচ্ছেন – এই 888sport sign up bonus গাঢ় হয়ে আছে মুস্তাফা নূরউল ইসলামের মনে।
বরিশালে এমনি এক টালমাটাল পরিবেশে বেড়ে উঠছিলেন আলতাফ মাহমুদ। ইতিমধ্যে 888sport appয় জয়নুল আবেদিনের নেতৃত্বে আর্ট স্কুল প্রতিষ্ঠার খবর তাঁর কাছে পৌঁছেছিল এবং প্রচলিত পাঠ্যধারার বাইরে এই অপ্রচলিত পথে পা বাড়াতে তিনি প্রলুব্ধ হয়েছিলেন। ফলে বরিশাল ব্রজমোহন কলেজে আই.এসসি পড়ার পাঠ চুকিয়ে 888sport appয় এলেন আলতাফ মাহমুদ, প্রায় যেন ভাগ্যান্বেষণে, লক্ষ্য একটা রয়েছে আর্ট স্কুলে ভর্তি হওয়ার, দুর্বল আর্থিক সংস্থান নিয়ে সেটাও খুব নিশ্চিত নয়, নিশ্চিত ছিল কেবল অনিশ্চয়তা।
দুই
ঠিক কোন সময়ে 888sport appয় এসেছিলেন আলতাফ মাহমুদ, তা সঠিকভাবে জানা যায় না। তবে সেটা সম্ভবত ১৯৫০ সালের গোড়ার দিকের কোনো একটা সময়। নবগঠিত পাকিস্তানি রাষ্ট্রের উন্মাদনা তখন ফিকে হতে শুরু করেছে। পূর্ব বাংলা তখন নানা দিক দিয়ে বঞ্চনা ও বৈষম্যের পীড়ন অনুভব করতে শুরু করেছে এবং পাকিস্তানি শাসন যে পূর্ব বাংলার অধিকার সঙ্কুচিত করে তুলছে তা ফুটে উঠছিল প্রশাসনে এবং রাষ্ট্রভাষা প্রশ্নে। অবিভক্ত ভারতে বামপন্থি আন্দোলনের প্রসার পূর্ব বাংলাতেও বলবৎ ছিল, কিন্তু প্রগতিপন্থি ও গণতন্ত্রীদের পাকিস্তানের শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে লিগশাহি বিশেষ অত্যাচার-জুলুম শুরু করেছিল। বরিশালে বামপন্থার সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে উঠেছিল আলতাফ মাহমুদের এবং 888sport appতেও বামবৃত্তে তাঁর পরিচিতজনেরা ছিলেন। তবে সেটা সুনির্দিষ্ট কোনো দলীয় আনুগত্য ছিল না। 888sport appয় আসার পর বরিশালের সুহৃদ জুলফিকারের মাধ্যমে নিজাম-উল হকের আখড়ায় উপস্থিত হয়েছিলেন আলতাফ মাহমুদ। এই আগমনের চমকপ্রদ বিবরণী মেলে নিজাম-উল হকের কাছ থেকে। তিনি তখন ধূমকেতু 888sport live chatী গোষ্ঠীর অগ্রণী সদস্য হিসেবে গণমুখী সংগীত ও নৃত্য নিয়ে মেতেছিলেন। নিজাম-উল হকের বয়ান ছিল নিম্নরূপ :
সেদিনের কথা ভোলা যায় না, ভুলতে পারবো না কোনোদিন, আমার এক বন্ধু আমার কাছে এসে বললো, ‘নিজাম, বরিশাল থেকে ঝিলু নামে একটি ছেলে এসেছে। ভালো বেহালা বাজায়। তোমার তো এমন 888sport live chatী দরকার। তাকে নাও না দলে।’
তাকে নিয়ে এলো। ছাই রঙের প্রিন্সকোর্ট গায়ে, মাথায় ঝাঁকড়া চুল, আমার চাইতে একটু লম্বা, কালো মোটা ফ্রেমের চশমা চোখে, হাতে বেহালার বাক্স। সৌম্য শালীন ভদ্রচেহারার একটি মানুষ এগিয়ে আসছে আমার দিকে। মনে হলো, কত যেন চেনা, কত যেন আপনার। মুখে মিষ্টি হাসি দিয়ে হাতখানা বাড়িয়ে দিল। আমি হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললাম, আপনিই বুঝি ঝিলু। ‘হ্যাঁ, ঝিলু আমার নাম ডাক নাম। কিন্তু বাবা-মা নাম রেখেছেন আলতাফ মাহমুদ।’
আমরা সবাই এক জায়গায় বসলাম। তিনি বাজিয়ে শোনালেন ‘মিয়াকী টোরি’। অসম্ভব মিষ্টি তার হাত, দরদভরা ছড়ের টানে টানে প্রকাশ পাচ্ছে তার বুকের বোবা কথাগুলো। দু’চোখ তার বন্ধ, যেন হারিয়ে গেছে কোনো এক অজানা সুরলোকে।…
জিগ্যেস করলাম আলতাফকে, আছেন কোথায়? ‘কোনো ঠিক নেই। দুদিন হয় 888sport appয় এসেছি, দেখি কোনো মেসেটেসে ব্যবস্থা করা যায় কিনা।’ আমি থাকতাম তখন সেন্ট্রাল রোডে, যদিও ছাত্র তবু সংগঠনের খাতিরে বাসা ভাড়া করতে হয়েছিল। বললাম, আমার একটা হোটেল আছে, নাম ‘হারাধনের হোটেল’। আ বা ফ্রি – মানে আহার বাসস্থান ফ্রি। ইচ্ছে করলে আমার ওখানে থাকতে পারেন। চিৎকার করে উঠলেন আলতাফ, ‘আহ্ ব্রাভো। পানি না চাইতেই বৃষ্টি। কিন্তু একটা কথা, এই আপনার আপনি আপনি সম্বোধনটা আমার ভালো লাগছে না, – বলো তুমি, হ্যাঁ, হ্যাঁ, তুমি।’ হেসে বললাম, হ্যাঁ, তুমি।
বাসায় এসে পরিচয় করিয়ে দিলাম মুনিম, জাহান আরা লাইজু, শাহাদতের সাথে। ছোট্ট লাইজু আলতাফকে অনেকক্ষণ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে দেখে আমার হাতটা ধরে ঝাঁকি দিয়ে বললো, ‘ও নিজাম ভাই, ও যে দেখছি আপনার মতোই পাগলা গো।’ আলতাফ হেসে লাইজুকে কাছে টেনে বললো, ‘আমরা সব পাগলা-পাগলী এক হয়েছি দেশকে করবো জয় – মোদের কিবা আছে ভয়।
এভাবে ‘ধূমকেতু 888sport live chatী গোষ্ঠী’র যাত্রাকালে সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন আলতাফ মাহমুদ। গানের মহড়ায় তিনি কণ্ঠ মেলাতেন, বাদনে যোগ দিতেন এবং কখনো কখনো উদাত্ত গলায় গানও গাইতেন। অগ্রজপ্রতিম জুলফিকার ছিলেন নৃত্য888sport live chatী, নিজাম-উল হকের সঙ্গে মিলে তিনি পরিবেশন করতেন ছায়ানৃত্য, পঞ্চাশের দশকে 888sport appর সাংস্কৃতিক অঙ্গনে এই বিশেষ ফর্ম-অর্জন করেছিল জনপ্রিয়তা। জুলফিকার, এই পদবিবিহীন নামের পেছনের মানুষটিও ছিলেন ব্যতিক্রমী। তাঁর বাড়ি বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জের হিজলায়। তিনি ছিলেন বিদ্রোহী কবি নজরুলের ভাবশিষ্য, তেমনি বাবরি চুল ও বেশবাস ছিল তাঁর। 888sport app download apk রচনাতেও তিনি ব্রতী হয়েছিলেন এবং একসময় কলকাতা থেকে ‘নওজোয়ান’ নামে একটি ক্ষণস্থায়ী সাপ্তাহিক প্রকাশনা শুরু করেছিলেন। ১৯৪৬ সালের ঘোর উন্মাদনার মধ্যে ‘নওজোয়ান পার্টি’ গঠন করে মুসলিম লিগ-বিরোধী অবস্থান নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং যথারীতি পরাজিত হন। দেশভাগের পর 888sport appয় এসে তিনি স্থিত হন এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে তাঁর বিশেষ ঘনিষ্ঠতা গড়ে ওঠে। পঞ্চাশের দশকের মধ্যভাগে বঙ্গবন্ধু সাপ্তাহিক নতুন দিন প্রকাশের উদ্যোগ নিলে জুলফিকার পত্রিকার সম্পাদনা-ভার গ্রহণ করেছিলেন।
888sport appয় এসে আলতাফ মাহমুদ ভর্তি হয়েছিলেন আর্ট স্কুলে, ছবি অাঁকা শেখা এবং সংগীতের চর্চা, দুই চলছিল পাশাপাশি; কিন্তু 888sport live chatশিক্ষা তিনি বেশিদিন অব্যাহত রাখতে পারেন নি, ব্যয়বহুল এই শিক্ষা চালিয়ে যাওয়া কষ্টকর হয়েছিল, অন্যদিকে বেড়ে চলছিল গানের টান, সংগীতের মাধ্যমে মানুষকে উজ্জীবিত করার কর্ম হয়ে উঠছিল অধিকতর আনন্দবহ। শেষাবধি গান জয়যুক্ত হয়, আলতাফ মাহমুদ 888sport live chatশিক্ষার পাট চুকিয়ে পা বাড়ালেন সংগীতের পথে। তাঁর স্বভাবের বেপরোয়া ভাব বুঝি এই অনিশ্চিত জীবন বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে সহায়ক হয়েছিল। গোষ্ঠীবদ্ধ সংস্কৃতিচর্চার মধ্য দিয়ে আপন সংগীতদক্ষতা শাণিত করে তুলছিলেন তিনি, কিন্তু পেশাদারি জীবনের প্রতি খুব একটা আগ্রহ ছিল না।
আলতাফ মাহমুদ যখন এসেছিলেন 888sport appয় সেই সময় বরিশালের আরো দুই তরুণ পা রেখেছিলেন হঠাৎ রাজধানী হয়ে-ওঠা বিকাশমান এই শহরে। এঁদের একজন আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী, একই বছর ১৯৫০ সালে ম্যাট্রিক পাস করে রাজধানীতে এসে ভর্তি হয়েছিলেন 888sport app কলেজে। আলতাফ মাহমুদের মতো তাঁরও সামর্থ্য বেশি ছিল না, খরচ চালাবার জন্য খুঁজে নিতে হয়েছিল সংবাদপত্রের খুচরো কাজ। এর কিছুটা আগে, কমিউনিস্ট আন্দোলনের সূত্রে 888sport appয় এসে যুবকদের গণতান্ত্রিক আন্দোলন সংগঠিত করার কাজে যুক্ত হয়েছিলেন মোহাম্মদ ইমাদউলস্নাহ। তিনি অবশ্য রাজনৈতিক আশ্রয়ে ছিলেন, তাঁর 888sport appয় অবস্থান নিয়ে কোনো সমস্যা ছিল না। তবে কাকতালীয়ভাবে এই তিন যুবার জীবনে বিশেষ অভিঘাত সৃষ্টি করেছিল বায়ান্নর 888sport cricket BPL rateে ফেব্রুয়ারি এবং তাঁদের দুজন এমন এক 888sport live chatিত সাড়া তাঁরা দিতে পেরেছিলেন, যা বাংলার সাংস্কৃতিক ইতিহাসে স্বর্ণোজ্জ্বল অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। আর মোহাম্মদ ইমাদউলস্নাহ ভাষা-আন্দোলন সংগঠিত করতে নেপথ্য ভূমিকা পালন করলে আকস্মিক মৃত্যুর ফলে প্রায় হারিয়ে গেলেন ইতিহাস থেকে। সেসব পরের কথা, পঞ্চাশের দশকের সূচনায় পূর্ববাংলা তখন ছিল গভীর অন্ধকারে নিমজ্জিত। প্রতিষ্ঠাকাল থেকে পাকিস্তান রাষ্ট্র তথাকথিত মুসলিম জাতিসত্তা দাঁড় করাবার প্রয়াসে তেরিয়া ভূমিকায় মেতে ওঠে। কারাগার ভরে উঠেছিল রাজবন্দিদের দ্বারা, সরকারের যে-কোনো পদক্ষেপের বিরোধিতা গণ্য করা হতো ইসলামের ও মুসলমানের আপন দেশের বিরোধিতা হিসেবে। প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান প্রকাশ্য জনসভায় বিরোধীদের মাথা চূর্ণ করে দেওয়ার হুঙ্কার ছেড়েছিলেন। মুক্তচিন্তা ও মুক্তবুদ্ধির চর্চার ক্ষেত্র ক্রমশ হয়ে আসছিল সঙ্কুচিত। এই পরিস্থিতি আরো জটিল করে তুলল ১৯৫০ সালের জানুয়ারি মাসে সংঘটিত নিষ্ঠুর ও ভয়ংকর দাঙ্গা, যা বিপুলভাবে দেশান্তরী করে হিন্দু জনগোষ্ঠীকে। কলকাতায় শেরেবাংলা এবং তাঁর ভাই দাঙ্গাকারীদের দ্বারা আহত ও রক্তাক্ত হয়েছেন, এমন মিথ্যা প্রচারণা বরিশালের দাঙ্গায় আরো ইন্ধন জোগায়। এমনি এক অন্ধ সময়ে বিরুদ্ধ স্রোতে দাঁড়িয়ে কতক তরুণ ও তরুণী সংগীত ও সংস্কৃতির মধ্য দিয়ে প্রতিরোধ ও জনজাগরণ সৃষ্টিতে সচেষ্ট হয়েছিলেন এবং আলতাফ মাহমুদ ছিলেন সেই দলেরই একজন। পাকিস্তানি ঘোর কাটিয়ে নতুনের জাগরণ ঘটাতে তাদের বড় অবলম্বন হয়েছিল সংগীত। যে ‘ধূমকেতু 888sport live chatী সংঘে’র মাধ্যমে জাগরণী সংস্কৃতির বিভিন্ন উদ্যোগ পরিচালিত হচ্ছিল, পরে তা প্রসারিত হয় ‘অগ্রণী 888sport live chatী সংসদ’ গঠন দ্বারা। উভয় ক্ষেত্রে ভারতীয় গণনাট্য সংঘ বিরাজ করছিল আদর্শ হিসেবে এবং সংস্কৃতিকর্মের সঙ্গে রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা ছিল স্বাভাবিকভাবে, যদিও দলীয় রাজনীতির বৃত্তে তা আবদ্ধ হয় নি।
এমনি পটভূমিকায় আলতাফ মাহমুদ 888sport appয় যে কষ্টের জীবন বরণ করে আপন সক্রিয়তা প্রসার করে চলছিলেন সেটা অনুমান করা যায়, তবে তাঁর এই পর্বের জীবন সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানা যায় না। হেদায়েত হোসেন মোরশেদ, আসাদুল হক কিংবা আরো যাঁরা আলতাফ মাহমুদের জীবনালেখ্য প্রণয়নে সচেষ্ট হয়েছেন, তাঁদের কাছেও তথ্যের অপ্রতুলতা ছিল বড় সমস্যা। তৎকালীন সংবাদভাষ্য কিংবা সাংগঠনিক কর্মকান্ডে একান্ত নবীন এই যুবকের সংগীতজীবন তো উলেস্নখযোগ্যভাবে প্রতিফলিত হওয়ার নয়। এমন ক্ষেত্রে লেখক-888sport live footballিকদের যে-সুবিধা সেটা থেকে সংগীত888sport live chatীরা বঞ্চিত থাকেন, তাঁদের 888sport live chatী হয়ে-ওঠার সাধনা তো অন্তরালেই থেকে যায়। সাংগঠনিকভাবে আলতাফ মাহমুদের সক্রিয়তার পরিচয় মেলে নবগঠিত পূর্ব পাকিস্তান যুব লিগের কর্মকান্ডে। ১৯৫১ সালের ডিসেম্বরে 888sport app জেলা বার লাইব্রেরি মিলনায়তনে যুবলীগের বার্ষিক অধিবেশন হয় দুদিন ধরে। এই সংগঠনে যাঁরা সক্রিয় ছিলেন, তাঁরা পূর্ববাংলার পরবর্তী সামাজিক-রাজনৈতিক বিকাশে তাৎপর্যময় ভূমিকা পালন করেছেন। আনিসুজ্জামান তখন সবে যোগ দিয়েছেন যুবলীগে, আত্ম888sport sign up bonusমূলকগ্রন্থ কাল নিরবধিতে তিনি উল্লেখ করেছেন যে, নিজামুল হক ও আলতাফ মাহমুদ যুবলীগের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত ছিলেন। তিনি লিখেছেন, ‘এঁরা উভয়েই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নিতেন এবং আলতাফ মাহমুদ খুব ভালো পোস্টার লিখতেন।’
আনিসুজ্জামানের কাছ থেকে আরো জানা যায়, নবাবপুরে যুবলীগ অফিসে আলতাফ মাহমুদকে কর্মী হিসেবেই তিনি জেনেছেন, তাঁর সংগীত-সত্তার কোনো আলাদা প্রকাশ তখন ছিল না, সাংস্কৃতিক যেসব অনুষ্ঠান হতো সেখানেও তিনি ছিলেন একান্তভাবে কর্মী, 888sport live chatী নন, যদিও সংগীতে কণ্ঠ দিয়েছেন কখনো কখনো, অংশ নিয়েছেন বাদনে। যে-কোনো মিটিং-মিছিলের জন্য পোস্টার-ফেস্টুন তৈরিতে আলতাফ মাহমুদ ছিলেন সিদ্ধহস্ত। এক পর্যায়ে আলতাফ মাহমুদ যুগিনগরে মোহাম্মদ তোয়াহার বাসভবনে থাকা শুরু করেন। যুবলীগ নেতা মোহাম্মদ ইমাদউলস্নাহ্ও তখন সেখানে থাকেন। এই সূত্রে যুবলীগের সঙ্গে আলতাফ মাহমুদের সম্পর্ক আরো নিবিড় হয়।
আলতাফ মাহমুদের চরিত্র এবং এই সময়কার জীবন চকিত দেখার মধ্য দিয়ে ফুটিয়ে তুলেছেন শেখ লুৎফর রহমান তাঁর জীবনের গান গাই গ্রন্থে। তিনি লিখেছেন :
সকালবেলা টিউশনি সেরে দুপুরে খাওয়ার জন্য বাড়িতে ফেরার পথে রাস্তায় আলতাফকে পেলে একরকম জোর করেই ধরে এনে একসাথে খাওয়া-দাওয়া সেরে খানিকক্ষণ পর একসাথে বেরিয়ে পড়তাম। আলতাফ খেতে বসে মাঝে-মধ্যে আমার মা’র রান্নার খুব তারিফ করতো। আর বলতো, আপনার কাছে এলে আমার নিজের মায়ের কথা মনে পড়ে। এ-ধরনের কথা যখন বলতো তখন ওর সারা গায়ে-মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করতেন আমার মা। আলতাফ নিজে কোথায় থাকেন মা জানতে চাইলে সে বলতো, এদিকে একটা জায়গায়। আসলে থাকতো কোথায় সে আমাকেও বলেনি কখনো। আমাকে আলতাফ দাদা বলে ডাকতো। দু’জনের বয়সে সামান্য ব্যবধান থাকলেও পরস্পরের প্রতি বন্ধুভাবাপন্ন ছিলাম আমরা। ও যেমন ছিল জেদি, তেমনি অভিমানী আর কর্মনিষ্ঠ, তার ওপর ন্যস্ত কোনো কাজের প্রতি সে ছিল অবিচল, সিনসিয়ার।
তিন
আলতাফ মাহমুদ 888sport live chatী-সংগ্রামী হিসেবে আপন সৃজনশীলতার প্রথম স্বাক্ষর রাখলেন ভাষা-আন্দোলনের সুবাদে। বায়ান্নর ভাষা-আন্দোলন পূর্ব বাংলার তরুণদের এক অনন্য অভিজ্ঞতা ও উপলব্ধির মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিলো। পাকিস্তান রাষ্ট্র ও দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে মুসলিম জনগোষ্ঠীর মুক্তি ও বিকাশের যে-মোহজাল সৃষ্টি হয়েছিল, সেই বিভ্রান্তির কুহক নতুন সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে যেন রাতারাতি অপসারিত হয়ে গেল। নতুন আলোকে বাস্তবতা অবলোকনের এই শক্তি বড় দায়িত্ব অর্পণ করে নবীনদের ওপর, যারা ছিলেন 888sport cricket BPL rateের আন্দোলনের রূপকার। যূথবদ্ধভাবে পরিচালিত ও বিপুলভাবে তারুণ্য-সম্পৃক্ত এই আন্দোলনের বৈশিষ্ট্য এবং আপন জাতিসত্তাবিষয়ক উপলব্ধি যেন স্থান-কালের সীমানা ছাপিয়ে সর্বজনীন অভিজ্ঞতায় রূপান্তরিত হতে পারে, সেটা ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। এই কাজ কোনো একজনের পক্ষে সম্পাদন সম্ভব নয়, অধিকন্তু এই অভিজ্ঞতা তো এককভাবে কারো অধিগত ছিল না, ছিল সম্মিলিতভাবে অনেকের। যেহেতু 888sport cricket BPL rateের আত্মদান ছিল মাতৃভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য, তাই এর ছিল শ্রেণি-ধর্ম-স্বাক্ষর-নিরক্ষর-888sport promo code-পুরুষ সকল বিভাজন অতিক্রমকারী সর্বজনীন আবেদন। বিপুলতর দায়িত্বের মধ্যে নিহিত ছিল বিপুলতর সম্ভাবনা, বায়ান্নর 888sport cricket BPL rateে ফেব্রুয়ারি যেন নিছক বার্ষিক 888sport app download for androidোৎসবে পর্যবসিত হয়ে ক্রমে বি888sport sign up bonusর অতলে হারিয়ে না যায়, আলোকবর্তিকার মতো 888sport cricket BPL rateে যেন দেখায় পথ আগামী দিন ও অনাগতকালের জন্য।
এই দায়িত্ব রাজনৈতিক বিশেস্নষণ ও সেস্নাগান উচ্চারণে অর্জিত হওয়ার নয়, সেজন্য প্রয়োজন ছিল অভিজ্ঞতা ও উপলব্ধির শৈল্পিক রূপায়ণ, যেন 888sport cricket BPL rateের তরঙ্গ সাড়া জাগাতে পারে সর্বজনের হৃদয়ে এবং অতিক্রম করতে পারে কালিক সীমানা। যে-কোনো বড় ঘটনার মতো 888sport cricket BPL rateেরও ছিল কিছু তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া, গানে-888sport app download apkয় শহিদের আত্মাহুতি 888sport app download for android ও তার প্রতি 888sport apk download apk latest version নিবেদনের প্রয়াস। অন্যদিকে অভিজ্ঞতায় স্থিত হয়ে নিবিড় উপলব্ধিতে তার রূপান্তরের জন্য কিছুটা সময়ও প্রয়োজন ছিল। ১৯৫৩ সালে যখন 888sport cricket BPL rateের প্রথম বার্ষিকী যথোপযুক্তভাবে পালনের ক্ষণ ঘনিয়ে এলো, দেখা গেল সৃজনের এক পস্নাবন জাতিকে 888sport cricket BPL rateের অভিজ্ঞতায় আপস্নুত করে তুলল। রাজনীতিও এই সৃজনশীলতার বাইরে ছিল না। ফলে 888sport app download for androidের এক অভিনব ও আন্তরিক রূপ হিসেবে 888sport cricket BPL rateের প্রভাতের প্রথম প্রহরে নগরবাসী নগ্নপদ শোভাযাত্রায় আজিমপুরের সমাধিস্থল হয়ে আত্মাহুতির ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়, রাজপথের রক্তস্নাত স্থানে অস্থায়ীভাবে নির্মিত শহিদ মিনারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে। শোভাযাত্রায় তারা হাতে বহন করে কালো পতাকা, আর কণ্ঠে তুলে নেয় গান, গণনাট্যসংঘ কিংবা সলিল চৌধুরী, এমনকি রবীন্দ্রনাথ-নজরুলের গানও নয়, নবীনদের লেখা আনকোরা সব নতুন গান, নতুন অভিজ্ঞতাই বুঝি উৎসারিত করেছিল এসব গান। 888sport cricket BPL rateের পরপর রচিত গানের মধ্যে উলেস্নখযোগ্য ছিল বরিশালের মহিউদ্দিন আহমদের অগ্রজ প্রকৌশলী মোশাররফ উদ্দিন আহমদ রচিত ‘মৃত্যুকে যারা তুচ্ছ করিল ভাষা বাঁচাবার তরে/ আজিকে স্মরিও তারে।’ আরেক গান ছিল গাজীউল হক (নিজাম-উল হকের অগ্রজ)-রচিত ‘ভুলবো না, ভুলবো না/ 888sport cricket BPL rateে ফেব্রুয়ারি/ ভুলবো না।’ উলে�খ্য 888sport cricket BPL rateের প্রথম ও 888sport app download for androidীয় 888sport app download apk লিখেছিলেন চট্টগ্রামের তরুণ 888sport live footballসংগ্রামী মাহবুব-উল আলম চৌধুরী, ‘কাঁদতে আসিনি, ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি’।
888sport cricket BPL rateের ঘটনা ও চেতনার 888sport live chatরূপদানের সৃজনশীল প্রয়াসের অনন্য প্রকাশ ঘটল ১৯৫৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে এসে। এর 888sport live footballিক রূপায়ণের কান্ডারি হয়েছিলেন হাসান হাফিজুর রহমান, তাঁর সম্পাদনায় এবং মোহাম্মদ সুলতানের সহযোগিতায় প্রকাশ পেল সংকলন-গ্রন্থ 888sport cricket BPL rateে ফেব্রুয়ারি, তরুণদের লেখা গদ্যপদ্যের অনন্য ভান্ডার। নাটকের মাধ্যমে 888sport cricket BPL rateের বাস্তবতার অসাধারণ রূপায়ণ ঘটালেন কারাবন্দি মুনীর চৌধুরী, অগ্রজ রণেশ দাশগুপ্তের প্ররোচনায় লিখলেন নাটক কবর এবং মঞ্চস্থ হলো কারাগারে। নেই কোনো মঞ্চ, আলোক ব্যবস্থা, রূপসজ্জা, মঞ্চসজ্জা, কিন্তু গড়ে উঠল নাটক, অনন্য ও অসাধারণ, এই তো 888sport cricket BPL rateের চেতনার বহমানতা। তবে ব্যাপকসংখ্যক মানুষের কাছে 888sport cricket BPL rateের বাণীমন্ত্র পৌঁছে দিতে প্রয়োজন ছিল জনবোধ্য চিত্তাকর্ষক পপুলার কালচারের আশ্রয়, আর সেটা যোগাল গীতিকার, সুরকার, গায়কদের সম্মিলিত সৃজন-সম্ভার, 888sport cricket BPL rateের গানের সূত্রে। অনেক গানই রচিত ও গীত হয়েছে তখন, তবে এর মধ্যে কালজয়ী হয়ে আছে আবদুল লতিফ-রচিত ও গীত ‘ওরা আমার মুখের ভাষা কাইড়া নিতে চায়’, আছে বাগেরহাটের লোককবি শামসুদ্দিন- রচিত গান, ‘ওরে বাঙালি, 888sport appর শহর রক্তে রাঙাইলি’, যে-গানের সুর কিছুটা পাল্টে অনন্য পরিবেশনা দ্বারা আলতাফ মাহমুদ একে চির888sport app download for androidীয় করে গেছেন। ১৯৫৩ সালের নগ্নপদ প্রভাতফেরির জন্য আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী-রচিত ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো 888sport cricket BPL rateে ফেব্রুয়ারি/ আমি কি ভুলিতে পারি’ গানে সুরারোপ করেছিলেন আবদুল লতিফ এবং সেভাবে প্রভাতফেরিতে গীতও হয়েছিল। আলতাফ মাহমুদের মনে হয়েছিল ওই গানের সুরে বেদনা ও প্রত্যয় যথাযথভাবে ফুটিয়ে তোলার আরো সুযোগ রয়েছে। আবদুল লতিফের অনুমতি নিয়ে তিনি গানটিতে নতুনভাবে সুরারোপ করলেন এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠানে পরিবেশ করে শ্রোতৃহৃদয়ে বিপুল আলোড়ন তোলেন। পরের বছর ১৯৫৪ সালের 888sport cricket BPL rateেতে এই গান কণ্ঠে নিয়ে যখন প্রভাতফেরি পরিচালিত হলো তখন সুর ও বাণীর সংশে�ষণে যে জাদুকরী আবেগ সংহত হলো সেটা সবাইকে বুঝিয়ে দিল 888sport cricket BPL rateের প্রাণতন্ত্রীতে যথার্থ টঙ্কার তুলতে সমর্থ হয়েছেন আলতাফ মাহমুদ। জাতির অন্তরের নিবিড় আকুতি সুরের মূর্ছনায় স্পর্শ করল সর্বজনের অন্তর। এই ১৯৫৪ সালেই প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে মুসলিম লিগের ভরাডুবি ঘটিয়ে বিজয়ী হলো যুক্তফ্রন্ট এবং নবগঠিত সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় নির্মিত হলো শহিদ মিনার, যার নকশাকার ছিলেন 888sport live chatী হামিদুর রহমান ও নভেরা আহমদ।
888sport cricket BPL rateের সর্বজনীনতা প্রতিষ্ঠার জন্য যে প্রতীকের প্রয়োজন ছিল তার একটির জোগান দিলো শহিদ মিনার এবং অপরটি ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো’ সংগীত, প্রভাতফেরির গান হয়ে যা বয়ে চলেছে অযুত থেকে অযুততর কণ্ঠে, যার রূপকার হিসেবে অমরত্বের দাবিদার হলেন আলতাফ মাহমুদ। 888sport cricket BPL rateের চেতনার সৃজনশীল রূপায়ণের নির্ধারক বর্ষ হিসেবে যদি ১৯৫৩ সালকে আমরা ধার্য করি, তবে দেখব এর রূপকাররা প্রায় সবাই ছিলেন বয়সে একান্ত তরুণ। আলতাফ মাহমুদের বয়স তখন ২০, আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর ১৯, হাসান হাফিজুর রহমানের ২১, হামিদুর রহমানের ২৫, নভেরা আহমদের ২১, মাহবুব-উল আলম চৌধুরীর ২৬। আরো যারা ছিলেন তাদের সাথী তারা সবাই তো কমবেশি বিশ-বাইশ বছরের তরুণ, বাংলার তারুণ্য 888sport cricket BPL rateেতে ইতিহাস সৃষ্টি করেছিল এবং সেই ইতিহাসের সৃজনভাষ্যও রচিত হয়েছিল তাদের হাতে।
‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো’ গানের সুরশক্তির অসাধারণ বিশেস্নষণ করেছেন গুণি সংগীতবেত্তা ওয়াহিদুল হক। মীজানুর রহমানের ত্রৈমাসিক পত্রিকার ১৯৮৬ সালের এপ্রিল-জুন 888sport free betয় তিনি লিখেছিলেন :
গানটির আরম্ভ পশ্চিম দেশীয় স্তোত্র ধরনের। কিন্তু ঝঞ্ঝাক্ষুব্ধ এবং ললিত নিসর্গ অংশগুলোতে ভারতবর্ষীয় রাগরাগিণী একাধারে প্রচন্ড নির্ঘোঘ ও কিশলয় কোমলতা নিয়ে বিপস্নবের মর্মবাণীকে মেলে ধরে কী আশ্চর্য অমোঘতায়। বাঙালি যতদিন থাকবে এই ধরাপৃষ্ঠে, থাকবে আমার সোনার বাংলা, থাকবে বাংলার মাটি বাংলার জল, আর থাকবে আমার ভাইয়ের রঙে রাঙানো। ওই গান তৈরির সময় আমরা সাধারণ মরণশীলরা বুঝি নি যে একটি জাতিসত্তার সঞ্জীবনী তৈরি হলো, এইটি গড়বেন বলে একজন জন্ম নিয়েছিলেন, তিনি তা গড়ে জীবনের কাজ শেষ করলেন।
চার
১৯৫৪ সালের নির্বাচনের সময় আলতাফ মাহমুদ দলবলসহ গান গেয়ে বেরিয়েছেন মিটিংয়ে-মিছিলে। পিতা নাজেম আলী হাওলাদারও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে; কিন্তু সেখানেও তাঁর পক্ষে নয়, যুক্তফ্রন্টের পক্ষে কাজ করেছেন আলতাফ মাহমুদ। নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের বিজয়ের পর কেনদ্রীয় সরকারের নতুন ষড়যন্ত্র শুরু হয় এবং ৯২-ক ধারাবলে মন্ত্রিসভা বাতিল করে প্রবর্তিত হয় কেন্দ্রের শাসন, শুরু হয় ব্যাপক ধরপাকড় ও নির্যাতন। আলতাফ মাহমুদ ও নিজাম-উল হককেও গ্রেপ্তার এড়াতে আত্মগোপনে চলে যেতে হয়। পরে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা পেলে ভূতলবাসী জীবন থেকে তাদের নিস্তার ঘটে। অপেক্ষাকৃত মুক্ত এই পরিবেশে ১৯৫৬ সালে ভিয়েনায় অনুষ্ঠেয় সমাজতন্ত্রী বস্নক-আয়োজিত বিশ্বযুব উৎসবে যোগদানের আমন্ত্রণ পেলেন আলতাফ মাহমুদ। বাইরের দুনিয়ার এই আহবান তাকে উদ্বেলিত করেছিল, তদুপরি ভিয়েনা তো সংগীতের শহর, বেটোভেন মোৎসার্টের পীঠভূমি, তাই পাকিস্তানি শাসনের নানা বাধা-বিড়ম্বনা সত্ত্বেও তিনি ভিয়েনা যেতে বিশেষ উদগ্রীব হয়েছিলেন। প্রগতিপন্থি কর্মীদের জন্য পাসপোর্ট পাওয়া তখন ছিল দুরূহ, প্রায় অসম্ভব, জোর পুলিশি তদন্তের পর তবেই ছাড়পত্র মেলে। তাই অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে আলতাফ মাহমুদ হাজির হয়েছিলেন করাচিতে, যদি দেনদরবার করে, অথবা পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে তিনি একটা পাসপোর্ট হাসিল করতে পারেন! সে-চেষ্টায় তিনি সফলকাম হন নি, পাসপোর্ট পাওয়া তার হয়ে ওঠে নি, ভিয়েনা হয়ে রইল দূর অস্ত, কিন্তু সংগীতের আরেক পাঠগ্রহণের সুযোগ তিনি পেলেন পাকিস্তানে, করাচিতে ও পরে লাহোরে।
আলতাফ মাহমুদ পিছুটানবিহীন একলা মানুষ, ফলে করাচিতে তার ডেরা করে নিতে বেগ পেতে হয়নি। তাঁর করাচিতে পৌঁছবার কয়েক মাস পর ভিলেজ এইড দপ্তরের চাকরি নিয়ে করাচি আসেন নিজাম-উল হক। তবে আলতাফ মাহমুদের মূল শরণ হয়েছিলেন সংগীত-পরিচালক দেবু ভট্টাচার্য। করাচির সংগীতাঙ্গন তখন অনেক গুণী 888sport live chatীর সমাহারে ঝংকৃত। দেশভাগের পর উত্তর ভারতের বেশ কয়েকজন খ্যাতনামা ওস্তাদ পাকিস্তানে এসে আশ্রয় নিয়েছিলেন। পাকিস্তানি বেতারের মূল কেন্দ্র ছিল করাচি, আর লাহোর ছিল live chat 888sport নির্মাণের কেন্দ্র। ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর শিষ্য তিমিরবরণও তখন করাচিতে, দিলিস্নর সংগীতজগতের বিবাদ-বিসম্বাদে ত্যক্ত হয়ে তিনি দেশান্তরী হয়েছিলেন। করাচিতে আগমনকারী উদ্বাস্ত্ত 888sport live chatীদের মধ্যে আরো ছিলেন প্রখ্যাত খেয়াল-গায়ক রমজান আলী খাঁ ও তাঁর ভাগ্নে সারেঙ্গিবাদক ওস্তাদ ওমরাও বুন্দু খাঁ। তিমিরবরণের সান্নিধ্য অর্কেস্ট্রাবাদন সম্পর্কে আলতাফ মাহমুদকে প্রশিক্ষিত করে তোলে, যে-অভিজ্ঞতা তাঁর পরবর্তী সংগীতজীবনে বিশেষ ফলপ্রসূ হয়েছিল। বুন্দু খাঁ সাহেবের কাছে তালিম গ্রহণ তো ছিল আরেক অসাধারণ অভিজ্ঞতা। বুন্দু খাঁ ছিলেন অবিভক্ত ভারতের এক অগ্রণী সংগীত-ব্যক্তিত্ব। তাঁর সম্পর্কে আকাশবাণী দিলিস্ন কেন্দ্রে নানা গল্প প্রচলিত রয়েছে। ভবেশ দাশ ও প্রভাতকুমার দাস-সম্পাদিত কলকাতা বেতার গ্রন্থে এমনি এক ঘটনার উলেস্নখ করেছেন 888sport app download apk সিংহ। তিনি লিখেছেন :
এক হাড়-কাঁপানো শীতের রাতে ছিল বুন্দু খাঁর সারেঙ্গিবাদন। বুন্দু খাঁ সারেঙ্গিবাদন শেষ করে ডিউটি-রুমে এলেন। সেদিন যাঁর ডিউটি ছিল তিনি এক গেজেটেড অফিসার। বুন্দু খাঁ নিজের চেকটি নেওয়ার পর ওই পদস্থ অফিসারকে বললেন, অতি সবিনয়ে, আচ্ছা সাব আজ আমাকে বাড়ি ফেরার জন্য একটি গাড়ি দিতে পারেন?
– গাড়ি? ভুরু উঁচু হয়ে উঠল অফিসারের। গাড়ি কী হবে?
– আজ্ঞে বড্ড শীত। আমার, আমার এই সারেঙ্গিটার ঠান্ডা লাগবে।
গাড়ি দেওয়া খুব মুশকিলের ব্যাপার ছিল না। বুন্দু খাঁর মতো 888sport live chatী গাড়ি চাইলে তো কখনোই নয়, কিন্তু ওই আর কী। একসেরি পাত্রয় তো আর দশ সের বুদ্ধি অাঁটে না। তার ওপর আবার গেজেটেড অফিসারের মার্কা করা রয়েছে। বুন্দু খাঁ গাড়ি পেলেন না। তিনি নিজের গায়ের মোটা গরম চাদরটি দিয়ে তাঁর সারেঙ্গিকে ঢেকে ঢুকে কাঁপতে কাঁপতে বাড়ি ফিরে গেলেন।
পরদিন প্রোগ্রাম মিটিং-এ লায়োনেল ফিলডেনকে দেখে সবাই ভাবল একটা রাগী নেকড়ে বাঘ যেন ছাড়া পেয়ে ডিরেকটর জেনারেলের চেয়ারে বসে পড়েছে। সেই গেজেটেড অফিসারকে ডাকলেন ফিলডেন সাহেব।
– কী হে, কী ব্যাপার তোমার?
– কেন? কেন স্যার?
– যা প্রশ্ন করছি জবাব দাও। ভারতবর্ষে কত গেজেটেড অফিসার আছে?
– শত শত স্যার, মানে হাজার হাজার –
– কটা বুন্দু খাঁ আছে?
– একজন স্যার! মাত্র একজন।
– তাহলে কাল সে গাড়ি পায় নি কেন?
গুণীজন সান্নিধ্যে করাচি-জীবনে আপন সংগীতদক্ষতা প্রসারের আনন্দযজ্ঞে মেতেছিলেন আলতাফ মাহমুদ। আর দেবু ভট্টাচার্যের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে তিনি পাচ্ছিলেন চলার ও কাজ করবার সুযোগ। live chat 888sportের সংগীত পরিচালক হিসেবে তিনি হয়ে উঠলেন দেবু ভট্টাচার্যের দোহার, সহকারী সংগীত-পরিচালক। এছাড়া রেডিও পাকিস্তান করাচিতেও টুকটাক প্রোগ্রাম করছিলেন তিনি। সংগীতরসে বুঁদ হয়ে থাকা এবং সংগীত সৃজনের তালিম গ্রহণের সুযোগ তাঁকে মাতিয়ে রেখেছিল বিপুলভাবে। পূর্ববঙ্গে যুক্তফ্রন্ট সরকারের প্রতিষ্ঠা এবং কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের কোয়ালিশন সরকার তখন কিছুটা অনুকূল আবহ তৈরি করেছিল। করাচির বাঙালি সমাজ নানারকম সক্রিয়তার পরিচয় দিচ্ছিল, বিশেষভাবে সংগীতে এবং আলতাফ মাহমুদ সেখানে পালন করছিলেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।
করাচি বেতারে ইত্তেহাদে মুসিকি নামে দশ মিনিটের একটি প্রোগ্রাম করতেন তিনি। অনুষ্ঠানের জন্য গান নির্বাচন, গ্রন্থনা, সংগীত পরিচালনার কাজ তিনি একাই সারতেন। করাচিতে আগে-পরে উপস্থিতি ঘটেছিল সৈয়দ আলী আহসান, মুস্তাফা নূরউল ইসলাম, শেখ লুৎফর রহমান, আমানুল হক, আসাদুল হক প্রমুখ অনেক গুণিজনের। ‘ইস্ট পাকিস্তান হাউজ’ বিভিন্ন ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করত। কিছুটা পরে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘নজরুল একাডেমী’। এসব কর্মকান্ডে 888sport live chatী ও সংগঠক হিসেবে জড়িত ছিলেন আলতাফ মাহমুদ, তবে তার চেয়ে বড় কথা, করাচিতে আপন সংগীতসত্তা বিকাশের সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি এবং পরিপূর্ণ সদ্ব্যবহার করেছিলেন সুযোগের। একই সঙ্গে সংগীত-দক্ষতা প্রয়োগের অবকাশ পেয়েছিলেন অগ্রজপ্রতিম দেবু ভট্টাচার্যের সাহচর্যে। দেবু ভট্টাচার্যের সর্বকাজে তিনি হয়েছিলেন সঙ্গী এবং এভাবে live chat 888sportের সংগীত পরিচালনার সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক নিবিড় হতে থাকে।
দেশভাগের আগে থেকেই করাচি ছিল এক কসমোপলিটন নগরী, সিন্ধি, গুজরাটি, মারাঠি, গোয়ানিজ, পার্সি ইত্যাদি নানা জাতি-ধর্মের মানুষের একত্র বসবাস ছিল করাচিতে। পাকিস্তানের রাজধানী এবং ব্যবস্থাপক সভার কেন্দ্র হিসেবে করাচিতে বাঙালি রাজনীতিবিদদের যাতায়াত ছিল ঘন ঘন। ফলে প্রবাসী বাঙালিদের জন্য করাচি একেবারে দূর নির্বাসন ছিল না। পাকিস্তানের রাজনীতিতে একদিকে তখন চলছিল প্রাসাদ ষড়যন্ত্র, অন্যদিকে গণতান্ত্রিক বাতাবরণে পূর্ব বাংলা স্বীয় অধিকার সচেতনতা নিয়ে বিভিন্ন ইতিবাচক কর্মকান্ডের সূচনা করেছিল। ভাষা-আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় বাংলা অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছিল, প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ‘বাংলা একাডেমি’, 888sport live chatমন্ত্রী শেখ মুজিবের উদ্যোগে আরো প্রতিষ্ঠিত হয় ‘এফডিসি’ – live chat 888sport নির্মাণের সুবিধার্থে, মওলানা ভাসানী কাগমারিতে আয়োজন করেন বিশালাকার আন্তর্জাতিক সংস্কৃতি সম্মেলন। ১৯৫৭ সালে যুক্তরাজ্য-পাকিস্তান যৌথ প্রযোজনায় এ. জে (আখতার জং) কারদার উদ্যোগ নেন জীবনমুখী live chat 888sport নির্মাণের। তাঁর পাকিস্তানি প্রযোজকদের মধ্যে ছিলেন করাচির লব্ধ-প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী নূরউদ্দিন টোপাল, নোমান বন্দুকওয়ালা প্রমুখ। সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণভাবে এ. জে কারদার live chat 888sportের কাহিনি হিসেবে বেছে নেন মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কালজয়ী 888sport alternative link পদ্মা নদীর মাঝি এবং চিত্রনাট্য ও সংলাপ রচনার দায়িত্ব দেন কবি ফয়েজ আহমেদ ফয়েজকে। স্বাভাবিকভাবেই এই ছবির চিত্রায়ন ঘটবে পূর্ব বাংলার পদ্মা নদী ঘিরে এবং 888sport appয় এ.জে কারদারের বান্ধব জহুর হোসেন চৌধুরী হয়েছিলেন এখানে তাঁর সর্বকাজের সহায়। এ. জে কারদার যে উদারমনা প্রগতিচিন্তার বাহক ছিলেন সেটা তাঁর কর্মধারায় সুস্পষ্ট। তিনি কপিলা চরিত্রের জন্য উপযুক্ত অভিনেত্রী খুঁজে পাচ্ছিলেন না। শেষ পর্যন্ত জহুর হোসেন চৌধুরীর সহায়তায় কলকাতা থেকে বহুরূপীর খ্যাতনামা অভিনেত্রী তৃপ্তি মিত্রকে নির্বাচিত করা হয় এই চরিত্রে অভিনয়ের জন্য। ফয়েজ-কন্যা সেলিমা হাশমি আমাকে জানিয়েছিলেন যে, সংলাপে যথাসম্ভব বাংলার ভাব বজায় রাখতে ফয়েজ অত্যন্ত পরিশ্রম করেছিলেন এবং উর্দু-বাংলা অভিন্ন শব্দ খুঁজে বের করতে তাঁর বাঙালি বন্ধুদের সাহায্য সবসময়ে নিয়েছেন। মুন্সীগঞ্জের কাছে ষাটনলে ছবির বেশিরভাগ লোকেশন শুটিং হয়েছে এবং নির্মাণ-সহযোগী হিসেবে যুক্ত হয়েছিলেন 888sport appর একঝাঁক উজ্জ্বল তরুণ, যাঁদের বলা যায় বায়ান্নর অভিজ্ঞতা-স্নাত। এঁদের মধ্যে ছিলেন সাদেক খান, জহির রায়হান, সৈয়দ শামসুল হক, খান আতাউর রহমান প্রমুখ। জাগো হুয়া সাভেরা (Day Shall Dawn) নামের এই ছবির সংগীত-পরিচালক ছিলেন তিমিরবরণ এবং তাঁকে সহযোগিতা করেছিলেন দেবু ভট্টাচার্য। দেবু ভট্টাচার্যের নিত্যসঙ্গী হিসেবে নয় কেবল, ছবির একমাত্র গান, ‘হাম হর নদীকা রাজা’, তাতে কণ্ঠ দিয়েও আলতাফ মাহমুদ নিবিড়ভাবে যুক্ত হয়েছিলেন এই কাজে। ১৯৫৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর ষাটনলের জেলে-পলস্নীতে ছবির চিত্রধারণ শুরু হয় এবং সমাপ্তি ঘটে ১৯৫৮ সালের এপ্রিলে। লাহোরে সম্পাদনা ও সংগীত সংযোজনের কাজ শেষে ছবি মুক্তি পায় ১৯৫৯ সালে, ২৫ এপ্রিল প্রিমিয়ার শো হয় 888sport appর গুলিস্তান প্রেক্ষাগৃহে। ইতিমধ্যে পাকিস্তানে জারি হয়েছে সামরিক শাসন (অক্টোবর, ১৯৫৮), ধীরে ধীরে এক তমসা গ্রাস করছিল মুক্ত আবহ। জাগো হুয়া সাভেরা প্রত্যক্ষভাবে এর শিকার হয়তো হয়নি, ইতিপূর্বে ব্রিটিশ ফিল্ম ইনস্টিটিউটে ছবির বিশেষ প্রদর্শনী এবং মারি সিটনসহ 888sport app live chat 888sport-সমালোচকদের উচ্চ প্রশংসা হয়তো এর একটি কারণ, তবে ছবির টাইটেলে কাহিনিকার হিসেবে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম আর উলিস্নখিত হয় না, ছবি-মুক্তির খাতিরে ফয়েজ আহমদ ফয়েজও বাধ্য হন কাহিনি, চিত্রনাট্য ও সংলাপ-রচয়িতা হিসেবে এককভাবে নিজের নাম বসিয়ে দিতে।
জাগো হুয়া সাভেরা আলতাফ মাহমুদের জন্য হয়েছিল বড় ধরনের অভিজ্ঞতা। অত্যন্ত ঘনিষ্ঠভাবে তিনি সম্পৃক্ত ছিলেন এই live chat 888sport নির্মাণের সঙ্গে। 888sport app-কেন্দ্রিক বাংলা live chat 888sportের পরবর্তী বিকাশে জাগো হুয়া সাভেরা যে-ভূমিকা পালন করেছিল সেটাও বিশদ বিবেচনার দাবি রাখে।
১৯৫৮ সালের সামরিক শাসন জারির পর দেশের ভেতর এক রুদ্ধশ্বাস পরিস্থিতি তৈরি হয়। সমস্যাপীড়িত গণতন্ত্রের মধ্যেও যেটুকু খোলামেলা আবহ বজায় ছিল, তা রাতারাতি উবে যায়। সবরকম রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক সমাবেশ নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়, সংবাদপত্রের কণ্ঠরোধ করা হয়, ‘ইসলামি’ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ‘হিন্দু’ ভারতের ষড়যন্ত্রের জুজু আবার জেগে ওঠে। সাংস্কৃতিক তৎপরতায় নেমে আসে বন্ধ্যত্ব। এই পরিস্থিতিতে তিমিরবরণ ভট্টাচার্য পাকিস্তান ত্যাগে বাধ্য হন। এমনি বাস্তবতায় সিনেমার সংগীত পরিচালনার কাজে সম্পৃক্তি আলতাফ মাহমুদের জন্য ছিল আশীর্বাদ-স্বরূপ। তিনি তাঁর 888sport live chatদক্ষতা প্রয়োগের জন্য আশ্রয় খুঁজে পেলেন live chat 888sportে এবং দেবু ভট্টাচার্যের সহকারী হিসেবেই চলছিল তাঁর কাজ। এই কাজে মনপ্রাণ ঢেলে দিয়েছিলেন আলতাফ মাহমুদ, নিজের অবস্থান নিয়ে কখনো ভাবিত হননি, যদিও অনুমান করা যায় দেবু ভট্টাচার্যের সংগীত পরিচালনা প্রকৃত অর্থে ছিল দেবু-আলতাফ যৌথ কর্ম, মুম্বাইয়ের live chat 888sportজগতে যেমন ছিলেন কল্যাণজি-আনন্দজি, শঙ্কর-জয়কিষেণ। এমনকি ১৯৬৪ সালে বেবি ইসলাম যখন 888sport appয় নির্মিতব্য উর্দু ছবি তানহার সংগীত-পরিচালক হওয়ার জন্য আলতাফ মাহমুদকে আমন্ত্রণ জানান। তিনি সঙ্গে সঙ্গে প্রস্তাব লুফে না নিয়ে গুরুসম দেবু ভট্টাচার্যের সঙ্গে আলাপের সময় চেয়ে নেন। পরে দেবু ভট্টাচার্যের অনুমোদন ও উৎসাহেই আলতাফ মাহমুদ স্বয়ং সংগীত-পরিচালক হিসেবে আবির্ভূত হন এবং তারপরে তাঁর আর পিছু ফিরে তাকাতে হয় নি, তিনি পাকিস্তানের live chat 888sport জগতের অন্যতম প্রধান সংগীত-পরিচালক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেন।
দেবু ভট্টাচার্যের সঙ্গে করাচিতে আলতাফ মাহমুদ কীভাবে কাজ করছিলেন সেই পরিচয় পাওয়া যায় নৃত্য888sport live chatী বুলবুল চৌধুরীর বোন সুলতানা রহমানের বয়ানে। করাচিতে দেবু ভট্টাচার্যের বাড়িতে তিনি গিয়েছিলেন এবং লিখেছেন :
সেখানে গিয়ে আলতাফ যেন কৃচ্ছ্রসাধন করেছেন – আলতাফ বলেই বোধহয় তা সম্ভব হয়েছিল। অনেকদিন নাকি এমনও হয়েছে, দেবু ভট্টাচার্য আলতাফকে ঘুম থেকে তুলে দিয়েছেন, বলেছেন, অমুক রাগের ওপর একটা ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক পিস চাই, দৃশ্যাবলির সঙ্গে সঙ্গতি, ঘটনাবলির সাথে সঙ্গতি রেখে কতটুকু সময় কোন্ যন্ত্র বাজবে (অর্থাৎ সিকোয়েন্সমাফিক অর্কেস্ট্রেশন), এসবই ছিল আলতাফের দায়িত্ব।
পাঁচ
পাকিস্তানে উর্দু ছায়াছবির সংগীত পরিচালনায় দেবু ভট্টাচার্য ও আলতাফ মাহমুদ জুটি নিজ গুণে তাদের জন্য উচ্চ আসন করে নিতে পারে। নূরজাহান, আহমেদ রুশদি, মেহেদি হাসানসহ পাকিস্তানের সকল শীর্ষ গায়ক-গায়িকা তাঁদের ছবিতে কণ্ঠ দিয়েছেন। সমাজের প্রান্তবাসী জিপসি-কন্যার জীবন ঘিরে তৈরি বানজারান ছিল তৎকালের এক সুপারহিট বাণিজ্যিক ছবি, লাস্যময়ী নায়িকা নীলো জয় করেছিলেন দর্শক-হৃদয়, তার আবেদনে যৌনতার আধিক্য নিয়ে অভিযোগও ছিল বিস্তর, কিন্তু বানজারানের গান তো মাতিয়েছিল দর্শকদের, সেখানে সত্যিকার সংগীতদক্ষতার পরিচয় দিতে হয়েছিল সুরস্রষ্টাদের। নূরজাহানের কণ্ঠে গীত ‘না জানে ক্যায়সা সফর হ্যায় মেরা’ ছাড়াও এই ছবিতে আলতাফ মাহমুদ গেয়েছিলেন একটি গান।
লাহোরের live chat 888sport অঙ্গনে যে-প্রতিষ্ঠা পেয়েছিলেন আলতাফ মাহমুদ সেটা তাঁর জীবনে সচ্ছলতা বয়ে এনেছিল। এই সময়ে ছবির মহরতে কিংবা সংগীতের রেকর্ডিংয়ে 888sport live chatীদের সঙ্গে আলতাফ মাহমুদের যেসব ছবি দেখতে পাওয়া যায়, সেখানে টাই-কোট পরা সুবেশী এক সংগীতজ্ঞকে আমরা পাই। কিন্তু বিত্ত বা সাফল্য আলতাফ মাহমুদকে কখনো তেমন প্রভাবিত করতে পারে নি। ১৯৬৩-৬৪ সালে তিনি পশ্চিম পাকিস্তান ছেড়ে স্থায়ীভাবে চলে আসেন 888sport appয়। ষাটের দশকের সেই পর্বে 888sport appর ছবির জগৎ উর্দু ছবির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মাথা তুলে দাঁড়াতে চেষ্টা করছে। বাণিজ্যিক ছবির নির্মাতাদের মধ্যেও সুস্থধারার জীবনমুখী live chat 888sport নির্মাণের তাগিদ কাজ করছিল। সেই বিকাশ পর্বে আলতাফ মাহমুদ আর্থিকভাবে ভালো অবস্থানে ছিলেন না, কিন্তু মানসিকভাবে তিনি বোধকরি 888sport appর live chat 888sportে অধিকতর স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেছিলেন। নইলে পশ্চিম পাকিস্তানের সফল অবস্থান ছেড়ে এমন কপর্দকহীনভাবে 888sport appয় চলে আসার কোনো যৌক্তিক কারণ ছিল না। 888sport appর আরেক 888sport live chatী মোসলেহউদ্দিন তো সংগীত-পরিচালক হিসেবে সফল হয়ে চিরজীবনের জন্য লাহোরবাসী হয়ে গেলেন। 888sport app ফিরে পুরনো যোগসূত্র পুনরুদ্ধারে আলতাফ সচেষ্ট হয়েছিলেন। সামরিক শাসন অতীত গণসংগ্রামের সব জোর মুছে ফেলতে চাইছিল। অন্যদিকে আইয়ুব-মোনেমি শাসনতলে বাঙালি তখন নতুনভাবে জেগে উঠতে চাইছে। গণসংগীতের পূর্বতন সংগঠিত বিভিন্ন গোষ্ঠী ততদিনে অবলুপ্ত হয়েছে। কমিউনিস্ট পার্টি দীর্ঘকাল ধরে নিষিদ্ধ, নানা পীড়নে তাদের অবস্থান কুণ্ঠিত। ছাত্রদের মধ্যে সংস্কৃতিচর্চা ততো জোরদার না হলেও 888sport cricket BPL rateের অনুষ্ঠান অথবা রবীন্দ্র-নজরুল-সুকান্ত জয়ন্তী ঘিরে কিছু কিছু সংগীতায়োজন চলত। বস্ত্তত ১৯৬১ সালের রবীন্দ্রজন্মশতবর্ষ ঘিরে পূর্ববাংলায় রবীন্দ্রনাথ-নজরুলকে কেন্দ্র করে বাঙালি জাতিসত্তার পরিচয়বহ এক নতুন সাংস্কৃতিক আন্দোলন দানা বাঁধতে থাকে। ১৯৬৩ সালে ছায়ানট সংগীত বিদ্যায়তন যাত্রা শুরু করে এবং সংগীতের মধ্য দিয়ে জাতিসত্তার পুনরাবিষ্কার, লালন ও প্রসারণে তারা হয়ে ওঠে উদ্যোগী। আলতাফ মাহমুদ গোড়ার দিকে ছায়ানটে বেহালার শিক্ষক হিসেবে কিছুকাল ক্লাস নেন। ওয়াহিদুল হকের কাছ থেকে জানা যায়, তিনি পাশ্চাত্য ধারায় বাদন শিক্ষণ দিতে ক্লাসে ব����কবোর্ড ব্যবহার করতেন এবং শিক্ষার্থীদের স্টাফ নোটেশন বিষয়েও ধারণা দিতেন। তবে live chat 888sportের কাজের চাপ বাড়তে থাকায় তিনি বেশিদিন এই ক্লাস চালিয়ে যেতে পারেন নি। পুরনো সংগঠনের মধ্যে একমাত্র বুলবুল ললিতকলা একাডেমী বা বাফা ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছিল এবং অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে সামরিক সরকারের সঙ্গে আপোস করেই তাদের চলতে হয়েছে। তবে বাফার শক্তি ছিল রবীন্দ্রসংগীত ও নজরুল-গীতির চর্চায় এবং নৃত্যনাট্যে। অচিরে নতুন নৃত্যনাট্য সৃজনে বাফা উদ্যোগী হয় নিজাম-উল হকের অনুজ এনামুল হকের কাজ নিয়ে এবং সুরারোপের দায়িত্ব বর্তায় আলতাফ মাহমুদের ওপর। ইতিমধ্যে অবশ্য আলতাফ মাহমুদ live chat 888sportের কাজে অত্যন্ত ব্যস্ত হয়ে পড়েন, ১৯৬৬ সালে সারা আরা বিলস্নাহ্র সঙ্গে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হয়ে সংসারেও তাঁকে মন দিতে হয়। নানা ব্যস্ততা সত্ত্বেও সংগীতের শক্তি দিয়ে জাতীয় জাগরণের কর্মে তাঁর অবদান রচনায় কখনো ছেদ ঘটান নি। পেশাগত দায় যতই থাকুক আলতাফ মাহমুদকে পাওয়া যেত বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের সম্মিলিত উদ্যোগে শহিদ মিনারে নিবেদিত 888sport cricket BPL rateের অনুষ্ঠানে। শেখ লুৎফর রহমান, সুখেন্দু ভট্টাচার্য, অজিত রায়ের সঙ্গে মিলে সম্মেলক গানের জন্য নবীন 888sport live chatীদের গড়াপেটার কাজে তিনিও শরিক থাকতেন। ছায়ানটের বড় কোনো অনুষ্ঠান পরিকল্পনা বাস্তব করে তুলতে তিনি যোগ দিতেন কখনো-সখনো। এনামুল হকের নৃত্যনাট্য, হাজার তারের বীণা ও রাজপথ জনপদ, পরিবেশিত হয় তাঁর সুর সহযোগে এবং নতুন এক আলোড়ন তোলে এই প্রযোজনা। মনে হয় আমাদের উচ্চতর সংগীত-শিক্ষালয়ে এসব সুরের পাঠগ্রহণ ও বিশেস্নষণ করবার সময় এসেছে। নৃত্যনাট্যে সুর সংযোজনের কাজ আলতাফ মাহমুদ অনেক সময় করেছেন সন্জীদা খাতুনের আজিমপুরের ফ্ল্যাটে, ওয়াহিদুল হক-সন্জীদা খাতুনের যুগল-সাধনায় যা হয়ে উঠেছিল 888sport appর সংস্কৃতি-চর্চার এক কেন্দ্র।
১৯৬৭ সালে শহীদুলস্না কায়সারের উদ্যোগে ‘পাক-সোভিয়েত মৈত্রী সমিতি’ অক্টোবর বিপস্নবের পঞ্চাশতম বার্ষিকী উদযাপনের ব্যবস্থা করে। পল্টন ময়দানে আয়োজিত বিশাল অনুষ্ঠানে নিবেদিত হয় নৃত্যালেখ্য, ‘আমরা চলি অবিরাম’। অনুষ্ঠানের জন্য দুটি নতুন গান লেখেন শহীদুলস্না কায়সার, ‘আমি স্পার্টাকাস, মানুষেরই ভাই’ এবং ‘আমরা চলি অবিরাম’। এই দুই গানে সুরোরোপ ছাড়াও আলেখ্যে এবং গানের ইন্টারল্যুডে অর্কেস্ট্রা বাদনের আবহ সঞ্চার করেন আলতাফ মাহমুদ। ইতিমধ্যে চীন-সোভিয়েত দ্বন্দ্বের জের ধরে গোপন কমিউনিস্ট পার্টি দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছিল এবং একদার সতীর্থদের মধ্যে দেখা দিয়েছিল তিক্ততা ও সংঘাত। কিন্তু আলতাফ মাহমুদের দ্বার ছিল সবার জন্য অবারিত, রাজনৈতিক মতাদর্শগত বিরোধ তাঁর হৃদয়ে কোনো ফারাক তৈরি করেনি। কামাল লোহানীর পৌরোহিত্যে নবগঠিত ক্রান্তি 888sport live chatী গোষ্ঠী পল্টন ময়দানে নিবেদন করে নৃত্যনাট্য, চীনের বিপস্নব চেতনায় অনুপ্রাণিত লেগেছে আগুন ক্ষেতে ও খামারে, এতে সুরারোপ করেন আলতাফ মাহমুদ। এই আলেখ্যে তিনি যোগ করেন তাঁর যৌবনের সূচনায় গীত সেই গান, ম্যায় ভুখা হু। এই সময়ে নজরুলের ‘বিদ্রোহী’ 888sport app download apkয় তাঁর আরোপিত সুর গণসংগীতের ইতিহাসে উলেস্নখযোগ্য সংযোজন হিসেবে স্বীকৃতির দাবি রাখে। দীর্ঘ 888sport app download apkর ভাবের পরিবর্তনের সঙ্গে মিলে সুরের যে বৈপরীত্য ও প্রবাহের সঞ্চার তিনি করেন তা কাঠামোগতভাবে পাশ্চাত্যের অর্কেস্ট্রার অনুরণন ঘটায়, সেইসঙ্গে তাঁর সুরে রাগরাগিণীর খেলা একে সৃজনের অন্য স্তরে উপনীত করে। পঞ্চাশের দশকের গোড়াকার আলতাফ মাহমুদ ষাটের দশকের দ্বিতীয়ার্ধে আবার ফিরে এলেন বাংলায়, পূর্বেকার মতো কর্মী-সংগঠক হওয়ার অবকাশ তাঁর ছিল না, কিন্তু সেই মানস ভেতরে লালন করেছেন পুরোপুরি, অধিকন্তু সঙ্গে যোগ হয়েছে সুর888sport live chatের দক্ষতা ও উপলব্ধি, যা তিনি নিয়োজিত করেছিলেন একদিকে live chat 888sportের সংগীত নির্মাণে এবং অন্যদিকে গণজাগরণের সাংগীতিক কর্মকান্ডে। জীবন তাঁর পাল্টে গিয়েছিল, 888sport live chatাভিজ্ঞতাও সঞ্চিত হয়েছিল অনেক কিন্তু পাল্টায় নি ভেতরের মানবসত্তাটি, ওয়াহিদুল হক তীক্ষ্মধী পর্যবেক্ষণ থেকে লিখেছিলেন :
পাকিস্তান থেকে ফেরার পর আলতাফ সংসারী হওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু সেটা বাইরে থেকে কখনোই টের পাওয়া যায় নি। তিনি আদৌ বিয়ে করেছেন এ-খবর নিতান্ত কেউ বলে না দিলে জানবার উপায় ছিল না, এমন কি তাঁর বাসায় গিয়েও না। আলতাফের চিরকালের গড়ে-ওঠা এই জীবনটি অবিকৃত চালিয়ে যেতে পারার মধ্যে শ্রীমতী আলতাফের সানুরাগ সহনশীলতার কৃতিত্ব সন্দেহাতীতভাবে অনুমান করা যায়। কিন্তু সংসার তো যুগীনগরের যুবলিগের আখড়া নয়, তার একটা চাপ আছে। আলতাফ সব তাতেই আছেন আগেরই মতন, কিন্তু আবার কিছুতে নেইও।
আলতাফ মাহমুদকে একান্ত করে পায় নি কেউ, অথচ তিনি সবার জন্যই ছিলেন। পূর্ববাংলার live chat 888sportধারায় সংগীতের উচ্চমান রচিত হচ্ছিল তাঁর হাতে, জহির রায়হানের বেহুলা, কিংবা কাজী জহিরের অবুঝ মনের মতো বাণিজ্যিকভাবে সফল ছবির সুরকার তিনি। আবার কতক ছবিতে তিনি কণ্ঠদানও করেছেন, যেমন সত্য সাহা পরিচালিত বাঁশরী ছবিতে তিনি গেয়েছিলেন অতুলপ্রসাদের সেই দুরূহ গান ‘পাগলা, মনটারে তুই বাঁধ’। গায়ক হিসেবে নিজেকে কখনো তিনি প্রতিষ্ঠিত করতে চান নি, অথচ কী অসাধারণই না ছিল তাঁর গায়কি। কেবল গানে সুর দেওয়া নয়, live chat 888sportের আবহসংগীতে তিনি যে অরিজিন্যালিটি ও ধ্রুপদী মেজাজ যোগ করেছেন সেটাও থেকে গেছে লোকবিবেচনার বাইরে। live chat 888sportের সঙ্গে নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত রইলেও বাইরের প্রতিবাদী সংগীতধারায় সৃজনশীলতা যোগ করার আয়োজন থেকে তিনি কখনো বিযুক্ত হন নি, যদিও সময় ও সুযোগ অনেক কমে এসেছিল জীবন ও জীবিকার প্রয়োজনে তবু সর্বদা তিনি ছিলেন ভেতরমহলেরই মানুষ। প্রতিবাদী ও জাগরণী কর্মকান্ডে যখন যেভাবে পেরেছেন তিনি যুক্ত হয়েছেন এবং তাঁর সম্পৃক্তি গোটা সাংস্কৃতিক আন্দোলনে যোগ করেছে নতুন মাত্রা। এর অনন্য প্রকাশ হয়ে আছে সত্তরের প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ের পর 888sport live chatীসমাজের রাজপথে নেমে আসার মধ্যে। ‘কাঁদো বাংলার মানুষ’ ব্যানার নিয়ে 888sport live chatীদের এই সমাবেশ ও মিছিলে দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়াবার আকুতির সঙ্গে মিশে ছিল এমনি অসহায় ও পরিত্যক্তভাবে মৃত্যুবরণের বিরুদ্ধে উচ্চারিত শপথ। সমর দাস সুর দিয়েছিলেন সেই মিছিলের গানে : ‘সাগর পানিতে ঝড় জাগতে দাও/ জাগতে দাও/ বজ্রের গানে গানে কণ্ঠ মিলিয়ে/ শপথ নিলাম/ শপথ নিলাম।’
এই ঐতিহাসিক মিছিলের জন্য আলতাফ মাহমুদও লিখেছিলেন গান এবং সুরারোপ করে গেয়েছিলেন সবাইকে নিয়ে, তিনি নিজে ছিলেন সামনে, গামছা-বাঁধা হারমোনিয়াম গলায় ঝুলিয়ে। এই গানের কথা ও সুর বুঝিয়ে দেয় কত নিবিড়ভাবে আলতাফ মাহমুদ জড়িয়ে আছেন বাংলার দুর্ভাগ্যের সঙ্গে। তিনি লিখেছিলেন : ‘কত অবহেলায় মোরা কেঁদেছি/ কত ভাঙা বীণায় মোরা সেঁধেছি।’ গানে ঝংকৃত হয়েছিল প্রত্যয়, ‘অন্ধ ভিক্ষা আর নয়।’
এভাবেই 888sport apps পৌঁছে গিয়েছিল মুক্তিযুদ্ধে। শিশুকন্যা শাওন ও স্ত্রী সারা মাহমুদকে নিয়ে আলতাফ মাহমুদের সংসার তখন ৩৭০ আউটার সার্কুলার রোডে। ছোট্ট সংসার হলেও পরিবারটি বৃহৎ, সারা মাহমুদের ভাইবোন ও মা আলতাফ মাহমুদের আপন ভাইবোন ও মায়ের মতো মিশে আছেন সেই জীবনে। সবাই মিলে প্রত্যক্ষ করলেন ২৫ মার্চের কালরাত্রির ভয়াবহতা, রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সের অসামান্য প্রতিরোধ এবং পাকিস্তানি বাহিনীর অপরিমেয় নিষ্ঠুরতা।
ছয়
২৫ মার্চের গণহত্যাযজ্ঞ শুরুর পর থেকে আলতাফ মাহমুদ বিমর্ষ, বিক্ষুব্ধ ও বেদনাহত হয়ে পড়েন। পাকবাহিনীর বর্বর আক্রমণের মুখে প্রাথমিক প্রতিরোধ ভেঙে পড়ে অচিরে, নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে শহরবাসীর মধ্যে শুরু হয় ছোটাছুটি, আলতাফ মাহমুদের পরিবারের সদস্যরা রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সের মুখোমুখি বিপজ্জনক আবাস ছেড়ে কিছুদিন কমলাপুর বৌদ্ধবিহারে শুদ্ধানন্দ মহাথেরোর আশ্রয়ে কাটান। প্রাথমিক প্রতিরোধ চূর্ণ হয়ে গেলে সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয় রাজনৈতিক-সামরিক নেতৃবৃন্দ ও সেইসঙ্গে হাজার হাজার সন্ত্রস্ত মানুষ, যাঁদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, পরিবারের সদস্যরা নিষ্ঠুর হত্যাযজ্ঞের শিকার হয়েছে। সেই অন্ধকার সময়েও সংগঠিত প্রতিরোধ গড়ে উঠতে সময় লাগে নি। ১৭ এপ্রিল মুজিবনগরে শপথ গ্রহণ করে নবগঠিত 888sport apps সরকার এবং বিদ্রোহী কবি নজরুলের জন্মজয়ন্তী ১১ জ্যৈষ্ঠ আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র, যেখানে সংগীত হয়ে ওঠে মুক্তিযুদ্ধের অস্ত্র। অবরুদ্ধ দেশে আটকা পড়েছিল যে অগণিত মানুষ, আলতাফ মাহমুদও ছিলেন তাঁদের একজন। বিশাল এক পরিবারের তিনিই একমাত্র বয়োপ্রাপ্ত উপার্জনশীল পুরুষ, সবাইকে ফেলে রেখে একলা চলে যাওয়ার কোনো উপায় তাঁর ছিল না। অন্যদিকে সবাই যখন জীবনপণ সংগ্রামে রত, তখন তিনি তো সেখান থেকে দূরে থাকতে পারেন না। এমনি এক দিনে আলতাফ মাহমুদের সঙ্গে সাক্ষাতের বর্ণনা দিয়েছেন কলেজ অব মিউজিকের শিক্ষক অবরুদ্ধ আরেক 888sport live chatী শেখ লুৎফর রহমান। সেগুনবাগিচার কলেজ অব মিউজিক বন্ধ করে তখন সেখানে হয়েছে পাকবাহিনীর ক্যাম্প, শিক্ষকদের হাজিরা দিতে হয় পাশের সরকারি দপ্তরে, বাঙালি ডিভিশনাল কমিশনার তাঁদের বসবার সেই জায়গা করে দিয়েছিলেন। শেখ লুৎফর রহমান লিখেছেন :
আলতাফ মাঝে মাঝে তাঁর কালো রঙের গাড়ি নিয়ে আমার কাছে আসতেন। একদিন সে আমার হাত টেনে দোতলার বারান্দার কাছে ঝুলে-পড়া একটি বটের ডালের কচি পাতা, দূরে ফুটে থাকা একটি ফুল, ছোট একটা গাছে টুনটুনির লাফালাফি দেখিয়ে বলল, এগুলো বন্ধ হয় না কেন? তারপর একটু থেমে আবার বলল, শহর বন্দর গ্রামগঞ্জের নদীনালা, মাঠঘাট মানুষের রক্তে ভরে গেছে। আকাশে-বাতাসে মানুষের কান্না আর আহাজারি। এ রক্তদান বৃথা যেতে পারে না। এদেশের স্বাধীনতা ওরা রুখতে পারবে না। এদের বিচার হয়তো একদিন হবে, তবে সেদিন আপনি আমি বেঁচে নাও থাকতে পারি।
ব্যথিত-বিক্ষুব্ধ আলতাফ মাহমুদ কিছু না-করতে পারার যন্ত্রণাতেও দগ্ধ হচ্ছিলেন নিরন্তর। কিন্তু তাঁর বেপরোয়া মনোবৃত্তি শিগগিরই একটি পথ করে দিলো, সংক্ষিপ্ত ট্রেনিং নিয়ে যে তরুণ যোদ্ধাদল প্রবেশ করছিল 888sport appয়, তিনি তাদের আশ্রয় ও অবলম্বন হয়ে উঠলেন খুব স্বাভাবিকভাবে। ইতস্তত কয়েকটি সফল অপারেশনের পর গেরিলা যোদ্ধারা আরো বড় আক্রমণ পরিচালনার প্রস্ত্ততি নিতে চাইলে অস্ত্র লুকিয়ে রাখার দায় স্বেচ্ছায় নিজের কাঁধে তুলে নিলেন আলতাফ মাহমুদ। সংগোপনে বাড়ির পেছনের কাঁঠালগাছের নিচে মাটি খুঁড়ে চাপা দিয়ে রাখলেন অস্ত্রবোঝাই ট্রাংক। 888sport appয় গেরিলা তৎপরতার সমর্থনে তাঁর একাদিক্রম কাজের এটা ছিল আরো একটি অধ্যায়, তবে এটাই হয়ে উঠল শেষ অধ্যায়। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কিছু করবার তাগিদ তাঁকে বেপরোয়া করে তুলছিল, বোঝা যাচ্ছিল তিনি বিপদে পড়বেন, আজ অথবা কাল। যোদ্ধাদলের একজন সন্দেহবশত ধরা পড়েছিলেন পাকবাহিনীর হাতে, নির্যাতনের মুখে অস্ত্র লুকিয়ে রাখার স্থান এবং গৃহকর্তার পরিচয় ফাঁস করে দেন তিনি। ৩০ আগস্ট গভীর রাতে ট্রাকবোঝাই সৈন্যদল এসে ঘেরাও করে আলতাফ মাহমুদের বাসা।
সেই রাতে, কিংবা রাত শেষ হয়ে যখন প্রভাতের আলো সবে ফুটে উঠতে শুরু করেছে, দিনের সেই পবিত্র লগ্নে ৩৭০ আউটার সার্কুলার রোডের বাসভবনে নেমে আসা দুর্ভাগ্যের বর্ণনাদানও কষ্টকর। ১৯৮৪ সালে বাংলা একাডেমি-প্রকাশিত 888sport sign up bonus : ৭১ গ্রন্থের জন্য সংক্ষিপ্ত এক বয়ান দিয়েছিলেন সারা মাহমুদ, তেত্রিশ বছর পরে হলেও ভয়ংকর ও নিষ্ঠুর বাস্তবতার সামান্যতম পরিচয়ও তিনি মেলে ধরতে পারেন নি, খুব সাদামাঠাভাবে কেবল এটুকুই লিখতে পেরেছিলেন, ‘৩০ আগস্ট ১৯৭১। ভোর ছ’টা হবে। তন্দ্রাচ্ছন্নতা তখনো কাটে নি। দরজায় কড়া নাড়ার শব্দে দরজা খুলে দেয়া হলো। কোনো কথা হলো না। আলতাফ মাহমুদ তাদের সঙ্গে বেরিয়ে গেলেন। ফিরে আসেন নি আর কখনো। ফিরবেন না কোনোদিন।’
আলতাফ মাহমুদের সঙ্গে শ্যালক দিনু বিলস্নাহ ও তাঁর তিন ভাই এবং মেলাঘর, ত্রিপুরা থেকে সদ্য-প্রত্যাগত 888sport live chatী আবুল বারক আলভী সবাইকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয় পাকবাহিনীর প্রধান নির্যাতন কেন্দ্র এমপি হোস্টেলে। দিনুর প্রায় চলিস্নশ বছর লেগেছে সেই রাত ও পরবর্তী চার দিনের নারকীয় অভিজ্ঞতার বিবরণ মেলে ধরতে। ২০১২ সালে প্রকাশিত টয় হাউজ থেকে ১৯৭১ : মৃত্যু ছায়াসঙ্গী গ্রন্থে রয়েছে সেই বিবরণ। দুঃসাধ্য সেই বিবরণ পাঠ করা, তারপরও সেই পাঠ নেওয়া যায়, নিতে হবে আমাদের এবং তা সম্ভব করে তোলে অন্তরে গমগম করা আলতাফ মাহমুদের গানের সুর, সব নিপীড়ন নৃশংসতা বর্বরতার মোকাবিলা তো আলতাফ মাহমুদ করেছিলেন সেই সুরশক্তি দ্বারা, আমাদেরও অবলম্বন হয় সেই সুর ও সংগীত।
দিনু বিলস্নাহ লিখেছেন :
একজন মেজর অথবা ক্যাপ্টেন মার্কা অফিসার হুংকার দিয়ে বলল, আলতাফ মাহমুদ কোন্ হ্যায়? আলতাফ ভাই সেই অফিসারের সামনে একটু এগিয়ে গিয়ে বললেন, ম্যায় আলতাফ মাহমুদ হু। মেজর আলতাফ ভাইয়ের নাম শোনামাত্র হাতের পিস্তলের বাঁট দিয়ে মাথায় প্রচন্ড আঘাত করলে আলতাফ ভাই এক নিমেষে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। মেজরের নির্দেশে কয়েকজন আর্মি আলতাফ ভাইকে ঘিরে ফেলে পেটে এবং ঘাড়ের ওপর বন্দুকের বাট দিয়ে আঘাত করতে করতে ড্রয়িং রুম দিয়ে সামনের বারান্দায় নিয়ে গেল।
বাড়িতে লুকানো অস্ত্রভান্ডার সত্ত্বেও আলতাফ মাহমুদ ছিলেন অবিচল। কোথা থেকে মানুষ পায় এমন শক্তি, হতে পারে এতো উন্নত শির, যার সামনে নতশির এমন কি ঐ শিখর হিমাদ্রির।
আলতাফ ভাইকে আলাদা করে মেজরের জেরার পর জেরা, মাল কাহা? হাতিয়ার কাহা? আলতাফ ভাই বেশ জোরে জবাব দিল, জানি না। অমনি রাইফেলের বাট দিয়ে সজোরে আঘাত করল পেটে। যন্ত্রণায় কুঁকড়ে পড়ে গেলেন আলতাফ ভাই। নেকড়ের চেয়ে হিংস্র হয়ে আলতাফের ওপর (মেজর) নিজেই ঝাঁপিয়ে পড়ল। আলতাফ ভাইয়ের কপাল ফেটে দরদর করে রক্ত ঝরছে। পুরো শরীর রঞ্জিত হয়ে সাদা গেঞ্জি লাল হয়ে গেল। তবুও আলতাফ ভাই বলছেন, আমি জানি না।
বড় দরদ দিয়ে তিনি তো গাইতেন ‘888sport appর শহর রক্তে রাঙাইলি’, রক্ত কতভাবেই না উঠে আসতো তাঁর গানে, ভাইয়ের রক্তে রাঙানো ফেব্রুয়ারি অবি888sport app download for androidীয় হয়েছে তাঁর সুরে। রক্তস্নাত গানে সুরের জাদুর স্পর্শ লাগাতে পথানুসন্ধান করে ফিরেছেন তিনি। বুন্দু খাঁ সাহেবের কাছে আলতাফ মাহমুদ শিখেছিলেন ধ্রুপদী সংগীত, সেই বুন্দু খাঁ যিনি শীতের রাতে তাঁর গায়ের চাদর দিয়ে সারেঙ্গি পেঁচিয়ে নিয়েছিলেন, যেন বাদনযন্ত্রের ঠান্ডা না লাগে। আমার খুব মনে পড়ে ষাটের দশকের শেষাশেষি সংস্কৃতি সংসদের কোনো এক কাব্যগীতি-আলেখ্যের আয়োজনে তল্পিবাহকের কাজ করছি, রণেশ দাশগুপ্ত করে দিয়েছেন গ্রন্থনা, গোলাম মুস্তাফা আবৃত্তি করবেন ‘হে মোর দুর্ভাগা দেশ যাদের করেছ অপমান’, আলতাফ ভাই গাইবেন ‘বিদ্রোহী’, সঙ্গে দোহার দেবেন অজিত রায় এবং শেখ লুৎফর রহমান। মঞ্চে ছোটাছুটির এক পর্যায়ে আমি ডিঙিয়ে ফেলি হারমোনিয়াম। খপ করে আমার হাত ধরে ফেললেন আলতাফ ভাই, বললেন, যাও সালাম করে এসো। তাই করতে হলো আমাকে, সালাম করলাম বাদনযন্ত্র, আর তারপর থেকে বুঝতে শিখেছি বাদকের কাছে বাদ্যযন্ত্রের মূল্য, কী সম্মানের সঙ্গেই না চলে তাঁদের 888sport live chatের দেবীর আরাধনা। যখন শুরু হলো অনুষ্ঠান, সমবেত কণ্ঠে গীত হয় গানের সেই অংশ – উঠিয়াছি চিরবিস্ময় আমি বিশ্ব বিধাত্রির, আমাদের বিস্ময়ের অবধি থাকে না, শিহরিত হয়ে যাই অন্তত এটুকু অনুভব করে মানুষ কত বড় হতে পারে।
এবার তার শেষ অস্ত্র প্রয়োগ করলো মেজর। একজন সিপাইকে ডেকে বলল, ‘ও শালাকো ইধার লে আও।’ দু’জন জওয়ান ধরাধরি করে একজনকে আলতাফ ভাইয়ের সামনে দাঁড় করালো। চেনা যাচ্ছিল না। মনে হল ওর ওপর প্রচ অত্যাচার হয়েছে। কিছুক্ষণের মধ্যে সবাই চিনে ফেলল। এ-যে এক পস্নাটুনের কমান্ডার সামাদ ভাই। মেজর সামাদ ভাইকে আলতাফের সামনে দাঁড় করিয়ে জিগ্যেস করলো, ইয়ে আদমি আলতাফ মাহমুদ? সামাদ সাহেব মাথা নেড়ে জবাব দিল, জি হুজুর। এবার মেজর আবার জিজ্ঞাসা করল, হাতিয়ার ইয়ে আদমিকা পাস রাখা? সামাদ সাহেব মেজরকে মাথা নেড়ে বললেন, জি হ্যাঁ। উসকা পাস হাতিয়ার রাখা। এক নিমিষে সব শেষ হয়ে গেল।
কাঁঠালগাছের নিচ থেকে লুকানো অস্ত্রের ট্রাঙ্কগুলো বের হলে রক্তাক্ত ক্ষত-বিক্ষত আলতাফ মাহমুদকে দিয়ে তা টেনে তোলানো হয়। তারপর সবাইকে নিয়ে সেনাদল চলে যায়। দিনু ও তাঁর তিন ভাই এবং আলভীকে এমপি হোস্টেলের বন্দিশালার নিচে একটা ছোট্ট রান্নাঘরে আটক করা হয়। আলতাফ মাহমুদকে নেওয়া হয় অন্য কক্ষে। নতুন বন্দি এসে ঘরে ঢোকামাত্র শুরু হয় এলোপাতাড়ি মার।
আর্মিদের নির্যাতন কক্ষে সর্বোচ্চ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সেনা ছাড়াও বিহারি রিফিউজি দিয়ে টর্চার করা হতো। আমাদের আগমনে ওদের উলস্নাস আর অশস্নীল গালি দিয়ে সম্বোধন ছিল। তখনই বুঝতে পারি নির্যাতনের মাত্রা কী হতে পারে। এর মধ্যে বন্দুকের বাট দিয়ে এবং কিল-ঘুষিতে শরীরের বিভিন্ন জায়গা ক্ষত-বিক্ষত হয়ে পড়েছে। এদিকে একজন একজন করে নাম ডেকে পাশের ঘরে নিয়ে অত্যাচার শুরু করার পর শুধু চিৎকার আর আর্তনাদের কান্না শোনা যাচ্ছিল। এদের মধ্যে শেষ শিকার আমাকে ডাকতেই প্রথমে একটা গালি দিয়ে শুরু করল। শালা বানচোৎ মুক্তি হ্যায়, বলে এলোপাতাড়িভাবে পেটাতে পেটাতে মাটিতে ফেলে দুজন আমাকে উপুড় করে পা টেনে ধরে। শুরু হল পৈশাচিক নির্যাতন। কাঁধ থেকে পায়ের পাতা পর্যন্ত মাংসপেশিতে কসাইয়ের মতো কোপানো স্টাইলে পেটাল। আমি কিছুক্ষণের জন্য সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলেছিলাম। শরীরের বিভিন্ন জায়গা থেকে রক্ত শার্ট-প্যান্টে লেগে রক্তাক্ত। তন্দ্রা ভাঙতে দেখি আমি বেশ একটা অপরিচ্ছন্ন রুমের ভেতর। পাশের রুম থেকে অন্যদের নির্যাতনের চিৎকার শুনে বোঝা যায় অত্যাচারের মাত্রা। এরপর আমার ইন্টারোগেশন বা জেরা করার পালা। প্রথমেই আমার নাম জিগ্যেস করে বলল, তুম মুসলমান হ্যায়? মুসলমান বানচোৎ কলমা বলো। আমি কলমা জানতাম, ওকে শোনালাম, তাও বিশ্বাস করল না। আমাকে দাঁড় করিয়ে বলল, পাৎলুন উতারো। খুলে ফেললাম পাৎলুন। একেবারে উলঙ্গ। ভালো করে পরীক্ষা করে বলল, স্যার উছকি খৎনা হয়া। বলে আমাকে কাপড় পরার নির্দেশ দিল। এবার আসল জেরা শুরু হল। ভারত থেকে ট্রেনিং নিয়ে কবে এসেছি। আমি বললাম, ভারতে যাইনি। বলার সাথে সাথে রোলার দিয়ে পেটাতে শুরু করল। এবার আরেক প্রশ্ন – আউর হাতিয়ার কাহা? আমি বললাম, জানি না। এবার প্রচন্ড এক লাথি এবং থাপ্পড় মেরে আমার কানের পর্দা ফাটিয়ে দিলে ঝরঝর করে রক্ত পড়তে লাগল। আমার পাশে দাঁড়ানো একজন হঠাৎ আমার চুল ধরে টেনে উঠিয়ে বলল, তুম মুক্তি হো। আমি ভাঙা ইংরেজিতে বললাম, আই অ্যাম স্টুডেন্ট। আর যায় কোথায়! উগ্র মূর্তি ধারণ করে বলল, ‘বাঙ্গাল কা কুত্তা, তু ঝুট বাত বোলতা’, বলে চুল এবং শার্টে ধরে এক নিমিষে শূন্যে তুলে দেয়ালে ছুড়ে মারে। আমি ছিটকে নিচে পড়ে গেলাম। (ঈষৎ সংক্ষেপিত)
বিকেলে আরেক দফা চলে জেরা আর নির্যাতন। রাতে বন্দিদের নিয়ে যাওয়া হয় রমনা থানায়। পরদিন আবার আনা হয় এমপি হোস্টেলে, শুরু হয় একই প্রশ্ন, একই নির্যাতন। দিনু বিল��হ লিখেছেন, ‘মার খেতে খেতে ইতিমধ্যে থেতা হয়ে পড়ি, জখম জায়গায় নতুন আঘাতে কোনো যন্ত্রণার অনুভূতি হতো না। মনে হল, বাঁহাতের কনুইয়ের নিচে ভেঙ্গে গেছে। অন্য সব ব্যথার চেয়ে হাতের ব্যথায় ছটফট করছিলাম বেশি। হাতটি ফুলে গেছে।’
এর মধ্যে একদিন সকালে কড়া রোদের মধ্যে সবাইকে মাঠে ঠায় দাঁড় করিয়ে রাখা হলো। দুঘণ্টা পর রোদের মাত্রা বেড়ে গেলে পানির তেষ্টায় অবসন্ন দেহ ধরে রাখা কষ্টকর হয়। দিনুর মনে হয়েছিল পাশের লাইন থেকে ধপাস করে একজন পড়ে গেলেন, বোধ করি শরীফ ইমাম, জাহানারা ইমামের স্বামী। তাঁর আরো মনে পড়ে, আলতাফ মাহমুদ দাঁড়িয়ে থাকতে না পেরে মাটিতে লুটিয়ে পড়েছিলেন। চার ঘণ্টা পর তাদের ঘরে নেওয়া হয়। শুরু হয় পালাক্রমে নির্যাতন। প্রচন্ড অত্যাচারের যন্ত্রণা সহ্য করে চলেছেন আলতাফ মাহমুদ, বলেন নি কোনো সহযোদ্ধার নাম, সব দায় নিয়েছিলেন নিজের ওপর। এই শক্তি তাঁকে জুগিয়েছিল কোন গান, অন্তরে কি অনুরণন তুলেছিল সেই সুর, ‘পাগলা মনটারে তুই বাঁধ’। পাগল ছাড়া আর কে পেতে পারে মনের এমন জোর। দিনু আরো জানাচ্ছেন, ‘আলতাফ ভাইয়ের ওপর অমানুষিক অত্যাচার করার সময় আমরা চিৎকার আর গোঙানির শব্দ পেতাম। আলতুর কণ্ঠ আমাদের জানা।’
কেমন ছিল আলতাফ মাহমুদের গোঙানি, কী অসহ্য অত্যাচারে তাঁর কণ্ঠ থেকে বের হয়েছিল পশুর মতো আওয়াজ, যেসব কিছুই আমরা জানি না, জানি কেবল এক বছর আগে প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ের পরে এই মানুষটিই তো গলায় হারমোনিয়াম ঝুলিয়ে রাজপথে গেয়েছিলেন গান, ‘আর অশ্রু নয় নয়/ আর দুঃখ নয় নয়/ আর নয় মায়েদের শিশুদের কান্না।’
বন্দিশালায় একবারই আলতাফ মাহমুদের মুখোমুখি হয়েছিলেন দিনু বিলস্নাহ, তখন তিনি নিঃসাড়, অচৈতন্য, মানবদেহ যত অত্যাচার পীড়ন সহ্য করতে পারে সব সীমানা ততক্ষণে অতিক্রম করেছে তাঁর দেহ। দিনুর জবানিতে আমরা মুখোমুখি হই সেই অভিজ্ঞতার, আলতাফ মাহমুদের সঙ্গে শেষ সাক্ষাৎকার :
মেজর পাঞ্জাবিতে কিসব বলল কিছুই বুঝলাম না। আমার দিকে চোখ পড়লে সিপাই আমার চুল ধরে পাশের বাথরুমে ঠেলে ভরে দিয়ে দরজা বন্ধ করে দিল। বাথরুমে গিয়ে দেখি পরপর তিনটি দেহ লাশের মতো পড়ে আছে। সব শোয়া, আধ মরার মত। হাফিজ ভাই আর আলতাফ ভাই, অন্যজনকে চিনতে পারিনি। কারণ, এতই অত্যাচার হয়েছে চেনার উপায় নেই। আলতাফ ভাইয়ের কপালে হাত রেখে দেখলাম জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে। ওদের ওই অবস্থা দেখে আমার যন্ত্রণার কথা ক্ষণিকের জন্য ভুলে গেলাম। মনে হলো এই তিনটি প্রাণের বেঁচে থেকে লাভ নেই। মৃত্যুই ওদের জন্য শ্রেয়। মৃত্যুই ওদের শান্তি আর প্রশান্তি বয়ে আনবে।
কী দেখেছিলেন দিনু বিলস্নাহ্, কেমন দেখেছিলেন আলতাফ মাহমুদকে তা আর কিছু বলেন নি, বলতে পারেন নি। আমাদের জন্যও সে-দৃশ্য অনুমান করা কঠিন, তবে বুঝতে পারি গানের পঙ্ক্তি সত্যি হয়ে উঠেছিল তাঁর জীবনে, জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে ললাটে জ্বলেছিল ভগবান রুদ্র, রাজ রাজটিকা দীপ্ত জয়শ্রীর।
ইতিহাস সেই রাজটিকা রক্তরেখায় এঁকে দিয়েছে আলতাফ মাহমুদের কপালে, মুছে ফেলার সাধ্য নেই কোনো বর্বর শক্তির, তিনি নজরুল-নন্দিত সেই বিদ্রোহীবীর, চির উন্নত যাঁর শির।

Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.