কামালউদ্দিন নীলু
অতীতকে পরিবর্তন করতে হবে বর্তমানের সাহায্যে, যতটা বর্তমান পরিচালিত হয় অতীতের দ্বারা
– টি.এস. এলিয়ট
আমার এ-লেখাতে আমি প্রথমেই আলোচনা করব কীভাবে এবং কেন আমি অ্যান এনিমি অব দ্য পিপল নাটকটিকে আজ ১৩৩ বছর পরেও বলছি অত্যন্ত শক্তিশালী এবং প্রাসঙ্গিক। নাটকটির 888sport app download apk latest version ও রূপান্তর কীভাবে ভিন্ন-ভিন্ন সংস্কৃতিতে পুনর্সৃজনের ক্ষেত্রে ব্যাখ্যা করা হয়েছে, সে-বিষয়েও আপনাদের দৃষ্টি নিবদ্ধ করার চেষ্টা করব। আমি দৃষ্টি নিবদ্ধ করব ১৯৫০ সালে আর্থার মিলারের রূপান্তরকৃত অ্যান এনিমি অব দ্য পিপল নাটকটির প্রতি, যেটি একটি রাজনৈতিক নাটক হিসেবে অত্যন্ত শক্তিমত্তা অর্জন করেছিল। আমি আলোচনা করব ভারতীয় live chat 888sport-নির্মাতা সত্যজিৎ রায় ১৯৮৯ সালে গণশত্রম্ন নামে যে-live chat 888sport নির্মাণ করেছিলেন, সেটি নিয়েও। সত্যজিৎ রায় তাঁর live chat 888sportটিতে আর্থার মিলারের রূপান্তরটি আংশিকভাবে ব্যবহার করলেও সেটা তিনি ভারতীয় সংস্কৃতি, বিশেষভাবে পশ্চিমবঙ্গের আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক ও সংস্কৃতির সঙ্গে মানানসই করে পুনর্সৃজন করেছিলেন। আমার এ-লেখাতে আমি অ্যান এনিমি অব দ্য পিপলের আরো কিছু প্রযোজনা নিয়ে আলোচনা করব, বিশেষভাবে যে-প্রযোজনাগুলো নাটকটির রাজনৈতিক বৈশিষ্ট্যের ওপর জোর দিয়েছে।
আর্থার মিলার ও সত্যজিৎ রায়, বিশ্বথিয়েটার এবং live chat 888sportের দুজন অত্যন্ত সফল ও সৃজনশীল ব্যক্তি। আর্থার মিলার বিংশ শতাব্দীর একজন বড়মাপের নাট্যকার এবং সত্যজিৎ রায় একজন অস্কারজয়ী live chat 888sport-নির্মাতা ও চিত্রনাট্যকার। তাঁরা দুজনেই ইবসেনের অ্যান এনিমি অব দ্য পিপল নিয়ে কাজ করেছেন দুটি ভিন্ন-ভিন্ন মাধ্যমে এবং দুজনের সৃষ্টিকর্মের মধ্যে রয়েছে নাটকটির নতুন ব্যাখ্যা।
এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে, তাঁরা উভয়েই তাঁদের কালে তাঁদের নিজেদের দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতির সঙ্গে ইবসেনের এ-নাটকটির প্রাসঙ্গিকতা খুঁজে নিয়েছিলেন সময়ের প্রয়োজনে। মিলারের ক্ষেত্রে প্রেক্ষাপটটা ছিল আমেরিকায় ম্যাকার্থির সময়কাল এবং তিনি নাটকটি রূপান্তর করেছিলেন সরকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার মধ্যে যে-দ্বন্দ্বটি ছিল, সেটাকেই খুব জোরালোভাবে উপস্থাপনের লক্ষক্ষ্য। অন্যদিকে সত্যজিৎ রায় গুরুত্ব দিয়েছিলেন ‘মন্দিরভিত্তিক রাজনীতি’কে, অর্থাৎ ধর্মের নামে পানি কীভাবে স্থানীয় অর্থনীতি ও রাজনীতির খেলায় পরিণত হয় সেদিকে। সত্যজিৎ রায়ের live chat 888sportটিকে ধরে নেওয়া যেতে পারে হিন্দু মৌলবাদের বিরুদ্ধে একটি বলিষ্ঠ রাজনৈতিক অবস্থান হিসেবে। live chat 888sportটিকে একইসঙ্গে একটি বামপন্থী দলের প্রতি বিদ্রূপ হিসেবেও গণ্য করা যায়, যাঁরা পশ্চিমবঙ্গ শাসন করেছিলেন ১৯৭৭ সাল থেকে।
অ্যান এনিমি অব দ্য পিপল বিভিন্ন পরিস্থিতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়ার কারণটি হলো, ইবসেনের নাটকটি বিভিন্ন রাজনৈতিক ইস্যু এবং রূপক ধারণ করে, তা বিভিন্নভাবে গুরুত্বারোপ করা যায় ভিন্ন-ভিন্ন সামাজিক-রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক পরিস্থিতির সঙ্গে মানানসই করে এবং খুব সহজেই এর একটি পুনর্ব্যাখ্যা করা যায়। অন্যভাবে বলা যায়, কাঠামোগত দিক দিয়ে নাটকটি খোলামেলা এবং অবাধ, সে-কারণেই এটি সমকালীন নাট্যকার, নাট্যনির্দেশক এবং চিত্রপরিচালকদের তাঁদের নিজস্ব পরিবেশ-পরিস্থিতির সঙ্গে যে-বিষয়গুলো প্রাসঙ্গিক মনে হয়, সেগুলোর প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ করার একটি সুযোগ প্রদান করে।
আমার কাছে অ্যান এনিমি অব দ্য পিপল নাটকটি অবধারিতভাবেই চিহ্নিত করে ক্ষমতার রাজনীতিকে। এছাড়া রয়েছে আরো কিছু সামাজিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্কিত বিষয়, বিশেষ করে আর্থিক মুনাফা, সামাজিক স্তরবিন্যাস ও কর ব্যবস্থা সম্পর্কিত, এবং অন্যগুলো এই একই কাঠামোর ভেতরে অবস্থানরত বিভিন্ন শ্রেণি-সম্পর্কিত, বিশেষ করে আমলা, গণমাধ্যম ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির অবস্থান ও দ্বন্দ্ব-সম্পর্কিত। অন্য আরো কিছু বিষয় উঠে এসেছে সমাজের ভঙ্গুর ভাবাদর্শগত ভিত্তি থেকে। যেমন – ভ-ামি, দ্বৈতনীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি এবং ভয়ের রাজনীতি ও তার কৌশল। এর পাশাপাশি দেখা যায়, নির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তির সামাজিক অবস্থান ও তার ভূমিকা। যেমন – মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, ভিন্নমতাবলম্বীদের কোণঠাসা করে রাখা এবং অন্যের বিরুদ্ধে শিঙা ফোঁকা ইত্যাদি।
অ্যান এনিমি অব দ্য পিপলের নাট্যসংঘাত : ব্যক্তি বনাম কর্তৃপক্ষ, ব্যক্তিস্বার্থ বনাম সর্বজনীন স্বার্থ, 888sport free betগুরু বনাম 888sport free betলঘু, মূল্যবোধ বনাম আচরণ এবং সত্য বনাম মিথ্যা।
১৯৫০ সালে মিলার অ্যান এনিমি অব দ্য পিপল রূপান্তর করেন, যা আমি আগেও উল্লেখ করেছি। মিলার নাটকটিকে একটি শক্ত রাজনৈতিক ভিত্তির ওপর দাঁড় করাতে গিয়ে ইবসেনের প্রচুর সংলাপকে বাদ দিয়েছেন এবং বহুক্ষেত্রে নতুন সংলাপ সংযোজন করেছেন নাটকটিকে আরো তীক্ষন ও ধারালো করে তুলতে। তিনি ভাষার ক্ষেত্রে বেছে নিয়েছিলেন তাঁর সময়ের দৈনন্দিন জীবনের ভাষাকেই। মিলারের রূপান্তরটি অনেক বেশি পরিশীলিত ও পরিমার্জিত বললে ভুল বলা হবে না। মিলারের কাছে ইবসেনের সংলাপের চেয়ে নাটকের বিষয়বস্ত্ত ছিল অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এ-বিষয়ে তিনি নিজে তাঁর রূপান্তরিত নাটকের ভূমিকাতে লিখেছেন : ‘…আমার প্রশ্নটি হলো, সংকটকালে গণতন্ত্র তার 888sport free betলঘু রাজনীতিকদের সুরক্ষায় রত কিনা?’
একই ভূমিকাতে তিনি আরো বললেন : ‘নাটকটি অলঙ্ঘনীয় বাস্তব সত্যকে ধারণ করে আছে। নাটকটি আসলে কী বলতে চাইছে? যারা নেপথ্যের কোনো দুরভিসন্ধির কারণে সত্যকে বিকৃত করছে, তারাও অবধারিতভাবে নিজেদেরকেই বিকৃত ও দুর্নীতিগ্রস্ত করে তুলছে।’
মিলার যদিও নাটকটির কাহিনি নরওয়েকেন্দ্রিকই রেখেছেন এবং মূল নাটকের মতো সময়কালও একই রেখেছেন, কিন্তু এরপরও এটা স্পষ্ট যে, মাকার্থিবাদ তাঁর রূপান্তরে ছেয়ে আছে, যা আমাদের খোলা চোখে ধরা পড়ে সে-সময়ের আমেরিকার রাজনৈতিক বিষয়গুলো, আর এই কারণেই আমি বলতে চাই, নাটকটি আপাদমস্তক ম্যাকার্থিবাদের বিরুদ্ধে এক উচ্চচিৎকার। ফলে নাটকটি হয়ে উঠেছে পূর্ণ আকারের একটি রাজনৈতিক নাটক।
আমাদের ভাবনায় ফেলে দেয় কেন তিনি এত পরিবর্তনের পরও কাহিনির সময়কালটা নরওয়েকেন্দ্রিক রাখলেন! আমি মনে করি, কারণটা ছিল সে-সময়ের কঠোর সেন্সরশিপ ব্যবস্থাকে আড়ালে রেখে পুরো বিশ্বকে ম্যাকার্থিবাদের বিরুদ্ধে জানান দেওয়া। আমার এ-ভাবনা যুক্ত করে মিলারের ব্যঞ্জনাময় কথা। আর তা হলো : ‘… ইবসেনের ছায়ায়… আমি এমন কিছু বলতে চেয়েছি যা একা আমি কখনোই বলতে পারতাম না।’
এটা 888sport app download for android করা যেতে পারে, ১৯৪০-এর শেষ থেকে ১৯৫০-এর শেষদিকে আমেরিকাতে কমিউনিস্ট কার্যকলাপ সম্পর্কে একটি সন্দেহ ঘুরপাক খেত। যে-কারণে ফেডারেল রাজ্য ও স্থানীয় সরকারসহ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতেও ‘আন্-আমেরিকান’সুলভ কোনো কার্যকলাপ চলছে কি না, এটা খুঁজে বের করার জন্য বেশ কয়েকটি কমিটি ও প্যানেল গঠন করা হয়েছিল। এই সময়কালকে বলা হয় ম্যাকার্থির সময়কাল, নামকরণটি হয়েছিল কংগ্রেস সিনেটর জোসেফ ম্যাকার্থি-পরিচালিত ‘আন্-আমেরিকান’সুলভ কর্মকা–র শুনানি অনুষ্ঠিত হওয়ার পরে। হাজারো আমেরিকান দোষী সাব্যস্ত হয়েছিল কমিউনিস্ট হিসেবে বা কমিউনিস্টদের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশের কারণে। কমিউনিস্ট সন্দেহভাজনদের আগ্রাসী তদন্ত ও প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড় করানো হতো। যার ফলে অনেককেই চাকরি হারাতে হয়েছিল, কারো-কারো জীবিকা পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে পড়েছিল, আবার বহু মানুষকে কারাবরণও করতে হয়েছিল। ম্যাকার্থিবাদ সমর্থিত হয়েছিল কয়েকটি দলের মাধ্যমে। ১৯৪৭ সালে হলিউডের প্রায় বেশিরভাগ স্টুডিও একটি বিবৃতি দেয় যে, তারা জেনেশুনে কখনোই একজন কমিউনিস্ট বা সরকার-উৎখাতের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত এমন কোনো দল বা ব্যক্তিকে নিয়োগ দেবে না। এটাই লক্ষণীয়ভাবে হলিউডের বেসরকারি কালোতালিকার শুরু। এই একই ধরনের কালোতালিকা ভিন্ন-ভিন্ন আরো কিছু বিভাগ ও মাধ্যমের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য ছিল। আমেরিকার অনেক বিখ্যাত লেখক, 888sport live chatী, বুদ্ধিজীবীর মধ্যে আর্থার মিলারও ছিলেন কালোতালিকাভুক্ত লেখক ও নাট্যকার।
ফিরে আসা যাক ইবসেন ও আর্থার মিলারের নাট্যকাঠামোতে। আর্থার মিলারের রূপান্তরিত নাট্যকাঠামো দাঁড়িয়ে আছে তিন অঙ্কের ওপর, যেখানে ইবসেনের নাটকটি পাঁচ অঙ্কের। মজার বিষয় হলো, মিলার কিন্তু ইবসেনের নাটকের কোনো ঘটনাকে বাদ না দিয়েই পাঁচ অঙ্কের নাটককে তিন অঙ্কে নামিয়ে এনেছেন। তিনি নাট্যকাঠামোর
পুনর্বিন্যাস করেছেন এভাবে :
– ইবসেনের মূল নাটকের প্রথম ও দ্বিতীয় অঙ্ক মিলারের রূপান্তরে প্রথম অঙ্ক। কিন্তু বিভক্ত হয়েছে দুটি দৃশ্যে।
– ইবসেনের মূল নাটকের তৃতীয় ও চতুর্থ অঙ্ক মিলারের রূপান্তরে দ্বিতীয় অঙ্ক। কিন্তু বিভক্ত হয়েছে দুটি দৃশ্যে।
– ইবসেনের পঞ্চম অঙ্ক ঢুকে গিয়েছে মিলারের তৃতীয় অঙ্কে।
আমার দৃষ্টিতে এই নতুন নাট্যকাঠামোর ভেতর দিয়ে মিলার ইবসেনের অ্যাকশন লাইনটিকে ভেঙে একটি নতুন অ্যাকশন লাইন তৈরি করার চেষ্টা করেছেন নাটকটির গতি দ্রম্নততর করার লক্ষক্ষ্য। পাশাপাশি বিষয়বস্ত্তর ক্ষেত্রে মিলার নাটকটিকে আরো সমসাময়িক ও প্রাসঙ্গিক করার জন্যে ইবসেনের বেশ কিছু সংলাপ কেটে দিয়েছেন এবং কিছু-কিছু স্থানে নতুন সংলাপ লিখেছেন যাতে করে পাঠক ও দর্শক সহজেই অ্যান এমিনি অব দ্য পিপলের ভেতর দিয়ে ম্যাকার্থিবাদের রাজনৈতিক বিষয়টা সহজেই ধরতে পারে। এজন্যে মিলারের রূপান্তরটি একটি ‘প্যারালালোগ্রাম বা সামন্তরিক রাজনৈতিক প্রহসন’।
এবার আমরা দেখার চেষ্টা করি মিলার কেন এবং কোন সংলাপগুলোকে বাদ দিয়েছেন।
প্রথমেই মিলার যে সংলাপটিকে ফেলে দিয়েছেন সেটা হলো : ‘এমন কোনো প্রতিষ্ঠিত সত্য নেই যা সতেরো, আঠারো বা বিশ বছরে সত্য হিসেবে টিকে থাকে।’ সংলাপটিকে বাদ দেওয়ার কারণ হচ্ছে সম্ভবত মিলারের সময় ও আমেরিকার রাজনৈতিক অবস্থার ঐতিহাসিক বাস্তবতা পরস্পরবিরোধী ছিল বলেই।
এরপরে ‘অভিজাততন্ত্রে’র বিষয়ও ইবসেনের নাটকে যেভাবে ছিল সেগুলোকে মিলার প্রতিস্থাপন করলেন সমসাময়িক সমরূপ ও পারস্পরিক বিষয়বস্ত্তর মাধ্যমে। মিলার এ-বিষয়ে যা বলেছেন সেটা হলো :
কৃষ্ণাঙ্গ ভাবাদর্শপ্রসূত জাতিগত বিদ্বেষ আমাদের পৃথিবীকে ইতোমধ্যেই গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞে পরিপূর্ণ করে তুলেছে। এটা ধারণাতীত যে ইবসেন আজকের দিনেও আমাদেরকে উৎসাহিত ও জানতে আগ্রহী করে তোলেন এইভাবে যে, কোনো-কোনো ব্যক্তি অন্যদের তুলনায় জন্মগতভাবে এবং জাতিগতভাবে শ্রেষ্ঠ বলেই প্রতিপক্ষ বা দুর্বলের উপর কর্তৃত্ব ও নিয়ন্ত্রণ রাখার অধিকার রাখে।
দ্বিতীয়ত, ইবসেনের নাটকের চতুর্থ অঙ্কের একটি সংলাপ, ‘888sport free betগরিষ্ঠরা কখনোই সঠিক নয়’, এটা মিলারের রূপান্তরে পুনর্লিখিত হয়েছে এভাবে, ‘888sport free betগরিষ্ঠরা কখনোই সঠিক নয়, যতোক্ষণ পর্যন্ত না তারা সঠিক কাজটি করে’। ইবসেনের সংলাপটির চেয়ে মিলারের সংলাপটি গণতন্ত্রে বিশ্বাসীদের কাছে অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য ও অর্থপূর্ণ ছিল।
একইভাবে, ইবসেনের মূল নাটকের পঞ্চম অঙ্কের শেষ দিকের সংলাপটি, ‘সবচেয়ে শক্তিমান তিনিই যিনি সবচেয়ে একা’। ইবসেনের পাঠক ও গবেষকদের কাছে এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সংলাপ হওয়া সত্ত্বেও মিলার কিন্তু সংলাপটি ছেঁটে ফেললেন। ফলে বিষয়টা যা দাঁড়াল সেটা হলো, দর্শক বা পাঠকের মনোযোগ সত্য প্রতিষ্ঠার জন্যে একাকী একজন মানুষের কাছ থেকে সরে গিয়ে চলে গেল সম্মিলিত প্রচেষ্টার দিকে। এ-পরিবর্তনের কারণে ড. স্টকম্যানের চরিত্রটির অহংসর্বস্ব রূপটি 888sport app পড়ে গেল। তাছাড়া মিলারের পরিবর্তনটি সমকালীন সামাজিক ও রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিকেও সমর্থন করল, ফলে নাটকের সমাপ্তিটি অনেক বেশি আশাবাদী ও সুস্পষ্ট রাজনৈতিক বৈশিষ্ট্যকে আলিঙ্গন করল। নাটকের সমাপ্তি হয় নিজ পরিবার ও ক্যাপ্টেন হরস্টারের প্রতি ড. স্টকম্যানের সংলাপ দিয়ে :
এখন থেকে সবাই মনে রাখবে, তোমরা সত্যের জন্য যুদ্ধ করছ। আর এ কারণেই তোমরা একা। এই একাকিত্বই তোমাদের শক্তিশালী করছে। তোমরা এই বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী মানুষ… আর শক্তিশালী মাত্রকেই একা হতে জানতে হয়।
ড. স্টকম্যানের সংলাপের সঙ্গেই বাইরে থেকে ভেসে আসছিল জনতার গর্জন। এটা খুব মজার বিষয় যে, মিলার কিন্তু ইবসেনের নাট্যকৌশল, যেটাকে বলা হয় ‘ডাবল পার্সপেকটিভ’, সেটাকে তাঁর রূপান্তরে পুরোপুরিভাবে বজায় রেখেছেন কোনো ধরনের পরিবর্তন বা পরিমার্জন ছাড়াই।
সংবাদপত্র অফিসের দৃশ্যটি, অর্থাৎ যেটা ঘটছে ইবসেনের মূল নাটকের তৃতীয় অঙ্কে এবং মিলারের রূপান্তরিত ভাষ্যের দ্বিতীয় অঙ্কের প্রথম দৃশ্যে, যেখানে মিলার দুটি গুরুত্বপূর্ণ সমন্বয়সাধন করেছেন :
প্রথমত, আপন ভাই ড. স্টকম্যান সম্পর্কে পিটার স্টকম্যান যা বলেছেন সেটা ড. স্টকম্যানের চরিত্র ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে জনগণের মধ্যে সন্দেহ সৃষ্টি করার লক্ষক্ষ্য, আর সেজন্যেই তার সম্পর্কে এতটা ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে বলা। পাশাপাশি এর ভেতর দিয়ে সংবাদপত্রের সম্পাদকের হুঁশিয়ার করা যাতে করে ড. স্টকম্যানের নিবন্ধটি পত্রিকায় ছাপা না হয় :
পিটার স্টকম্যান : অবশ্যই এটা (করবৃদ্ধি) ঘটবে। এর সঙ্গে আরো একটি বাস্তব সত্য হলো… আমাকে মাফ করবেন আমি পত্রিকা অফিসে বাস্তব সত্য নিয়ে কথা বলছি… স্নানাগারগুলোকে সংস্কার করতে দুই বছর লেগে যাবে, এটা ভুলে যাবেন না কিন্তু। আপনাদের মতো ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের দুই বছর উপার্জন ছাড়াই চলতে হবে, মি. আসলাকসেন, আর এর সঙ্গে নতুন করের বোঝা তো আছেই। এসবই আসলে ঘটছে – তার ব্যক্তিগত আবেগের কারণে; সে-ই তো টুঁটি চেপে ধরছে – এসব আসলে তার স্বপ্ন, তার অলীক কল্পনা। আমরা যেন সকলে পেস্নগে আক্রান্ত হয়ে হাসপতালে বসবাস করছি।
হোভস্টাডের যুক্তি ড. স্টকম্যানের নিবন্ধটি যথেষ্ট 888sport apkনির্ভর। কিন্তু পিটার স্টকম্যান হোভস্টাডের কথা গ্রাহ্য না করে তার ভাইয়ের সম্পর্কে একের পর এক বলে যেতে থাকেন :
পিটার স্টকম্যান : এর পেছনে রয়েছে তার প্রতিহিংসা, রয়েছে শাসকের প্রতি তার ঘৃণা। এ ছাড়া আর কিছুই না। এটা আসলে একটা মানুষের অলীক স্বপ্ন, যা দিয়ে আমাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রার গতিকে স্তব্ধ করে দেওয়া। যেটা তার পাগলামো ছাড়া আর কিছুই না! এর সঙ্গে সমাজ-সংস্কার বা 888sport apkের কোনো সম্পর্ক নেই, আছে কেবলি ধ্বংস। আমি পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছি, আমাদের জনগণ খুব সহজেই তার দুরভিসন্ধিকে ধরতে পারছে।
এটা খুব পরিষ্কার যে, আর্থার মিলার, ড. স্টকম্যানের প্রতি পিটার স্টকম্যানের সংলাপের মধ্য দিয়ে ম্যাকার্থির সময়ে ভিন্নমতাবলম্বী রাজনৈতিক আদর্শে বিশবাসীদের (মার্কসীয় রাজনীতিবিদ বা অন্-আমেরিকানদের) প্রতি সন্দেহ জাগিয়ে তোলার প্রচেষ্টাকেই ইঙ্গিত করেছেন ইবসেনের রূপকের সংমিশ্রণে। এটা একধরনের ভয়ের রাজনীতি ‘দ্য পলিটিকস অব ফিয়ার’, যা সমসাময়িক বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ক্ষমতাশালীরা অবলীলাক্রমে ব্যবহার করে চলেছেন প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার লক্ষক্ষ্য। এটাকেই আমরা মিশেল ফুকোর ভাষায় বলতে পারি ‘বায়ো-পলিটিকস’ যেটা যুক্ত থাকে বায়োপাওয়ার বা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার মধ্যে, যা ক্রমে-ক্রমে বিসত্মারিত হয়ে জায়গা করে নেয় জনগণের শারীরিক, মানসিক ও রাজনৈতিক শরীরের মধ্যে। এটাই হচ্ছে ক্ষমতার নতুন প্রযুক্তিগত কৌশল বা ‘টেকনোলজি অব পাওয়ার’ যেটা ভর করে ডিসিপিস্ননারি মেকানিজম বা নিয়ন্ত্রণের কৌশলের মধ্যে।
দ্বিতীয়ত, একটি নতুন গল্প 888sport app download apk latest version করার বিষয়ে, পেট্রার সংবাদপত্রের চাহিদাকে প্রত্যাখ্যানের মধ্য দিয়ে মিলার গণমাধ্যমের সন্দেহজনক আচরণকে পাঠক ও দর্শকের চোখে আঙুল দিয়ে দেখালেন, যার প্রকাশ ঘটে দুজনের সংলাপে। আমি মনে করি, মিলারের সংলাপ ইবসেনের সংলাপের তুলনায় ক্ষুরধার, শক্তিশালী, রাজনৈতিক ও সরাসরি। মিলার তাঁর রূপান্তরে, স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, গল্পটির বিষয়বস্ত্ত অতিপ্রাকৃত ঘটনাকে কেন্দ্র করে আবর্তিত। এটা এমন একটি বিষয় যা সংবাদপত্রের উদার চরিত্র এবং একইসঙ্গে ‘মুক্তচিমত্মার মানুষ’ হিসেবে হোভস্টাডের বিশ্বাসের বিরুদ্ধে। পেট্রা তার ধারালো যুক্তি দিয়ে সংবাদপত্রের দ্বৈতচরিত্রকে স্পষ্ট করে তোলে এভাবে : ‘সংবাদপত্রে কোনো কিছু প্রকাশ করতে চাইলে পত্রিকার নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গিকেই অনুসরণ করতে হয়।’ এই দ্বৈতনীতি আরো স্পষ্ট হয়ে যায় পেট্রার প্রতি হোভস্টাডের আচরণ ও কথোপকথনের মাধ্যমে :
হোভস্টাড : হ্যাঁ, পেট্রা, মনে রাখবে এটা একটা সংবাদপত্র। মানুষ কিন্তু অন্যকিছুর চেয়ে এসবই পড়তে ভালোবাসে। তারা পত্রিকা কেনেই শুধু এসব পড়ার জন্যে। আর আমরা এসবের মধ্য দিয়েই আমাদের রাজনৈতিক কথাগুলো খুব সঙ্গোপনে বলে দিই যাতে করে পাঠক আমাদের রাজনৈতিক বক্তব্য ও উদ্দেশ্য দ্বিধাহীনচিত্তে মেনে নেয়। পত্রিকা চালাতে গেলে চোখ কান খোলা রাখতে হয়, বুঝলে? আমাদের দায়িত্ব নয় জনগণকে উত্তেজিত করে তোলা। নিশ্চয়ই আমাদের আদর্শ ও নীতিগত জায়গাটা বুঝতে তোমার অসুবিধা হয়নি?
আমার কাছে মিলারের রূপান্তরিত ভাষ্যের এই অংশটি তথাকথিত প্রগতিশীল গণমাধ্যমের প্রতি একটি বিদ্রূপ ও ব্যঙ্গার্থক বলেও মনে হয়। একটু গভীরে গিয়ে লক্ষ করে দেখুন উপরোক্ত অংশটি চমৎকারভাবে মিলে যায় আজকের দক্ষেণ এশিয়ার গণমাধ্যম, বিশেষ করে এই মুহূর্তে 888sport appsের গণমাধ্যমের ভূমিকার সঙ্গে। বিষয়টি আরো খোলাসা করে দিয়েছেন সত্যজিৎ রায় তাঁর live chat 888sport গণশত্রম্নতে।
মিলার ও সত্যজিৎ রায় দুজনেই তাঁদের রূপান্তরে সংবাদপত্রের সুবিধাবাদী চরিত্রকে অনেকটা নগ্ন করে দিয়েছেন বললে কোনোভাবেই ভুল বলা হবে না। এ-সম্পর্কে আপনাদের 888sport app download for android করিয়ে দিই যে, সংবাদপত্র ড. স্টকম্যানের নিবন্ধটি ছাপার ব্যাপারে ব্যস্ত হয়ে পড়ে এবং লেখাটি শেষ করার জন্যে ড. স্টকম্যানকে উৎসাহিত করে, কিন্তু যে-মুহূর্তে সংবাদপত্রের কর্তৃপক্ষ বুঝতে পারল লেখাটা ছাপা হলে সংবাদপত্রটি রাজনৈতিকভাবে আক্রমণের শিকার হতে পারে, পাশাপাশি যখনই তারা বুঝতে পারে পিটার স্টকম্যান জনগণকে বোঝাতে সমর্থ হয়েছে যে, ড. স্টকম্যান যা বলছে তা সবই ব্যক্তিগত ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং ড. স্টকম্যান দেশ ও সমাজের একজন শত্রম্ন তখনই সংবাদপত্রের কর্তৃপক্ষ ড. স্টকম্যানের নিবন্ধটি ছাপার বিষয় কৌশলে এড়িয়ে যান। পত্রিকার এ-ধরনের আচরণকে আমরা বলতে পারি ‘সাইলেন্ট সেন্সরশিপ’ যেটা পত্রিকার অমত্মঃকৌশলের একটি অংশ যার সঙ্গে যুক্ত থাকে রাষ্ট্রক্ষমতার সঙ্গে সংবাদপত্রের গোপন আঁতাত, যেটাকে আমি বলতে চাই ‘ম্যাসোকিস্টিক জার্নালিজম বা মর্ষকামী সাংবাদিকতা’; যেহেতু এ-ধরনের সাংবাদিকতা যুক্ত হয়ে থাকে ‘সাইলেন্স অ্যান্ড ডিনায়াল বা, নিঃশব্দ এবং বর্জনে’র গভীরে।
জনসভার দৃশ্যটি (ইবসেনের নাটকের চতুর্থ অঙ্ক এবং মিলারের রূপান্তরে দ্বিতীয় অঙ্কের দ্বিতীয় দৃশ্য), মিলারের এ-অংশটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে আমি মনে করি, যেহেতু এর পুরো অংশ জুড়েই প্রতিফলিত হয়েছে ম্যাকার্থির সময়কার অভ্যন্তরীণ রাষ্ট্রনীতির এক ভয়ঙ্কর রূপ, পাশাপাশি এটা আমাদের বুঝতে সাহায্য করে যে, কী করে একটি চরম আদর্শবাদী নাটক হয়ে ওঠে সমসাময়িক ও রাজনৈতিক। এ-রূপান্তরটিকে আমি আমত্মঃসাংস্কৃতিক নাট্যবলয়ের এক অসাধারণ মিথস্ক্রিয়া বলে মনে করি।
এবার দেখা যাক কীভাবে মিলার, ইবসেনের নাট্যশরীরের আশ্রয়ে
নতুন করে সৃষ্টি করেছেন তার নবরূপায়ণ। এ-দৃশ্যে শাসনকর্তাদের প্রতিনিধি হিসেবে পিটার স্টকম্যানের ক্ষেত্রে যে-ব্যাপারটি ঘটেছে তা হলো, মূল নাটকের চরিত্রের চেয়ে মিলারের সৃষ্ট চরিত্রের রাজনৈতিক ভূমিকাটি অনেক প্রকট ও সরাসরি। মিলারের রূপান্তরে উন্মুক্ত ভোটের মাধ্যমে ড. স্টকম্যানকে জনতার শত্রম্ন ঘোষণা করা হয়েছে। ড. স্টকম্যানের চরিত্রটি মিলার দ্বিধাহীন, স্বল্প আবেগপ্রবণ এবং দৃঢ় ব্যক্তিত্বসম্পন্ন করে তুলেছেন। মিলারের রূপান্তরে ড. স্টকম্যান অনেক বেশি চৌকস ও বুদ্ধিমান। মিলার ড. স্টকম্যানকে একজন শক্তিশালী ও বলবান করে তোলার জন্যে ড. স্টকম্যানের ভাঁড়সুলভ ও বোকামিপূর্ণ আচরণগুলোকে বাদ দিয়েছেন, এতে করে নাটকটি গুরুগম্ভীর ও রাজনৈতিক হয়ে উঠেছে। মূল নাটকে যেসব কমিক বা হাস্যরসাত্মক উপাদান ছিল তা মিলার তাঁর রূপান্তরিত ভাষ্যে কেটে বাদ দিয়েছেন। এই কমিক বা হাস্যরসাত্মক উপাদানগুলোর কারণে ইবসেন নিজেই তাঁর নাটকের ধরন সম্পর্কে সন্দিহান ছিলেন।
এ-প্রসঙ্গে ইবসেনের লেখা একটি চিঠির অংশ উল্লেখ না করলেই নয়, চিঠিটি ছিল তাঁর সম্পাদককে লেখা :
আমি এখনো নিশ্চিত নই যে এটাকে আমি কমেডি বলব না স্রেফ একটি নাটক বলব। এর নাট্যিক বৈশিষ্ট্যের অনেকাংশই ছাপিয়ে আছে কমেডি, যদিও এর মৌলিক বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও সংকটজনক।
আমার কাছে মিলারে জনসভার দৃশ্যটিতে ছেয়ে আছে ম্যাকার্থিবাদ। যদিও এটা নিয়ে তর্ক বা বাহাস হতে পারে।
অ্যান এনিমি অব দ্য পিপলের মিলারকৃত রূপান্তরটি পৃথিবীর প্রায় সকল নাট্যনির্দেশক এবং live chat 888sport নির্মাতার ব্যবহার করার মুখ্য কারণই হচ্ছে এর সমকালীন প্রাসঙ্গিকতা, সময় ও রাজনীতি। এখানে উল্লেখ করা জরুরি যে, নাটকটি থিয়েটারের প্রধান ধারার পাশাপাশি ‘পথনাটক’, ‘নাটকের মাধ্যমে শিক্ষা’ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে এবং স্থানীয় সমস্যাগুলোকে উপজীব্য করে ‘কমিউনিটি থিয়েটার’ বা ‘থিয়েটার ফর ডেভেলপমেন্টে’র আঙ্গিকেও মঞ্চস্থ করা হয়েছে। কীভাবে ইবসেনের এ-নাটককে আধার করে ভিন্ন-ভিন্ন সংস্কৃতির মধ্যে এবং নানা ধারার নাট্য-আঙ্গিকের মিশ্র ক্রিয়ায় একটি তৃতীয় অভিব্যক্তি তৈরি করেছে, পাঠকের বোঝার সুবিধার্থে আমি এখানে প্রসঙ্গক্রমে কিছু উদাহরণ তুলে দিচ্ছি :
– লন্ডনের ‘তারা আর্টস’, নাটকটির নবরূপায়ণ করে লন্ডনের এশিয়ান কমিউনিটি বা অভিবাসীদের জন্যে। নির্দেশনার দায়িত্বে ছিলেন জোতিন্দর ভার্মা। প্রযোজনাটি এডুকেশন রিসোর্স প্যাকের অন্তর্গত একটি প্রকল্প। এই নবনাট্যায়নের পটভূমি ছিল ব্রিটিশশাসিত ভারত। জোতিন্দর ভার্মা তাঁর প্রযোজনাটিতে যে-ব্যাখ্যা দিতে চেয়েছিলেন সেটি হচ্ছে, কেমন করে একটি প্রথাবদ্ধ সমাজব্যবস্থা ‘দূষিত’ হয়ে পড়ে নিত্যনতুন বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের ফলে। এটি যেন ছিল ঔপনিবেশিক ভারতের আধুনিকতার বিরুদ্ধে সমালোচনা।
– জাপানের নাট্যপরিচালক ইয়োজি সাকাতে ২০০৬ সালের জাপানের সামাজিক-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নাটকটি রূপান্তর ও নির্দেশনা দিয়েছিলেন ‘রিঙকোগান থিয়েটার কোম্পানি’র জন্যে। নির্দেশক সাকাতে বলেন, জাপানের বর্তমান পরিস্থিতিকে তুলে ধরার ক্ষেত্রে অ্যান এনিমি অব দ্য পিপল অত্যন্ত উপযুক্ত, যেহেতু জাপানের মানুষ স্বভাবগতভাবেই তাদের সমস্যাগুলোর বিষয়ে নেতিবাচক এবং উদাসীন। বিশেষ করে দুর্নীতির অপবাদ, সমাজ, রাজনীতি ও রাষ্ট্রব্যবস্থা এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, বিশেষ করে পুলিশের বিষয়ে। জাপানের দর্শকের সামনে বিষয়গুলো তুলে ধরা জরুরি বলে সাকাতে মনে করেন। সাকাতের রূপান্তরে ড. স্টকম্যান ছিলেন একজন 888sport promo code। সাকাতের এই নবভাবনার বিষয়ে ব্যাখ্যা : ‘জাপানের নাগরিক সমাজের নেতৃত্বে যেমন রয়েছেন 888sport promo codeরা, তেমনি ‘সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি’র নেতৃত্বেও রয়েছেন একজন 888sport promo code।’ এসবের ভেতর দিয়ে তিনি তাঁর রূপান্তরিত ভাষ্যটিকে সমসাময়িক করে তুলেছেন।
– ১৯০৭ সালে আমেরিকার থিয়েটার কোম্পানি ‘স্ট্রবেরি থিয়েটার ওয়ার্কশপ’ মঞ্চস্থ করেছিল অ্যান এনিমি অব দ্য পিপল। নির্দেশনার দায়িত্বে ছিলেন গ্রেগ কার্টার। তিনি মিলারের রূপান্তরটিকে 888sport promo code আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষেতে পুনর্সৃজন করেছিলেন। তাঁর প্রযোজনাটিতেও ড. স্টকম্যান ছিলেন একজন 888sport promo code। প্রযোজনাটিতে গুরুত্ব পেয়েছিল ভাইবোনের সম্পর্ক। এ-রূপান্তরের অন্যতম একটি ভাবনা ছিল যে, সম্পদপ্রাপ্তির অভিলাষটি আসলে পুরুষবাচক এবং জ্ঞানপ্রাপ্তির অভিলাষটি 888sport promo codeবাচক। ড. স্টকম্যানের বিদ্রোহটি কার্টার নির্দেশনার মাধ্যমে তুলে ধরেছিলেন দাস বিদ্রোহের সমতুল্য করে।
– একটি নাটকের প্রাসঙ্গিকতা বুঝতে হলে নাট্যসমালোচক ও দর্শকের মতামত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নাটকটিকে তাঁরা কতটুকু গ্রহণ করছেন এটা দেখাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ২০০৬ সালে নরওয়েজীয় নাট্যনির্দেশক শেটিল ব্যাং-হানসেন অ্যান এনিমি অব দ্য পিপল নির্দেশনা দিয়েছিলেন আমেরিকার ‘শেক্সপিয়র থিয়েটার কোম্পানি’তে। যদিও ব্যাং-হানসেন কোনো ধরনের পরিবর্তন বা পরিমার্জন ছাড়াই ইবসেনের নাটকটি মঞ্চে উপস্থাপন করেছিলেন, তথাপি সমালোচক ও দর্শক নাট্যপ্রযোজনাটিতে খুঁজে পেয়েছিলেন সেই সময়ের আমেরিকার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট। সমালোচকরা পিটার স্টকম্যানের ভেতরে খুঁজে পেয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট বুশকে, আর আল গোরের পরিবেশবান্ধব কর্মকা–র ভেতরে দেখতে পেয়েছিলেন ড. স্টকম্যানকে। একটি নাট্যক্রিয়া যখন
সমাজ-রাজনীতি, সময়, স্থান ও তার রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষমতার সঙ্গে মিলে যায় তখনই তো এটা হয়ে পড়ে প্রাসঙ্গিক। আর এই প্রাসঙ্গিকতাই তো জন্ম দেয় একটি নাটকের নতুন ব্যাখ্যার। যেজন্যে এই নতুন ব্যাখ্যাদাতাই হলেন একজন সৃজনশীল নাট্যনির্দেশক। যে একটা টেক্সটের ওপর দাঁড়িয়ে জন্ম দেয় আরেকটি নতুন টেক্সটের। প্রসঙ্গক্রমে আমার যুক্তির সমর্থনে এখানে আমাকে জার্জি গ্রোটোস্কির একটি উক্তিকে উল্লেখ করতেই হচ্ছে : ‘আমি বিশ্বাস করি, একজন নাট্যনির্দেশকের কাছে প্রয়োজন শুধু একটি নাটকের বিষয়বস্ত্ত এবং এই বিষয়বস্ত্তর ওপর দাঁড়িয়ে নির্দেশক সৃষ্টি করেন একেবারেই নতুন এক 888sport live chat, তার মতো করেই।’
এবার আসুন সত্যজিৎ রায়ের live chat 888sport গণশত্রম্নর দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করি। সত্যজিৎ রায় (১৯২১-৯২) তাঁর জীবদ্দশায় ৩৭টি live chat 888sport নির্মাণ করেছিলেন স্বল্পদৈর্ঘ্য ও প্রামাণ্য live chat 888sportসহ। আমি তাঁর গণশত্রম্ন live chat 888sportটিকে একটি রাজনৈতিক live chat 888sport হিসেবেই দেখছি এবং এ-live chat 888sport নিয়ে আমার আজকের বিশেস্নষণটিও সে-প্রেক্ষাপট থেকে।
অ্যান এনিমি অব দ্য পিপলের সমকালীন ভারতীয় রূপান্তর গণশত্রম্ন সত্যজিৎ রায়ের সর্বশেষ পরিচালিত live chat 888sportগুলোর একটি। live chat 888sportটিকে আমি রাজনৈতিক বলছি এজন্যে যে, এর বিষয়বস্ত্তর প্রধান দ্বন্দ্বটি হলো, ধর্ম বনাম 888sport apk। প্রসঙ্গক্রমে এটা মনে রাখা খুব জরুরি যে, সত্যজিৎ রায় ব্যক্তিগত জীবন ও যাপনে কখনোই ধর্মাশ্রয়ী ছিলেন না। বিভিন্ন সময়ে তিনি নিজেকে নিরীশ্বরবাদী, অজ্ঞেয়বাদী বা মানবতাবাদী হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। ধর্ম ও ঈশ্বরের অস্তিত্ব সম্পর্কে সত্যজিৎ রায় তাঁর এক সাক্ষাৎকারে পরিষ্কারভাবে বলেছিলেন : ‘ঈশ্বরের অস্তিত্ব সম্পর্কে আমার নিজস্ব অনুভূতি হচ্ছে ওটা মানুষেরই সৃষ্টি… ঈশ্বরকে বিশ্বাস করার কোনো কারণ বা প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না। আমি মনে করি আজকের যুগে যা ঘটছে তার সবটাই 888sport apkভিত্তিক জ্ঞানচর্চার ভেতর দিয়ে দেখতে ও উপলব্ধি করতে হবে…’
তাঁর এ-ধরনের বিশ্বাসের প্রকাশ আমরা দেখতে পাই গণশত্রম্ন এবং দেবী live chat 888sportে। দেবী live chat 888sportে তিনি ধর্ম ও বিচারশক্তি পুনর্গঠনের মধ্যে যে-ভাবাদর্শগত সংগ্রাম রয়েছে সেটিকে তুলে ধরেছেন। ঠিক তেমনি তাঁর গণশত্রম্ন live chat 888sportে ধর্ম বনাম 888sport apkের সংঘাতটি রূপ লাভ করেছে কয়েকজন ধর্মবিশ্বাসীর সংঘাতের মাধ্যমে, যারা মনে করে মন্দিরের পবিত্র জল কখনোই ক্ষতিকারক নয়। ড. স্টকম্যান (এখানে ড. গুপ্ত) আবিষ্কার করেন যে, এলাকাবাসীর মধ্যে জন্ডিসের সংক্রমণ ঘটেছে মন্দিরের দূষিত জলের কারণে। জনসভাতে বিষয়টি উত্থাপনের সময় ড. গুপ্ত প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হন। ধর্ম লঙ্ঘনের নামে ড. গুপ্ত আক্রমণের শিকার হন তাঁর ছোট ভাইয়ের দ্বারা, যিনি এলাকার চেয়ারম্যান (পিটার স্টকম্যান)। এ-দৃশ্যে সত্যজিৎ রায় পরিষ্কারভাবে আমাদের ধরিয়ে দিলেন ভারতবর্ষে ধর্ম ও রাজনীতির সহাবস্থানকে এবং ধর্মকে কীভাবে রাজনীতির স্বার্থে ব্যবহার করা হয়।
চেয়ারম্যান : তুমি নিজেকে হিন্দু বলে মনে করো?
ড. গুপ্ত : একশবার আমি নিজেকে হিন্দু বলে মনে করি। তবে হিন্দুধর্মের কতগুলো আচার-বিচার, ব্যবহার আমি মানি না। তার কারণ 888sport apk আমাকে অন্যরকম শিক্ষা দিয়েছে। কিন্তু তথাপি আমি নিজেকে হিন্দু বলে মনে করি।
চেয়ারম্যান : তুমি কী মন্দিরে যাও? কখনো কী গিয়েছ?
ড. গুপ্ত : না, যাইনি! কারণটা ওই একই। আমি সেখানে যাওয়াটা প্রয়োজন বলে মনে করি না। কিন্তু আমি বলছি না যে তোমরা কখনোই চরণামৃত পান করবে না। এটাকে শোধন না করা পর্যন্ত তোমাদের অপেক্ষা করা উচিত।
এ ছাড়া গণশত্রম্ন live chat 888sportটিতে আর্থিক মুনাফা, দুর্নীতি এবং মানুষ ও রাজনীতিবিষয়ক বিভিন্ন বিষয় উঠে এসেছে। এই অমত্মঃপ্রবাহটি সত্যজিৎ রায় ব্যঙ্গার্থকভাবে তুলে ধরেছেন সে-সময়কার পশ্চিমবঙ্গের কমিউনিস্ট ও 888sport app বামধারা রাজনীতির চরিত্রগুলোর মাধ্যমে। বিশেষভাবে হোভস্টাডের চরিত্রটি। live chat 888sportের পুরো সময় জুড়ে তার শরীরে লাল সোয়েটার। সত্যজিৎ রায় এ-লাল রঙের ব্যবহারের মাধ্যমে স্পষ্টভাবেই কমিউনিস্টদের প্রতীককেই চিহ্নিত করেছেন। মূল নাটকের মতোই হোভস্টাডকে এখানে দেখানো হয়েছে একজন দ্বৈতনীতির চরিত্র হিসেবে।
গণশত্রম্ন সত্যজিৎ রায়ের একমাত্র live chat 888sport যেটা অ-ভারতীয় সংস্কৃতি থেকে গ্রহণ করা হয়েছে। live chat 888sportটি অনেকাংশে তৈরি করা হয়েছে থিয়েটারসুলভ অভিব্যক্তির ভেতর দিয়ে এবং থিয়েটারের মতোই সংলাপকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। বেশিরভাগ দৃশ্যেই ব্যবহার করা হয়েছে ক্লোজ শট। সত্যজিৎ রায়ের এ-live chat 888sportে একটি উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হলো, উনি কোনো আবহসংগীত ব্যবহার করেননি, শুধু কিছু সাউন্ড ইফেক্ট ছাড়া। আজকের সময়ে আবহসংগীত প্রসঙ্গে সত্যজিৎ রায়ের ধারণা : ‘আজকের সময়ে আবহসংগীতের ধারণাটা পরিবর্তন হয়ে গেছে; যতদূর সম্ভব কম ব্যবহার করাটাই ভালো।’
ইবসেন-লিখিত দৃশ্য ও বর্ণনার মতোই live chat 888sportের অ্যাকশন লাইন সত্যজিৎ রায় ঘরের ভেতরেই রেখে দিয়েছেন। মাত্র দুটি সংক্ষেপ্ত শট ছাড়া, যেখানে দেখানো হয়েছে মন্দিরে আগত ভক্তবৃন্দ তাদের হাত ধুচ্ছেন। হিন্দুমন্দিরে যদিও অনেক দেবদেবীর প্রতিমা থাকে এবং আচার-অনুষ্ঠান পালিত হয় সংগীতের সঙ্গে। মন্দিরের পরিবেশ থাকে রঙিন, সত্যজিৎ রায় কোনোভাবেই তাঁর এ-live chat 888sportে মন্দিরের প্রকৃত জীবন তুলে ধরেননি। আমি এটির পেছনে তিনটি কারণ দেখতে পাই; প্রথমত, তিনি দর্শকদের দৃষ্টিকে তাঁর live chat 888sportের মূল বিষয় – দূষিত জল থেকে সরিয়ে আনতে চাননি। দ্বিতীয়ত, তাঁর নিজস্ব দর্শন ও বিশ্বাস; ‘ঈশ্বরের অস্তিত্ব’ প্রসঙ্গে। তৃতীয়ত, জনসভার দৃশ্যটিতে প্রেক্ষাপট হিসেবে তিনি মনতাজ আকারে ব্যবহার করেছেন দেবী দুর্গার অসম্পূর্ণ কাঠামো। একটি ত্রম্নটিযুক্ত সমাজ ও তার ধর্মবিশ্বাসকে বোঝানোর ক্ষেত্রে এটি অত্যন্ত বলিষ্ঠ একটি রূপক।
সত্যজিৎ রায়, ইবসেনের নাটকটির পারিপার্শ্বিক অবস্থা আধুনিক ভারতের রাজ্য পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতি, সমাজ-রাজনীতি ও রাষ্ট্রকাঠামোর মধ্যে ঢেলে পুনর্সৃজন করেছেন। আরো সুনির্দিষ্ট করে বললে স্থানটি পশ্চিমবঙ্গের চ-ীপুর শহর। সময়কাল আশির দশক এবং এ-পরিবর্তনের ফলে live chat 888sportের ভাষাটি হয়ে উঠেছে একটি আমত্মঃসাংস্কৃতিক ভাষা। নাটকটির বিষয়বস্ত্তকে ভিন্ন সংস্কৃতিতে পুনর্সৃজন করতে গিয়ে তিনি যে-পরিবর্তনগুলো এনেছেন সেগুলোর ‘ডায়ালগিক রিডিং’টি জরুরি বলে মনে করছি।
চরিত্রগুলোর ক্ষেত্রে এটি উল্লেখ্য, পিটার স্টকম্যান, অর্থাৎ ‘নিশিথ’ চরিত্রটি ড. গুপ্তর ছোট ভাই। যদিও ইবসেনের টেক্সটে পিটার স্টকম্যান ড. স্টকম্যানের বড়ভাই। এটা কিন্তু একটা মজার সমন্বয় যে, সত্যজিৎ রায় তাঁর live chat 888sportে দুজনের সম্পর্কের জায়গাটা ঘুরিয়ে দিয়েছেন। উনি কাজটা কেন করলেন? শুধুই কি live chat 888sportের ভাষার কারণে? আমার মনে হয় উনি এটি করেছেন ভারতীয় সমাজব্যবস্থাকে সামনে রেখে। যেহেতু ভারতীয় সমাজে বয়োজ্যেষ্ঠদের ভূমিকা যথেষ্ট গুরুত্ব বহন করে। ড. গুপ্ত তাঁর ভাইয়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে গেলে কঠিন সমস্যায় পড়বেন যদি তার ভাই তার চেয়ে বয়সে বড় হয়। দ্বিতীয় সমন্বয়, সত্যজিৎ রায় তাঁর live chat 888sportে নিশিথ গুপ্তকে মিউনিসিপ্যালিটির নির্বাচিত চেয়ারম্যান হিসেবে চিত্রায়িত করেছেন। যেহেতু সত্যজিৎ রায় এ-চরিত্রের মাঝ দিয়ে ভারতীয় রাজনীতি ও রাজনীতিবিদদের চরিত্রকে তুলে ধরেছেন। চরিত্রটি ইবসেনের মূল নাটকের মতো একজন প্রশাসনিক প্রধান রইল না। সত্যজিৎ রায় অত্যন্ত সচেতনভাবে সমন্বয়টা করেছেন, যেহেতু তাঁর এ-live chat 888sportে কামিত্মবিদ্যা দখল করে আছে ‘পলিটিক্যাল এসথেটিকস বা রাজনৈতিক নন্দনতত্ত্ব’।
বিলিং চরিত্রটি, যার নাম দেওয়া হয়েছে বীরেশ, তিনি সত্যজিৎ রায়ের live chat 888sportে রূপান্তরিত হয়েছেন একজন সৎ ও ইতিবাচক চরিত্র হিসেবে, চরিত্রটি live chat 888sportের পুরো সময় ধরে তাঁর নীতিতে অটল।
এছাড়া সত্যজিৎ রায় live chat 888sportটিকে প্রাসঙ্গিক করে তোলার ক্ষেত্রে কয়েকটি অপ্রধান চরিত্রকে বাদ দিয়ে কিছু নতুন চরিত্র সংযুক্ত করেছেন তৎকালীন পশ্চিমবঙ্গের সমাজ রাজনীতির প্রেক্ষাপটে। সবচেয়ে গুরুপূর্ণ নতুন চরিত্রটি হলো রণেন, যিনি live chat 888sportের শুরুর ফ্রেমে প্রবেশ করে শেষ পর্যন্ত অবস্থান করেন। রণেন একজন প্রগতিশীল তরুণ এবং সত্যের লড়াইয়ে নিবেদিত, আর সেজন্যে পরিবারটির সঙ্গে তার একটা সম্পর্ক গড়ে ওঠে। রূপকারের চরিত্রটি ড. গুপ্তর শক্তি। আমার মতে, এ-তরুণ চরিত্রটি সৃষ্টির পেছনে সত্যজিৎ রায়ের যে-উদ্দেশ্য কাজ করেছে তা হলো, তিনি ভবিষ্যৎ সম্পর্কে একটি আশার বাণী সকলের কাছে পৌঁছে দিতে চেয়েছেন। এখানে এসে সত্যজিৎ রায় ইবসেনের দর্শন থেকে বেরিয়ে একটা নতুন দর্শন দাঁড় করালেন আর্থার মিলারের রূপান্তরের সহযোগিতায়।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন সত্যজিৎ রায় তাঁর চিত্রনাট্যে করেছেন, যেটা মিলারের রূপান্তরের ঠিক উলটো পিঠ, সেটা হচ্ছে, সংবাদপত্রের মালিকানা মার্কসবাদীদের নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন। এ-সময়টি বলতেই হয়, সে-সময়ের পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির সঙ্গে একটি সংযোগ স্থাপনের প্রচেষ্টা, যা তৎকালীন প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও প্রাসঙ্গিক।
সত্যজিৎ রায়ের গণশত্রম্ন live chat 888sportে ব্যবহৃত বিভিন্ন বস্ত্ত, সামগ্রী ও রঙের ব্যবহার চোখে পড়ার মতো, যেহেতু সত্যজিৎ রায় এগুলোকে অর্থপূর্ণ ও প্রাসঙ্গিক করে তুলতে আশ্রয় নিয়েছেন সাংকেতিক বা সেমিওটিক ভাষার; live chat 888sportের বিষয়, সময়, স্থান ও কালের উপযোগী করে। যে-ভাষাটা দর্শক ও পরিচালকের মধ্যে যোগাযোগের ও চিমত্মার আরেকটি মাত্রা দেয়। অবশ্যই এ-ধরনের মাত্রা সৃষ্টি করাটা তাঁর live chat 888sport নির্মাণের একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য, যেটা আমরা সকলেই জানি।
উপরোক্ত বিষয়টি বোঝার সুবিধার্থে আমি এ-live chat 888sportের একটি বিশেষ প্রপের ব্যবহারের বিষয়টা উল্লেখ করছি, আর সেটি হচ্ছে সিগারেট। ভারতীয় উপমহাদেশে বয়োজ্যেষ্ঠ বা সমাজের ঊর্ধ্বতন ব্যক্তির সামনে ধূমপান করা একটি অসম্মানজনক আচরণ এবং আচরণটা কোনোভাবেই সমাজের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। live chat 888sportটিতে সংবাদপত্র অফিসের দৃশ্যে চেয়ারম্যান যখন বুঝতে পারেন যে, সংবাদপত্রকে তার অধীনে আনতে সমর্থ হয়েছেন তখন তিনি ড. গুপ্ত, অর্থাৎ তার বড়ভাইয়ের সামনে ধূমপান করতে শুরু করেন। এটি আসলে ভারতীয় সমাজে বয়োজ্যেষ্ঠকে অসম্মান করার একটি সংকেত বা প্রতীক। যে-প্রতীকের ভেতর দিয়ে সত্যজিৎ রায় বোঝাতে চেয়েছেন, ক্ষমতাই জ্যেষ্ঠতা নিরূপণ করে, বয়স নয়।
অ্যাকশন লাইনের ক্ষেত্রে, সত্যজিৎ রায়ের live chat 888sportটি শুরু হয় স্থানীয় সংবাদপত্র অফিসে ড. গুপ্তর একটি ফোনকলের মাধ্যমে। সেখানে তিনি শহরের মহামারীর ঝুঁকি সম্পর্কে জানাচ্ছেন। সত্যজিৎ রায়ের অ্যাকশন লাইন একেবারেই ভিন্ন ইবসেন ও মিলারের অ্যাকশন লাইন থেকে। সত্যজিৎ রায়ের চিত্রনাট্যে ড. গুপ্ত এবং তাঁর ভাইয়ের মধ্যে কোনো চূড়ান্ত বোঝাপড়া নেই, শুধু নিছক একটি ফোনালাপ ছাড়া, যেটার মাধ্যমে ডাক্তার বুঝতে পারেন যে, তাঁর পূর্বের বক্তব্য প্রত্যাহার না করলে তাঁকে চাকরি হারাতে হবে। অর্থাৎ সত্যজিৎ রায় তাঁর live chat 888sport শুরুই করেছেন চূড়ান্ত দ্বন্দ্ব থেকে।
গণশত্রম্ন live chat 888sportের শেষ দৃশ্যটি হলো ভিন্ন সংস্কৃতিতে পুনর্সৃজনের একটি প্রধান অংশ। এ সম্পর্কে একটি ব্যাপার মনে করিয়ে দিচ্ছি, মিলার এ-দৃশ্যে দর্শক ও পাঠকের মনোযোগ সরিয়ে নিয়েছেন ব্যক্তি থেকে সমষ্টির দিকে এবং শেষ করেছেন আশার আলো দেখিয়ে। সত্যজিৎ রায় সমাপ্তি টেনেছেন একটি আনন্দময় পরিবেশের মাধ্যমে। প্রচ- হতাশার ভেতরে থাকা ড. গুপ্তর অবস্থা হঠাৎ পরিবর্তিত হয়ে যায়, যখন কয়েকটি ইতিবাচক ঘটনা পূর্বের ঘটনাগুলোকে পালটে দেয়। বিলিং চরিত্রটি, যিনি এ-live chat 888sportে বীরেশ, তিনি ড. গুপ্তর বাড়িতে আসেন এবং জানান যে, ড. গুপ্তর নিবন্ধটি একটি পুস্তিকার মতো ছাপা হবে এবং শহরের ঘরে ঘরে এটা পৌঁছে দেওয়া হবে। এর প্রায় সঙ্গে-সঙ্গেই প্রগতিশীল তরুণদের একটি দল বাইরে থেকে সেস্নাগান দিতে থাকে, ‘ড. গুপ্ত জিন্দাবাদ!’ এই সেস্নাগানের ভেতর দিয়ে দর্শকের কাছে এটি খুব পরিষ্কার হয়ে ওঠে যে, তরুণদের দলটি ড. গুপ্তকে রাজনৈতিক নেতা ঘোষণা করছে একটা বৃহত্তর পরিবর্তনের লক্ষক্ষ্য। এরপর live chat 888sportটি শেষ হয় আনন্দিত ড. গুপ্তর একটি বক্তব্য দিয়ে,
আমি একা নই – আমি জনগণের শত্রম্ন হতে পারি কিন্তু এখন আমার অনেক বন্ধু।

Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.