রবি শংকর বল
ইসমাইল নাম ধরেই আমাকে ডেকো তুমি।
তাকে, মানে ইসমাইলকে দেখলেই, এই কথাটা মনে পড়ত আমার। ইসমাইল, আহাবদের গল্প কবে পড়েছিলাম মনে নেই। এখন আর পড়াশোনার সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই আমার, এমনকি খবরের কাগজও হাতে তুলে দেখি না। সবাই খবর মুখে করে দৌড়ছে, তাতেই যেটুকু যা শোনা হয়ে যায়। তুমি না-চাইলেও খবর এখন সবার পিছুপিছু দৌড়ছে।
শালা খবর! এই খবরের নেশাই আমার জীবনটাকে একেবারে তলানিতে পৌঁছে দিয়েছে, যখন আশা-ভরসা বলতে অবশিষ্ট, সারাদিনে দিশি মদ বা চোলাইয়ের কোটা জুটবে কিনা। উচ্চাশা ছিল, নামি সাংবাদিক হব। খবরের কাগজে, চ্যানেলে লাথ খেতে খেতে একদিন দেখলাম, প্যান্টের পেছন ফেঁসে গেছে। বাবা-কাকা না থাকলে কোথাও কিছু হওয়ার নয়; না হলে এমনভাবে বসের পা চাটো, যা আগে কেউ কখনো পারেনি। হাতেগোনা কয়েকটা মিডিয়া-মাফিয়ার অফিসে চাকরি হলে কেল্লা ফতে, ফ্ল্যাট-গাড়ি-888sport promo codeসঙ্গ-স্কচ-বিদেশ888sport slot game, সব হবে; অন্য কাগজ আর চ্যানেলে চ্যানেলে লাথখোরদের ভিড়, শুকতলা ক্ষয়ে যাওয়া জুতো পরাই ভবিতব্য, লোকজনকে টুপি পরিয়ে মদের পয়সা হাতানো আর আমি কেউকেটা ভেবে জামার ফাটা কলার তোলা। কেউ কেউ আবার ঘাড়ে রুমাল লাগায়, যাতে কলার তাড়াতাড়ি না ফাটে। কে বোঝাবে, দুদিন আগে বা পরে, ও শালা ফাটবেই ফাটবে।
এরকম সাংবাদিকের সংসার ছেড়ে বউ-ছেলে-মেয়ে চলে যাওয়া, আত্মীয়-স্বজনের খোঁজ না-রাখা খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। শেষের দিকে আমার কাঁধের ব্যাগে মিনারেল ওয়াটারের বোতলে বাংলা ও জলের ককটেল ভরা থাকত। সকাল থেকে রাত অবধি ঢুকুঢুকু। তখন একটা চ্যানেলে কাজ করি। একদিন এস্ট্যাব্লিশ্মেন্টের পুততু-বাবু ডেকে বললে, ‘আপনি অফিসে বসেই মাল খান শুনলাম।’
– ড্রিংকস বলুন।
‘মাল’ শব্দটা শুনলেই মাথায় আগুন চড়ে যায়। মদ মাল, মেয়েছেলে মাল, রিপোর্টিংয়ের কপিও মাল (‘কী মাল নামিয়েছ গুরু’)। মাল ছাড়া কিছু হয় না বুঝি?
– ওই হলো -। পুততু- হাসল।
– না, হলো না।
– অফিসে বসে ড্রিংক করবেন না।
– কেন?
– বসের নির্দেশ। পরিবেশ নোংরা করছেন।
– বাল।
– মানে? পুততু-বাবু উঠে দাঁড়ায়।
– মাস গেলে তো মাইনে দেন বারোশো টাকা। সেই অফিসের আবার পরিবেশ! হাসতে-হাসতে ব্যাগ থেকে বোতল বার করে গলায় ঢেলেছিলাম।
ব্যস, হয়ে গেল। দুপুরের পরেই চিঠি। সার্ভিস নো লংগার রিকোয়ার্ড। অফিসের সামনের রাস্তায় এসে দাঁড়িয়ে বোতলের অনেকখানি শেষ করে ফেললাম। ঋত্বিকের মতো বলতে ইচ্ছা করছিল, ‘আঃ, উন্মুক্ত – উন্মুক্ত হাওয়া – তরী অকূলে ভাসল -।’
সেদিন মনে হলো, এবার কোথায় যাব? রাতে তো নেশায় চুর হয়ে ঘরে ফিরে ঘুমিয়ে পড়ি। কিন্তু এখন? ফাঁকা ঘরে গিয়ে কী করব আমি? এই ঘর যে আমাকে গিলতে আসবে। দেখতে পেলাম, একটা হাঁ-মুখ আমাকে গিলতে আসছে, তার ক্ষয়ে-যাওয়া দাঁত, নোংরা, দুর্গন্ধভরা লালা ঝরছে। সামনেই রেললাইন। আমি দৌড়তে লাগলাম। চারদিক থেকে চিৎকারের পি- আমার ওপর এসে ঝাঁপিয়ে পড়ছিল। কিছু পরে বুঝতে পারলাম, ট্রেনের তলায় খ-বিখ- হওয়ার পরিণতি থেকে আমি বেঁচে গেছি।
রেললাইনের ওপারেই দেবলের লেদ-মেশিনের ছোট কারখানা। দেবল কারখানা থেকে বেরিয়ে এসে আমার সামনে দাঁড়িয়ে বিড়ি ধরাল। – কী ব্যাপার, এখন?
– চাকরিটা ছেড়ে দিলাম।
আমাদের মতো সাংবাদিকরা চাকরি চলে গেলে যে ‘ছেড়ে দিলাম’ বলে, তা দেবলও জানে।
– তা বেশ। কী করবি এখন? দেবল জিগ্যেস করেছিল।
– জানি না। ড্রিংকস ফুরিয়ে গেছে, খাওয়াবি?
– এখনই? অন্ধকার হোক।
কিন্তু সেদিন আমি দেবলকে তখনই টেনে আনতে পেরেছিলাম। মনে হয়েছিল, দেবলও অনেকদিন পর মুক্তি পেয়েছে। রেললাইন-লাগোয়া বস্তিতে একটা ঝুপড়িতে আমাকে নিয়ে যায় সে। প্লাস্টিকের প্যাকেটে চোলাই, নানারকম তেলেভাজা, মুরগির নাড়িভুঁড়ির ঝাল।
দেবল আমাকে নতুন জীবন শুরু করার পরামর্শ দিয়েছিল। হাত দেখার বিজনেস খুলে ফেল, সঙ্গে গাছের শেকড়-বাকড় দিবি। তোর নাম হবে আত্মারাম বাবাজি। আমি লিফলেট ছাপিয়ে দেব, হুইসপারিং ক্যাম্পেন করব। ব্যবসা জমে গেলে অফিসও খোলা হবে। তখন দেবল কমিশন পাবে। তার প্রস্তাব আমার মনে ধরে গেল। সাংবাদিক জ্যোতিষী হতে পারবে না, এমন কোথাও লেখা আছে?
পরদিন কলেজ স্ট্রিটে গিয়ে রাশিফল, হাত-দেখা, শেকড়-বাকড়, কালীপুজোর মন্ত্র-সংক্রান্ত গুচ্ছের পাতলা পাতলা বই কিনে আনলাম। বেশ কয়েকদিন ঘরে বসে চলল আমার পড়াশোনা। দেবলের লোক এসে সময়মতো খাবার, বাংলার বোতল দিয়ে গেছে। তারপর একদিন আত্মারাম বাবাজি হয়ে দেবলের সঙ্গে বেরিয়ে পড়লাম রেললাইনের বস্তির দিকে।
মাসখানেকের মধ্যেই ব্যবসা জমে গেল। বেশিরভাগ ক্লায়েন্টই বস্তির। তারা অনেকেই আমার রেটের পুরো টাকা-পয়সা দিতে পারে না, কিন্তু বাংলা-চোলাই, নানারকম খাবার খাইয়ে পুষিয়ে দেয়। আত্মারাম বাবাজি ধুতি আর ফতুয়া পরে। কাঁধে ব্যাগ, কপালে লম্বা সিঁদুরের টিপ। বাড়িতেও লোকজনের আসা-যাওয়া শুরু হয়। হাতে বেশ ভালোই টাকা-পয়সা জমে গেল। মাঝে মাঝে বউ-মেয়ের কাছে যেতে ইচ্ছা করে, ওদের নিয়ে এদিক-সেদিক ঘোরা, হোটেলে ভালো খাবার খাওয়ার সাধ হয়, কিছু কিনে দিতে মন চায়। অন্যদিকে নিজেকে বোঝাই, এই বেশ ভালো আছ আত্মারাম বাবাজি, একেবারে ঝাড়া হাত-পা, সংসারের ছল্লিবাজির মধ্যে আর ঢোকো না হে।
এই সময়েই ইসমাইলের সঙ্গে একদিন আলাপ হলো। বস্তির কারোর ঘরেই।
ইসমাইল সবসময় সাদা, পাটভাঙা চওড়া ঘেরের পাজামা আর পাঞ্জাবি পরত। মুখের মসলা চিবিয়েই চলেছে। আর নতুন নতুন সেন্টের শখ ছিল তার। খিদিরপুরে নাকি তার চোরাই মালের ব্যবসা। কিন্তু বেশিরভাগ সময় বস্তির কারোর না কারোর ঘরে সে মদ খেয়ে পড়ে থাকত, নাক ডাকিয়ে ঘুমোত। রোজই তার কোনো না কোনো সাগরেদ আসত খিদিরপুর থেকে, নোটের বান্ডিল দিয়ে যেত। এত টাকা রোজগার করেও সে যেন কেন রেললাইনের বস্তিতে থাকত, তা কারো মাথায় আসত না।
একদিন আমরা একসঙ্গে বুড়িমার দোকানে বসে চোলাই খাচ্ছিলাম, ইসমাইল আমার দিকে তার ডানহাতের পাতা মেলে ধরল, ‘দেখ লিজিয়ে গুরুজি। ফির শাদি কব হোগা?’
বস্তির প্রায় সকলে আমাকে গুরুজি বলেই ডাকে।
দেবল হেসে বলেছিল, ‘আবার বিয়ে করবে?’
– বিনা আওরত জিনে না নেশা জমতা নেহি। ইসমাইল যেন শেয়ালের মতো হাসে।
কয়েক মাস আগে ইসমাইলের তৃতীয় বউ জন্ডিসে মারা গেছে। প্রথম বউ, যাকে সে ‘আসলি বিবি’ বলে থাকে, ইসমাইলের মোকামার বাড়িতে। বছরে একবার সে দেশে বিহারে যায়; ‘আসলি বিবি’কে সন্তান উপহার দিয়ে আসে। তিন নম্বর বউ মারা গেলেও বস্তিতে, খিদিরপুরের ফুটপাতে ফুটপাতে তার নাকি অগুনতি বিবি আছে, আর ছেলেমেয়ের তো অভাব নেই।
– বিয়ে করলে তাকেও তো মাল খাইয়ে মারবি। কে যেন বলে ওঠে।
– তেরা বাপ কা কেয়া হ্যায় রে।
মেরা বিবি, মেরা মর্জি মে -। সে চুপ করে যায়।
ইসমাইলের বিবি হওয়া মানে সারাদিন তার জন্য সংসারের নানা পদ রান্না করা, তার সঙ্গে বসে মদ খাওয়া, তার ইচ্ছামাফিক সেক্স করা; বাড়তি পাওনা চড়-লাথি-মারধর। এসব করে কী আনন্দ পেত ইসমাইল? আমি মাঝে মাঝেই এ-কথা ভাবতাম। ইসমাইলকে জিজ্ঞেস করারও ইচ্ছা হয়েছিল; কিন্তু হয়ে ওঠেনি। মনে হতো, সে যেন সবসময় একটা দৈত্যাকার তিমির পিঠে চেপে হারপুন দিয়ে তাকে রক্তাক্ত করতে চায়, সেই রক্তে সে নিজেও ভিজে যাবে।
যেমন একবার সে একটা খাসি পুষেছিল। নিজহাতে বসে বসে কাঁঠালপাতা খাওয়াত, গলায় বাঁধা দড়ি ধরে রেললাইনে ঘুরে বেড়াত, চিরুনি দিয়ে লোম আঁচড়ে দিত, এমনকি চুমুও খেত। খাসিটা বেশ তাগড়াই হয়ে উঠছিল। একদিন জিগ্যেস করলাম, ‘এর ভবিষ্যৎ কী ইসমাইল?’
সে হেসে বলল, ‘আরো কিছুটা তাগড়া হলে বেচে দেব। শালা, ডবলের বেশি নাফা হবে গুরুজি।’
– এত যতœ করে বেচে দেবে?
– বেচার জন্যই তো যতœ করা।
কিন্তু একদিন গিয়ে শুনলাম, খাসিটাকে সে হালাল করে দিয়েছে। সারা বস্তির লোকজনের জন্য মাংস রান্না হচ্ছে। আমার চোখ ভিজে উঠেছিল। ইসমাইলকে তখনই খুন করে ফেলতে ইচ্ছা করছিল। কিন্তু নেশা করতে করতে আমিও একসময় খাসিটার মাংস খেয়েছিলাম।
সে আমার কাঁধে হাত রেখে বলেছিল, ‘কেমন টেস্ট পেলেন গুরুজি।’
– ভালো রান্না হয়েছে।
ইসমাইল হাসতে হাসতে গেয়ে উঠেছিল, ‘ইয়ে অন্ধা কানুন হ্যায় – ’।
পছন্দমতো মেয়ে পাচ্ছিল না ইসমাইল। বিয়ের জন্য অপেক্ষা করতে করতে সে একটা 888sport promo codeবানর কিনে ফেলল। সহদেব নামে একটি লোক বস্তিতে মাঝে মাঝে বাঁদরখেলা দেখাতে আসত। টাকার লোভে সহদেব বানরীকে বিক্রি করে দিলো। বাঁদর তো বানরীকে হারিয়ে ক্ষিপ্ত, আঁচড়াতে-কামড়াতে আসে, কিন্তু ইসমাইলের লাঠির ঘায়ে কাবু হয়ে সে মালিকের সঙ্গে পালাল। সবাই ইসমাইলকে বলল, ‘শাদির দিন দেখব নাকি?’
– বান্দর সে মানুষ বানানা হোগা। ইসমাইল হাসল। – ফির শাদি কে বাত।
বানরীকে মানুষী বানানোর কাজে লেগে পড়ল ইসমাইল। নতুন ফ্রক পরাল, গলায় ঝুটো মুক্তোর মালা, কপালে টিপ, দুপুরে স্নান করিয়ে মুখে পাউডার মাখিয়ে দেয়। নিজের কোলে বসিয়ে খাওয়ায়। বানরীকে পিঠে চাপিয়ে ঘুরে বেড়ায় ইসমাইল। তার কসরত দেখতে চারপাশে ভিড় জমে যায়।
একদিন সহদেব তার বাঁদরকে নিয়ে আসে। বাঁদর অবাক হয়ে তার বানরীর দিকে তাকিয়ে থাকে। বানরী মুখ ফিরিয়ে ইসমাইলের কাঁধে চেপে বসে তার চুলের উকুন মারে। বাঁদর ইনিয়ে-বিনিয়ে কাঁদে। ইসমাইল তার দিকে কলা ছুড়ে দেয়। বাঁদর কলা খেতে খেতে এদিক-ওদিক দেখে, বানরীর দিকে আর নজর থাকে না।
ইসমাইলের বানরী-প্রেমের গল্প ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু ইসমাইল তো সব গল্পই ভেঙেচুরে তছনছ করে দেয়। জীবনকে সে যেন জিগ্স পাজলের মতো ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে একটা নকশা ফুটিয়ে তুলতে চায়, কিন্তু তা তৈরি হওয়ার মুখেই ভাঙতে থাকে।
একদিন গিয়ে শুনলাম, বাসন্তী মারা গেছে। বানরীকে ইসমাইল নিজের হাতেই খুন করেছে। বাসন্তী নাকি সেদিন সকালে ইসমাইলের কথা শোনেনি; নেশার ঘোরে সে বাঁশ দিয়ে বাসন্তীর মাথায় আঘাত করেছিল। সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যু হয় বাসন্তীর।
বস্তির সবাই রাগে-ক্ষোভে ফুটছিল। ইসমাইলকে তারা আর এখানে থাকতে দেবে না। আমাকে নিয়ে সকলে ইসমাইলের কাছে গেল। সে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে, চোখের জলে ভেসে যাচ্ছে মুখ। আমাকে দেখেই সে চিৎকার করে উঠল, ‘মুঝে মার ডালো গুরুজি। ম্যায় পাপী হুঁ… মুঝে মার ডালো…।’
সবাই তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। আমি চেষ্টা করেও বাধা দিতে পারিনি, নাকি বাধা দিতে চাইনি? আজো বুঝি না। আমাদের ভেতরে কখন যে খুনির রক্ত ফুটতে থাকে, আমরা কি তা জানতে পারি? কে কখন সন্ত্রাসবাদী হয়ে উঠবে, তার কোনো পূর্বনির্ধারিত ছক নেই। শুধু মনে হয়, মানুষ রক্ত দেখতে ভালোবাসে, আনন্দ পায়।
রক্তাক্ত ইসমাইল তার ঘরের মেঝেতে পড়ে রইল। যে যার নিজের ধান্ধায় ছড়িয়ে পড়ল।
কেউ দেখেনি, ইসমাইলের ঘরের দরজায় তখন এসে দাঁড়িয়েছিল এক 888sport promo code। ব্রহ্মা তার নাম দিয়েছিলেন মৃত্যু।
সেদিন মধ্যরাতে কী হয়েছিল, কেউ জানে না। কেননা গোটা বস্তি তখন ঘুমের অতলে তলিয়ে গেছে। আমাদের তাই গল্পটা তৈরি করে দিতে হয়।
বারকয়েক আওয়াজ হতে নেশাগ্রস্ত ইসমাইল দরজা খুলে দিয়ে দেখে, কাঁধে বাঁদরটিকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সহদেব, তার চোখ অঙ্গারখ-ের মতো জ্বলছে। – মুন্নিকে মেরে ফেললি ইসমাইল।
– ও আমার কেনা।
– তা-ই বুঝি মেরে ফেলা যায়।
বাঁদরটা সহদেবের কাঁধ থেকে নেমে ঘরের ভেতরে খোঁজে, গন্ধ শোঁকে, তারপর দাঁত বার করে তাকায় ইসমাইলের দিকে।
– তোর বাঁদরকে নিয়ে যা সহদেব। আর কত টাকা চাস, বল। ইসমাইল বলে।
সহদেব হাসে। – মানুষ কেমন করে মরে, একবার দেখব রে ইসমাইল।
– মানে?
ব্যাগ থেকে একটা আস্ত ইট বার করে বাঁদরের হাতে ধরিয়ে দেয় সহদেব।
– কী করতে চাস তুই সহদেব? বল, কত টাকা লাগবে – তাই -। ভয় পেয়ে পিছিয়ে যেতে থাকে ইসমাইল। আর তখনই দাঁত-মুখ খিঁচিয়ে সহদেবের বাঁদর ঝাঁপিয়ে পড়ে ইসমাইলের ওপর।
মাথাটা থেঁতলে গিয়েছিল। ঘিলু বেরিয়ে পড়েছিল। ভয়ে নীল হয়ে যাওয়া স্থির চোখ হলুদ হয়ে যাচ্ছিল। বস্তির সবাই ইসমাইলকে এভাবেই দেখতে পায়। বাঁদরের আঁচড়ানো-কামড়ানোর চিহ্ন সারা শরীরে।
আমি বলেছিলাম, ‘মোকামাতে ওর বাড়িতে খবর পাঠাও।’
তখনই জানতে পারি, কোথাও ইসমাইলের বাড়ি ছিল না। তাই শহরের ফুটপাতে – একটা অদৃশ্য তিমির পিঠের ওপরে জন্ম হয়েছিল তার।
মোকামাতে তার মোকাম ছিল না।

Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.