ঈশ্বর তোমার মঙ্গল করুন

নুরুল করিম নাসিম

বাইরে যে প্রবল ধারায় অবিশ্রান্ত বৃষ্টিপাত হচ্ছে এ-কথাটা আমরা কেউ বুঝতে পারেনি। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এই রেস্তোরাঁয় বসে এতক্ষণ আমরা তুমুল আড্ডায় মেতে উঠেছিলাম। দিনটি ছিল ছুটির, শুক্রবার। বাইরে পৃথিবীর অবস্থা কী করে বুঝবো আমরা? ভারি চমৎকার পর্দায় জানালাগুলো কাচ দিয়ে এমনভাবে 888sport app যে বাইরের দৃশ্য দেখা যায় না, শব্দ শ্রুতিগোচর হওয়ার কোনো উপায় নেই।
মেয়েটি ঝড়ের বেগে দ্রুত কাচের দরজা ঠেলে প্রবেশ করতে আমরা ফিরে তাকালাম। চুল ভেজা, হাতে একটা লতাপাতা অাঁকা রঙিন ছাতা, অশ্রুবিন্দুর মতো পানি গড়িয়ে পড়ছে। এক তরুণ বেয়ারা দৌড়ে এসে মেয়েটির হাত থেকে ছাতাটি নিয়ে কোথায় যেন চলে গেল। আমরা, আমি ও আমার কবিবন্ধু নির্নিমেষ তাকিয়ে রইলাম। ছুটির দিন, রোজার মাস, এমনিতেই রেস্তোরাঁ ফাঁকা। নির্জন। বেয়ারারা অলসভাবে ঘোরাফেরা করছে। মেয়েটি আমাদের ডানদিকে নরম একটি বিশাল সোফাসেটে বসলো। এতক্ষণে আমরা স্পষ্ট তার সমস্ত প্রোফাইল দেখতে পেলাম। বেশ দীর্ঘাঙ্গী, ছিপছিপে গড়ন, বেশ লাবণ্যময়, চোখনাকমুখ কাটা কাটা। মেয়েটি পা তুলে সোফাসেটে বসেছে যেন সে তার বাড়িতে ড্রইংরুমে বসে আছে। আমরা দুটি অসমবয়সী পুরুষ যে অনতিদূরে সোফায় বসে তার দিকে তাকিয়ে আছি, তার কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করছি, সেদিকে মোটেই খেয়াল নেই। যদিওবা খেয়াল আছে, কিন্তু তেমন একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না আমাদের। মেয়েটির বয়স কত হবে? 888sport cricket BPL rate কি বাইশ। চেহারাটা খুব চেনা-চেনা লাগছে? কোথায় যেন দেখেছি। এমন তো হতে পারে, কোথাও দেখিনি; কিন্তু পৃথিবীতে এমন কিছু মানুষ আছে, পুরুষ কিংবা 888sport promo code, যাদের দেখে মনে হয়, এর আগে নিশ্চয়ই কোথাও দেখে থাকবো।
বিপরীত সোফায় যে-কবিবন্ধুটি বসে আছেন, তিনি পঞ্চাশের দশকের শব্দকর্মী। ভালো চাকরি করতেন, মাঝেমধ্যে টেলিভিশনে তার সাক্ষাৎকার দেখানো হয় বিভিন্ন চ্যানেলে। তিনি নিয়মিত ঈদ888sport free betয় 888sport app download apk, গল্প, 888sport alternative linkও লেখেন। বাংলা ও ইংরেজি কলাম ছেপে দৈনিক পত্রিকাগুলো ধন্য হয়। বলা চলে তিনি একজন বিখ্যাত মানুষ, সেলিব্রেটি। তার দিকে সবাই একবার তাকায়। কেউ-কেউ সালাম দিয়ে পরিচিত হয়। অনেক 888sport promo codeও তার ভক্ত। আমি দেখেছি, এই রেস্তোরাঁয় কয়েকজন 888sport promo code এসে তার সঙ্গে পরিচিত হয়েছেন। তার 888sport alternative link নিয়ে কথা বলেছেন। তিনি তাদের কফি দিয়ে আপ্যায়ন করেছেন। কেউ কেউ তার ভিজিটিং কার্ড চেয়ে নিয়েছেন।
অথচ এই মেয়েটি সোফার ওপর পা তুলে কী নির্বিকার বসে আছে। কানে থ্রি-জি স্মার্টফোন। কথা বলছে। হয়তো কোনো ছেলেবন্ধু আসার কথা ছিল, দেরি করছে, কথা দিয়ে কথা রাখেনি। হয়তো মেয়েটিকে দুপুরে লাঞ্চ করানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। এমনও হতে পারে, মেয়েটি অপেক্ষা করছে কোনো বান্ধবীর জন্য।
আমাদের কথাবার্তা থেমে গেছে। আমরা মেয়েটির কান্ডকারখানা উপভোগ করছি। বেশ মজা পাচ্ছি। ভেবেছিলাম উঠে পড়বো, কিন্তু কী এক অমোঘ আকর্ষণে মেয়েটি আমাদের ধরে রেখেছে। অথচ আমাদের সঙ্গে তার কোনো পরিচয় নেই। সে আমাদের দিকে ফিরেও তাকাচ্ছে না।
একসময় সেলফোন রাখলো। এই প্রথম তাকালো। বেয়ারাকে হাতের ইশারায় ডাকলো। দুটো যুবক বেয়ারা ছুটে এলো একসঙ্গে। মেয়েটি তৃষ্ণার্ত। পানি চাইলো। জিন্সের নীল প্যান্টের পকেট থেকে চিরুনি বের করে চুল অাঁচড়াতে লাগলো। টি-শার্ট ঠিকঠাক করলো। ব্যাগ থেকে ছোট আয়না ও লিপস্টিক বের করলো। আমরা দুটো জলজ্যান্ত পুরুষ পড়শির মতো তার পাশে বসে আছি, অথচ সেদিকে তার ভ্রুক্ষেপ পর্যন্ত নেই।
পানি এলে আকণ্ঠ পান করলো। যেন কতো দীর্ঘ সময়ের তৃষ্ণা নিয়ে সে বসে ছিলো। এই প্রথম তার ঠোঁট দেখলাম। পুরু ও পেলব। কে জানে, এই ঠোঁট কাউকে দিয়েছে কী-না! কে জানে, এই ঠোঁট কতবার কতজনকে নিবেদন করেছে? ঠোঁটদুটো দেখে মনে হলো, সেখানে অনেক অভিমান জমা হয়ে আছে; ঠোঁটেরও অভিমান থাকে, ঠোঁটেরও কষ্ট-বেদনা থাকে, কে জানে হয়তো বা ঠোঁট দুটোতে অনেক অব্যক্ত কথা জমে আছে।
অপলক চেয়ে আছি বলে কিনা জানি না, আমার আদিখ্যেতা দেখে মেয়েটি এই প্রথম আমার চোখের দিকে করুণা করলো। একটুখানি তাকিয়ে রহস্যময় হাসলো। আমিও কৃতার্থ হয়ে বিনিময়ে হাসলাম। এরকম একটি সুযোগ আমি খুঁজছিলাম এতোক্ষণ। ইংরেজিতে জিজ্ঞেস করলাম, বাইরে কি প্রচন্ড বৃষ্টি? মেয়েটি ইংরেজিতে সাড়া দিলো। ঔপনিবেশিক শাসকেরা অনেক ক্ষতির পরেও একটি উপকার আমাদের করে গেছে। এমন একটি ক্রীতদাসের ভাষা আমাদের উপহার দিয়েছে, যা ব্যবহার করলে নিরাপদে অনেক কথা বলা যায়। কেউ কিছু মনে করে না। বাংলায় যা বলা যায় না, ইংরেজিতে তা অবলীলাক্রমে স্বচ্ছন্দে বলা যায়। এরপর বাইরের অবিশ্রান্ত বৃষ্টির মতো শব্দ আর বাক্যরা এগিয়ে গেলো, ঝরে পড়তে লাগলো তরতর করে।
আমাদের সংলাপ-বিনিময়ের ভেতর দিয়ে মেয়েটি সম্পর্কে বেশকিছু তথ্য আমরা জানতে পারলাম। কবিবন্ধুটিও এই প্রথম মুখ খুললেন। আমি ভেবেছিলাম, তিনি রাগ করবেন আমার ওপর। মেয়েদের সঙ্গে আগ বাড়িয়ে আমার কথা বলাটা তিনি মোটেও পছন্দ করেন না। অথচ তার 888sport app download apkয়, তার গল্পে, 888sport alternative linkে সেক্সের ছড়াছড়ি। কিন্তু সেই সেক্সে যৌনতার নগ্ন প্রকাশ নেই। বরং 888sport live chat ও নান্দনিকতা আছে। আমাদের বয়সের ব্যবধান এক দশকেরও কিছু বেশি। কিন্তু চিন্তা-ভাবনায় আমরা বন্ধুর মতো। তিনি আমার অগ্রজ বন্ধু, অভিভাবক ও পরামর্শদাতা। তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ দেখেছেন, আমি দেখিনি। আমি ভাষা-আন্দোলনের বছরখানেক আগে পুরনো 888sport appয় জন্মেছি ও বেড়ে উঠেছি। এখনো চোখ বুজলে কোনো নিদ্রাহীন মধ্যরাতে ঘোড়াগাড়ির আওয়াজ শুনতে পাই। আমাদের নারিন্দার বাসার কাছে একটা ঘোড়ার আস্তাবল ছিল, এখন নেই, এখন সেখানে হাইরাইজ বিল্ডিং। আমি মুক্তিযুদ্ধ দেখেছি। আমরা দুই প্রজন্মের।
মেয়েটি আমার তিন কি চার দশকের ছোট হবে। তাতে কী আছে? আমরা পরস্পরকে কতোটা পড়তে পারছি, কতোটা উপলব্ধি করতে পারছি, আমাদের মাঝে চিন্তার ব্যবধান কতটুকু, সেসব ব্যাপারও গুরুত্বপূর্ণ।
মেয়েটি মডেলিং করে। মধ্যবিত্ত ঘরের, ‘ও’ লেভেলে পড়ছে, ছাত্রী ভালো। এখন এখান থেকে ধানমন্ডি যাবে ক্লাস করতে। এর মধ্যে একটি পার্টি আসার কথা। আসন্ন একটি পণ্যের জন্য মডেলিং করতে হবে। টিভি-নাটকেও তার অভিনয় করতে আগ্রহ আছে। কিন্তু সবার আগে তার পড়াশোনা। এর মাঝে দু-তিনবার কলকাতায় গেছে মডেলিং করতে। সেখানে সে প্রতিযোগিতা আর প্রফেশনালিজম দেখেছে। ইংরেজিটা জানা ছিল বলে তার সুবিধা হয়েছে। আমাদের দেশের অধিকাংশ মডেলকন্যা তেমন লেখাপড়া জানে না বলে একটা নির্দিষ্ট ধাপ পর্যন্ত এগোয়, তারপর পড়ে যায়। প্রতিবেশী দেশের মডেলকন্যারা অনেক এগিয়ে আছে। আন্তর্জাতিক বাজারেও তাদের অনেক দাম।
হঠাৎ কাচের দরজা ঠেলে দুজন ন্যাড়ামাথা, মোটেই দেখতে ভালো নয়, এরকম দুই যুবক ঢুকলো। মেয়েটি তখন তটস্থ হয়ে উঠেছে। তার চোখমুখ ব্যথিত পুরুষের আগমনে উজ্জ্বল হয়ে উঠলো। দ্রুত ওদের নিয়ে একটু দূরে খালি সোফাসেটে গিয়ে বসলো মেয়েটি। যাওয়ার আগে রহস্যময় হাসলো। এই হাসির কী মানে, বুঝলাম না। আমি হেসে বললাম, উইশ ইউ অল দ্য বেস্ট। ঈশ্বর তোমার মঙ্গল করুন।
মেয়েটি চলে যাওয়ার পরও তার কথা, তার সঙ্গে এই দীর্ঘক্ষণের আলাপচারিতা আমার ভেতর ক্রীড়া করতে লাগলো। কবিবন্ধুটি, কে জানে, হয়তো, একটি 888sport app download apkর প্লট ফাঁদতে শুরু করেছে। কেননা, তার কথাবার্তার ভেতর সাক্ষাৎকারসুলভ কৌতূহল ও অনুসন্ধিৎসা ছিল। আমার ভেতর সেসব কিছু ছিলো না। ভেবেছিলাম, একসময় তার সেল নম্বরটা সে-ই স্বতঃস্ফূর্ত হয়ে দেবে। মেয়েটি নিঃসন্দেহে বৈষয়িক ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন। এই প্রজন্ম তো! কখন কাকে কী কাজে লাগে! ওর ফেসবুকও আছে। ই-মেইলও আছে। কথায় কথায় সেসব কথা বলেছিলো। আলাপচারিতার এক পর্যায়ে আমাদের নামধাম পেশা জেনে নিয়েছিল খুবই সঙ্গোপনে। কবিবন্ধুটিকে সে চিনতে পেরেছে। সম্প্রতি কোনো এক টিভি চ্যানেলে তার সাক্ষাৎকার মেয়েটি দেখেছে বলে জানালো। আমার পরিচয় দেওয়ার মতো কিছুই নেই। আমি করপোরেট কালচারের এক ব্যর্থ প্রোডাক্ট। নিজেকে সেভাবে প্রতিষ্ঠা করতে পারিনি। জীবনের ওপর দিয়ে অনেক ঝড়ঝাপ্টা বয়ে গেছে। পরিবারে সবার বড়ো আমি। চার ভাই এক বোন। বাবা বেঁচে নেই। মা আছেন। বিয়ে-থা এখনো করিনি। এখনো ভাইবোনগুলোর সবাই নিজের পায়ে দাঁড়ায়নি। শুধু একটা বড় কাজ করেছি। একমাত্র বোন, সবার ছোট, তাকে বিয়ে দিয়েছি। বাবা সরকারি চাকুরে ছিলেন, কিছু টাকা আলাদা করে রেখে গিয়েছিলেন। সৎ অফিসার ছিলেন, খুব বেশি টাকা-পয়সা করতে পারেননি। তবে আমাদের সব ভাইবোনকে মানুষ করে গেছেন। আমাদের পড়াশোনার বিষয়ে তার কোনো কার্পণ্য ছিলো না।
জোহরা মেয়েটির নাম। মডেলকন্যা। দূরে গিয়ে বসলেও আমি কান পেতে রইলাম। আমার কবিবন্ধুটি 888sport sign up bonusর অতলে হারিয়ে গেছে। ৩টার আগে তার ইনসুলিন নেওয়ার কথা বাসায় গিয়ে। তিনি বেমালুম ভুলে গেছেন, যেন একটা ঘোরের ভেতর চলে গেছেন। আমিও। মেয়েটির সঙ্গে ভালো একটা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলা যেত। আমরা তাকে কফি ও ফাস্টফুড খাওয়াতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সে রাজি হয়নি। সে ওই দুই যুবকের কথা বারবার বলছিল। বারবার কল দিচ্ছিল। যানজটের এই 888sport app শহরে প্রতিশ্রুতি রাখা, কোনো অ্যাপয়েন্টমেন্ট রাখা, খুবই কঠিন।
মডেলকন্যাদের নিয়ে কতো মুখরোচক গল্প দৈনিকে ছাপা হয়। ওদের কারো জীবনই নির্ভেজাল সরলরেখা ধরে চলে না। প্রায় প্রত্যেকের জীবনে ঘটনা আছে, স্ক্যান্ডেল আছে, আবার সফলতাও আছে। এরা অনেকেই বিত্তবান, দ্বৈতজীবনে অভ্যস্ত, বহুগামিতায় আসক্ত।
কিন্তু জোহরা ওর নামের মতোই বেশ সাদামাটা। লেখাপড়া শেষ করাটা তার প্রধানতম আকাঙ্ক্ষা, এরকম আভাসই সে দিয়েছে।
আজকের পরে আর কোনোদিনই হয়তো তার সঙ্গে দেখা হবে না। এই ষন্ডামার্কা যুবক দুটোকে আমার মোটেই পছন্দ হয়নি। ওদের সঙ্গে সে কোথায় যাবে! আজকে কি কন্ট্রাক্ট সাইন হবে? কী কী শর্ত আরোপ করবে ওই বিত্তশালী যুবক দুটি। ওরা কি কালো টাকার মালিক? কিংবা কোনো মাফিয়া গ্রুপের সঙ্গে জড়িত? এসব কথা জোহরাকে আগেই জানিয়ে দেওয়া উচিত ছিলো আমার। মডেলকন্যা তিন্নির কথা হঠাৎ মনে পড়লো আমার। কেন মনে পড়লো, জানি না। আমি জোহরার কল্যাণ চাই। এই পঙ্কিল নোংরা জগতে সে কি নিজেকে রক্ষা করতে পারবে! ওর কি ভালো শক্তিশালী ছেলেবন্ধু নেই?
মেয়েটা আসলেই সরল, আন্তরিক ও বোকা। অন্তত এতোক্ষণের ওর কথাবার্তায় আমার তা-ই মনে হয়েছে।
খাবার অর্ডার দেওয়া হয়েছে। জোহরা গোগ্রাসে স্যান্ডউইচ গিলছে। যুবক দুটি কফি পান করছে। একবারও যুবক দুটি আমাদের দিকে তাকায়নি। এসব বিষয় নিয়ে মাথা ঘামানোর সময় তাদের কোথায়?
যুবক দুজনের উদ্দেশ্য যে মহৎ নয়, তা তাদের চোখমুখ দেখে বোঝা যায়। জোহরা কি বুঝতে পারছে? তার তো বোঝার কথা। কলকাতা দিল্লি ঘুরে এসেছে যে-মেয়ে, তার তো ভুল হওয়ার কথা নয়। আমাদের দেশে মডেলিং এখনো 888sport live chat হিসেবে গড়ে ওঠেনি। মডেলিংয়ে ভালো পরিবারের শিক্ষিত মেয়েরা আজকাল আসছে ঠিকই, একই সঙ্গে মূর্খ বাজে মেয়েরাও বাজার মাত করে আছে। পেশাদারিত্বটা আমাদের দেশে ওভাবে গড়ে ওঠেনি। একজন বিবি রাসেল দিয়ে তো আর একটা ইন্ডাস্ট্রিকে পরিচয় করানো যায় না।
জোহরা খুব তাড়াতাড়ি খাওয়া শেষ করলো। তবে কি আজ সে ধানমন্ডিতে কোচিংয়ে যাবে না? যুবক দুটো উঠে দাঁড়িয়েছে। ওদের সঙ্গে সে কোথাও যাবে। হয়তো ওদের অফিসে, কিংবা অন্য কোথাও, কিংবা স্টুডিওতে ফটোসেশনে। এক্সট্রা কোনো ড্রেস আনেনি। ব্যক্তিগত মেকআপ বক্স নেই। কীভাবে ফটোসেশন হবে?
জোহরা গেট থেকে ফিরে এলো। যুবক দুটি কাচের দরজার বাইরে কী বিষয় নিয়ে যেন কথা বলছে। আমাদের দিকে ওদের দৃষ্টি নেই। কবিবন্ধুটি বসে আছেন স্থির ও অনড়। আমি উঠে দাঁড়ালাম। আমার অদম্য কৌতূহল ও উৎসাহ। ইংরেজিতে অনেক কথা খুব সহজে জিজ্ঞেস করা যায়, ‘য়ুড ইউ মাইন্ড’ জুড়ে দিলেই হয়। আমি জোহরার কাছে জানতে চাইলাম, আজ কন্ট্রাক্ট সই হবে কি-না। হো হো করে কাচের চুড়ির মতো হেসে উঠলো সে। বললো, না। শর্ত কয়েকটি দিয়েছে সে-ও। ওরা বিবেচনা করবে। সে-ও ওদের সম্পর্কে খোঁজখবর নেবে, তারপর। আগে তো লেখাপড়া, আগে ‘ও’ লেভেল শেষ করে গ্র্যাজুয়েশন নিতে হবে, তারপর মডেলিং। ওরা জোহরাকে ধানমন্ডিতে গাড়িতে নামিয়ে দিয়ে যাবে।
হয়তো জোহরার সঙ্গে আমাদের আর কোনোদিন দেখা হবে না। কবিবন্ধুটি হয়তো গল্প-888sport alternative linkে জোহরাকে অমর করে রাখবে। আর আমি? আমি তো লেখক নই, আমি কিছুই নই। আমি করপোরেট কালচারের এক ক্রীতদাস। আমি খুব সাধারণ একজন মানুষ। আমি বিজনেস কার্ডটা এগিয়ে দিলাম।
জোহরার কোনো কার্ড নেই। আপনাকে সেলফোনে আমার নাম্বারটা জানিয়ে দেবো, ভাইয়া।
কবিবন্ধুটির দিকে তাকিয়ে বলল, আপনি আমার বাবার মতো, আমার বাবা বেঁচে নেই, পরিচিত হয়ে ভালো লাগলো। আমার দিকে আর একবার রহস্যময় হাসলো, এ হাসির মানে কী আমি জানি না।
চলে গেল সে। একটি সাদা ভলভোর গহবরে ঢুকে পড়বে মডেলকন্যা জোহরা। রাজহংসীর মতো দ্রুত ভেসে চলে যাবে আমাদের ধরাছোঁয়ার বাইরে। অন্য পৃথিবীতে।
আমরা এই পৃথিবীর দুই বোকা পুরুষ খুব ধীরে ধীরে, খুব সাবধানে, রেস্তোরাঁর সিঁড়ি বেয়ে নামতে লাগলাম।
নিচে নামাটা কতো সহজ!