উন্নয়ন ও বাসন্তীদের বঞ্চনার কাহিনি

আহমেদ মাওলা

 

বাসন্তী, তোমার পুরুষ কোথায়?

বিশ্বজিৎ চৌধুরী

 

প্রথমা প্রকাশন

888sport app, ২০১৫

 

২২০ টাকা

 

খাল ঘেঁষেই জেলেপাড়া। নামটা সুন্দর, মনোহরখালী। বিশ্বজিৎ চৌধুরীর বাসন্তী, তোমার পুরুষ কোথায়? ঠিক জেলেপাড়ার কাহিনি নয়। তবে জেলেপাড়ার মেয়ে নিভারাণী জলদাসকে নিয়ে 888sport alternative linkের কাহিনি গড়ে উঠেছে। একেবারে সমকালীন বাস্তবতার ভিন্নরকম এক গল্প। বিশ্বজিৎ চৌধুরীর ভাষা স্বচ্ছন্দ, গতিময়। টানটান গদ্যে লেখা কাহিনির পরতে পরতে এক 888sport promo codeর নিরন্তর জীবনসংগ্রাম, বঞ্চনা ও বিপন্নতার হৃদয়বিদারক কথা। 888sport alternative linkের শিরোনামের মধ্যে রয়েছে প্রশ্নবোধক চিহ্ন, যা পাঠককে ভিন্ন এক জিজ্ঞাসার সামনে দাঁড় করিয়ে দেয়।

জেলে সম্প্রদায়ের লুপ্তপ্রায় সংস্কৃতির পুনরুজ্জীবনে এগিয়ে আসে এনজিও ‘নিষ্ঠা’। পরিচালক মমতাজ সাহেব চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় লেখেন বাসন্তীর প্রতীক্ষা নাটক। শুরুর সংলাপটা এরকম – ‘অ বাসন্তী, তোর নেইক্যা হডে?’ 888sport app থেকে আসা ডোনার এজেন্সির বাসন্তী চরিত্রে নিভারাণীর অভিনয় দেখে বিস্মিত, মুগ্ধ। অজান্তেই বলে ওঠেন – ‘স্মিতা পাতিল না?’ ‘না স্যার, নিভারাণী।’ ‘মেয়েটার মধ্যে আগুন আছে। এ মেয়েটার হবে।’ হয়েছে, নিভারাণী বাসন্তী হয়েছে। তারপর বাসন্তী থেকে মৌসুমী হওয়ার গল্প পাঠককে হাসাবে, কাঁদাবে এবং কিছু জিজ্ঞাসার মুখোমুখিও করবে। অঞ্জন-অাঁকা গভীর দুটি চোখ, দাঁড়ানোর ভঙ্গিতে শরীরের বিপজ্জনক বাঁক, অভিনয়, গানের গলা সবই ভালো। শুধু গায়ের রং কালো বলে মানুদার কৃষ্ণলীলা নাটকে রাধার সখী সাজতে হয়েছে। ফর্সা মোটা আরতি সেজেছিল রাধা। মাস দুয়েক পর বাস্তবের কৃষ্ণ মানুদার সঙ্গে আরতির বিয়ে হয়ে গেলে 888sport sign up bonusসূত্রে ‘প্রেম একবার এসেছিল নীরবে’ গেয়ে দূরে থেকেছে নিভা। এ তার প্রথম প্রবঞ্চনা। বোন শোভা পাড়ার এক দোকানির সঙ্গে পালিয়ে যায়। হঠাৎ করে মায়ের মৃত্যু বিপর্যস্ত করে তোলে নিভাকে। অভাবের তাড়নায় পাড়ার হোটেলে বাসন মাজার কাজ নেয়। হোটেল ম্যানেজার নিজামউদ্দিন একদিন কাঁচুমাচু করে তাকে প্রেম নিবেদন করে বসবে, নিভা স্বপ্নেও তা ভাবেনি। নিজামের সঙ্গে বিয়ের বছর ঘুরতেই জেলেপাড়ায় রটে যায়, নিভা মা হতে পারবে না। সামর্থ্য তার ঠিকই আছে কিন্তু…। কেউ বলে পাপ। হিন্দু-মুসলমান বিয়ে। এরকম বিয়ে করে অনেক ছেলেমেয়ে দিব্যি সংসার করছে। বর্ষা মৌসুমে সমুদ্রে মাছ ধরতে গিয়ে ডাকাতের হাতে মার খেয়ে নিজামের এক হাত-পা এবং মুখ বেঁকে যায়। বাধ্য হয়ে নিভারাণী ইপিজেডে গার্মেন্টসে চাকরি নেয়। উন্নয়ন সংস্থার কর্তাদের সহযোগিতায় ‘আর্টিস্ট’ হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে লোকনাট্যদলের সদস্য হয়ে সুদূর আমেরিকায় যায় জেলেপাড়ার নিভারাণী। ‘খাঁচার ভেতর থেকে বানর বের করে যেমন নাচ দেখায়, নাচ শেষ হলে আবার খাঁচায় ঢুকিয়ে রাখে’ – তেমনি। হোটেলে এনজিওর কর্তা জাফর তিন বার নিভাকে…। ‘কিন্তু খানকি-মাগির ফোয়া ছাড়ে নাই।’ আমেরিকা থেকে ফিরে নিভা পূর্বের চাকরিতে ঢুকতে পারে না। ‘নিষ্ঠা’র মমতাজ বলেছিল চাকরির ব্যবস্থা করে দেবে। হায়দার মমতাজকে ফোনে বলে – ‘আরে আপনাকে কি চাকরি দিতে বলেছি? কিছু একটা বলে বিদায় করে দ্যান।’ মমতাজ নতুন প্রজেক্ট এইডস নিয়ে গণসচেতনতা, মাইক্রো ক্রেডিট, সীতাকুন্ডের শিপ ব্রেকিং পরিবেশ রক্ষা নিয়ে মহাব্যস্ত। গোপনে পতিতাবৃত্তি চলে এমন জায়গায় কাজ করতে এসে মমতাজ বিস্মিত – মলিন পর্দা সরিয়ে ম্যাক্সি পরা যে মহিলা বেরিয়ে এলো, তাকে দেখে আপাদমস্তক কেঁপে উঠল মমতাজের। নিভা! নিভারাণী! ‘অবাক হয়েছেন স্যার? আপনারা আমাকে আর্টিস্ট বানাতে চেয়েছেন, আমি এখন মৌসুমী হয়েছি।’ কথা বলার সামর্থ্য হারিয়ে ফেলে মমতাজ। ‘আমাদের ভালোর জন্যই তো আপনারা সবকিছু করেন কিন্তু ভালো তো হয় না।’ ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে নিভা। ‘আপনারা আমার স্বামীকে ভিখারি বানিয়েছেন। আমানত শাহ মাজারে সে এখন ভিক্ষা করে।’ জেলেপাড়ার মেয়ে নিভারাণী, নাটকের বাসন্তী এখন বেশ্যাপাড়ার মৌসুমী হয়েছে। এনজিওর উন্নয়ন প্রচেষ্টা ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনের এই পরিণতি উন্মোচিত হয় 888sport alternative linkে। সবচেয়ে আকর্ষণীয় চরিত্র মানুদা। হায়দার, মমতাজ চরিত্রের শঠতা, 888sport promo codeলোলুপতা, উন্নয়নের নামে ব্যবসা, সবই বিশ্বাসযোগ্যভাবে উন্মোচিত হয় পাঠকদের সামনে। এনজিওর প্রতি কোনো বিরূপতা দেখানো লেখকের ইচ্ছে নয়, কিন্তু নিভার জীবনকাহিনি বর্ণনায় তা এসে গেছে। পাঠকের সমস্ত মমতা কেড়ে নেয় নিভারাণী। জীবন তাকে অনেক কিছু দেখায়, কিছুই দেয় না। তার জীবনের শূন্যতা ও প্রবঞ্চনায় পাঠকের হৃদয় আর্দ্র হয়। তার দুঃখে আকাশও কেঁদে উঠেছিল। শেষ বাক্যটি তাই – ‘বৃষ্টির ফোঁটা পড়ছিল।’ নিভার জীবন আজ পুরুষশূন্য, তাই সে পুরুষ খুঁজে বেড়ায়। নাটকের সেই সংলাপই নিভার জীবনে চরম সত্য হয়ে ওঠে – ‘বাসন্তী, তোমার পুরুষ কোথায়?’