স্থপতি মাজহারুল ইসলাম
সাক্ষাৎকার গ্রহণ : সামসুল ওয়ারেস
888sport appsে বিশ্বমানের একজন স্থপতিই আছেন। তাঁর নাম মাজহারুল ইসলাম। তিনি এই উপমহাদেশের সম্ভবত সবচেয়ে স্থির, ধীশক্তিসম্পন্ন ও আদর্শবাদী স্থপতি। তাঁর স্থাপত্য এই উপমহাদেশের স্থাপত্য-সারবস্তু ও আদর্শ থেকে উৎসারিত হয়ে রূপান্তরিত হয়েছে বলিষ্ঠ এক অবয়বে যা সর্বকালীন এবং অসীম। তাঁর স্থাপত্য ইট, বালু, কাঠ, আলো, বাতাস ও অন্ধকারের কাব্য। তাঁর স্থাপত্যের নিগূঢ় সত্য যুগে যুগে আবিষ্কৃত হবে। তাঁর কর্মের সঠিক মূল্যায়ন এখনো হয়নি।
মাজহারুল ইসলাম একাধারে স্থপতি, 888sport live chatী, দার্শনিক, রাজনীতিবিদ ও শিক্ষক। তিনি এদেশে উন্নতমনস্ক স্থাপত্যপেশা-চর্চার পথিকৃৎ। তিনি 888sport apps স্থপতি ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা-সভাপতি। তিনি এই ইনস্টিটিউটের একমাত্র স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত সদস্য। দেশ তাঁকে রাষ্ট্রীয় উপহার ‘স্বাধীনতা দিবস পদক’ দিয়েছে। ভারতীয় স্থপতি ইনস্টিটিউটের পশ্চিমবঙ্গ শাখা ১৯৮৯ সালে তৃতীয় বিশ্বের স্থাপত্যে অসামান্য অবদানের জন্য যে তিনজন স্থপতিকে বিশেষ 888sport app download bd ও সম্মানী অর্পণ করে তাঁদের মধ্যে তিনি একজন। অন্যরা হলেন, মিশরের হাসান ফাত্হী ও যুক্তরাজ্যের ল্যরি বেকার। ভারতীয় স্থপতি ইনস্টিটিউট ১৯৯৯ সালে ( জে. কে. সিমেন্টের সহযোগিতায়) এই উপমহাদেশের স্থাপত্য888sport live chatে আজীবনের অবদানের জন্য তাঁকে গ্রান্ড মাস্টারস অ্যাওয়ার্ড অর্পণ করে। ওই বছর যুক্তরাষ্ট্রের স্থপতি ইনস্টিটিউট তাঁকে বিশ্বস্থাপত্যে অবদানের জন্য ফেলো (এফ.এ.আই.এ.) পদ দিয়ে সম্মান জানায়।
মাজহারুল ইসলাম 888sport appsের স্থাপত্য সমাজে এমন এক উচ্চাসনে অবস্থান করেন যেখানে তিনি একা, নিঃসঙ্গ। অন্যেরা বহুদূরে। মাজহারুল ইসলাম এক সৌম্যমূর্তি, নির্মোহ, দেবতুল্য, অশীতিবর্ষ মানুষ। তিনি আমাদের মধ্যে আছেন, তাই মঙ্গল।
স্থপতি মাজহারুল ইসলামের একান্ত সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ ও সাক্ষাৎকারের অনুলিখন তৈরি করেন স্থপতি সামসুল ওয়ারেস। সাক্ষাৎকারে বিশটি প্রশ্ন আছে। প্রথম দশটি প্রশ্ন তৈরি করেন স্থপতি তারিকুল ইসলাম এবং ওই অংশের সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করা হয় ২০০৩ সালের অক্টোবর মাসে। শেষ দশটি প্রশ্ন প্রস্তুত করেন স্থপতি সামসুল ওয়ারেস এবং ওই অংশের সাক্ষাৎকারটি গৃহীত হয় ২০০৪ সালের পহেলা মে। ছবিগুলো স্থপতি নুরুর রহমান খানের সৌজন্যে প্রাপ্ত।
সামসুল ওয়ারেস : 888sport appsে আধুনিক স্থাপত্যের হাতেখড়ি হয় আপনার হাতেই। পঞ্চাশের দশকে তৎকালীন বৈরী পরিবেশে আপনি স্থাপত্যের প্রতি নিষ্ঠ হয়ে কাজ শুরু করেছিলেন। কীভাবে সেটা সম্ভব হয়েছিল, একটু বুঝিয়ে বলুন।
মাজহারুল ইসলাম : আমি যখন বিদেশ থেকে স্থাপত্য-বিষয়ে পড়ালেখা করে ফিরে আসি ১৯৫২ সালে, এখানে তখন ভাষা-আন্দোলন হয়ে গেছে, দেশের মানুষের চোখেমুখে উদ্দীপনা, অন্যায়ের প্রতিরোধ করে দেশগড়ার স্বপ্ন। ঔপনিবেশিক শাসনের পতনের পর এটাই স্বাভাবিক ছিল। আমি কলকাতায় ছাত্রাবস্থায় ছাত্র-সংগঠনের পক্ষে ছাত্রনেতা হিসেবে কাজ করেছি, তাই স্বাভাবিকভাবেই দেশের জন্য কিছু করার তাগিদ ছিল। তাছাড়া স্থাপত্যের মাধ্যমে দেশগড়ার কাজ করা সম্ভব, এ-বিশ্বাস ছিল। ফলে সেই সময়ে সরকারি চাকুরে হিসেবে যতটুকু সুযোগ ছিল তার সদ্ব্যবহার করে সুস্থ স্থাপত্য-রচনায় ব্রতী হই। চারুকলা ইনস্টিটিউট ও পাবলিক লাইব্রেরি কমপ্লেক্স, দুটিই আমার প্রথম দিকের কাজ। 888sport appয় তখন আধুনিক স্থাপত্যের কোনো নিদর্শন নেই, ফলে আমাকে প্রায় শূন্য থেকেই এ-দায়িত্ব নিতে হয়।
888sport appয় ইতোমধ্যে 888sport live chatাচার্য জয়নুল আবেদিন চারুকলা ইনস্টিটিউট ও ড. কুদরাত-এ-খুদা 888sport apk গবেষণাগার প্রতিষ্ঠা করেছেন। তাই 888sport appয় একটা স্থাপত্যশিক্ষা-প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলারও তাগিদ অনুভব করি এবং এ-বিষয়ে ফোর্ড ফাউন্ডেশনের সাহায্যে পেনসিলভেনিয়ার স্থাপত্য স্কুলের সাথে কার্যত অনেকটা এগিয়ে যাই। 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের একটা স্থাপত্য-ডিজাইনও করে ফেলি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা হয়ে ওঠেনি।
সামসুল ওয়ারেস : 888sport appsের সমাজ, সংস্কৃতি ও ভৌগোলিক অবস্থানের প্রেক্ষাপটে কী ধরনের স্থাপত্য হওয়া উচিত বলে তখন আপনি মনে করেছিলেন?
মাজহারুল ইসলাম : বিদেশে পড়াশোনা করার সময়েই এটা উপলব্ধি করতে পেরেছিলাম যে, সব দেশের স্থাপত্য একরকম হবে না। একটি দেশের স্থাপত্য সেই দেশের ভৌগোলিক অবস্থান, জলবায়ু ও দেশজ সংস্কৃতির বহিঃপ্রকাশের ওপর নির্ভরশীল। 888sport appsের উষ্ণ-আর্দ্র ও মৌসুমি আবহাওয়া এবং এদেশের নির্মাণসামগ্রী ও প্রযুক্তির ওপর নির্ভর করেই আমি আমার স্থাপত্য-ধারণাগুলো ঐক্যবদ্ধ করি। সূর্যের আলো, বৃষ্টির পানি, আলোছায়ার খেলা, বাতাসের চলাচল, ইত্যাদি বিষয়গুলো প্রাধান্য পায়। তবে এ-কাজে আমার সমাধানগুলো ঐতিহ্যের দিকে সরাসরি হাত না বাড়িয়ে আধুনিকমনস্কতায় সম্পন্ন করি। ঐতিহ্যগত অলংকরণ ও নকশা বাদ দিয়ে নির্মাণসামগ্রীর নিজস্ব গুণাগুণ, জ্যামিতিক বিন্যাস, সহজ ব্যবহার ও আনুপাতিক মাপজোকগুলোর প্রতি বিশেষ নজর দিই। বিশ্বের সমকালীন নান্দনিক অবস্থানের সাথে তাল মিলিয়ে আবার দেশের জলবায়ু ও সংস্কৃতির প্রতি বিশ্বস্ত থেকে একটি নতুন স্থাপত্য-রচনায় ব্রতী হই। এ-ধরনের চিন্তা ও কর্মকাণ্ড থেকেইচারুকলা ইনস্টিটিউট ও পাবলিক লাইব্রেরির উদ্ভব হয়।
সামসুল ওয়ারেস : স্থাপত্যপেশায় 888sport live chatচর্চা সম্বন্ধে কিছু বলুন।
মাজহারুল ইসলাম : স্থাপত্য নিঃসন্দেহে একটি উঁচুমানের 888sport live chatমাধ্যম। উন্নত দেশগুলোতে স্থাপত্য সব দৃশ্যমান 888sport live chatের মূল বা আকর হিসেবে গণ্য হয়। স্থাপত্য শুরু হয় বিশেষ ব্যবহারিক তাগিদ থেকে, থাকা-খাওয়া, কাজকর্ম, বিনোদন ইত্যাদি নানা বাস্তব প্রয়োজন থেকে; কিন্তু এসব বাস্তব প্রয়োজন যথাযথ পূরণ করেই স্থাপত্যকে 888sport live chatে উত্তীর্ণ হতে হয়। স্থাপত্য যাদের জন্য তৈরি হয়, মনোরম পরিবেশ সৃষ্টি করে তাদের মধ্যে সৌন্দর্যবোধের সৃষ্টি করতে হয়। স্থপতি সৃজনশীল মানুুষ হিসেবেই এইসব শৈল্পিক তাগিদগুলো পূরণ করেন। 888sport live chat হিসেবে উত্তীর্ণ হওয়ার মাধ্যমেই স্থাপত্যের প্রকৃত সার্থকতা অর্জিত হয়।
সামসুল ওয়ারেস : আপনি 888sport apps স্থপতি ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রথম সভাপতি। তাছাড়া আরো কয়েকবার এ-দায়িত্ব পালন করেছেন। আপনার অভিজ্ঞতার আলোকে এ-সম্পর্কে কিছু বলুন।
মাজহারুল ইসলাম : আমি পাকিস্তান স্থপতি ইনস্টিটিউটেরও সভাপতি একসময়ে ছিলাম। আমি সবসময়েই চেয়েছিলাম 888sport appsের স্থপতিরা যেন সুনিয়ন্ত্রিত হয়ে স্থপতি ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে পেশা অনুশীলন করে। স্থাপত্যপেশাকে শুধুমাত্র অর্থ উপার্জনের একটি বাণিজ্যিকপন্থা হিসেবে না দেখে বরং 888sport live chat ও সংস্কৃতিচর্চার মাধ্যম হিসেবে দেখা ও সেবামূলক মানসিকতার দিকে স্থপতিদের উদ্বুদ্ধ করতে পারা। সরকার কর্তৃক আইন-প্রণয়নের মাধ্যমে স্থাপত্যপেশা ও স্থাপত্যশিক্ষার বিকাশ এবং নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে ইনস্টিটিউট, সমাজ ও পরিবেশের উন্নয়নে ব্রতী হতে পারে। আমি এসব মাথায় রেখেই ইনস্টিটিউটের পক্ষে বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নিয়েছি, তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই হয়ত সফলতা অর্জিত হয়নি।
সামসুল ওয়ারেস : 888sport appsের স্বাধীনতা-অর্জন এবং এর সাথে এদেশে আধুনিক স্থাপত্যবিকাশের সম্ভাবনা সম্পর্কে কিছু বলুন।
মাজহারুল ইসলাম : স্বাধীনতা কোনো জাতির মেধা, কর্মশক্তি ও মনের ভাব প্রকাশের সবচেয়ে বেশি সুযোগ করে দেয়। মানুষের পারিপার্শ্বিক ও মানসিক গুণাবলির বিকাশের মাধ্যমে সমাজ, অর্থনীতি ও সংস্কৃতি গঠনের সবচেয়ে বেশি সম্ভাবনা সৃষ্টি করে। স্বাধীনতার কোনো বিকল্প নেই। একাত্তরের স্বাধীনতা 888sport appsের মানুষের জন্য তেমনি একটা বিরাট সুযোগ ও সম্ভাবনা সৃষ্টি করে। এদেশের মাটি, প্রকৃতি ও জলবায়ুর শুদ্ধ পরিচয় দিতে সক্ষম – এমন সমকালীন ও নিজস্ব স্থাপত্য রচনা করার আবশ্যিক শর্ত এই স্বাধীনতা পূরণ করে। এখন আমরা স্থপতিরা স্বাধীন দেশের মানুষের জন্য সঠিক ও অনবদ্য এক স্থাপত্য রচনা করতে পারি।
সামসুল ওয়ারেস : আমাদের দেশের সমকালীন স্থাপত্য সম্পর্কে কিছু বলুন।
মাজহারুল ইসলাম : আমাদের এই ছোট্ট দেশটি আসলে খুব সুন্দর। এদেশের মানুষেরাও মূলত সুন্দর। প্রকৃতি ও মানুষের মেলবন্ধন এবং ভারসাম্য রক্ষা করা স্থাপত্যপেশার মূল লক্ষ্য। এ-কারণে ঘরবাড়ি নির্মাণের জন্য প্রচলিত আইনকানুন যথেষ্ট নয়। আইনগুলোর আমূল পরিবর্তন করে পরিবেশ-সচেতন ও পরিবেশ-বান্ধব হিসেবে ঢেলে সাজানো প্রয়োজন। স্থাপত্য বর্তমানে বিক্ষিপ্তভাবে ঐক্যহীন অবস্থায় গড়ে উঠছে। স্থাপত্যকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করার জন্য একটি সামগ্রিক ভৌত মহাপরিকল্পনার অংশ হিসেবে নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন। এই প্রাথমিক শর্তগুলো পূরণ হলে আমাদের দেশের স্থাপত্য এক অনবদ্য রূপ গ্রহণ করবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই।
সামসুল ওয়ারেস : শেরেবাংলা নগর ও সংসদ ভবনের ডিজাইন এবং বাস্তবায়ন সম্বন্ধে আপনার বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে কিছু বলুন।
মাজহারুল ইসলাম : ১৯৬১ সালে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার 888sport appয় একটি ‘দ্বিতীয় রাজধানী কমপ্লেক্স’ নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করে। সেই অনুসারে তৎকালীন কেন্দ্রীয় পূর্তমন্ত্রী আমাকে স্থপতি হিসেবে এই কমপ্লেক্সের দায়িত্ব নিতে অনুরোধ করেন। আমি তখন পূর্ত মন্ত্রণালয়ের স্থপতি হিসেবে 888sport appয় কর্মরত। আমি প্রাথমিক পর্যায়ে এই গুরুদায়িত্ব গ্রহণ করে মার্টিন ফ্রিশম্যান ও জ্যাক মিশেল – এই দুই স্বনামধন্য স্থপতির সঙ্গে দলভুক্ত হয়ে কাজে নেমে পড়ি। শেরেবাংলা নগরে একটি ডিজাইন অফিস নির্মাণ করে আমরা ক্যাপিটাল কমপ্লেক্সের ডিজাইন নিয়ে চিন্তা শুরু করি। কিন্তু এক পর্যায়ে আমার মনে হলো যে, এই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রজেক্টটির ডিজাইন ও বাস্তবায়নে বিশ্বের একবারে প্রথম সারির কোনো স্থপতিকে জড়াতে পারলে এদেশে আধুনিক স্থাপত্যের এক বিরাট দ্বার উন্মোচিত হবে। ওই সময় স্থপতি কর্ব্যুসিয়ার পাঞ্জাবের নতুন রাজধানী চণ্ডিগড় শহর নির্মাণ করছিলেন। তাই স্বাভাবিকভাবেই আমার মাথায় এ-ধরনের চিন্তা খেলা করে। মার্টিন ফ্রিশম্যান ও জ্যাক মিশেলও আমার প্রস্তাবে সায় দেন। আমি দেরি না করে কেন্দ্রীয় পূর্তমন্ত্রীকে (ফজলুল কাদের চৌধুরী) এ-বিষয়ে অবহিত করি এবং যথাক্রমে লি কর্ব্যুসিয়ার, আলভার আলতো ও লুই. আই কানের নাম প্রস্তাব করি। পূর্তমন্ত্রী এই প্রস্তাব মেনে নেন। কর্ব্যু রাজি হননি। আলভার আলতো রাজি হন। কিন্তু অসুস্থতার জন্য কিছুদূর এসেও ফিরে যেতে বাধ্য হন এবং তার অপরাগতার কথা জানিয়ে দেন। লুই. আই কান রাজি হন এবং 888sport appয় চলে আসেন। কান প্রথম থেকেই কাজটি অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে গ্রহণ করেন এবং আমাদের তৈরি ডিজাইন অফিসটি স্থানীয় ডিজাইন অফিস হিসেবে ব্যবহার করেন। এর পরের ইতিহাস তো আপনাদের সবারই জানা। লুই. আই কান এ-কাজটি গ্রহণ করায় আমি দায়মুক্ত হই। এটা করতে পেরেছিলাম ভেবে আজো মনে শান্তি পাই।
আমি যখন ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপত্য-বিষয়ে মাস্টার্স করতে যাই তার কিছুকাল আগে লুই. আই কান ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগের প্রধান ছিলেন। সেই সুবাদে কান সম্পর্কে আমার ধারণা ছিল। 888sport appsের পানি ও সবুজ গাছপালা কানের মনে ধরেছিল। তিনি বারবার এসব সৌন্দর্য নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করতেন। কান শেরেবাংলা নগরে ৮০০ একর জমি নিয়ে কাজ শুরু করেন, কিন্তু শেষ অবধি ১৬০০ একর জমির ওপর মহাপরিকল্পনা তৈরি করেন। আমার মতে, আমাদের সংসদ ভবন কানের শ্রেষ্ঠ স্থাপত্যকর্ম এবং পৃথিবীর সর্বকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ একটি ভবন।
সামসুল ওয়ারেস : আপনার শৈশব ও পরিবার সম্পর্কে বলুন।
মাজহারুল ইসলাম : আমার জন্ম ১৯২৩ সালের ২৫ ডিসেম্বর। গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের কুয়েপারা গ্রাম। আমার বাবা ছিলেন সরকারি কলেজের অঙ্কের অধ্যাপক, সেই সুবাদে আমার শৈশব ও স্কুলজীবন কেটেছে প্রধানত রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও কৃষ্ণনগরে। আমার মায়ের বাড়ি মুর্শিদাবাদের সুন্দরপুর গ্রামে। সেখানে নানাদের জমিদারবাড়িতে আমার অনেক 888sport sign up bonus জড়িয়ে আছে। আমার দাদা ছিলেন সাব-রেজিস্ট্রার। সেটা ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকের কথা। আমার বাবা ও তাঁর ভাইরা সবাই শিক্ষিত ছিলেন। তাঁদের অনেকেই 888sport app ও কলকাতায় কাজ করতেন। আমাদের গ্রামের বাড়িতে জমি ছিল অনেক। অর্থনৈতিক মূল উৎস ছিল এই জমি। সব মিলিয়ে আমাদের বংশের লোকজনকে সচ্ছল, সম্ভ্রান্ত ও শিক্ষিত বাঙালি বলাই বোধ হয় ঠিক হবে।
সামসুল ওয়ারেস : আপনার শিক্ষাজীবন সম্পর্কে জানতে চাই।
মাজহারুল ইসলাম : আমার সৌভাগ্য যে, বাবার অধ্যাপনার চাকরির সুবাদে আমি রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও কৃষ্ণনগরে 888sport appsের কয়েকটি ভালো স্কুল ও কলেজে পড়ার সুযোগ পাই। ১৯৪২ সালে রাজশাহী সরকারি কলেজের মাধ্যমে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমি পদার্থ 888sport apk-বিষয়ে বি.এস.সি. পাস করি। এরপর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্গত শিবপুর থেকে ১৯৪৬ সালে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করি।
শৈশবে কৃষ্ণনগরের কুমারদের মাটি দিয়ে দেব-দেবীর মূর্তি বানানো আমাকে খুব আকর্ষণ করত। এছাড়া রাজশাহী জাদুঘরে রক্ষিত কষ্টিপাথরের তৈরি দেব-দেবীর মূর্তিগুলো আমাকে 888sport live chatের প্রতি আগ্রহাম্বিত করে তোলে। শিবপুরে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সময়ে শিক্ষকেরা আমার ড্রইংয়ের খুব প্রশংসা করতেন। দেশভাগের পর আমি একজন প্রকৌশলী হিসেবে 888sport appয় সরকারি চাকরি গ্রহণ করি এবং স্কলারশিপ নিয়ে ১৯৫০-৫২ সময়কালে যুক্তরাষ্ট্রের ওরেগন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থাপত্যবিদ্যায় স্নাতক ডিগ্রি লাভ করি। এরপর ১৯৫৭ সালে লন্ডনের এ. এ. স্কুল অব আর্কিটেকচার থেকে ট্রপিক্যাল স্থাপত্য-বিষয়ে স্নাতকোত্তর সনদ নিই। ১৯৬১ সালে নিজস্ব খরচে যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থাপত্যে মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করি।
ওরেগনে স্থাপত্যবিষয়ে পড়ালেখা করার সময়ে আমি দুজন খুব ভালো শিক্ষক পেয়েছিলাম। একজন স্থাপত্যের ইতিহাস ও অন্যজন স্থাপত্য-ডিজাইন বিষয়ে পড়াতেন। এঁদের কাছে আমি চিরকৃতজ্ঞ। পরে ইয়েলে পেয়েছিলাম শিক্ষক হিসেবে পল রুডল্ফকে, আর সহপাঠী হিসেবে স্থপতি স্ট্যান্লি টাইগার ম্যানকে। এঁরা দুজনই স্বনামধন্য স্থপতি, এঁদের কাছ থেকেও আমি শিখেছি অনেক।
সামসুল ওয়ারেস : ১৯৫৩ সালে আপনার ডিজাইনে নির্মিত চারুকলা ইনস্টিটিউট একটি চমৎকার আধুনিক স্থাপত্য হিসেবে স্বীকৃত। চারুকলা ইনস্টিটিউট সম্পর্কে অনুগ্রহ করে কিছু বলুন।
মাজহারুল ইসলাম : চারুকলা ইনস্টিটিউট ও পাবলিক লাইব্রেরি কমপ্লেক্স দুটি আমি সরকারি চাকরিরত অবস্থায় একই সঙ্গে ১৯৫৩ সালে ডিজাইন করি। ডিজাইন করতে প্রায় ছয়মাস সময় লাগে। সম্পূর্ণ ডিজাইন ও ড্রইং আমি নিজের হাতে সম্পন্ন করি। লাইব্রেরির প্রয়োজনীয় প্রোগ্রাম তৈরি করি 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিয়ানের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে। চারুকলা ইনস্টিটিউটের ব্যাপারে 888sport live chatাচার্য জয়নুল আবেদিন সব ধরনের সহযোগিতা করেন।
চারুকলা ইনস্টিটিউট ও লাইব্রেরি, 888sport app বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের দুটি পাশাপাশি সাইট। সাইটদুটি খোলামেলা, চারদিকে অসংখ্য গাছ ছিল। সাইট সংলগ্ন প্রধান সড়কের ওইপাশে ছিল রেসকোর্স খোলামাঠ। এসব মিলিয়ে সাইট-সংলগ্ন পুরো এলাকার পরিবেশে একটা বিশেষ সৌন্দর্য ছিল।
চারুকলা ইনস্টিটিউটের ভবনগুলো ডিজাইন করার সময়ে আমি প্রথম থেকেই লক্ষ রেখেছি বাড়িগুলো যেন গাছপালা, রোদের আলো-ছায়া – এসবের সাথে মিশে যায়। লক্ষ রেখেছি, যেন কোনো সুন্দর গাছ কাটতে না হয়। আমি চেয়েছিলাম, ভবনগুলোর স্থাপত্য ও নিসর্গের মেলবন্ধনটা যেন চারুকলার ছাত্রছাত্রীদের চোখের সামনে থাকে আর তাদের 888sport live chatকর্মে স্থায়ী প্রেরণা জোগায়।
তখন মিরপুর সিরামিক ইট ছিল না। ইসমাইলিদের একটি মেশিন-মেড ইটের ভাটা ছিল। ইটগুলো বেশ সুন্দর। ওই ইট দিয়েই চারুকলা ভবনের বাড়িগুলো নির্মাণ করি। মিস্ত্রিদের নিজ হাতে ইটের বন্ড ও গাঁথুনি কী হবে দেখিয়ে দেই। আমাদের দেশে প্রাচীনকাল থেকেই ইটের ব্যবহার ছিল। তাছাড়া পোড়ামাটির ফলক অতি সুন্দরভাবে ব্যবহৃত হয়। দিনাজপুরে কান্তজীর মন্দিরের টেরাকোটা অত্যন্ত সুন্দর। এসব ভেবে ইটে পলেস্তরা না করে পোড়া ইটের রং ও টেক্সচার যেমন আছে তেমন রেখে দিই। এভাবে পলেস্তরাহীন ইট আমিই বহুদিন পর এদেশে ব্যবহার করি। তাছাড়া বার্মা টিক ব্যবহার করি। বার্মার সেগুন আমাদের আর্দ্র জলবায়ুতে সহজে নষ্ট হয় না। ইট, কংক্রিট, কাঠ ও কাচের নিজস্ব গুণাগুণকে রক্ষা করে আমি পরিবেশের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করেই আমার স্থাপত্য রচনা করেছি।
সামসুল ওয়ারেস : বর্তমান সময়কে উত্তর-আধুনিককাল বলে অনেকে অভিহিত করেন। আধুনিক-উত্তর এ-সময়কে স্থাপত্যচর্চার পরিপ্রেক্ষিতে আপনি কীভাবে দেখেন?
মাজহারুল ইসলাম : আধুনিকতা বা উত্তর-আধুনিকতা – এগুলো শব্দমাত্র। এসব শব্দ স্থাপত্য-সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ কেনো ধারণা দেয় না বরং স্থাপত্যকে ছকে বেঁধে ফেলে। কখনো এসব শব্দ বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে। আমি এ-ধরনের শব্দদ্বারা স্থাপত্যকে বুঝতে বা বোঝাতে আগ্রহী নই। স্থাপত্যের মূল বিবেচ্য বিষয় হচ্ছে – যে-স্থানে স্থাপত্য নির্মাণ করা হবে তার ভৌগোলিক অবস্থান ও বিশেষত্ব, প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য, জলবায়ু, নির্মাণসামগ্রী, অবকাঠামো, সামাজিক মূল্যবোধ ও সময়। এসব বিবেচনায় রেখে একটা সৃজনশীল, সুন্দর ও আনন্দদায়ক পরিবেশ নির্মাণ করাই স্থাপত্যের মূল উদ্দেশ্য। এ-ধরনের সুন্দর স্থাপত্যে আমি আগ্রহী। এটা ‘আধুনিক’ নাকি ‘উত্তর-আধুনিক’ তা আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়।
সামসুল ওয়ারেস : অনেকে মনে করেন, স্থাপত্যচর্চাকে স্থপতির নিজস্ব নান্দনিক কর্মকাণ্ড হিসেবে না দেখে সামাজিক কর্মকাণ্ড হিসেবে দেখা আবশ্যক। এ-বিষয়ে আপনার বক্তব্য কী?
মাজহারুল ইসলাম : স্থাপত্যকলা-চর্চায় যদিও স্থপতির মেধা ও সৃজনশীলতার প্রশ্ন মুখ্য, তথাপি স্থাপত্য যেহেতু মানুষের বাস্তব প্রয়োজনে উপস্থাপিত হয়, সেজন্য স্থপতির সামাজিক দায়িত্ববোধ অত্যন্ত জরুরি বিষয়। স্থাপত্য যাদের জন্য নির্মিত হয় এবং যারা স্থাপত্য ব্যবহার করেন তাদের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ এবং আশা-আকাক্সক্ষা স্থাপত্যে যদি সঠিকভাবে প্রতিফলিত না হয় তাহলে ওই স্থাপত্য সার্থক হতে পারে না। স্থাপত্যচর্চাকে তাই অবশ্যই সামাজিক কর্মকাণ্ড হিসেবে বিবেচনা করা প্রয়োজন।
সামসুল ওয়ারেস : আধুনিক বা সমকালীন স্থাপত্যের সঙ্গে ঐতিহ্যগত স্থাপত্যের কোনো সংঘাত আছে কি?
মাজহারুল ইসলাম : আমাদের স্থাপত্য চিরকালই দেশের জলবায়ুর সাথে বোঝাপড়া করে গড়ে উঠেছে। রোদ-বৃষ্টি ও ঝড়-ঝাপটা ঠেকানো, ঘরের ভেতর দিয়ে বাতাস প্রবাহিত করা, গাছপালার সাহায্যে ছায়াময় অপেক্ষাকৃত শীতল খোলামেলা পরিবেশ তৈরি করা, ইত্যাদি বিবেচ্য বিষয়গুলো আমাদের দেশের স্থাপত্যে সর্বকালের জন্য প্রযোজ্য। তাছাড়া সামাজিক, ব্যবহারিক ও স্বাস্থ্যগত কারণে যেমন চারদিকে ঘর দিয়ে উঠান নির্মাণ, পুকুর কাটা, গাছপালা লাগানো, ফুলগাছ লাগিয়ে বাতাসে সুগন্ধ ছড়ানো, ইত্যাদি বিষয়গুলো বর্তমান সময়েও বিবেচ্য বিষয়। তাই প্রাচীন বা ঐতিহ্যগত স্থাপত্য থেকে সঠিক গবেষণালব্ধ মৌলিক বিষয়গুলো বর্তমানকালে স্থাপত্যের উৎকর্ষ বাড়াতে পারে। তাছাড়া আমাদের দেশের স্থাপত্য-সংস্কৃতির ধারাবাহিকতা রক্ষা করার জন্যও এসব গবেষণা ও পর্যবেক্ষণ অত্যন্ত জরুরি। বর্তমানের স্থাপত্য অতীত স্থাপত্যেরই বিবর্তন হিসেবে দেখা আবশ্যক। তাই আধুনিক স্থাপত্যের সঙ্গে ঐতিহ্যগত স্থাপত্যের কোনো সংঘাত থাকতে পারে না, বরং একে অন্যের সম্পূরক হিসেবেই উপলব্ধি করা প্রয়োজন।
সামসুল ওয়ারেস : চারুকলা ইনস্টিটিউটের পর আপনার প্রায় সব কাজেই বিশেষ করে চট্টগ্রাম ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়দুটির স্থাপত্যে ভবনগুলোর ‘ফর্ম’ বা গড়ন প্রাধান্য পেয়েছে। এ-কারণে আপনাকে ‘ফর্মালিস্ট’ বললে কি অত্যুক্তি হবে?
মাজহারুল ইসলাম : কোনো স্থপতির কাজকে কোনো একটি বিশেষণ বা একটি শব্দ দ্বারা চিহ্নিত করা অন্যায়। বিশ্ববিদ্যালয় দুটির কাজ শুরু করার আগে আমি আমাদের দেশ, ভারত ও 888sport app দেশের বিশ্ববিদ্যালয়-ক্যাম্পাসগুলো ঘুরে দেখি। ক্যাম্পাসের ভবনগুলোর মধ্যে প্রায় সবক্ষেত্রেই একটা আন্তঃমিল বা ঐক্যের অভাব দেখতে পাই। কিছু সুন্দর কিছু তত সুন্দর নয়, এমন নানাধরনের ভবন ক্যাম্পাসগুলোতে শৃঙ্খলাহীনভাবে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকতে দেখেছি। এ-কারণে আমি চট্টগ্রাম ও জাহাঙ্গীরনগর ক্যাম্পাসদুটিতে ভবনগুলোর মধ্যে একটা মেলবন্ধন বা ঐকতান সৃষ্টি করায় সচেষ্ট হই। নানাধরনের প্রয়োজনে ভবনগুলো ডিজাইন করা হলেও সবগুলো ভবনের মধ্যে একটা বলিষ্ঠ দৃশ্যমান চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য রক্ষা করি। ক্যাম্পাসের একপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত একটি সার্বজনীন স্থাপত্য-ভাষা ব্যবহার করার ফলে ঘনমাত্রার এক সামঞ্জস্যপূর্ণ স্থাপত্য রচিত হয়েছে বলে আমি মনে করি। পলেস্তরাবিহীন সিরামিক ইটের তৈরি দেয়াল ও ‘ওপেনিং’গুলোর আন্তঃমিল এই ভাষা রচনা করেছে। বিভিন্ন ভবনের সবধরনের বাস্তব চাহিদা পূরণ করে দেয়ালের গঠন ও আকৃতিগুলো নির্ধারিত হয়েছে। শুধুমাত্র নান্দনিক কারণে ‘ফর্ম’ তৈরি করার একপেশে উদ্দেশ্য নিয়ে এগুলো নির্মাণ করা হয়নি। আমাকে ‘ফর্মালিস্ট’ বলে আখ্যায়িত করা হলে আমার স্থাপত্য সম্পর্কে সংকীর্ণ ধারণাটাই প্রকট হবে।
সামসুল ওয়ারেস : আপনার স্থাপত্যে 888sport appsের জলবায়ু, সাইটের বৈশিষ্ট্য, নির্মাণসামগ্রী, নির্মাণ-কাঠামো ও নান্দনিক বিষয়গুলো যত প্রাধান্য পেয়েছে, আমাদের দেশের সংস্কৃতি কি ততটা সুযোগ পেয়েছে?
মাজহারুল ইসলাম : প্রাচীনকালে আমাদের অনেক শহর ছিল। বর্তমানে এগুলো কালের গর্ভে বিলুপ্ত। মহাস্থানগড়, পাহাড়পুর, ময়নামতি, ইত্যাদি প্রাচীন স্থাপত্যের ধ্বংসাবশেষ এবং কিছু প্রাচীন মন্দির-মসজিদ থেকে ওই শহরগুলোর স্থাপত্য ও পরিকল্পনা সম্পর্কে আমি সম্যক কোনো ধারণা করতে পারিনি। তবে এসব কাজে পোড়া ইটের ব্যবহার ছিল অবধারিত। এ-কারণে আমি পলেস্তরাবিহীন ইটকেই আমার স্থাপত্যকলার অভিব্যক্তি হিসেবে ব্যবহার করেছি। এভাবেই আমি আমার আধুনিকমনস্কতার স্থাপত্যকে আমার দেশের স্থাপত্য-সংস্কৃতির সাথে সম্পৃক্ত করেছি। প্রাচীন স্থাপত্যের অংশবিশেষ বা সম্পূর্ণ নকল করে কিছু তৈরি করা থেকে আমি সর্বদা বিরত থেকেছি। বরং আমাদের বাঙালি সংস্কৃতির একটি আধুনিক ও উন্নত ব্যাখ্যা-রচনায় আমি বেশি মনোযোগী থেকেছি।
সামসুল ওয়ারেস : 888sport apps স্বাধীন হওয়ার পর দীর্ঘসময় ধরে আপনি স্থাপত্য নির্মাণ করার তেমন কোনো সুযোগ পাননি। সরকার এবং সম্ভাব্য ক্লায়েন্টরা এ-ব্যাপারে উদাসীন সন্দেহ নেই, কিন্তু আপনিও যথেষ্ট এগিয়ে আসেননি বলে অনেকের ধারণা। আপনি কী বলেন?
মাজহারুল ইসলাম : 888sport apps স্বাধীন হওয়ার পরপরই আমি আমার স্বাধীনতাপূর্ব সময়ের অসম্পূর্ণ কাজগুলো পুনরুদ্ধার করতে সচেষ্ট হই। এসবের মধ্যে 888sport apps সরকারের অধীন চট্টগ্রাম ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় দুটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। কিন্তু কাজদুটি আমাকে দেওয়া হয়নি। আমি নাম বলতে চাই না, এদেশেরই কিছু স্থপতি আমি যাতে কাজগুলো ফিরে না পাই তার জন্য ঘোর চেষ্টা করেন। এমনকি আমার বকেয়া ফির বেশকিছু টাকাও আমাকে দেয়া হয়নি। তখন চরম আর্থিক সংকটের মধ্যে আমার দিনগুলো কেটেছে। 888sport apps স্বাধীন হওয়ার পর এ-পর্যন্ত আমি মাত্র দুটি সরকারি কাজ পেয়েছি। এগুলো হচ্ছে শেরেবাংলা নগরে ন্যাশনাল আর্কাইভস প্রকল্প ও জয়পুরহাটে চুনাপাথর প্রকল্পের হাউজিং। এরপরও আমি দু-একটি সরকারি কাজের চেষ্টা করি। যেমন, চট্টগ্রামে ‘কাফ্কো’ প্রজেক্টের হাউজিং। আমি যথেষ্ট চেষ্টা করেও কাজটি পাইনি। পরে জানতে পারি বড় ধরনের দুর্নীতির মাধ্যমেই কাজগুলো অন্যদের দেয়া হয়। এসব জেনে আমি সরকারি কাজের ব্যাপারে সব উৎসাহ হারিয়ে ফেলি। ব্যক্তি-মালিকানায়ও একটি কাজ পাই, কিন্তু ক্লায়েন্টের বিশেষ মানসিকতার কারণে কাজটি ধরে রাখতে পারিনি।
সামসুল ওয়ারেস : আমাদের দেশের স্থাপত্যের সঙ্গে পশ্চিমের উন্নত দেশগুলোর স্থাপত্যের মূল পার্থক্য কোথায়?
মাজহারুল ইসলাম : এ-প্রশ্নের উত্তর হঠাৎ করে দেওয়া বেশ কঠিন। তবে খুব সাধারণভাবে বলা যেতে পারে যে, পশ্চিমের দেশগুলোতে জলবায়ু যথেষ্ট বৈরী হওয়ায় ওই দেশগুলোর স্থাপত্য অন্তমুর্খী, বিশেষ করে শীতের প্রকোপ থেকে বাঁচতে ওরা ঘরের ভেতর আগুন জ্বালিয়ে, জানালা-দরজা বন্ধ করে বদ্ধ অবস্থায় থাকে। তবে ভালো আবহাওয়ায় তারা বাইরের জায়গা যথেষ্ট ব্যবহার করে। আধুনিককালে প্রযুক্তির বড় ধরনের উন্নতি হওয়া সত্ত্বেও পশ্চিমের স্থাপত্য মূলত অভ্যন্তরীণ স্পেসনির্ভর। আমাদের দেশের জলবায়ু ততটা বৈরী নয় বরং কোনো কোনো ঋতু মনোরম আকার ধারণ করে বলে আমাদের স্থাপত্যে ঘরের ভেতর ও বাহির সমান গুরুত্ব পায় এবং খোলামেলা পরিবেশ তৈরি করে। বিশেষ করে প্রশস্ত বারান্দা ঘরের ভেতর ও উঠানের মধ্যে সুন্দর সম্পর্ক তৈরি করে। আমাদের লোকেরা ঘরের ভেতর, বারান্দা ও উঠান সমানভাবে উপভোগ করে। বিলেতি সাহেবরাও এদেশের জলবায়ু নিরিখ করে ঘরের চারদিকে প্রশস্ত বারান্দা তৈরি করে ‘বাংলো’ বাড়ি তৈরি করেছিল। আমাদের দেশে শহরের বাড়িগুলোতেও এ-খোলামেলা ভাবটি থাকা আবশ্যক।
সামসুল ওয়ারেস : আপনি সমাজতন্ত্রচর্চার মাধ্যমেই সমাজ ও দেশকে সঠিক ও সুন্দরভাবে গড়ে তোলা সম্ভব বলে বিশ্বাস করেন। এমতাবস্থায় সোভিয়েত রাশিয়াতে যে-স্থাপত্য গড়ে উঠেছিল তা আপনি সুন্দর বলে মনে করেন কি?
মাজহারুল ইসলাম : সমাজতন্ত্র একটি রাজনৈতিক পদ্ধতি। এ-পদ্ধতিতে সত্যিকার অর্থে মানুষের আর্থ-সামাজিক সম-অধিকার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। স্থাপত্য হচ্ছে অনুভূতিপ্রবণ সৃজনশীল কর্মকাণ্ড। কোনো রাজনৈতিক পদ্ধতিই সম্পূর্ণ এককভাবে সৃজনশীল বিষয়ের নিয়ন্ত্রণ বা উৎকর্ষ সাধনে সক্ষম নয়। সুন্দর স্থাপত্যের জন্য প্রয়োজন সৃজনশীল স্থপতি ও সঠিক শিক্ষাক্রমের। সোভিয়েত রাশিয়ায় আমি এমন কিছু বাড়িঘর দেখেছি যা যুক্তরাষ্ট্রের কিছু ঘরবাড়ির সাথে হুবহু মিলে যায়। তবে সোভিয়েত রাশিয়া রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্ভবত নান্দনিক স্থাপত্যের চেয়ে বাস্তবমুখী স্থাপত্যের প্রতি অগ্রাধিকার দিয়েছিল। সোভিয়েত ইউনিয়নে সারাবছরে বসবাসের জন্য যে ঘরবাড়ি নির্মাণ করা হতো তা সমগ্র পশ্চিম ইউরোপের সারাবছরে বসবাসের জন্য নির্মিত ঘরবাড়ির চেয়ে অনেক বেশি ছিল। ১৯৫২ সালের মধ্যে সোভিয়েত ইউনিয়ন সকল নাগরিককে বসবাসের জন্য বাড়ির ব্যবস্থা করতে সমর্থ হয়েছিল। ১৯৫২ সালের পর তারা সবাইকে আরো ভালো বাড়ি দেওয়ার প্রতি মনোযোগী হয়। সোভিয়েত ইউনিয়নে শহর-পরিকল্পনা অত্যন্ত উন্নতমানের ছিল। সেখানে অনেকগুলো সম্পূর্ণ নতুন শহরও নির্মাণ করা হয়েছিল। তাদের শহর-পরিকল্পনা-পরিবেশের প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা ও ইতিহাস-সংরক্ষণে বিশেষ যত্নবান ছিল।
সামসুল ওয়ারেস : আপনার স্থাপত্য ও পরিকল্পনা-বিষয়ক চিন্তাধারা আদর্শবাদী ও ‘ইউটোপিয়ান’, যা বাস্তবে অনুশীলন করা কখনোই সম্ভব নয় বলে অনেকে মনে করেন। আপনার মত কি?
মাজহারুল ইসলাম : একটি দেশকে সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে হলে সুদূরপ্রসারী, সামগ্রিক ও ব্যাপক পরিকল্পনার প্রয়োজন। দেশের শহর-বন্দর-গ্রাম, রাস্তাঘাট, নদীনালা-জলাশয়, বন-জঙ্গল-হাওড়, পাহাড়-পর্বত, কৃষিজমি, বন্যা-ঝড় ইত্যাদি সবকিছুর ভৌত পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনায় দেশকে উৎপাদনমুখী, প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা ও মানুষের জীবনযাপনের মানের উন্নতি সাধন করা সম্ভব। খণ্ড খণ্ড বা পিস্মিল পরিকল্পনা সাময়িকভাবে সফলতা অর্জন করতে পারে, কিন্তু পরিণামে অনর্থও ঘটায়। তাই আমি সুদূরপ্রসারী (লংটার্ম) সামগ্রিক পরিকল্পনার পক্ষে সবসময় রায় দিয়েছি। সামগ্রিক পরিকল্পনার জন্য ব্যক্তি-স্বার্থের ঊর্ধ্বে গণমুখী ও সাহসী অবস্থান প্রয়োজন। বর্তমানে আমাদের দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক অবস্থা এ-ধরনের অবস্থান নিতে নৈতিকভাবে অপারগ। এ-কারণে সামগ্রিক (কম্প্রিহেন্সিভ) পরিকল্পনার প্রতি প্রতিটি সরকারের অনীহা লক্ষ করা যায়। অনেক ব্যক্তিবিশেষও জ্ঞান এবং নৈতিক সাহসের অভাবে এ-ধরনের সামগ্রিক পরিকল্পনাকে অবাস্তব বলতে পেরে স্বস্তিবোধ করেন। এখানে দূরদৃষ্টি (ভিশন), সততা ও দেশপ্রেমের প্রশ্ন জড়িত। তাছাড়া বহুকাল ধরে ‘যখন যা তখন তা’ ধরনের খণ্ডিত পরিকল্পনায় আমাদের দেশ অভ্যস্ত। এসব কিছু মিলিয়ে যে-কোনো আদর্শবাদী চিন্তাধারাকেই ‘ইউটোপিয়া’ বা অবাস্তব বলার প্রবণতা আমাদের দেশে বিরাজ করছে।
সামসুল ওয়ারেস : নবীন ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্থপতিদের জন্য আপনার উপদেশ জানতে চাই। মাজহারুল ইসলাম : স্থাপত্যের মূল বিষয় এর শৈল্পিক গুণাবলি। স্থাপত্যের যে ব্যবহারিক দিক আছে তা মাপা যায় – যেমন, বাস্তব চাহিদা, জলবায়ুর সাথে বোঝাপাড়া, সাইটের সুবিধা-অসুবিধা ইত্যাদি, কিন্তু স্থাপত্যের শৈল্পিক অভিব্যক্তি মাপা যায় না। এটা নির্ভর করে স্থপতির মেধা, অনুভূতি ও সৃজনশীলতার ওপর। এজন্য স্থপতির পুঁথিগত বিদ্যা যথেষ্ট নয়। তাকে সৃজনশীল হতে হয়। তাকে দেশের মাটি, সংস্কৃতি, মানুষ, ইত্যাদিকে যেমন ভালোবাসতে হয় তেমনি এসব নিয়ে গভীরভাবে ভাবতে হয়। দেশের প্রতি তার একান্ত ভালোবাসাই তার সৃজনশীলতার শক্তি জোগায়, তাকে যথার্থ স্থপতিতে পরিণত করে।


Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.