ভূঁইয়া ইকবাল
888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ের সূচনালগ্নে ২ জুন ১৯২১-এ মুহম্মদ শহীদুল্লাহ বাংলা ও সংস্কৃত বিভাগে লেকচারার পদে যোগ দেন। তেইশ বছর পরে ১৯৪৪-এর ৩০ জুন বাংলা বিভাগের রিডার ও বিভাগীয় প্রধানের পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেন। ১৯৪৮ সালে নভেম্বরে আবার বাংলা বিভাগের 888sport free betতিরিক্ত অধ্যাপক পদে যোগ দেন। ১৯৫২ সালে প্রফেসর পদ লাভ করেন ও বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৩৭ থেকে ১৯৪৪ পর্যন্ত বাংলা বিভাগে তাঁর অধ্যক্ষতার আমলে যে পাঠক্রম ও পাঠ্যসূচি তৈরি করেন, বিশেষ করে ১৯৫২ সালে দ্বিতীয় লপ্তে অধ্যক্ষতাকালে কমিটি অব কোর্সেস অ্যান্ড স্টাডিজের সভায় গৃহীত সিলেবাস সম্পর্কে সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত কয়েকজন পূর্ব পাকিস্তানি (তৎকালে পূর্ববঙ্গীয়) লেখক প্রতিবাদী ও সমালোচনামুখর হয়ে ওঠেন। সদ্য প্রতিষ্ঠিত পাকিস্তান-উদ্দীপনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (উচ্চমাধ্যমিকসহ) পাঠ্যতালিকাভুক্ত লেখক হতে যাঁদের আকাঙ্ক্ষা ছিল তাঁরা দৈনিক আজাদ, দৈনিক জিন্দেগী ও কবি গোলাম মোস্তফার মাসিক নও-বাহার পত্রিকায় বেনামে প্রতিবাদপত্র প্রকাশ করতে থাকেন। তাঁদের সমালোচনার লক্ষ্য ছিলেন ডক্টর শহীদুল্লাহ, হয়তো ব্যক্তি হিসেবে নন, বাংলা বিভাগের অধ্যক্ষরূপে। সেকালে প্রচলিত পাঠ্যবইয়ে যুক্তিগ্রাহ্য কারণেই বাংলা 888sport live footballের যে-সব লেখকের রচনা বা বই পাঠ্য ছিল, তার অধিকাংশই (বর্তমানকালেও) অমুসলমান লেখক ছিলেন। পাকিস্তানের অভ্যুদয়ের পরে কয়েকজন লেখক যতটা না দ্বিজাতিতত্ত্বের প্রতি অঙ্গীকারবশত ততোধিক নিজেদের বই পাঠ্য করাতে গণেশচরণ বসু ও শহীদুল্লাহর বিরুদ্ধে সমালোচনা করতে থাকেন। ক্রুদ্ধ, ক্ষুব্ধ শহীদুল্লাহ ‘888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ’ শিরোনামে যে প্রতিবাদপত্র লিখেছেন, তার একটি পান্ডুলিপি তাঁর কাগজপত্রের মধ্যে পাওয়া গিয়েছে। তবে এটির প্রকাশনা সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যায়নি।প্রসঙ্গটি সবিস্তারে আলোচনা করেছেন আবুল ফজল তাঁর 888sport sign up bonusচারণমূলক রেখাচিত্র (ভূমিকার তারিখ ১৯৬৫) গ্রন্থে। জিন্দেগী পত্রিকার চিঠির দুষ্পাঠ্য প্রথম খসড়া তাঁর কাগজপত্রের মধ্যে একটি বাঁধাই করা খাতায় আছে। ডক্টর শহীদুল্লাহর রচনাটির পরিপূর্বক বিবেচনায় আবুল ফজলের দীর্ঘ 888sport sign up bonusচারণ পুরোটাই উদ্ধৃতিযোগ্য :
…পাকিস্তান হয়েছে অথচ 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যতালিকায় ঘটেনি কোন রদবদল। পাকিস্তানের মুসলমানরা স্বভাবতই এখন নিজেদের জীবনের কিছুটা প্রতিফলন পাঠ্যতালিকায়ও দেখতে চায়। কিন্তু তা হয়নি, উল্টো নতুন করে পাঠ্যতালিকাভুক্ত হয়েছে বঙ্কিমচন্দ্রের ‘বিবিধ 888sport live’ আর ঐ গ্রন্থের এমন সব রচনাগুলোও যাতে লেখক মুসলমান আর মুসলিম ইতিহাস সম্বন্ধে যথেষ্ট কটুকথা বলেছেন – এ ব্যাপারে মুসলমান সমাজের মনোভাব কারো অজানা থাকার কথা নয়। ডক্টর মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ সাহেব তখন বাংলা বিভাগের সুপারনোমারি অধ্যাপক (পাকাপাকি অধ্যাপকও হতে পারেন), তাঁকে এ সম্পর্কে আমি একখানা ব্যক্তিগত চিঠি লিখে অনুরোধ জানালাম – মুসলমানের আবেগ অনুভূতি, ধ্যানধারণা আর রুচিতে যে সব রচনা আঘাত হানার সম্ভাবনা রয়েছে তা এখন পাঠ্য তালিকা থেকে বাদ দেওয়াই উচিত। আর উচিত এখন থেকে মুসলমান লেখকদের কিছু কিছু বই পাঠ্য তালিকাভুক্ত করা। তা হলেই পাকিস্তান হাসিলের সঙ্গে রক্ষিত হবে সংগতি আর মুসলমানদের নিজস্ব সাংস্কৃতিক চেতনাও পাবে কিছুটা তৃপ্তি।
পরের বৎসরও যখন পাঠ্য তালিকায় কোন রদবদল দেখা গেলো না তখন আমি ‘জিন্দেগী’ পত্রিকায় লিখে বসলাম বেনামীতে এক দীর্ঘ 888sport live। ‘জিন্দেগী’ তখন কাজী আফসার উদ্দিনের সম্পাদনায় 888sport app থেকে প্রকাশিত হচ্ছিল। উক্ত 888sport liveে আমার বক্তব্যের সপক্ষে দিয়েছিলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্য বই থেকে প্রচুর উদ্ধৃতি। মনে করলাম আমার কর্তব্য এখানেই শেষ।
বেশ কিছুকাল কেটে গেলো চুপচাপ। আমিও ভুলে বসেছি ঐসব কথা। প্রায় মাস ছয় পরে হঠাৎ একদিন দেখতে পেলাম ‘জিন্দেগী’তে প্রকাশিত আমার 888sport liveটাকে ভিত্তি করে করাচীর ‘ডন’ পত্রিকায় ‘Believe it or not’ – এ শিরোনামায় দারুণ কড়া ভাষায় এক প্রধান সম্পাদকীয় লেখা হয়েছে। শুধু সম্পাদকীয় নয়, পাশাপাশি আমার পুরো লেখাটার 888sport app download apk latest versionও হয়েছে প্রকাশিত।
এবার 888sport appর উচ্চ মহলে শুরু হলো তোলপাড়! কে এ অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম? তখন সিলেটের মরহুম আবদুল হামিদ শিক্ষামন্ত্রী, ভাইস-চ্যান্সেলার ডক্টর মোয়াজ্জেম হোসেন আর শিক্ষা-দফতরের সেক্রেটারী সে স্বনামধন্য এফ. এ. করিম। ‘ডন’ সম্পাদক আলতাফ হোসেনের ইংরেজি ভাষায় কলমের জোর অনেকেরই জানা – মন্ত্রী থেকে আরম্ভ করে সংশ্লিষ্ট সবাইকে তিনি তুলোদুনো করে ছেড়েছেন।
কাজী আফসারউদ্দীন আর আলতাফ সাহেব আত্মীয়। সে সুযোগেই বোধ করি এক কপি করে ‘জিন্দেগী’ আলতাফ সাহেবের নামে করাচী পাঠানো হতো। এর ফলেই নেহাৎ অপ্রত্যাশিত ভাবে আমার বেনামী লেখাটার উপর তাঁর নজর পড়ে। ‘Believe it or not’ এরই নতিজা। এবার শিক্ষা দফতর আর বিশ্ববিদ্যালয় মহলে একমাত্র প্রশ্ন হয়ে দাঁড়ালো : কে এই অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম? এমনভাবে আমাদের সকলের চোখের ঘুম আর চাকুরির শান্তি নষ্ট করলো কে এ পাষন্ড? বাংলা ভাষা আর 888sport live footballের সঙ্গে পরিচয় আছে ঐ নামের কোন অধ্যাপককে পাওয়া গেলো না কোথাও খুঁজে।
হঠাৎ এ সময় ডক্টর শহীদুল্লাহ সাহেব থ’লের মুখটা দিলেন খুলে – বেরিয়ে পড়লো বিড়াল ছানা! তিনি বলে দিলেন : কয়েক মাস আগে আবুল ফজল এ মর্মে আমাকে এক চিঠি লিখেছিলেন, এ 888sport liveের অনেক কথাই সে চিঠির সঙ্গে হুবহু মিলে যাচ্ছে। এমন কি কোন কোন উদ্ধৃতিও। এ ওর লেখা ছাড়া আর কারো হতে পারে না।
এ ভাবে সেদিন অন্ধকারে ভূত তালাসের সমাপ্তি ঘটেছিল।
ভাইস-চ্যান্সেলার ডক্টর মোয়াজ্জেম হোসেন আমার বন্ধু আবদুল হক ফরিদীকে নাকি দুঃখ করে বলেছিলেন, আবুল ফজল সাহেব এমন কান্ড করে বসবেন এ তো আমরা ভাবতেই পারিনি। তাঁকে তো আমরা খুব ভালো মানুষ বলেই জানতাম।
আশ্চর্য খারাব কাজটা আমি কি করলাম তা আর কেউ একটু ভেবেও দেখলেন না।
আমার এ লেখার পর, না, আমার লেখার জন্য নয়, ‘ডনের’ সম্পাদকীয়ের ফলেই, বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্য তালিকায় এবার কিছু কিছু রদবদল শুরু হলো। আপত্তিকর লেখাগুলো ধীরে ধীরে স্থানচ্যুত হলো আর স্থান দেওয়া হলো কায়কোবাদ, নজরুল ইসলাম, শাহাদত হোসেন, জসীমউদ্দীনকে। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যতালিকায় নজরুলেরও ছিল না পাত্তা। জাতীয় মানস গঠনের যুগে বিদেশী ভাবধারার চেয়ে স্বদেশী ভাবধারায় পুষ্ট মাঝারি রচনাও অনেক মূল্যবান। এ বিশ্বাস আমার মনে আজো অটুট।
888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা পাঠ্যবই, কথিত মুসলিমবিরোধী মনোভাব, ডক্টর শহীদুল্লাহর হিন্দু ও ভারতপ্রীতি, কৌশল হিসেবে রাষ্ট্রভাষারূপে বাংলা ও উর্দুর কোনটিকে সমর্থন না করে আরবির প্রতি কথিত সমর্থন (তিনি যে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি প্রথমেই উত্থাপন করেছিলেন, উল্লেখ না করে), বাংলা বিভাগে যোগ্যতর শিক্ষক নিয়োগ না-করা, আরবির সমর্থক হওয়ায় তরুণ গবেষক সুলতান আহমদ ভূঁইয়াকে পান্ডুলিপি-পাঠ শিক্ষক নিয়োগ না করা, গোলাম মোস্তফার বিশ্বনবী, আবদুল করিম 888sport live footballবিশারদ ও ড. মুহম্মদ এনামুল হকের যৌথ রচনা আরকান রাজসভায় বাঙালা 888sport live football, মুহম্মদ মনসুরউদ্দীনের হারামণি, আবুল ফজলের নাটক কায়েদে আজম, কায়কোবাদের মহাশ্মশান মহাকাব্য ইত্যাদি পাঠ্যতালিকাভুক্ত না করায় এবং শহীদুল্লাহর জন্মস্থান ভারত হওয়ার সমালোচনা করে লেখা কয়েকটি দুষ্প্রাপ্য ও অপূর্বপ্রচারিত চিঠি ও প্রতিবাদপত্র, নও-বাহারের সম্পাদকীয় ইত্যাদি এখানে গ্রথিত হলো। এসকল উপাদানের মধ্যে রয়েছে :
১। জিন্দেগীতে প্রকাশিত অধ্যাপক সিরাজুল ইসলামের বেনামে আবুল ফজলের চিঠির খসড়া – ‘888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ের মুসলমান-বিরোধী মনোভাব’ (১৯৪৮) ও এই রচনা বিষয়ে রেখাচিত্রের প্রাসঙ্গিক অংশ (১৯৬৬)।
২. দৈনিক আজাদ ও মাসিক নও-বাহারে প্রকাশিত 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ ও ড. শহীদুল্লাহর সম্পর্কে সমালোচনার প্রতিবাদে শহীদুল্লাহ-কৃত চিঠির খসড়া (প্রকাশস্থল ও তারিখ অপরিজ্ঞাত)।
৩. গোলাম মোস্তফার স্ত্রী মাহফুজা খাতুন কর্তৃক সম্পাদিত মাসিক নও-বাহারের (চৈত্র ১৩৫৯) সম্পাদকীয় (সুলতান আহমদ ভূঁইয়া কর্তৃক সবরাহকৃত অর্ধসত্য তথ্য-অবলম্বনে, অনুমান করি)।
৪. ডক্টর শহীদুল্লাহকে লেখা গোলাম মোস্তফার ব্যক্তিগত ও অপ্রকাশিত পত্র (২ জুলাই ১৯৫৩); এই পত্রে 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা সিলেবাস বিষয়ে দৈনিক আজাদে প্রকাশিত বিস্তৃত আলোচনার এবং নও-বাহারে প্রেরিত শহীদুল্লাহর প্রতিবাদপত্রের জবাব দিয়েছেন কবি গোলাম মোস্তফা।
শহীদুল্লাহর ও গোলাম মোস্তফার চিঠি দুটির নকল পেয়েছি মুর্তজা বশীরের কাছে রক্ষিত পারিবারিক কাগজপত্র থেকে, আবুল ফজলের চিঠির দুষ্প্রাপ্য খসড়া পেয়েছি বন্ধু আবুল মোমেনের সৌজন্যে। এসব উপকরণ সম্পর্কে একটি বিষয় আজকের পাঠকদের সবিশেষ বিবেচনাযোগ্য। প্রায় দুশো বছরের ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে দীর্ঘ স্বাধীনতা-আন্দোলন এবং দ্বিজাতিতত্ত্বের ফসল পাকিস্তানের অভ্যুদয়ের পর প্রথম অর্ধযুগে এসব রচিত। সদ্য আজাদ পাকিস্তানে রাজনীতিক ও আমজনতার মতো লেখকেরাও নতুন দেশে নতুন 888sport live football-সংস্কৃতিচর্চার কথা ভেবেছিলেন। আত্মবিকাশের তাড়নায় ও দ্বিজাতিতত্ত্বের প্রতি অঙ্গীকারবশত লেখকেরাও পাকিস্তানের প্রথম কয়েক বছর, বিশেষ করে ১৯৫৪-এর যুক্তফ্রন্টের বিপুল বিজয়ের আগে পর্যন্ত ‘পাকিস্তানি সংস্কৃতি’র প্রতি মোহগ্রস্ত ছিলেন। সেই দ্বন্দ্বমুখর পরিবেশের কিছুটা আভাস পাওয়া যাবে এখানে সংগৃহীত রচনাসমূহে। আবুল ফজলের ১৯৬৫ সালে লেখা 888sport sign up bonusচারণের একটি বাক্য এসব প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যেতে পারে : ‘জাতীয় মানস গঠনের যুগে বিদেশী ভাবধারার চেয়ে স্বদেশী ভাবধারায় পুষ্ট মাঝারি রচনাও অনেক মূল্যবান। এ বিশ্বাস আমার মনে আজো অটুট।’
বাদ-প্রতিবাদের ক্ষেত্রে কেউ কেউ 888sport live footballিক বিচারে পথভ্রষ্ট হয়েছিলেন, তার সাক্ষ্য দেবে এসব রচনা। তবে আবুল ফজলের সংস্কৃতি-ভাবনা পূর্বাপর একরকম ছিল না। তাঁর মতের পরিবর্তন হয়েছিল, একথাও 888sport app download for androidযোগ্য।
১৯৫২ সালে 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রধান ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ যে অসাম্প্রদায়িক, প্রগতিশীল ও ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছিলেন, তা 888sport apk download apk latest versionর সঙ্গে 888sport app download for androidীয়।
‘888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা অনার্স শ্রেণীর পাঠক্রম : ১৯২১-৯৫’ 888sport liveে ডক্টর সাঈদ-উর রহমান উল্লেখ করেছেন যে, 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯৪৯-৫০ শিক্ষাবর্ষের বার্ষিক রিপোর্টে বলা হয়েছে ‘The Syllabuses are being adjusted to the new set up.’ (দেখুন, সাঈদ-উর রহমান, 888sport live football-সংস্কৃতির উদার প্রান্তরে, 888sport app : মৌলি প্রকাশনী ২০০২, পৃ ১২৮)।
888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ের মুসলমান-বিরোধী মনোভাব
আবুল ফজল
আমাদের এই রচনার শিরোনাম পড়িয়া অনেকেই যে তাজ্জব হইবেন তাহাতে কোন সন্দেহ নাই। কিন্তু কথাটা সম্পূর্ণ এবং ষোলআনাই সত্য। অখন্ড ভারত বা অখন্ড বাংলায় মুসলমানদের একটি বড় অভিযোগ ছিল – ‘হিনদু সংস্কৃতি, ইসলামবিরোধী পৌত্তলিক মনোভাবপূর্ণ 888sport live football মুসলমানদের উপর জোর করিয়া চাপানো হইয়াছে। এই অভিযোগ লইয়া মুসলমান সমাজ কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধেও কম আন্দোলন করে নাই।’ মুসলমানদের পাকিস্তান দাবির মূলেও সক্রিয় প্রেরণা জোগাইয়াছিল এই অভিযোগ। এই বিষয়ে বোধ করি কাহারো মনে কোন সন্দেহ নাই। আজ পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা হইয়াছে, পাকিস্তান রাষ্ট্রের আয়ু দ্বিতীয় বৎসরে পদার্পণ করিয়াছে। পূর্ব পাকিস্তানে 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ই একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়। পূর্ববঙ্গে মুসলমানদের তমদ্দুনিক, সাংস্কৃতিক ও 888sport live footballিক জীবন ও আদর্শ গঠনের একমাত্র এই বিশ্ববিদ্যালয়েরই। কিন্তু বড়ই পরিতাপের বিষয়, 888sport app বিশ্ববিদ্যালয় এই দায়িত্ব সম্বন্ধে কোনদিন সচেতন ছিলেন না এবং কোনদিন পালন করেন নাই। আজও সেই দায়িত্বকে (পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পরও) কিভাবে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠি প্রদর্শন করিতেছে তাহার একটি মাত্র দৃষ্টান্ত আপনাদের সামনে পেশ করিতেছি।
দেশের ভাষা ও 888sport live football হইতেছে দেশের ও জাতির সাংস্কৃতিক জীবনের প্রতিনিধি। দেশের ভবিষ্যৎ বংশধরগণ স্বদেশের ভাষা ও 888sport live footballেই পাইয়া থাকে জীবন ও জাতীয়তার প্রেরণা ও আদর্শ। 888sport app বিশ্ববিদ্যালয় পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ নাগরিকদের সামনে সেই আদর্শ কিভাবে স্থাপন করিয়াছেন তাহা একবার দেখুন। – সম্প্রতি 888sport app বিশ্ববিদ্যালয় তাহাদের বাংলা বিভাগের সিলেবাস প্রচার করিয়াছেন। এই সিলেবাস দেখিয়া আমাদের চক্ষু ত চড়ক গাছ, কাশী বিশ্ববিদ্যালয় বলিয়া যে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়কে আমরা বহুদিন গাল দিয়া আসিয়াছি সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেবাসও এত মুসলিম-বিরোধী নহে। সেই বিশ্ববিদ্যালয়েও চির মুসলিমবিদ্বেষী বঙ্গিমচন্দ্রের, যে বঙ্কিমচন্দ্র ‘যবন’ ছাড়া মুসলমানদের অভিহিত করেন নাই, এতগুলি বই একসঙ্গে পাঠ্য করেন নাই। 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ের বি.এ. পরীক্ষায় (বিভিন্ন বিভাগে) বঙ্কিমচন্দ্রের নিম্ন বইগুলি পাঠ্য করিয়াছে : কৃষ্ণকান্তের উইল, বিষবৃক্ষ, চন্দ্রশেখর, কমলাকান্তের দপ্তর ও বিবিধ 888sport live।
মুসলমানদের সম্বন্ধে বঙ্কিমচন্দ্রের মনোভাব কি কারো অবিদিত আছে? 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্য তাঁহার বিবিধ 888sport liveের দুই একটি … মন্তব্য শুনুন।
‘(বাংলার ইতিহাস [ইতিহাস সম্বন্ধে কয়েকটি কথা], যে সকল মুসলমান বাঙ্গালার বাদসাহ, বাঙ্গালার সুবাদার ইত্যাদি নিরর্থক উপাধি ধারণ করিয়া, নিরুদ্বেগে শয্যায় শয়ন করিয়া থাকিত, তাহাদিগের জন্ম মৃত্যু গৃহবিবাদ এবং খিচুড়ী ভোজন মাত্র।’ (পৃ ৩২১)
‘আত্মজাতি গৌরবান্ধ, মিথ্যাবাদী, হিন্দুদ্বেষী মুসলমানের কথা যে বিচার না করিয়া ইতিহাস বলিয়া গ্রহণ করে, সে বাঙালী নয়। ২ : ৩২১… সেই গোহত্যাকারী, ক্ষোরিতচিকুর, মুসলমানের স্বকপোলকল্পনের উপর তোমার বিশ্বাস ‘সপ্তদশ অশ্বারোহী লইয়া বখতিয়ার খিলজি বাঙালা জয় করিয়াছিল, একথা যে বাঙালীতে বিশ্বাস করে, সে কুলাঙ্গার। (পৃ ৩২২)
‘আমার কথায় বিশ্বাস না হয়, গোহত্যাকারী ক্ষোরিতচিকুর, মুসলমানদের লিখিত সএর মুতাখ্খরীন্ নামক গ্রন্থ পড়িয়া দেখ।’
‘বাঙ্গালার ইতিহাস নাই, যাহা আছে তাহা ইতিহাস নয়, তাহা কতক 888sport alternative link, কতক বাঙ্গালার বিদেশী বিধর্ম্মীর পড়পীড়কদিগের জীবনচরিত মাত্র। (পৃ ৩২২)
বলা বাহুল্য, এইসব মন্তব্যই মুসলমানদের লক্ষ্য করিয়া করা হইয়াছে! এইসব মন্তব্য এবং এই ধরনের মুসলমানবিদ্বেষপূর্ণ মন্তব্য তিনি লিখিয়াছেন। 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ের কল্যাণে তাহাই পাকিস্তানের মুসলমান ছাত্রদের পড়িতে হইবে! সিলেবাসের আগাগোড়া মুসলমান 888sport live footballিকদের নামগন্ধ কোথাও নেই, শুধু কায়কোবাদের অশ্রুমালা ও ড. শহীদুল্লার একটি স্কুলপাঠ্য ব্যাকরণের নাম ছাড়া। 888sport app বিশ্ববিদ্যালয় গোটা মুসলমান সমাজকে কীভাবে লাঞ্ছিত করিয়াছে তাহার আর একটি দৃষ্টান্ত দিতেছি। বি. এ. পরীক্ষার জন্যে কামিনী রায়ের ‘আলো ও ছায়া’ এবং সত্যেন দত্তের কুহু ও কেকা পাঠ্য হইয়াছে! অথচ নজরুল ইসলাম বা জসীমউদ্দীন, শাহাদাৎ হোসেন বা গোলাম মোস্তফা কারো কোন বই পাঠ্য করে নাই। 888sport appsে এমন আহম্মক কী কেউ আছে যে নজরুল ও জসীমউদ্দীন হইতে কামিনী রায় ও সত্যেন দত্তকে বড় কবি বলিয়া স্বীকার করিবেন? ‘মেঘনাদবধ’ কাব্য রাম-রাবণের লড়াই আমাদের পড়িতে হইবে অথচ মহাশ্মশানের দুই সর্গ পড়া হইবে না! মোহিতলাল মজুমদার-সম্পাদিত ‘কাব্যমঞ্জুষা’ পাঠ্য হইয়াছে অথচ ড. এনামুল হক-সম্পাদিত ‘কাব্যকুঞ্জ’ বা রেজাউল করীম ও আবদুল কাদির-সম্পাদিত ‘কাব্যমালঞ্চ’ পাঠ্য করা হয় নাই! ইহা কী মুসলেম বিদ্বেষ নহে? আর ‘কাব্যমঞ্জুষা’ হইতে বাছিয়া বাছিয়া হিন্দু লেখকদের হিন্দু ভাবাপন্ন 888sport app download apkগুলিই পাঠ্যতালিকাভুক্ত করা হইয়াছে। সেই গ্রন্থ হইতেও মুসলমান কবিদের রচনা (একটি কি দুটি ছাড়া) পাঠ্য করা হয় নাই! 888sport live footballবিশারদ আবদুল করিম ও ড. এনামুল হক-সম্পাদিত আরকান রাজসভায় বাংলা 888sport live football এত মূল্যবান গ্রন্থ যে তাহা প্রকাশিত হওয়ার পর ডা. সুনীতিকুমার তাঁহার ‘ভাষাতত্ত্বের ভূমিকা’ বইতে সংশোধনী পরিচ্ছেদ যোগ করিতে বাধ্য হইয়াছেন। বাংলা 888sport live footballের একাধিক বিশেষজ্ঞ এই বইটির মূল্যবান অবদান সম্বন্ধে মন্তব্য করিয়াছেন, নিজেদের মতামত পর্যন্ত সংশোধন করিয়াছেন! অথচ সেই বইটিও পাঠ্যতালিকাভুক্ত করা হয় নাই। বৈষ্ণব পদাবলী, শ্রীকৃষ্ণকীর্ত্তন, গীতগোবিন্দ, চন্ডীমঙ্গল, ধর্ম্মমঙ্গল, সারদামঙ্গল সবই 888sport app বিশ্ববিদ্যালয় দয়া করিয়া পাঠ্য করিয়াছেন অথচ মনসুরউদ্দীনের ‘হারামনি’ (কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় সেই গ্রন্থের প্রকাশক) পাঠ্য তালিকাভুক্ত করা হয় নাই! ইহাকেও মুসলেম বিদ্বেষ বলিব না ত কী বলিব? জনা, কৃষ্ণকুমারী, পুরুবিক্রম ইত্যাদি সম্পূর্ণ হিন্দু ভাবাপন্ন নাটক পাঠ্য করা হইয়াছে অথচ… ও পাকিস্তানের পক্ষে সম্পূর্ণ উপযোগী নাটক পাঠ্যতালিকাভুক্ত করা হয় নাই!
আমাদের হিন্দু ভাইরা অত্যন্ত রসিক – তাই তাঁহারা রসিকতা করিয়া এক সময় 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়কে মক্কা বিশ্ববিদ্যালয় বলিয়া আখ্যায়িত করিতেন। এখনো করেন কিনা জানি না। কিন্তু সেই রসিকতার আড়ালে তাঁহারা 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়কে কী ভাবে সম্পূর্ণ বর্ণহিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত করিয়াছেন তাহা উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেবাস ও বাংলা বিভাগই সপ্রমাণ! পূর্ব পাকিস্তানে সিলেট রাজশাহী চট্টগ্রাম প্রথম শ্রেণীর কলেজ। এই তিনটি কলেজ যথাক্রমে ড. এনামুল হক, অধ্যাপক মনসুরউদ্দীন … ও বাংলা বিভাগের অধ্যাপক নিযুক্ত আছেন। যদিও বর্তমানে 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ে কি যোগ্যতায়, কি অধ্যাপনায়, কি 888sport live footballকীর্তিতে এই তিনজনের সমকক্ষ কোন অধ্যাপকই নাই, শুনিয়া বিস্মিত ও দুঃখিত হইলাম এই তিন জনের কাহাকেও বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের কমিটিতে রাখা হয় নাই। শুধু তাহাই নহে… প্রশ্নকর্তা ও পরীক্ষক পর্যন্ত করা হয় নাই। সম্ভবত শ্রীযুক্ত গণেশচরণ বসু মহাশয় (ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র লেকচারার) তাঁহার শিক্ষক ড. শহীদুল্লাহ সাহেবের সামনে বসিয়া […] মুসলমান সমাজের প্রতি তাঁর … করিয়াছেন – তাহা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা সিলেবাস ও আই. এ. ও বি. এ, পরীক্ষায় মুসলমান পরীক্ষকদের 888sport free betনুপাতের দিকে দৃষ্টি করিলেই বেশ বুঝা যাইবে। অথচ এই বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মুসলমান, ভাইস চ্যান্সেলরও মুসলমান। আমরা 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শোচনীয় মুসলমানবিরোধী মনোভাবের… প্রতি 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলারের ও পূর্ববঙ্গে মুসলিম ছাত্র সমাজের দৃষ্টি আকর্ষণ করিতেছি – কারণ সংঘবদ্ধভাবে চেষ্টা করিলে তাঁহারাই একমাত্র ইহার প্রতিকার করিতে পারেন। কারণ দেখা গিয়াছে বড়রা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্য্যকরী সংসদের একটি মাত্র ভোটের বিনিময়ে গোটা সমাজটাকে বিক্রয় করিতেও এতটুকু দ্বিধা করে না! না হয় এত দিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে মুসলিম অধ্যাপক নিযুক্ত হইলেন না কেন?
888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ
সম্প্রতি দৈনিক আজাদে ও মাসিক নওবাহারে 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ ও আমার সম্বন্ধে সমালোচনা বাহির হইয়াছে। মনে করিয়াছিলাম যে বীরপুরুষ নও-বাহারে স্ত্রীর অঞ্চলতলে লুক্কায়িত হইয়া কিংবা আজাদে জামাতার পরিচ্ছদে গুপ্ত থাকিয়া আঘাত হানিতে উদ্যত হয় তাহার কথা সুবুদ্ধির ন্যায় হাসিয়া উড়াইয়া দেওয়াই উচিত। কিন্তু কতিপয় হিতৈষী বন্ধু আমাকে প্রতিবাদ করিতে বারংবার অনুরোধ করিয়াছেন। তাঁহাদের আশংকা এই প্রপাগান্ডা দ্বারা সাধারণ পাঠক ভ্রান্ত হইতে পারে। এই জন্য ব্যক্তিগত অনিচ্ছাসত্ত্বেও প্রতিবাদ হিসাবে নহে, কিছু তথ্য প্রকাশের জন্য নিম্নে কিছু লিখিতে বাধ্য হইতেছি।
মহাকবি গোলাম মোস্তফা সাহেব (তিনি আমার প্রাচীন স্নেহভাজন) কয়েকটি কারণে আমার উপর বড় রাগ করিয়াছেন। প্রাইভেট কারণগুলি বলিয়া অশিষ্টাচারণ করিব না। কিন্তু প্রকাশ্য কারণগুলি সাধারণকে জানান কর্তব্য মনে করি। প্রথম কারণ কবি শাহাদাত হোসেন ও কবি জসীমুদ্দীন মহাকবি গোলাম মোস্তফার কনিষ্ঠ হওয়া সত্ত্বেও তাঁহাদের কাব্য পাঠ্য শ্রেণীভুক্ত হইয়াছে, কিন্তু তাঁহার কোনও কাব্যগ্রন্থ বা কাব্যসঞ্চয়ন পাঠ্যতালিকাভুক্ত করা হয় নাই। দ্বিতীয় কারণ তিনি চান – আরবী অক্ষরে বাংলা প্রচলন করিতে। কিন্তু আমি মনে করি ইহা অনাবশ্যক এবং বাংলা 888sport live footballের উন্নতির জন্য ক্ষতিজনক। এই বিষয়ে আমি আমার ‘আমাদের সমস্যা’ পুস্তকে বিশেষভাবে আলোচনা করিয়াছি। আমাদের ভূতপূর্ব গবর্নর সাহেব আরবী অক্ষরে বাংলা লেখা সম্বন্ধে আমার মত জিজ্ঞাসা করিলে আমি সবিনয়ে বলিয়াছিলাম যে, তাহা অবৈজ্ঞানিক এবং আমার কারণ বলিয়াছিলাম। তিনি [ফিরোজ খান নুন] গুণগ্রাহী উদারহৃদয় মহানুভব ব্যক্তি ছিলেন। এ জন্য মতভেদ সত্ত্বেও তিনি আমার উপর বিরক্ত হন নাই। পূর্ব বাংলার সরকারের গঠিত East Bengal Language Committee-র (যাহার সভাপতি জনাব মৌলানা মোহাম্মদ আকরম খান সাহেব ছিলেন এবং আমি একজন সদস্য ছিলাম) দুই জন ব্যতীত সকল সদস্যের অনুমোদনে স্থির করেন যে, আরবী (কিন্তু প্রকৃত প্রস্তাবে উর্দু) অক্ষরে বাংলা লেখা চলিবে না। কাজেই আরবী (বা উর্দু) অক্ষরে বাংলা লেখার বিরোধিতা যদি অন্যায় হয়, তবে আমি একা নহি, দুই জন সদস্য ব্যতীত সকল সদস্যই দায়ী (এই সকল সদস্যের মধ্যে দুই জন মন্ত্রীও ছিলেন)। জনাব গোলাম মোস্তফা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবী হরফে বাংলা লেখা কয়েকখানা পুস্তকের ফটো লইতে চাহিলে আমি তাঁহার দরখাস্তের উপর লিখিয়াছিলাম : I have no objection provided the facsimiles are not used as propaganda against the Bengali script. তৃতীয় কারণ তিনি চান উর্দ্দুকে রাষ্ট্রভাষা করিতে। আমি তাহার বিরোধী। অধিকন্তু আমি সন্দেহ করি তিনি বাঙালী কবি হইয়া এবং উর্দ্দু-অনভিজ্ঞ হইয়াও যে উর্দ্দু-প্রেমিক তাঁহার ঐ উর্দ্দু-প্রেম একেবারে নিঃস্বার্থ নয়। গোলাম মোস্তফা সাহেব আমার ছোট ভাইয়ের স্থানীয়। তিনি যদি অকারণে (কিংবা সকারণেও) আমার উপর রাগ করিয়া থাকেন, তবে ইসলামী তাহযীবের খাতিরে চুপ করিয়াই থাকা কর্তব্য ছিল কিংবা ছদ্মবেশ ধারণ না করিয়া স্বীয় মূর্তিতেই আমার সামনে প্রকাশিত হওয়া উচিত ছিল।
যাক এখন আসল কথা বলি। যে সিলাবস লইয়া সমালোচক এত বকাবকি করিয়াছেন, সেই সিলাবস শ্রীগণেশচরণ বসুর অধ্যক্ষতার সময়ের [১৯৪৪-৫২]। আমার অধ্যক্ষতার সময় যে সিলাবস প্রস্ত্তত হইয়াছে তাহা এখনও মুদ্রিত হইয়া প্রকাশিত হয় নাই। সুতরাং সমালোচক উদোর পিন্ডি বুদোর ঘাড়ে চাপাইয়াছেন। ইহার কারণ অজ্ঞতা বা ব্যক্তিগত বিদ্বেষ, তাহা সুধীগণ বিচার করিবেন।
(২) সমালোচকের জানা উচিত ছিল যে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেক বিভাগের ন্যায় বাংলা বিভাগেরও একটি Committee of courses and studies আছে। তাহাতে বিভাগীয় সমস্ত শিক্ষক এবং বাহিরের তিন জন শিক্ষক সদস্য আছেন। এই কমিটি সিলাবস স্থির করেন। সুতরাং অধ্যক্ষ বা কোনও সদস্যের এককভাবে কোনও ক্ষমতা নাই। শিক্ষকগণের মধ্যে মিঃ সৈয়দ আলি আহসানও আছেন এবং বর্তমানে সকল সদস্যই মুসলমান।
(৩) সমালোচকের জানা উচিত ছিল যে, Committee of courses and studies-এর প্রস্তাবগুলি Faculty of Artsএর অনুমোদনের জন্য পেশ করিতে হয়। Faculty কর্তৃক অনুমোদিত হইলে তবে তাহা গৃহীত হয়। আমি সমালোচককে জানাইতে চাই যে, গণেশবাবুর আমলের যে সিলেবাস সম্বন্ধে আপত্তি হইয়াছে, তাহাও সর্বসম্মতিক্রমে Faculty কর্তৃক গৃহীত হইয়াছিল। কেহও কোনও আপত্তি করেন নাই।
(৪) আমি ১৯৩৭ হইতে ১৯৪৪ পর্যন্ত বাংলা বিভাগের অধ্যক্ষ ছিলাম, তখন সিলেবাস সম্বন্ধে কোন আপত্তি হয় নাই। পুনরায় ১৯৫২ সালের মে হইতে আমি অধ্যক্ষের কার্য করিতেছি। তখন কি আমি মুসলমান ছিলাম এবং এখন হঠাৎ সমালোচকের কাছে হিন্দু হইয়া গিয়াছি? সমালোচকের জানা উচিত কাহারও ওপর কুফরী ফতোয়া দিলে সে যদি প্রকৃত কাফির না হয়, তবে ফতোয়াদাতাই কাফির হইবেন, ইহাই ওলামা সমাজের অভিমত। আমি পাকিস্তানের মতবাদকে ইসলামী মতবাদেরই আদত বলিয়া মনে করি। কাজেই কোনও মুসলমান পাকিস্তানের মতবাদের বিরোধী হইবে ইহা ধারণাই করিতে পারি না। শয়তানও কুরআনের অর্থ বিকৃত করিতে পারে। সুতরাং আমার কোনও লেখা যে কেউ বিকৃত অর্থ করিবে তাহাতে আশ্চর্য কি? আমি ১৯১০ সাল হইতে বহু 888sport live ও পুস্তক লিখিয়াছি। কিন্তু সমালোচক আমার ১৯৪৮ সালের 888sport appয় অনুষ্ঠিত 888sport live football সম্মিলনীর আমার অভিভাষণের এক লাইন হইতে কদর্থ করিয়াছেন যে, আমি নাকি আগে বাঙালী পরে মুসলমান, এইরূপ মত প্রচার করিয়াছি। তিনি কি আমার অসংখ্য লেখা হইতে এইরূপ কোনও উক্তি উদ্ধৃত করিতে পারেন? আসল কথা আমি আমার অভিভাষণে বলিয়াছিলাম যে আমরা বঙ্গদেশবাসী হিন্দু ও মুসলমানগণ ধর্ম্মে ও আচারে পৃথক হইয়াও আমরা ভাষাভাষী হিসাবে বাঙালী। সমালোচক ইহারই কদর্থ করিয়াছেন। কিন্তু আল্লাহ পাক এবং যাঁহারা আমাকে ঘরে বাহিরে জানেন তাঁহারাই ভালভাবে জানেন যে আমি কিরূপ মুসলমান, আমার আকীদা এবং আমার আমল কিরূপ। আমি শুধু এইটুকু বলিয়া ক্ষান্ত হইব যে আলহামদুলিল্লাহ। আমি সমালোচক হইতে কোন অংশে কম মুসলমান বা পাকিস্তানী নই।
(৫) আমার ব্যাকরণ কেন পাঠ্য আছে তাহার জন্য দায়ী Text Book Committee, East Pakistan Secondary Education Board এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের Committee of courses and studies. আমি জিজ্ঞাসা করি I. A. এবং B. A. শ্রেণীর উপযুক্ত অন্য কোন মুসলমানের লিখিত ব্যাকরণের নাম কি সমালোচক করিতে পারিবেন? তবে আগামীবারে নিশ্চয় বিবেচনা করা হইবে।
(৬) সমালোচক আমার মধ্যযুগের বাংলা 888sport live footballে [মুসলমানের] দান 888sport live সম্বন্ধে অভিযোগ করিয়াছেন, তাহা ভুলভ্রান্তিপূর্ণ। আমি জানি মানুষ ভ্রমশূন্য নয়। এবং জ্ঞান ক্রমবর্দ্ধনশীল। সুতরাং সমালোচক যদি ভুলগুলি দেখাইয়া দেন, তবে আমি বড়ই কৃতজ্ঞ হইব।
(৭) পাকিস্তানের পরিপ্রেক্ষিতে সিলেবাসের কিছু রদবদলের প্রয়োজন, আমি তাহা স্বীকার করি। এই জন্য বাংলা বিভাগের Committee of Courses and Studies I. A. B. A. এবং M. A. Syllabus -এ কিছু কিছু পরিবর্তন করিয়াছেন; কারণ হঠাৎ Syllabus পরিবর্তন করিলে ছাত্রদের ভয়ঙ্কর অসুবিধা হয়, ইহা শিক্ষক ও ছাত্রগণের অবিদিত নহে। কায়কোবাদ, শাহাদাত হোসেন, জসীমুদ্দীন, নজরুল ইসলাম, কাজী ইমদাদুল হক, মুহম্মদ বরকতুল্লাহ, কাজী আবদুল ওদুদ, মাহবুবুল আলম, আকবরউদ্দীন, সৈয়দ আলী আহসান, মুহম্মদ এনামুল হক, মীর মশাররফ হোসেন, মুজাম্বিল হক, প্রাচীন কবি আলাওল ও সৈয়দ হামজা – এই সমস্ত মুসলমান লেখকগণকে পাকিস্তান স্থাপনের পর হইতে Syllabus-এর উপযুক্ত স্থানে স্থান দান করা হইয়াছে। ইঁহাদের মধ্যে মাত্র দুইজন পূর্বেকার Syllabus-এ স্থান পাইয়াছিলেন। জনাব গোলাম মোস্তফা এবং যাঁহারা এখনও Syllabus-এ স্থান পান নাই, Committee of Conrses and Studies এখনও পর্যন্ত এরূপ সিদ্ধান্ত করেন নাই যে তাঁহারা চিরকাল অপাংক্তেয় হইয়াই থাকিবেন। সুতরাং তাঁহাদের নিরাশ হইয়া, ক্রুদ্ধ হইয়া উঠিবার কারণ নাই।
(৮) ব্যক্তিগত আক্রমণ জঘন্য রুচির পরিচায়ক। ডক্টর মুহম্মদ এনামুল হককে আমি তাঁহার ছাত্র অবস্থা হইতে জানি ও চিনি। তিনি একজন প্রতিভাবান Scholar এবং পাক্কা পাকিস্তানী মুসলমান, এ কথা আমি মুক্ত কণ্ঠে বলিব। লেখায় যদি ভুলত্রুটি কোন স্থানে হয়, তবে আমি বলিব To err is human and to forgive is divine. কিন্তু তাঁহার যে পুস্তক সম্বন্ধে বলা হইয়াছে, তাহা East Bengal Secondary Education Board কর্তৃক অনুমোদিত।
(৯) একমাত্র খোদাতালা ক্রটিপ্রমাদশূন্য। সুতরাং যদি Syllabus-এ কিছু ত্রুটি থাকে, তাহা শিক্ষাবিদগণ (আনাড়ীগণ নহে) আমাকে জানাইলে আগামীবারে Syllabus স্থির করিবার সময় আমি Committee of Courses and Studies-এর সম্মুখে অবশ্যই পেশ করিব। গণেশবাবুর সময়ের আলোচিত syllabusএর অনেক পরিবর্তন হইয়াছে। তাঁহারা বর্তমান syllabus সম্বন্ধে মতামত প্রকাশ করিবেন।
(১০) সমালোচক একটি কথা সম্পূর্ণ দায়িত্বহীনভাবে বলিয়াছেন – ‘‘মনে হয় ভারতের কোন গুপ্তচর মুসলমানের ছদ্মবেশে 888sport app ইউনিভার্সিটির গেটে দাঁড়াইয়া মতলব হাসিল করিতেছে।’’
বর্তমানে বাংলা বিভাগের সমস্ত শিক্ষক মুসলমান এবং Committee of Courses and Studies-এর সদস্য মুসলমান। সমালোচক ভারতের গুপ্তচর কাহাকে বলিতেছেন, মেহেরবানী করিয়া তাহার নামটি প্রকাশ করিবেন কি? আমরা উপযুক্ত আদালতে তাহার বিচার প্রার্থনা করিব। তিনি এ সংবাদ কোথা হইতে পাইলেন? সরকারের গোয়েন্দা বিভাগ কি এত অকর্মণ্য যে তাহার বিরুদ্ধে কোনও উপযুক্ত ব্যবস্থা এ পর্যন্ত করা হয় নাই? সমালোচক সাহেবকে বোধহয় 888sport app download for android করাইয়া দিতে হইবে না যে ইসলামে পরনিন্দাকে মহাপাপ বলা হইয়াছে?
– মুহম্মদ শহীদুল্লাহ
ডক্টর শহীদুল্লাহ
888sport app ইউনিভার্সিটির বাংলা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক (Head of the Department) জনাব ডক্টর মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ সম্বন্ধে অনেক অভিযোগ শোনা যাইতেছে। কিছুদিন হইতে ‘আজাদ’ পত্রিকাতেও তাঁহার সম্বন্ধে আলোচনা চলিতেছে। এইসব অভিযোগের অনেকগুলিই গুরুতর। আমাদের তমদ্দুনিক আদর্শ যে বিকৃত হইয়াছে, এই অভিযোগগুলির মধ্যে তাহার প্রমাণ মিলিবে।
মিলিত বঙ্গে বাংলা-888sport live footballে হিন্দুরা মুসলমানদিগের প্রতি নানাভাবে অবিচার করিয়াছে বলিয়া আমরা হিন্দুসমাজের প্রতি কতই না সাম্প্রদায়িকতা ও অনুদারতার দোষারোপ করিয়াছি। কলিকাতা ইউনিভার্সিটির সিলেবাসের বিরুদ্ধে, শ্রীপদ্মের বিরুদ্ধে, বন্দেমাতরম সঙ্গীতের বিরুদ্ধে, আনন্দমঠের বিরুদ্ধে কতই না যুদ্ধ দিয়াছি। আমাদের অভাব অভিযোগ ও দাবী-দাওয়ার প্রতি দেশবাসীর মনোযোগ আকর্ষণের জন্য জনাব মওলানা আকরম খাঁ সাহেব ‘ইউনিভার্সিটি-888sport free bet’ নাম দিয়া তাঁহার ‘মাসিক মোহাম্মদীর’ একটা বিশেষ 888sport free bet পর্যন্ত বাহির করিয়াছিলেন। তাহাতে এমনকি রবীন্দ্রনাথও বিচলিত হইয়া উঠিয়াছিলেন।’
তাঁহার লেখার যে তীব্র সমালোচনা করা হইয়াছিল, তাহার উত্তর দিতে তিনি বাধ্য হইয়াছিলেন। ইসলামি কৃষ্টির সংগঠন ও সংরক্ষণের জন্য প্রবীণ ও তরুণদের মধ্যে সেদিন কী বিপুল উৎসাহই না লক্ষ্য করিয়াছিলাম। এই প্রদীপ্ত আত্ম-চেতনা ও বলিষ্ঠ আশাবাদ ছিল বলিয়াই আমাদের পাকিস্তান লাভ এত সহজ হইয়াছিল।
কিন্তু পাকিস্তান লাভের পর কী কুৎসিত বেশেই না আমরা আত্মপ্রকাশ করিতেছি। আজ আর টিকিধারী ব্রাহ্মণ-পন্ডিত নয়, টুপিধারী মুসলিম-পন্ডিতের হাতেই আমাদের তমদ্দুনিক প্রগতি রুদ্ধ ও বিড়ম্বিত হইতেছে।
কথা হইতেছে জনাব ডক্টর শহীদুল্লাহ সাহেবকে লইয়া। মিলিত বঙ্গে 888sport app ইউনিভার্সিটির বাংলা পাঠ্যে বৌদ্ধ, -দোঁহা, শ্রীকৃষ্ণকীর্ত্তন, শ্রীকৃষ্ণবিজয়, পদ্মাপুরাণ, চন্ডীমঙ্গল, বৈষ্ণবপদাবলী – ইত্যাদিই ছিল প্রধান বিষয়বস্ত্ত। পাকিস্তান যুগে ডক্টর শহীদুল্লাহ সাহেবের কর্তৃতেত্ত অবিকল একই অবস্থা রহিয়াছে। সিলেবাসের বিশেষ কোনই পরিবর্তন হয় নাই। এইসব বিষয়বস্ত্ত পড়িলে মনে এই ধারণাই বদ্ধমূল হইয়া যায় যে, প্রাচীন বা মধ্যযুগীয় বাংলা 888sport live football বলিতে ঐগুলিই বুঝায়; মুসলমানদের দান বাংলা 888sport live footballে নাই। বাংলা 888sport live footballের আকৃতি ও প্রকৃতি সম্বন্ধেও অনুরূপ ধারণাই জন্মে। অবশ্য ইহার জন্য হিন্দুদিগকে আমরা দোষ দেই না। প্রত্যেক জাতিই চায় তার অতীত ঐতিহ্যকে বড় করিয়া গড়িয়া তুলিতে। হিন্দুদের জাতীয় ইতিহাস রচনায় হিন্দু মনীষীরা সে কর্ত্তব্য পালন করিয়াছেন। নানা সূত্র হইতে নানা উপকরণ সংগ্রহ করিয়া তাঁহারা নিজেদের ইতিহাস রচনা করিয়া ফেলিয়াছেন। বাংলা ভাষা ও 888sport live footballের ইতিহাসও তাঁহারা এমনি করিয়া সৃষ্টি করিয়াছেন। ডা. দীনেশচন্দ্র সেন, ডাঃ সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়, ডাঃ সুকুমার সেন, ডাঃ হরপ্রসাদ শাস্ত্রী প্রমুখ মনীষীরা নানা তথ্য সংগ্রহ করিয়া বাংলা ভাষা ও 888sport live footballের ইতিহাস লিখিয়াছেন। মুসলমানরা যদি নিজেদের কর্ত্তব্য নিজেরা পালন না করে, তবে সে দোষ নিশ্চয়ই হিন্দুদের নয়।
একথা এখন সবাই স্বীকার করিবেন যে, মুসলমানেরাই বাংলা ভাষার প্রকৃত পালয়িতা এবং তাহাদের কল্যাণেই বাংলা ভাষা 888sport live footballের মর্য্যাদা লাভ করিয়াছে। বহু মুসলিম কবির দানে এই ভাষা সমৃদ্ধ। মুসলমানদিগের যাদুস্পর্শেই এই ভাষা মানবীয় রূপ লাভ করিয়াছে। আরবী-ফার্সি শব্দে, মুসলমানি ধ্যানধারণা ও প্রকাশ-ভঙ্গিতে এ ভাষা এত রূপান্তরিত হইয়াছিল যে ইহাকে ‘‘বাঙালী উর্দ্দুও’’ বলা যাইতে পারিত। 888sport apps ছিল ‘‘পান্ডব-বর্জ্জিত’’ দেশ। এখানে সেন বংশের আগে কোন আর্য্য হিন্দু ছিল না। বল্লাল সেন কান্যকুব্জ হইতে ৫ […] জন এখানে আনেন এসব জানা কথা। পাল-বংশের পূবের্ব 888sport appsে আর্য্য-ভাষার কোন নিদর্শনও ছিল না, তাহাও ঐতিহাসিক সত্য। Dr. R.C. Majumdar বলেন : We have no means of ascertaining whether there was any vernacular literature in the Aryan tongue of Bengal prior to the Pal period.
আরবি-পার্শি শব্দে বাংলা ভাষা যে ‘‘উর্দ্দুর’’ মতই হইয়া উঠিয়াছিল, তাহা ডা. দীনেশচন্দ্র সেনের বক্তব্য হইতেও বুঝা যায় :
‘‘এই সফল পুস্তকের (পুঁথির) কতকগুলিতে উর্দ্দুর প্রভাব এত অধিক যে, তাহা বাঙ্গলা 888sport live footballের অন্তর্ভুক্ত করা চলে না; অপরগুলি খাঁটি বাঙ্গলা। ’’- (বৃহৎ বঙ্গ, ২য় খন্ড ১০০০ পৃ)
শুধু তাই নয়; বাঙালী মুসলমানেরা বাংলা ভাষাকে আরবি হরফেও লিখিত। আরবি হরফে বাংলা পান্ডুলিপি এখন আর কল্পনার বিষয়ীভূত নয়; সে এখন বাস্তব সত্য।
অতএব স্পষ্টই দেখা যাইতেছে, বাংলা ভাষার এক বিরাট অংশ এখনো অন্ধকারে পড়িয়া রহিয়াছে – সে হইতেছে ইসলামি বাংলা 888sport live football। বলা বাহুল্য, মুসলমানদের তরফ হইতে এই কারণে বাংলা ভাষা ও 888sport live footballের একখানি নূতন ইতিহাস রচিত হওয়া একান্ত অনিবার্য্য হইয়া উঠিয়াছে।
আমরা আশা করিয়াছিলাম, ডাঃ শহীদুল্লাহ এই কাজ করিবেন। কিন্তু হায় বদনসীব! ডাঃ শহীদুল্লাহর মধ্যেই দেখি আচার্য্য বলিনারায়ণ বিরাজ করিতেছেন। ফলে তাহার হাত দিয়া আমাদের ভাগ্যে কিছুই জুটিতেছে না। ডাঃ শহীদুল্লাহ এ বিষয়ে শুধু উদাসীনই নন, বরং এ কার্য্যে তিনি একরূপ প্রতিবন্ধক হইয়া দাঁড়াইয়াছেন। প্রকাশ : মুসলমানি পুঁথি সংগ্রহের জন্য ইউনিভার্সিটি কর্ত্তৃপক্ষ দশ হাজার টাকা মঞ্জুর করিয়া রাখিয়াছেন। আজ চার বছর যাবৎ ডাক্তার সাহেব সে টাকার কোনই সদ্ব্যবহার করেন নাই। মুসলমানি বাংলা 888sport live football সম্বন্ধে বা আরবি হরফে বাংলা লেখা পান্ডুলিপি সম্বন্ধে এ পর্যন্ত তিনি কোন নূতন আলোকপাতও করেন নাই। এ বিষয়ে বরং আমাদের অপেক্ষাকৃত তরুণ অধ্যাপক নাজিরুল ইসলাম সুফিয়ান সাহেব খানিকটা নূতন আলোকপাত করিয়াছেন। ‘‘বাংলা ভাষার [888sport live footballের] নূতন ইতিহাস’’ নামক একখানা মূল্যবান গ্রন্থ [লইয়া?] তিনি আমাদের দৃষ্টি ফিরাইয়াছেন। আশ্চর্যের বিষয়, ডা: শহীদুল্লাহ এ সম্বন্ধে একেবারে নীরব।
বাংলা পান্ডুলিপি পড়াইবার মত প্রফেসরও নাকি 888sport app ইউনিভার্সিটিতে নাই। পূবের্ব শ্রীযুক্ত সুবোধ ব্যানার্জি এই বিষয় পড়াইতেন, তাঁহার মৃত্যুর পর অন্য কোন প্রফেসরই নাকি এই বিষয় পড়াইতে পারেন না – এমনকি স্বয়ং শহীদুল্লাহ সাহেবও নন। সিলেবাসে পান্ডুলিপি পঠনের জন্য ৫০ নম্বর নির্দ্ধারিত আছে। প্রকাশঃ ডা: শহীদুল্লাহ ইহা হইতে ১০ নম্বর কমাইয়া ৪০ করিয়াছেন। গত এম-এ ফাইনাল পরীক্ষায় এই পান্ডুলিপি পঠনের কোন প্রশ্নই নাকি দেওয়া হয় নাই। শোনা যাইতেছে, ডাক্তার সাহেব এখন এই পান্ডুলিপি পঠন বিষয়টি এবার হইতে একদম তুলিয়াই দিতেছেন।
পান্ডুলিপির পাঠোদ্ধার করিতে অক্ষম বলিয়াই যে তিনি বিষয়টি তুলিয়া দিতেছেন, তাহা নহে। এক নূতন বিপদ আসিয়া জুটিয়াছে! মুসলমানি পান্ডুলিপি সংগ্রহ করিতে গিয়া দেখা যাইতেছে, বহু বাংলা পান্ডুলিপি আরবি হরফে লেখা। বাংলায় আরবি হরফের নামও তিনি শুনিতে পারেন না। কেঁচো খুঁড়িতে পাছে সাপ উঠিয়া পড়ে, এই ভয়ে তিনি আর প্রাচীন পান্ডুলিপি ঘাঁটাঘাঁটি করিতে চান না। সম্প্রতি আরবী হরফে বাংলা লেখার নূতন আন্দোলন শুরু হওয়ায় তিনি আরও খাবড়াইয়া গিয়াছেন। তিনি শ্যাম রাখিবেন, না কুল রাখিবেন, ভাবিয়া পাইতেছেন না। তাঁহার স্বরূপ বোঝা সত্যই কঠিন। তিনি ভারতী (জন্মস্থান ২৪ পরগণায়) অথচ বাস করেন পাকিস্তানে; একদিকে তিনি সংস্কৃত-জানা পন্ডিত, অপরদিকে তিনি আরবী-ফার্সি জানা আলেম, সর্বোপরি তিনি ছাত্রদিগের প্রফেসর। পন্ডিত, আলেম ও ছাত্র-ভীতি তাঁহাকে অতিষ্ঠ করিয়া তুলিয়াছে। রাষ্ট্রভাষার আন্দোলনের সময় তিনি বেশ এক কৌশল অবলম্বন করিয়া আত্মরক্ষা করিয়াছিলেন। বাংলা চাই, না উর্দু চাই, এ প্রশ্নের জবাব দেওয়া কঠিন দেখিয়া তিনি ঘোষণা করিলেন : বাংলাও চাই না, উর্দুও চাই না, – রাষ্ট্রভাষা চাই আরবি। এই কৌশল দুই দিকেই খাটানো যায়। আলেম-সমাজকে বলা যায়, আমি তো আপনাদেরই। আবার ছাত্র-সমাজ চাপিয়া ধরিলে বলা যায় : বোঝ না কেন, উর্দুকে বানচাল করিবারই একটা কৌশল। এই পরিস্থিতির মধ্যে আল্লামা নদভী আসিয়া বিপদটা আরও বাড়াইয়া দিয়া গেলেন। তিনি বলিলেন, বাংলা ভাষা পূবের্ব আরবী হরফ লেখা হইত। ইহাতে ডাক্তার সাহেব বড়ই বিপদে পড়িলেন। আরবি হরফ দিয়া বাংলা লিখিতে গেলে তাহার এত সাধের Philology ও Phonetics-এর জ্ঞান এবং ম্যাট্রিক ও 888sport app ক্লাসের বাংলা ব্যাকরণ (যাহা হইতে বহু টাকা তিনি পান) – সবই যে মাঠে মারা যাইবে। তাছাড়া দেবভাষা সংস্কৃত ও আর্যলিপি দেবনাগরীর প্রতিও যে অমর্য্যাদা দেখান হইবে! ভারতীয় পন্ডিত মহলে তিনি তখন কি করিয়া মুখ দেখাবেন।
ভাষা সমস্যা লইয়া ডক্টর শহীদুল্লাহ তাই খুবই বিপদে পড়িয়াছেন। আরবী-উর্দু-বাংলা-আরবী হরফ-দেবনাগরী হরফ-পন্ডিত-মওলানা-ছাত্র-ভারত-পাকিস্তান – কোন্টী রক্ষা করিবেন?
কিছুদিন পূর্বে তিনি ‘সাধুভাষা’ ছাড়িয়া জনাব আবুল হাসানাত সাহেবের ‘সহজ বাংলাও’ আয়ত্ব [ত্ত] করিয়াছিলেন এবং কাজের কথার সম্পাদনা করিবার মত অকাজও করিয়াছিলেন। আফসোস, ভাষা সমস্যার তাহাতেও কোন সমাধান হয় নাই। এইবার ডাক্তার সাহেবের জন্য শুধু একটিমাত্র পথই খোলা আছে। তিনি এবার ঘোষণা করুন : বাংলা হরফে আরবি চাই!
সুলতান আহমদ ভুঁইয়া : প্রাচীন পান্ডুলিপি পড়িবার যোগ্যতা 888sport app ইউনিভার্সিটির বাংলা বিভাগের কোন প্রফেসরের নাকি নাই। তবে একজন তরুণ বিদ্যার্থীর কথা আমরা জানি – যিনি এ বিষয়ে বিশেষ দক্ষতা অর্জন করিয়াছেন। তিনি হইতেছেন ইউনিভার্সিটির রিসার্চ স্কলার জনাব সুলতান আহমদ ভুঁইয়া এম-এ।
জনাব ডা: শহীদুল্লাহর অধীনে তিনি মুসলমানি পুঁথি 888sport live football সম্বন্ধে গবেষণা করিতেছেন। শোনা যাইতেছে, যেহেতু তিনি আরবী হরফের অনুরাগী, সেই জন্য তিনি ডাক্তার সাহেবের কোপ-নজরে পড়িয়াছেন। আরবী হরফে বাংলা লেখা অনেক পান্ডুলিপি 888sport app ইউনিভার্সিটিতেই আছে। সেগুলির কোন নমুনা যাহাতে বাহিরে প্রকাশ না পায়, এ জন্য ডাক্তার সাহেব নাকি তাহাকে সতর্ক করিয়া দিয়াছেন। ইহা যদি সত্য হয়, তবে খুবই দুঃখের কথা, সন্দেহ নাই। বাংলা ভাষা আরবী হরফে লেখা হইবে, না বাংলা (দেবনাগরী) হরফে লেখা হইবে, ইহা সম্পূর্ণ একটা Academic ব্যাপার। নিরপেক্ষ মন লইয়া দেশবাসী ব্যাপারটি বিবেচনা করিয়া দেখিবে; অতপর যেটি যুক্তিযুক্ত ও কল্যাণপ্রদ হয়, সেইটিই গ্রহণ করিবে। এই চিন্তার স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করিবার গোঁড়ামি নিতান্তই অসহনীয়। যিনি সত্যকে এমনভাবে ছিপাইয়া রাখিতে চান, তিনি কৃপার পাত্র। আরবী পান্ডুলিপিগুলো বুকে লুকাইয়া রাখিয়া মুখে তাহাদের অস্তিত্ব অস্বীকার করা 888sport app ইউনিভার্সিটির ‘888sport app’ নামের সার্থকতা প্রতিপন্ন করে, সন্দেহ নাই। কিন্তু সত্য কখনো 888sport app থাকে না।
(নও-বাহার, চৈত্র ১৩৫৯)
ব্যক্তিগত পত্র
Gholam Mustafa Mustafa Manzil
Santinagar, Dacca
২/৭/৫৩
জনাব ডক্টর সাহেব, –
তসলিম বাদ আরজ : ‘‘888sport app ইউনিভার্সিটির বাংলা সিলেবাস’’ সম্বন্ধে ‘আজাদে’ যে বিস্তৃত আলোচনা বাহির হইয়াছে, তাহা দেখিয়াছি। ইহার প্রতিবাদে আপনি ‘নওবাহারে’ যে-লেখাটি পাঠাইয়াছেন, তাহাও পড়িয়াছি। আমি এতদিন দেশে ছিলাম। তাই এ সম্বন্ধে আমাকে নীরব থাকিতে হইয়াছিল।
আপনার প্রতিবাদে আমার উপর আপনি অযথা আক্রমণ করিয়াছেন দেখিয়া দুঃখিত হইলাম। এই চিত্রে আমি কি করিয়া আসিলাম, বুঝি না। আপনার ধারণা : আপনার ওপর আমার ব্যক্তিগত আক্রোশ আছে বলিয়াই আমি এই আন্দোলন চালাইতেছি। আপনার এই মনোভাবের ঘোর প্রতিবাদ করিতেছি। ‘আজাদে’ যে এত বিশিষ্ট লোক সিলেবাসের বিরুদ্ধে লিখিয়াছেন, সে বুঝি আমার উস্কানীতে? ইহার পশ্চাতে বুঝি কোনই যুক্তি নাই? এরূপ ধারণা আপনার মত জ্ঞানীলোকের পক্ষে শোভা পায় না। আপনি নিশ্চয় জানিবেন আপনার ও 888sport app আরো কতিপয় কবি-888sport live footballিকের বিরুদ্ধে যে-সব প্রতিকূল সমালোচনা বাহির হইতেছে, তাহা কোন ব্যক্তিগত কারণে নয়। জাতির ও রাষ্ট্রের বৃহত্তর স্বার্থের খাতিরেই আপনারা সমালোচনার বিষয়ীভূত হইতেছেন। বরং আমিই বলিতে পারি, আপনারাই অনেকে ব্যক্তিগত কারণে আমার উপর দারুণ অবিচার করিয়া চলিয়েছেন। ‘অশ্রুমালা’ বা ‘মহাশ্মশানে’র মত বই ইউনিভার্সিটির পাঠ্য হইতে পারে, ‘রূপচ্ছন্দা’ পুস্তকাকারে জন্মলাভের পূবের্বই পাঠ্যরূপে মনোনীত হইয়া বসিয়া থাকে, অথচ গোলাম মোস্তফার কোন বই পাঠ্য হয় না। পাকিস্তানের representative poet হইতেছে কবি জসীমউদ্দীন ও কবি শাহাদাৎ হোসেন, কিন্তু গোলাম মোস্তফা নয়। 888sport app ইউনিভার্সিটিতে পাকিস্তান-বিরোধীদের স্থান হইল, কিন্তু সারাজীবন যে পাকিস্তানের স্বপ্ন রচনা করিল, তার কোন স্থান হইল না। জানি না, কাব্য বা 888sport live footballের কোন 888sport appই আদর্শে এইসব বই approved হইল। আমার ‘বিশ্বনবী’ আপনাদের Syllabusএ স্থান পায়ই নাই, এখন কি University libraryতেও আপনি তার স্থান দেন নাই। অথচ এই বিশ্বনবীর প্রশংসায় আপনি শতমুখ।
তারপর গত ১৯৫২ সালের ১২ই জুন তারিখে Secondary Education Boardএর officeএ Starding Committee-র মিটিংএ আপনি আমাকে অত লোকের সামনে কিভাবেই না লাঞ্ছিত করিলেন! বলুন ত, আমি কি সেদিন কোন অন্যায় করিয়াছিলাম? আপনি সাকার পূজা সমর্থন করিলেন, রসুলুল্লাহর (দঃ) ছবি ছাপিলে কোন দোষ হয় না, এমনকি কারবালার ঘটনাকে dramatize করিয়া হজরত ইমাম হুসেনকেও stageএ নামান যায় – এইসব মত প্রকাশ করিলেন। তাহাতে আমি বলিলাম, জনাব ডক্টর সাহেব কি সত্য সত্যই এইমত পোষণ করেন? এই কথাতেই আপনি চটিয়া গিয়া আমাকে বলিলেন, ‘‘ইসলাম সম্বন্ধে আপনি আমাকে শিখাইতে আসিয়াছেন? ইসলাম সম্বন্ধে আমি আপনাকে কেন আপনার চৌদ্দ পুরুষকে শিখাইতে পারি।’’ এই অশোভন উক্তির জন্য Principal Ibrahim Khan সাহেব আপনাকে নিন্দা করিলে আপনি তৎক্ষণাৎ আমার নিকট apology চাহিলেন। তখন আমিও আপনার সহিত হাত মিলাইলাম। কই, সেই ঘটনা লইয়া তারপর কোনদিন কি আপনার সঙ্গে কোন অশোভন আচরণ আমি দেখাইয়াছি? সেকথা একদম ভুলিয়া গিয়াছি। কি করিয়া তবে বলিতে পারেন যে, আপনার উপর আমি বিদ্বেষ ভাব পোষণ করি? ব্যক্তিগত মতের জন্য কি ঘৃণিতভাবেই না আমি নিগৃহীত হইতেছি। আমার ‘মরুদুলাল’ কাটা গিয়াছে, Head Examinership কাটা গিয়াছে। এর কোন সঙ্গত কারণ ছিল কি? বাংলা ভাষা আরবী হরফে লেখা হইবে না, না দেবনাগরী হরফেই লিখিতে হইবে, অথবা বাংলা ভাষা অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হইবে, না প্রাদেশিক রাষ্ট্রভাষা হইবে – এসব ব্যাপার সম্পূর্ণ academic. প্রত্যেক লোকেরই নিজস্ব মত ব্যক্ত করিবার অধিকার আছে। সেই হিসাবে আমিও 888sport app অনেকের মত আমার মত ও যুক্তি সবর্বসাধারণের নিকট পেশ করিতেছি – কোন propaganda করিতেছি না। আপনিও ত বাংলা ভাষাকে সমর্থন না করিয়া আরবীকে রাষ্ট্রভাষা করিবার জন্য মত প্রকাশ করিয়াছেন। তাহাতে কি আমরা আপনার ওপর খেপিয়া গিয়াছি? আরবী হরফে বাংলা লেখা ২/১ খানা পুঁথি চাহিতে গিয়াও আমি আপনার নিকট অপদস্থ হইয়া ফিরিয়া আসিয়াছি। আমি [আপনি] আমাকে propagandist দের দলে ফেলিয়াছেন। ৪০ বৎসরের ওপর আমি বাংলা ভাষার সেবা করিয়া আসিতেছি এবং জীবনের শেষ মুহূর্ত্ত পর্য্যন্ত বাংলা ভাষারই সেবা করিব। অথচ এহেন একজন সেবককেও আপনি একজন ছ্যাব্লা propagandistএর ঊর্দ্ধে স্থান দেন নাই। আফসোস। বাংলা ভাষায় যাহাদের কানাকড়ি দান নাই, তাহারাই সাজিল বাংলা ভাষার দরদী, আর আমরা হইলাম বাংলা ভাষার ‘শত্রু’। আমি আজ challange দিতেছি : আমার চেয়ে ভাষার সেবক বর্ত্তমান সময়ে কে আছে, বা কতজন আছে, বলুন? উর্দ্দুকে ভালবাসিলেই বুঝি বাংলা ভাষার শত্রু হয়?
কথাগুলি ধীরস্থির ভাবে ভাবিয়া দেখিলে খুশী হইব। আরজ ইতি
– 888sport apk download apk latest versionবনত
গোলাম মোস্তফা
পাদটীকা
১. দেখুন, ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা প্রবেশিকা পাঠ্য’, উদ্ধৃত, ভূঁইয়া ইকবাল, রবীন্দ্রনাথ ও মুসলমান সমাজ, 888sport app দ্বি-স ২০১৪ পৃ ১৯১-৯৬।
২. দেখুন, উদ্ধৃত, পৃ ১৯১-৯৬।

Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.