একটি মেয়ে

আফসার আমেদ
\ ১৮ \

 

সেঁজুতি বস্তির ওই ঘরে ও বিছানায় শুয়ে ঘুমিয়েছিল। বস্তি ঘর-লাগোয়া রাস্তায় গভীর রাতে একটা গাড়ির আওয়াজ এসে মিশল। গাড়িটা এলো। হর্ন বাজাল। থেমে গেছে আলমদের ঘরের সামনে। হর্ন বাজাল আরো কয়েকবার। আর কেউ যেন গাড়ি থেকে নামল ভারী বুট পায়ে। বস্তির ভেতর বুটের শব্দ বাজল।
আলমদের দরজায় কড়া নাড়াবার ঠকঠক শব্দ। বেশ জোরে জোরেই বাজছে।
সেঁজুতির ঘুম ভেঙে গেল।
দরজায় শব্দটা থাকছেই।
সেঁজুতি বিছানা ছেড়ে উঠে যায় দরজায়। ‘কে?’
‘দরজা খুলুন।’
‘এখন অনেক রাত।’
‘দরকার আছে।’
খুব রাগ হলো আগন্তুকের ওপর সেঁজুতির, মুখোমুখি প্রতিবাদ জানাতেই যেন দরজার খিল খুলতে গেল। অন্য সবাই ঘুমোচ্ছে। সে-ই একমাত্র জেগে উঠেছে।
দরজা খুলে দিতেই বেঁটেখাটো মোটাসোটা ইউনিফর্মপরা এক পুলিশের মোটা গোঁফওয়ালা মুখ।
‘এত রাতে?’
‘রাতেই তো আমাদের কাজ।’
‘কী দরকার?’
‘আপনাদের আমার সঙ্গে যেতে হবে।’
‘কাদের?’
‘আলম আমিনা আর আপনাকে।’
‘আমি কে?’
‘তুমি তো সেঁজুতি।’
‘আমার নাম জানলেন কী করে?’
‘আমাদের নাম জানতে হয়, আমাদের সব নাম জানা থাকে। গাড়ির স্টার্ট বন্ধ করা হয়নি, বেরিয়ে এসো চটপট।’
‘আপনার সঙ্গে যাব কেন?’
‘যেতেই হবে।’

‘আমাদের নিয়ে করবেন কী?’

‘সে গেলেই জানতে পারবে।’

পেছন ফিরে দেখে সেঁজুতি আলম, আলমের মা-বাবা-বোন পেছনে দাঁড়িয়ে আছে। তাদের চোখ নীরব।

‘আপনি কি পুলিশ?’

‘হ্যাঁ, পুলিশের বড় অফিসার।’

‘এদের সঙ্গে আমাকে জড়াচ্ছেন কেন?’

‘তোমাকে চিনি বলে।’

‘কী রকম চেনেন?’

‘যাদবপুরে পড়তে তো?’

‘হ্যাঁ।’

‘মেমারিতে বাড়ি।’

‘হ্যাঁ।’

‘একটা প্রেম ছিল তমোঘ্নর সঙ্গে।’

‘তমোঘ্ন আপনাকে নিশ্চয় বলেছে?’

‘তার চেয়ে তোমাকে আমি ভালো চিনি।’

‘তুমি কি সুশীলমামার বন্ধু?’

‘ওসব কথা এখন নয়, সময় বেশি নেই, আমার সঙ্গে তোমাদের যেতে হবে।’

‘আলমের কোনো অপরাধের জন্য -’

‘এখন কিছু বলতে পারব না।’

কেমন যেন এক রহস্যময়তা লুকিয়ে আছে অফিসারের গোঁফে। নিরীহ আলম আর তার বোন আমিনা সহজে রাজি হয়ে গেল যেতে। তাদের মুখে হাসি। যেন তারা বেড়াতে যাবে। গাড়ি চড়বে।

অফিসার অস্থির অপেক্ষা করছে দরজার বাইরে।

গাড়িটা তেমনই গর্জন করে চলেছে।

আলম আমিনা বেরোনোর আয়োজন করছে।

সেঁজুতি কাঁধের ঝোলাটা আর খুঁজে পায় না।

থাক। সে পরে নেওয়া যাবে।

অফিসারের হাসিটা তার চেনাই মনে হলো।

আলম আর আমিনা উঠে বসল জিপে।

সেঁজুতির দ্বিধা।

অফিসারের ধমক, ‘ওঠো। দেরি করছ কেন?’

‘আমাদের কোথায় নিয়ে যাবেন?’

‘কোথাও।’

‘আমার অপরাধ কী?’

‘সে বলব না। উঠে পড়ো চটপট গাড়িতে।’

বাধ্য মেয়ের মতো বসে পড়ল জিপে, অফিসারের পাশের সিটে। ‘আপনার নাম জানতে পারি কি?’

‘কিছুই জানতে হবে না তোমাকে।’

‘আপনি কি মেমারিতে কোনোদিন থাকতেন?’

‘জানি না।’

‘চুপচাপ বসে থাকো, আর দেখো।’

‘এ তো কলকাতার রাত, কলকাতার রাস্তা।’

‘তাই দেখো।’

‘রাস্তাগুলো অন্যরকম, রাতও অন্যরকম লাগছে।’

‘দেখো।’

‘আপনার কোমরের নাইন এমএম পিস্তলটা দেখাবেন?’

‘তুমি কী করে জানলে ওটা নাইন এমএম?’

‘ছটা গুলি থাকে।’

‘কী করে জানলে?’

‘খবরের কাগজ সব জানিয়ে দেয়।’

‘ও, তুমি ঘুমিয়ে নিতে পারো।’

‘না, আমি ঘুমোব না।’

‘কেন?’

‘আপনার অভিসন্ধি বুঝতে চাইছি, সচেতন রাখছি নিজেকে।’

হো-হো করে হেসে উঠলেন অফিসার।

‘কী করবেন আমাদের নিয়ে?’

‘সে একটু পরেই জানতে পারবে।’

‘মেরে ফেলবেন?’

‘তা তো জানি না।’

‘লকআপে ভরবেন?’

‘সেসব কথা এখনই জানানোর সময় হয়নি।’

রাস্তাগুলো কেমন তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছিল। গাড়ির গতি দ্রুত। অনেকক্ষণ চলার পর একটা বড় বাড়ির ভেতর গাড়িটা ঢুকে গেল। সেটা একটা হোটেল। দারোয়ান সেলাম জানাল। অন্য একজন উর্দিপরা কর্মচারী এসে গাড়ির দরজা খুলে দিলো। নিচে রেড কার্পেট, ভেতরে যাওয়ার রাস্তা। লিফট। লিফট তাদের নিয়ে চলল বহুতলে। একটা বড় হলঘরে তারা ঢুকল। তারপর একটা কেবিন।

কেবিনে তমোঘ্ন একা বসেছিল তাদের অপেক্ষায়।

অফিসার একটা চেয়ারে বসে টেবিলে তাঁর টুপিটা খুলে রেখে তমোঘ্নর সঙ্গে করমর্দন করলেন। দুঃখ প্রকাশ করলেন দেরি হওয়ার জন্য। আর সবাইকে বসতে বললেন। আলম আর আমিনাকে দুপাশে বসিয়ে তমোঘ্নর মুখোমুখি বসল সেঁজুতি। তমোঘ্নকে দেখে তার ভালো লাগল। রাগও হলো। বলল, ‘তুমি?’

‘হ্যাঁ আমিই তো, বিশ্বাস হচ্ছে না?’

‘কবে এলে, কিছুই জানাওনি।’

‘জানানোর চেষ্টা করেছি, তোমার মোবাইল সুইচ স্টপ ছিল।’

‘ফ্ল্যাটে এলে না কেন?’

‘গেছি। তুমি ছিলে না।’

‘তুমি খুব রোগা হয়েছ, খাওয়া-দাওয়া ছেড়েছ?’

‘না তো।’

‘লেপচা কোনো 888sport promo codeকে সঙ্গী করলে?’

‘করিনি।’

‘ভবিষ্যতে করবে?’

‘এখনো ভাবিনি।’

‘সম্ভাবনা আছে?’

‘জানি না।’

অফিসার অর্ডার দিয়ে টেবিলে নানা গরম খাবার আনিয়েছেন ইতোমধ্যে। কতরকম খাবার। তার নাম জানে না সেঁজুতি। সেঁজুতি আমিনাকে কাঁটা চামচ ধরা শেখায়। আগে বুঝতে পারেনি, তাদের জন্য এমন মজা অপেক্ষা করে ছিল। কোথায় যেন মিষ্টিগান বাজছে। অফিসার গোঁফ জোড়া নাড়িয়ে-নাড়িয়ে খাচ্ছেন। আলম কাঁটা চামচে খেতে জানে।

এখান থেকে তারা কোথায় যাবে? সমুদ্রতীরে যাবে কি? নাকি নদীতীরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আইসক্রিম খাবে? কোথাও একটা যাবে, তমোঘ্ন সঙ্গে থাকবে। অফিসার থাকবেন। আলম-আমিনা থাকবে। একটা আনন্দমাখা 888sport slot gameের জন্য উন্মুখ হয়ে আছে সে। রাতজুড়ে এই আনন্দ-পরি888sport slot game স্নাত হবে। সেই আনন্দ মনে মেখে নিচ্ছে, শরীরে মেখে নিচ্ছে। এত ভালো অফিসার সে আগে কখনো দেখেনি। তিনিই খাওয়াচ্ছেন, তিনিই এই মজা উপহার দিয়ে চলেছেন। তমোঘ্ন শুধু অফিসারের সঙ্গী হয়েছে। ভালো হয়েছে এই পরি888sport slot gameে তমোঘ্ন থাকায়। তমোঘ্নকে তো পাওয়াই যায় না। কোথায় জল888sport appয় থাকে। আসে না, আসতে পারে না। যা হোক এসেছে। তাতে নিশ্চিত এই অফিসারের বদান্য আছে।

নিচে এসে অফিসার তাদের একটা চৌকো গাড়ি দিলেন।

গাড়ির স্টিয়ারিংয়ে বসল তমোঘ্ন। তমোঘ্নর বাঁ-পাশটিতে সেঁজুতি বসে। আলম আর আলমের বোন পেছনের সিটে।

তমোঘ্ন গাড়ি চালাল।

তা দেখে সেঁজুতি অবাক হয়ে বলল, ‘তুমি কবে গাড়ি চালানো শিখলে?’

তমোঘ্ন বলল, ‘অনেকদিন।’

‘আমাকে বলোনি কেন?’

‘বলা হয়নি।’

‘তুমি আগের চেয়ে অনেক বেশি স্মার্ট, পছন্দ হচ্ছে তোমাকে।’

‘বেশ।’

‘আরো জোরে চালাও।’

‘জোরে চালালে যদি অ্যাক্সিডেন্ট হয়?’

‘তা হবে না।’

‘সন্তোষপুরের দিকে যাচ্ছো কেন?’

‘ওদিকেই যেতে হবে।’

‘ওদিকে তো আমার ফ্ল্যাট, ওদিকে যাবো না। তুমি অন্যদিকে নিয়ে চলো।’

‘অফিসারের ইচ্ছে ওদিকে যাই।’

‘তুমি কি পুলিশে জয়েন করেছ।’

‘বলব না।’

‘এদিকে যাওয়ার মতলব?’

‘প্রহরকে নেব।’

‘না, আমার তার সঙ্গে ঝগড়া। এর মধ্যে অনেক কান্ড ঘটে গেছে।’

‘আমি সেসব জানি।’

‘তুমি সেসব জানো?’

‘হ্যাঁ।’

‘জানো, আমার কিন্তু কোনো দোষ নেই।’

‘রবি ব্যানার্জির ব্যাপারটাতেও কোনো অপরাধ নেই?’

‘না, নেই।’

‘আলমকে নিয়ে কী করতে চাও তুমি?’

‘তোমার কাছে কি পিস্তল আছে তমোঘ্ন?’

‘থাকলে দোষ কোথায়?’

‘ইশ্, তুমি পুলিশ হয়ে গেছ?’

‘অপরাধ কোথায়? অফিসারকে দেখোনি?’

‘অফিসার খুব ভালো।’

প্রহরের ফ্ল্যাটে আর যাওয়া হলো না। সেঁজুতির ফ্ল্যাটের বিছানায় ওরা চারজন শুয়ে পড়ল। লম্বালম্বি নয়, আড়ে। বেশ ধরে গেল। একদিকে তমোঘ্ন তারপর সে, তারপর আমিনা ও আলম। সবাই একটা করে রূপকথা বলতে শুরু করল। প্রথমে বলছে আলম। ঘরের ওপরে ছাদটা ফুঁড়ে আকাশ দেখা যাচ্ছে। প্রচুর তারা সেখানে ঝিকিমিকি করছে। বাইরে গাড়িটার স্টার্ট বন্ধ করেনি তমোঘ্ন, সেটা গোঁ-গোঁ শব্দ করে চলেছে।

গাড়ি নয়, ঘরের ভেতর আমিনা স্টোভ জ্বালিয়ে চা বানাচ্ছিল। স্টোভটা বন্ধ করতেই ঘুম ভেঙে যায় সেঁজুতির। এতক্ষণ অদ্ভুত স্বপ্ন দেখছিল। বাস্তব-ঘেঁষা স্বপ্নটা তাকে অবাক করে দিলো। তার ঘোর কাটছে না। মনের ভেতর অদ্ভুত তার ভালো লাগা। তমোঘ্নকে পেয়েছিল। এমন সত্যি রঙে রাঙানো স্বপ্নটা! ঘড়িতে দেখল সকাল ৮টা। আরো অনেকক্ষণ ঘুমত তার ফ্ল্যাটে থাকলে। বস্তিতে সকাল অনেক আগেই হয়ে গেছে। আলমের মা নেই। বাবুর বাড়ি খাটতে গেছে। আলম ও আলমের বাবা সেই মাচাতেই বসে আছে। সেঁজুতি বুঝল, এখনই তাকে পালাতে হবে এখান থেকে। ইশ্, এখানে সে রাত কাটিয়েছে?

উঠে বসে সেঁজুতি। কীসের যেন ক্রোধ এসে তার মনকে ধ্বস্ত করে। বড় বেশি সে ক্ষোভিত হয়ে পড়ে।

আমিনা চা-টোস্ট দিয়ে যায়।

‘আমার চা লাগবে না, নিয়ে যা।’

‘চা খাবে না?’

‘না।’

‘খেয়ে নাও।’

‘আমি এখুনি বেরিয়ে যাব, বেরোবার রাস্তাটা দেখিয়ে দে।’

ওপর থেকে আলম বলল, ‘আমি যাচ্ছি দিদি।’

‘না, তোমাকে যেতে হবে না।’

‘আমিই যাবো।’ আমিনা বলল। ‘চাটা খেলে ভালো হতো না?’

‘আমার চায়ে অরুচি।’

‘বেশ, তাহলে শরবত করে দিই। নিম্বু আছে।’

‘না। আমি বাড়ি যাব। কখনো আমি এখানে আসব না।’

সেঁজুতি অকস্মাৎ কেন এমন রুষ্ট ব্যবহার করছে, তা নিজেই জানে না। বোধহয় ভালো ঘুম হয়নি বলে। আর আলমের প্রতি তার রাগ এমনটা করাচ্ছে। হয়তো আলমের অপরাধের কথা প্রকাশ্যে বলতে পারছে না বলে এই বিরূপ আচরণ তার ভেতর থেকে বেরিয়ে আসছে। কী করছে সে? নিজেকে সামলাতে পারছে না। এমন ক্রোধ সে প্রকাশ করছে কেন?

আমিনা কাছে আসে, ‘এখনই যাবে দিদি?’

‘হ্যাঁ।’ বলে মাথা ধরে বসে থাকে সেঁজুতি। মাথার যন্ত্রণা শুরু হয়েছে। শারীরিকভাবে সে যেমন ক্লান্ত হয়ে পড়েছে, তেমনি ব্যথিত হয়ে উঠেছে তার মন। বেশ ছিল তার স্বপ্নের কাছে থাকা। গলা শুকিয়ে গেছে। মাথার যন্ত্রণায় কষ্ট পাচ্ছে। আমিনা আদেশের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে তার সামনে। নিরীহ বালিকা, সে জানে না, তার অপরাধ কোথায়? আলম ও তার বাবা মাচার ওপর নিঃসাড়ে বসে বসে চা খাচ্ছে।

সেঁজুতি বলল, ‘একটু জল দে তো।’

ফিরে যায় আমিনা, গ্লাসে করে জল এনে দেয়।

জল খায় সেঁজুতি। শূন্য গ্লাসটা বাড়িয়ে দিয়ে মনকে গুছিয়ে বলল, ‘আলম ঠিক আছে তো?’

আলম ওপর থেকে বলল, ‘ভালো আছি দিদি। থোড়া সা দর্দ।’

‘আজকের মধ্যে এক্স-রেটা করিও।’

‘জি।’

আবার মাথায় হাত দেয় সেঁজুতি।

আমিনা শুধল, ‘শির দর্দ?’

‘হ্যাঁ রে।’

‘কী করবে?’

‘দে চা।’

আমিনা খুশিতে হেসে ফেলে। ছুটে গিয়ে চা এনে দেয়।

চায়ে চুমুক দিতে ভালো লাগল সেঁজুতির।

আমিনা বলল, ‘টোস্ট খাবে না?’

‘দে।’

আমিনা টোস্ট দেয় সেঁজুতিকে।

আমিনাও চা এনে সেঁজুতির সামনে দাঁড়িয়ে খায়।

হাত ধরে আমিনাকে পাশে বসায় সেঁজুতি। কত দারিদ্র্য, কত অপরিসর এই বস্তির ঘর। এভাবেই এরা বাঁচে। তমোঘ্নকে দেখাতে পারল না। তমোঘ্ন স্বপ্নে এলো, বাস্তবে এলো না। পাহাড়ে হারিয়ে গেছে সে লেপচা জনজাতিদের মধ্যে। তাদের 888sport live football সংস্কৃতি গান সমাজ সংগঠনের আকর্ষণ নিয়ে মেতে থাকছে সে।

‘তোমার মোবাইলের সুইচ এখনো বন্ধ থাকবে?’ আমিনা শুধল।

‘হ্যাঁ, ওভাবেই থাক।’

‘কেউ যদি ফোন করে না পায়?’

‘তাহলে হারিয়ে গেছি জানবে।’

‘হারিয়ে যেতেই চাও।’

‘হারিয়ে যেতেই চাই।’

‘বেশ বললে, আমারও ইচ্ছে হচ্ছে। কেমন মজা না!’

‘তুই হারিয়ে যাবি কেন?’

‘তোমার ইচ্ছে আমি পেলাম বলে।’

‘এখানে এতো হইচই কেন?’

‘বস্তিতে এমন হইচই হয়। তুমি একটা সিগারেট খাও, মাথাধরা কমবে। আববুজি কিছু মনে করবে না।’

‘ঠিক বলেছিস তো, সিগারেট খাইনি বলে মাথা ধরেছে। দে তো আমার ব্যাগটা।’

ব্যাগটা এগিয়ে দিয়ে আমিনা বলল, ‘তোমার নিদ ভাঙার আগে দাদার ইয়ার দোস্তরা কত দেখে গেল চুপকে চুপকে।’

‘চুপকে চুপকে কেন?’

‘তোমার নিদ ভাঙবে বলে।’

‘হ্যাঁ, আমি তো অনেক সকাল পর্যন্ত ঘুমোই।’

‘ঘুমের ভেতর কেমন করছিলে।’

‘কী করছিলাম?’

‘হাত-পা মাথা নাড়ছিলে, যেন কথা বলছিলে।’

‘স্বপ্ন দেখছিলাম।’

‘ভালো খোয়াব দেখেছ আজ?’

‘হ্যাঁ।’

‘তোমার কি খুশনসিবি।’

হেসে ফেলে সেঁজুতি। চেঁচায়, ‘এই আলম নিচে এসো, তোমাকে দেখে যাই, চলে যাবো আমি।’

আলম সঙ্গে সঙ্গে নিচে নেমে আসে। কাছে এসে মাথা নিচু করে দাঁড়ায়।

রাগ হয় সেঁজুতির। ‘মাথা সোজা করে দাঁড়াও।’

মাথা তুলতে লজ্জা পায় আলম।

‘শরীর খারাপ লাগছে না তো?’

‘না।’

‘আর শোনো, তোমার সঙ্গে আমার জীবনে আর কোনোদিনও দেখা না হয়। আমি চাই না, তোমার সঙ্গে আমার দেখা হয়।’

আলম ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইল।

রুষ্টতা দেখিয়ে কাঁধে ব্যাগ নিয়ে বাইরে বেরিয়ে এলো সেঁজুতি। সঙ্গে এলো আমিনা। বস্তির সংকীর্ণ রাস্তা ও দুর্গন্ধময় নালা-নর্দমা অাঁস্তাকুড় পেরিয়ে পেরিয়ে চলল সে। পেছন ফিরে তাকাল না আর। যেন রূপকথার কোনো নিষেধ সে নিজের মনে পেয়েছে। জানে, দরজার কাছে আলম তার যাওয়া দেখছে। মনস্থির করল, কখনো কোনোদিন সে আর এখানে আসবে না। আমিনারও হাত ছাড়িয়ে সে চলে যাবে।

সামনে বাসস্টপে একা এসে দাঁড়ায় সে। সত্যিই কি সে একা? একটি মেয়ে?