জগতে এমন কিছু দুর্লভ হীরে থাকে, যার ঔজ্জ্বল্য বাড়াবার জন্য অতিরিক্ত পালিশের প্রয়োজন পড়ে না। প্রকৃতিগতভাবেই তার স্বাভাবিক উজ্জ্বলতা থাকে, সেটাই তার হিরণ্ময় সৌন্দর্য। অধ্যাপক সত্যজিৎ চৌধুরীও ঠিক তেমনি এক দুর্লভ হিরণ্ময় সৌন্দর্যের অধিকারী ছিলেন। তাঁর উজ্জ্বল কীর্তিসমূহই তাঁকে এই দুর্লভ সৌন্দর্য প্রদান করেছে। অসামান্য মনীষার বিকিরণে, কর্মের ব্যাপ্তিতে, সৃজনের উৎকর্ষে তিনি ছিলেন একালের অগ্রগণ্য এক উজ্জ্বল মনস্বী। ৮৫ বছরের আয়ু-কালে তাঁর অবিরত বিষয় থেকে বিষয়ান্তরে উত্তীর্ণ হয়ে চলার পূর্ণাঙ্গ খতিয়ান এই নিতান্ত স্বল্পপরিসরে তুলে ধরা কঠিনই নয়, অসম্ভব। এটি একটি নিতান্ত অসম্পূর্ণ অসহায় রূপরেখা মাত্র।
অধ্যাপক সত্যজিৎ চৌধুরী (২৪ জুলাই ১৯৩১-২৩ আগস্ট ২০১৭) ছিলেন একজন বহুমুখী প্রতিভাসম্পন্ন মনস্বী। তাঁর জন্ম ২৪ জুলাই ১৯৩১-এ 888sport appsের ফরিদপুরে। বাবা নগেন্দ্রনাথ চৌধুরী, মা হেমলতা দেবী। বাবা রেলে চাকরি করতেন। আচমকাই ব্রেনস্ট্রোক হয়ে মারা যান কর্মস্থলে (সুধানী, বিহার), সত্যজিৎ তখন ক্লাস এইটে পড়েন। তাঁর পরিবার বেশ আর্থিক সংকটে পড়ে। বড় দাদা রঞ্জিত চৌধুরী সংসারের হাল ধরেন। ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করতে না করতেই দেশভাগের বিনিময়ে ভারতের স্বাধীনতা। দেশ ছাড়তে হলো। ছিন্নমূল হয়ে তাঁরা চলে এলেন পশ্চিমবঙ্গের কৃষ্ণনগরে। ছয় ভাইবোন আর বিধবা মা – একটি ছোট ভাড়াবাড়িতে! ছিন্নমূল হবার যন্ত্রণা একজন ছিন্নমূলই অনুভব করতে পারবেন। সেই যন্ত্রণাকাতর দিনগুলির কথা কিছুটা লেখা হয়েছে তাঁর আশি বছরের জন্মদিন উপলক্ষে প্রকাশিত ‘পূর্ণ করো প্রণতিগৌরবে’ / সত্যজিৎ চৌধুরী : বর্ধাপনে (সম্পাদনা : বিজলি সরকার)। যতই আর্থিক কষ্ট হোক, পড়াশোনা তো করতেই হবে। বাংলা অনার্স নিয়ে ভর্তি হলেন কৃষ্ণনগর কলেজে। এরপর এমএ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে তাঁর শিক্ষকরা ছিলেন চিন্তাহরণ চক্রবর্তী, অমলেশ ত্রিপাঠী, ভবতোষ দত্ত, দিলীপকুমার বিশ্বাস, দক্ষিণারঞ্জন শাস্ত্রী, অমল ভট্টাচার্য, নির্মল বসু রায়চৌধুরী, পরিমল রায়, নির্মলকামিত্ম মজুমদার, সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়, সুকুমার সেন, নীহাররঞ্জন রায় প্রমুখ। এমএর রেজাল্ট বেরোনোর আগেই শিক্ষক আন্দোলনে অংশ নিয়ে সংগঠনের কাজে হাওড়ার বড়গাছিয়া চলে যান। পরে অধ্যাপক-সমিতির আন্দোলনে যুক্ত হন। জেলেও যেতে হয়। ইতোমধ্যে এমএর রেজাল্ট বেরোয়। তাঁর স্থায়ী কর্মজীবন শুরু হয় নৈহাটির ঋষি বঙ্কিমচন্দ্র কলেজে। এখানেই অধ্যাপনা এবং অবসরগ্রহণ (১৯৫৬-৯৬)। এই সময় থেকেই তাঁর স্থায়ী ঠিকানা হয় নৈহাটির ৭৫/১ শাস্ত্রীপাড়ার ভাড়াবাড়িতে।
১৯৭৯ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পান ডি.লিট ডিগ্রি। এই ডিগ্রি আর পাঁচটা ডিগ্রির মতো ছিল না। তিনি কোনো গাইডের অধীনে ডি.লিট ডিগ্রির জন্য প্রস্ত্তত হননি। ১৯৭৮ সালে তাঁর অবনীন্দ্র নন্দনতত্ত্ব বইটি প্রকাশিত হয়। বইটি পড়ে ভাষাচার্য সুকুমার সেন বলেন, অবনীন্দ্রনাথের নন্দনতত্ত্ব বিষয়ে এমন মৌলিক কথা তিনি আগে পড়েননি। এ-বই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে অবশ্যই ডি.লিট ডিগ্রির জন্য জমা দেওয়া উচিত। সুকুমার সেনের অনুজ্ঞায় সত্যজিৎ বইটি ডি.লিট ডিগ্রির জন্য জমা দেন। তাঁর পরীক্ষক ছিলেন তিন বিখ্যাত বরেণ্য অধ্যাপক – নীহাররঞ্জন রায়, বিষ্ণুপদ ভট্টাচার্য এবং অমলেন্দু বসু।
খুব ছোটবেলা থেকে সত্যজিৎ স্বপ্ন দেখতেন তিনি চিত্র888sport live chatী হবেন। মাটির নানা মূর্তি গড়তেন, আঁকতেন নিবিষ্টমনে। বাড়িতে আসতেন (ফরিদপুরে) কবি জসীমউদ্দীন। তিনি ছোট্ট বালকের মূর্তি গড়ার নৈপুণ্য দেখে বলেছিলেন, তাঁকে শামিত্মনিকেতনের কলাভবনে ভর্তি করে দেবেন। এ-কথায় 888sport live chatী হবার বাসনা গভীর থেকে গভীরতর হয়। যথাসময়ে ফরমও এনে দিয়েছিলেন জসীমউদ্দীন। কিন্তু কলাভবনে পড়তে হলে মাসে আশি টাকা বেতন দিতে হবে। একা দাদার ওপরে সংসারের দায়িত্ব। সংসার বাঁচিয়ে তাঁর পক্ষে আশি টাকা বেতন দেওয়া সম্ভব নয়। স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হলো। সত্যজিতের আর আর্টিস্ট হওয়া হলো না। কিন্তু তাঁর গভীর চৈতন্যে চিত্রকলার প্রতি গভীর টান রয়েই গেল। রং-তুলি-ক্যানভাস তাঁকে বঞ্চিত করলেও রং-তুলি-ক্যানভাসের স্বরূপ নির্ণয়, 888sport live chatের আধেয়, প্রকরণ উপকরণ, 888sport live chatীর নন্দনপ্রস্থান নিয়ে জীবনভর অধ্যয়নই হয়ে ওঠে তাঁর জীবনের সাধনা। 888sport live football নিয়ে উচ্চতর শিক্ষালাভ করেছেন, সারাজীবন 888sport live footballের অধ্যাপনা করেছেন অথচ নন্দনতত্ত্বের বিশিষ্ট প্রবক্তা হিসেবে নিজের প্রধান অভিজ্ঞানটি প্রতিষ্ঠা করলেন অসামান্য দক্ষতায়। আমাদের নন্দনতত্ত্বের ইতিহাসে তাঁর অবনীন্দ্র নন্দনতত্ত্ব ও 888sport app প্রসঙ্গ, নন্দলাল, 888sport live chatকারুকৃতি কথা বইগুলোর পাঠভিন্ন চিত্রকলাজগতের 888sport live chatের পাঠ সম্পূর্ণ হয় না। পশ্চিমবঙ্গ চারুকলা পর্ষদ, একাডেমি অব ফাইন আর্টস, ইনস্টিটিউট অব কালচার, রামকৃষ্ণ মিশন, গোলপার্কে আর্ট হিস্ট্রি নিয়ে তাঁর ক্লাসে নবীন ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে সিনিয়র 888sport live chatীরাও কেমন মন্ত্রমুগ্ধের মতো মগ্ন হয়ে তাঁর পড়ানো শুনতেন – সে-অভিজ্ঞতা 888sport app download for androidীয় হয়ে থাকবে চিরকাল।
‘তোমার অবনীন্দ্র-নন্দনতত্ত্ব এবং 888sport app প্রসঙ্গ গ্রন্থখানির নূতন সংস্করণ পাইয়াছি এবং পড়িয়া মুগ্ধ হইয়াছি। এই গ্রন্থের প্রথম সংস্করণ তুমি আমাকে দিয়াছিলে। সেই বইখানি পড়িয়া ভাবি নাই যে এই বিষয়ে আরও কথা থাকিতে পারে। কিন্তু এই নতুন সংস্করণে তুমি অনেক নূতন এবং গভীর কথা বলিয়াছ। ‘ভাবনা-পট’ 888sport liveে – তুমি যে সকল প্রসঙ্গ উপস্থিত করিয়াছ তাহা এ পর্য্যন্ত অন্য কোন লেখক করিয়াছেন বলে জানি না। তবে এই বিষয়ে আমার অধ্যয়নের বিসত্মার পরিমিত। ইহা বলতে পারি যে কৃষ্ণচন্দ্র ভট্টাচার্যের Swarajin Ideas 888sport liveের উল্লেখ আমি আমাদের 888sport live chatকলা 888sport liveে কোন আলোচনায় এই পর্য্যন্ত দেখি নাই। কৃষ্ণচন্দ্রের এই 888sport liveটিকে আমি অত্যন্ত মৌলিক এবং মূল্যবান বলিয়া মনে করি।
‘এই বিষয় সম্বন্ধে তোমার অধ্যয়নের পরিধি এবং চিন্তার গভীরতা আমাকে অভিভূত করিয়াছে। আর একটি কথা বলি তোমার চিন্তা এত গভীর তাহার কারণ বোধহয় এই যে, চিন্তার পিছনে একটি ভাব রহিয়াছে। এই কারণেই উহার সকল কথা কেবল আমাদের মসিত্মষ্ক আলোড়িত করে না, আমাদের হৃদয় স্পর্শ করে। এমন কথা বোধহয় Collingwood সম্বন্ধেও উচ্চকণ্ঠে বলিতে পারি না। তোমার এই গ্রন্থের যথার্থ আলোচনা করবার যোগ্যতা আমার নাই। তবে ইহা বলিতে পারি যে তোমার বিশেস্নষণ ও সিদ্ধান্ত যে কোন বিশেষজ্ঞকে চমৎকৃত করিবে। Carritt সাহেবের সঙ্গে আমার Oxford-এ আলাপ হয়েছিল। তাঁহার বিদ্যাবত্তা আমাকে মুগ্ধ করিয়াছে। কিন্তু art সম্বন্ধে তাঁহার কোন নিবিড় অনুভূতি আছে – ইহা আমার মনে হয় নাই।
‘সর্বশেষে একটি কথা বলি – এই গ্রন্থের ইংরেজি 888sport app download apk latest versionের ব্যবস্থা করিতে হইবে। ইহার একটি ইংরেজি সংস্করণ বাহির হইলে তাহা সারা বিশ্বের art বিশেষজ্ঞরা মুগ্ধ হইয়া পড়িবে। আমার ধারণা তুমি 888sport live chatচিন্তার এক নতুন মাত্রা যোগ করিয়াছ।
‘888sport app প্রসঙ্গ’ অংশে যে তিনটি 888sport live উপস্থিত করিয়াছ তাহা প্রত্যেকটি মূল্যবান। বিনয়কুমার সরকারের 888sport live chatদৃষ্টি সম্বন্ধে আমি এই প্রথম একটি 888sport live পড়িলাম। প্রসঙ্গত একটি কথা বলি – প্রাণকৃষ্ণ পালের সঙ্গে আমি New Indian School-এ চার বছর এক বেঞ্চিতে বসিয়াছি। তাঁহার সঙ্গে আবার নিত্য দেখা হইত দেবপ্রসাদ ঘোষের আশুতোষ মিউজিয়ামে। প্রাণকৃষ্ণকে আমি আমাদের স্কুলের এক শ্রেষ্ঠ ছাত্র বলিয়া মনে করি। এমন শান্ত, ভদ্র 888sport live chatী আমি আর একজন দেখি নাই। প্রদোষ দাশগুপ্ত Scottish Church কলেজে আমার দুই ক্লাস উপরে পড়িতেন। তিনি খ্যাতিতে প্রাণকৃষ্ণকে অবশ্যই ছাড়াইয়াছেন। তবে মানুষ হিসেবে অভিমান ছিল।’ – রবীন্দ্রকুমার দাশগুপ্ত।
‘আজকের ডাকে আপনার ‘অবনীন্দ্র-নন্দনতত্ত্ব’ এসেছে। দুপুরে ঘণ্টা দুয়েক পাতা উল্টে দেখেছি। হাতে অনেক কাজ – not only them plesent or profitable লিখিয়া দেয়ার কাজ, সেহেতু এই বইখানা অবহিতচিত্তে পড়ার সময় পাব না মাসখানের আগে। পড়ে আপনার কাছে চিঠি লিখব। কিন্তু যতটুকু পড়েছি তা থেকে বুঝলাম আপনি দর্শন শাস্ত্রের দার্শনিকদের পণ্ডিত, আপনি ছবি দেখেছেন অনেক, আপনি বাংলা লেখেন চমৎকার। আজকালকার চিত্ত চমৎকারী ঔপন্যাসিক গদ্যের ও গভীর সলিল-অধিবাসী মৎসসদৃশ সাংবাদিকী গদ্যের প্রচণ্ড ব্যাপকতার ফলে মননধর্মী স্বচ্ছ গদ্য দেখতে পাই নেহাৎই কালেভদ্রে। আপনার লেখায় আমার ঈপ্সিত গদ্য দেখতে পেয়ে আনন্দিত হয়েছি। আপনি খুব ভালো কাজ করেছেন, আরো করবেন।’ – অমলেনদু বসু।
চিত্রকলার পরেই তাঁর গভীর আগ্রহের বিষয় ছিল live chat 888sport। দেশ-বিদেশের live chat 888sport নিয়ে পড়াশোনা, ফিল্ম দেখা ছিল তাঁর নেশা। তাঁর আগ্রহের বিষয় ছিল মূলত আর্ট-ফিল্ম এবং অস্কার পাওয়া আন্তর্জাতিক ফিল্ম। ভালো ভালো ফিল্ম দেখা, ফিল্ম নিয়ে আলোচনা, ভালো 888sport live chatের প্রতি মানুষকে আগ্রহী করে তোলার কাজ তিনি জীবনভর করেছেন। বাংলা তথা ভারতীয় ফিল্ম-সমালোচক হিসেবে তাঁর খ্যাতি সুবিদিত। নৈহাটি সিনে ক্লাবের তিনি ছিলেন প্রধান সংগঠক। এই সূত্রেই বন্ধুত্ব হয় মৃণাল সেন, বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত, শ্যাম বেনেগল, গোবিন্দ নিহালনির সঙ্গে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে সিনেট মেম্বার থাকার সময়ে (১৯৮৩ থেকে ১৯৯১) তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ফিল্ম স্টাডি সেন্টার। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে ফিল্মকে কোর্স হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করানো তাঁর এক ঐতিহাসিক কীর্তি। এই সেন্টারের তিনি অধ্যক্ষ ছিলেন (১৯৯০-৯৮)। হার্ডিঞ্জ বিল্ডিংয়ের পাঁচতলায় প্রতিষ্ঠিত হয় এই সেন্টার। তৈরি করিয়েছিলেন ঋত্বিক ঘটকের নামে ‘ঋত্বিক’ হল। (বিসত্মৃত তথ্যের জন্য দ্রষ্টব্য : পূর্ণ করো প্রগতিগৌরবে / সত্যজিৎ চৌধুরী : বর্ধাপন)। এ ছাড়াও এ-সময়ে তাঁর আর একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের কনভোকেশনে নতুন উত্তরীয় প্রবর্তন। ব্রিটিশ আমল থেকে চলে আসা কালো গাউনের বদলে তন্তুজের উজ্জ্বল রঙের উত্তরীয়র প্রচলন 888sport app download for androidযোগ্য ঘটনা। কাউন্সিল মেম্বার ছিলেন সত্যজিৎ রায় ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউটের।
দেশের বিদ্যাচর্চার প্রসিদ্ধ কেন্দ্রগুলোর সঙ্গে তাঁর যোগ ছিল ওতপ্রোত – এশিয়াটিক সোসাইটি, বঙ্গীয় 888sport live football পরিষদ। সবচেয়ে নিবিড় যোগ ছিল বঙ্গীয় 888sport live football পরিষদে। ভারতকোষ সম্পাদনা ছাড়াও সম্পাদনা করেছেন 888sport live football-পরিষৎ-পত্রিকার তিনটি 888sport free bet। পরিষদের চরম আর্থিক সংকটে তিনি কীভাবে পরিষদের পাশে ছিলেন – তার বিসত্মৃত বর্ণনা করেছেন অধ্যাপক অশোক ভট্টাচার্য (দ্র : পূর্ণ করো প্রণতিগৌরবে / সত্যজিৎ চৌধুরী : বর্ধাপন।
শিক্ষা-সংগঠক হিসেবে তাঁর উজ্জ্বল কীর্তি দুটি। এক. ‘হরপ্রসাদ শাস্ত্রী গবেষণা কেন্দ্র’, দুই. ‘বঙ্কিম-ভবন গবেষণা কেন্দ্র’ প্রতিষ্ঠা করা। হরপ্রসাদ শাস্ত্রীকে বাঙালি পাঠক ভুলেই গিয়েছিল। বহু যুগ আগে স্কুল-পাঠ্যবইয়ে হরপ্রসাদের বেণের মেয়ে 888sport alternative link থেকে ‘সমুদ্রযাত্রা’ অংশের এক টুকরো লেখার মাধ্যমে হরপ্রসাদের অসিত্মত্ব বেঁচে ছিল। আর বাংলা 888sport live footballে বিএ-এমএ স্তরে চর্যাপদের আবিষ্কর্তা – এই ছিল বিশ্বখ্যাত ভারততত্ত্ববিদের পরিচয়। সত্যজিৎ চৌধুরীর শিক্ষক পণ্ডিত চিন্তাহরণ চক্রবর্তী প্রায়ই আক্ষেপ করে বলতেন, হরপ্রসাদকে বাঙালি ভুলে গেল। তাঁকে বাদ দিয়ে যে ঊনবিংশ শতাব্দীর মানববিদ্যাচর্চা অসম্ভব! সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাসের অনেকখানি অংশ ধূসর থেকে যাবে। মাস্টারমশাইয়ের সেই আক্ষেপ সত্যজিৎ ভুলতে পারেননি। চাকরিসূত্রে যখন স্থায়ীভাবে নৈহাটিতে এলেন, পরিচয় হলো হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর পৌত্রদের সঙ্গে (হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর জন্ম নৈহাটিতে) এবং বিশেষ করে তাঁর ভাইপো প্রেসিডেন্সি কলেজের অধ্যাপক মঞ্জুগোপাল ভট্টাচার্যের সঙ্গে। ফলে হরপ্রসাদকে নিয়ে কাজ করার ইচেছটা সত্যজিতের আরো বেড়ে গেল। তিনি তাঁদের সঙ্গে কথা বললেন। হরপ্রসাদের ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে নানা তথ্য তিনি তাঁদের কাছ থেকে পেলেন। সত্যজিৎ কথা বললেন তাঁর দুই বিখ্যাত শিক্ষক সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় ও সুকুমার
সেনের সঙ্গে। জানালেন, হরপ্রসাদের অগ্রন্থিত সমস্ত রচনা তিনি প্রকাশ করতে চান। বিপুল পরিশ্রমের কাজ। চাই কয়েকজন গবেষণা-সহায়ক। আর সরকারি আনুকূল্য। এর জন্য প্রয়োজন একটি স্থায়ী গবেষণাকেন্দ্র। সুনীতিকুমার এবং সুকুমার সেনের পরামর্শ ও নির্দেশনা ছাড়া এ-কাজ সম্ভব নয়। তাঁরা দুজনেই সানন্দে রাজি হলেন। এ-ছাড়া এই কাজে সহায় ছিলেন ড. নীহাররঞ্জন রায়, পণ্ডিত শ্রীজীব ন্যায়তীর্থ, শঙ্খ ঘোষ প্রমুখ। প্রধান উপদেষ্টা ছিলেন সুকুমার সেন। শুরু হলো বিপুল কর্মযজ্ঞ। এই কাজে এগিয়ে এলেন তাঁর গুটিকয় ছাত্রছাত্রী। ১৯৭৫ সালে হরপ্রসাদের প্রপৌত্র ডা. অমিয় ভট্টাচার্যের বাড়িতে প্রতিষ্ঠিত হলো হরপ্রসাদ শাস্ত্রী গবেষণা কেন্দ্র। এর কিছুদিন পরেই অমিয় ভট্টাচার্য তাঁর বাড়িতে গবেষণা কেন্দ্র রাখতে রাজি হলেন না। এই কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ হিসেবে তিনি তো দায়িত্ব ছেড়ে দিতে পারেন না। তাই গবেষণা কেন্দ্র উঠে এলো সত্যজিৎ চৌধুরীর ভাড়াবাড়িতে। আরোপিত বাধা অতিক্রম করে কেমন করে কাজ করতে হয় সেটা তাঁর কাছ থেকে শিখতে হয়। নিজের বাসাবাড়ির একটি ছোট ঘরে তিনি শুরু করলেন হরপ্রসাদ শাস্ত্রী রচনা-সংগ্রহ সম্পাদনার কাজ। একে একে প্রকাশিত হলো মোট পাঁচটি খ-। প্রকাশক পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পুস্তক পর্ষদ। জুলাই ১৯৭৮-এ তাঁর ও অন্যদের সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়েছিল হরপ্রসাদ শাস্ত্রী স্মারক গ্রন্থ। সম্পাদনার জগতে হরপ্রসাদ শাস্ত্রী রচনা-সংগ্রহ এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এই রচনাবলির প্রধান গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ এর প্রাসঙ্গিক তথ্য। বিপুল পরিশ্রমে প্রতিটি লেখার সঙ্গে
যুক্ত করা হয়েছে বিসত্মৃত তথ্যসূত্র। প্রতিটি তথ্যসূত্র এতটাই
স্বয়ংসম্পূর্ণ যে শুধুমাত্র এর সাহায্যে একজন পাঠক ঊনবিংশ শতাব্দীর 888sport live football-সংস্কৃতির গভীর জ্ঞানরাজ্যে প্রবেশ করতে পারবেন। এই রচনা-সংগ্রহ সম্পর্কে বিখ্যাত চিন্তাবিদদের কয়েকটি মন্তব্য আমরা দেখে নিতে পারি –
‘আপনার সম্পাদিত হরপ্রসাদ-গ্রন্থাবলী কাল রাত্রি থেকেই দেখছি। সংক্ষেপে এইটুকু বলতে পারি, এই বই থেকে গ্রন্থ-সম্পাদনা সম্বন্ধে আমার অনেক শিক্ষণীয় আছে।’ – পুলিনবিহারী সেন।
‘আপনাদের উদ্দেশ্য সফল হয়েছে। বি888sport sign up bonusর অন্ধকার থেকে আপনারা হরপ্রসাদকে বর্তমানের আলোকে পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছেন। মানুষ হিসেবে, পণ্ডিত হিসেবে এবং কথা-888sport live footballিক হিসেবে হরপ্রসাদের পরিচয় ‘উদ্দালকে’র এই 888sport free betটি আমাদের কাছে তুলে ধরেছে। তাছাড়া চিঠিপত্র এবং হরপ্রসাদের রচনাপঞ্জীও মূল্যবান সংযোজন।’ – বিষ্ণু দে।
‘কলকাতার বাইরে থেকে একান্ত সীমিত সম্পদের ওপর নির্ভর করে আপনারা যে প্রয়োজনীয় কাজটি করেছেন তার জন্য আপনাদের অভিনন্দন জানাই। কয়েকটি পুরনো 888sport live – পুনর্মুদ্রণ করে আপনারা সুবিবেচনার কাজ করেছেন। আপনাদের সংকলনটি পড়ে আমি নিজে উপকৃত হয়েছি। এই সংকলনটি থেকে আপনাদের যে নিষ্ঠা ও রুচিবোধের পরিচয় পেলাম তা থেকে আশা করছি 888sport live football ও সংস্কৃতি সম্পর্কিত আরও অনেক সুন্দর কাজ আপনারা আমাদের দেবেন।’ – চিত্তরঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়।
‘হরপ্রসাদ গ্রন্থাবলীর জন্য বানানের যে-নীতি তুমি গ্রহণ করেছ তাতে আমার পূর্ণ সমর্থন আছে।’ – নীহাররঞ্জন রায়।
শুধু কী রচনাবলি প্রকাশ, প্রতি বছর ৬ ডিসেম্বর হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর জন্মদিন পালন করা হতো খুব বড় আয়োজনে। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে প্রতিবছর সেমিনার করা হতো। সুকুমার সেন, অন্নদাশঙ্কর রায়, নীহাররঞ্জন রায়, দিলীপকুমার বিশ্বাস, ভবতোষ দত্ত, শ্রীজীব ন্যায়তীর্থ, সমরেশ বসু, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো ব্যক্তিত্বরা এই সেমিনারে বক্তা ছিলেন। বাংলার সারস্বত সমাজে হরপ্রসাদকে নিয়ে নতুন করে প্রবল আগ্রহ তৈরি হয়। বি888sport sign up bonusর অন্ধকার থেকে হরপ্রসাদকে এমন উজ্জ্বল উদ্ধারের জন্য বাঙালি ঋণী থাকবে অধ্যাপক সত্যজিৎ চৌধুরীর কাছে।
নৈহাটির কাঁটালপাড়ায় বঙ্কিম-ভবন গবেষণা কেন্দ্র গড়ে তোলা সত্যজিৎ চৌধুরীর জীবনের অনেক উজ্জ্বল সুকৃতির মধ্যে অন্যতম প্রধান কীর্তি বলা যায়। অধ্যাপক চৌধুরী যদি জীবনে আর কিছু নাও করতেন, শুধুমাত্র বঙ্কিম-ভবন গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার জন্যই তিনি বাঙালি তথা ভারতবাসীর কাছে চির888sport app download for androidীয় হয়ে থাকবেন। এই একটি কারণে তাঁর কাছে বাঙালির ঋণ অপরিশোধ্য। জাতীয় জীবনে এই কাজের তাৎপর্য একদিন হয়তো সকলে উপলব্ধি করতে পারবেন, তখন হয়তো এই কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতার অবি888sport app download for androidীয় অবদান দেশ স্বীকার করবে। (বিসত্মৃত তথ্যের জন্য দ্র : পূর্ণ করো প্রণতিগৌরবে / সত্যজিৎ চৌধুরী : বর্ধাপন)। ১৯৯৯ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর সত্যজিৎ চৌধুরীর উদ্যোগে বঙ্কিমচন্দ্রের বসতবাড়িতে প্রতিষ্ঠিত হয় বঙ্কিম-ভবন গবেষণা কেন্দ্র। সংরক্ষণের অভাবে বন্দেমাতরমের স্রষ্টার জন্মভিটে ভগ্ন-জীর্ণ হতে হতে ভয়াবহ এক ধ্বংসসত্মূপে পরিণত হয়ে পড়েছিল দীর্ঘকাল। 888sport live footballসম্রাটের ভদ্রাসনের সামনে দাঁড়িয়ে দেশি-বিদেশি কত মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করে যেতেন। বিশাল এই বাড়ির নাটমন্দির থুবড়ে পড়েছিল, নিশ্চিহ্ন হয়েছে বঙ্গদর্শন প্রেসের ঘর।
ক্ষোভ-আক্ষেপ করেছে ঠিকই সবাই, আবার ভুলে গেছে – বাঙালির যা জাতিগত বৈশিষ্ট্য! অবশেষে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের উদ্যোগে, উচ্চশিক্ষা মন্ত্রী অধ্যাপক সত্যসাধন চক্রবর্তী এগিয়ে এলেন বাড়ি সংস্কারের কাজে। সাহায্য চাইলেন নৈহাটির কৃতবিদ্য মনস্বী অধ্যাপক সত্যজিৎ চৌধুরীর। ১৯৯৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে অধ্যক্ষের দায়িত্বভার নিলেন তিনি। দায়িত্বভার নেবার সময় সত্যজিৎ চৌধুরী উচ্চশিক্ষা বিভাগকে দুটি শর্তের কথা বলেছিলেন। এক. কোনো বেতন নেবেন না। দুই. যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্যবিভাগের তত্ত্বাবধানে সংরক্ষণের কাজ করাতে চান, পূর্ত বিভাগকে দিয়ে নয়। কেননা পূর্ত বিভাগ পুবদিকের অংশের কয়েকটি ঘর যেভাবে পুনর্নির্মাণ করেছে – তাকে ঠিক যথাযথ হেরিটেজ সংরক্ষণ বলে না। এই দুটি শর্তই উচ্চশিক্ষা বিভাগ মেনে নিলে তিনি অধ্যক্ষের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। বঙ্কিমচন্দ্রের বসতবাড়ির গাঁথুনি ছিল মাটি ও চুনসুরকির। তিরিশ ইঞ্চি চওড়া দেয়াল। জোড়া স্তম্ভ আর খিলানের ওপর গাঁথা এই বাড়ির ভিতের গভীরতা পাঁচ ফুটেরও বেশি। বাড়ির পুব ও পশ্চিমের বেশ কয়েকটি ঘর দীর্ঘদিন ধরে কিছু বহিরাগতের দখলে ছিল। পুবদিকের ঘর দখলমুক্ত করে পূর্ত বিভাগ সংস্কারের কাজ সম্পন্ন করতে পারলেও পশ্চিমাংশের, যেখানে বঙ্কিমচন্দ্রের আঁতুড়ঘর ও বসবাসের ঘর ছিল – সেই অংশ দখলমুক্ত করতে পারেনি। তারা কাজ অসমাপ্ত রেখে রাজ্যের উচ্চশিক্ষা বিভাগের হাতে পুব-পশ্চিমের পুরো বাড়ির দায়িত্ব তুলে দেয়। ১৯৯৭-এর ২৮ জুন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তৎকালীন উচ্চশিক্ষামন্ত্রী অধ্যাপক সত্যসাধন চক্রবর্তী এই বাড়ির উদ্বোধন করেন। এরপর ‘ঋষি বঙ্কিমচন্দ্র সংগ্রহশালা ও গ্রন্থাগার’-এর দীর্ঘকালের কমিটি সদস্য এবং ঋষি বঙ্কিমচন্দ্র টাউন লাইব্রেরির প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক সত্যজিৎ চৌধুরীকে অধ্যক্ষের দায়িত্বভার দেওয়া হয়। তাঁর উদ্যোগে সোসাইটি রেজিস্ট্রেশন অ্যাক্ট (No S/95980 of 1999, 23 September) অনুসারে ২৩ সেপ্টেম্বর ১৯৯৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় বঙ্কিম-ভবন গবেষণা কেন্দ্র। শুরু হয় বঙ্কিমচন্দ্রের মূল বাড়ি, বৈঠকখানা ও জন্মস্থান সংরক্ষণের বিপুল কর্মযজ্ঞ। অধ্যক্ষের দায়িত্বভার নেবার পর সত্যজিৎ চৌধুরীর সামনে সবচেয়ে প্রধান সমস্যা ছিল টাকার। তিনদিকে ছাড়ানো বঙ্কিমচন্দ্রদের বিশাল এই বাড়ি সংরক্ষণের জন্য যে-পরিমাণ টাকার প্রয়োজন রাজ্য সরকারের উচ্চশিক্ষা বিভাগ সে-পরিমাণ টাকা দিতে পারেনি। ফলে টাকার সংস্থান করতে হয়েছিল নানাভাবে। যেমন কলকাতা করপোরেশন, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হল, কেন্দ্রীয় সরকারের কালচার ডিপার্টমেন্ট, এমপি ল্যাড, বিধায়ক ইত্যাদি সূত্রে টাকার জোগাড় করেছেন। যেখান থেকে যতটুকু টাকা পাবার সম্ভাবনা ছিল, অধ্যক্ষ সেখানেই ছুটেছেন কাগজপত্র নিয়ে। প্রত্যাশিত পরিমাণের টাকাও পাওয়া যেত না। কিন্তু একটু একটু করে ক্রমে বঙ্কিমচন্দ্রের বাড়ি নবরূপে পূর্ণাঙ্গ অবয়ব পেল। এ কেবল সম্ভব হয়েছিল সত্যজিৎ চৌধুরীর অক্লান্ত পরিশ্রম আর আত্মত্যাগের জন্য। বঙ্কিম-ভবনে তাঁর কাজের খতিয়ান নেওয়া এই স্বল্পপরিসরে একান্ত অসম্ভব। এক বহুমুখী কর্মপ্রকল্প যার পরিধি ও বিসত্মার ব্যাপক – শুধু তালিকা করে গেলেও অনেক পরিসর দরকার। এখানে শুধু একটি অসম্পূর্ণ রূপরেখা করা যেতে পারে। তবে এতে বঙ্কিম-ভবন গবেষণা কেন্দ্রের স্রষ্টার পূর্ণাঙ্গ পরিচয় পাওয়া যাবে না। শুধু তো বঙ্কিমচন্দ্রের বসবাসের ঘরদোর নয়, তাঁর ঐতিহাসিক বৈঠকখানা ঘর, যে-ঘরে বন্দেমাতরম লেখা হয়েছে, কৃষ্ণকান্তের উইল লেখা হয়েছে, বঙ্গদর্শন, প্রচার, ভ্রমর পত্রিকা প্রকাশিত হয়েছে, তাঁর আঁতুড়ঘর – ইত্যাদি সবই ধ্বংসের শেষ সীমায় পৌঁছে গিয়েছিল। তাঁর আঁতুড়ঘরের তো কোনো চিহ্নই ছিল না। বিভিন্ন পুরনো নথিপত্র ঘেঁটে, পরিবারের প্রাচীন লোকদের সঙ্গে কথা বলে অধ্যক্ষ চিহ্নিত করলেন বঙ্কিমচন্দ্রের পুণ্য-জন্মস্থান। এক্সাবেশন করে বেরিয়ে এলো জন্মস্থানের ভিত। সেই ভিতের ওপর গড়ে তুললেন চার চালার টেরাকোটার অপরূপ শ্রীম–ত স্থাপত্য। ২০০৬ সাল থেকে বঙ্কিমচন্দ্রের জন্মদিনে তাঁর জন্মভিটেতেই সাধারণ মানুষ তাদের 888sport apk download apk latest versionর্ঘ্য নিবেদন করার সুযোগ পেলেন – যা আগে কখনো সম্ভব ছিল না। প্রসঙ্গত এখানে একটি কথা সকলের অবগতির জন্য জানানো জরুরি। সেটা হলো এই যে, আঁতুড়ঘর নির্মিত হলেও সেখানে বঙ্কিমচন্দ্রের কোনো মূর্তি ছিল না। মূর্তি বসানোর জন্য মার্বেলের স্তম্ভ বসানো হলো। বঙ্কিমচন্দ্রের জন্মদিনে মানুষ তাঁর ভিটেতে মূর্তিহীন ফলকেই প্রণাম জানিয়ে যেতেন। অধ্যাপক চৌধুরী রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ভিসি অধ্যাপক করুণাসিন্ধু দাসের কাছে একটি ব্রোঞ্জের আবক্ষ-মূর্তি দান হিসেবে চাইলেন। অধ্যাপক দাস সত্যজিৎ চৌধুরীর আবেদনে সাড়া দিয়ে বঙ্কিমচন্দ্রের একটি ব্রোঞ্জের আবক্ষ মূর্তি বঙ্কিম-ভবনকে দান করলেন। ২০১২ সালে মূর্তিটি যখন এলো, ততদিনে বঙ্কিম-ভবন গবেষণা কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ সত্যজিৎ চৌধুরী অপসারিত হয়েছেন। এবং সেই অপসারণ কতখানি অনৈতিক এবং অসম্মানের ছিল সে-ইতিহাস সুবিদিত। যা হোক, বঙ্কিমচন্দ্রের যে-মূর্তিটি তাঁর জন্মস্থানে বসাবার জন্য সংগ্রহ করা হয়েছিল, দুর্ভাগ্যের বিষয় সেই মূর্তিটি তৎকালীন অধ্যক্ষ অমিত্রসূদন ভট্টাচার্য বঙ্কিমের আঁতুড়ঘরে না বসিয়ে অফিসঘর সংলগ্ন অপরিসর এক চিলতে অন্ধকার বারান্দায় বসালেন। অজুহাত দেওয়া হলো সিকিউরিটির। অবান্তর অজুহাত। বঙ্কিমচন্দ্রের গোটা বাড়ি দীর্ঘ পাঁচিল দিয়ে ঘেরা, ২৪ ঘণ্টার তিনজন সিকিউরিটি গার্ড। যখন বঙ্কিমচন্দ্রের বৈঠকখানা ঘর একেবারে
ভগ্ন-জীর্ণ অবস্থায় যুগ যুগ ধরে উন্মুক্ত মাঠের মাঝে সিকিউরিটিহীন অবস্থায় পড়েছিল, তখন বঙ্কিমচন্দ্রের ব্যবহৃত অমূল্য স্মারকদ্রব্য, তাঁর হাতে লেখা শত শত চিঠি – সবই অক্ষত রইলো, যার অ্যান্টিক ভ্যালু অপরিসীম – সেসব কেউ ডাকাতি বা চুরি করতে এলো না, আর প্রোথিত ব্রোঞ্জের মূর্তি ভেঙে, উপড়ে নিয়ে যাবে। এমন বুদ্ধি নিয়ে কী আর করবেন? তাই অমিত্রসূদনবাবু তাঁর দুবছরের অধ্যক্ষতায় বঙ্কিম-ভবনের উন্নয়নের জন্য এক ইঞ্চি কাজও করতে পারেননি। বঙ্গদর্শনের একটি জেরক্স 888sport free bet আর বঙ্কিম পরিবারে মেয়েদের লেখা চিঠির রাশি রাশি ভুলে ভরা একটি বই সম্পাদনা করে বিদায় নিয়েছেন। অবশ্য তাঁর পরে যাঁরা এসেছেন, তাঁরাও কিছু করতে পারেননি বা পারছেন না। এখানেই সত্যজিৎ চৌধুরীর সঙ্গে তাঁদের পার্থক্য। অমিত্রসূদনবাবুর কা-জ্ঞানহীন অবিবেচনায় এমন সুন্দর মূর্তিটি অফিসঘরের অত্যন্ত সংকীর্ণ পরিসরে পড়ে রইল। অথচ প্রতিদিন বঙ্কিমভক্তরা ফুল-মালা নিয়ে তাঁর আঁতুড়ঘরে মূর্তিশূন্য বেদিতে প্রণাম করে যান, আর আক্ষেপ করেন, এখানে একটা মূর্তি নেই কেন?
প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু এসে ঘটা করে মূর্তি প্রতিষ্ঠা করে গেলেন। সম্ভবত তাঁকে জানতেই দেওয়া হয়নি যে, সত্যজিৎবাবুর উদ্যোগে এই মূর্তিটি নির্মিত হয়েছিল বঙ্কিমচন্দ্রের আঁতুড়ঘরে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য, বারান্দার জন্য নয়। এ তো শুধু আপামর বঙ্কিমভক্তদের অপমান করা হলো না, অপমান করা হলো স্বয়ং বঙ্কিমচন্দ্রকেও।
সত্যজিৎ চৌধুরীর অধ্যক্ষতায় বঙ্কিম-ভবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ বঙ্কিমের ও তাঁর পরিবারের হাতে লেখা অমূল্য চিঠিপত্র, অজস্র দলিল, 888sport app নথিপত্র স্থায়ী সংরক্ষণ। মূল পত্রপত্রিকা, যার মধ্যে রয়েছে বঙ্গদর্শন, প্রচার, ভ্রমর, শনিবারের চিঠি, নারায়ণ, পঞ্চপুষ্প ইত্যাদি বিখ্যাত পত্রিকা, বঙ্কিমচন্দ্র, সঞ্জীবচন্দ্রের পাঠ্যবই, বিভিন্ন বিষয়ের প্রচুর গুরুত্বপূর্ণ বই, বঙ্কিমের গানের খাতা, হাতে লেখা বিভিন্ন নোটবই, ডায়েরি, হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর যাবতীয় স্মারক নথি – আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে ভিজিটাল প্রিজারভেশন করানো হয়। এই সংরক্ষণে দেশের অগ্রগণ্য বিশেষজ্ঞদের সাহায্য নেওয়া হয়েছিল। প্রায় চল্লিশ হাজার পৃষ্ঠা ভিজিটাইজড প্রিজারভেশন হয়েছে। আর মূল বিদেশি টিস্যু পেপারে ল্যামিনেট করা হয়েছে। এইসব নথিপত্র ঊনবিংশ শতাব্দীর সামাজিক ইতিহাসের আকর দলিল।
বঙ্কিম-ভবন গবেষণা কেন্দ্রের বহুবিধ গুরুত্বপূর্ণ কাজের মধ্যে সত্যজিৎ চৌধুরীর আর একটি উজ্জ্বল কীর্তি বঙ্গদর্শন পত্রিকা সম্পাদনা করা। ১৮৭২ সালে বঙ্কিমচন্দ্রের সম্পাদনায় এই ঐতিহাসিক পত্রিকাটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল। বঙ্কিম-ভবনের মুখপত্র হিসেবে ২০০০ সালের ২৮ জুন বঙ্কিম-জয়মত্মীর দিনে প্রথম 888sport free bet বঙ্গদর্শন প্রকাশিত হয়। সত্যজিৎবাবুর বঙ্গদর্শন সম্পূর্ণ একালের আধুনিক বাঙালির চিন্তা-চেতনা অভিজ্ঞান হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। এর ব্যাখ্যা তাঁর নিজের মুখেই শোনা যাক –
‘ঊনবিংশ-বিংশ শতাব্দী পেরিয়ে আমরা মানব ইতিহাসের আর একটি অজানা সহস্রাব্দের মধ্যে প্রবেশ করেছি। স্বদেশ আজ আর কোনো বিদেশি শক্তির হাতে নেই। সামগ্রিকভাবে সমাজের শক্তি বিন্যাসে অভাবনীয় পরিবর্তন ঘটে গেছে। কিন্তু সে-পরিবর্তনের ধারা আমাদের কোনো সুস্থ সুনিশ্চিত জীবনের ভূমিতে উত্তীর্ণ করেনি। বরং সম্প্রদায়-বৈর, ধর্ম-বৈর দেশময় উদ্বেগের প্রবাহ বইয়ে চলেছে। … আজ আমাদের মধ্যে কোনো বঙ্কিমচন্দ্র নেই, রবীন্দ্রনাথ নেই। এমন কোনো ব্যক্তিত্ব নেই যাঁর কণ্ঠ সর্বসাধারণের মধ্যে কোনো অমোঘ নৈতিক ভাবাশ্রয় পৌঁছে দিতে পারে।
‘এও এক সমূহ সংকটকাল। এ চেতনা জাগ্রত না থাকলে কোনো উদ্যোগেরই কোনো তাৎপর্য থাকবে না। বড়ো প্রতিভার সৃজনে আমাদের ষান্মাসিক বঙ্গদর্শন-এর পৃষ্ঠা ভরে উঠবে এমন প্রত্যাশা নেই আদৌ। 888sport live chat-888sport live football-নাট্য-live chat 888sport কোথাও কোথাও সত্যিই আজ মহত্বের চূড়াস্পর্শী কোনো কাজ প্রায় হচ্ছেই না। এমন একটা পরিবেশে বঙ্গদর্শন নামটি কেবল অবলম্বন করে হঠাৎ চমকপ্রদ কিছু করে ওঠা যাবে – তেমন অবান্তর কোনো ভাবনা নেই আমাদের। আশা আছে ছোটো একটা মননি-সমাবেশ হয়তো বঙ্গদর্শন নামের ছায়ায় জমে উঠবে। সাধ্য মতো যাঁরা বিশ্বের পটে স্বদেশের ছবিটি নির্মোহ দৃষ্টিতে দেখবেন এবং তাদের দৃষ্টির ও মননের ফল এই পত্রিকার আধারে পরিবেশন করার সুযোগ আমাদের দেবেন।’ (‘পত্রিকার কথা’, বঙ্গদর্শন)।
শুরু হলো ষান্মাসিক বঙ্গদর্শন পত্রিকা প্রকাশ। প্রকাশিত হবার সঙ্গে সঙ্গে পত্রিকাটি বিদ্যাচর্চার জগতে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। লেখক, লেখার বিষয়, লেখার মান, পত্রিকার প্রচ্ছদ, চেহারা – সামগ্রিক সম্পাদনা কোন উচ্চতায় পৌঁছতে পারে তার এক অসামান্য নজির গড়লেন সম্পাদক। বঙ্কিমচন্দ্র যেমন বঙ্গদর্শনকে কেন্দ্র করে এক শক্তিশালী লেখকগোষ্ঠী গড়ে তুলেছিলেন, সত্যজিৎ চৌধুরীও তেমনি তাঁর বঙ্গদর্শনে এক উজ্জ্বল লেখকগোষ্ঠীর সমাবেশ ঘটালেন। প্রথমেই তিনি বঙ্গদর্শনের নীতি-নির্ধারণ ও প্রাসঙ্গিক 888sport app আনুকূল্যের জন্য বাংলার 888sport live football-সংস্কৃতির জগতের মান্যজনদের নিয়ে একটি ‘উপদেশনা পর্ষদ’ গঠন করেন। বঙ্গদর্শন পত্রিকার ১-১৪ 888sport free bet পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে উপদেশনা পর্ষদের সদস্য ছিলেন অন্নদাশঙ্কর রায়, রবীন্দ্রকুমার দাশগুপ্ত, ধীরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়, দিলীপকুমার বিশ্বাস, ভবতোষ দত্ত, রমারঞ্জন মুখোপাধ্যায়, রমেন্দ্রকুমার আচার্যচৌধুরী, সৈয়দ মুস্তফা সিরাজ, সরোজ বন্দ্যোপাধ্যায়, শঙ্খ ঘোষ, দেবেশ রায়, নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, তপন রায় চৌধুরী। বঙ্গদর্শনের মোট 888sport free bet ১৪। শেষ 888sport free betটি প্রকাশিত হয় জুলাই ২০১১-তে। বঙ্গদর্শন পত্রিকায় লিখেছেন অন্নদাশঙ্কর রায়, ধীরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়, রবীন্দ্রকুমার দাশগুপ্ত, হাসান আজিজুল হক, দিলীপকুমার বিশ্বাস, অশোক সেন, সরোজ বন্দ্যোপাধ্যায়, দেবীপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়, রমাকান্ত চক্রবর্তী, দেবেশ রায়, অভ্র ঘোষ, সৌরীন ভট্টাচার্য আর শিবকুমারের মতো শ্রেষ্ঠ চিন্তাবিদরা।
‘বঙ্গদর্শন পত্রিকার ৮-৯ যুগ্ম 888sport free bet পাইলাম এবং পাইয়া ধন্য হইলাম। লোকে বলে জাতি হিসাবে আমরা নাকি ডুবিয়া যাইতেছি। তোমার ‘বঙ্গদর্শন’ এই উক্তির খ-ন। বহু অতিমূল্যবান 888sport liveে এই 888sport free betটি সমৃদ্ধ। সত্যেন্দ্রনাথ বসুর আইনস্টাইন সম্পর্কে 888sport liveদুটি এই প্রথম পড়িলাম। নীহাররঞ্জন রায়ের রবীন্দ্রনাথ ও আইনস্টাইন 888sport liveটি পড়িয়াছিলাম, কিন্তু ইহার কোন কথাই মনে ছিল না। প্রায় পঁচিশ বছর পূর্বে লিখিত এই 888sport liveটি পড়িয়া লাভবান হইলাম। তোমাকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাইতেছি। শ্রাবমত্মী ভৌমিকের জিতেন্দ্র মহামিত্মর জাঁ পল সার্ত্র-এর 888sport liveের 888sport app download apk latest version পড়িয়াও ধন্য হইলাম। প্রত্যেকটি 888sport live বিশেষ মূল্যবান। আমি সবগুলি এখনও পড়িয়া উঠতে পারি নাই, তবে পড়িব।
‘বঙ্কিম-ভবনের সংগ্রহশালার নথিপত্রের যে পরিচয় দিয়াছ সেটি বিশেষ মূল্যবান। সঞ্জীবচন্দ্রের পুত্র জ্যোতিষচন্দ্রের ডায়েরি এই প্রথম প্রকাশিত হইল। বিনোদবিহারীর সঙ্গে সত্যজিৎ রায়ের যে আলাপচারী নির্মাল্য আচার্য্য ‘এক্ষণ’ পত্রিকায় ছাপাইয়াছিলেন তাহা পড়ি নাই। শিবকুমারের বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায় সম্বন্ধে দীর্ঘ এবং অতিসুন্দর ইংরাজি 888sport liveটি তুমি 888sport app download apk latest version করিয়াছ, তোমার এই পরিশ্রম সার্থক হইয়াছে। এই 888sport free betটি নির্মাণ করিতে তোমার যে পরিশ্রম হইয়াছে তাহা অনুমান করিতে পারি। তবে সে পরিশ্রম সার্থক হইয়াছে। এই 888sport free betটির দাম ১৫০ টাকা। যদি উহার দ্বিগুণ দাম হইত তাহা হইলেও বেশি হইত না। ‘বঙ্গদর্শনে’র এই 888sport free betটির সম্যক আলোচনা করি সে সাধ্য আমার নাই। নববই বছর বয়সে জরা, ব্যাধি লইয়া শয্যালগ্ন হইয়াছি। তবে এই বইখানি পাইয়া বিশেষ আনন্দলাভ করিয়াছি। ইহার চমৎকার উৎকর্ষের জন্য তোমাকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। স্নেহ লও, ভালো থাকিও।’ – রবীন্দ্রকুমার দাশগুপ্ত।
বঙ্কিম-ভবনে তিনি কী পরিমাণ কাজের চাপ বহন করেছিলেন তার কিছু ধারণা পেতে হলে কয়েকটি শুধু তালিকাই যথেষ্ট। ১. বঙ্কিমচন্দ্রের বিশাল বসতবাড়ি (পশ্চিমদিকের যা মূল হেরিটেজ) সংস্কারের কাজ, ২. সংস্কারের আগে বিশ্বখ্যাত live chat 888sport-পরিচালক বুদ্ধদেব দাশগুপ্তকে দিয়ে বঙ্কিমচন্দ্রের বাড়ি নামে ডকুমেন্টারি ফিল্ম করানো, ৩. বঙ্কিমচন্দ্রের বৈঠকখানা সংস্কার (মিউজিয়াম), ৪. বঙ্কিমচন্দ্রের পারিবারিক নাটমন্দির সংস্কার, ৫. এক্সটেনডেড মিউজিয়ামের জন্য রেল থেকে জমির ব্যবস্থা করা, ৬. বঙ্গদর্শন পত্রিকা প্রকাশ, ৭. বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ গবেষণাগ্রন্থ প্রকাশ, ৮. বন্দেমাতরম সিডি প্রকাশ, ৯. ডিজিটাল ইউনিট স্থাপন (বঙ্গদর্শন যন্ত্রালয়), ১০. বঙ্কিম-সংক্রান্ত সহস্রাধিক মূল্যবান নথিপত্র এবং হাতে লেখা পুঁথির ডিজিটাল প্রিজারভেশন। মূল নথিপত্রের ল্যামিনেশন, ১১. ডিজিটাল আর্ট কলেজের জন্য জমি অধিগ্রহণ করানো এবং ডিজিটাল আর্ট কলেজের উদ্দেশ্য ও সিলেবাস তৈরি, ১২ বারাসত স্টেট ইউনিভার্সিটির সঙ্গে বঙ্কিম-ভবনের সংযুক্তির প্রচেষ্টা, ১৩. প্রতিবছর বঙ্কিম-জয়মত্মী, ১৪. প্রতিবছর হরপ্রসাদ-জয়মত্মী, ১৫. প্রতিমাসে বঙ্গদর্শনের মজলিশ (সাংস্কৃতিক প্রোগ্রাম), ১৬. সবচেয়ে কঠিন ও গুরুত্বপূর্ণ কাজ টাকার সংস্থান করা। সরকারি-বেসরকারির দরজায় ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে অবিরত ছোটাছুটি করা। হিসাবমতো এই তালিকা আরো দীর্ঘ।
খুব অবাক লাগে, সেপ্টেম্বর ১৯৯৯ থেকে জুলাই ২০১১-র মধ্যে বৃদ্ধ বয়সে এমন কাজের বেড়াজালে নিজেকে কেউ জড়াতে পারে? অভ্যর্থনাহীন রিক্ত বিরুদ্ধতার মধ্যে দিয়ে তাঁকে জীবনভর কাজ করতে হয়েছে। সাহায্যের হাতের চাইতে বৈরিতার কদর্য-ছুরি তাঁকে কতভাবে যে বিদ্ধ করেছে – সেই ন্যক্কারজনক ইতিহাস হয়তো কখনো লেখা হবে। তবে তাঁর ব্যক্তিত্বের দাঁড়া এতটাই শক্ত ভিতের ওপরে প্রোথিত ছিল যে, তিনি এসব বৈরিতা, অসভ্যতার তোয়াক্কা না করে নিজের লক্ষ্য এগিয়ে গিয়েছেন। তিনি ছিলেন অসাধারণ এক স্থিতপ্রজ্ঞ মনস্বী, কর্মবীর। তাঁর বোধের কেন্দ্রে একটি উজ্জ্বল কর্ম-এষণা সর্বদা যেন ভাস্বর হয়ে উঠত। সংকল্প সংগঠন, সংকল্পের সফল উদ্যাপন তাঁর প্রতিভার পুরুষার্থে তাই এমন সার্থক
হয়ে উঠতে পেরেছে। এখানেই তাঁর অসামান্য ব্যক্তিত্বের প্রাতিস্বিকতা।


Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.