শিরোনামের শব্দগুলো প্রায় সমার্থক হলেও এদের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার গতিপথ আলাদা। একা বা একাকী কিংবা একাকিত্ব হচ্ছে ছায়া-দানব। সেই ছায়া-দানব কোটি কোটি বছরের মহাবিশে^র সৃষ্টিলগ্নের আদিম তুষারের পোশাক পরা প্রাচীন অগ্নিময় আধিভৌতিক এক মহাশক্তি। এর পরিণতি কৃষ্ণবর্ণ মৃত্যুচিন্তা। আমরা 888sport app download for android করতে পারি একসময়ের সুইজারল্যান্ডের একটি ঘটনা। নগরে কিংবা বাড়ির ড্রয়িংরুমে গড়ে উঠেছিল ‘ডেথ ক্যাফে’। ক্যাফে বা রেস্তোরাঁয় হালকা খাদ্য গ্রহণের সময় জমে উঠতো আলোচনাচক্র। সবই মৃত্যু বিষয়ে। আলোচনায় অংশগ্রহণকারীরা মৃত্যু বিষয়ে যে যার মতামত প্রকাশ করতো। মৃত্যু কী, কেমন, ধর্ম থেকে শুরু করে 888sport apk কী বলে সেসব তো থাকতোই, তার সঙ্গে থাকতো মৃত্যুযন্ত্রণা ভোগকারী জীবিত মানুষের এ-বিষয়ে অভিজ্ঞতা। এ-বড় চিন্তার দূরবর্তী বিস্ময়!
মৃত্যু অনিবার্য জেনেও মৃত্যুর বিছানায় শায়িত মানুষটিকে সান্ত্বনার নামে কঠিন রোগমুক্তির মিথ্যা স্বপ্নের ভেতর টেনে নিতে চিকিৎসক এবং প্রিয় মানুষেরা এসব আড্ডায় অংশ নিত। ‘ডেথ ক্যাফে’ বা মৃত্যুর রেস্তোরাঁর এমনি আলোচনাচক্র একসময় সারাদেশেই ছড়িয়ে পড়ে। আসলে এর পেছনে কাজ করতো ব্যক্তি বা সমাজ-রাষ্ট্রের ভেতর ছড়িয়েপড়া নিঃসঙ্গ বা একাকিত্বের এক নির্মম বাস্তবতা। বিশ্বযুদ্ধ, বিশ্বমন্দা বা মানবসমাজের জীবন এবং চিন্তার স্তর বদলের দ্বান্দ্বিককালের অভিক্রিয়ারই ফলমাত্র – একাকিত্ব নামের এই অন্ধকার। উত্তর সমাজতন্ত্রের এই চলমান কালে বিশ্ব আজ এই ‘ডেথ ক্যাফের’ যুগে পতিত হয়েছে। গণতান্ত্রিক সমাজ-বিশ্ব আজ মহাসংকটে। মানুষের জীবনে দ্রুত বদল ঘটছে। পূর্বের সমস্ত জ্ঞানার্জন যেন অতল অন্ধকারে হারিয়ে যাচ্ছে। জটিল প্রশ্ন হলো, মানবসমাজের ভবিষ্যৎ কী? মানুষ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে ‘অপর’ মানুষ থেকে। জ্ঞানের ভাণ্ডারে যে-শব্দগুলো সংরক্ষিত সে-সবও বুঝি আজ মৃত নক্ষত্রের মতো আকার নিচ্ছে। মানুষ সমাজের ভেতরে থেকেও আজ একাকী, অফুরান সুখের সাগরে ডুবেও দম বন্ধ হয়ে দিশাহীন হচ্ছে ব্যক্তিমানুষ। সে আজ বড় একা, নিঃসঙ্গ।
ব্যক্তির এই মহাসংকটের পেছনে অসংখ্য কার্যকারণ রয়েছে। এর ইতিহাস আছে, ভূগোল আছে, দর্শন আছে। এবার আমরা পেছনে ফিরতে চাই। আমরা মানি বা না-মানি এ-কথা মহাসত্য যে, রাজনৈতিক দর্শনগুলো যা হাজার হাজার বছর ধরে আমাদের এই গ্রহের মানব নামক প্রজাতিবিশ্বকে পথের দিশা দেখিয়েছে, তার পচন ধরছে। অথচ নতুনের আবির্ভাব ঘটছে না। বিশ্বময় রাষ্ট্রসংঘাত, ধর্মসংঘাত, ব্যক্তিসংঘাত, সমাজ-গোষ্ঠীসংঘাত এবং ইত্যাদির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে অভূতপূর্ব ‘মানবিক অবিশ্বাস’। ব্যক্তিস্বার্থ আর পরস্পর অবিশ্বাস যেন করোনা ভাইরাসের মতো বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়েছে। মানুষ তাই একাকী হয়ে পড়েছে। মানুষ একাকী, মানুষ পলাতক। গভীরভাবে চিন্তা করলে দেখা যাবে, এই একাকিত্বের উদ্ভব নতুন নয়। আদিতে ছিল। সৃষ্টিকালে ছিল। আসছে কালেও থাকবে।
বিস্ময় এই যে, মানুষ, অবশ্যই অগ্রগামী মেধাবী মানুষ, অর্থাৎ আদি দার্শনিকেরাও ঈশ্বরের একাকিত্ব নিয়ে বিস্ময়ের সঙ্গে আত্মপ্রশ্ন জাগিয়ে তুলেছেন। বাইবেলের ওল্ড টেস্টামেন্টের ‘জিহোবা’ বা ঈশ্বরকে নিয়ে ‘মোজেস’ বা প্রফেট মুসা অনেক ভেবেছেন, বিস্মিত হয়েছেন তাঁর একাকিত্ব নিয়ে। বাইবেলের অ্যাডাম এবং ইভ যেমনি স্বর্গেও একাকী, মর্ত্যে এসেও তাই। জনশূন্য পৃথিবীতে ঘুরে ঘুরে একাকিত্ব কি জিনিস তা বুঝেছিলেন। অ্যাডাম এবং ইভ একান্তই দুজন, তবু তাঁরা একাকী। কি ভয়ংকর! তাঁরা ঈশ্বর-অভিশপ্ত বলে? আদি পাপের শিকার বলে? অন্তহীন প্রশ্ন। উত্তর কি আছে?
বিশে^র আদি মহাকাব্য ‘রামায়ণ’ রচয়িতা মহাকবি বাল্মীকি উইঢিবি বা বল্মীকের নিচে বসে নিঃসঙ্গ অবস্থায় কাব্যটি রচনা করেন। তাঁর নির্মাণ করা চরিত্র রামচন্দ্রের পরিণাম সভ্যতাবর্জিত বনবাস। সীতার বনবাস ও রাবণ কর্তৃক অপহরণ ও নির্যাতন। অন্যদিকে কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস রচিত মহাকাব্য ‘মহাভারতে’ পাণ্ডবদের বনবাসপর্বে নিঃসঙ্গতা এবং ভয়ংকরের চিত্র মেলে। তাছাড়া ইংরেজ কবি-নাট্যকার শেক্সপিয়রের টেম্পেস্ট কিংবা গ্রিক মহাকাব্যগুলো নিঃসঙ্গ মানুষের আদিম যন্ত্রণার শিহরণ জাগানো বর্ণনা দিয়েছে। মনে হবে, নিঃসঙ্গতা কিংবা একাকিত্বের যন্ত্রণা ভোগ করা মানবজাতির আদি অভিশাপ।
ব্রিটিশ ইতিহাসবিদ ফে বাউন্ড অ্যালবার্টি অসাধারণ একটি বই লিখেছেন। বইটির নাম এ বায়োগ্রাফি অব লোনলিনেস। লেখক দেখিয়েছেন কী করে বিচ্ছিন্নতা গ্রাস করে তারুণ্যকে। যৌবনের অনিয়ন্ত্রিত উজ্জ্বলতা জন্ম দেয় বিষণ্নতা – এটা তিনি জোর দিয়ে বলেছেন। অন্যদিকে হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক রবার্ট পাটনাম আরো বাস্তবধর্মী বই লিখেছেন বোলিং অ্যালোন শিরোনামে। পুঁজিবাদের চূড়ান্ত বিকাশ কীভাবে যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের মধ্যে সামাজিক বিচ্ছিন্নতা বা ব্যক্তির একাকিত্ব তৈরি করেছে, তার প্রামাণ্য দলিল এ-বই। দেশটির সামাজিক কাঠামোও হয়ে গেছে নড়বড়ে। এ-নিবন্ধের রচনাকার নিজ চোখে দেখেছেন এবং আতঙ্কিত হয়েছেন, 888sport appsের বাঙালি অভিবাসী পরিবারগুলো কীভাবে প্রবাসজীবনে ভেঙে পড়ছে এবং তারুণ্য উচ্চশিক্ষা থেকে স্বেচ্ছায় ছিটকে পড়ছে। পরিণত হচ্ছে সস্তার শ্রম বিক্রেতা। নীতিনৈতিকতার তো বালাই নেই। হাঁটছে অন্ধকার পথে একাকী। অন্তহীন বিচ্ছিন্নতা!
জ্ঞানচর্চার রাজধানী বলে খ্যাত ব্রিটেনের অবস্থা তো ভয়াবহ। সেদেশের সরকার বুঝতে পারছে তাদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের গৌরব বা গরিমা আজ কতটা তলানিতে নামছে। তাই সেদেশে তৈরি হয়েছে ২০১৬ সালে ‘জো কক্স কমিশন অফ লোনলিনেস’। সে-সময়ে প্রধানমন্ত্রী টেরিজা মে একাকিত্ব দফতরটির গুরুত্বকে লঘু করে দেখতে মোটেই রাজি হননি।
দেরি হয়ে গেলেও উন্নত অনেক দেশে একাকিত্ব নামে দানবের হাত থেকে আত্মরক্ষার জন্য বৈজ্ঞানিক মেধাকে ব্যবহার করা হচ্ছে। এআই অর্থাৎ ‘আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স’ এক্ষেত্রে ভূমিকা রাখছে। 888sport apkীরা পছন্দমতো মানুষের এআই অ্যাভাটার তৈরি করে তার সঙ্গে ইচ্ছামতো বাক্যালাপ করার পথ তৈরি করে দিচ্ছেন। এতে আইনের বাধা থাকে না। রাষ্ট্রের নীতিপুলিশেরও ভয় নেই। অভিযোগ খাড়া করাও যায় না। এটা এক ধরনের মানসিক থেরাপি। মৃত্যুপথযাত্রীকে তো এভাবে তার প্রিয় সংগীত শুনিয়ে ‘সংগীত থেরাপির’ কাজ চালান চিকিৎসকেরা। এর ফল যে অর্থপূর্ণ হয়, এমন দাবি করা শক্ত। মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফেরা মানুষের বর্ণনায় জানা যায়, তার শয্যা ঘিরে থাকা প্রিয়জনের উপস্থিতি তিনি প্রায় অনুভবই করেন না। করলেও তাঁরা তাঁর কাছে অচেনা-শোকাহত মানবমূর্তি মাত্র। তাঁর সামনে তখন আধিভৌমিক এক আলো-আঁধারি দুনিয়া থরথর কাঁপে।
একাকিত্ব যে কি ভয়ংকর অচিন্ত্যনীয় দুর্ভোগের সামনে ফেলে মানুষকে তা বুঝেছিলেন রুশ বিপ্লবপূর্ব জারতন্ত্রের দ্বারা নিগৃহীত বিপ্লবীরা। জনমানবশূন্য সাইবেরিয়ার অন্তহীন বিস্তীর্ণ ঘন অরণ্য আর তৃণভূমিতে একাকী একজন মানুষ। কোথায় খাদ্য? কোথায় পানীয়? নির্বাসিতরা কেউ গেল নেকড়ের পেটে, কেউ মরলো ক্ষুধায়। যারা বেঁচে রইল তারাই একদিন গড়ল জনবসতি। অচেনা মানুষ মিলে সৃষ্টি করলো চার্লস ডারউইনের প্রজাতি বিবর্তনের নতুন মানব প্রজাতি। মানুষের একনিষ্ঠ বিজয়ের এ হচ্ছে মহান দৃষ্টান্ত। কমিউনিস্ট বিপ্লব হলো রুশ দেশে ভøাদিমির ইলিচ লেনিনের হাত ধরে। আবার সেই নির্বাসন। জারপন্থিরাও একই পরিণতিতে পা ফেলল। লেখা হলো ইতিহাস। সৃষ্টি হলো চিরায়ত রুশ 888sport live football। চীন বিপ্লবেও ঘটল একই ঘটনা। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে বাঙালিসহ অসংখ্য বিপ্লবীকে নির্বাসিত হতে হলো ওই দূর দ্বীপ আন্দামানে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মণিপুরে কত ব্রিটিশ আর জাপানি সৈন্য হারিয়ে গেল গভীর অরণ্যে। একাকী হলো মহাযুদ্ধে। নিঃসঙ্গ মৃত্যুবরণ করল।
অচরিতার্থ মানব-মানবীর প্রেমবিরহের নামে বিচ্ছিন্নতা তৈরি করে। একাকী করে দেয় মানুষকে। বিশ্ব 888sport live football, সংগীত পূর্ণ হয়ে আছে বিরহের কথা আর সুরে। রবীন্দ্রসংগীত অন্তহীনকাল ধরে মানব-বিরহের অক্ষয় দৃষ্টান্ত হয়ে টিকে থাকবে। তাঁর ‘পূজা’পর্বের সংগীতে তো আসলে ঈশ্বরের আড়ালে রয়েছে নর-888sport promo codeর বিরহের কাতরতা।
যে-বিচ্ছেদ মানুষকে একাকী করে, আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেয়, সে যে বড় ভয়ংকর। রবীন্দ্রনাথের প্রিয় বৌঠান (বৌদি) কাদম্বরী দেবীর আত্মহত্যাকে কি ঠেকাতে পেরেছে পারিবারিক জমিদারতন্ত্র, অর্থ-বৈভব, খ্যাতি? জীবন পরিপূর্ণতার ভেতর কাদম্বরী দেবী কেন প্রাণঘাতী আফিমের ভেতর নিজেকে সঁপে দেবেন? বিশ্বের এত কোলাহল আর আনন্দের ভেতর কেন তিনি ছিলেন নিঃসঙ্গ, শূন্য, একাকী?
যৌবন ফুরিয়ে যায় নিমেষে বিদ্যুচ্চমকের মতো। আসে বার্ধক্য। সে এক কালো অন্ধকার নরকজীবন। জীবন ফুরিয়ে আসে, অথচ মৃত নদীরেখার জলশূন্য মৃত্যুর চিহ্নটি দীর্ঘ হতেই থাকে। বার্ধক্যের মৃত নদীর তলায় জমাট বেঁধে থাকে মৃত ঝিনুকের ফসিল। অভিশপ্ত বার্ধক্যের দায় নেয় না পুত্র-কন্যা, প্রিয়জন। নেয় না ঈশ্বর-দেবদেবী। একান্ত পরনির্ভর চলচ্ছক্তিহীন মানুষটি একাকী বসে থাকে দূরে দৃষ্টি মেলে। ওই দূরে কেবলই অন্ধকার। আরো দূরে অদৃশ্য শব্দ পৃথিবীর, মানুষের। পাখির ডাক, বাতাস লাগা গাছের পাতার শব্দ। নিঃসঙ্গ মানুষটির আত্মকথন চলে প্রাকৃত-অতিপ্রাকৃত জগতের সঙ্গে। পরকাল ভয় দেখায় তাকে। ঈশ্বর আর শয়তান অগ্নিময় চোখে প্রতিহিংসা আর ঘৃণায় একাকী মানুষটিকে পোড়াতে থাকে। শৈশব-কৈশোর আর যৌবন 888sport sign up bonusর পাখির ঝরা পালক ফেলে কেবলই উড়ে উড়ে বেড়ায়। তারপর একদিন কোনো এক প্রহরে ওই যে দুনিয়ায় একা আসা আর একা যাওয়ার অপার অন্ধকারের ভেতর কেবলই হেঁটে যাওয়া। একা। সঙ্গীহীন।
একাকিত্বের রয়েছে অন্তহীন, 888sport free betতীত রূপের ঝিলিক। ব্যাধি এক ভয়ংকরের রূপ। রোগব্যাধিমুক্ত জীবন কল্পনার অতীত। মৃত্যু যেমন জীবনের সঙ্গী, ব্যাধিও তাই। পাখি ও পশুদের পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, ব্যাধিতে আক্রান্ত হলে দল তাকে পরিত্যাগ কিংবা বিতাড়ন করে। রোগাক্রান্ত পাখি বা পশুটি মৃত্যুর অপেক্ষায় একাকী হয়ে যায়। নিঃসঙ্গ মৃত্যু ঘটে তার। আধুনিককালে লুপ্ত হয়ে গেছে এমন কিছু প্রথা চমকে দেওয়ার মতো। এমনি একটি প্রথা বা বিশ^াস হিন্দুসমাজেও ছিল। যেমন ‘অন্তর্জলি যাত্রা’। বিখ্যাত লেখক কমল কুমার মজুমদার এ-নামে 888sport alternative link লিখেছেন। এ আখ্যান নিয়ে live chat 888sportও হয়েছে। অন্তর্জলি যাত্রায় মৃত্যুপথযাত্রী ব্যক্তিকে শরীরের একাংশ গঙ্গা নদীর জলে ডুবিয়ে পারলৌকিক ক্রিয়া করা হয় মৃত্যুর পর স্বর্গলাভের বিশ্বাসে। মৃত্যুপথযাত্রী পুনরায় গৃহে ফেরে না। মৃত্যুর অপেক্ষায় কয়েক ঘণ্টা বা প্রহর-দিন নিঃসঙ্গ পড়ে থাকে গঙ্গাতীরে। একাকী সে অপেক্ষা করে মৃত্যুদূত যমের এবং সেই ঈশ্বরের, যিনি তাকে পথ চিনিয়ে নিয়ে যাবেন কল্পিত আর বিশ্বাসের স্বর্গলোকে। তার কি তখন একবারও মনে পড়বে না পরিত্যাগ করে আসা ঘর-সংসার আর প্রিয় মানুষের কথা, যারা তাকে পরিত্যাগ করেছে?
অন্যপ্রান্তে ছিল ‘চতুরাশ্রাম’। চার ধরনের ‘আশ্রম’ বা অবস্থা। ব্রহ্মচর্য, গার্হস্থ্য, বানপ্রস্থ এবং সন্ন্যাস। মানবজীবনের শেষ অধ্যায় হচ্ছে সংসার এবং ভোগবিলাস, অর্থ আর গৃহত্যাগ করে সন্ন্যাসে চলে যাওয়া। প্রাচীনকালের রাজারা তেমনি বৃদ্ধকালে সিংহাসন এবং রাজবাড়ি ত্যাগ করে একবস্ত্রে সংসারের মায়ার বন্ধন ছিন্ন করে ঈশ্বর সাধনার ভেতর প্রাণত্যাগ করতেন স্বর্গের আশায়। বিশেষ করে, প্রবল বিশ্বাসে। এ-বিশ্বাস মানুষকে যে নির্মম পরিণতির দিকে টেনে নিয়ে নিষ্ঠুর একাকিত্বের যন্ত্রণায় গভীর অন্ধকার জগতে টেনে নিয়ে যায়, তা ভাবতেও গা শিউরে ওঠে।
প্রিয় হারিয়ে যাওয়ার শোক প্রতিটি মানুষকেই সহ্য করে যেতে হয়। শোক বা দুঃখ ভোগ জীবনেরই অংশ। যিশুখ্রিষ্ট থেকে শুরু করে জগতের সব নবী বা অবতারকে সীমাহীন কষ্ট ভোগ করতে হয়। ভয়ংকর মৃত্যুযন্ত্রণা বা ব্যাধি-যাতনা ভোগ ছিল অলঙ্ঘনীয় বিধান। এই যন্ত্রণাভোগের অংশী কেউ হয় না। একাকী, একাকিত্বের ভেতর চলে তার গমনাগমন। জোড়াসাঁকোর রবীন্দ্রপরিবারের খ্যাতিমান পুরুষ চিত্র888sport live chatী গগনেন্দ্রনাথকে 888sport live chatী করে তুলেছিল তাঁর পুত্রশোক। অকালমৃত পুত্রশোককে সহ্য করার শক্তি সন্ধান করেছিলেন তিনি হাতে তুলি নিয়ে ছবি আঁকার ভেতর। সেই ছবির রং ছিল সাদা-কালো। কালো মানে অন্তহীন অন্ধকার। তিনি আঁকেন কালো বর্ণে আচ্ছাদিতা অবগুণ্ঠিতা এক 888sport promo code। তিনি অঙ্কন করেন জীবন এবং মৃত্যুর সীমানার সেই ‘বৈতরণী’ নদী। মৃত্যুর ভেতর দিয়ে শিহরণ জাগানো সাঁতার। পাপী আর পুণ্যবানের অন্তিমযাত্রা। ইহলোক থেকে পরলোকে যাত্রার দৃশ্য। মৃত্যুর অধিপতি যমরাজ তাঁর তুলিতে জেগে ওঠেন। তবু শোক তাঁকে মুক্তি দেয়নি। কালো বা অন্ধকার রং তাঁকে এবং তাঁর চৈতন্যকে আমৃত্যু আঁকড়ে থাকে। ঠিক তেমনি রবীন্দ্রনাথকেও মৃত্যুশোক আর একাকিত্ব ছাড় দেয়নি। কাজী নজরুলকে শিশুপুত্র বুলবুলের মৃত্যুশোক ভয়ংকর একাকিত্বে টেনে নেয়। তিনি ভয়ংকর মৃত্যুর দেবী কালীর এক কল্পলোকে শিহরিত হয়ে উঠতেন। মনে হতো, এই মৃত্যু পিতা হিসেবে তাঁকে একাকী করে দিয়েছে।
গৌতম বুদ্ধকে নির্বাণলাভের কঠোর তপস্যা চরম নিঃসঙ্গতায় ফেলেছিল। নিরঞ্জনা নদীতীরের জন্যশূন্য নির্জতায় তিনি ধ্যানমগ্ন হয়েছিলেন। সুজাতা নামে এক যৌবনবতী 888sport promo code তাঁকে পায়সান্ন খাইয়েছিলেন। সেখানেই বোধিবৃক্ষের তলায় তিনি নির্বাণ লাভ করেন। একমাত্র সঙ্গী আনন্দকে নিয়ে বৈশাখি পূর্ণিমা রাতে একাকিত্বকে পেছনে ফেলে নগর এবং মানুষের কাছে ফেরার জন্য পা ফেলেন। গৌতমের এ-যাত্রা নিয়ে ঐতিহাসিক এবং দার্শনিকদের নানা প্রশ্ন থাকতে পারে। প্রশ্ন থাকতে পারে অরণ্য সরদারকন্যা যুবতী সুজাতাকে নিয়েও। কিন্তু সেসবের বাইরে নির্বাণ-সাধনার একাকিত্ব মুক্তির যাত্রাও অন্য নানা প্রশ্ন জাগাতে পারে। সে-সবই অন্য কথা।
মানুষ মানুষকে একাকী করে দেয়, বন্দিজীবনে টেনে নেয় রোগব্যাধির নামে। এ-ব্যাধি মহামারির আকার নিয়ে বারবার বিশ^সভ্যতাকে আঘাত করেছে। প্রাচীনকাল থেকে আজ অবধি অসংখ্য নগরসভ্যতাকে প্রাণশূন্য করে দিয়েছে। সুমেরীয় সভ্যতা, হরপ্পা সভ্যতা, রোমান সাম্রাজ্য, মিশরীয় সভ্যতা ধ্বংসের পেছনে প্লাবন, ভূকম্পনের চেয়ে রোগ-মহামারির তত্ত্বই গবেষকদের কাছে সবচেয়ে জোরালো হয়ে উঠেছে। মহামারি দেখা দিলে মানুষকে পরিবার-সমাজ-সংসারবিচ্ছিন্ন করা বা নির্বাসনে পাঠানোর বিষয়টি নতুন নয়। দূরঅতীতের প্লেগ, বসন্ত, কলেরা, ম্যালেরিয়া কি করে ইউরোপীয় সভ্যতাকে নাস্তানাবুদ করেছে তার প্রমাণ ইতিহাসে আছে।
যুদ্ধ-মহাযুদ্ধ-ক্ষুধা-দুর্ভিক্ষ মানবের যত শত্রু তার চেয়ে ভয়ংকর শত্রু হচ্ছে পৃথিবীতে আচমকা আবির্ভাব হওয়া অচেনা-অদেখা নতুন কোনো রোগ। মাত্র দু-বছর পূর্বে আচমকা আবির্ভাব হওয়া কোভিড বা করোনার ভয়ংকর 888sport sign up bonus মানুষ ভুলবে না। চীনের জীবাণু গবেষণা কেন্দ্রে তৈরি এ ভাইরাস সারাবিশ্বে এক কোটিরও বেশি আদম সন্তানকে খতম করেছে। এটাও নির্মম সত্য যে, করোনা প্রতিরোধের ভ্যাকসিন তৈরি ও বাণিজ্যে ইঙ্গ-মার্কিন ওষুধ কোম্পানিগুলো বিলিয়ন-মিলিয়ন ডলার-পাউন্ড অর্জন করে খুব অল্প সময়ে সম্পদের হিমালয় তৈরি করেছে।
কথা এটা নয়, আসল কথা হলো, সেই মহাবিপদের সময় মানুষ কিভাবে স্বেচ্ছাবন্দি জীবন এবং একাকিত্বকে বরণ করতে বাধ্য হয়েছে, সেই অধ্যায়টি। একাকী গৃহবন্দি মানুষ যে কত অসহায়, কতটা মৃত্যুভয় নিয়ে প্রতিটি মুহূর্ত কাটিয়েছে তা ভাবনার অতীত। যে-হাসপাতালে গেছে সে আর ফেরেনি। কবে তার মৃত্যু হয়েছে, লাশ কোথায় গেছে – তাও হয়তো জানতে পারেনি প্রিয়জনেরা। ভারতের উত্তর প্রদেশে হাজার হাজার মৃতদেহ পশুর মতো
গঙ্গা-যমুনা নদীতে নিক্ষেপ করা হয়। মৃতদেহ কবর দেওয়ার বা দাহ করার স্থান ছিল না, জনবলও ছিল না। মৃতদেহ পোড়ানোর অতিকায় বৈদ্যুতিক চুল্লিগুলো ২৪ ঘণ্টা কালো ধোঁয়ায় আকাশ অন্ধকার করে রাখতো। আর তখন একাকী মানুষ মৃত্যুর কাছে আত্মসমর্পণ করে গুনতো কেবল প্রহর। একাকিত্ব কী, নিশ্চয়ই তখন মানুষের সামনে ঘন অন্ধকারের হিম-শীতল এক অচিন্তনীয় জগৎ দুলে উঠতো। বারবার সেই বোধের অচেনা অনুভবে তারা চেতনা হারাতো।
888sport promo codeর বৈধব্য বঙ্গ-ভারতীয় সমাজে এই আধুনিক যুগেও এক অভিশাপ। কেবল এখানেই এর শেষ নয়। প্রাচ্য দেশগুলোর 888sport promo codeমাত্রই শেকল-বন্ধনে আবদ্ধ। বিদ্যাসাগর থেকে শরৎচন্দ্র এ-বিষয়ে সারাজীবন আন্দোলন এবং সংস্কারের পথে হেঁটেছেন। বঙ্কিমচন্দ্র তাঁর লেখায় বিধবাদের সংকট চিহ্নিত করেছেন, কিন্তু পথ দেখাতে পারেননি। শরৎচন্দ্র অসহায় বিধবাদের একাকিত্ব থেকে মুক্তির জন্য তীর্থভূমি কাশীতে পাঠিয়ে দিয়ে ঈশ্বরসেবায় মুক্তির সন্ধান দিয়েছেন। অবশ্যই তা ছিল তৎকালীন হিন্দু সমাজের মানসচৈতন্যের বাস্তবতা। সাতচল্লিশের দেশভাগের সময় উদ্বাস্তু বা শরণার্থী পরিবারের বিধবারা পশ্চিমবঙ্গে এসে পরিবারের ভেতর দাসীজীবনের অভিশাপকে কাঁধে তুলে নিতে বাধ্য হয়। মুক্তিযুদ্ধ বা একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় অসংখ্য বাঙালি 888sport promo code গণহত্যার ভেতর দিয়ে স্বামী হারিয়ে বৈধব্যবরণ করেন। নিহত মুক্তিযোদ্ধার তরুণী বধূ ‘ভবিষ্যৎ’ জীবনের নামে প্রচলিত সমাজ সংস্কারের চাপে পুনরায় বিয়ে করতেও বাধ্য হয়। কিন্তু চোখের সামনে ঝলমল করে নিহত স্বামীর রক্তাক্ত লাশ। এভাবেই গণহত্যার শিকার আর মুক্তিযুদ্ধের শহিদ 888sport promo codeকে যে শোকভেজা একাকিত্ব দান করে তার অন্ধকারের গভীরতা অতলস্পর্শী। তাছাড়া একাত্তরের যুদ্ধ আর চুয়াত্তরের দুর্ভিক্ষে 888sport free betতীত শিশু হারিয়ে যায়। কেউ কেউ ফিরে এলেও অনেকে ফেরেনি। ওরা মৃত না জীবিত – তার উত্তর ‘স্বাধীনতা’ কি দিতে পেরেছে? একাকী কোথায় হারিয়ে গেল ওরা?
আধুনিকতা দিয়েছে বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তি। মানুষ প্রযুক্তির নির্ভরতাকে সীমাহীন স্তরে টেনে নিয়েছে। এ যেন এক জাদুবিদ্যার আকর্ষণ। মার্কিন অধ্যাপক শেরি টার্কল দেখিয়েছেন প্রযুক্তির অতিনির্ভরতা মানুষকে ডিজিটাল দুনিয়ায় ঠেলে গভীর একাকিত্বে ডুবিয়ে দিচ্ছে। কম্পিউটার, ল্যাপটপ এর দৃষ্টান্ত। জীবন্ত মানুষ দূরে সরে যায়, যন্ত্রমানব-সেলফোন সামনে দাঁড়ায়।
একাকিত্বের পরমাত্মা হচ্ছে নেশা, মাদক। মানুষ যখন বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় অন্য মানুষ থেকে তখন ছায়া-মানব বা মানবীর রূপ নিয়ে সামনে এসে দাঁড়ায় মাদক। সেই মাদক তাকে মায়াবী জগতে নিয়ে যায়। শুরু হয় শরীর এবং মনের ক্ষয়। মৃত্যু যদি তাকে ঘৃণা করে, তবু মৃত্যুর প্রতি প্রেম জাগ্রত হয় এবং তাতেই আত্মবিলোপ ঘটায়। অর্থাৎ আত্মহত্যা করে। এই আত্মহনন চলে একাকী, সংঘবদ্ধ নয়।
উন্নতমানের প্রযুক্তি শ্রমের বাজার ধ্বংস করে দিচ্ছে। হাজারো কর্মিহাত ভেঙে দিয়ে একটিমাত্র যন্ত্র হাজার জনের কাজ কেড়ে নিয়ে কর্মহীন বেকারের পাহাড় তৈরি করছে। প্রযুক্তি বদলের পর পুঁজিবাদী সমাজ শ্রমিক ছাঁটাই করছে। সারাবিশ্বেই বেকারের 888sport free bet বৃদ্ধি পাচ্ছে। বেকার মানুষ কাজের সন্ধানে ছুটছে উন্নত বিশ্বের দিকে। সমুদ্র কিংবা দুর্গম স্থলপথে দেশ-সীমানার বাইরে প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে ছুটছে মানুষ। পথেই মৃত্যু ঘটছে অনেকের। অবৈধ অভিবাসী হয়ে জেলে ঢুকছে। অতিসম্প্রতি মার্কিন সরকার হাতে-পায়ে শেকল পরিয়ে কয়েকশো ভারতীয় অবৈধ অনুপ্রবেশকারীকে বিমানে করে দিল্লি পাঠিয়ে দিয়েছে। এই অবৈধ অনুপ্রবেশকারীরা আপন পরিবার রক্ষার্থে একাকী ঢুকে পড়েছিল মার্কিন দেশে। সীমান্তে ধরা পড়ে। জেল খাটে। বন্দি অবস্থায় একাকী ফিরে আসে। এমনি একাকিত্ব বড় যন্ত্রণার। পরিণামে ব্যর্থ জীবন নিরাশার অন্ধকারে একাকী হারিয়ে যায়। কাজের অধিকার, বাঁচার অধিকারশূন্য একাকী জীবন পৃথিবীর বোঝা হয়ে সভ্যতার অহংকারে ডুবে আর্তনাদ করেই হারিয়ে যায়। তাদের আর্তনাদ
মানবতা-মনুষ্যত্বের কানে পৌঁছে না।
একাকী মানুষের জীবন ব্যাখ্যা বড় জটিল। সম্প্রতি জানা গেছে, দু-বছর পূর্বের করোনাকবলিত উন্নত দেশ জাপানে অসংখ্য মানুষ পরিবার-প্রিয়জন হারিয়ে একাকী নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েন। এর পরিণাম হয় ভয়াবহ। দেখা গেছে, এতে করে জাপানে আত্মহত্যার হার বেশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এ আত্মহত্যার অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে করোনায় গণমৃত্যু। পরিবারগুলোতে নেমে এসেছে মৃত্যুর স্তব্ধতা। একমাত্র জীবিত মানুষটির অসহ্য নিঃসঙ্গ মুক্তির একটাই খোলা পথ – আত্মহনন। জাপানিরা তাই করছে।
ঔপনিবেশিক শাসন এবং বিশ্বযুদ্ধের প্রভাব এসে পড়ে বাঙালি সমাজে। তাছাড়া সঙ্গে ছিল ইংরেজের চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত এবং গ্রাম-শহরে পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থার প্রভাব। এর ফলে সমাজের স্থিতাবস্থা ভাঙতে থাকে। পারিবারিক জন888sport free betও বৃদ্ধি পায়। এর ফলে যৌথ পরিবারগুলো ভাঙতে থাকে। শিক্ষিত শ্রেণি গ্রাম ছেড়ে শহরে প্রবেশ করতে থাকে। গড়ে ওঠে কম সদস্যের ছোট ছোট পরিবার। অন্যদিকে বাস্তবতা তো ছিলই, সঙ্গে যোগ হয় পশ্চিমা বিশ্বের প্রভাব। বাঙালি শুনল ‘মাইক্রো ফ্যামিলি’ বিষয়টি। স্লোগান উঠলো – ‘ছোট পরিবার, সুখী পরিবার।’ নগরায়ন যত হলো, তত ভাঙলো যৌথ পরিবার। রাজনৈতিক কারণে জন্মনিয়ন্ত্রণ বিষয়টি উচ্চারিত হলো মৃদু শব্দে। রক্ষণশীলতা যে বড় বালাই।
দেশে শিক্ষিত আর অশিক্ষিত কারো কাজের সহজ পথ রইল না। বাঙালি স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করে প্রাণ দিলেও স্বাধীন দেশ ছেড়ে কাজের খোঁজে বিদেশে বেরিয়ে পড়ে বাধ্য হয়েই। দেখতে দেখতে শহরের বাড়িগুলো জনশূন্য হতে লাগল। স্বপ্নতাড়িত বাঙালি স্বপ্নের দেশ ইউরোপ, আমেরিকার মাটি ছোঁবে বলে ডানাওয়ালা পরি হয়ে যায়। স্বেচ্ছা-ক্রীতদাস হতে উন্নত দেশের শ্রমের বাজারে কোরবানির গরুর মতো ভিড় জমায়। আর এদিকে শহরের বাড়িগুলো জনশূন্য হয়ে পড়ে। ওইসব শূন্য বাড়ি বা অ্যাপার্টমেন্টে পড়ে থাকে বিনে মায়নার পাহারাদার বৃদ্ধ
পিতা-মাতা। অনেক ক্ষেত্রে একমাত্র নিঃসঙ্গ পিতা। কেউ কেউ লাশ হয়ে কবরের পথে হেঁটে যায়। দেখা যায়, একা পড়ে মরে থাকা লাশটির সন্ধান মেলে পচন ধরার পরে। যে মরে পড়ে রইল তার অন্তিমসময়ের ইতিহাস লেখার জন্য কোনো সাক্ষী থাকে না। একাকী এমনি মর্মস্পর্শী মৃত্যুর সংবাদ সংবাদপত্রের কোনো দু-তিন লাইনের খবর হয়ে পাঠকের দৃষ্টির আড়ালে পড়ে থাকে।
বঙ্কিমচন্দ্রের রচনা ‘কে গায় ওই’ পাঠকমনে আজো নাড়া দেয়। ‘কেউ একা থাকিও না। কেউ যদি তোমার প্রণয়প্রার্থী না হইল … এ জীবন বৃথা হইল …।’ যিনি একা কেবল তিনিই একাকিত্বের যন্ত্রণাটা টের পান। তখন নিজের সঙ্গে নিজেকেই কথা কইতে হয়। নিজের ভেতর নিজেই একজন কল্পিত অবতার তৈরি করে কথা বলেন। মনো888sport apkীরা বলেন, পরিণত বয়সের একাকিত্বের শিকার অসহায় ব্যক্তি দূর অতীতের কোনো হারানো (মৃত) প্রিয়জনের সঙ্গে কথা বলেন, হাসেন, কাঁদেন। এমনটা ঘটে তাঁর চিন্তার ভেতর। জীবনের অচরিতার্থ কোনো অপ্রাপ্তির কল্পিত প্রাপ্তি ঘটে। নির্জনতা তাঁকে টানে। বিষণ্নতা তাঁকে এক ‘মায়া’ বা ম্যাজিকের দুনিয়ায় টেনে নেয়।
বাংলা কাব্যজগতে জীবনানন্দ দাশ কেবল বিষণ্নতারই কবি নন, একাকিত্বেরও কবি। তাঁর ‘পেঁচা’ 888sport app download apkয় রাতভর একা জেগে থাকে যে নিশিপাখি, সে নির্জন-নিস্তব্ধর মহারহস্য জানে। মানুষের জানার কথা নয়। রবীন্দ্রনাথ জানেন তাঁর অনুভবের ‘জীবনদেবতা’র মহারহস্য। একা থাকার এ-রহস্য কেবল ভাববাদী দর্শনের বিষয় নয়, বস্তুবাদী দর্শনেও অন্য অর্থ জেগে ওঠে।
সবশেষে এ-কথা দাবি করা চলে যে – একা, একাকী, একাকিত্ব মানবজীবনের এক অলঙ্ঘনীয় অভিশাপ। এমন কোনো মানুষ নেই যিনি কোনো না কোনো সময় এর রহস্যময়তায় আটকে পড়েননি। কেননা ‘দুঃখ’ এই একাকিত্বের যমজভাই। দুঃখ হচ্ছে মহাসত্য, একাকিত্বও তাই। একাকিত্ব থেকে আত্মরক্ষার একটাই পথ – বিচ্ছিন্নতার বদলে মানুষকে, সমাজকে আঁকড়ে ধরা। যতই দুঃখ আসুক মানুষের কোলাহলের দিকে ছুটে যাওয়া, মানুষের ভেতর আশ্রয় নেওয়াই সত্য। মানুষই মানুষের শান্তির ঠিকানা, অন্য কোনো কল্পিত ঠিকানা নয়।
তত্ত্বকথার পর্দা টেনে নিবন্ধটির গন্তব্য শেষ হবে একটি বাস্তব আখ্যানের ভেতর। নব্বই পেরিয়ে যাওয়া আমার মাসিমা। প্রায় প্রতিদিন ১৫-২০ মিনিটের জন্য হলেও তাঁর কাছে আমাকে যেতে হয়। পুরনো পৃথিবীর সেই ঔপনিবেশিক কালে আমি হেঁটে যাই মাসিমার হাত ধরে। আমার 888sport live footballের উপাদান। মাসিমা ছিলেন 888sport app-বিক্রমপুরের এক অভিজাত বসু পরিবারের মেয়ে। আর মামা? মহাযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর সদস্য, কবি নজরুলের মতো। শেষে ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতাকামী বিপ্লবী দলের সদস্য, বাম-কমিউনিস্ট কর্মী। দেশভাগের পর পশ্চিমবঙ্গে শরণার্থী শিবিরে গড়ে ওঠা বিদ্যালয়ের শিক্ষক। আজীবন সাম্যবাদী আদর্শে বিশ্বাসী। সিপিআইএম সমর্থক ছিলেন মামা নরেন চৌধুরী।
বিবাহের পর নববধূ মাসিমার প্রধান কাজই ছিল স্বদেশি আন্দোলনের আত্মগোপনকারী সদস্যদের রেঁধে খাওয়ানো। সেই মাসিমা আজ নিঃসঙ্গ, একাকী। পুত্রশোক, স্বামীশোকের যন্ত্রণা বয়ে চলেছেন। জীবিত পুত্র, মৃত পুত্রদের
স্ত্রী-সন্তানেরা আর কন্যাদ্বয় পৈতৃক ভিটা বেচে-বর্তে যে যার পথ ধরেছে। যে-ঘরটির বিছানায় আমার মাসিমা অর্থাৎ বীণাপাণি বসু চৌধুরী শুয়ে-বসে মৃত্যুর প্রতীক্ষায়, তার মালিকানাও তাঁর নয়। যে গৃহপরিচারিকা রয়েছে তার মাসমায়না আর নিজের বেঁচে থাকা, তা চলে মৃত স্বামীর পেনশনের টাকায়। রাতে গৃহপরিচারিকা উদ্বাস্তুবস্তির বাসিন্দা চলে গেলে মাসিমা একা হয়ে যান। একাকী, বয়সের ভারে আনত শরীর আর পুরনো পৃথিবীর 888sport sign up bonusরা অবতার আর শয়তানের রূপ নিয়ে সামনে দাঁড়ায়। মাসিমা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। তাই ঘরের টিভির ভেতর ছায়ামানবেরা জেগে থাকে মাসিমার সঙ্গে। তাদের বাক্যালাপের শব্দে মাসিমাও কথা বলেন বিড়বিড় শব্দে।
মাসিমা ভাবেন, তাঁর জীবন এত দীর্ঘ কেন? এর উত্তর নেই। দেয়ালভর্তি সাদা-কালো যে ছবি লটকে আছে তারা তাঁর বিগত জীবনের সাক্ষ্য বহন করে। চোখে ভাসে বাল্যজীবনের জন্মভিটের বিক্রমপুর। উপনিবেশ যুগের বিক্রমপুর এবং তার প্রকৃতিবিশ্ব। মাসিমা বিড়বিড় করে আমাকে বলেন, ‘ভাগনে, মরে যাওয়া স্বামী আর সন্তানদের হারানোর শোক সহ্য করা যায়, তুমিই বলো বাবা, নিঝুম রাতে একলা একটা ঘরে তোমার এই পাপী মাসিমা ক্যামনে থাকে? ডর-ভয় করে না বাবা?’ এর উত্তর আমার জানার কথা নয়। এ যে একাকিত্বের প্রেত-জগৎকথা।


Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.