এক প্রশাসকের দরদি কলমে দেশভাগ

অমিত বন্দ্যোপাধ্যায়

সে যেটুকুবা লেখা হলো, পড়া হলো কই? পড়া হতে পারল কই?-ইতিহাস লেখা হলো কই! লেখা হতে পারল কই!

দেশভাগ আর দেশভিখারিদের ইতিহাস। দেশভিখারিরাও সে-ইতিহাস পড়তে চাইল কি?

বাংলা 888sport live footballের প্রথিতযশা আলোচক অশ্রম্নকুমার সিকদার বলেন, যুদ্ধ নেই, আপাতত সব শান্তিকল্যাণ হয়ে আছে এমন পরিস্থিতিতে মানব-ইতিহাসের সবচেয়ে বড় গণপ্রব্রজন [দেশত্যাগ] ঘটেছে ভারতভাগের ফলে। কিন্তু সে-ইতিহাস সম্পর্কে নীরব থেকে বাংলা 888sport live football নিজেকে দরিদ্র করল না কি?

বাংলা 888sport live footballের অন্যতম প্রধান লেখক হাসান আজিজুল হক নিজেকেই যেন প্রশ্ন করেন, একালের পাঠকের কাছে
কোনোভাবেই কি পৌঁছে দেওয়া সম্ভব কত বড় মানব বিপর্যয় ঘটেছিল ১৯৪৭ সালে, ঠিক কতটা ক্ষতি হয়েছিল মানুষের সংসারে, কতটা বর্বরতার ভেতরে ঢুকে গিয়েছিলাম আমরা?

ইতিহাসের অধ্যাপক ও উদ্বাস্ত্ত ইতিহাসের নিষ্ঠাবান গবেষক, যিনি নিজেও দেশভিখারি, প্রফুলস্নকুমার চক্রবর্তী একই প্রশ্ন নিয়ে ঘুরেছেন জীবনের বড় একটা সময়। তারপর
কাজে নেমে এ-প্রশ্নের একটা উত্তর পেয়েছেন তাঁর অভিজ্ঞতায়। প্রফুলস্নবাবুর বয়ান অনুসারে : সময়টা আশির দশক। পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় বামফ্রন্ট।
যে-রাজনৈতিক জোটের প্রধান শরিক দলগুলো ষাটের দশক থেকে উদ্বাস্ত্তদের বিপুল সমর্থন পেয়েছে, সেই জোট সরকারের পুনর্বাসন মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে লেখক
বলেছিলেন, উদ্বাস্ত্তদের নিয়ে একটা বই লিখতে চাই এবং সেজন্য পুনর্বাসন দফতরের নথিপত্র ও দলিল-দস্তাবেজ দেখা প্রয়োজন। মন্ত্রী জবাব দেন, আপনি যুক্তি দিয়ে আমাকে বোঝান যে, এই বই লেখার প্রয়োজন আছে। যদি বোঝাতে পারেন, তাহলে যা চাইছেন, পাবেন। যদি আমি আপনাকে বুঝিয়ে দিই যে, এই বই লেখার প্রয়োজন নেই, তাহলে নথিপত্র দেখতে দেওয়ার প্রশ্নই উঠবে না। কী আশ্চর্য জবাব মন্ত্রী মশাইয়ের! ভাবা যায়! পশ্চিমবঙ্গের মন্ত্রী-আমলারা দেশভাগ ও উদ্বাস্ত্তজীবন নিয়ে লেখা ‘অপ্রয়োজনীয়’ মনে করেছেন। এই মনে করার মূলে ছিল রাজনৈতিক হীনবুদ্ধি। মন্ত্রী মশাই বোঝাবুঝির জন্য আর সময় দেননি লেখককে। সৌজন্যের
কথাটুকু বলেননি। বোঝা যায়, দেশভাগ আর দেশভিখারিদের ইতিহাস লেখার ক্ষক্ষত্রে একটা অবরোধ ছিল। দফতরে দফতরে ঘুরে ‘পশ্চাদ্দেশে লাথি’ খেয়েছেন প্রফুলস্নকুমার চক্রবর্তী। ইতিহাসের দায় থেকে তিনি উপলব্ধি করেন, এমনিতেই দেরি হয়েছে। অনেক নথি নষ্ট হয়ে বা হারিয়ে গিয়েছে। এরপর আর কিছুই পাওয়া যাবে না। বই লেখা হলে আজকের প্রজন্ম না হোক, ভবিষ্যতের কোনো প্রজন্ম পড়বে। লেখা হওয়াটা দরকার। একটা প্রচ- জেদ কাজ করেছিল প্রফুলস্নকুমার চক্রবর্তীর ভেতর। সে-যুগের কলেজ মাস্টারির বেতন ও পরে পেনশনের মাত্র কয়টা টাকা সম্বল করে এবং অসুস্থ শরীরটাকে তাড়িয়ে তিনি ছুটেছেন বিভিন্ন রাজ্যে, যেখানে
ক্যাম্পে-কলোনিতে উদ্বাস্ত্তরা ছড়িয়ে আছে। নিজের পয়সায় বই ছেপেছেন। তাঁর বইয়ের প্রচ্ছদ এঁকে দিয়েছেন আরেক দেশভিখারি 888sport live chatী গণেশ হালুই। প্রফুলস্নবাবু বলেছেন, ‘উদ্বাস্ত্তরা দুরন্ত পদ্মার সমত্মান। জীবনের অনিশ্চয়তাকে শান্তভাবে গ্রহণের ক্ষমতা ও অস্থিরতা – দুই-ই পদ্মা তাদের মধ্যে সংক্রামিত করেছে। উদ্বাস্ত্ত অসিত্মত্বের মধ্যেও এই পদ্মা তাদের ধমনীতে বইছে।’ প্রফুলস্নবাবুও পদ্মার সমত্মান।

দেশভিখারিদের কথা লেখায় আপত্তি ছিল অখ- কমিউনিস্ট পার্টির। পার্টি নেতাদের অভিমত ছিল এরকম : উদ্বাস্ত্ত-ঘনিষ্ঠতা থেকে একটা সাম্প্রদায়িক রং লাগতে পারে। দাঙ্গায় ও সন্ত্রাসে বাস্ত্ত ছেড়ে পালাতে বাধ্য হওয়া পূর্ববঙ্গের মানুষের মধ্যে সম্প্রদায়বোধ ছিল তীব্র। তাদের কমিউনিস্ট পার্টির পতাকার নিচে সমবেত করার কথা তাই ভাবা যায়নি। উদ্বাস্ত্তরাও কমিউনিস্ট পার্টিকে পছন্দ করত না। সাবিত্রী রায় স্বরলিপি 888sport alternative linkে উদ্বাস্ত্তদের বেদনা চড়া ভাষায় ব্যক্ত করেছিলেন। এজন্য তিনি পার্টিতে  ভৎর্সিত হন। তাঁর 888sport alternative linkনিষিদ্ধ করে কমিউনিস্ট পার্টি। 888sport alternative linkের একটি চরিত্র বলে, কমিউনিস্টরা মুসলমানদের দালাল।

অগ্রণী সমাজতাত্ত্বিক জ্ঞানেন্দ্র পা– বলেছেন, ব্রিটেনের কাছে যেমন প্রথম বিশ্বযুদ্ধ, কিংবা ফ্রান্স বা জাপানের কাছে যেমন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, আমাদের কাছে দেশবিভাগের ভয়াবহতা, ঠিক তেমনি ভয়াবহ ও যুগান্তকারী। পশ্চিম ইউরোপে এবং জাপানে প্রথম আর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের স্মারকচিহ্ন সর্বত্র হয়েছে। ভারতবর্ষে দেশবিভাগের কোনো স্মারকচিহ্ন প্রতিষ্ঠা করা হয়নি। কিন্তু বি888sport app download for android শুধু এতেই সীমিত নয়। ইতিহাসের মতো 888sport live footballে বা live chat 888sportেও ভারতীয় 888sport live chatীরা স্বাধীনতা সংগ্রামের জয়গান যত করেছেন, সে-তুলনায় দেশভাগের বেদনা আদৌ মনে করিয়ে দেননি।

আশির দশকের গোড়ায় কাজ শুরু করে, কম-বেশি দশ বছরের তুলনারহিত শ্রমে ও সাধনায় প্রফুলস্নকুমার চক্রবর্তী লিখলেন The Marginal Man
প্রকাশের সাল ১৯৯০। বাংলার রাজনৈতিক ও সামাজিক ইতিহাস যার গুরুত্ব অপরিমেয়। তাঁকে উদ্বুদ্ধ করেছিল দুটো বই। একটি
হিরণ্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্বাস্ত্ত, অন্যটি কান্তি পাকড়াশীর The Uprooted। ১৯৪৭ থেকে ১৯৭৯ – এই ৩২ বছরে দেশভাগ ও দেশভিখারিদের নিয়ে লেখা বইয়ের 888sport free bet মাত্র দুই। অথচ ১৯৪৬-এর নোয়াখালী দাঙ্গা থেকে ১৯৫০, ১৯৬৪-র দাঙ্গা, ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ, ১৯৭৫-এর মুজিব হত্যার কালপর্বে দেশত্যাগীর 888sport free bet কয়েক কোটিতে পৌঁছেছে। কান্তি পাকড়াশীর বইটি উদ্বাস্ত্তদের নিয়ে পরি888sport free betনগত বিশেস্নষণ। আর, হিরণ্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়ের বইটি ১৯৫৬ পর্যন্ত উদ্বাস্ত্তদের এদেশে আসা ও
পুনর্বাসনের তথ্যনিষ্ঠ দরদির ইতিবৃত্ত।

ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিসের পরীক্ষায় নবম স্থান পেয়েছিলেন হিরণ্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়। সাল ১৯২৭। ব্রিটিশ ভারতে তাঁর
কর্মজীবনের বেশিরভাগ সময় ছিলেন বিচার বিভাগে। দেশভাগের সময় তিনি একসঙ্গে জলপাইগুড়ি, দিনাজপুর ও দার্জিলিংয়ের জেলা ও দায়রা বিচারক ছিলেন। স্বাধীনতার কয়েকদিন আগে চলে আসেন জলপাইগুড়িতে। পশ্চিম বাংলার প্রথম
মুখ্যমন্ত্রী প্রফুলস্ন ঘোষ তাঁকে প্রশাসনে আসতে বলেন। কিছুদিন জলপাইগুড়ির ডেপুটি কমিশনার থাকার পর তিনি চবিবশ পরগনার জেলা প্রশাসকের দায়িত্ব পান। সেই সময়ই দেখেছেন পূর্ব পাকিস্তানের ভিটে ছেড়ে পশ্চিমবঙ্গে চলে আসছে মানুষ। তখন 888sport free betটা অবশ্য তেমন নয়।
১৯৪৯-এর শেষের দিকে পরিস্থিতি জটিল হতে শুরু করে। ১৯৪৯-এর শেষ ও
১৯৫০-এর প্রথম দুমাসে উদ্বাস্ত্তর 888sport free bet দাঁড়ায় দুই লাখ। বিধানচন্দ্র রায় তখন পশ্চিম বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। তিনি হিরণ্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়কে উদ্বাস্ত্ত ত্রাণ ও পুনর্বাসন দফতরের সচিব ও কর্মাধ্যক্ষ বা কমিশনার পদে নিয়োগ করেন। স্বাধীন ভারতের এক অভাবিত সমস্যা ও সংকটে জড়িয়ে পড়লেন তিনি। স্রোতের মতো উদ্বাস্ত্ত আসছে।
নেতাদের বাণী ও ভরসা ভেসে যাচ্ছে। নতুন নতুন ত্রাণশিবির খুলছে। দূর-দূরামেত্ম ক্যাম্প হচ্ছে, কলোনি হচ্ছে। তবু ঠাঁই নেই। এ যে উদ্বাস্ত্ত পস্নাবন।

প্রখ্যাত নাট্যকার ও অভিনেতা মনোজ মিত্রের 888sport sign up bonusচারণা মনে পড়ে : চৌদ্দই রাতে [সাল ১৯৪৭] যখন আমরা মৈমনসিংহ ছাড়ছি, বঙ্গদেশের নানাদিকে তখন তা-ব শুরু হয়ে গিয়েছে। হানাহানি, লুটপাট, অগ্নিকা-। সর্বত্র দেশত্যাগের হিড়িক। কালীহাতির নদীতে সে-রাতে যাত্রীবোঝাই নৌকোর মিছিল। অন্যদিন সূর্য
ডুবতে-না-ডুবতে খেয়া বন্ধ হয়ে যায়। নেŠকোগুলো পাড়ে এসে দাঁড়িয়ে পড়ে। মাঝিরা নামাজ পড়ে, রান্নাবাড়ি করে, গান গায়। আজ সব চুপচাপ। নদীর বুকে কাছে-দূরে নৌকোয়  লণ্ঠনগুলো ভাটার টানে ছুটছে। যেন কার্তিক পূর্ণিমায় পিদিম ভাসানো হয়েছে।… অনেকক্ষণ মাথা হেলিয়ে দূরের দিকে চেয়ে থেকে মা-র দুচোখ ঝাপসা। গলাও বুজে এসেছে। কাঁপছে। কান পেতে শুনতে হয় ফিসফিসিয়ে মা বলছে – ‘মা দুর্গা যেবার নৌকোয় আসে, সংসার জলে ভাসে। তোর ঠাম্মার কথাই সত্যি হলো। শেষ পর্যন্ত মহামায়া স্বাধীনতা সেই নৌকোতেই এলো!’

ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে হিরণ্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় দেশভাগ ও দেশভিখারিদের সমস্যা নিয়ে আন্তরিক উচ্চারণে বলেন, ৩ জুন ১৯৪৬, সন্ধ্যায় লর্ড মাউন্টব্যাটেন দেশভাগ-সংক্রান্ত সিদ্ধান্তগুলো বেতারে প্রচার করলেন। ‘আমার সে দিনটি বেশ মনে পড়ে। কাছাকাছি কোথাও রেডিও ছিল না, না আমাদের বাড়িতে, না জেলাশাসক আবদুল হামিদের বাড়িতে। পরিচিত মানুষদের মধ্যে কাছে ছিল পিটারদের বাড়ির রেডিও। তাই আমরা স্থানীয় সরকারি কর্মচারীরা তাঁর বৈঠকখানা ঘরে গিয়ে সমবেত হলাম রেডিওতে আমাদের জাতির ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে এই ঘোষণা শোনবার জন্য। কী অধীর আগ্রহভরে আমরা সেই ঘোষণা শোনবার জন্য উৎকর্ণ হয়ে বসে ছিলাম। কী দারুণ উত্তেজনাকে বুকে বহন করে আমরা তা শুনেছিলাম। সেদিন হতে নিশ্চিত জেনেছিলাম যে আমাদের 888sport apps দ্বিখ–ত হবে। কিন্তু দেশকে ভাগ করা তো পারিবারিক সম্পত্তি বিভাগের মতো সহজ জিনিস নয়।… একটি দেশ তো শুধু জড়বস্ত্ত দিয়ে গঠিত নয়, তার সক্রিয় অংশ মানুষ দিয়ে গড়া। সেই মানুষ প্রত্যেকে
এক-একটি ব্যক্তি। তাদের মন আছে, ইচ্ছাশক্তি আছে। রাজনৈতিক নেতাদের নির্দেশে হয়তো দেশের ওপর একটা লাইন টেনে তাকে দ্বিখ–ত করা যায়, কিন্তু তাতে বিভিন্ন মানুষের, বিভিন্ন পরিবারের কত যে জটিল সমস্যা মাথাচাড়া দেয় তার অন্ত নেই।… দেশবিভাগে যাদের ভাগ্য পুড়ল তাদের কী দুর্দশা না জানি হবে। আমার তো তবু পদাধিকারবলে একটা ঘর জুটল, মাল রাখবার একটা বারান্দাও জুটল। তাদের তো তাও জুটবে না। উন্মুক্ত মাঠে বা গাছের তলায় হয়তো তাদের আশ্রয় জুটতে পারে। দলে দলে তারা যখন বাস্ত্তত্যাগী হবে তখন তাদের কী উপায় হবে?’

উপায় বের করতে দিন-রাত এক করে অবিশ্রাম কাজ করেছেন পুনর্বাসন দফতরের কমিশনার হিরণ্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়। এত বড় সংকটে এই বাংলা আগে কখনো পড়েনি। দেশভাগের পর আগের বাংলা আর থাকল না। নতুন বাংলা গড়ে উঠছে বাধ্যতামূলকভাবে। নতুন ইতিহাস। দক্ষিণবঙ্গ-উত্তরবঙ্গের নানা প্রামেত্ম ছুটেছেন তিনি। এলাকা খোঁজা, বসতির ব্যবস্থা করা, ত্রাণ বিলি করা, সামাজিক জীবন থেকে ছিটকে যাওয়া উদ্ভ্রান্ত শরণার্থীদের একশ রকমের সমস্যার মুখোমুখি হওয়া, এমনকি পূর্ব পাকিস্তানের বিভিন্ন নদীর তীরে আশ্রয় নেওয়া অসহায় বাস্ত্তত্যাগীদের জলপথে ভারতে নিয়ে আসা – সব দায়িত্ব
সামলেছেন প্রায় নিঃশব্দে। সেইসঙ্গে প্রশাসনের অভ্যন্তরীণ বিবাদ-বিরোধ। অনেক ঘটনারই নথি থাকে না, অনেক সিদ্ধামেত্মরই লিখিত প্রমাণ থাকে না, নীতিনির্ধারকদের অনেক তাৎপর্যপূর্ণ আলোচনা বাইরে থেকে জানা যায় না। হিরণ্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় অকপটে লিখে গিয়েছেন 888sport sign up bonus থেকে, কখনো দলিল-দস্তাবেজের সাহায্য নিয়ে।  কেন লিখলেন? একজন ‘প্রশাসনিক কর্মচারী’ হিসেবে নিজের দায়িত্ব পালন করার দশ-বারো বছর পর কলম ধরার কী প্রয়োজন ছিল? লিখলেন ইতিহাসের প্রতি দায় থেকে। ভূমিকায় বলেছেন, ‘বাংলার সাম্প্রতিক ইতিহাসের যে অধ্যায়ে ব্যাপকহারে বাস্ত্তত্যাগ ঘটেছিল, তা পশ্চিম বাংলার এক অতিদুঃসময়ের কাহিনি।… ইতিহাসের সেই একান্ত করুণ অথচ রোমাঞ্চকর অধ্যায়ের ইতিহাস কোনোদিন লিপিবদ্ধ হবে কিনা জানি না। সরকারি দফতরে তার যে প্রমাণপত্র আছে তা হয়তো একদিন বিলুপ্ত হয়ে যাবে। অথচ আমাদের জাতীয় ইতিহাসের এই অধ্যায় সম্বন্ধে বিবরণ উত্তরকালের জন্য রক্ষিত হওয়া উচিত – এ-রকম একটা বোধ
অনেকের মনে জেগেছে।’ এই বোধ তাঁকে দিয়ে লিখিয়ে রেখেছে অবি888sport app download for androidীয় ইতিকথা।

১৯৫৫ সালের ৫ নভেম্বর পর্যন্ত পুনর্বাসন বিভাগের কর্মাধ্যক্ষক্ষর দায়িত্বে ছিলেন তিনি। সে-সময়ই যেন দেখতে পেয়েছিলেন
আগামীকে। আরো লাখ লাখ উদ্বাস্ত্ত আসবে। দ-কারণ্যে তাদের পুনর্বাসন ঠিক হবে না, জোর দিয়ে বলেছেন। মনে পড়ে আর-এক আইসিএস শৈবাল গুপ্তের কথা। দ-কারণ্য উন্নয়ন সংস্থার চেয়ারম্যান পদ থেকে ইস্তফা দেন তিনি। বুঝেছিলেন, দ-কারণ্যকে পুনর্বাসনযোগ্য করে তোলার সদর্থক ভাবনা কেন্দ্রীয় সরকারের কর্তা
ব্যক্তিদের মাথায় নেই। হিরণ্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, সুন্দরবন হতে পারে পুনর্বাসনের আদর্শ জায়গা। পনেরোশো বর্গমাইলের সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে কয়েকশো বর্গমাইল নিয়ে কয়েক হাজার উদ্বাস্ত্ত পরিবারের সুষ্ঠু পুনর্বাসন হতে পারে। তাঁর পরামর্শ শোনা হয়নি। ১৯৭৮ সালে দ-কারণ্য থেকে প্রায় দেড় লাখ উদ্বাস্ত্ত সুন্দরবনের মরিচঝাঁপি দ্বীপে এসেছিল। নিজেরাই গড়ে নিয়েছিল নিজেদের বসতি। সেই সময়ের বাম সরকার তাদের উৎখাত করে ঠেলে দেয় নতুন
অনিশ্চয়তায়। যদিও সে-কাহিনি ভিন্ন, উদ্বাস্ত্ত-তে যেন তার পূর্বাভাস আছে।

দেশভাঙার ঘটনা বিবৃত করার সময় হিরণ্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় বলতে ভোলেননি বাংলার সামাজিক জীবনে হিন্দু-মুসলমানের প্রীতিপূর্ণ সম্পর্কের দীর্ঘ ঐতিহ্যের কথা।
পরিতাপের বিষয়, এরকম একটি ঐতিহাসিক গ্রন্থ চার দশকেরও বেশি সময় ছাপা ছিল না। সম্প্রতি দেশভাগ নিয়ে চর্চায় আগ্রহ বেড়েছে। ডিগ্রির জন্য
গবেষণা হচ্ছে। বিক্রির জন্য বই হচ্ছে। কিছু এলোমেলো কাজ তো আছেই। গর্বের বিষয়, উদ্বাস্ত্ত এখন হাতের নাগালে। নতুন সংস্করণে প্রয়োজনীয় সংযোজন হয়েছে দেশভাগ ও দেশভিখারিদের আর-এক অন্বেষক মধুময় পালের উত্তরকথা