আবু সাঈদ
গুস্তাভ ফ্লোবেরের (১৮২১-৮০) মাদাম বোভারি (১৮৫৭) 888sport alternative linkের কেন্দ্রীয় চরিত্র এম্মা বোভারি অবশ্যই একজন রোমান্টিক নায়িকা; কিন্তু তাকে কোনোভাবে সুখী বলা যাবে না। শুধু সে নয়, তার সমাজটাও ছিল অসুস্থ। এ অসুস্থ সমাজে সে কোনো দায়িত্বই পালন করতে পারেনি। মায়ের কর্তব্য সঠিকভাবে পালন করতে পারেনি। স্ত্রী হিসেবেও সে চরমভাবে ব্যর্থ। প্রেমিকা হতে গিয়ে নিজে হয়েছে প্রতারিত আর স্ত্রী হিসেবে নিজেই করেছে প্রতারণা।
এম্মার আশপাশের মানুষগুলো ছিল ক্ষুদ্র; কিন্তু এম্মার ক্ষুদ্রতার প্রতি রয়েছে বিরাগ, বিতৃষ্ণা। বিরাটত্বের প্রতি রয়েছে তার দুর্নিবার আকর্ষণ। যেরকম আকর্ষণ ছিল লেখকের নিজেরও। কিন্তু গুস্তাভ ফ্লোবের দেখেছেন তাঁর চারপাশের সবাই এবং সবই ক্ষুদ্র। এ কারণে তিনি খুবই সন্দিহান ছিলেন যে, চারপাশের এ-ক্ষুদ্রতাকে তিনি কীভাবে 888sport live footballরূপ দেবেন? এ ক্ষুদ্রতায় তিনি কীভাবে সৌন্দর্য সৃষ্টি করবেন? এজন্যে সৌন্দর্য সৃষ্টিতে জোর দিলেন বেশি আলংকারিকে। লেখকের ইচ্ছা ছিল ফাউস্টের আদর্শে তিনি একটি 888sport alternative link লিখবেন। কিন্তু পারলেন না শেষ পর্যন্ত। পারলেন না কারণ সমাজে তিনি ফাউস্ট খুঁজে পাননি। ফাউস্ট তো দূরের কথা, সাধারণ একজন নায়কও পাননি। নায়িকা পেয়েছেন অবশ্যই একজন; কিন্তু ওই সমাজে সেও বেশিদিন বাঁচতে পারেনি। আত্মহত্যা করতে বাধ্য হলো অকালে।
ফ্লোবের 888sport apkমনস্ক ছিলেন। কথিত আছে, এম্মার বিষপানে আত্মহত্যা করার ঘটনার আগে তিনি নিজেও মুখে বিষ নিয়ে পরীক্ষা করেছিলেন। ছিলেন রাজনীতি-সচেতনও। এই 888sport alternative link তিনি যখন লিখতে শুরু করেন ততদিনে কার্ল মার্কসের কমিউনিস্ট পার্টির ইশতাহার (১৯৪৮) প্রকাশিত হয়ে গেছে। ফলে শ্রেণিচরিত্র বুঝতে তাঁর অসুবিধা হয়নি। বুর্জোয়া, পেটি-বুর্জোয়াদের অন্তর্গত চরিত্র তিনি অঙ্কন করেছেন কোনো ধরনের ভাবোচ্ছ্বাসকে প্রশ্রয় না দিয়ে। এমনকি বুর্জোয়াদের মূঢ়তা নিয়েও পরিহাস করেছেন।
888sport alternative linkটি প্রকাশিত হওয়ার পর শুধু যে অশস্নীলতার দায়ে মামলা হয়েছে তা নয়, পাঠকদের পক্ষ থেকে যে-প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে তাও স্মর্তব্য। তাঁর পাঠকরা তাঁকে অভিনন্দন জানাতে পারেনি এজন্য যে, তিনি নাকি কিছুই সৃষ্টি করেননি। পাত্রপাত্রীরা সবাই তাদের পরিচিত। লেখক যা করেছেন তা হচ্ছে শুধু পাত্রপাত্রী ও স্থানের নাম পরিবর্তন। এম্মা, লিয়ঁ, রোডলক, ল্যারা এবং ওমের দাওয়াখানা সবই তাদের পরিচিত; এমনকি এম্মার সমাধিও অনেকের চেনা। হ্যাঁ, চেনা হবেই তো। এ ধরনের চরিত্ররাই ওই সমাজে বিদ্যমান। লেখক নিজেও বলেছেন, চরিত্রগুলো আপনারা দেখবেন; কিন্তু আমি চরিত্র সৃষ্টি করিনি, সৃষ্টি করেছি ‘টাইপ’।
দাম্পত্য জীবনে এম্মা হাঁপিয়ে উঠছিল। স্বামীকে সে ভালোবাসে না; বরং ঘৃণাই করে। নিজেকে মনে করে বন্দি। ভেবেছে, প্রেমে মুক্তি পাবে। প্রেম করেছেও তাই। একজনের সঙ্গে নয়, করেছে দুজনের সঙ্গে। কিন্তু মুক্তি তো পায়নি, এমনকি প্রেমিকও পায়নি। যাদের পেয়েছে তারা প্রেমিক নয়, প্রতারক। সত্যি করে বললে বলতে হয় কামুক। ফলে প্রত্যাশিত প্রেম সে পায়নি। পেয়েছে প্রতারণা। আর পায়নি বলেই আত্মহত্যা করেছে। তার আত্মহত্যার আরেকটি কারণ এই যে, সে আত্মসমর্পণ করতে চায়নি। কিন্তু এ-আত্মহত্যাই তাকে অসামান্যতা দান করেছে।
এম্মা আসলে মুক্তি চেয়েছিল, যে-মুক্তি তাকে সুখ দেবে। ভেবেছে, বিয়েতে সুখ আছে। বিয়ে হয়েছে কিন্তু সুখ সে পায়নি, তার বদলে পেয়েছে অবহেলা। তারপর প্রেম করেছে পরপুরুষের সঙ্গে। কিন্তু প্রেম সে পায়নি, পেয়েছে প্রতারণা। এম্মার স্বামী চার্লসও ভালোবাসা পায়নি। প্রথম স্ত্রী মাদামকে সে তো ভালোবাসতে পারেনি। প্রথমত, সে বিধবা এবং বয়স্কা; দ্বিতীয়ত, রুগ্ণ-অসুস্থ থাকে প্রায় সময়। দেখতেও ভালো না, কুৎসিত – দাঁতগুলো উঁচু-উঁচু। মাদাম তাকে শৃঙ্খলিত করতে চাইত। চার্লসের উদ্দামতা তার ভালো লাগত না। শুধু তাই নয়, সন্দেহও করত। ফলে সংসারে টানাপড়েন শুরু হলো। মাদামের স্বামীর প্রতি ভালোবাসা ছিল। এ-ভালোবাসা থেকেই সে স্বামীকে শৃঙ্খলিত করতে চাইত, যে-শৃঙ্খল চার্লস পরতে চায়নি। কারণ সে প্রকৃতিপ্রেমিক। ছোটবেলা থেকেই সে মাঠেঘাটে ছুটে বেড়াত, পাখি ধরত আর জাম পাড়ত। স্ত্রীর মৃত্যুতে চার্লস বরং এক ধরনের সুখই অনুভব করে; মনে করে এখন সে অনেক স্বাধীন। এখন ইচ্ছেমতো ঘুরতে পারে, বেশি-বেশি রোগী দেখতে পারে আর পারে ঘন-ঘন এম্মার বাড়িতে যেতে। চার্লস যে এম্মাকে এতো স্বাধীনতা দিলো সে এই স্বাধীনতা পায়নি বলে।
চার্লসের বাবা সামরিক সার্জন-সহকারী। কিন্তু বেহিসেবি। দুর্নীতির দায়ে পদত্যাগও করে। যৌতুকও নেয়। শারীরিক সৌন্দর্যের কারণে মেয়েরা প্রেমে পড়ত তার। আমোদ-প্রমোদে অর্থ ব্যয় করত। শিকার করত। বেড়ানোর শখ ছিল। ভোজনবিলাসী। শুয়োরের চর্বি দিয়ে জুতো পালিশ করত। স্ত্রীর প্রতি একসময় ভালোবাসা থাকলেও এখন বিরক্তবোধ করে। ছেলের প্রতি তেমন দায়িত্ব পালন করেনি, যতটা করত স্ত্রী। কিন্তু চার্লস খুবই হিসেবি লোক। পোশাক কিনত কম দামে। টুপি পরত সুতির। জুতা কিনত শক্ত। কুড়িয়ে পাওয়া সিগারেট খায়, যদিও ধূমপানে সে অভ্যস্ত নয়। এম্মাকে সে হয়তো সচেতনভাবে অবহেলা করেনি। কিন্তু স্ত্রীর প্রতি তার দায়িত্বশীলতার পরিচয় তেমন পাওয়া যায়নি। স্ত্রী কোথায় যায়, কী করে তার খোঁজ নেওয়ার কোনো প্রয়োজনবোধ সে করত না। স্বামী নয়, ডাক্তার হিসেবে বরং সে অনেক দায়িত্ববান। মাঝরাতে না পারলে ভোররাতে রোগী দেখতে যায়। এমনকি বিয়ের দুদিন পরই কর্মস্থলে চলে গেল চিকিৎসা-ব্যবসার ক্ষতি হবে বলে।
চার্লসের এ-চালচলন এম্মা পছন্দ করত না। চার্লস ব্যবসা বোঝে। ডাক্তারিকেও সে মনে করে ব্যবসা। সে থিয়েটারে যায় না। ফেনস খেলে না। বড়ই আটপৌরে। অন্যদিকে এম্মা কনভেন্ট থেকে পাশ করেছে। সঙ্গে নাচ-গান-ছবি আঁকা-পিয়ানো বাজানোও শিখে নিয়েছে। সে 888sport live football পড়ে। ওয়াল্টার স্কটের ভক্ত সে। পূর্ণিমা রাতে সে স্বামীকে 888sport app download apk শোনায়। কিন্তু 888sport app download apk চার্লসের জন্য নয়। ফলে প্রেমের যে-ধরন এম্মা কল্পনা করত সে-প্রেম চার্লস যে বুঝবে না তা এম্মা সহজেই বুঝে গেছে।
বাবার সংসারে এম্মাই সব দেখভালো করত। মা নেই তার। বাবা নির্ভরশীল ছিল তার ওপর। গেঁয়ো জীবন ভালো লাগে না তার, যদিও বাপ-দাদা গ্রাম্য চাষি। প্যারিসের প্রতি সে টান অনুভব করে। কারণ প্যারিস 888sport live chatীদের শহর। এম্মা সুন্দরী। হাতগুলো সুন্দর না হোক, চোখগুলো খুবই সুন্দর, নখগুলোও। 888sport promo codeর প্রতি চার্লসের তেমন কোনো আগ্রহ ছিল না। কিন্তু এম্মাকে দেখে তার ভালো না লেগে পারেনি। এম্মার সঙ্গে পরিচয় হওয়ার পূর্বে চার্লসের জীবন ছিল নীরস, পানসে, বৈচিত্রহীন আর নিরানন্দ। জীবনটা তার একঘেয়েই ছিল। এম্মা সে নীরস জীবনে যেন আনন্দ নিয়ে এসেছে। এম্মাকে বিয়ে করে সে সুখী হলো। মনে হলো তার, সে-ই পৃথিবীতে সবচেয়ে সুখী। এম্মার কথা বলার ধরন, কাপড় পরা, হাঁটাচলা, মেকআপ করা – সবকিছুই ভালো লাগে চার্লসের। এমনকি প্রাত্যহিক গৃহকর্মকেও এম্মা শৈল্পিক পর্যায়ে নিয়ে গেছে, সূচিকর্মে পারদর্শী সে। কিন্তু চার্লসের এ অস্বাভাবিক প্রেম এম্মার ভালো লাগে না। বরং বিরক্তই লাগত। চার্লস যেটাকে প্রেম মনে করত, এম্মার কল্পিত প্রেম সেরকম ছিল না। ফলে প্রেমের মাধ্যমে এম্মা যে-সুখ খুঁজেছিল, সে কাঙিক্ষত সুখ সে পায়নি।
এম্মা অনির্বচনীয় সুখ চায়। সুখ তার কাছে যেন একটি গাছ – যে-গাছ একটি বিশেষ ভূমিতে জন্মায়, অন্য ভূমিতে শুকিয়ে যায়। সুখ তার কাছে যেন একটি পাখি – যে-বিহঙ্গের রয়েছে মুক্ত আকাশে ওড়ার অবাধ স্বাধীনতা। আসলে এম্মা সে-স্বাধীনতাই চায়। নীতিকথা তার ভালো লাগে না, তাতে সে হাঁপিয়ে ওঠে। ভেবেছে বিয়েতে মুক্তি আছে, দেখল সেখানে আরো বন্ধন। বাবার বিশাল বাড়িতেও তার একাকী লাগত। তার মা নেই, ভাইও নেই। ভেবেছিল, বিয়ের পর
এ-একাকিত্বের অবসান হবে। কিন্তু হয়নি। চার্লসের মায়ের সঙ্গে তার বনে না। স্বামী গেঁয়ো। বাবার যে-গ্রাম্যতাকে এম্মা অপছন্দ করত দেখল বিয়ের পর, স্বামীর মধ্যে সে-গ্রাম্যতা আরো বেশি। ফলে এম্মা এক অব্যক্ত বেদনার ভার বহন করে চলেছে।
এম্মার সঙ্গে চার্লসের যে-দ্বন্দ্ব তা সাংস্কৃতিক দ্বন্দ্ব। চার্লসের মা নিজেই স্বীকার করেছে যে, এম্মার রুচি উন্নত। কিন্তু চার্লসের পরিবারে কোনো সংস্কৃতি-চর্চা নেই। এমনকি বিনোদনও নেই। চার্লস থিয়েটারে যায় না, গাইতে জানে না, সে নাচতে জানে না। পূর্ণিমা রাতে এম্মা চার্লসকে 888sport app download apk শোনায়, গান শোনায়; কিন্তু চার্লসের তাতে মন থাকত না। দুজনের প্রেমের ধরনও দুই ধরনের। এম্মা সংস্কৃতিবাদী, চার্লস বৈষয়িক। চার্লস ব্যবসা বোঝে, ডাক্তারিকেও মনে করে ব্যবসা। থিয়েটারে যায় না, ফেনস খেলে না, নাচতে জানে না। নাচের জন্য এম্মাকে সঙ্গী নিতে হয় ভিকোঁতেকে। এমনকি চার্লস ভদ্রতাও জানে না। চুমু খায় এমনভাবে যেন কাপড় নষ্ট হয়ে যায়। চার্লস আটপৌরে, সে ডাক্তার। এম্মা সৃষ্টিশীল এবং প্রেমিকা। ভালোবাসাকে সে বিভিন্নভাবে উপভোগ করতে চায়। এমনকি পার্থিব দেহকেও সে অপার্থিব সুখ দিতে চায়; কিন্তু পারে না। আর পারে না বলেই অব্যক্ত মানসিক যন্ত্রণা পেতে থাকে প্রতিনিয়ত।
এম্মা এই 888sport alternative linkের নায়িকা সন্দেহ নেই, কিন্তু 888sport alternative linkে কোনো নায়ক নেই। এম্মা নায়ক খোঁজে। চার্লসের সঙ্গে তার যে বৃত্তাবদ্ধ জীবন সে-বৃত্তকে এম্মা ভাঙতে চায়। এ-বৃত্ত ভাঙার শক্তি ও প্রেরণা প্রথমে মনে করেছিল ভিকোঁতেকে। এজন্যে সে 888sport alternative linkে ভিকোঁতেকে খোঁজে। এম্মা 888sport live football পড়ে। বালজাক, জর্জ সান্ডের 888sport alternative link তার ভালো লাগে। ইতালি ভাষাও সে শিখতে শুরু করেছে। শুধু বাইরে যাওয়ার সময় নয়, বই পড়ার সময়ও সে সাজগোজ করে। কিন্তু তার স্বামীর এসব ভালো লাগে না। এম্মা বারবার চেষ্টা করেছে স্বামীর মধ্যে 888sport live footballবোধ জাগাতে। কিন্তু পারেনি। চার্লসের এতে আগ্রহ তো নেই বরং আরো বিরক্তবোধ করে। এজন্য স্বামী এলে সে বই বন্ধ করে দেয়। চার্লস বৈচিত্রহীন প্রাত্যহিক নিয়মিত কাজকর্মে অভ্যস্ত। সে যেন পেন্ডুলাম – একবার এদিকে আরেকবার ওদিকে। এর বাইরে সে আর কিছুই জানে না, পারেও না।
গ্রাম্যজীবন এম্মার ভালো লাগে না। তার প্রিয় শহর প্যারিস। প্যারিস তাকে টানে। প্যারিসের জীবনযাত্রা-888sport live chatচর্চা-আহার-বিহার এমনকি মৃত্যুও তার কাছে আকর্ষণীয়। এই মুগ্ধতার কারণ প্যারিসের বিচিত্রতা। একঘেয়ে মধ্যবিত্ত জীবন তার ভালো লাগে না। কারণ জীবনে কোনো বৈচিত্র নেই – ‘পেটি-বুর্জোয়া ভাবনায় পূর্ণ তথাকথিত ভদ্রলোকগুলোর একঘেয়ে প্রাত্যহিক জীবন তার কাছে অবান্তর, অবাঞ্ছিত ও বিরক্তিকর মনে হয়।’ এম্মা কল্পনাবিলাসী। মধ্যবিত্ত টানাপড়েনে আর যা হোক প্রেম হয় না। কারণ প্রেমের জন্য একটা অনুকূল পরিবেশ চাই। মধ্যবিত্ত একঘেয়ে বলয়ে সে-পরিবেশ নেই। এ-পরিবেশে সে নিজেকে ‘ডুবন্ত জাহাজের বিপন্ন নাবিক’ মনে করে। কল্পনা করে সে-নাবিককে উদ্ধারে এগিয়ে আসছে সাগরের তরঙ্গায়িত জলরাশি, যেখানে নীলাকাশ মিলিত হয়েছে, সে-দিগন্ত থেকে সাদা পাল তোলা একটি জাহাজ – অনুকূল পরিবেশে। একটা অনুকূল পরিবেশ এম্মার দরকার এবং এজন্য সে পরিবর্তন চায়। ভেবেছে একটা বিরাট পরিবর্তন আসবে, যে-পরিবর্তনে তার জীবন পালটে যাবে।
হ্যাঁ, পরিবর্তন একটা আসছে বইকি! পরিবর্তন হচ্ছে যুগের। পুঁজিবাদ চলে আসছে। কৃষিতে আর তেমন লাভ নেই। বাপ-দাদা চাষি হলেও এম্মার কোনো আগ্রহ নেই কৃষিতে। বরং বিরক্ত হয়। এম্মার বাবার কৃষিতেও কোনো লাভ হয় না। বরং ঋণই হয়। আর এই ঋণ শোধ করতে শেষ পর্যন্ত জমি বিক্রি করে। কিন্তু এ-পরিবর্তনে এম্মারা মুক্তি পাবে না, বরং আরো বন্দি হবে। বন্দি হয়েছেও। শুধু বন্দি নয়, তাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছে।
এই সমাজে সবাই আত্মকেন্দ্রিক। নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত সবাই। চার্লসের রোগী না জুটলেও সে তার ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত। ডাক্তারিকে সে ব্যবসাই মনে করে। যে-রোগীর কাছ থেকে বেশি টাকা পাওয়া যাবে তাকে অগ্রাধিকার দেয়। চার্লস তার ব্যবসার স্থান পরিবর্তন করে চলে আসে ইয়নভিল গ্রামে – যেখানে এম্মার সঙ্গে পরিচয় হয় লিয়ঁর। লিয়ঁ 888sport live football পড়ে। এম্মার মতো সেও কল্পনাবিলাসী। এম্মার নিঃসঙ্গতার সঙ্গী এই লিয়ঁ। চার্লস এম্মাকে সময় দেয় না। খোঁজ রাখে না স্ত্রীর; সঙ্গে নিয়ে যায় না কোনো নিমন্ত্রণে। বাড়ি ফিরে রাতদুপুরে। এমনকি লিয়ঁর সঙ্গে এম্মার প্রেমের কথা সবাই জানলেও চার্লস জানে না। শরীরেরও যত্ন নেয় না সে। যদিও সে একজন ডাক্তার। নখগুলো তার ময়লায় ভরা থাকে। দাড়ি কামায় না রীতিমতো। গ্রাম্য চাষির মতো ঘোরে। সবচেয়ে বড় কথা, চার্লসের কোনো উচ্চাকাঙক্ষা নেই – এর কিছুই এম্মার ভালো লাগে না। লিয়ঁকে যে এম্মার ভালো লাগে, তার অন্যতম কারণ সে চার্লস নয়, তাছাড়া লিয়ঁ পরিপাটি। হাতের নখগুলোও কাটে খুব সুন্দর করে। সময় দেয় এম্মাকে। বই আদান-প্রদান করে। তার চেয়েও বেশি সে সংস্কৃতিমনস্ক। বাস্তব ও সাধারণ নায়িকাকে তার ভালো লাগে না। এজন্য এখন তার রহস্য 888sport alternative link ভালো লাগে। লিয়ঁ বাস্তব হোক কিন্তু স্বাপ্নিক। এম্মাকে সে বুঝতে পারে। চার্লস সারা গাঁয়ের মানুষের রোগ সারায় কিন্তু স্ত্রীর রোগটা ধরতে পারে না।
লিয়ঁ প্যারিসে চলে যাওয়ার পর এম্মার মধ্যে এক ধরনের শূন্যতা সৃষ্টি হয়। মানসিকভাবে তো অবশ্যই, শারীরিকভাবেও সে বিধ্বস্ত। এ-বিধ্বস্ততা সে নতুন পোশাকে ঢাকতে পারে না। এম্মার এই মানসিক অবস্থা কেউ বুঝতে পারে না। স্বামী চার্লস তো পারেই না; সে বরং ধার করে আনে মাকে। মাও পারে না। সে মনে করে, আজেবাজে বই পড়ে এম্মার এ অবস্থা। সে বই পড়া বন্ধ করে দিতে চার্লসকে পরামর্শ দেয়। এম্মা না শুনলে আরো কঠোর হয়। এম্মার লাইব্রেরি কার্ড প্রত্যাহার করে নিতে চায়, এমনকি পুলিশেরও ভয় দেখায়। এম্মার শারীরিক অবস্থা নিয়ে চার্লসকে চিন্তিত হতে দেখি। কিন্তু ওই পর্যন্তই। সে একটা ভালো ঘোড়া কিনে দিতে পারে না। কিনে দেয় খোঁড়া ঘোড়া। বরং রুডলফের ঘোড়া কিনে দেওয়ার প্রস্তাব সে লুফে নেয়। চার্লস লোভী। শুধু লোভী নয়; রুডলফকে অবলীলায় সে দায়িত্বও দিয়ে দেয় এম্মাকে ঘোড়া শেখানোর।
এম্মার প্রতি চার্লসের অবহেলার অন্ত নেই। স্ত্রীকে রেখে যখন-তখন রোগী দেখতে যায়। যাওয়ার সময় এম্মাকে একটু বলারও প্রয়োজনবোধ করে না। চার্লসের এ-অবহেলার সুযোগ নিতে চায় অনেকে। কিন্তু সফল হয় রুডলফ। সে ঠিকই বুঝতে পেরেছে যে, এম্মার মধ্যে বিষাদের একটা ছায়া পড়েছে। জানে চার্লস এম্মার স্বামী হওয়ার অনুপযুক্ত। এম্মার দুর্বলতার সে সুযোগ নেয়। প্রেমও নিবেদন করে। যদিও তার অন্য প্রেমিকা রয়েছে। এম্মা একসময় তার প্রেমে রাজি হয়। তার মানে এই নয় যে, রুডলফকে তার ভালো লেগেছে। সে রুডলফের মধ্যে দেখেছে লিয়ঁর ছায়া। যেরকম লিয়ঁর মধ্যে দেখেছিল ভিকোঁতের প্রতিরূপ। আর ভিকোঁতেকে মনে করত তার স্বপ্নের নায়ক।
এম্মা ভেবেছে, এই প্রেমের মাধ্যমে সে ‘বাস্তব আনন্দ লাভ করতে চলেছে। জীবনে যে-সুখের আশা ত্যাগ করেছিল সে চিরদিনের জন্য, ওই সুখ এখন তার হাতের নাগালের মধ্যে ধরা পড়েছে।’ এই প্রেমে সে নিজেকে মনে করে 888sport alternative linkের নায়িকা। তার জন্য ঝুঁকিও নেয়। রুডলফের বাড়িতে চলে যায় স্বামী-পরিবারকে ফাঁকি দিয়ে। কারণ এ-প্রেম যেন তার সত্তার পরিবর্তন আনে। এখন সে অনুভব করে অন্য এক সত্তা – যে-সত্তা শুধু রুডলফের সত্তার সঙ্গে মিশতে চায় – একাকার হতে চায়। এখন রুডলফই তার ধ্যান-জ্ঞান। সে এ-প্রেম নিয়ে রুডলফের মতো লুকোচুরি করে না। এম্মাকে পরিচিতজনদের সঙ্গে পরিচয় করে তো দেয়ই না; বরং বিব্রতবোধ করে। কিন্তু এম্মার মধ্যে এ-সংকোচবোধ নেই। কারণ তার মধ্যে সৎসাহস রয়েছে। যদিও এম্মা সবার পরিচিত। তার সঙ্গে যেচে কথা বলা বা বলতে পারাটা অনেকে ভাগ্য মনে করে। চলার পথে অনেকে তাকে পথ করে দেয়। কৃষি-প্রদর্শনীতে তার আসন হয় সামনের সারিতে।
এম্মা কখনো মিথ্যা বলে না। যদিও প্রেমের জন্য সে মাঝে-মাঝে বলে বইকি! তবে এজন্য তার অনুতাপও হয় প্রচুর। প্রেমের জন্য সে অসম্ভব ঝুঁকি নেয়। স্বামীকে ঘুমে রেখে দেখা করতে যায় প্রেমিকের সঙ্গে। মেয়েকে অবহেলা করে; যদিও খেয়াল করে, মেয়ের কানের কাছে ময়লা জমেছে – পরিষ্কার করতে হবে।
স্বামীর প্রতি এম্মার দিন-দিন আগ্রহ কমে যাচ্ছে। এতোদিন মনে করত স্বামী অন্তত ডাক্তার হিসেবে ভালো। যদিও চার্লস একবারে নয়; ডাক্তারি পাশ করেছে দুবারে। কিন্তু হিপোল্লিকে অসফল অস্ত্রোপচারের পর এম্মার সে-ধারণাও আর নেই। এম্মা শুধু নিজের খরচ নয়; সন্তানের খরচ নিয়েও এখন শঙ্কিত। স্বামীর ওপর সে এখন অর্থনৈতিকভাবে নির্ভরও হতে পারছে না। স্বামী হিসেবে চার্লস আগে থেকেই ব্যর্থ, এখন পিতা হিসেবেও ব্যর্থ মনে করছে এম্মা।
এম্মা পালাতে চায়; পালিয়ে বাঁচতে চায়। পালাতে সে চায় রুডলফের সঙ্গে – যাকে সে ভালোবাসে। সে তার প্রিয়জনের সঙ্গে একান্তে বাস করতে চায়। সামাজিক ভয়কে সে তোয়াক্কা করে না। মেয়ে ছাড়া আর পিছুটান নেই তার। কিন্তু রুডলফ বারবার তারিখ পিছিয়ে দেয়। সে ভীতু। ভীতু নয়, প্রতারক। প্রতারণা করেছে এম্মার সঙ্গে। এম্মা ছাড়াও তার অন্য প্রেমিকা রয়েছে। এম্মা চাইলে তার এ-চালাকি বুঝতে পারত। কিন্তু সে প্রেমে এতোই অন্ধ ছিল যে, রুডলফের প্রতারণা বুঝতে পারেনি। এম্মা মজে আছে রুডলফের প্রেমে আর রুডলফ মজে আছে এম্মার শরীরে।
এম্মার ভালোবাসাকে রুডলফের মনে হয় বোকামি। হ্যাঁ, এম্মা বোকাই। না হলে সাধারণ পানিকে কীভাবে অশ্রম্ন বলে রুডলফ চালাতে পারে। না হলে কীভাবে রুডলফ এম্মার বাড়ির সামনে দিয়ে চলে যেতে পারে। এম্মা চাইলে তাকে আটকাতে পারত। ঝাঁপ দিতে পারত দোতলা থেকে; আত্মহত্যা করতে পারত তখনই। না, এম্মা কিছুই করেনি সচেতনভাবে। শুধু দেখেছে প্রতারণা কত গভীর হতে পারে। এরকম শঠতা সে মেনে নিতে পারেনি। আর পারেনি বলেই এতে শুধু তার মন নয়, শরীরও ভেঙে পড়েছে। শেষের দিকে এম্মা যুদ্ধ-মারামারি আর রক্তপাতের বই পড়ত। আসলে তার হৃদয়েও কম রক্তপাত হচ্ছে না তখন।
রুডলফ চলে যাওয়ার পর এম্মার মধ্যে যে-শূন্যতা, যে বিচ্ছিন্নতাবোধ সৃষ্টি হয় তাতে আমরা দেখি সে শরণ নিচ্ছে আধ্যাত্মিকতার; নিয়ে আনন্দলাভ করতে চাইছে। কিন্তু ওই পথ এম্মার নয়। ধর্মীয় বই তার ভালো লাগে না। তার চেয়ে বেশি টানে রোমান্টিক 888sport alternative linkে। কারণ আধ্যাত্মিকতায় বন্ধন আছে, কিন্তু মুক্ত হতে চায় সে। এম্মা স্বাধীন থাকতে চায়। একাকিত্ব তার ভালো লাগে না। এজন্য সে নাটক দেখতে চায়, এবং আবার দেখা হয় লিয়ঁর সঙ্গে – তিন বছর পর।
এ তিন বছরে এম্মাকে ধরতে গেলে ভুলেই ছিল লিয়ঁ। তবে তার আমোদ-প্রমোদের ঘাটতি ছিল না। প্রাণপ্রাচুর্যে ভরা এম্মাকে ভুলে সে প্রাণহীন দেবী মিউজের কাছে যেত। বলেছে সে এম্মাকে। যদিও এম্মা সে-কথা শুনে ব্যঙ্গ-হাসি হেসেছে। এম্মা জানে এটা ডাঁহা মিথ্যা কথা। এম্মাও লুকিয়েছে একটা। রুডলফের সঙ্গে তার প্রেমের বিষয়টি প্রথমে লিয়ঁকে বলেনি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত না বলে থাকতে পারেনি। বলেছে। তবে একটু কৌশল করে। বলেছে, তার প্রেমের কথা এক ক্যাপ্টেনের সঙ্গে। তবে কিছুটা হালকাভাবে।
এম্মা প্রেম চায়। প্রেম ছাড়া সে বাঁচতে পারবে না। সে বরং তার প্রেমিককে নিয়ে চায় রবিনসন ক্রুসোর মতো জনমানবহীন দ্বীপে বাস করতে – যেখানে কেউ তার ভালোবাসায় ব্যাঘাত ঘটাবে না। আর এম্মা শুধু ভালোবাসবে আর ভালোবাসবে। বিচ্ছেদ এম্মা সহ্য করতে পারে না – ‘বিচ্ছেদের বেদনা এম্মার কাছে অসহ্য।’ আর অসহ্য লাগে তার আর্থিক দৈন্য। অথচ বিয়ের পর তার জীবন ধরতে গেলে আর্থিক দীনতার মধ্য দিয়েই গেছে। ফলে সে কোনো শখই পূরণ করতে পারেনি – পারেনি গান কিংবা পিয়ানো শিখতে। যদিও সপ্তাহে একদিন, বৃহস্পতিবার, শহরে যাওয়ার অনুমতি সে আদায় করে নিয়েছে। বস্ত্তত এখন এম্মার প্রতিদিন কাটে বৃহস্পতিবারের আশায়।
এম্মা ভালোবাসার কাঙাল। ভালোবাসার জন্য সে যে কোনো ঝুঁকি নেয়। ভালোবাসা না পেলে যেন পাগল হয়ে যায়। কিন্তু এম্মার এ-ভালোবাসাকে কেউ বুঝতে পারেনি। পারার কথাও না – স্বামী চার্লস ব্যক্তিত্বহীন, লিয়ঁ কেরানি, রুডলফ প্রতারক। আর পারেনি বলেই অনেকে মনে করে, সে মানসিক রোগী। চার্লসের মা তো চার্লসকে কয়েকবার সতর্কও করে দিয়েছে। কিন্তু চার্লস এম্মাকে তেমন কিছু বলতে পারেনি। পারেনি এ-কারণে যে, এম্মার মানসিক দৃঢ়তা ছিল। ওই দৃঢ়তার কাছে চার্লস দাঁড়াতে পারছিল না। শুধু চার্লস কেন, কেউ দাঁড়াতে পারেনি। না চার্লস, না রুডলফ, না লিয়ঁ, না চার্লসের মা।
এম্মা যখন ভালোবাসে তখন চরমভাবে বাসে। এমনকি দেহমিলনকেও সে পরিপূর্ণভাবে উপভোগ করতে চায়। আর রয়েছে এম্মার ব্যক্তিত্ব। তার ব্যক্তিত্বকে সবাই ভয় পায়। ভয়ে কেউ পালিয়ে যায়; কেউ পালিয়ে-পালিয়ে থাকে। লিয়ঁর সঙ্গে এম্মার বয়সের ব্যবধান বিস্তর। তারপরও এম্মা তাকে আঁকড়ে থাকতে চায়। কারণ সে সুখ চায়। সারাজীবন এম্মা সুখ-অসুখ, তৃপ্তি-অতৃপ্তির দ্বন্দ্বে দোলায়মান ছিল। তার মধ্যে যে-প্রেম আছে তার চেয়ে বেশি আছে প্রেমাবেগ। কিন্তু প্রেমিক সে পায়নি। ফলে প্রেমের সাগরে সে ডুবতে পারেনি; শুধু ডুবেছে দেনার সাগরে।
এম্মা জগৎকে দেখেছে রোমান্টিকতার চোখ দিয়ে; দেখতে বা বুঝতে চায়নি জগতের অন্তর্গত বাস্তবতাকে। আর চায়নি বলেই এ-বাস্তবতা তার ট্র্যাজেডিকে ত্বরান্বিত করেছে। জীবনকে পূর্ণ ভোগ করতে চেয়েছে সে। ভোগ করতে গিয়ে দুই হাতে খরচ করেছে। যদিও তার আয় নেই। আয় শুধু যে তার নেই তা নয়; তার স্বামীরও নেই। কিন্তু ঋণ নেয় বাছবিচার না করে। বোঝেনি এ সরল বিশ্বাস তার জীবনকে কীভাবে সংকটাপন্ন করে তুলবে। এমনকি তার মৃত্যুর পথকেও প্রশস্ত করে দেবে।
এম্মা প্রাণপণ চেষ্টা করেছে বাঁচতে, তবে ব্যক্তিত্বকে বিসর্জন না দিয়ে। পরিচিত, অর্ধপরিচিত, শহরে-গ্রামে সবার কাছে গেছে টাকা ধার নিতে। কিন্তু সবাই তাকে প্রত্যাখ্যান করে। লিয়ঁ তাকে এড়িয়ে চলে; এমনকি তার সঙ্গে দেখা না করতেও বলে দেয়। গিলমিনের মতো মানুষ এ-সুযোগে তাকে ভোগ করতে চায়। রুডলফও ছাড়েনি। হাত ধরেছে, চুমুও খেল। কিন্তু এম্মাকে উদ্ধারে এগিয়ে আসেনি। এম্মা আজ নিঃস্ব। অর্থনৈতিকভাবে তো অবশ্যই, মানসিকভাবেও। তার ঘরের স্থাবর-অস্থাবর সব সম্পত্তি ক্রোক করা হলো। এমনকি এম্মার শরীরও খুঁটিয়ে-খুঁটিয়ে দেখল – কিছু লুকিয়ে রেখেছে কিনা। এ বিপদের সময়ও স্বামীকে সে কিছুই বলেনি। বলেনি কারণ তার ওপর সে এখনো নির্ভর করতে পারে না।
না, এম্মা দেহ বিক্রি করতে চায়নি। ব্যক্তিত্বও বিসর্জন দিতে চায়নি। অর্থনৈতিকভাবে পরাজিত ঠিকই; কিন্তু নৈতিকভাবে দুর্বল ছিল না। আর ছিল না, বলেই বিষপান করল। এমনভাবে করল ডাক্তার চার্লসও কিছু করতে পারেনি। আত্মহত্যা করল টাকা না পাওয়ার জন্য যতটা না, তার চেয়ে বেশি ভালোবাসা পায়নি বলেই। সে কারো করুণার পাত্রী হয়নি। করুণার পাত্র হয়েছে স্বামী চার্লস। প্রথম স্ত্রীর মৃত্যুর পর সে বুঝেছে, মাদাম তাকে ভালোবাসত আর দ্বিতীয় স্ত্রীর মৃত্যুর পর বুঝল, এম্মা তার সঙ্গে প্রতারণা করেছে।
এম্মার চারপাশের মানুষগুলো খুবই সাধারণ, অসুস্থ এবং আত্মকেন্দ্রিক। লেহুড়ে বুর্জোয়া দোকানদার। এম্মার কাছে প্রথমে বিনয়ের ভান করে। পরে চোখ উলটে ফেলে। কথার ফুলঝুরি দিয়ে এম্মাকে মোহিত করত। মোহিত করে কম দামের জিনিস বেশি দামেও বিক্রি করে, এবং একসময় এম্মাকে ঋণজালে আটকে ফেলে।
এ-888sport alternative link প্রকাশিত হয়েছে ১৮৫৭ সালে; একই সালে প্রকাশিত হয় বোদলেয়ারের লে ফ্ল্যর দ্যু মাল। বোদলেয়ারও তাঁর সমাজে অসামান্য কিছু দেখেননি; দেখেছেন ক্লেদ, কৃত্রিমতা আর নাগরিক জীবনের চঞ্চলতা, নগ্নতা ও বহুগামিতা। বোদলেয়ারের 888sport app download apkয় পাই পশুরা বন্দি, গুস্তাভ ফ্লোবের দেখাচ্ছেন পশু নয় শুধু, মানুষও বন্দি।
এম্মা সারাজীবন নায়কের সন্ধানে ছিল। ভাবত সবসময় রাজপুত্রের কথা – যে-রাজপুত্র তাকে শুধুই ভালোবাসবে আর হবে দায়িত্বশীল। কিন্তু সে-নায়কের সন্ধান সে পায়নি। যাদের পেয়েছে তারা হয় প্রতারক, না হয় ভীরু, অথবা লোভী। নায়ক সে পাবেই বা কোত্থেকে? ওই সমাজ নায়ক সৃষ্টি করে না; করতে পারেও না। এমনকি নায়িকারাও চরিতার্থতা পাচ্ছে না। এম্মা মা হতে চায়নি, স্ত্রীও হতে চায়নি, বেশি চেয়েছে প্রেমিকা হতে। কিন্তু ওই সমাজে সে শেষ পর্যন্ত কিছুই হতে পারেনি। পারবেও না, যদি সমাজটা পরিবর্তন না হয়।

Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.