মুনীরুজ্জামান
ঝড় যে তোমার জয়ধ্বজা
দেবব্রত বিশ্বাসের জীবন ও গান
শ্যামল চক্রবর্তী
অক্ষর পাবলিকেশন্
আগরতলা, ত্রিপুরা
আমার আত্মজীবনী তো এক পৃষ্ঠায় শেষ হয়ে যাবে। … ‘সংগীতজীবন’ নাম দেওয়া যেতে পারে এমন কোনো আলাদা বা বিশেষ ধরনের জীবনধারার অভিজ্ঞতা আমার সারা জীবনেও হয়নি। সেই বাল্যকালে কবে থেকে গান গাইতে শুরু করলাম তা আমার মনেও নেই – ‘গান গাইছি-তো-গাইছি।… ছোটবেলার দিনগুলি থেকে শুরু, বড় হয়েও শুধু শুনেছি আর গেয়েছি।’ লিখেছিলেন দেবব্রত, নিজের লেখা বইয়ে।
শ্যামল চক্রবর্তী অবশ্য তার ঝড় যে তোমার জয়ধ্বজায় দেবব্রত বিশ্বাসের বিনয়কে অপ্রমাণ করে দেখিয়েছেন, সকল অর্থেই তাঁর জীবন ‘সংগীতজীবন’ এবং তাঁর জীবনে সংগীত, সংগীতের ঝড়ই পরম সত্য আর সব গৌণ।
দেবব্রত বিশ্বাসকে নিয়ে অনেক লেখা হয়েছে। তাঁর পক্ষে এবং বিপক্ষেও রয়েছে কিছু লেখা। সম্ভবত এই বইখানিতে লেখায় এবং সংকলনে একজন সমগ্র দেবব্রত বিশ্বাসকে পাওয়া যেতে পারে। এই কথা লিখেছেন 888sport live chatীর বহুদিনের বন্ধু সহযোদ্ধা খালেদ চৌধুরী শুরুতেই তাঁর শুভেচ্ছা-বার্তায়। সে-অর্থে শ্যামল চক্রবর্তীর প্রচেষ্টাকে অনেকখানি সার্থক বলব।
প্রায় পাঁচশো পৃষ্ঠার সুমুদ্রিত, সুদৃশ্য প্রচ্ছদেও বইটিতে দেবব্রত বিশ্বাসকে তুলে আনা হয়েছে একেবারে কিশোরগঞ্জের গ্রাম থেকে। সেই যে তিনি লিখেছেন, ‘বাল্যকালে কবে থেকে গান গাইতে শুরু করলাম’, শ্যামল চক্রবর্তীর দেবব্রতকে খোঁজাও সেই তখন থেকে। যখন মায়ের সঙ্গে গলা মিলিয়ে ব্রহ্মসংগীতের হাত ধরে গানের জগতে শিশু দেবব্রতের প্রবেশ। সেই সময়ের সামাজিক অবস্থার চিত্রটি তুলে ধরতে ভোলেননি লেখক। যে-সমাজবাস্তবতা সারা জীবন দেবব্রত বিশ্বাসকে কখনই ছেড়ে যায়নি, এর পরিচয় পাওয়া যায় 888sport live chatীর পরিণত জীবনে।
ঝড় যে তোমার জয়ধ্বজাকে লেখক কয়েকটি ভাগে বিন্যস্ত করেছেন।
শিশু কিশোর জীবন, কলকাতার জীবন : প্রথম ভাগ, কলকাতার জীবন : দ্বিতীয় ভাগ।
888sport live chatীর নবজন্ম, সুর-স্বর-স্বরলিপি ও 888sport live chatীর স্বাধীনতা, সুর ভুলে কি খুঁজে বেড়াই? এই তোমার আলো।
অন্তরঙ্গ চীন।
888sport app download for android।
888sport live chatীকে নিবেদিত 888sport app download apk।
কথা ও 888sport sign up bonus888sport live footballে 888sport live chatী প্রসঙ্গ। 888sport live chatীর সাক্ষাৎকার।
‘দেবব্রত বিশ্বাস’ তথ্যচিত্রের চিত্রনাট্য।
স্বরচিত গল্প।
‘ব্রাত্যজনের রুদ্ধ সংগীত’ ভূমিকা ও একটি সমালোচনা।
সাময়িকী ও সংবাদপত্রের 888sport world cup rate।
চিঠিপত্র।
সূচনাতেই বেশকিছু ছবি।
888sport live chatীর রচিত গান ও সুরারোপিত গান। 888sport live chatীর গানের সম্পূর্ণ তালিকা। live chat 888sportে 888sport live chatীর গান।
জীবনপঞ্জি।
যদিও বিধেয় নয়, তবু প্রায় সম্পূর্ণ সূচিটাই তুলে ধরতে হলো। এই কারণে যে, এ থেকে বোঝা যায়, একজন সম্পূর্ণ দেবব্রতকে পাঠকের সামনে নিয়ে আসার জন্য লেখকের চেষ্টার কোনো ত্রুটি নেই।
শিশু-কিশোর জীবন থেকে কলকাতার জীবন : দ্বিতীয় ভাগ পর্যন্ত দেবব্রত বিশ্বাসের দেবব্রত বিশ্বাস হওয়ার কালকে লেখক অত্যন্ত গভীরে গিয়ে, অথবা বলা যায় জীবনের অতলে গিয়ে তুলে এনেছেন। এই আলোচনায় এর বেশি বললে পাঠকালে পাঠকের রস যে ক্ষুণ্ণ হবে, তাতে সন্দেহ নেই। পাঠকের স্বার্থেই এ-পর্যায়ের আলোচনাটি বিস্তারিত না করাই বাঞ্ছনীয়; কিন্তু একটি কথা না বললেই নয়। কি মানুষ হিসেবে, কি 888sport live chatী হিসেবে, কি সমাজযোদ্ধা হিসেবে দেবব্রত বিশ্বাস এক জীবনে যে দৃঢ় চরিত্র বা অনন্য চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের ওপর নিজেকে দাঁড় করিয়েছিলেন, এই সময়টাই সেই সৃষ্টিশীলতার কাল। এই চিত্রটি ফুটিয়ে তুলতে লেখক শ্যামল চক্রবর্তী কোনো কসুর করেননি। কিন্তু একটি কথা এখানে না লিখলেই নয়, এই পর্যায়ে লেখক তথ্যের ক্ষেত্রে হয়তো সৎ থেকেছেন কিন্তু কোনো সময় সেটা একেবারে তথ্যই হয়ে গেছে, মানুষটা হারিয়ে গেছে। অনেক সময় একটি তথ্যকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য কিছু অনাবশ্যক তথ্যকে হাজির করা হয়েছে, যেগুলো না থাকলে হয়তো ভাবে এবং ভারে বইটির মেদ কিছুটা কমে আরো তীক্ষ্ণন হতে পারত। যেমন ছত্রিশ পৃষ্ঠায় দেবব্রত বিশ্বাসের পারিবারিক পদবি সংক্রান্ত তথ্য দিতে গিয়ে লেখক লিখেছেন : আসলে পারিবারিক পদবি ছিল ‘দে বিশ্বাস’। দেবব্রত তাঁর নামের পাশে ‘দে বিশ্বাস’ লিখতেন না। শুধু ‘বিশ্বাস’ লিখতেন। এটুকু লিখলেই হয়তো চলত। কিন্তু এখানে লেখক তথ্যটির বিস্তার করে আরো লিখেছেন : 888sport appsে পদবি ছেঁটেছিলেন অনেকেই। উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর বংশধরেরা ‘চৌধুরী’ বর্জন করে ‘রায়’ হলেন। 888sport apkী প্রফুল্লচন্দ্রের পূর্বপুরুষেরাও তো ‘রায়চৌধুরী’ লিখতেন। প্রফুল্লচন্দ্র নিজে পদবি লিখতেন শুধু রায়। আসলে এই বাড়তি তথ্যগুলির প্রয়োজন ছিল কি? তথ্য বিস্তারের এরকম দৃষ্টান্ত আরো রয়েছে। আমার কাছে মনে হয়েছে এগুলো বাহুল্য। এতে শুধু যে পাঠের গতি হোঁচট খায় তাই নয়, ভাবেরও ছন্দপতন ঘটে।
888sport live chatীর নবজন্ম পর্যায়ে ব্রহ্মসংগীত থেকে আইপিট্রির মাধ্যমে গণসংগীতে দেবব্রত বিশ্বাস। তার থেকে রবীন্দ্রসংগীতে লেখকের ভাষায় : ‘প্রথমে ব্রহ্মসঙ্গীত, পরে রবিবাবুর গান, তারপর দিগন্তপ্রসারী রবীন্দ্রসঙ্গীত তাঁর জগৎ ও জীবন গড়ে তুলেছে। মাঝে একটা ঝড়ো অধ্যায় আছে। গণনাট্যের সাড়া জাগানো গান।’ বস্ত্তত দেবব্রত বিশ্বাসের এই পুরো পরিচয়টাই শ্যামল চক্রবর্তী সার্থকভাবে অঙ্কন করতে সমর্থ হয়েছেন তাঁর বইয়ে। এ বিচারে তিনি যে সফল, সে-বিষয়ে সন্দেহ নেই।
দেবব্রতের গাওয়া রবীন্দ্রগংগীত নিয়ে ঝড় বয়ে গিয়েছিল সময়। এ-বিষয়টি নিয়ে ‘সুর-স্বর-স্বরলিপি ও 888sport live chatীর স্বাধীনতা’ মোটামুটি দীর্ঘ আলোচনা করেছেন লেখক। অধ্যায়ে ‘রবীন্দ্র-সঙ্গীতের সুর-দলন\ সৌমেন্দ্রনাথ ঠাকুর’ এবং ‘রবীন্দ্রসংগীতে সুরের অসংগতি কেন?\ অমিতাভ চৌধুরী’ রচনা দুটির সংকলন অধ্যায়টিকে সমৃদ্ধ করেছে। দেবব্রত বিশ্বাসের গায়কি এবং বিশ্বভারতীর সংগীত বিভাগের ‘মাতববরদের’ বিরোধের স্বরূপটি উদ্ঘাটিত হয়েছে। এই কৃতি দাবি করতে পারেন লেখক।
দেবব্রত বিশ্বাস ব্রহ্মসংগীতে, গণসংগীতে, রবীন্দ্রসংগীতে; কিন্তু তিনি যে কখনোই তাঁর মানবধর্মটি বিস্মৃত হননি, তার পরিচয়ও পাওয়া যায় বইয়ের পরতে পরতে। শুধু গণসংগীতে নয়, সমাজ ও গণমানুষের প্রতি দায়িত্ববোধও তাড়িত করেছে তাঁকে। ‘গণআন্দোলনের ভেতর দিয়ে যে মানুষের জন্ম ও বড়ো হওয়া, তিনি সমাজের অস্থির সময়ে স্থিরচিত্ত থাকতে পারেন না। ’ (পৃ ১৩১)। স্থির থাকেননি। কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য না হয়ে পার্টির ফান্ডের জন্য অর্থ সংগ্রহে গান গেয়েছেন। হিন্দুস্থান ইনসিওরেন্স, যেখানে তিনি চাকরি করতেন) এর ইউনিয়নের লড়াইয়ে শামিল থেকেছেন। কলকাতার দাঙ্গায় দাঁড়িয়েছেন মানুষের পাশে। সামাজিক দায়বদ্ধতা এড়িয়ে যাননি 888sport live chatী।
লেখক লিখেছেন : ‘দেবব্রতর পরিচয় দুটো। প্রথম জীবনে গণসংগীত888sport live chatী। দ্বিতীয় জীবনে রবীন্দ্রসংগীতের সার্থক রূপকার। যে-কোনো 888sport live chatী তখনই সার্থক হয়ে ওঠেন, যখন তাঁর পরিবেশনা মানুষের সদর্থক দিকগুলি বিকশিত করে তোলে। এই বিচারে দেবব্রত বিশ্বাস একশভাগ সার্থক।’
একই কথা বলা যায় ঝড় যে তোমার জয়ধ্বজা বইয়ের লেখক শ্যামল চক্রবর্তী সম্পর্কে। তিনি আমাদের সম্পূর্ণ দেবব্রতর সঙ্গে পরিচয় করে দিয়েছেন। আরো দেখিয়েছেন সমাজ, সংগীত আর ঝড়ো এক জীবনে দেবব্রতর মধ্যে ছিল বৈরাগ্যের অস্পষ্টতা। তিনি ব্রহ্মসংগীত গেয়েছেন, ব্রাহ্ম সমাজের মন্দিরে ‘আধ্যাত্মিক গান গেয়েছেন। লেখক বলছেন, ‘মন প্রাণ খুলে গাইতেন গান, আধ্যাত্মিকতার জালে কখনও ধরা দিতেন না।’ এই অস্পষ্টতার মধ্যেই হয়তো দেবব্রতকে জানা যায়, এমনকি রবীন্দ্রসংগীতকেও বোঝা যায়।

Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.