সনৎকুমার সাহা
যতদূর মনে পড়ে, ১৯৫৭-য় মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় মারা যাওয়ার পর কলকাতার এক জনপ্রিয় মাসিক পত্রিকা তাঁর 888sport sign up bonusকে 888sport apk download apk latest version জানাতে তরুণ এবং নতুন লেখকদের 888sport alternative link রচনায় এক প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। আয়তনের কোনো সীমা বেঁধে দেওয়া ছিল কিনা, আজ আর 888sport app download for androidে আসছে না। তবে পূর্বপরিচয় থাকলে লেখক প্রতিযোগিতায় গণ্য হবেন না, এমন একটা শর্ত জুড়ে দেওয়া ছিল। তখনো কলকাতার 888sport free bet login এখানে খোলামেলাই আসত এবং সেখানকার মানটাকেই আমরা অনুসরণ করার চেষ্টা করতাম। প্রতিযোগিতায় যোগ দেওয়াতেও কোনো বাধা ছিল না। দেয়ালটা পাকাপোক্ত হয় পঁয়ষট্টির পাক-ভারত যুদ্ধের পর। তার গাঁথুনি অটুট না থাকলেও পুরোপুরি ভাঙেনি। কলকাতারও ওই বনেদিয়ানা আর নেই। তবে এসব অন্য প্রসঙ্গ। এখানে তাদের কথা অনর্থক।
আমরা বলছি মানিক-888sport sign up bonus 888sport alternative link-রচনা প্রতিযোগিতার বিষয় নিয়ে। তখন এ-বাংলা থেকেও অন্তত একজন তাতে শামিল হয়েছিলেন। বয়স আর কতই হবে। প্রাক-স্নাতক পর্যায়ের ছাত্র। বিশও হয়নি। এ-বাংলার। আবার ও-বাংলারও। মাত্র ক-বছর হলো বর্ধমানের রাঢ় অঞ্চল থেকে এসেছেন। নতুন আস্তানা খুলনায়। শুকনো খটখটে আবহাওয়া থেকে একেবারে উলটো পিঠে – ভেজা-ভেজা সোঁদা-সোঁদা লতাপাতা-গাছপালার অধিকারে যে-মাটি ও মানুষ, তাদের ভেতরে। রাঢ়ের 888sport sign up bonus টাটকা। উন্মূল হওয়ার বেদনাও। যদিও সহজাত প্রতিভায় দক্ষিণ বাংলার জীবনচর্চাতেও মিশে যেতে শুরু করেছেন। চেতনায় তাঁর ভাষা ও প্রকৃতির নতুন উপনিবেশ প্রসারিত হয়ে চলেছে। শিকড়ের রস টেনে নেয় তা এখানেও। এবং মানুষের ভাগ্যলিপি তিনি পাঠ করতে শেখেন ওই মাটির কাছাকাছি তাদের বেঁচে থাকার চালচিত্রে ও live chat 888sportে চোখ রেখেই। শুধু অবশ্য রাঢ় বাংলাতেই। 888sport sign up bonusর সঞ্চয় অফুরান। চেতনায় জমা থাকে। হুটোপুটি করে। তাড়া করে ফেরে। আজো।
সে-সময় তিনি লিখেছিলেন একটি ছোট 888sport alternative link। নাম শামুক। জমা দিয়েছিলেন বিবেচনার জন্য ওই প্রতিযোগিতায়। তবে এর আগে 888sport alternative link কেন, তাঁর কোনো লেখাই কোথাও ছাপা হয়নি। তাঁর প্রথম মুদ্রিত রচনা, ছোটগল্প ‘শকুন’ 888sport appয় সিকান্দার আবু জাফরের সমকালে বেরোয়, এবং ইতিহাস হয়, আরো দুবছর পরে – ১৯৬০-এ। মাঝখানে তিনি প্রগতিশীল ছাত্ররাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। তখনো তাতে ছিল আদর্শের টান। এবং অশালীন ক্ষমতার অন্যায় শোষণকে চ্যালেঞ্জ করার মোহ। তারই খেসারত দিতে পুলিশের হাতে বেহদ্দ পিটুনি খেয়ে ওখানকার কলেজ ছাড়তে বাধ্য হওয়া, তারপর একরকম আছড়েই পড়া রাজশাহীতে। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার পালা তিনি শেষ করেন এখানেই।
যাই হোক, ওই মানিক-888sport sign up bonus 888sport alternative link প্রতিযোগিতায় এখান থেকে অচেনা-আনকোরা অপ্রত্যাশিত নাম এক হাসান আজিজুল হক – অনেকটা দুঃসাহস দেখিয়েই ভিড়ে যায়; এবং সবাইকে অবাক করে সবশেষের চারজনের বাছাই তালিকায় চলে আসে। এই তালিকায় আর যাঁরা ছিলেন, তাঁরা হলেন – মতি নন্দী, পূর্ণেন্দু পত্রী ও অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়। পাদপ্রদীপের আলো পড়ে এই তিনজনের ওপর। অচিরেই ও-বাংলায় তাঁরা পরিচিতি পান 888sport alternative linkকার হিসেবে। কলকাতায় জনপ্রিয় ও বহুল প্রচারিত বিভিন্ন 888sport live football-পত্রিকার সমর্থনও জোটে ভালোই। ষাটের দশকেই এঁরা প্রতিষ্ঠিত কথা888sport live footballিক। 888sport alternative link লিখে চলেছেন তাঁরা প্রত্যেকেই। পূর্ণেন্দু পত্রী অবশ্য 888sport live football-888sport live chatের অন্য মাধ্যমেও হাত লাগান – 888sport app download apkয়, live chat 888sportে – এবং সফলও হন। তবে এখানে যা বলার, ওই প্রতিযোগিতা এঁদের 888sport live footballিক হওয়ার পথ খুলে দেয়। ওই সময়ের ঔপন্যাসিক হিসেবে এঁরা জাঁকিয়ে বসেন। প্রতিযোগিতায় তাঁদের স্বীকৃত 888sport alternative linkগুলো দ্রুত ছেপে বেরোয়। পাঠকরাও – সবরকম পাঠকই – আকৃষ্ট হন।
কিন্তু হাসান আজিজুল হকের ওই 888sport alternative link ছাপা হয় না। না, কারো বিরোধিতার কারণে নয়। তাঁর নিজেরই অনিচ্ছায়। অথচ বোঝাই যায়, যে-রচনা গোটা বাংলায় প্রতিশ্রুতিশীল বলে ‘বিশেষের’ মর্যাদা পেয়েছে, ছেপে বেরোলে তা তাঁকে নিয়ে আলাদা উৎসাহ জাগাতো অবশ্যই। অন্য তিনজনের বেলাতে তেমনই ঘটেছে। হতে পারতেন তিনি এক নতুন চমকের জন্মদাতা, কারণ তখনো তাঁর বয়স বিশ হয়নি। পড়াশোনার পাট চুকতে আরো দু-তিন বছর বাকি।
আচমকা-খ্যাতির প্রলোভনে ওই অল্প বয়সেও তিনি যে নির্বিকার থাকতে পেরেছেন, এটা কিন্তু খেয়াল করার মতো। শামুক নিয়ে তখন মাতামাতি শুরু হলে তা দোষের কিছু হতো না। সকলে বাহবাই দিত। এবং তা-ও হতো যথার্থ। লেখায় মুন্শিয়ানাতে কোনো কমতি ছিল না। বিষয়ও, সেই সময়ে চল যেমন, শহুরে স্বল্প আয়ের মানুষের বাঁধাধরা জীবনের আর্তি ও শ্রান্তি। পাঠক-প্রত্যাশার তরঙ্গদৈর্ঘ্যে মিলে যেত সহজেই। কিন্তু তিনি মন থেকে সায় পান না। এ যেন জ্যোতিরিন্দ্র নন্দী-নরেন মিত্র, এঁদের ঘরানার। পেছনে অবশ্যই মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রত্যেকেই অশেষ 888sport apk download apk latest versionর। প্রেরণারও; কিন্তু সেখানে তাঁর সত্তার জায়গা-জমি-মানব-মানবী কতটুকু? কিছু যে নেই, তা নয়। কিন্তু মূলে কি পৌঁছোয়? না পৌঁছুলে এই লেখায় তিনি কোথায়? ওই অল্প বয়সেই নিজের বিচারে তিনি তাকে দূরে ঠেলেন। বছর পাঁচেক পর পূর্বমেঘ বেরোতে শুরু করলে ওই পত্রিকার তাগিদেই তাতে শামুকের দুই-এক কিস্তি বেরিয়েছিল। কিন্তু মনের সঙ্গে খাপ-খাওয়াতে না পারায় তিনি আর তা টানেননি।
এদিকে তাঁর সত্যিকারের আবির্ভাব ঘটে ‘শকুন’ গল্প নিয়ে। এখানে কোনো দ্বিধা নেই। গল্পের সমস্তটার সত্য-স্বরূপ তাঁর চেতনায়। তাঁর জীবনের স্পন্দন সঞ্চারিত হয় প্রতিটি শব্দে প্রতিটি বাক্যে প্রতিটি দৃশ্যে – এবং – দৃশ্য-পরম্পরায়। তা প্রাচীন অথচ অবিনাশী, প্রত্যক্ষের অবিচল তিক্ততা ও মায়া তাতে জড়ানো, অথচ তা অভিনব। এই একটি গল্পেই তাঁর অনন্যতা ফুটে ওঠে। এখনো তা অব্যাহত। লেখা তাঁর কাছে বিনোদনের বিষয় নয়। অস্তিত্বের অমোঘ উচ্চারণ তিনি খোঁজেন। জীবনের বাইরে কল্পনার সুতো ছেড়ে নয়, জীবনের ভেতর থেকে তার অস্থি-মজ্জা-সার-সত্তা নিয়ে। এবং সবটাই তাঁর আপন অভিজ্ঞতার বিশ্বে। এতে তিনি একশভাগ সৎ। জীবনের মন্থনে যদি গরলই শুধু ওঠে, তবে তিনি তাতে এক ফোঁটাও সুখ মেশান না। অযথা গল্পকে কোনো ‘মোহন মরীচিকা’র পেছনে টেনে নিয়ে যান না। যদিও মানবভাগ্যের পরিবর্তনের দুরূহ পথই তাঁর লক্ষ্য। কল্যাণ তাঁর কাম্য। এবং মানবভাগ্য, মানব-মানবী উভয়েরই।
এতে লেখা তাঁর অনিবার্যভাবে বিষয়ের সীমায় বাঁধা পড়ে। ফলে ফোলানো-ফাঁপানো 888sport alternative link আর হয় না। কিন্তু কথা888sport live footballের দিকপাল তিনি হয়ে ওঠেন ঠিকই। তাও ওই ছোটগল্প লিখেই। তবে এটাও বোধহয় পুরো ঠিক বলা হলো না। ছোটগল্পের কোনো বাঁধাধরা সংজ্ঞা দিয়ে তাঁর ওইসব রচনার মূল্যায়ন হয় না। এটা ঠিক, তাঁর কোনো কোনো গল্পে ওই সময়ের সেরা লেখকদের – দেশি-বিদেশি দুই-ই – ছাপ একটু-আধটু রয়েছে। কিন্তু তার পরিসরে তা বেমানান হয় না। সৃষ্টির সৌষম্য বজায় থাকে। হাসানের স্বাক্ষরই শেষ বিচারে একমাত্র নিয়ন্তার অধিকার পায়।
ওই ষাটের দশকের শেষ দিকে হাসান লেখেন ‘আত্মজা ও একটি করবী গাছ’, যা বাংলা ছোটগল্পের সমস্তটায় সেরা সৃষ্টির একটি। আমার ব্যক্তিগত পছন্দ ‘আমৃত্যু আজীবন’, একে আমি ছোটগল্প বললেও কোনো সীমারেখায় বাঁধতে পারি না। এর, আয়োজনের নয়, চেতনার আকাশ ছেয়ে ফেলার যে মহাকাব্যিক ব্যঞ্জনা, তার তুল্য কিছু আর কোথাও 888sport live footballের যে-কোনো আকারে খুব কমই পড়েছি। শুধু বাংলাতে নয়, অন্য 888sport live footballেও। আমার পড়াশোনায় ঘাটতি আছে, এ-কথা মেনে নিয়েও এটা জোরের সঙ্গে বলি। অথচ জীবনে-মাটিতে-অর্জনে-পরাজয়ে যে জন্ম-জন্মান্তরের কর্ষণা, একেবারে চেনা জগতের মানুষী অভিজ্ঞতায় তাকে ফুটিয়ে তোলায় কোথাও কোনো খাদ নেই এতটুকু। দীর্ঘ পরিসরে এই রকম রচনা আরো জীবন ঘষে আগুন, শোনিত সেতু, সাম্প্রতিককালে বিধবাদের কথা। গল্প জীবনের গভীরতর কোনো আকুতিকে, কোনো দ্বান্দ্বিক অনিবার্যতাকে ধরতে চায়। কাহিনি যেন শুধুই অবজেকটিভ কো-রিলেটিভ। মোটকথা, হাসান ছোটগল্প লিখেই মহত্ত্বের শেষ ধাপে পা রাখেন। 888sport alternative link যে লেখেননি, এটা তাঁকে খাটো করে না। আমরা এতেই অভ্যস্ত হয়ে পড়ি। এবং মেনে নিই, অপ্রয়োজনে কথা বাড়ানোর মানুষ হাসান নন। প্রায় কিশোর বয়সেই 888sport alternative link লেখায় তাঁর হাতেখড়ি। তখনো নিজেকে ঠিকমতো চেনেননি। কিন্তু যে-মুহূর্তে নিজের শক্তি ও সম্ভাবনার জায়গাটা চিনে নিতে পারলেন, তারপর আর ও-পথ মাড়াননি। কোনো প্রয়োজন তাঁর পড়েনি। অন্তত জীবনের কাছে, 888sport live chatের কাছে দায়বদ্ধ থেকে।
কিন্তু এই হাসানই এখন অপরাহ্ণবেলায় আবার 888sport alternative link লেখা শুরু করেছেন। কোনো চমক দিয়ে দৃষ্টি-আকর্ষণ এর উদ্দেশ্য হতে পারে না। কথা888sport live footballে নিজের জায়গাটা তাঁর পাকা। খ্যাতির চূড়াতেই তাঁর অবস্থান। 888sport alternative link না লিখলেও কোনো অপূর্ণতার অভিযোগ কারো থাকার কথা নয়। এবং অনর্থক বাগ্বিস্তারে তাঁর অনীহার কথাও আমরা জানি। তারপরেও যখন তিনি 888sport alternative linkে নতুন করে হাত দিয়েছেন, তখন অনুমান করি, এ তাঁর ভেতরের তাগিদেই। বিষয়ের গভীরতা ও ব্যাপ্তিকে পুরোপুরি ধরার জন্যে তাঁর প্রেক্ষাপটে 888sport alternative linkের আধার, মনে হয়, এতদিনে তাঁর কাছে সবচেয়ে উপযোগী মনে হয়েছে।
নিজের জগৎ থেকে, নিজের ভাবনা-বলয় থেকে এ সরে আসা নয়। বরং তাকে আরো স্পষ্ট করে তোলা, অনুবীক্ষণে খুঁটিনাটি সামনে আনা, প্রত্যক্ষের আড়াল যতদূর পারা যায়, ভেঙে ফেলা, এবং সব মিলিয়ে তার অখন্ডতাকেও ধরে রাখা। এসবই তিনি করেন তাঁর নিজের মতো করে। সেটা কোনো টাইপ নয়। বিষয়-ভাবনার সঙ্গে খাপ খাইয়ে এবং 888sport live chatের চাহিদা মিটিয়ে তা বারবার আমাদের বিস্ময় জাগায়। যে-দুটি 888sport alternative link এর ভেতরে তিনি লিখেছেন, সে-দুটিতেও তাঁর আগুনপাখির প্রথম প্রকাশ ২০০৬-এ। সাত বছর পর, এই ২০১৩-তে, ক-মাস আগে, সাবিত্রী উপাখ্যানের। ভাষার নির্মাণে দুটো দুরকম। তবু তাঁর নিজস্বতা ধরা পড়ে নির্ভুল।
বাংলার 888sport alternative link-888sport live football এদের নিয়ে আবার মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। গত পঞ্চাশ বছরে বাংলায় 888sport alternative link লেখা হয়েছে প্রচুর। গাদা-গাদাই বলা যায়। কিন্তু কিছুই প্রায় হয়নি। দায়িত্বজ্ঞানহীন চটকদারি, ক্ষুদ্রতার সরব প্রদর্শনী ও বৃথা পরানুকরণে আমাদের রথী-মহারথীরা মেতেছেন। হাতে প্রায় কিছুই জমা পড়েনি। বাস্তবের অন্তরলোকে দৃষ্টি পড়েছে সামান্যই। ব্যতিক্রম যে কিছু নেই, তা নয়। এর ভেতরেই কমলকুমার মজুমদারের অন্তর্জলী যাত্রা হাসান আজিজুল হকের অকাল বসন্তের 888sport alternative link দুটো এই গড্ডলিকা স্রোতের মুখে হঠাৎ এসে হাজির হয়। স্রোত কি দুদন্ড থমকে দাঁড়ায়? একটুখানি কি নিজের দিকে তাকায়? জানি না। তবে বাতিঘর একটা জ্বলে ওঠে। স্রোতে তার আলো ঠিকরোয়। এ হাসানের কোনো ভেলকিবাজি নয়। 888sport alternative link-লেখা দিয়েই তাঁর শুরু। কিন্তু 888sport live chat-888sport live footballের দায় ও তাঁর পরিমিতিবোধ এতদিন তাঁকে ছোটগল্পের বৃত্তেই পূর্ণতা দিয়েছে। কোনো প্রলোভনই তাঁকে কক্ষচ্যুত করেনি। এখন বস্ত্ত-অভিজ্ঞতার অনিবার্যতা ও তাঁর বোধের বিস্তার তাঁকে আবার 888sport alternative link লেখায় ফিরিয়ে এনেছে। সমাজ-888sport live footballের দাবিকে পুরোপুরি মান্য করে ও বিবেকের সততা এতটুকু বিসর্জন না দিয়ে তিনি লিখছেন। আজকের বাংলা 888sport alternative link নিয়ে আমরা বলার মতো কিছু পাচ্ছি।
এগুলো কিন্তু আমার মূল বিষয় নয়। বড়জোর সেখানে যাওয়ার পথ কাটা। ভনিতাই একরকম। সবে বেরিয়েছে সাবিত্রী উপাখ্যান; পড়ার পর তার অভিঘাতে মনে যে-আলোড়ন জাগে, তারই কথা যতটা পারি তুলে ধরার চেষ্টা এখানে। সবটা পারার সাধ্য আমার নেই। কারণ তার প্রচন্ডতা, তার নির্মম নির্লিপ্ততা এবং একই সঙ্গে তার অসহ বেদনার অন্তঃস্রোত ও সামূহিক অন্যায়ের সামনে নীরব হাহাকারের ধিক্কার, এদের বিস্ফোরণের পরিণাম আমার বোধের সীমা ছাড়িয়ে যায় বহুদূর। অনেক কিছুই আমার নাগালে আসে না। এমনও হতে পারে, চোখ পড়েছে বেঠিক জায়গায়। যা দেখি, যেমন দেখি, লেখকের মূল ভাবনার সঙ্গে তার সংগতি নেই। তবু আমি আমার কথাই শুধু বলি। এর বেশি অধিকার আমার নেই।
দুই
আগেই বলেছি আগুনপাখি তাঁর প্রকাশিত প্রথম 888sport alternative link। এ এক আশ্চর্য 888sport promo codeর কাহিনি। একেবারে মৃত্তিকা-সংলগ্ন। সমাজের ছককাটা ঘেরা জমিতে সব রীতি-সব প্রথা মেনে নিজের নির্ধারিত জায়গায় তার অবস্থান। তার মুখের ভাষাতেই 888sport alternative link এগোয়। তাকে সাবলীল স্বাভাবিকতা দেয়। কোথাও কিছু অসংগত মনে হয় না। অতিসাধারণ দুঃখ-শোক-হাসি-আনন্দ নিয়ে তার জীবনের যে ভরকেন্দ্র, এবং তাঁর ভারসাম্য কোনো কিছুই ভেতর থেকে টাল খায় না। কিন্তু বাইরের ঘটনারাশি, যা অনিবার্য করে তুলবে সাতচলি�শের দেশভাগ, তা তার ঘরের ভেতরেও আছড়ে পড়ে। সে তার সামনে তার মতো করে উঠে দাঁড়ায়। কোনো ঢাকঢোল পেটানো নয়, হাঁক-ডাক নয়, আপন নিজস্বতা থেকে এতটুকু সরে না এসে নির্দ্বিধায় মাথা তোলে, ক্রমশ আকাশ ছোঁয়। ঘটনাপ্রবাহ যেদিকেই যাক, আপন অন্তরের আলোকে বাইরের জগৎকে আলোকিত করে। আপন জীবনের সমন্বিত মহিমাকে সরল বিশ্বাসে অকুণ্ঠ সততায় চারপাশের আরোগ্যাতীত দুর্যোগকে উপেক্ষা করে নিজের আসনে স্থির থেকেই দূর থেকে আরো দূরে প্রসারিত করে। বিশ্বসাথে যোগ একটা তৈরি হয়। ঘটনারাশির উত্তাল ঢেউ তাকে উপেক্ষা করে যায়, তবু সে নিজেকে জানায়। জানায় তার আন্তর-সত্তার তাগিদে, যা কেবল তার একান্ত গ্রামীণ জীবনে মাটির ও মানব-মানবীর দৈনন্দিন সম্পর্ক সম্বন্ধের মায়া ও মাধুর্য থেকে, তাপ-উত্তাপ থেকে অদৃশ্যে গড়ে ওঠে।
সাবিত্রী উপাখ্যানও আর-এক আক্ষরিক অর্থে একলা 888sport promo codeর কথা, যদিও সম্পূর্ণ বিপরীত মেরুতে। সে মাথা তুলে দাঁড়ায়-কি-দাঁড়ায় না, জানি না, তবে চলে যায় বর্ণনার বাইরে। অন্তত লেখকের কাছে। স্বামীর সঙ্গে প্রথম মিলনের প্রাক-মুহূর্তেই যে বীভৎস পৈশাচিকতায় তার পার্থিব শরীর দলিত হয়, তার জান্তবতার নিষ্ফল-নিষ্করুণ নিরাবরণ বিবরণ অসহায় আক্ষেপে আমাদেরও বাকরুদ্ধ করে। সে থমকে যায় ওইখানে। এবং বাঁচে। দীর্ঘ-অতিদীর্ঘ জীবন। যেন আত্মতায় ও প্রত্যাখ্যানে স্থির। এ-বিষয়ে লেখক নিশ্চুপ। তা 888sport alternative linkের বাইরেই থেকে যায়। মনে হয়, এখানে তাঁর যা বলার, তা হাসান বলে ফেলেছেন। এবং আমরা জানি, অনর্থক একটি বাক্যও তিনি অপব্যয় করেন না।
এই কন্যা, সাবিত্রী, এবং আগুনপাখির 888sport promo code একই এলাকার। লেখকও তাই। আর জীবন ও প্রকৃতির অনুপুঙ্খ বর্ণনায় তাঁর সিদ্ধি প্রবাদতুল্য। ভাষা তাঁর বস্ত্তর অন্তর্দেশ স্পর্শ করে। তার প্রাণরূপ তিনি বয়ন করেন তাঁর অনন্য কথকতায়। কল্পনার আতশবাজি পোড়ান না। শক্ত নিরেট বাস্তবতার সত্য নির্যাস প্রত্যক্ষের স্বাদ-গন্ধ-স্পর্শ নিয়ে ভাষার নির্মাণে হাজির হয়। এদিক থেকে সাবিত্রী উপাখ্যানে আগুনপাখির দৃশ্য-বর্ণনার ধারাবাহিকতা দেখার কথা ভেবে নিয়ে আমরা বসে থাকি। কিছু যে মেলে না, তা নয়। কিন্তু মূল জায়গায়, আর তার বিস্তারে, দেখি বদলে গেছে ভাষা। অভ্যাস ও অনুভবের জগৎ তার ভিন্ন। ভাষাও তার অনুগামী। যদিও পরিপার্শ্বের চিত্রণে কোনো বিভেদের প্রাচীর নেই। মানবিক বৃত্তির – এবং প্রবৃত্তির – অনাসক্ত উচ্চারণে কোথাও কোনো বৈষম্যের সংকীর্ণতা নেই। শৈথিল্যও নেই।
আগুনপাখির 888sport promo code মুসলিম পরিবারে ওই পরিবেশে রাঢ় বাংলার এক গ্রামে জন্মায়, বড় হয়। যেমন আর সবাই, সেও তেমন। শুধু আপন চৈতন্যের আলোয় যা যেমন দেখে, নিজের মতো গ্রহণ করে। হয়ে ওঠে। বিচ্ছিন্নতায় নয়। সবাইকে নিয়ে সবার সঙ্গে। এদিকে সাবিত্রী ব্রাহ্মণকন্যা। সংস্কারাচ্ছন্ন পরিবার। বিধিবিধানে ঝোঁক, সাত বছরে গৌরীদান বাবাই করেন। ফলে তার বিয়েও তার হাতে নয়। কোনো শখ-আহ্লাদের ব্যাপারও নয়। শাস্ত্রে প্রশস্ত, তাই। আর তার বেড়ে ওঠাও দাদার একাকী-সংসারে একরকম সঙ্গীহীন। মাকে হারিয়েছে জন্মলগ্নে। বাবাও চলে গেছেন। শুধু কাজের মেয়ে নিশিবালা – হাড়িদের মেয়ে, তাই হাড়িদিদি – দেখাশোনা করে। সেও এমন কিছু বয়সে বড় নয়। কাজেই সাবিত্রী, বলা যেতে পারে, একরকম শুধু সাবিত্রীই। এটা কি লেখকের ইচ্ছাকৃত? প্রশ্নটা পরে উঠবে। আপাতত যা বলছিলাম, এই অনভিজাত গ্রাম্য ব্রাহ্মণ পরিবারের হালচাল, কথাবার্তা, কাজকর্ম ইত্যাদি বর্ণনায় কোথাও কোনো খুঁত নেই। বাস্তবে যেমন, তেমন। অথচ এলোমেলো নয়। উদ্দেশ্যহীন নয়। উঁচু বংশের বিশেষত্বহীন মান্যতাহীন প্রাত্যহিকতায় নিঃশব্দে বেঁচে থাকা, ফুরিয়ে যাওয়া আর – আর পরিবার যেমন চোখে পড়ে, তার সারবস্ত্ত ধরেন তিনি ঠিক। দাদার একটা কাপড়ের দোকান। বামুনের ছেলে হলেও। এগুলো নিয়ে আর কথা ওঠে না। গা-সওয়া। উলটো-পালটা মিশেলে গড়িয়ে চলা গ্রামের জীবন। শ্বশুরবাড়ি আরো শ্রীহীন। স্বামী দুকড়ির চেহারা, হাসান লিখেছেন, ‘হাড়গিলের মতো। বামুন হলেই এমন মা-খাই, বাবা-খাই চেহারা হতে হবে? মনে হয় তিনদিন কিছু খায়নি। কুঁজো হয়ে গিয়েছে। পেট ঠেকেছে পিঠে, পৈতেটা কোমরে বাঁধা! চেনা বামুন কি না! একটু তর সইল না তার। সাবিকে ঘরের মধ্যে একা পেয়েই বলল, শোনো বউ, কলকাতায় যাব কাজ খুঁজতে। কিছু একটা কাজ জোটাতে না পারলে বাবা-মা না খেয়ে মরবে। শ্বশুরবাড়ি গেলে তোমারও ওই দশা হবে। কলকাতা গিয়ে দেখি রাঁধুনি বামুনের চাকরি, না হলে কোনো মুদির দোকানে খাতা দেখা লেখার কোনো কাজ পাই কিনা। বাবাকে সাত দিন ধরে চেয়ে চেয়ে গতকাল দুটি টাকা পেয়েছি। তবে হাতে দশটা টাকা না নিয়ে কেমন করে যাই বলো তো বউ? ক’টা টাকার ব্যবস্থা করতে পারবে না?’ হাসান আরো জানাচ্ছেন, তার ‘মড়া খেকো খেঁকুটে চেহারা’।
হার্দিক কোনো সম্পর্ক তার সঙ্গে সাবিত্রীর গড়ে ওঠেনি। একটা প্রায় অচল প্রথার যান্ত্রিক অনুসণন মাত্র। তাতেও কোনো শারীরিক মিলনের পরিস্থিতি তৈরি হয় না। এখানে যা বলার, তা হলো, সাবিত্রীর বিয়ে হয়। কিন্তু তার দৈহিক ও মানসিক একাকিত্ব ঘোচে না। একাকিত্বের বোধও জাগে না। অবলম্বন শুধু হাড়িদিদি – অপরিহার্য কিন্তু তার ভাগ্যের যে-কোনো সম্ভাবনা অবান্তর। বিষয়ের ওপরতল ও অন্তরতল, দুটোকেই হাসান মুঠোয় ধরেন ঠিক। অবশ্য অন্তরতলের খোঁজ যদি করি, তবেই এ-কথা বলা যায়। সঠিক জায়গায় আমার চোখ পড়লো কি পড়লো না, সেটা ভিন্ন কথা। তার দায় লেখকের নয়। তবে ওপরতলের চেহারায় আমাদের মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখেন হাসান। মানুষ ও তার পরিমন্ডল, সবটাই যথাযথ জীবন্ত ও অর্থবহ হয়ে ওঠে। সেটাই যে কাঙ্ক্ষিত বাস্তব, এমন হয়তো নয়। অধিকাংশ সময়েই নয়। যেমন এই সাবিত্রী উপাখ্যানেও। কিন্তু তাতে যে মনোজাগতিক বিস্ফোরণ, তার প্রচন্ড অভিক্ষেপ, – এদের আমরা উপেক্ষা করতে পারি না।
এখানে সর্বনাশের বীজ বোনে কিন্তু স্বামী দুকড়িই। টাকার জন্যে পীড়াপীড়ি করায় সাবিত্রী তার বিয়ের গয়না, অনন্ত বাঁধা দেয়। টাকা হাতে পেয়েই দুকড়ি সটকে পড়ে। কিন্তু গঞ্জনা সইতে হয় সাবিত্রীকে। কদিন পরে তার পতিগৃহে যাত্রা। এবার পাকাপাকি সেখানে থিতু হবে, তাই। তার আগেই অনন্ত ছাড়িয়ে নিতে হবে তাকে। মহাজন দুর্গাপদ বলে পাঠিয়েছে, সে-ই যেন এসে নিয়ে যায়। ডোমপাড়ায় নলিন কেওটের বাসায় সে সন্ধ্যার পর থাকবে। নলিনের বউ সরোজিনী সাবিত্রীদের বাড়িতে ফাই-ফরমাস খাটে। সেদিন ছিল পূর্ণিমা। সাবিত্রী কথামতো সরল বিশ্বাসে বেরিয়ে আসে। তারপরেই ঘটে অঘটন।
সে-বিষয়ে বলার আগে সাবিত্রীর রূপের বর্ণনা, হাসান যেমন দিয়েছেন, দিই। বঙ্কিমের দুর্গেশনন্দিনী বা কপালকুন্ডলা মনে আসে। যেন ইচ্ছাকৃত। রূপে চিরটাকাল ধরা। আমরা পড়ি – ‘তাহলে সাবিত্রীর রূপটা একবার আমাদের বর্ণনা করতেই হয়। এত রূপ বলছে যখন নিশিবালা। সে বলে, গায়ের রং দুধে আলতায় মেশানো। এই হাড়ির বেটি কি কোনোদিন দুধ আর আলতা মিশিয়ে দেখেছে? সে তো দেখেইনি, তার বাবাও কোনোদিন দেখেনি। তার দাই-মায়ের মুখে ত লেগেই ছিল চাঁদের ফালি। বলতে কি আমিও কোনোদিন দেখিনি। ওই দুটো জিনিস মেশালে রংটা কেমন দাঁড়ায়। অবশ্য বুঝে নেওয়া যায় সহজেই। এই রঙের সঙ্গে এক ঢাল কালো কোঁকড়া চুল। মুখটা তো গোল হতেই হবে। গোল না হলে চাঁদমুখ হবে কেমন করে। কিন্তু চোখ দুটি যে কয়রা! বিড়ালের চোখের মতো। কি যেন বলে? বিড়ালাক্ষী। ও রকম চোখের চাউনি আবার খুব খর হয়। সাবির ঠিক তা নয়। টানা চোখের মায়া না থাকলেও নরমই বটে চাউনিটা। একটু খাটো আর হৃষ্টপুষ্ট গড়নের সে। নিতম্ব এখনও পুরো পূরন্ত হয়নি।’
ঢংটা বঙ্কিমী হলেও পর্যবেক্ষণ একান্ত হাসানের। ছবি অাঁকলে তফাৎটা সহজেই চোখে পড়তো। নিশিবালা আরো বলে, ‘- মাগো মা, মানুষ এত সোন্দর হয় গো দিদি! লক্ষ্মী-সরস্বতী, দুগ্গা-পিতিমে এমন সোন্দর হতে পারে না। তাই বলি দিদি, এত রূপ নিয়ে তুমিই বা কি করবে আর এই পোড়া সংসারই বা কি করবে।-’
এ-রূপের বর্ণনা কিন্তু অহেতুক নয়। আমরা দেখব সাবিত্রী বাঁচে কী নিয়ে। সে কি রূপ, নাকি রূপকে ছাড়িয়ে অন্য কিছু? নিজে অবশ্য সে ধ্বংসের মুখে দাঁড়ায় ওই রূপলোভী একপাল নরপিশাচের খপ্পরে পড়ে।
দুর্গাপদ ওরফে তেলা, বটকৃষ্ণ ও সবুর নলিন কেওটের সঙ্গে যোগসাজশে সালঙ্কারা ষড়ৈশর্যশালিনী দেবীর মতো সাবিত্রীকে পথের শেষে আমবাগানের আলো-অাঁধারে ঘিরে ফেলে। মাথার ওপর পূর্ণিমার চাঁদ। আড়াল নেই কোনো। অথবা জ্যোৎস্নাই বিভ্রম রচনা করে। তীব্র আলোয় চোখ ঝলসে যায়। না-কে হ্যাঁ বানায়। প্রত্যক্ষের মূল্যভাবনাকে উপহাস করে। দেবী প্রতিমা ভূলুণ্ঠিত হয়। পরিপার্শ্ব ঘটনার প্রতিকারহীন অসহায়তার অলজ্জ বীভৎসতাকে শিখর বিন্দুর তীক্ষ্ণ আঘাতে ছিন্নভিন্ন নগ্নতায় নিরবলম্ব মেলে ধরে আমাদের চেতনাকে প্রহারে প্রহারে জর্জরিত করে। হাসান কোনো অনুকম্পা দেখান না। এতটুকু ছাড় দেন না। এবং তা সম্পূর্ণত, তিনি সর্বজ্ঞ লেখক, – যা তিনি নিজেই কলমের টানে জানিয়ে দেন, – যেমনটি দেখেন, তেমন। কারণ প্রত্যক্ষ ও বহুরূপী। তার প্রকৃত চেহারা অবিকল দেখা আমাদের সাধ্যের বাইরেই থেকে যায়। তিনি তার স্বরূপ থেকে এতটুকু সরেন না। একাগ্রতায় তাঁর চিড় ধরে না। আমরা আন্দোলিত হই। কখনো কখনো আনতও। অনুকম্পা না দেখালেও তিনি আহত প্রাণে করুণার স্পর্শই বুলাতে চান। তবে স্বপ্ন মায়া রচনা করেন না। মন ভোলানোর বাঁশি বাজিয়ে আমাদের অলীক সুখে আচ্ছন্ন করেন না।
দ্বিপদ এই শ্বাপদেরা প্রত্যেকে একে একে সাবিত্রীর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। জান্তব রিরংসায় তার শরীর লুণ্ঠনে মাতে। ওইটিই সব। অন্য বিবেচনা পলাতক। পূর্ণিমার ভরা জ্যোৎস্না কিছুই আড়াল করে না। অথবা জ্যোৎস্নাই বহিরঙ্গে আছড়ে পড়ে। আবার তাতেই প্রতিহত হয়ে ছটার ঝিলিকে কামনা জাগায়। সাবিত্রীর দুর্বল প্রতিরোধ পরুষ অসহিষ্ণুতায় ও নির্বিবেক হিংস্রতায় তছনছ হয়।
এই বিবেচনাহীন আদিমতার অনুপুঙ্খ বিবরণে হাসানের এতটুকু হাত কাঁপে না। যেন আসুরিক ইচ্ছাশক্তি ও ঐশ্বরিক নির্লিপ্ততা তিনি জয় করেছেন। ঘটনার বীভৎসতা আমাদের বিকল করে। তাঁর মমতাহীন-অনুশোচনাহীন দৃশ্য-পরম্পরা কোনো প্রাকৃত আমোদের সুড়সুড়ি বোলায় না; বরং অসহায় আক্ষেপ ও বিবমিষা জাগায়। অনুমান করি, এইটিই ছিল লেখকের অভীষ্ট। তরুণ আলোচক পিয়াস মজিদ এক জায়গায় মন্তব্য করেছেন, ‘উদোম বাস্তবের সামনে নিরুপায় দাঁড়িয়ে থাকার শাস্তিভোগ তাঁর পাঠকের অবশ্যপ্রাপ্য।’ (‘পৃথিবী বনাম সাবিত্রী’, 888sport appsের হৃদয় হতে, ষষ্ঠ বর্ষ, তৃতীয় 888sport free bet, ভাদ্র, ১৪২০)।
আমি তাঁর সঙ্গে একমত। তবে, আর কে কী ভাববেন, জানি না, কোনো অল্পবয়সী কন্যার হাতে এই বই তুলে দিতে আমি ইতস্তত করবো; যদিও নির্দ্বিধায় মেনে নিই, এই বই 888sport alternative link-888sport live footballে যে-কোনো ভাষাতেই ‘মহত্তম ও উচ্চতম’ নৈপুণ্যের নিদর্শন। আমার আশঙ্কা, এই বইয়ের কোনো কোনো জায়গা পড়ে যে মানসিক বৈকল্যের সৃষ্টি হতে পারে, তা একটি মেয়েকে অসুস্থ করে ফেলা অসম্ভব নয়। ‘শাস্তিভোগে’ তাকে শামিল আমরা নাই-বা করলাম। তবে আর যারা 888sport alternative link-পাঠে আগ্রহী, তাদের হওয়া উচিত এ অবশ্যপাঠ্য।
সাবিত্রী-শরীরের জবরদখলের এই শুরু। লেখক জানাচ্ছেন, সেটা ১৯৩৭ সাল। ঘটনা মানেই তার স্থান-কালের এক সংযোগ-বিন্দু আছে। সেই সূত্রে ওই সালটা প্রাসঙ্গিক। যেমন প্রাসঙ্গিক তার ভৌগোলিক অবস্থান। তা নইলে এই কাহিনি নির্বিশেষ। ওই রকম কত দিন কত রাত আগে পার হয়েছে। কত দিন কত রাত পরে পার হয়ে চলেছে। এখনো। এরা সকলেই মিশে আছে ওই সাবিত্রীকথায়। জীবনের অতিপ্রয়োজনীয় অতিপ্রকট প্রবৃত্তি-এক তাকে চালনা করে। তার শেষ নেই। হয়তো সামলে রাখার চেষ্টা চলে। তা আরোপিতই। এবং ঐতিহ্যে দাঁড়িয়ে গেলে সেইটিই ছক কাটে বাসযোগ্য সমাজ জীবনের। পারস্পরিক সম্পর্কের মূল্যবোধও গড়ে ওঠে তা থেকে। তাই নিয়ে মানুষের বেঁচে থাকা-মরে যাওয়া। আপনা থেকে নয়, সভ্যতা-সংস্কৃতির এই নির্মিত ধারায়। সেখানেও তাকে সমঝোতায় আসতে হয় ওই তাড়নার সঙ্গে। তাকে উপড়ে ফেলা যায় না। কিন্তু যেখানে সে দখল নেয় মানুষের, সেখানেই অনাসৃষ্টি। মানুষ আর মানুষ থাকে না। অমানুষ হয়ে যায়। যেমন এখানে ১৯৩৭-এ দুর্গাপদরা। জানোয়ারের স্তরে নেমে যাওয়ার তাদের বাসনা জাগে। সুযোগ পেলে নেমেও যায়। কিন্তু মানুষের সমাজ থেকে একেবারে বেরিয়ে যেতে পারে না। দুর্গাপদর মনের খবর অবিকৃত তুলে ধরেন হাসান, ভদ্রতার মিশেল দেন না এতটুকু। তাই তার মৌলিক চেহারাটাই তার সমস্ত ইতরতা নিয়ে, সমস্ত ঝাঁঝ আর নষ্টামি নিয়ে আমরা পাই। অরুচিকর কিন্তু বাস্তব। তাকে, এবং তার মতো আর সবাইকে, আমরা রক্ত-মাংসে শয়তান হয়ে উঠতে দেখি। সে ভেবে চলে – ‘…আমরা কজনা পাঁঠা একটা পাঁঠি ঠিক করেছিলাম। কাজ একটু আগে শুরু করতে হয়েছিল, কাজ হলো, একটা জোরজার করতে হলো, চাঁদের আলো পাওয়া গেল, ফাঁকা আমবাগান পাওয়া গেল, যে কাজের জন্য এত, তা-ও হলো। একবার নয়, দুবার, এখন আর একবার করার সাধ্যি নেই। আমরা পাঁঠাগুলো কি একবারও ভেবেছিলাম, এ তো মানুষের পাঁঠি, কাজ শেষ করে ছেড়ে দিলেই হচ্ছে না, তার পরে কি হবে? আমরা শালা ঠিকঠাক পাঁঠা হতে হতে মানুষ হয়ে গিয়ে কি বিপদেই না পড়লাম। পাঁঠা ভালো, মানুষ-পাঁঠা মহা জবরজং।’
যে-কোনো মানুষকে ঠিক তার মতো রেখে ফুটিয়ে তোলায় হাসানের জুড়ি নেই। ফটোগ্রাফি নয়। যেন তাঁর ভাবনার চিত্রকলা। বাচনিক ভঙ্গিমাতেও ব্যক্তি-মানুষের প্রকাশ ঘটে। এই 888sport alternative linkেই পরে বগুড়ার কথ্য-রীতিকে তিনি কাজে লাগিয়েছিলেন। তবে সেই পূর্ণিমার রাতে সাবিত্রী-সম্ভোগের পর চিন্তা একটাই, কী করে তাকে ঘাড় থেকে ঝেড়ে ফেলা যায়। শেষমেশ সবুরের সঙ্গে ভিড়িয়ে দেয় তাকে। সবুর, সৈয়দ, হুদা, সবাই তাকে ভোগ করে। নিজের ইচ্ছা-অনিচ্ছা তার অবান্তর। হিংস্র কুকুরের সামনে সে মাংসখন্ড যেন। আর তাকে খুবলে খাওয়া কখনো গ্রামের ডেরায়, কখনো শিয়ালদয়, কখনো-বা বগুড়ায়।
এদিকে বিবাহিত ব্রাহ্মণকন্যা অপহরণ নিয়ে সারাদেশে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়ায়। খুনোখুনির ঘটনাও ঘটে। সবুর নিষ্কৃতি খোঁজে। শেষমেশ অপহরণ-কান্ডের প্রায় আট মাস পরে বর্ধমানে ফিরে এসে তাকে এক রিকশায় তুলে দিয়ে পেছন থেকে সটকে পড়ে। অবশেষে সাবিত্রীর খোঁজ মেলে। লেখক জানাচ্ছেন, ‘যাই হোক, দেখা যাচ্ছে, সাবিত্রীর হদিশ মেলার পর, সে-ও পুলিশ গোয়েন্দার বাহাদুরিতে নয়, সাবিত্রীর আত্মীয়বর্গের চেষ্টার ফলেও নয় – এমনকি সাবিত্রীর নিজের শক্তিতেও নয়, যারা তাকে ঘাড়ে তুলে নিয়ে গিয়েছিল, তাদের ঘাড় যখন নুয়ে পড়েছে, কোথায় রাখি এই বর্জ্য, এই নিরেট পাষাণভার – তখন তারাই তাকে আবর্জনার মতোই ফেলে দিয়ে গিয়েছে।’ এরপর কাহিনি সামান্যই। অপরাধীরা ধরা পড়েছে। মামলা-মোকদ্দমাও হয়েছে। কিন্তু এগুলো বলার মূল বিষয় নয়। ওই সময়ের অবস্থা বোঝাতে যে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, সাম্প্রদায়িক রেষারেষি, ফজলুল হকের প্রজাস্বত্ব আইন, এসবও নয়। তারা ওই সাবিত্রী-কথার দাঁড়ানোর জায়গাটা, তার চারপাশে ঠেকা-দেওয়ার বাঁশ-কাঁঠের ঠেকাগুলো, এদের চিনিয়ে দেয় মাত্র। ঘটনার বিবরণও এদিক-সেদিক হতে পারে। কারণ একই দৃষ্টিতে বাস্তবের সবটা দেখা অসম্ভব। ভিন্ন ভিন্ন দিক থেকে ভিন্ন ভিন্ন চোখে ভিন্ন ভিন্ন রূপ। কিছুই পুরো নয়। হয়তো প্রকৃতও নয়। কোনো স্থায়ী মূল্য তাদের নেই। ইংরেজিতে যাকে বলে স্ক্যাফোল্ডিং, বড়জোর তাই। ঘরদোর-দালানকোঠা তৈরিতে লাগে। আসলে আমরা দেখি সাবিত্রীকে। ওই ১৯৩৭-৩৮-এর মর্মান্তিক অভিজ্ঞতা নিয়ে আজো সে বাস্তব। শুধু নাম পালটায়, ঘটনার প্রেক্ষাপট বদলায়। খবরের কাগজ খুললেই চোখে পড়ে, কত জায়গায় কত মেয়ে উধাও। কাউকে ফিরে পাওয়া যায় আট মাস, দশ মাস, এক বছর পর। কেউ বা হারিয়ে যায়। আর ফেরে না। সাবিত্রী এদের সঙ্গে এক হয়ে যায়। থাকে। নিজের সত্তায়। আর সবার জীবনেও। এটিই বিষয়। ঘটনা আর কিছু নেই। অপরাধীরা ধরা পড়েছিল। বিচারও একটা হয়েছিল। সাজা হয় কারো কারো।
এইখানে এসে, মানে, 888sport alternative linkটি পড়া শেষ করে খেয়াল হয়, হাসান দর্শনের নামি অধ্যাপক। মানব-ভাগ্যের বিবিধ সম্ভাবনার নিরাবেগ অনুশীলনে তিনি অভ্যস্ত। এবং সেই সূত্রে প্রশ্নরা হাজির হয় নানা মুনির নানা মত থেকে। হতে পারে তারা একই রেখায়, অথবা নানা পথে একই গন্তব্যে। এরা কি হাসানের কথা888sport live footballে প্রতিমা নির্মাণে, এবং তাতে প্রাণপ্রতিষ্ঠায় সহযোগিতার হাত বাড়ায়? অথবা মানুষী সম্ভাবনার ভাবনার ক্ষেত্র তাঁর প্রসারিত করে? এমনটি কি সাবিত্রীর বেলাতে ঘটে? বিষয়টি নিয়ে ভাবতে হয়। হাসানের উদ্ভাবনী ক্ষমতা, তেমন হলে, ক্ষুণ্ণ হয় না। বরং তা উৎসাহ পায়।
তিন
যাঁরা দর্শন পড়েন, তাঁদের কাছে শুনেছি, ইম্যানুয়েল কান্ট (১৭২৪-১৮০৪) ছিলেন তাঁর সময়ের সেরা ভাবুকদের একজন। এখনো তিনি প্রাসঙ্গিক। প্রশ্নকণ্টকিত জীবনের মুখোমুখি হতে গিয়ে যাঁরা তাঁর বিষয়ে জানেন, তাঁরা তাঁর শরণ নেন অনেকেই। উদ্ধার পাওয়ার জন্যে নয়, বাস্তবের প্রকৃতি বোঝার জন্যে, তাঁর অন্তরের গভীরতর তলে দৃষ্টি দেওয়ার জন্যে। তিনি বলেন, আমরা কেবল প্রত্যক্ষ জীবনের চলচ্ছবিতেই আটকে থাকি। এ মায়া। জ্ঞানের ওপরের মোড়ক শুধু – ‘ফেনোমেনন’। কতভাবে-কতদিক থেকে তার ওপর চোখ পড়ে। চোখ ওইখানেই জড়িয়ে থাকে। খোলসটাও পুরোপুরি দেখা হয় না। যেটুকু দেখা, তাও এক-একজনের এক-একরকম। এবং তাতে প্রাণবস্ত্তর আভাসমাত্র নেই। তা আছে আপনাতে আপনি সম্পূর্ণ হয়ে অন্তরের অনস্তলে। ‘থিং ইন ইটসেলফ’। তাকে দেখা যায় না। জানাও যায় না। আভাস মেলে একটু-আধটু হয়তো-বা। অবিকল-অবিচল। বস্ত্ত-অভিজ্ঞতা ওপরের কাঠামোয় মাথা ঠোকে। রূপের আকর্ষণে, কার্যকারণের সূত্রে পথ খোঁজে কিন্তু সত্য-স্বরূপ পুরোটা ধরা দেয় না। এমনকি নিজের কাছেও না। অধিবিদ্যা এ নয়। যাপিত জীবন আতিপাতি খুঁজে দেখার এ যৌক্তিক পরিণাম। এই পরিণাম – থিং ইন ইটসেলফ – স্থির। কারণ, জন্ম-মৃত্যুর সীমারেখা আমরা অতিক্রম করি না। প্রত্যক্ষের বাইরে অতিজাগতিক বিশ্বাসেও হাত বাড়াই না।
অনেক আগে পরশুরামের একটা গল্প পড়ি। নাম, ‘নির্মোক মৃত্যু’।
গল্পটি মজার, পরশুরামের গল্প যেমন হয়। তবে, মনে হয়, কান্টের এই ভাবনাসূত্র যেন ঢুকে পড়েছে সেখানে। তিন ঋষি। নাম ঠিক মনে নেই – কুতুক, কুর্বুক, কুর্মুক – এই রকম। বোঝা যায়, হাসিঠাট্টাই লক্ষ্য। কিন্তু তলে তলে কান্ট উঁকি মারেন। বিষয়, তিন ঋষির সামনে উর্বশীর নাচ। অপ্সরী একে একে তার সব আবরণ ঘোচায়। কুর্বুক আর কুর্মুক বেচাল হয়ে পড়ে; কিন্তু কুতুক নির্বিকার। উর্বশীকে বলে, থামলে কেন? তারপরে কী? ওই দেহ, ওই রং, ওই লাবণ্য, তার নিচে আর কী আছে? দেখাও! উর্বশী হার মানে। সেও জানে না, তার পরে কী। ওই না-জানা সত্তাই থিং ইন ইটসেলফ। ভিন্ন প্রেক্ষাপটে সম্পূর্ণ বিপরীতে বীভৎস জান্তবতায় ক্ষত-বিক্ষত হতে হতে সাবিত্রী এখানে তারই আশ্রয়ে বাঁচে। দেহ থেকে সে বেরিয়ে আসে না। কিন্তু দেহ তাকে আর তাড়ায় না। সে আত্মস্থ হয়। থাকে। কামুক হিংস্রতার আক্রমণ সে অতিক্রম করে। ওই নষ্ট বিকারের এ কোনো সাফাই গাওয়া নয়। বইটি পড়ে অসহায় ক্রোধ ও অবর্ণনীয় ঘৃণা আমাদের গলা পর্যন্ত উঠে আসে। নরপশুদের মানবিক অধিকার আমরা সহ্য করতে পারি না। কিন্তু সাবিত্রীকে তার জায়গায় পৌঁছে দিয়ে তার অবিরাম অস্তিত্ব ঘোষণা করেই লেখক কাহিনিতে ইতি টানেন। তাই বলে বাস্তব বোধ কোথাও বিপর্যস্ত হয় না। কোনো ইচ্ছাপূরণের অভিলাষও তিনি মেটান না। প্রত্যেকে নিজের নিজের মতো পূর্ণতা পায়। ঘটনাক্রমের সংগতি নষ্ট হয় না।
সেই ভয়ংকর পূর্ণিমা-রাতের পর কদিন এদিক-সেদিক যথেচ্ছ ব্যবহার করে দুর্গাপদরা অবশেষে সবুরের হাতে তাকে তুলে দেয়। পথে ছোটলাইনের একটা নোংরা ছোট স্টেশন ঘরে নির্জনে সে তাকে নিয়ে ঢুকে পড়ে। দুজন ছাড়া এবার আর কেউ নেই। একা পুরুষের সংগম এই প্রথম। দুকড়ি শুধু নামেই স্বামী। দু-চারটে তার জরুরি কথা। কিছু প্রথার অনুশাসন। সময় জোটেনি আর এগোনোর। তারপর তার শরীর নিয়ে ঘটে চললো দুপেয়ে জন্তু-জানোয়ারদের কাড়াকাড়ি। সবুরও তাদের একজন। কিন্তু এখানে একা। ঘৃণা ও বিরূপতার সঙ্গে বিচিত্র মিশ্রণ ঘটে সাবিত্রীর আতঙ্ক-মেশানো কৌতূহলের। অভিজ্ঞতায় এবার জানে শরীরের সীমা। তার মনে হয় – ‘অন্ধকারে পৃথিবী দুলছে নাগরদোলার মতো – উঠছে, নামছে, উপরে উঠে গেলেই ভয়ানক বমি পাচ্ছে – হুশ করে যখন নিচে নেমে আসছে তলপেট হয়ে যাচ্ছে দারুণ ফাঁকা। এত অসহ্য এত তীব্র! এত অসহ্য কি –
– ‘থিং ইন ইটসেলফ’কে। তা অক্ষয়। আমরা পড়ি, ‘- কে ভেবেছিল এই রকম একটা মেয়ে জ্যান্ত থেকেও মরে যেতে পারে – সাঁওতা রেলস্টেশনে ধুলোর মধ্যে, শাপখোপ শেয়াল বেজির মধ্যে মাত্র একবার মনে হয়েছিল মানুষ কখনো কখনো জেগে যায়, রক্ত মাংসে রসে তপ্ত হয়ে উঠতে পারে। এখন ইচ্ছে করলেই যখন তার পাশে শোয়া যায়, দলনে মলনে কচলে তার মধ্যে ঢুকে পড়তেও পারা যায়, তখনি সে মরে গিয়েছে। এখন একটা শব সে টেনে নিয়ে বেড়াচ্ছে। মড়ার গলায় দড়ি বেঁধে কতো আর টেনে বেড়াবে সে। তারপরেই মনে হলো, সে মড়ার গলায় দড়ি বেঁধেছে, নাকি মড়াটা তার গলায় দড়ি বেঁধে টেনে নিয়ে বেড়াচ্ছে। যেখানে খুশি টেনে নিয়ে তাকে শুইয়ে দিয়ে তার পাশেই শুয়ে থাকবে মড়া।’
কিন্তু শেষ পর্যন্ত সে তা থেকে মুক্ত হয়। নিজের চেষ্টায় নয়। যারা তাকে হরণ করেছিল, তারাই ওই মড়া আর বইতে পারে না। এত ওজন তার। ক্লান্ত, বিবর্ণ, বিধ্বস্ত তারা। প্রত্যক্ষত অশান্ত। সে তার ভেতরের সাবিত্রীকে নিয়ে শুধু সাবিত্রী হয়ে ফিরে আসে। অদ্ভুত এক কথা তার মনে হয়। ‘- এখন আর তার শরীর নেই। খুব সাধের শরীর, কতো পাওনা তার, কিছু না পেলে কি ভয়ানক ক্ষিধে, কি ভয়ানক তৃষ্ণা, সেই শরীর তার ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। ধ্বংস করে দিয়েছে মানুষ। এখন আর তার সেটার দরকার নেই। এইসবের মধ্যে যেখানে সে সাবিত্রী সে এখন মুক্ত। হাজার দরজা তার আর পৃথিবীতে এখন এত হাওয়া!’
তবে সার্ত্র (১৯০৫-৮০), আমরা জেনেছি, ‘থিং ইন ইটসেলফ’কে প্রাথমিকতা দেন না। ‘বিং ফর হিমসেলফ’ (অথবা, হারসেলফ) তাঁর কাছে সর্বাগ্রগণ্য। ‘বিং ইন হিমসেলফ’ তারই পরিণামসিদ্ধি। তবে স্বয়ম্প্রভ এবং বিকাশমান। কান্টের ‘থিং ইন ইটসেলফ’ যে পরিপূর্ণতাকে আগে থেকে ধরে নেয়, তা এখানে নেই, বরং তা ক্রমাগত হয়ে ওঠে। বস্ত্তজগতে বিষয়রাশির পারস্পরিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ায় ঘাত-প্রতিঘাতে তা আকার পায়, সক্রিয় হয়; কিন্তু ‘বিং ফর হিমসেলফ’ নিজেই নিজেকে জানায়। গোপনে-আড়ালে ধ্রুবক নয় সে। পূর্ণ নয় সে। শুধু আছে এবং আছে বলেই আরো বেশি ‘আছে’ হয়ে উঠতে চায়। আরো স্পষ্ট, আরো পূর্ণ, আরো সার্থক হওয়াই তার প্রকৃতিগত উদ্দীপনা। এ একা মানুষের কাজ নয়। তাই তাকে অসংখ্য সম্ভাবনারাশি থেকে বাছাই করতে হয়। সিদ্ধান্ত নিতে হয়। অন্যদের সঙ্গে নিতে হয়। জীবন – একার নয়, সবার, – গতিশীল হয়। এই ধারায় কিন্তু সাবিত্রী আসে না। অন্ধকারের অন্তরে তার শুদ্ধতা নিয়ে অগম্য দূরত্বে সে বসে থাকে।
বিষয়টি রবীন্দ্রনাথকেও কি ভাবায়নি? সার্ত্র পড়ার তাঁর প্রশ্নই ওঠে না। কিন্তু মানুষী সত্তার – মানব-মানবী, উভয়েরই – হয়ে ওঠার পথে কত যে বাধা, কত যে বিপর্যয়, বিপন্নতা, এসব তাঁকেও অস্থির করেছে। 888sport live chatে তারা উদ্ধার চেয়েছে। যোগাযোগে কুমুর আত্মনিষ্ঠ, কিন্তু আর্তজিজ্ঞাসা, ‘আমি ওদের বড়োবউ, তার কি কোন মানে আছে যদি আমি কুমু না হই?’ ‘স্ত্রীর পত্রে’র মৃণাল ঘর ছেড়েছে। কিন্তু তারপরে কী করে তারা সার্থক হয়, আমরা আর জানতে পারি না।
হয়তো বাস্তব তার পথ দেখায় না। কোনো কথা888sport live footballিকই, যদি তিনি নিজের দায়িত্বে সৎ থাকেন, বাস্তবের সম্পর্ক-জালকে অস্বীকার করে কোনো কথা ইচ্ছামতো বলতে পারেন না। হাসানও নন। রবীন্দ্রনাথ আনন্দী ‘বোষ্টমী’র গল্পও বলেছেন। অসাধারণ এবং অসামান্য। তবু সে সবার হয় সবার থেকে আলাদা হয়ে। একা হয়ে। সাবিত্রী তার ধ্বস্ত শরীরের ছাঁচ নিয়ে কারো সঙ্গে এক হয় না। একা হয় অবশ্য। দুর্ভাগ্যের আড়াল তার ঘোচে না। কিন্তু নিখাদ সত্তা তার – বিং ফর হারসেলফ – অনধিকৃত ও অবিকল্প, নষ্ট হয় না এতটুকু। যদিও ‘বিং ইন হারসেলফে’র তাৎপর্য কিছু যোগ হয় না তাতে। বাস্তবে কোনোভাবেই তা পুরো বা সর্বসম্মত হয় না। তেমন হওয়ার তা পথ খোঁজে শুধু। কিন্তু খন্ডিত থাকাই তার নিয়তি। এখানে তেমন চেষ্টার হদিসটুকুও নেই।
হাসান এই বইয়ের উৎসর্গপত্রে লেখেন, ‘সাবিত্রী দেবী, ক্ষমা করো। শুধু লেখক নন, ক্ষমা চাই আমরাও। 888sport promo code-পুরুষ নির্বিশেষে। কারণ, তার অবমাননার দায়ভাগ আমাদের সবারই। তার আকর্ষণও আমাদের কাছে সবার।’
এখানে লেখা অবশ্য আমি যা ভেবেছি তা-ই। হাসান বলতে পারেন, কিছুই হয়নি। আমি মাথা পেতে তা মেনে নেব। আমার বলার কথা শুধু, আমি যে এই রকমই ভেবেছি! সাবিত্রীর পুজোয় আমরা বসিনি। মনোময় চৈতন্যময় প্রাণবেদিতে তপ্তনিশ্বাসে আর শুকনো চোখের জলে তাকে স্থাপন করেছি মাত্র। হাসানের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ, তিনি এই 888sport promo codeকে চিনিয়ে দিয়েছেন। আমরা প্রতিদিনই তার খবর শুনি। কিন্তু মন অসাড়। কিছুই সেখানে গাঁথে না। হাসান আমাদের মাথায় হাতুড়ি পিটে তাকে তার মাঝখানে দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন। আর বাংলা-888sport alternative linkে যোগ করেছেন নতুন মাত্রা। যিনি 888sport alternative linkে শুরু করেও তা থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখলেন এতটা কাল, যখন ধরে নিয়েছিলাম, তিনি আর লিখবেনই না 888sport alternative link, ঠিক তখনই সবাইকে অবাক করে দিয়ে নিয়ে এলেন তিনি আগুনপাখি, তারপর, সাত বছর পেরিয়ে এই সাবিত্রী উপাখ্যান। দুটো দুরকম। আগুনপাখি কিন্তু ‘বিং ইন হারসেলফ’ হয়, যদিও স্রোতের বিরুদ্ধে একা, কিন্তু স্রোতকে পাশ কাটিয়ে নয়, তার প্রবল টানের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে। সাবিত্রী তার খোলের ভেতরে ঢুকে পড়ে। ‘অনশ্বর’ বেঁচে থাকে। বিরূপ বিশ্বের আঘাত তাকে ধ্বংস করতে পারে না; এবং সে আঘাত মর্মান্তিক। অপ্রয়োজনে হাসান কিছুই লেখেন না, সেটা আবার প্রমাণ হলো এই 888sport alternative linkে। ভাষাকেও তিনি তুলে আনেন সরাসরি জীবন-ভূগোলের মানচিত্রে মানুষের মুখ থেকে। এ-কথা আমরা জোর দিয়ে বলতে পারি, এই বই হারিয়ে যেতে আসেনি। যেমন আগুনপাখির, তেমনি সাবিত্রী উপাখ্যানের আসনও বাংলা 888sport alternative link-888sport live footballে পাকা।

Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.