কবিপুত্র রথীন্দ্রনাথ : নিভৃতচারী এক প্রতিভা

রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর রবীন্দ্রনাথের সন্তান, যাঁর কথা আলোচনা হলে সবাই বলেন, ‘সেই নেপথ্যচারী মানুষটি’। তাঁর জীবনের দুটি দিক – একটি ঝকঝকে, অন্যটি ধূসর। ঝকঝকে অংশে তিনি একাধারে 888sport live footballিক, সংগীতবোদ্ধা, প্রশাসক, শিক্ষক, কারু এবং দারু 888sport live chatী। অন্যদিকে ধূসর অংশে তিনি স্বেচ্ছানির্বাসিত, একা, বন্ধুহীন – তাঁর পরিবার থেকে দূরে থাকা এক দুঃখী মানুষ।

রথীন্দ্রনাথ একটি সুবিধা নিয়ে জন্মেছিলেন – তিনি বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কবি এবং বাংলার শ্রেষ্ঠ 888sport live footballপ্রতিভা রবীন্দ্রনাথের সন্তান। রবীন্দ্রনাথের মাধ্যমে তিনি তাঁর সময়ের সেরা কিছু মনের সংস্পর্শে আসেন। তাঁকে এমন শিক্ষা দেওয়া হয়েছিল যা তাঁর পিতার পরিকল্পিত এবং তিনি রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাগত ধারণার সবচেয়ে প্রতিনিধিত্বশীল ফসল। এই সুবিধাগুলি তিনি ব্যবহার করতে পারতেন; কিন্তু তিনি তা করেননি। তাঁর জীবন ত্যাগ, সমঝোতা এবং পরবর্তীকালে তিক্ততার এক দীর্ঘ গল্প।

রবীন্দ্রনাথের দ্বিতীয় সন্তান রথীন্দ্রনাথের জন্ম ১৮৮৮ সালের ২৭শে নভেম্বর। জোড়াসাঁকোর বিশাল বাড়িতে একান্নবর্তী পরিবারে তাঁর বেড়ে ওঠা, 888sport live football, সংগীত ছিল যে-বাড়ির প্রাণরস। তখন জোড়াসাঁকোর বাড়িতে ‘খামখেয়ালি সভা’ নামে একটি 888sport live chat-888sport live footballের ক্লাব ছিল। বাড়ির সদস্যরা ছাড়াও সেখানে আসতেন নাটোরের মহারাজা, প্রিয়নাথ সেন, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, অতুলপ্রসাদ, প্রমথ চৌধুরীসহ আরো অনেকে। সেই ক্লাবের কথা 888sport app download for android করে রথীন্দ্রনাথ তাঁর 888sport sign up bonusকথা On the Edges of Time-এ লিখেছেন, ‘খামখেয়ালি ক্লাবের মিটিং আমাকে খুব আকৃষ্ট করেছিল। আমি ঘরের এক কোণে লুকিয়ে থাকতাম এবং নিজেকে যতটা সম্ভব আড়াল রাখতাম। এভাবেই খুব অল্প বয়সেই 888sport live chat ও 888sport live footballের উচ্চতর জিনিসগুলির প্রতি ভালবাসা এবং 888sport apk download apk latest version দিয়ে আমার শিক্ষা শুরু হয়েছিল।’

কিছুদিনের জন্য রবীন্দ্রনাথকে শিলাইদহে পারিবারিক জমিদারি দেখার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। সেই সূত্রে ১৮৯৯ সালে তিনি তাঁর পরিবারকে সেখানে নিয়ে যান। এই প্রথম পুরো পরিবার একসঙ্গে সময় কাটানোর সুযোগ পায়। বাবা-মা এবং ভাইবোনদের সঙ্গে এখানে কাটানো দু-বছর রথীন্দ্রনাথের জীবনে 888sport app download for androidীয় হয়ে ছিল এবং সময়গুলি নিয়ে 888sport sign up bonusকথায় লিখেছেন অনেক কিছু। গ্রামাঞ্চলের সরল জীবন তাঁকে খুব আকৃষ্ট করেছিল।

রথীন্দ্রনাথের বয়স তখনো ১১ হয়নি; মাধুরীলতা ১৩, রেণুকা ৯, মীরা ৬ আর ছোট শমীন্দ্রনাথের ৩। তাদের ইংরেজি পড়াতেন লরেন্স নামে এক ইংরেজ। জগদানন্দ রায় ছিলেন তাদের অংক আর 888sport apkের শিক্ষক, পণ্ডিত শিবধন বিদ্যার্ণব ছিলেন সংস্কৃত শিক্ষক আর অবশ্যই বাংলার পাঠ দিতেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ।

১৯০১ সালের ডিসেম্বরে শান্তিনিকেতনে ব্রহ্মচর্যাশ্রমের প্রথম ছাত্রদের একজন হিসেবে শিক্ষা শুরু করেন রথীন্দ্রনাথ। ১৯০৪ সালে স্কুলের পড়াশোনা শেষ করার পর কৃষি বিষয়ে পড়ার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যান ১৯০৬ সালের মার্চ-এপ্রিলের দিকে। তাঁর সঙ্গী ছিলেন সন্তোষচন্দ্র মজুমদার, যিনি ছিলেন স্কুলের সহপাঠী। দুজনে ভর্তি হন আরবানার ইউনিভার্সিটি অফ ইলিনয়তে। রথীন্দ্রনাথ অধ্যয়ন করেছিলেন কীটতত্ত্ব, উদ্ভিদ জেনেটিক্স এবং মাটি-পরীক্ষার মতো বিষয়গুলি নিয়ে।

১৯০২ সালে রবীন্দ্রনাথের স্ত্রী মৃণালিনী দেবী তিন মেয়ে ও দুই ছেলে রেখে মারা যান। রবীন্দ্রনাথের দুই পুত্রের মধ্যে রথীন্দ্রনাথই সবার কাছে পরিচিত, যেহেতু রবীন্দ্রনাথের বড় আদরের শমীন্দ্রনাথের মৃত্যু হয় বেশ অল্প বয়সে। অল্পদিনেই কন্যা রেণুকা ও পুত্র শশীন্দ্র এবং পরে আরেক কন্যা বেলার মৃত্যু বিমূঢ় ও মুহ্যমান করে তোলে রবীন্দ্রনাথকে। পরপর তিন সন্তান হারিয়ে তাঁর শোকে বিহ্বল এবং স্বজনব্যথায় ভারাক্রান্ত হওয়া ছিল স্বাভাবিক ব্যাপার। তাই বেঁচে থাকা দুই সন্তান রথীন্দ্রনাথ আর মীরার সঙ্গে তিনি তাঁর মানসিক সুখ-দুঃখ, তৃপ্তি-অতৃপ্তি, ভাবাবেগ ভাগ করে নিতেন।

বাবার বড় সন্তান হিসেবে রথীন্দ্রনাথ পিতাকে বুঝতে পেরেছিলেন। পিতার ইচ্ছা কার্যে পরিণত করার বাসনায় রথীন্দ্রনাথ প্রথম যৌবনেই কিভাবে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন তার ইঙ্গিত পাওয়া যায় তরুণ বয়সে তাঁর জন্মদিনে ছোট বোন মীরা দেবীর জীবনসঙ্গী নগেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায়কে লেখা একটি চিঠিতে। সময়টা ১৯০৯ সাল, তখন রথীন্দ্রনাথ শিলাইদহের বাড়িতে কৃষিখামার তৈরির পরিকল্পনা করছিলেন –

ভাই নগেন,

কালিগ্রাম থেকে আমরা বোটে করেই ফিরে এলুম। বাবাকে কাল গোয়ালন্দে নামিয়ে রেখে এলুম … আজ আমার জন্মদিন, তাই বসে বসে অনেক কথা মনে হতে লাগল। এই কুড়ি বৎসরের সুখ দুঃখের কথা ঠেকিয়ে রাখা গেল না। এই মাসটা এলেই সেই সব কথা মনে পড়তে থাকে। সাত বৎসর হয় এই সময়তেই মা আমাদের ছেড়ে যান। আবার শমীরও এই মাসেই জন্ম ও মৃত্যু দিন। … বাবাকে যত দেখছি, ততই কষ্ট হচ্ছে – তিনি অবশ্যই কিছু বলেন না – কিন্তু স্পষ্ট দেখছি তাঁর মনে আর কোন সুখ নেই। আমার কষ্ট আরও বেশি হয় এই জন্য যে, আমি তাঁকে সুখী করতে পারব – এ বিশ্বাস আমার নেই। এখন থেকে নিজেকে যদি একটু কাজের মানুষ গড়ে তুলতে পারি তা হলেই যা তাঁকে সন্তুষ্ট করতে পারব একটু। …

একইভাবে রবীন্দ্রনাথও তাঁর অনেক চাওয়া নিজের অজান্তেই রথীন্দ্রনাথের ওপর চাপিয়ে দিয়েছেন – ভালো করে জানতেও চাননি রথীন্দ্রনাথ কী চান। এরকম একাধিক উদাহরণ আছে, যেমন –

রথীন্দ্রনাথ আরবানার, ইলিনয় স্টেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯০৯ সালে কৃষি888sport apkে স্নাতক হয়ে ফিরে গেলেন দেশে, শিলাইদহের কুঠিবাড়িতে। গড়ে তুললেন প্রশস্ত খামার। মাটি পরীক্ষার গবেষণাগার। বিদেশ থেকে আমদানি করলেন ভুট্টার এবং গৃহপালিত পশুর খাওয়ার মতো ঘাসের বীজ। তৈরি করালেন দেশের উপযোগী লাঙল, ফলা আর নানা যন্ত্রপাতি। আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের কাছ থেকে পতিসরের জন্য চেয়ে আনলেন একটা ট্রাক্টর। চালাতেন নিজেই।

বাংলার কৃষি আর কৃষকের হাল ফেরাতে যখন ঝাঁপিয়ে পড়েছেন রথী, তখন এলো রবীন্দ্রনাথের ডাক, পিতার ইচ্ছায় বিয়ে করতে হলো ১৬ বছরের বিধবা প্রতিমা দেবীকে, রথীন্দ্রনাথ তখন ২১। বিয়ে হলো ১৯১০ সালের মাঘ মাসের এক রাতে। ধারণা করা হয়, এই বিয়েতে পুত্র কি চান তা ভেবে দেখেননি রবীন্দ্রনাথ আর পুত্রও কোনো অভিযোগের আঙুল তোলেননি।

১৯১২ সালে প্রতিমা আর রথী বাবার সঙ্গী হয়ে প্রথমে এলেন ইউরোপ, তারপর আমেরিকা।

ইংল্যান্ডে আসার পর সেই গ্রীষ্মে রবীন্দ্রনাথ আর প্রতিমাকে নিয়ে চার্লস অ্যান্ড্রুজ ঘুরে বেড়ালেন সেখানকার নানা পল্লী অঞ্চল। রথীন্দ্রনাথ বিশিষ্ট উদ্ভিদ888sport apkী উইলিয়াম ব্যাটসনের কাছে অধ্যয়ন করতে রয়ে গেলেন লন্ডনে। অধ্যাপক ব্যাটসন, যিনি উদ্ভিদ এবং মেন্ডেলিজমের প্রজননে গবেষণা করছিলেন, রথীন্দ্রনাথ তাঁর ল্যাবরেটরিতে যখন খুব মনোযোগ দিয়ে গবেষণা করছেন, ঠিক তখন রবীন্দ্রনাথ ঠিক করলেন আমেরিকা যাবেন। রথীন্দ্রনাথ বিনা বাক্যব্যয়ে তাঁর মূল্যবান গবেষণা অসমাপ্ত রেখে পিতার আমেরিকা 888sport slot game যাতে সচ্ছন্দ হয় সেই ব্যবস্থা করতে চলে এলেন আমেরিকায়।

ইলিনয়ে এসে রথীন্দ্রনাথ তাঁর পরবর্তী অধ্যয়নের জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। কোন কোন প্রফেসরের কাছে কী কোর্স নেবেন তা ঠিক করে ফেললেন। একই সঙ্গে পিতা রবীন্দ্রনাথকেও সাহায্য করতে লাগলেন। রথীন্দ্রনাথ 888sport sign up bonusকথাতে লিখেছেন, ‘বাবা সাধনা 888sport liveগুলি লিখছিলেন, আমাকে প্রতিটি অধ্যায় টাইপ করতে হচ্ছিল। কিন্তু যেহেতু বাবা 888sport liveগুলি ক্রমাগত সংযোজন এবং পরিবর্তন করছিলেন, কাউকে দিয়ে টাইপ আমাদের বাজেট ব্যয়বহুল ছিল। তাই আমি একটি পোর্টেবল মেশিন কিনেছিলাম এবং নিজেই টাইপ করছিলাম। আমাকে প্রতিটি অধ্যায় এতবার টাইপ এবং পুনরায় টাইপ করতে হয়েছিল যে সেগুলি আমার প্রায় মুখস্থ হয়ে গিয়েছিল।’

রথীন্দ্রনাথ যখন ইলিনয়ে পূর্ণোদ্যমে পড়াশোনায় ব্যস্ত ঠিক তখনই অস্থিরমতি রবীন্দ্রনাথ ঠিক করলেন বাড়ি ফিরে যাবেন – যাওয়ার আগে লন্ডনে থামবেন। ১৯১৩ সালের ২৮শে ফেব্রুয়ারি রবীন্দ্রনাথ রথেনস্টাইনকে লিখলেন, ‘আমি রথীকে জোর করে রাজি করিয়েছি যেন আমার সাথে মার্চের শেষ বা এপ্রিলের শুরুতে ইংল্যান্ডে যায়।’

বাবার প্রতি অনুরক্ত রথীন্দ্রনাথ এবারো বিনা বাক্যব্যয়ে তাঁর পরিকল্পনা বদল করে কবির সঙ্গে ইউরোপ হয়ে দেশে আসেন। এছাড়া তিনি ১৯২০-২১ এবং ১৯৩০ সালে ইউরোপ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এবং ১৯২৬ সালে ইউরোপে তাঁর পিতার সঙ্গে ছিলেন।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধোত্তর পর্বে রবীন্দ্রনাথ বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা করছেন, রথীন্দ্রনাথ তখনো ছিলেন পিতার পাশে। যুদ্ধবিরতির এক মাসের মধ্যেই ১৯১৮ সালের ২২শে ডিসেম্বর (৮ই পৌষ) শান্তিনিকেতনে ‘বিশ্বভারতী’র ভিত্তি স্থাপিত হলো। আবার রথীন্দ্রনাথের ডাক এলো, নতুন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে রথীন্দ্রনাথ এলেন শান্তিনিকেতনে। সেই থেকে ১৯৫৩ সাল পর্যন্ত সেখানেই থাকেন। ১৯৫১ সালে বিশ্বভারতী ভারত সরকারের কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা পেলে তিনিই হন বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য।

রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর সারাজীবন কাটিয়েছেন লোকচক্ষুর অন্তরালে। পিতা যতদিন ছিলেন ততদিন নিজস্ব জীবন বলে তাঁর কিছু ছিল না। পিতার কাজেই নিজেকে একান্তভাবে নিয়োজিত রেখেছিলেন। তাঁর ইংরেজি আত্মজীবনী অন দি এজেস অব টাইমস-এ (888sport app download apk latest version পিতৃ888sport sign up bonus) প্রধানত পিতার কথাই লিখেছেন, নিজের কথা লিখেছেন সামান্য। আজীবন পিতৃগৌরবেই নিজেকে গৌরবান্বিত মনে করেছেন। অথচ নিজে যেসব গুণের অধিকারী ছিলেন তাতে নিজগুণেই জীবনে প্রতিষ্ঠা লাভ করতে পারতেন। তিনি 888sport apkের ছাত্র ছিলেন, বাংলায় বই লিখেছেন প্রাণতত্ত্ব এবং অভিব্যক্তি। তিনি আমেরিকা থেকে লাভ করেছেন কৃষিবিদ্যায় ডিগ্রি। ভালো ছবি আঁকতেন। কাঠ আর চামড়ার কাজে ছিলেন বিশেষ পারদর্শী। তাঁর উদ্যোগে সংগৃহীত হয়েছে রবীন্দ্রনাথের সকল পাণ্ডুলিপি ও চিঠিপত্র। সেই সময়কার অন্য লেখকদের পাণ্ডুলিপি সংগ্রহের কথা কেউ চিন্তা করেননি। রবীন্দ্রনাথের চিঠিপত্র সংগ্রহের ফলে পরে তা বই আকারে প্রকাশিত হয়েছে। রবীন্দ্রনাথের জীবনীকার প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় সূত্রে জানা যায়, রথীন্দ্রনাথ পৃথিবীর যেখানে রবীন্দ্রনাথের যত খবর প্রকাশ হতো তার কর্তিকা সংগ্রহ ও রক্ষার বিশেষ ব্যবস্থা করেছিলেন, তাই তাঁর পক্ষে রবীন্দ্রজীবনী লেখা সহজ হয়েছিল।

পিতার প্রতি 888sport apk download apk latest version এবং তাঁর কাজে সহায়তা করে পুত্রের গভীর তৃপ্তির এক অনন্য উদাহরণ রথীন্দ্রনাথ। এমনকি নিজের আত্মজীবনীটির বাংলা নামটিও দিয়েছিলেন ‘পিতৃ888sport sign up bonus’। রথীন্দ্রনাথ যতই পিতার সঙ্গে একাত্ম হয়েছিলেন ততই যেন তাঁদের মধ্যে এক অমোঘ বন্ধন তৈরি হয়েছিল, যা সাধারণের সীমা ছাড়িয়ে এক অসাধারণ পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিল। দুজনের মনের বন্ধন পূর্ণতা পেয়েছে এক অন্য মাত্রায়। তাই রথীন্দ্রনাথের পঞ্চাশ বর্ষপূর্তিতে রবীন্দ্রনাথ পুত্রের জন্য একটি 888sport app download apk লিখেছিলেন –

মধ্যপথে জীবনের মধ্যদিনে

উত্তরিলে আজি; এই পথ নিয়েছিলে চিনে,

…     …     …

বিদায়প্রহরে রবি দিনান্তের অস্তনত করে

রেখে যাবে আশীর্বাদ তোমার ত্যাগে ক্ষেত্র পরে।

দুই

পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর যখন বিধবা বিবাহের আন্দোলন শুরু করেছিলেন রথীন্দ্রনাথ সদ্য বিদেশ থেকে কৃষিবিদ্যায় বড় ডিগ্রি নিয়ে ফিরে এসেছেন স্বদেশে। রবীন্দ্রনাথের সহধর্মিণী মৃণালিনী দেবীর ইচ্ছা ছিল প্রতিমাকে পুত্রবধূ করবেন – রবীন্দ্রনাথ প্রতিমাকে নিজের পুত্রবধূ করবার প্রস্তাব দিলেন।

প্রতিমার বাবা শেষেন্দ্রভূষণ চট্টোপাধ্যায় আর মা বিনয়নী দেবী। তাঁদের ঘরে প্রতিমার জন্ম হয় ৫ই নভেম্বর ১৮৯৩।

সেইসময় মেয়েদের খুবই কম বয়সেই বিয়ে হতো। প্রতিমা দেবীর ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ১১ বছরের কিশোরী প্রতিমার বিয়ে হয়ে যায়। কিন্তু হঠাৎ ছোট্ট বাঙালি বধূ প্রতিমার জীবনে ঘটে বিরাট বড় বিপর্যয়, স্বামী লীলানাথ বিয়ের দু-মাস পরেই জলে ডুবে মারা গেলেন। ১১ বছরের ছোট্ট প্রতিমা মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানে সধবা থেকে বিধবা হয়ে রক্ষণশীল সমাজের অনুশাসনে বিধবার কঠোর জীবনযাপনে বাধ্য হলেন।

বাংলার কৃষি আর কৃষকের হাল ফেরাতে যখন ঝাঁপিয়ে পড়েছেন রথীন্দ্রনাথ, তখন পিতার ইচ্ছায় বিয়ে করতে হলো ১৬ বছরের বিধবা প্রতিমা দেবীকে, রথীন্দ্রনাথ তখন ২১। ঠাকুরবাড়িতে এই প্রথম বিধবা বিয়ে। তারিখটি 888sport app download for androidীয় করে রাখতে কবি তাঁর গোরা 888sport alternative linkটি ওই তারিখ দিয়েই পুত্রকে উৎসর্গ করলেন।

প্রতিমা দেবী পুত্রবধূ হয়ে আসার পর যখন যেখানে থেকেছেন, সে জোড়াসাঁকো হোক বা শিলাইদহ অথবা শান্তিনিকেতন, কবি তাঁর লেখাপড়ার জন্য সবসময় উপযুক্ত ব্যবস্থা করেছেন। বিয়ের অল্প কিছুদিন পরে যখন শান্তিনিকেতনে এসে থাকতেন তখন তাঁর ইংরেজি শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। আবার তিনি যখন জোড়াসাঁকোয় এসে বসবাস শুরু করেছিলেন তখন তিনি বিশ্বকবির বাড়ির পারিবারিক গৃহ-বিদ্যালয়ে শিক্ষালাভ করেছেন। তিনি নন্দলাল বসুর কাছে ছবি আঁকা শিখেছিলেন। ফ্রেস্কো চিত্রকলা শিখতে গিয়েছিলেন ইতালিতে। আবার বিশ্বকবির উৎসাহে তিনি ওরিয়েন্টাল আর্ট সম্পর্কে জ্ঞান আহরণ করতে পাড়ি দিয়েছিলেন প্যারিসে। ছবি আঁকার পাশাপাশি তাঁর লেখার হাতও ছিল চমৎকার। কবি তাঁর ছদ্মনাম দিয়েছিলেন ‘কল্পিতা দেবী’।

রবীন্দ্রনাথ তাঁর গীতালি কাব্যের প্রারম্ভিক 888sport app download apk ‘আশীর্বাদ’ লিখেছিলেন রথীন্দ্রনাথ ও পুত্রবধূ প্রতিমা দেবীর উদ্দেশে; কিন্তু সেখানে একবারও ব্যক্তিনামের উল্লেখ নেই।

এই আমি একমনে সঁপিলাম তাঁরে –

তোমরা তাঁহারি ধন আলোকে আঁধারে।

…      …      …

সুখী হও দুঃখী হও তাহে চিন্তা নাই;

তোমরা তাঁহারি হও, আশীর্বাদ তাই।

২রা মে ১৯১০-এ লেখা এক চিঠিতে অনভিজ্ঞ, ‘ছেলেমানুষ’ প্রতিমার প্রতি রথীন্দ্রনাথের কর্তব্য তাঁকে মনে করিয়ে দিলেন রবীন্দ্রনাথ। লিখলেন, ‘… তার চিত্তকে জাগিয়ে তোলবার ভার তোকেই নিতে হবে – তার জীবনের বিচিত্র খাদ্য তোকে জোগাতে হবে। তার মধ্যে যে শক্তি আছে তার কোনটা যাতে মুষড়ে না যায় সে দায়িত্ব তোর।’

আবার পুত্রবধূ প্রতিমাকে লিখলেন, ‘তোমাদের সংসার তোমরা নিজের জীবন দিয়ে গড়ে তুলবে – আমি সন্ধ্যার আলোকে নিজের নির্জন বাতায়নে বসে তোমাদের আশীর্বাদ করবো …’

বয়সে পাঁচ বছরের ছোট প্রতিমার গুণে রথীন্দ্রনাথ যে পাগল, সে-কথা জানিয়ে ভগ্নীপতি নগেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায়কে লিখেছিলেন, ‘প্রতিমা এখন আমার … সে কি চমৎকার মেয়ে তোমাকে কি করে লিখি।’

পিতৃ888sport sign up bonusতে রথীন্দ্রনাথ লিখলেন – ‘এর পরের কয়েকটা বছর কাটল অনাবিল আনন্দে। আমি জমিদারির কাজ ও চাষবাস নিয়ে গবেষণামূলক পরীক্ষায় সময় কাটাই, আর আমার স্ত্রী, ইলিনয় থেকে আগত মিস বুরডেট নামে এক শিক্ষয়িত্রীর কাছে পড়াশুনা করেন …’

বিয়ের দুই বছর পর বাবার সঙ্গে প্রতিমা দেবীসহ রথীন্দ্রনাথ আমেরিকা গেলেন। ফেরার পথে তিনি পড়াশোনার জন্য লন্ডনে রয়ে গেলেন। প্রতিমার সঙ্গে সেই তাঁর প্রথম বিচ্ছেদ। তিনি তাঁকে লিখলেন, ‘…তুমি চলে যেতে আমার এইসব কথা মনে পড়ছে। তোমার বোধহয় এটা আগেই মনে হয়েছে, তোমার সেদিনকার কথাটা আমার খুব মনে লেগেছে – ভুলতে পারিনি। তোমার নিশ্চয়ই মনে হয়েছে, তার কারণও আছে যে – আমি যে আদর্শ নিয়ে তোমাকে বিয়ে করেছিলুম তা ক্রমশই ভুলে গেছি বা হারিয়ে ফেলেছি। তুমি যে রকম ভালবাসা আমার থেকে চাও আমি সেটা তোমাকে দিতে পারছি না। আমার আজকে তাই তোমাকে জানাতে ইচ্ছে করছে যে, আমার মধ্যে সে আদর্শ একেবারে লোপ পায়নি। … তোমাকে আমার এর আগে কিম্বা আরও পরে বিয়ে করা উচিত ছিল। আমার এখন একটা ভয়ানক ভাঙচুরের সময় চলছে, কোনও একটা জিনিসকে কামড়ে ধরতে পারছি না, কোনো লক্ষ্য স্থির হচ্ছে না।’

কাছাকাছি সময়ে আরেকটি চিঠিতে রথী প্রতিমাকে প্রশ্ন করেছিলেন, ‘তোমাকে আমি বড় কষ্ট দিই, না? আমাকে যেরকম মনে করেছিলে সেরকম নই, বুঝতে পেরেছ, না?’

যখন দুজন একসঙ্গে আমেরিকায় ছিলেন, দিনগুলি তাঁদের ভালোই কাটছিল।

প্রতিমা আর রথীর দিনগুলি ‘সোনার খাঁচায় রইল না।’ রথী বরাবরই ছিলেন একজন অন্তর্মুখী মানুষ। একবার প্রতিমাকে লিখলেন, ‘তোর মনটা সম্পূর্ণ পাবার জন্যে আমি কি রকম ব্যাকুল হয়ে থাকি তা তুই জানিস না।’ রথীন্দ্রনাথের লাজুক আর অন্তর্মুখী সত্তা, আর একটি সত্তা যা ক্রমাগত প্রকাশ হতে চায়, যার দ্বন্দ্বে ধীরে ধীরে বদলে গেলেন রথীন্দ্রনাথ।

এই সব রবীন্দ্রনাথের দৃষ্টি এড়ায়নি। ১৯১৪ সালে এক চিঠিতে পুত্রবধূ প্রতিমা দেবীকে লিখলেন – ‘তোমাদের পরস্পরের জীবন যাতে সম্পূর্ণ এক হয়ে ওঠে সেদিকে বিশেষ চেষ্টা রেখো। মানুষের হৃদয়ের যথার্থ পবিত্র মিলন, সে কোনোদিন শেষ হয় না – প্রতিদিন তার নিত্য নূতন সাধনা। ঈশ্বর তোমাদের চিত্তে সেই পবিত্র সাধনাকে সজীব করে জাগ্রত করে রেখে দিন – এই কামনা করি।’  

দীর্ঘদিন ঘর-সংসার করলেও তাঁদের কোনো সন্তান হয়নি। দুজনের মধ্য নানা কারণে দূরত্ব বেড়ে যাচ্ছিল, তাই  ১৯২২-এ দুজনের সংসারে এলেন নন্দিনী, তাঁদের পালিতা কন্যা হয়ে। রবীন্দ্রনাথ আদরের নাতনির নাম দিলেন ‘পুপে’। অনেকেই ধারণা করেছিলেন, এই কন্যার টানেই হয়তো দুজনে কাছাকাছি আসবেন। অভিমানের বরফ গলবে। কিন্তু তা হলো না।

রথীন্দ্র-প্রতিমার দাম্পত্যজীবন কেন বেঁকে গেল তা বিশ্লেষণ করার মতো যথেষ্ট তথ্য পাওয়া যায় না। তবে ১৯৪১ সালে রবীন্দ্রনাথের তিরোধানের পর দুজনের দাম্পত্যজীবন আরো শীতল হয়ে ওঠে। রবীন্দ্রনাথই হয়তো এতদিন তাঁদের বেঁধে রেখেছিলেন।

উত্তরায়ণে পম্পাসরোবরের পাশে নির্মিত ‘গুহাঘরে’ রথীন্দ্রনাথের দারু-888sport live chatের স্টুডিও। একই ভবনের দোতলায় প্রতিমা দেবীর স্টুডিও ‘চিত্রভানু’। সেই বাড়িতেই থাকেন রথীন্দ্রনাথ। প্রতিমা দেবী থাকেন কোণার্ক-এ। এত কাছে থেকেও তাঁদের দেখা হয় না।

১৯৫১ সালে বিশ্বভারতী পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য হন রথীন্দ্রনাথ। কিন্তু খুব বেশিদিন তিনি সেই পদে থাকতে পারেননি। আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় জড়িয়ে নাজেহাল হন, এমনকি অর্থ তসরুফের অভিযোগেও অভিযুক্ত হন, যদিও পরে তাঁকে নির্দোষ ঘোষণা করেন আদালত। একই সঙ্গে এক সহকর্মীর পত্নীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা নিয়ে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে গুঞ্জন। সেই সহকর্মীকে নিয়ে রথীন্দ্রনাথ বেড়াতে যান হাজারিবাগে, চারদিকে ছিঃ ছিঃ পড়ে যায়। শান্তিনিকেতনে সকলই তাঁকে এড়িয়ে চলতে শুরু করেন। সেই সময় বিশ্বভারতীর আচার্য ছিলেন জওহরলাল নেহরু, তিনিও রথীন্দ্রনাথের ওপর বিরক্ত হন – আর এই সকল অপবাদ, গুঞ্জন আর অভিমান নিয়ে ক্লান্ত, বন্ধুহীন রথীন্দ্রনাথকে বিশ্বভারতী থেকে সরে দাঁড়াতে হয়। সময়টা ১৯৫৩ সালের মে মাস।

যাঁকে নিয়ে এই ঘটনা তিনি বন্ধু নির্মলচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের স্ত্রী মীরা। রূপসী ছিলেন মীরা। বয়সে রথীন্দ্রনাথের চেয়ে ৩১ বছরের ছোট। শান্তিনিকেতনেরই ছাত্রী। আর নির্মলচন্দ্র ছিলেন ১৯১৮তে আশ্রমের ছাত্র, এরপর রবীন্দ্রনাথের ডাকে ১৯৩৮-এ সেখানেই ফিরে আসেন ইংরেজির শিক্ষক হিসেবে।

রথীন্দ্রনাথ যখন বিশ্বভারতীতে একা তখন এই দম্পতির সঙ্গ আশা করতেন, যা তাঁদের চিঠিপত্র থেকে জানা যায়।

‘কাল সকালে কফি টেবিলে কথা হতে পারে যদি তোমরা এস।’

‘কাল ছুটি, তায় আজ চাঁদনী রাত। অশেষকে বলেছি এস্রাজ (রথীন্দ্রনাথ ভালো এস্রাজ বাজাতেন) নিয়ে আসতে। আহারাদির পর ৮টা-৯টার মধ্যে তোমরা দু’জনে এস যদি বাজনা শুনতে ভাল লাগে।’

‘সন্ধ্যাবেলা একলা ভাল লাগে না। দেখছ তো কেওই বড় আসে না।’

কখনো বন্ধুপত্নী মীরাকে ব্যতিক্রমী অনুরোধও করেন রথীন্দ্রনাথ –

‘ডাক্তার বাবু বলেছিলেন আজ sponging নিতে। সুপর্ণা ঠিক পারে না তাই তোমার যদি অসুবিধা না থাকে তবে কি একবার ১১টার কাছাকাছি এসে এটা করতে পারবে?’

নির্মলচন্দ্র আর মীরার দুই সন্তান কন্যা জয়িতা আর পুত্র জয়ব্রত। আড়াই বছরের ছেলে জয়ব্রতকে নিয়ে মীরাকে রথীন্দ্রনাথের সঙ্গে দেরাদুনে গিয়ে বসবাসের সম্মতি দিয়ে দিলেন তাঁর স্বামী। নিজে রইলেন মেয়েকে নিয়ে। যাওয়ার আগে প্রতিমাকে রথীন্দ্রনাথ লিখে গেলেন, ‘আমি লুকিয়ে চুরিয়ে যাচ্ছি না, এখানে সবাইকে জানিয়েই যাচ্ছি মীরা আমার সঙ্গে যাচ্ছে।’

স্বেচ্ছানির্বাসনে বিশ্বভারতী ছেড়ে মীরাকে নিয়ে রথীন্দ্রনাথ থাকতে শুরু করেন দেরাদুনে। বাড়ি তৈরি করলেন, যার নাম রাখলেন ‘মিতালি’। বাকি জীবন (১৯৫৩-৬১) মীরাকে নিয়ে সেখানেই কাটালেন। তবুও প্রতিমার প্রতি কোথায় যেন কিছু ভালোবাসা লুকিয়েছিল। ভুলতে পারেননি। প্রতিমা দেবীও নানাজনের কাছে রথীর খোঁজ নিয়েছেন – রথীন্দ্রনাথও। মাঝে মাঝে নানা দরকারে চিঠি লিখেছেন। বাংলা নববর্ষ ১৯৬০-এ প্রতিমাকে লিখলেন – ‘আমরা দু’জনেই এখন জীবনের সীমান্তে এসে পড়েছি। এখন আর কারও প্রতি রাগ বা অভিমান পুষে রাখা শোভনীয় হয় না। সেইজন্য জেনো আমার মনে কোনও রাগ নেই – আমি সব ঝেড়ে ফেলেছি। আমাদের মধ্যে প্রীতি সম্বন্ধ অক্ষুণ্ন থাকে এই নতুন বছরে তাই কামনা করি।’

রথীন্দ্রনাথ ১৯৬১ সালের ৩রা মে দেরাদুনের মিতালিতেই শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।

তথ্যসূত্র

1. The Diaries of Rathindranath Tagore, Supriya Roy, January 2013.

2. Rathindranath Tagore – The Unsung Hero, Tapati Mukhopadhay & Amrit Sen, January 2013.

৩. পিতৃ888sport sign up bonus, রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জিজ্ঞাসা, ১৯৫৮।

4. On the Edges of Time, Rathindranath Tagore, 1958. ৫. আপনি তুমি রইলে দূরে : সঙ্গ নিঃসঙ্গতা ও রথীন্দ্রনাথ, নীলাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়, দে’জ পাবলিশিং, দ্বিতীয় সংস্করণ, ২০১২।