কবিসত্তার নিবিড় অনুভব

সুব্রত বড়ুয়া

 

রচনার শ্রেণিবিচারে মোটাদাগের কোনো শ্রেণিতে বইটিকে ফেলতে পারা যাবে বলে মনে হয় না। 888sport liveের শ্রেণিতে ব্যক্তিগত রচনার মধ্যে একে স্থান দেওয়া হয়তো যেত, যদি এর রচ888sport promo codeতির মধ্যে একক ব্যক্তিমনের অটুট প্রতিফলনের আভাস থাকত। বইটির বিষয় অবশ্যই রবীন্দ্রনাথ। কিন্তু তার উপস্থাপন মোটেই প্রথাসিদ্ধ প্রাবন্ধিক বিবরণের মতো নয়, যেখানে মনের স্বাভাবিক রসাস্বাদনের আনন্দকে ছাপিয়ে বড় হয়ে ওঠে রীতিসিদ্ধ বিচার-বিশ্লেষণের প্রয়াস। বইটির পরিচিতি-প্রসঙ্গ কিছুটা উদ্ধার করা যাবে ফ্ল্যাপের লেখার একটি অংশ থেকে, যেখানে বলা হয়েছে : ‘লেখক, আজকের একজন তরুণী, রবীন্দ্রের সাথে শুরু করেছে এক কথোপকথন, যে কথোপকথনকে কেন্দ্রীভূত রাখতে হয়েছে, সচেতনভাবেই, রবীন্দ্রনাথের বিশেষ পর্বের বিশেষ 888sport app download apk ও গানে, সঙ্গে অবশ্যম্ভাবীরূপে নতুন বৌঠানের সঙ্গেও হয়েছে বিশেষ আলোচনা এবং সর্বোপরি রবীন্দ্রনাথ উপনিষদ থেকে যেসব বাণীকে নিজের এবং অন্যের জীবনেও দৈনন্দিন জীবনের মালিন্যকে ধুয়ে-মুছে শুচিস্নিগ্ধ পবিত্র হবার এবং অন্তরে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ব্যবহার করতেন, সেসব বাণীর কয়েকটি সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথের ব্যাখ্যা জানতে চেয়েছেন লেখক …। এ বইতে রবীন্দ্র ও কাদম্বরী বৌঠানের ব্যক্তিগত বিষয় নিয়েও তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন লেখক, …।’

বলা বাহুল্য, ‘এ বইটিও একটি রবীন্দ্র-পাঠ, একটু ভিন্ন আঙ্গিকে, ভিন্নরূপে।’ লেখক নিজের মনে কথা বলেছেন রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে নানা প্রসঙ্গ উল্লেখ করে। সেসব প্রসঙ্গের প্রেক্ষাপট ও মর্মানুভূতির প্রকাশ খুঁজেছেন রবীন্দ্ররচনা ও রবীন্দ্রজীবনের আলোকে। এভাবে রবীন্দ্রচেতনার ও রবীন্দ্রজীবনের স্বরূপ অন্বেষণ কিছুটা অভিনব তো বটেই। কেননা, এর মধ্যে সরাসরি অনুভব ও ভাব প্রকাশের একটি একান্ত ও আন্তরিক স্পর্শ খুঁজে পাওয়া যায় গভীর মানবিক হৃদয়ানুভূতির উষ্ণতায়।

রবীন্দ্রজীবনের একটি বিশেষ উল্লেখযোগ্য দিক কাদম্বরী বৌঠানের সঙ্গে তাঁর সখ্য ও নিবিড় মনোময়তার সম্পর্ক। মায়ের মৃত্যুর পর বালক রবীন্দ্রনাথ সেজদাদা জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের কিশোরী বধূর স্নেহ-ভালোবাসার অন্তরঙ্গতায় মাতৃস্নেহের বিকল্প যেমন খুঁজে পেয়েছিলেন, তেমনি দিনে দিনে আবিষ্কার করেছিলেন রমণীহৃদয়ের অসাধারণ সৌন্দর্যকেও। এই আবিষ্কার ও অনুভূতি কবির 888sport app download apkয় ও নানা লেখায় বিচিত্রভাবে মূর্ত হয়ে উঠেছে। মমতাজ লতিফ কবির সঙ্গে বাক্যালাপের আবরণের অন্তরালে গিয়ে মানবজীবনের অনুভব ও উপলব্ধির বিভিন্ন সূত্র সন্ধান করেছেন এবং তার ভাষিক প্রকাশকে অবলম্বন করে কবির জীবনসত্যের মূলগত ভাবনাকে স্পর্শ করার চেষ্টা করেছেন। তাঁর কথায় – ‘রবীন্দ্র, একটা কথা থেকে থেকে মনে ডানার ঝাপটা দিয়ে আমাকে বলছে, ‘সেই কথাটা এখনো বললে না’? এবারে সেই কথাটা বলেই ফেলব, নতুন বৌঠান আর তুমি তো একসাথে বেড়ে উঠছিলে। ঠাকুরবাড়ির 888sport live chat, 888sport live football, সংগীত, কাব্য, নাট্য, রন্ধন888sport live chat, আবার স্বদেশিয়ানা, দেশপ্রেম, এত সবকিছুর ভেতরে তোমরা সবাই – দাদারা, বৌঠানরা, তাদের ছেলেমেয়েরা, দাদাদের বন্ধুরা, সবাই যেন ডানা মেলে মুক্ত আকাশে ভেসে বেড়াচ্ছিলে। কারো পায়ে কোনো বেড়ি নেই, অথচ কত কঠিন অলঙ্ঘনীয় নিয়ম মেনে চলতে হতো বাবামশায়ের নির্দেশে! এত মুক্ত, আবার এতটা কঠিন নিয়ম মানছ! এ বড় আশ্চর্যের বইকি। কী করে তুমি নতুন বৌঠানকে আমাদের মতো, মানে আমরা সাধারণ মানুষ যদি এমন দুজন সমবয়সী বালক, বালিকা কৈশোর পেরিয়ে যৌবনে পৌঁছতাম, তাহলে আমরা যেমন – মানুষী প্রেমে মজে জগৎ-সংসার ভুলে যেতাম, তেমনটি তোমাদের দুজনের মধ্যে দেখতে পেলুম না, এমন সীমা অতিক্রম না করার এক অদৃষ্টপূর্ব প্রীতিপূর্ণ কিন্তু ব্যতিক্রমী এক সম্পর্ককে মহিমান্বিত করে ধরে রাখা কী করে সম্ভব হলো যেটি কিন্তু কোনোক্রমেই স্বর্গীয় নয়?’

এই প্রশ্নের উত্তরটিও অবশ্য আমরা পেয়ে যাই লেখক মমতাজ লতিফের লেখায় রবীন্দ্র-জবানিতে। সেটি এই – ‘শোন, তিনি ছিলেন আমার সতের বছরের জীবনের পরম সত্য, সব আনন্দের উৎস, আমার সবরকম কথা বলার, ওঁর সব প্রাণের কথা শোনার সখা আমরা। এখনো, তাঁর চলে যাওয়ার পরেও, আছেন তিনি সেই 888sport promo code হয়ে, যিনি কখনো আমার কাছে কোনোদিন নেই হয়ে যাননি।’

রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে, তাঁর সৃষ্টির নানা অনুষঙ্গ নিয়ে, তাঁর জীবনের সুখ-দুঃখ-ব্যথা-বেদনাকে নিয়ে, তাঁর নির্মাণ ও জীবনবোধের ব্যাপ্তি ও গভীরতাকে নিয়ে নানা প্রশ্ন ও জিজ্ঞাসা আমাদের মনে নিরন্তর জেগে ওঠে। একালের একটি 888sport promo codeর মনেও তা জেগে ওঠা স্বাভাবিক। এবং তিনি হয়তো প্রিয় সখার মতো করেই তাঁকে গ্রহণ করতে পারেন ও আত্মিক অনুভবের আলোকে আলাপচারিতার ভঙ্গিতে তাঁকে জানার চেষ্টা করতে পারেন তাঁর জীবন ও সৃষ্টির ব্যক্ত-অব্যক্ত সূত্রাবলি অনুসরণের মাধ্যমে। মমতাজ লতিফ তাঁর বইয়ের পরিকল্পনায় সেই রূপচিত্রকে গ্রহণ করেছেন – যেন আত্মগত অনুভব ও উপলব্ধির মাঝে এক অসাধারণ সৃষ্টিশীল ব্যক্তিসত্তাকে চিহ্নিত করা যায় তাঁর জীবনসত্যের মূল প্রেরণাগুলোকে কেন্দ্র করে। শেষ পর্যন্ত মানুষের জীবন যে তার জীবত্বের সীমাকে পেরিয়ে যেতে চায়, একটি গভীর গূঢ় নির্দেশের মর্মবাণীকে অবলম্বন করতে চায় – সেখানেই তার পূর্ণতার পথে যাত্রার সার্থকতা। অন্যথায় ব্যক্তিমানুষ কেবলই একটি একক সত্তা, বিচ্ছিন্ন একটি প্রাণ। তার জীবন তাকে কখনো মহৎ করে না, বৃহৎও করে না। এই বইয়ের লেখক সে-কথাই বলতে চেয়েছেন রবীন্দ্রজীবনের নানা পর্যায়কে তুলে ধরার প্রয়াসের মাধ্যমে, তাঁর নিজের অনুভব-উপলব্ধির প্রতিক্রিয়ার আলোকে। ব্যতিক্রমী একটি কাজও বলা যেতে পারে একে। নিবিড় পাঠে আস্বাদ্য তো বটেই।