সঞ্জীব দাস
সেদিন ছিল বৃষ্টিভেজা দিন। শরৎরানীর মুখ ঢেকেছিল কাজলকালো মেঘে। বসেছিলাম ঘরের কোণে ‘খেলা’র পাতা হাতে। হঠাৎই পেলাম প্রেসিডেন্সি কলেজের দিলীপ নাহার ফোন : ‘সঞ্জীব, ‘উলঙ্গ রাজা’র আখ্যানটি কার গল্প থেকে নেওয়া? শুনেছিলাম টলস্টয়ের, কিন্তু একজন বলল ‘টলস্টয়ের লেখা এরকম কোনো গল্প নেই।’ দেখো তো, তুমি তো তুলনামূলক 888sport live footballের লোক।’ আমি তো এই কথা শুনে আকাশ থেকে পড়লাম। স্কুলে আমাদের জানানো হয়েছে, ‘উলঙ্গ রাজা’ 888sport app download apkর আখ্যান টলস্টয়ের ‘The Naked King’ গল্প থেকে নেওয়া। বোর্ডের কবি-পরিচিতি অংশেও তো একই তথ্য দেওয়া! বাধ্য হয়ে তখন দূরালাপনী যন্ত্রে ধরলাম প্রয়াত অধ্যাপক উজ্জ্বলকুমার মজুমদারকে। স্মিত হাস্যে বললেন, ‘কেন হান্স অ্যান্ডারসেন পড়োনি। এটি তাঁর ইউরোপীয় লোককথা সংকলনে আছে। নাম ‘The king who wears no clothes’।’ তবু মনের কোণে প্রশ্ন থেকেই গেল। সাহসে ভর করে গণশক্তির ডায়াল থেকে কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর ফোন নম্বর সংগ্রহ করে ফোন করলাম। রাত তখন সাড়ে দশটা। ভাগ্যচক্রে ফোন ধরলেন স্বয়ং কবি। সহাস্যে বললেন, ‘এত রাতে কাউকে ফোন করতে আছে!’ তারপর বললেন, ‘ভয় নেই ভাই, বলুন কী জানার আছে?’ কাঁপা কাঁপা গলায় প্রশ্নটা ছুড়ে দিতে একচোট হাসলেন। তারপর বললেন, ‘জানেন তো, আমি তখনো টলস্টয় পড়িনি, অ্যান্ডারসেনও নয়। আমার ঠাকুমা ছিলেন ইংরেজি জানা মানুষ। তিনি ছেলেবেলায় অ্যান্ডারসেনের গল্প শোনাতেন। ‘উলঙ্গ রাজা’র গল্পটিও সেইভাবেই শোনা। বুঝলেন, আমি অ্যান্ডারসেনের গল্প মনে রেখেই পরবর্তীকালে 888sport app download apkটি লিখেছিলাম।’ নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর নাম শুনেছিলাম। পরে পড়েছি তাঁর শ্রেষ্ঠ 888sport app download apkর বই। কিন্তু কোনোদিন ভাবিনি তাঁর সঙ্গে কথা বলতে পারব। হঠাৎই এভাবে ফোনালাপ সেই তাঁর সঙ্গে! বিস্ময়ে, আনন্দে তখন আমার বাক্রম্নদ্ধপ্রায় অবস্থা!
সেই আমি আজ তিরিশের উত্তাল যৌবন পেরিয়ে চলিস্নশের পরিসরে পা দিয়েছি। ছাত্র থেকে অধ্যাপক হয়েছি। 888sport app download apk নিয়ে করি সামান্য লেখালেখি। ইচ্ছা ছিল আমার অনুভবে নীরেন্দ্রনাথের 888sport app download apkবিশ্ব কীভাবে ধরা দেয়, তাঁর 888sport app download apkর স্বাতন্ত্র্য কোথায়, তা নিয়ে একটি 888sport live রচনা করব। সেই সূত্রেই আজ বসেছি তাঁর 888sport app download apkর মুখোমুখি!
দশকের হিসাবে নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী চলিস্নশের দশকের কবি, তা সবারই জানা। সেই দশক ছিল বিদ্রোহে-বিপস্নবে রক্তিম, মন্বন্তরে ধ্বস্ত, দাঙ্গায় ক্ষতবিক্ষত। এ-সময় বাংলা দেখেছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, ভারত ছাড়ো আন্দোলন, নেতাজির নেতৃত্বে স্বাধীনতার জন্য আজাদ হিন্দ ফৌজের মরণজয়ী সংগ্রাম; দেখেছে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার বীভৎসা। দেখেছে মন্বন্তরে শত-সহস্র ক্ষুধার্ত মানুষের নিরুপায় মৃত্যুর মিছিল, এই সময়ের ছাপ চেতনায় নিয়েই বাংলা কাব্যবিশ্বে নীরেন্দ্রনাথের আবির্ভাব।
888sport live football মাত্রেই যুগের ফসল। আর সচেতন কবির 888sport app download apkয় তো সময় হয়ে ওঠে তাঁর স্বাভাবিক উপার্জন। নীরেন্দ্রনাথের 888sport app download apkতে তাই চলিস্নশের কালবেলা স্বতঃস্ফূর্ততায় উৎকীর্ণ হয়ে উঠেছে।
কী দেখিনি আমি এখানে?
সাফল্য, হতাশা, দারিদ্র্য, বৈভব, বোমা, দুর্ভিক্ষ, দাঙ্গা
চলিস্নশের সেই
স্বপ্নে আর দুঃস্বপ্নে ভরা দিনগুলিতে
সবই আমি দেখেছি।
দেখেছি, ছাত্র মিছিলের উপর দিয়ে ছুটছে
লালবাজারের
মাউন্টেড পুলিশের ঘোড়া : দেখেছি
ধর্মতলা স্ট্রিটের ট্রাম লাইনের উপরে ছড়িয়ে রয়েছে
চাপ-চাপ রক্ত
কেমিস্ট্রি প্রাকটিক্যালের খাতা, ভাঙা চশমা আর
ছেঁড়া চপ্পল।
(‘চলিস্নশের দিনগুলি’)
এমন 888sport app download apk যিনি লিখতে পারেন তাঁর কালচেতনা, প্রখর সমাজচেতনা, গভীর মানবতাবোধ নিয়ে নিশ্চিতভাবেই সংশয়ের অবকাশ থাকে না!
আসলে প্রথম থেকেই বোধহয় তিনি সচেতনভাবেই চেয়েছিলেন সময়-সমাজ-বস্ত্তবিশ্ব লগ্ন কবি হয়ে উঠতে। তাই 888sport app download apkর নামে কল্পনার কুসুমস্বর্গ সৃষ্টিতে তাঁর বিন্দুমাত্র আস্থা ছিল না। তিনি চেয়েছেন প্রতিনিয়ত অভিজ্ঞতাঋদ্ধ হতে এবং সেই অভিজ্ঞতাকে 888sport app download apkর শরীরে মিশিয়ে দিতে। তাই স্পষ্টই লেখেন :
হোক আর নাই হোক, আমার চোখ আর কান আমি খোলা রেখেছি। টান টান করে বাড়িয়ে রেখেছি আমার আঙুল। সবকিছু আমাকে দেখতে হবে। সবকিছু আমাকে শুনতে হবে। সবকিছু আমি ছুঁতে চাই। জানিয়ে যেতে চাই, কোন দৃশ্য আর কোন কণ্ঠ আমার কেমন লেগেছিল, কোন বিদ্যুৎবাহী তারকে স্পর্শ করে আমি কতটা শিউরে উঠেছিলুম।
টি এস এলিয়ট থেকে জীবনানন্দ – সকলেই কালসচেতনতাকে কবি হয়ে-ওঠার অন্যতম শর্ত হিসেবে ধরেছেন। নীরেন্দ্রনাথের 888sport app download apkর ভরকেন্দ্র এই সময়চেতনা, একালের অন্যতম কবি-সমালোচক সুবোধ সরকারের মন্তব্য এ-প্রসঙ্গে 888sport app download for androidীয় :
বলা বাহুল্য, তাঁর 888sport app download apkর যদি কোনো নায়ক থাকে তার নাম সময়।
অর্থাৎ বেলা আর কালবেলা নিয়ে যে প্রবাহিত সময় আমাদের আগুল্ফশির ধরে আছে, যেন তারই এক ধারাভাষ্য তাঁর 888sport app download apk। নীল নির্জন কাব্যগ্রন্থের ‘কাঁচ রোদ্দুর, ছায়া অরণ্য’ শীর্ষক 888sport app download apkয় দাঙ্গাকীর্ণ সময়ের ছবি প্রাণস্পর্শী হয়ে উঠেছে এক অলোকসামান্য প্রবল প্রতিমায় :
এখন আবার মনে পড়ছে।
প্রান্তরে জরায়ু-ভাঙা রক্তভ্রূণ,
শকুন! শকুন!
কয়েকবার পাখ্সাট মেরে ফের আকাশে উঠল!
করোটি, হাড়পোড়া, ধুলো –
চাপ চাপ জমাট রক্ত।
পরবর্তী ‘তৈমুর’ 888sport app download apkয় মধ্য এশিয়ার মোঙ্গল নায়ক ‘তৈমুরে’র প্রত্নপ্রতিমার আশ্রয়ে চলিস্নশের কালবেলা প্রতীকী চেহারা পায় অনায়াসে :
প্রাণ-যমুনার তীরে
মৃত্যুর উৎসব সঙ্গে, বিহঙ্গহৃদয় ছিন্নপাখা।
নগর গ্রামে ও গঞ্জে মসজিদে মন্দিরে সর্বখানে
দুরন্ত তাতার দস্যু তৈমুরের পদচিহ্ন আঁকা।
টি এস এলিয়ট দুই বিশ্বযুদ্ধের মধ্যবর্তী সময়ে দাঁড়িয়ে উপলব্ধি করেন সভ্যতা আজ ধ্বংসসত্মূপে পরিণত, সভ্যতা যেন এক পরিত্যক্ত পোড়োজমি। চলিস্নশের কবি নীরেন্দ্রনাথও প্রায় একই উপলব্ধিতে উপনীত হয়েছেন সত্তরের কালো সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে : ‘রাস্তায় নেমে বাস পেলুম না/ কোথায় কী গ-গোল হয়েছে তাই/ বাস-ট্রাম বন্ধ।/ বাতাসে অ্যামোনিয়ার ঝাঁঝালো গন্ধ/ কাছে কোথাও আচমকা একটা পটকা ফাটতেই/ কটাকট কটাকট তার জবাব পাওয়া গেল।/ বললুম, লক্ষণ – ভাল নয়।’
সময়ের কবি হতে গিয়েই নীরেন্দ্রনাথ সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের মতোই হয়ে ওঠেন সেই কবি, যাঁর 888sport app download apkয় ভাষা পায় প্রতিবাদ, যিনি রাজনৈতিক ক্ষমতাতন্ত্রের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করেন অনায়াস নির্ভীকতায়। উলঙ্গ রাজা কাব্যগ্রন্থের একাধিক 888sport app download apkয় উৎকীর্ণ হয়েছে তাঁর সেই প্রতিবাদী মানসিকতা। প্রথম 888sport app download apk ‘কোনদিকে ফিরাবে চোখ’-এ সত্তরের নকশাল আন্দোলন এবং তা প্রতিরোধে সরকারি দমন-পীড়ন যে রক্তস্নাত পরিবেশ রচনা করেছিল তার অনিবার্য প্রতিক্রিয়ায় সংবেদনশীল কবির বিক্ষুব্ধ মনের অস্থিরতার প্রকাশ স্বতঃস্ফূর্ত হয়ে উঠেছে। এই অস্থিরতাই তাঁকে ঠেলেছে ক্ষমতার বিপরীতে। তবে সুভাষের মতো প্রতিবাদ তাঁর 888sport app download apkয় প্রত্যক্ষতায় জ্বলে ওঠে না। তিনি প্রতীকের আড়াল নেন। প্রতীকের আলোয় সেই প্রতিবাদ হয়ে ওঠে অনেক বেশি 888sport live chatিত, অনেক বেশি প্রাণবন্ত। যেমন ‘উলঙ্গ রাজা’ 888sport app download apk। সত্তরের দশকের রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস কবিসত্তাকে করেছিল বিচলিত। ক্ষমতাতন্ত্রের নির্বোধ ঔদ্ধত্যের নগ্ন প্রকাশ দেখে তাঁর অন্তরশায়িত প্রতিবাদী সত্তা পাশ্চাত্য মিথ কথার আড়াল রেখে সেই নগ্নতার স্বরূপ উন্মোচনে তাই তৎপর হয়ে ওঠে। এ-কালের শাসকের ক্ষমতার দম্ভের উলঙ্গ প্রদর্শনী তাঁর দৃষ্টিতে হান্স অ্যান্ডারসেন-সংকলিত 888sport app download apkয় উলিস্নখিত রাজার নির্বোধ আচরণের সঙ্গে এক হয়ে যায়। সেই রাজা দর্জির দ্বারা প্রতারিত হয়ে পোশাক না পরেই রাস্তায় বেরোন। তাঁর এই আচরণে নির্বুদ্ধিতার পরিচয় যেমন স্পষ্ট, তেমনি উচ্চকিত হয়ে উঠেছে তাঁর ক্ষমতার দম্ভের নির্লজ্জ প্রকাশ।
এমনটাই তো ঘটেছিল সত্তরের দশকে দিলিস্ন এবং বাংলায়। এমন পরিস্থিতিতে গল্পে এক সরল সত্যবাদী শিশু ক্ষমতাতন্ত্রের এই নির্বোধ নগ্নতার স্বরূপ উন্মোচন করেছিল। কিন্তু এ-কালের নির্বোধ শাসকের অধঃপতনকে কে চোখে আঙুল দিয়ে দেখাবে? এ-কালের ক্ষমতাতন্ত্রের অধীশ্বর তো সংবাদপত্র থেকে কবি সবার কণ্ঠই রুদ্ধ করেছে। প্রতিবাদী মানুষদের গোপন স্থানে রেখেছে গুম করে। অন্যের উদাসীন অসহযোগিতায় হতাশ হয়ে কোনো প্রতিবাদী কণ্ঠ আবার হতাশায় চুপ হয়ে গেছে। ক্ষমতাতন্ত্রবিরোধী কবি সেই প্রতিবাদী মানুষের পুনরুত্থান কামনা করেছেন। কারণ সে-ই তো এ-কালের ক্ষমতাদর্পী, বলদর্পী শাসকের দিকে তর্জনী তুলে বলতে পারবে, ‘রাজা, তোর কাপড় কোথায়?’
অবশ্য শুধু সমাজ কিংবা রাজনৈতিক সচেতনতা নীরেন্দ্রনাথের কাব্যের একমাত্র সুর নয়। সমাজচেতনার সূত্র ধরে তাঁর 888sport app download apkয় ব্যক্তি-অনুভব কখনো কখনো পাখা মেলেছে। কোথাও কবির নিসর্গচেতনা হয়েছে কাব্যজাত। কিটস কিংবা ইয়েটসের মতো কিংবা এ-দেশীয় সমর সেনের মতো তাঁর 888sport app download apkতে স্তম্ভিত হয় নগরজীবনের প্রতি প্রবল বিতৃষ্ণা :
এখানে ঢেউ আসে না, ভালোবাসে না কেউ, প্রাণে
কী ব্যথা জ্বলে রাত্রিদিন, মরুকঠিন হাওয়া,
কী ব্যথা হানে জানে না, কেউ জানে না…।
(‘ঢেউ’, নীল নির্জন)
একই ভাবনা থেকে ইয়েটসের মতো তাঁর 888sport app download apkতেও উৎকীর্ণ হয় শহরকে দূরে ঠেলে গ্রামে অরণ্যকোলে থেকে যাওয়ার প্রবল বাসনা :
কেউ কি শহরে যাবে? কেউ যাবে? কেউই যাবে না।
বরং ঘনিষ্ঠ এই সন্ধ্যার সুন্দর হাওয়া খাব,
বরং লুণ্ঠিত এই ঘাসে-ঘাসে আকণ্ঠ বেড়াব
(‘ফলতায় রবিবার’, অন্ধকার বারান্দা)
তাঁর 888sport app download apkয় শরৎ আসে নিভৃতে, ভীরু পদক্ষিপে, প্রবল প্রতিমায় আঁকা হয়ে যায় আশ্বিনের স্নিগ্ধ রূপ :
আশ্বিন বলতেই চোখে ভেসে ওঠে রোদ্দুরের ছবি
চক্রাকারে চিল
মাথার উপর দিয়ে ডানা মেলে
উড়ে যায়
মেঘের জানালার দিকে, আশ্বিন বলতে
আলোর তরঙ্গে ধোয়া দৃশ্যাবলী চোখের সমুখে
দেখতে পাই।
(‘আশ্বিন দিবসে’, পাগলা ঘণ্টি)
তাঁর 888sport app download apkয় আসে বিচিত্র ফুলের অনুষঙ্গ, মালতী, বকুল থেকে কামিনী, মলিস্নকার সৌন্দর্য উৎকীর্ণ হয়েছে তাঁর 888sport app download apkয়। এসবের মধ্য দিয়ে তাঁর অন্তর্গত রোমান্টিক মন উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠেছে।
নীরেন্দ্রনাথের কাব্যবিশ্বের প্রধান সুর ভালোবাসা, এই ভালোবাসা সর্বত্র প্রসারিত। তাঁর ভালোবাসার আকাশে ব্যক্তিপ্রেমের পাত্রীর মুখচ্ছবি যেমন প্রাণবন্ত, তেমনি সেখানে সাকার হয় উদ্যত মৃত্যুকে তুচ্ছ করে এগিয়ে যাওয়া দুর্বার শিশুর প্রবল প্রতিমা। সেই শিশুর মধ্যে কবি আবিষ্কার করেন যিশুর আর্কেটাইপ :
কেন মূর্ত মানবতা। সদ্য হাঁটতে শেখার আনন্দে
সমগ্র বিশ্বকে তুমি পেতে চাও
হাতের মুঠোয়।
(‘কলকাতার যীশু’, কলকাতার যীশু)
এই ভালোবাসা স্বদেশকেও ছুঁয়ে যায়, কাছে টানে। অন্য অনেক কবির মতো তিনি অন্ধকারে দেশ দেখেন না, ঘাসের স্নিগ্ধতায়, আকাশের উদারতায়, নক্ষত্রের দীপ্তিতে, ঢেউয়ের শব্দে তিনি প্রিয় স্বদেশভূমিকে করেন আবিষ্কার : ‘ঘাসের পরে চিৎ হয়ে শুই, আকাশের নক্ষত্র গুনি/ ছলাত ছলাত ঢেউয়ের টানা শব্দ শুনি \/ মাথার মধ্যে পাক খেয়ে যায় টুকরো টুকরো হাজার ছবি।’
(‘দেশ দেখাচ্ছ অন্ধকারে’, কলকাতার যীশু)
এই ভালোবাসাবোধ এবং মর্তপ্রীতি কখন যেন একাকার হয়ে যায় তাঁর 888sport app download apkয়। কবি সার্বভৌম রবীন্দ্রনাথ মৃত্যুকে নিশ্চিত জেনেও আঁকড়ে ধরতে চেয়েছিলেন এই সুন্দর পৃথিবীকে। নীরেন্দ্রনাথও মাটি-পৃথিবীকে ভালোবাসেন। তাই মৃত্যুর কথা ভেবে তাঁর মনে বিষণ্ণতা ছড়ায়। সব ছেড়ে চলে যাওয়ার ভাবনায় তাঁর 888sport app download apk লবণাক্ত হয়ে ওঠে :
একদিন সমস্ত ছেড়ে চলে যাব।
সব প্রেম, সব ঘৃণা সব
কথা, সব নীরবতা, সব
কান্না, সব হাসি
খিলতোলা কপাট, ফাটা কপালে
রক্তরাশি।
একদিন দু’পায়ে ঠেলে চলে যাব।
(‘একদিন, ততদিন’, নক্ষত্র জয়ের জন্য)
এ তো গেল বিষয়ের কথা, কবির মানসিকতা বা দৃষ্টিভঙ্গির কথা। কিন্তু 888sport app download apk কি বিষয়ের মধ্যে থাকে? নাকি প্রকাশ-কৌশলে? রসিক পাঠক থেকে বিদগ্ধ সমালোচক সবাই জানেন 888sport app download apkর কাব্যত্ব নিহিত থাকে তার প্রকাশভঙ্গিতে। তাই দেখা দরকার নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর 888sport app download apkর শৈলীগত বৈশিষ্ট্য, তার স্বাতন্ত্র্য, দেখা দরকার বিষয় এবং শৈলী একসূত্রে কি গ্রথিত হয়েছে তাঁর 888sport app download apkয়? নাকি তাঁর 888sport app download apkয় শুধু বিষয়েরই বিস্তার!
লক্ষ করলে দেখা যাবে, নীরেন্দ্রনাথের অনেক 888sport app download apkই narrative-এর চেহারা নিয়েছে। আদ্যন্ত গল্প বলার ভঙ্গি হয়ে উঠেছে প্রধান। এ-ধরনের 888sport app download apkর যাত্রা সংকীর্ণ প্রাচীরের পিচ্ছিল পথ বেয়ে। ব্যালান্স রাখতে পারলে সাফল্য আকাশচুম্বী। আর রাখতে না পারলে? প্রপাত ধরণিতলে! আশ্চর্যের বিষয়, অধিকাংশ ক্ষেত্রে নীরেন্দ্রনাথ ব্যালান্স রাখতে পেরেছেন। ফলে এসেছে অলোকসামান্য সাফল্য এবং তা এসেছে বাক্যের মোচড়ে, ধ্বনি স্পন্দের স্বতঃস্ফূর্ততায়, অনুভবের আন্তরিকতার উৎসবে। যেমন ‘অমল কান্তি’, ‘উলঙ্গ রাজা’, ‘সূর্যাসেত্মর পর্ব’ ইত্যাদি।
তাঁর আখ্যানধর্মী 888sport app download apkগুলোতে কথক কণ্ঠ প্রবল হয়ে ওঠে। এই কণ্ঠ এবং কবিসত্তা প্রায়শই একাকার হয়ে যায়। যেমন :
ভালো লাগলে 888sport app download apkয়
শুধু মনে রেখো,
মূল্য না দিয়ে আমি কিছু চাইনি।
আমি নিজে না কেঁদে অন্যকে কখনও –
কাঁদাই নি।
(‘ভালো লাগলে’, নক্ষত্র জয়ের জন্য)
নীরেন্দ্রনাথ রূপদক্ষ 888sport live chatী। শব্দের পর শব্দ গেঁথে চিত্রকল্প বা প্রবল প্রতিমা সৃষ্টিতে তিনি সিদ্ধপুরুষ। আকাশের ইমেজারি যেমন তাঁর 888sport app download apkয় এসেছে, তেমনি এসেছে চাঁদ, সূর্যের চিত্রকল্প। যেমন :
(১) আকাশের চিত্রকল্প :
মাথার উপরে আকাশ আজও
বৈদূর্যমণির মতো জ্বলজ্বল করছে।
(‘কালবৈশাখী’, উলঙ্গ রাজা)
(২) চাঁদের চিত্রকল্প :
প্রান্তরের নদীটির বুকে
প্রেতে পাওয়া হাসি নিয়ে ধীরে ধীরে –
মরে গেল চাঁদ।
(‘চাঁদ’, 888sport app download apkসমগ্র-৪)
(৩) সূর্যের চিত্রকল্প :
ঝক্ঝকে রুপো রঙের মস্ত একটা কইমাছের মতো
লাফিয়ে উঠবেন সূর্যদেব।
(‘রূপকাহিনী’, রূপকাহিনী)
এই চিত্রকল্পগুলো বিশেস্নষণ করলে দেখা যায় সেখানে বিচিত্র বৈশিষ্ট্যের রং লেগেছে। এখানে যেমন visual imagery আছে, তেমনি এসেছে সেই ধরনের চিত্রকল্প, যেগুলো দৃশ্যের সীমানা পেরিয়ে 888sport app ইন্দ্রিয়ের গভীরতম তলদেশ ছুঁয়ে যায় অনায়াসে, স্বতঃস্ফূর্ততায়। যেমন :
(১) অবিশ্বাস্য, অসহ্য নীল সেই আকাশের তলায়
সদ্যোমৃত এক তীর্থযাত্রীর
রক্তের উপরে মাছি উড়ছে, আর তার
শরীর নিয়ে জমে উঠেছে শকুনের ভোজ।
(‘উত্তরাখণ্ডর পথে’, জঙ্গলে এক উন্মাদিনী)
(২) আকাশে উঠেছে চাঁদ, ভালবাসা চাঁদেরই মতন
ধীরে ক্ষয়ে যায়।
(‘888sport sign up bonusর ভিতরে ঘরবাড়ি’)
এরপর শব্দ-ব্যবহারের কথায় আসা যাক। আমরা জানি শব্দ-ব্যবহারের ক্ষেত্রে একই শব্দের অনেক বিকল্প থাকে। তার থেকে কবি নির্বাচন করেন সেই শব্দ, যা তাঁর ভাব প্রকাশের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ। নীরেন্দ্রনাথের শব্দ-নির্বাচন তাঁর ভাবের সঙ্গে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সাযুজ্যপূর্ণ, অমোঘ। যেমন :
নিশীথে নিয়ন জ্বলে। বড় নগ্ন নিয়নের বাতি।
(‘মার্কাসের মাঠে’, নীরক্ত করবী)
এখানে ‘নিশীথে’ এবং ‘নগ্ন’ শব্দের নির্বাচন লক্ষণীয়। নিশীথের স্থলে ‘দুপুর রাত্রি’ লেখা যেতে পারত, ‘নগ্ন’-এর স্থলে লেখা যেতে পারত ‘উলঙ্গ’। কিন্তু কবি জানতেন উক্ত দুই শব্দের ব্যবহার 888sport app download apkর স্বচ্ছন্দ চলনকে ব্যাহত করবে, ছন্দের ক্ষেত্রে ঘটাবে বিপত্তি। ‘নিশীথে নিয়ন’ – এই শব্দবন্ধের মধ্যে দুবার ‘নি’ ধ্বনির ব্যবহার গোটা পঙ্ক্তিতেই এনেছে দোলন। সৃষ্টি হয়েছে এক মায়াঘন পরিবেশ। এরপরই এসেছে সম্পূর্ণ বিপরীত চলন। ‘নিয়ন’-এর বিশেষণ হিসেবে ‘নগ্ন’ শব্দের ব্যবহারে সেই মায়াঘন পরিবেশ মুহূর্তেই ছিন্ন হয়, পাঠকের মানসপটে উদ্ভাসিত হয় এমন এক জগৎ, যা অসুস্থ, পা-ুর, বিবর্ণ। সেখানে দিনের বেলা আলোর দেখা মেলে না, অথচ রাত্রিতে নিয়নের বাতি জ্বলে!
শব্দ নির্বাচনেই শুধু কবি দুর্লভ মুন্শিয়ানার পরিচয় রেখেছেন এমন নয়, পদবিন্যাসেও রেখেছেন নিজস্বতার স্বাক্ষর। বাংলা ব্যাকরণের প্রচলিত পদবিন্যাসরীতি প্রয়োজনে নস্যাৎ করেছেন। ফলে বাক্য প্রমুখিত হয়েছে। ধ্বনিস্পন্দে বাক্য উঠেছে দুলে। বক্তব্য পেয়েছে তার প্রার্থিত তাৎপর্য! যেমন :
এ বড় তাজ্জব দিন।
শেয়ালে নির্ভয়ে এসে চেটে দেয়
শার্দূলের গাল, আর
নেপোরা অক্লেশে দই মেরে যায়।
(‘তাজ্জব’, আজ সকালে)
এখানে ‘শেয়ালে নির্ভয়ে এসে চেটে দেয়/ শার্দূলের গাল’ – বাক্যটি লক্ষণীয়। কবি অনায়াসে লিখতে পারতেন : শেয়াল নির্ভয়ে এসে শার্দূলের গাল চেটে দেয়। এটাই হতো ব্যাকরণসম্মত পদবিন্যাসরীতি। কিন্তু কবির সচেতন অন্তর্ঘাতে সেই norm থেকে বাক্যটির বিচ্যুতি ঘটল। নতুন সাজে এসে সে উপস্থিত হলো পাঠকের দরবারে। এমনটা যদি না ঘটত তাহলে যুগসংকট এমন গভীরতায় মূর্ত হতো না; পাঠকও তার অভ্যস্ত চেতনার অর্গল ঠেলে তাকাত না 888sport app download apkটির দিকে।
সমান্তরালতা সৃষ্টির মধ্য দিয়ে কবি তাঁর বক্তব্যকে রসসিক্ত করে পাঠককে ছুঁতে চান – এ-কথা পাঠকের জানা। এই শানিত অস্ত্রের কুশলী ব্যবহারে নীরেন্দ্রনাথের অনেক 888sport app download apkই প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে। যেমন :
(১) এখন মেঘের রঙ সাদা
এখন ফুলের রঙ সাদা
এখন রৌদ্রের রঙ সাদা
(‘রোদ্দুর দেখি না’, নীরক্ত করবী)
(২) কিছু শব্দ ডুবে গেছে সমুদ্রের বর্ণনায়;
কিছু শব্দ লটকে আছে অশত্থের ডালে
বৈকালী হাওয়ায়
ভো-কাট্টা ঘুড়ির মত কিছু শব্দ সৃষ্টির – এ আড়ালে
চলে যাচ্ছে।
(‘মধ্যরাতে উন্মাদেরা’, ঘরদুয়ার)
কবি জানেন ছন্দ আর কিছুই নয় ‘888sport app download apkর শরীরে দোলা লাগানোর কায়দা। তা নানান দোলায় 888sport app download apkর শরীরকে দোলানো যায়।’ তাই প্রয়োজনের তাগিদে কবি বারবার হয়েছেন ছন্দের দ্বারস্থ। মিলের ছন্দ তো বটেই, গদ্য ছন্দেও কবির পারঙ্গমতা চোখে পড়ার মতো। মূলত অক্ষরবৃত্তের দিকে তাঁর প্রবণতা। কলাবৃত্ত ছন্দের ব্যবহারেও তিনি পারঙ্গম। আবার দলবৃত্ত ছন্দেও কখনো কখনো এনেছেন পরিচয়ের মধ্যেই অপরিচয়ের সুর। যেমন :
(১) আর তা ছাড়া উড়ছিল খুব
কাচ-ভাঙা অজস্র ধুলো।
কাচ না, সবই দেখবার ভুল,
জ্বলছিল নক্ষত্রগুলো।
(‘ঘুম ছিল না’, সন্ধ্যারাতের 888sport app download apk)
(২) সকাল থেকেই মেঘলা আকাশ
বৃষ্টি পড়ছে ছিপছিপিয়ে।
শুকনো যে থলি, হয়তো তাতেও
এক-গলা জল দাঁড়িয়ে গেছে।
(‘মেলার মাঠে’, আর রঙ্গ)
মিলের ছন্দ তো বটেই, গদ্য ছন্দেও কবি অনবদ্য কুশলী। এই কুশলতার জন্য তাঁর ব্যবহৃত ‘আটপৌরে কথাগুলিও তখন আশ্চর্য এক রহস্যের ছোঁয়ায় কেমন যেন চঞ্চল হয়ে উঠেছে।’ যেমন – ‘উলঙ্গ রাজা’, ‘অমলকান্তি’, ‘অন্ধের সমাজে একা’ ইত্যাদি।
অলংকার ব্যবহারের ক্ষেত্রে নীরেন্দ্রনাথ স্বাভাবিকতাপন্থী। অলংকার বাহুল্য 888sport app download apkকে করে তোলে কৃত্রিম। ভাবের সঙ্গে তখন আর তার কোনো সংগতি থাকে না। ফলে গোটা আয়োজনই ব্যর্থতায় পা-ুর হয়ে ওঠে। এই সত্য নীরেন্দ্রনাথেরও জানা। তাই 888sport app download apkয় অলংকার যাতে ভার না হয়ে ওঠে সে-ব্যাপারে তিনি সদাসতর্ক।
অথচ অলংকার যে উপেক্ষা করেছেন এমনটা তো নয়। তাঁর 888sport app download apkয় অনুপ্রাস ব্যবহৃত হয়েছে, সৃষ্টি করেছেন নানা প্রকার উপমা অলংকার। প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই সেগুলোর ব্যবহার হয়েছে অমোঘ। তারা 888sport app download apkর ভার হয়ে থাকেনি। বরং কাব্যরসকেই পুষ্টিপ্রদান করেছে।
নবতিপর কবি এখন অসুস্থ। কালের নিয়মে শরীরে তাঁর নিরুপায় শিথিলতা। মুখে ব্যাপ্ত বলিরেখা। কিন্তু তাঁর 888sport app download apk এখনো ক্ষিপ্র বেগবান হরিণ। সেখানে এখনো ঝরে পড়ে যৌবনের দীপ্তি। সময়ের নিয়ম এখানে অচল। তাঁর 888sport app download apk আজো আমাদের চেতনার গাঢ় অন্ধকারে জ্বেলে দেয় শুদ্ধপ্রদীপ। তা মুহূর্তে আমাদের হৃদয় ও মন দুই-ই ছুঁয়ে যায়। আর কে না জানে পাঠককে যা ছুঁয়ে যায় তা-ই শ্রেষ্ঠ 888sport app download apk এবং পাঠকের অনুভূতি ও কবির অনুভূতিকে যিনি মেলাতে পারেন অনায়াস সফলতায় তিনিই প্রকৃত কবি। নীরেন্দ্রনাথ সেই বিরল প্রতিভা, যাঁকে আমরা প্রকৃত কবির আসনে বসিয়ে সম্মানিত হই। তাঁর 888sport app download apk আমাদের যাপিত জীবনের সঙ্গী। হয়তো-বা ভবিষ্যৎ কালেরও…! r


Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.