পোল্যান্ড থেকে ফিরে এসে 888sport live chatী কালিদাস কর্মকার ’৮৭ সালে 888sport appয় কিছুদিন
স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। স্থপতি ও 888sport live chat-সমালোচক সামসুল ওয়ারেস তাঁর বিশিষ্ট বন্ধু ছিলেন। ধানম– ৬নং রোডে সোনালী ব্যাংক মহিলা শাখার পাশের বিল্ডিংটি ওয়ারেসভাইয়ের আর্কিটেকচারাল ফার্ম। ধানম–র বাড়িগুলো ছিল এক বিঘা পস্নটের ওপর নির্মিত এবং সামনের দিকে বিরাট লন। লনের কোনায় চারদিকে দেয়ালঘেরা একটি রুম পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। কালিদা ওয়ারেসভাইয়ের অফিসে আসতেন এবং আড্ডা দিতেন। একদিন আড্ডাচ্ছলে ওয়ারেসভাইকে বললেন, ‘ওই কর্নারের রুমটি পড়ে আছে। রুমটি আমাকে দিন, আমি কিছু কাজ করি। 888sport appয় থাকি, কাজ করার জায়গা নাই। এখানে কিছু কাজ করব।’ ওয়ারেসভাই বললেন – ‘ওটা দিয়ে কিছু হবে না, রুমটি ড্যাম্প এবং ছোট, আপনার কোনো কাজে লাগবে না।’ ‘চলেন না দুজনে মিলে দেখে আসি।’ কালিদা রুমটি ভালোভাবে দেখলেন। ওয়ারেসভাইকে বললেন, ‘এটা দিয়েই আমার চলবে।’ ওয়ারেসভাই বললেন, ‘ওখানে আপনার দম বন্ধ হয়ে আসবে। তার চেয়ে আপনি আমার অফিসে কাজ করেন। একটি রুম আমি দিয়ে দিচ্ছি।’ কালিদা বললেন – ‘না, আমি যা করতে চাই তা আপনার অফিসে হবে না। আমি গ্রাফিক্স ওয়ার্কশপ করতে চাই, মিনিমাম দুটো রুম চাই। অ্যাসিড বাথ করতে হবে, কাজের জায়গা করতে হবে, লোকজন, 888sport live chatী-888sport live footballিক আসবে, আড্ডা হবে।’ ওয়ারেসভাইকে বললেন – ‘আপনি শুধু জায়গা দিন, বাকিটা আমি দেখব।’ রুম সংস্কার করা হলো, অ্যাসিড বাথ বসানো হলো, দুদিকে দুটো লম্বা টেবিল সেট করা হলো। লনের সামনে বাঁশের বেড়া ও ছন দিয়ে ১৪র্ x ১৪র্ মাপের একটি গোল টংঘর তৈরি করলেন। চারদিকে বাঁশের লাঠি দিয়ে সারি সারি রঙিন পতাকা দিয়ে সাজালেন, একটি উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি করলেন। এরপর আমাদের জানালেন। বললেন – ‘বীরেন, তোরা একদিন ওয়ারেসভাইয়ের অফিসে আয়, আরো অনেক 888sport live chatীকে বলেছি, একটু আড্ডা দেবো।’ বিকেলের দিকে অনেক 888sport live chatীকে পেলাম। ওয়ারেসভাইয়ের অফিসের নানা ধরনের হালকা খাবার-দাবার সবাই মিলে খেলাম,
গল্প-আড্ডা হলো। কালিদা বললেন – ‘তোদের ডেকেছি একটি কারণে। আমার ইচ্ছা, আমি গ্রাফিক ওয়ার্কশপ করব।’ পোল্যান্ডে সরকারি স্কলারশিপ নিয়ে কালিদা দুই বছর প্রিন্টমেকিংয়ের ওপর উচ্চতর শিক্ষা নিয়েছেন।
পৃথিবীর বিখ্যাত প্রিন্টমেকার উইলিয়াম হেটারের (William Hayter) কাছে তাঁর স্টুডিওতে কাজ শিখে এসেছেন। হেটারের জন্ম লন্ডনে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে তিনি ওয়ার্কশপ করেছেন। পরে স্থায়ীভাবে প্যারিসে বসবাস করেছেন। ওঁর প্রতিষ্ঠানের নাম আতিলিয়া-১৭। যেহেতু 888sport apps ’৭১ সালে স্বাধীন হয়েছে, হেটার গুরুকে 888sport app download for androidে রেখে কালিদা ‘গ্রাফিক আতিলিয়া-৭১’ নাম ঠিক করলেন। একটি লোগোও তৈরি করলেন। বললেন, ‘একটি নতুন পদ্ধতির মাধ্যমে ধাতব পদার্থের ওপর নিডল দিয়ে কেটে কেটে লেয়ারের পর লেয়ার নিয়ে
অ্যাসিডে ডুবিয়ে ডিপ ব্রাইট করে প্রিন্ট নিয়ে দেখার পর প্রয়োজনে আবারো অ্যাসিড খাইয়ে পুনরায় প্রতিটি প্রিন্ট নিতে হয়। এইভাবে ধাপে ধাপে পেস্নট তৈরি হলে পুনরায় প্রিন্ট নিতে হয়। হেটারের কাজ করার পদ্ধতি আমি তোদের শেখাতে চাই। তোরা যদি রাজি
থাকিস আগামী সপ্তাহে কাজ শুরু করব।’ আমরা সবাই রাজি হলাম। প্রাণেশদা, নাসির বিশ্বাস, রেজাউল করিম, কাজী হাসান হাবীব, নুরুন নাহার পাপ্পা, জামিরুল ইসলাম, গুলরুখ আহমেদ, আশেক বিশ্বাস, বাদল চক্রবর্ত্তী, প্রশান্ত কর্মকার ও আমি – আমরা প্রথমে কাজ শুরু করলাম। পেস্নট অ্যাসিড, কেমিক্যাল, শিরীষ কাগজ সব কেনা হলো। প্রথমে পেস্নট তৈরি করে পেস্নটে কোটিং ও ড্রাই করে নিডল দিয়ে লাইন কেটে আমরা যে যার মতো কাজ করতে থাকলাম এবং একপর্যায়ে 888sport live chatী কালিদাস প্রয়োজনীয় উপদেশ দিতেন এবং অ্যাসিডে ডুবিয়ে রাখতাম ২৫ মিনিট। তারপর তুলে নিয়ে প্রিন্ট
নিয়ে কালিদাকে দেখাতাম, তিনি পেস্নট চেক করে বললেন, ‘আরো ২০ মিনিট অ্যাসিডে ডুবিয়ে রাখো।’ কথামতো কাজ। তারপর তুলে নিয়ে পেস্নট মুছে চারদিকে ব্যাবলিং করলাম। কালিদা ভালো করে পেস্নট মুছতে বললেন এবং একটি রোলার নিয়ে একদিকে লাইট, মাঝে সাদা, ওপরের দিকে ডিপ কালার বানিয়ে রোলার দিয়ে পেস্নটের ওপর মেরে দিলেন এবং এক অদ্ভুত 888sport live chatকর্ম তৈরি হলো। দেখে আমরা সবাই মুগ্ধ। এরপর বললেন, ‘তোমরা তোমাদের মতো কাজ করো।’ আমরা নতুন নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার করতে থাকলাম, কালিদা দিকনির্দেশনা দিলেন। একসময় কালিদা 888sport live chatী কামরুল হাসানকে আহবান জানালেন আতিলিয়া কর্মশালা দেখতে। কামরুল হাসান একদিন এলেন এবং আমাদের সবার প্রিন্ট দেখে মুগ্ধ হলেন। কালিদা বললেন, ‘কামরুলভাই, আপনি তো ড্রইংয়ের মাস্টার, আপনি কাজ করুন। আপনার বাড়তি কিছুই করতে হবে না; ড্রইং করবেন, বাকি কাজগুলো আমরা করব, অর্থাৎ প্রিন্ট নেওয়া, মোছাসহ বাকি কাজ করে দেবো।’ একটি পেস্নট আনলেন। কামরুলভাইকে দেওয়া হলো। তিনি একটি ড্রইং করলেন। কালিদা একটি প্রিন্ট নিয়ে কামরুলভাইকে দেখালেন। তিনি খুব খুশি হলেন। প্রিন্টটি দেখে আমাদের সামনে বললেন, ‘আজ থেকে তুমি আমার কালিগুরু।’ এরপর কামরুলভাই লোক888sport live chatকে ধারণ করে একের পর এক বেশ কিছু নর-888sport promo code, পাখির কাজ করলেন। কালিদা নানাভাবে ব্যাকগ্রাউন্ড ও এচিংয়ের মাধ্যমে টেক্সচার ক্রিয়েট করে প্রিন্ট নিলেন, কামরুল হাসান সব দেখে অভিভূত হলেন। আমরা সবাই তিন-চারটি করে কাজ করলাম। প্রিন্ট নেওয়ার সময় তিনি সহায়তা করলেন। এই ওয়ার্কশপটি প্রায় দেড় বছর মাঝে বিরতি দিয়ে আবার শুরু হলো। ওয়ার্কশপটি ছোট-বড় অ্যামেচার-বিদেশি সবার জন্য উন্মুক্ত ছিল। যে যখন খুশি এসে কাজ করত। মাঝেমধ্যে রোকেয়া সুলতানা, মুরশেদা আরজু আলপনা, নাজনীন আজিম, রায়হান রুমি ছাড়াও নাম-না-জানা দু-একজন বিদেশি এসে এখানে কাজ করেছেন। বেশ কিছুদিন ওয়ার্কশপ চলার পর কালিদা ফ্রান্স এমবাসির কালচারাল ডিরেক্টরকে আমন্ত্রণ জানালেন। আমরা ছাপচিত্রগুলো সুন্দরভাবে সাজালাম। তিনি একদিন সন্ধ্যায় এলেন, ওয়ার্কশপের ছবিগুলো দেখলেন। কালিদা ফুলের তোড়া নিয়ে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে জানালেন – ‘ফ্রেঞ্চ প্রিন্টমেকার হেটারের পদ্ধতি আমি এখানে শিখিয়েছি এবং জনপ্রিয় করতে তাঁর টেকনিক 888sport appsের প্রিন্টমেকারদের শেখাচ্ছি। ছবিগুলো দেখলেন, একটি প্রদর্শনী করতে চাই। লোকাল কাগজ দিয়ে তো ভালো প্রিন্ট হয় না। যদি আপনি এমবাসির মাধ্যমে কিছু ফ্রেঞ্চ প্রিন্টপেপার দেন, ফাইনাল প্রিন্ট নিয়ে ছাপচিত্রগুলোর প্রদর্শনী করতে চাই।’ ফ্রান্স এমবাসির কালচারাল ডিরেক্টর জানালেন – ‘আপনি এমবাসি বরাবর একটি চিঠি দিন, দেখি কী করা যায়।’ কালিদা চিঠি পাঠালেন। একদিন তিনি নিজে এসে এক রিম, অর্থাৎ ৫০০ শিটের একটি প্যাকেট কালিদার কাছে হস্তান্তর করলেন। আমরা ওই কাগজগুলো দিয়ে প্রতিটি ছবির তিনটি করে প্রিন্ট নিলাম এবং প্রদর্শনীর জন্য প্রস্ত্ততি গ্রহণ শুরু করলাম। প্রদর্শনীটি জার্মান কালচারাল সেন্টারে (Goethe Institute) অনুষ্ঠিত হলো। বিপুল লোকসমাগম হলো, পত্রপত্রিকায় লেখালেখি হলো। 888sport live chat-সমালোচক সন্তোষ গুপ্ত, সাদেক খান এই ওয়ার্কশপের ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রচুর লেখালেখি করলেন। আগে 888sport app চারুকলা ইনস্টিটিউট ও চট্টগ্রাম চারুকলা ছাড়া কোথাও প্রিন্টমেকিং শেখার ব্যবস্থা ছিল না। বর্তমানে অনেক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। 888sport live chatীরা প্রিন্টমেকিং শিখছেন। ‘আতিলিয়া-৭১’ 888sport appsের প্রথম ব্যক্তিপর্যায়ে গড়ে ওঠা প্রিন্ট স্টুডিও।
এরপর হোটেল শেরাটনে বিদেশিদের জন্য তিনদিনের প্রদর্শনীর আয়োজন করা হলো। ১৯৮৭ সালে কনটেম্পরারি গ্রাফিক আর্ট এক্সিবিশন অব গ্রাফিক আতিলিয়া-৭১, ইউরোর নর্থ-আমেরিকা এশিয়া এবং প্যান প্যাসিফিক রিজিয়নে এমবাসির মাধ্যমে ভ্রাম্যমাণ প্রদর্শনী হলো, যা সর্বত্র প্রশংসিত ও আলোচিত হয়। এভাবে 888sport live chatী কালিদাস কর্মকার দেশে-বিদেশে ৭০টিরও অধিক একক পেইন্টিং অ্যাক্রিলিক, প্রিন্ট মিক্সড মিডিয়া এবং যৌথভাবে প্রায় শতাধিক প্রদর্শনী করেন। ২০০৯ সালে 888sport live chatী কালিদাস আমাদের সবাইকে নিয়ে গ্যালারি কসমস আতিলিয়া-৭১ পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ফাউন্ডার ডিরেক্টর। সেখানে অনেক দেশি-বিদেশি 888sport live chatীকে নিয়ে কর্মশালা চলেছে এবং চলবে। কসমস গ্রম্নপের চেয়ারম্যান এনায়েত উলস্নাহ খানের সহযোগিতা এবং পৃষ্ঠপোষকতা এক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রেখে চলেছে।
ম্যানিলা থেকে ফিরে আসার পরদিন কালিদাকে ফোন করলাম। আমার ফোন পেয়ে আমাকে তাঁর বাসায় যেতে বললেন। আমি উত্তরে বললাম, ‘এখন খুব ব্যস্ত আছি। আমার প্রদর্শনী নভেম্বরে। আমি পরে আপনার সঙ্গে দেখা করব।’ প্রদর্শনী সম্পর্কে কিছু মূল্যবান উপদেশ দিলেন। পরদিন ১৮ অক্টোবর বিকেল ৪টার দিকে আমার মোবাইলে ফোন করল কসমসের ফরহাদ। আমার স্ত্রী ফোন ধরে কালিদার দুঃসংবাদটি জানতে পারল। তার পরপরই ল্যাবএইডের লেলিনভাই একই সংবাদ দিলেন। তখন স্নানকক্ষে ছিলাম। সেখান থেকে বের হওয়ার পর আমার স্ত্রী জানাল, ‘কালিদা অসুস্থ। তাঁকে ল্যাবএইডে ভর্তি করা হয়েছে। তিনি এখন কার্ডিয়াক ইমার্জেন্সিতে আছেন, তুমি এখনই তাঁকে দেখতে যাও।’ আমার পুত্রবধূ শিমুকে সঙ্গে নিয়ে ল্যাবএইডে গিয়ে পৌঁছলাম। কালিদাকে দেখব বলে ইমার্জেন্সিতে ঢুকেই বুঝতে পারলাম কালিদা আর নেই। আমি তাঁর কপালে হাত রাখলাম। কপাল ঠান্ডা, যেন গভীর ঘুমে আছেন। ফরহাদ আমাকে সরিয়ে নিয়ে গেল, লেলিন একটা চেয়ারে আমাকে বসালেন – ‘দাদা, কালিদা আর নেই।’ আমি আমার আশপাশে তাকালাম, কালিদার ভাইবোনরা সবাই কাঁদছেন। আমার দুচোখ বেয়ে অশ্রম্ন ঝরতে লাগল। শরীর কাঁপছিল তখন। কিছুক্ষণ পর নিজেকে একটু সামলে নিয়ে মনে মনে বললাম – ‘বিদায় চিরতরুণ কালিদা। তোমাকে আমি শেষ প্রণাম জানাই।’


Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.