888sport appর সেগুনবাগিচায় 888sport live chatকলা একাডেমির এক্সপেরিমেন্টাল মঞ্চে সম্প্রতি প্রদর্শিত হলো কমলা সুন্দরীর কিসসা। গ্রামীণ জীবনে অত্যন্ত জনপ্রিয় এ-পালাটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গিতে উপস্থাপন করেছে চট্টগ্রামের গণায়ন নাট্যদল। পুরুষের স্বেচ্ছাচারিতায় 888sport promo codeর করুণ পরিণতি – এমন ভাববস্তু প্রকাশ পেয়েছে এ-নাটকে। চট্টগ্রামের নাট্যচর্চা 888sport appর নাট্যচর্চার চেয়ে কোনো অংশে কম নয়, তা আরেকবার উপলব্ধ হলো গণায়নের প্রযোজনা দেখে। 888sport appsের নেত্রকোনা অঞ্চলের প্রচলিত একটি গাথাকে আধুনিক মঞ্চবিন্যাসে অনবদ্য করে তুলেছে দলটি। দর্শকদের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা অর্জন করা নাটকটির নির্দেশনা দিয়েছেন বাপ্পা চৌধুরী। ওই প্রদর্শনীর ওপর ভিত্তি করে বাঙালি সংস্কৃতিতে কমলার উপস্থাপনরীতি, নাট্যায়ন-888sport live chatরূপ, নান্দনিকতা, মনস্তত্ত্ব ও দর্শকের উপযোগিতা অনুসন্ধানই এ-লেখার লক্ষ্য।
প্রচলিত একক গায়েনে পরিবেশনার কাহিনিটি অসাধারণ সমকালীন মঞ্চবিন্যাসে অনবদ্যভাবে তুলে ধরেছেন নির্দেশক বাপ্পা চৌধুরী। এ-পালায় ঐতিহ্য যেমন আছে, তেমনি আছে আধুনিকতা।
বাঙালি সংস্কৃতিতে ‘কমলা’ কোনো অপরিচিত চরিত্র নয়। বাঙালি সংস্কৃতিতে ‘কমলা’ নামে একাধিক চরিত্রের সন্ধান পাওয়া যায়। কাশ্মিরের কবি কলহনের রাজতরঙ্গিনীর বর্ণনামতে, রাজা জয়াপির বাংলা অঞ্চলে এলে বগুড়ার কাছাকাছি কোনো এক মন্দিরে নৃত্যনাট্য পটীয়সী ‘কমলা’কে দেখে মুগ্ধ হন। পরে প্রেম-পরিণয়-বিয়ে। এ-কমলার মধ্য দিয়ে প্রাচীন বাংলার সংস্কৃতির চিত্র ফুটে ওঠে। আজো নানা গানে, নানা 888sport live footballে ‘নাচে কমলা’ ভূমিকায় বাংলা সংস্কৃতির পরিচয়ই বিবৃত করা হয়। জানা যায়, কাশ্মিরের নৃত্য-বিকাশে বাংলা অঞ্চলের এই কমলার ভূমিকা অপরিসীম এবং কাশ্মিরে এখনো কমলার মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ আছে।
বাংলার আদি-মধ্যযুগের পালাগুলোতে বিচ্ছেদাত্মক ‘কমলা’ চরিত্রের স্বতন্ত্র কাহিনি পাওয়া যায়। ‘কমলার পুঁথি’ নামে বিয়োগান্ত কমলা চরিত্র অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিল বাংলার সমাজে। অষ্টাদশ শতকের দ্বিজ ঈশান-রচিত কমলা পালা দীনেশচন্দ্র সেন তাঁর সংকলনেও তুলে ধরেছেন। এও বিয়োগান্ত পরিণতির কমলা। ‘কমলা’ চরিত্রকে কেন্দ্র করে বাঙালি জীবনে নানা গীতিপালা তৈরি হয়েছে। তবে ভিন্ন ভিন্ন পালায় ভিন্ন ভিন্ন কমলা, ভিন্ন ভিন্ন তার ঘটনা। উনবিংশ-বিংশ শতকে কমলার বনবাস, কমলা রানীর সাগরদিঘি পালা হাজার হাজার বাঙালি দর্শকের হৃদয়ের অতলকে করুণরসে সিক্ত করেছে। ক্ষিতিশচন্দ্র মৌলিকের কমলারানীর পালা নামে পালার সন্ধান পাওয়া যায়। পাশ্চাত্যের ট্র্যাজেডির সমান্তরালই যেন এ কমলা-ধর্মরাজ চরিত্রের বিচ্ছেদ। কমলা চরিত্রটি আজ বাঙালি সংস্কৃতির একটি প্রতীকী চরিত্র। চট্টগ্রামের গণায়ন কমলা চরিত্রের বিয়োগান্ত কাহিনিটি নিয়েছে বর্তমান নেত্রকোনার সুসং দুর্গাপুর অঞ্চলের অতিকায় এক দিঘিকে কেন্দ্র করে ‘কমলারানীর সাগরদিঘি’র কিংবদন্তি থেকে।
কমলা সুন্দরীর কিসসা গণায়ন নাট্যদলের ৩২তম প্রযোজনা। ১৯৭৫ সালে কিছু উদ্যমী তরুণ চট্টগ্রামে গড়ে তোলেন এ-নাট্যদল। ‘নাটকের 888sport live chatিত-চেতনায় জীবনসত্য প্রকাশে প্রত্যয়ী আমরা’ মটোতে তাদের নাট্যপ্রেষণার উদ্দেশ্য ছিল জীবনের নিরন্তন সংগ্রাম, সততা ও বিশ্বস্ততাকে 888sport live chatের শুদ্ধতায় উচ্চারণ। দলটি দীর্ঘ পথচলায় সময়ের নানা ঘাত-প্রতিঘাতের নিরন্তন জীবনকেই 888sport live chatে রূপান্তর করে চলেছে। গণায়ন এ-পর্যন্ত তাদের ৩১টি নাটকের ষোলো শতাধিক প্রদর্শনী করেছে। তাদের উল্লেখযোগ্য প্রযোজনাগুলো হলো – গফুর-আমিনা সংবাদ, চর্যাপদের হরিণী, যায় দিন ফাগুনো দিন, মুখোশের স্বপ্ন, শেষের রাত্রি, সেপাই, সাজানো বাগান, গন্ধরাজ, ক্ষ্যাপা পাগলার প্যাচাল, মহামানব, শেষ সংলাপ, গাধার পাঠশালা, অতিকায় অজগর, কমরেডস হাত নামান, মালঞ্চমালা, নওকর শয়তান মালিক হয়রান, সংবাদ কার্টুন, তিনি আসছেন ইত্যাদি।
এ-নাটকে সুসং দুর্গাপুরের কমলার কিংবদন্তি থাকলেও গল্প বলায় গণায়নের নানা নিরীক্ষা লক্ষ করা গেছে। ‘কমলারানীর সাগরদিঘি’র কিংবদন্তিটি বর্তমান 888sport appsের তিনটি অঞ্চলে অতিকায় দিঘি ঘিরে প্রচলিত। এর মধ্যে অন্যতম নেত্রকোনা জেলার দুর্গাপুরে অবস্থিত একটি অতিকায় দিঘি ঘিরে। যাকে কেন্দ্র করে পালা নিয়ে কুদ্দুস বয়াতি, ইসলাম উদ্দীন পালাকার, দিলু বয়াতি সমকালে অত্যন্ত আলোচিত। দ্বিতীয় কিংবদন্তি – সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং উপজেলায় এক অতিকায় দিঘিকে কেন্দ্র করে, যে-দিঘি এখনো প্রায় ৬৬ একর জমিতে বিস্তৃত রয়েছে। পল্লীকবি জসীমউদ্দীন এ দিঘির সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে ‘রানী কমলাবতীর দিঘি’ নামে একটি 888sport app download apk রচনা করেন। এটি কমলাবতীর দিঘি, কমলার সাগরদিঘি, কমলারানীর দিঘি নামেও এলাকায় পরিচিত। তৃতীয় কিংবদন্তিটি রয়েছে বরিশাল অঞ্চলের আরেক অতিকায় দিঘিকে কেন্দ্র করে। এছাড়াও আসাম অঞ্চলে কমলারানীর পালা নামে অতিকায় দিঘিকে কেন্দ্র করে কমলারানীর বিয়োগান্ত পালা প্রচলিত। দিঘিকে কেন্দ্র করে প্রতিটি অঞ্চলের ঘটনার মধ্যে কিছু পার্থক্য পরিলক্ষিত হলেও মূল ঘটনা ও বিয়োগান্ততা প্রায় একই। এর ইতিহাস জানা না গেলেও এটা কিংবদন্তি রূপেই বিরাজমান।
কমলা সুন্দরীর কিসসা নাটকের কাহিনিতে দেখা যায়, নেত্রকোনার সুসং দুর্গাপুরের রাজমাতা নানা কৌশলে পুত্র ধর্মরাজকে বিয়ে করতে রাজি করান। পাত্রীর সন্ধানে বের হন উজির। তিনি মুক্তাগাছা অঞ্চলে পৌঁছলে সেখানে এক ফুলের বাগানে অপরূপ এক সুন্দরী কন্যাকে দেখে মুগ্ধ হন। খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন কন্যাটির নাম কমলা। সাত ভাইয়ের একমাত্র বোন। উজির কমলার ভাইদের কাছে বিয়ের প্রস্তাব দিলে তার ভাইয়েরা পাত্রের বংশপরিচয় জেনে রাজি হয়ে যান। অবশেষে বিয়ের দিন-তারিখ ঠিক হয়। যথারীতি সাড়ম্বরে বিয়ে সম্পন্ন হয় ধর্মরাজ ও কমলা সুন্দরীর। স্বেচ্ছাচারী স্বামী ধর্মরাজ বাসররাতে ভালোবাসার কথা না বলে পাশা খেলতে আহবান করে কমলাকে। পাশা খেলায় যদি রাজা হেরে যায় তবে সে বাসরঘরের বাইরে রাত্রিবাস করবে আর যদি কমলা হেরে যায় তবে সে বাপের বাড়ি চলে যাবে। বাসররাতেই বাপের বাড়ি ফিরে যাওয়া একজন 888sport promo codeর জন্য অত্যন্ত লজ্জাজনক। অনেক অনুনয়-বিনয় করে কমলা; কিন্তু ধর্মরাজ তা শুনতে নারাজ। পাশা খেলতে বাধ্য করে কমলাকে। পাশা খেলায় কমলা জিতলে স্বামী ধর্মরাজ স্বেচ্ছায় বাইরে চলে যেতে চায়। তখন শাশ্বত বাঙালি 888sport promo codeর মতো স্বামীর পদতলেই স্ত্রীর স্বর্গ জেনে তাকে বাইরে যেতে নিষেধ করে কমলা। সময় বয়ে যায়। কমলা গর্ভবতী হয়। ছয় মাসের গর্ভবতী রানী কমলার রূপে-গুণে মুগ্ধ পরীর দল তাদের মুনিব পাতালপুরীর দানবের কাছে কমলার রূপ বর্ণনা করলে দানবের কুদৃষ্টি পড়ে কমলার ওপর। যে-কোনো মূল্যে দানব কমলাকে পেতে চায়। অবশেষে সে ছক কষে। ইতোমধ্যে সন্তানের মা হয় কমলা। এক রাতে দানবের আদেশে পরীরা ধর্মরাজকে স্বপ্ন দেখায়। স্বপ্নে আদেশ করে পাশা খেলতে। পাশায় ধর্মরাজ জিতলে কমলা নির্বাসনে যাবে। আর হেরে গেলে এক অতিকায় দিঘি খনন করবে। কমলার নানা অনুনয়-বিনয় উপেক্ষা করে তাকে পাশা খেলতে বাধ্য করে ধর্মরাজ। কিন্তু এবারো ধর্মরাজ হেরে যায়। ফলে হাজার শ্রমিক সংগ্রহ করে দিঘি কাটা শুরু করে। শ্রমিকরা সাড়ে নয়দিনের কঠোর শ্রমে বৃহদাকায় দিঘি খনন করে বটে; কিন্তু এত গভীরতর দিঘি খনন হলেও তাতে পানির সন্ধান পাওয়া যায় না। পাতালপুরীর দানব পানি আটকে রাখে। আবার স্বপ্ন দেখায় ধর্মরাজকে। যদি কমলা সুন্দরী দিঘির মাঝে নেমে চুলের ভেজা পানি ঢালে তাহলেই পানি উঠবে পুকুরে। কমলা যখন এ-ঘটনা জানতে পারে তখন আর বুঝতে বাকি থাকে না যে, তার বিপদ আসন্ন। কমলা উদ্ধার পেতে আপন সাত ভাইকে পত্র লেখে। কিন্তু কীভাবে পাঠাবে চিঠি। উপায়ান্তর না দেখে এক পাখির পায়ে চিঠি বেঁধে দেয়। পাখিটি মুক্তাগাছা তার ভাইদের কাছে পৌঁছায় ঠিকই কিন্তু ছোটভাই ভুলক্রমে তীরবিদ্ধ করে পাখিটিকে। সময় গড়িয়ে যায়। চিঠি পেয়ে কমলাকে উদ্ধারের প্রস্তুতি নেয় তারা। ততক্ষণে অনেক সময় চলে গেছে। পাতালপুরীর দানব কৌশলে ভাইদের সময় এক ঘণ্টা পিছিয়ে দেয়। ভাইদের না আসতে দেখে সন্তান কোল থেকে রেখে কমলা সুন্দরী কলসি কাঁখে ধীরে ধীরে নামতে বাধ্য হয় সাগর দিঘির ভেতর। অতিকায় দিঘির ঠিক মধ্যস্থানে চলে যায়। কলসির পানি ঢালে। চুল ভিজিয়ে পানি পড়ে দিঘির মাঝে। সঙ্গে সঙ্গে পানিতে ভরে উঠতে থাকে দিঘি। কমলা সুন্দরী পুকুরের মাঝ থেকে আর উঠে আসতে পারে না। কে যেন তার পা চেপে ধরেছে। ধীরে ধীরে তলিয়ে যায় কমলা। পুরুষের স্বেচ্ছাচারিতায় জীবন দিতে হয় কমলাকে।
গণায়ন এ-পরিবেশনার নামকরণ করেছে কমলা সুন্দরীর কিসসা। উপস্থাপিত হয়েছে আবহমান পালারীতির ধারায়। ‘কিসসা’ ও ‘পালা’ বাংলা পরিবেশনার পরিভাষা। দুটো খুব কাছাকাছি হলেও সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম কিছু পার্থক্য আছে। গল্পপ্রধান হলে সাধারণত কিসসা। এতে গায়েন এককভাবে পরিবেশন করে। দোহারের সংগতও থাকে। কিসসা গান বিভিন্ন অঞ্চলে কাহন, কহন ইত্যাদি নামেও পরিচিত। কিসসা একক কথন প্রক্রিয়ায় উপস্থাপিত। আর পালা পূর্ণাঙ্গ বাংলা নাট্য। সকলে মিলে পালা উপস্থাপন করা হয়। একজন গায়েন থাকলেও দোহার সহযোগে বহুমাত্রিক রূপ লাভ করে পালা। পাঁচালির মতো পরিবেশিত হয়। চরিত্রও থাকে এখানে এবং পরম্পরায় কাহিনি উপস্থাপিত হয়। গণায়ন আঙ্গিক দিক বিবেচনায় কমলা সুন্দরীর কিসসা নামকরণ করেনি। মূলত কমলার জীবনগল্পকে প্রাধান্য দিয়েছে বলে কিসসা শব্দটি স্বতন্ত্র ব্যঞ্জনায় প্রয়োগ করেছে। উপস্থাপন করেছে প্রসেনিয়াম মঞ্চবিন্যাসে এবং পালারীতিতে।
কমলা সুন্দরীর কিসসা পালার শুরুতেই দেখা যায় নিরাভরণ মঞ্চ। তিনদিকে গায়েনগণ বসা। পেছনে যন্ত্রীদল। প্রসেনিয়াম মঞ্চবিন্যাসে মঞ্চের মাঝখানে একটি উঁচু পাটাতন, যেটি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দৃশ্য তৈরিতে ব্যবহৃত হয়েছে। নাটক শুরুর ঘণ্টা বাজার সঙ্গে সঙ্গে একজন গায়েন মধ্যমঞ্চে উঠে আসেন। বর্ণনা দিয়ে গানে গানে বন্দনা শুরু করেন। সঙ্গে সঙ্গে আরো চারজন দোহার মঞ্চে উঠে আসেন। আল্লাহ-রাসুল, দিকবন্দনা, সরস্বতী দেবীকে নৃত্যেগীতে বন্দনা করতে থাকেন। নাচে-গানে অনবদ্য হয়ে ওঠে বন্দনাপর্বটি। তখন দর্শক উন্মুখ হয়ে ওঠেন নৃত্যগীতের অদ্বৈত বন্দনার পর গল্পের টানে। বন্দনার মধ্যে উড়নার ব্যবহার অত্যন্ত আকর্ষণীয়ভাবে ফুটে ওঠে।
বন্দনাশেষে একজন গায়েন গল্প বর্ণনা করতে থাকেন – নেত্রকোনার সুসং দুর্গাপুর অঞ্চল। সেখানে ছিল এক রাজা। বর্ণনাত্মক ভঙ্গিতে গল্পে প্রবেশ করেন গায়েন। আর গায়েনের গল্পে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে দোহারগণ নিরাভরণ মঞ্চে কোরিওগ্রাফি ও প্রপসের মাধ্যমে দৃশ্যরূপ তৈরি করেন। রাজপ্রাসাদ সহজ-সরল সাজেশনে অনবদ্য দৃশ্যরূপে ফুটে ওঠে। গায়েনের বর্ণনার সঙ্গে গল্পের চরিত্রগুলো চরিত্রাভিনয়ে উপস্থাপিত। দৃশ্যের চরিত্রাভিনয়গুলোও বিমোহিত হওয়ার মতোই। রাজমাতা তার পুত্র ধর্মরাজকে বিয়ের অনুরোধ করতে করতে মঞ্চে প্রবেশ করেন। শুরু হয় গল্প।
রাজমাতা-ধর্মরাজ-উজির তাদের পোশাকগুলো অত্যন্ত উজ্জ্বল রঙের ও সাজেস্টিক। গায়েনগণের পোশাক একই ধরনের, সহজ-সরল। আদেশ পাওয়া মাত্র উজির অঙ্গাভিনয়ের মাধ্যমে পাত্রীর সন্ধানে বের হয়ে পড়েন। তখন দোহারের কোরিওগ্রাফির মাধ্যমে ফুটে ওঠা রাজবাড়ির সাজেশন হৃদয়কে দৃশ্যকল্পের নাড়া দেয়। ‘আমার পাগলা ঘোড়া রে, কৈ থেকে কৈ নিয়া যায়।’ উজিরের পাগলা ঘোড়া ছুটতে থাকে। নৃত্যভঙ্গিম চলন, হাতের উড়না ও ঘোড়া ছোটার নৈর্ব্যক্তিকতা অনবদ্য এক মায়াজাল তৈরি করে মঞ্চে। দর্শক হারিয়ে যান বোধের অবচেতনীয় দ্যোতনায়। হাজার বছরের আবহমান বাংলা নাট্যরীতিতে কল্পনার আশ্রয়ে দৃশ্যপট তৈরি অতিপরিচিত একটি বিষয়। এ-নাটকে দৃশ্যপটের বিশ্বাসযোগ্যতা অবাক করার মতোই। সংগীত কোরিওগ্রাফিতে অনবদ্য 888sport live chatকুশলতায় ধরা দেয় দৃশ্য। গ্রামীণ পালাগুলোতে উড়না, পর্দা, বালিশ ইত্যাদির বহুমাত্রিক ব্যবহার লক্ষ করা যায়। এখানের মনোভঙ্গিতেও সে-রীতির ছাপ অত্যন্ত স্পষ্ট।
উজির যেতে যেতে মুক্তাগাছা পৌঁছে যায়। নির্দেশক গায়েনের বর্ণনা ও প্রতীকের মধ্য দিয়ে ফুটিয়ে তোলেন প্রসঙ্গ। উজির একটি ফুলের বাগান দেখতে পান। মঞ্চে দোহারগণ ওড়না ও শারীরিক ভঙ্গিমা দিয়ে তৈরি করেন অসাধারণ এক ফুলের বাগান। কাপড় দিয়ে তৈরি ফুল আর কমলা সুন্দরী সে-ফুলের বাগানে ফুল তুলছে। উজির এ সুন্দরী কন্যাকে দেখে মুগ্ধ হয়ে যান। উজির পেয়ে যান ধর্মরাজের জন্য উপযুক্ত পাত্রীর সন্ধান। অত্যন্ত প্রাণবন্ত কমলা চরিত্র। ভাবপ্রকাশ খুবই স্বচ্ছ। বাচিক সুস্পষ্টতা এবং দূরপ্রক্ষেপণ ক্ষমতা অসাধারণ। কিন্তু এ-দৃশ্য এতই স্বল্প সময়ের যে, চরিত্রগুলোই স্পষ্ট হয়ে উঠতে পারেনি। উজির প্রস্তাব দিতে যায় কমলার ভাইদের কাছে। তারা তখন দাবা নাকি জুয়া খেলছিল তা স্পষ্ট ছিল না। বড়ভাইয়ের সারাক্ষণ কৌতুকপূর্ণ কথোপকথন ভাঁড়ামিই মনে হয়। ভাইয়েরা রাজি হয়ে যায়। বড় ভাই তরমুজ খাঁর বাড়ি থেকে বের হওয়া ও বাড়িতে প্রবেশ এমনভাবে ঘটে যা হাস্যকর হয়ে ওঠে। চলনটি অত্যন্ত যুক্তিনির্ভর। এতে কৃত্রিমতা তৈরি হওয়াই স্বাভাবিক। 888sport live chatে এত যুক্তি খোঁজার প্রয়োজন কী? এত সচেতনভাবে পা ফেলে যেতে হবে কেন? হাজার বছরের বাংলা 888sport live chatে স্বর্গ-মর্ত্য ও পাতালের কাহিনিও একসঙ্গে থাকে। তবে পরম্পরার দরকার আছে। আবার আসা-যাওয়ার মধ্যে ‘টুন টুনাটুন টুন টুনাটুন টুন’ এই স্তোত্রগুলো হালকা কৌতুকাবহের পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক হয়। উজির এবার পাগলা ঘোড়া ছুটিয়ে ফিরে আসেন ধর্মরাজের কাছে।
মঞ্চের বিয়ের চিরায়ত গান বাজতে থাকে – সাজে সাজে গো কন্যা কমলা সুন্দরীর সাজ। গায়েন-দোহার বা সখীর অসাধারণ নৃত্যগীতের মাধ্যমে অনবদ্য হয়ে ওঠে দৃশ্যটি। বাঙালি সাজের ভিন্ন বৈশিষ্ট্য। সামনের মঞ্চে গায়েনের নৃত্যগীত আর পেছনের মঞ্চে কমলার সজ্জা একসঙ্গে চলতে থাকে। তবে নাটকে বরযাত্রা দেখানো হয় না। ধর্মরাজ ও কমলার বিয়ে কেমন জানি পরম্পরাহীন। কনে বিদায়ের দৃশ্যে কমলার অভিনয় যেন বাস্তববাদী অভিনয়কেও ছাপিয়ে যায়। বিয়ে পর্বটা আরো প্রতিষ্ঠার দাবি রাখে। ধর্মরাজ কনে না নিয়েই মঞ্চের বাইরে চলে যায়।
পেছনে সারাক্ষণই সাদা সায়াক্লোমা ছিল। এতে আলো ও রঙের ব্যবহার হলে দৃশ্যগুলো আরো প্রাণদীপ্ত হয়ে উঠতে পারত। বাংলা নাট্যরীতিতে কৃত্রিম আলোর গুরুত্ব কম মনে হলেও ঐতিহ্যকে ধরেই সমকালীন প্রযুক্তির ব্যবহারও প্রয়োজন। নাটকে প্রচুর আঞ্চলিক শব্দের সার্থক প্রয়োগ আছে। যেমন – গেছে গা, খাই গা।
ধর্মরাজ বাসররাতে কমলাকে পাশা খেলায় আহবান করে। বারবার কমলা যখন অনুরোধ করে ‘না না স্বামী আজ রাতে আপনি পাশা খেলতে বলবেন না।’ তারপরও যখন ধর্মরাজ গর্জে ওঠে – ‘পালা খেলায় তুমি হারলে আজ রাতেই বাড়ে বাড়ি চলে যাবে।’ তখন যেন কমলার অসহায়ত্ব অভিনয়ের স্বতঃস্ফূর্ততায় মূর্ত হয়ে ওঠে। তবে নাট্যমুহূর্তটিতে পূর্বাপরের আরো যৌক্তিকতা প্রয়োজন। কমলা হঠাৎ যেন অতি অভিনয় শুরু করে। কার্যকারণ ব্যাখ্যায় আরো নাটকীয়তা তৈরি করতে পারত। যেভাবে নাটকে পাশা খেলা দেখানো হলো তা রীতিমতো যুদ্ধ-আয়োজন। নৃত্যগীতের মাধ্যমে পাশা খেলা অবশ্য নতুন এক ভঙ্গিও বটে। পাশা খেলায় ধর্মরাজ পরাজিত হলেও বাঙালি 888sport promo codeর চিরন্তন স্বভাবই এতে প্রকাশিত হয়েছে। 888sport promo codeত্বের আদর্শই স্বামীকে বড় হিসেবে দেখতে চাওয়া। ধর্মরাজ হেরে বাইরে চলে যেতে চাইলে ‘সোনা বন্ধু যাইয়ো না ছাড়িয়া’ গানের মাধ্যমে বাংলার গীতল ভক্তি মানসিক প্রবণতাই স্পষ্ট হয়। অত্যন্ত মহত্ত্বে উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে কমলা চরিত্র। অভিনয়ে চরিত্রগুলোর সাবটেস্ট নিয়ে আরো ভাবার আছে।
আলো গল্পে মায়া তৈরি করতে কার্যকর ভূমিকায় ছিল বলে মনে হয়নি। সারাক্ষণই দিনের মতো ফ্ল্যাট আলো ছিল। নির্দেশকের দাবি অনুযায়ী, ঐতিহ্যকে আধুনিকতার মাত্রায় উপস্থাপন করলে আলো ব্যবহারে আরো মনোযোগ দাবি করে। জানা যায়, ছয় মাসের গর্ভবতী কমলা সুন্দরী। নাটকটিতে বর্ণনা ও চরিত্রাভিনয়ের মিশ্রণ ঘটলেও কখনো কখনো কিসসা কথনের ঢং, পুঁথিপাঠ ও যাত্রায় অনুসৃত রীতিও অনুসরণ করা হয়েছে। দানবের মুখোশ অত্যন্ত শৈল্পিক। আর পরীদের পোশাক-নৃত্যগীত অসাধারণ। পরীরা 888sport appsে যাবে। অত্যন্ত চমৎকারভাবে ফুটে ওঠে সমকালীন 888sport appsের বাস্তবতা। হরতাল প্রসঙ্গটা বোধহয় পুরনো হয়ে গেছে। আকাশে পরীরা যাওয়ার দৃশ্য অত্যন্ত আবেগী ধারায় দর্শক হৃদয়ে নাচন তোলে। পাতাল রাজের একটি লাঠিতে মুখোশটি উঁচুতে তুলে ধরে গায়েনের সঙ্গে উক্তি-প্রত্যুক্তিকরণ অত্যন্ত উঁচু 888sport live chat-উচ্চতায় পৌঁছে দেয়। গণক ধর্মরাজকে চেনে না – প্রতীকায়নের মাধ্যমে এক ধরনের সামাজিক বিদ্রূপও প্রকাশ পেয়েছে এর মধ্য দিয়ে।
স্বপ্ন দেখানোর দৃশ্যটি অত্যন্ত সহজ-সরল, কিন্তু নাটকীয়তা আছে। আলো-ছায়া দিয়ে তৈরি করা। সমস্ত মঞ্চ অন্ধকার একজন দোহার ধর্মরাজের মুখের ওপর শুধু টর্চ ধরে আলোকিত করা হয়েছে। আবারো সেই বাসররাতের মতো দুজনের শাক্তসুলভ পাশাখেলার নৃত্য। আবারো হারে ধর্মরাজ। কিন্তু কমলা তখনো চিরন্তন বাঙালি 888sport promo codeর রূপে উদ্ভাসিত।
অসাধারণ কোরিওগ্রাফিতে শ্রমিক বা কামলাদের পুকুর খননের দৃশ্য উপস্থাপিত হয়। সাড়ে নয়দিন হাজার হাজার কামলা মাটি কাটলেও তখনো থাকে দিঘি পানিশূন্য। এ-নাটকে গায়েনদের নাচে পেশাদার পালাকারদের নৃত্যের ভঙ্গিমা ও চলনের সঙ্গে পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়েছে। আবারো পাতাল দানব; আবারো পরী; আবারো স্বপ্ন। কমলা বিপদ বুঝতে পেরে সাত ভাইকে পত্র লেখে। অনুনয়-বিনয় করতে থাকে ধর্মরাজের কাছে। অত্যন্ত চমৎকারভাবে কোরিওগ্রাফি, সংগীতের মাধ্যমে অনবদ্যভাবে ধরা দেয় কমলার দুঃখগাথা। পাখির সজ্জা অত্যন্ত নান্দনিক। মুক্তাগাছা পৌঁছানো এবং ছোট ভাইয়ের পাখি-শিকারও 888sport live chatকুশলতায় চমৎকারভাবে রূপায়িত। ভাইদের সময় এক ঘণ্টা পিছিয়ে যাওয়ার ফলে তারা কমলার বিপদে পাশে দাঁড়াতে পারে না। কমলা কলসি-কাঁখে ধীরে ধীরে পানিশূন্য দিঘিতে নামে। পানি ঢালে মাথার ওপর। চুল ভিজিয়ে শরীর ভিজে পানি পড়ে দিঘির ঠিক মাঝে। ধীরে ধীরে সাদা পর্দায় ডুবে যেতে থাকে কমলা। সাদা পর্দায় পানির ঢেউয়ের ছাপ। মঞ্চের পেছনে সায়াক্লোমায় একটি সাদা সূর্য দেখা যায়। কমলার পা পানির নিচ থেকে কেউ যেন চেপে ধরেছে। কমলা আর্তচিৎকার করতে থাকে – ‘আমাকে বাঁচাও। আমার এক পা কে যেন আটকে ধরেছে।’ ক্রমশ পানিতে ডুবে যেতে থাকে কমলা। এমন এক বিয়োগান্ত পরিণতির মধ্য দিয়ে নাটকের সমাপ্তি ঘটে।
এ-নাটকটি মূলত প্রচলিত গাথার একটি আধুনিক মঞ্চবিন্যাস। সেক্ষেত্রে গল্পটির আবেগ অক্ষুণ্ণ রাখতে প্রসেনিয়াম 888sport live chatবাস্তবতাকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন নির্দেশক। বিভিন্ন দৃশ্যরূপায়ণে প্রপসের ব্যবহার অত্যন্ত সৃজনশীলতার পরিচায়ক।
দুটো দিক থেকে এ-নাটক অত্যন্ত তাৎপর্যবহ। একটি প্রচলিত কাহিনির অনবদ্য মঞ্চরূপায়ণ। চমৎকার নাট্যবাস্তবতা তৈরির সামর্থ্য। স্ক্রিপ্টের জন্য কারো ওপর নির্ভর না থেকে বহুল প্রচলিত গল্পকে বিন্যস্তকরণ। অপরটি – বাংলার ঐতিহ্যবাহী নাটককে আধুনিকতার যুক্তিতে নব-রূপায়ণ। কাহিনির গল্পকৌশল বা বৃত্তিও গ্রামীণ পরিবেশনার বৈশিষ্ট্যের মতোই সহজ-সরল। কোনো জটিলতা নেই। আছে শুধু আবেগ, মানবিকতা এবং জীবনের ব্যাখ্যা।
কমলা চরিত্রের অভিনয়ে অত্যন্ত স্বতঃস্ফূর্ত ভাবপ্রকাশ লক্ষ করা গেছে। বাচিক প্রক্ষেপণও শক্তিশালী। ধর্মরাজ চরিত্রে বাচিক গতির চেয়ে সাত্ত্বিক অভিনয় ছিল অত্যন্ত প্রাণবন্ত। কখনো কখনো চলনগুলো অত্যন্ত স্বাভাবিক মনে হয়েছে। উজিরের অভিনয়ও চমৎকার। গায়েনের বর্ণনায় যথেষ্ট আড়ষ্টতা ছিল। নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করছেন – তৌহিদ হাসান ইকবাল, বাপ্পী হায়দার, ইউনুস আলী টিটো, সজল দে, ধর্মরাজ তঞ্চঙ্গ্যা, তাহমিনা মজুমদার বিমিত্ম, ননাবী চাকমা, সাদিয়া আক্তার সোনিয়া, সুইনু মারমা, মো. এমএনএস রায়হান, ফাল্গুনী দাশ, লাব্রিচাহি মারমা, উৎসব পোদ্দার, সায়হাম মাহমুদ ও মাইশা মালিহা। নাটকের পোশাক-পরিকল্পনায় ছিলেন শাকিলা তাসমিন কাজরী, কোরিওগ্রাফি শারাবান তহুরা কুমকুম, আলোক পরিকল্পনায় মো. ইসরান হোসেন। অভিজিৎ চক্রবর্তীর ঢোল ও বাপ্পী রাজের বাঁশিতে কণ্ঠ দিয়েছেন দলের সবাই। নাটকটি নির্মাণ উপদেষ্টা ছিলেন অধ্যাপক ম. সাইফুল আলম।
বর্ণনা-বন্দনা, নৃত্যগীত-অভিনয় সবকিছু মিলে এক অসাধারণ পরিবেশনা কমলা সুন্দরীর কিসসা। তবে এ-নাটকে অভিনয় নিয়ে প্রচুর কাজ করার আছে। আলো, মঞ্চচলন প্রভৃতি নিয়েও ভাবার আছে। বন্দনা, উজিরের মহলা, পাগলা ঘোড়ায় চড়া, ফুলবাগান, বাসররাত, পরীদের উড়ে যাওয়া, পুকুর খনন ও পানিতে ডুবে যাওয়া এত চমৎকার নাট্যমুহূর্ত তৈরি করেছে যে, দর্শক আবেগের স্রোতে ভেসেছেন। নাট্যদলটির টিমওয়ার্ক অসাধারণ। অত্যন্ত প্রাণবন্ত প্রযোজনা। দেশজরীতির এমন দলগত প্রাণবন্ত প্রযোজনা নির্দেশকের কৃতিত্বের পরিচয়ই তুলে ধরে। 888sport appsের নাটকের উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি ঘটুক – এ-প্রত্যাশা সবারই।


Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.