আমাদের দেশে সঙ্গীত নিয়ে বেশ একটা অরাজক আছে। আমাদের দেশটা এক্ষেত্রে কোন দেশ? আমাদের সঙ্গীতদেশ তো ভারতবর্ষীয় উপমহাদেশ, বিশেষ করে হিন্দুস্তানি সঙ্গীতের দেশ, উত্তরাবর্ত। দক্ষিণ দেশ, কর্ণাটক সঙ্গীতের দেশ, সাক্ষাৎভাবে আমাদের সঙ্গীতদেশ না হলে একেবারে বিদেশ নয় মোটেও। তারও দক্ষিণে শ্রীলঙ্কা। তার সিংহলি ভাষা যেমন নয় তামিলের ভগিনী, তেমনি তার সঙ্গীত খেয়াল করে গুনলে বাঙালির নাড়ি ধরে টান দেয়। কিছু তামিল বহিরাঙ্গিক প্রভাব থাকলেও তা যেন অশোক-পুত্রকন্যা মহেন্দ্র-সঙ্ঘমিত্রার খ্রিষ্টপূর্বকালের সঙ্গীত। আরো প্রাচীন করে বললে, ইতিহাসের প্রথম সন্ত্রাসী বিজয় সিংহ ও তার অনুচরবর্গ, যাদেরকে বাঙালির রাজা, বিজয়ের পিতা, জাহাজে করে নির্বাসন দিয়েছিলেন, তাদেরই যেন সঙ্গীত শুনি শ্রীলঙ্কার সঙ্গীতে। ইউরোপের উত্তর-মানব নর্ডিক কিংবা নোর্স ভাইকিংরা অনেক পরের সন্ত্রাসী, আরো অনেক পরের সন্ত্রাসী পর্তুগিজ হারমাদরা, মরাঠি বর্গিরা।888sport live chatক্ষেত্রে অরাজক খুব খারাপ ঘটনা নয়। যখন এখানে এক-একটা গতিশীলতার কাল আসে, পুরানো প্রচল-সব মড়মড় করে দুদ্দাড় বেগে ভাঙতে থাকে, সৃজনশীলতায় বান ডাকে, তখন ঘটেই তো অরাজক। তাকে তো আমরা সমাজের ক্ষেত্রে, 888sport apkের ক্ষেত্রে, রাষ্ট্রনীতি, রাজনীতির ক্ষেত্রে অরাজক বলি না। বলি বিপ্লব। যেমন – সামাজিক-রাষ্ট্রিক ফরাসি বিপ্লব, অক্টোবর বিপ্লব। সাংস্কৃতিক বিপ্লব রেনেসাঁস, ইতালি ও ইউরোপে। প্রযৌক্তিক বিপ্লব ইংল্যান্ডে। আহা আমাদের দেশে শেষ কবে এই সদর্থক বিপ্লব ঘটেছিল, বই-পুঁথি ঘেঁটেও তার হদিস পাই না। সম্ভবত তুর্কি আমীর খসরু এই ধরনের একটা বিপ্লব কিংবা মহাসংশ্লেষণের প্রতিভূ বলে তাকে আমরা হযরত বলে মান্য করে থাকি। রবীন্দ্রনাথ নামে আমাদের দেশে নিতান্ত একটি মুখচোরা বালক ছিল। দেহে এবং নানা প্রচারে সে প্রায় পুরাণের বামন দেবতার মতো অচিরেই বেড়ে গেলেও তিনি তাঁরই লেখা গল্পসল্পের ভালো মানুষটি ছিলেন শেষ পর্যন্ত। তিনি ভারতবর্ষীয় সঙ্গীতক্ষেত্রে বিপ্লবাত্মক উল্লম্ফনজাতীয় কিছু করে থাকলেও নিজেই নম্রতা বিনয় ভদ্রতা দিয়ে ওটা ফুল ফ্যাদম ফাইভ চাপা দিয়ে গেছেন এবং ভাতখণ্ডে থেকে ধূর্জটি মুকুজ্জে জাতীয় কিছু নিতান্ত পাগল লোক ছাড়া আমরা সকলেই এমন অন্পঢ়্ এবং সঙ্গীতগত চোয়াড় জাতীয় (কিংবা গণ্ডার) জীব যে রবিবাবুর চালাকিটা বেমালুম চলেই গেল – আমরা তাঁর গানগুলোকে একটা সঙ্গীত নাম দিয়েই ব্রাহ্মণবিদায় কিংবা কোরানখানির মৌলভি-বিদায় দিয়ে ল্যাঠা চোকালাম। সঙ্গীতে যথা-প্রবিষ্ট একশ সাক্ষর বুদ্ধিজীবী থাকলে কী হইচইটাই না পড়ত – রাবীন্দ্রিক অনাচার নিয়ে (দ্বিজেন্দ্রলাল রবীন্দ্রের বাণীগত অনাচার নিয়ে উত্তেজিত ছিলেন, কিন্তু তাঁর সঙ্গীতের অননুরাগী ছিলেন না। তৎপুত্র তো উৎসাহী ভক্তই ছিলেন রবিবাবুর গানের। কিন্তু তবু দিলীপকুমার যে কেন নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ কিংবা ব্যর্থ প্রাণের আবর্জনা পুড়িয়ে ফেলবার বিপ্লবী কাজগুলো যথোচিতভাবে রবীন্দ্রনাথের গানের ভেতরে চিনতে পারলেন না, তার ব্যাখ্যা বোধ করি পাওয়া যাবে তাঁর এক ধরনের আত্মমুগ্ধতার ভেতরে)।
আমাদের সাঙ্গীতিক অরাজক কোনো পলি-ফেলা ঝড়জল বানভাসি নয়। এ হতদশাগ্রস্ত মরাঠা ইঁদুরদষ্ট উত্তর-আরংজেব মোগল সাম্রাজ্যের মতো। কেবলই ক্ষয়, কেবলই লয় সব সদর্থক অর্জনের। তার মধ্যে কাল হয়েছে অপুষ্ট গ্রাম-ভাষা হিন্দির রাষ্ট্রভাষা তথা রাষ্ট্রদখল নেবার প্রথম উচ্ছ্বাসে এই ক্ষেত্রে ‘শাস্ত্রীয় সঙ্গীত’ বলে একটা অর্থহীন বোঝা চাপানোয়। শাস্ত্রীয় চিত্রকলা, শাস্ত্রীয় 888sport live football, শাস্ত্রীয় নৃত্য, শাস্ত্রীয় নাটক বলে তো কিছু জানি না। সঙ্গীতের বেলায় যত দুর্ভোগ, অসাঙ্গীতিক অরসিকের যত উৎপীড়ন। ঠাকুর নবাবালী খাঁ, ভাতখণ্ডের সঙ্গে ম্যারিস সঙ্গীত বিশ্ববিদ্যালয়ের যুগ্ম-প্রতিষ্ঠাতা ও অসাধারণ সঙ্গীত-গ্রন্থ মারিফুন্নগমাত প্রণেতা বরং প্রয়াস করেছিলেন, যে-ফোঁকর দিয়ে ‘শাস্ত্রীয়’টি ঢুকে পড়ল সেটি বন্ধ করতে। কাজে আসেনি সে-চেষ্টা। তিনি ভারতবর্ষীয় সঙ্গীতকে দুই ভাগে দেখেছিলেন। গ্রন্থসংগীত অর্থাৎ বইপুস্তকে যেমনটা পাওয়া যায় – এই ভরত, শার্ঙ্গদেব, বেঙ্কটমখী প্রমুখের গবেষণালব্ধ বর্ণনাত্মক 888sport apk আর কি! আর লক্ষ্যসঙ্গীত – যে-সঙ্গীতটা অনুষ্ঠানে পাওয়া যায়। যাকে জীবন্ত লক্ষ করা যায় এই অর্থে ঠাকুর সাহেব লক্ষ্য শব্দের প্রয়োগ করেছেন মনে হয়। নাকি এ পুরনো কোনো পারিভাষিক, আমি ঠিক জানি না। অনুষ্ঠিত সব সঙ্গীতই লক্ষ্যসঙ্গীত। এমনকি অনুষ্ঠেয় সব সঙ্গীতও। গ্রন্থসঙ্গীতআসলেই কেবল রিসর্চেজ অ্যান্ড ডেসক্রিপশন – প্রায় সবটাই যেন ট্যাক্সনমিক বর্গীকরণ ও সংজ্ঞা তথা ব্যাখ্যামূলক। অর্থাৎ শাস্ত্র। ভাষা এবং ব্যাকরণের সম্পর্কের মতো প্রায়। যে শাস্ত্র পড়িলে একটি ভাষা বলিতে, পড়িতে ও লিখিতে পারা যায় তাহাকে মোটেও ব্যাকরণ বলে না। ব্যাকরণ ভাষার 888sport apkসম্মত বিবরণ, বিভাষীর জন্য ভাষাপ্রবেশকালে কিঞ্চিৎ আবশ্যক, আবশ্যক ভাষাপণ্ডিতদের জন্য, ভাষার শৈল্পিক ব্যবহারকারীদের জন্য হয়ত কিছুটা, সাধারণ জীবন্ত ব্যবহারকারীদের জন্য একেবারেই নয়। আবার রবীন্দ্রনাথ এসেই যান। ভাষাস্রষ্টা মহান লেখকদের মধ্যে একমাত্র তাঁকেই দেখি পরিচ্ছন্ন ভাষাচিন্তক – বাংলা ব্যাকরণ ও ছন্দশাস্ত্রের প্রথম পত্তনকারী। বাংলায় আর কোনো সৃজনশীল বড় লেখক-কবিকেই ভাষাচিন্তক হিসেবে পাই না, এক রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী ছাড়া। ইংরেজি 888sport live footballের ক্ষেত্রে যেন তা-ই, কিন্তু তা জোর দিয়ে বলবার অধিকার আমার নেই।
তার মানে দাঁড়াল ভারতসঙ্গীতে আমরা যাঁদের মানি, তাঁরা কেউই তেমন কিছু শাস্ত্রী লোক নন। হননি, হতে চানওনি। আবদুল করিম খাঁ সাহেব ক্লিমেন্ট সাহেবের সঙ্গে দুজনে ইংরেজিতে শ্রুতির ওপর বই লিখেছিলেন, তাঁর অভিপ্রায় অনুসারে দেওধর একটা শ্রুতি হারমোনিয়ামও তৈরি করেছিলেন। মুদারার সা থেকে তারার সা-তে যেতে বারোটির বদলে বাইশটি চাবি/পর্দা/ঘাট বা রিড। খাঁ সাহেব মনে হয় পণ্ডিতি করলেও কমদূর যেতেন না। কিন্তু পণ্ডিতি পণ্ডিতিই, 888sport live chat নয়, ঈশ্বরের – প্রায় সৃজন নয়। প্রাণের মানুষ আবদুল করিম তাই রসের মানুষ, অপার রহস্যের অক্লান্ত সন্ধানীটিই থেকে যান। ফৈয়াজ খাঁ সাহেবও খুবই জ্ঞানী মানুষ ছিলেন। কিন্তু সে রসবঞ্চিত রুঠা কোনো হিকমতের ব্যাপার ছিল না। তাঁর রসবোধ, তাঁর জীবন-মনন-অনুষ্ঠানকে টইটু¤ু^র ছাপিয়ে থাকত জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত। ব্যাকরণনিষ্ঠার কোনো দূরগন্ধ তাঁর গানে ছিল না, যেমন ছিল না সঙ্গীত-বিষয়ে কোনো প্রকার অজ্ঞানপ্রসূত বিচ্যুতি। ইমানুয়েল কান্টের বৈকালিক 888sport slot game দেখে তাঁর প্রতিবেশীরা তাঁদের ঘড়ির সময় ঠিক করতেন, ফৈয়াজ খাঁ সাহেবের আলাপ শুনে সারা হিন্দুস্তানে যত ইমানদার গাইয়ে আছে, তারা তাদের রাগদারির কেবলা স্থির করে নিতে পারে।
শাস্ত্র কেউ গাইতে পারে না, গাইলে তা গান হবার, হয়ে উঠবার কোনো সম্ভাবনাই থাকে না। ‘শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে’র কোনো অনুষ্ঠান হতে পারে না। ইউরোপীয় সঙ্গীতের ধারায় মিউজিকোলজি গাইবার-বাজাবার ব্যবস্থা নেই। 888sport live chatীরা সিম্ফনি বাজান, বেল কান্তো পদ্ধতিতে লিব্রেত্তো গান, ভরচুঅসো যন্ত্রীরা কন্চের্তো বাজান বেহালা কিংবা পিয়ানোয় – পৃথিবীর কোত্থাও কেউ ‘শাস্ত্রীয়’ সঙ্গীত গায় কিংবা বাজায় না। কোনো দেশের কোনো সংস্কৃতিতেই সঙ্গীতক্ষেত্রে এই প্যাকেজ নাম ব্যবহার করবার প্রয়োজন অনুভূত হয়নি। আমাদের দেশেই বা তা হলো কেন? যেখানে বিশেষ করে ‘শাস্ত্র’ কথাটির ধর্মীয় ও ধর্মসাম্প্রদায়িক অবশ্য-অনুষঙ্গ রয়েছে, যা কি-না অবশ্য-পরিহার্য। ভারতবর্ষীয় হিন্দু-মুসলমান কেবল একটিমাত্র ক্ষেত্রে মিলেমিশে একাকার হয়েছে – যেন-বা কেমিক্যাল কম্পাউন্ডই হয়েছে – সে-সঙ্গীতের ক্ষেত্রে। কুমারপ্রসাদের এই অবেক্ষণটি মহা দামি। তার হানি হোক কোনোভাবে, এটা সঙ্গীতপ্রেমী কেউই চাইবে না।
একটা কোনো দুর্ভাগ্যজনক পারিভাষিকের ক্ষতিকর প্রভাব নিয়েই কেবল আমি আন্দোলন করছি না। উপমহাদেশের সকল শিক্ষিত এবং সংস্কৃতির অভিমুখী মানুষকে আমি এটা বলতে চাইছি যে গানের বইটই নয়, সঙ্গীতের গবেষণা ও উপযুক্ত বিন্যাস-বর্গীকরণ নয়, সঙ্গীত (অতীত ও বর্তমান এবং অনুষ্ঠানমান – ঘটমান সঙ্গীতই যে কেবল সত্যিকার সঙ্গীত, ষোলো আনা সঙ্গীত) প্রপঞ্চই এ-মুহূর্তে এদেশে, প্রতিবেশী ভারতে এক বিনাশী অরাজকের মধ্যে হাবুডুবু খাচ্ছে, সম্ভবত তলিয়েও যাচ্ছে ক্রমাগত। ঠাকুর সাহেবের গ্রন্থসঙ্গীতের বেলায় এদেশে কোনো কাজই হচ্ছে না, নিকট-ভবিষ্যতে হবে বলেও কেবল বাতুলই ভাবতে পারে। আমার উদ্বেগের কারণ তা নয়। উদ্বিগ্ন আমি কেবলই লক্ষ্যসঙ্গীত নিয়ে।
আমার এই ছোট আলোচনার বাইরে রাখতে চাই সঙ্গীতের একটা মূলগত এবং প্রকৃতই বৃহৎ এলাকা আঞ্চলিক লোকজ ধারার গান। ঐখানে সঙ্গীত কীভাবে বাঁচে, কীভাবে সঞ্চালিত হয় জন থেকে জনে, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে, তার আমি প্রায় কিছুই জানি না। ধ্রুপদ-ধামার খেয়াল ইত্যাদি সঙ্গীত রবীন্দ্র-নজরুলাদি পঞ্চকবির মধ্য সঙ্গীত, আধুনিক বাংলা গান ও live chat 888sport-সঙ্গীত ও অধুনা যুবপ্রিয় গজল (উর্দু), হিন্দি ফিল্মি গান ও ব্যান্ড-মিউজিক নামের দলবদ্ধ দেহময় সঙ্গীত এই সবই নগর-সঙ্গীত, যদিও এর মধ্যকার বেশ কিছু যথেষ্ট নাগরিক নয়। এই নগর-সঙ্গীতই বর্তমানে-ভবিষ্যতে দেশের সাঙ্গীতিক কর্মকাণ্ড ও বিবর্তনের কাণ্ডারি হয়ে পড়েছে, এতকাল যে জায়গাটা ছিল প্রবহমান লোকজ গানের দখলে, যার থেকে বিকশিত-নিষ্কাশিত হয়েছে রাগ-ঠাঁট-জাতি-গ্রাম ইত্যাকার অভিজাত ঘটনা।
888sport apps সার্বভৌম রাষ্ট্র হলে রাতারাতি কোনো 888sport appsী বলে জাতি গজায় না। বাঙালির বিকাশকে ভিত্তি করেই এ-রাষ্ট্র। তার জাতীয় ঐতিহাসিক-সাংস্কৃতিক পরিচয় ভুলিয়ে দেবার জন্য নয়। বেশ চাপ গেছে এক সময়ে 888sport appsের সঙ্গীতের ইতিহাস লিখবার জন্য। 888sport appsের কিংবা 888sport appsী সঙ্গীত বলে কিছু নেই, আগামী এক শতকেও হবে আশঙ্কা করা চলে না। দুইশ বছরের পুরনো বিশ্বশক্তি, বহুকাল যার সাম্রাজ্যে সূর্য অস্ত যেত না – সেই দেশেই কোনো ব্রিটিশ মিউজিক কিংবা সেই রকম করে ফ্রেঞ্চ মিউজিক কিছু দাঁড়াল না। সকলেই জার্মানি-দ্বারা প্রবল-প্রভাবিত ইউরোপীয় সঙ্গীত করে। এমনকি শক্তিধর আমেরিকায়ও তাই। ইউরোপীয় সঙ্গীত নতুন প্রসার-ভূমি পেয়েছে চীনে, জাপানে, কোরিয়ায়। দক্ষিণ আমেরিকার পুরোটা জুড়ে এই একই সঙ্গীতের দাপট। রাষ্ট্রে রাষ্ট্রে পৃথক সঙ্গীত হয় না। 888sport apps হিন্দুস্তানি সঙ্গীতের ভাগে পড়েছে ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক সূত্রে।
হিন্দুস্তানি সঙ্গীতের এখনো মূল নির্ভর রাগ-পদ্ধতি। সেই পদ্ধতির শ্রেষ্ঠ ফসল ধ্রুপদ (প্রায় অবলুপ্ত কিন্তু শিক্ষা ও চর্চার ক্ষেত্রে এখনো অপরিহার্য) ও প্রচুর প্রাণশক্তির অধিকারী খেয়ালশৈলী। এই দুই শৈলী কিন্তু মূলে এক, এক তার দর্শনে, যার লক্ষ্য কি-না রাগের উন্মোচন ও প্রতিষ্ঠা। রাগ, কঠিন ব্যাখ্যায় না গিয়ে, মানে সুর-রং-টোনাল হিউ। এই দুুুই শৈলীই সকল প্রকার প্রাদেশিকতা পরিহারী, লোকাল ফ্লেবর-বর্জিত, শৈল্পিকতায় উত্তুঙ্গ সঙ্গীত। আফগানিস্তান থেকে আসাম পর্যন্ত সকল অঞ্চল, সকল দেশ, সকল জাতি ও সাংস্কৃতিক দিগন্ত আপন এই দুই শৈলীর সঙ্গীত। ইউরোপে ডজনাধিক জাতি ও ভাষাসংস্কৃতি থাকলেও তারা সকলেই হয় জর্মন না হয় ইতালীয় অপেরা গায় এবং ব্যালে রুস্ (যদিও আদি উদ্ভব তার ইতালিতে) নাচে। আমরাও তেমনি ধ্রুপদ-খেয়ালের ঐতিহ্যঋদ্ধ সঙ্গীতশৈলী ও তার ব্যবস্থার সাঙ্গীতিক ভিত্তি-নীতি, ভিত্তি-ব্যবস্থাপনে আছি।
বাংলার সঙ্গীত-মহাপুরুষেরা, রবীন্দ্রনাথসহ, প্রত্যেকেই এই ধ্রুপদ-খেয়াল তথা রাগসঙ্গীত পদ্ধতির ফসল। আমাদের পাঁচ কবি-গীতিকার-সঙ্গীতকারের কীর্তিসূত্রে বাঙালির 888sport live chatিত নাগরিক গান এখন, কেবল হিন্দুস্তানি সঙ্গীত-বলয়ে নয়, সমগ্র উপমহাদেশীয় সঙ্গীত-দেশেই এক বিশিষ্ট এলাকা। কিন্তু তার মূল ওই পাঁচশ বছরে জমে ওঠা ধ্রুপদ-খেয়ালের অঞ্চল-নির্বিশেষ সঙ্গীত ও শিক্ষাপদ্ধতি (অ্যাকাডেমিকস ও হাতে-কলমে ক্রিয়াসিদ্ধ সঞ্চালন)। একটা নির্দিষ্ট মানে এই মূল উৎস-সঙ্গীতের চর্চা ও অনুষ্ঠান এবং সমঝদারি পাওয়া না যাওয়া পর্যন্ত বাংলা গানে, বাংলার সঙ্গীতের কোনো সার্থক নবসংযোজন সম্ভব নয়।
চৌদ্দ কোটি লোকের দেশে দেড় খানা সঙ্গীত-কলেজ, দুই খানা বিশ্ববিদ্যালয় সঙ্গীত বিভাগে সঙ্গীতভিন্ন লেখাপড়ার চাপের ভিতর দিয়ে ওই স্বপ্ন দেখা কঠিন। বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজ পর্যায়ে যদি কয়েকশ ছেলেমেয়েরও পরিচয় হয় উৎস-সঙ্গীতের সঙ্গে! তারা প্রায় সকলেই খাতা লিখে ডিগ্রি নিয়ে যায়, কণ্ঠ এবং বাদ্যের বিদ্যা দিয়ে নয়। রাগসঙ্গীত-রূপায়ণে তথা ধ্রুপদ ও খেয়াল গায়নে দক্ষ এবং রুচিমান করে শিক্ষার্থীকে প্রস্তুত করবার কোনোই ব্যবস্থা আপাতত হাস্যকরভাবে অপ্রতুল এই জায়গাগুলোতে নেই।
ধ্রুপদ-খেয়াল তথা রাগসঙ্গীতকে না হয় উপযুক্ত মতোই শতেক শিক্ষার্থী আয়ত্ত করল, কোনো গুপ্তবিদ্যার মতো – তাতেই কি আমরা সুদিনের মুখ দেখতে পাবো? শ্রোতা কোথায়? রসিক শ্রোতা বিনে যতই উঁচুদরের সঙ্গীত হোক অচিরে অপমৃত্যু তার ভাগ্য। শ্রোতা কী ফরমাশ দিলে পাওয়া যাবে? 888sport appsে নানা কারণে, শিক্ষিত লোকেও বই খুব কম পড়ে। পাঠক বাড়ানো যাবে কোন পরিকল্পনায়? রসিক শ্রোতার আকাল ভারতেও, যেখানে সরকার ও শিক্ষিত সচ্ছল মানুষ সঙ্গীতচর্চার চিন্তা ও কর্মে নিরলস লেগে আছে।
ধ্রুপদ না হলেও খেয়াল এদেশে অনধিক জনাদশেক হয়ত সকল বিপদ কাটিয়ে গাইতে পারেন। সেখানে, সে স্তরেও রয়েছে ভাষা-সমস্যা। পশ্চিমে মহারাষ্ট্র, পূর্বে বিহারের বঙ্গ-প্রত্যন্ত পর্যন্ত এক বিশাল হিন্দি বলয়, তাতে অজস্র উপভাষা। সেই সমস্ত ভাষায়, প্রয়োজনে সংস্কৃত, আরবি ও ফারসি শব্দের মিশেল দিয়ে ধ্রুপদ-খেয়ালের বাণী তৈরি হয়েছে রাজবাহাদুর তানসেনদের আগের আমল থেকে। বর্তমানের এদেশীয় তথা বাঙালি গায়ক-গায়িকা তাই বাণী-নিরপেক্ষ খেয়াল গেয়ে থাকে, শুনিয়ে থাকে। তার ওপর ধ্রুপদ-খেয়ালে বারেই বারেই যে সদ্গুরু উল্লিখিত, তার অসদ্ভাবে এই গান মূর্তিমান অপসঙ্গীত হয়ে শত্রু এবং, শ্রোতার ছদ¥াবরণে, কেঠো ফিলিস্টিন তৈরি করে চলেছে। ঘনিয়ে আনছে এই সুকুমারতম কলার সমূহ বিনাশ।
ছায়ানটে, মিউজিক কলেজে, 888sport app ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গীত-বিভাগে সম্ভবত বাংলা গানের ক্ষেত্রেও (রবীন্দ্র, নজরুল) খেয়ালে তালিম নেওয়া বাধ্যতামূলক। অনেক দিন ধরেই। এখনো পর্যন্ত আমি দেখিনি-শুনিনি যে বাংলা গানের 888sport live chatী তৈরি করার মতো প্রশস্ত করে রাগশিক্ষা, স্বরসাধনা, বন্দিশ বাছাই কোথাও করা হয়েছে। এইসব জায়গা থেকেও 888sport live chatী বেরোচ্ছে না। বেরোয় না রবীন্দ্র-ভারতী থেকেও। বিশ্বভারতী থেকেও। পিরিয়ড ধরে রুটিন-মাফিক সঙ্গীত-শিক্ষায় হয়ত 888sport live chatী বেরোবার কোনো কথাই নয়। চিরকাল এদেশে, ভারতবর্ষে, বিদেশে ইউরোপে সঙ্গীতবিদ্যার সঞ্চালন সম্ভব হয়ে এসেছে নবিশি তথা অ্যাপ্রেনটিসশিপ-সূত্রে (সদ্গুরুর দুর্ভিক্ষে, গুরু-শিষ্য পরম্পরার কথা না-ই বললাম)। এখনো এদেশের অধিকাংশ মানুষ সঙ্গীত শেখে টিউশনির মাধ্যমে। হয় টিউটরের (শিক্ষকের) বাসাজাতীয় জায়গায়, নাহয় ছাত্রছাত্রীর বাসায়। এই ব্যবস্থায় ছেলেমেয়েরা কী শেখে, কেমনভাবে শেখে? শিক্ষকই বা কী শেখান, কোত্থেকে শেখান। আমার পঞ্চাশ বছরের সঙ্গীত-শিক্ষকতার জীবনে হাজার কয়েক ছেলেমেয়েকে উপদেশ দেবার সুযোগ হয়েছে। শেখাই রবীন্দ্রসঙ্গীত, শিখতে তারা আসেও রবীন্দ্রসঙ্গীত। কিন্তু সঙ্গীত তো শেখাতে পারি না। সঙ্গীত থেকে আলাদা করে রবীন্দ্রই বা কী শেখাই? আমি নিজেই যে একটা-পর্যন্ত খেয়াল ধ্রুপদ জানি না। স্বরস্থান বোধহয় চিনি কোনোমতো, স্বল্প সংখ্যক রাগরাগিণীর সঙ্গেও পরিচয় আছে কিছুমতো। গুরু শৈলজারঞ্জনের ধারায় ছাত্র-ছাত্রীদেরকে স্বরে-মাত্রায় পাকা করতে চেয়ে রবীন্দ্র-বাঁধা বৃত্তের বাইরে যেতে ওদেরকে খাটাতে চাই। ওরা নেয় না। আমিও বেশি দূর যেতে পারি না আমারই সীমাবদ্ধতার কারণে। জানতে ইচ্ছা করে আবদুল আহাদ কী করতেন, কলিম শরাফি, সন্জীদা ওঁরা কী করেন, কী-ই বা করেন পরের শিক্ষকেরা – বন্যা-মৃদুল-সাদীরা? কিন্তু এইমতো যত দুর্ভাবনা কি একটু কষ্টকল্পিত হয়ে যাচ্ছে না? যাচ্ছে না হয়ে ঘোড়ার আগে গাড়ি জোতা? কে আমাকে বলেছে এই দেশটা খুব করে সঙ্গীতকে চাইছে, অহিদুল কিছু উপায় ভাবো তো? কেউ বলেনি। এদেশের এ-যাবৎকালের পরিচালকেরা কি পাকিস্তানে কি 888sport appsে, কি ব্রিটিশ ভারতেই স্কুলে সঙ্গীত পাঠ করেনি। 888sport app কেন কলকাতার মতো পৃথিবীর সর্ব-বাঙালির রাজধানীতেও শুধুই সঙ্গীতের জন্য কোনো কনসার্ট-হল নেই, যেখানে টিকেট কেটে ঢোকামাত্র আন্তর্জাতিক মানের একটি অন্তত সঙ্গীতানুষ্ঠান শুনতে পাওয়া যাবে।
সঙ্গীত এদেশে অপ্রাতিষ্ঠানিক ব্যাপার ছিল বরাবর। গায়ক-বাদক সমাজে খুব গৃহীত মানুষ ছিলেন না। দক্ষিণ ভারতের মতো বরেণ্য হওয়ার কথাই কোনোকালে ছিল না। ব্রিটিশ আমলারম্ভে, বাঙালির রেনেসাঁসের কালে, সর্ব-ভারত বাঙালিকে শিক্ষায়-সংস্কৃতিতে মাথায় করে রাখবার কালেও বাঙালির ঘরে সঙ্গীতচর্চাকে বাঁকা চোখে দেখা হয়েছে। বাড়ির মেয়েটি এক-আধটু হয়ত রবিবাবুর গান গাইতে পারে। পাত্রী হিসেবে দাম বাড়তে পারে তাতে। কিন্তু লেখাপড়া ছেড়ে গান? বাড়ির ছেলে কেবলই গায়ক হতে চায়? সর্বনাশ! সে-ও আবার দরবারি গানের?
এখনো আমরা বাঙালিরা ভালো করে জানি না গান কেন ব্যক্তির জন্য, সমাজের জন্য, প্রয়োজন। কেবলি কি এটা একটা বিনোদন-বিদ্যা, বিপণনে যার সার্থকতা? সমাজে গান না থাকলে কি সত্যি কিছু ক্ষতি হতে পারে? ব্যক্তির যদি গানকে পাবার ব্যবস্থা না থাকে, তবে ব্যক্তির কি খুব অসুবিধা হবে? শুনেছি জৌনপুরী মওলানা নামে ভয়ঙ্করভাবে বাঙালি এক ভদ্রলোক পৈতৃক পীর-ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন দক্ষিণ বঙ্গে। পীর শব্দটা আরবিতে নেই। সে ভাষায় ‘প’ নেই বলে। তাই ভাবি ওয়াহাবি জগদ্দলকে ঠেলে সরাবার কোনো সৈনিক তিনি হতেই পারেন। পটুয়াখালির গলাচিপা অঞ্চলে বাস করে জানলাম উপকূলীয় অঞ্চলের বিরাট এলাকা জুড়ে, তাঁর আদেশে, সঙ্গীত নিষিদ্ধ। তিন মাস ছিলাম, একটা সাঙ্গীতিক ধ্বনি কোথাও কক্ষনো শুনিনি। এই রকমটা সেদেশের মানুষের 888sport app download for androidকালের সবটা জুড়েই ছিল। তালেবানি আফগানিস্তানে সঙ্গীত ছিল না। কী রকম অসুবিধা হয়েছিল তাতে আফগান জাতির? আমাদের তালেবানপন্থীর 888sport free bet কম নয়। সঙ্গীতবিরূপ লোকের 888sport free bet কিন্তু জামায়াতি তালেবানিতেই সীমাবদ্ধ নয়। ইমানদার মুসলমান সঙ্গীতের সংশ্রব সচরাচর এড়িয়েই চলেন। কোনোদিন সমগ্র 888sport appsে সঙ্গীত নিষিদ্ধ হয়ে গেলে কী কী এবং কত রকমের ক্ষতি হতে পারে? এ-বিষয়টি শিক্ষিত বাঙালিকে বুঝতে হবে। অবাঙালি আদিবাসী উপজাতীয়দের জন্য ভাবি না। সঙ্গীত ওদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। বাঙালিরও তা-ই ছিল, চৈতন্য মহাপ্রভুর সামাজিক বিপ্লবের পরে তো বাঙালির সমাজ ভাসছিল গানবন্যায়। কিন্তু সে যে কত আগের কথা। রবীন্দ্রনাথও পারলেন না সঙ্গীতকে বাঙালির জীবনের অংশ করতে।
দূরপাল্লার বাসে উঠবার সময় ড্রাইভারকে বলি, ভাই, আমার বড় অসুখ, ক্যাসেটের সাউন্ডটা একটু কম রাখবেন। একবার কিছু কলেজ-ছাত্র শুনে ফেলল তা। স্যার, আপনি সঙ্গীত ভালোবাসেন না? আপনি তো খুন করতে পারেন। বলে তারা আমায় প্রায় খুন করতে আসে। ঈশ্বর ওদের ক্ষমা করে দিও। শুধু যেন নিধুবাবুই জানতেন গান নামের স্বর্গসুধা যত্রতত্র পান করতে নেই। বোধশক্তি হারায় তাতে। বাড়ে তাতে মাদকাসক্তি। বাসে ধূমপান যেমন নিষিদ্ধ (জানে না তার ড্রাইভার পর্যন্ত) তেমনি নিষিদ্ধ উচ্চ-ডেসিবেল ক্যাকোফনি। শুধু কর্ণপীড়াই জন্মায় না তাতে, মেধা কমে, আয়ুক্ষয় হয় এবং সংস্কৃতির ধ্বংস হয় অপরিহার্য।


Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.