কেবলই দৃশ্যের জন্ম হয়

ঘরের উত্তর দিকের রাস্তামুখী দরজাটা খুলে তিনি অনুভব করেন হেমন্ত এসে গিয়েছে। বাতাসে হিম ভাব, গাছের পাতায় শিশিরের মৃদু শব্দও শোনা যাচ্ছে। চারটে কুকুর কুণ্ডলী পাকিয়ে শান্তভাবে পৌরসভার ল্যাম্পপোস্টের নিচে শুয়ে আছে। ওদের মধ্যে একটা হলদে কুকুরের শরীরে কোনো লোম নেই, সম্ভবত বার্ধক্য। ভোর হতে আরো দু-ঘণ্টার বেশি সময় বাকি। আজকাল প্রায়ই রাত তিনটা কি সাড়ে তিনটায় ঘুম ভেঙে যায়। বারবার বাথরুমে আসা-যাওয়া এবং বিছানায় এপাশ-ওপাশ করে দু-চোখের পাতা আর এক হয় না। মনের অস্থিরতা ও উদ্বেগ খানিক সময়ের মধ্যে কণ্টকে পরিণত হয়ে শরীরের মাংসপেশির ভেতর, এমনকি হৃৎপিণ্ডের কাছে তীক্ষè হুল ফোটাতে শুরু করে। তাই আজ কদিন হলো ভাব বুঝে তিনি বিছানা ছেড়ে অপেক্ষাকৃত সহনীয় উপায়ে রাতের অবশিষ্ট সময়টা পার করার পথ খোঁজেন। লোকে বলে এই সময়ের – মানে শেষরাত্রির প্রার্থনা নাকি অতি উত্তম। কিন্তু তিনি তো কখনোই সুগভীর প্রার্থনাকারীর অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না। ফলে প্রথম কয়েক রাত অসময়ে ঘুম ভাঙায় জায়নামাজে বসে কিংবা তসবিহ হাতে পায়চারি করে সময় পার করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন। কোনো কোনো খণ্ডিত রাতে লঘু 888sport alternative link কিংবা 888sport slot gameকাহিনি জাতীয় বই পড়ার চেষ্টা করেছেন, সেখানেও মনোযোগ আসে না। কী পড়ছেন মাথায় ঢোকে না, সব ঝাপসা লাগে, শিরদাঁড়ার কাছে অদৃশ্য সেই হুল ফোটানো শুরু হয়ে যায়। ঘুমঘুম চোখে মোবাইলে ফেসবুক-ইউটিউব সবই বিরক্তিকর বোধ হয়, মাথার ভেতর একটা শূন্যতা ক্রমেই বৃহৎ জায়গা দখল করতে থাকে –  মগজ কি তবে এই বয়সেই এতখানি নিষ্ক্রিয় হয়ে গেল! তাই আজ ছয়-সাতদিন হলো তিনি অসময়ে ঘুমভাঙা ৬৪ বছরের পুরনো দেহটাকে রাতের শেষ প্রহরে উত্তরের এই বারান্দায় এনে দাঁড় করান।

কাছাকাছি কোথাও একটা পেঁচা ডাকল। এই শহরে এখনো কিছু পেঁচা আছে, মন্দ নয় ব্যাপারটা। এই পাখি কি পোষ মানে? কোথাও পাওয়া গেলে একটা পেঁচা পুষতেন তিনি। এই পরিকল্পনাটি ভাবতে ভাবতে ইমতিয়াজ উপলব্ধি করেন – মানুষের মনে কখন যে কী-সব আজগুবি বোধের উদয় হয়! আরো একবার ছালওঠা কুকুরটার দিকে তাকিয়ে মাথার ভেতরকার ভোঁতা অনুভূতির মাঝে হঠাৎ খানিক বেপরোয়া জল ছলকে ওঠে। বিছানা ছাড়ার আগে তাঁর সামনে বিস্মৃতপ্রায় ডাক্তার কাবেদুল ইসলামের চেহারা ভেসে উঠেছিল। তবে তিনি কি স্বপ্নের ভেতর কাবেদুল ইসলামকে দেখলেন খানিক আগের ঘুমে? নাকি জেগে উঠে আলো-আঁধারি ঘরে মনের ভেতর খেলে গিয়েছে তার ছায়া? অথবা বাস্তবেই এক ঝলক এসেছিল ডাক্তারের অশরীরী আত্মা, বিচরণ করে গিয়েছে তাঁর শোয়ার ঘরে, ড্রইংরুমে, বারান্দায় – হয়তো বাড়ির ছাদেও।

প্রায় ছ-ফুট লম্বা ডাক্তার কাবেদুল দুর্দান্ত সুদর্শন পুরুষ ছিলেন। ১৯৮৮ সালে সরকারি কলেজে জয়েন করার অল্প কদিন পরেই সান্ধ্যকালীন ব্যাডমিন্টন মাঠে এই ডাক্তারের সঙ্গে পরিচয় ইমতিয়াজ আহমেদের। ডাক্তার তাঁর চেয়ে বয়সে পাঁচ-ছয় বছরের বড় হলেও মাত্র দু-তিন মাসে গভীর বন্ধুত্ব জমে ওঠে দুজনের। কিন্তু গত ১০ বছরের বেশি সময় হলো কাবেদুলের পরিবারের কারো সঙ্গে আর কোনো যোগাযোগ নেই। কেবল কার কাছে যেন ইমতিয়াজ জেনেছিলেন, ডাক্তারের স্ত্রী অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে ছেলের কাছে থাকেন। তিনি ডাক্তারকে প্রায় ভুলেই গিয়েছিলেন। এসব বৃত্তান্ত ভুলে যাওয়ায় একপ্রকার ভালোই হয়েছে বলা যায়। কিন্তু এতকাল পরে লোকটা কেন তাঁর মনের দৃশ্যপটে এসে হানা দিলেন?

এমনিতেই সুদর্শন, উপরন্তু ডাক্তারকে দেখে ভীষণ চৌকস ও সপ্রতিভ বলে মনে হতো। আমরা প্রায়ই তাঁকে বলতাম, ‘ডাক্তার ভাই, আপনি কষ্ট করে এমবিবিএস না পড়ে সিনেমায় নামলে ভালো করতেন। 888sport appর নায়ক দূরে থাক – আপনার স্মার্টনেস বোম্বের হিরোদেরও হার মানাতো।’ অথচ বিরল-দর্শন মানুষটার মস্তিষ্কের ভেতর যে দুরাত্মা প্রেতের হানছানি প্রতিনিয়ত তরঙ্গ তুলত তা এতটা গভীরভাবে আমরা কেউ বুঝতে পারিনি। আমরা কাবেদুলের স্ত্রীর কাছে পরে ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা পেরেছিলাম। মনোরোগ বিশেষজ্ঞ বলেছিলেন, ‘উনার অবস্থা কিন্তু ভীষণ অ্যালার্মিং; একটা মুহূর্ত চোখের আড়াল করা যাবে না, ওষুধ যেন মিস না হয়, কখনো একা থাকতে দেবেন না’ ইত্যাদি। সুরাইয়া ভাবি এমনিতেই খুব সতর্ক, এরপর থেকে তিনি ঘর ছাড়াও হাসপাতালে, চেম্বারে পর্যন্ত তাঁকে সঙ্গ দেওয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করেছেন। রাতে নিজে তো সাবধান থাকতেনই পাশাপাশি কৌশলে আরো কিছু গোয়েন্দাগিরির পদক্ষেপ নেন। যেমন, তিনি রাতে বেডরুমের দরজার ছিটকিনি খোলা রাখা শুরু করলেন। পুত্র এবং কাজের মেয়েটাকে বলে রাখলেন ওরা রাতে জাগলে আলগোছে দরজা ফাঁক করে একবার যেন উঁকি দিয়ে দেখে যায় মতিচ্ছন্ন মানুষটাকে। আর কোনো কিছু সন্দেহ হলে সুরাইয়াকে যেন সন্তর্পণে ডেকে তোলে। 

বৃহস্পতিবার শেষরাতে সুরাইয়া আবছা আলোয় দেখলেন লোকটা যেন ঘরের ভেতর পায়চারি করছে। তিনি সংযত কণ্ঠে স্বামীকে বললেন, ‘এখন ক-টা বাজে – তুমি ঘুমাচ্ছো না?’

‘প্রায় ভোর, এখনই আজান দেবে। অপেক্ষায় আছি, আমি অজু করে নামাজ পড়ব, তুমি ঘুমোও।’

স্বামীর কথা শুনে সুরাইয়া খানিকটা আশ্বস্ত হন।

যাক, সৃষ্টিকর্তার ওপর আস্থা থাকলে সমস্যাটা দ্রুতই হয়তো কেটে যাবে, লোকে বলে নিরীশ্বরবাদীদের মধ্যে নাকি আত্মহত্যার হার বেশি, ভিয়েনা-ফেরত মনোরোগ বিশেষজ্ঞও এমন ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। ডাক্তারপত্নী ভাবেন, ও একটু ভালো হলে আগামী বছর দুজন মিলে হজে যাওয়া যাবে। বিশুদ্ধ উপাসনায় মন কেন্দ্রীভূত হয়। মসজিদ থেকে ‘আসসালাতু খাইরুম মিনান নাউম …’ আওয়াজ ভেসে এলে কাবেদুল অজুর জন্য বাথরুমে ঢুকছেন দেখে খানিকটা নির্ভার সুরাইয়া আবার ঘুমে তলিয়ে যান। হয়তো ১৫ কি ২০ মিনিট পরে আচমকা চোখ মেলে তার বুক ধড়ফড় শুরু হয়। কই মানুষটা? নামাজ শেষ করে তো পাশে শোয়নি।   

পরে সুরাইয়া ভাবির কাছে আমরা এ-ঘটনার বিস্তারিত বৃত্তান্ত অবগত হই। ডাক্তার বাথরুম থেকে বের হয়ে মুহূর্তের মধ্যে তেতলার চিলেকোঠায় চলে গিয়েছিলেন – অজু, নামাজ এসবই মিথ্যা ভান ছিল তাঁর। সুরাইয়া যখন জাগেন তখনো ভোরের আলো পুরোপুরি ফোটেনি। চারপাশে পাখিরা যেন কোন্দল বাঁধিয়েছে। তিনি এঘর-ওঘর, বারান্দা খুঁজে দৌড়ে ছাদে চলে যান। মানুষটা মুহূর্তে কোথায় হাওয়া হয়ে গেল! এই বয়সের একটা লোকের এমন ছেলেমানুষি আর কাঁহাতক সহ্য করা যায়! এরকম অবস্থার মধ্যে না পড়লে সুরাইয়া কখনো জানতে পারতেন না একটা মানুষকে তাঁর জীবন রক্ষার জন্য দিনের পর দিন প্রতিটি মিনিট চোখে চোখে রাখা কতটা দুঃসাধ্য একটি কাজ। পাহারাদারের দায়িত্ব পালন করে এই কয়েকটা মাসে তিনি নিজেও রোগী হয়ে উঠেছেন, রাতে ঘুমাতে পারেন না। দিনের বেলা হঠাৎ হঠাৎ দুম করে ব্লাডপ্রেসারটা বেড়ে যায়, মাথার ওজন দ্বিগুণ ঠেকে, দু-চোখ ঝাপসা হয়ে আসে। উদ্বিগ্ন সুরাইয়া টের পান এই মুহূর্তে হৃৎপিণ্ড ভীষণ দাপাদাপি শুরু করেছে। নিশ্চয়ই রক্তচাপও তুঙ্গে উঠেছে। উঠুক, মাথায় রক্ত চড়ুক – হৃৎপিণ্ড ছিন্নভিন্ন হোক – তার আগে অন্তত মানুষটার একটা সন্ধান পাওয়া যাক। ছাদ থেকে লাফ দিলে তো আওয়াজ শোনা যেত। তবু তিনি দ্রুত পদক্ষেপে নিচে তাকিয়ে চারপাশটা একবার দেখে নেন, কানও পাতেন গভীরভাবে – কোনো আর্তনাদ বা হট্টগোলের ইঙ্গিত মেলে কি না। না, তেমন কিছুর আভাস মিলছে না। এবার তিনি দ্রুত চিলেকোঠার দিকে পা বাড়ান। টিনে ছাওয়া ঘরটার ঘুণে খাওয়া কাঠের দরজা ঠেলে দৃষ্টির সামনে যা ভেসে উঠল এমন শঙ্কা বেশ আগে থেকেই ছিল তাঁর দুঃস্বপ্নে – বুকের কন্দরে, মাথার শিরায়। পায়ের নিচে নিমকাঠের টুলটা একপাশে কাত হয়ে পড়ে আছে। শক্ত তারে গলা পেঁচানোর সময় এটাতেই রাখা হয়েছিল তাঁর দুটো পা। হতচকিত সুরাইয়া স্বামীর ঝুলন্ত শরীরের ঊরু বরাবর দু-বাহুতে জাপটে ধরে সর্বশক্তি দিয়ে উঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করেন। তখন থরথর করে কাঁপতে থাকে সুরাইয়ার নিজের শরীর, হাঁপানির মতো একটা শ্বাসকষ্টও বোধ হয়। আর্তচিৎকার করার চেষ্টা করলে কণ্ঠ দিয়ে কেবল গোঙানির মতো অর্থহীন অস্ফুট আওয়াজ বের হয়। বুকের মাঝখানটা জমাট শীতল পাথর হয়ে আসছে। দুবার গভীর শ্বাস নিয়ে সর্বশক্তি দিয়ে চিৎকার করে ওঠেন – ‘রাজীব – রাজীব – আয় ছুটে আয় উপরে, তোর বাবা -’। এবার আর নিজেকে সামলানো সম্ভব হয় না, ২৩ বছরের জীবনসঙ্গীর নিথর শরীরটাকে বুকে চেপে তীক্ষ্ন ক্রন্দনে ফেটে পড়েন সুরাইয়া।

আশ্চর্য – রাজীব তাহলে কি জেগেই ছিল – ও তো বেলা আটটা-নয়টার আগে ঘুম থেকে ওঠে না, মিনিটখানেক না-পেরোতেই সে তৃতীয়তলার ঘর থেকে হাজির হয় চিলেকোঠায়। বাবাকে নিয়ে সেও সারাক্ষণ শঙ্কিত ও সতর্ক থাকে বলে বিদ্যুৎগতিতে এই আগমন।

নতুন জিআই তার দিয়ে গলাটা পেঁচানো। কোন ফাঁকে তার কিনে লোকটা এখানে রেখে গিয়েছিল, নিখুঁত ছক করে ফেলেছিল বিদায়ের চূড়ান্ত পরিকল্পনা। সুরাইয়া যদি ঘুণাক্ষরেও টের পেত কাণ্ডটা এই চিলেকোঠায়ও ঘটতে পারে তাহলে চিলেকোঠার এই পরিত্যক্ত ঘরটাতে শক্ত একটা তালা লাগিয়ে চাবিগুলি লুকিয়ে ফেলতেন। কিন্তু মানুষ বোধহয় নিয়তি টপকাতে পারে না! গলার কাছটা দিয়ে রক্ত ঝরছে। অপলক তাকিয়ে আছে ডাক্তার কাবেদুলের রক্তিম দুটি চোখ। এরই মধ্যে সাত-আটটা কালোমাছি ভন্ভন্ করতে শুরু করেছে, ওরা এত দ্রুতই টের পেয়ে যায় সবকিছু! পিতার নিথর শরীরটাকে মেঝেতে রেখে হাঁপিয়ে ওঠা সুঠামদেহ রাজীব বলে, ‘মা – আমরা সবাই মিলেও রক্ষা করতে পারলাম না বাবাকে। তুমি কেঁদো না, এটাই ছিল তাঁর ভাগ্যে।’ পুত্রের সান্ত্বনাবাক্যে সুরাইয়া আরো একবার আর্তচিৎকার করে ওঠেন। 

ইমতিয়াজ আহমেদের শীত শীত লাগে। তবু বারান্দা ছেড়ে ঘরে ঢুকতে মন চায় না। রাস্তার ধারের পুরনো নিমগাছটার দিকে তাকিয়ে হিসাব করে দেখেন, ওই ঘটনার পর ২৫ বছর পেরিয়ে গেছে। ডাক্তার এভাবে আত্মঘাতী হওয়ায় ইমতিয়াজের মনেও তখন বেশ খানিকটা প্রভাব পড়েছিল। যে-কোনো সময় যে-কোনো মানুষকে কি ওই কালো হাতছানি রক্তকণিকার ভেতর শয়তানের নাচন জাগিয়ে দিতে পারে! জগৎকে নিরর্থক প্রতিপন্ন করে তার হাতে তুলে দিতে পারে বিষের শিশি, স্লিপিং পিল, ফাঁসির দড়ি – কিংবা আঙুল উঁচিয়ে দেখাতে পারে আত্মবিনাশের আরো ১০১টা পথ!  

ল্যাম্পপোস্টের নিচে ছালওঠা কুকুরটাকে ঘিরে ধরেছে একঝাঁক কালোমাছি। শীতল বাতাসে শরীরটা শিরশির করে ওঠে ইমতিয়াজ আহমেদের। এতদিন পরে আত্মঘাতী ডাক্তার এভাবে হাজির হওয়ার মানে কি? মিনারা যখন বেঁচেছিল, ওর সঙ্গে দুটো কথা বলে হালকা হওয়া যেত। এমনই এক হেমন্তে সেও চলে গিয়েছে তিন বছর হলো। একমাত্র মেয়ে আজ এখানে, কাল ওখানে থেকে আর্মি অফিসারের সংসার করছে। ওদের কাছে গিয়ে দু-তিনদিনের বেশি থাকতে মন চায়নি কোনোদিন। মিনারার মৃত্যুর পর অনেকেই বলেছিল, ‘একা কীভাবে জীবন কাটাবেন? একজন সঙ্গী আনুন – ৩৫-৪০ বছরের বিধবা মেয়ে আছে অনেক, আপনি রাজি থাকলে সন্ধান দিতে পারি।’

কিন্তু ইমতিয়াজের মন সায় দেয়নি। এই বয়সে অন্য একটা উটকো মানুষের সঙ্গে বেডরুম শেয়ার করা তার পক্ষে সম্ভব নয়। কিন্তু এখন বুঝতে পারছেন যতই দিন যাচ্ছে নিঃসঙ্গতার যন্ত্রণা ততই ধারালো হচ্ছে। তিনি মানুষের সঙ্গে মিশতে চান না বা পারেন না বলে বন্ধু-স্বজনও তাকে এড়িয়ে চলে। কিংবা বলা যায়, এখন সেই অর্থে তার আর কোনো বন্ধু-স্বজন অবশিষ্ট নেই। বাতাসের স্বাভাবিক ঝিরঝিরে গতি হঠাৎ খানিক দমকা হাওয়ায় রূপ নেয়। তিন-চার মিনিটের মধ্যে আবার স্বাভাবিকও হয়ে যায়। কিন্তু এই দমকা বাতাসটা মিলিয়ে যাওয়ার পর ইমতিয়াজের নাকে কী এক সৌরভ আসে। গন্ধটা খুব অপরিচিত, আর কিছুর সঙ্গে মেলানো যায় না। না ফুল, না আতর, না পারফিউমের সঙ্গে মেলে। নিস্তব্ধ বারান্দায় কতক্ষণ কাটল – কুড়ি মিনিট, নাকি আধঘণ্টা? এতক্ষণে ইমতিয়াজের সামান্য ভয়-ভয় করে। কাবেদুলের প্রেতাত্মা কি এই গন্ধ বয়ে নিয়ে এলো! তিনি অবশ্য এসবে বিশ্বাস করেন না, যদিও অপঘাতে মৃত্যু সম্পর্কে নানান কথা শুনে আসছেন বহুকাল ধরে – সেই কৈশোরকাল থেকে। তবে কি মৃত্যুদূত এলো তাঁকে নিয়ে যেতে – কিংবা অ্যাটলিস্ট একটা ওয়ার্নিং দিতে? আজরাইলের শরীরে কি সুগন্ধ থাকে? হঠাৎ ইমতিয়াজ খেয়াল করেন, ল্যাম্পপোস্টের নিচের তিনটে কুকুর কোন ফাঁকে চলে গেছে, কেবল ওই ছালওঠাটা পড়ে আছে নিথর হয়ে, নিশ্চয় মরেছে এতক্ষণে – কারণ ওকে জুড়ে ভন্ভনে মাছির 888sport free bet বেড়েছে
দু-তিনগুণ। একটা কাক মরলে তো ঝাঁকে ঝাঁকে কাক এসে জড়ো হয় ঘটনাস্থলে। কিন্তু কোনো কুকুর মরলে সঙ্গীরা কি এভাবে পালিয়ে যায় – কে জানে? কিন্তু এখন তো তা-ই দেখা গেল। দিনভর ওটা এখানে পচেগলে গন্ধ ছড়াবে, নাকি পৌরসভার লোকেরা নিয়ে যাবে?

একমাত্র সন্তান – মেয়েটা বাপের সঙ্গে তেমন যোগাযোগ করে না। ও আর্মি অফিসার স্বামীর সঙ্গে যশোর, রাঙামাটি, ঘাটাইল ইত্যাদি বিভিন্ন জায়গায় থাকে। গত বছর জামাইয়ের ক্যান্টনমেন্টের বাসায় গিয়ে ইমতিয়াজ দুদিনও অবস্থান করেননি। জামাইর কথা বাদ দেওয়া যাক – তার একটি মাত্র সন্তান অথচ বাপের প্রতি অবিশ্বাস্য নিস্পৃহতা ইমতিয়াজ কীভাবে মানতে পারেন! গিয়েছিলেন কিছুদিন থাকবেন বলে, অথচ আটচল্লিশ ঘণ্টা না-পেরোতেই ব্যাগ নিয়ে শুকনো মুখে সে-বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলেন। সম্ভবত মেয়ের মধ্যে একটা ধারণা আছে মায়ের অকালমৃত্যুর জন্য তার বাবার আচরণ ও অবহেলা অনেকটা দায়ী। বাবাকে না বললেও পরোক্ষভাবে ইমতিয়াজের কানে সন্দেহটা পৌঁছে দিয়েছে তাঁর আত্মজা। একথা সত্য তাঁর স্ত্রী হঠাৎ বুকে ব্যথা উঠে মাত্র ৫৫ বছর বয়সে একরাতে হাসপাতালে নেওয়ার আগেই যেভাবে মারা গিয়েছিল তা অনেকটা অস্বাভাবিক, অভাবনীয়, সন্দেহ-উদ্দীপক। কিন্তু বিষয়টা নিয়ে ইমতিয়াজ কখনোই মেয়ের সঙ্গে কোনো আলাপে কিংবা জবাবদিহি করতে যাননি। তাতে হিতে বিপরীত হতে পারে।

 পেছন ফিরে দেখেন, জীবনে কম ঘাতপ্রতিঘাত সহ্য করেননি ইমতিয়াজ। পথচলার শেষপ্রান্তে বজ্রাঘাতের মতো স্ত্রী-বিয়োগের পর ভীষণ অসহায় লাগত। ঘরের প্রতিটি কোণে, আসবাবে, বস্ত্রে-অলংকারে, প্রসাধনীতে, বিছানায় ওর স্পর্শের, সৌরভের-পদচারণার অনুভব ও দৃশ্যগুলি জ¦লজ্¦ল করে ভাসতে থাকে। একবার মনে হয়েছিল, এই বাড়ি ছেড়ে অন্য কোথাও দু-তিন সপ্তাহ কাটিয়ে এলে 888sport sign up bonusটা ম্লান হয়ে আসবে হয়তো। কোথায় যাওয়া যায় এমন পরিকল্পনা যখন করছেন, তখন বাড়ি ছাড়তে মন চায়নি তাঁর। এই 888sport sign up bonus ম্লান হোক সেটা তো তিনি চান না। কাজেই শেষ পর্যন্ত কোথাও আর যাওয়া হয় না। তবে দিনগুলি ক্রমে যেন দীর্ঘতর হতে থাকে, কোনো কিছুতেই স্বস্তি মেলে না। পাহাড়ি কালো পাথরের মতো জীবনের বোঝাটা বয়ে বেড়ানো ক্রমেই যন্ত্রণাদায়ক হয়ে উঠছে, থেকে থেকে কাঁধ ও হৃৎপিণ্ড কিংবা ফুসফুস অথবা সকলে একসঙ্গে সেই দুর্বহতার কথা জানান দেয়। এরই মধ্যে দৃশ্যপটে ডাক্তার কাবেদুল হাজির হয়ে পরিস্থিতি দুঃস্বপ্নের গভীর কালো চাদরে ঢেকে দেওয়ার পাঁয়তারা করছেন।      

না, এভাবে আর বাঁচা সম্ভব নয়। প্রকৃতি যতদিন নিষ্কৃতি না দিচ্ছে ততদিনে মুক্তি মিলবে না। তিনি তো এক উন্মাদ অথবা কাপুরুষ কাবেদুলের পরিণতি বরণ করতে পারেন না। বহু ভেবে ইমতিয়াজ সিদ্ধান্ত নেন, বরং যে-কটা দিন পৃথিবীতে আছেন জীবনটাকে একটু ওলট-পালট করে দেখা যাক। স্বেচ্ছামৃত্যুর চেয়ে সেই অ্যাডভেঞ্চার বরং উৎকৃষ্ট। কী হবে এত সাদামাটা গোবেচারা ভালোমানুষ সেজে থেকে! কিন্তু নতুন কী-ইবা করতে পারেন তিনি এই বয়সে? ওয়াইন খাওয়া ধরবেন? তাতে নাকি শরীর-মন দুটোই চাঙ্গা লাগে। আচ্ছা থাক, আপাতত সিগারেট দিয়ে শুরু করা যাক। আজ থেকেই। দুপুরবেলা কাশেমের মা গরুর মাংসটা ঝালঝাল করে বেশ ভালো রেঁধেছিল। খাওয়া শেষে ইমতিয়াজ বিছানায় খানিক গড়াগড়ি করে কাপড় বদলে বাইরে বেরিয়ে পড়েন।

হেমন্ত বলে হাঁটতে হাঁটতে দুপুর বেলায়ও রোদটা মিষ্টিই লাগে। কড়ই গাছতলায় একটা টং দোকানি-ছোকড়াকে বলেন, ‘একটা সিগারেট দাও তো -’

‘গোল্ডলিফ স্যার?’

ইমতিয়াজ তো জানেন না, কোন ধোঁয়ার কী স্বাদ। তাই কিছু না ভেবে জবাব দেন, ‘দাও।’

আনাড়ি হাতে দুটো দেশলাই কাঠি খরচ করে তাতে অগ্নিসংযোগ করে টান দেন ইমতিয়াজ। ধোঁয়া ভেতরে নিয়ে খুকখুক কেশে ওঠেন। আশপাশের লোক কী মনে করবে ভেবে তিনি খানিক দূরে গিয়ে আবার লম্বা একটা টান দেন। কাশি সামলে বুঝতে পারেন মাথার ভেতর সামান্য চক্কর দিচ্ছে। তবে শেষ পর্যন্ত সফলভাবে গোটা সিগারেটটা শেষ করতে পেরে নিজেকে বিজয়ী বলেই মনে হয়। 

মঙ্গলবার রাতের খাবার খেয়ে দরজাটা বাইরে থেকে লক করে বেরিয়ে পড়লেন ইমতিয়াজ। তিন-চারদিনে ধূমপানটা বেশ মানিয়ে গিয়েছে। তবে গোল্ডলিফ নয়, বেনসন ব্র্যান্ড তার সহ্য হয়েছে। আজ খানিক পরেই একটা সিগারেটে কষে টান দেবেন এই ভেবে মনটা ফুরফুরে লাগছে। স্কুলে থাকতে সিনেমা হলের অন্ধকারে বন্ধুদের সঙ্গে নিছক কৌতূহলবশত
দু-একদিন সিগারেট টেনেছেন। সেটার ইতিও ঘটেছিল স্কুলজীবনেই। বিশ^বিদ্যালয় হলে শখের বশে একটু-আধটু ওয়াইনও ট্রাই করেছেন। তবে পেছন দিকে তাকালে নিজের বড় কোনো পাপ বা স্খলন দেখতে পান না ইমতিয়াজ। এক অর্থে নিতান্ত নিরীহ দিন-যাপন করেছেন। অথচ এই বয়সে এসে জীবন কেবলই ভারী হয়ে উঠছে, প্রকৃতির এক কেমন বিচার? তাই বলে কাবেদুলের মতো আত্মঘাতী তিনি হতে পারবেন না। তাঁর মতো বিকৃতি বা দুঃসাহস কোনোটাই ইমতিয়াজের নেই। কিন্তু অবশিষ্ট জীবন তাঁর জন্য ফুলের ডালা সাজিয়ে বসে নেই। কেবল আছে বার্ধক্য, জরা, ব্যাধি – অবশেষে শয্যাগত হয়ে পচেগলে স্বজনহীন মৃত্যু! ত্রস্ত বাতাসের ভেতর শ^াস নিয়ে সুখ নেই আর। এভাবে আর কত দিন? সময় জড় পদার্থের মতো স্থির হয়ে আসে কোনো কোনো প্রহরে। অথচ শরীরের ভেতর রক্তকণিকায়, স্নায়ুতে, নিউক্লিয়াসে এখনো জীবন প্রবহমান। এভাবে চলমান প্রাণ ও থমকে  যাওয়া সময়ের একটি দ্বান্দ্বিক সম্পর্ক ইমতিয়াজের ভেতর প্রতিনিয়ত বিষ উৎপন্ন করে চলে।  

দোকানি-ছোকড়াকে বললেন, ‘এক প্যাকেট দাও। সঙ্গে একটা দিয়াশলাই।’

খানিকটা পথ এগিয়ে অনেকটা নির্জনতায় ইমতিয়াজ একটা শলাকায় অগ্নিসংযোগ করে দুবার টান দিয়ে কেমন সুখ-সুখ বোধ করেন। আগে জানলে এভাবে জীবনের ভার বাড়তে দিতেন না, স্ত্রীর প্রস্থানের পরপরই তিনি এই লঘু ও বেপরোয়া পথ বেছে নিতেন। জীবনের যে-কোনো বিষয় খুব সিরিয়াসলি নিলে, অনেক বেশি ভাবিত হলে শেষ পর্যন্ত জীবনটাই অর্থহীন কিংবা বিষময় হয়ে পড়ে।

পরের রাতে তিনি অপেক্ষাকৃত গুরুতর একটি অভিযানে নামেন এবং সফলও হন। বন্ধুদের কাছে শুনেছিলেন এই শহরের একমাত্র শপিংমলের কোনায় কেরু কোম্পানির ওয়াইন বিক্রি হয়। দর্শনার কেরু ইদানীং ভালো পণ্য তৈরি করছে, বিদেশেও পাঠাচ্ছে। সরকার এ-বছর মদের ওপর ট্যাক্স কমানোয় দাম কমেছে। ৯৮০ টাকায় লোকাল হুইস্কির ৭৫০ মিলিলিটারের একটা বোতল কিনে ঘরে ফেরেন। আশ্চর্যজনকভাবে কোল্ড ড্রিংকসের সঙ্গে মিলিয়ে পান করে রীতিমতো চাঙ্গা বোধ করলেন। দ্বিতীয় খেলায় এটি তাঁর একতরফা বিজয়।

ইমতিয়াজ রীতিমতো উল্লসিত, আয়নায় নিজের চেহারা দেখে আশ্বস্ত হন। মুখের বলিরেখা, আর দুঃখী-দুঃখী ভাব অনেকেটা কেটে গেছে। ইস্, আবার যদি ২৭-২৮ বছরে ফেরত যাওয়া যেত!

তৃতীয় অ্যাডভেঞ্চারের জন্য তিনি শুক্রবার নির্ধারণ করে রেখেছিলেন। তাঁর জীবনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেছে সপ্তাহের এই দিনে। একসময় ওই নিষিদ্ধ পল্লিটা ছিল শহরের মাঝখানে বাজারের ভেতর। বছর সাত-আট আগে সেখান থেকে ওদের সরিয়ে দেওয়া হয় দূরবর্তী একটি অপেক্ষাকৃত নির্জন মহল্লায়। সেখানে কতক বহুতল ভবনে নতুন করে আরো জাঁকজমকভাবে চালু হয় এই বিনোদন-পল্লি। পাশেই একটা লেক থাকায় ওই পল্লির শ্রুতিমধুর নামকরণও হয়ে যায় – ‘লেকের পাড়’। ইমতিয়াজ লোকের মুখে ওখানকার গল্প শুনেছেন। পয়সা বেশি দিলে অপরূপা সুন্দরী, স্মার্ট মেয়েও নাকি ওখানে পাওয়া যায়। তবে ওর ধারেকাছে যাওয়ার কথা ঘুণাক্ষরেও মনে আসেনি কখনো। কিন্তু এখন তো তিনি নিজের ভেতর থেকে এক নতুন ইমতিয়াজকে আবিষ্কারের নেশায় মেতেছেন! এই দু-তিন সপ্তাহে তাঁর শরীর-মন দুটোই আশ্চর্যজনক রকম প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে। এখন আর পেছন ফিরে তাকিয়ে ফালতু ইমোশনে চলে জীবনটাকে ক্লিশে হতে দেবেন না।  

ঘর থেকে বেরোনোর আগে মুখে একটা মাস্ক পরে নিলেন। চোখে সানগ্লাস, মাথায় ক্যাপ; আর একটা শপিং ব্যাগের ভেতর পেঁচিয়ে নিলেন অবশিষ্ট হুইস্কিটুকু। ওইসব জায়গায় একটু অ্যালকোহল না হলে ঠিক জমে না। রাস্তায় গিয়ে একটা খালি রিকশায় চড়ে বললেন, ‘লেকের পাড়। একেবারে সোজা ভেতরে চলে যাবে।’ রিকশা থেকে নেমে খানিকটা সাবধানী চোখে পরিবেশটা একটু বুঝে নেওয়ার চেষ্টা করেন। দু-একটি চেনা মুখ নজরে এলেও তারা কেউ ভ্রুক্ষেপ করে না দেখে ইমতিয়াজ নিশ্চিন্ত হন। যাক, তাঁকে কেউ চিনতে পারেনি। সারাজীবন মাস্টারি করেছেন, চিনতে পারলে লোকে ছি ছি করবে।

আলোর নিচে দাঁড়ানো মেয়েগুলির বয়স ১৯-২৫-এর মধ্যে। তিনি কিছুক্ষণ পরিবেশটা বুঝে নেওয়ার চেষ্টা করেন। না, ভয় বা লজ্জার কিছু নেই। তাঁকে তো আর কেউ চিনতেই পারছে না।

কাছেই সুপারি গাছে হেলান দিয়ে সিগারেট টানতে থাকা লম্বা মেয়েটি মন্দ নয়, মাথাভর্তি রেশমি চুল, মৃদু বাতাসে উড়ছে। শরীরের পারফিউমটিও নেহাত সস্তা নয়। ইমতিয়াজ বলেন, ‘তোমার কী নাম?’

‘মহুয়া।’

ওর পরিমিত প্রসাধনচর্চিত মুখের দিকে তাকিয়ে ভাবেন, বাহ নামটা তো খুব সুন্দর। এ নিশ্চয়ই নির্জনতায় মহুয়ার মতোই মাদকতাপূর্ণ সৌরভ ছড়াবে। ভাবভঙ্গিতে মনে হচ্ছে শিক্ষিতা মেয়ে। কথা বলে অন্তত অনেকটা সময় পার করা যাবে।

‘আমাকে নেবে তোমার ঘরে?’

‘আমার রেট আড়াই হাজার, কিন্তু আপনি পাঁচশো বেশি দেবেন।’

‘পাঁচশো বেশি কেন?’

‘আপনার বয়স বেশি। এত বুড়া মানুষকে আমি ঘরে নিই না। আপনার ভাগ্য ভালো আজ ফ্রি আছি, আর চেহারায় তো ভালো মানুষই লাগে – আসেন।’

হাতঘড়িতে রাত তিনটে পাঁচ। প্রতি রাতে এরকম সময়, বা এর একটু পরে তাঁর ঘুম ভেঙে যায়। রাতের অবশিষ্ট প্রহর কাটে দুঃসহ নিঃসঙ্গতায়। মহুয়া আর হুইস্কির সঙ্গে অসামান্য কয়েকটি ঘণ্টা পেরিয়ে এখন ইমতিয়াজের দু-চোখে রাজ্যের ঘুম। পয়সা খরচ করে লোকে এমনি এদের কাছে আসে না! মহুয়া তাঁকে ভালোভাবেই গ্রহণ করেছে। বলেছে আবার আসতে। কিন্তু এখানে আর অবশিষ্ট রাত কাটানো কোনোমতেই ঠিক হবে না, তাই তিনি লেকের পাড় ছেড়ে রাস্তায় নেমে এসেছেন। একটা রিকশা পেলে খুব ভালো হতো। পা-দুটো আড়ষ্ট হয়ে আসছে, চোখ খোলা রাখতে কষ্ট হচ্ছে। দ্রুত ঘরে পৌঁছানো খুব দরকার।  বেডরুমের বিছানাটা পেলে বোধ হয় ঘুমিয়ে পড়তে এক মিনিটও সময় লাগত না। নিজের বিছানার কথা ভেবে মিনারার কথা মনে পড়ে যায় ইমতিয়াজের। দূর ছাই – এখন আবার তুমি কেন? যাও! তুমি কেন চলে গেলে মিনারা আমাকে ছেড়ে! এখন আবার নজরদারি করা হচ্ছে! যাও এখান থেকে – দূর হও!

ইমতিয়াজ যখন চোখ মেলেন, তখন গাছের পাতার ফাঁকে আলোকিত আকাশ। হাতঘড়িতে সকাল সাতটা পঁচিশ। বিগত চার ঘণ্টা কুড়ি মিনিটের কোনো কথা বা দৃশ্য তার 888sport sign up bonusতে নেই। কোন ফাঁকে পথ ভুলে স্কুলমাঠে এই পুরনো আমগাছটার নিচে ঘাসের বিছানায় শুয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন তিনি! এত গভীর ঘুম ঘুমোননি বহুদিন ইমতিয়াজ।

তিনি উঠে বসার চেষ্টা যখন করছেন দেখতে পেলেন তাঁকে ঘিরে উৎসুক কতক মানুষ রীতিমতো একটি বৃত্ত তৈরি করে ফেলেছে। তাদের নানান কানাঘুষা তাঁর কানে আসে। কারো দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ হয় না তাঁর। এরা কি কেউ তাঁকে চেনে? কেউ কি তাঁর ছাত্রও ছিল কোনোকালে?

অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ কোনো দিকে না তাকিয়ে বিক্ষিপ্ত পায়ে ঘরের পথ ধরেন।