একটি কাল্পনিক পরীক্ষা করা যাক। ধরা যাক, আমি একটি ঘরে বসে আছি এবং এই ঘরের আলো আস্তে আস্তে কমিয়ে আনা হচ্ছে, তাহলে শেষ পর্যন্ত কী হবে? উত্তরটি খুব সহজ, আমাদের চোখ কতটুকু আলো দেখতে পারে তার একটি হিসাব আছে, যখন ঘরের আলো তার থেকে কমে আসবে তখন আমি আর কিছু দেখতে পারব না। মনে হবে, ঘুটঘুটে অন্ধকারে বসে আছি। আমাদের চোখের সংবেদীক্ষমতা একটুর জন্যে পৃথিবীর সবচেয়ে রহস্যময় একটি বিষয় দেখার সৌভাগ্য থেকে বঞ্চিত হয়েছে! যদি আমাদের চোখের সংবেদীক্ষমতা আর মাত্র দশগুণ বেশি হতো তাহলে আলো কমিয়ে আনা হলে আমরা একটি বিস্ময়কর ব্যাপার দেখতাম! আলো যখন খুব কমে আসত তখন আমরা আলোর এক ধরনের ঝলকানি দেখতে পেতাম! আলো যখন বেশি থাকে তখন সেই ঝলকানিগুলো আলাদা করে দেখা যায় না, যখন কমে আসে তখন দেখা সম্ভব হয়। বোঝানোর জন্যে এর সবচেয়ে সহজ উদাহরণ হচ্ছে পানির ধারা। পানির ট্যাপ খোলা হলে ঝরঝর করে পানি বের হতে থাকে, এখন যদি ট্যাপটি বন্ধ করে পানির ধারা কমিয়ে আনতে থাকি তাহলে হঠাৎ করে আমরা দেখব পানির ধারা বন্ধ হয়ে ফোঁটা ফোঁটা করে পড়তে শুরু করেছে। প্রথমে ফোটাগুলো পড়বে ঘনঘন, যদি ট্যাপ আরও বন্ধ করে দিই তাহলে ফোঁটাগুলো পড়বে আরো ধীরে ধীরে। আরো বন্ধ করে দেওয়া হলে আরো ধীরে। আলোর বেলাতেও সেই একই ব্যাপার। যখন আলো কমে আসবে তখন আমরা দেখব কমসংখ্যক আলোর ঝলকানি, যখন আরো কমিয়ে দেওয়া হবে তখন সেটি হবে আরো কমসংখ্যক আলোর ঝলকানি! একটি জিনিস এখানে খেয়াল করতে হবে। পানির ফোঁটার কিন্তু একটি নির্দিষ্ট আকার আছে, বড় পানির ফোঁটা বা ছোট পানির ফোঁটা হয় না। পানির ট্যাপ যখন বন্ধ করে দেওয়া হতে থাকে তখন কিন্তু পানির ফোঁটার আকার কমে যায় না, শুধুমাত্র কমসংখ্যক ফোঁটা পড়তে থাকে। আলোর বেলাতেও তাই, আলোর ঝলকানি একটি নির্দিষ্ট উজ্জ্বলতার, ঘরের আলো যখন কমিয়ে দেওয়া হয় তখন ঝলকানির উজ্জ্বলতা কমে যায় না, একই ঔজ্জ্বল্যের কমসংখ্যক ঝলকানি দেখা যায়।
আমি জানি, কেউ কেউ নিশ্চয়ই আমার এই কথায় সন্দেহপোষণ করছেন, আমাদের চোখ যখন এই বিচিত্র বিষয়টি দেখতে পারবে না তাহলে শুধু শুধু এই বিষয়টি উত্থাপন করে মানুষকে বিভ্রান্ত করার কী যুক্তি রয়েছে? সন্দেহপ্রবণ পাঠকদের আশ্বস্ত করার জন্যে বলা যায় যে, খুব কম আলো দেখার জন্যে বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি আছে – তাদের একটির নাম হচ্ছে ফটো মালটিপ্লায়ার টিউব। মানুষের চোখ যখন কিছুই দেখতে পায় না, এই ফটো মালটিপ্লায়ার টিউব সেখানেও দেখতে পায়। এই ফটো মালটিপ্লায়ার টিউব দিয়ে 888sport apkীরা সন্দেহাতীতভাবে দেখেছেন যে, কম আলো আসলে কমসংখ্যক আলোর ঝলকানি। পানির যে-রকম ফোঁটা আছে আলোরও সে-রকম ফোঁটা আছে, সেই ফোঁটাকে অনেকটা কাকতালীয়ভাবে বলা হয় ফোটন! যখন তীব্র আলো থাকে তখন আলোর এই কণা বা ফোঁটনকে আলাদাভাবে বোঝা যায় না, কিন্তু যখন আলো খুব কমে আসে তখন সেটিকে অস্বীকার করার কোনো উপায়ই নেই।
এবারে আমি সব পাঠককে বিপদের মাঝে ফেলে দিতে পারি। প্রথম পরীক্ষাটি আমাদের কল্পনা করে নিতে হয়েছে, চোখ আরেকটু বেশি সংবেদী হলে আমাদের কল্পনা করতে হতো না – আমরা সত্যি সত্যি দেখতে পেতাম। দ্বিতীয় পরীক্ষাটি আমরা সহজেই করতে পারি – আসলে সবাই কখনো না কখনো করেও ফেলেছি। সেটি হচ্ছে, জানালার কাচ দিয়ে জোছনা দেখা। আমরা সবাই নিশ্চয়ই কখনো না কখনো রাত্রিবেলা ঘুমানোর সময় ঘরের আলো নিভিয়ে আবিষ্কার করেছি বাইরে কী সুন্দর জোছনা! শুধু যে জোছনা তাই নয়, জানালার কাচ দিয়ে সেই জোছনা ঘরের ভেতরে এসে আমাদের মুগ্ধ করেছে। যতক্ষণ ঘরে আলো জ্বলছে ততক্ষণ কিন্তু আমরা বাইরের জোছনাটুকু দেখতে পাই না। তার কারণটি খুব সহজ, জানালার কাচকে আমরা স্বচ্ছ বলে ভাবি, কিন্তু সেটি পুরোপুরি স্বচ্ছ নয়, তার পৃষ্ঠ থেকে অল্প একটু (নিখুঁত হিসাবে চার শতাংশ) আলো প্রতিফলিত হয়। তাই যখন ঘরের ভেতরে তীব্র আলো জ্বলছে তার শতকরা চার শতাংশ জানালার কাছ থেকে প্রতিফলিত হয়ে ভেতরে আসছে। এই চার শতাংশ আলো জোছনার কোমল আলো থেকে তীব্র, তাই আমরা সেটিকেই দেখি, জোছনার আলোকে আর দেখি না!
এবারে আবার বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায় আসি – আমরা জোছনা দেখতে গিয়েই আবিষ্কার করেছি আলোর চার শতাংশ প্রতিফলিত হয়। এবারে সেই একই পরীক্ষাটি করতে চাই, শুধু পরীক্ষাটি করা হবে কম আলোতে। অর্থাৎ যখন আলো আসলে রশ্মি নয়, যখন আলো হচ্ছে ফোঁটা বা কণা, বৈজ্ঞানিক ভাষায় আলোর ফোটন! তখন আমরা কী দেখব?
বৈজ্ঞানিকরা অসংখ্যবার এই পরীক্ষা করেছেন এবং তাঁরা দেখেছেন, আলো যখন কমে আসে তখনই চার শতাংশ প্রতিফলিত হয়। অর্থাৎ যদি একশটি ফোটন কাচের পৃষ্ঠকে আঘাত করে তখন ছিয়ানব্বইটি বের হয়ে যায় কিন্তু চারটি প্রতিফলিত হয়। এখন লক্ষ টাকার প্রশ্ন – কোন চারটি প্রতিফলিত হবে? তার উত্তর হচ্ছে : কেউ জানে না! একশটি ফোটন কাচের পৃষ্ঠকে আঘাত করলে মোটামুটিভাবে চারটি প্রতিফলিত হবে – সেটি 888sport apkীরা নিশ্চিতভাবে বলতে পারেন, কিন্তু কোন চারটি সেটি তারা কখনোই আগে থেকে বলতে পারেন না। কেউ যেন মনে না করে ভালো যন্ত্রপাতি হলে এটি বলে দেওয়া যাবে – এর সঙ্গে যন্ত্রপাতির কোনো সম্পর্ক নেই, 888sport apkীরা কখনোই এটি বলতে পারবেন না। প্রকৃতি সেই তথ্যটি আমাদের থেকে আড়াল করে রেখেছে। 888sport apkের সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা থেকে হঠাৎ আমাদের সরে আসতে হচ্ছে সম্ভাবনার জগতে! একটা কিছু ‘হবে’ না বলে আমাদের বলতে হচ্ছে ‘হতে পারে’ এবং ‘হবে’ থেকে ‘হতে পারে’তে যাওয়ার বিষয়টিই হচ্ছে ‘কোয়ান্টাম মেকানিক্স’।
আমাদের জীবনে সম্ভাবনার বিষয়টি আমরা এর মাঝে অনেকবার দেখেছি। লুডু খেলার সময় যখন ছক্কাটি ফেলি আমরা আগে থেকে কখনোই সুনির্দিষ্টভাবে বলতে পারি না কত বের হবে। কিন্তু সবসময়েই মোটামুটি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি ছয়বারের মাঝে একবার ছয় পড়তে পারে। ছয় পড়ার প্রোবাবিলিটি বা সম্ভাবনা হচ্ছে ছয়ভাগের এক ভাগ। নিশ্চিত করে কিছু একটি বলতে না পারা, শুধুমাত্র একটি বিষয়ের সম্ভাবনাটুকু জানতে পারা অনেকেই 888sport apkের একটি বড় দুর্বলতা বলে মনে করতে পারেন। কিন্তু সেটি মোটেও তা নয়। প্রকৃতি যে তার রহস্যের পুরোটুকু 888sport apkীদের কাছে প্রকাশ করতে রাজি নয় – 888sport apkীরা সেটি বুঝে ওঠার পর সেটিকে গ্রহণ করেই এগিয়ে গেছেন। কোয়ান্টাম মেকানিক্স ব্যবহার করে তারা কিন্তু প্রকৃতির রহস্য উদ্ঘাটন করেই গেছেন – নিউক্লিয়ার বোমা থেকে সিডি-প্লেয়ার – কোথাও কোনো সমস্যা হয়নি।
একজন সাধারণ মানুষ যেটুকু গণিত জানে সেটি দিয়েই কিন্তু কোয়ান্টাম মেকানিক্সের একেবারে ভেতরে যাওয়া সম্ভব, কেমন করে তার নিখুঁত হিসেব-নিকেশ করা হয়, সেটিও দেখানো সম্ভব। কিন্তু এই ছোট লেখায় তার ভেতরে না গিয়ে আমরা কোয়ান্টাম মেকানিক্সের একটি চমকপ্রদ তথ্য দিয়ে শেষ করে দিই। বিষয়টি এত চমকপ্রদ যে সেটি এর মধ্যে সাধারণ মানুষের কথাবার্তায় চলে এসেছে এবং সেটি হচ্ছে অনিশ্চয়তার সূত্র বা আনসার্টেইনিটি প্রিন্সিপল।
অনিশ্চয়তার সূত্র – নাম থেকেই বোঝা যাচ্ছে কোনোকিছু যে নিশ্চিতভাবে জানা যাবে না এটি তার একটি ইঙ্গিত দিচ্ছে। অনেকভাবেই অনিশ্চয়তার সূত্রটি ব্যাখ্যা করা যায়, তবে বুঝতে সোজা হয়, যদি আমরা সেটি অবস্থান আর ভরবেগ দিয়ে ব্যাখ্যা করি। খুব স্থূলভাবে বলা যায়, আমারা কোনো বস্তুর অবস্থান আর গতিবেগ কখনোই পুরোপুরি জানতে পারব না। অন্যভাবে বলা যায়, যদি অবস্থান নিশ্চিতভাবে জেনে ফেলি তাহলে গতিবেগ কত সেটি সম্পর্কে কোনো ধারণাই থাকবে না। আবার এর উলটোটিও সত্যি অর্থাৎ গতিবেগটি যদি নিশ্চিতভাবে জেনে যাই তাহলে এর অবস্থান সম্পর্কে কিছুই জানতে পারব না।
আমাদের খুব সৌভাগ্য যে, আমাদের দৈনন্দিন জীবনে অনিশ্চয়তার সূত্র কার্যকরী নয়, তাহলে যে কী ভয়ানক বিপদে পড়তাম সেটি আর বলার মতো নয়।
যেমন ধরা যাক ট্রেনে যাবার ব্যাপারটি। স্টেশনে ট্রেন এসে থেমেছে। এখন আমরা ট্রেনে উঠব। ট্রেনটি যেহেতু থেমেছে তার অর্থ গতিবেগ হচ্ছে শূন্য – অর্থাৎ গতিবেগটি আমরা নিশ্চিতভাবে জেনে গেছি। ট্রেনের জন্যে কোয়ান্টাম মেকানিক্স সত্যি হলে বলা যেত এখন আমরা যেহেতু গতিবেগটি নিশ্চিতভাবে জেনে গেছি তাই তার অবস্থান সম্পর্কে কিছুই জানব না। ট্রেনটি কী 888sport app না কুমিল্লা না চট্টগ্রাম – কোথায় আছে জানার কোনো উপায় নেই।
এবারে উলটোটিও হতে পারে। ধরা যাক আমরা নিশ্চিতভাবে জানি ট্রেনটি আখাউড়া রেলস্টেশনে, এখন কী আমরা ট্রেনে উঠতে পারব? মোটেও নয় – যেহেতু অবস্থানটি জেনে গেছি তাই এর গতিবেগ সম্পর্কে কিছুই জানব না। হয়তো ট্রেনটি ভয়ংকর গতিতে ছুটে যাচ্ছে – সেটিতে উঠতে গিয়ে একেবারে ছাতু হয়ে যাব!
আমি নিশ্চিত অনেকেই আমাকে অবিশ্বাস করছেন – ট্রেনের ব্যাপার হলে অবিশ্বাস করতেই পারেন। কিন্তু ক্ষুদ্র একটি পরমাণুর ব্যাপার হলে এর মাঝে অবিশ্বাস করার কিছু নেই, এটি সবসময়েই ঘটছে। কেন ঘটছে সেটি বোঝাও খুব সহজ। একটি সহজ উদাহরণ দিয়ে বোঝানো যায়। ধরা যাক একটি ইলেকট্রন যাচ্ছে – ইলেকট্রন খুব ছোট, ট্রেনের মতো বিশাল নয়, তাই তার বেলায় কোয়ান্টাম মেকানিক্স শতভাগ সত্যি। কাজেই নিশ্চয়ই অনিশ্চয়তার সূত্রটিও সত্যি হবে – অর্থাৎ তার অবস্থান সম্পর্কে জানলে গতিবেগ (আসলে ভরবেগ) সম্পর্কে অনিশ্চিত হয়ে যাব। কেউ মনে করতে পারে, কেন এটি হবে? খুব ছোট একটি মাইক্রোস্কোপ দিয়ে দেখে তো অবস্থান সম্পর্কে জানাই যায় – তাতে তার বেগ অনিশ্চিত হবে কেন? আসলে ‘দেখা’ মানে হচ্ছে প্রতিফলিত আলো থেকে তথ্য বের করা। কাজেই কোনোকিছুকে দেখতে হলে তার ওপর আলো পড়তে হবে, সেই আলো মাইক্রোস্কোপে ফিরে আসতে হবে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, ইলেকট্রন এত ছোট যে, তাকে দেখার জন্যে আলোর ফোটন যখন তাকে আঘাত করে সেই আঘাতেই তার গতিবেগ ওলট-পালট হয়ে যায়। (১নং ছবি) কাজেই ইলেকট্রন কোথায় আছে সেই তথ্যটি আমরা জানতে পারলাম সত্যি, কিন্তু সেটি জানার কারণে তার গতিবেগ পুরোটিই ওলট-পালট হয়ে গেল। আমরা যে-জগৎকে সবসময়ে দেখি সেটি ক্ষুদ্র জগৎ নয়, তাই অনিশ্চয়তার সূত্র নিয়ে আমাদের দুশ্চিন্তা করতে হয় না। কিন্তু পরমাণু বা ফোটনের যে-নিজস্ব ক্ষুদ্র জগৎ আছে সেখানে এটি কিন্তু একেবারেই নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার।
পৃথিবীর সব 888sport apkীই যে কোয়ান্টাম মেকানিক্স নিয়ে খুব স্বস্তিবোধ করেন তা নয় – মহা888sport apkী আইনস্টাইন কখনোই কোয়ান্টাম মেকানিক্সকে সুনজরে দেখেননি (যদিও তিনি নোবেল 888sport app download bd পেয়েছিলেন ফটো ইলেকট্রিক এফেক্ট ব্যাখ্যা করে, যেটি ছিল আলোর ফোটন হিসেবে পরিচিতির ব্যাখ্যা!)। কিন্তু 888sport apkীরা অসংখ্যবার অসংখ্যভাবে পরীক্ষা করে কখনোই কোয়ান্টাম মেকানিক্সকে তার জায়গা থেকে বিচ্যুত করতে পারেননি! কে জানে হয়তো ভবিষ্যতে প্রকৃতির নতুন কোনো গোপন রহস্য আমাদের চোখে নতুনভাবে উন্মোচিত হবে, যেখান থেকে পুরো বিষয়টি অন্যভাবে দেখা হবে! যতদিন সেটি না হচ্ছে ততদিন কোয়ান্টাম মেকানিক্সকে নিয়েই আমাদের বেঁচে থাকতে হবে।

Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.