পৃথিবীতে সকল সময়ে যখন সমাজে কোনো বড়সড় পরিবর্তন ঘটে তখন সেই পরিবর্তনের কম্পন 888sport live football ও 888sport live chatের আঙিনাতেও ধরা দেয়। প্রাচীন ইতিহাস বলে, রাজতন্ত্র যেমন অভিজাত শ্রেণির আমোদ-প্রমোদের উপকরণ হিসেবে হাজির করেছে কাব্য ও 888sport live chatকলা, তেমনি মেহনতি মানুষও আপন অবসরে সৃষ্টি করেছে মনের খাদ্য। সেসবের উৎকর্ষ কিছু কম নয়। সমস্ত যুগসন্ধিকালে মানুষ নবলব্ধ বিপ্লবচেতনা দিয়ে গড়ে তুলেছে তার রচনা। সে-রচনা ব্যক্তিগত সুখ-দুঃখের গণ্ডি ছাড়িয়ে যখন সামগ্রিক চেতনায় ঘা দিয়েছে তখনই তা হয়েছে কালোত্তীর্ণ।
ছোটগল্পের আবির্ভাবও এরকমই এক সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় সংঘাতের মধ্য দিয়ে। উনিশ শতকীয় ফরাসি ও রুশ গল্পকারদের আবির্ভাবে যে তাদের সমসাময়িক বিপর্যয় দায়ী ছিল এ-কথা 888sport live footballের পণ্ডিত মাত্রই বলে থাকেন। বাংলা ছোটগল্পের ক্ষেত্রও বলতে গেলে একরকম প্রস্তুতই ছিল। ধরা পড়ল রবীন্দ্রনাথের হাত দিয়ে। ১৮৯১ সালে হিতবাদী পত্রিকায় ক্রমান্বয়ে প্রকাশ হতে থাকল তাঁর ছোটগল্প। সে-সময়ে উগ্র জাতীয়তাবাদ বনাম নরমপন্থী রাজনীতির করুণাকর ভিক্ষানীতির মধ্যে তিনি অসহায় বোধ করেছেন পলে পলে। তাঁর চেতনায় দেশ বলতে দেশের সাধারণ মানুষ। এ-দেশের অতি সাধারণ মানুষের সুখ-দুঃখ তাঁর গল্পে গভীর ছাপ রেখেছে। তিনি অন্তর থেকে চিরায়ত সেই দেশজ জীবনকেই মেনেছেন নিজের করে। এক রবীন্দ্রনাথের হাত ধরেই উনিশ শতক থেকে বিশ শতকের দরজায় এসে দাঁড়িয়েছে সাবালক ছোটগল্প।
বাংলা 888sport live football ছোটগল্পের আঙিনায় কোনো 888sport promo codeর রচনা ঠিক কতটা উল্লেখযোগ্য তাই ফিরে দেখতে গিয়ে মনে হলো আশাপূর্ণা দেবীর কথা। তাঁর প্রায় হাজারখানেক ছোটগল্প আছে। প্রথাগত শিক্ষার বাইরে থেকেও তিনি কীভাবে যে এমন গূঢ় কথা লিখেছেন ভাবলে আশ্চর্য হতে হয়। তাঁর সঙ্গে আরেকজন লেখকের তুলনামূলক আলোচনাই এই নিবন্ধের বিষয়। দ্বিতীয়জন ক্যাথরিন ম্যান্সফিল্ড। নিউজিল্যান্ডে জন্মে যিনি শেষ নিশ্বাস ফেলেছেন ফ্রান্সে।
আশাপূর্ণা একটি দীর্ঘ জীবন ও সুস্থিত পারিবারিক কাঠামোর মধ্যে দিনপাত করেছেন। সামাজিক কোনো ক্রাইসিস যাঁকে প্রত্যক্ষভাবে ছুঁতে পারেনি বলে আমরা মনে করেছি। অন্যপক্ষে, ক্যাথরিন প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অনতিকাল পরেই মারা যান। স্বল্পায়ু। তাঁর জীবনের কয়েকটি ট্র্যাজেডি সরাসরি সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় ক্রাইসিসের সঙ্গে যুক্ত ছিল। আমরা অগ্রসর হই।
অন্ধের সমস্ত মন যেমন চাক্ষুষ
তেমন নিমগ্ন, বন্দী, মুক্তিভরপুর
এই দেশে১
যাদের চাক্ষুষ করিনি, সৃষ্টির প্রেক্ষাপট জানতে পারিনি, তাদের নিয়ে লিখতে বসে অন্ধের মতন মন হাতড়াতে হয়। আর তখনই ওপরের ওই অমোঘ পঙ্ক্তি সাহস দেয়। চেতনা ডানা মেলে। এ-নিবন্ধে দুই 888sport promo codeর সৃষ্টির আলোয় তাঁদের মানসভুবন খুঁজে দেখার প্রয়াস।
দুজনে পৃথিবীর দুই প্রান্তের মানুষ। কোনোভাবেই একে অপরের সঙ্গে পরিচিত নন। অথচ একটি মৌলিক সাদৃশ্য তাঁদের লেখায়। প্রতিপাদ্য ছোটগল্প অবশ্যই।
বিশ শতকের কথা বলি। সে-সময়ের সমাজে স্বাধীনতার আন্দোলন যা হয়েছিল তার মধ্যে দেশের স্বাধীনতার দিকে যতটা নজর ছিল, সামাজিক বৈষম্য থেকে মুক্তির দিকে তত নজর পড়েনি। উনিশ শতকের সমাজসংস্কারকরা আর নেই। যাবতীয় দমন-পীড়ন ফিরে এসেছে স্বমহিমায়। এরকম একটা সময়ে আশাপূর্ণা দেবী লিখতে এসেছেন। তাঁর গল্পেরা পাখা মেলেছে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ-উত্তর পরাধীন ভারতবর্ষে। তাঁর পরিবেশ, শিক্ষা-দীক্ষা এবং নিয়মনীতির নিগড়ে বাঁধা জীবনকে সহজভাবে গ্রহণ করার মধ্যেই বিপ্লবের বীজ নিহিত ছিল। তিনি যা জীবনে করে উঠতে পারেননি তা-ই ঘটিয়েছেন তাঁর গল্পে।
ক্যাথরিন ম্যান্সফিল্ড। নিউজিল্যান্ডে জন্মানো এই গল্পকার তাঁর জীবনের প্রথমার্ধ কাটিয়েছেন ইংল্যান্ডে। দ্বিতীয়ার্ধ ফ্রান্সে। আশাপূর্ণার চেয়ে অন্তত 888sport cricket BPL rate বছরের বড়। সে-সময়ের ইংল্যান্ডের গোঁড়া ধর্মনীতি, 888sport promo codeর সামাজিক অবস্থান, যুদ্ধের নিষ্ঠুরতা – এসবই তাঁর মননে গভীর ছাপ ফেলেছিল। অথচ তিনিও ছিলেন নিতান্তই ঘরবন্দি। তাঁর মৃত্যুর পর স্বামী স্বীকার করেছিলেন যে, লেখিকাকে গার্হস্থ্য হিংসার শিকার হতে হয়েছে অনেক সময়। এই দুই 888sport promo code পৃথিবীর দুই প্রান্তে থাকলেও কী ভীষণভাবে তাঁদের চেতনার সাদৃশ্য দেখা যায়, ভাবলে অবাক লাগে।
বলা বাহুল্য, এই লেখায় ছোটগল্পের নানান আকার ও প্রকরণ নিয়ে আলোচনার কোনো উদ্দেশ্যই নেই। তবু এই তুলনামূলক আলোচনায় উল্লেখ করতেই হবে যে, উত্তরাধুনিক ছোটগল্পে না-কাহিনির যে বৈশিষ্ট্য সকলে তুলে ধরতে চেষ্টা করেন, ক্যাথরিনের গল্পে বহু আগেই সেই লক্ষণ দেখতে পাওয়া যায়। সেই অর্থে তিনি এরকম কিছু লেখা রেখে গেছেন যা ভীষণভাবে মনস্তাত্ত্বিক, অথচ কাহিনির ভাগ তেমনভাবে পাওয়া যায় না। কিন্তু সার্থক ছোটগল্পের মতোই যার অভিঘাত গল্প শেষের পরেও পাঠকের মনে গভীর ছাপ রেখে যায়। আশাপূর্ণা অবশ্য নিটোল গল্পই লিখেছেন। সেসব গল্পের মধ্যেও কখনো জটিল মনস্তত্ত্বের চকিত বিদ্যুৎ খেলে গেছে। আমরা অবাক হয়েছি এই ভেবে যে, যে-মানুষ স্বামী-সংসার নিয়ে পুরোদস্তুর গৃহিণী এবং বাইরের জগতে সেভাবে পা রাখেননি, তিনি এমন জটিল মনস্তত্ত্ব লিখলেন কী করে? ঠিক যেমন ক্যাথরিন লিখেছেন! অথচ ক্যাথরিনও স্বাধীন বিচরণে সমাজকে দেখতে পাননি! তবে কি অন্তরের আলোয় তাঁরা এমনই আলোকিত ছিলেন যে 888sport live footballে চিরকালীন ছাপ রাখা সম্ভব হয়েছে?
দুটি গল্পের আলোচনায় আসি। আশাপূর্ণা লিখেছেন ‘অজানিত’।
বিশ শতকের মাঝামাঝি সময়। অধ্যাপক পুরন্দর মল্লিক স্বেচ্ছা-অবসর নিয়েছেন একটি মহৎ উদ্দেশ্যে। তিনি মানুষের সভ্যতার ইতিহাস লিখবেন। সে এক বিশাল কর্মযজ্ঞ। তাঁর সহধর্মিণী, মধ্যবয়সী নীরজা তাই সংসারের শত ঝামেলা থেকে তাঁকে সযত্নে সরিয়ে রেখেছেন। তিন ছেলে ও তিন মেয়ে নিয়ে সুখের সংসার। মেয়েদের বিয়ে হয়ে গেছে। স্বাভাবিক কারণেই সন্তানেরা মায়ের কাছাকাছি। ছন্দে-তালে যখন নিখুঁত চলছে সবকিছু তখন একদিন গভীর রাতে নীরজা পুরন্দরের তেতলার ঘরের সামনে থেকে সিঁড়ি দিয়ে গড়িয়ে পড়লেন একতলায়। এই পতনের অনিবার্য পরিণতিতে তিনি পাগল হলেন। পাগলামির ফলে তিনি স্বামীকে লক্ষ করে নানা কটু কথা বলতে থাকতেন। সকলেই বুঝত, এ তাঁর বিকার মাত্র। পুরন্দর যে কী ভীষণ ধৈর্য ধরেন তা দেখে ছেলেমেয়েরা অপরাধবোধে ভোগে। বাবার প্রতি আরেকটু পক্ষপাত থাকা উচিত ছিল। ছ-বছর পর হঠাৎ একদিন নীরজা ছাদ থেকে মধ্যরাতে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করেন। কতিপয় মানুষের সংশয় উড়িয়ে সিদ্ধান্ত হয় যে, পাগলামির বশে তিনি এই কাজ করেছেন। মায়ের মৃত্যুর পর বাবা আলো জ্বেলে তেতলার ঘরে অনেক রাত অবধি জেগে থাকেন। স্বাভাবিক মমতায় তাই কনিষ্ঠ কন্যা করবী বাবার কাছে মিষ্টি জল নিয়ে যায়। তখন রাত তিনটে। আচমকা একটি বিকট শব্দে সকলে ঘর থেকে বেরিয়ে এসে দেখতে পায়, ছ-বছর আগে নীরজা যেভাবে সিঁড়ির নিচে তালগোল পাকিয়ে পড়ে ছিল, আজ সেইভাবে করবী পড়ে আছে। সিঁড়ির মাথায় ক্ষিপ্ত পুরন্দর। চিৎকার করছেন, আমার কাজে যে ব্যাঘাত দেবে তাকে আমি সহ্য করব না। যে বাধা দিতে আসবে তাকেই ফুটবলের মতো শুট করব, টুঁটি ধরে রাস্তায় ফেলে দেবো। এক লহমায় আমাদের কাছে পরিষ্কার হয়ে যায়। নীরজার দুর্ভাগ্যের যে-কাহিনি আমরা তাঁর মুখ থেকে শুনেও বিশ্বাস করিনি, পাগলের প্রলাপ ভেবে অবহেলা করেছি, তা আসলে সত্য। গল্পের বুনন বর্তমান কালের হলে এটি হয়তো কলেবরে ছোট হতো। সেই তর্কে না গিয়ে বরং দেখব, আশাপূর্ণা আসলে কী বলতে চেয়েছেন। আমাদের সমাজে 888sport promo code মহীয়সী হয়ে চিরকাল পরিবারকে রক্ষা করবে। সমস্ত অবিচারকে হাসিমুখে সহ্য করে স্বার্থত্যাগ করবে। তার সেই ত্যাগের ওপরে পুরুষ যশের ইমারত গড়বে কেবল। আবার, কোনো বিচ্যুতি ছাড়াই পুরুষ তাকে শাস্তি দিতে পারে। অপরাধের নির্দিষ্ট সংজ্ঞা যেন পুরুষই তৈরি করবে!
আশাপূর্ণা দেবীর এই মনস্তাত্ত্বিক গল্পের পেছনে তাঁর গড়ে ওঠার পরিবেশ একবার দেখা যেতে পারে। তিনি একটি রক্ষণশীল পরিবারের মেয়ে এবং আর একটি সেরকম পরিবারেরই বধূ। স্বামী তাঁকে যথেষ্ট সহায়তা করলেও তিনি সহসা ঘরের গণ্ডি ছেড়ে বাইরে আসতে পারেননি। বেশ বেশি বয়সে তাঁকে প্রকাশ্য সমাবেশে দেখা যায়। সুতরাং, পরিবেশের এমন দমবন্ধ অবস্থা তাঁকে ক্লান্ত করেছে নিশ্চয়ই। ছোটগল্পে যেমন হয়, এতেও আশাপূর্ণা একটি এমন সমাপ্তি রচনা করেছেন যার অভিঘাত তীব্র। একমুখী সেই অভিঘাত খানিকক্ষণের জন্য আমাদের চেতনাকে অবশ করে। আমরা তাঁর মনোরাজ্যে প্রবেশ করতে পারি। গল্পের মধ্যে বুনে দেওয়া তাঁর যন্ত্রণা, রাগ ও প্রতিবাদ আমাদের বিচলিত করে। সঠিকভাবেই তিনি পাঠককে জাগিয়ে তোলেন।
দ্বিতীয়জন ক্যাথরিন মাত্র পঁয়ত্রিশ বছর বেঁচেছেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে তাঁর ভাই মারা যান। সমবয়সী ভাইটির সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ছিল ছায়ার মতো। তখন ১৯১৫ সাল। এই ঘটনার ফলে ক্যাথরিন চিরবিষাদে আচ্ছন্ন হন। একধরনের অপরাধবোধ কাজ করতে থাকে তাঁর মধ্যে। তিনি বেঁচে, অথচ ভাই মারা গেলেন? এরপর ১৯১৯-এ তাঁর মা মারা গেলেন। তিনি স্তব্ধ হয়ে দেখলেন, বাবা কী ভীষণ আত্মমগ্ন হয়ে রইলেন! মাকে ও ভাইকে হারিয়ে ক্যাথরিনেরও যে কিছু সান্ত্বনার প্রয়োজন ছিল সে-কথা তিনি ভুলে গেলেন। পরবর্তীকালে ক্যাথরিনের দুরারোগ্য ক্ষয়রোগ ও তার অবশ্যম্ভাবী পরিণতি সম্পর্কে ক্যাথরিন যখন ওয়াকিবহাল হলেন, তখন তিনি নিজের মনের মধ্যে একধরনের সান্ত্বনা খুঁজে পেলেন। যে-ভাই পুরুষ হওয়ার কারণে যুদ্ধে যেতে বাধ্য হয়েছিল ও সেখানেই প্রাণ দেয়, তার মৃত্যুর জন্য নিজেকে দায়ী ভাবার দিন ক্রমে শেষ হয়ে আসছে। তিনিও যুদ্ধ ও ব্যাধির একটির দ্বারা আক্রান্ত এবং খুব শিগগির তাঁর প্রাণও যাবে। হয়তো তাঁর মনে এ-প্রশ্ন জেগে থাকতে পারে যে, তখনো তাঁর বাবা কি একই রকম নির্লিপ্ত থাকবেন? এই অবরুদ্ধ আবেগের যে-অদ্ভুত প্রকাশ তিনি একটি গল্পে দেখিয়েছেন, সেটি বিখ্যাত। গল্পের নাম ‘দ্য ফ্লাই’।
এ-গল্পে একটি পুরুষ চরিত্র আছে যে নিজের ক্ষমতায় নিঃসন্দেহ। ক্যাথরিন তাঁকে বলছেন ‘দ্য বস’। স্পষ্টতই তিনি চরিত্রের নিরঙ্কুশ ক্ষমতার কথা বলছেন। প্রতিবেশী মানুষটিকে দেখে তার মনে হয়, লোকটা বুড়ো হয়ে গেছে। নানাভাবে নিজের সম্পদ প্রদর্শন করতে থাকে সে। কথায় কথায় সেই মানুষটি তাকের ওপরে রাখা একটি সৈনিকের পোশাকে সজ্জিত তরুণের ছবির দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে, সেদিন তার মেয়েরা শহরে গিয়েছিল। নিজের ভাইয়ের সঙ্গে এই তরুণের কবরেও গিয়েছিল। কবরে দুজনেই পাশাপাশি শুয়ে আছে। আমরা জানতে পারছি, ক্যাথরিন আফটার লাইফে বিশ্বাসী। যে-জীবন এখানে আনন্দ দিচ্ছে না তা হয়তো মৃত্যু-পরবর্তী সময়ে শান্তি দিতে পারে। সেই অতি প্রসিদ্ধ জার্মান 888sport app download apkটি মনে পড়ে – ‘পাহাড়ের ওপর/ আছে শান্তি/গাছের ওপর/ তুমি শুনবে/ নিশ্বাসহীনতা/ বনের পাখিরা আছে শান্ত/ অপেক্ষা করো, এখানেই/ তুমিও থাকবে বিশ্রামে।’
মনে হয়, ক্যাথরিন যেন বীতশ্রদ্ধ হয়ে এই জন্ম থেকে মৃত্যুকে বেশি আপন ভেবেছেন। যেখানে আছে শান্তি, আছে বিশ্রাম। এর পরের অংশে আমরা সেই মূল পুরুষ চরিত্রটিকে দেখতে পাচ্ছি, যে ক্ষমতাবান হয়েও আসলে একপ্রকার ডিনাইয়াল বা অস্বীকারের প্রবণতার মধ্যে নিজেকে সমর্পণ করেছে। কিন্তু অবরুদ্ধ আবেগ তাকে যেন ফাঁদে ফেলেছে। সেই ফাঁদ থেকে বেরিয়ে আসার পথ খোলা নেই। কালির দোয়াতে একটি মাছি পড়েছে। বেরিয়ে আসতে চাইছে। মাছিটির প্রতিবারের সার্থক প্রয়াসের পরে-পরেই লোকটি তাকে আবার কালিতে ডুবিয়ে দেয়। শেষে মাছিটি আর বেরোতে পারে না। ঠিক যেমন আমরাও পারি না। খণ্ড খণ্ড মুক্তির প্রয়াস আসলে আমাদের আরো বেশি বদ্ধ করে। আমরা হেরে যাই।
ক্যাথরিন তাঁর একটি চিঠিতে উল্লেখ করেছেন – ‘my pen – it’s as though the ink flows through its veins again।’ কালির দোয়াতের কালি, জন্মে পাওয়া দুধের স্বাদ আর যুদ্ধে অপচয়িত রক্ত তাঁর কাছে সমার্থক। নিবিড়ভাবে তিনি উপলব্ধি করেছেন, কালি যেন তাঁর জীবনে রক্তের মতোই জীবনদায়ী। যেমন জন্মেই শিশু মাতৃদুগ্ধের অধিকার পায় তেমনই কালি তাঁকে একটি সারস্বত অধিকার দিয়েছে। আর যুদ্ধ কেড়ে নিয়েছে বেঁচে থাকার অধিকার। যুদ্ধ ও ব্যাধি তাঁর কাছে সমার্থক। দুটিই রক্তপাত করায়। দুটিই ঘাতক।
আমরা আশাপূর্ণার গল্পে যেমন অনিবার্য মৃত্যুপরিণতির আভাসে স্তব্ধ হই, তেমনই ক্যাথরিনের গল্পে তাঁর মৃত্যুযন্ত্রণা উপলব্ধি করি। যেমন আশাপূর্ণার গল্পে আমরা কামনা করতে থাকি এক চরম সত্য উদ্ঘাটনের, তেমন ক্যাথরিনের গল্পে আমরা একটি আরোগ্য কামনা করতে থাকি। যে-আরোগ্য এই সমাজকে যুদ্ধ আর ব্যাধি থেকে মুক্তি দেবে। আশাপূর্ণার গল্পেও তো অনুরূপ ব্যাধি দেখতে পাই! উন্মাদের প্রলাপ যখন শুধু একটি 888sport promo codeর জন্যই সঞ্চিত থাকে তখন কি আমরা আরো বড় ধরনের, আরো গভীরে যার মূল, এমন সামাজিক ব্যাধির রূপ দেখি না?
দুই লেখিকাই কিন্তু নিষ্ঠুরভাবে কাহিনি বুনেছেন। দুটি গল্পেই আমরা দেখতে পাচ্ছি মনোবিকারের ফলে একটি মূল চরিত্র হত্যা করছে। আশাপূর্ণার গল্পে হত্যা করা হচ্ছে যে-চরিত্রটিকে সে আসলে মমতায় জারিত। সংসার যে তাঁর ওপরেই নির্ভরশীল সে-কথা ভেবে জীবনের অধিকাংশ সময় নিঃস্বার্থভাবে ব্যয় করেছেন। অন্যদিকে ক্যাথরিনের গল্পের মূল চরিত্রটি একটি মাছিকে হত্যা করছে। মাছিটির হত্যাদৃশ্যের যে-বর্ণনা তিনি দিয়েছেন তা বেশ ভয়ংকর। পড়ে মনে হয় না যে সামান্য একটি মাছি মারা হচ্ছে। এই নিষ্ঠুর দৃশ্যগুলো রচনার পেছনে আশাপূর্ণা এবং ক্যাথরিনের নিশ্চয়ই যুক্তি ছিল। যুক্তি ছিল এই যে, যা গল্পে ঘটেছে বাস্তব তার চেয়েও নিষ্ঠুর।
আমরা দেখতে পাই আশাপূর্ণা তাঁর গল্পে যেমন নিখুঁত গার্হস্থ্য-চিত্র এঁকেছেন, ক্যাথরিনের গল্পে সেরকম বর্ণনা পাওয়া যায় না। এ থেকে ধারণা করা যায়, ক্যাথরিনের জীবনযাপনে গার্হস্থ্য সেভাবে উপস্থিত ছিল না নিশ্চয়। কিন্তু আশাপূর্ণার গল্পের নিতান্ত গার্হস্থ্য যাপন ও হিংসার মধ্য থেকে যে-গল্প উঠে আসে তা সমসময়ের ভারতীয় 888sport promo codeর বিষাদগাথা। অন্যদিকে ক্যাথরিনের গল্পে উঠে আসে মানবিক দুঃখ-বেদনা-নিষ্ঠুরতার সাতকাহন। তিনি একজন 888sport promo codeর দৃষ্টি নিয়ে গল্পটি লেখেননি; একজন মানুষের দৃষ্টি থেকেই লিখেছেন। যে-গল্পে যুদ্ধের ভয়াবহতা আছে। তাঁর গল্পটি যুদ্ধবিরোধী সমাজচেতনার কথা বলে, যা আশাপূর্ণার গল্পের চেয়ে প্রেক্ষাপটের বিচারে অনেক ব্যাপক। আমাদের কোনো বিশ্বযুদ্ধের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়নি। আমাদের চেতনায় যুদ্ধের চেয়েও মারাত্মক সামাজিক মারণব্যাধি। তাই হয়তো আশাপূর্ণা সেই ব্যাধির কথাই লিখেছেন।
আরো একবার ক্যাথরিনের কাছে ফিরে যাই। তাঁর গল্পের চরিত্র, বস, মাছিটিকে বারবার কালিতে ডুবিয়ে দিচ্ছে। যে-কালি আসলে মুক্তির পরিচায়ক, অন্তরে আবদ্ধ আবেগের নির্ঝর বইয়ে দিতে পারে সাদা পাতায়, সেই কালি এখানে ব্যবহার হচ্ছে হত্যার উদ্দেশ্যে। কালির কি নিদারুণ অপচয়! আমাদের মনে পড়া উচিত, ক্যাথরিন কালি, দুধ আর রক্তকে জীবনীশক্তি বলেছেন। ঠিক যেমন রক্ত একটি তাজা তরুণ প্রাণকে শক্তিতে ভরপুর করতে পারে, তাকে জীবন দিতে পারে। কিন্তু কার্যত তা হয় না। যে-তরুণ যুদ্ধে যায় তার প্রাণ যায় যুদ্ধে, প্রভূত রক্তপাত হয়ে। ক্যাথরিনের ক্ষেত্রে তিনি আর তাঁর মৃত ভাই আসলে একই ব্যাধিতে আক্রান্ত। যুদ্ধ ও ক্ষয়রোগ, দুটিই রক্তপাত করে। প্রাণ নেয়।
আশাপূর্ণার গল্পে সরাসরি কোনো রক্তপাতের কথা নেই। অন্তরে রক্তক্ষরণ আছে। এখানে যুদ্ধ বা ব্যাধি প্রত্যক্ষভাবে উপস্থিত নয়; কিন্তু সামাজিক একটি ব্যাধিতে আক্রান্ত আমরা। যুদ্ধও চলে, কারণ যুযুধান দুটি পক্ষকে আমরা দেখতে পাচ্ছি। একপক্ষ সমাজের চোখে ওপরতলার। অন্যপক্ষ নিচের তলার। উঁচুতলার মানুষ আবার পণ্ডিতও বটে। অর্থাৎ শুধু অর্থ নয়, শিক্ষা বা জ্ঞানের অধিকারও তার হস্তগত। অন্যপক্ষ তো অর্থনৈতিকভাবে উঁচুতলার ওপরে নির্ভরশীল বটেই, উপরন্তু জ্ঞানের অধিকার থেকেও বঞ্চিত। সে শুধু আদিষ্ট কর্মের ভার বহন করবে। এভাবেই সে বন্দি থাকে একটি কাঠামোর মধ্যে।
ক্যাথরিন ম্যান্সফিল্ড আর আশাপূর্ণা তাই পৃথিবীর দুই প্রান্তের অধিবাসী হয়েও মানসভুবনে একে অপরের প্রতিবেশী। দুজনের বিষয়ভাবনার পার্থক্য সত্ত্বেও, গল্পের আঙ্গিকে তফাৎ থাকলেও, তাঁরা একটি বিষয়ে এক। দুজনেই সমাজের নিষ্ঠুর চেহারাটি ধরে দিয়েছেন। দুজনেই জীবনের দমবন্ধ করা পরিস্থিতির নিখুঁত ছবি তুলে ধরেছেন। ছোটগল্পের পাঠকদের কাছে দুজনেই তাই বিস্ময়ের।
তথ্যসূত্র
১. শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের 888sport app download apk থেকে উদ্ধৃত।
২. আশাপূর্ণা দেবীর ছোটগল্প, ‘অজানিত’।
৩. দ্য ফ্লাই, ক্যাথরিন ম্যান্সফিল্ড। ৪. Journal of New Zealand Literature, ‘Milk Blood Ink : MansfieldÕs Liquids and the Abject’, author Diana R.


Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.