শোনা যায় সে-সময়ের এক খ্যাতিমান কবির বাড়ির বৈঠকখানায় কমলকুমার একদিন আড্ডায় গিয়ে দেখেন – বসার ঘরটি বেশ দেশজ জিনিসে সাজানো-গোছানো। বিষ্ণুপুরের ঘোড়া, শীতলপাটির কাজ, জলের জন্য মাটির কুঁজো। চারদিক দেখে নিয়ে কমলবাবু কবিকে নাকি বলেছিলেন – ‘ঘরে সবই তো আছে দেখছি, দরকার ছিল একটা বক্না বাছুর আর কিছুটা ছানিভুষি…।’
ছোটখাটো আড্ডায় কমলকুমারের শানিত কৌতুকময় মন্তব্যের বিচিত্র বিবরণ তাঁর ঘনিষ্ঠজনদের লেখায় বা কথাবার্তায় আমরা পড়েছি বা শুনেছি। এসব কথাবার্তার আশু ফল কী হতে পারে তাও আন্দাজ করা যায়। অন্যদিকে এটাও বলা যায়, এ সবকিছুই তাঁর মুখে মানিয়ে যেত। পণ্ডিত নন একেবারেই কেতাবি অর্থে, কিন্তু সর্বগুণে পারদর্শী যেনবা রেনেসাঁস আমলের মানুষের মতো। তাঁর আড্ডায় তিনিই হয়ে উঠতেন কথকঠাকুর। সকলকে সম্মোহিত করতে পারতেন বিচিত্র সব বিষয়ে কথা বলে – সুন্দরবনের ইটিন্ডা ঘাটের তৈরি মাটির পাত্র তৈরির প্রণালি বিষয়েই হোক বা সাহেবদের কাছে কলার মোচা কী করে কাটতে হয় তার বর্ণনা করেই হোক, অথরিটি নিয়ে কথা বলতেন প্রবল ঝাঁঝে – ফলে তাঁর সঙ্গে তর্ক করবে কে? দ্য রিভার ছবির শুটিং কলকাতায় করতে এসে রেনোয়াঁ নাকি মুগ্ধ হয়েছিলেন কমলকুমারের সান্নিধ্যে। বলেছিলেন ফিরে যাওয়ার সময় – কমলকুমারের মতো ব্যক্তিত্ব বঙ্গভূমে তিনি আর দ্বিতীয়জনকে পাননি। কমলকুমারের 888sport sign up bonus তাঁর জীবনেও 888sport sign up bonus হয়ে থাকবে, এরকমও জানিয়েছিলেন।
মূলত লেখক হয়ে শেষ পর্যন্ত থাকলেও 888sport live chatের প্রায় প্রতি শাখায় ছিল তাঁর সাবলীল যাতায়াত। মাঝে মাঝে তাই ধাঁধায় পড়তে হয় – তিনি আগে লেখক, নাকি চিত্র888sport live chatী, না নাট্যকার? যেমন সংগীতের সমঝদার, পাশাপাশি তাঁরই সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় 888sport live footballপত্রিকা। কখনো প্রকাশ করেছেন গোয়েন্দাপত্রিকা, পাশাপাশি লীলাবতীর 888sport app download apk latest version, প্রকাশিত হয়েছে তাঁরই সম্পাদনায় অঙ্ক-ভাবনা পত্রিকায়। গণিতের মাসিক পত্রিকা। এই মানুষই জনগণনার কাজে গ্রামবাংলা ঘুরে সংগ্রহ করেছেন কত অজানা তথ্য, লোক888sport live chatের দুর্মূল্য সংগ্রহ। লিখেছেন সেসব দেশজ 888sport live chatীর সৃষ্টির কথা। আরও ছিল তাঁর কত পরিচয়। লিখেছেন 888sport app download apk, সংগ্রহ করে প্রকাশ করছেন লৌকিক ছড়া সংকলন, কাঠখোদাই থেকে সোনার অলঙ্কারের ডিজাইন তৈরি, কিউরিও সংগ্রহ। live chat 888sport নির্মাণের জন্য প্রস্তুত করেছেন চিত্রনাট্যের খসড়া, বাংলার টেরাকোটা, ডোকরা, মন্দির, মসজিদ, সাধকদের নিয়ে ডকুমেন্টারি ছবির ধারাভাষ্য।
সব মিলিয়ে কমলকুমার ছিলেন ঊনবিংশ শতাব্দীর ধাতুতে তৈরি বিংশ বা একবিংশ শতাব্দীর এক আধুনিক পরিপূর্ণ মানুষ। সর্বোপরি 888sport live chatী।
দুই
ধারাবাহিক অভিজ্ঞতা থেকে, ইতিহাস থেকে এরকম ধারণা আমরা করে থাকি, একজন লেখক বা কবির একমাত্র কাজ হবে লেখা, লিখে যাওয়া। লেখকের ধ্যান-ধারণা, ভাবনা-চিন্তা আমরা অনুধাবন করব শুধু তাঁর লেখার মধ্যে দিয়ে।
লেখক স্বাভাবিকভাবেই তাঁর জীবনবোধ, পর্যবেক্ষণ, সামাজিকতা, মানুষের সঙ্গে যোগের কথা, সামাজিক দায়-দায়িত্ব – এসবই লিপিবদ্ধ করবেন তাঁর লেখায়, তা সরাসরিই হোক বা অন্যপথের সাহায্যেই হোক। গল্পে, 888sport app download apkয়, 888sport alternative linkে, 888sport liveে যে-ধারায় তিনি নিজেকে প্রকাশ করতে পারেন স্বচ্ছতায় এবং স্বাভাবিকতায়।
এককথায় লেখককে আমরা আইডেন্টিফাই করব তাঁর লেখায়। আবার ধারাবাহিকতার বাইরে গিয়ে আমরা পাই কিছু দৃষ্টান্ত – যেখানে আমরা দেখি একজন লেখকের বা বলা ভালো সৃজন888sport live chatীর কখনো এক বা একমাত্র কাজ হবে না শুধু লিখে যাওয়া বা শুধু ছবি আঁকা বা অভিনয়ে কিংবদন্তি হওয়া। এসব অসচরাচর মানুষের পরিচয় করিয়ে দিতে যে-শব্দবন্ধ ব্যবহার করা যেতে পারে তা হলো ‘বহুমুখীপ্রবণ’। আমাদের দেশে সেই দলের প্রধান দুর্মূল্য মুকুটটি যাঁর মাথায় আজো সমান উজ্জ্বল, তিনি স্বাভাবিকভাবেই রবীন্দ্রনাথ। তাঁর কাজগুলোই প্রত্যহ আমাদের 888sport app download for android করিয়ে দেয় – একজন 888sport live chatীর ক্রিয়েটিভিটি প্রত্যক্ষ করা যাবে তাঁর দ্বারা কৃত প্রতিটি কর্মে। তাঁর প্রবণতা যদি হয় বহুমুখী এবং তা যদি স্বাভাবিক ছন্দে প্রবাহিত হয়, তিনি অবশ্যই করবেন সেসব কাজ – তা সে সংগীত রচনাই হোক বা ছবি আঁকাই হোক, হোক না তা পল্লিচিন্তা বা শান্তিনিকেতন স্থাপনের মতো বিশাল কর্মযজ্ঞ। সবকিছুতেই থাকবে কিন্তু তাঁর মেধা আর মানসিক দীপ্তি। থাকবে এক পরিপূর্ণ 888sport live chatীর অবয়ব। ফলে তিনিই হয়ে উঠবেন সময়ের নিরিখে একজন পরিপূর্ণ মানুষ।
অনুরূপভাবে কমলকুমার মজুমদারও হয়ে উঠেছিলেন এক পরিপূর্ণ 888sport live chatী। একদিকে গতানুগতিক 888sport live football ধারণাকে নস্যাৎ করে দিয়ে একেবারে শুরুর দিকেই দুন্দুভি বাজিয়েছিলেন এই বলে : ‘ভাষাকে যে আক্রমণ করে, সেই ভাষাকে বাঁচায়’ বা ‘গদ্যে আমরা অত্যন্ত সরল, খুকু গদ্য ও 888sport live football যাহা ইদানীং চলিত, তাহা বাংলা নয়, প্রতিদিন এক এক শব্দ বহুল ব্যবহারে ধ্বস্ত হয়, সেই সেই শব্দকে বাঁচাইতে আমরা আমাদের পবিত্র উচ্চশ্রেণিগত বংশধারা ও মর্যাদা অনুযায়ী চেষ্টা করিব।’ পড়ে পাঠক হয়ে গেল সতর্ক, প্রবল ধাক্কা এলো লেখকের কাছ থেকে। বোঝা গেল, কেন তিনি প্রচলিত 888sport live footballধারণা থেকে শতযোজন দূরে চলে যাচ্ছেন। আবার অন্যদিকে শুধু লেখাতেই নিজেকে সীমাবদ্ধ না রেখে সমান্তরালভাবে কাজ করতে লাগলেন 888sport live chatের 888sport app ধারা নিয়ে। বহুমুখী প্রবণতার এক অপরূপ স্রোত প্রবাহিত হতে থাকল তাঁর ক্রিয়াকর্মে আমৃত্যু নিঃশব্দে প্রচারবিমুখতা নিয়ে। বলা বাহুল্য, প্রতিটি ক্ষেত্রে রইল তাঁর একাগ্রতা, পারফেকশন। ওইসব বিষয়ে গবেষক এবং বিশেষজ্ঞরা তাঁর প্রয়াণের ঠিক পরপরই কিছু আলোচনা করেছেন। এখনো কোনো কোনো দিক অনুদ্ভাসিতও রয়ে গেছে, হয়তো। এখানে সেইসব দিকে কিঞ্চিৎ আলোকপাত করলে লেখক কমলকুমারকেই চেনা যেতে পারে আরো দূরে থেকে। এবং এই আংশিক প্রমাণচিত্র দ্বারা পেয়ে যেতে পারেন আগামীদিনের গবেষক অনেক সুলুকসন্ধান। মনে রাখতে হবে, তিনি চেয়েছিলেন জীবদ্দশায় মাত্র ১৯ জন পাঠক তাঁর লেখা পড়ুন। আর লেখা ছাড়া 888sport app বিষয়ে তাঁর প্রত্যাশা অনুল্লিখিত রয়ে গেছে। তিনি কখনো ভাবতেন সহধর্মিণীকে নিয়ে পায়ে হেঁটে চলে যাবেন সুদূর তেহরান। আবার কখনো ভাবতেন বারানসির মণিকর্ণিকার ঘাটে বসে গ্যাসের আলোয় পড়বেন রামায়ণ। স্থিতু হয়ে থাকেননি এক জায়গায়, তাঁর সহধর্মিণীর কথায় – ‘নিজের মধ্যে এক এসকেপিস্ট মনোভাব গড়ে তুলতে ভালোবাসতেন।’ তাহলে এই মনোভাবই কি তাঁকে চালিত করেছিল বিচিত্র সব বিষয় থেকে বিষয়ান্তরে? ‘শুধু 888sport live footballচর্চা নয়, চৌষট্টি কলার একটিও বাদ ছিল না’ – তাঁর সহধর্মিণী এরকমই জানিয়েছেন আমাদের।
তিন
কমলকুমার 888sport app download apk লিখতেন একেবারে লেখালেখির শুরুর পর্বে। শনৈঃ নামে তিনি নাকি প্রকাশ করেছিলেন তাঁর এক 888sport app download apkর সংকলন – সত্যজিৎ রায় আমাদের প্রথম এ-তথ্য জানিয়েছিলেন একটি লেখায়। সেই 888sport app download apkর বই আমাদের এখনো চোখে পড়েনি, তবে তাঁর মৃত্যুর পর অপ্রকাশিত লেখার ঝুলি থেকে হঠাৎই পাওয়া যায় দু-একটি 888sport app download apk, যা লেখার সময়কাল অবশ্য জানা যায় না। 888sport app download apk দুটির একটি ছিল নামহীন। একটি এক্ষণে এবং অন্যটি চতুরঙ্গে প্রকাশিত হয়েছিল। যে-গদ্যের চালচিত্র তিনি এঁকেছেন কলম হাতে নিয়ে তা কখনো হয়ে ওঠে চিত্ররূপময়, কখনোবা রূপ-অরূপের দ্বন্দ্বময়তায় পূর্ণ, তা কি শেষ পর্যন্ত 888sport app download apk নয়?
কেন গল্প? কেনই বা কাহিনি? এ-বিষয়ে কমলকুমার লিখেছেন :
আমাদের মন বলে যে গল্প মানুষ নিভৃতে পড়িবে, আর্টের সহিত নির্জনতার যোগ রহে, তাহারে আমরা এক নির্জনতাতে লইব।’
একদিকে, আগে উল্লিখিত ভাষায় একটা আর অপরদিকে বিষয়ে নির্জনতা দুয়ের মধ্যবর্তী পথে বিচরণ করে কমলকুমার সৃষ্টি করেছিলেন তাঁর চিরায়ত কাহিনিগুলো। বহমান বাঙালিত্বকে রূপময়তায় চিত্রায়িত করেছেন, শহুরে জীবনে থেকে খুঁটিয়ে দেখেছেন কৌম জীবন, তার আখ্যান লিখেছেন অপরিচিত জগতের অন্যরকম জীবন ও জীবিকার ছোঁয়ায়, যা অন্তিমে হয়ে উঠেছে ধ্রুপদী। তা কি ভাষার গুণে, না দেখার অনন্যতায়?
কমলকুমারের জীবদ্দশায় পুস্তকাকারে প্রকাশিত হয়েছিল দুটি মাত্র 888sport alternative link আর দুটি গল্প সংকলন। বিচিত্র জীবন ও আশ্চর্য সব জীবিকা গ্রহণের অন্তে তিনি কিন্তু মনোনিবেশ করেছিলেন কাহিনিবিন্যাসে, যা হয়ে উঠেছে শেষপর্যন্ত লেখকরূপেই তাঁর প্রধান পরিচয়। তাঁর প্রথম গ্রন্থ অন্তর্জলী যাত্রা প্রকাশিত হয় ১৩৬১ সনে ‘কথা888sport live chat’ প্রকাশন থেকে। পরে দ্বিতীয় মুদ্রণ হয় ১৩৮৫-তে, ‘সুবর্ণরেখা’ থেকে। রাধাপ্রসাদ গুপ্ত দ্বারা প্রস্তুত ওই ধ্রুপদী টাইটেল পৃষ্ঠা ‘স্ত্রী’কে উৎসর্গ করা এই প্রথম 888sport alternative linkে তিনি পাঠককে প্রকৃত অর্থেই নির্জনতাতে নিয়ে যান। দীর্ঘদিন ধরে পাঠকের গতানুগতিক প্রথায় লালিত রসময় কল্পনাকে অ্যাটাক করলেন ভাষায়, বিষয় নির্বাচনেও হলেন অনন্য। আজ থেকে পঞ্চাশ বছর আগে লেখা ওই 888sport alternative link আজো পাঠককে টানে তার চিরকালীন আবেদনে।
দুটি গল্প-সংকলনের ক্ষেত্রেও তাই। নিম অন্নপূর্ণা প্রকাশিত হয় ১৩৭০ সনে মাত্র চারটি গল্প নিয়ে। ‘তাহাদের কথা’, ‘নিম অন্নপূর্ণা’র মতো গল্প সে-গ্রন্থের অহঙ্কার, বাংলা 888sport live footballের মুখরোচক কাহিনিকে সজোরে আঘাত দেওয়া এ-গল্প আজো তার আধুনিকতার আঙ্গিকে অভিনব থেকে পাঠকের, বলা বেশি, সিরিয়াস পাঠকের মন জয় করে রেখেছে। আর সুবর্ণরেখা-প্রকাশিত মাত্র ১১টি গল্পের সংকলন (১৩৭২) সেই আধুনিকতাকে পূর্ণ রূপ দিয়ে পাঠকের সামনে বাংলা গল্পের নতুন দরজা উন্মুক্ত করে। উদ্বোধন হয় গল্পবলার নববিদ্যালয়। যে-বিদ্যালয়ের পোড়ো হয়ে ওঠেন তাঁর পরবর্তীকালের উত্তরাধিকারীরা।
খেলার প্রতিভা যা তাঁর জীবদ্দশায় প্রকাশিত তাঁর একটি মহৎ 888sport alternative link, প্রথম প্রকাশ পায় ১৯৭৭-এ কবি শামসের আনোয়ার-সম্পাদিত জার্নাল সত্তরে। প্রসঙ্গত, কমলকুমারের বেশিরভাগ লেখাই প্রকাশিত হয়েছে ছোট ছোট অজ্ঞাত পত্রিকায়, গ্রন্থাকারেও সেসব লেখা প্রকাশ পেয়েছে ছোট প্রকাশন থেকেই। যে-888sport alternative linkটি ছাপার কাজ শুরু হয়েছিল তাঁর জীবৎকালে, প্রকাশিত হয় অবশেষে ১৩৮৫-তে অর্থাৎ তাঁর চলে যাওয়ার পর। তা হলো পিঞ্জরে বসিয়া শব্দ (১৩৮৫)। অর্থাৎ তিনটি 888sport alternative link আর দুটি গল্পগ্রন্থ প্রকাশিত দেখে কমলকুমার প্রয়াত হন তাঁরই তৈরি একটি পাঠকবলয় রেখে। যে-বলয় কিন্তু ক্রমশ বড় হয়ে উঠেছে সময়ের নিজস্ব নিয়মে আর ভাবিয়ে তুলেছে আরো আরো নতুন পাঠককে।
তাঁর প্রয়াণের পরই পুস্তকাকারে প্রকাশিত হয় গোলাপ সুন্দরী। এক্ষণ পত্রিকায় ১৯৬১-তে প্রকাশিত বড়গল্পটি নানাভাবে বন্দিত হয়েছিল সে-সময়। সেই প্রথম বড় প্রকাশন সংস্থা এগিয়ে আসে তাঁর বই প্রকাশের মহান কাজে। পরপর প্রকাশিত হয় সুহাসিনীর পমেটম, অনিলা 888sport app download for androidে, শবরী মঙ্গল এবং সবশেষে তাঁর সমগ্র 888sport alternative link, গল্পসমগ্র। দীর্ঘদিন ধরে লেখা বড়মাপের 888sport liveসংগ্রহও প্রকাশিত হয়েছে অতিসম্প্রতি। তাঁর-সম্পাদিত ছড়া ঈশ্বর কোটির রঙ্গকৌতুক – এসবও চলে এসেছে আজ পাঠকের হাতের নাগালে। এসেছে পুনর্মুদ্রিত হয়ে আইকম বাইকম। আর সর্বশেষ সংযোজন তাঁর চিঠিপত্রের সংকলন। এই প্রসঙ্গে তাঁর সহধর্মিণী দয়াময়ী মজুমদারের লেখা আমার স্বামী কমলকুমার পুস্তিকাটিরও উল্লেখ করা যেতে পারে, যা আমাদের সমৃদ্ধ করেছে নানাভাবে কমলকুমারকে আরো ঘনিষ্ঠভাবে জানতে।
চার
প্রখ্যাত 888sport live chatী অহিভূষণ মালিক কমলকুমারের আঁকা ছবি সম্পর্কে একবার একটি লেখায় লিখেছিলেন – ‘তিনি যদি নীরদ মজুমদার বা শানু লাহিড়ীর মতো ছবি আঁকায় মনপ্রাণ ডুবিয়ে দিতে পারতেন, নিশ্চিৎ দেশ-জোড়া নাম হত তাঁর চিত্রকর হিসেবে।’ কমলকুমারের পাঠকরা তাঁর ছবি আঁকার সঙ্গে প্রথম থেকেই পরিচিত। কেননা প্রথম থেকেই তাঁর সম্পাদনায় প্রকাশিত পত্রিকা থেকে শুরু করে গল্প-888sport alternative linkের প্রচ্ছদ এবং ভেতরের অলংকরণ তিনি নিজেই করে গেছেন তাঁর জীবদ্দশায়। তাঁর আঁকা, তাঁরই সম্পাদিত উষ্ণীষ পত্রিকার জন্মলগ্ন থেকেই হয়তো হয়েছিল শুরু। শানু লাহিড়ীর লেখাতে (888sport sign up bonusর কোলাজ) এবং তাঁর দেওয়া সাক্ষাৎকারে তার সমর্থন মেলে। শানু লাহিড়ী বলেছেন, ‘খুব ছোটবেলা থেকেই ছবি আঁকতে দেখেছি দাদাকে। আমাদের অঙ্কের খাতা টেনে নিয়ে ছবি আঁকতেন। ঘ্যাচ ঘ্যাচ করে। কত ছবি। লেখার মত কতক ছবি নিয়েছেন, কতক ফেলে দিয়েছেন। যতœই করতেন না ছবির।’ তাঁর গল্প সংগ্রহ, নিম অন্নপূর্ণা, নাটক দানসা ফকির বা লৌকিক ছড়ার অনন্য সংকলন আইকম বাইকম – এসবেরই প্রচ্ছদ বা অলংকরণ তাঁরই করা। তবে ছবি আঁকবেন বলে তৈরি হয়ে রং-তুলি হাতে নিয়ে প্রথাগতভাবে ডিসিপ্লিন মেনে ছবি তিনি কখনো আঁকেননি। হাতের কাছে যা পেতেন সাদা আর্টবোর্ডের টুকরো, আমন্ত্রণপত্রের পেছনের সাদা অংশ, লেখার খাতার পাতায় আঁকিবুকি কাটতে কাটতে অবলীলায় এঁকেছেন অসামান্য সব ছবি। তাঁর অপ্রকাশিত পাণ্ডুলিপি প্রথম দেখতে গিয়ে এসব অনেক পেয়েছি পাতায় পাতায়। ছোট ছোট স্কেচ করতেন মিনিয়েচার ঢঙে। কখনো-বা তাতে অল্প রঙের ব্যবহার। প্রধানত তাঁর ছবি সাদা-কালোয়। রং থাকলে হলুদ, গেরুয়া বা সবুজের ব্যবহার থাকত খুবই হালকাভাবে। হলুদই বেশি। আর একটি দিক উল্লেখযোগ্য তাঁর ছবির, তা হলো, ছন্দোময়তা। একা 888sport promo code বা একাকী বালক নৃত্যরত বা কর্মরত এবং তা ছন্দে। ব্যালে ভঙ্গিমা ছিল তাঁর সব থেকে প্রিয়। বড় কোনো পেইন্টিং বা ড্রইং খুব একটা চোখে পড়ে না। কিন্তু নিজস্ব স্টাইলে অনন্য এবং অননুকরণীয়। কখনো বা ছবির নিচে থাকত নানান মন্তব্য বা নামকরণ – যেমন, ‘এসো মা আনন্দময়ী’, ‘শালগাছ – ঝাড়গ্রাম ১৯৫৪’ বা ‘বিদ্যাসুন্দর’ – এসব তারই প্রমাণ। একবার তাঁর একটি অপ্রকাশিত পাণ্ডুলিপি দেখতে গিয়ে দেখেছিলাম ‘দেওয়ান-ই-খাসের ঘুম’ নামে একটি ছোট লেখার পাতাজুড়ে একটি ব্যাঙের গাঢ় নিশ্চিত ঘুমের ছবি, যা মন ভরিয়ে দেয়। এসব আঁকা এতো সাধারণ, নিুমানের সাদা কাগজে তিনি আঁকতেন, যা খুব সহজেই অল্পদিনের মধ্যে নষ্ট হয়ে যেত। রক্ষণাবেক্ষণ করা খুই দুরূহ তাঁর আঁকা ছবি। শুনেছি তাঁর বহু আঁকা এভাবেই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হয়ে গেছে নষ্ট। সাউথ পয়েন্ট স্কুল বেশ কিছু ছবি নিয়েছিলেন তাঁর মৃত্যুর পর শুনেছি। আর আছে এখনো অনেক ছবি, তাঁর ঘনিষ্ঠ কিছু প্রিয়জনের কাছে তাঁরই উপহার দেওয়া। জীবদ্দশায় তাঁর ছবির প্রদর্শনী করা তো দূরের কথা – একসঙ্গে অনেক ছবিই কেউ কখনো দেখেনি। প্রথম প্রদর্শনীটির আয়োজন করেন তাঁর সহধর্মিণী, তাঁর মৃত্যুর পর, ১৯৭৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে। সঙ্গে ছিল দয়াময়ী দেবীরও হাতের নানান নয়নাভিরাম কাজ।
মা ও শিশুর নাইভ মুখাবয়ব, নৃত্য বা বাদ্যরত একাকী যুবতীর ছন্দোময়তা, ‘কথামৃত’কে 888sport app download for androidে রেখে নানা চরিত্রের যাতায়াত তাঁর ছবির যদি প্রধান বিষয় হয়ে ওঠে। তবে একবাক্যে বলা যায়, ছবির অভিব্যক্তি সম্পূর্ণভাবে দেশজ, রূপময়তায় পরিপূর্ণ। হালকা রং ছবির সৌন্দর্যকে বাড়িয়ে দেয় অনেকাংশে। ঘনিষ্ঠজনদের দিয়ে দিতেন ছবি আঁকা হয়ে গেলে। তাঁর স্বাক্ষর থাকত সেই সব ছবিতে – যেগুলো এঁকে পছন্দ হতো নিজের। আবার অনেক ছবিই দেখা যায় স্বাক্ষরহীন, তবে চিনে নেওয়া যায় সহজেই তাঁর ছবির দেশজরূপ এবং ছন্দোময়তা দেখে। তিনি কখনো এঁকে দিয়েছেন তরুণ কবির 888sport app download apkর বইয়ের বা লিটল ম্যাগাজিনের নজরকাড়া প্রচ্ছদ। শুধু এঁকেই শেষ করতেন না তাঁর দায়িত্ব, তার শেষ পর্যন্ত সুচারু মুদ্রণ কীভাবে হতে পারে সে-বিষয়ে বিশদ নির্দেশও দিতেন সম্পাদকদের।
কমলকুমার মজুমদার ছিলেন সেই দলের 888sport live chatী, যাঁরা পুঁথিগত শিক্ষায় ছবি আঁকেননি, লেখায় শব্দ যেখানে থেমে গেছে, ছবি তাঁর শুরু হয়েছে ঠিক সেইখানে। তিনিই তাই পারেন শ্রীরামকৃষ্ণের কাতর প্রার্থনার প্রকৃত সাথি হয়ে উঠতে : ‘মা, আমি কারুর প্রশংসা চাই না, আমার মন তোমার পাদপদ্মে বাস করুক!’
পাঁচ
‘এক সকালে পাটভাঙা খদ্দর পাঞ্জাবী পরা, ময়লা রং, স্বাস্থ্যবান, উঁচু লম্বা দেখতে, উজ্জ্বল রসিক মুখরোচক এক ভদ্রলোককে দেখলাম আড্ডার টেবিলে বসে জাঁকিয়ে রসিকতা করছেন, আর ছোট নরুণের মতো একটা যন্ত্র দিয়ে হাতের তালুতে লুকিয়ে রাখা একখণ্ড কাঠ খুঁড়ে খুঁড়ে তখনো মুখাবয়ব ধীরে ধীরে ফুটিয়ে তুলছেন। গালে পান, আর ফর্সা পাঞ্জাবীর বুক পকেটে পানের ছোপ। ফরাসী লেখা নিয়ে কথা চলছিল বোধ করি। সহজ শৌখিন কায়দায় তাঁর মুখের ফরাসী উচ্চারণ শুনেই মনে হয়েছিল, হাজার পীড়াপীড়ি করলেও আমার গলা দিয়ে অন্তত সে আওয়াজ কোনোদিন বেরুবে না…’ – নরেশ গুহ এমনই লিখেছেন চতুরঙ্গের কার্যালয়ে তৎকালীন সম্পাদক আতোয়ার রহমান সাহেবের ফ্ল্যাটে কমলকুমারের সঙ্গে প্রথম আলাপের কথা লিখতে গিয়ে।
কমলকুমারের আঁকা ছবির প্রসঙ্গ এলেই, পাশাপাশি উল্লেখ করতে হয় তাঁর ‘কাঠখোদাই’ চিত্রের কথা। ছবির বিষয়ে কিন্তু সেই দেশজভাবনা, গ্রামবাংলার লোক888sport live chatের স্পষ্ট প্রতিফলন। লেখার মতোই বিস্ময়কর সেসব ‘কাঠখোদাই’য়ের মাধ্যমে টেক্সচারের ধীরগতিতে পরিস্ফুট হয়ে ওঠা, যা হতো সাবলীল ও অনায়াস প্রক্রিয়ায়। যেনবা প্রবল বৃষ্টিতে জল থইথই ফাঁকা উঠোনের মধ্যে বৃষ্টি দিয়ে কোনো ঝাপসা কিছুর চলছে নির্মাণ, যা ক্রমশ সমগ্রতার রূপ ধারণ করছে ধীরে ধীরে। পানকৌড়ি – গ্রামবাংলার মুখে মুখে প্রচারিত ও শ্র“ত লৌকিক ছড়ার এরকমই এক সংকলন। কমলকুমার সেই ছড়াগুলোর সঙ্গে পাতাজোড়া ‘কাঠখোদাই’য়ে চিত্ররূপ দিয়েছিলেন, সদ্য লিখতে পড়তে পারা শিশুদের জন্য। পুনর্মুদ্রিত হয়েও এখন সম্ভবত নিঃশেষিত সেই অসামান্য সংকলনে মনভোলানো ছড়া :
শালবনে শাল পাঙরা
করমগাছে কলিরে
বধার গায়ে লাল গামছা
ছটক দেখি মরিরে।
আইকম বাইকম ছিল তাঁর সম্পাদনায় আরেকটি সংকলন। পাতায় পাতায় তাঁরই আঁকা লোকছড়ার চমৎকার সূক্ষ্ম লাইন স্কেচ। এ-সংকলনটিরও পুনর্মুদ্রণ হয়েছে সম্প্রতি। অনুরূপ আরেকটি সংকলন – ঈশ্বরগুপ্তের ছড়া, সঙ্গে কাঠখোদাই চিত্র – কমলকুমারকৃত। ১৩৬১ সনের মহালয়ায় কথা ও কাহিনী-প্রকাশিত দেড় টাকা দামের সেই সংকলন অনেকদিন ধরেই পাওয়া যাচ্ছিল না। সম্প্রতি এক নব্য প্রকাশনা ‘তালপাতা’ তা পুনর্মুদ্রিত করল নব কলেবরে। কালো জমিতে সাদা সূক্ষ্ম রেখায় জীবন্ত চরিত্রগুলো ফুটে ওঠে এই কাঠখোদাইয়ে। সহজ পাঠের পর এরকম কাজ আর কে করেছেন, জানি না। নরুণের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম ব্যবহার খোদাইয়ের মাত্রা বৃদ্ধি করেছে অনেকাংশে। আবার অন্যদিকে পানকৌড়ির কাজ থেকে সম্পূর্ণ আলাদা চরিত্র – টেক্সচারবিহীন ‘বেস’। সবমিলিয়ে এতোদিন পরও ঈশ্বরগুপ্তর ছড়াগুলো কমলকুমারের অলংকরণে আজো সমান উজ্জ্বল।
ছয়
‘মানুষটির মধ্যে বৈপরীত্য ছিল অনেক। আমাদের সঙ্গে তাঁর যখন প্রথম পরিচয় হয়, তখন তিনি ছিলেন নাট্য-পরিচালক। চমকপ্রদ ছিল তাঁর নির্দেশনা। আমরা অবশ্য নাট্য-অভিনয় নিয়ে বেশিদিন মেতে থাকিনি। কিন্তু কমলকুমার পরবর্তীকালেও নাট্য-প্রযোজনার অনেক নতুন পরীক্ষা করেছেন’ – এরকমই লিখেছেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় তাঁর সঙ্গে প্রথম পরিচয়ের কথা লিখেতে গিয়ে। ‘হরবোলা’ নামের সেই নাট্যসংস্থার প্রতিষ্ঠা এবং প্রযোজনার দায়িত্ব যাঁর ওপর ন্যস্ত ছিল, তিনি দিলীপকুমার গুপ্ত বা ডি.কে. – তৎকালীন অভিজাত প্রকাশক সিগনেট প্রেসের কর্ণধার। তিনি সঙ্গে পেয়েছিলেন নাট্য-পরিচালকরূপে কমলকুমার মজুমদারকে। সেই তখন থেকে অর্থাৎ ১৯৫১-৫২ থেকে তাঁর মৃত্যুর কয়েক বছর আগে পর্যন্ত তিনি প্রযোজনা করেছেন নানা ধরনের নাটক।
হ-য-ব-র-ল, লক্ষ্মণের শক্তিশেল, আলমগীর, এমপারার জোন্স, মুক্তধারা, রামায়ণ গাথা, কঙ্কালের টঙ্কার, দানসা ফকির, ভীমবধ, সুলতানা রিজিয়া, লক্ষ্মীর পরীক্ষা প্রভৃতি নাটক মঞ্চস্থ করেছেন অন্তত চারটি সংস্থার পক্ষ থেকে। বেশিরভাগই অবশ্য ছোটদের জন্য। সেইসব প্রয়োজনায় থাকত কমলকুমারের পারফেকশনের অনেক নিদর্শন।
প্রখ্যাত অভিনেতা রবি ঘোষ ছিলেন কমলকুমারের নাটকের ভক্ত। কমলবাবুও রবি ঘোষকে মনে করতেন বড়মাপের অভিনেতা। রবি ঘোষ দানসা ফকির বা লক্ষ্মণের শক্তিশেল দেখে বলেছিলেন – ‘কখনো মনে হয়েছে এটা একটা পেইন্টিং দেখছি – কখনো মনে হয়েছে এমন উচ্চারণ তো আমরা করতে পারি না। কখনো মনে হয়েছে একি অসাধারণ কোরিওগ্রাফি! কিন্তু সবটার মধ্যে একটা আদি দেশজ ভাব রয়েছে।’ সত্যজিৎ রায়কে একবার তৎকালীন রঙ্গমঞ্চের শক্তিশালী কে – এ-প্রশ্ন করায় তিনি বলেছিলেন, ‘কমলবাবু কিছু করলে তাঁর ধারেকাছে কেউ আসবে না’।
ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলা যায়, আমার সৌভাগ্য এবং দুর্ভাগ্য হয়েছিল তাঁর নাটকের কিছু অংশ তৎকালীন বঙ্গ সংস্কৃতি সম্মেলনের মঞ্চে একবার দেখার। এখনো 888sport sign up bonusতে রয়েছে দানসা ফকির – সেই ব্যালে ভঙ্গিমায় নাটকের কুশীলবদের মঞ্চে স্বচ্ছন্দ যাতায়াত, অসাধারণ কোরিওগ্রাফ আর মঞ্চসজ্জা। হায়, সেরকম একটি উচ্চমানের নাটক মাঝপথে তিনি বন্ধ করে দিতে বাধ্য হন একশ্রেণির কুরুচিকর শ্রোতার সমবেত চিৎকার ও বিশৃঙ্খলায়।
তারপরও তিনি নাটক মঞ্চস্থ করেছেন ১৯৭৬-৭৭ সালে বালিগঞ্জ শিক্ষাসদনে। ক্যালকাটা চিলড্রেন’স গ্র“পের পক্ষে। সম্ভবত ভীমবধ। নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের লেখা। এই বালিগঞ্জ শিক্ষাসদনই ছিল সম্ভবত তাঁর প্রিয় মঞ্চ।
চিলড্রেন’স অপেরার বেশিরভাগ নাটকই এখানে মঞ্চস্থ হয়। নাটকের পরিকল্পনা করেও শেষ পর্যন্ত মঞ্চস্থ হয়নি সেরকম নাটকের তালিকাও দীর্ঘ। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য – আলিবাবা, প্রহ্লাদ চরিত, হবুচন্দ্রের অশান্তি, ঘোড়াচোর – এইসব। রবি ঘোষের 888sport sign up bonusকথায় এরকম আরেকটি নাটকের কথাও পাওয়া যায়। তারতুক। একেবারে শেষের দিকেও রবি ঘোষকে তিনি বলেছিলেন – ‘রবি তুমি আমাকে টানা দুটো মাস সময় দেবে? তোমাকে দিয়ে তারতুক করাব।’ এমনকি শর্মিলা ঠাকুরও রিহার্সাল দিয়েছিলেন দিনের পর দিন কমলকুমারের আলমগীর নাটকে। উদিপুরীর ভূমিকায় সম্রাজ্ঞী কীভাবে হাঁটবেন এটা দেখাতে গিয়ে কমলকুমার নাকি তাঁকে সর্বস্তরের 888sport promo codeজাতির হাঁটার অনুশীলন শুরু করিয়েছিলেন। এমনই পারফেকশন ছিল আমাদের এই নাট্য-পরিচালক কমলকুমারের। সম্প্রতি প্রকাশিত দীপঙ্কর দাশগুপ্তের লেখা ১৬ নং ম্যান্ডেভিল গার্ডেন্স পড়লে তাঁর অভিনয় দক্ষতা এবং পারফেকশনের অনেক উজ্জ্বল চিত্র পাওয়া যাবে। আরেকটি গল্প বলে শেষ করব তাঁর নাটক-প্রযোজনার কথা। এই প্রসঙ্গটি শুনেছি তাঁর আরেক ঘনিষ্ঠজন প্রয়াত লেখক সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়ের কাছে। তিনি রিহার্সালের সময় একটি বাক্য বলে দিয়ে সকলকে তা অভিনয় করে দেখাতে বলতেন। একদিন বলেন এই বাক্যটি – ‘আহ্, পৃথিবীটা কী সুন্দর’। একে একে সকলকে অভিনয় করতে বললেন। সকলেই যখন সেই ডায়ালগ নানা ভঙ্গিমায় এদিক-ওদিক তাকিয়ে অভিনয়ের মাধ্যমে দেখালো, শেষ করল, তখন কমলকুমার সেই ডায়ালগ নিজে দেখালেন, নিজেরই পবিত্র শরীরের বাঁহাতের ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত আস্তে আস্তে ডান হাত স্পর্শ করে : ‘আহ্, পৃথিবীটা কী সুন্দর!’ অর্থাৎ মানুষের শরীরের সৌন্দর্যই হলো মহান, চিরায়ত। তার চেয়ে সুন্দর আর কী হতে পারে, বাইরের?
আর মাঝে মাঝেই নাকি রবি ঘোষকে তিনি বলতেন, ‘বাবু, ধর্মের কী হবে গা?’
সাত
কেমন সম্পাদক ছিলেন কমলকুমার? শুধুই কি 888sport live footballপত্রিকা সম্পাদনা করেছেন তিনি? এই দুটি প্রশ্নকে সামনে রেখে যদি অগ্রসর হই, আমরা পেয়ে যাব আনুষঙ্গিক উত্তরগুলো। আমাদের যতদূর জানা আছে। তার ওপর ভর করে বলা যায়, উষ্ণীষ পত্রিকা সম্পাদনার মধ্যে দিয়েই তাঁর প্রথম 888sport live footballের আঙিনায় প্রবেশ। এমনো শোনা গেছে। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের একটি সাক্ষাৎকারও কমলকুমার গ্রহণ করেছিলেন এই পত্রিকা সম্পাদনা করতে গিয়ে। আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, তাঁর 888sport app download apk লেখাও এই পত্রিকার মাধ্যমেই শুরু হয়। শরৎচন্দ্রের সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করার প্রসঙ্গটি উড়িয়ে দেওয়া যায় না, যদিও তা প্রকাশিত আকারে দেখার সুযোগ আমাদের এখনো হয়নি। তবে তাঁদের বাড়িতে শরৎচন্দ্র, সরলা দেবী, নিরুপমা দেবী – এঁরা যে নিয়মিত আসতেন তার উল্লেখ তাঁর লেখাতেই পাওয়া যায়।
পরবর্তীকালে যে-পত্রিকাটির সম্পাদকমণ্ডলীতে অন্যতম সম্পাদক হয়ে খুবই উঁচুমানের একটি live chat 888sportবিষয়ক পত্রিকা প্রকাশ করেন তা হলো live chat 888sport। প্রধানত দিলীপকুমার গুপ্তেরই উদ্যোগে তাঁর সিগনেট প্রকাশনা থেকে এই পত্রিকার সম্ভবত একটিমাত্র 888sport free betই প্রকাশিত হয়। ‘live chat 888sportে গানের ব্যবহার’ – কমলকুমারের লেখা (তখন কমল মজুমদার) ওই পত্রিকাকে সমৃদ্ধ করে তোলে সত্যজিৎ রায়ের ‘কলকাতায় রেনোয়াঁ’ বা রাধাপ্রসাদ গুপ্তের ‘বাংলা live chat 888sport ১৩৫৬’ বা ঋত্বিক ঘটকের ‘অভিনয়ের নব অধ্যায়’ – এসব লেখার পাশাপাশি থেকে।
আবার সম্পূর্ণ বিপরীত মেরুর ভাবনাচিন্তা থেকে কমলকুমার সম্পাদনা শুরু করেন দুটি পত্রিকা। অঙ্ক-ভাবনা আর তদন্ত। শ্রী আনন্দময় ঘোষের সঙ্গে যুগ্ম সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় অঙ্ক-ভাবনা পত্রিকার দুটি 888sport free bet। জানুয়ারি ১৯৬৫ এবং এপ্রিল জুন ১৯৬৫-তে দুটি 888sport free bet প্রকাশিত হয়। প্রথম 888sport free betয় ঠিকানা ছিল ম্যান্ডেভিল গার্ডেন্স এবং তারপরই পরিবর্তিত ঠিকানা ৭৭/১ মহাত্মা গান্ধী রোড, কল-৯ থেকে দ্বিতীয় 888sport free bet প্রকাশিত হয়ে এ-পত্রিকা বন্ধ হয়ে যায়। লীলাবতীর 888sport app download apk latest version করেছিলেন কমলকুমার প্রথম 888sport free betয়। তাছাড়া, অসীম চট্টোপাধ্যায়, সুব্রত চক্রবর্তী, দেবীদাস মুখোপাধ্যায়, কুমার মৈত্র, বেলাল চৌধুরী প্রমুখের 888sport app download apk latest versionে পত্রিকার দুটি 888sport free bet সমৃদ্ধ হয়। লীলাবতী ছাড়া, আঁরি গাওয়াঁকেরের ‘888sport apk ও প্রকল্প’ শিরোনামে ‘সায়েন্স ও হাইপথেসিসে’র 888sport app download apk latest version করেছিলেন কমলকুমার।
অপরদিকে তদন্ত পত্রিকার মোট ১৮টি 888sport free bet প্রকাশিত হয়। প্রকাশস্থল ছিল – পি-৩৩, গণেশচন্দ্র এভিনিউ। বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য নিয়ে ১৯৫২ সালে এই সাপ্তাহিকটি প্রকাশিত হয়। এ-বিষয়ে বলতে গিয়ে সত্যজিৎ রায় একটি লেখায় জানিয়েছেন, ‘ইতিমধ্যে কমলবাবুর আরও কয়েকটি গুণের পরিচয় পেয়েছি। ‘তদন্ত’ নামে তিনি একটি গোয়েন্দা পত্রিকা বার করেছেন। কথা বলে দেখলাম বিশ্বের গোয়েন্দা 888sport live football তাঁর নখদর্পণে।’ তদন্তের দুটি হলুদ হয়ে যাওয়া ছিন্নবিচ্ছিন্ন 888sport free bet এখনো আমার ব্যক্তিগত সংগ্রহে রয়েছে।
প্রচ্ছদ সম্ভবত কমলকুমারেরই আঁকা মৃতের খুলির ওপর (সাদা-কালো ড্রইংয়ে) লেখা ‘ডিটেকটিভ সাপ্তাহিক’। প্রথম বর্ষের নবম 888sport free bet প্রকাশিত হয় ১২ ডিসেম্বর। ১৮টি 888sport free bet প্রকাশের তথ্য যদি সঠিক হয়, তবে ধরে নেওয়া যায় পরের বছর অর্থাৎ ১৯৫৩-তেই এই পত্রিকার প্রকাশ বন্ধ হয়ে যায়। ‘শার্লক হোমসের 888sport sign up bonusকথা’ 888sport app download apk latest version করেছিলেন বিমল বসু। ‘দারোগার দপ্তর’ (প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়), ‘রক্তখোর’ (মটর রায়) এসব লেখা দেখছি প্রকাশিত হয়েছে 888sport free bet দুটিতে। কমলকুমারের চরিত্রে কোনো একটি বিশেষ কাজ বেশিদিন করা যে সম্ভব হতো না, এই পত্রিকাদুটির স্বল্পকালীন আয়ু দেখে আরো একবার সে-বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়। ‘live chat 888sportে গানের ব্যবহার’ লেখার অনেক আগেই অবশ্য তিনি ‘সংগীত’ শিরোনামে বেশ কয়েকটি টুকরো লেখা চতুরঙ্গ পত্রিকায় লিখেছিলেন। কমলকুমারের চরিত্রের মধ্যে যথারীতি রহস্য ও গণিতের পাশাপাশি live chat 888sport ও সংগীতের অবস্থান মানিয়ে যেত। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের লেখা থেকে জানা যায়, তিনি নাকি উচ্চাঙ্গ সংগীতেরও তালিম নিয়েছিলেন। ফৈয়াজ খাঁ ছিলেন তাঁর প্রিয় কণ্ঠ888sport live chatী আর জ্যোতিরিন্দ্র মৈত্র (বটুকদা) ছিলেন তাঁর খুব 888sport apk download apk latest versionর ও কাছের মানুষ, 888sport live chatী, সুরকার।
আট
কমলকুমার মজুমদারের মৃত্যুর পর তাঁর অপ্রকাশিত রচনা, চিঠিপত্র, নোটস ইত্যাদি সম্পাদনা শুরু করেছিলেন কবি সুব্রত চক্রবর্তী তাঁর বর্ধমানের বাড়িতে বসে। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই তিনি প্রয়াত হন। ফলে ওইসব পাণ্ডুলিপির পাহাড় সুব্রতের বাড়িতে দীর্ঘদিন অসম্পাদিত অবস্থায় পড়ে ছিল। ঘটনাচক্রে তার কিছু আমি দেখা ও পড়ার সুযোগ পাই। সে-সময় হঠাৎ আমার চোখে পড়ে একটি চিত্রনাট্যের একপাতার স্কেচ। রামায়ণের অরণ্যকাণ্ড। ছোট ছোট স্কেচ করে-করে তিনি প্রস্তুত করা শুরু করেছিলেন এই চিত্রনাট্য। পরবর্তীকালে পড়ে এবং খোঁজখবর করে তাঁর live chat 888sport-নির্মাণের এবং তথ্যচিত্রের ভাষা-তৈরির নানা খোঁজখবর পাওয়া যায়। তাঁর তৈরি করা তিনটি ডকুমেন্টারির চিত্রনাট্য ও ধারাভাষ্য সে-সময় সংগ্রহ করা সম্ভব হয়। সেগুলো খুব সম্ভব ১৯৬১ সালে তৈরি। আলোকচিত্রী ছিলেন গোপাল সান্যাল এবং প্রযোজক ছিলেন শান্তি চৌধুরী।
ডকুমেন্টারিগুলো হলো : বাংলার টেরাকোটা, রামায়ণ ইন ফোক আর্ট, বাংলার সাধক (রামপ্রসাদ, কমলাকান্ত, রামকৃষ্ণ, বামাক্ষ্যাপা)। এছাড়া শোনা যায় বাংলার সমস্ত মসজিদ ও পিরের দরগা নিয়ে একটি ছবি তৈরির পরিকল্পনা তাঁর ছিল। শান্তি চৌধুরী তাঁরই গল্প মতিলাল পাদরীর চিত্রনাট্যের খসড়াও প্রস্তুত করেছিলেন। কিছু শট নেওয়া হলেও তা সম্পূর্ণ হয়নি।
‘কমলবাবুর নিজেরও ফিল্ম করার ইচ্ছে ছিল। সম্ভবত কোনো কোনো বিশেষ কাহিনির চিত্ররূপ তিনি কল্পনা করতে ভালোবাসতেন। দুটি কাহিনিকে আশ্রয় করে কিছু সময় তিনি চিন্তাতেও ব্যয় করেছিলেন। সে দুটি হল শরৎচন্দ্রের ‘অভাগীর স্বর্গ’ ও রবীন্দ্রনাথের ‘দেবতার গ্রাস’। দুটিরই জন্য নাকি দুহাজারের ওপর ‘ফ্রেম-স্কেচ’ করেছিলেন তিনি। তার মধ্যে অভাগীর স্বর্গের জন্য করা খান-পঞ্চাশেক স্কেচ আমাকে দেখিয়েছিলেন। কমলবাবুর পরিকল্পিত চিত্ররূপে কাহিনির শুরু জমিদার গৃহিণীর শবযাত্রা দিয়ে। দুপাশে কলাবন, মাঝখানের পথ দিয়ে শবযাত্রী চলেছে কীর্তনের সঙ্গে। ঝড়ো বাতাসে কলাপাতা আন্দোলিত হচ্ছে। রাস্তা থেকে খই উড়ে গিয়ে পাশের মাঠে পড়ছে। ঘরে বাইরের জন্যও নাকি হাজারখানেক (হাজারের কমে কথা বলতেন না তিনি) স্কেচ করেছিলেন তিনি। কিন্তু অনেক অনুরোধ সত্ত্বেও তার একটিও দেখাননি…।’ কমলকুমারের আরেক প্রবণতা live chat 888sport-নির্মাণ প্রসঙ্গে সত্যজিৎ রায় এ-কথা আমাদের জানিয়েছেন। তবে পূর্ণদৈর্ঘ্যরে কাহিনিচিত্রের নির্র্মাণ তাঁর পক্ষে করা সম্ভব হয়নি। হওয়া সম্ভবও নয়। তাঁর ছিল মূলত একা একা কাজ করে যাওয়ার দক্ষতা। এবং বড় ছবি তৈরি করতে যে ধৈর্য, অর্থবল, সর্বোপরি সম্মিলিত উদ্যোগ দরকার হতো তা কখনো তাঁর ছিল না বা তিনি মনেপ্রাণে তা চাইতেনও না। জনগণনার কাজে গ্রামবাংলা দেখার সুযোগে তিনি মুগ্ধ হতেন মন্দির, মসজিদ, টেরাকোটা, ঢোকরা, মৃৎ888sport live chat, পটচিত্র এসব দেখে, রোমাঞ্চিত হতেন ছোট তীর্থক্ষেত্র, বাংলার সাধকদের লীলাক্ষেত্রগুলোতে গিয়ে। বাইরে দূরে আর কোথাও কোনোদিন গেছেন বলেও জানা যায় না। আর তাই ওই ছোট ছোট মুহূর্ত, স্থান এবং লোক888sport live chat তাঁর লেখায়, রেখায় এবং স্বল্পদৈর্ঘ্যরে ডকুমেন্টারি তৈরিতে প্রাধান্য পেয়েছিল। আর এসবের সঙ্গে যথাযথভাবে কোনো মানুষের কথা, ভাষা, উচ্চারণ, মুখভঙ্গি, শারীর সৌন্দর্য, গান, সুখ-দুঃখের প্রকাশ এসব ছড়িয়ে আছে তাঁর প্রতিটি সৃষ্টিকর্মে।
নয়
তিনি তৈরি করেছেন বিজ্ঞাপনের নকশা, বইয়ের অঙ্গসজ্জা, গহনার ডিজাইন, করেছেন দামি কিউরিও সংগ্রহ। উষ্ণীষ পত্রিকার প্রকাশ দিয়ে যদি তাঁর 888sport live chat-সংস্কৃতির জীবন শুরু হয়, শেষ করেছিলেন কলকাতার বস্তির ছেলেমেয়েদের আঁকা, নাচ, গান, ছড়া বলা শিখিয়ে। কী করেননি তিনি মধ্যবর্তী এই সময়ে? বইয়ের প্রচ্ছদ আঁকা থেকে কীভাবে ছবির ব্লক তৈরি হবে এবং তার ছাপার প্রণালি কী, ফরাসি ভাষায় তালিম নেওয়া থেকে তখনকার ছোট পত্র-পত্রিকায় বাজার-চলতি ফিল্মের রিভিউ বা ফিচার লেখা – কোনো কিছুই বাদ রাখেননি। দৌড়ে বেরিয়েছেন এক কাজ থেকে অন্য নানান রকম বিচিত্র সব কাজে।
এতসব নিয়ে শতবর্ষ থেকে আর মাত্র এক বছর দূরে দাঁড়িয়ে কমলকুমার মজুমদার হাজার নিন্দা ও স্তুতির মিথ গড়া এবং মিথ ভাঙার মাঝে দাঁড়িয়ে লেখক-888sport live chatী রূপে আজো অম্লান, অপ্রতিদ্বন্দ্বী। তিনি একসময় ১৯ জন পাঠকেই সন্তুষ্ট থাকতেন। আজ তাঁর গল্প-888sport alternative linkের প্রভূত সংখ্যক পাঠক না হলেও অনেকাংশে বেড়েছে। বইগুলোর দ্বিতীয় বা তৃতীয় সংস্করণ হওয়াই তা প্রমাণ করে। ছোট-বড় প্রকাশনা সংস্থা তাঁর গ্রন্থ প্রকাশের কাজে আগ্রহে এগিয়ে আসছে যখন, তখন অবশ্য তাঁর অপ্রকাশিত বা অগ্রন্থিত রচনা প্রায় নেই বললেই চলে।
তিনি একবার তাঁর প্রিয় গ্রন্থগুলোর একটি তালিকা এবং সংক্ষিপ্ত পরিচিতি তৈরি করে জানিয়েছিলেন : ‘যেগুলির এখানে নাম দিলাম সেগুলি, আমি ভক্তিতে স্পর্শ করি – রাসসুন্দরী যেমন চৈতন্য চরিতামৃত (!) স্পর্শ করিয়াছিলেন। আমার বিদ্যাসাগরের ও বঙ্কিম চাটুজ্জের কমা, সেমিকোলন পর্যন্ত ভালো লাগে।’ আজ, তাঁর কথার রেশ ধরে তাঁর প্রতিটি 888sport live chatকর্মের, স্বল্প অথচ নানা রঙে রঙিন বহুমাত্রিক ধ্র“পদী সৃষ্টিকর্মগুলোর দিকে তাকিয়ে আমাদেরও কি অনুরূপভাবে মাথা নত হয়ে আসে না!
দশ
তাঁর কথক ঠাকুরের ভূমিকা দিয়ে এ-লেখা শুরু করেছিলাম, লোভ হচ্ছে সেরকম আরেক প্রসঙ্গ দিয়ে শেষ করা। এই অংশ অবশ্য পড়া শ্রদ্ধেয় অশোক মিত্র মশাইয়ের লেখায়। ‘এক অদ্ভুত রাত্রির কথা মনে পড়ে, হেমন্ত ঋতু। রাত দুটো থেকে গড়িয়ে তিনটের কাছাকাছি, নিঃশব্দ চরাচর। রাসবিহারী এভিনিউ-এর ত্রিকোণ পার্কের কাছাকাছি কোথাও ট্রামের লাইনের ঘাসের উপর উবু হয়ে আমরা কয়েকজন, কনুদা একটি ভূতের গল্প বিবৃত করেছিলেন। জনৈক কামোন্মাদ পাটের সাহেব সন্দেহের ঝোঁকে তাঁর এদেশি রক্ষিতাকে গুলি করে হত্যা করে। তারপর এক প্রগাঢ় হেমন্তর রাত্রি, কুয়াশায় সমাচ্ছন্ন কৃষ্ণপক্ষের আকাশ, প্রকোষ্ঠ দিয়ে ক্ষীণতম আলোরও অনুপ্রবেশ নেই, ঘুমের ঘোরে সাহেবের পাশ ফেরা, তার পাশে শায়িতা কে এই বিবসনা সুন্দরী? প্রেতিনীরূপা সেই রক্ষিতাই কি হঠাৎ সাহেবের কণ্ঠনালীর উপর বরফ শীতল হাতের বজ্র কঠিন চাপ দেয়? মধ্যরাত্রির কুয়াশাকে দীর্ঘ করে এক অশরীরী আর্তনাদ! কার, পাটের সাহেবের, নাকি সেই প্রেতিনীর, কণ্ঠনিঃসৃত সেই নিনাদ, শিবাকুলে আলোড়ন, আলতো একটি মোরগের ডেকে ওঠা ট্রাম লাইনের উপর উবু হয়ে বসা আমরা কয়েকজন কনুদাকে দেখতে পাচ্ছি, অথচ পাচ্ছি না, শুধু তাঁর গলার স্বর, তাও যেন এক নিরানন্দ আসক্তিহীনতায় সমাচ্ছন্ন।’ কমলকুমারের মুখে শোনা বা বলা সে-গল্প যেন আমরা এখনো শুনি এবং দেখতে পাই।
এগারো
বলা বাহুল্য, এখনো কমলকুমার পুরোপুরি উন্মোচিত হননি তাঁর সমগ্র সৃষ্টিকর্মের নিরিখে। উন্মোচনের কাজ, যা অবশ্যই শুরু হয়েছে তা এখনো চলতে থাকবে। তবে শতবর্ষের প্রাক্কালে দাঁড়িয়ে একটা কথা বলাই যায়, তিনি কিন্তু পেয়েছেন এখন তাঁরই দীর্ঘ অধ্যবসায় প্রস্তুত করা একদল নিজস্ব পাঠকবর্গ, আর একদল তরুণ গবেষককে এপার এবং ওপার দুই বাংলাতেই। তাঁরা সতত কাজ করে যাচ্ছে কমলকুমারকে নিয়ে আর উন্মোচিত করছেন তাঁর সৃষ্টির নতুন নতুন দিক। আমরাও চিনে নিতে পারছি কমলকুমার মজুমদারকে, তাঁর অনন্য প্রতিভার মাঝখানে বেশি উজ্জ্বল হয়ে থাকা লেখক কমলকুমারকে। সন্দীপন চট্টোপাধ্যায় যাকে বলতেন ‘কলমকুমার’!


Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.