মালেকা পারভীন
(এখন শুধু মনে পড়ে, তোমার কথা মনে পড়ে;
তোমার কথা মনে পড়ে
অনেক কথা মনে পড়ে,
এখন শুধু মনে পড়ে, এখন শুধু মনে পড়ে; …মনে পড়ে – মহাদেব সাহা)
আমার মনে হয়েছিল, আমি একটা প্রায় ডুবন্ত মানুষকে ভেসে উঠতে সাহায্য করছিলাম। সে-বছরের জানুয়ারির ৩১ তারিখ বা এর কাছাকাছি সময় যেদিন তার সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল, সে আমার চোখের দিকে সরাসরি তাকানোটাও এড়িয়ে গিয়েছিল। কারণ, তার চোখের ভাষায়-দৃষ্টিপাতে ছিল ধারাবাহিক
কষ্টের অমোচনীয় কাজল – বিক্ষিপ্তভাবে ছড়ানো, এলোমেলো। সম্ভবত তার জানা ছিল, মেয়েরা, অথবা কোনো-কোনো বিশেষ গুণের মেয়ে, এ-ধরনের কাজলের পেছনের ধোঁয়াচ্ছন্ন ইতিহাস ধরে ফেলতে পারে।
কলেজের বিশাল খেলার মাঠটার উত্তর দিকের শেষ প্রামেত্ম আমরা দাঁড়িয়েছিলাম। সামান্য দূরত্বে কিছু সময়ের জন্য অনেকটা মুখোমুখি। শেষ জানুয়ারির ভরদুপুরের ঠিক মাঝামাঝি। চোখ খুলে বা বন্ধ করে দিনটা আমি আজও হুবহু দেখতে পাই। আয়নায় নিজের চেহারা দেখার মতো পরিষ্কার, অবিকল একই রকম নিখুঁত স্পষ্টতায়। যদিও মধ্যবর্তী সময়ের ব্যবধান দুই যুগেরও বেশি কাল। জীবনের কিছু-কিছু ক্ষণ বা মুহূর্ত বা দিন তার চিরন্তন দাবি নিয়ে সবসময় একই চেহারায় থাকতে পছন্দ করে। এই দিনটিও সেরকম একটি দিন।
অনেকটা জোর করে যে এই সাক্ষাৎটা করিয়ে দিয়েছিল সে ছিল আমাদের কমন ফ্রেন্ড। এই কমন ফ্রেন্ডের সঙ্গে আমার পরিচয় পর্বটাও ছিল বেশ নাটকীয়। একটা সিগারেট কেনার জন্য দু-টাকা বা পাঁচ টাকা চাওয়ার আবদার থেকে। সেই ভুলতে না-পারা জানুয়ারির ঠিক আগের মাসটা ক্যালেন্ডারের হিসাবমতো ডিসেম্বর হওয়ার কথা। আর ওই ডিসেম্বরের এক অদ্ভুত মনোরম নাতিশীতোষ্ণ দুপুরে যখন কলেজের আর্ট ভবনের দক্ষিণ পাশের করিডোর ধরে আমরা কজন বন্ধু মিলে হেঁটে যাচ্ছিলাম মেয়েদের কমন রুমের দিকে, কমন ফ্রেন্ড হবে বলে আমাদের উভয়ের ভাগ্যলিপিতে যার নাম লেখা ছিল সে আচমকা আমার পথ আটকে দাঁড়াল।
কিন্তু পথ আটকে দাঁড়ানোর মতো হালকা বাহ্যিক চকচকে আড়ম্বর আমার বেশভূষায় বা মুখশ্রীতে ছিল না। বরং সে-সময় আমি ছিলাম মাথা-বুক-পিঠ ওড়নায় পেঁচানো দারুণ রক্ষণশীলতার চাদরে মোড়ানো এক সপ্রতিভ তরুণী। কমন ফ্রেন্ডের অভূতপূর্ব নাটকীয়তায় চমৎকৃত হলাম। তার নায়কোচিত চেহারা দেখেও, বিশেষ করে তার নিখুঁত ছাঁচে গড়া খাড়া নাকের আভিজাত্য আমাকে তার সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা চালিয়ে যেতে প্রলুব্ধ করল। যদিও এটাই আমাদের প্রথম পরিচয়।
তবে কথাবার্তার বিনিময় এটা পরিষ্কার করে দিলো যে, ভালো ছাত্রীর তকমা গায়ে লেগে থাকার কারণে অন্য আরো অনেকের মতো তার কাছেও আমার পরিচয় লুকানো নয়। আর বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়েই সে আমাকে কিছুদিন ধরে অনুসরণ করে যাচ্ছে। আমার পক্ষে এসব জানার কোনো কারণ ছিল না। সে নিজে থেকেই গড়-বড় করে সব বলে যাচ্ছিল। যেহেতু তার প্রথম টোপটা দিয়ে সে আমাকে ভালোমতোই মুগ্ধ করতে পেরেছে বলে আমার সঙ্গে-সঙ্গে সেও বুঝে ফেলেছিল। আর নিজেকে স্মার্ট প্রমাণের খাতিরে বেশ খানিকটা ঢং মেরে অহেতুক কথা বলার প্রবণতা ছিল তার। ধীরে-ধীরে ব্যাপারটা প্রকাশ পেয়েছিল।
‘এবার, দিন তো, দুটা টাকা বের করে দিন। একটা সিগারেট এ-মুহূর্তে না ফুঁকলেই নয়।’ তার সহজ নির্লজ্জ আবদার।
‘এভাবে মাত্র দু-টাকার জন্য একটা মেয়ের কাছে হাত পাততে লজ্জা করে না আপনার?’ সামান্য খোঁচা দিতে চাইলাম। কিন্তু আমার চোখে-ঠোঁটে কৌতুকের ঝিলিক। যেন আমি পরিষ্কার প্রশ্রয় দিতে চাইছি।
‘না, না, বোনের কাছে টাকা চাইতে আবার লজ্জা কিসের? আপনাকে আমার বোন মানলাম, ধর্ম-বোন। আপত্তি নেই তো?’
নিজের বয়সের প্রায় কাছাকাছি, হয়তো কিছুটা বেশিই হবে, একটা ছেলের কাছ থেকে কোনো প্রেম-ভালোবাসার আবেদন-নিবেদন নয়, একবারে ধর্ম-বোন হওয়ার আহবান! সেদিন আমাকে চমকে দেওয়ার সবটুকু প্রস্ত্ততি নিয়েই সে এসেছিল। আমিও তাকে নিরাশ করিনি। দু-টাকা নয়, পাঁচ অথবা দশ টাকাই দিয়েছিলাম। সঙ্গে সুন্দর করে আহ্লাদি মিষ্টি একটা হাসি।
সেই সিনেম্যাটিক মুহূর্তে আমার জানার কোনো উপায় ছিল না যে, একটা সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নিয়ে এই ছেলে এতসব কা- ঘটাতে এসেছে। সে আমাদের কমন ফ্রেন্ড হয়ে একটা নাটকের সূচনা করবে আর আমরা সেই নাটকের প্রধান দুটি চরিত্রে নিষ্ফল অভিনয় করে যাব বেশ কিছুটা কাল ধরে। কারণ নাটকটা হঠাৎ করেই এক সময় শেষ হয়ে যাবে মাঝপথে।
কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই, কোনো ধরনের গ্রহণযোগ্য যুক্তি-কারণের দরোজা উন্মুক্ত না রেখে নাটকটির আচমকা যবনিকাপাত ঘটিয়েছিল পুরুষচরিত্রটি, যে ছিল একজন প্রায় ডুবে যাওয়া মানুষ আর ঘটনাচক্রে যার নাম ছিল, থাক এতদিন বাদে নাম-টাম বলে তাকে আজ আর অপ্রস্ত্তত করে লাভ নেই। আমি আমিই থাকি, সে থাকুক সে। আর এর মাঝে, যদি প্রয়োজন দাবি করে, কমন ফ্রেন্ডসহ অন্য পার্শ্বচরিত্ররা আসা-যাওয়া করতে থাকুক নাটকের কাহিনিতে একটা বিশ্বাসযোগ্য বোধগম্য আরোপের নিমিত্ত।
যাকে আমি প্রথম দেখায় ডুবন্ত মানুষ ভেবেছিলাম সে আসলে কতটা ডুবন্ত ছিল, নাকি ঘটনার অনেকটাই ছিল ফালতু সেন্টিমেন্টালিটিতে ঠাসা, আজ আর জানার সামান্যতম আগ্রহবোধ করি না নিজের ভেতর। এতদিনে বেশ জ্ঞান লাভ হয়েছে যে, মানুষের জীবনে বিভিন্ন সময়ে ঘটে যাওয়া নানাবিধ আবেগ ও আরাধনার ব্যাপ্তিকালগুলো একেবারেই সাময়িক। একপর্যায়ের অনুভূতির তীব্রতম গভীরতা আরেক পর্যায়ে প্রায় অসিত্মত্বহীন হয়ে যায়। কিছু ব্যতিক্রম বাদে।
জানুয়ারির সেই আসন্ন বিকেলের অথবা গড়িয়ে যাওয়া দুপুরের আশ্চর্য আলোয় সে আমার দিকে সরাসরি তাকায়নি পর্যন্ত। আমার এখনো স্পষ্ট মনে আছে। হয়তো আমার অলক্ষে সে আমাকে আগে থেকেই যতটুকু দেখার দেখে নিয়েছিল। ঠিক ওই সময়টাতে যখন আমি গিয়ে তার সামনে হাজির হলাম, সে দাঁড়িয়ে থাকল আমার দিক থেকে খানিকটা আড়াআড়িভাবে। এভাবে কোনো ভদ্রছেলের দাঁড়ানোর কথা নয়।
তবে তার 888sport app আচরণে তাকে যথেষ্ট পরিশীলিত ও অভিজাত রুচির মনে হয়েছিল। বিশেষ করে তার শরীর থেকে ভেসে আসা হালকা মিষ্টি সুরভির মাদকতা আমাকে বিমোহিত করে ফেলেছিল বেশ কিছু সময়ের জন্য। আজ এত বছর পরে যখন সেই আর-কখনো-ভুলতে-না-পারা ক্ষণটি পুনরাভিনয় করছি মনের পর্দায়, অলৌকিক যোগাযোগে সেই অনুভূতি অবশ করা সুবাসটি আমি যেন খুব বেশি করে টের পাচ্ছি! কী অদ্ভুত ব্যাপার!
আর তার মুখে ছিল আপাত রাগি-ক্ষুব্ধ মুখোশের ওপর আরোপিত গাম্ভীর্যের এক সুকঠিন প্রলেপ। কিন্তু যেহেতু সে-সময় তার অন্তর্জগতে প্রবহমান ছিল এক ধারাবাহিক অদৃশ্য রক্তক্ষরণ, তার পক্ষে আমার মতো একটা মেয়ের নিষ্কলুষ চোখের দিকে সরাসরি তাকিয়ে কথা বলাটা সহজ ছিল না মোটে। পারিপার্শ্বিক ও মানসিক জড়তা তার জন্য ব্যাপারটিকে অসম্ভব করে তুলেছিল। আমি তা বুঝতে পেরেছিলাম। তাই তার সঙ্গে দেখা হওয়ার পরপরই তাকে আরো ভালোভাবে জানার এক অদম্য ইচ্ছা আমার ভেতর তৎপর হয়ে উঠেছিল।
অবশ্য এর আগে কমন ফ্রেন্ড তার সঙ্গে সেই নাটকীয় পরিচয়ের পর থেকেই তার এই বিশেষ বন্ধুটি সম্পর্কে আমাকে বলে আসছিল আর খুব চাইছিল সুযোগমতো কোনো একদিন আমার সঙ্গে পরিচয়পর্বটা ঘটিয়ে দিতে। তার মনের প্রকৃত উদ্দেশ্য তখন পর্যন্ত আমার কাছে পরিষ্কার ছিল না। কিন্তু বারবার বলা সত্ত্বেও সেরকম কোনো আগ্রহ আমি কখনো দেখিয়েছি বলে মনে পড়ে না। কারণ ইতোমধ্যে আমাদের একটি বেশ বড়সড় সমমনা বন্ধুদল তৈরি হয়ে গেছে। স্বাভাবিকভাবে নতুন কারো সঙ্গে পরিচিত হতে বা কাউকে বন্ধু হিসেবে পেতে তাই খুব একটা উৎসাহ কাজ করে না। একদিন না পেরে কমন ফ্রেন্ড বলেই ফেলল, ‘আজ তোর সঙ্গে তার পরিচয় করিয়ে দেবো।’
ভাইয়ের হাস্যকর আবদার নিয়ে সে আমাকে রীতিমতো তুই করে ডাকতে শুরু করেছে। মহামুসিবতে পড়ে গেছি। আমাকেও বলেছে তুই করে ডাকতে। সমস্যা হলো, আমি এত সহজে কাউকে তুই বলি না, বলতে পারি না বা চাই না। কেউ-কেউ অনায়াসে, প্রথম সাক্ষাৎ থেকেই, বলতে পারে। আমাকে দিয়ে তা হয় না। আমি কমন ফ্রেন্ডকে আপনি করেই বলতাম। তাতে একটা নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব বলে বিশ্বাস করতাম। এখনো সে-বিশ্বাস অটুট আছে।
যেদিন কমন ফ্রেন্ড তার সেই এত-গল্প-করা বন্ধুকে সত্যি-সত্যি এনে হাজির করল কলেজের খেলার মাঠটার উত্তর দিকের শেষ প্রামেত্ম, আমি তখন মাঠের বিপরীত দিকে আমাদের সেকশনের সাত-আটজনের দলটার সঙ্গে দারুণ এক আড্ডায় মশগুল। আমার কোলের ওপর পড়ে আছে শামসুর রাহমানের মাতাল ঋত্বিক, যেহেতু কথায়-কথায়, কারণে-অকারণে, 888sport app download apk তখন নিশ্বাসের মতো সারাক্ষণের সুহৃদ।
সেই অদ্ভুত সময়টাতে সেলিনা, যাকে আমরা লিনা ডাকতাম অথবা সে নিজেই বন্ধুদের তাকে ওই নামে ডাকতে অনুরোধ করেছিল, আমাদের বলছিল তার একটি সম্ভাব্য ছোট্ট স্বপ্নের কথা। স্কলারশিপের টাকা পেলে সে কী করবে ইত্যাদিবিষয়ক, যদিও তখন পর্যন্ত কলেজের অফিস থেকে জানা যায়নি, কারা-কারা ওই বৃত্তি পাচ্ছে। লিনা তার মার্কসের ওপর ভরসা করে আশা করছিল, সাধারণ পর্যায়ে হলেও তার বৃত্তি পাওয়ার কথা। অন্যদের কথা জানি না। তবে আমি লিনার আত্মবিশ্বাসমূলক পারদের উচ্চতা অনুভব করে ভেতরে-ভেতরে বেশ অবাক হয়ে যাচ্ছিলাম। কারণ ওই গ্রম্নপের মধ্যে সবচেয়ে ভালো ফলাফল ছিল আমার; কিন্তু তা সত্ত্বেও আমার পক্ষে অমন আকাশ-কুসুম কল্পনা করা সম্ভব হয়নি। কারণ, আমার বরাবরের নড়বড়ে আত্মবিশ্বাস!
সেলিনা বা লিনার ছিল খুব সুন্দর করে গুছিয়ে কথা বলার অসাধারণ গুণ। তার শ্যামলা মুখের ধারালো অবয়ব আর চমৎকার সারিবদ্ধ ঝকঝকে দাঁতগুলো তার বলা যে-কোনো কথাতেই একটা আলাদা মাত্রার সৌন্দর্য সরবরাহ করত। ফলত মুগ্ধ হয়ে আমি তার কথা শুনতে থাকি। হয়তো আমাদের দলের প্রত্যেকেই। লিনা বলছিল, স্কলারশিপের প্রথম কিসিত্মর টাকাটা পেলে প্রথমেই সে একটা সাইকেল কিনে ফেলবে। সাইকেল চালিয়েই কলেজে আসবে এবং স্বাভাবিকভাবেই দারুণ একটা ব্যাপার হবে।
আমি আজ অবধি সাইকেল চালানো শিখে উঠতে পারিনি বলে মনে-মনে পুরনো কষ্টটা নড়াচড়া করে উঠল। তৎক্ষণাৎ আমার মনে পড়ে গেল রূপসী রেবেকার কথা। বছরকয়েক আগে আমরা এক কলোনিতে থাকতাম। এক ফাঁকে রেবেকা তার ভাইদের কাছ থেকে সাইকেল চালানো শিখে নিয়েছিল। প্রতিদিন বিকেলে অন্য বন্ধুরা মিলে আমরা যখন কলোনির পুকুরপাড় ধরে উদ্দেশ্যহীন হেঁটে বেড়াচ্ছি অথবা অফিস ভবনের সামনে ফুল-ভরা বাগানটায় ‘কুমির তোর জলে নেমেছি’ বলে অযথা লাফ-ঝাঁপ করছি, রেবেকা তখন চুলের দুই মোটা বেণি বুকের দুপাশে ফেলে সাইকেলের সিটের ওপর সটান বসে কলোনির এ-মাথা থেকে ও-মাথা চক্কর দিয়ে আমাদের মাথা ঘুরিয়ে দিতে থাকল।
বেশিদিন যায়নি। ওই বয়সটায় যা হয় আর কি! রেবেকাকে দেখে কলোনির আরো কয়েকজন মেয়ে সাইকেল চালানোর ব্যাপারে অত্যুৎসাহী হয়ে উঠল। দেখা গেল, প্রতিদিন বিকেলে চার-পাঁচটা সমবয়সী মেয়ে কোথা থেকে সাইকেল-টাইকেল জোগাড় করে এনে কলোনির চারপাশ জুড়ে চড়কির মতো ঘুরতে থাকল। রেবেকা যাই করবে সেটাই করতে পারতে হবে। কারণ রেবেকার বাবা কলোনির বস। আর রেবেকার অহংকারী মা তার দুই সুন্দরী কন্যাকে অন্য সবার থেকে আলাদা প্রমাণ করানোর উদ্দেশ্যে নানারকম কৌশল প্রয়োগে ছিল সদা-তৎপর। আমরা ছোটরা হয়তো কিছুই বুঝতাম না যতক্ষণ না তিনি কোনো আসরে-আয়োজনে-অনুষ্ঠানে-আড্ডায় সগর্বে তার মেয়েদের এই আলাদা-দেখানো-বিষয়ক গল্প ব্যাখ্যা করে না বলতেন। আর তার মোটা, পুরো ঠোঁটজোড়ার যে-কোনো কোনায় একটা মিশচিভাস স্মাইল লটকে দিতেন!
রেবেকার সাইকেল চালানো ছিল তাকে আর সবার থেকে আলাদা প্রমাণের সচেতন প্রচেষ্টা। এর আগে এক ঈদে যখন রেবেকার বড় বোন মনিকা কালো রঙের একটা ঝলমলে ডিজাইনের সালোয়ার-কামিজ পরল, আর ওড়নাটা কখনো কাঁধের একপাশ দিয়ে ঝুলিয়ে দিলো অথবা আড়াআড়িভাবে কোমরে হালকা করে বেঁধে রাখল, আমাদের বুঝতে কোনো সমস্যা হলো না যে, এভাবে ওড়না পরার ধরনটাও ছিল অন্যদের থেকে নিজেকে ভিন্নরূপে উপস্থাপনের আরেকটি নজির। কারণ তখন পর্যন্ত কলোনির বড় মেয়েরা যারা ওড়না পরত, তারা সেটা ট্র্যাডিশনাল ওয়ে মেনে স্বাভাবিকভাবে বুকের ওপর ঝুলিয়ে অথবা ফেলে রাখত। বুকের একপাশে ওড়না ফেলে রাখার আধুনিক স্টাইলিশ কায়দা আমরা মনিকাপাকে দিয়েই প্রথম দেখলাম!
আচ্ছা যাকগে, সাইকেলে চড়ে ওড়নায় উড়ে যাওয়ার ব্যাপারটা প্রাসঙ্গিক হোক বা না হোক, সেলিনা বা লিনার যে ব্যক্তিগত গল্পটা শুনছিলাম, সে-আড্ডায় আমরা তন্ময় হয়ে অপলক দৃষ্টিতে লিনার মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলাম, বিশেষ করে আমি। শ্যামলশ্রী লিনার নিখুঁত ছাঁচে ফেলা বুদ্ধিদীপ্ত চেহারার দিকে তাকিয়ে মনে-মনে ভাবি, মেয়েটা কী সুন্দর করে কথা বলে! সত্য-মিথ্যা-কল্পনা-স্বপ্ন সব পরিমাণমাফিক মিশিয়ে এমন চমৎকারভাবে তার ভেতরটা সে আমাদের সামনে মেলে ধরে, মন্ত্রমুগ্ধ শ্রোতা হয়ে তা শোনা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না কারো। লিনার এই গল্প বলার মাঝখানেই ফটকা নূরুদ্দিন কিছুক্ষণ পরপর ‘এই রোল চৌদ্দ’ বলে আমার দিকে ঘাস ছিঁড়ে-ছুড়ে ফেলতে থাকে। বুঝতে পারি, টিং-টিং শরীরের এই ছোকরা আমার সঙ্গে ভাব জমাতে চায়। নানা ফন্দি-ফিকির করে আমাদের দলে সে ঢুকে পড়েছে আর এখন ক্লাসের সবচেয়ে ভালো ছাত্রীটার সঙ্গে প্রেম না হোক, একটু খাতির জমানোর নানারকম পাঁয়তারা!
সে যাহোক, সেদিন কমন ফ্রেন্ড লিনার গল্পের এমন জায়গায় এসে হাজির হলো যে, আমি খানিকটা বিরক্তই হলাম। কারণ লিনা তখন বলছিল, সে কীভাবে তার প্রেমিক আসিফের সঙ্গে বাসার সবার অগোচরে দেখা করে। আসিফ তাদের বিল্ডিংয়ের চিলেকোঠায় ভাড়া থাকে। প্রায় প্রতিদিন বিকেলে বা সন্ধ্যার কিছু আগে টবের গাছে পানি দেওয়ার নাম করে লিনা ছাদে উঠে বেশ কিছুক্ষণ সময় ধরে আসিফের সঙ্গে গল্প করে আসে। আসিফ বিএসসি পড়ছে; পাশ করে বেরিয়ে একটা চাকরি জুটিয়ে নিয়েই তারা বিয়ে করে ফেলবে – এই তাদের সোজাসাপ্টা পস্ন্যান। লিনা আরো বলছিল, সম্ভবত তারা কয়টা বাচ্চাকাচ্চার বাবা-মা হবে সেই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তটাও তারা তাদের এই বৈকালিক আলোচনায় সেরে ফেলেছে!
এরকম রূপকথাসদৃশ প্রেমপূর্ণ ভালোবাসার গল্প বলতে গিয়ে লিনা আমাদের একটি চমকপ্রদ তথ্য জানায়। বেশ খানিকটা গর্বের ভঙ্গিতে গ্রীবা উঁচু করে খানিকটা গলা খাঁকারি দিয়ে সে বলে, ‘তোমাদের জানা আছে কিনা জানি না, হুমায়ূন আহমেদের সাজঘর 888sport alternative linkের নায়ক-নায়িকার নাম কিন্তু লিনা আর আসিফ!’ বিষয়টা জানাতে গিয়ে লিনার কাজল-আঁকা মায়াবী চোখজোড়া কেমন ছলছল করে ওঠে! বরাবরই এমন আবেগপ্রবণ মেয়েটা।
আর এদিকে লিনার কথা শুনে, ওর দারুণ নাম-সৌভাগ্যে আমরা সবাই হা-হতবাক, বিস্ময়ে বিমূঢ়! এমনও হয় নাকি! সে সময়টায় আমি সারাক্ষণ কেবল মনে-মনে স্বপ্ন বুনছি, কবে 888sport appয় যাব আর প্রিয় লেখকের ইউনিভার্সিটির কোয়ার্টারে গিয়ে কড়া নাড়ব! কারণ জনপ্রিয়তার স্রোতে ভেসে যাওয়া লেখকের বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে তখন এমন সব গল্পের মতো ঘটনাই পড়ছি যে, অন্ধ পাঠককুল, বিশেষ করে আমার মতো বিমুগ্ধ পাঠিকাশ্রেণি, যখন-তখন তাঁর বাড়ির দরজায় গিয়ে হাজির হচ্ছেন আর খুব বাধ্য না হলে মিতভাষী লেখক কারো সামনে দেখা দিচ্ছেন না! আহ্, সেসব অদ্ভুত হুমায়ূন আহমেদীয় দিন-রাত্রি!
এদিকে কমন ফ্রেন্ড এসে নক করার কোনো ধারই ধারল না। সে সোজা আমার দিকে ডান হাতটা নাড়িয়ে বলল, ‘আয়, আজ ওকে এনেছি; তোর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেব। মাঠের কোনায় দাঁড়ায় আছে; এদিকে আসতে লজ্জা পাচ্ছে। তার তো আবার অনেক লজ্জা, আয়, চল।’
লিনার অমন সাসপেন্সপূর্ণ গল্পের মাঝপথ থেকে উঠে আমি বাধ্য বোনের মতো কমন ফ্রেন্ডের সঙ্গে-সঙ্গে হাঁটতে লাগলাম। উত্তরদিকে মাঠের মাঝ বরাবর কোনায় এসে যখন দাঁড়ালাম, দেখি চশমাপরা শ্যামলা রঙের একটা ছেলে হেঁটে আসছে আমাদের দিকে। মাঠের উলটো পাশে কলেজের ধার দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীর পাড় থেকে। ঠিক সোজাভাবে নয়, কেমন যেন একটু কুঁজো হয়ে। আমার প্রথমেই চোখে পড়ল তার ডান হাতে ধরা অর্ধেক খাওয়া সিগারেটটা, তারপর কালো রঙের প্যান্টের সঙ্গে এমারল্ড কালারের পোলো শার্ট, পায়ের
একজোড়া চপ্পল আর তার মাথা-ভর্তি ঘন কোঁকড়া চুল!
কমন ফ্রেন্ড আমাদের পরিচয় করিয়ে দিলো খুবই উৎফুলস্নভাবে। তার এত খুশি হওয়ার কারণ সে-মুহূর্তে আমার কাছে পরিষ্কার না হলেও পরে অবশ্য সবই বুঝতে পেরেছি।
‘এই যে আমার বোন তোকে যার কথা বলছিলাম।’
‘আচ্ছা।’ তার ভাবলেশহীন উত্তর, মুখটা সামান্য অন্যদিকে ফিরিয়ে।
‘আর এ হচ্ছে সে যার কথা তোকে এতদিন বলেছি।’ আমি তার নিরাসক্ত জবাবে খানিকটা বিরক্ত হয়েছি। মনে-মনে ভেবেছি, কোনো সৌজন্যবোধ নেই। অথচ ভদ্রতার ধার না ধারা তার সহজ কাঠিন্যের মাঝেই অন্যরকম একটা কিছু দেখতে পেলাম। ভীষণ ভালো লেগে গেল ওকে আমার। সেই মায়া-মথিত অলৌকিক দুপুরের মনগলা হৃদয়-হারানো মুহূর্তে!
‘আপনার কথা অনেক শুনেছি। আজ পরিচয় হয়ে ভালো লাগল।’ এবার আমার কিছু বলার পালা।
‘ও আচ্ছা, ধন্যবাদ।’ মানুষ কেমন করে এত বিরস হয় ভেবে পাচ্ছিলাম না।
অবস্থা খুব সুবিধার না দেখে কমন ফ্রেন্ড কথার মোড় ঘোরাতে চাইল।
‘তুই কি তোদের ওই দলে আবার যাবি না আমাদের সঙ্গে আসবি? আমরা একটু সামনের দিকে হাঁটতে যাব, নদীর ধারটায়। চল না হয় আমাদের সঙ্গে।’
আমি তাকিয়ে ছিলাম তার দিকে। সে একবারও আমার দিকে ফিরে তাকায়নি। আমি নিশ্চিত, সে বলতেও পারবে না আমার চোখে চশমা ছিল কি না। কারণ তার চোখের কষ্ট লুকিয়ে রাখতে অন্যদিকে দৃষ্টি ফিরিয়ে রাখাটাই সে নিরাপদ ভেবেছিল। আমি সঙ্গে যাব না জানাতে ওরা আমাকে মাঠের ওই জায়গাটাতে রেখেই নদীর পাড়ের দিকে হাঁটতে শুরু করল। আমি পোলো শার্টটার দিকে নির্নিমেষ তাকিয়ে থাকলাম। তাকিয়ে থাকলাম তার চলে যাওয়ার পেছন দিকটায়। আর মনে-মনে বললাম, ‘তোমার সঙ্গে আবার আমার দেখা হবে; সেদিন তোমার মুখে থাকবে এক চিলতে হাসি।’
এরপর যেদিন তার সঙ্গে আমার দ্বিতীয়বার দেখা হলো, সেদিন সত্যি-সত্যি সে আমার দিকে তাকিয়ে এমন সুন্দর করে হেসেছিল যার কোনো তুলনা ওই সময় পর্যন্ত আমার কাছে ছিল না। ফাল্গুনের প্রথম সেই দিনে কলেজ জুড়ে ছড়ানো ছিল উৎসবের হই-হুলেস্নাড়। চারদিকে গান-বাজনা-চিৎকার, হাসি-ঠাট্টা-কৌতুক, ঝালমুড়ি আর চটপটির সঙ্গে তার সেই আশ্চর্য হৃদয়-মোচড়ানো স্মিত হাসি আমার বুকের মধ্যে সর্বনাশা তুফান বইয়ে দিলো। ভালো ছাত্রীর তকমা লাগানো মেয়েটা সেদিন প্রথমবারের মতো টের পেল, বসমেত্মর প্রথম দিনের বেভুলা বাতাস আজ প্রথম প্রেমের রেণুদল ছড়িয়ে আপস্নøyত করেছে তার মনের বাগানের গোলাপসকল। সবকিছু ভুলে আজ তার প্রেমে পড়ার দিন, আজ তার গভীরভাবে ভালোবাসা অনুভব করার দিন, আজ তার গলা ছেড়ে গান গাওয়ার দিন। এসব বিক্ষিপ্ত ভাবনা যখন মনের ভেতর জোর তোলপাড় তুলেছে, বকুলগাছটা থেকে সামান্য তফাতে পোস্টঅফিসের পাশে লাল কাপড় দিয়ে ঘেরাটোপ দেওয়া জায়গায় রাখা সাউন্ড বক্সটা থেকে তখন ফুল ভলিউমে ভেসে আসছে, ‘ও শাম রে তোমার সনে, শাম রে তোমার সনে… আজ পাশা খেলবো রে শাম’
তারপর তার সঙ্গে আমার আরেকবার, তৃতীয়বার দেখা হলো এক রোদগলা উষ্ণ বিকেলের নরম মিষ্টি আলোয়। আমাদের কোয়ার্টারের খোলা বারান্দার সামনে। আগে থেকে কিছু না জানিয়ে ঠিক কী কারণে কমন ফ্রেন্ড তাকে নিয়ে সেদিন আমাদের বাসায় সরাসরি উপস্থিত হয়েছিল আজ আর মনে করতে পারি না। তবে সেটা আমাদের ঘিরে তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার অংশই ছিল, আজ নতুন করে ভাবতে গিয়ে আরো একবার অনুভব করি।
888sport app দিনের মতো সেদিনও আমি বারান্দায় বসে কোনো বই বা পত্রিকা পড়ছিলাম। হঠাৎ বলা নেই, কওয়া নেই কমন ফ্রেন্ড একেবারে বাসার সামনে হাজির; সঙ্গে সে। সামান্য অপ্রস্ত্তত আমি; কিন্তু তাকে দেখেই মনে-মনে ভীষণ খুশি। একটা আনন্দের ঝিলিক কি আমি তার দুচোখেও খেলে যেতে দেখিনি? হাই পাওয়ারের চশমার কাচের আড়াল থাকা সত্ত্বেও সেই আনন্দের প্রকাশটা ছিল দারুণ স্পষ্ট!
সেদিনের সেই মধ্য ফেব্রম্নয়ারির শেষ বিকেলের হিমেল রোদের মন ছুঁয়ে যাওয়া স্বর্ণালি আভায় তাদের দুজনকে ড্রইংরুমে এসে বসতে বলে চা-নাশতা আয়োজনের জন্য বাসার ভেতরে আমার প্রস্থান কিছু সময়ের জন্য। যখন ফিরে এলাম, এক অদ্ভুত মায়াকাড়া হাসি ছড়িয়ে সে আমার দিকে তাকিয়ে থাকল বেশ কিছুক্ষণ। আমার আরেকবার অপ্রস্ত্তত হওয়ার পালা। কিন্তু ততক্ষণে জড়তা কাটিয়ে উঠেছি। হালকা কথাবার্তা বিনিময়, স্বভাব অনুযায়ী কমন ফ্রেন্ডের কিছু সস্তা জোকস বলে জোর করে হাসানোর চেষ্টা, চা-বিস্কিট-চানাচুরের ভেতর দিয়ে কিছু সময়ের জন্য হারিয়ে যাওয়া আর তার পরপরই মাগরিবের আজান পড়তে না পড়তেই বিদায় নেওয়ার জন্য দুজনের একসঙ্গে উঠে দাঁড়িয়ে পড়া।
অল্প সময়ের এই আলাপচারিতায় সে জেনে গেছে অথবা যে-কোনো প্রকারে হোক আমি তাকে বুঝিয়ে দিয়েছি, সে-সময়টায় আমার ঘাড়ে আছর করে থাকা 888sport app download apkর ভূতের বিষয়টা। বলা যায়, সম্ভাব্য সম্পর্কের গতিপ্রকৃতি কোন দিকে মোড় নেয়, না নেয় বিবেচনায় নিয়েই তাকে আমার 888sport app download apk-প্রেমের পরিচয় দেওয়াটা আবশ্যক মনে হয়েছিল। আবার হয়তো এসব কিছুই নয়। ড্রইংরুমে যে-সোফাটায় সে বসেছিল, তার সামনের সেন্টার টেবিলে যেন কোনো বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে আগে থেকেই পড়ে ছিল মহাদেব সাহার মানুষ বড় ক্রন্দন জানে না নামের 888sport app download apkর বইটি। আমি কেবল বুকমার্ক দেওয়া 888sport app download apkটা, ‘তুমি যখন প্রশ্ন করো’ বের করে বইটি তার হাতে ধরিয়ে দিয়েছিলাম। আর বইটা খুলেই চোখের সামনে ‘তুমি যখন প্রশ্ন করো/ আমি কি তোমায় ভালোবাসি?/অন্ধকারে লুকিয়ে মুখ/ আমি নিজের মনেই হাসি’ লাইনগুলো পড়ে কবির মতোই সে আমার দিকে এক অদ্ভুত দৃষ্টি ফেলে তাকাল আর এমন মিষ্টি করে হাসল যে, আমার সমস্ত চেতন অবশ হয়ে যাওয়ার মতো বোধ হলো।
‘কাল দেখা হচ্ছে, তাহলে?’ প্রশ্নটা কমন ফ্রেন্ডের হলেও উত্তরটা আরেকজন আশা করছিল। আমি তার চশমার ভেতর গলে চোখের দিকে তাকিয়ে তা বুঝতে পেরেছিলাম। তার সেই অপলক দৃষ্টিতে ছিল এক নীরব নিবেদন, আশ্চর্য অস্থির এক আহবান আর শব্দহীন কিছুর আকুতি!
‘হ্যাঁ, দেখা হচ্ছে। আপনি আসছেন তো?’ সরাসরি তার চোখে চোখ রেখে আমি জানতে চাইলাম। আবারো সেই হৃদয়-মোচড়ানো হাসি। আবারো আমার মনের তীরে শত সহস্র ঊর্মিমালার এলোমেলো আছড়ে পড়া। আর কোঁকড়ানো চুলের ভেতর অন্যমনস্ক ডান হাতটা ঢুকিয়ে তার বিশেষ ভঙ্গিমায় জানান দেওয়া, ‘আসছি।’
তারপর ঘনায়মান সন্ধ্যার ঈষৎ আলো-অন্ধকারে তাদের দুজনের হারিয়ে যাওয়া সেদিনের মতো। আর আমি চন্দ্রাহতের মতো ঘরের ভেতর থেকে বেরিয়ে এসে বারান্দার এক কোণে যেখানে মাঝারি মাপের একটা টব স্নো-বল নামের চন্দ্রমলিস্নকার ভারে ভেঙে পড়ছে, সেখানটায় দাঁড়িয়ে কেবল মহাদেব সাহা আওড়ে যেতে থাকি : ‘এতোদিনেও বোঝেনি যে/ আজ বোঝাবো কোন ভরসায়/ না-বলা সেই ছোট্ট কথা/ বলিনি কি কোনো ভাষায়?/ বলিনি কি এই কথাটি/ তোমার দিকে নীরব চেয়ে,/ এই গান কি সারাজীবন/ জীবন দিয়ে যাইনি গেয়ে?… ’ r

Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.