Eats, Shoots
& Leaves:
Lynne Truss.
Profile Books, London, 2003
Price : $9.99
গ্রীষ্মের দাবদাহে ‘খ্যাপা কুকুর ও ইংরেজ’
(Mad dogs and Englishmen) ছাড়া আর কেউ পথে বের হয় না – এ-ধরনের একটি কথা চালু আছে অনেক আগে থেকে। খ্যাপাটে দু-একজন ইংরেজকে দেখেছিও। এ-বইটি হাতে পেয়ে মনে হলো সেই খ্যাপামিরই আরেকটি উদাহরণ দেখছি। খ্যাপা না হলে কেউ কি এসব বিষয়ে গোটা একটি বই লিখে ফেলে? এবং আরো খ্যাপা না হলে সেই বই নিয়ে কেউ এত হইচই করে? বইটি বার হওয়ার পরপরই দেখেছিলাম, বিলেতের ইকোনমিস্ট পত্রিকা বইটিকে সে-বছরে পুস্তক-প্রকাশনার ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা (Publishing phenomenon) বলে দাবি করেছে। কিছুদিন আগে 888sport appরই একটি পত্রিকাতে দেখলাম যে, এ-বইটি ২০০৩ সালে বিলেতে প্রকাশিত শ্রেষ্ঠ বইগুলোর মধ্যে (যেখানে মনিকা আলির ব্রিক লেনের নামও আছে) মনোনীত হয়েছে।
এত কাণ্ড যে-বইটি নিয়ে, তার নামটি শুনলে কার সাধ্য বোঝে যে বইটি কী বিষয় নিয়ে লেখা। তবে হ্যাঁ, বইটির জ্যাকেটে বড় বড় অক্ষরে লেখা শিরোনামের নিচে ছোট অক্ষরে যা লেখা আছে তা কিছুটা আন্দাজ দেয় বইটির বিষয়বস্তু-সম্পর্কে। লিন ট্রাস (Lynne Truss) নামে বিলেতের একজন প্রাক্তন সম্পাদক, বর্তমানে লেখক এবং বেতার-টিভি সম্প্রচারকের লেখা এই বইটির নাম Eats, Shoots & Leaves Ñ The Zero Tolerance Approach to Punctuation। এবারে বোধহয় কিছুটা আন্দাজ করা যাচ্ছে বইটির বিষয়বস্তু-সম্বন্ধে।
‘জিরো টলারেন্স’ কথাটি ইউরোপ-আমেরিকায় খুব চালু হয়েছিল, আমি যতদূর জানি, নিউইয়র্ক শহরের প্রাক্তন মেয়র রুডি জুলিয়ানি যখন সেখানে অপরাধের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন, তখন। সেই সময়ে তিনি এবং নিউইয়র্ক শহরের পুলিশ কমিশনার দুজনে মিলে ঠিক করেছিলেন যে, কোনো অপরাধীকে প্রথম অপরাধ বলে আর কোনোরকম ছাড় দেওয়া যাবে না, কোনোরকম দয়ামায়া দেখিয়ে নরম পন্থা অবলম্বন করা হবে না। একটি অপরাধ করার সঙ্গে সঙ্গে তাকে ধরা হবে, এবং কোর্টে চালান করা হবে। বলা বাহুল্য, এ-কাজে তাঁরা অসাধারণ সাফল্য পেয়েছিলেন। নিউইয়র্ক শহরের অপরাধের মাত্রা দারুণভাবে কমে এসেছিল।
বইটি হাতে নিয়ে ভাবতে হলো, লেখক কি তা-ই চান? তাঁরও কি উদ্দেশ্য যে, ইংরেজি ভাষায় যতিচিহ্ন-ব্যবহারে কোনোরকম ভুলভ্রান্তি আর বিন্দুমাত্র সহ্য করা হবে না? সে-প্রশ্নের জবাব পরে খোঁজা যাবে। আপাতত দেখা যাক, বইটির এই অদ্ভুত নামের তাৎপর্য কী।
লেখক তাঁর বইয়ের জ্যাকেটের পিছনের পাতায় একটি কাহিনীর অবতারণা করেছেন। কাহিনীটি এরকম : এক রেস্তোরাঁয় একটি জলজ্যান্ত পান্ডা প্রবেশ করে একটি স্যান্ডউইচের অর্ডার দিল। তারপর পান্ডা মহোদয় ধীরেসুস্থে সেটি খেয়ে তার পিস্তলটি বের করে শূন্যে দুটি গুলি করে দরজা দিয়ে বের হয়ে যেতে থাকল। হতচকিত ওয়েটার এই কাণ্ড দেখে, ‘কী ব্যাপার’ জিজ্ঞেস করতেই পান্ডাটি একটি বই তার দিকে ছুড়ে দিয়ে বলল, আমি একজন পান্ডা। এই বইতে আমার সম্পর্কে কী লেখা হয়েছে দেখে নিন।’ বন্যপ্রাণীর পরিচয়-সংক্রান্ত সেই ইংরেজি বইতে পান্ডা নামক অতি পরিচিত, কিন্তু বিরল প্রজাতির, প্রাণীটির পরিচয় দেওয়া হয়েছে এভাবে : ‘Panda. Large black-and-white bear-like animal native to China.’ এ-পর্যন্ত ঠিকই ছিল। কিন্তু তারপরেই বেধেছে গোলমাল। পান্ডারা যে বাঁশের কুঁড়ি এবং পাতা খেয়ে জীবন-ধারণ করে, তা জানাতে গিয়ে বইতে লেখা হয়েছে, ‘Eats, shoots & leaves’। কী মারাত্মক ভুল দেখুন তো। ইংরেজি ‘ইটস’ এবং ‘শুট্স’ শব্দ দুটির মধ্যে একটিমাত্র কমা বসিয়ে দিয়ে কী দারুণ বিপর্যয় ঘটিয়ে দেওয়া হয়েছে! কী মারাত্মক পরিবর্তন করা হয়েছে অর্থের। কোন ইংরেজ আর সহ্য করতে পারে তাদের ভাষার এই দুরবস্থা? ওয়েটার পাতাটি বের করে দেখে নিয়ে বুঝতে পারল, বেচারা পান্ডাটির এ-কাজ না করে উপায় ছিল না।
নিজের ভাষার প্রতি দরদে আমরা কারো চেয়ে কম যাই না। বাহান্নতে প্রাণও দিয়েছি আমরা। কিন্তু তারপর সেই ভাষার দিকে কতটা নজর দিয়েছি? আমাদের ভাষাপ্রয়োগে কোনোরকম দোষত্রুটি Ñ ব্যাকরণের বড়রকমের ভুল নয় – প্রতিদিন রাস্তাঘাটে, বিজ্ঞাপনে-সাইনবোর্ডে-টিভি-সিনেমায়-কাগজের পাতায় যেসব বানান ভুল বা যতিচিহ্ন-সংক্রান্ত ভুল দেখি, সেসব সম্পর্কে কতদূর সচেতন আমরা? সেসব ঠেকানোর জন্য কতদূর কী করেছি আমরা? লিন ট্রাসের বইটি ইংরেজি ভাষার দৈনন্দিন প্রয়োগের ক্ষেত্রে এ-রকমের চিন্তাভাবনা থেকেই লেখা হয়েছে। লেখক দাবি করেছেন যে, তিনি কাউকে ব্যাকরণ শেখাতে চান না, কিন্তু ভাষাপ্রয়োগের ক্ষেত্রে, বিশেষ করে যতিচিহ্ন- ব্যবহারে, যেন ভাষার অর্থ বদলে না যায়, তা সবাইকে বোঝাতে বদ্ধপরিকর। নিজেকে এ-ব্যাপারে ‘স্টিকলার’ দাবি করেছেন তিনি। ইংরেজি ভাষায় স্টিকলার (stickler) শব্দটির অর্থ অভিধানে দেওয়া আছে, কোনো কিছু সঠিকভাবে করার ব্যাপারে খুঁতখুঁতে। এ-ধরনের লোকদের আমরাও খ্যাপাটে বলে থাকি। ভাষা নিয়ে এ-ধরনের খ্যাপামি আমাদের দেশেও যে কারো কারো নেই, তা নয়। শঙ্খ ঘোষের (কুন্তক) বই শব্দ নিয়ে খেলাতেই আছে এ-রকম এক খ্যাপাটে লোকের কথা Ñ হরিনাথবাবু। ইনি ট্রামে চড়ে ‘উজ্জ্বল’ সিনেমা হলের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময়, পাছে তাকে সেই অশুদ্ধ নামফলকটি দেখতে হয়, তাঁর চোখদুটি বন্ধ করে ফেলেন। কারণ, সেখানে লেখা আছে ‘উজ্জল’। ব-ফলার এই অন্তর্ধান তাঁকে যারপরনাই উত্তেজিত ও ব্যথিত করে তোলে। তিনি রেগে গিয়ে জিজ্ঞেস করেন, ‘দেশে কি কোনো শাসনব্যবস্থা নেই!’ এখানে স্বীকার না করে পারা যাচ্ছে না, এই আলোচককেও প্রায়ই এই যন্ত্রণা সহ্য করতে হয়। পথে হাঁটতে গিয়ে প্রায়ই চোখ আটকে যায় একটি বিজ্ঞাপনের বোর্ডে। সেখানে লেখা রয়েছে, ‘তো এক কাপ চা হয়ে যাক।’ কেন এই অকারণ ‘তো’? এটি আদৌ বোধগম্য হয় না। দেশের আর একটি বড় কোম্পানি কেন যে ‘ও’-কার বর্জন করে তাদের ইংরেজি নামটিকে ‘চতুষ্কণ’ লিখে থাকেন তা-ও এই আলোচকের বোধগম্য নয়।
আলোচ্য বইয়ের লেখকেরও সেই অবস্থা। রোজ সকালে কাজে বেরোবার সময়ে তাঁকে পেট্রলপাম্পের সম্মুখ দিয়ে হেঁটে গিয়ে বাস ধরতে হয়। একদিন সকালে, বাড়ি থেকে বেরিয়ে বেশ খোশমেজাজে হাঁটতে হাঁটতে সেই পেট্রলপাম্পের দিকে তাকিয়েই তাঁর চোখে পড়ে, সেখানে বড় বড় অক্ষরে ‘Come inside, for CD’s, VIDEO’s, DVD’s, and BOOK’s’। থমকে দাঁড়িয়ে যান তিনি। হায় হায়, এ কী দেখছেন তিনি! এভাবে উদ্দেশ্যহীন এতগুলো ঊর্ধ্বকমা ‘অ্যাপস্ট্রফি’ ছড়িয়ে দিয়েছে কে? হতভম্ব হয়ে যান তিনি। তারপর? লেখকের মুখেই শোনা যাক, ‘Within seconds, shock gives way to disbelief, disbelief to pain, and pain to anger.’ একটার পর একটা বাস চলে যেতে থাকে পথ দিয়ে, কিন্তু তাঁর মন নেই সেদিকে। সংবিৎ ফিরে পেয়ে কী করবেন, তিনি মনে মনে ঠিক করে ফেললেন। না, তখনই কারেকশন ফ্লুইড বা ফেল্ট কলম হাতে জেহাদে বেরিয়ে গেলেন না। তবে একটি আন্দোলন শুরু করার উদ্দেশ্যে তখনই যোগাযোগ করে ফেললেন আর একজন স্টিকলারের সাথে, যাদের একটি সংগঠন রয়েছে এবং সেই সংগঠনের নাম (বিশ্বাস হবে কিনা, জানি না) ‘Apostrophe Protection Society’, বাংলায় বলা যায় ‘ঊর্ধ্বকমা রক্ষা সমিতি’। লেখক তখন কাজ করেন ব্রিটেনের রেডিও-৪-এ এবং সেখানে তিনি তখন একটি সিরিজ তৈরিতে ব্যস্ত, যে সিরিজের নাম ‘কাটিং আ ড্যাশ’ (Cutting a Dash)। সেই সুবাদেই তিনি এই সোসাইটির কথা জানতেন। এ-প্রসঙ্গে এখানে বলে রাখি, খোদ লন্ডন শহরে খ্যাপাটে ইংরেজদের যে কতরকম অদ্ভুত সব সোসাইটি বা সংগঠন রয়েছে, তার একটি নমুনা পাওয়া যাবে এই শতাব্দীর প্রথম দিকে জি কে চেস্টারটনের লেখা The Club of Queer Trades নামের অপূর্ব একটি বইতে, যেটির একটি অনবদ্য বাংলা 888sport app download apk latest version (সম্ভবত, অধুনালুপ্ত সিগনেট প্রেস থেকে) বার হয়েছিল আজব জীবিকা নামে।
লিন ট্রাসের এ-বইটির উৎসর্গপত্রটি দেখলেই বোঝা যাবে এ-ব্যাপারে মহিলা কত সিরিয়াস। বইটি তিনি উৎসর্গ করেছেন, রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গের সেইসব ছাপাখানার কর্মীদের, যারা ছাপাখানায় অক্ষর বসানোর ক্ষেত্রে প্রতিটি অক্ষর এবং প্রতিটি যতিচিহ্নের জন্য একই হারে মজুরির দাবিতে ১৯০৫ সালে ধর্মঘট করেছিল, অক্ষর এবং যতিচিহ্নের মধ্যে কোনো বৈষম্য তারা মানতে রাজি ছিল না। লেখকের মতে, ওই ছাপাখানার কর্মীরাই প্রকৃতপক্ষে বলশেভিক বিপ্লবের পথিকৃৎ।
উৎসর্গপত্রে এ-কথা বলে বইটির ভূমিকাতেই তিনি যতিচিহ্ন বা পাংচুয়েশনের সংজ্ঞা-সম্পর্কে বলেছেন, যতিচিহ্নকে একেকজন একেকভাবে ব্যাখ্যা করে। কেউ যতিচিহ্নকে বলেছে সেলাইয়ের ফোঁড়। সেলাইয়ের ফোঁড়টি যেমন কাপড়কে একসঙ্গে গেঁথে একটি পোশাকে পরিণত করে, তেমনি যতিচিহ্নও যে-কোনো ভাষার শব্দগুচ্ছকে একত্রে ধরে রেখে তাকে অর্থবহ একটি বাক্যে পরিণত করে। কেউ আবার যতিচিহ্নকে বলেছেন, ভাষার ট্রাফিক সিগন্যাল। ট্রাফিক চিহ্নের মতোই যতিচিহ্ন আমাদের বলে দেয় কোথায় ধীরগতিতে যেতে হবে, কোথায় থামতে হবে, কোথায় সোজা পথ থেকে নেমে গিয়ে পাশ কাটিয়ে যেতে হবে ইত্যাদি। তবে, লেখকের মতে, যতিচিহ্নের সবচেয়ে অর্থবহ সংজ্ঞা যেটি তা হচ্ছে, ‘a courtesy designed to help readers to understand a story without stumbling’। বিলেতের একটি বিখ্যাত দৈনিক পত্রিকার ভাষা-নির্দেশক, যাকে বলা হয় ‘স্টাইল বুক’, তাতে যতিচিহ্নকে এভাবেই ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
এ-কথা বলে বইটির ছয়টি অধ্যায়ে নানারকম যতিচিহ্নের উৎপত্তি, প্রচলন, শুদ্ধ ও অশুদ্ধ প্রয়োগ-সম্বন্ধে আলোচনা করে গোটা বইটিকে মনোজ্ঞ এবং অত্যন্ত সুখপাঠ্য করে তুলেছেন লেখক। কমা-সেমিকোলন-ড্যাশ-ঊর্ধ্বকমা (ইংরেজি ভাষায় প্রথম আসে ষোড়শ শতকে)-প্রশ্নবোধক-আশ্চর্যবোধক চিহ্ন, ব্র্যাকেট ইত্যাদি যতরকম যতিচিহ্ন আছে ইংরেজি ভাষায় – সেগুলোর উৎপত্তি, ব্যবহারসংক্রান্ত নিয়মকানুন, সঠিক ব্যবহার না-করার বিপত্তি Ñ এগুলো দেখিয়েছেন পাতার পর পাতায়। অনেক মজার মজার সব উদাহরণ আছে যতিচিহ্ন-প্রয়োগের এবং অপপ্রয়োগের। আধুনিক ইংরেজি ভাষার কোন যতিচিহ্নটি কবে থেকে ব্যবহৃত হচ্ছে তারও ইতিহাস ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বইটির পাতায়। ব্রিটেনের স্কুলগুলোতে একসময়ে যতিচিহ্ন শেখানো হতো আলাদাভাবে। কার কতখানি পাংচুয়েশন জানা আছে তার একটি পরীক্ষা নেওয়া হতো স্কুলের ছাত্রদের। একটি প্রশ্নে বাচ্চাদের বলা হতো, এই বাক্যটিতে যতিচিহ্ন বসাও, ‘Charles the First walked and talked half an hour after his head was cut offÕ (DËi : ÔCharles the First walked and talked. Half an hour after, his head was cut off’)।
দু-একটি যতিচিহ্ন বদলে বসানোর ফলে পাশের এই দুটি বাক্যের কী পরিবর্তন হয়েছে, দেখুন। প্রথমটি, ‘A woman, without her man, is nothing.’ আর দ্বিতীয়টি, ‘A woman : without her, man is nothing.’। আমাদের ছেলেবেলায় ছোট শহরের গলির মুখের মিউনিসিপ্যাল করপোরেশনের একটি নিষেধাজ্ঞার যতিচিহ্ন অদল-বদল করে দিয়ে দুষ্টু ছেলেরা কী মজা পেত তা শুনেছি। নিষেধাজ্ঞাটি ছিল, ‘এইস্থানে প্রস্রাব করিবেন না করিলে শাস্তি হইবে।’
মার্লো থেকে শেক্সপিয়র, ডিকেন্স থেকে হেনরি ফিল্ডিং, গ্রাহাম গ্রিন থেকে কিংস্লে অ্যামিস – বহু লেখক-888sport live footballিকের লেখা থেকে যতিচিহ্ন ব্যবহারের নানাধরনের উদাহরণ টেনে এনেছেন লেখক। এইসব লেখকের যতিচিহ্ন-অভ্যাসের মজার মজার কাহিনী আছে বইটিতে। লিখেছেন, বিখ্যাত চেক ঔপন্যাসিক মিলান কুন্ডেরার কথা। তিনি একবার তাঁর এক প্রকাশকের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ করেছিলেন একটি সেমিকোলন ব্যবহার-সংক্রান্ত মতপার্থক্যের কারণে। কমা নিয়ে ঝগড়া-বিবাদেরও কমতি নেই ইংরেজি ভাষার লেখকদের মধ্যে। আমেরিকান হাস্যরসিক জেমস থারবার এবং তার বন্ধু বিখ্যাত নিউ ইয়র্কার পত্রিকার সম্পাদক হ্যারল্ড রসের মধ্যে কমার ব্যবহার নিয়ে আজীবন মতপার্থক্য রয়ে গেছে। মৃত্যুশয্যায় ঔপন্যাসিক গ্রাহাম গ্রিন তার উইলে একটি কমা বসিয়ে দিয়ে যে-বিভ্রাট সৃষ্টি করে গেছেন, তা নিয়ে আজো তাঁর ছেলে এবং অন্যদের মধ্যে বিবাদ চলছে। বার্নার্ড শ নাকি তাঁর দেওয়া যতিচিহ্ন ব্যবহার ঠিকমতো না হলে সে-নাটকের রিহার্সাল বন্ধ করে দিতেন। সামান্য কমা নিয়ে একটি সম্পূর্ণ পরিচ্ছেদ রয়েছে এ-বইতে, রয়েছে ঊর্ধ্বকমার উপরেও। কোলন এবং সেমিকোলন নিয়েও কম বিবাদ নেই। ওগুলো পুরনো হয়ে গেছে Ñ ওল্ড ফ্যাশন্ড, বলছেন অনেকে। সেমিকোলনের বিপক্ষে আছেন বহু বিখ্যাত লেখক। বিশ্বখ্যাত ইতালীয় ঔপন্যাসিক উমবার্তো ইকোকে যখন একজন সেমিকোলন-বিরোধী লেখক তাঁর বিখ্যাত বই দ্য নেম অফ দ্য রোজ-এ একটিও সেমিকোলন ব্যবহার না করার জন্য ধন্যবাদ জানাতে গেলেন, তখন ইকো জানালেন, যে টাইপরাইটারে তিনি এ-বইটি লিখেছেন সেই যন্ত্রে কোনো সেমিকোলন ছিলই না। অবশ্য 888sport live footballিকদের পছন্দ-অপছন্দ, ভালো লাগা-না লাগার ব্যাপারে শেষ কথা বলে কিছু নেই। তাঁদের মধ্যে, যত মত তত পথ। ‘James Joyce preferred the colon, as more authentically classical; P.G. Wodehouse did an effortlessly marvellous job without it; George Orwell tried to avoid the semicolon completely in Coming Up for Air (1939) …’। ফাউলার যতই বলুন শব্দ সংক্ষিপ্ত করলে সেখানে একটি ফুলস্টপ বসাতে হবে যেমন, govt. Mr. ইত্যাদি – আজকাল আর তা মানছে না অনেকে।
অধ্যায়ের পর অধ্যায়ে এ-ধরনের অজস্র উদাহরণ দিয়ে বইয়ের শেষের দিকে লেখক বলছেন, আর দেরি করা ঠিক হবে না। আমাদের আজই কিছু করতে হবে। ‘After journeying through the world of punctuation, and seeing what it can do, I am all the more convinced we should fight like tigers to preserve our punctuation, and we should start now.’ কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, এই ‘আমরা’- যাদের ডাকা হচ্ছে যুদ্ধে যোগ দিতে – তারা কে? তারা কি একতাবদ্ধ? তাদের মধ্যে কি মতপার্থক্য নেই? তা আছে, অস্বীকার করার উপায় নেই। তবু কিছু কিছু লোক আছে, যারা সিনেমার হোর্ডিংয়ে ছবির নাম Two Weeks Notice দেখে চমকে ওঠেন, তাদের একত্র হতেই হবে। বেরিয়ে পড়তেই হবে কারেকশন ফ্লুইড হাতে উইকস্-এর এস-এর মাথায় একটা ঊর্ধ্বকমা বসিয়ে দিতে। লেখক চান, তাঁর মতো খুঁতখুঁতেদের, যাঁদের ভেতরে কোন যতিচিহ্নটি শুদ্ধ এবং কোনটি অশুদ্ধ এ-সম্পর্কে এক ধরনের সপ্তম ইন্দ্রিয় কাজ করে, তাঁদের একত্র করতে, একটি ‘punctuation vigilante’ দল গড়ে তুলতে।
এ-কথা ঠিক যে, ইংরেজির মতো গতিশীল, ক্রমবর্ধমান এবং পরিবর্তনশীল একটি ভাষায় যতিচিহ্নের যথার্থ প্রয়োগ নিয়ে বিস্তর মতপার্থক্য রয়েছে এবং যতিচিহ্নগুলোর প্রয়োজন-অপ্রয়োজন-সম্পর্কে অনেক তর্কবিতর্ক রয়েছে। আজ এই ছাপাখানার বিপ্লবের যুগে, ই-মেল/টেক্সট মেসেজের যুগে, কারো কারো মতে এগুলো নেহাতই প্রচলিত রীতি, রেওয়াজ (convention) ছাড়া আর কিছুই নয়। কিন্তু তা বলে কি এসবের ব্যবহার ও অপব্যবহার-সম্পর্কে উদাসীন থাকতে হবে? এসব কনভেনশন বাদ দেওয়া যাবে? লুই ক্যারলের দি হান্টিং অফ দ্য স্নার্কে বেলম্যান কোনোরকম চিহ্ন ছাড়া একটি ফাঁকা ম্যাপ হাজির করে তার নাবিকদের জিজ্ঞেস করেছিল, ‘What use are Mercators North Poles and Equators, /Tropics, Zones and Meridian Lines?/So the Bellman would cry : and the crwe would reply, They are merely conventional signs!
এইসব কনভেনশনাল চিহ্নের যে প্রয়োজন আছে, সবাইকে তা জানিয়ে দিতে চান লেখক। সবাইকে এই আকর্ষণীয় বইটি পড়ার আহ্বান জানিয়ে এই আলোচকও একটি প্রস্তাব করতে চান। আমাদেরও অনেক কিছু করার আছে। শুরুতেই আসুন, আমরাও আমাদের মাতৃভাষার স্বার্থে অবিলম্বে একটি ‘চন্দ্রবিন্দু পুনরুদ্ধার কমিটি’ স্থাপন করি। রেস্তোরার লনে বসে যারা চাদের আলোয় হাসের মাংস খায়, এক হাতে কলম অন্য হাতে
চন্দ্রবিন্দু নিয়ে, তাদের দিকে ধেয়ে যাই।

Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.