গালিব-কাব্য

মূল : সরফরাজ খান নিয়াজি

888sport app download apk latest version : মাহমুদ আলম সৈকত

গালিবের মতন কবিরা প্রতিনিয়তই রূপান্তরিত হতে সমর্থ – এমনকি পার্থিব অর্থে – গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েও ঘটে অনুভূতি আর ঘটনার ক্রিয়া। গালিবকে যখন তাঁর 888sport app download apkর মধ্যে থেকে মাত্র একটি 888sport app download apk আবৃত্তি করতে বলা হলো, গালিব বললেন, তিনি তাঁর গোটা দিওয়ান (কাব্যসমগ্র) মোমিনের১ এই পঙ্ক্তিটির জন্যই পালস্নায় তুলতে পারেন :

তুম মেরে পাস হোতে হো গ্যয়ে

যব কোই দুসরা নেহি হোতা

 

তুমি আমার সঙ্গেই থাকো, যখন

আর কেউ থাকে না পাশে

এই পঙ্ক্তিদুটো বারবার পাঠে পাঠকের ভেতর যে গভীর প্রতিক্রিয়া ঘটে, তাতে যে-আবেগ ধরা পড়ে, তা কেবল এমন চিত্রিত পঙ্ক্তি প্রকাশের মধ্যে দিয়েই সম্ভব। পঙ্ক্তিটি সুলিখিত, যা খুব তরতরিয়ে হৃৎ888sport slot gameে সমর্থ। এর বহুমাত্রিক আবেদনও বর্তমান।

গালিব প্রধানত দার্শনিক শব্দচয়নের প্রতি আনত ছিলেন এবং উর্দু কাব্যকলায় তিনিই প্রথম দার্শনিক কবি হিসেবে স্বীকৃত। উর্দু কাব্য888sport live football পর্যালোচনায় তিন ধরনের কবির উল্লেখ পাই। প্রথম, যাঁরা প্রেম আর সৌন্দর্য প্রকাশে বাগ্মী, যেমন : মোমিন, দাগ দেহলভি২, হস্রৎ মোহানি৩, জিগার মুরাদাবাদি৪ প্রমুখ। আরেক ধরন দর্শনজাত। তাঁদের মধ্যে গালিব, আসগর গোন্দভি৫, ফানি বদায়ুনি৬ প্রমুখ যাঁরা তাঁদের জীবনব্যাপী দর্শনজাত জ্ঞান থেকে পাওয়া জ্ঞানকে 888sport app download apkয় চিত্রিত করেছেন। শেষোক্ত ধারাটি সরাসরি দার্শনিক, কবি ও দার্শনিক। এই ধারায় আছেন আলস্নামা ইকবাল৭, মাওলানা রুমি৮, বেদিল; মির্জা আবদুল কাদির৯ প্রমুখ। যেহেতু দার্শনিক কবিরা প্রকৃতি বিষয়ে অনুসন্ধিৎসু, ফলে তাঁরা সবসময়ই নিজেদের প্রকাশের জন্য নতুন-নতুন তরিকার সন্ধান করেছেন। ফলে, ঐতিহ্যিক ভাবধারার দিকে তাঁরা খুব অল্পই হেঁটেছেন।

সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম হলেও, ধর্মপালন গালিবের সয়নি। বরং তাঁর কাব্য জুড়ে ছড়িয়ে আছে স্রষ্টার সঙ্গে হাসি-ঠাট্টার নানা উপমা।

হামকো মালুম হ্যায় জান্নাত কি হক্বিকৎ লেকিন

দিল কে খুশ রাখনে কো গালিব ইয়ে খ্যয়াল আচ্ছা হ্যায়।

 

আমাদের জানা আছে স্বর্গ বিষয়টা কেমন সেই ভাবনায় মনটা খুশি রাখার চেষ্টা করা, খারাপ না।

গালিব স্পষ্টই উল্লেখ করেছেন, তিনি প্রার্থনা আর ধর্মানুরাগের 888sport app download bd বিষয়ে সম্যকভাবেই ওয়াকিবহাল; কিন্তু এসবের প্রতি অনুগামী নন, নমিত নন। গালিব একনিষ্ঠ একেশ্বরবাদী ছিলেন, কেননা তিনি বলছেন, ‘জো দুই কি বুঁ ভি হোতি তো কাহি দো চার হোতা’ অর্থাৎ যদি দ্বৈততার ক্ষীণতম ঘ্রাণও পাওয়া যেত, তবে তার সঙ্গে মিলন ঘটত কোথাও না কোথাও। গালিব মনে করতেন, তিনি আর স্রষ্টা আলাদা কেউ নন। অন্যদিকে তাঁর ছিল প্রচ- স্বাতন্ত্র্য বা অহংবোধ, সেইসঙ্গে প্রায়শই নিজেকে নিয়ে খামখেয়ালিপনা।

চির-অবকাশপ্রিয় গালিব ভুগেছেন তাঁর হৃদয়ের অতৃপ্তি নিয়ে। ভেতরে ছিল নিগূঢ় নাজুকতা, এক শিরা-ছটফটানো অসমেত্মাষ, যা তাঁর 888sport app download apkর ভেতর গভীরভাবে প্রোথিত আছে।

জিন্দেগি আপনি যব ইস শকল্ সে গুজরি গালিব

হম ভি ক্যায়া ইয়াদ করেঙ্গে কি খুদা রাখতে থে

 

নিজের জীবন যখন এমনই বিবর্ণ, গালিব,

কী করে যে ভাবি, একদা আমাতেই ছিল স্রষ্টার বাস?

গালিব যশ-খ্যাতি পেতে ভালোবাসতেন, রাজসভায় স্বীয় উপাধি আর তাঁর অবস্থান উঁচিয়ে রাখতে চাইতেন। বিষয়টা গালিবের প্রেমিকসত্তা আর অহংকারী সত্তার সঙ্গে পুরোপুরি অসামঞ্জস্য; কিন্তু বাস্তবে গালিবের এই ঔদ্ধত্য তাঁর খ্যাতির মোহের সঙ্গে মিশে বরং একটা অস্বস্তিকর ব্যক্তিত্ব দাঁড় করায়। কেননা জীবনভর

টাকা-কড়ি আর নাম-যশের জন্য সংগ্রামে তাঁর অধিকাংশ সময় কেটেছে হতাশায়। যদিও জীবনের এই টানাপড়েনের জন্য তিনি কাউকে দোষারোপ করেননি, তবু আমাদের এটা ভাবা উচিত নয় যে, একজন মানুষ হিসেবে তিনি এসবের মধ্যেই দিনগুজরান করতে ভালোবাসতেন।

 

গালিবের 888sport app download apkর মূল্যায়ন

তাঁর ব্যক্তিত্বের ওপর আলোকপাত করলে দেখা যায়, গালিবের 888sport app download apk বেশ শিলাময়, বহু তীর্যক বাঁক আর আনত রেখায় ভরপুর, বহু চূড়া আর সূক্ষ্মতম বিন্দুর সমাহার। মীর তকি মীর১০ বা মোমিনদের মতো সুবিদিত কবিদের স্বীয় 888sport app download apkয় স্বনির্মিত ভঙ্গি, বিশিষ্ট শব্দচয়ন আর ভাষাকে শাসনে রাখার ক্ষমতা ছিল। অন্যদিকে গালিব শুধু যে নিজ জীবন ছেনে 888sport app download apkকে বিচিত্র করে তুলেছেন তা-ই নয়, তিনি তাঁর সময়ের বা পূর্বতন কবিদের সৃষ্টি থেকে আহরণও করেছেন। কালানুক্রমে গালিবের 888sport app download apkকে নিম্নোক্ত চারটি ভাগে ভাগ করা যায় :

* দুরূহ কাল; প্রায় দুর্বোধ্য আর ব্যাখ্যাতীত পঙ্ক্তিমালা। এই ধারার 888sport app download apkগুলোয় ‘বেদিলে’র 888sport app download apkর ছায়া এন্তার। গালিব অবশ্য দিওয়ান সংকলন করার সময় এই ধারার 888sport app download apkগুলো থেকে বেশ কিছু 888sport app download apk সরিয়ে ফেলেছিলেন।

* শব্দকে ভাষার জাদুতে বন্দি করে রচিত পঙ্ক্তিমালা, যা খুব গভীর ধারণা বা চিন্তা থেকে উৎসারিত নয়। এই পর্যায়ে গালিবের ঝোঁক ‘নাসিকে’র১১ কাব্যভঙ্গির প্রতি।

* তীরের মতো, ধারালো খঞ্জরের মতো পঙ্ক্তিমালা; কাব্যরসে পরিপূর্ণ; আছে উদ্ভাবন, আছে গভীর ভাবনা আর শব্দচয়নের মুন্শিয়ানা। স্পষ্টতই মীর তকি মীরের প্রভাব।

* শেষ পর্বটি বেশ ভাবপূর্ণ আর মানসিক চাঞ্চল্যে ভরপুর, যা মাজমুন আর মা-নি আফরিঁ দ্বারা চালিত বা মোমিনের রচনার মূলাধার বলা যায়।

পাশাপাশি গালিবের কাব্যজীবন আমরা নিমেণাক্ত পাঁচটি বিশিষ্ট সময়কালে ধরতে পারি :

* ১৮০৯ থেকে ১৮২১ খ্রিষ্টাব্দ সময়কালে রচিত লেখাগুলোয়, ফার্সি ভাষা আর তার বহুধাবিসত্মৃত রচনাকৌশলে গালিবের 888sport app download apk খুবই প্রভাবিত ছিল। এ-প্রভাবটি কিছুটা প্রশ্নবিদ্ধও বটে, কেননা এই সময়কালের রচনার প্রকাশভঙ্গিতে উচ্চমাত্রার অতিকথন লক্ষণীয়। কাব্যভাবনার কতকটা পলকা ধাঁচের, যেখানে সৃজনশীলতার চেয়ে নির্মাণকাঠামোই প্রাধান্য পেয়েছে। গালিব নিজেও স্বীকার করেছেন : ‘শুরুর দিকে; বেদিল, শওকত আর আসিরের কাব্যভঙ্গি অনুসরণ করে লেখায় স্বচ্ছন্দ ছিলাম। ১৫ থেকে ২৫ বছর বয়সের মধ্যে, প্রধানত কল্পনাশ্রিত 888sport app download apkই লিখে গেছি। এই দশ বছরে, 888sport free betয় প্রচুর লেখা হয়ে ওঠে আমার কিন্তু যখন 888sport app download apkবিষয়ক বোঝাপড়াটা ঘটে গেল, ওগুলো থেকে

১০-১৫টি 888sport app download apk ছাড়া বাকি সবই ছিঁড়ে ফেলেছি। ওই ১০-১৫টি রেখেছি নিছক নমুনা হিসেবে।’ বিস্ময়করভাবে, যখন হাফিজের১২ রচনা পড়ি, যেমন ধরুন এই নিচেরটি :

 

আমার হৃদয়ে প্রেমের আগুন, বুক ভরে গেছে প্রেয়সীর

শোকে

এ ঘরে এমনই আগুন লেগেছে যা পোড়াল গোটা ঘরকে

 

গালিব লিখলেন –

 

দিল মেরা সোজ-এ নিহাঁ সে বে মুহবা জ্বল গ্যয়া

আতিশ-এ খামোশ কে মানিন্দ গোএআ জ্বল গ্যয়া

 

প্রেমের লুকানো তাপ কী নিদারুণ আহা হৃদয় পোড়াল

যেন ধিকিধিকি জ্বলন্ত আগুন ছাই হয়ে নিভে গেল

…    …    …

 

দিল মে যৌক-এ বিস্ল-ও-ইয়াদ-এ ইয়ার ত্বক বাক্বি নেহি

আগ ইস ঘর মে লাগি এয়সি কি জো থা জ্বল গ্যয়া

 

হৃদয়ে প্রিয়ার 888sport sign up bonus বেঁচে নেই, নেই পরমানন্দের কাঙক্ষা

পুড়ল এ ঘর এমনতর, কিছুই পেল না রক্ষা

…    …    …

 

এই দুটো উদাহরণেই হাফিজের সঙ্গে গালিবের 888sport app download apkর সাজুয্য ধরা পড়ে।

 

*          ১৮২১ থেকে ১৮২৭ খ্রিষ্টাব্দ সময়কালে রচিত লেখাগুলোয়, গালিব তাঁর উর্দু 888sport app download apk রচনার প্রতি কম মনোযোগী ছিলেন; কিন্তু যা-ই লিখেছেন তাতে

ফার্সি-প্রভাব কমে আসছিল এবং আমরা দেখি

একটু-একটু করে নাজিরির১৩ রচনাভঙ্গি গালিবের রচনায় প্রভাব ফেলছে। এক্ষেত্রে কয়েকটি কাল্পনিক অনুধাবন : ‘প্রেমিক-কবি’ এই অভিধাটি পোক্ত হতে থাকে, জীবনবাস্তবতার সন্ধান আর তার সুন্দর-সাবলীল বর্ণনায় ভরে উঠতে থাকে 888sport app download apk। এই সময়কালটি গালিবের 888sport app download apk পরিপক্ব হয়ে ওঠার।

 

*          ১৮২৭ থেকে ১৮৪৭, এই সময়কালেও গালিবের রচনা পারস্যমুখী, তবুও এই ২০ বছরেই তাঁর উর্দু 888sport app download apk সমসাময়িকদের ছাড়িয়ে যায় আঙ্গিক আর শৈলীতে। এই সময়েই তাঁর বেশ কিছু শ্রেষ্ঠ গজল রচিত হয়। যার দুটো পঙ্ক্তি :

 

মিলতি হ্যায় খুঁয়ে ইয়ার সে নার ইলতিহাব মে

ক্বাফির হু, গর না মিলতি হো রাহাত আজাব মে

 

প্রিয়জনের কণ্ঠ হুবহু শোনায় লকলকে জিভ আগুনের

আজাবেও যদি না পাই শান্তি ভেবো আমাকেও কাফের

 

* ১৮৪৭ থেকে ১৮৫৭, এই সময়ে গালিব সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফরের১৪ দরবারের সান্নিধ্যে ছিলেন এবং উর্দু রচনার প্রতি বিশেষ মনোযোগী হন। এই সময়কালের রচনায় আমরা পরিণত ভঙ্গি, সূক্ষ্ম শব্দচয়নের মুন্শিয়ানা, রসবোধ, জওকের১৫ রচনাভঙ্গিতে উদ্বুদ্ধ কিছু চাতুরীভরা রচনা পাই। যে পঙ্ক্তিগুলোর মানে বেশ গভীর কিন্তু প্রকাশভঙ্গি

সহজ-সাবলীল। উদাহরণ হিসেবে :

 

বফা ক্যয়সি, কাহা কি ইশ্ক, যব শর ফোড়না ঠ্যহরা

তো ফির, এ্যয় সঙ্গদিল, তেরা হি সঙ্গ-এ আসত্মাঁ কিউ হো

 

আনুগত্য কেমন, প্রেম কী, এ-তো প্রায় মস্তক ফাটানোর

মতো ব্যাপার

বটেই! হে পাথরপ্রাণের প্রেয়সী তবে আর তোমার

ত্রিসীমানায় যাওয়া কেন!

 

* ১৮৫৭ থেকে ১৮৬৮, এই সময়কালেও পূর্বেকার রচনাগুলোর সাবলীল ভঙ্গি চলমান থেকেছে এবং তার সঙ্গে সজাগ, ক্ষিপ্র বোধের তীব্র প্রকাশ যুক্ত হতে দেখি। ততদিনে তাঁর কাব্য চরম উৎকর্ষ লাভ করলেও বয়স তাঁকে কাবু করে ফেলেছে, তাঁর সেই অনন্য অনুভবগুলো কিছুটা মিইয়ে আসতে শুরু করেছে। গালিব আরো বেশি শব্দচয়নে আগ্রহী হলেন, প্রকাশে আরো নমিত হলেন।

 

হাজারোঁ খাহিশে এ্যয়সে কে হর খাহিশপে দম নিকলে

বহত নিক্লে মেরে আরমাঁ লেকিন ফিরভি কম নিক্লে

 

হাজারো বাসনা হৃদয়-গভীরে, যার প্রতিটিই প্রাণহরা

যদিও মিটেছে অনেক বাসনা, রয়ে গেছে কত অধরা

 

 

রচনাশৈলীর অনন্যতা

প্রত্যেক কবির রচনাতেই কিছু অনন্য বৈশিষ্ট্য থাকে যা তাঁকে অন্যদের রচনা থেকে বিশিষ্ট করে তোলে আর গালিবের রচনাও তার অন্যথা নয়। আমরা তাঁর কাব্যকে নয়টি ভিন্ন-ভিন্ন বৈশিষ্ট্যে খুঁজে পেতে পারি। গালিবের রচনাশৈলী খুব সহজেই চেনা যায় এবং বস্ত্তত যা সব কবির চেয়ে 888sport apk download apk latest versionর্হ্য। আশ্চর্যজনকভাবে, এই বিষয়ে তিনি সম্যক অবগত ছিলেন, যা বারবার বিধৃত করেছেন 888sport app download apkয় :

হ্যায় অউর ভি দুনিয়া মে সুখনবর বহত আচ্ছে

ক্যহতে হ্যায় কি গালিব কা হ্যায় আন্দাজ-এ বায়াঁ অউর

 

পৃথিবীতে আরো অনেক বাগ্মী কবি রয়েছেন

কিন্তু শুনেছি গালিবের 888sport app download apk না কি অন্য মাত্রার

…   …   …

 

আদায়ে খবাস সে গালিব হুয়া হ্যায় মুখ্তসর

সালায়ে আ-ম হ্যায় ইয়ারা-এ নুক্তা দাঁ কে লিয়ে

 

কী অনন্য ঢঙে গালিব গেয়েছে তাঁর পঙ্ক্তিমালা

ওহে নিন্দুকের দল এ-ই আমার সহজ কথা

…    …    …

 

ইয়ে মাসায়িল-এ তাসাউফ ইয়ে তেরা বায়াঁ গালিব

তুঝে হাম ওলি সামাঝতে জো না বাদাখবার হোতা

 

এমন মরমিয়া বাণী আর তোমার মহিমান্বিত বয়ান

যদি না মদ্যপ হতে তোমায় গালিব পীর মানতাম

…    …    …

আমরা যাকে গালিবের রচনার ভঙ্গি বা অনন্য শৈলী বলি তা আসলে অদ্বিতীয় বৈশিষ্ট্যম–ত; বিশেষ করে উপমা আর রূপকের আবিষ্কার, শব্দ আর কল্পনার উপস্থাপনা। এমনকি বহু ব্যবহারে জীর্ণ বিষয়গুলোও যখন গালিব পুনরায় উপস্থাপন করেন তখন তা পাঠে খুব চিত্তাকর্ষক হয়ে ওঠে। গালিবের পঙ্ক্তি এতটাই শক্তিশালী। দেখার চোখটাকে ছড়িয়ে দিয়ে গভীরে প্রোথিত করে, যে কেউ এর থেকে খুঁড়ে তুলতে পারবে, ধারণ করতে পারবে। ফলে গালিবের রচনা তীক্ষন মনোসংযোগের দাবি রাখে। যেমন ধরুন :

শোর-এ পান্দ-এ নাসিহ্ নে জখম পর নমক ছিড়কা

আপ সে কো-ই পুছে: তুম নে ক্যায়া মাজা পায়া

 

ধর্মপ্রচারকের নিন্দামন্দ আমার কাটা ঘায়ে লবণ ছিটাল

তাকে কেউ করো তো জিজ্ঞেস, কতটা সে আনন্দ পেল?

আপাতদৃষ্টিতে এটি ধর্মপ্রচারকের প্রতি বিষাদপূর্ণ ভঙ্গিতে সাদাসিধে অভিযোগ, কিন্তু গালিবের পঙ্ক্তিতে সাদাসিধে বলে কিছু নেই আসলে। তিনি লিখলেন ‘শোর’, হট্টগোল বা চিৎকার বোঝাতে, কিন্তু ‘শোরে’র অন্য মানে কিন্তু নুনও, যা গালিবের রচনার অতিসূক্ষ্ম ভাবকে সত্যতা দান করে। নুন আর ক্ষতের মধ্যেকার যোগাযোগটা এখানে দারুণভাবে বিধৃত হয়েছে।

গালিবের রচনার সৃজনশীল ধরনটি নানা চিন্তা আর কল্পনার দিকে ঠেলে দেয়। যেমন :

লাগ হো তো উস কো হাম সামঝে লাগাও

যব না হো কুছ ভি তো ধোঁকা খায়ে ক্যায়া

 

শত্রুতা, যদি থাকেও বা, আমি তাকে প্রেমজ্ঞান করি

কিন্তু যদি না থাকে অনুভব, কী করে নিজেকে প্রতারণা

করি?

…   …   …

 

না থা কুছ তো খুদা থা, কুছ না হোতা তো খুদা হোতা

ডুবোঁয়া মুঝ কো হোনে নে, না হোতা ম্যায় তো ক্যায়া

হোতা

 

যখন আর কিছুই ছিল না তখন স্রষ্টা ছিল, যদি কিছু

না-ও থাকত স্রষ্টা থাকত

আমি ছিলাম বলেই ডোবাতে পারলে, যদি না থাকতাম

তবে কী করে পারতে?

…    …   …

 

বস্ কি দুশবার হ্যায় হর কাম কা আসাঁ হোনা

আদমি কো ভি মায়াসার নেহি ইনসাঁ হোনা

 

কোনো কিছু ঠিকঠাক হয়ে ওঠা যেমন দুঃসাধ্য

মানুষের মানবিক হয়ে ওঠাও কখনো অসাধ্য

…   …   …

 

গালিবের সৃজনশীল রচনার শব্দগুচ্ছ নতুন নির্মিত ভাষা দেয়, বহু কাব্যকাঠামোকে একত্র করে, বহু ব্যবহৃত শব্দের নতুন ব্যবহার দেখায়। নতুন-নতুন উপমা আর রূপকের ব্যবহার গালিবের রচনাকে সমধিক জনপ্রিয় করেছে, যদিও পূর্বেকার কবিরা মুন্শিয়ানার সঙ্গে এর সামান্যতমই ব্যবহার করতে পেরেছেন।

হ্যায় জবল আমদা অযজা আফ্রিনিশ কে তামাম

ম্যহর-এ গারদুঁ হ্যায় চারাগ-এ র‌্যহগুজার-এ বাদ ইয়াঁ

 

পূর্বধারণা থেকে অপস্রিয়মাণ হওয়াতেই থাকে প্রকৃতির সমস্ত শক্তি

ঝঞ্ঝাক্ষুব্ধ পথ যেমন মুছে দিয়ে যায়, সূর্য যেমন আলো জ্বেলে রয় পথে পথে

…   …   …

 

গ্বম-এ হস্তি কা আসাদ কিস সে হো জুয মার্গ ইলাজ

শম্মা হর রঙ্গ মে জ্বলতি হ্যায় শ্যহর হোতে তক

 

মৃত্যু ছাড়া হে আসাদ আর কীসেই বা দুঃখভরা জীবনের পরিত্রাণ মেলে

অহর্নিশি মোম জ্বলে যায়, তাকে পুড়ে যেতে হয় ভোর অবধি হেসেখেলে

…   …   …

 

দম লিয়া থা না কিয়ামত নে হানুয

ফির তেরা ওঅক্ত-এ সফর ইয়াদ আয়া

 

হাঁফ ছেড়ে বাঁচার মুহূর্তে প্রলয়ক্ষণের কথা মনে পড়েনি

অথচ এখন যাওয়ার পথে মনে পড়ল

…   …    …

 

এমনকি খুব সাদাসিধে ভাবনাও কী সমৃদ্ধ সৃজনশীলতার পথে নিয়ে যান তিনি :

 

বুঁ-এ গুল, নালায়ে দিল, দুঁদ-এ চিরাগ-এ ম্যহফিল

জো তেরি বাজম সে নিকলা সো পরেশাঁ নিকলা

 

তোমারই মৌতাতে ফুলের সুবাস, কান্নাভেজা হৃদয় আর

ধোঁয়াধূসর বাতি

তোমাকে যে ছেড়ে এসেছে ওখানে, সে এসেছে পরিশ্রান্ত

 

কঠিন-প্রিয়

অন্য কবিদের রচনা থেকে গালিবের রচনাকে আলাদা করে যে আরেকটি বৈশিষ্ট্য, তাঁর কাব্যে প্রেমবিষয়ক চিন্তার দুরূহ প্রকাশ যা প্রায়সময়ই বুঝে ওঠা মুশকিলের। ধরা যাক, ‘আলিফ’ বর্ণটি দিয়ে ধাতব আয়নার রংচটা প্রলেপ (ক্ষেত্রবিশেষে সরলরেখাও!) আর গলাবন্ধের গিঁটের মধ্যেকার সাযুজ্য এমতো ধারার মাত্র একটি উদাহরণ। তাঁর শৈলী আমাদের মনে করিয়ে দেয়, কোনো এক হাকিম মুনাক্কইয়ের শঠতাপ্রসূত ‘রাসায়নিক চন্দ্র’ তৈরির প্রতারণার কথা; গলায় আঁটানো ‘কুমরি’র ধাতব মালার সঙ্গে বাগিচার দরজায় আঁটা খিলের তুলনা; পিঠে হরিণের চিরলচোখের পাপড়ির আঁচড় নিয়ে স্কন্ধপদহীন শরীরে আদিম প্রান্তরে ছুটে চলা; এই ভেবে যে, আজকের রাতটা নিকষ কালো কেননা আকাশে দুর্যোগের ঘনঘটাহেতু চাঁদের দৃষ্টি ঊর্ধ্বপানে নিবদ্ধ। ধাতব আয়নায় মরিচার ছোপের উল্লেখ করতে গিয়ে ‘চঞ্চল তোতাপাখি’র বর্ণনা আর এই ঘোষণা জারি করা যে, ওই তোতাকে কথা বলা শেখাতে ব্যস্ত বিধায় প্রেমিকের প্রতি দয়িতার হিংসা জাগে। প্রাচীন ফার্সি ভাষা ব্যবহারের প্রচলন যেমন ‘হাতের চেটো’, ‘ঘোষণাপত্র’ এবং ‘আস্তিনে বাঁধা হৃদয়’; কারুকার্যময় পানপাত্রে রাখা মদ একঘেয়ে সময়ে নিজেকেই

আঁচড়ে-খামচে চলা; বন্যার জলে তৈরি হওয়া ফেনারাশিতে ঘরের জানালা অবরুদ্ধ হয়ে ওঠা – গালিবের পাঠকদের জন্য এসবই খুচরো কিছু নমুনা, যার মাধ্যমে গালিব পাঠকের পাঠাভ্যাসে ভীষণ অস্বস্তি জাগিয়ে তোলেন। এই প্রসঙ্গে একটা আয়রনি, গালিব নিজেই বন্ধুদের প্রতি লেখা বেশ কিছু চিঠিতে স্বীয় কাব্যসৃষ্টিকে পরিশুদ্ধকরণের কথা বলেছেন, আর এই কথা বা ব্যাখ্যাটিরও পাঠোদ্ধার করা বেশ দুরূহ। নিজেকে প্রকাশের জন্য গালিব এমন কঠিন পথ বেছে নিলেন কেন? ফিরে যাই গালিবের স্বকীয়তার কথায়, যেখানে তিনি কোনো নির্দিষ্ট শৈলীতে আটকে পড়াটাকে অস্বীকার করেছেন। যা-ই হোক, তাঁর এই শৈলী, পাঠকদের বুঝে নেওয়ার স্বকীয় ক্ষমতা আর বুদ্ধিমত্তা পরীক্ষারই এক অনন্য কৃষ্টি।

 

ইঙ্গিতধর্মী

একটা পঙ্ক্তিতে যা বলা আছে তার নিহিতার্থ অনুমান ও হৃদয়ঙ্গম করতে, এমনকি এর বাইরেও ভাবনার জগৎ আঁকতে পাঠককে বাধ্য করার যে  888sport live chat, তা গালিব বেশ রপ্ত করতে পেরেছিলেন আর এদিক থেকে তিনি অন্যদের ছাড়িয়ে গেছেন নিশ্চিতভাবেই। স্পষ্টতই এটি মা-নি আফরিঁর বিসত্মৃত ভুবনেরই সাক্ষ্য। যেমন ধরুন, যখন বলা হচ্ছে, ‘কী এমন বিষণ্ণতা আছে মরুভূমিকে দেখার ভেতর, আমি আমার গৃহের কথাই ভাবি’,১৬  পাঠক নিশ্চিতভাবেই ভাববেন যে, মরু লীন হয়ে আছে গৃহে অথবা ঘরটাই লীন হয়েছে মরুতে আর এই ভাবনাটাই কেমন বিষণ্ণময়। সম্ভবত সর্বাধিক স্বীকৃত ইঙ্গিতবাহী পঙ্ক্তিটি এরকম :

আয়না দেখ আপনা সা মুহ লে কে র‌্যহ গ্যয়া

সাহিব কো দিল না দেনে পে কিৎনা গুরুর থা

 

আয়নায় তাকিয়ে, মুখচ্ছবিই তোমায় লজ্জায় ফেলে দিলো

হৃদয় হারাবে না বলে তোমার না ভীষণ দেমাক ছিল!

 

গালিব এখানে নার্সিসিজমের চর্চা করেছেন, যেখানে প্রিয়তমা, স্বীয় সৌন্দর্যে মোহমুগ্ধ, নিজেই নিজের প্রেমে পড়ে মন সঁপে দিয়েছে নিজেকেই। তারপর, তার আত্মতৃপ্তির অহমিকা বিষয়ে বোধোদয় ঘটে তখন, যখন প্রেমিকপ্রবরটি তার কাছে প্রেম প্রার্থনা করে।  গালিবের রচনায় বিধৃত এমন অজস্র ইঙ্গিতপূর্ণ পঙ্ক্তি, যা হৃদয়ঙ্গম করার জন্যে ঝানু পাঠককে বারংবার পাঠে আগ্রহী করে। পঙ্ক্তিতে ছড়ানো এই যে ঘনীভূত ভাবনা তা গালিবের চিন্তাশৈলী আর তাঁর অদ্বৈতবাদের প্রতি বিশ্বাসকেই সম্পর্কিত করে। গালিবকে বিশদে জানতে হলে, তার গোটা ব্যক্তিত্ব সম্বন্ধে জানা জরুরি। উদাহরণস্বরূপ, সমস্ত দুঃখ-দুর্দশা সয়ে যাওয়ার পরও কিন্তু গালিব আসলে শুভবাদীই। তাঁর জনপ্রিয় পঙ্ক্তি, ‘আমি তাঁর কাছ থেকে বিশ্বস্ততা আশা করি, যে কি-না জানেই না বিশ্বাস কী ধন’১৭। আমরা এই পঙ্ক্তিটি এভাবেও না হয় পড়ে দেখি, ‘তাঁর থেকে আমি পেতে চাই আনুগত্য, যদিও সে এখনো জেনে উঠতে পারেনি প্রতিশ্রম্নতি কেমন করে দিতে হয়।’ নিহিতার্থ এই, প্রিয়তম এখনো এতটাই তরুণ, অপাপবিদ্ধ আর অনভিজ্ঞও বটে, যে ভালোবাসার কাঠগড়ায় সে এমন কোনো প্রমাণই হাজির করতে পারল না, যাতে হাকিমরূপী প্রেমিক কিছুমাত্রও তার প্রতি সদয় হয়। ইত্যাকার বিষয়ে যেদিন বুঝদারের মতন বিকশিত হয়ে উঠবে, সেদিনই সে তার প্রেমের চৌহদ্দিটা ঠিকই বাড়িয়ে দেবে প্রিয়তমের প্রতি। এই ইঙ্গিতে, গালিব আরেকটি উপাদানও সামনে টেনে আনলেন – আত্মপ্রবঞ্চনা, প্রগলভতা আর মিথ্যা আশার ফুলঝুরি আর এই ধাঁচের প্রবণতা গালিবের কাব্যভাবনায় আকছার উল্লেখ হয়েছে।

 

গাঁথামালার মালি

শে’র মূলত দুই পঙ্ক্তির সমষ্টি, যা নিজেই একটি সম্পূর্ণ ভাবপ্রকাশে সমর্থ, যার সঙ্গে পূর্ববর্তী বা পরবর্তী পঙ্ক্তির সাযুজ্য না থাকলেও চলে। এটি সর্বতো-ভাবনার পূর্ণাঙ্গ প্রকাশ। সর্বোৎকৃষ্ট গজল রচনায় গালিবের অসামান্য দক্ষতায় চমৎকৃত হওয়ার কিছুই নেই, কারণ দার্শনিক ভাবনাগুলো এক-একটা গল্পে পুরে দিয়ে একটা গজল রচনার দ্বন্দ্বমুখর পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছেন গালিব, ঘটনা পরম্পরাকে ধরেছেন মাত্র দুটো পঙ্ক্তিতে ভাবীকথনের অখ-তায়। তিনি নিজেই লিখেছেন, ‘আমার পঙ্ক্তিতে যেসব শব্দ ঠাঁই গেড়েছে,

ভেবে নাও ওসব আসলে জাদুময় গুপ্তধন।’ বস্ত্তত, এমন অনেক শব্দই আছে যার একটিকে ব্যাখ্যা করতে খরচ হবে হাজারটা শব্দ। দুটো বুলবুলি যে পঙ্ক্তিতে কথা বলছে, ধরুন সেটার কথাই বলি, একটা ধরা পাখি খাঁচার ভেতর, আরেকটা ছাড়া পাখি উড়ে এসে ডালে বসে আছে। ‘খাঁচায় থাকা আমাকে বাগিচার গল্প শোনাতে সংকোচ করো না বন্ধু, কুলায় যে বাজ আছড়ে পড়েছিল গতকাল তা আমার কুলা ভাবছো কেন?’১৮, চরম বিষাদভরা সাজানো পঙ্ক্তি : আত্ম-প্রবঞ্চনা, অসহায়ত্ব আর বন্ধুতা সব এসে মিশেছে যাতে। যে কেউ চাইলেই যে কোনো পঙ&&ক্তর ভিন্ন মানে ভাবতে পারেন, ভিন্ন দৃশ্যকল্পে সাজাতে পারেন, বহু চরিত্রে, নানা গল্পেই একে আঁকতে পারেন। আরেকটা পঙ্ক্তি এরকম : ‘যখন, যদি কখনো, পানপাত্র উঠে আসে হাতে, অবাক হওয়ার কিছু নেই যদি সাকি পানীয়র সঙ্গে কিছু মিশিয়ে দেয়ও বা।’১৯ কবি এখানে পানপাত্রের জন্য অপেক্ষারত, যেমন তিনি বরাবরই থাকেন। আজ, যা-ই হোক, বিষয়টা কেমন ভিন্ন খাতে বইছে, পানপাত্র তার প্রেমিকের সঙ্গে ছলনারত। ফলে সন্দিগ্ধ প্রেমিক ভাবতে বসেছে, তবে কি সুরায় আজ গরল মিশিয়ে দিয়েছে প্রেমিকা, যা তাকে চরম একাকিত্বের দিকে ঠেলে দিচ্ছে? অথবা এ-ও হতে পারে যে, আজকের পানীয় একটু কড়া মেজাজের যা অন্যদের চেখে দেখা দূর-অস্ত। সুরা এখানে দয়ার্দ্র প্রেমিকারূপেই বিধৃত। এর মানে কি এই যে,

সুরা-প্রেয়সী আসলে কবির পরীক্ষা নিচ্ছে?

 

রসিক কবি, রসবোধের কবি

গালিবের 888sport app download apkর ভঙ্গি প্রসঙ্গে আমরা তাঁর অদ্বিতীয়তা বা অনন্যতার কথা বলি। কিন্তু ‘অনন্যতা’ আসলে কী? গালিবের 888sport app download apkর 888sport app বৈশিষ্ট্যের মতোই, কাব্যে রসবোধের সঞ্চার 888sport app কবি এবং সমসাময়িকদের রচনা থেকে একদমই আলাদা। যদিও কাব্যে রসবোধের চমৎকার ব্যবহার করেছেন এমন কবি উর্দু 888sport live footballাকাশে দুর্লভ নন, কিন্তু গালিব ছিলেন ‘কবি-সুরসিক’, ‘রসিক-কবি’ নন। কখনো তিনি বিদ্রূপাত্মক, চতুর, রসিক, কখনো বা সূক্ষ্ম কৌতুকমিশ্রিত তাঁর রচনা, যেটাই হোক, ভঙ্গিটা তিনি তাঁর মতো করে সাজিয়ে নিয়েছিলেন। উদাহরণস্বরূপ, হজরত খিজিরের (অমরত্ব দাবি করার জন্য বিখ্যাত) অমরত্বের প্রতি স্বীয় নৈবেদ্য অর্পণ করতে গিয়ে তিনি যে হাস্যরসে ডুবেছেন, সেটি প্রণিধানযোগ্য। তাঁর নৈবেদ্যর ফুটিফাটা অংশও যেন বিফলে না যায় সেজন্য মাতম করেছেন। এই পঙ্ক্তিটিতে গালিবের অঢেল চাতুরীভরা উক্তিই কেবল নয়, জড়িয়ে আছে প্রেমাস্পদের কথকতা, অন্যদিকে স্রষ্টার সঙ্গে তাঁর অন্তরঙ্গ আলাপন। ‘যতটা অসম্মানই সে আমাকে করুক, আমি তা গ্রহণ করব হাসিমুখে, ওর ঘরের দ্বাররক্ষী আমার চিরচেনা বন্ধু হয়ে উঠেছে যে’২০, এখানে, পর্যদুস্ত হয়ে ওঠার এক সম্পূর্ণ চিত্র ধরা পড়ে, যাতে দেখা যায়, কবি গালিব প্রেয়সীকে পাওয়ার আশায় ঘুরেফিরে মরছেন আর এরই ফাঁকে তিনি ওই প্রিয়ার বাড়ির দ্বাররক্ষীর বন্ধুস্থানীয় হয়ে উঠেছেন। অন্য আরেক পঙ্ক্তিতে তিনি বলছেন, ‘শোধ নেব এই পরীর মতো সুন্দরীদের ওপর, খোদার কৃপায়, ওরা যদি স্বর্গে হুর হয়ে আসে’,  মর্ত্যে সুন্দরীদের বাগে আনতে না পেরে, ওদেরকে স্বর্গে গিয়ে হলেও বাগে পাওয়ার আশা করছেন কবি। শুনে মনে হয়, স্বর্গবাস তাঁর জন্য প্রায় নিশ্চিতই (আদতে তাঁর কৃতকর্ম কিন্তু সেরকম কোনো আভাস দেয় না)। অন্যত্র, গালিব বলেছেন যে, প্রিয়ার সান্নিধ্য পাওয়ার পথে তিনি যতটুকু হাঁটতে চেয়েছেন বরং তারচেয়ে কমই সেই আকুতি শব্দে-বর্ণে ধরতে পেরেছেন। তারপর পরিবেশনকারীর কাছে জানতে চাইলেন স্বর্গের সুরার কথা, আমোদে ভাসলেন, কেননা পরিবেশনকারী না জানে নিজে চেখে দেখতে, না পারে অন্যকে তৃপ্তি এনে দিতে। আরেকটা পঙ্ক্তি এরকম, ‘যদি তুমি (প্রিয়তমা) নগরে অবস্থান করো তাহলে আর কীসের ভাবনা/ আমরা বরং বাজার থেকে আরো কিছু হৃদয় কিনে নিয়ে আসি’২১,  কী দুর্ঘট পাকলো! প্রিয়তমা যখন নগরের পথে-পথে হেঁটে বেড়ায়, প্রেমিকের দল ভয়ে মরে, পাছে তাদের হৃদয় এমনকি প্রাণও যদি চলে যায়? সুতরাং তারা নিজেদের বিক্রির জন্য বাজারে গিয়ে দাঁড়ায়, যাতে করে দ্রম্নতই দরপতন ঘটতে পারে আর ওটি ঘটলেই তো কেলস্নাফতে, কমদামে বেশি বেশি হৃদয় কিনে প্রিয়তমাকে খুশি করা যাবে। গালিবের চতুরতা শিখর ছোঁয় যখন তিনি বলেন, ‘ঠিক আছে, চুমু দিও না, তারচে’ বরং একটু কটাক্ষই করো। চুমু দেওয়ার মতো ঠোঁট তোমার না থাকতে পারে; কিন্তু কণ্ঠ তো আছে’২২,  ‘দেখা যাক ওই প্রতিমার কাছ থেকে কতটা সুবিধা আদায় করা যায়, এক ব্রাহ্মণের কাছে শুনেছি এ-বছর নাকি দারুণ ফসল ফলবে’ ২৩ প্রতিমা, হিন্দু ব্রাহ্মণ আর পঞ্জিকার অনুমানশক্তি – গালিবের 888sport app download apk এসবেরই চমৎকার সহাবস্থান।

 

ছলনার খেলা

শব্দের আড়ালে ওত পেতে থাকা কৌশলী ভাবনায় গালিবের চেয়ে আর কে সিদ্ধহস্ত! ‘আমার মৃত্যুর পর কে আর এমন উচ্চ- মদকে হজম করতে পারবে?/ আমার মৃত্যুর পর শুঁড়িখানার পরিচারক বারবার ডেকে ফিরবে’২৪,  দুধরনের মানে হতে পারে পঙ্ক্তিটির, প্রথমত, আমার মৃত্যুর পর এমন কড়া মেজাজের মদের খরিদ্দার পাওয়া দুষ্কর, আর পরিচারক খদ্দেরের আশায় হন্যে হয়ে ঘুরবে। অন্য মানেটা এরকম, পরিচারক খদ্দেরের আশায় থেকে-থেকে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে নিজেকেই শোনাচ্ছে কথাকটি। সম্ভবত, গালিবের 888sport app download apk মানবচরিত্র প্রকাশের সবচেয়ে উদ্ভাবনী ক্ষমতার প্রাণবন্ত উদাহরণ। এমনকি পরিচারকটি যখন হতাশাবৃত হয়ে নিজের সঙ্গে কথা বলছে, যেমনটা আমরা নিজেরাও করে থাকি প্রায়ই। ‘কী করে প্রতিমার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে বাঁচি, আমার বিশ্বাস কি আমারও প্রিয় নয়?’, একটা মানে হতে পারে, প্রিয়তমার জন্য জীবন উৎসর্গ করাতেই আমার আস্থা, কাজেই আমার জীবন আমার কাছে প্রিয় নয়। অন্য মানে, আমি যদি নিজেকেই ভালো না বাসি তাহলে তো সে (প্রিয়তমা) আমার বিশ্বাসকে অবজ্ঞা করবে, আমার কাছে জীবনের চেয়ে বিশ্বাসের মূল্য অনেক বেশি। ‘আমার প্রতি তাঁর (প্রেমিকার) দেওয়া প্রতিশ্রম্নতির কথা যখন মনে করিয়ে দিতে চাইলাম/ সে হেসে বললো – হলফ করে বলছি অমি ভুলিনি’, একরকম মানে হতে পারে, যে, সত্যিই প্রতিশ্রম্নতির কথা তাঁর মনে আছে। অন্যটা সম্পূর্ণ এর বিপরীত।

 

হৃদয় হরণকারী

গালিব পাঠকের হৃদয় হরণে সফল ছিলেন। ‘সমুদ্রে মিশে যাবে বিন্দু বিন্দু জলের বিলাসিতা/ কষ্ট মাত্রা ছাড়িয়ে হয়ে পড়ছি সর্বংসহা’২৫, গালিব তা-ই বলেছেন যা আমাদের হৃদয়ে-ভাবনায় ঘটে চলে। ‘তাকাও ওই সুন্দর কথামালার দিকে, সে যা-ই বললো/ আমি বুঝলাম যে একথা তো আমারও কথা’২৬, ‘মৃত্যু ছাড়া এই

ব্যথার উপশম আর কী করে হবে? মোম সে তো পুড়েই যাবে সূর্যাস্ত পর্যন্ত’। কাব্যনগরে, মানুষ যা খুঁজছে তা ভিন্ন-ভিন্ন পঙ্ক্তির হাত ধ’রে ভিন্ন-ভিন্ন মানুষের কাছে পৌঁছে গেছে। প্রেমিক থেকে ভাবুক, সকলেই সমান আগ্রহে তাদের উদ্দিষ্ট খুঁজে পান, আর সকলেই হৃদয় খুইয়ে বসেন গালিবের 888sport app download apkয়।

 

প্রিয় শব্দাবলি

গালিব ছিলেন ‘বেদিলে’র রচনা দ্বারা অসম্ভব অনুপ্রাণিত। বেদিলের শব্দভা-ার বড় প্রিয় ছিল গালিবের। গালিব যখন থেকে আকছার ওই শব্দগুলো ব্যবহার করতে শুরু করলেন, দেখা গেল ওই শব্দগুলোকে ঘিরেই ভিন্ন একটা কাব্যভঙ্গি দাঁড়িয়ে গেল। উদাহরণস্বরূপ ধাতুর গিল্টি করা আয়নার উল্লেখটাই ধরি। এই আয়নার কাঠামো গিল্টি করা লোহার পাতে তৈরি, হয়তো তাতে বর্ষার জোলো হাওয়ায় বাদামি ছোপের মরিচা লাগতে পারে, তবুও গিল্টি করার সময় পাতের প্রান্তভাগে কিন্তু ঔজ্জ্বল্যের কমতি থাকে না। গালিব সেটা বোঝাতে ব্যবহার করলেন ‘জওহর’, মানে উজ্জ্বল, চকচকে বা তলোয়ারের ধারালো প্রান্তভাগ। এরকম শব্দগুলোয়, গালিব নানা ঘোরানো-প্যাঁচানো শব্দার্থের সমাবেশ ঘটিয়েছেন। স্বীয় কান্নাকে তিনি চিত্রায়িত করলেন এমন পস্নাবনের সঙ্গে যা তার ঘরদোর সব ডুবিয়ে দিতে, ধ্বংস করে দিতে পারে; তুলোর মতো ফেনাভ ঢলের জল তাঁর কাছে মোহন বশীকরণ যেন। আলোর ঠিকরে ওঠাকে তিনি ভালোবাসতেন, একটা পঙ্ক্তিতে তিনি ‘ক্ষিতমজুরের উদয়াস্ত শ্রমে’ সেই আলো খুঁজে পান। সেটা এজন্যে যে, যদি একজন চাষা কঠোর পরিশ্রম না করে তবে পর্যাপ্ত ফসল ফলবে না, আর তা না হলে তো ঘরেও সলতে জ্বলবে না। অন্যভাবেও ভাবা যায়, যখন মাড়াইকলে শস্যাদি মাড়াই হতে থাকে তখন সেই মাড়াইকল থেকেও এমন বিদ্যুচ্ছটার বিচ্ছুরণ হয়।

 

বাস্তবতার অভিক্ষিপ

কল্পনাবিলাস এবং বাস্তববাদ – দুটো ধারাই হাত ধরাধরি করে পাশাপাশি চলেছে গালিবের রচনায়। মানবমনের বিচিত্র অন্ধিসন্ধি তিনি খুব ভালো করে পাঠ করতে পেরেছিলেন, যা এই পঙ্ক্তিটি পাঠে হৃদয়ঙ্গম করা যায়। যখন তিনি বলেন, ‘প্রিয়তমা এসেছে ঘরে, আমি একবার আমার প্রিয়তমার মুখের দিকে তাকাই আরেকবার ঘরটার দিকে।’ অন্যত্র বলছেন, ‘তাকে দেখেই সতেজতা ফিরে এলো মনে/ তাতে সে ভাবলো যে আমার অসুখ হয়তো সেরে গেছে।’২৭ আরেকটি সমধিক পরিচিত পঙ্ক্তি, ‘প্রেম এমনই এক স্ফুলিঙ্গ যা সহজে জ্বলে ওঠে না আর একবার জ্বলে উঠলে তাকে নেভানো দায়।’২৮ প্রকৃত প্রেমিকের দ্বারাই সম্ভব এমন করে ভাবা। এক অর্থে, গালিব তাঁর প্রিয়তমাকেই বলছেন, যে, তাঁকে (গালিব) ধ্বংস করে দেওয়ার জন্য তিনি প্রেয়সীকে দোষী সাব্যস্ত করছেন না কারণ এমন ভাবনা একজন প্রেমিকের পক্ষে শোভা পায় না, কারণ এই কষ্টের পেছনে তার স্বীয় কৃতকর্মই দায়ী। স্রষ্টার কাছে ভিখ মেগেছেন তিনি যেন ‘আরো একটি হৃদয় তাঁকে দেওয়া হয় কারণ একটিমাত্র হৃদয়ে সমস্ত দুঃখভার সইবার মতো ক্ষমতা কোথায়!’২৯ দুঃখজর্জর জীবনের জন্য তিনি কিন্তু কোনো নালিশ করেননি, শুধু চেয়েছেন সেসব সামলে চলার শক্তি।

 

ঈর্ষাপরায়ণ

‘ঈর্ষাভাব’ যে-কোনো ভাষার পদ্যের একটি চালু বিষয়বস্ত্ত, যা গালিবও ব্যবহার করেছেন, তবে স্বভাবসুলভ ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিতে। যখন তিনি শুনলেন তাঁর প্রেমিকা তাঁরই এক শত্রুর অন্তরঙ্গ হয়ে উঠছে, তিনি হাসলেন, বললেন, ‘তাঁর পক্ষে কারো প্রতি দয়াপরবশ হওয়া একপ্রকার অসম্ভব।’ এমন প্রিয়তমার প্রতি কামনা পোষণ করার জন্য তিনি তাঁর শত্রুকে ভৎর্সনা করলেন আর হিংসা (ঠিক ঈর্ষা বলা যায় না) অনুভব করলেন পত্রবাহকের প্রতি, কেননা তাঁর সঙ্গে যে প্রিয়তমার সাক্ষাৎ ঘটেছে! প্রিয়তমা যদি শত্রুতাবশত তাঁর সঙ্গে সম্পর্ক চালিয়েও যায় (শত্রুর প্রতিও আপনার ভালোবাসা থাকতে পারে), তারপরও তিনি দৃঢ় প্রত্যয়ী। প্রিয়তমা যদি গলায় একটা হারও পরে তবে সেই হারের প্রতিও তাঁর দারুণ ঈর্ষা। আরেক প্রসঙ্গে, তিনি কোথায় চলেছেন বা পথ ভুলে গিয়ে পথের দিশা খুঁজছেন কি না, সে-বিষয়ে কাউকে জানাতেও তাঁর ভয়। ভয় এই, যদি অন্যরা তাকে অনুসরণ করে-করে প্রিয়ার বাড়ির হদিস পেয়ে যায়! প্রেমিকপ্রবরটি তোতাপাখিকে বুলি শেখাচ্ছে ভেবে প্রেমিকাটি ঈর্ষায় ভুগছে, গালিবের এমন ভাবনা সমস্ত সৃজনশীল অতিরঞ্জনকে দুমড়ে-মুচড়ে দেয়, কেননা বস্ত্তত প্রেমিকটি মরচে ধরা আয়নার ভেতর দৃষ্টি নিক্ষিপ করছে অথচ প্রেমিকাটি ভুলে ভেবে নিচ্ছে যে, পাখিটির বুলি ফোটানোর প্রাণান্ত চেষ্টা চলছে। এখানে, প্রেমিকা মরিয়া হয়ে চাইছে যে-প্রেমিকটি কেবল তাকেই আরাধনা করবে, অন্য কিছু নয়। গালিব এমন এক পুড়তে থাকা ঈর্ষাপরায়ণ মোমের কথা বলেছেন যে চায় তাঁকে ঘিরে থাকা কাচের ঘেরাটোপটি যেন সরিয়ে নেওয়া হয়, যেমনটি সে চায় তাঁর প্রেমিকার মুখাবয়ব থেকে অবগুণ্ঠনটিও সরিয়ে ফেলা হোক। কখনো-কখনো, ফুলদানিতে রাখা ফুল তাঁর প্রিয়ার অনাবৃত শরীরসুধা দেখে ফেলছে কি না ভেবেও তিনি বিব্রতবোধ করেন।

 

ভালোবাসার প্রকাশ

প্রেমের 888sport app download apkর সূক্ষ্ম-স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য গালিবের 888sport app download apkয় এমন করেই এসেছে, যা রীতিমতো অন্যদের লজ্জায়ই ফেলে দেয়। ‘তুমি বলেছিলে আমার হৃদয়টি খুঁজে পেলেও সেটি আর ফেরত দেবে না; ইচ্ছা পূরণের জন্য, কোথায় হৃদয় হারাব বলো?’২৯ প্রিয়তমা বলছেন, প্রিয়তমের হৃদয়টি আর ফেরত দেওয়া হবে না, অথচ প্রিয়তম বলছেন যে, তাঁর তো হৃদয় হারানোর মতো হৃদয়ই নেই, সুতরাং তাঁর আশা পূরণ হয়েই গেছে ধরে নেওয়া যায়। লীলাপর প্রেমিকা, উদ্ধত প্রেমিক। শব্দে-শব্দে, গালিব প্রায়শই প্রেম-কথা বলেছেন যা কেবল সত্যিকার প্রেমিকমাত্রই উপলব্ধি করতে জানেন এবং আমরা প্রায় সকলেই একে অন্যের অনুভূতি ভাগ করে নিতে চাই, গালিব সবাইকে সমান অন্তরঙ্গতায় ভরিয়ে তোলেন। যখন তিনি জানতে চান, কী করে কেউ অন্তর্বেদনায় আচ্ছন্ন থাকতে পারে, যখন হৃদয়ই হারিয়ে যায়, তখন তা প্রেমিকমনের আকুতি নিয়েই ঝরে পড়ে। ভালোবাসার প্রকাশ তিনি নানাভাবে করেছেন, যা প্রযোজ্য সকলের অনুভূতিরই প্রকাশ, ফলে তাঁর 888sport app download apk থেকে আমরা এমন কিছু না কিছু পেয়েই থাকি, যা আমাদের হৃদয়ে আঘাত করে। ‘যদিও যন্ত্রণা জীবন-সংহারী হয়ে গেছে; ভালোবাসার জন্য কোনো দুঃখও যখন নেই, তবে বেঁচে থেকে কষ্ট-যাপনই হোক।’

 

দর্শন

তিনি দার্শনিক কবি। যখনই কোনো কৌশল, উপমা বা তুল্যমূল্যের বিচারে গেছেন, স্বীয় দর্শনকে ভুলে যাননি একবিন্দুও। প্রশ্ন রেখেছেন, যদি গনগনে সূর্যালোকের তলায় ভস্মীভূত হওয়াই নিয়তি তাহলে কেন স্রষ্টা মানুষ সৃষ্টি করলেন? প্রায় সবকিছুকেই একটা দার্শনিক ছাঁচে ফেলে ভাবতেন তিনি। স্বীয় অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্যে মানুষের যে নিরন্তর লড়াই সেটা তাঁকে ভীষণ উদ্বিগ্ন করত। মানুষকে সৃষ্টি করে, পরে তাঁকে এমন দুর্মর কষ্টের মধ্যে নিপতিত করার জন্যে, খোদ মানবসৃষ্টির প্রযোজ্যতা নিয়েই তিনি প্রশ্ন তুলেছেন স্রষ্টার প্রতি। ধর্মীয় বিধিবিধানকে পাশ কাটিয়ে চলেছেন আজীবন, খাপ খাইয়ে নিয়েছেন অদ্বৈতবাদের পথে, যা তাঁর রচনায় বিধৃত হয়েছে নির্মলরূপে সুন্দর আঙ্গিকে। তাঁর কাব্যে মানুষের বিদ্যমানতার বিষাদপূর্ণ মনোগতির প্রকাশ, অগম্য দুঃখের অস্তিত্ব, ভ্রাতৃত্ববোধে নিস্পৃহতা আর শেষতক ধুলোয় মিশে যাওয়ার এই খেলা, এক অনন্য সৌকর্য প্রকাশের নিরাবলম্বী প্রয়াস। ‘তাহলে কেন এই বেঁচে থাকার নামে এতটা হট্টগোল’ বারবার প্রশ্ন ছুড়ে গেছেন।

 

[মির্জা আসাদুলস্নাহ বেগ খান (১৭৯৭-১৮৬৯)। যিনি গালিব নামেই আমাদের কাছে পরিচিত,  তাঁকে এবং তাঁর সৃষ্টির সঙ্গে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার কিছু নেই। উর্দু কাব্যজগতে তাঁর আসনটি সবচেয়ে উচ্চস্থানে, এ-কথা অনস্বীকার্য। ভারতীয় উপমহাদেশের 888sport live footballজগতে তাঁকে নিয়ে রয়েছে অসংখ্য রচনা, 888sport appsেও আছে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ রচনা। গালিববিষয়ক এ-888sport liveটি প্রথম

চোখে পড়ে ২০১৩-এ, লেখাটির অনলাইন সংস্করণে। প্রথম পাঠেই ভালো লেগে যায় 888sport liveটি। ব্যক্তি গালিব আর কবি গালিব, পাশাপাশি তাঁর রচনাশৈলীকে নির্মোহভাবে দেখেছেন লেখক সরফরাজ খান নিয়াজি। 888sport liveটি সরফরাজ খান নিয়াজির ওয়াইন অব প্যাশন : দ্য উর্দু গজলস অব গালিব গ্রন্থে সংকলিত, এটি মূলত সংকলনগ্রন্থ। ইংরেজিতে গালিবের 888sport app download apk 888sport app download apk latest versionের সবচেয়ে বিসত্মৃত কাজটি করেছেন লেখক। গালিবের 888sport app download apkয় ব্যবহৃত উর্দু শব্দের অভিধান, ব্যাখ্যান, উদ্ধৃতি, 888sport liveসহ এক জমজমাট আয়োজন এটি। প্রকাশিত হয় ফিরোজ সন্স (প্রাইভেট) লিমিটেড, করাচি, পাকিস্তান এবং গালিব অ্যাকাডেমি অব আমেরিকার যৌথ পরিবেশনায় ২০০৯ সালে। লেখক সরফরাজ খান নিয়াজির জন্ম ১৯৪৯ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের লখনৌতে। স্থায়ীভাবে বাস করছেন যুক্তরাষ্ট্রে। একাধারে অধ্যাপক, চিকিৎসক, গবেষক (ফার্মাসিউটিক্যাল সায়েন্স), বেতার888sport live chatী এবং 888sport app download apk latest versionক। উর্দু 888sport app download apkবিষয়ক রচনার পাশাপাশি বৈজ্ঞানিক অভিসন্দর্ভও রচনা করে থাকেন। আগ্রহের তালিকায় দর্শন, যুক্তিবিদ্যা, ফটোগ্রাফি, আমেরিকান আর্ট, এমনকি গিটার-বাদনও! প্রকাশিত গ্রন্থের 888sport free bet এক ডজন।

888sport app download apk latest version প্রসঙ্গে দুয়েকটি কথা। মূল 888sport liveে, আলোচনার প্রয়োজনেই উর্দু কবিদের পরপর অনেক নাম এসেছে, যে নামগুলোর সঙ্গে বিদগ্ধ পাঠক নিশ্চয়ই পরিচিত। তবু আগ্রহী পাঠকদের জন্য সেই নামগুলোর সংক্ষিপ্ত পরিচয় সংযুক্তি আকারে জুড়ে দেওয়া হলো। মূল 888sport liveে বেশ কিছু পঙ্ক্তির সরাসরি ইংরেজি 888sport app download apk latest version দেওয়া রয়েছে, যেগুলোর উর্দু অংশটুকু পাঠ সুবিধার্থে জুড়ে দেওয়া আছে এ-888sport app download apk latest version কর্মে। গালিবের জন্মমাস ডিসেম্বর। ২০১৫ সালে পালিত হয় তাঁর ২১৮তম জন্মবার্ষিকী। কবির জন্মমাসে তাঁর প্রতি 888sport apk download apk latest versionবনত হয়ে এই প্রয়াশ।]

 

888sport app download apk latest versionকের সংযোজন

১. মোমিন খান, মোমিন (১৮০০-৫১)। উর্দুকবি, দিলিস্নতে জন্ম এবং আমৃত্যুবাস। মির্জা গালিব এবং জওকের সমসাময়িক কবি, গজল-রচয়িতা।

২. নওয়াব মির্জা খান, ছদ্মনাম দাগ দেহলভি (১৮৩১-১৯০৫)। উর্দু কাব্যজগতে ‘রোমান্টিক কবি’ হিসেবে স্বীকৃত। উর্দু বাগ্ধারা প্রণয়ন এবং তা ব্যবহারে তাঁর মুন্শিয়ানা উল্লেখযোগ্য।

৩. মাওলানা ফজল-উল-হাসান, ছদ্মনাম হস্রৎ মোহানি (১৮৭৫-১৯৫১)। প্রখ্যাত উর্দু কবি এবং ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামী। ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ’ সেস্নাগানটি তাঁরই আবিষ্কৃত। ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি গঠনের মূল উদ্যোক্তাদের একজন।

৪. আলি সিকান্দার, ছদ্মনাম জিগার মুরাদাবাদি

(১৮৯০-১৯৬০)। জনপ্রিয় উর্দু কবি। কাব্যসংকলন

আতিশ-ই-গুলের জন্য ১৯৫৮ সালে পেয়েছেন 888sport live football আকাদেমি 888sport app download bd।

৫. আসগর হোসেইন গোন্দভি (১৮৮৪-১৯৩৬)। সুফি তথা মরমি ধারার উর্দু কবি। নিশাত-এ-রুহ এবং সরোদ-এ-জিন্দেগি শীর্ষক দুটি কাব্য সংকলনে তাঁর 888sport app download apkগুলো সংকলিত।

৬. শওকৎ আলি খান, ছদ্মনাম ফানি বদায়ুনি (১৮৭৯-১৯৬১)। প্রখ্যাত উর্দু কবি। উর্দু ভাষায় শেক্সপিয়র এবং মিল্টন 888sport app download apk latest versionের জন্য সমধিক পরিচিত।

৭. স্যার মোহাম্মদ ইকবাল (আলস্নামা ইকবাল)। জন্ম ১৮৭৭, পরলোকগমন ১৯৩৮। একাধারে উর্দু কবি, দার্শনিক, আইনজ্ঞ, রাজনীতিবিদ। উর্দু ও ফার্সি কাব্যজগতে নমস্য কবি।

৮. জালাল আদ-দ্বীন মুহাম্মদ রুমি (১২০৭-৭৩)। তেরো শতকের বিখ্যাত ফার্সি কবি, আইনজ্ঞ, ইসলামি চিন্তাবিদ, ধর্মতাত্ত্বিক এবং মরমিয়া। তাঁর রচিত মসনবিকে ফার্সি ভাষার শুদ্ধতম রচনা জ্ঞান করা হয়।

৯. মাওলানা আবুল-মা’নি মির্জা আবদুল কাদির বেদিল

(১৬৪২-১৭২০)। তুর্কি-মঙ্গোলীয় বংশোদ্ভূত। ফার্সি ভাষায় গজল আর রুবাই রচনার জন্য প্রণিধানযোগ্য। ফার্সি কাব্যে সুফিধারার উল্লেখযোগ্য কবি।

১০. মীর মুহাম্মদ তকী মীর (১৭২৩-১৮১০)। উর্দু ভাষার অগ্রগণ্য কবি, ভাষাতাত্ত্বিক। গজল-রচনায় তাঁর উৎকর্ষ ছিল ঈর্ষণীয়। তাঁর রচিত মসনবি মুআমলাৎ-এ-ইশ্ক উর্দু ভাষার শ্রেষ্ঠ প্রণয়গাথাসমূহের একটি।

১১. ইমাম বকশ্ নাসিক (১৭৭১-১৮৩৮)। লখনৌ স্কুল অব উর্দু পোয়েট্রির প্রতিষ্ঠাতা। ছিলেন নওয়াব মুহম্মদ খানের সভাকবি।

১২. খাজা শামস্-উদ্দ্বীন মুহম্মদ হাফিজ-ই সিরাজি (১৩২৫/১৩২৬-১৩৮৯/১৩৯০)। বিখ্যাত ফার্সি কবি। দিওয়ান-ই-হাফিজ তাঁর অবি888sport app download for androidীয় সৃষ্টি।

১৩. মুহাম্মদ হুসাইন, ছদ্মনাম নাজিরি নিশাপুরি

(১৫৬০-১৬১৪)। পারস্যের 888sport live footballিক ত্বকী আল-দ্বীনের সান্নিধ্যে এসে তাঁর কাব্যপ্রতিভার স্ফূরণ ঘটে। ভারতের

প্রাক্-মুঘল আমলের বিশিষ্ট কবি।

১৪. মির্জা আবু জাফর সিরাজুদ্দিন মুহম্মদ বাহাদুর শাহ জাফর (১৭৭৫-১৮৬২)। প্রণিধানযোগ্য উর্দু কবি, গজল-রচয়িতা। ভারতের শেষ মুঘল সম্রাট। তাঁর দরবার কাব্যসুষমায়পূর্ণ করেছেন গালিব, দাগ, জওকের মতো স্বনামধন্য উর্দু কবিরা।

১৫. শেখ মোহাম্মদ ইব্রাহিম জওক (১৭৮৯-১৮৫৪)। বিখ্যাত উর্দু কবি। দিলিস্নর শেষ সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফরের সভাকবি। গালিব আর জওকের মধ্যে সে-সময়কার দ্বৈরথটি উর্দু কাব্যজগতের একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা।

১৬. কো-ই বিরানি সি বিরানি হ্যায়/ দশতুকো দেখকে ঘর ইয়াদ আয়া।

১৭. হামকো উনসে হ্যায় বফা কি উম্মিদ/ জো নেহি জানতে বফা ক্যায়া হ্যায়।

১৮. কফস্ মে মুঝে রুদাদ-এ চমন ক্যহতে না ডর হম্দম্/ গিরিথি জিস পে কাল বিজলি বো মেরা আশিঁয়া কিউ হো?

১৯. মুঝ তক্ কব উনকি বাজুমে আতা থা দৌরে জাম/ সাক্বিনে কুছ মিলা না দিয়া হো শরাব মে।

২০. দে বো জিস কদর জিলস্নৎ হম হাসিমে টালেঙ্গে/ বারে আশ্না নিক্লা উনকা পাসবাঁ আপনা।

২১. তুম শহর মে হো তো হমে ক্যায়া গ্বম? যব উঠেঙ্গে/ লে আয়েঙ্গে বাজার সে যা কর্ দিল-ও-জাঁ অউর।

২২. দিখা কে জুম্বিশ-এ লব হি তামাম কর হাম কো/ না দে জো বোসা, তো মুহ্ সে ক্বাহি জওয়াব তো দো।

২৩. দেখিয়ে পাতে হ্যায় ক্যায়া উশ্শাক বুতোঁসে ক্যায়া ফ্যয়েজ/ এক বারাহমান নে কাহা হ্যায় কে ইয়ে সাল আচ্ছা হ্যায়।

২৪. কৌন হোতা হ্যায় হর্ফ-এ-ম্যয়-এ-মর্দ আফগাঁ-এ ইশ্ক/ হ্যায় মুকার্রর লব-এ-স্বাকি পে সদা মেরে বাদ।

২৫. ইশরতে কাৎরা হ্যায় দরিয়ামে ফানা হো যানা/ দর্দকা হাদসে গুজরনা হ্যায় দাওয়া হো যানা।

২৬. দেখ্না তক্রির কি লজ্যৎ কে উসনে কাহা/ ম্যায়নে ইয়ে জানা কে গ্যয়া ইয়ে ভি মেরে দিল মে হ্যায়।

২৭. উন কো দেখে সে জো আ-যাতি হ্যায় মুহ্পর রওনক/ বো সমঝতে হ্যায় কি বিমার কা হাল আচ্ছা হ্যায়।

২৮. ইশ্ক পর জোর নেহি ইয়ে বো আতিশ গালিব/ কে লাগায়ে না লাগে অওর বুঝায়ে না বনে।

২৯. ক্যহতে হো না দেঙ্গে দিল আগার পড়া পায়া/ দিল কহা কে গুম কিজিয়ে? হামনে মুদ্দোয়া পায়া।