কোনো কিছুর পছন্দসই স্বাদ পেলে হয় তা দ্রুতই বিস্বাদে পর্যবসিত হবে, নইলে তুমুল স্বাদে কেউ বিষ্ঠা ছিটিয়ে পালিয়ে যাবে, এমনই কপাল আমাদের!
অন্য কারো খোঁচা কি ভর্ৎসনা সহ্য করা যায় কিন্তু যাকে এতদিন শুধু অনুকম্পা কি ভালোবাসার পাত্রই শুধু না ভেবে সংগ্রামের পাত্র ভাবা হয়েছে সে যদি ঘুরে দাঁড়ায়, কঠিন কটুবাক্য ব্যবহার করে… ‘আসলে মাগিগুলোর কোনো কাজ নাই, সারাদিন এসব করেই কাটায়’; তাহলে রাগ তো রাগ, দিশেহারাই তো লাগার কথা! ‘মাগিদের কোনো কাজ নাই’, এমনই বলেছিল আববাসকে! না তো কি? আববাস যে বলল, খালাম্মা গো মুখে আনা যায় না ও এত বাজে কথা বলছে আপনাদের।… কী বলছে? শব্দটা কী?… না থাক বলার দরকার নাই, তুমি আর আমাদের হয়ে ওকে কিছু জিজ্ঞাসা করবা না।
কিন্তু আববাসের কী এমন দরকার পড়ল অফিসার গিন্নিদের দুঃখটা নিজের দুঃখ ভেবে নিয়ে কথা চালাচালি করে! মার্কেটে যাওয়ার পথে ওর পথ আগলে জিজ্ঞাসা করা-আপনের যে এতদিন লাইন ছিল সেটা অ্যান্টিদের কাছে গোপন করছেন, অ্যান্টিরা মনে খুব কষ্ট পাইছেন, আপনেরে তো ওনারা আপন মেয়ের মতো ভালোবাসতেন, কামডা ঠিক করেন নাই।
-ওকালতি করতে কে বলেছে আববাসকে! ফুঁসে ওঠে আমাদের কৃষি মিসেস, ইঞ্জিনিয়ার মিসেস কিংবা ম্যাজিস্ট্রেট মিসেস -ওর সবকিছুতে বাড়াবাড়ি।
– নাহ্ আববাসের সামনে আর কিছু আলোচনা করা যাবে না।
-কিন্তু মেয়েটা যে প্রেম করে সেটা আমরা একবারও টের পেলাম না, কী আশ্চর্য তাই না ভাবি!
তারপর আমাদের আবার মেদ বাড়ে। কোমরের পেছনে বস্নাউজের নিচে সিম্পল দুটো ভাঁজ ভারী হতে থাকে, মাখন মাখন জ্বলজ্বলে দুই স্তর চামড়া ঝুলে পড়তে চায়, আহা কত কষ্ট করে চর্বিগুলো কমেছিল!
মেদ বাড়তোও না, কমতোও না যদি মেয়েটার প্রেমের সংবাদ ওর গাইয়া মা-টা বলে দিত আগেভাগে। বিয়েই মহামুশকিল, তাতে আবার প্রেম! বলে দিতেই তো জাগ্রত বিবেক থেকে এতদিনের টুপটুপ ঝরা অনুকম্পা ভালোবাসা (আসলে হয়তো আমাদের গোপন সংগ্রাম) স্টপ হয়ে গেল, ওর জন্য আমাদের আর কিছুই করার নেই! ও আমাদের বিট্রে করেছে!
বিকেলের হরিসভায় কংক্রিটের বেঞ্চিতে মুনসেফ আপা এসে জয়েন করেন। চলমান আলোচনা থেমে যায়, আমাদের গোপন সংগ্রামে মুনসেফ আপার অংশ ছিল না একেবারেই। এখন জিজ্ঞাস্য, কী বিষয়? সবাই এমন গম্ভীর, ঘটনা কী? আমতা আমতা ইঞ্জিনিয়ার গিন্নি-কদিন পর মেয়েটা জাপান চলে যাবে, ওর প্রেম ছিল, জানেন!
-গুড, ভালো তো, বিয়ে হলে ওর মা বেঁচে যায়, হাসিমুখ মুনসেফ আপার।
-আমাদের দুঃখ-ক্ষোভের বিষয়টা যেন কর্তারাও বুঝতে চায় না-আরে ওর একটা ভালো বিয়ে হচ্ছে, জাপান যাবে, এতে তোমার প্রবলেমটা কী?
-ওর যে প্রেম ছিল, আমাদের বললে কী হতো?
-তুমি প্রেম করার সময় কাকে বলেছিলে?
যা হোক, আববাস অন্তত আমাদের হয়ে একটা কথা জিজ্ঞাসা করেছে। কিন্তু মেয়েটা কী খারাপ কথাটা আমাদের বলল, সেটা আববাসের বলতে এত কুণ্ঠা কেন! মাথাটা ঝিমঝিম করে, সেটা কি মাগি নাকি তার চেয়েও খারাপ! বলে দিলেই তো পারে!
বছরখানেক বা তার চেয়ে একটু বেশি সময় হবে মেয়েটির ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা করার একটা লাইসেন্স করেছিলাম আমরা কংক্রিটবাসীরা। ঘটনাটা এমন, লাইসেন্স না করাটা একটা অপরাধই হতো আমাদের। শুনেছিলাম মেয়েটির মায়ের মুখে, সেই পুরনো রদ্দিমার্কা ঘটনা… জোর করে বিয়ে করা তারপর মা-ছেলেতে মিলে অত্যাচার করা। বিশেষত্বহীন বিষয়টা বিশেষত্ব পায় বস্তুত মেয়েটির অসাধারণ রূপলাবণ্যের হেতু! না পুরোটাই রূপলাবণ্য নয়, কিছু একটা ছিল মেয়েটার।
মায়ের সংক্ষেপ বর্ণনায় আমাদের তেমন কিছুই জানা ছিল না মেয়েটি সম্পর্কে। আদ্যোপান্ত জানতে ইচ্ছা করে মেয়েটিকে দেখার পর-এমন একটা মেয়ে! প্রথম পর্যায়ে আমরা ভদ্র ও শিক্ষিত মানুষের মতো সীমাহীন কৌতূহল দমন করি, শুধু মেয়েটির মায়ের সারল্যে (গাইয়াও বটে) সুযোগে বলে ফেলি-ডিভোর্স করিয়ে এনে আবার বিয়ে দেন, কিই-বা বয়স, বাচ্চাকাচ্চা হয়নি, থ্যাংকস গড।
হাঁটতে হাঁটতে মেয়েটি আমাদের অফিসার্স কোয়ার্টারের কাছে আসে আবার চলে যায়, ওর মা আবেগে গদগদ হয়ে বলে, ইস আপনারা যেভাবে ভাবছেন তা যদি সবাই ভাবত! আগে যে-উপজেলায় ছিলাম তারা…।
আত্মপ্রসাদ জাগতেই পারে আমাদের, মানুষ তো আমরা! নিজেকেই বলি বিদুষী হওয়াটা একেবারে বৃথা যায়নি, কী বলো!
-বাচ্চার জন্মদিনে মেয়েটি যেন অবশ্যই উপস্থিত থাকে, না হলে খুব মাইন্ড করব, (সমকক্ষ অফিসার না হওয়ায় এতদিন ভাবি বলা হতো না) যদি সারাদিন বাসায় বসে পুরনো পচা কাসুন্দি ঘাঁটে তাহলে বাঁচবে কী করে, আহা, এমন একটা মেয়ে, কিই-বা বয়স! শোনেন ভাবি, পৃথিবীটা অনেক বড়, ওকে বলবেন নিজের পায়ে দাঁড়াতে।
মহিলার চোখের পানি ছলছল করে ওঠে, আমরাও চোখ মুছি।
কীভাবে যে নিজের পায়ে দাঁড়ানো যায়, তার দিকনির্দেশনা যদিও মহিলা চায় না তবু আমরা দু-চারদিন খেতে খেতে, ঘুমাতে ঘুমাতে মেয়েটিকে দাঁড় করানোর যাবতীয় কৌশল বের করে ফেলি, দাঁড়াতেই হবে, অবশ্যই। রান্নায় পারদর্শী এএসপি ভাবি বলেন, দিন না আপনার যত চায়নিজ-থাই ডিশ সব শিখিয়ে। দিলাম নিজের জ্ঞানভাণ্ডার উজাড় করে, যত কাটাকুটি, সেলাই-ফোঁড়াই, ব্লকবাটিক-ফেব্রিক-অ্যাপ্লিক, সব। 888sport appয় এসব নেড়েও তো একটা জীবন দিব্যি দাঁড়িয়ে যায়!
সমকক্ষ অফিসার না হওয়া সত্ত্বেও মহিলাকে আদর করে কাছে ডাকি, আমাদের কোয়ার্টারের সামনের কংক্রিটের বেঞ্চিতে বসতে দিই। আমাদের ভালোবাসায় উসকে গিয়ে পেট উগরে হরবর করে সব নাড়ির কথা জানায়। জোর করে বিয়ে… বিয়ের দিনই ঝগড়া… 888sport appয় নিয়ে নির্যাতন, তারপর মেয়ে উদ্ধার। আহা, আমাদের সংগ্রামটা শনৈঃ শনৈঃ জোরদার হয়ে ওঠে।
একটা নীল গাড়ি এসে থামে ননগেজেটেড অফিসার্স কোয়ার্টারের সামনে, দূর থেকে দেখেই আঁতকে ওঠে প্রাণ, নতুন ঘটনা কিছু! পরদিন হদিস হয়, মেয়ের মা জানায়, জামাইটা মেয়েকে নিতে আসছিল, কী যে করি, তবে আমরা সাফ বলে দিয়েছি, মেয়ে আমরা দেবো না।
আমরা বাহবা দিই, কিন্তু আমাদের জানতে ইচ্ছা করে জামাইটা কি রাতে ছিল (রাতে থাকলে মেয়েটাকে পাঠিয়েও ফেলতে পারে) নাকি পীড়াপীড়ি করে রাতেই ফিরে গেছে!
যা হোক, মেয়েটা এখন আমাদের কাছের মানুষ… এই একেবারে বুকের কাছের, ওর চোখ, মুখ, ভ্রু আর ঠোঁট, চিবুক, হাসি আমাদের সঙ্গে যেন গোপন লুকোচুরি খেলে, ওকে কোনো কিছু থেকে বাদ দিতে পারি না। কর্তারা অফিসে গেলে বিল্ডিংয়ের ওপর-নিচ ভাবিরা মিলে একপ্রস্ত আড্ডা জমাই, মেয়েটিকে ডেকে আনতে ভুল করি না। খবরের কাগজ ধরে ঈদ-স্পেশাল রান্নার আলোচনা চলে। ওর মা আমাদের জানিয়েছে, নতুন রান্নার প্রতি নাকি ইদানীং ওর বেশ আগ্রহ জন্মেছে এবং অবশ্যই তা আমাদের মতো বিদুষী অ্যান্টিদের কারণেই। ওর মুখটা যেন আজকাল বড় মলিন আর করুণ লাগে।
-তুমি কিন্তু শরীরের একদম যত্ন নিচ্ছ না, এই যে মনে হয় মুখে একটু দাগ হচ্ছে (কোথায় দাগ!), ফেসিয়াল করবা।
আমাদেরও ফেসিয়াল করব, ভাবনাটা ওর জন্য চাঙ্গা হয়। তারপর চল্লিশ মাইল রাস্তা ঠেঙিয়ে জেলা শহরে ফেসিয়াল হয়, অফিসের গাড়ি অবশ্য এসব কাজে ভালোই পাওয়া যায়। যা হোক, একটা ফেসিয়ালে যে এত রোমাঞ্চ!
-আর হ্যাঁ, বিএ পরীক্ষাটা দিয়ে দাও, পড়াশোনা থাকলে সব হবে।
-হ্যাঁ, অ্যান্টি রেজিস্ট্রেশন করেছি, প্রাইভেট দিয়ে দেবো।
তারপর বড় সুখী সময় যায়। বিবাহবার্ষিকী কিংবা জন্মদিনে ও থাকে মধ্যমণি হয়ে। কেক আর মোমবাতি ঠিক জায়গায় স্থাপন করা, লাল-নীল ঝিলমিল কাগজ আর বেলুনে ঘরে সনাতন উৎসবের ইফেক্ট আনা ওর কাজ। ওর সুন্দর পাপহীন করুণ মুখটার দিকে তাকিয়ে ওর স্বামী-শাশুড়িকে 888sport promo code-নির্যাতন আইন কি ক্রিমিনাল কেসে ফাঁসিয়ে দিতে ইচ্ছা করে, ওরা মানুষ না জানোয়ার!
মাঝেমধ্যে ও আমাদের স্পেশাল ডিশগুলোর প্রশংসা করে, বস্তুত ওকে ছাড়া আমরা ভালো কোনো কিছুই গ্রহণ করি না। ওর মৃদুস্বর-স্বল্পবাক প্রশংসা আমাদের উদ্বেল করে। কখনো অ্যান্টিদের অল্পবিস্তর চর্বিচর্চিত ভুঁড়ি থাকা সত্ত্বেও ফিগার-সচেতনতার ভারি মুগ্ধতা দেখায়-সত্যি বলছি, অ্যান্টি আপনাকে কলেজছাত্রীর মতো লাগে। বাস্তবতা এই, ফিগার-সচেতনতার স্টার্ট তখন থেকেই, রাতে কষ্ট করে রুটি চিবাই, গামলাভরা ধোঁয়া-ওঠা ভাত-মাংস একপাশে ঠেলে সবজির বাটিই সম্বল, পৃথিবীটা অনেক বড়, কষ্ট না করলে কি কেষ্ট পাওয়া যায়! এমনকি রোকেয়া হল কি মন্নুজান হলে অবস্থানকালে রূপচর্চার ইতিহাসটা পুনরুজ্জীবিত হয়, মুসুর ডাল, লেবুর খোসা, দুধের সর, নিমের পাতা, মধু আর শসার রস…। পঁয়ত্রিশ-ছোঁয়া দেহে কলেজছাত্রীর তারুণ্য বইয়ে দিই আর কি! চল্লিশ এবার ছুঁতেও ভয় পাবে! আমলকী-হরীতকী মেথিবাটা মাথায় নিয়ে সকালবেলা আসে ইঞ্জিনিয়ার মিসেস; সেন্টটা সুন্দর, বিয়ের রাতের মেদুরতা জাগায়। বুকের দিকে তাকিয়ে ভাবি ঠিক আছে, ঠিকই আছে। জীবনটা পালটে গেল, আয়নাগুলো ঝলমলে হয়ে ওঠে, স্বামীরা পর্যন্ত। বাহ, বেশ মাল মাল লাগছে তো! পালস্না দিয়ে শাড়ি-গয়না, বিছানার চাদর কেনার হিড়িকটা ঠাস করে কমে যায়। ইউএনও সাহেবের 888sport app ডাইং প্যাটার্ন বালিশের কভার বানানোর শিক্ষাটা রূপসী মিসেস ইঞ্জিনিয়ার কাজে লাগায় না; এখন আমাদের সৌন্দর্যের সংগ্রামের কাল! কেনাকাটার সময় নেই।
কৃষি মিসেসের উশখুশ সত্ত্বেও বিরতি পড়ে আদিরসাত্মক টুকরো গল্প কিংবা জোকস কিংবা 888sport app। 888sport app মানে এই যেমন কয়েকদিন আগেও কর্তাদের গোপন ড্রয়ার খুলে তসলিমার লজ্জায় জামা পরিয়ে পালা করে হাত ঘুরেছে মিসেস থেকে মিসেসে। তার কয়েক মাস আগে হলো আরেক মজা, ইউএনও সাহেবের বউ গেল বাচ্চা হওয়াতে 888sport appয়, তো সেই নিঃসঙ্গতায় তার দেখা ভিডিও ক্যাসেট পিয়ন আববাসের হাত হয়ে দোকানে যাওয়ার আগে চলে আসে একবেলার জন্য আমাদের হাতে। দুর্ধর্ষ ইংরেজি ছবির ভাঁজে ভাঁজে বিছানার দৃশ্যগুলোই আমরা দেখি কাহিনি-টাহিনি ফেলে। দুপুরের রান্নার আগে ঘণ্টাদুয়েক এসব, রান্নায় কোনো সমস্যাই হয় না। বুয়া ভাত-ডাল ভাজাভাজি শেষে ডাকে, রেডি করা মাছ-মাংস চুলায় চাপিয়ে স্নানে যাই। আববাস ছেলেটা অমায়িক বাধ্য এবং বোকা। বোকাই তো মনে হয়, কিচ্ছু বোঝে না। ক্যাসেট একটা দেয় আরেকটা নেয়, দিতে দিতে তারপর একদিন একটা ছবি আমরা পাই, ছবির শুরুতেই চুমু তারপর পুরোটাই বিবমিষা-জাগানো সম্ভোগ। প্রথমে আমরা আঁতকে উঠি, তারপর পুরোটাই দেখি এবং গোটা একমাস আমরা এসব চালালাম এবং ইউএনও সাহেবকে নিয়ে হাসাহাসি… বেচারা! হ্যাঁ এটা ঠিক, আমাদের এই জীবনটা ছিল স্থূলরসঘন একরৈখিক; পৌষ্টিক খাদ্য গ্রহণ এবং বিশেষ উত্তেজনাসহ দৈহিক মাংস বৃদ্ধিই যার গন্তব্য। স্থূলরস বড় দৈনন্দিন, কৃষি মিসেসের কিছুই দৃষ্টি এড়ায় না। সকালবেলায় কার বাড়ির বারান্দায় লুঙ্গির সঙ্গে পেটিকোট-ব্রেসিয়ার ঝোলে, কার ফ্ল্যাটের বাথরুমের কার্নিশে স্যানিটারি ন্যাপকিন ঝোলে। শীতে চাপাখির ওম বেশি না কালো বকের! কালো বকে ওম বেশি বলে বিল থেকে ঝুড়িবোঝাই করে কালো প্যাকাটে লোকটা আমাদের দখলে সব খালাস করে তহবিলের টাকা গোছাতে গোছাতে চিকন চোখ আমাদের মাখন মাখন দেহে লেপ্টে দেয় দৃষ্টি… মাগিদের চর্বি কত! একদা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাইকোলজি, ফিলোসফি পড়ে সভ্য কি বিদ্বান নাকি বিদুষী হয়ে উঠেছিলাম এই বোধগুলো উঁকিটুকি মারলে কর্তারা হলেন উদাহরণ; তারা আড্ডায় কী আলোচনা করেন? গল্পটা তো ইঞ্জিনিয়ার সাহেব নিজেই করেছিলেন তা না হলে আমাদের কানে এলো কী করে!-থাইল্যান্ড ট্যুরে গিয়ে গেলাম বউয়ের ব্রেসিয়ার কিনতে দোকানে, নাম্বার তো মনে নেই। তো প্র্যাকটিস-হেতু হাতের থাবায় মাপ দেখালাম সুন্দরী থাই মেয়েদের, আশ্চর্য! ঠিক মাপের জিনিস দিয়ে দিলো! বোঝেন কী প্রতিভা!
দিনদিন মেয়েটা কেমন ক্ষীণকায় হয়ে যাচ্ছিল, ওর মা বলে, শুধু চা খায়, মেয়ের দুনিয়ার সবকিছুতে অরুচি! ওর ক্ষীণকায়তা ওকে যত বালিকা করে তুলছিল, আমরা তত পিছিয়ে পড়ছিলাম। পিছিয়ে পড়ে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রাণপাত চেষ্টা, আহা সংগ্রাম না করে কে কবে কী পেয়েছে!
তারপর বছর ঘুরে এলে নীল কারটা আর দাঁড়িয়ে থাকতে দেখি না আর ও আস্তে আস্তে টসটসে বেদনার মতো স্বচ্ছ হয়ে ওঠে। এবার ওর লাবণ্যে আমরাই চোখ ফেরাতে পারি না, ঈশ্বর যেন নিজ হাতে গড়েছেন ওর চোখ, মুখ, ঠোঁট, নাক, গ্রীবা।
উপজেলায় বারো মাস অফিসিয়াল কি পারিবারিক অনুষ্ঠান লেগেই থাকে আর আছে মহিলা ক্লাবের সাপ্তাহিক মিটিং-ইটিং তাস-লুডু গান-তুমি যে আমার 888sport app download apk, শুধু গান গেয়ে পরিচয়…। মেয়েটা আসে মায়ের সঙ্গে, কখনো-বা একা। আজকাল দেখি উদাস এবং একা… বড় মায়া জাগে প্রাণে। ফিশারি মিসেস, যিনি নিজেও মৎস্য গ্র্যাজুয়েট, ভারি মিষ্টি গলায় রবীন্দ্রসংগীত গায়। শুধু গান কেন, নেতৃত্বেও সে বেশ বলিষ্ঠ। আমাদের এতজনের অনুরোধ ছিল বাচ্চাদের গান শেখানোর আর ওর ছিল মৌন উপেক্ষা অথচ এখন ও হাতে তাল দিয়ে দিয়ে মেয়েটিকে গান শেখায় – আয় তব সহচরী হাতে হাত ধরি ধরি…। আমরা একদম হিংসা করি না। শেখাতে শেখাতে ফিশারি মিসেস বলে, শোনো, ইনডিভিজ্যুয়াল আইডেনটিটি থাকবে, কার মেয়ে কার বউ এটা কোনো পরিচয়! এত সুন্দর গলা তোমার, গান গেয়ে দুনিয়া মাত করে দাও… দাঁড়াতে হবে নিজের পায়, বুঝেছ?
পহেলা বৈশাখের সন্ধ্যায় বাঙালিয়ানা অনুষ্ঠান, নেতৃত্বে যথারীতি ফিশারি মিসেস। ভেন্যু আমাদের কোয়ার্টারের সামনে শিশু আর মেহগিনি বৃক্ষের তলায়। সাদা শাড়ি লাল পাড় আমাদের আর কর্তাদের পাঞ্জাবি, রসনায় ভুনা খিচুড়ি, ভুনা মাংস। আর গান হলো, 888sport app download apk হলো… আয় তব সহচরী হাতে হাত ধরি ধরি। মেয়েটি যেন কিন্নরী। এসিল্যান্ড সাহেব সবাইকে চমকে দিলেন স্বরচিত 888sport app download apkয়। চমকের প্রধান কারণ ‘উহা এই মাত্র প্রসব হইয়াছে।’ কিন্তু কার প্রতিমা সামনে রেখে এই বাকপ্রতিমা!… রাতের প্রহরগুলো সূর্য-হাতে দাঁড়িয়ে থাকে তোমারই প্রতীক্ষায়, ঢেউগুলো আছড়ে প’ড়ে খোলা চুলে ভেসে যায়…। ওরই ছিল শুধু খোলা চুল। দু-একটা অপাঙ্গ দর্শন ওর খোলা চুলে বান মারেনি একথা হলফ করে বলা যায়ই না। তবু মেয়েটিকে এবং কবিকে ক্ষমা করি… এমন দিনে কাউকে ঈর্ষা করতে নেই গো। তবে রাতে এসিল্যান্ডের কপালে যদি বউর ছ্যাঁচা থাকে তো সে ভগবানের স্বয়ংক্রিয় শাসিত্ম। এই সেদিন এলো, একটা স্টিলের আলমারি আর দুখানা খাট নিয়ে, সৎলোকের মূর্তিমান প্রতিচ্ছবি অথচ বছর না ঘুরতেই বিখ্যাত কোটিপতি হাজি নানার পাতা ফাঁদে আর সবাইর মতো পা দিয়ে… এখন দুটো ফ্রিজ না হলে বাজার গোছানো যায় না, আমাদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে গয়না বানায় আর হাজি নানাসহ আমাদের নিমন্ত্রণ করে চিকেন ফ্রাই ফিশফিলে খাওয়ায় আর পিজ্জা বানাতে পনির আনায় 888sport app থেকে!
বর্ষাকালে পিকনিক করতে পাঁচপুকুরে আমন্ত্রণ জানায় ফিশারি অফিসার। পেয়ারা খাওয়া হবে, জাল ফেলে তরতাজা মাছ তুলে রান্না! সঙ্গে উপরি পাওয়া তার মিসেসের বর্ষণ মন্দ্রিত অন্ধকারে এসেছি, আজি শ্রাবণঘন গহন মোহে…। মাত্র কয়টা ফামিলি, তা হোক, মেয়েটি ছাড়া যেতে পছন্দ করব না আমরা। এমন আমন্ত্রণ, আকাশে মেঘ, নিচে সবুজ, পাঁচটা পুকুর, ভরা জলে টলমল, এই প্রকৃতিতে ওকে ছাড়া যাওয়া!
খাসি-মুরগি রান্না করছে বাবুর্চি, শখ করে মাছ কাটেন মুনসেফ আপা যে কিনা অবিবাহিত অথচ তুখোড় গার্হস্থ্য মহিলা। আর মেয়েটির নরম আঙুলের ডগায় শসার কুচি। আর কর্তাগুলো শসা কুচা দ্যাখে অদ্ভুত চোখে… এরূপ কুটনোকোটা অভূতপূর্ব! কে একজন কর্তা আমাদের মৃদু ভর্ৎসনা করে, আহা মেয়েটাকে তোমরা বড্ড খাটাচ্ছ, যেন খাটনিই দেখছে, মেয়েটাকে না! স্ত্রীগুলো বিষয়টা দ্যাখে বোঝে এবং হজম করে। স্বামীদের ঢং আর আদিখ্যেতা!
উপজেলা অডিটরিয়ামে বাচ্চাদের একটা প্রতিযোগিতা আর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ছিল। তাতে আমরাই ধরে বেঁধে মেয়েটিকে উপস্থাপনায় নিযুক্ত করি। অনুষ্ঠান চলছে। মেয়েটির মা আমাদের পাশে, পেছন থেকে তার এক আত্মীয়, যিনি সদ্য বদলি হয়ে আসা ডাক্তারের বউ; সামনে ঝুঁকে মহিলাকে জিজ্ঞাসা করে, মেয়ের কী ঠিক করলেন? একদম না করে দিলেন? এমন বেরসিক প্রশ্ন এমন জায়গায়! আমরা ঘেমে উঠি, এ-প্রশ্নের কী উত্তর দেবে মহিলা! উত্তর দেয় তৎক্ষণাৎ কেউ।
-এখানেই কি আপনার শুনতে হবে এসব?
আমরা কৃতজ্ঞতার চোখে তাকালাম সহযোদ্ধার দিকে, যথার্থ অ্যানসার। অনুষ্ঠান শেষে কথার তুবড়ি ছোটে-কী আশ্চর্য, এমন জায়গায় কেউ এমন প্রশ্ন করে! ডাক্তারের বউ হলে কী হবে মহিলার কালচারের সমস্যা আছে।
-আরে না না, জেলাস, এত সুন্দর উপস্থাপনা দেখে সহ্য করতে পারেনি।
আজকাল মেয়েটা খুব একটা আমাদের সঙ্গ দেয় না, ভাবি পড়াশোনা নিয়ে বোধহয় ব্যস্ত। মাস পেরোতে হঠাৎ শুনি ওর বিয়ে এবং আজকে রাতেই। কথাটা যে কোথা থেকে এলো জানি না। আজকে রাতেই এমন সুনির্দিষ্ট যে, আমরা বিহবল বোধ করি। একটা অভিমান আসে কিন্তু যাচাই করি না। দিনকয়েক পর দেখি, নাহ্, কই বিয়ে, আগের মতো বারান্দায় দাঁড়ায়, বাগানে নামে আরো বালিকা বালিকা লাগে কিন্তু আমাদের সান্নিধ্য দেয় না। পথে মার্কেটে কদাচিৎ দেখা হয়। ডেকে পাঠালে উত্তর আসে মাথাব্যথা।
শীতের বিকেলে হাঁটতে হাঁটতে একটা পিঠা উৎসবের আলোচনা সারি। তারপর একটা জম্পেশ পিকনিক। বহুদিন পর মহিলা এসে মিলে আমাদের আলোচনায়। জিজ্ঞাসা করি, মেয়ের তো ডিগ্রি পরীক্ষা, শেষ, তাই না ভাবি? ও কী বলে, বিয়েটিয়ে করবে তো? করে তো বলেন আমরা পাত্র দেখি। আমাদের নিজেদের মধ্যেও অনেক পাত্র আছে (কোথায় পাত্র, কথার কথা)। ম্যাজিস্ট্রেট ভাবি বড় সরল, পেটে কথা রাখা তার বড় কষ্ট, বলে ফ্যালে-কয়দিন আগে শুনি ওর নাকি বিয়ে, আমরা বলি আরে বিয়ে হলে বুঝি আমরা এত কাছের মানুষ একটু জানতাম না! যত্তসব আজগুবি। মহিলা হাঁটে আর মিনমিন করে বলে-না, মানে এখনো বিয়ের ডিসিশন নেয়নি, এমএ-টা হোক তারপর বিয়ের চিন্তা। আমরা উৎফুল্ল হয়ে উঠি-ঠিক কথা, অবশ্যই, এমএ করার পর এসব ভাবা যাবে।
বিকেলে হাঁটতে বেরোলে মা বা মেয়ে কারো সঙ্গেই দেখা হয় না, মেয়েটা আসে না আরো মাসখানেক, আজকাল মহিলাও আসে না। অথচ মেয়েটা আমাদের কত না পছন্দের। সান্ত্বনা অবশ্য নিজেরাই নেই, পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত, ঠিক আছে এটাই তো ভালো; নিজের পায়ে দাঁড়াক, জগৎকে দেখিয়ে দিক মেয়েরাও পারে। তারা শুধু গৃহে দাসী আর শয়নে অপ্সরা হয়েই চিরকাল থাকবে না। সান্ত্বনা দিই নিজেদের কিন্তু মন মানে না, কেমন খটকা লাগে, আজকাল কোনো অনুষ্ঠানেও আসে না। ডেকে পাঠালে একই কথা, তার মাথাব্যথা। পিঠা উৎসব আর জম্পেশ পিকনিকে কত মজা করলাম, ওকে প্রত্যাশা করা সত্ত্বেও ওর কথা আমরা একবারও তুললাম না।
ইউএনও সাহেবের ঘটা করে বিদায় অনুষ্ঠান হয়ে গেল সন্ধ্যায়। বসন্তের এ-সন্ধ্যাটা সাজে সৌন্দর্যে আমরাও বড় মশগুল হলাম। অনেকদিন পর মেয়েটির মা-কে পাই। আমাদের নানা বিষয়ে কথা হচ্ছিল; আর্সেনিক থেকে এরশাদের সংগীত888sport live chatী বান্ধবী পর্যন্ত। এমনকি উপজেলা উঠে গেলে ম্যাজিস্ট্রেট-মুনসেফ চলে গেলে গরিব মানুষদের বিচার পেতে কত কষ্ট হবে পর্যন্ত। হঠাৎ এসবের ভেতরই মহিলাকে বলি-মেয়ে কেমন আছে? মহিলা বিনা কারণে সলজ্জ হাসে, ঠিক বুঝতে পারি না কী-হেতু এ-হাসি! এতদিন তো ব্যথিত মুখ আর দুঃখকাতর চোখই কেবল প্রত্যক্ষ করেছি! বলে, ওর একটা চাকরি হয়েছিল কিন্তু করল না। করল না মানে, আসলে দু-একমাস পর তো জাপান চলে যাবে, আপনাদের সঙ্গে আজকাল দেখা কম হয়। ওর ছোটবেলার এক বন্ধু ছিল, বহুদিন পর যোগাযোগ হয়েছে কয়েক মাস আগে, বিশ্ববিদ্যালয়ে জয়েন করেছিল, এখন পিএইচডি করছে জাপান, সামনের মাসে এসে বিয়ে করে নিয়ে যাবে।
আমাদের জনে জনে ব্যাপারটা হৃদয়ঙ্গম করতে সময় লাগে। তারপর সন্ধ্যাটা পানসে হয়ে যায়, এমনকি আমাদের সাজপোশাক… একটু আগের সুখী রাজহংসী গ্রীবা-উঁচানো উজ্জ্বলতা-উচ্ছলতা সবই কর্পূরের মতো উবে যায়। কেমন ফাঁকা ফাঁকা নাই নাই লাগে। এতদিনের জমিয়ে রাখা করুণা, ভালোবাসা বা সংগ্রামটা হঠাৎই খটখটে শুষ্ক মরুভূমিতে গিয়ে পড়ে। সেলাই টাইডাই ব্লকবাটিক ফেব্রিক-অ্যাপ্লিক আর এক্সক্লুসিভ রেসিপি, রূপচর্চা সাজ-সৌন্দর্যের টিপস, বিএ-এমএ পাসের পরামর্শ সবই ব্যঙ্গ মনে হয়। আমাদের অজানা-অচেনা সংগ্রামটা কোনো কিছুতে অংশগ্রহণ করতে না পেরে কি ওকেই অবলম্বন করেছিল! এখন ও ইচ্ছা করেই সব ভেস্তে দিলো!
তারপর আর কী, বিকেলে কংক্রিটের বেঞ্চিতে আড্ডাটাও কিছুদিন জমে না। তবু কৃষি মিসেসের রস খুঁজতে সেই পুরনো গল্প, ইঞ্জিনিয়ার ভাইয়ের থাইল্যান্ড সফর-দোকানে ঢুকে মাপ গেলেন ভুলে…। ইঞ্জিনিয়ার মিসেস নাক-মুখ চেপে হাসার ভান করে। যা হোক, ফিশারি মিসেসের এবার একটা ব্যক্তিগত পরিচয় হলো, শিগগির সে খুলনায় কোনো মৎস্য-খামারে জয়েন করবে আর সম্ভবত বড় বড় বাগদা চিংড়ি বা গলদা চিংড়ি খাবে এবং স্বামীকেও ট্রান্সফার করে নেবে; এমন ম্যাড়মেড়ে উপজেলায় আর না।


Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.