888sport app download for android
যাঁর 888sport app download for androidে আজকের এই অনুষ্ঠান, সেই সুব্রত মিত্র কিংবদমিত্ম সিনেমাটোগ্রাফার। এদেশের live chat 888sport ক্ষেত্রে নবযুগের সূচনা হয়েছিল যাঁদের হাতে, তিনি ছিলেন তাঁদেরই একজন। আক্ষিপের কথা এই যে, এ-ব্যাপারে আমরা বেশি গুরুত্ব দিই পরিচালকদের অবদানকে। সিনেমাটোগ্রাফার, সম্পাদক বা 888sport live chat-নির্দেশকদের ভূমিকা থেকে যায় একটু আড়ালে। কিন্তু এ-কথা তো অস্বীকার করার উপায় নেই, সিনেমা যেহেতু সমবায়ী 888sport live chat, পরিচালকদের সামগ্রিক ভাবনা মূর্ত হয় এঁদের মতো কলাকুশলীদের দৃশ্যভাবনায় ভর করে। ফলে এ-কথা নির্দ্বিধায় বলতে পারি, ভারতীয় live chat 888sportে নবযুগের আবাহনে এঁদের কাজের গুরুত্বও অপরিসীম। কিন্তু এর বাইরে সুব্রত মিত্রের কাজের মান সম্যক বিচার করার যোগ্যতা আমার নেই। তাই আমি নির্ভর করব বিশেষজ্ঞদের মতামতের ওপর। যে-সত্যজিৎ রায়ের হাত ধরে সুব্রত মিত্রের সিনেমায় প্রবেশ, তিনি স্বয়ং মনে করতেন, জঁ লুক গদারের সহযোগী রাউল কুতারের তুলনায় সুব্রত মিত্র অনেক উঁচুদরের সিনেমাটোগ্রাফার। আর ইংমার বার্গম্যানের সহযোগী স্বেন নিকভিস্ট যখন দাবি করলেন, সিনেমায় বাউন্স লাইটিংয়ের তিনিই পথিকৃৎ, সত্যজিৎ রায়ই তখন সবাইকে মনে করিয়ে দিয়েছিলেন, স্বেন নিকভিস্টের আগেই সুব্রত মিত্র বাউন্স লাইটিংয়ের ব্যবহার শুরু করেছিলেন। আরেকজন বিশ্বনন্দিত সিনেমাটোগ্রাফার নেস্টর আলমেন্দ্রস অভিভূত হয়েছিলেন চারুলতা ছবিতে সুব্রত মিত্রের ক্যামেরার কাজ দেখে। সে-কথা তিনি জানিয়েছিলেন গোবিন্দ নিহালানিকে। যাঁদের নাম এখানে করা হলো, তাঁরা প্রত্যেকেই মনে করতেন সিনেমায় দৃশ্যগ্রহণের পরিকল্পনা এমনভাবে করা উচিত, যাতে মনে হয় সেগুলি তোলা হয়েছে ন্যাচারাল লাইট বা স্বাভাবিক আলো ব্যবহার করে। এটা মোটেই চিত্রনাট্যে বর্ণিত ঘটনার সময়কে হুবহু অনুসরণ করে দিনের ঠিক সেই সময়ে শুটিং করার ব্যাপার নয়। আউটডোরে এটা তাও চলতে পারে; কিন্তু স্টুডিওতে শুটিংয়ে তা অসম্ভব। ফলে সুব্রত মিত্রদের মতো সিনেমাটোগ্রাফারকে সবসময়ই এই বিভ্রম তৈরির নানা কলাকৌশল নিয়ে ভাবতে হয়েছে। সেগুলি হয়ে দাঁড়িয়েছে তাঁর দৃশ্যভাবনার বিশিষ্ট উপকরণ। তবে সুব্রত মিত্রের প্রসঙ্গে আরো একটি কথা মনে রাখা প্রয়োজন। তার হাতেখড়ি স্টিল ফটোগ্রাফিতে। আর সেক্ষেত্রে তিনি গুরু মেনেছিলেন আঁরি কার্তিয়ে-ব্রেসঁকে, যিনি ফটোগ্রাফিতে স্বাভাবিকতার ওপর জোর দিতেন।
সুব্রত মিত্রের প্রসঙ্গে এতজন দিকপাল মহারথির কথা যে উঠে এলো, তা থেকে তাঁর দৃশ্যভাবনা এবং গুণপনার বৈশিষ্ট্য আন্দাজ করতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। এমন গুণিজনের 888sport sign up bonusতে আয়োজিত বক্তৃতার বিষয় হিসেবে যাঁর কথা আমি বলব, তাঁর কাজের সঙ্গে সুব্রত মিত্রের কাজের সরাসরি তুলনা হয়তো করা যায় না। কিন্তু আমার স্বপক্ষে বলার কথা এটাই যে, সুব্রত মিত্র প্রযুক্তির সাহায্যে হাতে-কলমে যা করেছেন, জীবনের এক বিশেষ পর্যায়ে এসে রবীন্দ্রনাথ পরোক্ষ উপায়ে তারই কাছাকাছি কিছু করার চেষ্টা করেছিলেন।
এক
ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে 888sport live football ও live chat 888sportের ব্যবহারিক সম্পর্ক বিষয়ে ১৯৩১ সালে ‘দ্য থ্রি-পেনি ল্য-স্যুট’ নামে একটি দীর্ঘ 888sport live লিখেছিলেন বের্টল্ট ব্রেশ্ট। সেই 888sport liveের এক জায়গায় তাঁর মন্তব্য :
একথা বলা যাবে না যে সংযোগের পুরনো মাধ্যমগুলি নতুন মাধ্যমগুলির দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছে না অথবা পুরনো মাধ্যমগুলি নতুনগুলির সমান্তরালে এগিয়ে চলেছে। live chat 888sportের দর্শক এখন অন্যভাবে গল্প পড়ছে। আবার গল্পকারও সিনেমা দেখছে।
এর ফলে তাঁর সিদ্ধান্ত, প্রযুক্তিনির্ভর নতুন নতুন মাধ্যমের প্রভাবে বদলে যাচ্ছে পুরনো মাধ্যমগুলির প্রকাশভঙ্গি – 888sport live footballও সেই প্রভাবের বাইরে নয়। ব্রেশ্ট কখনো একে বলছেন ‘888sport live footballসৃষ্টির আঙিনায় প্রযুক্তির বিকাশ’ [technological advance in literary production]। কখনো বলছেন ‘প্রযুক্তিনির্ভর 888sport live footballসৃষ্টি’ [technification of literary production]। তাঁর মতে, এই প্রভাবের ফল ‘অপরিবর্তনীয়’ (irreversible)।
‘অপরিবর্তনীয়’ সেই প্রভাবের কিছু উদাহরণ 888sport live footballতাত্ত্বিকরা ইদানীং উদ্ধার করছেন উনিশশো ত্রিশের দশকের ইউরোপীয় ঔপন্যাসিকদের রচনা থেকে। ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক গ্রাহাম গ্রিন উনিশশো বিশের দশকে নিয়মিত live chat 888sport-সমালোচনা লিখতেন খবরের কাগজে। এছাড়া তিনি ক্লোজআপ নামে বিশিষ্ট
live chat 888sport-পত্রিকার পাঠক ছিলেন। এহেন মানুষও আশঙ্কিত হয়েছিলেন সবাক live chat 888sportের আবির্ভাবে। তাঁর মনে হয়েছিল, কথা-বলা-ছবি সিনেমার 888sport live chat-সম্ভাবনাকে নষ্ট করে দেবে। অল্পদিনের মধ্যেই অবশ্য ভুল ভাঙে তাঁর। সবাক live chat 888sportকে সাদরে বরণ করে নেন গ্রিন। নতুন করে শুরু হয় সিনেমার সঙ্গে তাঁর প্রেমপর্ব। এতটাই গভীর ছিল সেই প্রণয় যে, নিজের দুটি 888sport alternative link ইস্তাম্বুল ট্রেন (১৯৩২) আর ইট্স আ ব্যাট্লফিল্ডে (১৯৩৪) ‘সচেতনভাবে’ live chat 888sportের প্রকরণ ব্যবহার করেন গ্রিন। এ-ব্যাপারে গ্রিন লিখেছিলেন,
আমি যখন কোনো দৃশ্য বর্ণনা করি, তখন আমি সেটিকে ধরার চেষ্টা করি সিনে-ক্যামেরার চলমান চোখ দিয়ে, ফটোগ্রাফারের চোখ দিয়ে নয় – সেক্ষেত্রে দৃশ্যটি স্থাণু হয়ে যাবে। আমার মনে হয়, অন্তত এই নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে সিনেমা আমায় প্রভাবিত করেছে।
ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক ক্রিস্টোফার ইশারউড তাঁর গুডবাই টু বার্লিন 888sport alternative link (১৯৩৯) শুরু করেন কথককে সিনে-ক্যামেরা হিসেবে চিহ্নিত করে, যেটি তাঁর ক্যামেরা-চোখ দিয়ে অর্থনৈতিক সমস্যায় পীড়িত শহর বার্লিনকে দেখে চলে :
আমি একটা ক্যামেরা, যার শাটার খোলা, যেটি নিস্পৃহ ভঙ্গিতে শুধু ছবি তুলে যায়, কিছু ভাবে না। ধরে রাখে উলটোদিকের জানালায় দেখতে পাওয়া লোকটিকে যে দাড়ি কামাতে ব্যস্ত আর সেই মহিলাকে যিনি কিমোনো পরে চুল পরিষ্কার করছেন। ভবিষ্যতে কোনো একদিন এই সবই ডেভেলপ করে, প্রিন্ট করে দেখানো হবে।
অন্যদিকে আরেকটু গূঢ় অর্থে সিনেমার দোসর হয়ে ওঠে সমসাময়িক 888sport live football। ১৯২২ সালে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হলো আইরিশ ঔপন্যাসিক জেমস জয়েসের একদম ভিন্ন স্বাদের 888sport alternative link ইউলিসিস। জার্মান ঔপন্যাসিক অ্যালফ্রেড ডবলিন এ-888sport alternative linkের সমালোচনায় টেনে আনলেন সিনেমার প্রসঙ্গ। ডবলিনের কথায়, 888sport alternative linkের প্রধান চরিত্র লিওপোল্ড বস্নুমের চোখ দিয়ে ‘সিনেমা ঢুকে পড়েছে 888sport live footballের জগতে। প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে গেলে খবরের কাগজকে এখন ছাপার অক্ষরে তুলে ধরতে হবে মানুষের দৈনিক জীবনসংগ্রামের কথা। রাস্তার দৃশ্যগুলোও এখন ব্যক্তিমানুষের অস্তিত্বের অবিচ্ছেদ্য অংশ, যেখানে প্রতিমুহূর্তে ছবিটি বদলে যাচ্ছে, সাইনবোর্ড আর মোটরগাড়িগুলো নিজেদের জাহির করছে।’ ১৯৪৪ সালে 888sport live football-সমালোচক হেনরি লেভিন ইউলিসিস বিষয়ে লিখলেন, লিওপোল্ড বস্নুমের মনোজগৎ হলো একটি সিনেমার মতো, যেখানে সাজানো আছে ‘বিচিত্র সব আবেগের ক্লোজআপ আর ফেড আউট, দৃষ্টিকোণ এবং 888sport sign up bonusর ফ্ল্যাশব্যাক’। ইউলিসিস নিয়ে সবচেয়ে চমকপ্রদ মন্তব্যটি অবশ্য করেছেন সের্গেই আইজেনস্টাইন। তাঁর মতে, এ-888sport alternative linkটি সিনেমার ইতিহাসেই একটি তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। তাঁর প্রিয় মন্তাজ পদ্ধতির সফল প্রয়োগ তিনি দেখতে পান এ-888sport alternative linkে। তিনি বললেন, কাঠামো হিসেবে মন্তাজ তো মানুষের জটিল চিন্তাপদ্ধতিকেই পুনর্নির্মাণ করে।
সিনেমা থেকে 888sport live football বা 888sport live chatের পথে এই উলটো যাত্রার কথা মাথায় রেখে আমরা যদি ধৈর্য নিয়ে পড়তে থাকি উনিশশো ত্রিশের দশকে প্রণীত রবীন্দ্রনাথের বিভিন্ন রচনা, তাহলে একসময় আবিষ্কার করব সেগুলির অনেক কটির মধ্যেই লুকিয়ে আছে আমাদের জন্য বিস্ময়। এটা হলো সেই কালপর্ব, যখন অক্ষরভিত্তিক সৃষ্টির ব্যাপারে এক ধরনের অবসাদ জন্ম নিয়েছে কবির মনে। চিঠিপত্রে ঘনিষ্ঠজনদের জানাচ্ছেন, বাক্যের সৃষ্টির ওপর তাঁর সংশয় জন্মে গেছে। এই সংশয় থেকেই জন্ম নিল এক নতুন নির্মাণরীতি, সৃষ্টির এক নতুন প্রদেশ, যেখানে অক্ষর আর বাক্য পেল নতুন ব্যঞ্জনা। আর এই নতুন ব্যঞ্জনায় live chat 888sportেরও আছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।
এই প্রসঙ্গে কবির জীবনের চারটি ঘটনার উলেস্নখ করতে পারি আমরা। চারটিই সিনেমাকেন্দ্রিক।
প্রথমটি, ১৯২৯ সালের নভেম্বর মাসে মুরারি ভাদুড়িকে চিঠি লেখা। এই সময় কবির ছোটগল্প অবলম্বনে শিশিরকুমার ভাদুড়ির পরিচালনায় বিচারক ছবিটি নিয়ে আলোড়ন চলেছে কলকাতার বিদ্বৎসমাজে। সেই আলোড়নের পরিপ্রেক্ষিতেই চিঠিটি লিখেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে এটি হয়ে দাঁড়াল live chat 888sport মাধ্যমের চরিত্র, সিনেমার রূপ ও প্রকরণ বিষয়ে কবির মতামত। সিনেমা যে কবিকে আগ্রহী করেছিল, তার প্রমাণ এই চিঠি। এই সময়েই ডি জি বা ধীরেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের উস্কানিতে তপতী নাটকের live chat 888sportায়ণ নিয়েও ভাবছিলেন কবি। অর্থাৎ নানা কারণেই তখন সিনেমার রাজ্যে রূপের উদ্ভাস-সম্পর্কিত ভাবনা ব্যস্ত রাখছে কবিকে।
দ্বিতীয় ঘটনাটি ১৯৩০ সালের। জুলাইয়ে মিউনিখ শহরে বসে কবি একদিনেই লিখে ফেলেছেন একটি ‘চিত্রনাট্য’ – পরে যেটি রূপান্তরিত হবে ‘দ্য চাইল্ড’ নামের 888sport app download apkয়। কোনো ছবি অবশ্য হয়নি তাঁর ‘চিত্রনাট্য’ অবলম্বনে।
তৃতীয় ঘটনাটি এই বছরেরই সেপ্টেম্বর মাসের। সোভিয়েত ইউনিয়নে গিয়ে সের্গেই আইজেনস্টাইনের দুটি ছবি, ১৯২৫ সালের দ্য ব্যাটলশিপ পোটেমকিন আর সদ্য-নির্মিত ওল্ড অ্যান্ড নিউর (যে-ছবির অন্য নাম জেনারেল লাইন) নির্বাচিত অংশ দেখলেন কবি। আশ্চর্যের বিষয়, এ-ব্যাপারে ভালো-মন্দ কোনো মন্তব্যই পাওয়া যায়নি তাঁর মুখ থেকে। তাঁর এই হিরণ্ময় নীরবতা থেকে মনে হয়, ইতিহাসের সেই অস্থির সময়ে তিনি নিজে যে-ধরনের
রূপপ্রবাহ নির্মাণের কথা ভাবছিলেন, তার সঙ্গে আইজেনস্টাইনের ছবিতে প্রতিফলিত রূপপ্রবাহের সামঞ্জস্য ছিল না।
চতুর্থ ঘটনা, ১৯৩২ সালে নিজের নাটক নটীর পূজার live chat 888sportায়ণে ব্যক্তিগত তত্ত্বাবধান। এই উদ্যোগ সিনেমায় তখনকার পরিচিত উপস্থাপনভঙ্গির (representation) বিকল্প একটি আদল তৈরির ইচ্ছা থেকে যতটা, ততটাই নিজের ভেতরের অন্য এক তাগিদ থেকে – দৃশ্যরূপ নির্মাণের নতুন এক পন্থা আবিষ্কারের উত্তেজনা থেকে। খুব সুখের হয়নি এ-অভিজ্ঞতাও। বলা যায়, মুরারিকে লেখা চিঠির কথাই ফিরে এলো তাঁর কাছে, যেখানে live chat 888sportক্ষেত্রে উপযুক্ত সৃষ্টিকর্তার অভাবের জন্য আক্ষিপ জানিয়েছিলেন তিনি। কবি উপলব্ধি করলেন, কাব্যে, চিত্রে বা সংগীতে যেসব পরীক্ষা-নিরীক্ষা খুব সহজেই করা যায়, সিনেমায় সেসব করা কঠিন : ‘ছায়াচিত্রের আয়োজন আর্থিক মূলধনের অপেক্ষা রাখে, শুধু সৃষ্টিশক্তির নয়।’ আর হয়তো সেই কারণেই ১৯৩২ সালের পর live chat 888sport জগতের প্রত্যক্ষ সান্নিধ্য থেকে নিজেকে সরিয়েই নিলেন রবীন্দ্রনাথ।
কিন্তু কবির নিজের কথামতোই তাঁর মন তখন চোখ মেলেছে রূপের রাজ্যে। ১৯২৮ সালের শেষে নির্মলকুমারী মহলানবিশকে লিখেছিলেন :
এর আগে আমার মন আকাশে কান পেতেছিল, বাতাস থেকে সুর আসত, কথা শুনতে পেত, আজকাল সে আছে চোখ মেলে রূপের রাজ্যে, রেখার ভিড়ের মধ্যে। গাছপালার দিকে তাকাই, তাদের অত্যন্ত দেখতে পাই – স্পষ্ট বুঝতে পারি জগৎটা আকারের মহাযাত্রা।
আকালের মহাযাত্রা নিয়ে কবির এই উপলব্ধির ছাপ সবচেয়ে বেশি পড়েছে তাঁর আঁকা ছবিতে। কিন্তু সেখানেই তাঁর উপলব্ধি সীমাবদ্ধ ছিল না। সিনেমার বাণিজ্যিক আয়োজন বিষয়ে সুস্পষ্ট বিতৃষ্ণা সত্ত্বেও আমৃত্যু কবির মনের মধ্যে ছিল live chat 888sport নিয়ে উত্তাপ, উষ্ণতা আর কৌতূহল। নিজের সৃষ্টির অন্দরমহল থেকেও সিনেমাকে কখনো নির্বাসন দেননি কবি। সেদিকেই এখন মন দেবো আমরা।
দুই
১৯২৮ সালের শেষে নির্মলকুমারী মহলানবিশকে আকালের মহাযাত্রা বিষয়ে নিজের উপলব্ধির কথা জানিয়ে যখন চিঠি লিখছিলেন রবীন্দ্রনাথ, তখনই তিনি লিখছিলেন তাঁর 888sport alternative link শেষের 888sport app download apk।
সতেরোটি পরিচ্ছেদে অসাধারণ এক প্রেমোপাখ্যানকে ধীরে ধীরে গড়ে তোলা হয়েছে। কিন্তু এখানে রবীন্দ্রনাথ আদি-মধ্য-অন্ত সংবলিত কালানুক্রমিক রীতিটি পুরোপুরি মানেননি। তৃতীয় এবং চতুর্থ পরিচ্ছেদে হঠাৎই আখ্যানের গতি ব্যাহত করে কিছু পূর্বকথা সেরে নিয়েছেন, যেমনটি করা হয় সিনেমায়। ফ্ল্যাশব্যাকের এই কায়দা তখনকার (নির্বাক) সিনেমাতেও পুরোপুরি দুর্লভ ছিল না। হয়তো সবাক live chat 888sportে এর ব্যবহারে অনেক বৈচিত্র্য এবং কুশলতা এসেছে। কিন্তু ছবির ইন্টার টাইটেলে ‘কয়েক বছর আগে’ জাতীয় কথা ব্যবহার আখ্যানের পূর্বপট বর্ণনা করার রীতি প্রয়োগে সে-যুগের live chat 888sportকারেরা পিছপা হতেন না। এরই তুলনীয় এক পদ্ধতি রবীন্দ্রনাথ ব্যবহার করেছেন তাঁর এ-888sport alternative linkে। তাঁর আখ্যানের দ্বিতীয় পরিচ্ছেদের শেষ দুটি বাক্য এরকম :
এইখানে একবার পিছনে ফিরে দেখা চাই। পশ্চাতের কথাটা সেরে নিতে পারলে গল্পটার সামনে এগোবার বাধা হবে না।
পরবর্তী পরিচ্ছেদ দুটির নামের মধ্যেই লুকোনো থাকে তাদের বিপরীত গতির টান – ‘পূর্ব ভূমিকা’ আর ‘লাবণ্য পুরাবৃত্ত’। অবশ্য তার চেয়েও চমকপ্রদ, প্রায় অমোঘ, এই পরিচ্ছেদদুটির ব্যবহারিক অবস্থান, ইংরেজিতে বললে strategic placement। প্রথম দুটি পরিচ্ছেদে রবীন্দ্রনাথ সযত্নে প্রতিষ্ঠা করে দেন তাঁর প্রোটাগনিস্ট অমিতের ব্যক্তিত্বকে। আর দ্বিতীয় পরিচ্ছেদে প্রাণ পায় আখ্যানের মূল পরিসরটি – অমিতের সাপেক্ষে। স্থান-কাল-পাত্রের এই ত্র্যহস্পর্শে প্রস্ত্তত হয়ে ওঠে একটি পরিপূর্ণ ক্ষেত্র, যা পাঠককে নিয়ে যাবে শেষের 888sport app download apkর বিধুর অথচ সংরাগময় উপসংহারের দিকে। সিনেমার পর্দায় এস্টাবলিশমেন্ট শট ব্যবহার করে এভাবে ক্ষেত্র প্রস্ত্তত করার প্রথা চলে আসছে বহুদিন ধরে। খুব বেশি সিনেমা হয়তো দেখেননি রবীন্দ্রনাথ। কিন্তু শেষের 888sport app download apkর এই সূচনাপর্ব পড়ে মনে হয়, পদ্ধতিটা তাঁকে আকর্ষণ করেছিল।
এই আখ্যানের অন্যতম সম্পদ অবশ্য এর চিত্রময়তা। সতেরোটি পরিচ্ছেদের মধ্যে নয়টিতেই নানা বর্ণের, নানা স্বাদের বর্ণনায় পাঠককে আচ্ছন্ন করে ফেলেন রবীন্দ্রনাথ। সেই বর্ণনা নিছক 888sport live footballিকের বর্ণনা নয়, বরং তা আখ্যানের ঘনত্ব বাড়িয়ে তোলে স্থান-কাল-পাত্রকে আরো মূর্ত করে দিয়ে।
নির্মাণশৈলীর বিচারে, রসের বিচারেও, শেষের 888sport app download apk নিঃসন্দেহে একটি 888sport alternative link। কিন্তু সেই 888sport alternative linkের মধ্যে দৃশ্যনির্ভর এসব বর্ণনা নিছক অলংকরণ বা সিনেমাধর্মী মুহূর্ত হয়ে থাকে না। আখ্যানের গতিপথ এবং চরিত্রকে প্রভাবিত করে, নিয়ন্ত্রণ করে, তাকে এক অন্য মাত্রা দেয়। লিখিত আখ্যান হয়ে ওঠে সিনেমার মতো। অন্তত চিত্রনাট্যের মতো। এই চিত্রনাট্যের নির্ভর বহুমাত্রিক রূপের এক চমৎকার মন্তাজ।
১৩৪১ বঙ্গাব্দে (১৯৩৪ সাল) প্রকাশিত হলো রবীন্দ্রনাথের 888sport alternative link চার অধ্যায়। ইতোমধ্যে কবি live chat 888sportক্ষেত্রের ব্যাপারে কিছুটা উৎসাহী হয়েছেন। অন্তত দুটি ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ অবদান রেখেছেন। এগুলোর একটি, মিউনিখ শহরে বসে একদিনেই লিখে ফেলেছেন একটি ‘চিত্রনাট্য’ আর অন্যটি, live chat 888sport নটীর পূজা নির্মাণে তত্ত্বাবধান। আমরা জানি, সেগুলি ফলপ্রসূ হয়নি। কিন্তু নঞর্থক এই অভিজ্ঞতার পরও মনটাকে খোলাই রেখেছিলেন কবি। তারই প্রতিফলন ঘটেছে চার অধ্যায় আখ্যানের নির্মাণশৈলীতে।
888sport alternative linkের সূচনায় আছে একটি নাতিদীর্ঘ ‘ভূমিকা’। এটি গড়ে ওঠে লিখিত বা পাঠ্য 888sport live footballের স্বাভাবিক ঐতিহ্য মেনেই। আখ্যানের কেন্দ্রীয় চরিত্র এলার সঙ্গে পাঠকের পরিচয় ঘটান ঔপন্যাসিক। কিন্তু তাঁর ব্যবহৃত শেষ বাক্যে কি এসে পড়ে না সিনেমার এক বহুল-প্রচলিত কৌশলের ছায়া? – ‘এই ভূমিকার পরে পাঁচ বছর উত্তীর্ণ হল, এখন কাহিনী অনেক দূর অগ্রসর হয়েছে।’
এক ধাক্কায় দীর্ঘ এককাল পরিসীমা উলস্নম্ফনের উদাহরণ লিখিত বা পাঠ্য 888sport live footballে বিরল, এ-কথা বলছি না। এমনকি রবীন্দ্রনাথ নিজেও পূর্ববর্তী অনেক রচনায় আখ্যানগতি বা যুক্তির প্রয়োজনে এরকম উলস্নম্ফনের সাহায্য নিয়েছেন। ১৯১৭ সালে প্রকাশিত চতুরঙ্গ আখ্যানে সময়প্রবাহের পারম্পর্যকে সচেতনভাবে উপেক্ষাই করেছেন। তবে এবারের ঘোষণায় নিশ্চিতভাবেই অভিনবত্ব আছে। ‘ভূমিকা’য় তিনি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এলার চরিত্র, তার পারিবারিক পরিবেশ, সাংস্কৃতিক এবং শিক্ষাগত পরিম-ল; তারপর ইন্দ্রনাথকে এনে ছোট্ট একটা sub-plot তৈরি করলেন এলার ভবিষ্যৎ জীবনের অভিমুখ কেমন হবে তা বোঝানোর জন্য। কিন্তু কোনো পূর্ণতা পাওয়ার আগেই রুদ্ধ হলো তার গতি। সচেতনভাবেই আখ্যানপ্রবাহকে রবীন্দ্রনাথ এগিয়ে নিয়ে গেলেন পাঁচ বছর সামনে। মূল আখ্যান শুরু হলো এবার। সেই আখ্যান কাল এবং ভৌগোলিক পরিসরের বিচারে অনেক ঘনসংবদ্ধ।
চারটি অধ্যায়ে বিন্যস্ত এই আখ্যানে সিনেমার ছাত্র হিসেবে একটি চমকপ্রদ বিষয় লক্ষ না করে পারি না। প্রতিটি অধ্যায়ের সূচনায় তৈরি করা হয় এক দৃশ্যনির্ভর পরিপ্রেক্ষিত। ঠিক যেমন করে এস্টাবলিশিং শট দিয়ে তৈরি করা হয় সিনেমার একটি সিন বা সিকোয়েন্সের মুখবন্ধ। শব্দের মায়ার কোনো দৃশ্য রচনা করে পাঠককে আচ্ছন্ন করে ফেলার যে-প্রবণতা আমরা লক্ষ করেছি রবীন্দ্রনাথের বহু আখ্যানে, এটা তার থেকে মূলেস্থূলে আলাদা। এ শুধু আসন্ন সংঘটনের ভৌগোলিক পরিসর নয়, রীতিমতো মূর্ত এক ক্ষেত্র, যার স্বাদ বর্ণ গন্ধ এমনকি শব্দ দিয়েও তৈরি হয় পরিপ্রেক্ষিত।
আখ্যানের প্রথম অধ্যায় শুরু হয় চায়ের দোকানের দৃশ্য দিয়ে :
দৃশ্য – চায়ের দোকান। তারই একপাশে একটি ছোট ঘর। সেই ঘরে বিক্রির জন্যে সাজানো কিছু স্কুলপাঠ্য বই, অনেকগুলিই সেকেন্ডহ্যান্ড। কিছু আছে য়ুরোপীয় আধুনিক গল্প-নাটকের ইংরেজি তর্জমা। সেগুলো অল্পবিত্ত ছেলেরা পাতা উলটিয়ে পড়ে চলে যায়, দোকানদার আপত্তি করে না। স্বত্বাধিকারী কানাই গুপ্ত, পুলিশের পেনশনভোগী সাবেক সাব-ইন্সপেক্টর।
সামনে সদর রাস্তা, বাঁপাশ দিয়ে চলে গেছে গলি। যারা নিভৃতে চা খেতে চায় তাদের জন্যে ঘরের এক অংশ ছিন্নপ্রায় চটের পর্দা দিয়ে ভাগ করা। আজ সে-দিকটাতে একটা বিশেষ আয়োজনের লক্ষণ। যথেষ্ট পরিমাণে টুলচৌকির অসদ্ভাব পূরণ করছে দার্জিলিং চা কোম্পানির মার্কা-মারা প্যাকবাক্স। চায়ের পাত্রেও অগত্যা বৈসাদৃশ্য, তাদের কতগুলি নীলরঙের এনামেলের, কতগুলি সাদা চীনামাটির। টেবিলে হাতলভাঙা দুধের জগে ফুলের তোড়া। বেলা প্রায় তিনটে। ছেলেরা এলালতাকে নিমন্ত্রণের সময় নির্দেশ করে দিয়েছিল ঠিক আড়াইটায়। বলেছিল, এক মিনিট পিছিয়ে এলে চলবে না। অসময়ে নিমন্ত্রণ, যেহেতু ঐ সময়টাতেই দোকান শূন্য থাকে। চা-পিপাসুর ভীড় লাগে সাড়ে চারটার পর থেকে।
এলা ঠিক সময়েই উপস্থিত। কোথাও ছেলেদের একজনেরও দেখা নেই। একলা বসে তাই ভাবছিল – তবে কি শুনতে তারিখের ভুল হয়েছে। এমন সময়ে ইন্দ্রনাথকে ঘরে ঢুকতে দেখে চমকে উঠল। এ-জায়গায় তাঁকে কোনোমতেই আশা করা যায় না।
দ্বিতীয় অধ্যায়ের শুরুতে এলার বসে থাকার বর্ণনায় বাহ্যিক ভূগোলের পরিপ্রেক্ষিতটা আর থাকে না, ফুটে ওঠে এক আটপৌরে ঘরোয়া ছবি।
এলা বসে আছে কেদারায়, পিঠে বালিশ গোঁজা। লিখছে একমনে। পায়ের উপর পা তোলা। দেশবন্ধুর মূর্তি-আঁকা খাতা কাঠের বোর্ডে কোলের উপর আড় করে ধরা। দিন ফুরোতে দেরি নেই, কিন্তু তখনো চুল রয়েছে অযত্নে। বেগুনি রঙের খদ্দরের শাড়ি গায়ে, সেটাতে মলিনতা অব্যক্ত থাকে, তাই নিভৃতে ব্যবহারে তার অনাদৃত আয়োজন। এলার হাতে একজোড়া লালরঙ-করা শাঁখা, গলায় একছড়া সোনার হার। হাতির দাঁতের মতো গৌরবর্ণ শরীরটা আঁটসাঁট; মনে হয় বয়স খুব কম কিন্তু মুখে পরিণত বুদ্ধির গাম্ভীর্য। খদ্দরের সবুজ রঙের চাদরে 888sport app সংকীর্ণ লোহার খাট ঘরের প্রামেত্ম দেয়ালঘেঁষা। নারায়ণী স্কুলের তাঁতে-বোনা শতরঞ্চ মেঝের উপর পাতা। একধারে লেখবার ছোটো টেবিলে বস্নটিং প্যাড; তার একপাশে কলম পেনসিল সাজানো দোয়াত-দান, অন্যধারে পিতলের ঘটিতে গন্ধরাজ ফুল। দেয়ালে ঝুলছে কোনো দূরবর্তী কালের ফোটোগ্রাফের প্রেতাত্মা, ক্ষীণ হলদে রেখায় বিলীনপ্রায়।
যে-কোনো 888sport alternative linkের বিসত্মৃত পরিসর বর্ণনার পক্ষে খুবই অনুকূল। কিন্তু সাধারণত তা ছড়িয়ে থাকে আখ্যানের শরীরে, নানা জায়গায়। চার অধ্যায়ে লক্ষণীয় প্রতিটি বর্ণনার নির্দিষ্ট, ব্যতিক্রমহীন অবস্থান এবং সেগুলির বিশিষ্টতা। আসন্ন সংঘটনের পরিসরটিকে তুলির নিপুণ টানে ফুটিয়ে তোলেন রবীন্দ্রনাথ। এগুলোর কোনোটিই
কথার টানে এসে যাওয়া বর্ণনা নয়, ঘটনার প্রয়োজনে সযত্নে বিন্যস্ত অনুপুঙ্খ। সিনেমার ভাষায় একেই বলে ডিটেইলের ব্যবহার। অর্থাৎ বর্ণনা আসে ঘটনার সূত্র হয়ে। প্রতিটি ক্ষেত্রে এরপর তৈরি হয় একটি নাটকীয় মুহূর্ত। প্রথম অধ্যায়ে যেমন ফাঁকা চায়ের দোকানে ইন্দ্রনাথের অপ্রত্যাশিত প্রবেশ, দ্বিতীয় অধ্যায়ে ঠিক একইভাবে এলার ঘরে আচমকা ঢুকে পড়ে অতীন, ডাক দেয়, ‘এলী’। এরপর ঘটনা ঘটতে থাকে। কিন্তু অধ্যায়ের মধ্যবর্তী কোনো জায়গাতেই খুঁজে পাওয়া যায় না আর কোনো বর্ণনা।
একইভাবে তৃতীয় অধ্যায়ের শুরুতে রবীন্দ্রনাথ ফুটিয়ে তোলেন এক পরিত্যক্ত পরিসর – পচা ডোবা, গ্রাম্যপথ, জঙ্গল আর পরিত্যক্ত পুজোর দালানের বর্ণনায়। চতুর্থ অধ্যায়ের সূচনায় সেভাবে নেই কোনো ভৌগোলিক পরিসরের বর্ণনা, যদিও বোঝা যায় ঘটনা ঘটছে এলার বাড়ির মধ্যে কোনো ঘরে। আর সংলাপ এবং শ্রম্নত শব্দের ব্যঞ্জনায় এবারে প্রতিষ্ঠা পায় তিনটি উদ্ভ্রান্ত, পীড়িত চরিত্রের মানসিক ভূগোল।
শেষের 888sport app download apk এবং চার অধ্যায় রবীন্দ্রনাথের দুটি আশ্চর্য রচনা। এগুলিতে প্রতিফলিত হয়েছে সমকালীন 888sport live chatভাবনা আর রাজনৈতিক আন্দোলনের কিছু প্রবণতা নিয়ে কবির প্রতিক্রিয়া। দুটি রচনাতেই তাঁর সমালোচকদের কাছে কিছু প্রমাণ করার জরুরি তাগিদ ছিল কবির। বিশেষ করে তিনি বোঝাতে চেয়েছিলেন, রক্ষণশীলতা না তাঁর চরিত্রের ধর্ম, না তাঁর 888sport live footballের। নতুন শৈলীতে সিনেমার মতো দুটি আখ্যান রচনা করে তারই প্রমাণ রাখলেন কবি।
এরই পাশাপাশি যদি খোলা মনে বিচার করি রবীন্দ্রনাথের সে (১৯৩৭) এবং গল্পসল্প (১৯৪১) নামের আখ্যান দুটিকে, এগুলি সম্পর্কেও বলতে হবে ‘সিনেমার মতো’। এগুলির মধ্যে হয়তো নেই কাহিনিচিত্রের মামুলি বাঁধুনি, কিন্তু অগোছালো স্বপ্ননির্মাণের মেজাজে এগুলি আমাদের পৌঁছে দেয় সমাজের বস্ত্তসত্য ছাড়িয়ে কোনো এক বৃহত্তর সত্যের কাছে।
তিন
এবার আমরা চোখ ফেরাব এমন এক রচনার দিকে, যার শরীরে আছে কাহিনির চলন আর সংগঠনে আছে রূপের উদ্ভাস; কিন্তু সেটি নয় কোনো 888sport alternative link বা গল্প।
১৯৩০ সালের জুলাই মাসে মিউনিখে বসে নিকটবর্তী জনপদ ওবেরআম্মারগাউয়ের বিখ্যাত প্যাশন পেস্ন দেখার তথাকথিত অনুপ্রেরণায় এক চিত্রনাট্যের বয়ান লিখেছিলেন রবীন্দ্রনাথ, ইংরেজিতে। কিন্তু মনে রাখা দরকার, প্যাশন পেস্ন-তে যিশুখ্রিষ্টের জীবনান্তকালীন চূড়ান্ত শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতনের ঘটনাবলি 888sport app download for android করে ইস্টার স্পিরিটের যে-সংকীর্ণ ধর্মীয় অনুষঙ্গ তৈরি করা হয় তাকে পুরোপুরি অস্বীকার করেছিলেন কবি। তাঁর তৈরি নাট্যবয়ানের সূত্র ছিল খ্রিষ্টের জন্মকালীন ঘটনাবলির লোকগাথা। অর্থাৎ, কবির চিত্রনাট্যটি ক্রিসমাস স্পিরিটজাত। সেই চিত্রনাট্যের live chat 888sport-সম্ভাবনার যখন এক বিয়োগান্ত পরিণতি হলো, তখন সেটিকে একটি দীর্ঘ 888sport app download apkয় রূপান্তরিত করে দ্য চাইল্ড নামে প্রকাশের জন্যে ফেবার অ্যান্ড ফেবারকে দিয়ে দিলেন কবি। অল্পদিন পরে এর বাংলা রূপান্তরও বেরোল শিশুতীর্থ নামে।
মূল চিত্রনাট্য থেকে রূপান্তরিত ইংরেজি 888sport app download apk বা তার বাংলা রূপান্তর, এই তিনটি রচনা পুরোপুরি এক নয়। কিন্তু মূলত একই ভাবনার অনুসারী বলে তাদের পাঠের মধ্যে এক ধরনের সামঞ্জস্য আছে। অক্ষরনির্ভর হয়েও রচনাগুলোর ভরকেন্দ্র হয়ে থাকে তাদের দৃশ্যগত আবেদন। এখানে ঠিক প্রতীকী রূপকল্পের কথা বলছি না আমরা, যা কাব্যের সম্পদ। রূপক, উপমা, উৎপ্রেক্ষা আর রূপকল্পের ব্যবহারে 888sport app download apk শ্রোতা আর পাঠককে বাধ্য করে এক কল্পনার রাজ্যে পাড়ি দিতে। তাদের মনের মধ্যে কথার বাইরের মানে ছাড়িয়ে ভেতরের একটা মানে অনবরত তৈরি হতে থাকে, চলতে থাকে এক অবিরাম নির্মাণপ্রক্রিয়া। এসব রচনায় সাজানো কথাগুলো যে-ছবি তৈরি করতে চায়, তা ঠিক মনের মধ্যে জেগে ওঠার মতো, অনুভূতির তারে ঘা দেওয়ার মতো কোনো কাল্পনিক ছবি নয়। তাদের রূপটি ব্যবহারিকভাবেই মূর্ত এবং দ্যোতনাময়। আমাদের চোখ-কানের ওপরে আছড়ে পড়ে ইন্দ্রিয়গুলোকে অধিকার করে নেয় যেন। আবিল সময় ও সমাজের ঈর্ষা, দ্বেষ, হিংসা, হানাহানির যে-ছবি কবি ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছিলেন এসব রচনায়, তার উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয় বিশিষ্ট কিছু ছবি। সেগুলো বিপর্যস্ত, অন্ধকারাচ্ছন্ন মানবসমাজের ছবি। নিছক ছবি হিসেবেই 888sport app download for androidীয়, রূপকল্প হিসেবে নয়। বলা উচিত ‘রূপের চলৎপ্রবাহ’ হিসেবে।
যাত্রীরা চারি দিক থেকে বেরিয়ে পড়ল –
সমুদ্র পেরিয়ে, পর্বত ডিঙিয়ে পথহীন প্রান্তর উত্তীর্ণ হয়ে –
এল নীলনদের দেশ থেকে, গঙ্গার তীর থেকে,
তিববতের হিমমজ্জিত অধিত্যকা থেকে, প্রাকাররক্ষিত নগরের সিংহদ্বার দিয়ে,
লতাজালজটিল অরণ্যে পথ কেটে।
কেউ আসে পায়ে হেঁটে, কেউ উটে, কেউ ঘোড়ায়, কেউ
হাতিতে,
কেউ রথে চীনাংশুকের পতাকা উড়িয়ে।
নানা ধর্মের পূজারি চলল ধূপ জ্বালিয়ে মন্ত্র প’ড়ে।
রাজা চলল, অনুচরদের বর্শাফলক রৌদ্রে দীপ্যমান,
ভেরি বাজে গুরু গুরু মেঘমন্দ্রে।
ভিক্ষু আসে ছিন্ন কন্থা প’রে
আর রাজ-অমাত্যের দল স্বর্ণালাঞ্ছনখচিত উজ্জ্বল বেশে।
জ্ঞানগরিমা ও বয়সের ভারে মন্থর অধ্যাপককে ঠেলে দিয়ে চলে
চটুলগতি বিদ্যার্থী যুবক।
মেঘেরা চলেছে কলহাস্যে, কত মাতা, কুমারী, কত বধূ;
থালায় তাদের শ্বেতচন্দন, ঝারিতে গন্ধসলিল।
বেশ্যাও চলছে সেই সঙ্গে; তীক্ষন তাদের কণ্ঠস্বর,
অতিপ্রকট তাদের প্রসাধন।
চলেছে পঙ্গু, খঞ্জ, অন্ধ, আতুর,
আর সাধুবেশী ধর্মব্যবসায়ী –
দেবতাকে হাটে হাটে বিক্রয় করা যাদের জীবিকা।
আমরা জানি, নতুন স্বাদের এই যিশুগাথা অবলম্বনে কোনো ছবি শেষ পর্যন্ত তৈরি হয়নি। কেন হয়নি, তার রাজনৈতিক-সামাজিক ব্যাখ্যা কিছু-কিছু পাওয়া যায়। কিন্তু এ-কথাও অস্বীকার করা যায় না, রবীন্দ্রনাথের কাব্যচিত্রনাট্যটিকে live chat 888sportের আধারে গ্রন্থিত করার জন্য সত্যিই প্রয়োজন ছিল উচ্চস্তরের এক মনীষার। জাঁ বক্তো, সালভাদর দালি বা লুই বুনুয়েলের কথা এই প্রসঙ্গে মনে না-পড়েই পারে না। মানে তাঁদের তৈরি কিছু সিনেমার কথা – লুই বুনুয়েল এবং সালভাদর দালি-পরিচালিত অ্যান আন্দালুসিয়ান ডগ (১৯২৯), লুই বুনুয়েল-পরিচালিত দি এজ অব গোল্ড (১৯৩০) আর জাঁ বক্তো-পরিচালিত দ্য বস্নাড অব অ্যা পোয়েট (১৯৩০)। বস্ত্তসত্যকে অগ্রাহ্য করে রূপনির্মাণের প্রায় এক স্বেচ্ছাচারে ভরা এই ছবিগুলিতে দৃশ্যপরম্পরার কোনো যুক্তিশৃঙ্খলা খুঁজে পাবেন না কাহিনিচিত্রের যুক্তিগ্রাহ্যতায় অভ্যস্ত দর্শক। কিন্তু সবটা মিলিয়ে এক অস্থির সমাজের ছবি ফুটিয়ে তুলে যেভাবে মনকে আলোড়িত করে এই তিনটি ছবি, তার কাছে তুচ্ছ হয়ে যায় যুক্তিশৃঙ্খলার দাবি। রূপের চলৎপ্রবাহের মতো এগুলি এগিয়ে যায়, যুক্তিসংগত ব্যাখ্যার তোয়াক্কা না করেই। এ-যুগের বহু কবি, এমনকি live chat 888sportরসিকও, এই ছবিগুলিকে চিহ্নিত করেন রুপালি পর্দার 888sport app download apk হিসেবে। সমমাপের কোনো প্রতিভার স্পর্শ পেলে হয়তো কবির সাধের এ-চিত্রনাট্য থেকেও তৈরি হতে পারত এরকম কোনো ছবি।
চার
অচরিতার্থতার এই ঘটনা কবিকে ব্যথিত, বিষণ্ণ করেছিল নিশ্চয়ই; কিন্তু হতোদ্যম করেনি। কারণ এর পরেই তাঁর 888sport app download apkর গতিপথে এলো এক নতুন বাঁক। রবীন্দ্র888sport app download apkয় এই পালাবদলের সূচনাবিন্দু হিসেবে বিশেষজ্ঞরা চিহ্নিত করেছেন ‘শিশুতীর্থ’ নামের 888sport app download apkটিকে, যা আসলে দ্য চাইল্ডের রূপান্তর। সৃষ্টির সময়ে যা ছিল একটি ব্যতিক্রমী রচনা, কালক্রমে কবি সেটিকেই মিলিয়ে নিয়েছেন নতুন এক কাব্যরীতির সঙ্গে।
বস্ত্তত পুরো ত্রিশের দশক জুড়েই কবির কাব্যে বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে নতুন এই কাব্যরীতি, যার মূল দুটি স্তম্ভ হলো এক সজীব আখ্যানময়তা আর তীব্র দৃশ্যময়তা। সেই নির্মাণে খুব প্রয়োজনীয় নয় পর্ব, মাত্রা, বৃত্ত, অমত্ম্যমিল বা ছন্দের 888sport app চেনা লক্ষণ। বরং বর্ণনার এক আপাতবাস্তবতা কিংবা ধারাবাহিকতা, উপস্থাপনার পরিসর, রূপের অন্তর্গত ভাব বা আবেগ, দ্যোতনা বা ব্যঞ্জনা এই সবকিছু নিয়েই তৈরি হতো অন্যরকমের এক বিন্যাস। এখানে বিশেষ করে মনে পড়বে পুনশ্চ (১৯৩২), শেষ সপ্তক (১৯৩৫), পত্রপুট (১৯৩৬) আর শ্যামলী (১৯৩৬) কাব্যগ্রন্থের গদ্যছন্দের কথা। গদ্যছন্দ এসব 888sport app download apkর একমাত্র ব্যতিক্রমী লক্ষণ নয়। পাশাপাশি লক্ষ না করে পারি না, ‘তাঁর 888sport app download apkর মধ্যে নতুন ধরনে তৈরি হয় গল্প বলার স্রোত, চরিত্র তৈরির খেলা।’
কিন্তু তারপরে প্রামিত্মক (১৯৩৭), রোগশয্যায় (১৯৪০), আকাশপ্রদীপ (১৯৪০), নবজাতক (১৯৪১), সানাই (১৯৪১), আরোগ্য (১৯৪১), জন্মদিনে (১৯৪১) আর শেষলেখা (১৯৪১) কাব্যগ্রন্থের অমত্ম্যমিলযুক্ত 888sport app download apkর শরীরেও দেখা দিলো সাবলীল বাক্ছন্দে গ্রথিত রূপের এক অনাবিল প্রবাহ, যাকে বলা চলে সাধারণ চেতনা বা দৈনন্দিন অভিজ্ঞতারই প্রসারণ। এসব চরিত্র নিয়ে মাত্রা, পর্ব বা বৃত্তের গাণিতিক বিন্যাস বর্জন করে, অথচ অমত্ম্যমিল রেখেও, কবি তখন পঙ্ক্তি সাজাচ্ছেন বাচন বা ভাবের নিরিখে। আর এভাবেই বহু 888sport app download apkর পদ আর চরণের মধ্যে ধরা পড়ছে সিনেমার অনিবার্য উপাদান শট অথবা সিন-এর ছায়া। কেননা, শট বা সিনের স্থায়িত্বও নির্ধারিত হয় ভাবের নিরিখে, নির্দিষ্ট সময়ের মাপে নয়। কৈশোরে ঘরের জানালার খড়খড়ি তুলে বাইরের দৃশ্য দেখতেন রবীন্দ্রনাথ। পূর্ববঙ্গে জমিদারি পরিদর্শনের সময় পদ্মা বোটের জানালা থেকে গ্রামজীবনের তুচ্ছাতিতুচ্ছ ছবি ধরা পড়ত তাঁর মনের ফটোগ্রাফিক পেস্নটে। একটা দৃশ্যকে কোনো নির্দিষ্ট ক্ষেত্রের মধ্যে সীমায়িত বা ফ্রেম করে নেওয়ার সেই অভ্যাসেরই পুনরাবৃত্তি যেন দেখা দিলো তাঁর রচনার এ-পর্বে। নবজাতক কাব্যগ্রন্থের
‘এপারে-ওপারে’ নামের 888sport app download apkটি হতে পারে এর এক গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ। এখানে কবি নিজের জীবনের অবস্থানগত এবং আলংকারিক উচ্চতা থেকে দেখা নিম্নবিত্ত জীবনের প্রবাহকে ফুটিয়ে তোলেন যেন এক
তথ্যচিত্র-নির্মাতার কুশলতায়। এখানে সামগ্রিক বর্ণনায় সঞ্চারিত চিত্রময়তার পাশাপাশি লক্ষ করার নিম্নবিত্ত নাগরিক জীবনের বহু টুকরো ছবির বিন্যাস। কবি যেন একজন live chat 888sportকার, কাট করে করে চলে যাচ্ছেন দৃশ্য থেকে দৃশ্যান্তরে।
কবির এই সময়ের কোনো কোনো 888sport app download apkর সামগ্রিক বিন্যাসেও ফুটে উঠল শট, সিন আর সিকোয়েন্সের স্তরায়িত সংগঠনের (hierarchy) আদল। আকাশপ্রদীপ কাব্যগ্রন্থের ‘কাঁচা আম’ 888sport app download apkটির প্রথম স্তবকে বর্তমানের একটি ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তারই সূত্রে যেন ফ্ল্যাশব্যাকে চলে গেলেন কবি। তারপর নিজের কৈশোরে প্রায় সমবয়সী বউদির সঙ্গে সম্পর্কের বিস্তারিত যে-ছবিটি আঁকলেন, চিত্রময়তা এবং সংগঠনের নিরিখে তাতে পাওয়া যায় নিটোল এক কাহিনিচিত্রের মেজাজ।
এমনকি নতুন এই কাব্যরীতির সঙ্গে সম্পর্ক রহিত হলেও ছড়া (১৯৩৭) আর ছড়ার ছবি (১৯৪১) কাব্যগ্রন্থের অনেক রচনাকেই চিহ্নিত করা যেতে পারে ‘দৃশ্যের গতিপ্রবাহ’ হিসেবে। ১৩৪৭ বঙ্গাব্দ অর্থাৎ ইংরেজি ১৯৪০ সালের শারদীয় আনন্দবাজার পত্রিকায় ‘live chat 888sport’ নামে রবীন্দ্রনাথের একটি ছড়া প্রকাশিত হয়েছিল। রচনার তারিখ ওই বছরেরই ২৭ মার্চ। তিনটি স্তবকে বিভক্ত এবং বাহান্নটি চরণে বিন্যস্ত এই ছড়ায় আছে বাংলার চলমান জীবনভিত্তিক দৃশ্যের এক অক্ষরময় শোভাযাত্রা। পত্রিকায় প্রকাশিত এই 888sport app download apkটির একটি পরিবর্তিত পাঠ সংকলিত হয়েছে ছড়া কাব্যগ্রন্থের পাঁচসংখ্যক রচনা হিসেবে। সেখানে রচনাটির ভাষা এবং চরণবিন্যাস বদলে গেলেও দৃশ্যরূপ ব্যাহত হয়নি বা দৃশ্যগত আবেদনও ক্ষুণ্ণ হয়নি।
এসব রচনা কি নিছক তাঁর কবিমানসের খেয়াল? আমাদের মনে হয়, সত্যিই 888sport app download apkর সঙ্গে সিনেমার এক সেতু তৈরি করতে চেয়েছেন কবি, যেখানে যাত্রার অভিমুখ সিনেমা থেকে 888sport app download apkর দিকে।
[প্রথম সুব্রত মিত্র স্মারক বক্তৃতার (চিত্রবাণী, কলকাতা, ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৮) পরিমার্জিত পাঠ।]।


Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.