বদরুন নাহার
আমি আর আমার সহকর্মী জামাল 888sport app থেকে পেশাগত কারণেই দক্ষিণবঙ্গে যাওয়া আর পথে যেতে-যেতে বহুদিন পর আমার আকবরের কথা মনে হলো, যিনি বাদশা নন, তবু আগে তার কাছ থেকে আমরা সবসময় স্বর্ণময় অতীতের গল্প আশা করতাম। কারণ আমরা ভাবতাম গল্প আসে হতাশা অথবা স্বর্ণময় অতীত থেকে। কিন্তু তিনি বলতেন না, তাঁর দাদার হাতে ছড়ি ছিল। জেলেরা তাঁর সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় মাথা কোমর পর্যন্ত ঝুঁকে যেত। তিনি বলেননি তাঁর বাবা ভগ্ন প্রভুতন্ত্রের প্রান্তসীমায় দাঁড়িয়ে আকবর বাদশার স্বপ্ন দেখতে দেখতে তাঁর নাম রেখে ফেলেছেন আকবর। তার মধ্যে এইরূপ হতাশা নেই। তাঁর কথাগুলো ছিল ভিন্নরকম। তাই তার ভাষা বুঝতে আমাদের দেরি হয়ে যায়। কারণ তিনি আমাদের বলেছিলেন, জেলেদের মাগুর মাছের সঙ্গে সিরকা বিক্রি করতে হবে। 888sport live chatায়নের জালে জর্জরিত না হয়ে নিজস্ব 888sport live chatপণ্যের জাহাজ সমুদ্রে পাঠাতে হবে। এজন্য অনেক আগেই আমাদের বন্ধু তরিক দুর্বোধ্য একটি গল্প লিখে উৎসর্গ করেছিল আকবরকে। এ-ঘটনা যখন আমরা পেশায় ছিলাম না, নেশায় ছিলাম তখনকার।
888sport app download apk লেখার সে-নেশা আমার আর নেই। এখন মিডিয়ার মিডিওকার হয়ে-ওঠার পেছনে ছুটছি। অফিস চায় আমরা এক্সক্লুসিভ কিছু তুলে আনি। অফারটা পেতেই রাজি হয়ে গেলাম। দুপুরে পৌঁছানোর পর আকবরের সঙ্গে কথা হয়। সে জানায়, বিকেলে ভৈরব পার হয়ে এসে যাবে আমাদের কাছে।
কী বললেন আকবর! তার এই ভৈরব পাড়ি দেওয়ার কথায় কী যেন ঘটে যায়। সহসা আমি কুমার নদ পাড়ি দিয়ে চলে যাই এক দশক আগে। হিজলের কেন জলে ভাসার এত সাধ – এই বিষয়ে কথা বলতে বলতে আমি আর তালাত যখন দুধ-চিনির ঘন চায়ে চুমুক দিয়েছি, তখন কুমারের জলে ভেসে আসা কচুরির দিকে তাকিয়ে কবি প্রমোজ হাসান বলতে থাকে –
যতদূর মনে পড়ে এ-নদীতে বসেনি কখনো বেদের প্রসার, মাছের পিঠে চড়ে আসেনি কোনো আশ্চর্য অতিমানুষ। শুধু সন্ধ্যা নেমে এলে, নিত্যদিনের মতো আকাশ মুখ দেখে নিত আর অলস কচুরিরা সেথা থেকে এসে কোথায় চলে যেত।
আমি আর তালাত কি তখন প্রমোজের দিকে তাকিয়েছিলাম? না-কি ছুটে চলা কচুরির ঘন সবুজ বিষণ্ণে দূরে-বহুদূরের আমাদের জন্য অপেক্ষারত কষ্টের ধ্বনি শুনছিলাম। এখন আর তা মনে পড়ে না। আজকাল আর বিকেলে আমরা হাজি শরীয়তউল্লাহ ব্রিজ বা চরকমলাপুরের ব্রিজে দাঁড়িয়ে কুমার নদের বুকে নিজেদের ছায়া খুঁজি না। সবুজের শহর ফেলে আমাদের বিকেলগুলো এখন 888sport appর শীতল অফিসের ব্যস্ততায় কেটে যায়। কিন্তু আকবর বললেন, ভৈরব পাড় হয়ে তিনি শহরে আসবেন! তাহলে কি এখনো বদলে যায়নি প্রতিটি বিকেল? রূপসার ঘোলা জলে ছিপ হাতে বসে থাকে কোনো শৌখিন মৎস্য শিকারি! এসি হোটেলের রুমের একপাশে পড়ে থাকে ডিজিটাল ক্যামেরা। আমরা স্থিরচিত্রের মতো বিছানায় আধশুয়ে রোদ ঝরার অপেক্ষা করি।
জামাল বলেন – ভাই, আসলেই কি এখানে ওরকম কোনো বিপলবীকে পাওয়া যাবে? পেলে কিন্তু ফাটাফাটি হবে!
আমার মধ্যে তখন হেঁয়ালি কাজ করে, উদাস কণ্ঠে বলি – কী জানি? আমি তো ভাই পরাস্ত মানুষ। নদী পেরিয়ে যে-নাবিক আসবেন, তিনি হয়তো জানেন!
জামাল কিছু বলে না, সে বোঝে এখন সদুত্তর পাওয়া যাবে না।
বিকেলে আকবর এলে আমরা বেরিয়ে পড়ি। জামাল কাঁধে ক্যামেরা ঝুলিয়ে নেয়। আমরা হেঁটে-হেঁটে এগিয়ে যাই ভৈরবের পাড়ঘেঁষে বড়বাজারের ভেতর দিয়ে কাদামাখা সড়কে। পেছন থেকে কাঁধে এসে একটা উত্তপ্ত নিশ্বাস যেন ছুঁয়ে গেল! সেইসঙ্গে শরীরের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসা কসরতের ধ্বনি – উহুম আ… উহুম আ। বিশাল বোঝা কাঁধে আমাকে পেরিয়ে যায় দুজন শ্রমিক। পাশ দিয়ে রে… রে… শব্দে ঠেলাগাড়ি নিয়ে অলিগলি ঢুকে যাচ্ছে কাঁচামালের বহর। নানা রকম শব্দে দিশেহারা আমি। এটা শুধু রাজধানীর যান্ত্রিক শব্দের কর্কশ প্রতিযোগিতা নয়, ডিজিটাল ও অ্যানালগের সমম্বয়ে ভিন্নতর বাস্তবতার ধ্বনি। আমি বিস্ময়-মাখানো স্বরে বলি – এখনো এভাবে লোকে মুটে বইছে?
আকবর বলেন – বন্দরবাজার এখনো রাজধানীর মতো স্কেলেটরে চড়তে পারেনি।
আমরা একটা জেটিতে গিয়ে দাঁড়াই। সেখানে জাহাজ ভেড়েনি বহুদিন। কেবল খেয়া পারাপারের নৌকোগুলো ছেড়ে যাচ্ছে, আবার এসে ভিড়ছে। একটা লোহার গোল থামের মাথায় আমি বসে বলি – এই তাহলে ভৈরব?
আকবর বললেন – হুম, বাদামের পেট ফুলিয়ে বরেন্দ্র বাতাস নিয়ে একদিন এখানেই এসেছিল চাঁদ বণিক।
আমি বলি – এখানে বসেই কি আপনারা ভেবেছিলেন, জীবন888sport live chatের তরী হবে হাঁটুভাঙা ‘দ’?
আকবর বললেন, লিটলম্যাগটির কথা প্রথম ভাবে আমার বন্ধু তৌহিদ। ও-ই বলেছিল, আমাদের জেগে-ওঠা শব্দকে সভ্যতার মোড়কে বন্দি করতে হবে।
– সে-ই তৌহিদ এনাম? যে ভৈরবের পুত্র?
জামালের পোষায় না, সে একঠোঙা বাদাম নিয়ে সরে যায়। ওর সরে-যাওয়া দেখতে দেখতে আমিও সরে আসি প্রসঙ্গ থেকে বলি – তো এখন কী করছেন?
তিনি বলেন, কমিউনিটি স্কুল তৈরি করছি।
– কোথায় সেটা? ভৈরবের এপার, না ওপার?
আকবর বলেন, ওপার। এপারেতে তো আধুনিক প্রতিষ্ঠানের অভাব নেই। ডিজিটাল বিদ্যায়তন হচ্ছে যত্রতত্র।
আমি আনমনে উচ্চারণ করি, এপারেতে যত সুখ আমার বিশ্বাস।
আমরা কিছুক্ষণ কাব্য করে কথা বলি। কিন্তু সহসা আকবর বাদশা যেন কবি নন, অধিপতি হয়ে উঠলেন। বলতে লাগলেন, আপনাদের কাব্যকথা এখন রসিকতায় পর্যবসিত হয়েছে। কৃষকের জমিতে লাঙল দেওয়ার লোক নেই। ছেলেটি বিএ পাশ বলে লাঙল ধরে না, মুটে বয়ে নেয় না, চাকরিও পায় না। মেয়েটি ইন্টার পাশ। বিয়ের যোগ্য পাত্র নেই, হাঁস-মুরগ ভীষণ বিষ্ঠাক্লিষ্ট। পেলে-পুষে বাজারে দাম নেই, ফার্মের মুরগির মাংস নরম আর বেশি। এইসব ক্রাইসিস কেউ দেখার নেই। শহুরে ক্রয়ক্ষমতায় ভর করে দাঁড়িয়েছে প্রবৃদ্ধি!
তাঁর গলায় কি ক্রোধ জমে উঠছে, আমি বলি – অথচ প্রকৃত ক্রেতারাও আজ কেঁদে চলেছে, ফরমালিনের বিষ খেয়ে নির্বংশ হওয়ার দায়ে।
আকবর খুব শান্ত কণ্ঠেই বললেন – সেখানেও তো পুঁজির উল্লাস। ক্রয়ক্ষমতার প্রতিযোগিতা।
আমি ভাবি এবার প্রসঙ্গে আসা যাক, বলি – কিন্তু দেখুন এর বিরুদ্ধে কথা বলছে না কেউ। আমরা কি খুঁজে পেতে পারি না কোনো বিপ্লবীকে?
তিনি বলেন, খুঁজতে বেরিয়েছেন নাকি?
– ধরুন না তাই?
আকবর আকাশের দিকে চেয়ে হাসতে হাসতে বলেন, বিপ্লব এমনি আঁধারে 888sport app, যে তাকে খুঁজতে হবে দেশলাই জ্বালিয়ে!
আমি খোঁচাটা হজম করে বলি – আসলেই দেখতে পাচ্ছি না? আপনার চেনা কেউ আছে নাকি, বিগত কমরেড?
আকবর নির্লিপ্ত স্বরে বলেন, ক্ষুদিরাম? তাঁকে তো আর ফাঁসিতে দেওয়া হয় না যে ছড়িয়ে পড়বে হাসি, উদীপ্ত হবে তরুণ। এখন পেছন থেকে গুলি করা হয়।
আমি তবু বলি – হেঁয়ালি রাখুন না, ব্যর্থ-ভগ্নপ্রায় কেউ বেঁচে নেই?
আকবর খোশমেজাজে বলেন, বিপ্লব কি কখনো ব্যর্থ বা ভগ্ন হয়ে বেঁচে থাকে? তার চেয়ে আপনিই বলুন না আজকাল মিডিয়াতে তৃতীয় শক্তির কথা খুব শোনা যাচ্ছে? সেটা আসলে কী?
আমি বোকার হাসি দিয়ে বলি, ওই শোনাই যায়…
আকবর হো-হো হেসে ওঠেন, বাঘ আসছে বলে রাখাল বালকের চিৎকার।
বলি, হয়তো বা তাই।
জামালের বাদাম শেষ, সে এসে জানায়, কি ছেলেবেলার গল্পের 888sport sign up bonusতেই পড়ে রইলেন।
আকবর সহসা কথার স্রোত পালটে বলেন, চলেন জগুর দোকানে যাই। সেখানে এখনো প্রকৃত ছানার মিষ্টি পাওয়া যায়।
আমরা গলি-ঘুপচির মধ্যে দিয়ে আরও সরুপথ পেরিয়ে যেতে থাকি। তামাকপাতার ঠেলাগড়ি পাশ দিয়ে যেতে যেতে ভেজা তামাকের তীব্র গন্ধে ভাসিয়ে দেয়। আমরা পুরনো হলুদ রঙের কুঠুরিতে ঢুকি। আমাদের দেখে একজন কাঁধের গামছাটা দিয়ে বেঞ্চির পাটাতন মুছে দেয়। ছোট্ট একটি কাঠের আলমারিতে গ্লাস দেওয়া, দেখা যাচ্ছে থালিতে সাজানো মিষ্টি। আমরা যখন জগুর দোকানে ঢুকি তখন মাগরিবের আজানের ধ্বনি বাজছিল। মিষ্টির আলমারির উলটোপাশে দেবতার ছবিতে আগরবাতি জ্বালিয়ে প্রণাম করছে জগু। আর এক হাতে ঘণ্টা বাজাচ্ছে খানিক পরপর। আমাদের মিনিট পাঁচ অপেক্ষা করতে হয়। সন্ধ্যা-আহ্নিক সেরে সে বলে – একটুখানেক বসায় রাখতি হইলো। আপনেরা কি-ই খাইবেন?
আকবর বাদশা বললেন, ছানার সন্দেশ।
কলার পাতায় করে একটু সন্দেশ দুহাতে ধরে আনলেন জগু। যেন পরম যত্নে আকবর বাদশার সামনে মণিমুক্তো হাজির করছেন। আমাদের হাতে তুলে দিতে কিছুটা ঝুঁকে পড়লেন তিনি। জামাল যেন এমন দৃশ্যের অপেক্ষায় ছিল। সহসা তাঁর ক্যামেরা ঝিলিক দিয়ে উঠল। যদিও জগু তাঁর মিষ্টি নির্মাণে ও পরিবেশনে ধরে রেখেছেন পুরনো রীতি কিন্তু বর্তমান সময়ে তার বসবাস। তাই সহসা বলে ওঠে, অ্যাহন আর ছবি তুলি কী করবেইনে? সেইরম জাতির মিষ্টি কি আর অ্যাহন বানাতি পারি। চলবেও নানে। বাপ-দাদার ব্যবসাপাতি, তাই চালায় নিতি হতিচ্ছে।
আমরা আরো এক রাউন্ড মিষ্টি খেয়ে বেরিয়ে পড়ি। বিচ্ছিন্ন হেঁটে বেড়াই, খুচরো গল্প করি। আকবর আকণ্ঠ 888sport app download apkয় ডুবে আছেন এখনো, কথায় তার আভাস মেলে। তিনি বলেন, চলেন আমাদের আড্ডার জায়গায় নিয়ে যাই। নতুন ছেলেরা লিটলম্যাগ নিয়ে কী ভাবছে, দেখবেন।
আমরা হেঁটে-হেঁটে সিমেট্রি রোড পেরিয়ে যেতে-যেতে বলি, বড় বাজারটা আসলেই বড়।
আকবর বলেন, চারশো বছরের পুরনো বাজার।
ডাকবাংলো পেছনে রেখে পৌঁছে যাই দোলখোলা। একটি চায়ের দোকানে তাদের আড্ডা। সামনেই কেরোসিনের চুলা, ভেতরে ছোট তিনখানা বেঞ্চি। তার পেছনে মশারি গোটানো। নিচে দু-তিনটা কলার কাঁদি, বোঝা যায় মাল্টিপারপাস ব্যবহারের জায়গা এটা। দেয়ালে দেখি সব দলেরই পোস্টার সাঁটানো আছে। সেদিকে তাকিয়ে বললাম – সর্বভূক।
আকবর সেটা লক্ষ করে কিছু বললেন না, একটা সিগারেটে আগুন নিলেন। আমি চাইছিলাম এবার তিনি মুখ খুলুন। আমিও কাঙ্ক্ষিত প্রসঙ্গে যেতে চাই। কিন্তু তিনি বললেন, আসলে আমরা ইউরোপীয় 888sport live football বলে বলে গালি দিচ্ছি, আবার ল্যাটিন আমেরিকার 888sport live football বলে আপন ভাবছি। কিন্তু ওই পর্যন্তই, আসলে আমরা কী করছি? বলুন তো।
আমি বললাম, ক্যানো আজকাল অনেকেই তো সাবঅলটার্ন নিয়ে কথা বলছে।
তিনি বিষয়টা মানতে রাজি নন, বললেন, ওই টার্ম নিয়ে ট্রাম্পকার্ড খেলছে। যার-যার রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিল করছে।
আমি এবার আশাবাদী হয়ে উঠি, যাক এবার রাজনৈতিক প্রসঙ্গে আসা যাবে। উসকে দিতে বলি, কিন্তু এভাবেই একদিন বিষয়ে ঢোকা যাবে হয়তো।
তিনি বলেন, না সোবহান, এভাবে কেবল রাজনৈতিক খেলা চলতে পারে। 888sport live football নয়। রাজনীতিবিদদের খেলতেই হয় কিন্তু 888sport live footballিকদের তো একচোখে বিশ্লেষণে চলে না। তাদের কাছ থেকে মানুষ সত্যিটা জানতে চায়।
আমি বলি, 888sport live footballিকদের কিন্তু রাজনৈতিক বক্তব্য সব সময় ছিল।
আকবর বলেন, হ্যাঁ সেটা বিশ্লেষণ বা নির্ভেজাল প্রেক্ষাপটে প্রয়োগ। কিন্তু এখন হচ্ছে পক্ষপাতিত্ব। 888sport live footballই বা হচ্ছে কোথায়?
রাজনীতি থেকে ক্রমশ 888sport live footballের দিকেই চলে যায় কথা। সঙ্গে যুক্ত হয় আরো কিছু স্থানীয় লিটলম্যাগকর্মী। তারা 888sport appsের লিটলম্যাগের অবস্থা নিয়ে কথা বলেন, ঢাউশ আকৃতির বিজ্ঞাপন জর্জরিত হয়ে লিটলম্যাগ আসলে পুঁজির সহযোগী হয়ে উঠছে কিনা।
আমি অমনোযোগী হয়ে পড়ি। বহুদিন 888sport live footballের গল্প ছেড়েছি। বাজারের মধ্যে ছুটে চলা নানা শব্দে হঠাৎ আমার কানে ছেলেবেলার আইসক্রিমওয়ালার ঘণ্টাধ্বনি ভেসে আসে। দাঁড়িয়ে পড়ি – ওটা কী গেল?
সহসা বেরিয়ে খুঁজতে থাকি, যেন আমার ছেলেবেলার ফেরিওয়ালা। একটু এগোতেই পেয়ে যাই। সাইকেল কাত করে দাঁড়িয়ে আছে লোকটি। রং-বেরঙের ঝালর দেওয়া পোশাকে, একরাশ সাদা দাড়িতে বৃদ্ধ লোকটিকে সান্তা ক্লজের মতো লাগল। তার সাইকেলের রডে টিনের বাক্স মৌচাকের মতো ঝুলছে। আমি বললাম, এগুলো কী?
বৃদ্ধ হাসতে হাসতে বলে, খাইলি না বুঝেবানে, মানুষে কয় ঘুগনি। আমি কই অমৃত।
ঘণ্টি বাজিয়ে সে একটা ছোট্ট কাগজের সিঙ্গায় তুলে দিলো, ঘুগনি।
নিয়ে ফিরে এলাম আড্ডাস্থলে, আকবর হাসলেন, কী মিলল?
– হ্যাঁ, ঘুগনি, কিন্তু এটা দেখছি ছোলা ভুনার মতো… ডাবলির ছায়াটিও নেই!
আকবর বলল, চেখে দেখুন, সবই আলাদা।
আমি মুখে পুড়ে চিবুতে-চিবুতেই, আবার মুখে পুড়লাম। একটা ছোট ছাবড়া দাঁতের ফাঁক থেকে বের করে বললাম, এটা কী?
– চুঁই ঝাল।
সজনে চিবুলে যেমন ছোবা হয় তেমনি ছোবা, কিন্তু ঝাঁলে মুখটা বড় হাঁ করে শ্বাস বের করলাম, মুখের ভেতর জমেওঠা লালা গিলে বললাম – চুঁই, ঝাল হলি কবে তুই।
আড্ডাবাজরা তখন হো-হো করে হেসে চলে। আমি বললাম, স্বাদে কিন্তু দারুণ।
আমরা চুঁই ঝালের 888sport sign up bonus নিয়ে হোটেলে ফিরি। ওরা তখন বলছিল চুঁইয়ের ইতিহাস-ঐতিহ্যের কথা। চুঁইকে স্বাদু বানানোর রেসিপি সবার জানা নেই। আজকাল নাকি চুঁই তেমন পাওয়া যায় না। হাতেগোনা কিছু ফেরিওয়ালা আর হোটেল এখনো চুঁইকে ধরে রেখেছে। চুঁইয়ের চাষবাস নাকি এতটা সহজ বিষয় নয়।
দুই
পরদিন জামালকে সঙ্গে নিয়ে ক্যামেরাসহ বেরিয়ে পড়ি। সন্ধ্যার আগে আকবরের সঙ্গে দেখা হওয়ার সম্ভাবনা নেই। আমরা কিছু বিচ্ছিন্ন ভিডিও ধারণ করি। দুপুরে একটা হোটেল খেয়ে-দেয়ে ভৈরবের পাড়ে চলে যাই। জামাল চৌকস ক্যামেরাম্যানই নয়, একজন দক্ষ সাংবাদিকও বটে। সম্প্রতি একটা কেসে কবরের ভেতরে দাঁড়িয়ে সংবাদ দিয়ে হইচই ফেলে দিয়েছিল, হাউসে ওর কদর বেড়েছে আরো। সেই সাংবাদিক যখন আমার সঙ্গী তখন সারাদিনের কসরতে কিছু একটা কাজ হবে। কথাটা পাড়তেই জামাল জানায়, সে ইতোমধ্যে একটি কেস দাঁড় করিয়ে ফেলেছে যে, আন্ডারগ্রাউন্ড রাজনীতি কেবল ঝোপে-জঙ্গলে থাকে না, শহরের ফুটপাতেও চড়ে বেড়ায়!
আমি অবশ্য ভাবছিলাম আকবরের বোধের চাষবাস থেকে যদি কোনো ফুল-ফল ম্যানেজ হয়। আমরা একটা টং দোকানে চা খেতে ঢুকি। সেখানে তখন মজমা জমেছে। চায়ের চুলোয় কালো হাতভাঙা কড়াইয়ে ভাজা হচ্ছে তেলাপিয়া মাছ। দোকানি একজন 888sport promo code, কোলে একটি শিশুকে বসিয়ে সে ভাজা মাছের ভেতর দুটো কাঁচা লঙ্কা ছেড়ে দিলো। আমাদের বসার আসন মুছে দিলো সাত বছরের মেয়েটি, যার গায়ে ময়লা স্কুলড্রেস। সদ্য ফেরা বই-খাতা বেঞ্চির নিচে রেখে সে কাজগুলো করলো। অপর এক বেঞ্চিতে যুবক হয়ে-ওঠা ছেলেটি উঠে যাচ্ছিল। মেয়েটি পথ রোধ করে বসায়।
– আরমান ভাই উঠি যাতিচ্ছেন ক্যা, একখান গান শুনাই যাতি হবি।
ছেলেটি তবু উঠি-উঠি করলে, মাছের কড়াই নামাতে নামাতে 888sport promo codeটি মুখ ফিরিয়ে বলে – এককাপ চা খাওয়াবানে, একেবারে মাগনা কলাম।
আরমান নামের ছেলেটি লজ্জা পায়, সেটা দেখে 888sport promo codeটি আমাদের উদ্দেশে বলে – যা ফাইন গলা, এইবার ক্লোজআপওয়ানে যাইবেনে, ফার্স্ট হবেনে।
আমরা আশান্বিত চোখে তার দিকে তাকালে, সে মাথা নত করে। চুলায় চায়ের জল ফুটছে। শিশুটি এবার আমাদের বলে – নোলোক বাবুর চাইতিও ফাইন গায়। একখান শুনাইদেন না ক্যা, আরমান ভাই।
আরমান লাজুক চোখে আমাদের দিকে চাইলে আমরা বলি, গান না… গান
সে মাথা ঘুরিয়ে ভৈরবের দিকে তাকিয়ে গেয়ে ওঠে –
যেদিন মাটির ঘরের হবে ঘরজামাই
নাকে-কানে দিয়া তুলা
তোমারে সাজাইবো দুলা
তবুও থাকবে না আর কেউ দুলাভাই
ও তোমার মাটির ঘরে নিতে হবে ঠাঁই
যেদিন মাটির ঘরের হবে ঘরজামাই \
আমাদের হাতে চা দিয়ে 888sport promo codeটি একটা সিলভারের পাতিলের পেছনে আঙুল পিটিয়ে তাল তোলে। স্কুল-ফ্রকপরা মেয়েটি বেঞ্চি চাপড়ায়। 888sport promo codeটি মাঝে আমাদের বলে – ভিডিও করেন ভাই, ভিডিও করেন…
জামাল ভিডিও করে। রাস্তা দিয়ে যেতে যেতে একটা সাইকেল দোকানে এসে থামে, একটি লোক গায়ে পোস্ট অফিসের পোশাক। সে মুখে একটা পান দিতে দিতেই গান শেষ হলে সে বলে, গা-গা… থামলি ক্যান… তোর এরম সুর শুইনা তো দাঁড়ায় পড়িছি। পরানটা জুড়োয় গেল।
আমি আর জামাল বাদে সবাই ছেলেটিকে আরো গান গাইতে বলে, সে এবার মান্নাদের একটি গান শুরু করে, কিছুটা শুনে সাইকেল আরোহী প্যাডেল মেরে যেতে যেতে বলে – খালি দাঁড়ায় দাঁড়ায় কি আর শোনার জো আছে? ম্যালা কাজ রইছে।
কিছুক্ষণ থেকে বোঝা যায় এরা কেউ কারো আত্মীয় নয়, তবু ভালোবাসায় এরা পরস্পরকে জড়িয়ে রেখেছে।
আমরা বিদায় নেওয়ার সময় কথা দিতে হয় 888sport promo codeটির কাছে… শিশুটির কাছে…, ছেলেটি ক্লোজআপওয়ানে গেলে যেন আমরা ভোট দিই। ওর নাম আরমান!
তিন
আলো থাকতেই আকবর এলেন। আমরা হাদিস পার্ক পার হয়ে চলে যেতে থাকি; কিন্তু সহসা মনে হলো আমাদের আসলে যাওয়ার কথা গগাইয়ের চায়ের দোকানে। আকবর যিনি বাদশা হননি তিনিও বললেন, হ্যাঁ, গগাইয়ের চায়ের দোকানেই যাওয়া উচিত। তবে গগাইয়ের নম্বরটা ডিলিট হয়ে গেছে, না-হলে ফোন করে যাওয়া ভালো ছিল।
আমি ভাবলাম, যাক অন্তত মাঝে মাঝে ডিলিট হওয়াও অনেক ভালো। আগে যখন গগাইয়ের চায়ের দোকানের কথা জেনেছিলাম তখন যতদূর মনে পড়ে তা হাদিস পার্কে ছিল। আমি বললাম, হাদিস পার্কেই তো… চলুন গিয়ে দেখি।
আকবর জানালেন – না, উনি এখন গোলকমনি শিশুপার্কে বসেন।
আমরা গোলকমনি শিশুপার্কে ঢুকি, আগাছাময় একটা মাঠ। শিশুদের জন্য কোনো দোলনা বা সে-জাতীয় কোনো কিছু নেই। আকবর আমাদের জানান, এই শিশুপার্কটির জন্য জমি দান করেছিলেন গোলকমনি, যিনি পেশায় একজন বারবনিতা ছিলেন। যেহেতু শিশুপার্কটিতে কোনো রঙিন বেঞ্চি নেই, নেই কোনো দোলনা অতএব শিশুরা যে দোল খেতে-খেতে কোনো ইতিহাস জানতে পারবে না, তা নিশ্চিত। দক্ষিণবঙ্গ থেকে গিয়েই রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ শুনিয়েছিলেন তার রুদ্রবাণী –
বেশ্যাকে তবুও বিশ্বাস করা চলে
রাজনীতিকে ধমনী শিরায় সুবিধাবাদের পাপ।
আকবর বলেন, গগাইদা, 888sport app থেকে মেহমান এসেছে। আপনার চা খেতে চায়?
বৃদ্ধ গগাই লজ্জিত ভঙ্গিতে বলেন, কী করইবো কন, মেহমান তো আইছেন, কিন্তু গোয়ালা তো আইজ দুধ দিবার আসিই নেই।
সহসা আমি বলে উঠি, ক্যান কন্ডেন্সড মিল্ক নেই।
গগাই বলে, ওতে কি আর চা ভালো হবেনে। আমি ওইসব কৌটো-মৌটের দুধি চা বনাই না। ওই শালার পুলিশ করিছে কী, কাইল দুপুরের ফুটপাতের সব দোকান ভাঙিছে আর সেতা দেখি গোয়ালা আজ আসিনি।
যদিও গগাইয়ের দুধ চায়ের প্রসঙ্গে জেনেই এসেছিলাম। কিন্তু কী আর করা, বললাম – লাল চা হবে তো?
গগাই বলে, হ, তা অবেনে। আপনারা কুটুম মানুষ আইছেন, ভালো চা না খাওয়াতে পারলে মনি দুঃখ থাকি যাবেনানে।
চায়ের খ্যাতি শুনেই শুধু এখানে আসিনি। এখানে আসার ভিন্ন একটি উদ্দেশ্যও আছে। আমি শুনে এসেছিলাম, গগাই পাগল সমাবেশের লোক। এখান থেকে প্রায় প্রায় ষাট কিলোমিটার দূরে জিওলধাম হরিপদ গোস্বামীর আশ্রমে প্রতিমাসে পাগল সমাবেশ হয়। মঙ্গলবার এই সমাবেশ হয়ে থাকে। খুলনা থেকে বাস ভরে পাগল নিয়ে যান গগাই আর জটা বাবুল, আমার উদ্দেশ্য আগামীকালের সমাবেশে যোগ দেওয়া। গগাই আমাদের জন্য চা বানাচ্ছেন। আমি আকবরকে জিজ্ঞাসা করলাম, এরশাদ সিকদারের পর এখানে নতুন কে জন্ম নিলেন?
আকবর অন্ধকারের দিকে তাকিয়ে বলেন, আমার ঠিক জানা নেই। কেন আপনাদের চ্যানেলের স্থানীয় প্রতিনিধি কিছু বলেনি?
– আপনার কাছ থেকে কিছু জানতে চাইছিলাম।
– দেখুন সোবহান, আমার ঠিক রাজনীতিতে তেমন আগ্রহ নেই। আপনি নিশ্চয় গডফাদার আর বিপ্লবীর সংজ্ঞা এক করে ফেলবেন না। বরং আপনাকে আমাদের স্কুলের কথা বলতে পারি কৃষকের মেয়েদের কম্পিউটার প্রশিক্ষণে বেশ ফল পাওয়া যাচ্ছে।
আমি বললাম, তাই নাকি?
আকবর বেশ উৎসাহ নিয়ে বলেন, তারা বেশ তাড়াতাড়ি রপ্ত করছে সবকিছু, আউট সোর্সিংয়ে এরা কেউ কেউ আয় করতে শিখেছে। উৎপাদনের হার কমছে, তবু তাদের বেঁচে থাকার উপায় বের করতে হবে।
আমি বললাম, আকবর আপনার কি মনে হয়, কৃষি থেকে এতটা সরে দাঁড়ালে আমরা কেবল গার্মেন্টসের সেলাইমেশিনের মতো হয়ে যাব। সাব-কন্ট্রাক্টের দেশে পরিণত হবো। তখন আমদানি থেকে এত মানুষের পেট চলবে তো?
আকবর বলেন, এটা তো অনেক আগেই ভাবার বিষয় ছিল। এরা যখন বিপদে পড়েছে তা থেকে তো তাদের উত্তরণ চাই। সেই পর্যায়ে কিন্তু আপনারা এই প্রশ্ন তুলছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত একমুখী শিক্ষাব্যবস্থা হলো না, তা কিন্তু ভাবছেন না।
আমি বললাম, এখন তো এ-প্রসঙ্গই সামনে আসছে।
আকবর বললেন, কেবল প্রসঙ্গ এলে তো হবে না, এখন নতুন নতুন রাজপুত্র বিদেশি ডিগ্রি নিয়ে দেশ চালাবেন, তাদের সঙ্গে কৃষির সম্পর্ক নেই যেমন, তেমনি কৃষক খেয়ে না খেয়ে ছেলেমেয়েকে শিক্ষিত করছে অথচ না জুটছে চাকরি, না ফলছে ফসল। আপনাকে তো আগেই বলেছি, নিজস্ব সংস্কৃতির ভেতরের আমদানিকৃত অভিজ্ঞতার সামঞ্জস্য কবে হবে বলতে পারেন? এটা কি সামঞ্জস্যহীন সময় নয়? যেন দেশের ভূভাগে দুটি প্লেটের মধ্যে ভ্যাকুয়াম তৈরি হয়েছে। প্রচন্ড ভূমিকম্পন ছাড়া তার স্থিরতা তৈরি হবে বলে মনে হয় না।
– আপনার কি মনে হয় ভূমিকম্প হবে? আমি আসলে তার কেন্দ্রটা খুঁজছি।
আকবর যেন কিছুটা বিরক্ত হয়েই বলেন, আমি তা জানি না, আমার তো মনে হয় সেই সুকান্তের ঝলসানো রুটির পিছে ছুটতে ছুটতে মানুষ শেষ হয়ে যাচ্ছে।
গগাইয়ের চা চলে আসে। চুমুক দিতেই বুঝতে পারি, দুধ নেই তাতে কি গগাই তার খ্যাতি ধরে রাখতে কসরত করেছেন, এটা কোনো সাধারণ লাল চা হয়নি। হালকা কফি মিশ্রিত বলে স্বাদে বৈচিত্র্য তৈরি হয়েছে। চায়ের তারিফ করি। তারপর আকবরকে জানাই আমি আসলে গগাইয়ের পাগল সমাবেশে যেতে চাই। আকবর বললেন, সোবহান আপনি বোধহয় এই অঞ্চলের আন্ডারগ্রাউন্ড রাজনীতির বিষয়ে খুব বেশি ইন্টারেস্টেড। গগাইদের পাগল সমাবেশে তেমন কোনো যোগ পাবেন না। তবু গগাইকে বলে দেখতে পারি।
আকবর উঠে গগাইয়ের সঙ্গে আলাপ করছে। জামাল বললেন, বস… চা-টা কিন্তু হেব্যি বানিয়েছে।
আকবর ফিরে এসে জানায়, গগাই আপনাকে নিতে রাজি হননি। আপনি টিভি চ্যানেলের লোক, পাগল সমাবেশের ওরা মিডিয়াকে সঙ্গে নিয়ে সমাবেশ করতে চায় না। ওরা মনে করছে তাতে ওদের নিজস্বতা হারাবে।
ক্যামেরা ছাড়া যাওয়ার প্রস্তাবেও তারা রাজি নয়। আকবর নিজেও দুঃখ প্রকাশ করলেন, আমরা আপনার পেশাগত সহযোগিতায় বোধহয় তেমন কাজে আসতে পারলাম না।
আমরা গগাইয়ের কাছে বিদায় নিতে চাইতেই গগাই জানালেন, বুধবার বিকেলে আইসেনে, আপনাগের দুধচায়ের নেমন্তন্ন রইল।
জানালাম, সে পর্যন্ত থাকলে অবশ্যই আসবো। ফেরার পথে আকবর প্রস্তাব দিলেন, চলুন না কাল ম্যাচ ফ্যাক্টরি থেকে ঘুরে আসি। ওখানে ফুল-পাখির কবি নসরুল্লাহ থাকেন।
আমি কিছুটা ইতস্তত করে না বলি। আগামীকাল স্থানীয় প্রতিনিধির সঙ্গে কিছু কাজ করে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। আকবর বললেন, আপনি 888sport app রওনা দেওয়ার আগে আরেকবার দেখা হতে পারে।
চার
স্থানীয় কিছু অনিয়ম আর দাপটে খবর ধারণ করি, দুপুরের বিখ্যাত চুঁই ঝালে মাংস রান্না খেতে যাই জিরো পয়েন্টে। কব্জি ডুবিয়ে খেয়ে উঠে হোটেলে ফিরে আসি। সবকিছু প্যাক করে বাসের কাউন্টারে যাওয়ার পথেই আকবরের ফোন পাই। টিকিট কেটে ওয়েটিংরুমে বসে দেখি আকবর, যিনি বাদশা নন তিনি, সঙ্গে করে এক বৃদ্ধকে নিয়ে এসেছেন। মলিন পুরনো ধাঁচের পাঞ্জাবি পরিহিত, পায়ে স্পঞ্জের স্যান্ডেল, কাঁধে থলিব্যাগ। সব মলিনতার ভেতর তার মুখের গঠনটা বেশ বলিষ্ঠ হয়ে জেগে আছে।
আকবর আমাকে উদ্দেশ করে বলেন, ইনি কবি নসরুল্লাহ। পেশায় ম্যাচ ফ্যাক্টরির শ্রমিক।
হাত মেলাই। তিনি বললেন, অবসরে বসে বসে কী ছাইপাশ লিখি, আকবর ভাই পাগলামি করে বলেন কবি।
বাসে ওঠার সময় হয়ে যাওয়ায় আমাদের মাঝে ব্যস্ততা দেখা দেয়। আকবর বললেন, নসরুল্লাহ ভাই আপনি কি ওগুলো এনেছেন?
নসরুল্লাহ বলে ওঠে – ওহ হ্যাঁ, বলে কাঁধের ঝোলা ব্যাগ থেকে খবরের কাগজে মোড়ানো কিছু একটা আমার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলেন – নিন চুঁই ঝাল, শুনেছি আপনার খেতে ভালো লেগেছিল।
আমি শক্ত, কাঠির মতো চুঁই ঝালগুলো ধরি। আসলেই কি এতটা ভালো লেগেছে এ-ঝাল, আমার মনে পড়ে ব্যতিক্রমী বলেই একটু বেশি উচ্ছ্বাস দেখিয়েছিলাম। তা আর বলি না। মুখে বলি, থ্যাঙ্ক ইউ।
আকবর ভাই নসরুল্লাহকে আমার সম্পর্কে বলেন, সোবহান ভাই একসময় আমাদের লিটল ম্যাগাজিনে নিয়মিত লিখতেন। 888sport app download apkর বিষয়ে তিনি খুব সজাগ ছিলেন। একবার একটি 888sport app download apk পাঠানোর তিনদিন বাদে পোস্টকার্ডে সংশোধন পাঠিয়েছিলেন, একটি লাইনে ‘প্রতিহরি জলের’ বদলে ‘সুঘাতক জল’ হবে।
আকবরের কথা শুনে আমি অস্বস্তিতে বলি, ও তাই নাকি, আমি সব ভুলে বসে আছি।
নসরুল্লাহ হেসে ওঠেন। বলেন – সুঘাতক জল!
আকবরের কথা তখনো শেষ হয়নি। সে নসরুল্লাহকে আরো বলেন, নসরুল্লাহ ভাই উনি বিপ্লবী খুঁজতে এসেছিলেন।
আমি লজ্জা পাই, বাসের পাদানিতে দাঁড়িয়ে বলি – না, আসলেই আজকাল কি আর বিপ্লব আছে?
নসরুল্লাহ বলেন, বিপ্লবের কি আজ আর কাল আছে?
আমি সে-প্রশ্নের জবাব দিতে পারি না। আমার সারাশরীরে বিদ্যুৎ খেলে যায়। আমি সম্পূর্ণরূপে বাসের পেটের ভেতর ঢুকে যাই।
ছেড়ে আসা বাসে বসে ভাবি – কে এই নসরুল্লাহ? একজন দেশলাই শ্রমিক সত্যিই কঠিন এক প্রশ্ন মুখে ছুড়ে দিয়ে গেল! আমার কি নেমে ফিরে যাওয়া উচিত তার কাছে। ইনিই কি সে? একা একটি দেশলাইয়ের কাঠি!
আমি পায়ের কাছে চুঁই ঝাল রেখে বসে পড়ি, নেমে যাই না। নসরুল্লাহর শেষ কথাটি মনের মধ্যে তোলপাড় করলে আমি প্রাপ্ত চুঁই ঝালের কথা ভাবি। কী করবো এই ঝালকে নিয়ে। বাসায় নিয়ে গেলে আমার স্ত্রী নাহার রেগে যাবে, উটকো ঝামেলা, এটা কি করে রান্না করতে হয় তা নিয়ে হইচই করবে হয়তো। অফিসে নিয়ে গেলে সবাই হাসবে। ক-ই জগুর ছানার সন্দেশ আনবেন, না, নিয়ে এলেন চুঁই ঝাল?
আমি বোধহয় ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম। বাস গন্তব্যে এলে সবাই নামতে শুরু করে, জামালের ডাকে উঠে নেমে পড়ি। নেমেই মনে পড়ে যায় চুঁই ঝালের কথা, বাসে রয়ে গেল! যাব আবার আনতে?

Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.