প্রেম দিয়েই শুরু হয়েছিল সম্পর্ক।
ক্যাম্পাস-সোহরাওয়ার্দী উদ্যান তছনছ করে প্রেমের পাগলা ঘোড়া ছুটিয়ে তারপর বিয়ে করে ক্ষান্ত হলো ওরা দুজন।
দুজন বলতে ধ্বনি আর আশরাফ। তাদের কথাই এখানে বলা হচ্ছে। যে-সময়ে প্রেমিক-যুগল হিসেবে ক্যাম্পাসে ওদের নিরন্তর দৌড়ঝাঁপ, সেটা আশির দশকের একেবারে গোড়ার দিককার সময়। ওরা সে-সময়ের নায়ক-নায়িকা। খুল্লামখুল্লা প্রেমের জন্য রীতিমতো বৈরী সময়; তবু দেশি লাজ-লজ্জার চর্মচক্ষু অন্ধ ওদের! যেখানে সুযোগ মিলছে সেখানেই
জড়াজড়ি-চুমাচুমি করতে বসে পড়ছে। পায়ের নিচে কাদা নাকি পাছার তলায় গোবর – কে দেখছে? উদ্যানের ঘাসগুলো তো রীতিমতো তিতিবিরক্ত, ঘেঁষাঘেঁষির দমবন্ধ চাপে ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি অবস্থা!
শুধু রাধাচূড়া-কৃষ্ণচূড়া-কনকচূড়ার লাল-হলুদ মুখগুলো ওপর থেকে উদার চোখ মেলে রয়েছে ওদের দিকে। ফুলঝুরি হাসিতে ঝলমল করছে ওদের মুখ। আনন্দ-শিহরণে এলিয়ে পড়ছে একে অপরের ওপর; চোখের ইশারায়, ঠোঁটের ফিসফিসানি দিয়ে পরস্পরকে মাঝে মাঝেই জানিয়ে দিচ্ছে, ‘বেশ জমে গেছে, না? দেখো, ওরা সারাজীবন প্রেমেই বেঁচে থাকবে! আমার কথা ঠিক ফলবে ওদের জীবনে।’ বলে রাধাকে একটু পরপর চোখ টিপে ইশারা করতো কৃষ্ণ। রাধা মাথা দুলিয়ে, হলদেটে মুখ নাড়িয়ে মুচকি হাসতো। সঙ্গে মিশে থাকতো অপরাধ-মেশানো খানিকটা পরকীয়া-লজ্জা!
এখন, সেই যুগল, কুড়ি বছরের ভরপুর বৈচিত্রহীন দাম্পত্যের পর একেবারে চিমসানো আমসি, দুজনই একলা হলে কার উদ্দেশে যেন দীর্ঘশ^াস ছাড়ে, ‘কেন প্রেম দিলে না প্রাণে!’ রাধাচূড়া-কৃষ্ণচূড়া কবেই উধাও ওদের জীবন থেকে। প্রেম গেলে মায়া পড়ে থাকে, ওদের বেলায় সেটুকুও পড়ে নেই!
দীর্ঘদিন হলো ওরা আর একসঙ্গে এক বিছানায় শোয় না। মাঝে মাঝে আশরাফের শরীরী খায়েস যে জাগে না তা নয়। তখন বেশরম উজবুকের মতো অফিস-ফেরত ক্লান্ত-অবসন্ন জবুথবু স্ত্রীর দিকে ছানিপড়া অক্ষম চোখের আগ্রাসী দৃষ্টি দিয়ে তাকায়। তাতেই বড় বেজার হয়ে পড়ে ধ্বনি, ‘সারাদিনের খাটাখাটনির পর একটুখানি হাত-পা ছড়িয়ে বিশ্রাম নিই আমি। তাতেও তোমার বাগড়া দেওয়া লাগবে?’
‘ইচ্ছা জাগে না কও? পুরুষ না?’ কেমন যেন বেআক্কেল-বেওকুফের মতো শোনায় কথাগুলো। কোথাও কোনো তরঙ্গ-সংঘাত নেই, স্রেফ ইচ্ছে আর অভ্যাসের বায়বীয় অর্থহীন কথাবার্তার ছল-ছলাৎ। একসময়কার স্মার্ট মানুষটির সঙ্গে কি তা যায় এখন?
‘তোমার শোয়াশুয়ি মানে তুমি বোঝো? পাশের জনের ঘুমরে সোজা খাটিয়ায় করে কবরে শুইয়ে দেওয়া। রাতভর ঘন ঘন বাথরুম, লাইট জ¦ালাজ¦ালি,
চুলকা-চুলকি, হাঁচি-কাশি আর বেহুদা নাক ডাকাডাকি। রিটায়ারমেন্টের পর তো নাকের বাঁশি আরো বাজে বেশি। সরো তো? কোমার রোগী কোমাতেই থাকো। নইলে কোলবালিশ নিয়ে শুয়ে থাকো।’ ফের একদলা কফের মতো বিরক্তি ঝরায় ধ্বনি।
‘কোথায় যাবো তাহলে ?’ অথৈ সমুদ্রে খড়কুটো আঁকড়ে ধরার মতো আশ্রয় খোঁজার শেষ চেষ্টা চালায় মিনতিকাতর আশরাফ।
‘পোলার রুমে পোলার লগে ঘুমাও? নইলে ড্রয়িংরুম তো পড়েই আছে। ওইখানেই তো তুমি বেশি কমফোর্ট পাও। তাই না ?’ কণ্ঠে শ্লেষ। কী বোঝাতে চায় তা আশরাফের জানা। সে চুপ থাকে। একটু পর বলে ওঠে, ‘তোমার পোলা তো ওর রুমে ফেসবুকিং লইয়া ব্যস্ত।’
‘তুমি কি ফেসবুকিং ছাড়া? তোমার বুড়ি বুড়ি সব বান্ধবী আছে না? ছেলের রুমে না পারো, ড্রয়িংরুমে গিয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়ো তাদের ওপর। যাও তো? এখন বিদায় হও।’ গলায় ঝাঁজ ওর।
অগত্যা হতাশ আশরাফ চলে যায় ড্রয়িংরুমে। সেখানে একখানা সিঙ্গেল খাট পাতা রয়েছে। আদর করে ডিভান বলে ধ্বনি। আপাতত তাতে আশ্রয় নিয়ে মোবাইলফোন মেলে ধরে চোখের সামনে।
এ এক অবাক করা জগৎ। সবাই এখানে হাসিখুশি। কারো কোন দুঃখ নেই মনে। ফেসবুকারদের জীবন থেকে হতাশা যেন চিরতরে নির্বাসিত। সবাই দাঁত-কেলানো হাসি দিয়ে অবিরাম পোজ মারছে আর নিজেদের কথা
ইনিয়ে-বিনিয়ে সর্বজনগ্রাহ্য করে তুলতে চাইছে। সেদিকে চেয়ে থাকলে মন ভরে যায়। মহামতি বুদ্ধকে মনে হয় তখন ভুল। কে বলেছে পৃথিবী দুঃখময়? ফেসবুকের জগৎ তো শুধুই সুখময়!
আশরাফকে বিদায় করতে পেরে স্বস্তির নিঃশ্বাস ঝাড়ে ধ্বনি। বিছানায় গা এলিয়ে সে-ও ফেসবুকিং-এ মগ্ন হবে একটু পর। কমবয়সী এক ছোকরা আপু-আপু করে জান দিচ্ছে কদিন থেকে। বুয়েটের ছাত্র। দেখতে-শুনতেও বেশ। ওর মুখে শংসাবাক্যগুলো মিথ্যে মনে হলেও ভালো লাগে খুব।
তবে এ-জগতে কিছু বুড়ো খাটাশও রয়েছে, ওদের মিচকা শয়তানি দেখলে গা জ্বলে যায় রাগে। তখন কেন যেন আশরাফের কথা মনে হয়। এমনভাবে মিচকাগুলো কথা বলবে যেন বাসায় ওদের কেউ নেই, স্ত্রী-পুত্র-কন্যা-পুত্রবধূ-জামাতা সবাই ওর শত্রু। পৃথিবীতে তারা একা এসেছে, একাই রয়ে গেছে!
সোহেল রাজশাহীর ছেলে। ধরতেই সে উচ্ছ্বসিত গলায় বলে ওঠে, ‘আপু আজ এক ঘটনা হয়েছে।’ রসিয়ে গল্প বলতে শুরু করে মেসেঞ্জারে। ছেলেটার ভাবপ্রকাশের সারল্য বেশ টানে ওকে।
‘কী ঘটনা?’
‘আমার ফ্রেন্ড তমালকে তো চেনেন? রোবটিক্সের, বাইরে চলে যাবে, জাপানের একটা কোম্পনির সঙ্গে কথাও চলছে। ক্যান্টিনে আড্ডা মারার সময় আপনার ব্যাপারটা জানালাম। বললাম, ফেসবুকে একজনের সঙ্গে আমার খুব জমে। সঙ্গে সঙ্গে জিজ্ঞাসা করল, নাম কী? বললাম, ধ্বনি। সে খেপে গেল। খেপে গিয়ে কী বলল জানেন আপু?’
‘তুমি না বললে জানবো কী করে?’ ছেলেটা বড় আহ্লাদ ঝরিয়ে কথা বলে। পয়সাওলা তেল-ব্যবসায়ী বাপের ছেলে। মা-ও মফস্বলের এক স্কুলের হেডমিসট্রেস।
‘বলল, এসব বাচ্চাবাচ্চা মেয়ের সঙ্গে তুই রাত জেগে কথা বলিস? তুই না বুয়েটের ফাইনাল ইয়ারের ছাত্র? হাহাহা।’ সোহেল ওপাশে গলা ফাটিয়ে হাসে। হাসির মিম ওর মেসেঞ্জারে।
এ সময় আবির এসে উপস্থিত, ‘আম্মা, দেখো তো আব্বা কী করছে?’
হাতের ফোনটা চটজলদি লুকিয়ে ফেলে বালিশের চিপায়। বিরক্তি মাখা স্বরে বলে ওঠে ধ্বনি, ‘সারাদিন কাজকর্ম করে এসেছি। একটু রিলাক্স করতেও দিবি না?’
‘এতক্ষণ আব্বা ড্রয়িংরুমে ছিল। এখন আমার বিছানায় শুয়ে ফেসবুকিং করতেছে। আমার না টিউটোরিয়াল এক্সাম কাল?’ যদিও মুখে এক্সামের কথা বলছে, ধ্বনি ভালো করেই জানে, এ সময় ছেলে মোবাইলে গেম নিয়ে ব্যস্ত। জেনেও ধ্বনি ঝাঁজ ছড়ায় কণ্ঠে।
‘আমি কিছু জানি না, যাঃ। চাকরি থেকে অবসরের পর লোকটার যে কী হয়েছে, যখন-তখন তোদের রুমে ঢুকে পড়ছে। যতসব ভীমরতি।’ চেঁচিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করে ধ্বনি। আবির কেটে পড়ে। ওরা এক ভাই, এক বোন। বোনটির বিয়ে হয়ে গেছে বছর দুয়েক হলো। এখন মিরপুরের শ্বশুরালয়ে। এমবিএ হওয়া সত্ত্বেও চাকরিবাকরি করতে দেয় না ওর শ্বশুরবাড়ি; গৃহবন্দি হয়ে সংসার করছে বেচারা। বিয়ের এ প্রস্তাবটাও আশরাফের আনা। কোনো এক বন্ধুর সূত্রে পাওয়া এ-প্রস্তাব। ছেলেটা মন্দ নয়। ইউনিসেফে চাকরি করে। তবে পারিবারিক মন-মানসিকতা সেকেলে। ধর্মকর্মে পরিমাণের চেয়ে বেশি মতি।
সোহেল ফের অনলাইনে। বলল, ‘আপু, আপনার নামটাই না কেমন যেন। নাশপাতি নাশপাতি মনে হয়।’ অনেকগুলো হাসির মিম।
এ সময় বিয়ের আগেকার আশরাফের চেহারাটা চোখে ভাসে ধ্বনির। ওর চেয়ে পনেরো বছরের বড় আশরাফ। তবু প্রেমে পড়ে গেল হুটহাট। উচ্ছ্বাস আর আনন্দের গ্যাস-বেলুন দুজন। শূন্যে কেবল উড়ছে আর উড়ছে। সোহরাওয়ার্দী পার্ক, আর্ট কলেজ, বুয়েট, 888sport app ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাস – কোথায় নেই তারা? আশরাফ বুয়েটের মেধাবী ছাত্র। চাকরি করে বড় কোম্পানিতে। খুব আধুনিক। কথায় কথায় 888sport promo code-পুরুষের সমান অধিকার নিয়ে যখন তখন বুলি কপচায়।
বিয়ের পরপর প্রথম ডায়ালগ, ‘সেল্ফ-রেসপেক্টটা জরুরি। দুজনার ভেতর একটা স্পেস থাকতে হবে। বুঝলা?’
মন ভরে গেল শুনে। ওর অধ্যাপক আব্বাকে মনে পড়ল। তিনিও বেশ উদার। আম্মাকে রান্নার ব্যবসা করতে দিয়ে সর্বস্বান্ত হয়েছেন, তবু কখনো কোনোদিন খোটা দেননি। আবেগভরা গলায় ধ্বনি তার আব্বাকে জানাল, ‘আশরাফ অন্যরকম আব্বা। ঠিক তোমার মতো। মহিলাদের প্রতি ওর অগাধ 888sport apk download apk latest version।’
‘তাই তো চাই মা। পুরুষদেররই উদার হতে হয়। কেননা ওরা বেশি স্বাধীনতা পায়। সুখে থাক।’ মানসিকভাবে এগোনো জয়নুল সাহেব স্বস্তি বোধ করেন মেয়ের ভাগ্যে।
কিন্তু কয়েক বছর পর যেদিন ওর শ্বশুর-শাশুড়ি অর্থনীতির তুখোড় ছাত্রী ধ্বনির চাকরি করার ওপর স্যাংশন জুড়ে দিলো, বলা যায় সেদিন থেকেই ধ্বনির চোখ খুলতে শুরু করে। এ বিষয়ে একদম চুপ আশরাফ। রাতারাতি ভোল পাল্টে গেছে ওর, বুলি কপচানো বন্ধ, চেনা দায় ওকে।
রাতে ঘুমানোর আগে কথাটা তুলতেই আশরাফ বলল, ‘কী হবে চাকরি করে বলো? আমাদের দেশে মেয়েদের চাকরি করাটা যে কতটা ভয়াবহ তা তো কম দেখলাম না চাকরি জীবনে। এই যে মতিঝিল অফিসপাড়া, সেখানে সব পুরুষ বাঘগুলো বসে রয়েছে ল্যাজ গুটিয়ে। চেনার জো নেই। কেন অযথা বাঘের থাবা খেতে সেখানে যাবে বলো?’
ধ্বনি হতবাক। চোখের সামনে কাকে দেখছে সে? ওর পড়ুয়া অধ্যাপক আব্বার মতো ছিল এ আশরাফ। গাছতলায় বসে প্রায়ই বলতো, ‘তোমাকে স্বাবলম্বী হতে হবে ধ্বনি। আমি তোমাকে হেল্প করবো।’ অথচ সে এখন ওর হাতের রান্না করা ভাতডাল খেতে চাইছে সারাজীবন? শেষ পর্যন্ত ব্যাংকের চাকরিটা পেয়েও ছেড়ে দিতে হলো ওর। এর ভেতর মেয়ে হলো, পরের বছর ছেলে। ব্যস্ততার অন্ত নেই। শ্বশুর-শাশুড়ি দেবর ননদ আত্মীয় পরিজন নিজের ছেলেমেয়ে – সারাক্ষণ যেন হুলস্থুল বিয়েবাড়ি একটা।
আর ঠিক তখনি আচমকা ধ্বনি আবিষ্কার করল, আশরাফ ওদের বাড়ির এক পুরনো ভাড়াটিয়ার কচি মেয়ের সঙ্গে জড়িয়ে গেছে। হাতেনাতে ধরে ফেলল ওদের কেইস। একেবারে শ্বশুর-শাশুড়ির সামনে ফেলে বলে উঠল, ‘এই দেখুন আপনাদের গুণী ছেলের কাজ। দেখুন?’
আশরাফ রেগে গিয়ে হাত উঠাল ওর শরীরে। ঘুসি দিয়ে মুখ থেঁতলে দিলো ওর। ঝরঝর করে রক্ত পড়ছে ধ্বনির নাক থেকে। তবু ওকে কেউ হাসপাতালে নিয়ে গেল না। বরফ আর টুকটাক ওষুধ দিয়ে ওকে সারিয়ে তুলল। সবাই যেন বিষয়টা কার্পেটের তলায় লুকিয়ে ফেলতে চাইছে। এক মাসের নোটিশে ভাড়াটিয়া পরিবারটিকে তাড়িয়ে দেওয়া হলো। ধ্বনির খুব খারাপ লাগছিল অবুঝ-অধীর কৌতূহলী কিশোরীটির প্রতি। কিন্তু ওর তখন কিছু করার ছিল না। সে যে একটা পক্ষ হয়ে পড়েছে!
এত চোট লেগেছে ধ্বনির মুখে; তবু এক ফোঁটা চোখের পানি ঝরেনি ওর। সে শুধু হতবাক হয়ে ব্যথা সহ্য করে গেছে আর ঘোর লাগা চোখে স্বামীকে লক্ষ করেছে। এরপর যা হয় মেয়েরা সাধারণত আশ্রয় খোঁজে বাবার ডেরায়। ধ্বনির বেলায় তা ঘটেনি। সে ইচ্ছে করে জিগাতলায় ওদের নিজেদের বাড়িমুখো হয়নি। ওর বুকের ভেতর একরাশ ঘৃণা আর নীরব আক্রোশ জমা হতে শুরু করে। মিশ্র এ-আবেগ এতই তীব্রভাবে ওর ভেতর বাসা বেঁধেছিল যে হাতের কাছে তখন যে-কোনো পোকা-মাকড় পেলেও সে যেন পিষে মেরে ফেলত। মনে হতো, এ পোকাটাই আশরাফ।
মাথায় আগুন জ¦লত, শরীর নিশপিশ করতো রাগে। তবু সে নিজেকে দমন করে রাখে; বুঝতে দেয় না সে কতটুকু তেতে রয়েছে ভেতরে ভেতরে।
ভালো হওয়ার পর প্রথমেই ধ্বনি চাকরি খুঁজতে শুরু করে দেয় এবং ছমাসের মাথায় পুরো ঘটনাটির ফায়দা লুটে ব্যাংকের চাকরিতে ঢুকে পড়ে। আশরাফ নিশ্চুপ, ওর পরিবার অপরাধবোধের হুলে প্রতিবাদহীন।
আশরাফ বলল, ‘আমায় মাফ করো প্লিজ। আমি এরকমটা করতে চাইনি। আই লাভ য়ু টু মাচ। আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না।’
ধ্বনি মাসের পর মাস চুপচাপ শুনেছে সেসব চিড়েভিজানো কথা। যতবার ওর আকুতি-মিনতি শুনেছে, বিশেষ করে জবরদস্তির যৌন সম্পর্কের আগে ও পরে, ততবার ওর মনে হয়েছে, একটা চরিত্রহীন নেকড়ে ওর পায়ের কাছে শুয়ে অনুনয় করছে, ‘আমি ভালো হয়ে গেছি। আমি আর কাউকে কামড়াই না।’
ধ্বনি কী যেন ভাবল কদিন। একদিন যৌন উত্তেজনার চরম মুহূর্তে বলে উঠল, ‘মাফ পেতে চাইলে দুটো কাজ করতে হবে। পারবা?’
‘এখন বাদ দাও না। এদিকে ফিরো।’
‘বলো পারবে?’
‘সব পারবো। যা বলবে তাই করে দেখাবো। প্লিজ একটু ইজি হও না। হচ্ছে নাতো।’
ল দেবে, রাজি?’
‘কী বলছো এসব? আমি সেরকম মানুষ? একটা সামান্য ঘটনায় তুমি আমার সম্পর্কে এরকম ভাবো? ছিঃ। আমি 888sport promo codeদের কত সম্মান করি, তুমি জানো না?’
‘কোনো তর্ক নয়। তুমি ওদের ধারেকাছে ঘেঁষবে না ভাগ্নি-ভাতিজি-ধর্মের ছোট বোন বানিয়ে। বুঝলে?’
‘ঠিক আছে। এবার কাছে এসো। আর তো সহ্য হয় না। এটা কী? মাঝপথে ট্রেন থামিয়ে রেখেছো? সহ্য হয়?’ গোঙানির মতো শোনায় কথাগুলো।
‘দ্বিতীয় শর্তটা শুনবে না?’
‘ওফ। দ্বিতীয়টাও শুনতে হবে? তাড়াতাড়ি বলো।’
‘ছেলেমেয়েকে নিয়ে আমরা ভাড়া বাসায় উঠে পড়বো। স্বাধীনভাবে থাকবো। ধানমন্ডির ভালো ইংরেজি স্কুলে পড়াবো আমাদের বাচ্চাদের। বলো রাজি?’
‘নারিন্দার নিজের বাড়িঘর ছেড়ে ভাড়া বাসায় উঠবো আমরা? আমি এ-বাড়ির বড় ছেলে নই? আমার আব্বা-আম্মা আছে না?’
‘আমিও তো আমাদের জিগাতলার বাড়ির বড় মেয়ে। কই, তুমি যে মেরে আমার মুখ বাঁকা করে দিলে, আমি কি ও-বাড়িতে গিয়ে কেঁদেকেটে উঠেছি, বলো?’
‘এগুলো বলার সময় এখন? একটু ইজি হও না প্লিজ?’
‘তুমি রাজি কি না বলো?’
‘আচ্ছা আচ্ছা। রাজি। তুমি তো দেখছি একটা সেক্সি হারামি।’ বলে চুমু খায় আশ্লেষে। ধ্বনির চোখে আগুন, শরীর উত্তেজনাহীন।
এর কদিনের ভেতর ওরা চলে এলো ধানমন্ডির ভাড়া বাসায়। ধ্বনির চাকরি হলো ব্যাংকে। ওদের নিজেদের ফ্ল্যাট হলো এবং আশরাফ ধীরে ধীরে বিচ্ছিন্ন হতে শুরু করল ওর পরিবার থেকে। একসময় আশরাফ একা হয়ে গেল এবং একা হতে হতে ওর সব
ইচ্ছা-অনিচ্ছা তুলে দিলো ধ্বনির হাতে।
সোহেলকে ধ্বনি জিজ্ঞাসা করে, ‘তোমার গার্লফ্রেন্ড নেই?’
‘না, আপু।’
‘কাউকে পছন্দ করো না?’
নিমেষে চুপ হয়ে যায় সে। একটু পর বলে, ‘মিথ্যে বলব না আপু। সত্যি আমি পছন্দ করি একজনকে। সে আমার চাচাতো বোন; কিন্তু খুব ছোট।’
‘কত ছোট?’
‘এবার এসএসসি দেবে। আজিমপুরে থাকে। মাঝে মাঝে মন খারাপ হলে ওর স্কুলের সামনে দাঁড়িয়ে থাকি। এক ঝলক ওকে দেখতে পেলেই মন ভালো হয়ে যায়। কথাটা বন্ধুদের কারো জানা নেই। জানলে যে লজ্জা দেবে, ভ্যাঙাবে, সেজন্য। আপনাকেই বললাম প্রথমবার, ধ্বনি আপু।’
‘বিয়ে করবে?’
‘হ্যাঁ। একটু বড় হলেই প্রস্তাব দেবো আব্বু-আম্মুকে দিয়ে। আমিও কিছু একটা জোগাড় করে নিই। তারপর।’
‘মেয়েটাকে কষ্ট দিও না ছেলে।’
‘কখনো নয় আপু। নেভার।’
ধ্বনি আর কথা বাড়ায় না। মনে মনে বলল, ‘কষ্ট তো দেবেই। আমি তা জানি।’ বলে চোখ বুজল ধ্বনি। ওর দুচোখে ঘুমের নাচন, চোখ বোজে আনন্দময় এক সকালের জন্য। ঘুমের অন্তরালে চলে যাওয়ার আগে আরো একবার আশরাফের কথা মনে পড়ে। ধ্বনি জানে, রাত গভীর হলে লোকটা কী করবে। দুনিয়ার এডাল্ট ভিডিওগুলো ঘাঁটাঘাঁটি করে দেখবে আর টয়লেটে যাওয়া-আসা করবে। একসময় ক্লান্ত হয়ে নাক ডেকে ঘুম দেবে।
সকালে ধ্বনির ঘুম ভাঙার পর পবিত্র মন নিয়ে ড্রয়িংরুমে যখন পা পড়বে তখন ওর চোখে পড়বে, একটা লাশ এলোপাতাড়ি শুয়ে রয়েছে ডিভানে। লোকটার পরনের লুঙি দিয়ে মুখ 888sport app, নিম্নাঙ্গ প্রায় উন্মুক্ত।
ভাবতেই শরীর রি-রি করে ওঠে ধ্বনির। এ লোকটাকেই একদিন ভালোবেসে তোলপাড় করেছিল ক্যাম্পাস! ছিঃ!!


Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.